ইসলামিক এডুকেশন এন্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন (এই. ই. আর. এফ)
অনুবাদ ও গবেষণা বিভাগ কর্তৃক সংকলিত।ও সম্পাদিত
সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ-আবু
আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী
সম্পাদনা পরিষদঃ-
প্রফেসর এ.কে.এম শামসুল আলম
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইলিয়াস আলী
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুযযাম্মিল আলী
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ লাকমান হুসেন
অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক সালাফী |
অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ আল-মাদানী
শায়খ মুস্তফা বিন বাহারুদ্দীন সালাফী
শায়খ ড. হাফিয় রফিকুল আল-মাদানী
শায়খ মাসউদুল আলম উমরী
শায়খ মুফায়যাল হুসাইন আল-মাদানী
শায়খ মুহাম্মদ ঈসা মিয়া আল-মাদানী
শায়খ মুহাম্মদ ইরফান আলী আব্বাস
আল-মাদানী
শায়খ হাবিবুর রহমান আল-মাদানী |
শায়খ হাফিয় আনিসুর রহমান আল-মাদানী |
শায়খ ইব্রাহীম বিন আবদুল হালীম আল-মাদানী
শায়খ আব্দুন নূর আবু সাঈদ আল-মাদানী |
শায়খ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ খান আল-মাদানী
শায়খ হাফিয় আনিসুর রহমান
আল-মাদানী
শায়খ ইব্রাহীম বিন আবদুল হালীম আল-মাদানী
শায়খ আব্দুন নূর আবু সাঈদ আল-মাদানী
শায়খ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ খান আল-মাদানী
পরিবেশনায়ঃ আল খাইর পাবলিকেশন্ম, নাজির বাজার, | ঢাকা।
সাম্প্রতিককালে সংকলিত অন্যতম
কিছু তাফসীরের মধ্যে তাফসীর ফাতহুল মাজীদ উল্লেখযোগ্য। এই তাফসীরটি শাইখ মুহাম্মাদ
শহীদুল্লাহ খান মাদানীর তত্ত্বাবধানে সংকলন করা হয়েছে।
খণ্ড সংখ্যাঃ ৩
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৫৯৮ (৮২৪ + ৯৬০ + ৮১৪)
মুদ্রিত মূল্যঃ ২৫৫০ (৯০০ + ৮৫০ + ৮০০)
তাফসীর ফাতহুল মাজীদ-এর
উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
০১. আরবী আয়াতের পাশাপাশি অতি সহজ - সরল বাংলা অনুবাদ।
০২. জটিল ও কঠিন শব্দার্থ।
০৩. গ্রহণযোগ্য বর্ণনার আলোকে শানে নুযুল।
০৪. কুরআনুল কারীম ও স্বহীহ হাদীছ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থের আলোকে সংক্ষিপ্ত তাফসীর সংকলন।
০৫. স্বহীহ আক্বীদাহ ও শারয়ী বিধানমূলক আয়াতের শিক্ষা।
০৬. কুরআন ও সহীহ হাদীছের আলোকে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সমাধান।
০৭. ভিত্তিহীন প্রচলিত তাফসীর সম্পর্কে সতর্কীকরণ।
০৮. তাফসীরে ব্যবহৃত আয়াতসমূহ নম্বর ও সূরাসহ উল্লেখ করা হয়েছে।
০৯. যথাসাধ্য হাদীছের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
১০. সাধ্যানুযায়ী স্বহীহ বুখারী, স্বহীহ মুসলিম, সুনান আবূ দাউদ, সুনান তিরমিযি, সুনান নাসাঈ, সুনান ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক ও মুসনাদে আহমাদ ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থের হাদীসসমূহে মাকতাবাহ শামিলার নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।
১১. বাংলাভাষী পাঠকদের সহজ পাঠের জন্য আরবী বিশেষ ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
১২. সর্বোপরি উন্নতমানের কাগজে মুদ্রণ, মজবুত ও আকর্ষণীয় বাইন্ডিং করা হয়েছে।প্রথম খণ্ডে সূরাহ আল ফাতিহাহ থেকে সূরাহ আত তাওবাহ্, দ্বিতীয় খণ্ডে সূরাহ ইউনুস থেকে সূরাহ আল ফাথির এবং তৃতীয় খণ্ডে সূরাহ ইয়াসীন থেকে সূরাহ আন নাসের তাফসীর রয়েছে।
০২. জটিল ও কঠিন শব্দার্থ।
০৩. গ্রহণযোগ্য বর্ণনার আলোকে শানে নুযুল।
০৪. কুরআনুল কারীম ও স্বহীহ হাদীছ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থের আলোকে সংক্ষিপ্ত তাফসীর সংকলন।
০৫. স্বহীহ আক্বীদাহ ও শারয়ী বিধানমূলক আয়াতের শিক্ষা।
০৬. কুরআন ও সহীহ হাদীছের আলোকে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সমাধান।
০৭. ভিত্তিহীন প্রচলিত তাফসীর সম্পর্কে সতর্কীকরণ।
০৮. তাফসীরে ব্যবহৃত আয়াতসমূহ নম্বর ও সূরাসহ উল্লেখ করা হয়েছে।
০৯. যথাসাধ্য হাদীছের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
১০. সাধ্যানুযায়ী স্বহীহ বুখারী, স্বহীহ মুসলিম, সুনান আবূ দাউদ, সুনান তিরমিযি, সুনান নাসাঈ, সুনান ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক ও মুসনাদে আহমাদ ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থের হাদীসসমূহে মাকতাবাহ শামিলার নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।
১১. বাংলাভাষী পাঠকদের সহজ পাঠের জন্য আরবী বিশেষ ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
১২. সর্বোপরি উন্নতমানের কাগজে মুদ্রণ, মজবুত ও আকর্ষণীয় বাইন্ডিং করা হয়েছে।প্রথম খণ্ডে সূরাহ আল ফাতিহাহ থেকে সূরাহ আত তাওবাহ্, দ্বিতীয় খণ্ডে সূরাহ ইউনুস থেকে সূরাহ আল ফাথির এবং তৃতীয় খণ্ডে সূরাহ ইয়াসীন থেকে সূরাহ আন নাসের তাফসীর রয়েছে।
2:1
الٓـمّٓ ۚ﴿۱﴾
সুরার নাম- বাকারা,(বকনা- \বাছুর)
মোট আয়াত- ২৮৬, সুরার
ধরনঃ- মাদানি।
সুরা নং ০২/ 272-286, তাফসির নাম, ফাতহুল মাজিদ, , সুরা আল বাকারা ২৭২ থেকে ২৮৬ পর্যন্ত,
2:272
لَیۡسَ عَلَیۡکَ
ہُدٰىہُمۡ وَ لٰکِنَّ اللّٰہَ یَہۡدِیۡ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ
خَیۡرٍ فَلِاَنۡفُسِکُمۡ ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡنَ اِلَّا ابۡتِغَآءَ وَجۡہِ اللّٰہِ
ؕ وَ مَا تُنۡفِقُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ یُّوَفَّ اِلَیۡکُمۡ وَ اَنۡتُمۡ لَا
تُظۡلَمُوۡنَ ﴿۲۷۲﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৭২-২৭৪ নং আয়াতের
তাফসীর:
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবাগণ তাঁদের মুশরিক আত্মীয় স্বজনদের সাথে আদান-প্রদান করতে অপছন্দ করতেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হল। তখন
(لَيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ)
‘তাদের হিদায়াতের দায়িত্ব তোমার ওপর নয়’আয়াতটি অবতীর্ণ হল। (নাসাঈ হা: ১১৫২, সহীহ)
সাঈদ বিন যুবাইর থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত, মুসলিমগণ যিম্মী কাফিরদের দান-সদাকাহ করত। যখন মুসলিম দরিদ্রদের সংখ্যা বেড়ে গেল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তেমাদের দীনের অনুসারী ছাড়া অন্য কাউকে দান-সদাকাহ করো না। তখন এ আয়াত নাযিল হয় (ইবনু আবী শাইবা ২/১০৪)।
যাই হোক, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দায়িত্ব হল দীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া, কল্যাণ কাজে মানুষকে উৎসাহ দেয়া এবং অন্যায় ও খারপ কাজ থেকে নিষেধ করা। হিদায়াতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তিনি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথের হিদায়াত দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللّٰهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ ﺚوَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ)
“তুমি যাকে ভালবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎ পথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহই যাকে ইচ্ছা সৎ পথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভাল জানেন সৎ পথ অনুসারীদেরকে।”(সূরা কাসাস ২৮:৫৬)
لِلْفُقَرَآءِ ‘ফকিরদের জন্য’এখানে ফকির দ্বারা মুহাজিরদেরকে বুঝানো হয়েছে। কারণ তারা মক্কায় সবকিছু ছেড়ে রিক্তহস্তে মদীনায় চলে এসেছেন। তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য কোথাও যেতে পারেন না, যুদ্ধ জিহাদে ব্যস্ত থাকার কারণে যারা তাদেরকে চেনে না, তারা মনে করে এদেরকে দানের কোন প্রয়োজন নেই। কেননা তারা চায় না, তাদের আচার-আচরণ ও চাল-চলনে সে রকম কিছু বুঝা যায় না। এদেরকে দান করা খুব নেকীর কাজ।
(إِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ اللّٰهِ)
‘আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় কর’যখন একজন মুসলিম একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য ব্যয় করবে তখন সে প্রত্যেক ব্যয়ের জন্য নেকী পাবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তুমি যে ব্যয়ই কর তার দ্বারা যদি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি চাও তাহলে তার প্রতিদান পাবে এমনকি যদি তুমি তোমার স্ত্রীকে খাবার দাও তাতেও নেকী পাবে। (সহীহ বুখারী হা: ৫৬)
সুতরাং আমরা যা দান-সদাকাহ করব তার উদ্দেশ্য থাকবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি, মানুষ আমাকে দানবীর বলবে কিম্বা তাদের বাহবাহ পাওয়ার জন্য নয়।
ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য হল: তারা শত অভাব অনটনেও কারো কাছে হাত পাতে না।الحاف ইলহাফ অর্থ হল: সর্বাত্মকভাবে কারো কাছে চাওয়া বা নিবেদন করা। (তাফসীর মুয়াসসার, পৃঃ ৪৬)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মিসকিন সে নয় যে একটি দু’টি খেজুরের জন্য বা এক-দু’লোকমা খাবারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় বরং প্রকৃত মিসকিন হল সে যে অভাবী হওয়া সত্ত্বেও চাওয়া থেকে বেঁচে থাকে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াত
(لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا)
পাঠ করলেন। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৭৬)
(اَلَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ...)
যারা রাতে ও দিনে, গোপনে এবং প্রকাশ্যে তাদের মাল খরচ করে’তথা যারা সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে। তবে কখনো গোপনের চেয়ে প্রকাশ্যে, আবার কখনো প্রকাশ্যের চেয়ে গোপনে দান করা উত্তম হয়। যখন প্রকাশ্যে দান করলে অন্যরা উৎসাহিত হবে তখন প্রকাশে দান করা উত্তম, তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন কোনক্রমেই মনে মানুষের বাহবা পাওয়ার ইচ্ছা না জাগে। পূর্বের আয়াতে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাফিরদেরকেও সাধারণ দান-সদাকাহ দেয়া জায়েয আছে। তবে যাকাত দেয়া যাবে না কেননা তা কেবল মু’মিনদের হক।
২. দানের ক্ষেত্রে নিয়ত ঠিক রাখা আবশ্যক।
৩. প্রয়োজনের তারতম্য অনুযায়ী দান-সদাকার মর্যাদায় কম-বেশি হয়।
৪. যারা প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অন্যের কাছে হাত পাতে না তাদের মর্যাদা জানলাম।
৫. সচ্ছল-অসচ্ছল সর্বাবস্থায় যারা দান করে তাদের অনেক প্রতিদান রয়েছে।
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবাগণ তাঁদের মুশরিক আত্মীয় স্বজনদের সাথে আদান-প্রদান করতে অপছন্দ করতেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হল। তখন
(لَيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ)
‘তাদের হিদায়াতের দায়িত্ব তোমার ওপর নয়’আয়াতটি অবতীর্ণ হল। (নাসাঈ হা: ১১৫২, সহীহ)
সাঈদ বিন যুবাইর থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত, মুসলিমগণ যিম্মী কাফিরদের দান-সদাকাহ করত। যখন মুসলিম দরিদ্রদের সংখ্যা বেড়ে গেল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তেমাদের দীনের অনুসারী ছাড়া অন্য কাউকে দান-সদাকাহ করো না। তখন এ আয়াত নাযিল হয় (ইবনু আবী শাইবা ২/১০৪)।
যাই হোক, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দায়িত্ব হল দীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া, কল্যাণ কাজে মানুষকে উৎসাহ দেয়া এবং অন্যায় ও খারপ কাজ থেকে নিষেধ করা। হিদায়াতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তিনি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথের হিদায়াত দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللّٰهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ ﺚوَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ)
“তুমি যাকে ভালবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎ পথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহই যাকে ইচ্ছা সৎ পথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভাল জানেন সৎ পথ অনুসারীদেরকে।”(সূরা কাসাস ২৮:৫৬)
لِلْفُقَرَآءِ ‘ফকিরদের জন্য’এখানে ফকির দ্বারা মুহাজিরদেরকে বুঝানো হয়েছে। কারণ তারা মক্কায় সবকিছু ছেড়ে রিক্তহস্তে মদীনায় চলে এসেছেন। তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য কোথাও যেতে পারেন না, যুদ্ধ জিহাদে ব্যস্ত থাকার কারণে যারা তাদেরকে চেনে না, তারা মনে করে এদেরকে দানের কোন প্রয়োজন নেই। কেননা তারা চায় না, তাদের আচার-আচরণ ও চাল-চলনে সে রকম কিছু বুঝা যায় না। এদেরকে দান করা খুব নেকীর কাজ।
(إِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ اللّٰهِ)
‘আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় কর’যখন একজন মুসলিম একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য ব্যয় করবে তখন সে প্রত্যেক ব্যয়ের জন্য নেকী পাবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তুমি যে ব্যয়ই কর তার দ্বারা যদি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি চাও তাহলে তার প্রতিদান পাবে এমনকি যদি তুমি তোমার স্ত্রীকে খাবার দাও তাতেও নেকী পাবে। (সহীহ বুখারী হা: ৫৬)
সুতরাং আমরা যা দান-সদাকাহ করব তার উদ্দেশ্য থাকবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি, মানুষ আমাকে দানবীর বলবে কিম্বা তাদের বাহবাহ পাওয়ার জন্য নয়।
ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য হল: তারা শত অভাব অনটনেও কারো কাছে হাত পাতে না।الحاف ইলহাফ অর্থ হল: সর্বাত্মকভাবে কারো কাছে চাওয়া বা নিবেদন করা। (তাফসীর মুয়াসসার, পৃঃ ৪৬)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মিসকিন সে নয় যে একটি দু’টি খেজুরের জন্য বা এক-দু’লোকমা খাবারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় বরং প্রকৃত মিসকিন হল সে যে অভাবী হওয়া সত্ত্বেও চাওয়া থেকে বেঁচে থাকে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াত
(لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا)
পাঠ করলেন। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৭৬)
(اَلَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ...)
যারা রাতে ও দিনে, গোপনে এবং প্রকাশ্যে তাদের মাল খরচ করে’তথা যারা সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে। তবে কখনো গোপনের চেয়ে প্রকাশ্যে, আবার কখনো প্রকাশ্যের চেয়ে গোপনে দান করা উত্তম হয়। যখন প্রকাশ্যে দান করলে অন্যরা উৎসাহিত হবে তখন প্রকাশে দান করা উত্তম, তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন কোনক্রমেই মনে মানুষের বাহবা পাওয়ার ইচ্ছা না জাগে। পূর্বের আয়াতে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাফিরদেরকেও সাধারণ দান-সদাকাহ দেয়া জায়েয আছে। তবে যাকাত দেয়া যাবে না কেননা তা কেবল মু’মিনদের হক।
২. দানের ক্ষেত্রে নিয়ত ঠিক রাখা আবশ্যক।
৩. প্রয়োজনের তারতম্য অনুযায়ী দান-সদাকার মর্যাদায় কম-বেশি হয়।
৪. যারা প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অন্যের কাছে হাত পাতে না তাদের মর্যাদা জানলাম।
৫. সচ্ছল-অসচ্ছল সর্বাবস্থায় যারা দান করে তাদের অনেক প্রতিদান রয়েছে।
2:273
لِلۡفُقَرَآءِ
الَّذِیۡنَ اُحۡصِرُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ لَا یَسۡتَطِیۡعُوۡنَ ضَرۡبًا فِی
الۡاَرۡضِ ۫ یَحۡسَبُہُمُ الۡجَاہِلُ اَغۡنِیَآءَ مِنَ التَّعَفُّفِ ۚ
تَعۡرِفُہُمۡ بِسِیۡمٰہُمۡ ۚ لَا یَسۡـَٔلُوۡنَ النَّاسَ اِلۡحَافًا ؕ وَ مَا
تُنۡفِقُوۡا مِنۡ خَیۡرٍ فَاِنَّ اللّٰہَ بِہٖ عَلِیۡمٌ ﴿۲۷۳﴾٪
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৭২-২৭৪ নং আয়াতের
তাফসীর:
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবাগণ তাঁদের মুশরিক আত্মীয় স্বজনদের সাথে আদান-প্রদান করতে অপছন্দ করতেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হল। তখন
(لَيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ)
‘তাদের হিদায়াতের দায়িত্ব তোমার ওপর নয়’আয়াতটি অবতীর্ণ হল। (নাসাঈ হা: ১১৫২, সহীহ)
সাঈদ বিন যুবাইর থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত, মুসলিমগণ যিম্মী কাফিরদের দান-সদাকাহ করত। যখন মুসলিম দরিদ্রদের সংখ্যা বেড়ে গেল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তেমাদের দীনের অনুসারী ছাড়া অন্য কাউকে দান-সদাকাহ করো না। তখন এ আয়াত নাযিল হয় (ইবনু আবী শাইবা ২/১০৪)।
যাই হোক, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দায়িত্ব হল দীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া, কল্যাণ কাজে মানুষকে উৎসাহ দেয়া এবং অন্যায় ও খারপ কাজ থেকে নিষেধ করা। হিদায়াতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তিনি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথের হিদায়াত দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللّٰهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ ﺚوَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ)
“তুমি যাকে ভালবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎ পথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহই যাকে ইচ্ছা সৎ পথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভাল জানেন সৎ পথ অনুসারীদেরকে।”(সূরা কাসাস ২৮:৫৬)
لِلْفُقَرَآءِ ‘ফকিরদের জন্য’এখানে ফকির দ্বারা মুহাজিরদেরকে বুঝানো হয়েছে। কারণ তারা মক্কায় সবকিছু ছেড়ে রিক্তহস্তে মদীনায় চলে এসেছেন। তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য কোথাও যেতে পারেন না, যুদ্ধ জিহাদে ব্যস্ত থাকার কারণে যারা তাদেরকে চেনে না, তারা মনে করে এদেরকে দানের কোন প্রয়োজন নেই। কেননা তারা চায় না, তাদের আচার-আচরণ ও চাল-চলনে সে রকম কিছু বুঝা যায় না। এদেরকে দান করা খুব নেকীর কাজ।
(إِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ اللّٰهِ)
‘আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় কর’যখন একজন মুসলিম একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য ব্যয় করবে তখন সে প্রত্যেক ব্যয়ের জন্য নেকী পাবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তুমি যে ব্যয়ই কর তার দ্বারা যদি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি চাও তাহলে তার প্রতিদান পাবে এমনকি যদি তুমি তোমার স্ত্রীকে খাবার দাও তাতেও নেকী পাবে। (সহীহ বুখারী হা: ৫৬)
সুতরাং আমরা যা দান-সদাকাহ করব তার উদ্দেশ্য থাকবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি, মানুষ আমাকে দানবীর বলবে কিম্বা তাদের বাহবাহ পাওয়ার জন্য নয়।
ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য হল: তারা শত অভাব অনটনেও কারো কাছে হাত পাতে না।الحاف ইলহাফ অর্থ হল: সর্বাত্মকভাবে কারো কাছে চাওয়া বা নিবেদন করা। (তাফসীর মুয়াসসার, পৃঃ ৪৬)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মিসকিন সে নয় যে একটি দু’টি খেজুরের জন্য বা এক-দু’লোকমা খাবারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় বরং প্রকৃত মিসকিন হল সে যে অভাবী হওয়া সত্ত্বেও চাওয়া থেকে বেঁচে থাকে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াত
(لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا)
পাঠ করলেন। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৭৬)اَلَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ...)
যারা রাতে ও দিনে, গোপনে এবং প্রকাশ্যে তাদের মাল খরচ করে’তথা যারা সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে। তবে কখনো গোপনের চেয়ে প্রকাশ্যে, আবার কখনো প্রকাশ্যের চেয়ে গোপনে দান করা উত্তম হয়। যখন প্রকাশ্যে দান করলে অন্যরা উৎসাহিত হবে তখন প্রকাশে দান করা উত্তম, তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন কোনক্রমেই মনে মানুষের বাহবা পাওয়ার ইচ্ছা না জাগে। পূর্বের আয়াতে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাফিরদেরকেও সাধারণ দান-সদাকাহ দেয়া জায়েয আছে। তবে যাকাত দেয়া যাবে না কেননা তা কেবল মু’মিনদের হক।
২. দানের ক্ষেত্রে নিয়ত ঠিক রাখা আবশ্যক।
৩. প্রয়োজনের তারতম্য অনুযায়ী দান-সদাকার মর্যাদায় কম-বেশি হয়।
৪. যারা প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অন্যের কাছে হাত পাতে না তাদের মর্যাদা জানলাম।
৫. সচ্ছল-অসচ্ছল সর্বাবস্থায় যারা দান করে তাদের অনেক প্রতিদান রয়েছে।
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবাগণ তাঁদের মুশরিক আত্মীয় স্বজনদের সাথে আদান-প্রদান করতে অপছন্দ করতেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হল। তখন
(لَيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ)
‘তাদের হিদায়াতের দায়িত্ব তোমার ওপর নয়’আয়াতটি অবতীর্ণ হল। (নাসাঈ হা: ১১৫২, সহীহ)
সাঈদ বিন যুবাইর থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত, মুসলিমগণ যিম্মী কাফিরদের দান-সদাকাহ করত। যখন মুসলিম দরিদ্রদের সংখ্যা বেড়ে গেল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তেমাদের দীনের অনুসারী ছাড়া অন্য কাউকে দান-সদাকাহ করো না। তখন এ আয়াত নাযিল হয় (ইবনু আবী শাইবা ২/১০৪)।
যাই হোক, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দায়িত্ব হল দীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া, কল্যাণ কাজে মানুষকে উৎসাহ দেয়া এবং অন্যায় ও খারপ কাজ থেকে নিষেধ করা। হিদায়াতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তিনি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথের হিদায়াত দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللّٰهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ ﺚوَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ)
“তুমি যাকে ভালবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎ পথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহই যাকে ইচ্ছা সৎ পথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভাল জানেন সৎ পথ অনুসারীদেরকে।”(সূরা কাসাস ২৮:৫৬)
لِلْفُقَرَآءِ ‘ফকিরদের জন্য’এখানে ফকির দ্বারা মুহাজিরদেরকে বুঝানো হয়েছে। কারণ তারা মক্কায় সবকিছু ছেড়ে রিক্তহস্তে মদীনায় চলে এসেছেন। তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য কোথাও যেতে পারেন না, যুদ্ধ জিহাদে ব্যস্ত থাকার কারণে যারা তাদেরকে চেনে না, তারা মনে করে এদেরকে দানের কোন প্রয়োজন নেই। কেননা তারা চায় না, তাদের আচার-আচরণ ও চাল-চলনে সে রকম কিছু বুঝা যায় না। এদেরকে দান করা খুব নেকীর কাজ।
(إِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ اللّٰهِ)
‘আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় কর’যখন একজন মুসলিম একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য ব্যয় করবে তখন সে প্রত্যেক ব্যয়ের জন্য নেকী পাবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তুমি যে ব্যয়ই কর তার দ্বারা যদি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি চাও তাহলে তার প্রতিদান পাবে এমনকি যদি তুমি তোমার স্ত্রীকে খাবার দাও তাতেও নেকী পাবে। (সহীহ বুখারী হা: ৫৬)
সুতরাং আমরা যা দান-সদাকাহ করব তার উদ্দেশ্য থাকবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি, মানুষ আমাকে দানবীর বলবে কিম্বা তাদের বাহবাহ পাওয়ার জন্য নয়।
ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য হল: তারা শত অভাব অনটনেও কারো কাছে হাত পাতে না।الحاف ইলহাফ অর্থ হল: সর্বাত্মকভাবে কারো কাছে চাওয়া বা নিবেদন করা। (তাফসীর মুয়াসসার, পৃঃ ৪৬)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মিসকিন সে নয় যে একটি দু’টি খেজুরের জন্য বা এক-দু’লোকমা খাবারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় বরং প্রকৃত মিসকিন হল সে যে অভাবী হওয়া সত্ত্বেও চাওয়া থেকে বেঁচে থাকে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াত
(لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا)
পাঠ করলেন। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৭৬)اَلَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ...)
যারা রাতে ও দিনে, গোপনে এবং প্রকাশ্যে তাদের মাল খরচ করে’তথা যারা সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে। তবে কখনো গোপনের চেয়ে প্রকাশ্যে, আবার কখনো প্রকাশ্যের চেয়ে গোপনে দান করা উত্তম হয়। যখন প্রকাশ্যে দান করলে অন্যরা উৎসাহিত হবে তখন প্রকাশে দান করা উত্তম, তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন কোনক্রমেই মনে মানুষের বাহবা পাওয়ার ইচ্ছা না জাগে। পূর্বের আয়াতে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাফিরদেরকেও সাধারণ দান-সদাকাহ দেয়া জায়েয আছে। তবে যাকাত দেয়া যাবে না কেননা তা কেবল মু’মিনদের হক।
২. দানের ক্ষেত্রে নিয়ত ঠিক রাখা আবশ্যক।
৩. প্রয়োজনের তারতম্য অনুযায়ী দান-সদাকার মর্যাদায় কম-বেশি হয়।
৪. যারা প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অন্যের কাছে হাত পাতে না তাদের মর্যাদা জানলাম।
৫. সচ্ছল-অসচ্ছল সর্বাবস্থায় যারা দান করে তাদের অনেক প্রতিদান রয়েছে।
2:274
اَلَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ
اَمۡوَالَہُمۡ بِالَّیۡلِ وَ النَّہَارِ سِرًّا وَّ عَلَانِیَۃً فَلَہُمۡ
اَجۡرُہُمۡ عِنۡدَ رَبِّہِمۡ ۚ وَ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡہِمۡ وَ لَا ہُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ
﴿۲۷۴﴾ؔ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৭২-২৭৪ নং আয়াতের
তাফসীর:
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবাগণ তাঁদের মুশরিক আত্মীয় স্বজনদের সাথে আদান-প্রদান করতে অপছন্দ করতেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হল। তখন
(لَيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ)
‘তাদের হিদায়াতের দায়িত্ব তোমার ওপর নয়’আয়াতটি অবতীর্ণ হল। (নাসাঈ হা: ১১৫২, সহীহ)
সাঈদ বিন যুবাইর থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত, মুসলিমগণ যিম্মী কাফিরদের দান-সদাকাহ করত। যখন মুসলিম দরিদ্রদের সংখ্যা বেড়ে গেল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তেমাদের দীনের অনুসারী ছাড়া অন্য কাউকে দান-সদাকাহ করো না। তখন এ আয়াত নাযিল হয় (ইবনু আবী শাইবা ২/১০৪)।
যাই হোক, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দায়িত্ব হল দীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া, কল্যাণ কাজে মানুষকে উৎসাহ দেয়া এবং অন্যায় ও খারপ কাজ থেকে নিষেধ করা। হিদায়াতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তিনি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথের হিদায়াত দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللّٰهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ ﺚوَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ)
“তুমি যাকে ভালবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎ পথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহই যাকে ইচ্ছা সৎ পথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভাল জানেন সৎ পথ অনুসারীদেরকে।”(সূরা কাসাস ২৮:৫৬)لِلْفُقَرَآءِ ‘ফকিরদের জন্য’এখানে ফকির দ্বারা মুহাজিরদেরকে বুঝানো হয়েছে। কারণ তারা মক্কায় সবকিছু ছেড়ে রিক্তহস্তে মদীনায় চলে এসেছেন। তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য কোথাও যেতে পারেন না, যুদ্ধ জিহাদে ব্যস্ত থাকার কারণে যারা তাদেরকে চেনে না, তারা মনে করে এদেরকে দানের কোন প্রয়োজন নেই। কেননা তারা চায় না, তাদের আচার-আচরণ ও চাল-চলনে সে রকম কিছু বুঝা যায় না। এদেরকে দান করা খুব নেকীর কাজ।
(إِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ اللّٰهِ)
‘আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় কর’যখন একজন মুসলিম একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য ব্যয় করবে তখন সে প্রত্যেক ব্যয়ের জন্য নেকী পাবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তুমি যে ব্যয়ই কর তার দ্বারা যদি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি চাও তাহলে তার প্রতিদান পাবে এমনকি যদি তুমি তোমার স্ত্রীকে খাবার দাও তাতেও নেকী পাবে। (সহীহ বুখারী হা: ৫৬)
সুতরাং আমরা যা দান-সদাকাহ করব তার উদ্দেশ্য থাকবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি, মানুষ আমাকে দানবীর বলবে কিম্বা তাদের বাহবাহ পাওয়ার জন্য নয়।
ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য হল: তারা শত অভাব অনটনেও কারো কাছে হাত পাতে না।
الحاف ইলহাফ অর্থ হল: সর্বাত্মকভাবে কারো কাছে চাওয়া বা নিবেদন করা। (তাফসীর মুয়াসসার, পৃঃ ৪৬)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মিসকিন সে নয় যে একটি দু’টি খেজুরের জন্য বা এক-দু’লোকমা খাবারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় বরং প্রকৃত মিসকিন হল সে যে অভাবী হওয়া সত্ত্বেও চাওয়া থেকে বেঁচে থাকে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াত
(لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا)
পাঠ করলেন। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৭৬)
(اَلَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ...)
যারা রাতে ও দিনে, গোপনে এবং প্রকাশ্যে তাদের মাল খরচ করে’তথা যারা সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে। তবে কখনো গোপনের চেয়ে প্রকাশ্যে, আবার কখনো প্রকাশ্যের চেয়ে গোপনে দান করা উত্তম হয়। যখন প্রকাশ্যে দান করলে অন্যরা উৎসাহিত হবে তখন প্রকাশে দান করা উত্তম, তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন কোনক্রমেই মনে মানুষের বাহবা পাওয়ার ইচ্ছা না জাগে। পূর্বের আয়াতে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাফিরদেরকেও সাধারণ দান-সদাকাহ দেয়া জায়েয আছে। তবে যাকাত দেয়া যাবে না কেননা তা কেবল মু’মিনদের হক।
২. দানের ক্ষেত্রে নিয়ত ঠিক রাখা আবশ্যক।
৩. প্রয়োজনের তারতম্য অনুযায়ী দান-সদাকার মর্যাদায় কম-বেশি হয়।
৪. যারা প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অন্যের কাছে হাত পাতে না তাদের মর্যাদা জানলাম।
৫. সচ্ছল-অসচ্ছল সর্বাবস্থায় যারা দান করে তাদের অনেক প্রতিদান রয়েছে।
শানে নুযূল:
ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, সাহাবাগণ তাঁদের মুশরিক আত্মীয় স্বজনদের সাথে আদান-প্রদান করতে অপছন্দ করতেন। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হল। তখন
(لَيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ)
‘তাদের হিদায়াতের দায়িত্ব তোমার ওপর নয়’আয়াতটি অবতীর্ণ হল। (নাসাঈ হা: ১১৫২, সহীহ)
সাঈদ বিন যুবাইর থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণিত, মুসলিমগণ যিম্মী কাফিরদের দান-সদাকাহ করত। যখন মুসলিম দরিদ্রদের সংখ্যা বেড়ে গেল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তেমাদের দীনের অনুসারী ছাড়া অন্য কাউকে দান-সদাকাহ করো না। তখন এ আয়াত নাযিল হয় (ইবনু আবী শাইবা ২/১০৪)।
যাই হোক, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর দায়িত্ব হল দীনের দাওয়াত পৌঁছে দেয়া, কল্যাণ কাজে মানুষকে উৎসাহ দেয়া এবং অন্যায় ও খারপ কাজ থেকে নিষেধ করা। হিদায়াতের মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা, তিনি যাকে ইচ্ছা সঠিক পথের হিদায়াত দিয়ে থাকেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللّٰهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ ﺚوَهُوَ أَعْلَمُ بِالْمُهْتَدِينَ)
“তুমি যাকে ভালবাস, ইচ্ছা করলেই তাকে সৎ পথে আনতে পারবে না। তবে আল্লাহই যাকে ইচ্ছা সৎ পথে আনয়ন করেন এবং তিনিই ভাল জানেন সৎ পথ অনুসারীদেরকে।”(সূরা কাসাস ২৮:৫৬)لِلْفُقَرَآءِ ‘ফকিরদের জন্য’এখানে ফকির দ্বারা মুহাজিরদেরকে বুঝানো হয়েছে। কারণ তারা মক্কায় সবকিছু ছেড়ে রিক্তহস্তে মদীনায় চলে এসেছেন। তারা ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য কোথাও যেতে পারেন না, যুদ্ধ জিহাদে ব্যস্ত থাকার কারণে যারা তাদেরকে চেনে না, তারা মনে করে এদেরকে দানের কোন প্রয়োজন নেই। কেননা তারা চায় না, তাদের আচার-আচরণ ও চাল-চলনে সে রকম কিছু বুঝা যায় না। এদেরকে দান করা খুব নেকীর কাজ।
(إِلَّا ابْتِغَآءَ وَجْهِ اللّٰهِ)
‘আল্লাহর সন্তুষ্টি ছাড়া অন্য কোন উদ্দেশ্যে ব্যয় কর’যখন একজন মুসলিম একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি লাভের জন্য ব্যয় করবে তখন সে প্রত্যেক ব্যয়ের জন্য নেকী পাবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: তুমি যে ব্যয়ই কর তার দ্বারা যদি আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি চাও তাহলে তার প্রতিদান পাবে এমনকি যদি তুমি তোমার স্ত্রীকে খাবার দাও তাতেও নেকী পাবে। (সহীহ বুখারী হা: ৫৬)
সুতরাং আমরা যা দান-সদাকাহ করব তার উদ্দেশ্য থাকবে একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি, মানুষ আমাকে দানবীর বলবে কিম্বা তাদের বাহবাহ পাওয়ার জন্য নয়।
ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য হল: তারা শত অভাব অনটনেও কারো কাছে হাত পাতে না।
الحاف ইলহাফ অর্থ হল: সর্বাত্মকভাবে কারো কাছে চাওয়া বা নিবেদন করা। (তাফসীর মুয়াসসার, পৃঃ ৪৬)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মিসকিন সে নয় যে একটি দু’টি খেজুরের জন্য বা এক-দু’লোকমা খাবারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়ায় বরং প্রকৃত মিসকিন হল সে যে অভাবী হওয়া সত্ত্বেও চাওয়া থেকে বেঁচে থাকে। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এ আয়াত
(لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا)
পাঠ করলেন। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৭৬)
(اَلَّذِیْنَ یُنْفِقُوْنَ...)
যারা রাতে ও দিনে, গোপনে এবং প্রকাশ্যে তাদের মাল খরচ করে’তথা যারা সর্বদা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে। তবে কখনো গোপনের চেয়ে প্রকাশ্যে, আবার কখনো প্রকাশ্যের চেয়ে গোপনে দান করা উত্তম হয়। যখন প্রকাশ্যে দান করলে অন্যরা উৎসাহিত হবে তখন প্রকাশে দান করা উত্তম, তবে সতর্ক থাকতে হবে যেন কোনক্রমেই মনে মানুষের বাহবা পাওয়ার ইচ্ছা না জাগে। পূর্বের আয়াতে এ সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাফিরদেরকেও সাধারণ দান-সদাকাহ দেয়া জায়েয আছে। তবে যাকাত দেয়া যাবে না কেননা তা কেবল মু’মিনদের হক।
২. দানের ক্ষেত্রে নিয়ত ঠিক রাখা আবশ্যক।
৩. প্রয়োজনের তারতম্য অনুযায়ী দান-সদাকার মর্যাদায় কম-বেশি হয়।
৪. যারা প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও অন্যের কাছে হাত পাতে না তাদের মর্যাদা জানলাম।
৫. সচ্ছল-অসচ্ছল সর্বাবস্থায় যারা দান করে তাদের অনেক প্রতিদান রয়েছে।
2:275
اَلَّذِیۡنَ یَاۡکُلُوۡنَ
الرِّبٰوا لَا یَقُوۡمُوۡنَ اِلَّا کَمَا یَقُوۡمُ الَّذِیۡ یَتَخَبَّطُہُ
الشَّیۡطٰنُ مِنَ الۡمَسِّ ؕ ذٰلِکَ بِاَنَّہُمۡ قَالُوۡۤا اِنَّمَا الۡبَیۡعُ
مِثۡلُ الرِّبٰوا ۘ وَ اَحَلَّ اللّٰہُ الۡبَیۡعَ وَ حَرَّمَ الرِّبٰوا ؕ فَمَنۡ
جَآءَہٗ مَوۡعِظَۃٌ مِّنۡ رَّبِّہٖ فَانۡتَہٰی فَلَہٗ مَا سَلَفَ ؕ وَ اَمۡرُہٗۤ
اِلَی اللّٰہِ ؕ وَ مَنۡ عَادَ فَاُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ ہُمۡ فِیۡہَا
خٰلِدُوۡنَ ﴿۲۷۵﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৭৫-২৭৭ নং আয়াতের
তাফসীর:
পূর্বের আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা দানের প্রতি উৎসাহ, দানের ফযীলত ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ আয়াতে যারা সুদ খায় কিয়ামতের দিন তাদের কী অবস্থা হবে, সুদের বিধি-বিধান ও যারা সুদের বিধান জানার পরেও বর্জন করে না তাদের বিধান সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।
সুদ দারিদ্র বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনের প্রধান অন্তরায়। এটি মানব জীবনে এমন একটি মারাত্মক ব্যাধি যা দরিদ্রকে নিঃসম্বল করে আর সম্পদশালীদের সম্পদ বেশী করে। এটি সমাজের একশ্রেণির পুঁজিবাদী লোকেদের অন্যের সম্পদ শোষণের হাতিয়ার। পূর্ববর্তী জাতিকে যেসকল অপরাধের কারণে লা‘নত করা করা হয়েছে তাদের অন্যতম একটি হল সুদ (সূরা নিসা ৪:২৬৯)। যারা জেনেশুনে সুদ খায়, সুদ বৈধতার লাইসেন্স প্রদান করে তারা মূলত আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। সুতরাং এমন জঘন্য অপরাধ থেকে সকলকে সতর্ক হওয়া উচিত।
সুদের পরিচয়: সুদের আরবি হল- রিবা (الربا) যার অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া, অতিরিক্ত। উদ্দেশ্য হল যা মূল ধনের অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয়।
শরীয়তের পরিভাষায় সুদ:
প্রধানত সুদ দু’প্রকারে হয়- (১) বাকীতে সুদ ঋণগ্রহীতা থেকে ঋণদাতা সময়ের তারতম্যে মূল ধনের অতিরিক্ত যা গ্রহণ করে থাকে। যেমন এক টাকায় এক বছর পর দুই টাকা গ্রহণ করা।
(২) একই জাতীয় দ্রব্য বা পণ্য লেনদেনে কম-বেশি করা যদিও দ্রব্য বা পণ্যের মানে তারতম্য হয়। যেমন এক কেজি চাউলের বিনিময়ে দু’কেজি চাউল গ্রহণ করা।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ব্যক্তিকে খায়বারের কর্মচারী নিয়োগ দিলেন। সে ভাল ভাল খেজুর নিয়ে আসল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: খায়বারের সব খেজুর কি এরূপ? সে বলল: না, দু’সা‘ (এক সা‘ প্রায় আড়াই কেজি) নিম্নমানের খেজুরের বিনিময়ে এক সা‘ ভাল খেজুর গ্রহণ করি, আবার তিনি সা‘ নিম্নমানের খেজুরের বিনিময়ে দু’সা‘ ভাল খেজুর গ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: এরূপ করো না, (নিম্নমানের খেজুর) সব দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে তারপর দিরহাম দ্বারা ভাল খেজুর ক্রয় কর। (সহীহ বুখারী হা:২০৮৯)
প্রথমেই আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন সুদখোরদের ভয়ানক অবস্থা ও লাঞ্ছনা-বঞ্ছনার একটি উপমা তুলে ধরেছেন। যারা সুদ খায় তারা হাশরের দিন কবর থেকে ঐ ব্যক্তির মত উঠবে যে ব্যক্তিকে কোন শয়তান-জিন আছর করে উন্মাদ ও পাগল করে দেয়। তাদের এ ভয়ানক ও লাঞ্ছনার কারণ হল, তারা সুদকে ব্যবসার মত হালাল মনে করে। তাদের বক্তব্য হলো ব্যবসায় যেমন হালাল, ব্যবসা করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় তেমনি সুদ সম্পদ বৃদ্ধি করে, তাই ব্যবসার মত সুদও হালাল, উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। এখান থেকে জানা গেল, জিন ও শয়তানের আছরের ফলে মানুষ অজ্ঞান কিংবা উন্মাদ হতে পারে। এর বাস্তবতা রয়েছে, চিকিৎসাবিদ ও দার্শনিকরাও স্বীকার করেন। মৃত্যুকালীন সময় শয়তানের আছর থেকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় চাইতেন। (নাসায়ী হা: ৫৫৩১, সহীহ)
প্রথমেই সুদখোরদের এ ভয়ানক অবস্থা আলোচনার কারণ হল, যাতে মানুষ সুদ থেকে বিরত থাকে। আয়াতে ‘সুদ খাওয়া’র (یَاْکُلُوْنَ) কথা বলা হয়েছে। এ অর্থ হল- সুদ গ্রহণ করা ও সুদী লেন-দেন করা। খাওয়ার জন্য ব্যবহার করুক, কিংবা পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-বাড়ি অথবা আসবাবপত্র নির্মাণে ব্যবহার করুক। কিন্তু বিষয়টি ‘খাওয়া’শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করার কারণ হল- যে বস্তু খেয়ে ফেলা হয়, তা আর ফেরত দেয়ার সুযোগ থাকে না। অন্যরকম ব্যবহারে ফেরত দেয়ার সুুযোগ থাকে। তাই পুরোপুরি আত্মসাৎ করার কথা বুঝাতে ‘খেয়ে ফেলা’শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
(لَا یَقُوْمُوْنَ اَلاَّ...)
‘দণ্ডায়ামন হবে’এখানে দণ্ডায়মান হওয়ার অর্থ হল- কবর থেকে হাশরের উদ্দেশ্যে উঠা। সুদখোর যখন কবর থেকে উঠবে তখন ঐ পাগল বা উন্মাদের মত উঠবে যাকে কোন শয়তান-জিন আছর করে দিশেহারা করে দেয়।
(فَمَنْ جَا۬ءَھ۫ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّھ۪ فَانْتَھٰی)
‘সুতরাং যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসবে’অর্থাৎ যে ব্যক্তির কাছে ‘সুদ হারাম’- আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী পৌঁছল, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে সুদ খাওয়া ও সকল প্রকার সুদী লেন-দেন বর্জন করল এমন ব্যক্তির পূর্ববর্তী সুদী লেন-দেনের জন্য পাকড়াও করবেন না। আর যে ব্যক্তি জানার পরও বিরত থাকবে না তার ঠিকানা জাহান্নাম।
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: সুদ সম্পর্কে সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের নিকট তা পাঠ করে শোনালেন। তারপর সুদের ব্যবসায় নিষিদ্ধ করে দিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫৪০)
সুদখোরদের শাস্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার বাণী ছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
যেমন তিনি বলেন:الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ
সুদের ৭০টি অপরাধ রয়েছে আর সর্বনিম্ন অপরাধ হল সুদখোর যেন তার মাকে বিবাহ করল। (সহীহুত তারগীব হা: ১৮৫৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:لَعَنَ اللَّهُ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَشَاهِدَهُ وَكَاتِبَهُ
আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন সুদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী, সাক্ষ্য দানকারী ও লেখকের প্রতি। (নাসাঈ হা: ৫০১৪, সহীহ)
যে সাতটি কারণে জাতির ধ্বংস অনিবার্য তার অন্যতম একটি হল সুদ। (সহীহ বুখারী হা: ২৭৬৬)
(یَمْحَقُ اللہُ الرِّبٰوا)
‘আল্লাহ তা‘আলা সুদকে মিটিয়ে দেন’অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে সুদী লেন-দেন করে যতই লাভ আসুক, পরিমাণে যতই বেশি দেখা যাক প্রকৃতপক্ষে তা বেশি না, তাতে কোন বরকত নেই। আল্লাহ তা‘আলা তার অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ اٰتَیْتُمْ مِّنْ رِّبًا لِّیَرْبُوَا فِیْٓ اَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا یَرْبُوْا عِنْدَ اللہِ)
“মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের সম্পদবৃদ্ধি পাবে এ আশায় যা কিছু তোমরা সুদ ভিত্তিক দিয়ে থাক, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না।”(সূরা রূম ৩০:৩৯)
অবশেষে ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য ও দান-সদকার প্রতিদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি হালাল অর্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদাকাহ করবে (আল্লাহ তা‘আলা তা কবুল করেন) এবং আল্লাহ তা‘আলা কেবল পবিত্র বস্তু কবুল করেন আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ডান হাত দ্বারা তা কবূল করেন। এরপর আল্লাহ তা‘আলা দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সদাক্বাহ পাহাড় সমপরিমাণ হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী হা: ১৪১০)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সুদখোরদের ভয়ানক পরিণতি বিশেষ করে যারা সুদ হারাম হবার কথা জানার পরেও বিরত থাকবে না।
২. সকল প্রকার সুদ হারাম।
৩. সুদে সম্পদ বৃদ্ধি হয় না।
৪. ঈমানদারদের জন্য সুসংবাদ।
৫. আল্লাহ তা‘আলার হাত রয়েছে তার প্রমাণ পেলাম।
পূর্বের আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা দানের প্রতি উৎসাহ, দানের ফযীলত ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ আয়াতে যারা সুদ খায় কিয়ামতের দিন তাদের কী অবস্থা হবে, সুদের বিধি-বিধান ও যারা সুদের বিধান জানার পরেও বর্জন করে না তাদের বিধান সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।
সুদ দারিদ্র বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনের প্রধান অন্তরায়। এটি মানব জীবনে এমন একটি মারাত্মক ব্যাধি যা দরিদ্রকে নিঃসম্বল করে আর সম্পদশালীদের সম্পদ বেশী করে। এটি সমাজের একশ্রেণির পুঁজিবাদী লোকেদের অন্যের সম্পদ শোষণের হাতিয়ার। পূর্ববর্তী জাতিকে যেসকল অপরাধের কারণে লা‘নত করা করা হয়েছে তাদের অন্যতম একটি হল সুদ (সূরা নিসা ৪:২৬৯)। যারা জেনেশুনে সুদ খায়, সুদ বৈধতার লাইসেন্স প্রদান করে তারা মূলত আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। সুতরাং এমন জঘন্য অপরাধ থেকে সকলকে সতর্ক হওয়া উচিত।
সুদের পরিচয়: সুদের আরবি হল- রিবা (الربا) যার অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া, অতিরিক্ত। উদ্দেশ্য হল যা মূল ধনের অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয়।
শরীয়তের পরিভাষায় সুদ:
প্রধানত সুদ দু’প্রকারে হয়- (১) বাকীতে সুদ ঋণগ্রহীতা থেকে ঋণদাতা সময়ের তারতম্যে মূল ধনের অতিরিক্ত যা গ্রহণ করে থাকে। যেমন এক টাকায় এক বছর পর দুই টাকা গ্রহণ করা।
(২) একই জাতীয় দ্রব্য বা পণ্য লেনদেনে কম-বেশি করা যদিও দ্রব্য বা পণ্যের মানে তারতম্য হয়। যেমন এক কেজি চাউলের বিনিময়ে দু’কেজি চাউল গ্রহণ করা।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ব্যক্তিকে খায়বারের কর্মচারী নিয়োগ দিলেন। সে ভাল ভাল খেজুর নিয়ে আসল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: খায়বারের সব খেজুর কি এরূপ? সে বলল: না, দু’সা‘ (এক সা‘ প্রায় আড়াই কেজি) নিম্নমানের খেজুরের বিনিময়ে এক সা‘ ভাল খেজুর গ্রহণ করি, আবার তিনি সা‘ নিম্নমানের খেজুরের বিনিময়ে দু’সা‘ ভাল খেজুর গ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: এরূপ করো না, (নিম্নমানের খেজুর) সব দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে তারপর দিরহাম দ্বারা ভাল খেজুর ক্রয় কর। (সহীহ বুখারী হা:২০৮৯)
প্রথমেই আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন সুদখোরদের ভয়ানক অবস্থা ও লাঞ্ছনা-বঞ্ছনার একটি উপমা তুলে ধরেছেন। যারা সুদ খায় তারা হাশরের দিন কবর থেকে ঐ ব্যক্তির মত উঠবে যে ব্যক্তিকে কোন শয়তান-জিন আছর করে উন্মাদ ও পাগল করে দেয়। তাদের এ ভয়ানক ও লাঞ্ছনার কারণ হল, তারা সুদকে ব্যবসার মত হালাল মনে করে। তাদের বক্তব্য হলো ব্যবসায় যেমন হালাল, ব্যবসা করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় তেমনি সুদ সম্পদ বৃদ্ধি করে, তাই ব্যবসার মত সুদও হালাল, উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। এখান থেকে জানা গেল, জিন ও শয়তানের আছরের ফলে মানুষ অজ্ঞান কিংবা উন্মাদ হতে পারে। এর বাস্তবতা রয়েছে, চিকিৎসাবিদ ও দার্শনিকরাও স্বীকার করেন। মৃত্যুকালীন সময় শয়তানের আছর থেকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় চাইতেন। (নাসায়ী হা: ৫৫৩১, সহীহ)
প্রথমেই সুদখোরদের এ ভয়ানক অবস্থা আলোচনার কারণ হল, যাতে মানুষ সুদ থেকে বিরত থাকে। আয়াতে ‘সুদ খাওয়া’র (یَاْکُلُوْنَ) কথা বলা হয়েছে। এ অর্থ হল- সুদ গ্রহণ করা ও সুদী লেন-দেন করা। খাওয়ার জন্য ব্যবহার করুক, কিংবা পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-বাড়ি অথবা আসবাবপত্র নির্মাণে ব্যবহার করুক। কিন্তু বিষয়টি ‘খাওয়া’শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করার কারণ হল- যে বস্তু খেয়ে ফেলা হয়, তা আর ফেরত দেয়ার সুযোগ থাকে না। অন্যরকম ব্যবহারে ফেরত দেয়ার সুুযোগ থাকে। তাই পুরোপুরি আত্মসাৎ করার কথা বুঝাতে ‘খেয়ে ফেলা’শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
(لَا یَقُوْمُوْنَ اَلاَّ...)
‘দণ্ডায়ামন হবে’এখানে দণ্ডায়মান হওয়ার অর্থ হল- কবর থেকে হাশরের উদ্দেশ্যে উঠা। সুদখোর যখন কবর থেকে উঠবে তখন ঐ পাগল বা উন্মাদের মত উঠবে যাকে কোন শয়তান-জিন আছর করে দিশেহারা করে দেয়।
(فَمَنْ جَا۬ءَھ۫ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّھ۪ فَانْتَھٰی)
‘সুতরাং যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসবে’অর্থাৎ যে ব্যক্তির কাছে ‘সুদ হারাম’- আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী পৌঁছল, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে সুদ খাওয়া ও সকল প্রকার সুদী লেন-দেন বর্জন করল এমন ব্যক্তির পূর্ববর্তী সুদী লেন-দেনের জন্য পাকড়াও করবেন না। আর যে ব্যক্তি জানার পরও বিরত থাকবে না তার ঠিকানা জাহান্নাম।
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: সুদ সম্পর্কে সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের নিকট তা পাঠ করে শোনালেন। তারপর সুদের ব্যবসায় নিষিদ্ধ করে দিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫৪০)
সুদখোরদের শাস্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার বাণী ছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
যেমন তিনি বলেন:الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ
সুদের ৭০টি অপরাধ রয়েছে আর সর্বনিম্ন অপরাধ হল সুদখোর যেন তার মাকে বিবাহ করল। (সহীহুত তারগীব হা: ১৮৫৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:لَعَنَ اللَّهُ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَشَاهِدَهُ وَكَاتِبَهُ
আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন সুদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী, সাক্ষ্য দানকারী ও লেখকের প্রতি। (নাসাঈ হা: ৫০১৪, সহীহ)
যে সাতটি কারণে জাতির ধ্বংস অনিবার্য তার অন্যতম একটি হল সুদ। (সহীহ বুখারী হা: ২৭৬৬)
(یَمْحَقُ اللہُ الرِّبٰوا)
‘আল্লাহ তা‘আলা সুদকে মিটিয়ে দেন’অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে সুদী লেন-দেন করে যতই লাভ আসুক, পরিমাণে যতই বেশি দেখা যাক প্রকৃতপক্ষে তা বেশি না, তাতে কোন বরকত নেই। আল্লাহ তা‘আলা তার অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ اٰتَیْتُمْ مِّنْ رِّبًا لِّیَرْبُوَا فِیْٓ اَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا یَرْبُوْا عِنْدَ اللہِ)
“মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের সম্পদবৃদ্ধি পাবে এ আশায় যা কিছু তোমরা সুদ ভিত্তিক দিয়ে থাক, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না।”(সূরা রূম ৩০:৩৯)
অবশেষে ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য ও দান-সদকার প্রতিদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি হালাল অর্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদাকাহ করবে (আল্লাহ তা‘আলা তা কবুল করেন) এবং আল্লাহ তা‘আলা কেবল পবিত্র বস্তু কবুল করেন আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ডান হাত দ্বারা তা কবূল করেন। এরপর আল্লাহ তা‘আলা দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সদাক্বাহ পাহাড় সমপরিমাণ হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী হা: ১৪১০)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সুদখোরদের ভয়ানক পরিণতি বিশেষ করে যারা সুদ হারাম হবার কথা জানার পরেও বিরত থাকবে না।
২. সকল প্রকার সুদ হারাম।
৩. সুদে সম্পদ বৃদ্ধি হয় না।
৪. ঈমানদারদের জন্য সুসংবাদ।
৫. আল্লাহ তা‘আলার হাত রয়েছে তার প্রমাণ পেলাম।
2:276
یَمۡحَقُ اللّٰہُ
الرِّبٰوا وَ یُرۡبِی الصَّدَقٰتِ ؕ وَ اللّٰہُ لَا یُحِبُّ کُلَّ کَفَّارٍ
اَثِیۡمٍ ﴿۲۷۶﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৭৫-২৭৭ নং আয়াতের
তাফসীর:
পূর্বের আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা দানের প্রতি উৎসাহ, দানের ফযীলত ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ আয়াতে যারা সুদ খায় কিয়ামতের দিন তাদের কী অবস্থা হবে, সুদের বিধি-বিধান ও যারা সুদের বিধান জানার পরেও বর্জন করে না তাদের বিধান সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।
সুদ দারিদ্র বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনের প্রধান অন্তরায়। এটি মানব জীবনে এমন একটি মারাত্মক ব্যাধি যা দরিদ্রকে নিঃসম্বল করে আর সম্পদশালীদের সম্পদ বেশী করে। এটি সমাজের একশ্রেণির পুঁজিবাদী লোকেদের অন্যের সম্পদ শোষণের হাতিয়ার। পূর্ববর্তী জাতিকে যেসকল অপরাধের কারণে লা‘নত করা করা হয়েছে তাদের অন্যতম একটি হল সুদ (সূরা নিসা ৪:২৬৯)। যারা জেনেশুনে সুদ খায়, সুদ বৈধতার লাইসেন্স প্রদান করে তারা মূলত আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। সুতরাং এমন জঘন্য অপরাধ থেকে সকলকে সতর্ক হওয়া উচিত।
সুদের পরিচয়: সুদের আরবি হল- রিবা (الربا) যার অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া, অতিরিক্ত। উদ্দেশ্য হল যা মূল ধনের অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয়।
শরীয়তের পরিভাষায় সুদ:
প্রধানত সুদ দু’প্রকারে হয়- (১) বাকীতে সুদ ঋণগ্রহীতা থেকে ঋণদাতা সময়ের তারতম্যে মূল ধনের অতিরিক্ত যা গ্রহণ করে থাকে। যেমন এক টাকায় এক বছর পর দুই টাকা গ্রহণ করা।
(২) একই জাতীয় দ্রব্য বা পণ্য লেনদেনে কম-বেশি করা যদিও দ্রব্য বা পণ্যের মানে তারতম্য হয়। যেমন এক কেজি চাউলের বিনিময়ে দু’কেজি চাউল গ্রহণ করা।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ব্যক্তিকে খায়বারের কর্মচারী নিয়োগ দিলেন। সে ভাল ভাল খেজুর নিয়ে আসল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: খায়বারের সব খেজুর কি এরূপ? সে বলল: না, দু’সা‘ (এক সা‘ প্রায় আড়াই কেজি) নিম্নমানের খেজুরের বিনিময়ে এক সা‘ ভাল খেজুর গ্রহণ করি, আবার তিনি সা‘ নিম্নমানের খেজুরের বিনিময়ে দু’সা‘ ভাল খেজুর গ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: এরূপ করো না, (নিম্নমানের খেজুর) সব দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে তারপর দিরহাম দ্বারা ভাল খেজুর ক্রয় কর। (সহীহ বুখারী হা:২০৮৯)
প্রথমেই আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন সুদখোরদের ভয়ানক অবস্থা ও লাঞ্ছনা-বঞ্ছনার একটি উপমা তুলে ধরেছেন। যারা সুদ খায় তারা হাশরের দিন কবর থেকে ঐ ব্যক্তির মত উঠবে যে ব্যক্তিকে কোন শয়তান-জিন আছর করে উন্মাদ ও পাগল করে দেয়। তাদের এ ভয়ানক ও লাঞ্ছনার কারণ হল, তারা সুদকে ব্যবসার মত হালাল মনে করে। তাদের বক্তব্য হলো ব্যবসায় যেমন হালাল, ব্যবসা করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় তেমনি সুদ সম্পদ বৃদ্ধি করে, তাই ব্যবসার মত সুদও হালাল, উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। এখান থেকে জানা গেল, জিন ও শয়তানের আছরের ফলে মানুষ অজ্ঞান কিংবা উন্মাদ হতে পারে। এর বাস্তবতা রয়েছে, চিকিৎসাবিদ ও দার্শনিকরাও স্বীকার করেন। মৃত্যুকালীন সময় শয়তানের আছর থেকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় চাইতেন। (নাসায়ী হা: ৫৫৩১, সহীহ)
প্রথমেই সুদখোরদের এ ভয়ানক অবস্থা আলোচনার কারণ হল, যাতে মানুষ সুদ থেকে বিরত থাকে। আয়াতে ‘সুদ খাওয়া’র (یَاْکُلُوْنَ) কথা বলা হয়েছে। এ অর্থ হল- সুদ গ্রহণ করা ও সুদী লেন-দেন করা। খাওয়ার জন্য ব্যবহার করুক, কিংবা পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-বাড়ি অথবা আসবাবপত্র নির্মাণে ব্যবহার করুক। কিন্তু বিষয়টি ‘খাওয়া’শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করার কারণ হল- যে বস্তু খেয়ে ফেলা হয়, তা আর ফেরত দেয়ার সুযোগ থাকে না। অন্যরকম ব্যবহারে ফেরত দেয়ার সুুযোগ থাকে। তাই পুরোপুরি আত্মসাৎ করার কথা বুঝাতে ‘খেয়ে ফেলা’শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
(لَا یَقُوْمُوْنَ اَلاَّ...)
‘দণ্ডায়ামন হবে’এখানে দণ্ডায়মান হওয়ার অর্থ হল- কবর থেকে হাশরের উদ্দেশ্যে উঠা। সুদখোর যখন কবর থেকে উঠবে তখন ঐ পাগল বা উন্মাদের মত উঠবে যাকে কোন শয়তান-জিন আছর করে দিশেহারা করে দেয়।فَمَنْ جَا۬ءَھ۫ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّھ۪ فَانْتَھٰی)
‘সুতরাং যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসবে’অর্থাৎ যে ব্যক্তির কাছে ‘সুদ হারাম’- আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী পৌঁছল, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে সুদ খাওয়া ও সকল প্রকার সুদী লেন-দেন বর্জন করল এমন ব্যক্তির পূর্ববর্তী সুদী লেন-দেনের জন্য পাকড়াও করবেন না। আর যে ব্যক্তি জানার পরও বিরত থাকবে না তার ঠিকানা জাহান্নাম।
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: সুদ সম্পর্কে সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের নিকট তা পাঠ করে শোনালেন। তারপর সুদের ব্যবসায় নিষিদ্ধ করে দিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫৪০)
সুদখোরদের শাস্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার বাণী ছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
যেমন তিনি বলেন:الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ
সুদের ৭০টি অপরাধ রয়েছে আর সর্বনিম্ন অপরাধ হল সুদখোর যেন তার মাকে বিবাহ করল। (সহীহুত তারগীব হা: ১৮৫৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
لَعَنَ اللَّهُ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَشَاهِدَهُ وَكَاتِبَهُ
আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন সুদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী, সাক্ষ্য দানকারী ও লেখকের প্রতি। (নাসাঈ হা: ৫০১৪, সহীহ)
যে সাতটি কারণে জাতির ধ্বংস অনিবার্য তার অন্যতম একটি হল সুদ। (সহীহ বুখারী হা: ২৭৬৬)
(یَمْحَقُ اللہُ الرِّبٰوا)
‘আল্লাহ তা‘আলা সুদকে মিটিয়ে দেন’অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে সুদী লেন-দেন করে যতই লাভ আসুক, পরিমাণে যতই বেশি দেখা যাক প্রকৃতপক্ষে তা বেশি না, তাতে কোন বরকত নেই। আল্লাহ তা‘আলা তার অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ اٰتَیْتُمْ مِّنْ رِّبًا لِّیَرْبُوَا فِیْٓ اَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا یَرْبُوْا عِنْدَ اللہِ)
“মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের সম্পদবৃদ্ধি পাবে এ আশায় যা কিছু তোমরা সুদ ভিত্তিক দিয়ে থাক, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না।”(সূরা রূম ৩০:৩৯)
অবশেষে ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য ও দান-সদকার প্রতিদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি হালাল অর্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদাকাহ করবে (আল্লাহ তা‘আলা তা কবুল করেন) এবং আল্লাহ তা‘আলা কেবল পবিত্র বস্তু কবুল করেন আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ডান হাত দ্বারা তা কবূল করেন। এরপর আল্লাহ তা‘আলা দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সদাক্বাহ পাহাড় সমপরিমাণ হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী হা: ১৪১০)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সুদখোরদের ভয়ানক পরিণতি বিশেষ করে যারা সুদ হারাম হবার কথা জানার পরেও বিরত থাকবে না।
২. সকল প্রকার সুদ হারাম।
৩. সুদে সম্পদ বৃদ্ধি হয় না।
৪. ঈমানদারদের জন্য সুসংবাদ।
৫. আল্লাহ তা‘আলার হাত রয়েছে তার প্রমাণ পেলাম।
পূর্বের আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা দানের প্রতি উৎসাহ, দানের ফযীলত ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ আয়াতে যারা সুদ খায় কিয়ামতের দিন তাদের কী অবস্থা হবে, সুদের বিধি-বিধান ও যারা সুদের বিধান জানার পরেও বর্জন করে না তাদের বিধান সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।
সুদ দারিদ্র বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনের প্রধান অন্তরায়। এটি মানব জীবনে এমন একটি মারাত্মক ব্যাধি যা দরিদ্রকে নিঃসম্বল করে আর সম্পদশালীদের সম্পদ বেশী করে। এটি সমাজের একশ্রেণির পুঁজিবাদী লোকেদের অন্যের সম্পদ শোষণের হাতিয়ার। পূর্ববর্তী জাতিকে যেসকল অপরাধের কারণে লা‘নত করা করা হয়েছে তাদের অন্যতম একটি হল সুদ (সূরা নিসা ৪:২৬৯)। যারা জেনেশুনে সুদ খায়, সুদ বৈধতার লাইসেন্স প্রদান করে তারা মূলত আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। সুতরাং এমন জঘন্য অপরাধ থেকে সকলকে সতর্ক হওয়া উচিত।
সুদের পরিচয়: সুদের আরবি হল- রিবা (الربا) যার অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া, অতিরিক্ত। উদ্দেশ্য হল যা মূল ধনের অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয়।
শরীয়তের পরিভাষায় সুদ:
প্রধানত সুদ দু’প্রকারে হয়- (১) বাকীতে সুদ ঋণগ্রহীতা থেকে ঋণদাতা সময়ের তারতম্যে মূল ধনের অতিরিক্ত যা গ্রহণ করে থাকে। যেমন এক টাকায় এক বছর পর দুই টাকা গ্রহণ করা।
(২) একই জাতীয় দ্রব্য বা পণ্য লেনদেনে কম-বেশি করা যদিও দ্রব্য বা পণ্যের মানে তারতম্য হয়। যেমন এক কেজি চাউলের বিনিময়ে দু’কেজি চাউল গ্রহণ করা।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ব্যক্তিকে খায়বারের কর্মচারী নিয়োগ দিলেন। সে ভাল ভাল খেজুর নিয়ে আসল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: খায়বারের সব খেজুর কি এরূপ? সে বলল: না, দু’সা‘ (এক সা‘ প্রায় আড়াই কেজি) নিম্নমানের খেজুরের বিনিময়ে এক সা‘ ভাল খেজুর গ্রহণ করি, আবার তিনি সা‘ নিম্নমানের খেজুরের বিনিময়ে দু’সা‘ ভাল খেজুর গ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: এরূপ করো না, (নিম্নমানের খেজুর) সব দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে তারপর দিরহাম দ্বারা ভাল খেজুর ক্রয় কর। (সহীহ বুখারী হা:২০৮৯)
প্রথমেই আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন সুদখোরদের ভয়ানক অবস্থা ও লাঞ্ছনা-বঞ্ছনার একটি উপমা তুলে ধরেছেন। যারা সুদ খায় তারা হাশরের দিন কবর থেকে ঐ ব্যক্তির মত উঠবে যে ব্যক্তিকে কোন শয়তান-জিন আছর করে উন্মাদ ও পাগল করে দেয়। তাদের এ ভয়ানক ও লাঞ্ছনার কারণ হল, তারা সুদকে ব্যবসার মত হালাল মনে করে। তাদের বক্তব্য হলো ব্যবসায় যেমন হালাল, ব্যবসা করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় তেমনি সুদ সম্পদ বৃদ্ধি করে, তাই ব্যবসার মত সুদও হালাল, উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। এখান থেকে জানা গেল, জিন ও শয়তানের আছরের ফলে মানুষ অজ্ঞান কিংবা উন্মাদ হতে পারে। এর বাস্তবতা রয়েছে, চিকিৎসাবিদ ও দার্শনিকরাও স্বীকার করেন। মৃত্যুকালীন সময় শয়তানের আছর থেকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় চাইতেন। (নাসায়ী হা: ৫৫৩১, সহীহ)
প্রথমেই সুদখোরদের এ ভয়ানক অবস্থা আলোচনার কারণ হল, যাতে মানুষ সুদ থেকে বিরত থাকে। আয়াতে ‘সুদ খাওয়া’র (یَاْکُلُوْنَ) কথা বলা হয়েছে। এ অর্থ হল- সুদ গ্রহণ করা ও সুদী লেন-দেন করা। খাওয়ার জন্য ব্যবহার করুক, কিংবা পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-বাড়ি অথবা আসবাবপত্র নির্মাণে ব্যবহার করুক। কিন্তু বিষয়টি ‘খাওয়া’শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করার কারণ হল- যে বস্তু খেয়ে ফেলা হয়, তা আর ফেরত দেয়ার সুযোগ থাকে না। অন্যরকম ব্যবহারে ফেরত দেয়ার সুুযোগ থাকে। তাই পুরোপুরি আত্মসাৎ করার কথা বুঝাতে ‘খেয়ে ফেলা’শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
(لَا یَقُوْمُوْنَ اَلاَّ...)
‘দণ্ডায়ামন হবে’এখানে দণ্ডায়মান হওয়ার অর্থ হল- কবর থেকে হাশরের উদ্দেশ্যে উঠা। সুদখোর যখন কবর থেকে উঠবে তখন ঐ পাগল বা উন্মাদের মত উঠবে যাকে কোন শয়তান-জিন আছর করে দিশেহারা করে দেয়।فَمَنْ جَا۬ءَھ۫ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّھ۪ فَانْتَھٰی)
‘সুতরাং যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসবে’অর্থাৎ যে ব্যক্তির কাছে ‘সুদ হারাম’- আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী পৌঁছল, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে সুদ খাওয়া ও সকল প্রকার সুদী লেন-দেন বর্জন করল এমন ব্যক্তির পূর্ববর্তী সুদী লেন-দেনের জন্য পাকড়াও করবেন না। আর যে ব্যক্তি জানার পরও বিরত থাকবে না তার ঠিকানা জাহান্নাম।
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: সুদ সম্পর্কে সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের নিকট তা পাঠ করে শোনালেন। তারপর সুদের ব্যবসায় নিষিদ্ধ করে দিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫৪০)
সুদখোরদের শাস্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার বাণী ছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
যেমন তিনি বলেন:الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ
সুদের ৭০টি অপরাধ রয়েছে আর সর্বনিম্ন অপরাধ হল সুদখোর যেন তার মাকে বিবাহ করল। (সহীহুত তারগীব হা: ১৮৫৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
لَعَنَ اللَّهُ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَشَاهِدَهُ وَكَاتِبَهُ
আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন সুদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী, সাক্ষ্য দানকারী ও লেখকের প্রতি। (নাসাঈ হা: ৫০১৪, সহীহ)
যে সাতটি কারণে জাতির ধ্বংস অনিবার্য তার অন্যতম একটি হল সুদ। (সহীহ বুখারী হা: ২৭৬৬)
(یَمْحَقُ اللہُ الرِّبٰوا)
‘আল্লাহ তা‘আলা সুদকে মিটিয়ে দেন’অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে সুদী লেন-দেন করে যতই লাভ আসুক, পরিমাণে যতই বেশি দেখা যাক প্রকৃতপক্ষে তা বেশি না, তাতে কোন বরকত নেই। আল্লাহ তা‘আলা তার অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ اٰتَیْتُمْ مِّنْ رِّبًا لِّیَرْبُوَا فِیْٓ اَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا یَرْبُوْا عِنْدَ اللہِ)
“মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের সম্পদবৃদ্ধি পাবে এ আশায় যা কিছু তোমরা সুদ ভিত্তিক দিয়ে থাক, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না।”(সূরা রূম ৩০:৩৯)
অবশেষে ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য ও দান-সদকার প্রতিদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি হালাল অর্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদাকাহ করবে (আল্লাহ তা‘আলা তা কবুল করেন) এবং আল্লাহ তা‘আলা কেবল পবিত্র বস্তু কবুল করেন আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ডান হাত দ্বারা তা কবূল করেন। এরপর আল্লাহ তা‘আলা দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সদাক্বাহ পাহাড় সমপরিমাণ হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী হা: ১৪১০)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সুদখোরদের ভয়ানক পরিণতি বিশেষ করে যারা সুদ হারাম হবার কথা জানার পরেও বিরত থাকবে না।
২. সকল প্রকার সুদ হারাম।
৩. সুদে সম্পদ বৃদ্ধি হয় না।
৪. ঈমানদারদের জন্য সুসংবাদ।
৫. আল্লাহ তা‘আলার হাত রয়েছে তার প্রমাণ পেলাম।
2:277
اِنَّ الَّذِیۡنَ
اٰمَنُوۡا وَ عَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ وَ اَقَامُوا الصَّلٰوۃَ وَ اٰتَوُا الزَّکٰوۃَ
لَہُمۡ اَجۡرُہُمۡ عِنۡدَ رَبِّہِمۡ ۚ وَ لَا خَوۡفٌ عَلَیۡہِمۡ وَ لَا ہُمۡ
یَحۡزَنُوۡنَ ﴿۲۷۷﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৭৫-২৭৭ নং আয়াতের
তাফসীর:
পূর্বের আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা দানের প্রতি উৎসাহ, দানের ফযীলত ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ আয়াতে যারা সুদ খায় কিয়ামতের দিন তাদের কী অবস্থা হবে, সুদের বিধি-বিধান ও যারা সুদের বিধান জানার পরেও বর্জন করে না তাদের বিধান সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।
সুদ দারিদ্র বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনের প্রধান অন্তরায়। এটি মানব জীবনে এমন একটি মারাত্মক ব্যাধি যা দরিদ্রকে নিঃসম্বল করে আর সম্পদশালীদের সম্পদ বেশী করে। এটি সমাজের একশ্রেণির পুঁজিবাদী লোকেদের অন্যের সম্পদ শোষণের হাতিয়ার। পূর্ববর্তী জাতিকে যেসকল অপরাধের কারণে লা‘নত করা করা হয়েছে তাদের অন্যতম একটি হল সুদ (সূরা নিসা ৪:২৬৯)। যারা জেনেশুনে সুদ খায়, সুদ বৈধতার লাইসেন্স প্রদান করে তারা মূলত আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। সুতরাং এমন জঘন্য অপরাধ থেকে সকলকে সতর্ক হওয়া উচিত।
সুদের পরিচয়: সুদের আরবি হল- রিবা (الربا) যার অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া, অতিরিক্ত। উদ্দেশ্য হল যা মূল ধনের অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয়।
শরীয়তের পরিভাষায় সুদ:
প্রধানত সুদ দু’প্রকারে হয়- (১) বাকীতে সুদ ঋণগ্রহীতা থেকে ঋণদাতা সময়ের তারতম্যে মূল ধনের অতিরিক্ত যা গ্রহণ করে থাকে। যেমন এক টাকায় এক বছর পর দুই টাকা গ্রহণ করা।
(২) একই জাতীয় দ্রব্য বা পণ্য লেনদেনে কম-বেশি করা যদিও দ্রব্য বা পণ্যের মানে তারতম্য হয়। যেমন এক কেজি চাউলের বিনিময়ে দু’কেজি চাউল গ্রহণ করা।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ব্যক্তিকে খায়বারের কর্মচারী নিয়োগ দিলেন। সে ভাল ভাল খেজুর নিয়ে আসল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: খায়বারের সব খেজুর কি এরূপ? সে বলল: না, দু’সা‘ (এক সা‘ প্রায় আড়াই কেজি) নিম্নমানের খেজুরের বিনিময়ে এক সা‘ ভাল খেজুর গ্রহণ করি, আবার তিনি সা‘ নিম্নমানের খেজুরের বিনিময়ে দু’সা‘ ভাল খেজুর গ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: এরূপ করো না, (নিম্নমানের খেজুর) সব দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে তারপর দিরহাম দ্বারা ভাল খেজুর ক্রয় কর। (সহীহ বুখারী হা:২০৮৯)
প্রথমেই আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন সুদখোরদের ভয়ানক অবস্থা ও লাঞ্ছনা-বঞ্ছনার একটি উপমা তুলে ধরেছেন। যারা সুদ খায় তারা হাশরের দিন কবর থেকে ঐ ব্যক্তির মত উঠবে যে ব্যক্তিকে কোন শয়তান-জিন আছর করে উন্মাদ ও পাগল করে দেয়। তাদের এ ভয়ানক ও লাঞ্ছনার কারণ হল, তারা সুদকে ব্যবসার মত হালাল মনে করে। তাদের বক্তব্য হলো ব্যবসায় যেমন হালাল, ব্যবসা করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় তেমনি সুদ সম্পদ বৃদ্ধি করে, তাই ব্যবসার মত সুদও হালাল, উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। এখান থেকে জানা গেল, জিন ও শয়তানের আছরের ফলে মানুষ অজ্ঞান কিংবা উন্মাদ হতে পারে। এর বাস্তবতা রয়েছে, চিকিৎসাবিদ ও দার্শনিকরাও স্বীকার করেন। মৃত্যুকালীন সময় শয়তানের আছর থেকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় চাইতেন। (নাসায়ী হা: ৫৫৩১, সহীহ)
প্রথমেই সুদখোরদের এ ভয়ানক অবস্থা আলোচনার কারণ হল, যাতে মানুষ সুদ থেকে বিরত থাকে। আয়াতে ‘সুদ খাওয়া’র (یَاْکُلُوْنَ) কথা বলা হয়েছে। এ অর্থ হল- সুদ গ্রহণ করা ও সুদী লেন-দেন করা। খাওয়ার জন্য ব্যবহার করুক, কিংবা পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-বাড়ি অথবা আসবাবপত্র নির্মাণে ব্যবহার করুক। কিন্তু বিষয়টি ‘খাওয়া’শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করার কারণ হল- যে বস্তু খেয়ে ফেলা হয়, তা আর ফেরত দেয়ার সুযোগ থাকে না। অন্যরকম ব্যবহারে ফেরত দেয়ার সুুযোগ থাকে। তাই পুরোপুরি আত্মসাৎ করার কথা বুঝাতে ‘খেয়ে ফেলা’শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
(لَا یَقُوْمُوْنَ اَلاَّ...)
‘দণ্ডায়ামন হবে’এখানে দণ্ডায়মান হওয়ার অর্থ হল- কবর থেকে হাশরের উদ্দেশ্যে উঠা। সুদখোর যখন কবর থেকে উঠবে তখন ঐ পাগল বা উন্মাদের মত উঠবে যাকে কোন শয়তান-জিন আছর করে দিশেহারা করে দেয়।
(فَمَنْ جَا۬ءَھ۫ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّھ۪ فَانْتَھٰی)
‘সুতরাং যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসবে’অর্থাৎ যে ব্যক্তির কাছে ‘সুদ হারাম’- আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী পৌঁছল, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে সুদ খাওয়া ও সকল প্রকার সুদী লেন-দেন বর্জন করল এমন ব্যক্তির পূর্ববর্তী সুদী লেন-দেনের জন্য পাকড়াও করবেন না। আর যে ব্যক্তি জানার পরও বিরত থাকবে না তার ঠিকানা জাহান্নাম।
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: সুদ সম্পর্কে সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের নিকট তা পাঠ করে শোনালেন। তারপর সুদের ব্যবসায় নিষিদ্ধ করে দিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫৪০)
সুদখোরদের শাস্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার বাণী ছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
যেমন তিনি বলেন:الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ
সুদের ৭০টি অপরাধ রয়েছে আর সর্বনিম্ন অপরাধ হল সুদখোর যেন তার মাকে বিবাহ করল। (সহীহুত তারগীব হা: ১৮৫৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
لَعَنَ اللَّهُ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَشَاهِدَهُ وَكَاتِبَهُ
আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন সুদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী, সাক্ষ্য দানকারী ও লেখকের প্রতি। (নাসাঈ হা: ৫০১৪, সহীহ)
যে সাতটি কারণে জাতির ধ্বংস অনিবার্য তার অন্যতম একটি হল সুদ। (সহীহ বুখারী হা: ২৭৬৬)
(یَمْحَقُ اللہُ الرِّبٰوا)
‘আল্লাহ তা‘আলা সুদকে মিটিয়ে দেন’অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে সুদী লেন-দেন করে যতই লাভ আসুক, পরিমাণে যতই বেশি দেখা যাক প্রকৃতপক্ষে তা বেশি না, তাতে কোন বরকত নেই। আল্লাহ তা‘আলা তার অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ اٰتَیْتُمْ مِّنْ رِّبًا لِّیَرْبُوَا فِیْٓ اَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا یَرْبُوْا عِنْدَ اللہِ)
“মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের সম্পদবৃদ্ধি পাবে এ আশায় যা কিছু তোমরা সুদ ভিত্তিক দিয়ে থাক, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না।”(সূরা রূম ৩০:৩৯)
অবশেষে ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য ও দান-সদকার প্রতিদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি হালাল অর্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদাকাহ করবে (আল্লাহ তা‘আলা তা কবুল করেন) এবং আল্লাহ তা‘আলা কেবল পবিত্র বস্তু কবুল করেন আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ডান হাত দ্বারা তা কবূল করেন। এরপর আল্লাহ তা‘আলা দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সদাক্বাহ পাহাড় সমপরিমাণ হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী হা: ১৪১০)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সুদখোরদের ভয়ানক পরিণতি বিশেষ করে যারা সুদ হারাম হবার কথা জানার পরেও বিরত থাকবে না।
২. সকল প্রকার সুদ হারাম।
৩. সুদে সম্পদ বৃদ্ধি হয় না।
৪. ঈমানদারদের জন্য সুসংবাদ।
৫. আল্লাহ তা‘আলার হাত রয়েছে তার প্রমাণ পেলাম।
পূর্বের আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা দানের প্রতি উৎসাহ, দানের ফযীলত ও প্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ আয়াতে যারা সুদ খায় কিয়ামতের দিন তাদের কী অবস্থা হবে, সুদের বিধি-বিধান ও যারা সুদের বিধান জানার পরেও বর্জন করে না তাদের বিধান সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন।
সুদ দারিদ্র বিমোচন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনের প্রধান অন্তরায়। এটি মানব জীবনে এমন একটি মারাত্মক ব্যাধি যা দরিদ্রকে নিঃসম্বল করে আর সম্পদশালীদের সম্পদ বেশী করে। এটি সমাজের একশ্রেণির পুঁজিবাদী লোকেদের অন্যের সম্পদ শোষণের হাতিয়ার। পূর্ববর্তী জাতিকে যেসকল অপরাধের কারণে লা‘নত করা করা হয়েছে তাদের অন্যতম একটি হল সুদ (সূরা নিসা ৪:২৬৯)। যারা জেনেশুনে সুদ খায়, সুদ বৈধতার লাইসেন্স প্রদান করে তারা মূলত আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে। সুতরাং এমন জঘন্য অপরাধ থেকে সকলকে সতর্ক হওয়া উচিত।
সুদের পরিচয়: সুদের আরবি হল- রিবা (الربا) যার অর্থ বৃদ্ধি পাওয়া, অতিরিক্ত। উদ্দেশ্য হল যা মূল ধনের অতিরিক্ত গ্রহণ করা হয়।
শরীয়তের পরিভাষায় সুদ:
প্রধানত সুদ দু’প্রকারে হয়- (১) বাকীতে সুদ ঋণগ্রহীতা থেকে ঋণদাতা সময়ের তারতম্যে মূল ধনের অতিরিক্ত যা গ্রহণ করে থাকে। যেমন এক টাকায় এক বছর পর দুই টাকা গ্রহণ করা।
(২) একই জাতীয় দ্রব্য বা পণ্য লেনদেনে কম-বেশি করা যদিও দ্রব্য বা পণ্যের মানে তারতম্য হয়। যেমন এক কেজি চাউলের বিনিময়ে দু’কেজি চাউল গ্রহণ করা।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) জনৈক ব্যক্তিকে খায়বারের কর্মচারী নিয়োগ দিলেন। সে ভাল ভাল খেজুর নিয়ে আসল। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: খায়বারের সব খেজুর কি এরূপ? সে বলল: না, দু’সা‘ (এক সা‘ প্রায় আড়াই কেজি) নিম্নমানের খেজুরের বিনিময়ে এক সা‘ ভাল খেজুর গ্রহণ করি, আবার তিনি সা‘ নিম্নমানের খেজুরের বিনিময়ে দু’সা‘ ভাল খেজুর গ্রহণ করি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: এরূপ করো না, (নিম্নমানের খেজুর) সব দিরহামের বিনিময়ে বিক্রি করে তারপর দিরহাম দ্বারা ভাল খেজুর ক্রয় কর। (সহীহ বুখারী হা:২০৮৯)
প্রথমেই আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন সুদখোরদের ভয়ানক অবস্থা ও লাঞ্ছনা-বঞ্ছনার একটি উপমা তুলে ধরেছেন। যারা সুদ খায় তারা হাশরের দিন কবর থেকে ঐ ব্যক্তির মত উঠবে যে ব্যক্তিকে কোন শয়তান-জিন আছর করে উন্মাদ ও পাগল করে দেয়। তাদের এ ভয়ানক ও লাঞ্ছনার কারণ হল, তারা সুদকে ব্যবসার মত হালাল মনে করে। তাদের বক্তব্য হলো ব্যবসায় যেমন হালাল, ব্যবসা করলে সম্পদ বৃদ্ধি পায় তেমনি সুদ সম্পদ বৃদ্ধি করে, তাই ব্যবসার মত সুদও হালাল, উভয়ের মাঝে কোন পার্থক্য নেই। এখান থেকে জানা গেল, জিন ও শয়তানের আছরের ফলে মানুষ অজ্ঞান কিংবা উন্মাদ হতে পারে। এর বাস্তবতা রয়েছে, চিকিৎসাবিদ ও দার্শনিকরাও স্বীকার করেন। মৃত্যুকালীন সময় শয়তানের আছর থেকে রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় চাইতেন। (নাসায়ী হা: ৫৫৩১, সহীহ)
প্রথমেই সুদখোরদের এ ভয়ানক অবস্থা আলোচনার কারণ হল, যাতে মানুষ সুদ থেকে বিরত থাকে। আয়াতে ‘সুদ খাওয়া’র (یَاْکُلُوْنَ) কথা বলা হয়েছে। এ অর্থ হল- সুদ গ্রহণ করা ও সুদী লেন-দেন করা। খাওয়ার জন্য ব্যবহার করুক, কিংবা পোশাক-পরিচ্ছদ, ঘর-বাড়ি অথবা আসবাবপত্র নির্মাণে ব্যবহার করুক। কিন্তু বিষয়টি ‘খাওয়া’শব্দ দ্বারা ব্যক্ত করার কারণ হল- যে বস্তু খেয়ে ফেলা হয়, তা আর ফেরত দেয়ার সুযোগ থাকে না। অন্যরকম ব্যবহারে ফেরত দেয়ার সুুযোগ থাকে। তাই পুরোপুরি আত্মসাৎ করার কথা বুঝাতে ‘খেয়ে ফেলা’শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে।
(لَا یَقُوْمُوْنَ اَلاَّ...)
‘দণ্ডায়ামন হবে’এখানে দণ্ডায়মান হওয়ার অর্থ হল- কবর থেকে হাশরের উদ্দেশ্যে উঠা। সুদখোর যখন কবর থেকে উঠবে তখন ঐ পাগল বা উন্মাদের মত উঠবে যাকে কোন শয়তান-জিন আছর করে দিশেহারা করে দেয়।
(فَمَنْ جَا۬ءَھ۫ مَوْعِظَةٌ مِّنْ رَّبِّھ۪ فَانْتَھٰی)
‘সুতরাং যার কাছে তার রবের পক্ষ থেকে উপদেশ আসবে’অর্থাৎ যে ব্যক্তির কাছে ‘সুদ হারাম’- আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী পৌঁছল, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করে সুদ খাওয়া ও সকল প্রকার সুদী লেন-দেন বর্জন করল এমন ব্যক্তির পূর্ববর্তী সুদী লেন-দেনের জন্য পাকড়াও করবেন না। আর যে ব্যক্তি জানার পরও বিরত থাকবে না তার ঠিকানা জাহান্নাম।
আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: সুদ সম্পর্কে সূরা বাকারার শেষ আয়াতগুলো যখন অবতীর্ণ হল তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) লোকেদের নিকট তা পাঠ করে শোনালেন। তারপর সুদের ব্যবসায় নিষিদ্ধ করে দিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫৪০)
সুদখোরদের শাস্তির ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলার বাণী ছাড়াও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে অনেক সহীহ হাদীস বর্ণিত হয়েছে।
যেমন তিনি বলেন:الرِّبَا سَبْعُونَ حُوبًا أَيْسَرُهَا أَنْ يَنْكِحَ الرَّجُلُ أُمَّهُ
সুদের ৭০টি অপরাধ রয়েছে আর সর্বনিম্ন অপরাধ হল সুদখোর যেন তার মাকে বিবাহ করল। (সহীহুত তারগীব হা: ১৮৫৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
لَعَنَ اللَّهُ آكِلَ الرِّبَا وَمُوكِلَهُ وَشَاهِدَهُ وَكَاتِبَهُ
আল্লাহ তা‘আলা লা‘নত করেছেন সুদ গ্রহণকারী, প্রদানকারী, সাক্ষ্য দানকারী ও লেখকের প্রতি। (নাসাঈ হা: ৫০১৪, সহীহ)
যে সাতটি কারণে জাতির ধ্বংস অনিবার্য তার অন্যতম একটি হল সুদ। (সহীহ বুখারী হা: ২৭৬৬)
(یَمْحَقُ اللہُ الرِّبٰوا)
‘আল্লাহ তা‘আলা সুদকে মিটিয়ে দেন’অর্থাৎ বাহ্যিকভাবে সুদী লেন-দেন করে যতই লাভ আসুক, পরিমাণে যতই বেশি দেখা যাক প্রকৃতপক্ষে তা বেশি না, তাতে কোন বরকত নেই। আল্লাহ তা‘আলা তার অর্থনৈতিক অবস্থা নাজুক করে দিবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ اٰتَیْتُمْ مِّنْ رِّبًا لِّیَرْبُوَا فِیْٓ اَمْوَالِ النَّاسِ فَلَا یَرْبُوْا عِنْدَ اللہِ)
“মানুষের ধন-সম্পদে তোমাদের সম্পদবৃদ্ধি পাবে এ আশায় যা কিছু তোমরা সুদ ভিত্তিক দিয়ে থাক, আল্লাহর কাছে তা বৃদ্ধি পায় না।”(সূরা রূম ৩০:৩৯)
অবশেষে ঈমানদারদের বৈশিষ্ট্য ও দান-সদকার প্রতিদানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি হালাল অর্জন থেকে একটি খেজুর পরিমাণ সদাকাহ করবে (আল্লাহ তা‘আলা তা কবুল করেন) এবং আল্লাহ তা‘আলা কেবল পবিত্র বস্তু কবুল করেন আর আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ডান হাত দ্বারা তা কবূল করেন। এরপর আল্লাহ তা‘আলা দাতার কল্যাণার্থে তা প্রতিপালন করেন যেমন তোমাদের কেউ অশ্ব শাবক প্রতিপালন করে থাকে, অবশেষে সেই সদাক্বাহ পাহাড় সমপরিমাণ হয়ে যায়। (সহীহ বুখারী হা: ১৪১০)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সুদখোরদের ভয়ানক পরিণতি বিশেষ করে যারা সুদ হারাম হবার কথা জানার পরেও বিরত থাকবে না।
২. সকল প্রকার সুদ হারাম।
৩. সুদে সম্পদ বৃদ্ধি হয় না।
৪. ঈমানদারদের জন্য সুসংবাদ।
৫. আল্লাহ তা‘আলার হাত রয়েছে তার প্রমাণ পেলাম।
2:278
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ
اٰمَنُوا اتَّقُوا اللّٰہَ وَ ذَرُوۡا مَا بَقِیَ مِنَ الرِّبٰۤوا اِنۡ کُنۡتُمۡ
مُّؤۡمِنِیۡنَ ﴿۲۷۸﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৭৮-২৮১ নং আয়াতের
তাফসীর:
অত্র আয়াতে বিশেষ করে মু’মিনদেরকে সম্বোধন করে আল্লাহ তা‘আলা বকেয়া সুদ বর্জন করার নির্দেশ দিচ্ছেন। যদি বিরত না থাকে তাহলে তা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এটা এমন কঠোর ধমক যে, এ রকম ধমক অন্য কোন পাপের ব্যাপারে দেয়া হয়নি। এ জন্য আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: ইসলামী দেশে যে ব্যক্তি সুদ বর্জন করবে না দেশের শাসকের দায়িত্ব হবে তাকে তাওবাহ করানো এবং সুদ খাওয়া থেকে বিরত না হলে তার শির-েদ করা। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৭২০) সুদের ব্যাপারে এটাই সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত। আর যদি তাওবাহ করে নেয় তাহলে ঋণদাতাগণ মূলধন পাবে, ফলে ঋণদাতাগণ মূলধন থেকে বঞ্চিত হবে না আর সুদগ্রহীতাগণ মাজলুম হবে না।
যদি ঋণগ্রহীতা (যিনি ঋণের বিনিময়ে সুদ দেবে) অভাবী হয় তাহলে তাকে সুদমুক্ত ঋণ পরিশোধ করার অবকাশ দেয়া উচিত, আর মাফ করে দিলে তা অনেক উত্তম।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার দিকে ফিরে যাওয়াকে ভয় করার নির্দেশ দিয়েছেন যেদিন প্রত্যেককে তার কৃত আমলের ফলাফল দেয়া হবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সুদ খেয়ে থাকলে তা থেকে তাওবাহ করা আবশ্যক।
২. যে ব্যক্তি তাওবাহ করবে সে মূলধন পাবে।
৩. আখিরাতকে ভয় করে শরীয়ত গর্হিত সকল কর্ম বর্জন করা উচিত, কারণ আখিরাতের অবস্থা বড় কঠিন।
অত্র আয়াতে বিশেষ করে মু’মিনদেরকে সম্বোধন করে আল্লাহ তা‘আলা বকেয়া সুদ বর্জন করার নির্দেশ দিচ্ছেন। যদি বিরত না থাকে তাহলে তা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এটা এমন কঠোর ধমক যে, এ রকম ধমক অন্য কোন পাপের ব্যাপারে দেয়া হয়নি। এ জন্য আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: ইসলামী দেশে যে ব্যক্তি সুদ বর্জন করবে না দেশের শাসকের দায়িত্ব হবে তাকে তাওবাহ করানো এবং সুদ খাওয়া থেকে বিরত না হলে তার শির-েদ করা। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৭২০) সুদের ব্যাপারে এটাই সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত। আর যদি তাওবাহ করে নেয় তাহলে ঋণদাতাগণ মূলধন পাবে, ফলে ঋণদাতাগণ মূলধন থেকে বঞ্চিত হবে না আর সুদগ্রহীতাগণ মাজলুম হবে না।
যদি ঋণগ্রহীতা (যিনি ঋণের বিনিময়ে সুদ দেবে) অভাবী হয় তাহলে তাকে সুদমুক্ত ঋণ পরিশোধ করার অবকাশ দেয়া উচিত, আর মাফ করে দিলে তা অনেক উত্তম।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার দিকে ফিরে যাওয়াকে ভয় করার নির্দেশ দিয়েছেন যেদিন প্রত্যেককে তার কৃত আমলের ফলাফল দেয়া হবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সুদ খেয়ে থাকলে তা থেকে তাওবাহ করা আবশ্যক।
২. যে ব্যক্তি তাওবাহ করবে সে মূলধন পাবে।
৩. আখিরাতকে ভয় করে শরীয়ত গর্হিত সকল কর্ম বর্জন করা উচিত, কারণ আখিরাতের অবস্থা বড় কঠিন।
2:279
فَاِنۡ لَّمۡ تَفۡعَلُوۡا
فَاۡذَنُوۡا بِحَرۡبٍ مِّنَ اللّٰہِ وَ رَسُوۡلِہٖ ۚ وَ اِنۡ تُبۡتُمۡ فَلَکُمۡ
رُءُوۡسُ اَمۡوَالِکُمۡ ۚ لَا تَظۡلِمُوۡنَ وَ لَا تُظۡلَمُوۡنَ ﴿۲۷۹﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৭৮-২৮১ নং আয়াতের
তাফসীর:
অত্র আয়াতে বিশেষ করে মু’মিনদেরকে সম্বোধন করে আল্লাহ তা‘আলা বকেয়া সুদ বর্জন করার নির্দেশ দিচ্ছেন। যদি বিরত না থাকে তাহলে তা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এটা এমন কঠোর ধমক যে, এ রকম ধমক অন্য কোন পাপের ব্যাপারে দেয়া হয়নি। এ জন্য আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: ইসলামী দেশে যে ব্যক্তি সুদ বর্জন করবে না দেশের শাসকের দায়িত্ব হবে তাকে তাওবাহ করানো এবং সুদ খাওয়া থেকে বিরত না হলে তার শির-েদ করা। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৭২০) সুদের ব্যাপারে এটাই সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত। আর যদি তাওবাহ করে নেয় তাহলে ঋণদাতাগণ মূলধন পাবে, ফলে ঋণদাতাগণ মূলধন থেকে বঞ্চিত হবে না আর সুদগ্রহীতাগণ মাজলুম হবে না।
যদি ঋণগ্রহীতা (যিনি ঋণের বিনিময়ে সুদ দেবে) অভাবী হয় তাহলে তাকে সুদমুক্ত ঋণ পরিশোধ করার অবকাশ দেয়া উচিত, আর মাফ করে দিলে তা অনেক উত্তম।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার দিকে ফিরে যাওয়াকে ভয় করার নির্দেশ দিয়েছেন যেদিন প্রত্যেককে তার কৃত আমলের ফলাফল দেয়া হবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সুদ খেয়ে থাকলে তা থেকে তাওবাহ করা আবশ্যক।
২. যে ব্যক্তি তাওবাহ করবে সে মূলধন পাবে।
৩. আখিরাতকে ভয় করে শরীয়ত গর্হিত সকল কর্ম বর্জন করা উচিত, কারণ আখিরাতের অবস্থা বড় কঠিন।
অত্র আয়াতে বিশেষ করে মু’মিনদেরকে সম্বোধন করে আল্লাহ তা‘আলা বকেয়া সুদ বর্জন করার নির্দেশ দিচ্ছেন। যদি বিরত না থাকে তাহলে তা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এটা এমন কঠোর ধমক যে, এ রকম ধমক অন্য কোন পাপের ব্যাপারে দেয়া হয়নি। এ জন্য আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: ইসলামী দেশে যে ব্যক্তি সুদ বর্জন করবে না দেশের শাসকের দায়িত্ব হবে তাকে তাওবাহ করানো এবং সুদ খাওয়া থেকে বিরত না হলে তার শির-েদ করা। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৭২০) সুদের ব্যাপারে এটাই সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত। আর যদি তাওবাহ করে নেয় তাহলে ঋণদাতাগণ মূলধন পাবে, ফলে ঋণদাতাগণ মূলধন থেকে বঞ্চিত হবে না আর সুদগ্রহীতাগণ মাজলুম হবে না।
যদি ঋণগ্রহীতা (যিনি ঋণের বিনিময়ে সুদ দেবে) অভাবী হয় তাহলে তাকে সুদমুক্ত ঋণ পরিশোধ করার অবকাশ দেয়া উচিত, আর মাফ করে দিলে তা অনেক উত্তম।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার দিকে ফিরে যাওয়াকে ভয় করার নির্দেশ দিয়েছেন যেদিন প্রত্যেককে তার কৃত আমলের ফলাফল দেয়া হবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সুদ খেয়ে থাকলে তা থেকে তাওবাহ করা আবশ্যক।
২. যে ব্যক্তি তাওবাহ করবে সে মূলধন পাবে।
৩. আখিরাতকে ভয় করে শরীয়ত গর্হিত সকল কর্ম বর্জন করা উচিত, কারণ আখিরাতের অবস্থা বড় কঠিন।
2:280
وَ اِنۡ کَانَ ذُوۡ
عُسۡرَۃٍ فَنَظِرَۃٌ اِلٰی مَیۡسَرَۃٍ ؕ وَ اَنۡ تَصَدَّقُوۡا خَیۡرٌ لَّکُمۡ اِنۡ
کُنۡتُمۡ تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۲۸۰﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৭৮-২৮১ নং আয়াতের
তাফসীর:
অত্র আয়াতে বিশেষ করে মু’মিনদেরকে সম্বোধন করে আল্লাহ তা‘আলা বকেয়া সুদ বর্জন করার নির্দেশ দিচ্ছেন। যদি বিরত না থাকে তাহলে তা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এটা এমন কঠোর ধমক যে, এ রকম ধমক অন্য কোন পাপের ব্যাপারে দেয়া হয়নি। এ জন্য আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: ইসলামী দেশে যে ব্যক্তি সুদ বর্জন করবে না দেশের শাসকের দায়িত্ব হবে তাকে তাওবাহ করানো এবং সুদ খাওয়া থেকে বিরত না হলে তার শির-েদ করা। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৭২০) সুদের ব্যাপারে এটাই সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত। আর যদি তাওবাহ করে নেয় তাহলে ঋণদাতাগণ মূলধন পাবে, ফলে ঋণদাতাগণ মূলধন থেকে বঞ্চিত হবে না আর সুদগ্রহীতাগণ মাজলুম হবে না।
যদি ঋণগ্রহীতা (যিনি ঋণের বিনিময়ে সুদ দেবে) অভাবী হয় তাহলে তাকে সুদমুক্ত ঋণ পরিশোধ করার অবকাশ দেয়া উচিত, আর মাফ করে দিলে তা অনেক উত্তম।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার দিকে ফিরে যাওয়াকে ভয় করার নির্দেশ দিয়েছেন যেদিন প্রত্যেককে তার কৃত আমলের ফলাফল দেয়া হবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সুদ খেয়ে থাকলে তা থেকে তাওবাহ করা আবশ্যক।
২. যে ব্যক্তি তাওবাহ করবে সে মূলধন পাবে।
৩. আখিরাতকে ভয় করে শরীয়ত গর্হিত সকল কর্ম বর্জন করা উচিত, কারণ আখিরাতের অবস্থা বড় কঠিন।
অত্র আয়াতে বিশেষ করে মু’মিনদেরকে সম্বোধন করে আল্লাহ তা‘আলা বকেয়া সুদ বর্জন করার নির্দেশ দিচ্ছেন। যদি বিরত না থাকে তাহলে তা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এটা এমন কঠোর ধমক যে, এ রকম ধমক অন্য কোন পাপের ব্যাপারে দেয়া হয়নি। এ জন্য আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: ইসলামী দেশে যে ব্যক্তি সুদ বর্জন করবে না দেশের শাসকের দায়িত্ব হবে তাকে তাওবাহ করানো এবং সুদ খাওয়া থেকে বিরত না হলে তার শির-েদ করা। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৭২০) সুদের ব্যাপারে এটাই সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত। আর যদি তাওবাহ করে নেয় তাহলে ঋণদাতাগণ মূলধন পাবে, ফলে ঋণদাতাগণ মূলধন থেকে বঞ্চিত হবে না আর সুদগ্রহীতাগণ মাজলুম হবে না।
যদি ঋণগ্রহীতা (যিনি ঋণের বিনিময়ে সুদ দেবে) অভাবী হয় তাহলে তাকে সুদমুক্ত ঋণ পরিশোধ করার অবকাশ দেয়া উচিত, আর মাফ করে দিলে তা অনেক উত্তম।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার দিকে ফিরে যাওয়াকে ভয় করার নির্দেশ দিয়েছেন যেদিন প্রত্যেককে তার কৃত আমলের ফলাফল দেয়া হবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সুদ খেয়ে থাকলে তা থেকে তাওবাহ করা আবশ্যক।
২. যে ব্যক্তি তাওবাহ করবে সে মূলধন পাবে।
৩. আখিরাতকে ভয় করে শরীয়ত গর্হিত সকল কর্ম বর্জন করা উচিত, কারণ আখিরাতের অবস্থা বড় কঠিন।
2:281
وَ اتَّقُوۡا یَوۡمًا
تُرۡجَعُوۡنَ فِیۡہِ اِلَی اللّٰہِ ٭۟ ثُمَّ تُوَفّٰی کُلُّ نَفۡسٍ مَّا کَسَبَتۡ
وَ ہُمۡ لَا یُظۡلَمُوۡنَ ﴿۲۸۱﴾٪
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৭৮-২৮১ নং আয়াতের
তাফসীর:
অত্র আয়াতে বিশেষ করে মু’মিনদেরকে সম্বোধন করে আল্লাহ তা‘আলা বকেয়া সুদ বর্জন করার নির্দেশ দিচ্ছেন। যদি বিরত না থাকে তাহলে তা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এটা এমন কঠোর ধমক যে, এ রকম ধমক অন্য কোন পাপের ব্যাপারে দেয়া হয়নি। এ জন্য আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: ইসলামী দেশে যে ব্যক্তি সুদ বর্জন করবে না দেশের শাসকের দায়িত্ব হবে তাকে তাওবাহ করানো এবং সুদ খাওয়া থেকে বিরত না হলে তার শির-েদ করা। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৭২০) সুদের ব্যাপারে এটাই সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত। আর যদি তাওবাহ করে নেয় তাহলে ঋণদাতাগণ মূলধন পাবে, ফলে ঋণদাতাগণ মূলধন থেকে বঞ্চিত হবে না আর সুদগ্রহীতাগণ মাজলুম হবে না।
যদি ঋণগ্রহীতা (যিনি ঋণের বিনিময়ে সুদ দেবে) অভাবী হয় তাহলে তাকে সুদমুক্ত ঋণ পরিশোধ করার অবকাশ দেয়া উচিত, আর মাফ করে দিলে তা অনেক উত্তম।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার দিকে ফিরে যাওয়াকে ভয় করার নির্দেশ দিয়েছেন যেদিন প্রত্যেককে তার কৃত আমলের ফলাফল দেয়া হবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সুদ খেয়ে থাকলে তা থেকে তাওবাহ করা আবশ্যক।
২. যে ব্যক্তি তাওবাহ করবে সে মূলধন পাবে।
৩. আখিরাতকে ভয় করে শরীয়ত গর্হিত সকল কর্ম বর্জন করা উচিত, কারণ আখিরাতের অবস্থা বড় কঠিন।
অত্র আয়াতে বিশেষ করে মু’মিনদেরকে সম্বোধন করে আল্লাহ তা‘আলা বকেয়া সুদ বর্জন করার নির্দেশ দিচ্ছেন। যদি বিরত না থাকে তাহলে তা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। এটা এমন কঠোর ধমক যে, এ রকম ধমক অন্য কোন পাপের ব্যাপারে দেয়া হয়নি। এ জন্য আব্দুল্লাহ ইবনু আব্বাস (রাঃ) বলেন: ইসলামী দেশে যে ব্যক্তি সুদ বর্জন করবে না দেশের শাসকের দায়িত্ব হবে তাকে তাওবাহ করানো এবং সুদ খাওয়া থেকে বিরত না হলে তার শির-েদ করা। (তাফসীর ইবনে কাসীর ১/৭২০) সুদের ব্যাপারে এটাই সর্বশেষ অবতীর্ণ আয়াত। আর যদি তাওবাহ করে নেয় তাহলে ঋণদাতাগণ মূলধন পাবে, ফলে ঋণদাতাগণ মূলধন থেকে বঞ্চিত হবে না আর সুদগ্রহীতাগণ মাজলুম হবে না।
যদি ঋণগ্রহীতা (যিনি ঋণের বিনিময়ে সুদ দেবে) অভাবী হয় তাহলে তাকে সুদমুক্ত ঋণ পরিশোধ করার অবকাশ দেয়া উচিত, আর মাফ করে দিলে তা অনেক উত্তম।
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলার দিকে ফিরে যাওয়াকে ভয় করার নির্দেশ দিয়েছেন যেদিন প্রত্যেককে তার কৃত আমলের ফলাফল দেয়া হবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সুদ খেয়ে থাকলে তা থেকে তাওবাহ করা আবশ্যক।
২. যে ব্যক্তি তাওবাহ করবে সে মূলধন পাবে।
৩. আখিরাতকে ভয় করে শরীয়ত গর্হিত সকল কর্ম বর্জন করা উচিত, কারণ আখিরাতের অবস্থা বড় কঠিন।
2:282
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ
اٰمَنُوۡۤا اِذَا تَدَایَنۡتُمۡ بِدَیۡنٍ اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی فَاکۡتُبُوۡہُ ؕ
وَ لۡیَکۡتُبۡ بَّیۡنَکُمۡ کَاتِبٌۢ بِالۡعَدۡلِ ۪ وَ لَا یَاۡبَ کَاتِبٌ اَنۡ
یَّکۡتُبَ کَمَا عَلَّمَہُ اللّٰہُ فَلۡیَکۡتُبۡ ۚ وَ لۡیُمۡلِلِ الَّذِیۡ
عَلَیۡہِ الۡحَقُّ وَ لۡیَتَّقِ اللّٰہَ رَبَّہٗ وَ لَا یَبۡخَسۡ مِنۡہُ شَیۡئًا ؕ
فَاِنۡ کَانَ الَّذِیۡ عَلَیۡہِ الۡحَقُّ سَفِیۡہًا اَوۡ ضَعِیۡفًا اَوۡ لَا
یَسۡتَطِیۡعُ اَنۡ یُّمِلَّ ہُوَ فَلۡیُمۡلِلۡ وَلِیُّہٗ بِالۡعَدۡلِ ؕ وَ
اسۡتَشۡہِدُوۡا شَہِیۡدَیۡنِ مِنۡ رِّجَالِکُمۡ ۚ فَاِنۡ لَّمۡ یَکُوۡنَا
رَجُلَیۡنِ فَرَجُلٌ وَّ امۡرَاَتٰنِ مِمَّنۡ تَرۡضَوۡنَ مِنَ الشُّہَدَآءِ اَنۡ
تَضِلَّ اِحۡدٰىہُمَا فَتُذَکِّرَ اِحۡدٰىہُمَا الۡاُخۡرٰی ؕ وَ لَا یَاۡبَ
الشُّہَدَآءُ اِذَا مَا دُعُوۡا ؕ وَ لَا تَسۡـَٔمُوۡۤا اَنۡ تَکۡتُبُوۡہُ
صَغِیۡرًا اَوۡ کَبِیۡرًا اِلٰۤی اَجَلِہٖ ؕ ذٰلِکُمۡ اَقۡسَطُ عِنۡدَ اللّٰہِ وَ
اَقۡوَمُ لِلشَّہَادَۃِ وَ اَدۡنٰۤی اَلَّا تَرۡتَابُوۡۤا اِلَّاۤ اَنۡ تَکُوۡنَ
تِجَارَۃً حَاضِرَۃً تُدِیۡرُوۡنَہَا بَیۡنَکُمۡ فَلَیۡسَ عَلَیۡکُمۡ جُنَاحٌ
اَلَّا تَکۡتُبُوۡہَا ؕ وَ اَشۡہِدُوۡۤا اِذَا تَبَایَعۡتُمۡ ۪ وَ لَا یُضَآرَّ
کَاتِبٌ وَّ لَا شَہِیۡدٌ ۬ؕ وَ اِنۡ تَفۡعَلُوۡا فَاِنَّہٗ فُسُوۡقٌۢ بِکُمۡ ؕ وَ
اتَّقُوا اللّٰہَ ؕ وَ یُعَلِّمُکُمُ اللّٰہُ ؕ وَ اللّٰہُ بِکُلِّ شَیۡءٍ
عَلِیۡمٌ ﴿۲۸۲﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৮২-২৮৩ নং আয়াতের
তাফসীর:
আয়াতের বাহ্যিক ভাব প্রমাণ করছে ঋণ লিখে রাখা অপরিহার্য। কিন্তু পরের আয়াত প্রমাণ করছে তা লিখে রাখা অপরিহার্য নয়। বরং লিখে রাখা উত্তম।
অত্র আয়াতকে “আয়াতুদ দাইন”বা ঋণের আয়াত বলা হয়। কুরআনুল কারীমের এটা সবচেয়ে বড় আয়াত। যেহেতু পূর্বের আয়াতে সুদকে কঠোরভাবে হারাম করে দান-সদাকাহ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে সেহেতু সমাজে বসবাসকারীদের মাঝে ঋণ গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিবেই। কারণ সুদ হারাম, সব মানুষ দান-সদাকাহ করার ক্ষমতা রাখে না। তাছাড়া সবাই দান-সদাকাহ নিতে পছন্দও করে না। সুতরাং প্রয়োজন সাড়ার অন্যতম উপায় ঋণ আদান-প্রাদান করা। ঋণ দেয়াও বড় ফযীলতের কাজ বলে হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কিয়ামতের দিন একজন লোককে আল্লাহ তা‘আলার সামনে আনা হবে। তাকে আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞাসা করবেন: বল, তুমি আমার জন্য কী পুণ্য করেছ? সে বলবে: হে আল্লাহ! আমি এমন একটি অণু পরিমাণও পুণ্যের কাজ করতে পারিনি যার প্রতিদান আমি আপনার নিকট চাইতে পারি। আল্লাহ তা‘আলা তাকে পুনরায় এটাই জিজ্ঞাসা করবেন এবং সে একই উত্তর দেবে। আল্লাহ তা‘আলা আবার জিজ্ঞাসা করবেন তখন সে বলবে: হে আল্লাহ! একটি সামান্য কথা মনে পড়েছে। আপনি দয়া করে আমাকে কিছু সম্পদ দান করেছিলেন। আমি ব্যবসায়ী ছিলাম। লোক আমার নিকট হতে কর্জ নিয়ে যেতো। আমি যখন দেখতাম যে, এ লোকটি দরিদ্র এবং পরিশোধ করতে পারছে না তখন তাকে কিছু সময় অবকাশ দিতাম। ধনীদের ওপরও পীড়াপীড়ি করতাম না। অত্যন্ত দরিদ্র ব্যক্তিদের ক্ষমা করে দিতাম। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তাহলে আমি তোমার পথ সহজ করবো না কেন? আমি তো সর্বাপেক্ষা বেশি সহজকারী। যাও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। তুমি জান্নাতে চলে যাও। (সহীহ বুখারী হা: ২০৭৭)
ঋণ বা যে কোন লেন-দেন আদান-প্রদানের কয়েকটি নিয়ম-কানুন আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতে উল্লেখ করেছেন। কারণ সাধারণত টাকা-পয়সা ও মূল্যবান দ্রব্য লেন-দেনে কলহ-বিবাদ ও ভুল বুঝাবুঝি হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে মানুষের গভীর সম্পর্কও নষ্ট হয়ে যায়। তাই এমন নাজুক পরিস্থিতি হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা বিধান দিলেন- (১) মেয়াদ নির্দিষ্ট করে নেয়া। (২) লিখে রাখা। (৩) দু’জন মুসলিম পুরুষকে বা একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলাকে সাক্ষী রাখা।
(وَلْيُمْلِلِ الَّذِي عَلَيْهِ)
“আর ঋণগ্রহীতা লেখার বিষয় বলে দেবে” এখানে বলা হচ্ছে ঋণ গ্রহীতা যদি নির্বোধ অথবা দুর্বল শিশু কিংবা পাগল হয় তাহলে তার অভিভাবকদের উচিত ইনসাফের সাথে লিখে নেয়া যাতে ঋণদাতার কোন ক্ষতি না হয়।وَّامْرَاَتٰنِ “দু’জন মহিলা” এখানে একজন পুরুষের মোকাবেলায় দু’জন নারীকে সমান করা হয়েছে। কারণ মহিলারা দীনে ও স্মরণশক্তিতে পুরুষের চেয়ে দুর্বল। এখানে মহিলাদেরকে তুচ্ছ করে দেখা হয়নি। বরং সৃষ্টিগত দুর্বলতার কথা বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
مَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَغْلَبَ لِذِي لُبٍّ مِنْكُنَّ
“জ্ঞান ও দীনদারীত্ব কম হওয়া সত্ত্বেও জ্ঞানীদেরকে এত দ্রুত পরাস্ত করতে পারে, এমনটি তোমাদের (মহিলাদের) ছাড়া অন্য কাউকে দেখিনি। জিজ্ঞাসা করা হল- দীন ও জ্ঞান কম কোন্ দিক দিয়ে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: কিছু দিন তোমরা সালাত আদায় কর না এবং সিয়াম পালন কর না এটা দীনের দিক দিয়ে কম। আর তোমাদের দু’জনের সাক্ষ্য একজন পুরুষের সমান। এটা জ্ঞানের দিক দিয়ে কম।”(সহীহ বুখারী হা: ৩০৪, ১৪৬২)
(وَإِن كُنتُمْ عَلَي سَفَرٍ)
“আর যদি তোমরা সফরে থাক” যদি কারো সফরে লেনদেনের প্রয়োজন হয় আর লেখক না পায় তাহলে ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে কোন জিনিস বন্ধক রাখবে। বন্ধক রাখা শরীয়তসম্মত নিয়ম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বর্ম এক ইয়াহূদীর কাছে বন্ধক রেখেছিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ২২০০)। বন্ধক রাখা জিনিস যদি এমন হয় যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়, তাহলে তার উপকারিতার অধিকারী হবে মালিক; ঋণদাতা নয়। অবশ্য বন্ধক রাখা জিনিসে যদি ঋণদাতার কোন কিছু ব্যয় হয়, তবে সে তার খরচ নিতে পারবে। খরচ নিয়ে নেয়ার পর অবশিষ্ট লাভ মালিককে দেয়া জরুরী।
(وَلَا تَكْتُمُواْ الشَّهَادَةَ)
‘আর তোমরা সাক্ষী গোপন কর না’সাক্ষ্য গোপন করা হারাম ও কবীরা গুনাহ। যে ব্যক্তি সাক্ষ্য গোপন করবে তার জন্য সহীহ হাদীসেও অনেক কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৫৩৫, ১৭১৯)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ঋণ লেনদেন শরীয়তসম্মত, তবে অন্যায় ও পাপ কাজের জন্য ঋণ দেয়া যাবে না।
২. সকল লেনদেনে সময় উল্লেখ থাকা জরুরী।
৩. লেখককে অবশ্যই ন্যায় ও নিষ্ঠার সাথে লেখতে হবে, কোনরূপ কারচুপি করা যাবে না।
৪. ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও সাক্ষীর প্রয়োজন হলে রাখা উচিত।
৫. দুজন সাক্ষীর হিকমত হল একজন ভুলে গেলে অন্যজন স্মরণ করে দেবে।
৬. জেনে শুনে ও সত্যতার সাথে সাক্ষ্য দিতে হবে।
৭. কাউকে সাক্ষী হিসেবে থাকতে বললে বাধা দেয়া যাবে না।
৯. লেখা ও সাক্ষ্য দেয়ার ফলে প্রতিদান নেয়া যাবে না।
৮. সাক্ষ্য গোপন করা হারাম, তা দুনিয়ার কোন বিষয় হোক বা দীনের কোন বিষয় হোক।
আয়াতের বাহ্যিক ভাব প্রমাণ করছে ঋণ লিখে রাখা অপরিহার্য। কিন্তু পরের আয়াত প্রমাণ করছে তা লিখে রাখা অপরিহার্য নয়। বরং লিখে রাখা উত্তম।
অত্র আয়াতকে “আয়াতুদ দাইন”বা ঋণের আয়াত বলা হয়। কুরআনুল কারীমের এটা সবচেয়ে বড় আয়াত। যেহেতু পূর্বের আয়াতে সুদকে কঠোরভাবে হারাম করে দান-সদাকাহ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে সেহেতু সমাজে বসবাসকারীদের মাঝে ঋণ গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিবেই। কারণ সুদ হারাম, সব মানুষ দান-সদাকাহ করার ক্ষমতা রাখে না। তাছাড়া সবাই দান-সদাকাহ নিতে পছন্দও করে না। সুতরাং প্রয়োজন সাড়ার অন্যতম উপায় ঋণ আদান-প্রাদান করা। ঋণ দেয়াও বড় ফযীলতের কাজ বলে হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কিয়ামতের দিন একজন লোককে আল্লাহ তা‘আলার সামনে আনা হবে। তাকে আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞাসা করবেন: বল, তুমি আমার জন্য কী পুণ্য করেছ? সে বলবে: হে আল্লাহ! আমি এমন একটি অণু পরিমাণও পুণ্যের কাজ করতে পারিনি যার প্রতিদান আমি আপনার নিকট চাইতে পারি। আল্লাহ তা‘আলা তাকে পুনরায় এটাই জিজ্ঞাসা করবেন এবং সে একই উত্তর দেবে। আল্লাহ তা‘আলা আবার জিজ্ঞাসা করবেন তখন সে বলবে: হে আল্লাহ! একটি সামান্য কথা মনে পড়েছে। আপনি দয়া করে আমাকে কিছু সম্পদ দান করেছিলেন। আমি ব্যবসায়ী ছিলাম। লোক আমার নিকট হতে কর্জ নিয়ে যেতো। আমি যখন দেখতাম যে, এ লোকটি দরিদ্র এবং পরিশোধ করতে পারছে না তখন তাকে কিছু সময় অবকাশ দিতাম। ধনীদের ওপরও পীড়াপীড়ি করতাম না। অত্যন্ত দরিদ্র ব্যক্তিদের ক্ষমা করে দিতাম। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তাহলে আমি তোমার পথ সহজ করবো না কেন? আমি তো সর্বাপেক্ষা বেশি সহজকারী। যাও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। তুমি জান্নাতে চলে যাও। (সহীহ বুখারী হা: ২০৭৭)
ঋণ বা যে কোন লেন-দেন আদান-প্রদানের কয়েকটি নিয়ম-কানুন আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতে উল্লেখ করেছেন। কারণ সাধারণত টাকা-পয়সা ও মূল্যবান দ্রব্য লেন-দেনে কলহ-বিবাদ ও ভুল বুঝাবুঝি হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে মানুষের গভীর সম্পর্কও নষ্ট হয়ে যায়। তাই এমন নাজুক পরিস্থিতি হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা বিধান দিলেন- (১) মেয়াদ নির্দিষ্ট করে নেয়া। (২) লিখে রাখা। (৩) দু’জন মুসলিম পুরুষকে বা একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলাকে সাক্ষী রাখা।
(وَلْيُمْلِلِ الَّذِي عَلَيْهِ)
“আর ঋণগ্রহীতা লেখার বিষয় বলে দেবে” এখানে বলা হচ্ছে ঋণ গ্রহীতা যদি নির্বোধ অথবা দুর্বল শিশু কিংবা পাগল হয় তাহলে তার অভিভাবকদের উচিত ইনসাফের সাথে লিখে নেয়া যাতে ঋণদাতার কোন ক্ষতি না হয়।وَّامْرَاَتٰنِ “দু’জন মহিলা” এখানে একজন পুরুষের মোকাবেলায় দু’জন নারীকে সমান করা হয়েছে। কারণ মহিলারা দীনে ও স্মরণশক্তিতে পুরুষের চেয়ে দুর্বল। এখানে মহিলাদেরকে তুচ্ছ করে দেখা হয়নি। বরং সৃষ্টিগত দুর্বলতার কথা বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
مَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَغْلَبَ لِذِي لُبٍّ مِنْكُنَّ
“জ্ঞান ও দীনদারীত্ব কম হওয়া সত্ত্বেও জ্ঞানীদেরকে এত দ্রুত পরাস্ত করতে পারে, এমনটি তোমাদের (মহিলাদের) ছাড়া অন্য কাউকে দেখিনি। জিজ্ঞাসা করা হল- দীন ও জ্ঞান কম কোন্ দিক দিয়ে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: কিছু দিন তোমরা সালাত আদায় কর না এবং সিয়াম পালন কর না এটা দীনের দিক দিয়ে কম। আর তোমাদের দু’জনের সাক্ষ্য একজন পুরুষের সমান। এটা জ্ঞানের দিক দিয়ে কম।”(সহীহ বুখারী হা: ৩০৪, ১৪৬২)
(وَإِن كُنتُمْ عَلَي سَفَرٍ)
“আর যদি তোমরা সফরে থাক” যদি কারো সফরে লেনদেনের প্রয়োজন হয় আর লেখক না পায় তাহলে ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে কোন জিনিস বন্ধক রাখবে। বন্ধক রাখা শরীয়তসম্মত নিয়ম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বর্ম এক ইয়াহূদীর কাছে বন্ধক রেখেছিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ২২০০)। বন্ধক রাখা জিনিস যদি এমন হয় যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়, তাহলে তার উপকারিতার অধিকারী হবে মালিক; ঋণদাতা নয়। অবশ্য বন্ধক রাখা জিনিসে যদি ঋণদাতার কোন কিছু ব্যয় হয়, তবে সে তার খরচ নিতে পারবে। খরচ নিয়ে নেয়ার পর অবশিষ্ট লাভ মালিককে দেয়া জরুরী।
(وَلَا تَكْتُمُواْ الشَّهَادَةَ)
‘আর তোমরা সাক্ষী গোপন কর না’সাক্ষ্য গোপন করা হারাম ও কবীরা গুনাহ। যে ব্যক্তি সাক্ষ্য গোপন করবে তার জন্য সহীহ হাদীসেও অনেক কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৫৩৫, ১৭১৯)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ঋণ লেনদেন শরীয়তসম্মত, তবে অন্যায় ও পাপ কাজের জন্য ঋণ দেয়া যাবে না।
২. সকল লেনদেনে সময় উল্লেখ থাকা জরুরী।
৩. লেখককে অবশ্যই ন্যায় ও নিষ্ঠার সাথে লেখতে হবে, কোনরূপ কারচুপি করা যাবে না।
৪. ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও সাক্ষীর প্রয়োজন হলে রাখা উচিত।
৫. দুজন সাক্ষীর হিকমত হল একজন ভুলে গেলে অন্যজন স্মরণ করে দেবে।
৬. জেনে শুনে ও সত্যতার সাথে সাক্ষ্য দিতে হবে।
৭. কাউকে সাক্ষী হিসেবে থাকতে বললে বাধা দেয়া যাবে না।
৯. লেখা ও সাক্ষ্য দেয়ার ফলে প্রতিদান নেয়া যাবে না।
৮. সাক্ষ্য গোপন করা হারাম, তা দুনিয়ার কোন বিষয় হোক বা দীনের কোন বিষয় হোক।
2:283
وَ اِنۡ کُنۡتُمۡ عَلٰی
سَفَرٍ وَّ لَمۡ تَجِدُوۡا کَاتِبًا فَرِہٰنٌ مَّقۡبُوۡضَۃٌ ؕ فَاِنۡ اَمِنَ
بَعۡضُکُمۡ بَعۡضًا فَلۡیُؤَدِّ الَّذِی اؤۡتُمِنَ اَمَانَتَہٗ وَ لۡیَتَّقِ
اللّٰہَ رَبَّہٗ ؕ وَ لَا تَکۡتُمُوا الشَّہَادَۃَ ؕ وَ مَنۡ یَّکۡتُمۡہَا
فَاِنَّہٗۤ اٰثِمٌ قَلۡبُہٗ ؕ وَ اللّٰہُ بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ عَلِیۡمٌ ﴿۲۸۳﴾٪
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৮২-২৮৩ নং আয়াতের
তাফসীর:
আয়াতের বাহ্যিক ভাব প্রমাণ করছে ঋণ লিখে রাখা অপরিহার্য। কিন্তু পরের আয়াত প্রমাণ করছে তা লিখে রাখা অপরিহার্য নয়। বরং লিখে রাখা উত্তম।
অত্র আয়াতকে “আয়াতুদ দাইন”বা ঋণের আয়াত বলা হয়। কুরআনুল কারীমের এটা সবচেয়ে বড় আয়াত। যেহেতু পূর্বের আয়াতে সুদকে কঠোরভাবে হারাম করে দান-সদাকাহ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে সেহেতু সমাজে বসবাসকারীদের মাঝে ঋণ গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিবেই। কারণ সুদ হারাম, সব মানুষ দান-সদাকাহ করার ক্ষমতা রাখে না। তাছাড়া সবাই দান-সদাকাহ নিতে পছন্দও করে না। সুতরাং প্রয়োজন সাড়ার অন্যতম উপায় ঋণ আদান-প্রাদান করা। ঋণ দেয়াও বড় ফযীলতের কাজ বলে হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কিয়ামতের দিন একজন লোককে আল্লাহ তা‘আলার সামনে আনা হবে। তাকে আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞাসা করবেন: বল, তুমি আমার জন্য কী পুণ্য করেছ? সে বলবে: হে আল্লাহ! আমি এমন একটি অণু পরিমাণও পুণ্যের কাজ করতে পারিনি যার প্রতিদান আমি আপনার নিকট চাইতে পারি। আল্লাহ তা‘আলা তাকে পুনরায় এটাই জিজ্ঞাসা করবেন এবং সে একই উত্তর দেবে। আল্লাহ তা‘আলা আবার জিজ্ঞাসা করবেন তখন সে বলবে: হে আল্লাহ! একটি সামান্য কথা মনে পড়েছে। আপনি দয়া করে আমাকে কিছু সম্পদ দান করেছিলেন। আমি ব্যবসায়ী ছিলাম। লোক আমার নিকট হতে কর্জ নিয়ে যেতো। আমি যখন দেখতাম যে, এ লোকটি দরিদ্র এবং পরিশোধ করতে পারছে না তখন তাকে কিছু সময় অবকাশ দিতাম। ধনীদের ওপরও পীড়াপীড়ি করতাম না। অত্যন্ত দরিদ্র ব্যক্তিদের ক্ষমা করে দিতাম। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তাহলে আমি তোমার পথ সহজ করবো না কেন? আমি তো সর্বাপেক্ষা বেশি সহজকারী। যাও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। তুমি জান্নাতে চলে যাও। (সহীহ বুখারী হা: ২০৭৭)
ঋণ বা যে কোন লেন-দেন আদান-প্রদানের কয়েকটি নিয়ম-কানুন আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতে উল্লেখ করেছেন। কারণ সাধারণত টাকা-পয়সা ও মূল্যবান দ্রব্য লেন-দেনে কলহ-বিবাদ ও ভুল বুঝাবুঝি হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে মানুষের গভীর সম্পর্কও নষ্ট হয়ে যায়। তাই এমন নাজুক পরিস্থিতি হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা বিধান দিলেন- (১) মেয়াদ নির্দিষ্ট করে নেয়া। (২) লিখে রাখা। (৩) দু’জন মুসলিম পুরুষকে বা একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলাকে সাক্ষী রাখা।
(وَلْيُمْلِلِ الَّذِي عَلَيْهِ)
“আর ঋণগ্রহীতা লেখার বিষয় বলে দেবে” এখানে বলা হচ্ছে ঋণ গ্রহীতা যদি নির্বোধ অথবা দুর্বল শিশু কিংবা পাগল হয় তাহলে তার অভিভাবকদের উচিত ইনসাফের সাথে লিখে নেয়া যাতে ঋণদাতার কোন ক্ষতি না হয়।
وَّامْرَاَتٰنِ “দু’জন মহিলা” এখানে একজন পুরুষের মোকাবেলায় দু’জন নারীকে সমান করা হয়েছে। কারণ মহিলারা দীনে ও স্মরণশক্তিতে পুরুষের চেয়ে দুর্বল। এখানে মহিলাদেরকে তুচ্ছ করে দেখা হয়নি। বরং সৃষ্টিগত দুর্বলতার কথা বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
مَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَغْلَبَ لِذِي لُبٍّ مِنْكُنَّ
“জ্ঞান ও দীনদারীত্ব কম হওয়া সত্ত্বেও জ্ঞানীদেরকে এত দ্রুত পরাস্ত করতে পারে, এমনটি তোমাদের (মহিলাদের) ছাড়া অন্য কাউকে দেখিনি। জিজ্ঞাসা করা হল- দীন ও জ্ঞান কম কোন্ দিক দিয়ে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: কিছু দিন তোমরা সালাত আদায় কর না এবং সিয়াম পালন কর না এটা দীনের দিক দিয়ে কম। আর তোমাদের দু’জনের সাক্ষ্য একজন পুরুষের সমান। এটা জ্ঞানের দিক দিয়ে কম।”(সহীহ বুখারী হা: ৩০৪, ১৪৬২)
(وَإِن كُنتُمْ عَلَي سَفَرٍ)
“আর যদি তোমরা সফরে থাক” যদি কারো সফরে লেনদেনের প্রয়োজন হয় আর লেখক না পায় তাহলে ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে কোন জিনিস বন্ধক রাখবে। বন্ধক রাখা শরীয়তসম্মত নিয়ম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বর্ম এক ইয়াহূদীর কাছে বন্ধক রেখেছিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ২২০০)। বন্ধক রাখা জিনিস যদি এমন হয় যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়, তাহলে তার উপকারিতার অধিকারী হবে মালিক; ঋণদাতা নয়। অবশ্য বন্ধক রাখা জিনিসে যদি ঋণদাতার কোন কিছু ব্যয় হয়, তবে সে তার খরচ নিতে পারবে। খরচ নিয়ে নেয়ার পর অবশিষ্ট লাভ মালিককে দেয়া জরুরী।
(وَلَا تَكْتُمُواْ الشَّهَادَةَ)
‘আর তোমরা সাক্ষী গোপন কর না’সাক্ষ্য গোপন করা হারাম ও কবীরা গুনাহ। যে ব্যক্তি সাক্ষ্য গোপন করবে তার জন্য সহীহ হাদীসেও অনেক কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৫৩৫, ১৭১৯)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ঋণ লেনদেন শরীয়তসম্মত, তবে অন্যায় ও পাপ কাজের জন্য ঋণ দেয়া যাবে না।
২. সকল লেনদেনে সময় উল্লেখ থাকা জরুরী।
৩. লেখককে অবশ্যই ন্যায় ও নিষ্ঠার সাথে লেখতে হবে, কোনরূপ কারচুপি করা যাবে না।
৪. ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও সাক্ষীর প্রয়োজন হলে রাখা উচিত।
৫. দুজন সাক্ষীর হিকমত হল একজন ভুলে গেলে অন্যজন স্মরণ করে দেবে।
৬. জেনে শুনে ও সত্যতার সাথে সাক্ষ্য দিতে হবে।
৭. কাউকে সাক্ষী হিসেবে থাকতে বললে বাধা দেয়া যাবে না।
৯. লেখা ও সাক্ষ্য দেয়ার ফলে প্রতিদান নেয়া যাবে না।
৮. সাক্ষ্য গোপন করা হারাম, তা দুনিয়ার কোন বিষয় হোক বা দীনের কোন বিষয় হোক।
আয়াতের বাহ্যিক ভাব প্রমাণ করছে ঋণ লিখে রাখা অপরিহার্য। কিন্তু পরের আয়াত প্রমাণ করছে তা লিখে রাখা অপরিহার্য নয়। বরং লিখে রাখা উত্তম।
অত্র আয়াতকে “আয়াতুদ দাইন”বা ঋণের আয়াত বলা হয়। কুরআনুল কারীমের এটা সবচেয়ে বড় আয়াত। যেহেতু পূর্বের আয়াতে সুদকে কঠোরভাবে হারাম করে দান-সদাকাহ করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে সেহেতু সমাজে বসবাসকারীদের মাঝে ঋণ গ্রহণ করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিবেই। কারণ সুদ হারাম, সব মানুষ দান-সদাকাহ করার ক্ষমতা রাখে না। তাছাড়া সবাই দান-সদাকাহ নিতে পছন্দও করে না। সুতরাং প্রয়োজন সাড়ার অন্যতম উপায় ঋণ আদান-প্রাদান করা। ঋণ দেয়াও বড় ফযীলতের কাজ বলে হাদীসে উল্লেখ রয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: কিয়ামতের দিন একজন লোককে আল্লাহ তা‘আলার সামনে আনা হবে। তাকে আল্লাহ তা‘আলা জিজ্ঞাসা করবেন: বল, তুমি আমার জন্য কী পুণ্য করেছ? সে বলবে: হে আল্লাহ! আমি এমন একটি অণু পরিমাণও পুণ্যের কাজ করতে পারিনি যার প্রতিদান আমি আপনার নিকট চাইতে পারি। আল্লাহ তা‘আলা তাকে পুনরায় এটাই জিজ্ঞাসা করবেন এবং সে একই উত্তর দেবে। আল্লাহ তা‘আলা আবার জিজ্ঞাসা করবেন তখন সে বলবে: হে আল্লাহ! একটি সামান্য কথা মনে পড়েছে। আপনি দয়া করে আমাকে কিছু সম্পদ দান করেছিলেন। আমি ব্যবসায়ী ছিলাম। লোক আমার নিকট হতে কর্জ নিয়ে যেতো। আমি যখন দেখতাম যে, এ লোকটি দরিদ্র এবং পরিশোধ করতে পারছে না তখন তাকে কিছু সময় অবকাশ দিতাম। ধনীদের ওপরও পীড়াপীড়ি করতাম না। অত্যন্ত দরিদ্র ব্যক্তিদের ক্ষমা করে দিতাম। তখন আল্লাহ তা‘আলা বলেন: তাহলে আমি তোমার পথ সহজ করবো না কেন? আমি তো সর্বাপেক্ষা বেশি সহজকারী। যাও আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিলাম। তুমি জান্নাতে চলে যাও। (সহীহ বুখারী হা: ২০৭৭)
ঋণ বা যে কোন লেন-দেন আদান-প্রদানের কয়েকটি নিয়ম-কানুন আল্লাহ তা‘আলা অত্র আয়াতে উল্লেখ করেছেন। কারণ সাধারণত টাকা-পয়সা ও মূল্যবান দ্রব্য লেন-দেনে কলহ-বিবাদ ও ভুল বুঝাবুঝি হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে মানুষের গভীর সম্পর্কও নষ্ট হয়ে যায়। তাই এমন নাজুক পরিস্থিতি হতে রক্ষা পাওয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা বিধান দিলেন- (১) মেয়াদ নির্দিষ্ট করে নেয়া। (২) লিখে রাখা। (৩) দু’জন মুসলিম পুরুষকে বা একজন পুরুষ ও দু’জন মহিলাকে সাক্ষী রাখা।
(وَلْيُمْلِلِ الَّذِي عَلَيْهِ)
“আর ঋণগ্রহীতা লেখার বিষয় বলে দেবে” এখানে বলা হচ্ছে ঋণ গ্রহীতা যদি নির্বোধ অথবা দুর্বল শিশু কিংবা পাগল হয় তাহলে তার অভিভাবকদের উচিত ইনসাফের সাথে লিখে নেয়া যাতে ঋণদাতার কোন ক্ষতি না হয়।
وَّامْرَاَتٰنِ “দু’জন মহিলা” এখানে একজন পুরুষের মোকাবেলায় দু’জন নারীকে সমান করা হয়েছে। কারণ মহিলারা দীনে ও স্মরণশক্তিতে পুরুষের চেয়ে দুর্বল। এখানে মহিলাদেরকে তুচ্ছ করে দেখা হয়নি। বরং সৃষ্টিগত দুর্বলতার কথা বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
مَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَغْلَبَ لِذِي لُبٍّ مِنْكُنَّ
“জ্ঞান ও দীনদারীত্ব কম হওয়া সত্ত্বেও জ্ঞানীদেরকে এত দ্রুত পরাস্ত করতে পারে, এমনটি তোমাদের (মহিলাদের) ছাড়া অন্য কাউকে দেখিনি। জিজ্ঞাসা করা হল- দীন ও জ্ঞান কম কোন্ দিক দিয়ে? রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: কিছু দিন তোমরা সালাত আদায় কর না এবং সিয়াম পালন কর না এটা দীনের দিক দিয়ে কম। আর তোমাদের দু’জনের সাক্ষ্য একজন পুরুষের সমান। এটা জ্ঞানের দিক দিয়ে কম।”(সহীহ বুখারী হা: ৩০৪, ১৪৬২)
(وَإِن كُنتُمْ عَلَي سَفَرٍ)
“আর যদি তোমরা সফরে থাক” যদি কারো সফরে লেনদেনের প্রয়োজন হয় আর লেখক না পায় তাহলে ঋণদাতা ঋণগ্রহীতার কাছ থেকে কোন জিনিস বন্ধক রাখবে। বন্ধক রাখা শরীয়তসম্মত নিয়ম। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর বর্ম এক ইয়াহূদীর কাছে বন্ধক রেখেছিলেন। (সহীহ বুখারী হা: ২২০০)। বন্ধক রাখা জিনিস যদি এমন হয় যার দ্বারা উপকৃত হওয়া যায়, তাহলে তার উপকারিতার অধিকারী হবে মালিক; ঋণদাতা নয়। অবশ্য বন্ধক রাখা জিনিসে যদি ঋণদাতার কোন কিছু ব্যয় হয়, তবে সে তার খরচ নিতে পারবে। খরচ নিয়ে নেয়ার পর অবশিষ্ট লাভ মালিককে দেয়া জরুরী।
(وَلَا تَكْتُمُواْ الشَّهَادَةَ)
‘আর তোমরা সাক্ষী গোপন কর না’সাক্ষ্য গোপন করা হারাম ও কবীরা গুনাহ। যে ব্যক্তি সাক্ষ্য গোপন করবে তার জন্য সহীহ হাদীসেও অনেক কঠিন শাস্তির কথা বলা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৫৩৫, ১৭১৯)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ঋণ লেনদেন শরীয়তসম্মত, তবে অন্যায় ও পাপ কাজের জন্য ঋণ দেয়া যাবে না।
২. সকল লেনদেনে সময় উল্লেখ থাকা জরুরী।
৩. লেখককে অবশ্যই ন্যায় ও নিষ্ঠার সাথে লেখতে হবে, কোনরূপ কারচুপি করা যাবে না।
৪. ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রেও সাক্ষীর প্রয়োজন হলে রাখা উচিত।
৫. দুজন সাক্ষীর হিকমত হল একজন ভুলে গেলে অন্যজন স্মরণ করে দেবে।
৬. জেনে শুনে ও সত্যতার সাথে সাক্ষ্য দিতে হবে।
৭. কাউকে সাক্ষী হিসেবে থাকতে বললে বাধা দেয়া যাবে না।
৯. লেখা ও সাক্ষ্য দেয়ার ফলে প্রতিদান নেয়া যাবে না।
৮. সাক্ষ্য গোপন করা হারাম, তা দুনিয়ার কোন বিষয় হোক বা দীনের কোন বিষয় হোক।
2:284
لِلّٰہِ مَا فِی
السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ وَ اِنۡ تُبۡدُوۡا مَا فِیۡۤ اَنۡفُسِکُمۡ
اَوۡ تُخۡفُوۡہُ یُحَاسِبۡکُمۡ بِہِ اللّٰہُ ؕ فَیَغۡفِرُ لِمَنۡ یَّشَآءُ وَ
یُعَذِّبُ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ اللّٰہُ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ قَدِیۡرٌ ﴿۲۸۴﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৮৪ নং আয়াতের
তাফসীর:
শানে নুযূল:
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
(لِلّٰهِ ما فِي السَّمَاواتِ...... قَدِيرٌ)
এ আয়াত নাযিল হলে বিষয়টি সাহাবীদের ওপর খুব কঠিন হয়ে যায়। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসল এবং জানু ভরে বসে পড়ে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে সালাত, সিয়াম, জিহাদ এবং দানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যা আমাদের সাধ্যের মধ্যে রয়েছে, কিন্তু এখন যে আয়াত নাযিল হয়েছে তা পালন করার শক্তি আমাদের নেই। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তোমরা কি ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের মত বলতে চাও আমরা শুনলাম আর মানলাম না? বরং তোমাদের বলা উচিত: আমরা শুনলাম ও মানলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন, আপনার কাছেই আমাদের প্রত্যাবর্তন। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান হা:১২৭)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার রুবুবিয়্যাহর আলোচনা করা হয়েছে। তিনি যেমনি আকাশ ও জমিনের একচ্ছত্র মালিক। সকল কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও রাজত্ব তাঁর হাতে, তেমনি কাউকে ক্ষমা করা আর না করার কর্তৃত্বও তাঁর হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছা তার অপরাধ ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাত দিতে পারেন, এটা আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ। আবার যাকে ইচ্ছা তার অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি দিতে পারেন, এতে তিনি জালিম হবেন না বরং তিনি ন্যায়পরায়ণ। কাউকে ক্ষমা করা আর না করার কর্তৃত্ব কোন নাবী-রাসূল, ওলী-আউলিয়া ও পীর-বুযুর্গকে দেয়া হয়নি।
ইবনু উমার (রাঃ) বলেন:
(إنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ.... )
এ আয়াতটি তার পরের আয়াত তথা ২৮৬ নং আয়াত দ্বারা মানসূখ বা রহিত করা হয়েছে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫৪৬)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মতের অন্তরে উদীয়মান খেয়ালের কোন বিচার করবেন না, যে পর্যন্ত না তা কাজে পরিণত করবে অথবা মুখে উচ্চারণ করবে। (সহীহ বুখারী হা: ১৫১৮, সহীহ মুসলিম হা: ১২৭) এ থেকে বুঝা যায় যে, অন্তরে উদিত খেয়ালের কোন হিসেব হবে না। কেবল সেই খেয়ালের হিসেব হবে যা কাজে পরিণত করা হয়েছে। তবে অন্তরে ভাল চিন্তা জাগলে এর বিনিময়ে ছাওয়াব পাওয়া যাবে।
শানে নুযূল:
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন:
(لِلّٰهِ ما فِي السَّمَاواتِ...... قَدِيرٌ)
এ আয়াত নাযিল হলে বিষয়টি সাহাবীদের ওপর খুব কঠিন হয়ে যায়। তারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট আসল এবং জানু ভরে বসে পড়ে বলল: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদেরকে সালাত, সিয়াম, জিহাদ এবং দানের নির্দেশ দেয়া হয়েছে যা আমাদের সাধ্যের মধ্যে রয়েছে, কিন্তু এখন যে আয়াত নাযিল হয়েছে তা পালন করার শক্তি আমাদের নেই। তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: তোমরা কি ইয়াহূদী ও খ্রিস্টানদের মত বলতে চাও আমরা শুনলাম আর মানলাম না? বরং তোমাদের বলা উচিত: আমরা শুনলাম ও মানলাম। হে আমাদের রব! আমাদের ক্ষমা করুন, আপনার কাছেই আমাদের প্রত্যাবর্তন। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ঈমান হা:১২৭)
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার রুবুবিয়্যাহর আলোচনা করা হয়েছে। তিনি যেমনি আকাশ ও জমিনের একচ্ছত্র মালিক। সকল কর্তৃত্ব, ক্ষমতা ও রাজত্ব তাঁর হাতে, তেমনি কাউকে ক্ষমা করা আর না করার কর্তৃত্বও তাঁর হাতে। তিনি যাকে ইচ্ছা তার অপরাধ ক্ষমা করে দিয়ে জান্নাত দিতে পারেন, এটা আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ। আবার যাকে ইচ্ছা তার অপরাধ অনুযায়ী শাস্তি দিতে পারেন, এতে তিনি জালিম হবেন না বরং তিনি ন্যায়পরায়ণ। কাউকে ক্ষমা করা আর না করার কর্তৃত্ব কোন নাবী-রাসূল, ওলী-আউলিয়া ও পীর-বুযুর্গকে দেয়া হয়নি।
ইবনু উমার (রাঃ) বলেন:
(إنْ تُبْدُوا مَا فِي أَنْفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ.... )
এ আয়াতটি তার পরের আয়াত তথা ২৮৬ নং আয়াত দ্বারা মানসূখ বা রহিত করা হয়েছে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫৪৬)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: অবশ্যই আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মতের অন্তরে উদীয়মান খেয়ালের কোন বিচার করবেন না, যে পর্যন্ত না তা কাজে পরিণত করবে অথবা মুখে উচ্চারণ করবে। (সহীহ বুখারী হা: ১৫১৮, সহীহ মুসলিম হা: ১২৭) এ থেকে বুঝা যায় যে, অন্তরে উদিত খেয়ালের কোন হিসেব হবে না। কেবল সেই খেয়ালের হিসেব হবে যা কাজে পরিণত করা হয়েছে। তবে অন্তরে ভাল চিন্তা জাগলে এর বিনিময়ে ছাওয়াব পাওয়া যাবে।
2:285
اٰمَنَ الرَّسُوۡلُ
بِمَاۤ اُنۡزِلَ اِلَیۡہِ مِنۡ رَّبِّہٖ وَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ ؕ کُلٌّ اٰمَنَ
بِاللّٰہِ وَ مَلٰٓئِکَتِہٖ وَ کُتُبِہٖ وَ رُسُلِہٖ ۟ لَا نُفَرِّقُ بَیۡنَ
اَحَدٍ مِّنۡ رُّسُلِہٖ ۟ وَ قَالُوۡا سَمِعۡنَا وَ اَطَعۡنَا ٭۫ غُفۡرَانَکَ
رَبَّنَا وَ اِلَیۡکَ الۡمَصِیۡرُ ﴿۲۸۵﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৮৫ ও ২৮৬ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াত দু’টি হচ্ছে সম্পূর্ণ সূরার এমনি এক পরিশিষ্ট ও সংক্ষিপ্তসার যাতে সূরার মূল আলোচিত বিষয়গুলোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এতে ঈমানের ধরন ও সত্যিকার মু’মিনের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে এবং বিনয়ের সাথে আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করার আদব শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
ফযীলত: ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:مَنْ قَرَأَ بِالْآيَتَيْنِ مِنْ سُورَةِ الْبَقَرَةِ فِي لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ
যে ব্যক্তি সূরা বাকারার এ আয়াত দু’টি রাতে তেলাওয়াত করবে তার জন্য এ দু’টিই (রাতের ইবাদত হিসেবে ও সকল অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকার জন্য) যথেষ্ট। (সহীহ বুখারী হা: ৪০০৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমাকে সূরা ফাতিহা ও সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত আরশের নীচের ধনভাণ্ডার থেকে দেয়া হয়েছে। আমার পূর্বে কোন নাবীকে তা দেয়া হয়নি। (হাকিম: ১/৫৫৯, সিলসিলা সহীহাহ হা:১৪৮২)
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা আকাশ-জমিন সৃষ্টি করার দু’হাজার বছর আগে একটি কিতাব লিখেছেন তা থেকে সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। যে বাড়িতে তিন রাত এ আয়াতদ্বয় তেলাওয়াত করা হবে সে বাড়িতে শয়তান থাকবে না। (তিরমিযী হা: ২৮৮২, সনদ সহীহ)
এ ছাড়াও সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াতের আরো অনেক ফযীলত রয়েছে।
সূরার শুরুতে আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে ঈমানের প্রত্যেক রুকনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অত্র আয়াতে তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথে মু’মিনগণ ঈমানের প্রত্যেক রুকনের প্রতি ঈমান এনেছেন। পূর্ববর্তী দীনের অনুসারীরা কিতাবের কিছু বিশ্বাস করেছিল আর কিছু কুফরী করেছিল, উম্মাতে মুহাম্মাদীর মু’মিনরা এমন করেনি। বরং মু’মিনরা সকল রুকনের প্রতি যেভাবে বিশ্বাস করা উচিত সেভাবে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহ তা‘আলা প্রেরিত নাবী-রাসূলদের মাঝে কোনরূপ পার্থক্য করে না। কোন রাসূলকে আল্লাহ তা‘আলা কিম্বা আল্লাহ তা‘আলার ছেলে বলে আখ্যায়িত করে বাড়াবাড়ি করে না, আবার অসম্মানিতও করে না। আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মু’মিনদের কথা উল্লেখ করায় তাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
(وَقَالُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَا)
“তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম।”এটা হল মু’মিনদের ঈমানের বহিঃপ্রকাশ। কুরআন ও সহীহ সুন্নায় যত বিধান নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করেছেন সকল বিধানের ক্ষেত্রে মু’মিনদের এরূপ কথা হবে। তারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিধানের কাছে নিজেরা আত্মসমর্পন করবে এবং মেনে নেয়ার উদ্দেশ্যে শ্রবণ করবে, এ ক্ষেত্রে দল-মত ও তরীকার চিন্তা করার সুযোগ নেই।
(رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَآ)
“হে আমাদের রব! আমরা ভুলে গেলে অথবা ভুল করলে পাকড়াও করবেন না”এ দু‘আ কবূল করতঃ অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ)
“এ ব্যাপারে তোমরা যে ভুল-ত্র“টি করে ফেলেছ তাতে তোমাদের কোন গুনাহ হবে না।”(সূরা আহযাব ৩৩:৫) আর ভুল করে কিছু করলে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করবেন (সূরা আন‘আম ৬:৬৮)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মাতের ভুল-ত্র“টি ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং জোরপূর্বক যা কিছু করা হয় তাও ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ হা:২০৪৫, সহীহ)
(رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا)
“হে আমাদের রব! আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দেবেন না”আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতের উত্তরে বলেছেন: হ্যাঁ। আমি তোমাদের ওপর এমন ভার দেব না যা পূর্ববর্তীগণ বহন করেছে। (মুসলিম, ১খণ্ড, ১৯৯, পৃঃ ১১৫ ও ১১৬)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বণিত, তিনি বলেন: এক সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে এসে দেখতে পেলেন যে, দু‘টি খুটির মাঝে রশি টাঙানো আছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: এ রশিটা কিসের জন্য? লোকেরা বলল: এ রশি যায়নাবের (লটকানো), রাতের বেলা তিনি ইবাদত করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে এর ওপর গা ঝুলিয়ে দেন। এসব শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: না, ওটা খুলে দাও। মনে ফূর্তি ও সতেজ ভাব থাকা পর্যন্তই তোমাদের ইবাদত বন্দেগী (ফরয ব্যতীত) করা উচিত। যখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়বে তখন ইবাদত করবে না। (অন্য বর্ণনায় রয়েছে) আবূ মা‘মার আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: বানী আসাদ গোত্রের একজন মহিলা আমার কাছে উপস্থিত ছিলেন। এমতাবস্থায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে আগমন করলেন এবং (মহিলাটিকে দেখে) জিজ্ঞাসা করলেন: মহিলাটি কে? আমি বললাম: অমুক মহিলা আর তার সালাতের কথা উল্লেখ করে বললাম যে, সে রাতে ঘুমায় না। এসব শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরক্তির স্বরে বললেন: থামো! সাধ্য অনুসারেই তোমাদের আমল করা উচিত। কেননা, তোমরা ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা ক্লান্ত হননা। (অর্থাৎ তোমরা ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে যখন কাজ বন্ধ করে দাও, আল্লাহ তা‘আলা তখনই সওয়াব বা পুরস্কার প্রদান বন্ধ করে দেন। (সহীহ বুখারী হা: ১১৫০, সহীহ মুসলিম হা: ৭৮৪)
সুতরাং আমাদের উচিত আল্লাহ তা‘আলা যা দায়িত্ব দেননি নিজেরা বিভিন্ন তরীকার অসাধ্য সবক আবিস্কার করে এমন কিছু চাপিয়ে না নেয়া, বরং সাধ্যমত আমল করতঃ আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহের আশা করব।
পরিশেষে একজন দাস তার মুনীবের কাছে যেভাবে অনুনয়-বিনয়ের সাথে নিজের অক্ষমতা, অপারগতা ও অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ তা‘আলা সেভাবে আমাদেরকে ক্ষমা প্রার্থনা করার শিক্ষা দিচ্ছেন। হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমাকে ভালবাসেন, আপনি দয়ালু, অতএব আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন ও দয়া করুন। আপনি আমাদের মাওলা, আপনি ছাড়া আমাদের কোন অভিভাবক নেই, অতএব আপনি কাফিরদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। এ সূরা শেষে আমীন বলার হাদীসটি দুর্বল। (ইবনু জারীর আত-তাবারী হা: ৬৫৪১, যঈফ)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ঈমানের রুকনসমূহ অবগত হলাম।
২. সকল রাসূলের প্রতি কোন পার্থক্য ছাড়াই ঈমান আনা আবশ্যক। কাউকে আল্লাহ তা‘আলা বা আল্লাহ তা‘আলার ছেলে মর্যাদায় উন্নীত করব না আবার কারো প্রাপ্য মর্যাদা ক্ষুণ্ণও করব না।
৩. অজান্তে ভুল-ত্র“টি হয়ে গেলে এ উম্মাতের জন্য তা ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।
৪. অন্তরে যে খারাপ চিন্তা আসে তা কর্মে বা কথায় প্রকাশ না পেলে পাকড়াও করা হবে না।
৫. সূরা বাকারার শেষ আয়াত দু’টির ফযীলত জানতে পারলাম।
৬. প্রত্যেক মু’মিনের উচিত আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে ঈমান এনে দুনিয়ায় জীবন-যাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে ঈমান আনা এবং সকল মতবাদ, চিন্তা-চেতনা ও জাহিলি কর্মকাণ্ড বর্জন করা।
এ আয়াত দু’টি হচ্ছে সম্পূর্ণ সূরার এমনি এক পরিশিষ্ট ও সংক্ষিপ্তসার যাতে সূরার মূল আলোচিত বিষয়গুলোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এতে ঈমানের ধরন ও সত্যিকার মু’মিনের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে এবং বিনয়ের সাথে আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করার আদব শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
ফযীলত: ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:مَنْ قَرَأَ بِالْآيَتَيْنِ مِنْ سُورَةِ الْبَقَرَةِ فِي لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ
যে ব্যক্তি সূরা বাকারার এ আয়াত দু’টি রাতে তেলাওয়াত করবে তার জন্য এ দু’টিই (রাতের ইবাদত হিসেবে ও সকল অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকার জন্য) যথেষ্ট। (সহীহ বুখারী হা: ৪০০৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমাকে সূরা ফাতিহা ও সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত আরশের নীচের ধনভাণ্ডার থেকে দেয়া হয়েছে। আমার পূর্বে কোন নাবীকে তা দেয়া হয়নি। (হাকিম: ১/৫৫৯, সিলসিলা সহীহাহ হা:১৪৮২)
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা আকাশ-জমিন সৃষ্টি করার দু’হাজার বছর আগে একটি কিতাব লিখেছেন তা থেকে সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। যে বাড়িতে তিন রাত এ আয়াতদ্বয় তেলাওয়াত করা হবে সে বাড়িতে শয়তান থাকবে না। (তিরমিযী হা: ২৮৮২, সনদ সহীহ)
এ ছাড়াও সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াতের আরো অনেক ফযীলত রয়েছে।
সূরার শুরুতে আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে ঈমানের প্রত্যেক রুকনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অত্র আয়াতে তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথে মু’মিনগণ ঈমানের প্রত্যেক রুকনের প্রতি ঈমান এনেছেন। পূর্ববর্তী দীনের অনুসারীরা কিতাবের কিছু বিশ্বাস করেছিল আর কিছু কুফরী করেছিল, উম্মাতে মুহাম্মাদীর মু’মিনরা এমন করেনি। বরং মু’মিনরা সকল রুকনের প্রতি যেভাবে বিশ্বাস করা উচিত সেভাবে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহ তা‘আলা প্রেরিত নাবী-রাসূলদের মাঝে কোনরূপ পার্থক্য করে না। কোন রাসূলকে আল্লাহ তা‘আলা কিম্বা আল্লাহ তা‘আলার ছেলে বলে আখ্যায়িত করে বাড়াবাড়ি করে না, আবার অসম্মানিতও করে না। আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মু’মিনদের কথা উল্লেখ করায় তাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
(وَقَالُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَا)
“তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম।”এটা হল মু’মিনদের ঈমানের বহিঃপ্রকাশ। কুরআন ও সহীহ সুন্নায় যত বিধান নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করেছেন সকল বিধানের ক্ষেত্রে মু’মিনদের এরূপ কথা হবে। তারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিধানের কাছে নিজেরা আত্মসমর্পন করবে এবং মেনে নেয়ার উদ্দেশ্যে শ্রবণ করবে, এ ক্ষেত্রে দল-মত ও তরীকার চিন্তা করার সুযোগ নেই।
(رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَآ)
“হে আমাদের রব! আমরা ভুলে গেলে অথবা ভুল করলে পাকড়াও করবেন না”এ দু‘আ কবূল করতঃ অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ)
“এ ব্যাপারে তোমরা যে ভুল-ত্র“টি করে ফেলেছ তাতে তোমাদের কোন গুনাহ হবে না।”(সূরা আহযাব ৩৩:৫) আর ভুল করে কিছু করলে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করবেন (সূরা আন‘আম ৬:৬৮)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মাতের ভুল-ত্র“টি ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং জোরপূর্বক যা কিছু করা হয় তাও ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ হা:২০৪৫, সহীহ)
(رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا)
“হে আমাদের রব! আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দেবেন না”আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতের উত্তরে বলেছেন: হ্যাঁ। আমি তোমাদের ওপর এমন ভার দেব না যা পূর্ববর্তীগণ বহন করেছে। (মুসলিম, ১খণ্ড, ১৯৯, পৃঃ ১১৫ ও ১১৬)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বণিত, তিনি বলেন: এক সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে এসে দেখতে পেলেন যে, দু‘টি খুটির মাঝে রশি টাঙানো আছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: এ রশিটা কিসের জন্য? লোকেরা বলল: এ রশি যায়নাবের (লটকানো), রাতের বেলা তিনি ইবাদত করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে এর ওপর গা ঝুলিয়ে দেন। এসব শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: না, ওটা খুলে দাও। মনে ফূর্তি ও সতেজ ভাব থাকা পর্যন্তই তোমাদের ইবাদত বন্দেগী (ফরয ব্যতীত) করা উচিত। যখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়বে তখন ইবাদত করবে না। (অন্য বর্ণনায় রয়েছে) আবূ মা‘মার আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: বানী আসাদ গোত্রের একজন মহিলা আমার কাছে উপস্থিত ছিলেন। এমতাবস্থায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে আগমন করলেন এবং (মহিলাটিকে দেখে) জিজ্ঞাসা করলেন: মহিলাটি কে? আমি বললাম: অমুক মহিলা আর তার সালাতের কথা উল্লেখ করে বললাম যে, সে রাতে ঘুমায় না। এসব শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরক্তির স্বরে বললেন: থামো! সাধ্য অনুসারেই তোমাদের আমল করা উচিত। কেননা, তোমরা ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা ক্লান্ত হননা। (অর্থাৎ তোমরা ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে যখন কাজ বন্ধ করে দাও, আল্লাহ তা‘আলা তখনই সওয়াব বা পুরস্কার প্রদান বন্ধ করে দেন। (সহীহ বুখারী হা: ১১৫০, সহীহ মুসলিম হা: ৭৮৪)
সুতরাং আমাদের উচিত আল্লাহ তা‘আলা যা দায়িত্ব দেননি নিজেরা বিভিন্ন তরীকার অসাধ্য সবক আবিস্কার করে এমন কিছু চাপিয়ে না নেয়া, বরং সাধ্যমত আমল করতঃ আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহের আশা করব।
পরিশেষে একজন দাস তার মুনীবের কাছে যেভাবে অনুনয়-বিনয়ের সাথে নিজের অক্ষমতা, অপারগতা ও অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ তা‘আলা সেভাবে আমাদেরকে ক্ষমা প্রার্থনা করার শিক্ষা দিচ্ছেন। হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমাকে ভালবাসেন, আপনি দয়ালু, অতএব আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন ও দয়া করুন। আপনি আমাদের মাওলা, আপনি ছাড়া আমাদের কোন অভিভাবক নেই, অতএব আপনি কাফিরদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। এ সূরা শেষে আমীন বলার হাদীসটি দুর্বল। (ইবনু জারীর আত-তাবারী হা: ৬৫৪১, যঈফ)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ঈমানের রুকনসমূহ অবগত হলাম।
২. সকল রাসূলের প্রতি কোন পার্থক্য ছাড়াই ঈমান আনা আবশ্যক। কাউকে আল্লাহ তা‘আলা বা আল্লাহ তা‘আলার ছেলে মর্যাদায় উন্নীত করব না আবার কারো প্রাপ্য মর্যাদা ক্ষুণ্ণও করব না।
৩. অজান্তে ভুল-ত্র“টি হয়ে গেলে এ উম্মাতের জন্য তা ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।
৪. অন্তরে যে খারাপ চিন্তা আসে তা কর্মে বা কথায় প্রকাশ না পেলে পাকড়াও করা হবে না।
৫. সূরা বাকারার শেষ আয়াত দু’টির ফযীলত জানতে পারলাম।
৬. প্রত্যেক মু’মিনের উচিত আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে ঈমান এনে দুনিয়ায় জীবন-যাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে ঈমান আনা এবং সকল মতবাদ, চিন্তা-চেতনা ও জাহিলি কর্মকাণ্ড বর্জন করা।
2:286
لَا یُکَلِّفُ اللّٰہُ
نَفۡسًا اِلَّا وُسۡعَہَا ؕ لَہَا مَا کَسَبَتۡ وَ عَلَیۡہَا مَا اکۡتَسَبَتۡ ؕ
رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذۡنَاۤ اِنۡ نَّسِیۡنَاۤ اَوۡ اَخۡطَاۡنَا ۚ رَبَّنَا وَ لَا
تَحۡمِلۡ عَلَیۡنَاۤ اِصۡرًا کَمَا حَمَلۡتَہٗ عَلَی الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِنَا ۚ
رَبَّنَا وَ لَا تُحَمِّلۡنَا مَا لَا طَاقَۃَ لَنَا بِہٖ ۚ وَ اعۡفُ عَنَّا ٝ وَ
اغۡفِرۡ لَنَا ٝ وَ ارۡحَمۡنَا ٝ اَنۡتَ مَوۡلٰىنَا فَانۡصُرۡنَا عَلَی الۡقَوۡمِ
الۡکٰفِرِیۡنَ ﴿۲۸۶﴾٪
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৮৫ ও ২৮৬ নং আয়াতের
তাফসীর:
এ আয়াত দু’টি হচ্ছে সম্পূর্ণ সূরার এমনি এক পরিশিষ্ট ও সংক্ষিপ্তসার যাতে সূরার মূল আলোচিত বিষয়গুলোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এতে ঈমানের ধরন ও সত্যিকার মু’মিনের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে এবং বিনয়ের সাথে আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করার আদব শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
ফযীলত: ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:مَنْ قَرَأَ بِالْآيَتَيْنِ مِنْ سُورَةِ الْبَقَرَةِ فِي لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ
যে ব্যক্তি সূরা বাকারার এ আয়াত দু’টি রাতে তেলাওয়াত করবে তার জন্য এ দু’টিই (রাতের ইবাদত হিসেবে ও সকল অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকার জন্য) যথেষ্ট। (সহীহ বুখারী হা: ৪০০৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমাকে সূরা ফাতিহা ও সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত আরশের নীচের ধনভাণ্ডার থেকে দেয়া হয়েছে। আমার পূর্বে কোন নাবীকে তা দেয়া হয়নি। (হাকিম: ১/৫৫৯, সিলসিলা সহীহাহ হা:১৪৮২)
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা আকাশ-জমিন সৃষ্টি করার দু’হাজার বছর আগে একটি কিতাব লিখেছেন তা থেকে সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। যে বাড়িতে তিন রাত এ আয়াতদ্বয় তেলাওয়াত করা হবে সে বাড়িতে শয়তান থাকবে না। (তিরমিযী হা: ২৮৮২, সনদ সহীহ)
এ ছাড়াও সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াতের আরো অনেক ফযীলত রয়েছে।
সূরার শুরুতে আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে ঈমানের প্রত্যেক রুকনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অত্র আয়াতে তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথে মু’মিনগণ ঈমানের প্রত্যেক রুকনের প্রতি ঈমান এনেছেন। পূর্ববর্তী দীনের অনুসারীরা কিতাবের কিছু বিশ্বাস করেছিল আর কিছু কুফরী করেছিল, উম্মাতে মুহাম্মাদীর মু’মিনরা এমন করেনি। বরং মু’মিনরা সকল রুকনের প্রতি যেভাবে বিশ্বাস করা উচিত সেভাবে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহ তা‘আলা প্রেরিত নাবী-রাসূলদের মাঝে কোনরূপ পার্থক্য করে না। কোন রাসূলকে আল্লাহ তা‘আলা কিম্বা আল্লাহ তা‘আলার ছেলে বলে আখ্যায়িত করে বাড়াবাড়ি করে না, আবার অসম্মানিতও করে না। আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মু’মিনদের কথা উল্লেখ করায় তাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
(وَقَالُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَا)
“তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম।”এটা হল মু’মিনদের ঈমানের বহিঃপ্রকাশ। কুরআন ও সহীহ সুন্নায় যত বিধান নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করেছেন সকল বিধানের ক্ষেত্রে মু’মিনদের এরূপ কথা হবে। তারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিধানের কাছে নিজেরা আত্মসমর্পন করবে এবং মেনে নেয়ার উদ্দেশ্যে শ্রবণ করবে, এ ক্ষেত্রে দল-মত ও তরীকার চিন্তা করার সুযোগ নেই।
(رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَآ)
“হে আমাদের রব! আমরা ভুলে গেলে অথবা ভুল করলে পাকড়াও করবেন না”এ দু‘আ কবূল করতঃ অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ)
“এ ব্যাপারে তোমরা যে ভুল-ত্র“টি করে ফেলেছ তাতে তোমাদের কোন গুনাহ হবে না।”(সূরা আহযাব ৩৩:৫) আর ভুল করে কিছু করলে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করবেন (সূরা আন‘আম ৬:৬৮)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মাতের ভুল-ত্র“টি ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং জোরপূর্বক যা কিছু করা হয় তাও ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ হা:২০৪৫, সহীহ)
(رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا)
“হে আমাদের রব! আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দেবেন না”আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতের উত্তরে বলেছেন: হ্যাঁ। আমি তোমাদের ওপর এমন ভার দেব না যা পূর্ববর্তীগণ বহন করেছে। (মুসলিম, ১খণ্ড, ১৯৯, পৃঃ ১১৫ ও ১১৬)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বণিত, তিনি বলেন: এক সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে এসে দেখতে পেলেন যে, দু‘টি খুটির মাঝে রশি টাঙানো আছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: এ রশিটা কিসের জন্য? লোকেরা বলল: এ রশি যায়নাবের (লটকানো), রাতের বেলা তিনি ইবাদত করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে এর ওপর গা ঝুলিয়ে দেন। এসব শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: না, ওটা খুলে দাও। মনে ফূর্তি ও সতেজ ভাব থাকা পর্যন্তই তোমাদের ইবাদত বন্দেগী (ফরয ব্যতীত) করা উচিত। যখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়বে তখন ইবাদত করবে না। (অন্য বর্ণনায় রয়েছে) আবূ মা‘মার আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: বানী আসাদ গোত্রের একজন মহিলা আমার কাছে উপস্থিত ছিলেন। এমতাবস্থায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে আগমন করলেন এবং (মহিলাটিকে দেখে) জিজ্ঞাসা করলেন: মহিলাটি কে? আমি বললাম: অমুক মহিলা আর তার সালাতের কথা উল্লেখ করে বললাম যে, সে রাতে ঘুমায় না। এসব শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরক্তির স্বরে বললেন: থামো! সাধ্য অনুসারেই তোমাদের আমল করা উচিত। কেননা, তোমরা ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা ক্লান্ত হননা। (অর্থাৎ তোমরা ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে যখন কাজ বন্ধ করে দাও, আল্লাহ তা‘আলা তখনই সওয়াব বা পুরস্কার প্রদান বন্ধ করে দেন। (সহীহ বুখারী হা: ১১৫০, সহীহ মুসলিম হা: ৭৮৪)
সুতরাং আমাদের উচিত আল্লাহ তা‘আলা যা দায়িত্ব দেননি নিজেরা বিভিন্ন তরীকার অসাধ্য সবক আবিস্কার করে এমন কিছু চাপিয়ে না নেয়া, বরং সাধ্যমত আমল করতঃ আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহের আশা করব।
পরিশেষে একজন দাস তার মুনীবের কাছে যেভাবে অনুনয়-বিনয়ের সাথে নিজের অক্ষমতা, অপারগতা ও অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ তা‘আলা সেভাবে আমাদেরকে ক্ষমা প্রার্থনা করার শিক্ষা দিচ্ছেন। হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমাকে ভালবাসেন, আপনি দয়ালু, অতএব আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন ও দয়া করুন। আপনি আমাদের মাওলা, আপনি ছাড়া আমাদের কোন অভিভাবক নেই, অতএব আপনি কাফিরদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। এ সূরা শেষে আমীন বলার হাদীসটি দুর্বল। (ইবনু জারীর আত-তাবারী হা: ৬৫৪১, যঈফ)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ঈমানের রুকনসমূহ অবগত হলাম।
২. সকল রাসূলের প্রতি কোন পার্থক্য ছাড়াই ঈমান আনা আবশ্যক। কাউকে আল্লাহ তা‘আলা বা আল্লাহ তা‘আলার ছেলে মর্যাদায় উন্নীত করব না আবার কারো প্রাপ্য মর্যাদা ক্ষুণ্ণও করব না।
৩. অজান্তে ভুল-ত্র“টি হয়ে গেলে এ উম্মাতের জন্য তা ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।
৪. অন্তরে যে খারাপ চিন্তা আসে তা কর্মে বা কথায় প্রকাশ না পেলে পাকড়াও করা হবে না।
৫. সূরা বাকারার শেষ আয়াত দু’টির ফযীলত জানতে পারলাম।
৬. প্রত্যেক মু’মিনের উচিত আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে ঈমান এনে দুনিয়ায় জীবন-যাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে ঈমান আনা এবং সকল মতবাদ, চিন্তা-চেতনা ও জাহিলি কর্মকাণ্ড বর্জন করা।
এ আয়াত দু’টি হচ্ছে সম্পূর্ণ সূরার এমনি এক পরিশিষ্ট ও সংক্ষিপ্তসার যাতে সূরার মূল আলোচিত বিষয়গুলোর বর্ণনা দেয়া হয়েছে। এতে ঈমানের ধরন ও সত্যিকার মু’মিনের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা বলা হয়েছে এবং বিনয়ের সাথে আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করার আদব শিক্ষা দেয়া হয়েছে।
ফযীলত: ইবনু মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:مَنْ قَرَأَ بِالْآيَتَيْنِ مِنْ سُورَةِ الْبَقَرَةِ فِي لَيْلَةٍ كَفَتَاهُ
যে ব্যক্তি সূরা বাকারার এ আয়াত দু’টি রাতে তেলাওয়াত করবে তার জন্য এ দু’টিই (রাতের ইবাদত হিসেবে ও সকল অনিষ্ট থেকে বেঁচে থাকার জন্য) যথেষ্ট। (সহীহ বুখারী হা: ৪০০৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আমাকে সূরা ফাতিহা ও সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত আরশের নীচের ধনভাণ্ডার থেকে দেয়া হয়েছে। আমার পূর্বে কোন নাবীকে তা দেয়া হয়নি। (হাকিম: ১/৫৫৯, সিলসিলা সহীহাহ হা:১৪৮২)
নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা আকাশ-জমিন সৃষ্টি করার দু’হাজার বছর আগে একটি কিতাব লিখেছেন তা থেকে সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াত অবতীর্ণ করেছেন। যে বাড়িতে তিন রাত এ আয়াতদ্বয় তেলাওয়াত করা হবে সে বাড়িতে শয়তান থাকবে না। (তিরমিযী হা: ২৮৮২, সনদ সহীহ)
এ ছাড়াও সূরা বাকারার শেষ দু’টি আয়াতের আরো অনেক ফযীলত রয়েছে।
সূরার শুরুতে আল্লাহ তা‘আলা মানব জাতিকে ঈমানের প্রত্যেক রুকনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। অত্র আয়াতে তিনি জানিয়ে দিচ্ছেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও তাঁর সাথে মু’মিনগণ ঈমানের প্রত্যেক রুকনের প্রতি ঈমান এনেছেন। পূর্ববর্তী দীনের অনুসারীরা কিতাবের কিছু বিশ্বাস করেছিল আর কিছু কুফরী করেছিল, উম্মাতে মুহাম্মাদীর মু’মিনরা এমন করেনি। বরং মু’মিনরা সকল রুকনের প্রতি যেভাবে বিশ্বাস করা উচিত সেভাবে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহ তা‘আলা প্রেরিত নাবী-রাসূলদের মাঝে কোনরূপ পার্থক্য করে না। কোন রাসূলকে আল্লাহ তা‘আলা কিম্বা আল্লাহ তা‘আলার ছেলে বলে আখ্যায়িত করে বাড়াবাড়ি করে না, আবার অসম্মানিতও করে না। আয়াতে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সাথে মু’মিনদের কথা উল্লেখ করায় তাদের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি পেয়েছে।
(وَقَالُوْا سَمِعْنَا وَاَطَعْنَا)
“তারা বলে, আমরা শুনলাম এবং মেনে নিলাম।”এটা হল মু’মিনদের ঈমানের বহিঃপ্রকাশ। কুরআন ও সহীহ সুন্নায় যত বিধান নিয়ে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আগমন করেছেন সকল বিধানের ক্ষেত্রে মু’মিনদের এরূপ কথা হবে। তারা আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূলের বিধানের কাছে নিজেরা আত্মসমর্পন করবে এবং মেনে নেয়ার উদ্দেশ্যে শ্রবণ করবে, এ ক্ষেত্রে দল-মত ও তরীকার চিন্তা করার সুযোগ নেই।
(رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَآ)
“হে আমাদের রব! আমরা ভুলে গেলে অথবা ভুল করলে পাকড়াও করবেন না”এ দু‘আ কবূল করতঃ অন্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ فِيمَا أَخْطَأْتُمْ بِهِ)
“এ ব্যাপারে তোমরা যে ভুল-ত্র“টি করে ফেলেছ তাতে তোমাদের কোন গুনাহ হবে না।”(সূরা আহযাব ৩৩:৫) আর ভুল করে কিছু করলে আল্লাহ তা‘আলা ক্ষমা করবেন (সূরা আন‘আম ৬:৬৮)।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘আলা আমার উম্মাতের ভুল-ত্র“টি ক্ষমা করে দিয়েছেন এবং জোরপূর্বক যা কিছু করা হয় তাও ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে। (সুনানে ইবনে মাজাহ হা:২০৪৫, সহীহ)
(رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا)
“হে আমাদের রব! আমাদের ওপর এমন বোঝা চাপিয়ে দেবেন না”আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতের উত্তরে বলেছেন: হ্যাঁ। আমি তোমাদের ওপর এমন ভার দেব না যা পূর্ববর্তীগণ বহন করেছে। (মুসলিম, ১খণ্ড, ১৯৯, পৃঃ ১১৫ ও ১১৬)
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) হতে বণিত, তিনি বলেন: এক সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের কাছে এসে দেখতে পেলেন যে, দু‘টি খুটির মাঝে রশি টাঙানো আছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন: এ রশিটা কিসের জন্য? লোকেরা বলল: এ রশি যায়নাবের (লটকানো), রাতের বেলা তিনি ইবাদত করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়লে এর ওপর গা ঝুলিয়ে দেন। এসব শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন: না, ওটা খুলে দাও। মনে ফূর্তি ও সতেজ ভাব থাকা পর্যন্তই তোমাদের ইবাদত বন্দেগী (ফরয ব্যতীত) করা উচিত। যখন সে ক্লান্ত হয়ে পড়বে তখন ইবাদত করবে না। (অন্য বর্ণনায় রয়েছে) আবূ মা‘মার আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন: বানী আসাদ গোত্রের একজন মহিলা আমার কাছে উপস্থিত ছিলেন। এমতাবস্থায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার কাছে আগমন করলেন এবং (মহিলাটিকে দেখে) জিজ্ঞাসা করলেন: মহিলাটি কে? আমি বললাম: অমুক মহিলা আর তার সালাতের কথা উল্লেখ করে বললাম যে, সে রাতে ঘুমায় না। এসব শুনে নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরক্তির স্বরে বললেন: থামো! সাধ্য অনুসারেই তোমাদের আমল করা উচিত। কেননা, তোমরা ক্লান্ত না হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তা‘আলা ক্লান্ত হননা। (অর্থাৎ তোমরা ক্লান্ত ও বিরক্ত হয়ে যখন কাজ বন্ধ করে দাও, আল্লাহ তা‘আলা তখনই সওয়াব বা পুরস্কার প্রদান বন্ধ করে দেন। (সহীহ বুখারী হা: ১১৫০, সহীহ মুসলিম হা: ৭৮৪)
সুতরাং আমাদের উচিত আল্লাহ তা‘আলা যা দায়িত্ব দেননি নিজেরা বিভিন্ন তরীকার অসাধ্য সবক আবিস্কার করে এমন কিছু চাপিয়ে না নেয়া, বরং সাধ্যমত আমল করতঃ আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহের আশা করব।
পরিশেষে একজন দাস তার মুনীবের কাছে যেভাবে অনুনয়-বিনয়ের সাথে নিজের অক্ষমতা, অপারগতা ও অপরাধ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করে আল্লাহ তা‘আলা সেভাবে আমাদেরকে ক্ষমা প্রার্থনা করার শিক্ষা দিচ্ছেন। হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল, আপনি ক্ষমাকে ভালবাসেন, আপনি দয়ালু, অতএব আপনি আমাদের ক্ষমা করে দিন ও দয়া করুন। আপনি আমাদের মাওলা, আপনি ছাড়া আমাদের কোন অভিভাবক নেই, অতএব আপনি কাফিরদের বিরুদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন। এ সূরা শেষে আমীন বলার হাদীসটি দুর্বল। (ইবনু জারীর আত-তাবারী হা: ৬৫৪১, যঈফ)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ঈমানের রুকনসমূহ অবগত হলাম।
২. সকল রাসূলের প্রতি কোন পার্থক্য ছাড়াই ঈমান আনা আবশ্যক। কাউকে আল্লাহ তা‘আলা বা আল্লাহ তা‘আলার ছেলে মর্যাদায় উন্নীত করব না আবার কারো প্রাপ্য মর্যাদা ক্ষুণ্ণও করব না।
৩. অজান্তে ভুল-ত্র“টি হয়ে গেলে এ উম্মাতের জন্য তা ক্ষমা করে দেয়া হয়েছে।
৪. অন্তরে যে খারাপ চিন্তা আসে তা কর্মে বা কথায় প্রকাশ না পেলে পাকড়াও করা হবে না।
৫. সূরা বাকারার শেষ আয়াত দু’টির ফযীলত জানতে পারলাম।
৬. প্রত্যেক মু’মিনের উচিত আল্লাহ তা‘আলা যেভাবে ঈমান এনে দুনিয়ায় জীবন-যাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন সেভাবে ঈমান আনা এবং সকল মতবাদ, চিন্তা-চেতনা ও জাহিলি কর্মকাণ্ড বর্জন করা।
আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)-https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothe.in , comming soon my best world websaite
0 Comments