তাফসীরঃ ফাতহুল মাজীদ
ইসলামিক এডুকেশন এন্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন (এই. ই.
আর. এফ)
অনুবাদ ও গবেষণা বিভাগ কর্তৃক সংকলিত।ও সম্পাদিত
সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ-আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী
সম্পাদনা পরিষদঃ-
প্রফেসর এ.কে.এম শামসুল আলম
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইলিয়াস আলী
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুযযাম্মিল আলী
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ লাকমান হুসেন
অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক সালাফী |
অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ আল-মাদানী
শায়খ মুস্তফা বিন বাহারুদ্দীন সালাফী
শায়খ ড. হাফিয় রফিকুল আল-মাদানী
শায়খ মাসউদুল আলম উমরী
শায়খ মুফায়যাল হুসাইন আল-মাদানী
শায়খ মুহাম্মদ ঈসা মিয়া আল-মাদানী
শায়খ মুহাম্মদ ইরফান আলী আব্বাস আল-মাদানী
শায়খ হাবিবুর রহমান আল-মাদানী |
শায়খ হাফিয় আনিসুর রহমান আল-মাদানী |
শায়খ ইব্রাহীম বিন আবদুল হালীম আল-মাদানী
শায়খ আব্দুন নূর আবু সাঈদ আল-মাদানী |
শায়খ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ খান আল-মাদানী
শায়খ হাফিয় আনিসুর রহমান আল-মাদানী
শায়খ ইব্রাহীম বিন আবদুল হালীম আল-মাদানী
শায়খ আব্দুন নূর আবু সাঈদ আল-মাদানী
শায়খ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ খান আল-মাদানী
পরিবেশনায়ঃ আল খাইর
পাবলিকেশন্ম, নাজির বাজার, | ঢাকা।
সাম্প্রতিককালে সংকলিত অন্যতম কিছু তাফসীরের মধ্যে
তাফসীর ফাতহুল মাজীদ উল্লেখযোগ্য। এই তাফসীরটি শাইখ মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ খান
মাদানীর তত্ত্বাবধানে সংকলন করা হয়েছে।
খণ্ড সংখ্যাঃ ৩
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৫৯৮ (৮২৪ + ৯৬০ + ৮১৪)
মুদ্রিত মূল্যঃ ২৫৫০ (৯০০ + ৮৫০ + ৮০০)
তাফসীর ফাতহুল মাজীদ-এর উল্লেখযোগ্য
বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
০১. আরবী আয়াতের পাশাপাশি অতি সহজ - সরল বাংলা
অনুবাদ।
০২. জটিল ও কঠিন শব্দার্থ।
০৩. গ্রহণযোগ্য বর্ণনার আলোকে শানে নুযুল।
০৪. কুরআনুল কারীম ও স্বহীহ হাদীছ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থের আলোকে সংক্ষিপ্ত তাফসীর সংকলন।
০৫. স্বহীহ আক্বীদাহ ও শারয়ী বিধানমূলক আয়াতের শিক্ষা।
০৬. কুরআন ও সহীহ হাদীছের আলোকে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সমাধান।
০৭. ভিত্তিহীন প্রচলিত তাফসীর সম্পর্কে সতর্কীকরণ।
০৮. তাফসীরে ব্যবহৃত আয়াতসমূহ নম্বর ও সূরাসহ উল্লেখ করা হয়েছে।
০৯. যথাসাধ্য হাদীছের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
১০. সাধ্যানুযায়ী স্বহীহ বুখারী, স্বহীহ মুসলিম, সুনান আবূ দাউদ, সুনান তিরমিযি, সুনান নাসাঈ, সুনান ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক ও মুসনাদে আহমাদ ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থের হাদীসসমূহে মাকতাবাহ শামিলার নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।
১১. বাংলাভাষী পাঠকদের সহজ পাঠের জন্য আরবী বিশেষ ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
১২. সর্বোপরি উন্নতমানের কাগজে মুদ্রণ, মজবুত ও আকর্ষণীয় বাইন্ডিং করা হয়েছে।প্রথম খণ্ডে সূরাহ আল ফাতিহাহ থেকে সূরাহ আত তাওবাহ্, দ্বিতীয় খণ্ডে সূরাহ ইউনুস থেকে সূরাহ আল ফাথির এবং তৃতীয় খণ্ডে সূরাহ ইয়াসীন থেকে সূরাহ আন নাসের তাফসীর রয়েছে।
০২. জটিল ও কঠিন শব্দার্থ।
০৩. গ্রহণযোগ্য বর্ণনার আলোকে শানে নুযুল।
০৪. কুরআনুল কারীম ও স্বহীহ হাদীছ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থের আলোকে সংক্ষিপ্ত তাফসীর সংকলন।
০৫. স্বহীহ আক্বীদাহ ও শারয়ী বিধানমূলক আয়াতের শিক্ষা।
০৬. কুরআন ও সহীহ হাদীছের আলোকে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সমাধান।
০৭. ভিত্তিহীন প্রচলিত তাফসীর সম্পর্কে সতর্কীকরণ।
০৮. তাফসীরে ব্যবহৃত আয়াতসমূহ নম্বর ও সূরাসহ উল্লেখ করা হয়েছে।
০৯. যথাসাধ্য হাদীছের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
১০. সাধ্যানুযায়ী স্বহীহ বুখারী, স্বহীহ মুসলিম, সুনান আবূ দাউদ, সুনান তিরমিযি, সুনান নাসাঈ, সুনান ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক ও মুসনাদে আহমাদ ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থের হাদীসসমূহে মাকতাবাহ শামিলার নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।
১১. বাংলাভাষী পাঠকদের সহজ পাঠের জন্য আরবী বিশেষ ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
১২. সর্বোপরি উন্নতমানের কাগজে মুদ্রণ, মজবুত ও আকর্ষণীয় বাইন্ডিং করা হয়েছে।প্রথম খণ্ডে সূরাহ আল ফাতিহাহ থেকে সূরাহ আত তাওবাহ্, দ্বিতীয় খণ্ডে সূরাহ ইউনুস থেকে সূরাহ আল ফাথির এবং তৃতীয় খণ্ডে সূরাহ ইয়াসীন থেকে সূরাহ আন নাসের তাফসীর রয়েছে।
2:1
الٓـمّٓ ۚ﴿۱﴾
সুরার নাম- বাকারা,(বকনা- \বাছুর)
মোট আয়াত- ২৮৬, সুরার ধরনঃ-
মাদানি।
2:252
تِلۡکَ اٰیٰتُ اللّٰہِ
نَتۡلُوۡہَا عَلَیۡکَ بِالۡحَقِّ ؕ وَ اِنَّکَ لَمِنَ الۡمُرۡسَلِیۡنَ ﴿۲۵۲﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৪৬-২৫২ নং আয়াতের তাফসীর:
এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আঃ)-এর পরবর্তী যুগের একটি জাতির ঘটনা উল্লেখ করেছেন। সাগরডুবি থেকে নাজাত পেয়ে মূসা ও হারূন (আঃ) বানী ইসরাঈলের নিয়ে শামে এসে শান্তিতে বসবাস করতে থাকলেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে পিতৃভূমি ফিলিস্তীন ফিরে গিয়ে আমালেকা জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তা পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেয়া হল, সাথে এ ওয়াদাও দেয়া হল- যুদ্ধ করলেই বিজয় দান করা হবে (সূরা মায়িদাহ ৫:২৩)। কিন্তু তারা মূসা (আঃ)-কে পরিস্কার জানিয়ে দিল- ‘তুমি ও তোমার রব গিয়ে যুদ্ধ কর, আমরা এখানে বসে রইলাম’(সূরা মায়িদাহ ৫:২৪)। ফলে শাস্তিস্বরূপ তারা তীহ ময়দানে ৪০ বছর উ™£ান্ত অবস্থায় ঘুরতে থাকল। পরে ইউশা বিন নূনের নেতৃত্বে ফিলিস্তীন দখল করা হলেও বানী ইসরাঈল পুনরায় বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দেয় এবং নানাবিধ অনাচারে লিপ্ত হয়। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর পুনরায় আমালেকা জাতি চাপিয়ে দেন। বানী ইসরাঈলরা আবার নিগৃহীত হতে থাকে। এভাবে বহু দিন কেটে যায়। এক সময় শামাবীল (شمويل) নাবীর যুগ আসে। তারা এ নাবীর কাছে একজন বাদশা নির্ধারণের দাবি জানাল যাতে তার নেতৃত্বে পূর্বের ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারে এবং বর্তমান দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের দাবি মতে নেতা হিসেবে তালূতকে প্রেরণ করেন। কিন্তু তারা তালূতকে মেনে নেয়নি। কারণ তালূত ঐ বংশের ছিল না যে বংশ থেকে ধারাবাহিকভাবে বানী ইসরাঈলের নেতৃত্বের আগমন ঘটেছে। তিনি একজন দরিদ্র ও সাধারণ সৈনিক ছিলেন। তাই তারা আয়াতে বর্ণিত অভিযোগ আনল।
বিষয়টি হল- বানী ইসরাঈলের নিকট একটি সিন্দুক ছিল। যার মধ্যে তাদের নাবী মূসা ও হারূন (আঃ) এবং তাদের পরিবারের ব্যবহৃত কিছু পরিত্যক্ত সামগ্রী ছিল। তারা এটাকে খুবই বরকতময় মনে করত এবং যুদ্ধকালে একে সম্মুকে রাখত। একবার আমালেকাদের সাথে যুদ্ধের সময় বানী ইসরাঈল পরাজিত হলে আমালেকাদের বাদশা জালূত উক্ত সিন্দুকটি নিয়ে যায়। এক্ষণে যখন বানী ইসরাঈলগণ পুনরায় জিহাদের সংকল্প করল, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে উক্ত সিন্দুক ফিরিয়ে দিতে মনস্থ করলেন। অতঃপর এ সিন্দুকটির মাধ্যমে তাদের মধ্যকার নেতৃত্ব নিয়ে ঝগড়ার নিসরন করেন। সিন্দুকটি তালূতের বাড়িতে আগমনের ঘটনা এই যে, জালূতের নির্দেশে কাফিররা যেখানেই সিন্দুকটি রাখে, সেখানেই দেখা দেয় মহামারী ও অন্যান্য বিপদাপদ শুরু হয়ে যায়। এমনিভাবে তাদের পাঁচটি শহর ধ্বংস হয়ে যায়। অবশেষে অতিষ্ট হয়ে তারা একে তার প্রকৃত মালিকের কাছে পাঠিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিল এবং গরুর গাড়িতে উঠিয়ে হাঁকিয়ে দিল। তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশক্রমে গরুর গাড়িটি তাড়িয়ে এনে তালূতের ঘরের সম্মুখে রেখে দিল। বানী ইসরাঈল এ দৃশ্য দেখে সবাই একবাক্যে তালূতের নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করল। অতঃপর তালূত আমালেকাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার প্রস্তুতি নেন। সকল প্রস্তুতি শেষ হলে কথিত মতে ৮০,০০০ হাজার সেনা নিয়ে রওনা হন। অল্প বয়স্ক তরুণ দাউদ (আঃ) ছিলেন উক্ত সেনা দলের সদস্য। পথিমধ্যে সেনাপতি তালূত তাদের পরীক্ষা করতে চাইলেন। সম্মুখেই ছিল এক নদী। মৌসুম ছিল প্রচণ্ড গরমের। পিপাসায় ছিল সবাই কাতর। তাই তিনি বললেন, (مُبْتَلِيْكُمْ بِنَهَرٍ)
‘তোমাদেরকে একটি নদী দ্বারা পরীক্ষা করবেন’এ নদীটি হল জর্ডান ও প্যালেস্টাইনের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত। বস্তুত নদী পার হওয়া অল্প সংখ্যক ঈমানদার ব্যতীত সকলেই পানি পান করেছিল, যাদের সংখ্যা ছিল ৩১৩ জন, যা বদর যুদ্ধে মুসলিম যুদ্ধাদের সংখ্যা ছিল। যারা পানি পান করেছিল তারা আলস্যে ঘুমিয়ে পড়ে। এ স্বল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে তালূত শৌর্য-বীর্যের প্রতীক আমালেকাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চললেন। বস্তুবাদীদের হিসেবে এটা ছিল নিতান্তই আত্মহননের শামিল, একটি অসম যুদ্ধ।
(وَلَمَّا بَرَزُوْا لِجَالُوْتَ وَجُنُوْدِه)
‘আর যখন তারা জালূত ও তার সৈন্যদের মুখোমুুখি হল’জালূত ছিল শত্র“দলের সেনাপতি। তালূত ও তাঁর সঙ্গীরা জালূতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল। এরা ছিল আমালিকা জাতি। তৎকালীন সময়ে তারা বড় দুর্ধর্ষ ও যুদ্ধবাজ ছিল। তাই এ যুদ্ধবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় তারা আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করে নিল। আল্লাহ তা‘আলার সহযোগিতায় তারা সংখ্যায় অল্প হলেও জয় লাভ করল।(وَقَتَلَ دَاو۫دُ جَالُوْتَ)
‘দাঊদ (আঃ) জালূতকে হত্যা করল’তখন দাঊদ (আঃ) নাবী ছিলেন না। তালূতের একজন সাধারণ সৈন্য ছিলেন। পরে আল্লাহ তা‘আলা তাকে নবুওয়াত ও রাজত্ব উভয়টি দান করলেন।এসব ঘটনা বর্ণনা করার দু’টি উদ্দেশ্য:
(১) শিক্ষা গ্রহণ, (২) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুওয়াতের সত্যতার প্রমাণ। কেননা; তিনি এ সব ঘটনা কোন কিতাবে পড়েননি এবং কারো কাছে শোনেননি। বরং অতীতের এসব ঘটনা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে ওয়াহীর মাধ্যমে অবগত করেছেন। সেজন্য শেষে আল্লাহ তা‘আলা বললেন:
(إِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ)
“নিশ্চয়ই তুমি রাসূলগণের অন্যতম একজন।”(সূরা ইয়াসীন ৩৬:২)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. শরীয়তসম্মত জিহাদের শর্ত হল শরীয়তসম্মত ইমাম থাকতে হবে।
২. রাসূলদের ব্যবহৃত জিনিস দ্বারা বরকত নেয়া জায়েয। তবে কোন পীর-ফকির বাবা ইত্যাদি ব্যক্তির থেকে নয়। এটা শুধু রাসূলদের সাথে সীমাবদ্ধ।
৩. ঈমানদার যুদ্ধে গেলে পিছপা হয় না।
৪. মুনাফিকরা যুদ্ধের জন্য খুব আগ্রহ দেখাবে কিন্তু ফরয হলে বা সরাসরি মোকাবেলার সময় হলে পালাবে।
এ আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলা মূসা (আঃ)-এর পরবর্তী যুগের একটি জাতির ঘটনা উল্লেখ করেছেন। সাগরডুবি থেকে নাজাত পেয়ে মূসা ও হারূন (আঃ) বানী ইসরাঈলের নিয়ে শামে এসে শান্তিতে বসবাস করতে থাকলেন। এমতাবস্থায় আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে পিতৃভূমি ফিলিস্তীন ফিরে গিয়ে আমালেকা জাতির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে তা পুনরুদ্ধারের নির্দেশ দেয়া হল, সাথে এ ওয়াদাও দেয়া হল- যুদ্ধ করলেই বিজয় দান করা হবে (সূরা মায়িদাহ ৫:২৩)। কিন্তু তারা মূসা (আঃ)-কে পরিস্কার জানিয়ে দিল- ‘তুমি ও তোমার রব গিয়ে যুদ্ধ কর, আমরা এখানে বসে রইলাম’(সূরা মায়িদাহ ৫:২৪)। ফলে শাস্তিস্বরূপ তারা তীহ ময়দানে ৪০ বছর উ™£ান্ত অবস্থায় ঘুরতে থাকল। পরে ইউশা বিন নূনের নেতৃত্বে ফিলিস্তীন দখল করা হলেও বানী ইসরাঈল পুনরায় বিলাসিতায় গা ভাসিয়ে দেয় এবং নানাবিধ অনাচারে লিপ্ত হয়। তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদের ওপর পুনরায় আমালেকা জাতি চাপিয়ে দেন। বানী ইসরাঈলরা আবার নিগৃহীত হতে থাকে। এভাবে বহু দিন কেটে যায়। এক সময় শামাবীল (شمويل) নাবীর যুগ আসে। তারা এ নাবীর কাছে একজন বাদশা নির্ধারণের দাবি জানাল যাতে তার নেতৃত্বে পূর্বের ঐতিহ্য ফিরে পেতে পারে এবং বর্তমান দুর্দশা থেকে মুক্তি পেতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা তাদের দাবি মতে নেতা হিসেবে তালূতকে প্রেরণ করেন। কিন্তু তারা তালূতকে মেনে নেয়নি। কারণ তালূত ঐ বংশের ছিল না যে বংশ থেকে ধারাবাহিকভাবে বানী ইসরাঈলের নেতৃত্বের আগমন ঘটেছে। তিনি একজন দরিদ্র ও সাধারণ সৈনিক ছিলেন। তাই তারা আয়াতে বর্ণিত অভিযোগ আনল।
বিষয়টি হল- বানী ইসরাঈলের নিকট একটি সিন্দুক ছিল। যার মধ্যে তাদের নাবী মূসা ও হারূন (আঃ) এবং তাদের পরিবারের ব্যবহৃত কিছু পরিত্যক্ত সামগ্রী ছিল। তারা এটাকে খুবই বরকতময় মনে করত এবং যুদ্ধকালে একে সম্মুকে রাখত। একবার আমালেকাদের সাথে যুদ্ধের সময় বানী ইসরাঈল পরাজিত হলে আমালেকাদের বাদশা জালূত উক্ত সিন্দুকটি নিয়ে যায়। এক্ষণে যখন বানী ইসরাঈলগণ পুনরায় জিহাদের সংকল্প করল, তখন আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে উক্ত সিন্দুক ফিরিয়ে দিতে মনস্থ করলেন। অতঃপর এ সিন্দুকটির মাধ্যমে তাদের মধ্যকার নেতৃত্ব নিয়ে ঝগড়ার নিসরন করেন। সিন্দুকটি তালূতের বাড়িতে আগমনের ঘটনা এই যে, জালূতের নির্দেশে কাফিররা যেখানেই সিন্দুকটি রাখে, সেখানেই দেখা দেয় মহামারী ও অন্যান্য বিপদাপদ শুরু হয়ে যায়। এমনিভাবে তাদের পাঁচটি শহর ধ্বংস হয়ে যায়। অবশেষে অতিষ্ট হয়ে তারা একে তার প্রকৃত মালিকের কাছে পাঠিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নিল এবং গরুর গাড়িতে উঠিয়ে হাঁকিয়ে দিল। তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশক্রমে গরুর গাড়িটি তাড়িয়ে এনে তালূতের ঘরের সম্মুখে রেখে দিল। বানী ইসরাঈল এ দৃশ্য দেখে সবাই একবাক্যে তালূতের নেতৃত্বের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করল। অতঃপর তালূত আমালেকাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ পরিচালনার প্রস্তুতি নেন। সকল প্রস্তুতি শেষ হলে কথিত মতে ৮০,০০০ হাজার সেনা নিয়ে রওনা হন। অল্প বয়স্ক তরুণ দাউদ (আঃ) ছিলেন উক্ত সেনা দলের সদস্য। পথিমধ্যে সেনাপতি তালূত তাদের পরীক্ষা করতে চাইলেন। সম্মুখেই ছিল এক নদী। মৌসুম ছিল প্রচণ্ড গরমের। পিপাসায় ছিল সবাই কাতর। তাই তিনি বললেন, (مُبْتَلِيْكُمْ بِنَهَرٍ)
‘তোমাদেরকে একটি নদী দ্বারা পরীক্ষা করবেন’এ নদীটি হল জর্ডান ও প্যালেস্টাইনের মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত। বস্তুত নদী পার হওয়া অল্প সংখ্যক ঈমানদার ব্যতীত সকলেই পানি পান করেছিল, যাদের সংখ্যা ছিল ৩১৩ জন, যা বদর যুদ্ধে মুসলিম যুদ্ধাদের সংখ্যা ছিল। যারা পানি পান করেছিল তারা আলস্যে ঘুমিয়ে পড়ে। এ স্বল্প সংখ্যক সৈন্য নিয়ে তালূত শৌর্য-বীর্যের প্রতীক আমালেকাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে চললেন। বস্তুবাদীদের হিসেবে এটা ছিল নিতান্তই আত্মহননের শামিল, একটি অসম যুদ্ধ।
(وَلَمَّا بَرَزُوْا لِجَالُوْتَ وَجُنُوْدِه)
‘আর যখন তারা জালূত ও তার সৈন্যদের মুখোমুুখি হল’জালূত ছিল শত্র“দলের সেনাপতি। তালূত ও তাঁর সঙ্গীরা জালূতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল। এরা ছিল আমালিকা জাতি। তৎকালীন সময়ে তারা বড় দুর্ধর্ষ ও যুদ্ধবাজ ছিল। তাই এ যুদ্ধবাজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সময় তারা আল্লাহ তা‘আলার কাছে দু‘আ করে নিল। আল্লাহ তা‘আলার সহযোগিতায় তারা সংখ্যায় অল্প হলেও জয় লাভ করল।(وَقَتَلَ دَاو۫دُ جَالُوْتَ)
‘দাঊদ (আঃ) জালূতকে হত্যা করল’তখন দাঊদ (আঃ) নাবী ছিলেন না। তালূতের একজন সাধারণ সৈন্য ছিলেন। পরে আল্লাহ তা‘আলা তাকে নবুওয়াত ও রাজত্ব উভয়টি দান করলেন।এসব ঘটনা বর্ণনা করার দু’টি উদ্দেশ্য:
(১) শিক্ষা গ্রহণ, (২) রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নবুওয়াতের সত্যতার প্রমাণ। কেননা; তিনি এ সব ঘটনা কোন কিতাবে পড়েননি এবং কারো কাছে শোনেননি। বরং অতীতের এসব ঘটনা আল্লাহ তা‘আলা তাঁর রাসূলকে ওয়াহীর মাধ্যমে অবগত করেছেন। সেজন্য শেষে আল্লাহ তা‘আলা বললেন:
(إِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ)
“নিশ্চয়ই তুমি রাসূলগণের অন্যতম একজন।”(সূরা ইয়াসীন ৩৬:২)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. শরীয়তসম্মত জিহাদের শর্ত হল শরীয়তসম্মত ইমাম থাকতে হবে।
২. রাসূলদের ব্যবহৃত জিনিস দ্বারা বরকত নেয়া জায়েয। তবে কোন পীর-ফকির বাবা ইত্যাদি ব্যক্তির থেকে নয়। এটা শুধু রাসূলদের সাথে সীমাবদ্ধ।
৩. ঈমানদার যুদ্ধে গেলে পিছপা হয় না।
৪. মুনাফিকরা যুদ্ধের জন্য খুব আগ্রহ দেখাবে কিন্তু ফরয হলে বা সরাসরি মোকাবেলার সময় হলে পালাবে।
2:253
تِلۡکَ الرُّسُلُ
فَضَّلۡنَا بَعۡضَہُمۡ عَلٰی بَعۡضٍ ۘ مِنۡہُمۡ مَّنۡ کَلَّمَ اللّٰہُ وَ رَفَعَ
بَعۡضَہُمۡ دَرَجٰتٍ ؕ وَ اٰتَیۡنَا عِیۡسَی ابۡنَ مَرۡیَمَ الۡبَیِّنٰتِ وَ
اَیَّدۡنٰہُ بِرُوۡحِ الۡقُدُسِ ؕ وَ لَوۡ شَآءَ اللّٰہُ مَا اقۡتَتَلَ
الَّذِیۡنَ مِنۡۢ بَعۡدِہِمۡ مِّنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَتۡہُمُ الۡبَیِّنٰتُ وَ
لٰکِنِ اخۡتَلَفُوۡا فَمِنۡہُمۡ مَّنۡ اٰمَنَ وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ کَفَرَ ؕ وَ لَوۡ
شَآءَ اللّٰہُ مَا اقۡتَتَلُوۡا ۟ وَ لٰکِنَّ اللّٰہَ یَفۡعَلُ مَا یُرِیۡدُ ﴿۲۵۳﴾٪
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৫৩ নং আয়াতের
তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা কতক রাসূলকে কতক রাসূলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, সকল রাসূল মর্যাদার দিক দিয়ে সমান নয়। যেমন মূসা (আঃ)-এর সাথে সরাসরি কথা বলে ‘কালিমুল্লাহ’র মর্যাদা দিয়েছেন, অন্য কোন রাসূলের সাথে এরূপ সরাসরি কথা বলেননি। ঈসা (আঃ)-কে জিবরীল দ্বারা সহযোগিতা করেছেন এবং পিতা ছাড়া শুধু মায়ের মাধ্যমে দুনিয়াতে প্রেরণ করে ‘রূহুল্লাহ’র মর্যাদা দিয়েছেন, অন্য কোন রাসূল পিতা ছাড়া জন্ম লাভ করেনি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ فَضَّلْنَا بَعْضَ النَّبِیّ۪نَ عَلٰی بَعْضٍ وَّاٰتَیْنَا دَاو۫دَ زَبُوْرًا)
“আমি নাবীগণের কতককে কতকের ওপর মর্যাদা দিয়েছি; দাঊদকে আমি যাবূর দিয়েছি।”(সূরা বানী ইসরাঈল ১৭:৫৫)
নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সকল নাবীর শেষ নাবী এবং সারা জাহানের জন্য প্রেরণ করে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, অন্য কোন নাবীকে সারা জাহানের জন্য প্রেরণ করেননি। এছাড়াও তাঁকে অনেক দিক থেকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
فُضِّلْتُ عَلَي الْأَنْبِيَاءِ بِسِتٍّ: أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ، وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ، وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ ، وَجُعِلَتْ لِيَ الْأَرْضُ طَهُورًا وَمَسْجِدًا، وَأُرْسِلْتُ إِلَي الْخَلْقِ كَافَّةً، وَخُتِمَ بِيَ النَّبِيُّونَ
‘আমাকে ছয়টি জিনিস দ্বারা অন্যান্য নাবীদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। ১. আমাকে অল্প কথায় অনেক কিছু প্রকাশ করার ক্ষমতা দান করা হয়েছে। ২. শত্র“রা আমাকে ভয় করবে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করা হয়েছে। ৩. আমার জন্য গনীমত হালাল করা হয়েছে। ৪. সমস্ত জমিনকে আমার জন্য পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম ও সিজদার স্থানস্বরূপ করে দেয়া হয়েছে। ৫. আমি সকল সৃষ্টির জন্য রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি। ৬. আমার দ্বারা নবুওয়াত সমাপ্ত হয়েছে।’(সহীহ মুসলিম হা: ৫২৩)
আল্লাহ তা‘আলা কতক রাসূলকে কতক রাসূলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। কিন্তু নির্দিষ্ট করে কোন নাবী বা রাসূলকে অন্য কোন নির্দিষ্ট নাবী বা রাসূলের ওপর প্রাধান্য দিয়ে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা যাবেনা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
لَا يَنْبَغِي لِعَبْدٍ أَنْ يَقُولَ إِنَّهُ خَيْرٌ مِنْ يُونُسَ بْنِ مَتَّي
কোন ব্যক্তির উচিত নয় এ কথা বলা যে, আমি ইউনুস বিন মাত্তা (আঃ) থেকে উত্তম। (সহীহ বুখারী হা: ২৩৯৬)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে: তোমরা আমাকে মূসা (আঃ)-এর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিওনা। (সহীহ বুখারী হা: ২৪১১) অতএব আমরা বিশ্বাস করব কতক রাসূল কতকজনের ওপর শ্রেষ্ঠ কিন্তু কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করব না।
(وَلَوْ شَآءَ اللّٰهُ مَا اقْتَتَلُوْا)
‘আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা যুদ্ধে লিপ্ত হত না’অর্থাৎ রাসূলগের মর্যাদায় তারতম্য থাকলেও সকলের দীন ছিল একটিই, তাদের দাওয়াত ছিল এক আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদের দিকে। কিন্তু বিভিন্ন জাতির লোকেরা পরস্পরে মতনৈক্যের কারণে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। কেউ ঈমান এনেছে আবার কেউ কুফরী করেছে। এমনকি এ কারণে তাদের মাঝে মারামারি সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করলে তাদেরকে সঠিক পথে রাখতে পারতেন, তাদের মাঝে মতনৈক্য সৃষ্টি হতো না। তাদের ঝগড়া-বিবাদ, মতভেদ এসব কিছু আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে পূর্ব নির্ধারণ করা তাকদীরের আলোকে। অর্থাৎ তারা কী করবে এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা জানতেন, সে জ্ঞানানুযায়ী তাদের তাকদীর নির্ধারণ করেছেন। অতএব তারা সে তাকদীর অনুযায়ী আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছায় সব কিছু করে থাকে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মর্যাদার ক্ষেত্রে রাসূলগণের মধ্যে তারতম্য রয়েছে, সকলের মর্যাদা সমান নয়।
২. রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনার ক্ষেত্রে কোন তারতম্য করা যাবে না।
৩. “আল্লাহ তা‘আলা কথা বলেন” এ গুণ প্রমাণিত হল।
৪. “আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করেন” এ গুণ প্রমাণিত হল।
৫. দীনের মাঝে মতানৈক্য করা নিন্দনীয়।
৬. মানুষ যা কিছু করবে আল্লাহ তা‘আলা তা পূর্ব থেকে জানেন, সে জ্ঞানানুযায়ী মানুষের ভাল-মন্দ তাকদীর লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। সে অনুযায়ী মানুষ আমল করে থাকে।
আল্লাহ তা‘আলা কতক রাসূলকে কতক রাসূলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন, সকল রাসূল মর্যাদার দিক দিয়ে সমান নয়। যেমন মূসা (আঃ)-এর সাথে সরাসরি কথা বলে ‘কালিমুল্লাহ’র মর্যাদা দিয়েছেন, অন্য কোন রাসূলের সাথে এরূপ সরাসরি কথা বলেননি। ঈসা (আঃ)-কে জিবরীল দ্বারা সহযোগিতা করেছেন এবং পিতা ছাড়া শুধু মায়ের মাধ্যমে দুনিয়াতে প্রেরণ করে ‘রূহুল্লাহ’র মর্যাদা দিয়েছেন, অন্য কোন রাসূল পিতা ছাড়া জন্ম লাভ করেনি।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ فَضَّلْنَا بَعْضَ النَّبِیّ۪نَ عَلٰی بَعْضٍ وَّاٰتَیْنَا دَاو۫دَ زَبُوْرًا)
“আমি নাবীগণের কতককে কতকের ওপর মর্যাদা দিয়েছি; দাঊদকে আমি যাবূর দিয়েছি।”(সূরা বানী ইসরাঈল ১৭:৫৫)
নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সকল নাবীর শেষ নাবী এবং সারা জাহানের জন্য প্রেরণ করে শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন, অন্য কোন নাবীকে সারা জাহানের জন্য প্রেরণ করেননি। এছাড়াও তাঁকে অনেক দিক থেকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
فُضِّلْتُ عَلَي الْأَنْبِيَاءِ بِسِتٍّ: أُعْطِيتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ، وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ، وَأُحِلَّتْ لِيَ الْغَنَائِمُ ، وَجُعِلَتْ لِيَ الْأَرْضُ طَهُورًا وَمَسْجِدًا، وَأُرْسِلْتُ إِلَي الْخَلْقِ كَافَّةً، وَخُتِمَ بِيَ النَّبِيُّونَ
‘আমাকে ছয়টি জিনিস দ্বারা অন্যান্য নাবীদের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করা হয়েছে। ১. আমাকে অল্প কথায় অনেক কিছু প্রকাশ করার ক্ষমতা দান করা হয়েছে। ২. শত্র“রা আমাকে ভয় করবে এ ব্যাপারে সহযোগিতা করা হয়েছে। ৩. আমার জন্য গনীমত হালাল করা হয়েছে। ৪. সমস্ত জমিনকে আমার জন্য পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম ও সিজদার স্থানস্বরূপ করে দেয়া হয়েছে। ৫. আমি সকল সৃষ্টির জন্য রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি। ৬. আমার দ্বারা নবুওয়াত সমাপ্ত হয়েছে।’(সহীহ মুসলিম হা: ৫২৩)
আল্লাহ তা‘আলা কতক রাসূলকে কতক রাসূলের ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন তা আমাদের বিশ্বাস করতে হবে। কিন্তু নির্দিষ্ট করে কোন নাবী বা রাসূলকে অন্য কোন নির্দিষ্ট নাবী বা রাসূলের ওপর প্রাধান্য দিয়ে তাকে হেয় প্রতিপন্ন করা যাবেনা। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
لَا يَنْبَغِي لِعَبْدٍ أَنْ يَقُولَ إِنَّهُ خَيْرٌ مِنْ يُونُسَ بْنِ مَتَّي
কোন ব্যক্তির উচিত নয় এ কথা বলা যে, আমি ইউনুস বিন মাত্তা (আঃ) থেকে উত্তম। (সহীহ বুখারী হা: ২৩৯৬)
অন্য বর্ণনায় রয়েছে: তোমরা আমাকে মূসা (আঃ)-এর ওপর শ্রেষ্ঠত্ব দিওনা। (সহীহ বুখারী হা: ২৪১১) অতএব আমরা বিশ্বাস করব কতক রাসূল কতকজনের ওপর শ্রেষ্ঠ কিন্তু কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করব না।
(وَلَوْ شَآءَ اللّٰهُ مَا اقْتَتَلُوْا)
‘আর আল্লাহ ইচ্ছা করলে তারা যুদ্ধে লিপ্ত হত না’অর্থাৎ রাসূলগের মর্যাদায় তারতম্য থাকলেও সকলের দীন ছিল একটিই, তাদের দাওয়াত ছিল এক আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদের দিকে। কিন্তু বিভিন্ন জাতির লোকেরা পরস্পরে মতনৈক্যের কারণে সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয়ে গেছে। কেউ ঈমান এনেছে আবার কেউ কুফরী করেছে। এমনকি এ কারণে তাদের মাঝে মারামারি সৃষ্টি হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করলে তাদেরকে সঠিক পথে রাখতে পারতেন, তাদের মাঝে মতনৈক্য সৃষ্টি হতো না। তাদের ঝগড়া-বিবাদ, মতভেদ এসব কিছু আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে পূর্ব নির্ধারণ করা তাকদীরের আলোকে। অর্থাৎ তারা কী করবে এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা জানতেন, সে জ্ঞানানুযায়ী তাদের তাকদীর নির্ধারণ করেছেন। অতএব তারা সে তাকদীর অনুযায়ী আল্লাহ তা‘আলার ইচ্ছায় সব কিছু করে থাকে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মর্যাদার ক্ষেত্রে রাসূলগণের মধ্যে তারতম্য রয়েছে, সকলের মর্যাদা সমান নয়।
২. রাসূলগণের প্রতি ঈমান আনার ক্ষেত্রে কোন তারতম্য করা যাবে না।
৩. “আল্লাহ তা‘আলা কথা বলেন” এ গুণ প্রমাণিত হল।
৪. “আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করেন” এ গুণ প্রমাণিত হল।
৫. দীনের মাঝে মতানৈক্য করা নিন্দনীয়।
৬. মানুষ যা কিছু করবে আল্লাহ তা‘আলা তা পূর্ব থেকে জানেন, সে জ্ঞানানুযায়ী মানুষের ভাল-মন্দ তাকদীর লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। সে অনুযায়ী মানুষ আমল করে থাকে।
2:254
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ
اٰمَنُوۡۤا اَنۡفِقُوۡا مِمَّا رَزَقۡنٰکُمۡ مِّنۡ قَبۡلِ اَنۡ یَّاۡتِیَ یَوۡمٌ
لَّا بَیۡعٌ فِیۡہِ وَ لَا خُلَّۃٌ وَّ لَا شَفَاعَۃٌ ؕ وَ الۡکٰفِرُوۡنَ ہُمُ
الظّٰلِمُوۡنَ ﴿۲۵۴﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৫৪ নং আয়াতের
তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা মু’মিন বান্দাদের আহ্বান করে তিনি যে রিযিক দান করেছেন তা থেকে ব্যয় করার কথা বলেছেন সেদিন আসার আগেই যেদিন কোন ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও কোন সুপারিশ করার সুযোগ থাকবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰکُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ یَّاْتِیَ اَحَدَکُمُ الْمَوْتُ فَیَقُوْلَ رَبِّ لَوْلَآ اَخَّرْتَنِیْٓ اِلٰٓی اَجَلٍ قَرِیْبٍﺫ فَاَصَّدَّقَ وَاَکُنْ مِّنَ الصّٰلِحِیْنَ)
“আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তোমরা তা হতে ব্যয় করবে তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে; (অন্যথায় মৃত্যু আসলে সে বলবে,) হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরো কিছু কালের জন্য কেন অবকাশ দাও না, দিলে আমি সদাকাহ করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।”(সূরা মুনাফিকুন ৬৩:১০)
তাই জীবদ্দশায় আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় যথাসাধ্য ব্যয় করা উচিত।
আল্লাহ তা‘আলা মু’মিন বান্দাদের আহ্বান করে তিনি যে রিযিক দান করেছেন তা থেকে ব্যয় করার কথা বলেছেন সেদিন আসার আগেই যেদিন কোন ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও কোন সুপারিশ করার সুযোগ থাকবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاَنْفِقُوْا مِمَّا رَزَقْنٰکُمْ مِّنْ قَبْلِ اَنْ یَّاْتِیَ اَحَدَکُمُ الْمَوْتُ فَیَقُوْلَ رَبِّ لَوْلَآ اَخَّرْتَنِیْٓ اِلٰٓی اَجَلٍ قَرِیْبٍﺫ فَاَصَّدَّقَ وَاَکُنْ مِّنَ الصّٰلِحِیْنَ)
“আমি তোমাদেরকে যে রিযিক দিয়েছি তোমরা তা হতে ব্যয় করবে তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে; (অন্যথায় মৃত্যু আসলে সে বলবে,) হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরো কিছু কালের জন্য কেন অবকাশ দাও না, দিলে আমি সদাকাহ করতাম এবং সৎকর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।”(সূরা মুনাফিকুন ৬৩:১০)
তাই জীবদ্দশায় আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় যথাসাধ্য ব্যয় করা উচিত।
2:255
اَللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ
اِلَّا ہُوَۚ اَلۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ ۬ۚ لَا تَاۡخُذُہٗ سِنَۃٌ وَّ لَا نَوۡمٌ ؕ
لَہٗ مَا فِی السَّمٰوٰتِ وَ مَا فِی الۡاَرۡضِ ؕ مَنۡ ذَا الَّذِیۡ یَشۡفَعُ
عِنۡدَہٗۤ اِلَّا بِاِذۡنِہٖ ؕ یَعۡلَمُ مَا بَیۡنَ اَیۡدِیۡہِمۡ وَ مَا
خَلۡفَہُمۡ ۚ وَ لَا یُحِیۡطُوۡنَ بِشَیۡءٍ مِّنۡ عِلۡمِہٖۤ اِلَّا بِمَا شَآءَ ۚ
وَسِعَ کُرۡسِیُّہُ السَّمٰوٰتِ وَ الۡاَرۡضَ ۚ وَ لَا یَـُٔوۡدُہٗ حِفۡظُہُمَا ۚ
وَ ہُوَ الۡعَلِیُّ الۡعَظِیۡمُ ﴿۲۵۵﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৫৫ নং আয়াতের
তাফসীর:
এ আয়াতকে আয়াতুল কুরসী বলা হয়। এটাকে ইসমে আযমও বলা হয়। (তিরমিযী হা: ৩৪৭৮, আবূ দাঊদ হা: ১৪৬৯, হাসান)
এ আয়াতের ফযীলাত সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। যেমন উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হল আল্লাহ তা‘আলার কিতাবে কোন্ আয়াত সবচেয়ে বড়? তিনি বললেন: আয়াতুল কুরসী। (সহীহ মুসলিম হা: ৮১০)
যে ব্যক্তি সকাল বেলায় আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে। আবার সন্ধ্যায় পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকবে। (হাকিম ১/৫৬২, সহীহ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীস থেকে জানা যায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি রাতে ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তার জন্য আল্লাহ তা‘আলার তরফ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবে এবং ভোর পর্যন্ত তার নিকট কোন শয়তান আসতে পারবে না। (সহীহ বুখারী হা: ২৩১১, সহীহ মুসলিম হা: ১৪২৫)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِيْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مِكْتُوْبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُوْلِ الْجَنَّةِ اِلَّا اَنْ يَمُوْتَ<
যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতে যেতে মৃত্যু ছাড়া কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। (সিলসিলা সহীহাহ হা: ৯৭২, মিশকাত হা: ৯৭৪, সহীহ)
আয়াতুল কুরসীর এত ফযীলত ও মহত্ত্বের মূল কারণ হলো এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ ও গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে।
শাব্দিক বিশ্লেষণ: কুরসী শব্দের অর্থ: চেয়ার, তবে এখানে কুরসী হল আল্লাহ তা‘আলার দু’টি পা রাখার জায়গা। (ইবনু খুযাইমাহ হা: ৭২, শাইখ আলবানী সহীহ বলেছেন) এছাড়াও কুরসী অর্থ আল্লাহ তা‘আলার শক্তি জ্ঞান বা আরশ বলে কেউ কেউ ব্যাখ্যা করেছেন যা সঠিক নয়।
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার অনেকগুলো গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে। যেমন তিনি একমাত্র মা‘বূদ। তিনি ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই। اَلْحَیُّ বা চিরঞ্জীব, এই গুণ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার। এ গুণে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ গুণান্বিত নয়। আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সবল প্রাণী মরণশীল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(کُلُّ نَفْسٍ ذَا۬ئِقَةُ الْمَوْتِﺤ ثُمَّ اِلَیْنَا تُرْجَعُوْنَ)
“প্রতিটি প্রাণ মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; অতঃপর তোমরা আমারই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।”(সূরা আনকাবূত ২৯:৫৭) সুতরাং যারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হায়াতুন নাবী বলে থাকে তাদের দাবী এ আয়াত খণ্ডন করে দিচ্ছে। الْقَیُّوْمُ তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোন কিছুর প্রতি মুখাপেক্ষী নয়। খাওয়া, পান করা, বিশ্রাম, বান্দার ইবাদত, দান-সদাকাহ ইত্যাদি থেকে অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یٰٓاَیُّھَا النَّاسُ اَنْتُمُ الْفُقَرَا۬ئُ اِلَی اللہِﺆ وَاللہُ ھُوَ الْغَنِیُّ الْحَمِیْدُ)
“হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর মুখাপেক্ষী, আর আল্লাহ হলেন অভাবমুক্ত প্রশংসিত।”(সূরা ফাতির ৩৫:১৫)
(لَا تَأْخُذُه۫ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌ)
আাল্লাহ তা‘আলা ঘুমান না এমনকি তন্দ্রাচ্ছন্নও হন না। এটা আল্লাহ তা‘আলার পরিপূর্ণতার গুণ।
(مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَه)
শাফায়াত ও তার প্রকার এবং কারা কাদের জন্য শাফা‘আত করতে পারবে তা অত্র সূরার ৪৫-৪৭ নং আয়াতের তাফসীরে আলোচনা করা হয়েছে। তাঁর জ্ঞান সর্বত্র পরিব্যাপ্ত, সৃষ্টি জগত তা বেষ্টন করতে পারে না। তবে তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। তার কুরসী আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী পরিব্যাপ্ত। এ আকাশ ও পৃথিবী পরিচালনা করতে তিনি ক্লান্ত হন না। তিনি সুউচ্চ ও সুমহান।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সকল ইবাদত পাওয়ার যোগ্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
২. আল্লাহ তা‘আলা ঘুমান না এবং তন্দ্রাও তাকে স্পর্শ করতে পারে না।
৩. আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে না।
৪. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর জ্ঞান দ্বারা সবকিছু বেষ্টন করে আছেন।
৫. আল্লাহ তা‘আলার পা আছে- এ গুণ প্রমাণিত হল।
৬. আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করেন- এগুণ প্রমাণিত হল।
৭. আল্লাহ তা‘আলা স্ব-স্বত্তায় ওপরে আছেন- সর্বত্র বিরাজমান নন।
৮. আয়াতুল কুরসীর ফযীলত অবগত হলাম।
এ আয়াতকে আয়াতুল কুরসী বলা হয়। এটাকে ইসমে আযমও বলা হয়। (তিরমিযী হা: ৩৪৭৮, আবূ দাঊদ হা: ১৪৬৯, হাসান)
এ আয়াতের ফযীলাত সম্পর্কে অনেক সহীহ হাদীস রয়েছে। যেমন উবাই বিন কা‘ব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করা হল আল্লাহ তা‘আলার কিতাবে কোন্ আয়াত সবচেয়ে বড়? তিনি বললেন: আয়াতুল কুরসী। (সহীহ মুসলিম হা: ৮১০)
যে ব্যক্তি সকাল বেলায় আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে সন্ধ্যা পর্যন্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ থাকবে। আবার সন্ধ্যায় পাঠ করলে সকাল পর্যন্ত শয়তানের অনিষ্ট থেকে মুক্ত থাকবে। (হাকিম ১/৫৬২, সহীহ)
আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীস থেকে জানা যায় রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যে ব্যক্তি রাতে ঘুমানোর পূর্বে আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তার জন্য আল্লাহ তা‘আলার তরফ থেকে একজন রক্ষক নিযুক্ত থাকবে এবং ভোর পর্যন্ত তার নিকট কোন শয়তান আসতে পারবে না। (সহীহ বুখারী হা: ২৩১১, সহীহ মুসলিম হা: ১৪২৫)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
مَنْ قَرَأَ آيَةَ الْكُرْسِيِّ فِيْ دُبُرِ كُلِّ صَلَاةٍ مِكْتُوْبَةٍ لَمْ يَمْنَعْهُ مِنْ دُخُوْلِ الْجَنَّةِ اِلَّا اَنْ يَمُوْتَ<
যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরয সালাতের পর আয়াতুল কুরসী পাঠ করবে তার জন্য জান্নাতে যেতে মৃত্যু ছাড়া কোন প্রতিবন্ধকতা নেই। (সিলসিলা সহীহাহ হা: ৯৭২, মিশকাত হা: ৯৭৪, সহীহ)
আয়াতুল কুরসীর এত ফযীলত ও মহত্ত্বের মূল কারণ হলো এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ ও গুণাবলী বর্ণনা করা হয়েছে।
শাব্দিক বিশ্লেষণ: কুরসী শব্দের অর্থ: চেয়ার, তবে এখানে কুরসী হল আল্লাহ তা‘আলার দু’টি পা রাখার জায়গা। (ইবনু খুযাইমাহ হা: ৭২, শাইখ আলবানী সহীহ বলেছেন) এছাড়াও কুরসী অর্থ আল্লাহ তা‘আলার শক্তি জ্ঞান বা আরশ বলে কেউ কেউ ব্যাখ্যা করেছেন যা সঠিক নয়।
এ আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার অনেকগুলো গুণাবলী বর্ণিত হয়েছে। যেমন তিনি একমাত্র মা‘বূদ। তিনি ছাড়া সত্যিকার কোন মা‘বূদ নেই। اَلْحَیُّ বা চিরঞ্জীব, এই গুণ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার। এ গুণে আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া কেউ গুণান্বিত নয়। আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া সবল প্রাণী মরণশীল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(کُلُّ نَفْسٍ ذَا۬ئِقَةُ الْمَوْتِﺤ ثُمَّ اِلَیْنَا تُرْجَعُوْنَ)
“প্রতিটি প্রাণ মাত্রই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে; অতঃপর তোমরা আমারই দিকে প্রত্যাবর্তিত হবে।”(সূরা আনকাবূত ২৯:৫৭) সুতরাং যারা নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে হায়াতুন নাবী বলে থাকে তাদের দাবী এ আয়াত খণ্ডন করে দিচ্ছে। الْقَیُّوْمُ তিনি স্বয়ংসম্পূর্ণ। কোন কিছুর প্রতি মুখাপেক্ষী নয়। খাওয়া, পান করা, বিশ্রাম, বান্দার ইবাদত, দান-সদাকাহ ইত্যাদি থেকে অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یٰٓاَیُّھَا النَّاسُ اَنْتُمُ الْفُقَرَا۬ئُ اِلَی اللہِﺆ وَاللہُ ھُوَ الْغَنِیُّ الْحَمِیْدُ)
“হে মানুষ! তোমরা আল্লাহর মুখাপেক্ষী, আর আল্লাহ হলেন অভাবমুক্ত প্রশংসিত।”(সূরা ফাতির ৩৫:১৫)
(لَا تَأْخُذُه۫ سِنَةٌ وَّلَا نَوْمٌ)
আাল্লাহ তা‘আলা ঘুমান না এমনকি তন্দ্রাচ্ছন্নও হন না। এটা আল্লাহ তা‘আলার পরিপূর্ণতার গুণ।
(مَنْ ذَا الَّذِيْ يَشْفَعُ عِنْدَه)
শাফায়াত ও তার প্রকার এবং কারা কাদের জন্য শাফা‘আত করতে পারবে তা অত্র সূরার ৪৫-৪৭ নং আয়াতের তাফসীরে আলোচনা করা হয়েছে। তাঁর জ্ঞান সর্বত্র পরিব্যাপ্ত, সৃষ্টি জগত তা বেষ্টন করতে পারে না। তবে তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত। তার কুরসী আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী পরিব্যাপ্ত। এ আকাশ ও পৃথিবী পরিচালনা করতে তিনি ক্লান্ত হন না। তিনি সুউচ্চ ও সুমহান।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সকল ইবাদত পাওয়ার যোগ্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
২. আল্লাহ তা‘আলা ঘুমান না এবং তন্দ্রাও তাকে স্পর্শ করতে পারে না।
৩. আল্লাহ তা‘আলার অনুমতি ছাড়া কেউ সুপারিশ করতে পারবে না।
৪. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর জ্ঞান দ্বারা সবকিছু বেষ্টন করে আছেন।
৫. আল্লাহ তা‘আলার পা আছে- এ গুণ প্রমাণিত হল।
৬. আল্লাহ তা‘আলা ইচ্ছা করেন- এগুণ প্রমাণিত হল।
৭. আল্লাহ তা‘আলা স্ব-স্বত্তায় ওপরে আছেন- সর্বত্র বিরাজমান নন।
৮. আয়াতুল কুরসীর ফযীলত অবগত হলাম।
2:256
لَاۤ اِکۡرَاہَ فِی
الدِّیۡنِ ۟ۙ قَدۡ تَّبَیَّنَ الرُّشۡدُ مِنَ الۡغَیِّ ۚ فَمَنۡ یَّکۡفُرۡ
بِالطَّاغُوۡتِ وَ یُؤۡمِنۡۢ بِاللّٰہِ فَقَدِ اسۡتَمۡسَکَ بِالۡعُرۡوَۃِ
الۡوُثۡقٰی ٭ لَا انۡفِصَامَ لَہَا ؕ وَ اللّٰہُ سَمِیۡعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۲۵۶﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৫৬ নং আয়াতের
তাফসীর:
শানে নুযূল:
এ আয়াতের শানে নুযূলের ব্যাপারে কয়েকটি বর্ণনা পাওয়া যায়। (ফাতহুল বারী ১/৩৭৭)
গ্রহণযোগ্য একটি বর্ণনা হল, ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: জনৈকা মহিলার বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করে মারা যেত। সে মহিলা মানত করল, এবার তার বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করে জীবিত থাকলে তাকে ইয়াহূদী বানাবে। যখন বানী নাযীরকে দেশান্তর করে দেয়া হয় তখন তাদের মধ্যে কিছু আনসারদের সন্তান ছিল। আনসাররা বলল- আমরা আমাদের সন্তানদের যেতে দেব না। (বরং ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করে এখানে রেখে দেব।) তখন এ আয়াত নাযিল হয়। (লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবাবে নুযূল, পৃঃ ৫৬, আবূ দাঊদ হা: ২৬৮২, শাইখ আলবানী সহীহ বলেছেন)
এ আয়াত দীনের পরিপূর্ণতার বর্ণনা। দীন ইসলাম তার সুস্পষ্ট দলীল ও উজ্জ্বল প্রমাণসহ একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَلْیَوْمَ اَکْمَلْتُ لَکُمْ دِیْنَکُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَیْکُمْ نِعْمَتِیْ وَرَضِیْتُ لَکُمُ الْاِسْلَامَ دِیْنًا)
“আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পরিপূর্ণ করে দিলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম।”(সূরা মায়িদাহ ৫:৩)
তাই বলা হয়েছে, কাউকে দীন ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হবে না। বরং আল্লাহ তা‘আলা যার অন্তরকে ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেবেন, সে সুস্পষ্ট প্রমাণের ওপরেই ইসলাম গ্রহণ করবে। আর যার অন্তর অন্ধ করে দেয়া হয়েছে, দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তিতে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে সে হতভাগা।
তবে এ আয়াত বহাল আছে, না রহিত হয়ে গেছে তা নিয়ে ৭টি মত পাওয়া যায়। যা ইমাম শাওকানী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন। (ফাতহুল কাদীর, ১/৩৭৪) সঠিক কথা হল আয়াতটি রহিত হয়নি। (তাফসীরে সাদী) তাই ইসলাম কাউকে স্বীয় ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করে না। সেজন্য আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইসলামের শত্র“দের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে গেলে প্রথমে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিতেন। দাওয়াত কবূল না করলে জিযিয়া দিতে বলতেন। জিযিয়া দিতে অবাধ্য হলে আল্লাহ তা‘আলার নাম নিয়ে যুদ্ধ করতেন। (সহীহ মুসলিম হা: ৪৭৩৯) তবে ইসলাম গ্রহণ করার পর কেউ মুরতাদ হলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না।
(فَمَنْ یَّکْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ)
‘সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করবে’তাগুত শব্দটি (طغيان) তুগইয়ান থেকে গৃহীত, যার অর্থ হলো সীমা অতিক্রম করা। তাগুত বলা হয়: প্রত্যেক বানানো মা‘বূদ ও যার আনুগত্য করতঃ বান্দা সীমা অতিক্রম করে তাকে।
ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেন: তাগুত হল প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি যার ইবাদত করা হয় এবং সে সেই ইবাদাতে খুশি। সুতরাং যে সকল ব্যক্তিদের ইবাদত করা হয় এবং তারা যদি সে ইবাদতের দিকে আহ্বান করে ও সন্তুষ্ট থাকে তাহলে এরা সবাই তাগুত। তাগুতের অনেক প্রকার রয়েছে; তবে প্রধান তাগুত পাঁচটি...........? তাই যে ব্যক্তি মুশরিকদেরকে কাফির বলবে না অথবা তারা কাফির এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে অথবা তাদের ধর্মকে সঠিক মনে করবে সে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করল না।
ঈমান দু’টি বিষয় ছাড়া অর্জিত হয় না, ১. তাগুতকে অস্বীকার করতে হবে। ২. আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনতে হবে।
তাগুতকে অস্বীকার করার অর্থ হলো: আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের ইবাদত থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকা, তা অপছন্দ করা, অস্বীকার করা, তার সাথে শত্র“তা পোষণ করা এবং যারা গায়রুল্লাহর ইবাদত করে তাদের সাথে শত্র“তা পোষণ করা। এটাই হলো তাগুতকে অস্বীকার করার অর্থ।
দ্বিতীয় বিষয়ঃ আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনা। তাগুতকে অস্বীকার ও আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান এ দু’টি বিষয় মানলে একজন ব্যক্তি মুুওয়াহহিদ (তাওহীদ বা আল্লাহ তা‘আলার এককত্বে বিশ্বাসী) হবে।
অতএব সকল প্রকার তাগুত অস্বীকার ও বর্জন না করা পর্যন্ত কোন ব্যক্তি ইমানদার হতে পারবে না। যদি কেউ তাগুতের ওপর বিশ্বাস করে এবং আল্লাহ তা‘আলার প্রতিও বিশ্বাস করে সে কখনো মু’মিন হতে পারে না।(بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰی) মজবুত রশি অর্থ কী? এ নিয়ে কয়েকটি বক্তব্য পাওয়া যায়:
১. ইবনু আব্বাস (রাঃ), সাঈদ বিন যুবাইর ও যাহহাক (রহঃ) বলেন: শক্ত রজ্জু হল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
২. আনাস (রাঃ) বলেন, শক্ত রজ্জু হল কুরআন।
৩. মুজাহিদ বলেন: শক্ত রজ্জু হল ঈমান।
৪. সুদ্দী বলেন: তা হল ইসলাম। এছাড়াও অনেক তাফসীর পাওয়া যায়। সকল তাফসীরের অর্থ একটি অর্থের দিকেই ফিরে যায় তা হল দীন ইসলাম। (তাফসীর কুরতুবী ২/২১৫)
সুতরাং যে ব্যক্তি সকল প্রকার তাগুত বর্জন করে এক আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনবে, মাঝে কোন মধ্যস্থতা অবলম্বন করবে না, আল্লাহ তা‘আলার প্রতি বিশ্বাসের সাথে তাগুতের প্রতি বিশ্বাস রাখবে না সে এমন এক মজবুত হাতল ধারণ করবে যা আল্লাহ তা‘আলা পর্যন্ত পৌঁছে দেবে, তা ছিঁড়ে জাহান্নামে পড়ে যাবে না।আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাউকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা যাবে না, দাওয়াত দেয়ার পর কবূল না করলে মুসলিমদের অধীনে থেকে জিযিয়া দিতে হবে।
২. ইসলাম একমাত্র সঠিক ধর্ম যা সুপথের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
৩. তাগুত বর্জন করা ছাড়া মু’মিন হওয়া যায় না।
৪. সঠিক পথ ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র রজ্জু দীন ইসলাম, যা কেউ ধারণ করলে পথভ্রষ্ট হবার আশংকা নেই।
শানে নুযূল:
এ আয়াতের শানে নুযূলের ব্যাপারে কয়েকটি বর্ণনা পাওয়া যায়। (ফাতহুল বারী ১/৩৭৭)
গ্রহণযোগ্য একটি বর্ণনা হল, ইবনু আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: জনৈকা মহিলার বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করে মারা যেত। সে মহিলা মানত করল, এবার তার বাচ্চা জন্ম গ্রহণ করে জীবিত থাকলে তাকে ইয়াহূদী বানাবে। যখন বানী নাযীরকে দেশান্তর করে দেয়া হয় তখন তাদের মধ্যে কিছু আনসারদের সন্তান ছিল। আনসাররা বলল- আমরা আমাদের সন্তানদের যেতে দেব না। (বরং ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করে এখানে রেখে দেব।) তখন এ আয়াত নাযিল হয়। (লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবাবে নুযূল, পৃঃ ৫৬, আবূ দাঊদ হা: ২৬৮২, শাইখ আলবানী সহীহ বলেছেন)
এ আয়াত দীনের পরিপূর্ণতার বর্ণনা। দীন ইসলাম তার সুস্পষ্ট দলীল ও উজ্জ্বল প্রমাণসহ একটি পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَلْیَوْمَ اَکْمَلْتُ لَکُمْ دِیْنَکُمْ وَاَتْمَمْتُ عَلَیْکُمْ نِعْمَتِیْ وَرَضِیْتُ لَکُمُ الْاِسْلَامَ دِیْنًا)
“আজ তোমাদের জন্য তোমাদের দীন পরিপূর্ণ করে দিলাম ও তোমাদের প্রতি আমার অনুগ্রহ সম্পূর্ণ করলাম এবং ইসলামকে তোমাদের দীন মনোনীত করলাম।”(সূরা মায়িদাহ ৫:৩)
তাই বলা হয়েছে, কাউকে দীন ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য করা হবে না। বরং আল্লাহ তা‘আলা যার অন্তরকে ইসলামের জন্য প্রশস্ত করে দেবেন, সে সুস্পষ্ট প্রমাণের ওপরেই ইসলাম গ্রহণ করবে। আর যার অন্তর অন্ধ করে দেয়া হয়েছে, দৃষ্টিশক্তি ও শ্রবণশক্তিতে মোহর মেরে দেয়া হয়েছে সে হতভাগা।
তবে এ আয়াত বহাল আছে, না রহিত হয়ে গেছে তা নিয়ে ৭টি মত পাওয়া যায়। যা ইমাম শাওকানী (রহঃ) বর্ণনা করেছেন। (ফাতহুল কাদীর, ১/৩৭৪) সঠিক কথা হল আয়াতটি রহিত হয়নি। (তাফসীরে সাদী) তাই ইসলাম কাউকে স্বীয় ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করে না। সেজন্য আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইসলামের শত্র“দের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে গেলে প্রথমে ইসলামের প্রতি দাওয়াত দিতেন। দাওয়াত কবূল না করলে জিযিয়া দিতে বলতেন। জিযিয়া দিতে অবাধ্য হলে আল্লাহ তা‘আলার নাম নিয়ে যুদ্ধ করতেন। (সহীহ মুসলিম হা: ৪৭৩৯) তবে ইসলাম গ্রহণ করার পর কেউ মুরতাদ হলে তাকে ছাড় দেয়া হবে না।
(فَمَنْ یَّکْفُرْ بِالطَّاغُوْتِ)
‘সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করবে’তাগুত শব্দটি (طغيان) তুগইয়ান থেকে গৃহীত, যার অর্থ হলো সীমা অতিক্রম করা। তাগুত বলা হয়: প্রত্যেক বানানো মা‘বূদ ও যার আনুগত্য করতঃ বান্দা সীমা অতিক্রম করে তাকে।
ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ) বলেন: তাগুত হল প্রত্যেক ঐ ব্যক্তি যার ইবাদত করা হয় এবং সে সেই ইবাদাতে খুশি। সুতরাং যে সকল ব্যক্তিদের ইবাদত করা হয় এবং তারা যদি সে ইবাদতের দিকে আহ্বান করে ও সন্তুষ্ট থাকে তাহলে এরা সবাই তাগুত। তাগুতের অনেক প্রকার রয়েছে; তবে প্রধান তাগুত পাঁচটি...........? তাই যে ব্যক্তি মুশরিকদেরকে কাফির বলবে না অথবা তারা কাফির এ ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ করবে অথবা তাদের ধর্মকে সঠিক মনে করবে সে ব্যক্তি তাগুতকে অস্বীকার করল না।
ঈমান দু’টি বিষয় ছাড়া অর্জিত হয় না, ১. তাগুতকে অস্বীকার করতে হবে। ২. আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনতে হবে।
তাগুতকে অস্বীকার করার অর্থ হলো: আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্যের ইবাদত থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থাকা, তা অপছন্দ করা, অস্বীকার করা, তার সাথে শত্র“তা পোষণ করা এবং যারা গায়রুল্লাহর ইবাদত করে তাদের সাথে শত্র“তা পোষণ করা। এটাই হলো তাগুতকে অস্বীকার করার অর্থ।
দ্বিতীয় বিষয়ঃ আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনা। তাগুতকে অস্বীকার ও আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান এ দু’টি বিষয় মানলে একজন ব্যক্তি মুুওয়াহহিদ (তাওহীদ বা আল্লাহ তা‘আলার এককত্বে বিশ্বাসী) হবে।
অতএব সকল প্রকার তাগুত অস্বীকার ও বর্জন না করা পর্যন্ত কোন ব্যক্তি ইমানদার হতে পারবে না। যদি কেউ তাগুতের ওপর বিশ্বাস করে এবং আল্লাহ তা‘আলার প্রতিও বিশ্বাস করে সে কখনো মু’মিন হতে পারে না।(بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقٰی) মজবুত রশি অর্থ কী? এ নিয়ে কয়েকটি বক্তব্য পাওয়া যায়:
১. ইবনু আব্বাস (রাঃ), সাঈদ বিন যুবাইর ও যাহহাক (রহঃ) বলেন: শক্ত রজ্জু হল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
২. আনাস (রাঃ) বলেন, শক্ত রজ্জু হল কুরআন।
৩. মুজাহিদ বলেন: শক্ত রজ্জু হল ঈমান।
৪. সুদ্দী বলেন: তা হল ইসলাম। এছাড়াও অনেক তাফসীর পাওয়া যায়। সকল তাফসীরের অর্থ একটি অর্থের দিকেই ফিরে যায় তা হল দীন ইসলাম। (তাফসীর কুরতুবী ২/২১৫)
সুতরাং যে ব্যক্তি সকল প্রকার তাগুত বর্জন করে এক আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনবে, মাঝে কোন মধ্যস্থতা অবলম্বন করবে না, আল্লাহ তা‘আলার প্রতি বিশ্বাসের সাথে তাগুতের প্রতি বিশ্বাস রাখবে না সে এমন এক মজবুত হাতল ধারণ করবে যা আল্লাহ তা‘আলা পর্যন্ত পৌঁছে দেবে, তা ছিঁড়ে জাহান্নামে পড়ে যাবে না।আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাউকে ইসলাম গ্রহণে বাধ্য করা যাবে না, দাওয়াত দেয়ার পর কবূল না করলে মুসলিমদের অধীনে থেকে জিযিয়া দিতে হবে।
২. ইসলাম একমাত্র সঠিক ধর্ম যা সুপথের ওপর প্রতিষ্ঠিত।
৩. তাগুত বর্জন করা ছাড়া মু’মিন হওয়া যায় না।
৪. সঠিক পথ ও পরকালীন মুক্তির একমাত্র রজ্জু দীন ইসলাম, যা কেউ ধারণ করলে পথভ্রষ্ট হবার আশংকা নেই।
2:257
اَللّٰہُ وَلِیُّ
الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا ۙ یُخۡرِجُہُمۡ مِّنَ الظُّلُمٰتِ اِلَی النُّوۡرِ۬ؕ وَ
الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡۤا اَوۡلِیٰٓـُٔہُمُ الطَّاغُوۡتُ ۙ یُخۡرِجُوۡنَہُمۡ مِّنَ
النُّوۡرِ اِلَی الظُّلُمٰتِ ؕ اُولٰٓئِکَ اَصۡحٰبُ النَّارِ ۚ ہُمۡ فِیۡہَا
خٰلِدُوۡنَ ﴿۲۵۷﴾٪
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৫৭ নং আয়াতের
তাফসীর:
পূর্বের আয়াত হল আসল ও মূলভিত্তি। আর এ আয়াত তার ফলাফল। যারা সকল প্রকার তাগুতকে বর্জন করে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনবে এবং ঈমানের ওপর বহাল থাকবে আল্লাহ তা‘আলা তাদের অভিভাবক। রাসূল ও মু’মিনগণ তাদের বন্ধু। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّمَا وَلِیُّکُمُ اللہُ وَرَسُوْلُھ۫ وَالَّذِیْنَ اٰمَنُوا الَّذِیْنَ یُقِیْمُوْنَ الصَّلٰوةَ وَیُؤْتُوْنَ الزَّکٰوةَ وَھُمْ رٰکِعُوْنَ)
“তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মু’মিনগণ- যারা বিনীত হয়ে সালাত কায়িম করে ও যাকাত দেয়।”(সূরা মায়িদাহ ৫:৫৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَآءُ بَعْضٍ)
“মু’মিন নর ও মু’মিন নারী একে অপরের বন্ধু।”(সূরা তাওবা ৯:৭১)
আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে অন্ধকার তথা কুফরী ও পথভ্রষ্টতা থেকে আলো তথা ইসলামের দিকে নিয়ে আসেন। যাদের অভিভাবক আল্লাহ তা‘আলা হবেন তাদের ফলাফল হল, তাদের কোন ভয় নেই, কোন দুশ্চিন্তা নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَلَآ إِنَّ أَوْلِيَآءَ اللّٰهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ)
“জেনে রাখো! আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।”(সূরা ইউনুস ১০:৬২)
পক্ষান্তরে যারা কাফির তাদের অভিভাবক হল তাগুত। অর্থাৎ শয়তান এবং মানুষ ও জিনদের মধ্যে যারা শয়তান তারাও। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা তাদের অভিভাকের সংখ্যা বুঝাতে বহুবচন ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(الَّذِينَ آمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّٰهِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ)
“যারা মু’মিন তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কাফির তারা তাগূতের পথে যুদ্ধ করে।”(সূরা নিসা ৩:৭৬)
যারা কাফির ও কাফিরদের অভিভাবক এবং বন্ধু সবাই জাহান্নামে চিরস্থায়ী থাকবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ঈমানদারদের স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন।
২. আল্লাহ তা‘আলার অভিভাবকত্ব পেতে হলে সকল প্রকার তাগুত বর্জন করে এক আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনতে হবে, ঈমানের সাথে কুফর মিশ্রিত থাকলে হবে না।
২. কাফিরদের অভিভাবক শয়তান, মানুষ ও জিনরূপী শয়তান।
পূর্বের আয়াত হল আসল ও মূলভিত্তি। আর এ আয়াত তার ফলাফল। যারা সকল প্রকার তাগুতকে বর্জন করে আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনবে এবং ঈমানের ওপর বহাল থাকবে আল্লাহ তা‘আলা তাদের অভিভাবক। রাসূল ও মু’মিনগণ তাদের বন্ধু। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّمَا وَلِیُّکُمُ اللہُ وَرَسُوْلُھ۫ وَالَّذِیْنَ اٰمَنُوا الَّذِیْنَ یُقِیْمُوْنَ الصَّلٰوةَ وَیُؤْتُوْنَ الزَّکٰوةَ وَھُمْ رٰکِعُوْنَ)
“তোমাদের বন্ধু তো আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মু’মিনগণ- যারা বিনীত হয়ে সালাত কায়িম করে ও যাকাত দেয়।”(সূরা মায়িদাহ ৫:৫৫)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَآءُ بَعْضٍ)
“মু’মিন নর ও মু’মিন নারী একে অপরের বন্ধু।”(সূরা তাওবা ৯:৭১)
আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে অন্ধকার তথা কুফরী ও পথভ্রষ্টতা থেকে আলো তথা ইসলামের দিকে নিয়ে আসেন। যাদের অভিভাবক আল্লাহ তা‘আলা হবেন তাদের ফলাফল হল, তাদের কোন ভয় নেই, কোন দুশ্চিন্তা নেই। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(أَلَآ إِنَّ أَوْلِيَآءَ اللّٰهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُوْنَ)
“জেনে রাখো! আল্লাহর বন্ধুদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুঃখিতও হবে না।”(সূরা ইউনুস ১০:৬২)
পক্ষান্তরে যারা কাফির তাদের অভিভাবক হল তাগুত। অর্থাৎ শয়তান এবং মানুষ ও জিনদের মধ্যে যারা শয়তান তারাও। এজন্য আল্লাহ তা‘আলা তাদের অভিভাকের সংখ্যা বুঝাতে বহুবচন ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(الَّذِينَ آمَنُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّٰهِ وَالَّذِينَ كَفَرُوا يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ)
“যারা মু’মিন তারা আল্লাহর পথে যুদ্ধ করে এবং যারা কাফির তারা তাগূতের পথে যুদ্ধ করে।”(সূরা নিসা ৩:৭৬)
যারা কাফির ও কাফিরদের অভিভাবক এবং বন্ধু সবাই জাহান্নামে চিরস্থায়ী থাকবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. ঈমানদারদের স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা অভিভাবকত্ব গ্রহণ করেছেন।
২. আল্লাহ তা‘আলার অভিভাবকত্ব পেতে হলে সকল প্রকার তাগুত বর্জন করে এক আল্লাহ তা‘আলার প্রতি ঈমান আনতে হবে, ঈমানের সাথে কুফর মিশ্রিত থাকলে হবে না।
২. কাফিরদের অভিভাবক শয়তান, মানুষ ও জিনরূপী শয়তান।
2:258
اَلَمۡ تَرَ اِلَی
الَّذِیۡ حَآجَّ اِبۡرٰہٖمَ فِیۡ رَبِّہٖۤ اَنۡ اٰتٰىہُ اللّٰہُ الۡمُلۡکَ ۘ اِذۡ
قَالَ اِبۡرٰہٖمُ رَبِّیَ الَّذِیۡ یُحۡیٖ وَ یُمِیۡتُ ۙ قَالَ اَنَا اُحۡیٖ وَ
اُمِیۡتُ ؕ قَالَ اِبۡرٰہٖمُ فَاِنَّ اللّٰہَ یَاۡتِیۡ بِالشَّمۡسِ مِنَ
الۡمَشۡرِقِ فَاۡتِ بِہَا مِنَ الۡمَغۡرِبِ فَبُہِتَ الَّذِیۡ کَفَرَ ؕ وَ اللّٰہُ
لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الظّٰلِمِیۡنَ ﴿۲۵۸﴾ۚ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৫৮ নং আয়াতের
তাফসীর:
কুরআনুল কারীমের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল- পূর্ববর্তী নাবী-রাসূল ও তাদের জাতির ঘটনা বর্ণনা করা। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ ও ক্ষমতা, কুরআনের মু‘জিযাহ, ঐতিহাসিক সত্যতা, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সান্ত্বনা ও মুসলিমদের জন্য শিক্ষণীয় দিক বর্ণনা করা। এখানে ইবরাহীম (আঃ) ও নমরূদের মাঝে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরা হচ্ছে।
ইবরাহীম (আঃ) পশ্চিম ইরাকের বাসরার নিকটবর্তী ‘বাবেল’শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এখানে তখন কালেডীয় (كلداني) জাতি বসবাস করত। তাদের একচ্ছত্র সম্রাট ছিল নমরূদ। সে তৎকালীন পৃথিবীতে অত্যন্ত উদ্ধ্যত ও অহংকারী সম্রাট ছিল। প্রায় ৪০০ বছর রাজত্ব করে শেষ পর্যন্ত নিজেকে ‘উপাস্য’হবার দাবী করে। (তারীখুল আম্বিয়া পৃ:৬৮) এ বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে ইবরাহীম (আঃ) জাতিকে তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন, পিতাকে তাওহীদের প্রতি আহ্বান করেছেন, মূর্তি ভেঙ্গেছেন। শেষ পর্যায় এসে নমরূদ ইবরাহীম (আঃ)-এর সাথে এ বিতর্কে লিপ্ত হয়। নমরূদ ভেবেছিল ইবরাহীম তাকেই উপাস্য বলে স্বীকার করবে। কিন্তু নির্ভীক কণ্ঠে ইবরাহীম (আঃ) বললেন: আমার রব তিনি যিনি জীবন-মৃত্যু দান করেন। তখন নমরূদ বলল: আমিও তো জীবন ও মৃত্যু দান করি। এ বলে সে দু’জন জীবন্ত লোক আনতে বলল। একজনকে মেরে ফেলল অন্যজনকে ছেড়ে দিল। আর বলল এই যে, আমি যাকে ইচ্ছা জীবন ও মৃত্যু দেই। তারপর ইবরাহীম (আঃ) যখন সূর্যের উদয় ও অস্তের কথা বললেন, তখন সে কিংকতর্ব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। প্রমাণিত হলো যে, প্রকৃত রব হলেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। জাতির (সাধারণ) নেতারাই যেখানে পরাজয় মেনে নেয়নি সেখানে একচ্ছত্র সম্রাট কিভাবে পরাজয় মেনে নিতে পারে। তাই সে অহংকারে ফেটে ইবরাহীম (আঃ) কে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়, এমনকি নিক্ষেপও করা হয়। ইবরাহীম (আঃ)-এ অগ্নীপরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে সফলতা অর্জন করেন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী নাবী-রাসূল ও তাদের জাতির ঘটনা বর্ণনা করে আমাদেরকে সতর্ক ও সাবধান করছেন।
২. দাওয়াত কৌশল ও হিকমতের সাথে প্রদান করা উচিত।
৩. প্রত্যেক নাবী ও রাসূলের শত্র“ ছিল, দীনের পথে থাকলে প্রত্যেক মু’মিনেরও থাকবে।
৪. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ওলীদের সার্বিক সাহায্য করেন যেমন ইবরাহীম (আঃ)-কে করেছেন।
৫. জীবন-মৃত্যু, চন্দ্র-সূর্য সবকিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
কুরআনুল কারীমের অন্যতম একটি বৈশিষ্ট্য হল- পূর্ববর্তী নাবী-রাসূল ও তাদের জাতির ঘটনা বর্ণনা করা। এর মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলার তাওহীদ ও ক্ষমতা, কুরআনের মু‘জিযাহ, ঐতিহাসিক সত্যতা, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সান্ত্বনা ও মুসলিমদের জন্য শিক্ষণীয় দিক বর্ণনা করা। এখানে ইবরাহীম (আঃ) ও নমরূদের মাঝে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার বর্ণনা তুলে ধরা হচ্ছে।
ইবরাহীম (আঃ) পশ্চিম ইরাকের বাসরার নিকটবর্তী ‘বাবেল’শহরে জন্মগ্রহণ করেন। এখানে তখন কালেডীয় (كلداني) জাতি বসবাস করত। তাদের একচ্ছত্র সম্রাট ছিল নমরূদ। সে তৎকালীন পৃথিবীতে অত্যন্ত উদ্ধ্যত ও অহংকারী সম্রাট ছিল। প্রায় ৪০০ বছর রাজত্ব করে শেষ পর্যন্ত নিজেকে ‘উপাস্য’হবার দাবী করে। (তারীখুল আম্বিয়া পৃ:৬৮) এ বিতর্ক সৃষ্টি হওয়ার পূর্বে ইবরাহীম (আঃ) জাতিকে তাওহীদের দাওয়াত দিয়েছেন, পিতাকে তাওহীদের প্রতি আহ্বান করেছেন, মূর্তি ভেঙ্গেছেন। শেষ পর্যায় এসে নমরূদ ইবরাহীম (আঃ)-এর সাথে এ বিতর্কে লিপ্ত হয়। নমরূদ ভেবেছিল ইবরাহীম তাকেই উপাস্য বলে স্বীকার করবে। কিন্তু নির্ভীক কণ্ঠে ইবরাহীম (আঃ) বললেন: আমার রব তিনি যিনি জীবন-মৃত্যু দান করেন। তখন নমরূদ বলল: আমিও তো জীবন ও মৃত্যু দান করি। এ বলে সে দু’জন জীবন্ত লোক আনতে বলল। একজনকে মেরে ফেলল অন্যজনকে ছেড়ে দিল। আর বলল এই যে, আমি যাকে ইচ্ছা জীবন ও মৃত্যু দেই। তারপর ইবরাহীম (আঃ) যখন সূর্যের উদয় ও অস্তের কথা বললেন, তখন সে কিংকতর্ব্যবিমূঢ় হয়ে গেল। প্রমাণিত হলো যে, প্রকৃত রব হলেন একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা। জাতির (সাধারণ) নেতারাই যেখানে পরাজয় মেনে নেয়নি সেখানে একচ্ছত্র সম্রাট কিভাবে পরাজয় মেনে নিতে পারে। তাই সে অহংকারে ফেটে ইবরাহীম (আঃ) কে জ্বলন্ত আগুনে নিক্ষেপ করার নির্দেশ দেয়, এমনকি নিক্ষেপও করা হয়। ইবরাহীম (আঃ)-এ অগ্নীপরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে সফলতা অর্জন করেন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা পূর্ববর্তী নাবী-রাসূল ও তাদের জাতির ঘটনা বর্ণনা করে আমাদেরকে সতর্ক ও সাবধান করছেন।
২. দাওয়াত কৌশল ও হিকমতের সাথে প্রদান করা উচিত।
৩. প্রত্যেক নাবী ও রাসূলের শত্র“ ছিল, দীনের পথে থাকলে প্রত্যেক মু’মিনেরও থাকবে।
৪. আল্লাহ তা‘আলা তাঁর ওলীদের সার্বিক সাহায্য করেন যেমন ইবরাহীম (আঃ)-কে করেছেন।
৫. জীবন-মৃত্যু, চন্দ্র-সূর্য সবকিছুর মালিক একমাত্র আল্লাহ তা‘আলা।
2:259
اَوۡ کَالَّذِیۡ مَرَّ
عَلٰی قَرۡیَۃٍ وَّ ہِیَ خَاوِیَۃٌ عَلٰی عُرُوۡشِہَا ۚ قَالَ اَنّٰی یُحۡیٖ
ہٰذِہِ اللّٰہُ بَعۡدَ مَوۡتِہَا ۚ فَاَمَاتَہُ اللّٰہُ مِائَۃَ عَامٍ ثُمَّ
بَعَثَہٗ ؕ قَالَ کَمۡ لَبِثۡتَ ؕ قَالَ لَبِثۡتُ یَوۡمًا اَوۡ بَعۡضَ یَوۡمٍ ؕ
قَالَ بَلۡ لَّبِثۡتَ مِائَۃَ عَامٍ فَانۡظُرۡ اِلٰی طَعَامِکَ وَ شَرَابِکَ لَمۡ
یَتَسَنَّہۡ ۚ وَ انۡظُرۡ اِلٰی حِمَارِکَ وَ لِنَجۡعَلَکَ اٰیَۃً لِّلنَّاسِ وَ
انۡظُرۡ اِلَی الۡعِظَامِ کَیۡفَ نُنۡشِزُہَا ثُمَّ نَکۡسُوۡہَا لَحۡمًا ؕ
فَلَمَّا تَبَیَّنَ لَہٗ ۙ قَالَ اَعۡلَمُ اَنَّ اللّٰہَ عَلٰی کُلِّ شَیۡءٍ
قَدِیۡرٌ ﴿۲۵۹﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৫৯ নং আয়াতের
তাফসীর:
(اَوْ کَالَّذِیْ) ‘অথবা ঐ ব্যক্তির মত’এর সম্পর্ক হল পূর্বের ঘটনার সাথে। অর্থ হল তুমি (পূর্ব ঘটনার ন্যায়) সেই ব্যক্তির কথা ভেবে দেখেছ! যে এমন ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরের মধ্য দিয়ে গমন করেছিল যা বিধ্বস্ত করে দেয়া হয়েছিল, শহরের মানুষ মরে গিয়েছিল, ইমারতগুলো চুরমার করে দেয়া হয়েছিল। এ লোকটি সংশয় ও অসম্ভব মনে করে বলল: ‘এই নগর মৃত্যুর পর আল্লাহ কিভাবে জীবিত করবেন?’এটা অসম্ভব, কখনো জীবিত করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা এ লোকটিকে তাঁর ক্ষমতা দেখানোর ইচ্ছা করলেন। গাধাসহ তাকে সেখানে মৃত্যু দিয়ে একশত বছর মৃত রাখলেন, তার সাথে রাখা খাবার-পানীয় নষ্ট করলেন না। একশত বছর পর জীবিত করে বললেন, ‘তুমি এ অবস্থায় কতদিন ছিলে?’লোকটি বলল: ‘একদিন অথবা একদিনের কিছু সময়।’সম্ভবত লোকটি যখন মারা গিয়েছিল তখন বেলা কিছুটা উঠে ছিল। আর যখন পুনরায় জীবিত হল তখন সূর্য অস্ত যাওয়ার কাছাকাছি ছিল। তাই লোকটি ভাবছিল হয়তো দিনের মধ্যবর্তী সময়টুকু মৃতাবস্থায় ছিলাম। আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দিলেন, তুমি একশত বছর মৃত ছিলে এবং আল্লাহ তা‘আলা নিদর্শনগুলো দেখিয়ে দিলেন। তখন তার বিশ্বাস হল যে, আল্লাহ তা‘আলা সব বিষয়ে ক্ষমতাবান, তিনি ইচ্ছা করলে হাজার বছর পরেও মৃতকে জীবিত করতে পারেন, মানুষ মরে পচে গলে গেলেও পুনঃজীবিত করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব নয়। এ লোকটি কে ছিল তা নিয়ে বহু বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে উযায়রের নাম বেশি প্রসিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।
পূর্বে ইবরাহীম (আঃ) ও নমরূদের ঘটনা ছিল মহান আল্লাহ তা‘আলার রুবুবিয়্যাতের প্রমাণস্বরূপ। দ্বিতীয় এ ঘটনা হল আল্লাহ তা‘আলা মৃতকে জীবিত করার মালিক তার প্রমাণ। এটাও আল্লাহ তা‘আলার মহাশক্তি ও রুবুবিয়্যাহর ওপর প্রমাণ বহন করে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা মৃত্যুর পর সকলকে জীবিত করতে সক্ষম এবং নির্ধারিত সময়ে করবেন।
২. যারা মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে তাদের এত্থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত।
(اَوْ کَالَّذِیْ) ‘অথবা ঐ ব্যক্তির মত’এর সম্পর্ক হল পূর্বের ঘটনার সাথে। অর্থ হল তুমি (পূর্ব ঘটনার ন্যায়) সেই ব্যক্তির কথা ভেবে দেখেছ! যে এমন ধ্বংসপ্রাপ্ত শহরের মধ্য দিয়ে গমন করেছিল যা বিধ্বস্ত করে দেয়া হয়েছিল, শহরের মানুষ মরে গিয়েছিল, ইমারতগুলো চুরমার করে দেয়া হয়েছিল। এ লোকটি সংশয় ও অসম্ভব মনে করে বলল: ‘এই নগর মৃত্যুর পর আল্লাহ কিভাবে জীবিত করবেন?’এটা অসম্ভব, কখনো জীবিত করা সম্ভব নয়। আল্লাহ তা‘আলা এ লোকটিকে তাঁর ক্ষমতা দেখানোর ইচ্ছা করলেন। গাধাসহ তাকে সেখানে মৃত্যু দিয়ে একশত বছর মৃত রাখলেন, তার সাথে রাখা খাবার-পানীয় নষ্ট করলেন না। একশত বছর পর জীবিত করে বললেন, ‘তুমি এ অবস্থায় কতদিন ছিলে?’লোকটি বলল: ‘একদিন অথবা একদিনের কিছু সময়।’সম্ভবত লোকটি যখন মারা গিয়েছিল তখন বেলা কিছুটা উঠে ছিল। আর যখন পুনরায় জীবিত হল তখন সূর্য অস্ত যাওয়ার কাছাকাছি ছিল। তাই লোকটি ভাবছিল হয়তো দিনের মধ্যবর্তী সময়টুকু মৃতাবস্থায় ছিলাম। আল্লাহ তা‘আলা জানিয়ে দিলেন, তুমি একশত বছর মৃত ছিলে এবং আল্লাহ তা‘আলা নিদর্শনগুলো দেখিয়ে দিলেন। তখন তার বিশ্বাস হল যে, আল্লাহ তা‘আলা সব বিষয়ে ক্ষমতাবান, তিনি ইচ্ছা করলে হাজার বছর পরেও মৃতকে জীবিত করতে পারেন, মানুষ মরে পচে গলে গেলেও পুনঃজীবিত করা তাঁর পক্ষে অসম্ভব নয়। এ লোকটি কে ছিল তা নিয়ে বহু বর্ণনা পাওয়া যায়। তবে উযায়রের নাম বেশি প্রসিদ্ধ। আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।
পূর্বে ইবরাহীম (আঃ) ও নমরূদের ঘটনা ছিল মহান আল্লাহ তা‘আলার রুবুবিয়্যাতের প্রমাণস্বরূপ। দ্বিতীয় এ ঘটনা হল আল্লাহ তা‘আলা মৃতকে জীবিত করার মালিক তার প্রমাণ। এটাও আল্লাহ তা‘আলার মহাশক্তি ও রুবুবিয়্যাহর ওপর প্রমাণ বহন করে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. আল্লাহ তা‘আলা মৃত্যুর পর সকলকে জীবিত করতে সক্ষম এবং নির্ধারিত সময়ে করবেন।
২. যারা মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে তাদের এত্থেকে শিক্ষা নিয়ে সতর্ক হওয়া উচিত।
2:260
وَ اِذۡ قَالَ اِبۡرٰہٖمُ
رَبِّ اَرِنِیۡ کَیۡفَ تُحۡیِ الۡمَوۡتٰی ؕ قَالَ اَوَ لَمۡ تُؤۡمِنۡ ؕ قَالَ بَلٰی
وَ لٰکِنۡ لِّیَطۡمَئِنَّ قَلۡبِیۡ ؕ قَالَ فَخُذۡ اَرۡبَعَۃً مِّنَ الطَّیۡرِ
فَصُرۡہُنَّ اِلَیۡکَ ثُمَّ اجۡعَلۡ عَلٰی کُلِّ جَبَلٍ مِّنۡہُنَّ جُزۡءًا ثُمَّ
ادۡعُہُنَّ یَاۡتِیۡنَکَ سَعۡیًا ؕ وَ اعۡلَمۡ اَنَّ اللّٰہَ عَزِیۡزٌ حَکِیۡمٌ ﴿۲۶۰﴾٪
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৬০ নং আয়াতের
তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা যে মৃতকে জীবিত করেন তার এটি তৃতীয় উদাহরণ। পাখিগুলোর নাম কী আর কী রং ছিল? তার অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। সে সম্পর্কে জানার কোন প্রয়োজন নেই এবং না জানলে কোন ক্ষতিও হবে না। আল্লাহ তা‘আলা যা কুরআনে উল্লেখ করেননি এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসে বর্ণনা দেননি তা জানার জন্য পীড়াপীড়ি করা উচিত নয়। কেননা তা না জানলে দীন পালনে কোন ক্ষতি হবে না। যদি তাতে উপকার থাকত তাহলে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ণনা করে দিতেন। বরং আমরা শিক্ষা নেব যে, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জীবন ও মরণের মালিক, মুত্যুর পর তিনি পুনরায় সকলকে জীবিত করে ভাল-মন্দ কর্মের হিসাব নিবেন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মানুষের স্বভাবই হল যা জানে না তা জানার চেষ্টা করা, তবে যা অহেতুক তা বর্জনীয়।
২. আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন প্রত্যক্ষ করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়।
আল্লাহ তা‘আলা যে মৃতকে জীবিত করেন তার এটি তৃতীয় উদাহরণ। পাখিগুলোর নাম কী আর কী রং ছিল? তার অনেক বর্ণনা পাওয়া যায়। সে সম্পর্কে জানার কোন প্রয়োজন নেই এবং না জানলে কোন ক্ষতিও হবে না। আল্লাহ তা‘আলা যা কুরআনে উল্লেখ করেননি এবং রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হাদীসে বর্ণনা দেননি তা জানার জন্য পীড়াপীড়ি করা উচিত নয়। কেননা তা না জানলে দীন পালনে কোন ক্ষতি হবে না। যদি তাতে উপকার থাকত তাহলে আল্লাহ তা‘আলা ও রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ণনা করে দিতেন। বরং আমরা শিক্ষা নেব যে, একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জীবন ও মরণের মালিক, মুত্যুর পর তিনি পুনরায় সকলকে জীবিত করে ভাল-মন্দ কর্মের হিসাব নিবেন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মানুষের স্বভাবই হল যা জানে না তা জানার চেষ্টা করা, তবে যা অহেতুক তা বর্জনীয়।
২. আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন প্রত্যক্ষ করলে ঈমান বৃদ্ধি পায়।
2:261
مَثَلُ الَّذِیۡنَ
یُنۡفِقُوۡنَ اَمۡوَالَہُمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ کَمَثَلِ حَبَّۃٍ اَنۡۢبَتَتۡ
سَبۡعَ سَنَابِلَ فِیۡ کُلِّ سُنۡۢبُلَۃٍ مِّائَۃُ حَبَّۃٍ ؕ وَ اللّٰہُ یُضٰعِفُ
لِمَنۡ یَّشَآءُ ؕ وَ اللّٰہُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۲۶۱﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৬১ থেকে ২৬৪ নং
আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় দান-সদাকাহ করার ফযীলত ও দান-সদাকাহর প্রতিদান বাতিল হয়ে যায় এমন কিছু কর্মের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে।
যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে অর্থাৎ দীনের ইলম প্রসারে দান করে, হাজ্জ, জিহাদ, ফকীর, মিসকীন, বিধবা ও ইয়াতীমদের জন্য কিংবা সাহায্যের নিয়্যতে দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনদের জন্য অর্থ খরচ করে। মোটকথা এতে ঐ সকল উপকারী উৎস অন্তর্ভুক্ত যা মুসলিমদের কল্যাণে আসে। তাদের উপমা হল- কেউ গমের একটি দানা উর্বর জমিতে বপন করল। এ দানা থেকে একটি চারা গাছ উৎপন্ন হল, যাতে গমের সাতটি শীষ এবং প্রত্যেকটি শীষে একশত করে দানা থাকে। অতএব, এর ফল দাঁড়ালো যে, একটি দানা থেকে সাতশত দানা অর্জিত হল। এ মহান ফযীলতের হকদার তারাই হবে যারা দান করার পর খোঁটা দেয় না এবং কষ্টও দেয় না। অর্থাৎ দান করার পর বলে না- আমি দান ও সাহায্য-সহযোগিতা না করলে তোমার দুঃখ-কষ্ট দূর হত না, তোমার স্বচ্ছলতা ফিরে আসতো না, তুমি অভাব-অনটনেই থাকতে- এখন তুমি আমার সাথে বাহাদুরি কর... ইত্যাদি। আর এমন কোন কথা ও কাজ করবে না যার কারণে তারা কষ্ট পায়। এ বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। অনেক বিত্তশালী রয়েছে যারা অভাবীদেরকে সহযোগিতা করে আবার এমন আচরণ করে যার দ্বারা ঐ ব্যক্তি খুব ব্যথিত হয়। আর ঐ বিত্তশালীর প্রভাবের কারণে সে কিছু বলতেও পারে না।
কিয়ামাতের দিন তিন শ্রেণির মানুষের সাথে আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না, তাদের প্রতি তিনি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। তার মধ্যে এক শ্রেণি হল যারা দান করে খোঁটা দেয়। (সহীহ মুসলিম হা: ১০৬)
যারা দান করে খোঁটা দেবে না এবং কষ্টও দেবে না তাদের জন্য আরো ফযীলত হল- তাদের কোন ভয় নেই, কোন দুশ্চিন্তাও নেই।
(قَوْلٌ مَّعْرُوْفٌ)
‘ভাল কথা বলা’অর্থাৎ যারা কিছু চাইতে আসবে তাদের সাথে, এমনকি সকল মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা, উত্তমভাবে জবাব দেয়া এবং ভিক্ষুকদের মুখ থেকে যদি কোন অনুচিত কথা বের হয়ে যায় তাহলে ক্ষমা করে দেয়া। এ আচরণটি সে দান থেকে উত্তম যে দান করে কষ্ট দেয়া হয়। সে জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:الْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ
উত্তম কথা সদাক্বাহ সমতুল্য। (সহীহ মুসলিম হা: ১০০৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন: তুমি কখনো নেকীর কাজকে তুচ্ছ করে দেখ না যদিও তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাত করার মাধ্যমে হয়। (কারো সাথে হাসি মুখে কথা বলা এটাও একটি নেকীর কাজ)। (সহীহ মুসলিম হা: ২৬২৬)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদেরকে বলছেন- তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান সদাকাহর প্রতিদান বাতিল করে দিও না। যে ব্যক্তি দান সদাকাহ করে খোঁটা বা কষ্ট দেয় সে হল ঐ ব্যক্তির মত যে মানুষকে দেখানোর জন্য সদাকাহ করে এবং আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতে ঈমান রাখে না। প্রকৃতপক্ষে যারা মানুষের প্রশংসা ও সুখ্যাতি পাবার জন্য দান করে কেবল তারাই দান করার পর খোঁটা ও কষ্ট দেয়।
আমাদের দেশেও একশ্রেণীর মানুষ রয়েছে যারা স্থান-কাল ও অবস্থাভেদে দুনিয়ার স্বার্থ হাসিল করার জন্য দান করে থাকে।
এসব লোকেদের উদাহরণই আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে দিয়েছেন। এরূপ দানের বিনিময়ে কোন ভাল প্রতিদান তো নেই বরং তাদের প্রতিফলস্বরূপ অনেক শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এমন মানসিকতা নিয়ে দান করা থেকে হেফাযত করুন, আমীন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. খালেস নিয়্যতে আল্লাহ তা‘আলার পথে দান করার ফযীলত অবগত হলাম।
২. দান করার পর যারা খোঁটা বা কষ্ট দেয় তাদের দান বাতিল, তা কোন উপকারে আসবে না। তা যত বড়ই দান হোক না কেন।
৩. লোক দেখানো বা প্রশংসা পাওয়ার জন্য দান করা হচ্ছে রিয়া। আর রিয়া শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
৪. দান করা একটি ইবাদত; তা আল্লাহ তা‘আলা-কে খুশি করার জন্যই করতে হবে।
৫. মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা একটি সদাক্বাহ। যা দান করে খোঁটা দেয়ার চেয়ে অনেক উত্তম।
অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় দান-সদাকাহ করার ফযীলত ও দান-সদাকাহর প্রতিদান বাতিল হয়ে যায় এমন কিছু কর্মের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে।
যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে অর্থাৎ দীনের ইলম প্রসারে দান করে, হাজ্জ, জিহাদ, ফকীর, মিসকীন, বিধবা ও ইয়াতীমদের জন্য কিংবা সাহায্যের নিয়্যতে দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনদের জন্য অর্থ খরচ করে। মোটকথা এতে ঐ সকল উপকারী উৎস অন্তর্ভুক্ত যা মুসলিমদের কল্যাণে আসে। তাদের উপমা হল- কেউ গমের একটি দানা উর্বর জমিতে বপন করল। এ দানা থেকে একটি চারা গাছ উৎপন্ন হল, যাতে গমের সাতটি শীষ এবং প্রত্যেকটি শীষে একশত করে দানা থাকে। অতএব, এর ফল দাঁড়ালো যে, একটি দানা থেকে সাতশত দানা অর্জিত হল। এ মহান ফযীলতের হকদার তারাই হবে যারা দান করার পর খোঁটা দেয় না এবং কষ্টও দেয় না। অর্থাৎ দান করার পর বলে না- আমি দান ও সাহায্য-সহযোগিতা না করলে তোমার দুঃখ-কষ্ট দূর হত না, তোমার স্বচ্ছলতা ফিরে আসতো না, তুমি অভাব-অনটনেই থাকতে- এখন তুমি আমার সাথে বাহাদুরি কর... ইত্যাদি। আর এমন কোন কথা ও কাজ করবে না যার কারণে তারা কষ্ট পায়। এ বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। অনেক বিত্তশালী রয়েছে যারা অভাবীদেরকে সহযোগিতা করে আবার এমন আচরণ করে যার দ্বারা ঐ ব্যক্তি খুব ব্যথিত হয়। আর ঐ বিত্তশালীর প্রভাবের কারণে সে কিছু বলতেও পারে না।
কিয়ামাতের দিন তিন শ্রেণির মানুষের সাথে আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না, তাদের প্রতি তিনি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। তার মধ্যে এক শ্রেণি হল যারা দান করে খোঁটা দেয়। (সহীহ মুসলিম হা: ১০৬)
যারা দান করে খোঁটা দেবে না এবং কষ্টও দেবে না তাদের জন্য আরো ফযীলত হল- তাদের কোন ভয় নেই, কোন দুশ্চিন্তাও নেই।
(قَوْلٌ مَّعْرُوْفٌ)
‘ভাল কথা বলা’অর্থাৎ যারা কিছু চাইতে আসবে তাদের সাথে, এমনকি সকল মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা, উত্তমভাবে জবাব দেয়া এবং ভিক্ষুকদের মুখ থেকে যদি কোন অনুচিত কথা বের হয়ে যায় তাহলে ক্ষমা করে দেয়া। এ আচরণটি সে দান থেকে উত্তম যে দান করে কষ্ট দেয়া হয়। সে জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:الْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ
উত্তম কথা সদাক্বাহ সমতুল্য। (সহীহ মুসলিম হা: ১০০৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন: তুমি কখনো নেকীর কাজকে তুচ্ছ করে দেখ না যদিও তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাত করার মাধ্যমে হয়। (কারো সাথে হাসি মুখে কথা বলা এটাও একটি নেকীর কাজ)। (সহীহ মুসলিম হা: ২৬২৬)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদেরকে বলছেন- তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান সদাকাহর প্রতিদান বাতিল করে দিও না। যে ব্যক্তি দান সদাকাহ করে খোঁটা বা কষ্ট দেয় সে হল ঐ ব্যক্তির মত যে মানুষকে দেখানোর জন্য সদাকাহ করে এবং আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতে ঈমান রাখে না। প্রকৃতপক্ষে যারা মানুষের প্রশংসা ও সুখ্যাতি পাবার জন্য দান করে কেবল তারাই দান করার পর খোঁটা ও কষ্ট দেয়।
আমাদের দেশেও একশ্রেণীর মানুষ রয়েছে যারা স্থান-কাল ও অবস্থাভেদে দুনিয়ার স্বার্থ হাসিল করার জন্য দান করে থাকে।
এসব লোকেদের উদাহরণই আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে দিয়েছেন। এরূপ দানের বিনিময়ে কোন ভাল প্রতিদান তো নেই বরং তাদের প্রতিফলস্বরূপ অনেক শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এমন মানসিকতা নিয়ে দান করা থেকে হেফাযত করুন, আমীন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. খালেস নিয়্যতে আল্লাহ তা‘আলার পথে দান করার ফযীলত অবগত হলাম।
২. দান করার পর যারা খোঁটা বা কষ্ট দেয় তাদের দান বাতিল, তা কোন উপকারে আসবে না। তা যত বড়ই দান হোক না কেন।
৩. লোক দেখানো বা প্রশংসা পাওয়ার জন্য দান করা হচ্ছে রিয়া। আর রিয়া শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
৪. দান করা একটি ইবাদত; তা আল্লাহ তা‘আলা-কে খুশি করার জন্যই করতে হবে।
৫. মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা একটি সদাক্বাহ। যা দান করে খোঁটা দেয়ার চেয়ে অনেক উত্তম।
2:262
اَلَّذِیۡنَ یُنۡفِقُوۡنَ
اَمۡوَالَہُمۡ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ثُمَّ لَا یُتۡبِعُوۡنَ مَاۤ اَنۡفَقُوۡا
مَنًّا وَّ لَاۤ اَذًی ۙ لَّہُمۡ اَجۡرُہُمۡ عِنۡدَ رَبِّہِمۡ ۚ وَ لَا خَوۡفٌ
عَلَیۡہِمۡ وَ لَا ہُمۡ یَحۡزَنُوۡنَ ﴿۲۶۲﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৬১ থেকে ২৬৪ নং
আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় দান-সদাকাহ করার ফযীলত ও দান-সদাকাহর প্রতিদান বাতিল হয়ে যায় এমন কিছু কর্মের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে।
যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে অর্থাৎ দীনের ইলম প্রসারে দান করে, হাজ্জ, জিহাদ, ফকীর, মিসকীন, বিধবা ও ইয়াতীমদের জন্য কিংবা সাহায্যের নিয়্যতে দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনদের জন্য অর্থ খরচ করে। মোটকথা এতে ঐ সকল উপকারী উৎস অন্তর্ভুক্ত যা মুসলিমদের কল্যাণে আসে। তাদের উপমা হল- কেউ গমের একটি দানা উর্বর জমিতে বপন করল। এ দানা থেকে একটি চারা গাছ উৎপন্ন হল, যাতে গমের সাতটি শীষ এবং প্রত্যেকটি শীষে একশত করে দানা থাকে। অতএব, এর ফল দাঁড়ালো যে, একটি দানা থেকে সাতশত দানা অর্জিত হল। এ মহান ফযীলতের হকদার তারাই হবে যারা দান করার পর খোঁটা দেয় না এবং কষ্টও দেয় না। অর্থাৎ দান করার পর বলে না- আমি দান ও সাহায্য-সহযোগিতা না করলে তোমার দুঃখ-কষ্ট দূর হত না, তোমার স্বচ্ছলতা ফিরে আসতো না, তুমি অভাব-অনটনেই থাকতে- এখন তুমি আমার সাথে বাহাদুরি কর... ইত্যাদি। আর এমন কোন কথা ও কাজ করবে না যার কারণে তারা কষ্ট পায়। এ বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। অনেক বিত্তশালী রয়েছে যারা অভাবীদেরকে সহযোগিতা করে আবার এমন আচরণ করে যার দ্বারা ঐ ব্যক্তি খুব ব্যথিত হয়। আর ঐ বিত্তশালীর প্রভাবের কারণে সে কিছু বলতেও পারে না।
কিয়ামাতের দিন তিন শ্রেণির মানুষের সাথে আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না, তাদের প্রতি তিনি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। তার মধ্যে এক শ্রেণি হল যারা দান করে খোঁটা দেয়। (সহীহ মুসলিম হা: ১০৬)
যারা দান করে খোঁটা দেবে না এবং কষ্টও দেবে না তাদের জন্য আরো ফযীলত হল- তাদের কোন ভয় নেই, কোন দুশ্চিন্তাও নেই।
(قَوْلٌ مَّعْرُوْفٌ)
‘ভাল কথা বলা’অর্থাৎ যারা কিছু চাইতে আসবে তাদের সাথে, এমনকি সকল মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা, উত্তমভাবে জবাব দেয়া এবং ভিক্ষুকদের মুখ থেকে যদি কোন অনুচিত কথা বের হয়ে যায় তাহলে ক্ষমা করে দেয়া। এ আচরণটি সে দান থেকে উত্তম যে দান করে কষ্ট দেয়া হয়। সে জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:الْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ
উত্তম কথা সদাক্বাহ সমতুল্য। (সহীহ মুসলিম হা: ১০০৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন: তুমি কখনো নেকীর কাজকে তুচ্ছ করে দেখ না যদিও তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাত করার মাধ্যমে হয়। (কারো সাথে হাসি মুখে কথা বলা এটাও একটি নেকীর কাজ)। (সহীহ মুসলিম হা: ২৬২৬)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদেরকে বলছেন- তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান সদাকাহর প্রতিদান বাতিল করে দিও না। যে ব্যক্তি দান সদাকাহ করে খোঁটা বা কষ্ট দেয় সে হল ঐ ব্যক্তির মত যে মানুষকে দেখানোর জন্য সদাকাহ করে এবং আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতে ঈমান রাখে না। প্রকৃতপক্ষে যারা মানুষের প্রশংসা ও সুখ্যাতি পাবার জন্য দান করে কেবল তারাই দান করার পর খোঁটা ও কষ্ট দেয়।
আমাদের দেশেও একশ্রেণীর মানুষ রয়েছে যারা স্থান-কাল ও অবস্থাভেদে দুনিয়ার স্বার্থ হাসিল করার জন্য দান করে থাকে।
এসব লোকেদের উদাহরণই আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে দিয়েছেন। এরূপ দানের বিনিময়ে কোন ভাল প্রতিদান তো নেই বরং তাদের প্রতিফলস্বরূপ অনেক শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এমন মানসিকতা নিয়ে দান করা থেকে হেফাযত করুন, আমীন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. খালেস নিয়্যতে আল্লাহ তা‘আলার পথে দান করার ফযীলত অবগত হলাম।
২. দান করার পর যারা খোঁটা বা কষ্ট দেয় তাদের দান বাতিল, তা কোন উপকারে আসবে না। তা যত বড়ই দান হোক না কেন।
৩. লোক দেখানো বা প্রশংসা পাওয়ার জন্য দান করা হচ্ছে রিয়া। আর রিয়া শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
৪. দান করা একটি ইবাদত; তা আল্লাহ তা‘আলা-কে খুশি করার জন্যই করতে হবে।
৫. মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা একটি সদাক্বাহ। যা দান করে খোঁটা দেয়ার চেয়ে অনেক উত্তম।
অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় দান-সদাকাহ করার ফযীলত ও দান-সদাকাহর প্রতিদান বাতিল হয়ে যায় এমন কিছু কর্মের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে।
যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে অর্থাৎ দীনের ইলম প্রসারে দান করে, হাজ্জ, জিহাদ, ফকীর, মিসকীন, বিধবা ও ইয়াতীমদের জন্য কিংবা সাহায্যের নিয়্যতে দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনদের জন্য অর্থ খরচ করে। মোটকথা এতে ঐ সকল উপকারী উৎস অন্তর্ভুক্ত যা মুসলিমদের কল্যাণে আসে। তাদের উপমা হল- কেউ গমের একটি দানা উর্বর জমিতে বপন করল। এ দানা থেকে একটি চারা গাছ উৎপন্ন হল, যাতে গমের সাতটি শীষ এবং প্রত্যেকটি শীষে একশত করে দানা থাকে। অতএব, এর ফল দাঁড়ালো যে, একটি দানা থেকে সাতশত দানা অর্জিত হল। এ মহান ফযীলতের হকদার তারাই হবে যারা দান করার পর খোঁটা দেয় না এবং কষ্টও দেয় না। অর্থাৎ দান করার পর বলে না- আমি দান ও সাহায্য-সহযোগিতা না করলে তোমার দুঃখ-কষ্ট দূর হত না, তোমার স্বচ্ছলতা ফিরে আসতো না, তুমি অভাব-অনটনেই থাকতে- এখন তুমি আমার সাথে বাহাদুরি কর... ইত্যাদি। আর এমন কোন কথা ও কাজ করবে না যার কারণে তারা কষ্ট পায়। এ বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। অনেক বিত্তশালী রয়েছে যারা অভাবীদেরকে সহযোগিতা করে আবার এমন আচরণ করে যার দ্বারা ঐ ব্যক্তি খুব ব্যথিত হয়। আর ঐ বিত্তশালীর প্রভাবের কারণে সে কিছু বলতেও পারে না।
কিয়ামাতের দিন তিন শ্রেণির মানুষের সাথে আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না, তাদের প্রতি তিনি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। তার মধ্যে এক শ্রেণি হল যারা দান করে খোঁটা দেয়। (সহীহ মুসলিম হা: ১০৬)
যারা দান করে খোঁটা দেবে না এবং কষ্টও দেবে না তাদের জন্য আরো ফযীলত হল- তাদের কোন ভয় নেই, কোন দুশ্চিন্তাও নেই।
(قَوْلٌ مَّعْرُوْفٌ)
‘ভাল কথা বলা’অর্থাৎ যারা কিছু চাইতে আসবে তাদের সাথে, এমনকি সকল মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা, উত্তমভাবে জবাব দেয়া এবং ভিক্ষুকদের মুখ থেকে যদি কোন অনুচিত কথা বের হয়ে যায় তাহলে ক্ষমা করে দেয়া। এ আচরণটি সে দান থেকে উত্তম যে দান করে কষ্ট দেয়া হয়। সে জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:الْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ
উত্তম কথা সদাক্বাহ সমতুল্য। (সহীহ মুসলিম হা: ১০০৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন: তুমি কখনো নেকীর কাজকে তুচ্ছ করে দেখ না যদিও তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাত করার মাধ্যমে হয়। (কারো সাথে হাসি মুখে কথা বলা এটাও একটি নেকীর কাজ)। (সহীহ মুসলিম হা: ২৬২৬)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদেরকে বলছেন- তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান সদাকাহর প্রতিদান বাতিল করে দিও না। যে ব্যক্তি দান সদাকাহ করে খোঁটা বা কষ্ট দেয় সে হল ঐ ব্যক্তির মত যে মানুষকে দেখানোর জন্য সদাকাহ করে এবং আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতে ঈমান রাখে না। প্রকৃতপক্ষে যারা মানুষের প্রশংসা ও সুখ্যাতি পাবার জন্য দান করে কেবল তারাই দান করার পর খোঁটা ও কষ্ট দেয়।
আমাদের দেশেও একশ্রেণীর মানুষ রয়েছে যারা স্থান-কাল ও অবস্থাভেদে দুনিয়ার স্বার্থ হাসিল করার জন্য দান করে থাকে।
এসব লোকেদের উদাহরণই আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে দিয়েছেন। এরূপ দানের বিনিময়ে কোন ভাল প্রতিদান তো নেই বরং তাদের প্রতিফলস্বরূপ অনেক শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এমন মানসিকতা নিয়ে দান করা থেকে হেফাযত করুন, আমীন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. খালেস নিয়্যতে আল্লাহ তা‘আলার পথে দান করার ফযীলত অবগত হলাম।
২. দান করার পর যারা খোঁটা বা কষ্ট দেয় তাদের দান বাতিল, তা কোন উপকারে আসবে না। তা যত বড়ই দান হোক না কেন।
৩. লোক দেখানো বা প্রশংসা পাওয়ার জন্য দান করা হচ্ছে রিয়া। আর রিয়া শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
৪. দান করা একটি ইবাদত; তা আল্লাহ তা‘আলা-কে খুশি করার জন্যই করতে হবে।
৫. মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা একটি সদাক্বাহ। যা দান করে খোঁটা দেয়ার চেয়ে অনেক উত্তম।
2:263
قَوۡلٌ مَّعۡرُوۡفٌ وَّ
مَغۡفِرَۃٌ خَیۡرٌ مِّنۡ صَدَقَۃٍ یَّتۡبَعُہَاۤ اَذًی ؕ وَ اللّٰہُ غَنِیٌّ
حَلِیۡمٌ ﴿۲۶۳﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৬১ থেকে ২৬৪ নং
আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় দান-সদাকাহ করার ফযীলত ও দান-সদাকাহর প্রতিদান বাতিল হয়ে যায় এমন কিছু কর্মের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে।
যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে অর্থাৎ দীনের ইলম প্রসারে দান করে, হাজ্জ, জিহাদ, ফকীর, মিসকীন, বিধবা ও ইয়াতীমদের জন্য কিংবা সাহায্যের নিয়্যতে দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনদের জন্য অর্থ খরচ করে। মোটকথা এতে ঐ সকল উপকারী উৎস অন্তর্ভুক্ত যা মুসলিমদের কল্যাণে আসে। তাদের উপমা হল- কেউ গমের একটি দানা উর্বর জমিতে বপন করল। এ দানা থেকে একটি চারা গাছ উৎপন্ন হল, যাতে গমের সাতটি শীষ এবং প্রত্যেকটি শীষে একশত করে দানা থাকে। অতএব, এর ফল দাঁড়ালো যে, একটি দানা থেকে সাতশত দানা অর্জিত হল। এ মহান ফযীলতের হকদার তারাই হবে যারা দান করার পর খোঁটা দেয় না এবং কষ্টও দেয় না। অর্থাৎ দান করার পর বলে না- আমি দান ও সাহায্য-সহযোগিতা না করলে তোমার দুঃখ-কষ্ট দূর হত না, তোমার স্বচ্ছলতা ফিরে আসতো না, তুমি অভাব-অনটনেই থাকতে- এখন তুমি আমার সাথে বাহাদুরি কর... ইত্যাদি। আর এমন কোন কথা ও কাজ করবে না যার কারণে তারা কষ্ট পায়। এ বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। অনেক বিত্তশালী রয়েছে যারা অভাবীদেরকে সহযোগিতা করে আবার এমন আচরণ করে যার দ্বারা ঐ ব্যক্তি খুব ব্যথিত হয়। আর ঐ বিত্তশালীর প্রভাবের কারণে সে কিছু বলতেও পারে না।
কিয়ামাতের দিন তিন শ্রেণির মানুষের সাথে আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না, তাদের প্রতি তিনি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। তার মধ্যে এক শ্রেণি হল যারা দান করে খোঁটা দেয়। (সহীহ মুসলিম হা: ১০৬)
যারা দান করে খোঁটা দেবে না এবং কষ্টও দেবে না তাদের জন্য আরো ফযীলত হল- তাদের কোন ভয় নেই, কোন দুশ্চিন্তাও নেই।
(قَوْلٌ مَّعْرُوْفٌ)
‘ভাল কথা বলা’অর্থাৎ যারা কিছু চাইতে আসবে তাদের সাথে, এমনকি সকল মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা, উত্তমভাবে জবাব দেয়া এবং ভিক্ষুকদের মুখ থেকে যদি কোন অনুচিত কথা বের হয়ে যায় তাহলে ক্ষমা করে দেয়া। এ আচরণটি সে দান থেকে উত্তম যে দান করে কষ্ট দেয়া হয়। সে জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
الْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ
উত্তম কথা সদাক্বাহ সমতুল্য। (সহীহ মুসলিম হা: ১০০৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন: তুমি কখনো নেকীর কাজকে তুচ্ছ করে দেখ না যদিও তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাত করার মাধ্যমে হয়। (কারো সাথে হাসি মুখে কথা বলা এটাও একটি নেকীর কাজ)। (সহীহ মুসলিম হা: ২৬২৬)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদেরকে বলছেন- তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান সদাকাহর প্রতিদান বাতিল করে দিও না। যে ব্যক্তি দান সদাকাহ করে খোঁটা বা কষ্ট দেয় সে হল ঐ ব্যক্তির মত যে মানুষকে দেখানোর জন্য সদাকাহ করে এবং আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতে ঈমান রাখে না। প্রকৃতপক্ষে যারা মানুষের প্রশংসা ও সুখ্যাতি পাবার জন্য দান করে কেবল তারাই দান করার পর খোঁটা ও কষ্ট দেয়।
আমাদের দেশেও একশ্রেণীর মানুষ রয়েছে যারা স্থান-কাল ও অবস্থাভেদে দুনিয়ার স্বার্থ হাসিল করার জন্য দান করে থাকে।
এসব লোকেদের উদাহরণই আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে দিয়েছেন। এরূপ দানের বিনিময়ে কোন ভাল প্রতিদান তো নেই বরং তাদের প্রতিফলস্বরূপ অনেক শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এমন মানসিকতা নিয়ে দান করা থেকে হেফাযত করুন, আমীন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. খালেস নিয়্যতে আল্লাহ তা‘আলার পথে দান করার ফযীলত অবগত হলাম।
২. দান করার পর যারা খোঁটা বা কষ্ট দেয় তাদের দান বাতিল, তা কোন উপকারে আসবে না। তা যত বড়ই দান হোক না কেন।
৩. লোক দেখানো বা প্রশংসা পাওয়ার জন্য দান করা হচ্ছে রিয়া। আর রিয়া শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
৪. দান করা একটি ইবাদত; তা আল্লাহ তা‘আলা-কে খুশি করার জন্যই করতে হবে।
৫. মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা একটি সদাক্বাহ। যা দান করে খোঁটা দেয়ার চেয়ে অনেক উত্তম।
অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় দান-সদাকাহ করার ফযীলত ও দান-সদাকাহর প্রতিদান বাতিল হয়ে যায় এমন কিছু কর্মের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে।
যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে অর্থাৎ দীনের ইলম প্রসারে দান করে, হাজ্জ, জিহাদ, ফকীর, মিসকীন, বিধবা ও ইয়াতীমদের জন্য কিংবা সাহায্যের নিয়্যতে দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনদের জন্য অর্থ খরচ করে। মোটকথা এতে ঐ সকল উপকারী উৎস অন্তর্ভুক্ত যা মুসলিমদের কল্যাণে আসে। তাদের উপমা হল- কেউ গমের একটি দানা উর্বর জমিতে বপন করল। এ দানা থেকে একটি চারা গাছ উৎপন্ন হল, যাতে গমের সাতটি শীষ এবং প্রত্যেকটি শীষে একশত করে দানা থাকে। অতএব, এর ফল দাঁড়ালো যে, একটি দানা থেকে সাতশত দানা অর্জিত হল। এ মহান ফযীলতের হকদার তারাই হবে যারা দান করার পর খোঁটা দেয় না এবং কষ্টও দেয় না। অর্থাৎ দান করার পর বলে না- আমি দান ও সাহায্য-সহযোগিতা না করলে তোমার দুঃখ-কষ্ট দূর হত না, তোমার স্বচ্ছলতা ফিরে আসতো না, তুমি অভাব-অনটনেই থাকতে- এখন তুমি আমার সাথে বাহাদুরি কর... ইত্যাদি। আর এমন কোন কথা ও কাজ করবে না যার কারণে তারা কষ্ট পায়। এ বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। অনেক বিত্তশালী রয়েছে যারা অভাবীদেরকে সহযোগিতা করে আবার এমন আচরণ করে যার দ্বারা ঐ ব্যক্তি খুব ব্যথিত হয়। আর ঐ বিত্তশালীর প্রভাবের কারণে সে কিছু বলতেও পারে না।
কিয়ামাতের দিন তিন শ্রেণির মানুষের সাথে আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না, তাদের প্রতি তিনি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। তার মধ্যে এক শ্রেণি হল যারা দান করে খোঁটা দেয়। (সহীহ মুসলিম হা: ১০৬)
যারা দান করে খোঁটা দেবে না এবং কষ্টও দেবে না তাদের জন্য আরো ফযীলত হল- তাদের কোন ভয় নেই, কোন দুশ্চিন্তাও নেই।
(قَوْلٌ مَّعْرُوْفٌ)
‘ভাল কথা বলা’অর্থাৎ যারা কিছু চাইতে আসবে তাদের সাথে, এমনকি সকল মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা, উত্তমভাবে জবাব দেয়া এবং ভিক্ষুকদের মুখ থেকে যদি কোন অনুচিত কথা বের হয়ে যায় তাহলে ক্ষমা করে দেয়া। এ আচরণটি সে দান থেকে উত্তম যে দান করে কষ্ট দেয়া হয়। সে জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
الْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ
উত্তম কথা সদাক্বাহ সমতুল্য। (সহীহ মুসলিম হা: ১০০৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন: তুমি কখনো নেকীর কাজকে তুচ্ছ করে দেখ না যদিও তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাত করার মাধ্যমে হয়। (কারো সাথে হাসি মুখে কথা বলা এটাও একটি নেকীর কাজ)। (সহীহ মুসলিম হা: ২৬২৬)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদেরকে বলছেন- তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান সদাকাহর প্রতিদান বাতিল করে দিও না। যে ব্যক্তি দান সদাকাহ করে খোঁটা বা কষ্ট দেয় সে হল ঐ ব্যক্তির মত যে মানুষকে দেখানোর জন্য সদাকাহ করে এবং আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতে ঈমান রাখে না। প্রকৃতপক্ষে যারা মানুষের প্রশংসা ও সুখ্যাতি পাবার জন্য দান করে কেবল তারাই দান করার পর খোঁটা ও কষ্ট দেয়।
আমাদের দেশেও একশ্রেণীর মানুষ রয়েছে যারা স্থান-কাল ও অবস্থাভেদে দুনিয়ার স্বার্থ হাসিল করার জন্য দান করে থাকে।
এসব লোকেদের উদাহরণই আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে দিয়েছেন। এরূপ দানের বিনিময়ে কোন ভাল প্রতিদান তো নেই বরং তাদের প্রতিফলস্বরূপ অনেক শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এমন মানসিকতা নিয়ে দান করা থেকে হেফাযত করুন, আমীন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. খালেস নিয়্যতে আল্লাহ তা‘আলার পথে দান করার ফযীলত অবগত হলাম।
২. দান করার পর যারা খোঁটা বা কষ্ট দেয় তাদের দান বাতিল, তা কোন উপকারে আসবে না। তা যত বড়ই দান হোক না কেন।
৩. লোক দেখানো বা প্রশংসা পাওয়ার জন্য দান করা হচ্ছে রিয়া। আর রিয়া শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
৪. দান করা একটি ইবাদত; তা আল্লাহ তা‘আলা-কে খুশি করার জন্যই করতে হবে।
৫. মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা একটি সদাক্বাহ। যা দান করে খোঁটা দেয়ার চেয়ে অনেক উত্তম।
2:264
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ
اٰمَنُوۡا لَا تُبۡطِلُوۡا صَدَقٰتِکُمۡ بِالۡمَنِّ وَ الۡاَذٰی ۙ کَالَّذِیۡ
یُنۡفِقُ مَالَہٗ رِئَآءَ النَّاسِ وَ لَا یُؤۡمِنُ بِاللّٰہِ وَ الۡیَوۡمِ
الۡاٰخِرِؕ فَمَثَلُہٗ کَمَثَلِ صَفۡوَانٍ عَلَیۡہِ تُرَابٌ فَاَصَابَہٗ وَابِلٌ
فَتَرَکَہٗ صَلۡدًا ؕ لَا یَقۡدِرُوۡنَ عَلٰی شَیۡءٍ مِّمَّا کَسَبُوۡا ؕ وَ
اللّٰہُ لَا یَہۡدِی الۡقَوۡمَ الۡکٰفِرِیۡنَ ﴿۲۶۴﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৬১ থেকে ২৬৪ নং
আয়াতের তাফসীর:
অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় দান-সদাকাহ করার ফযীলত ও দান-সদাকাহর প্রতিদান বাতিল হয়ে যায় এমন কিছু কর্মের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে।
যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে অর্থাৎ দীনের ইলম প্রসারে দান করে, হাজ্জ, জিহাদ, ফকীর, মিসকীন, বিধবা ও ইয়াতীমদের জন্য কিংবা সাহায্যের নিয়্যতে দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনদের জন্য অর্থ খরচ করে। মোটকথা এতে ঐ সকল উপকারী উৎস অন্তর্ভুক্ত যা মুসলিমদের কল্যাণে আসে। তাদের উপমা হল- কেউ গমের একটি দানা উর্বর জমিতে বপন করল। এ দানা থেকে একটি চারা গাছ উৎপন্ন হল, যাতে গমের সাতটি শীষ এবং প্রত্যেকটি শীষে একশত করে দানা থাকে। অতএব, এর ফল দাঁড়ালো যে, একটি দানা থেকে সাতশত দানা অর্জিত হল। এ মহান ফযীলতের হকদার তারাই হবে যারা দান করার পর খোঁটা দেয় না এবং কষ্টও দেয় না। অর্থাৎ দান করার পর বলে না- আমি দান ও সাহায্য-সহযোগিতা না করলে তোমার দুঃখ-কষ্ট দূর হত না, তোমার স্বচ্ছলতা ফিরে আসতো না, তুমি অভাব-অনটনেই থাকতে- এখন তুমি আমার সাথে বাহাদুরি কর... ইত্যাদি। আর এমন কোন কথা ও কাজ করবে না যার কারণে তারা কষ্ট পায়। এ বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। অনেক বিত্তশালী রয়েছে যারা অভাবীদেরকে সহযোগিতা করে আবার এমন আচরণ করে যার দ্বারা ঐ ব্যক্তি খুব ব্যথিত হয়। আর ঐ বিত্তশালীর প্রভাবের কারণে সে কিছু বলতেও পারে না।
কিয়ামাতের দিন তিন শ্রেণির মানুষের সাথে আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না, তাদের প্রতি তিনি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। তার মধ্যে এক শ্রেণি হল যারা দান করে খোঁটা দেয়। (সহীহ মুসলিম হা: ১০৬)
যারা দান করে খোঁটা দেবে না এবং কষ্টও দেবে না তাদের জন্য আরো ফযীলত হল- তাদের কোন ভয় নেই, কোন দুশ্চিন্তাও নেই।
(قَوْلٌ مَّعْرُوْفٌ)
‘ভাল কথা বলা’অর্থাৎ যারা কিছু চাইতে আসবে তাদের সাথে, এমনকি সকল মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা, উত্তমভাবে জবাব দেয়া এবং ভিক্ষুকদের মুখ থেকে যদি কোন অনুচিত কথা বের হয়ে যায় তাহলে ক্ষমা করে দেয়া। এ আচরণটি সে দান থেকে উত্তম যে দান করে কষ্ট দেয়া হয়। সে জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:الْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ
উত্তম কথা সদাক্বাহ সমতুল্য। (সহীহ মুসলিম হা: ১০০৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন: তুমি কখনো নেকীর কাজকে তুচ্ছ করে দেখ না যদিও তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাত করার মাধ্যমে হয়। (কারো সাথে হাসি মুখে কথা বলা এটাও একটি নেকীর কাজ)। (সহীহ মুসলিম হা: ২৬২৬)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদেরকে বলছেন- তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান সদাকাহর প্রতিদান বাতিল করে দিও না। যে ব্যক্তি দান সদাকাহ করে খোঁটা বা কষ্ট দেয় সে হল ঐ ব্যক্তির মত যে মানুষকে দেখানোর জন্য সদাকাহ করে এবং আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতে ঈমান রাখে না। প্রকৃতপক্ষে যারা মানুষের প্রশংসা ও সুখ্যাতি পাবার জন্য দান করে কেবল তারাই দান করার পর খোঁটা ও কষ্ট দেয়।
আমাদের দেশেও একশ্রেণীর মানুষ রয়েছে যারা স্থান-কাল ও অবস্থাভেদে দুনিয়ার স্বার্থ হাসিল করার জন্য দান করে থাকে।
এসব লোকেদের উদাহরণই আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে দিয়েছেন। এরূপ দানের বিনিময়ে কোন ভাল প্রতিদান তো নেই বরং তাদের প্রতিফলস্বরূপ অনেক শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এমন মানসিকতা নিয়ে দান করা থেকে হেফাযত করুন, আমীন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. খালেস নিয়্যতে আল্লাহ তা‘আলার পথে দান করার ফযীলত অবগত হলাম।
২. দান করার পর যারা খোঁটা বা কষ্ট দেয় তাদের দান বাতিল, তা কোন উপকারে আসবে না। তা যত বড়ই দান হোক না কেন।
৩. লোক দেখানো বা প্রশংসা পাওয়ার জন্য দান করা হচ্ছে রিয়া। আর রিয়া শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
৪. দান করা একটি ইবাদত; তা আল্লাহ তা‘আলা-কে খুশি করার জন্যই করতে হবে।
৫. মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা একটি সদাক্বাহ। যা দান করে খোঁটা দেয়ার চেয়ে অনেক উত্তম।
অত্র আয়াতগুলোতে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় দান-সদাকাহ করার ফযীলত ও দান-সদাকাহর প্রতিদান বাতিল হয়ে যায় এমন কিছু কর্মের বর্ণনা দেয়া হচ্ছে।
যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে তাদের সম্পদ ব্যয় করে অর্থাৎ দীনের ইলম প্রসারে দান করে, হাজ্জ, জিহাদ, ফকীর, মিসকীন, বিধবা ও ইয়াতীমদের জন্য কিংবা সাহায্যের নিয়্যতে দরিদ্র আত্মীয়-স্বজনদের জন্য অর্থ খরচ করে। মোটকথা এতে ঐ সকল উপকারী উৎস অন্তর্ভুক্ত যা মুসলিমদের কল্যাণে আসে। তাদের উপমা হল- কেউ গমের একটি দানা উর্বর জমিতে বপন করল। এ দানা থেকে একটি চারা গাছ উৎপন্ন হল, যাতে গমের সাতটি শীষ এবং প্রত্যেকটি শীষে একশত করে দানা থাকে। অতএব, এর ফল দাঁড়ালো যে, একটি দানা থেকে সাতশত দানা অর্জিত হল। এ মহান ফযীলতের হকদার তারাই হবে যারা দান করার পর খোঁটা দেয় না এবং কষ্টও দেয় না। অর্থাৎ দান করার পর বলে না- আমি দান ও সাহায্য-সহযোগিতা না করলে তোমার দুঃখ-কষ্ট দূর হত না, তোমার স্বচ্ছলতা ফিরে আসতো না, তুমি অভাব-অনটনেই থাকতে- এখন তুমি আমার সাথে বাহাদুরি কর... ইত্যাদি। আর এমন কোন কথা ও কাজ করবে না যার কারণে তারা কষ্ট পায়। এ বিষয়টি খুবই বেদনাদায়ক। অনেক বিত্তশালী রয়েছে যারা অভাবীদেরকে সহযোগিতা করে আবার এমন আচরণ করে যার দ্বারা ঐ ব্যক্তি খুব ব্যথিত হয়। আর ঐ বিত্তশালীর প্রভাবের কারণে সে কিছু বলতেও পারে না।
কিয়ামাতের দিন তিন শ্রেণির মানুষের সাথে আল্লাহ তা‘আলা কথা বলবেন না, তাদের প্রতি তিনি রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না এবং তাদেরকে পবিত্রও করবেন না। তার মধ্যে এক শ্রেণি হল যারা দান করে খোঁটা দেয়। (সহীহ মুসলিম হা: ১০৬)
যারা দান করে খোঁটা দেবে না এবং কষ্টও দেবে না তাদের জন্য আরো ফযীলত হল- তাদের কোন ভয় নেই, কোন দুশ্চিন্তাও নেই।
(قَوْلٌ مَّعْرُوْفٌ)
‘ভাল কথা বলা’অর্থাৎ যারা কিছু চাইতে আসবে তাদের সাথে, এমনকি সকল মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা, উত্তমভাবে জবাব দেয়া এবং ভিক্ষুকদের মুখ থেকে যদি কোন অনুচিত কথা বের হয়ে যায় তাহলে ক্ষমা করে দেয়া। এ আচরণটি সে দান থেকে উত্তম যে দান করে কষ্ট দেয়া হয়। সে জন্য রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:الْكَلِمَةُ الطَّيِّبَةُ صَدَقَةٌ
উত্তম কথা সদাক্বাহ সমতুল্য। (সহীহ মুসলিম হা: ১০০৯)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন: তুমি কখনো নেকীর কাজকে তুচ্ছ করে দেখ না যদিও তোমার ভাইয়ের সাথে হাসি মুখে সাক্ষাত করার মাধ্যমে হয়। (কারো সাথে হাসি মুখে কথা বলা এটাও একটি নেকীর কাজ)। (সহীহ মুসলিম হা: ২৬২৬)
তারপর আল্লাহ তা‘আলা ঈমানদারদেরকে বলছেন- তোমরা খোঁটা ও কষ্ট দিয়ে তোমাদের দান সদাকাহর প্রতিদান বাতিল করে দিও না। যে ব্যক্তি দান সদাকাহ করে খোঁটা বা কষ্ট দেয় সে হল ঐ ব্যক্তির মত যে মানুষকে দেখানোর জন্য সদাকাহ করে এবং আল্লাহ তা‘আলা ও আখিরাতে ঈমান রাখে না। প্রকৃতপক্ষে যারা মানুষের প্রশংসা ও সুখ্যাতি পাবার জন্য দান করে কেবল তারাই দান করার পর খোঁটা ও কষ্ট দেয়।
আমাদের দেশেও একশ্রেণীর মানুষ রয়েছে যারা স্থান-কাল ও অবস্থাভেদে দুনিয়ার স্বার্থ হাসিল করার জন্য দান করে থাকে।
এসব লোকেদের উদাহরণই আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতে দিয়েছেন। এরূপ দানের বিনিময়ে কোন ভাল প্রতিদান তো নেই বরং তাদের প্রতিফলস্বরূপ অনেক শাস্তি ভোগ করতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে এমন মানসিকতা নিয়ে দান করা থেকে হেফাযত করুন, আমীন।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. খালেস নিয়্যতে আল্লাহ তা‘আলার পথে দান করার ফযীলত অবগত হলাম।
২. দান করার পর যারা খোঁটা বা কষ্ট দেয় তাদের দান বাতিল, তা কোন উপকারে আসবে না। তা যত বড়ই দান হোক না কেন।
৩. লোক দেখানো বা প্রশংসা পাওয়ার জন্য দান করা হচ্ছে রিয়া। আর রিয়া শির্কের অন্তর্ভুক্ত।
৪. দান করা একটি ইবাদত; তা আল্লাহ তা‘আলা-কে খুশি করার জন্যই করতে হবে।
৫. মানুষের সাথে উত্তম কথা বলা একটি সদাক্বাহ। যা দান করে খোঁটা দেয়ার চেয়ে অনেক উত্তম।
2:265
وَ مَثَلُ الَّذِیۡنَ
یُنۡفِقُوۡنَ اَمۡوَالَہُمُ ابۡتِغَآءَ مَرۡضَاتِ اللّٰہِ وَ تَثۡبِیۡتًا مِّنۡ
اَنۡفُسِہِمۡ کَمَثَلِ جَنَّۃٍۭ بِرَبۡوَۃٍ اَصَابَہَا وَابِلٌ فَاٰتَتۡ اُکُلَہَا
ضِعۡفَیۡنِ ۚ فَاِنۡ لَّمۡ یُصِبۡہَا وَابِلٌ فَطَلٌّ ؕ وَ اللّٰہُ بِمَا
تَعۡمَلُوۡنَ بَصِیۡرٌ ﴿۲۶۵﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৬৫ ও ২৬৬ নং আয়াতের
তাফসীর:
যারা মানুষকে খুশি করার জন্য, আর যারা মানুষের বাহবা ও দুনিয়া হাসিলের জন্য দান করে এবং দান করে খোঁটা ও কষ্ট দেয় তাদের বর্ণনার পর যারা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে খুশি করার জন্য দান করে তাদের সুন্দর উপমা দিচ্ছেন। যারা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য এবং নিজেদের (ঈমানকে) দৃঢ় করার জন্য তাদের মাল খরচ করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে- উর্বর জমিতে অবস্থিত একটি বাগান, তাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। ফলে তা দ্বিগুণ খাদ্যশস্য উৎপন্ন করে। যদি প্রবল বৃষ্টি নাও হয়, তবে অল্প বৃষ্টিই যথেষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ তাদের দানের প্রতিদান অবশ্যই থাকবে, কোনক্রমেই তাদের দান বৃথা যাবে না।
২৬৬ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ঐসব লোকেদের আরো একটি উপমা দিচ্ছেন যারা মানুষকে দেখানোর জন্য বা দুনিয়া হাসিলের জন্য দান করে। তাদের উপমা হল- কোন এক ব্যক্তির একটি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান যা ফলমূলে ভরপুর। এ বাগানের ওপর তার আয় নির্ভর করে। এমতাবস্তায় লোকটি বার্ধক্যে পৌঁছে গেল এবং তার অনেক ছোট ছোট সন্তানও আছে। বার্ধক্যের কারণে লোকটি বাগানের পরিচর্যা করতে পারে না। ছোট ছেলেরাও কোন সহযোগিতা করতে পারে না। হঠাৎ একদিন অগ্নিঝড় এসে বাগান নষ্ট করে দিল। এখন উক্ত নষ্ট বাগান বৃদ্ধ লোকটি আবাদ করতে পারে না এবং তার ছেলেরাও আবাদ করতে পারে না।
যারা লোক দেখানো বা দুনিয়া অর্জনের জন্য দান করেছিল কিয়ামাতের দিন তাদের আমল এরূপ নষ্ট হয়ে যাবে, আমলের প্রতিদান খুঁজে পাবে না।
ইবনু আব্বাস, উমার (রাঃ)-কে বললেন: এ আয়াতটিতে একটি আমলের উদাহরণ দেয়া হয়েছে। উমার (রাঃ) বললেন: আমলটি কি? তিনি বললেন: একজন ধনী ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা এক শয়তান প্রেরণ করলেন। তখন সে আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য কাজ করতে লাগল। ফলে তার সব আমল বরবাদ করে দিল। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫৩৮)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সহজে বুঝার জন্য উপমা প্রদান করা শরীয়ত সিদ্ধ।
২. আল্লাহ তা‘আলাকে খুশি করার জন্য দান করলে তিনি তার প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি করেদেন।
৩. আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করলে তাঁকে চেনা যায়।
যারা মানুষকে খুশি করার জন্য, আর যারা মানুষের বাহবা ও দুনিয়া হাসিলের জন্য দান করে এবং দান করে খোঁটা ও কষ্ট দেয় তাদের বর্ণনার পর যারা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে খুশি করার জন্য দান করে তাদের সুন্দর উপমা দিচ্ছেন। যারা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য এবং নিজেদের (ঈমানকে) দৃঢ় করার জন্য তাদের মাল খরচ করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে- উর্বর জমিতে অবস্থিত একটি বাগান, তাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। ফলে তা দ্বিগুণ খাদ্যশস্য উৎপন্ন করে। যদি প্রবল বৃষ্টি নাও হয়, তবে অল্প বৃষ্টিই যথেষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ তাদের দানের প্রতিদান অবশ্যই থাকবে, কোনক্রমেই তাদের দান বৃথা যাবে না।
২৬৬ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ঐসব লোকেদের আরো একটি উপমা দিচ্ছেন যারা মানুষকে দেখানোর জন্য বা দুনিয়া হাসিলের জন্য দান করে। তাদের উপমা হল- কোন এক ব্যক্তির একটি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান যা ফলমূলে ভরপুর। এ বাগানের ওপর তার আয় নির্ভর করে। এমতাবস্তায় লোকটি বার্ধক্যে পৌঁছে গেল এবং তার অনেক ছোট ছোট সন্তানও আছে। বার্ধক্যের কারণে লোকটি বাগানের পরিচর্যা করতে পারে না। ছোট ছেলেরাও কোন সহযোগিতা করতে পারে না। হঠাৎ একদিন অগ্নিঝড় এসে বাগান নষ্ট করে দিল। এখন উক্ত নষ্ট বাগান বৃদ্ধ লোকটি আবাদ করতে পারে না এবং তার ছেলেরাও আবাদ করতে পারে না।
যারা লোক দেখানো বা দুনিয়া অর্জনের জন্য দান করেছিল কিয়ামাতের দিন তাদের আমল এরূপ নষ্ট হয়ে যাবে, আমলের প্রতিদান খুঁজে পাবে না।
ইবনু আব্বাস, উমার (রাঃ)-কে বললেন: এ আয়াতটিতে একটি আমলের উদাহরণ দেয়া হয়েছে। উমার (রাঃ) বললেন: আমলটি কি? তিনি বললেন: একজন ধনী ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা এক শয়তান প্রেরণ করলেন। তখন সে আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য কাজ করতে লাগল। ফলে তার সব আমল বরবাদ করে দিল। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫৩৮)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সহজে বুঝার জন্য উপমা প্রদান করা শরীয়ত সিদ্ধ।
২. আল্লাহ তা‘আলাকে খুশি করার জন্য দান করলে তিনি তার প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি করেদেন।
৩. আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করলে তাঁকে চেনা যায়।
2:266
اَیَوَدُّ اَحَدُکُمۡ
اَنۡ تَکُوۡنَ لَہٗ جَنَّۃٌ مِّنۡ نَّخِیۡلٍ وَّ اَعۡنَابٍ تَجۡرِیۡ مِنۡ
تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ ۙ لَہٗ فِیۡہَا مِنۡ کُلِّ الثَّمَرٰتِ ۙ وَ اَصَابَہُ
الۡکِبَرُ وَ لَہٗ ذُرِّیَّۃٌ ضُعَفَآءُ ۪ۖ فَاَصَابَہَاۤ اِعۡصَارٌ فِیۡہِ نَارٌ
فَاحۡتَرَقَتۡ ؕ کَذٰلِکَ یُبَیِّنُ اللّٰہُ لَکُمُ الۡاٰیٰتِ لَعَلَّکُمۡ
تَتَفَکَّرُوۡنَ ﴿۲۶۶﴾٪
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৬৫ ও ২৬৬ নং আয়াতের
তাফসীর:
যারা মানুষকে খুশি করার জন্য, আর যারা মানুষের বাহবা ও দুনিয়া হাসিলের জন্য দান করে এবং দান করে খোঁটা ও কষ্ট দেয় তাদের বর্ণনার পর যারা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে খুশি করার জন্য দান করে তাদের সুন্দর উপমা দিচ্ছেন। যারা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য এবং নিজেদের (ঈমানকে) দৃঢ় করার জন্য তাদের মাল খরচ করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে- উর্বর জমিতে অবস্থিত একটি বাগান, তাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। ফলে তা দ্বিগুণ খাদ্যশস্য উৎপন্ন করে। যদি প্রবল বৃষ্টি নাও হয়, তবে অল্প বৃষ্টিই যথেষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ তাদের দানের প্রতিদান অবশ্যই থাকবে, কোনক্রমেই তাদের দান বৃথা যাবে না।
২৬৬ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ঐসব লোকেদের আরো একটি উপমা দিচ্ছেন যারা মানুষকে দেখানোর জন্য বা দুনিয়া হাসিলের জন্য দান করে। তাদের উপমা হল- কোন এক ব্যক্তির একটি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান যা ফলমূলে ভরপুর। এ বাগানের ওপর তার আয় নির্ভর করে। এমতাবস্তায় লোকটি বার্ধক্যে পৌঁছে গেল এবং তার অনেক ছোট ছোট সন্তানও আছে। বার্ধক্যের কারণে লোকটি বাগানের পরিচর্যা করতে পারে না। ছোট ছেলেরাও কোন সহযোগিতা করতে পারে না। হঠাৎ একদিন অগ্নিঝড় এসে বাগান নষ্ট করে দিল। এখন উক্ত নষ্ট বাগান বৃদ্ধ লোকটি আবাদ করতে পারে না এবং তার ছেলেরাও আবাদ করতে পারে না।
যারা লোক দেখানো বা দুনিয়া অর্জনের জন্য দান করেছিল কিয়ামাতের দিন তাদের আমল এরূপ নষ্ট হয়ে যাবে, আমলের প্রতিদান খুঁজে পাবে না।
ইবনু আব্বাস, উমার (রাঃ)-কে বললেন: এ আয়াতটিতে একটি আমলের উদাহরণ দেয়া হয়েছে। উমার (রাঃ) বললেন: আমলটি কি? তিনি বললেন: একজন ধনী ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা এক শয়তান প্রেরণ করলেন। তখন সে আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য কাজ করতে লাগল। ফলে তার সব আমল বরবাদ করে দিল। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫৩৮)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সহজে বুঝার জন্য উপমা প্রদান করা শরীয়ত সিদ্ধ।
২. আল্লাহ তা‘আলাকে খুশি করার জন্য দান করলে তিনি তার প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি করেদেন।
৩. আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করলে তাঁকে চেনা যায়।
যারা মানুষকে খুশি করার জন্য, আর যারা মানুষের বাহবা ও দুনিয়া হাসিলের জন্য দান করে এবং দান করে খোঁটা ও কষ্ট দেয় তাদের বর্ণনার পর যারা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে খুশি করার জন্য দান করে তাদের সুন্দর উপমা দিচ্ছেন। যারা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য এবং নিজেদের (ঈমানকে) দৃঢ় করার জন্য তাদের মাল খরচ করে তাদের উদাহরণ হচ্ছে- উর্বর জমিতে অবস্থিত একটি বাগান, তাতে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। ফলে তা দ্বিগুণ খাদ্যশস্য উৎপন্ন করে। যদি প্রবল বৃষ্টি নাও হয়, তবে অল্প বৃষ্টিই যথেষ্ট হয়ে যায়। অর্থাৎ তাদের দানের প্রতিদান অবশ্যই থাকবে, কোনক্রমেই তাদের দান বৃথা যাবে না।
২৬৬ নং আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা ঐসব লোকেদের আরো একটি উপমা দিচ্ছেন যারা মানুষকে দেখানোর জন্য বা দুনিয়া হাসিলের জন্য দান করে। তাদের উপমা হল- কোন এক ব্যক্তির একটি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান যা ফলমূলে ভরপুর। এ বাগানের ওপর তার আয় নির্ভর করে। এমতাবস্তায় লোকটি বার্ধক্যে পৌঁছে গেল এবং তার অনেক ছোট ছোট সন্তানও আছে। বার্ধক্যের কারণে লোকটি বাগানের পরিচর্যা করতে পারে না। ছোট ছেলেরাও কোন সহযোগিতা করতে পারে না। হঠাৎ একদিন অগ্নিঝড় এসে বাগান নষ্ট করে দিল। এখন উক্ত নষ্ট বাগান বৃদ্ধ লোকটি আবাদ করতে পারে না এবং তার ছেলেরাও আবাদ করতে পারে না।
যারা লোক দেখানো বা দুনিয়া অর্জনের জন্য দান করেছিল কিয়ামাতের দিন তাদের আমল এরূপ নষ্ট হয়ে যাবে, আমলের প্রতিদান খুঁজে পাবে না।
ইবনু আব্বাস, উমার (রাঃ)-কে বললেন: এ আয়াতটিতে একটি আমলের উদাহরণ দেয়া হয়েছে। উমার (রাঃ) বললেন: আমলটি কি? তিনি বললেন: একজন ধনী ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য করত। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা এক শয়তান প্রেরণ করলেন। তখন সে আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য কাজ করতে লাগল। ফলে তার সব আমল বরবাদ করে দিল। (সহীহ বুখারী হা: ৪৫৩৮)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. সহজে বুঝার জন্য উপমা প্রদান করা শরীয়ত সিদ্ধ।
২. আল্লাহ তা‘আলাকে খুশি করার জন্য দান করলে তিনি তার প্রতিদান বহুগুণে বৃদ্ধি করেদেন।
৩. আল্লাহ তা‘আলার নিদর্শন নিয়ে চিন্তা করলে তাঁকে চেনা যায়।
2:267
یٰۤاَیُّہَا الَّذِیۡنَ
اٰمَنُوۡۤا اَنۡفِقُوۡا مِنۡ طَیِّبٰتِ مَا کَسَبۡتُمۡ وَ مِمَّاۤ اَخۡرَجۡنَا
لَکُمۡ مِّنَ الۡاَرۡضِ ۪ وَ لَا تَیَمَّمُوا الۡخَبِیۡثَ مِنۡہُ تُنۡفِقُوۡنَ وَ
لَسۡتُمۡ بِاٰخِذِیۡہِ اِلَّاۤ اَنۡ تُغۡمِضُوۡا فِیۡہِ ؕ وَ اعۡلَمُوۡۤا اَنَّ
اللّٰہَ غَنِیٌّ حَمِیۡدٌ ﴿۲۶۷﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৬৭ থেকে ২৬৯ নং
আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
বারা বিন আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: এ আয়াতটি আমাদের আনসারদের ব্যাপারে নাযিল হয়। আমরা ছিলাম খেজুরের মালিক। যার যেমন সাধ্য ছিল সে অনুযায়ী কম-বেশি দান করার জন্য নিয়ে আসত। কিছু মানুষ ছিল যাদের কল্যাণমূলক কাজে কোন উৎসাহ ছিল না। তাই তারা খারাপ ও নিম্নমানের খেজুর নিয়ে এসে মাসজিদে নাববীর খুঁটির সাথে ঝুলিয়ে দিত। ফলে
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا..... مِنْهُ وَفَضْلًا وَاللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ)
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে পবিত্র জিনিস দান কর’নাযিল হয়। (সহীহ, তিরমিযী হা: ২৯৮৭) এ আয়াতের শানে নুযুলের ব্যাপারে এছাড়া আরো বর্ণনা পাওয়া যায়। (লুবাবুন নুকূল, পৃঃ ৫৭)
দান-সদাকাহ আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবূল হওয়ার জন্য যেমন শর্ত হল দান-সদাকাহ করার পর খোঁটা বা কষ্ট দেয়া যাবে না, তেমনি আরো দু’টি শর্ত রয়েছে: (১) হালাল ও পবিত্র উপার্জন হতে দান করতে হবে। হালাল উপার্জন ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে হতে পারে অথবা কায়িম শ্রম ও চাকুরীর মাধ্যমেও হতে পারে। সেদিকেই ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন ‘তোমরা যা উপার্জন করেছ।’আবার জমি থেকে উৎপাদিত পবিত্র ফসল হতেও দান করা যাবে। সেদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন ‘আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে’। হারাম পন্থায় উপার্জন করে দান-সদাকাহ করলে, হজ্জ করলে কোন উপকারে আসবে না।
(২) যে দান-সদাকাহ করবে তাকেও সদুদ্দেশ্য প্রণোদিত হতে হবে। কোন খারাপ নিয়তে কিংবা নাম-যশ অর্জনের উদ্দেশ্যে দান-সদাকাহ করলে তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবুল হবে না। এ ব্যক্তি ঐ অজ্ঞ কৃষক সদৃশ, যে বীজকে অনুর্বর মাটিতে বপন করে, ফলে তা নষ্ট হয়ে যায়।
(أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْأَرْضِ)
‘আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি’অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা জমিন থেকে যা উৎপন্ন করেন যেমন: শস্য, গুপ্তধন ইত্যাদি। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: বৃষ্টি ও প্রবাহিত পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা সেচ ব্যতীত উর্বরতার ফলে উৎপন্ন ফসলের ওপর উশর (দশ ভাগের একভাগ) ওয়াজিব। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের ওপর অর্ধ উশর (বিশ ভাগের এক ভাগ) ওয়াজিব। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৮৩)الْخَبِيْثُ বা ‘মন্দ জিনিস’এর দু’টি অর্থ হতে পারে:
(১) এমন জিনিস যা অবৈধ পথে উপার্জন করা হয়েছে। তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবূল হবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:إِنَّ اللّٰهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া গ্রহণ করেন না।
(২) খারাপ ও অতি নিম্নমানের জিনিস যা তাকে দেয়া হলে সে নিজেও নেবে না। এমন নষ্ট খারাপ জিনিস যা নিজে পছন্দ করে না তা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যয় করলে আল্লাহ তা‘আলাও গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّي تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ ﹽ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللّٰهَ بِهِ عَلِيمٌ)
“তোমরা নেকী পাবে না যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে খরচ কর। আর তোমরা যা কিছুই দান কর আল্লাহ তা জানেন।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৯২)
এসব খারাপ জিনিস তোমরাও তো চক্ষু বন্ধ না করে গ্রহণ করতে চাও না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّي يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ
তোমাদের কেউ ততক্ষণ পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের জন্য যা পছন্দ করো তা অপর ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করো। (সহীহ বুখারী হা: ১৩)
আল্লাহ তা‘আলা এসব দান-সদাকাহ থেকে অনেক বড়, অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ তা‘আলার এসব নির্দেশ শুধু পরীক্ষা করার জন্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَنْ يَنَالَ اللّٰهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَي مِنْكُمْ)
“আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাক্ওয়া।”(সূরা হাজ্জ ২২:৩৭)
পরবর্তী আয়াতে শয়তানের কুমন্ত্রণার কথা বলা হয়েছে। সৎ পথে ব্যয় করতে চাইলে শয়তান নিঃস্ব ও দরিদ্র হওয়ার ভয় দেখায়। পক্ষান্তরে অন্যায় অশ্লীল বেহায়াপনাপূর্ণ কাজে উৎসাহ দেয় এবং এমনভাবে চাকচিক্য করে তুলে ধরে যে, মানুষ তাতে ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করে না।
মহান আল্লাহ তা‘আলা তার ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন। যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে ফেরেশতা তাদের জন্য দু‘আ করে বলে, হে আল্লাহ! তোমার পথে যারা ব্যয় করে তুমি তাদের মাল আরো বৃদ্ধি করে দাও। আর যারা ব্যয় করে না তাদের মাল ধ্বংস করে দাও। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৪২)
(وَمَنْ یُّؤْتَ الْحِکْمَةَ)
‘আর যাকে হিকমত দান করা হয়’হিকমাতের অর্থ কী তা অনেকে অনেক প্রকারে ব্যাখ্যা করেছেন। কেউ বলেছেন: কুরআন; কেউ বলেছেন, নাসেখ, মানসূখ, হালাল, হারাম ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান। কেউ বলেছেন, কুরআন ও তার বুঝ। কেউ বলেছেন, কথায় ও কাজে সঠিকতা। কেউ বলেছেন, শরীয়তের রহস্য জানা ও বুঝা এবং কুরআন ও সুন্নাহ হিফজ করা ইত্যাদি। তবে মূল কথা হলো হিকমাতের মধ্যে সবকিছু শামিল।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: দু’ব্যক্তির সাথে ঈর্ষা করা বৈধ: ১. যাকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পদ দান করেছেন। আর সে তা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে। ২. যাকে আল্লাহ তা‘আলা হিকমত শিক্ষা দিয়েছেন সে তা দ্বারা মানুষের মাঝে ফায়সালা করে এবং মানুষকে শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী হা: ৭৩)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নিয়্যত খালেস রেখে আল্লাহ তা‘আলার পথে কেবল হালাল ও উত্তম জিনিস দান করতে হবে। হারাম ও নষ্ট বস্তু দান করে নেকীর আশা করা যায় না।
২. নিজের জন্য যা পছন্দ করি না তা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করলে কবুল হবে না।
৩. শয়তান সর্বদা মানুষকে খারাপ কাজে উৎসাহ দেয় আর দরিদ্রতার ভয় দেখায়।
৪. মানুষ যতই সম্পদশালী হোক সবচেয়ে বড় সম্পদ হল দীনের জ্ঞান, সকল সম্পদের ওপর জ্ঞানের মর্যাদা অনেক বেশি।
৫. আল্লাহ তা‘আলার ডাকে সাড়া দান ও প্রদর্শিত পথে আমল করা প্রশংসনীয় কাজ।
শানে নুযূল:
বারা বিন আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: এ আয়াতটি আমাদের আনসারদের ব্যাপারে নাযিল হয়। আমরা ছিলাম খেজুরের মালিক। যার যেমন সাধ্য ছিল সে অনুযায়ী কম-বেশি দান করার জন্য নিয়ে আসত। কিছু মানুষ ছিল যাদের কল্যাণমূলক কাজে কোন উৎসাহ ছিল না। তাই তারা খারাপ ও নিম্নমানের খেজুর নিয়ে এসে মাসজিদে নাববীর খুঁটির সাথে ঝুলিয়ে দিত। ফলে
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا..... مِنْهُ وَفَضْلًا وَاللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ)
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে পবিত্র জিনিস দান কর’নাযিল হয়। (সহীহ, তিরমিযী হা: ২৯৮৭) এ আয়াতের শানে নুযুলের ব্যাপারে এছাড়া আরো বর্ণনা পাওয়া যায়। (লুবাবুন নুকূল, পৃঃ ৫৭)
দান-সদাকাহ আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবূল হওয়ার জন্য যেমন শর্ত হল দান-সদাকাহ করার পর খোঁটা বা কষ্ট দেয়া যাবে না, তেমনি আরো দু’টি শর্ত রয়েছে: (১) হালাল ও পবিত্র উপার্জন হতে দান করতে হবে। হালাল উপার্জন ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে হতে পারে অথবা কায়িম শ্রম ও চাকুরীর মাধ্যমেও হতে পারে। সেদিকেই ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন ‘তোমরা যা উপার্জন করেছ।’আবার জমি থেকে উৎপাদিত পবিত্র ফসল হতেও দান করা যাবে। সেদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন ‘আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে’। হারাম পন্থায় উপার্জন করে দান-সদাকাহ করলে, হজ্জ করলে কোন উপকারে আসবে না।
(২) যে দান-সদাকাহ করবে তাকেও সদুদ্দেশ্য প্রণোদিত হতে হবে। কোন খারাপ নিয়তে কিংবা নাম-যশ অর্জনের উদ্দেশ্যে দান-সদাকাহ করলে তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবুল হবে না। এ ব্যক্তি ঐ অজ্ঞ কৃষক সদৃশ, যে বীজকে অনুর্বর মাটিতে বপন করে, ফলে তা নষ্ট হয়ে যায়।
(أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْأَرْضِ)
‘আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি’অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা জমিন থেকে যা উৎপন্ন করেন যেমন: শস্য, গুপ্তধন ইত্যাদি। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: বৃষ্টি ও প্রবাহিত পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা সেচ ব্যতীত উর্বরতার ফলে উৎপন্ন ফসলের ওপর উশর (দশ ভাগের একভাগ) ওয়াজিব। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের ওপর অর্ধ উশর (বিশ ভাগের এক ভাগ) ওয়াজিব। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৮৩)الْخَبِيْثُ বা ‘মন্দ জিনিস’এর দু’টি অর্থ হতে পারে:
(১) এমন জিনিস যা অবৈধ পথে উপার্জন করা হয়েছে। তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবূল হবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:إِنَّ اللّٰهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া গ্রহণ করেন না।
(২) খারাপ ও অতি নিম্নমানের জিনিস যা তাকে দেয়া হলে সে নিজেও নেবে না। এমন নষ্ট খারাপ জিনিস যা নিজে পছন্দ করে না তা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যয় করলে আল্লাহ তা‘আলাও গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّي تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ ﹽ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللّٰهَ بِهِ عَلِيمٌ)
“তোমরা নেকী পাবে না যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে খরচ কর। আর তোমরা যা কিছুই দান কর আল্লাহ তা জানেন।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৯২)
এসব খারাপ জিনিস তোমরাও তো চক্ষু বন্ধ না করে গ্রহণ করতে চাও না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّي يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ
তোমাদের কেউ ততক্ষণ পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের জন্য যা পছন্দ করো তা অপর ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করো। (সহীহ বুখারী হা: ১৩)
আল্লাহ তা‘আলা এসব দান-সদাকাহ থেকে অনেক বড়, অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ তা‘আলার এসব নির্দেশ শুধু পরীক্ষা করার জন্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَنْ يَنَالَ اللّٰهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَي مِنْكُمْ)
“আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাক্ওয়া।”(সূরা হাজ্জ ২২:৩৭)
পরবর্তী আয়াতে শয়তানের কুমন্ত্রণার কথা বলা হয়েছে। সৎ পথে ব্যয় করতে চাইলে শয়তান নিঃস্ব ও দরিদ্র হওয়ার ভয় দেখায়। পক্ষান্তরে অন্যায় অশ্লীল বেহায়াপনাপূর্ণ কাজে উৎসাহ দেয় এবং এমনভাবে চাকচিক্য করে তুলে ধরে যে, মানুষ তাতে ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করে না।
মহান আল্লাহ তা‘আলা তার ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন। যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে ফেরেশতা তাদের জন্য দু‘আ করে বলে, হে আল্লাহ! তোমার পথে যারা ব্যয় করে তুমি তাদের মাল আরো বৃদ্ধি করে দাও। আর যারা ব্যয় করে না তাদের মাল ধ্বংস করে দাও। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৪২)
(وَمَنْ یُّؤْتَ الْحِکْمَةَ)
‘আর যাকে হিকমত দান করা হয়’হিকমাতের অর্থ কী তা অনেকে অনেক প্রকারে ব্যাখ্যা করেছেন। কেউ বলেছেন: কুরআন; কেউ বলেছেন, নাসেখ, মানসূখ, হালাল, হারাম ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান। কেউ বলেছেন, কুরআন ও তার বুঝ। কেউ বলেছেন, কথায় ও কাজে সঠিকতা। কেউ বলেছেন, শরীয়তের রহস্য জানা ও বুঝা এবং কুরআন ও সুন্নাহ হিফজ করা ইত্যাদি। তবে মূল কথা হলো হিকমাতের মধ্যে সবকিছু শামিল।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: দু’ব্যক্তির সাথে ঈর্ষা করা বৈধ: ১. যাকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পদ দান করেছেন। আর সে তা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে। ২. যাকে আল্লাহ তা‘আলা হিকমত শিক্ষা দিয়েছেন সে তা দ্বারা মানুষের মাঝে ফায়সালা করে এবং মানুষকে শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী হা: ৭৩)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নিয়্যত খালেস রেখে আল্লাহ তা‘আলার পথে কেবল হালাল ও উত্তম জিনিস দান করতে হবে। হারাম ও নষ্ট বস্তু দান করে নেকীর আশা করা যায় না।
২. নিজের জন্য যা পছন্দ করি না তা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করলে কবুল হবে না।
৩. শয়তান সর্বদা মানুষকে খারাপ কাজে উৎসাহ দেয় আর দরিদ্রতার ভয় দেখায়।
৪. মানুষ যতই সম্পদশালী হোক সবচেয়ে বড় সম্পদ হল দীনের জ্ঞান, সকল সম্পদের ওপর জ্ঞানের মর্যাদা অনেক বেশি।
৫. আল্লাহ তা‘আলার ডাকে সাড়া দান ও প্রদর্শিত পথে আমল করা প্রশংসনীয় কাজ।
2:268
اَلشَّیۡطٰنُ یَعِدُکُمُ
الۡفَقۡرَ وَ یَاۡمُرُکُمۡ بِالۡفَحۡشَآءِ ۚ وَ اللّٰہُ یَعِدُکُمۡ مَّغۡفِرَۃً
مِّنۡہُ وَ فَضۡلًا ؕ وَ اللّٰہُ وَاسِعٌ عَلِیۡمٌ ﴿۲۶۸﴾ۖۙ
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৬৭ থেকে ২৬৯ নং
আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
বারা বিন আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: এ আয়াতটি আমাদের আনসারদের ব্যাপারে নাযিল হয়। আমরা ছিলাম খেজুরের মালিক। যার যেমন সাধ্য ছিল সে অনুযায়ী কম-বেশি দান করার জন্য নিয়ে আসত। কিছু মানুষ ছিল যাদের কল্যাণমূলক কাজে কোন উৎসাহ ছিল না। তাই তারা খারাপ ও নিম্নমানের খেজুর নিয়ে এসে মাসজিদে নাববীর খুঁটির সাথে ঝুলিয়ে দিত। ফলে
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا..... مِنْهُ وَفَضْلًا وَاللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ)
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে পবিত্র জিনিস দান কর’নাযিল হয়। (সহীহ, তিরমিযী হা: ২৯৮৭) এ আয়াতের শানে নুযুলের ব্যাপারে এছাড়া আরো বর্ণনা পাওয়া যায়। (লুবাবুন নুকূল, পৃঃ ৫৭)
দান-সদাকাহ আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবূল হওয়ার জন্য যেমন শর্ত হল দান-সদাকাহ করার পর খোঁটা বা কষ্ট দেয়া যাবে না, তেমনি আরো দু’টি শর্ত রয়েছে: (১) হালাল ও পবিত্র উপার্জন হতে দান করতে হবে। হালাল উপার্জন ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে হতে পারে অথবা কায়িম শ্রম ও চাকুরীর মাধ্যমেও হতে পারে। সেদিকেই ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন ‘তোমরা যা উপার্জন করেছ।’আবার জমি থেকে উৎপাদিত পবিত্র ফসল হতেও দান করা যাবে। সেদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন ‘আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে’। হারাম পন্থায় উপার্জন করে দান-সদাকাহ করলে, হজ্জ করলে কোন উপকারে আসবে না।
(২) যে দান-সদাকাহ করবে তাকেও সদুদ্দেশ্য প্রণোদিত হতে হবে। কোন খারাপ নিয়তে কিংবা নাম-যশ অর্জনের উদ্দেশ্যে দান-সদাকাহ করলে তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবুল হবে না। এ ব্যক্তি ঐ অজ্ঞ কৃষক সদৃশ, যে বীজকে অনুর্বর মাটিতে বপন করে, ফলে তা নষ্ট হয়ে যায়।
(أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْأَرْضِ)
‘আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি’অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা জমিন থেকে যা উৎপন্ন করেন যেমন: শস্য, গুপ্তধন ইত্যাদি। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: বৃষ্টি ও প্রবাহিত পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা সেচ ব্যতীত উর্বরতার ফলে উৎপন্ন ফসলের ওপর উশর (দশ ভাগের একভাগ) ওয়াজিব। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের ওপর অর্ধ উশর (বিশ ভাগের এক ভাগ) ওয়াজিব। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৮৩)الْخَبِيْثُ বা ‘মন্দ জিনিস’এর দু’টি অর্থ হতে পারে:
(১) এমন জিনিস যা অবৈধ পথে উপার্জন করা হয়েছে। তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবূল হবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:إِنَّ اللّٰهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া গ্রহণ করেন না।
(২) খারাপ ও অতি নিম্নমানের জিনিস যা তাকে দেয়া হলে সে নিজেও নেবে না। এমন নষ্ট খারাপ জিনিস যা নিজে পছন্দ করে না তা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যয় করলে আল্লাহ তা‘আলাও গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّي تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ ﹽ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللّٰهَ بِهِ عَلِيمٌ)
“তোমরা নেকী পাবে না যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে খরচ কর। আর তোমরা যা কিছুই দান কর আল্লাহ তা জানেন।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৯২)
এসব খারাপ জিনিস তোমরাও তো চক্ষু বন্ধ না করে গ্রহণ করতে চাও না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّي يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ
তোমাদের কেউ ততক্ষণ পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের জন্য যা পছন্দ করো তা অপর ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করো। (সহীহ বুখারী হা: ১৩)
আল্লাহ তা‘আলা এসব দান-সদাকাহ থেকে অনেক বড়, অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ তা‘আলার এসব নির্দেশ শুধু পরীক্ষা করার জন্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَنْ يَنَالَ اللّٰهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَي مِنْكُمْ)
“আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাক্ওয়া।”(সূরা হাজ্জ ২২:৩৭)
পরবর্তী আয়াতে শয়তানের কুমন্ত্রণার কথা বলা হয়েছে। সৎ পথে ব্যয় করতে চাইলে শয়তান নিঃস্ব ও দরিদ্র হওয়ার ভয় দেখায়। পক্ষান্তরে অন্যায় অশ্লীল বেহায়াপনাপূর্ণ কাজে উৎসাহ দেয় এবং এমনভাবে চাকচিক্য করে তুলে ধরে যে, মানুষ তাতে ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করে না।
মহান আল্লাহ তা‘আলা তার ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন। যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে ফেরেশতা তাদের জন্য দু‘আ করে বলে, হে আল্লাহ! তোমার পথে যারা ব্যয় করে তুমি তাদের মাল আরো বৃদ্ধি করে দাও। আর যারা ব্যয় করে না তাদের মাল ধ্বংস করে দাও। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৪২)
(وَمَنْ یُّؤْتَ الْحِکْمَةَ)
‘আর যাকে হিকমত দান করা হয়’হিকমাতের অর্থ কী তা অনেকে অনেক প্রকারে ব্যাখ্যা করেছেন। কেউ বলেছেন: কুরআন; কেউ বলেছেন, নাসেখ, মানসূখ, হালাল, হারাম ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান। কেউ বলেছেন, কুরআন ও তার বুঝ। কেউ বলেছেন, কথায় ও কাজে সঠিকতা। কেউ বলেছেন, শরীয়তের রহস্য জানা ও বুঝা এবং কুরআন ও সুন্নাহ হিফজ করা ইত্যাদি। তবে মূল কথা হলো হিকমাতের মধ্যে সবকিছু শামিল।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: দু’ব্যক্তির সাথে ঈর্ষা করা বৈধ: ১. যাকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পদ দান করেছেন। আর সে তা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে। ২. যাকে আল্লাহ তা‘আলা হিকমত শিক্ষা দিয়েছেন সে তা দ্বারা মানুষের মাঝে ফায়সালা করে এবং মানুষকে শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী হা: ৭৩)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নিয়্যত খালেস রেখে আল্লাহ তা‘আলার পথে কেবল হালাল ও উত্তম জিনিস দান করতে হবে। হারাম ও নষ্ট বস্তু দান করে নেকীর আশা করা যায় না।
২. নিজের জন্য যা পছন্দ করি না তা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করলে কবুল হবে না।
৩. শয়তান সর্বদা মানুষকে খারাপ কাজে উৎসাহ দেয় আর দরিদ্রতার ভয় দেখায়।
৪. মানুষ যতই সম্পদশালী হোক সবচেয়ে বড় সম্পদ হল দীনের জ্ঞান, সকল সম্পদের ওপর জ্ঞানের মর্যাদা অনেক বেশি।
৫. আল্লাহ তা‘আলার ডাকে সাড়া দান ও প্রদর্শিত পথে আমল করা প্রশংসনীয় কাজ।
শানে নুযূল:
বারা বিন আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: এ আয়াতটি আমাদের আনসারদের ব্যাপারে নাযিল হয়। আমরা ছিলাম খেজুরের মালিক। যার যেমন সাধ্য ছিল সে অনুযায়ী কম-বেশি দান করার জন্য নিয়ে আসত। কিছু মানুষ ছিল যাদের কল্যাণমূলক কাজে কোন উৎসাহ ছিল না। তাই তারা খারাপ ও নিম্নমানের খেজুর নিয়ে এসে মাসজিদে নাববীর খুঁটির সাথে ঝুলিয়ে দিত। ফলে
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا..... مِنْهُ وَفَضْلًا وَاللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ)
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে পবিত্র জিনিস দান কর’নাযিল হয়। (সহীহ, তিরমিযী হা: ২৯৮৭) এ আয়াতের শানে নুযুলের ব্যাপারে এছাড়া আরো বর্ণনা পাওয়া যায়। (লুবাবুন নুকূল, পৃঃ ৫৭)
দান-সদাকাহ আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবূল হওয়ার জন্য যেমন শর্ত হল দান-সদাকাহ করার পর খোঁটা বা কষ্ট দেয়া যাবে না, তেমনি আরো দু’টি শর্ত রয়েছে: (১) হালাল ও পবিত্র উপার্জন হতে দান করতে হবে। হালাল উপার্জন ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে হতে পারে অথবা কায়িম শ্রম ও চাকুরীর মাধ্যমেও হতে পারে। সেদিকেই ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন ‘তোমরা যা উপার্জন করেছ।’আবার জমি থেকে উৎপাদিত পবিত্র ফসল হতেও দান করা যাবে। সেদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন ‘আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে’। হারাম পন্থায় উপার্জন করে দান-সদাকাহ করলে, হজ্জ করলে কোন উপকারে আসবে না।
(২) যে দান-সদাকাহ করবে তাকেও সদুদ্দেশ্য প্রণোদিত হতে হবে। কোন খারাপ নিয়তে কিংবা নাম-যশ অর্জনের উদ্দেশ্যে দান-সদাকাহ করলে তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবুল হবে না। এ ব্যক্তি ঐ অজ্ঞ কৃষক সদৃশ, যে বীজকে অনুর্বর মাটিতে বপন করে, ফলে তা নষ্ট হয়ে যায়।
(أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْأَرْضِ)
‘আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি’অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা জমিন থেকে যা উৎপন্ন করেন যেমন: শস্য, গুপ্তধন ইত্যাদি। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: বৃষ্টি ও প্রবাহিত পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা সেচ ব্যতীত উর্বরতার ফলে উৎপন্ন ফসলের ওপর উশর (দশ ভাগের একভাগ) ওয়াজিব। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের ওপর অর্ধ উশর (বিশ ভাগের এক ভাগ) ওয়াজিব। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৮৩)الْخَبِيْثُ বা ‘মন্দ জিনিস’এর দু’টি অর্থ হতে পারে:
(১) এমন জিনিস যা অবৈধ পথে উপার্জন করা হয়েছে। তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবূল হবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:إِنَّ اللّٰهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া গ্রহণ করেন না।
(২) খারাপ ও অতি নিম্নমানের জিনিস যা তাকে দেয়া হলে সে নিজেও নেবে না। এমন নষ্ট খারাপ জিনিস যা নিজে পছন্দ করে না তা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যয় করলে আল্লাহ তা‘আলাও গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّي تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ ﹽ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللّٰهَ بِهِ عَلِيمٌ)
“তোমরা নেকী পাবে না যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে খরচ কর। আর তোমরা যা কিছুই দান কর আল্লাহ তা জানেন।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৯২)
এসব খারাপ জিনিস তোমরাও তো চক্ষু বন্ধ না করে গ্রহণ করতে চাও না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّي يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ
তোমাদের কেউ ততক্ষণ পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের জন্য যা পছন্দ করো তা অপর ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করো। (সহীহ বুখারী হা: ১৩)
আল্লাহ তা‘আলা এসব দান-সদাকাহ থেকে অনেক বড়, অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ তা‘আলার এসব নির্দেশ শুধু পরীক্ষা করার জন্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَنْ يَنَالَ اللّٰهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَي مِنْكُمْ)
“আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাক্ওয়া।”(সূরা হাজ্জ ২২:৩৭)
পরবর্তী আয়াতে শয়তানের কুমন্ত্রণার কথা বলা হয়েছে। সৎ পথে ব্যয় করতে চাইলে শয়তান নিঃস্ব ও দরিদ্র হওয়ার ভয় দেখায়। পক্ষান্তরে অন্যায় অশ্লীল বেহায়াপনাপূর্ণ কাজে উৎসাহ দেয় এবং এমনভাবে চাকচিক্য করে তুলে ধরে যে, মানুষ তাতে ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করে না।
মহান আল্লাহ তা‘আলা তার ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন। যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে ফেরেশতা তাদের জন্য দু‘আ করে বলে, হে আল্লাহ! তোমার পথে যারা ব্যয় করে তুমি তাদের মাল আরো বৃদ্ধি করে দাও। আর যারা ব্যয় করে না তাদের মাল ধ্বংস করে দাও। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৪২)
(وَمَنْ یُّؤْتَ الْحِکْمَةَ)
‘আর যাকে হিকমত দান করা হয়’হিকমাতের অর্থ কী তা অনেকে অনেক প্রকারে ব্যাখ্যা করেছেন। কেউ বলেছেন: কুরআন; কেউ বলেছেন, নাসেখ, মানসূখ, হালাল, হারাম ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান। কেউ বলেছেন, কুরআন ও তার বুঝ। কেউ বলেছেন, কথায় ও কাজে সঠিকতা। কেউ বলেছেন, শরীয়তের রহস্য জানা ও বুঝা এবং কুরআন ও সুন্নাহ হিফজ করা ইত্যাদি। তবে মূল কথা হলো হিকমাতের মধ্যে সবকিছু শামিল।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: দু’ব্যক্তির সাথে ঈর্ষা করা বৈধ: ১. যাকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পদ দান করেছেন। আর সে তা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে। ২. যাকে আল্লাহ তা‘আলা হিকমত শিক্ষা দিয়েছেন সে তা দ্বারা মানুষের মাঝে ফায়সালা করে এবং মানুষকে শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী হা: ৭৩)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নিয়্যত খালেস রেখে আল্লাহ তা‘আলার পথে কেবল হালাল ও উত্তম জিনিস দান করতে হবে। হারাম ও নষ্ট বস্তু দান করে নেকীর আশা করা যায় না।
২. নিজের জন্য যা পছন্দ করি না তা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করলে কবুল হবে না।
৩. শয়তান সর্বদা মানুষকে খারাপ কাজে উৎসাহ দেয় আর দরিদ্রতার ভয় দেখায়।
৪. মানুষ যতই সম্পদশালী হোক সবচেয়ে বড় সম্পদ হল দীনের জ্ঞান, সকল সম্পদের ওপর জ্ঞানের মর্যাদা অনেক বেশি।
৫. আল্লাহ তা‘আলার ডাকে সাড়া দান ও প্রদর্শিত পথে আমল করা প্রশংসনীয় কাজ।
2:269
یُّؤۡتِی الۡحِکۡمَۃَ
مَنۡ یَّشَآءُ ۚ وَ مَنۡ یُّؤۡتَ الۡحِکۡمَۃَ فَقَدۡ اُوۡتِیَ خَیۡرًا کَثِیۡرًا
ؕ وَ مَا یَذَّکَّرُ اِلَّاۤ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ ﴿۲۶۹﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৬৭ থেকে ২৬৯ নং
আয়াতের তাফসীর:
শানে নুযূল:
বারা বিন আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: এ আয়াতটি আমাদের আনসারদের ব্যাপারে নাযিল হয়। আমরা ছিলাম খেজুরের মালিক। যার যেমন সাধ্য ছিল সে অনুযায়ী কম-বেশি দান করার জন্য নিয়ে আসত। কিছু মানুষ ছিল যাদের কল্যাণমূলক কাজে কোন উৎসাহ ছিল না। তাই তারা খারাপ ও নিম্নমানের খেজুর নিয়ে এসে মাসজিদে নাববীর খুঁটির সাথে ঝুলিয়ে দিত। ফলে
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا..... مِنْهُ وَفَضْلًا وَاللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ)
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে পবিত্র জিনিস দান কর’নাযিল হয়। (সহীহ, তিরমিযী হা: ২৯৮৭) এ আয়াতের শানে নুযুলের ব্যাপারে এছাড়া আরো বর্ণনা পাওয়া যায়। (লুবাবুন নুকূল, পৃঃ ৫৭)
দান-সদাকাহ আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবূল হওয়ার জন্য যেমন শর্ত হল দান-সদাকাহ করার পর খোঁটা বা কষ্ট দেয়া যাবে না, তেমনি আরো দু’টি শর্ত রয়েছে: (১) হালাল ও পবিত্র উপার্জন হতে দান করতে হবে। হালাল উপার্জন ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে হতে পারে অথবা কায়িম শ্রম ও চাকুরীর মাধ্যমেও হতে পারে। সেদিকেই ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন ‘তোমরা যা উপার্জন করেছ।’আবার জমি থেকে উৎপাদিত পবিত্র ফসল হতেও দান করা যাবে। সেদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন ‘আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে’। হারাম পন্থায় উপার্জন করে দান-সদাকাহ করলে, হজ্জ করলে কোন উপকারে আসবে না।
(২) যে দান-সদাকাহ করবে তাকেও সদুদ্দেশ্য প্রণোদিত হতে হবে। কোন খারাপ নিয়তে কিংবা নাম-যশ অর্জনের উদ্দেশ্যে দান-সদাকাহ করলে তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবুল হবে না। এ ব্যক্তি ঐ অজ্ঞ কৃষক সদৃশ, যে বীজকে অনুর্বর মাটিতে বপন করে, ফলে তা নষ্ট হয়ে যায়।
(أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْأَرْضِ)
‘আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি’অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা জমিন থেকে যা উৎপন্ন করেন যেমন: শস্য, গুপ্তধন ইত্যাদি। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: বৃষ্টি ও প্রবাহিত পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা সেচ ব্যতীত উর্বরতার ফলে উৎপন্ন ফসলের ওপর উশর (দশ ভাগের একভাগ) ওয়াজিব। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের ওপর অর্ধ উশর (বিশ ভাগের এক ভাগ) ওয়াজিব। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৮৩)الْخَبِيْثُ বা ‘মন্দ জিনিস’এর দু’টি অর্থ হতে পারে:
(১) এমন জিনিস যা অবৈধ পথে উপার্জন করা হয়েছে। তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবূল হবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:إِنَّ اللّٰهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া গ্রহণ করেন না।
(২) খারাপ ও অতি নিম্নমানের জিনিস যা তাকে দেয়া হলে সে নিজেও নেবে না। এমন নষ্ট খারাপ জিনিস যা নিজে পছন্দ করে না তা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যয় করলে আল্লাহ তা‘আলাও গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّي تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ ﹽ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللّٰهَ بِهِ عَلِيمٌ)
“তোমরা নেকী পাবে না যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে খরচ কর। আর তোমরা যা কিছুই দান কর আল্লাহ তা জানেন।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৯২)
এসব খারাপ জিনিস তোমরাও তো চক্ষু বন্ধ না করে গ্রহণ করতে চাও না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّي يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ
তোমাদের কেউ ততক্ষণ পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের জন্য যা পছন্দ করো তা অপর ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করো। (সহীহ বুখারী হা: ১৩)
আল্লাহ তা‘আলা এসব দান-সদাকাহ থেকে অনেক বড়, অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ তা‘আলার এসব নির্দেশ শুধু পরীক্ষা করার জন্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَنْ يَنَالَ اللّٰهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَي مِنْكُمْ)
“আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাক্ওয়া।”(সূরা হাজ্জ ২২:৩৭)
পরবর্তী আয়াতে শয়তানের কুমন্ত্রণার কথা বলা হয়েছে। সৎ পথে ব্যয় করতে চাইলে শয়তান নিঃস্ব ও দরিদ্র হওয়ার ভয় দেখায়। পক্ষান্তরে অন্যায় অশ্লীল বেহায়াপনাপূর্ণ কাজে উৎসাহ দেয় এবং এমনভাবে চাকচিক্য করে তুলে ধরে যে, মানুষ তাতে ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করে না।
মহান আল্লাহ তা‘আলা তার ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন। যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে ফেরেশতা তাদের জন্য দু‘আ করে বলে, হে আল্লাহ! তোমার পথে যারা ব্যয় করে তুমি তাদের মাল আরো বৃদ্ধি করে দাও। আর যারা ব্যয় করে না তাদের মাল ধ্বংস করে দাও। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৪২)
(وَمَنْ یُّؤْتَ الْحِکْمَةَ)
‘আর যাকে হিকমত দান করা হয়’হিকমাতের অর্থ কী তা অনেকে অনেক প্রকারে ব্যাখ্যা করেছেন। কেউ বলেছেন: কুরআন; কেউ বলেছেন, নাসেখ, মানসূখ, হালাল, হারাম ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান। কেউ বলেছেন, কুরআন ও তার বুঝ। কেউ বলেছেন, কথায় ও কাজে সঠিকতা। কেউ বলেছেন, শরীয়তের রহস্য জানা ও বুঝা এবং কুরআন ও সুন্নাহ হিফজ করা ইত্যাদি। তবে মূল কথা হলো হিকমাতের মধ্যে সবকিছু শামিল।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: দু’ব্যক্তির সাথে ঈর্ষা করা বৈধ: ১. যাকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পদ দান করেছেন। আর সে তা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে। ২. যাকে আল্লাহ তা‘আলা হিকমত শিক্ষা দিয়েছেন সে তা দ্বারা মানুষের মাঝে ফায়সালা করে এবং মানুষকে শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী হা: ৭৩)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নিয়্যত খালেস রেখে আল্লাহ তা‘আলার পথে কেবল হালাল ও উত্তম জিনিস দান করতে হবে। হারাম ও নষ্ট বস্তু দান করে নেকীর আশা করা যায় না।
২. নিজের জন্য যা পছন্দ করি না তা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করলে কবুল হবে না।
৩. শয়তান সর্বদা মানুষকে খারাপ কাজে উৎসাহ দেয় আর দরিদ্রতার ভয় দেখায়।
৪. মানুষ যতই সম্পদশালী হোক সবচেয়ে বড় সম্পদ হল দীনের জ্ঞান, সকল সম্পদের ওপর জ্ঞানের মর্যাদা অনেক বেশি।
৫. আল্লাহ তা‘আলার ডাকে সাড়া দান ও প্রদর্শিত পথে আমল করা প্রশংসনীয় কাজ।
শানে নুযূল:
বারা বিন আযিব (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: এ আয়াতটি আমাদের আনসারদের ব্যাপারে নাযিল হয়। আমরা ছিলাম খেজুরের মালিক। যার যেমন সাধ্য ছিল সে অনুযায়ী কম-বেশি দান করার জন্য নিয়ে আসত। কিছু মানুষ ছিল যাদের কল্যাণমূলক কাজে কোন উৎসাহ ছিল না। তাই তারা খারাপ ও নিম্নমানের খেজুর নিয়ে এসে মাসজিদে নাববীর খুঁটির সাথে ঝুলিয়ে দিত। ফলে
(يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا..... مِنْهُ وَفَضْلًا وَاللّٰهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ)
‘হে ঈমানদারগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছ এবং আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে পবিত্র জিনিস দান কর’নাযিল হয়। (সহীহ, তিরমিযী হা: ২৯৮৭) এ আয়াতের শানে নুযুলের ব্যাপারে এছাড়া আরো বর্ণনা পাওয়া যায়। (লুবাবুন নুকূল, পৃঃ ৫৭)
দান-সদাকাহ আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবূল হওয়ার জন্য যেমন শর্ত হল দান-সদাকাহ করার পর খোঁটা বা কষ্ট দেয়া যাবে না, তেমনি আরো দু’টি শর্ত রয়েছে: (১) হালাল ও পবিত্র উপার্জন হতে দান করতে হবে। হালাল উপার্জন ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে হতে পারে অথবা কায়িম শ্রম ও চাকুরীর মাধ্যমেও হতে পারে। সেদিকেই ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেন ‘তোমরা যা উপার্জন করেছ।’আবার জমি থেকে উৎপাদিত পবিত্র ফসল হতেও দান করা যাবে। সেদিকে ইঙ্গিত করে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন ‘আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি তার মধ্য হতে’। হারাম পন্থায় উপার্জন করে দান-সদাকাহ করলে, হজ্জ করলে কোন উপকারে আসবে না।
(২) যে দান-সদাকাহ করবে তাকেও সদুদ্দেশ্য প্রণোদিত হতে হবে। কোন খারাপ নিয়তে কিংবা নাম-যশ অর্জনের উদ্দেশ্যে দান-সদাকাহ করলে তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবুল হবে না। এ ব্যক্তি ঐ অজ্ঞ কৃষক সদৃশ, যে বীজকে অনুর্বর মাটিতে বপন করে, ফলে তা নষ্ট হয়ে যায়।
(أَخْرَجْنَا لَكُمْ مِّنَ الْأَرْضِ)
‘আমি জমিন থেকে যা উৎপন্ন করি’অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলা জমিন থেকে যা উৎপন্ন করেন যেমন: শস্য, গুপ্তধন ইত্যাদি। আব্দুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: বৃষ্টি ও প্রবাহিত পানি দ্বারা সিক্ত ভূমিতে উৎপাদিত ফসল বা সেচ ব্যতীত উর্বরতার ফলে উৎপন্ন ফসলের ওপর উশর (দশ ভাগের একভাগ) ওয়াজিব। আর সেচ দ্বারা উৎপাদিত ফসলের ওপর অর্ধ উশর (বিশ ভাগের এক ভাগ) ওয়াজিব। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৮৩)الْخَبِيْثُ বা ‘মন্দ জিনিস’এর দু’টি অর্থ হতে পারে:
(১) এমন জিনিস যা অবৈধ পথে উপার্জন করা হয়েছে। তা আল্লাহ তা‘আলার কাছে কবূল হবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:إِنَّ اللّٰهَ طَيِّبٌ لاَ يَقْبَلُ إِلاَّ طَيِّبًا
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র, তিনি পবিত্র ছাড়া গ্রহণ করেন না।
(২) খারাপ ও অতি নিম্নমানের জিনিস যা তাকে দেয়া হলে সে নিজেও নেবে না। এমন নষ্ট খারাপ জিনিস যা নিজে পছন্দ করে না তা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যয় করলে আল্লাহ তা‘আলাও গ্রহণ করেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّي تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ ﹽ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللّٰهَ بِهِ عَلِيمٌ)
“তোমরা নেকী পাবে না যতক্ষণ না তোমাদের প্রিয় জিনিস আল্লাহর পথে খরচ কর। আর তোমরা যা কিছুই দান কর আল্লাহ তা জানেন।”(সূরা আলি-ইমরান ৩:৯২)
এসব খারাপ জিনিস তোমরাও তো চক্ষু বন্ধ না করে গ্রহণ করতে চাও না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّي يُحِبَّ لِأَخِيهِ مَا يُحِبُّ لِنَفْسِهِ
তোমাদের কেউ ততক্ষণ পূর্ণ ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত নিজের জন্য যা পছন্দ করো তা অপর ভাইয়ের জন্যও পছন্দ করো। (সহীহ বুখারী হা: ১৩)
আল্লাহ তা‘আলা এসব দান-সদাকাহ থেকে অনেক বড়, অমুখাপেক্ষী। আল্লাহ তা‘আলার এসব নির্দেশ শুধু পরীক্ষা করার জন্য। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَنْ يَنَالَ اللّٰهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَي مِنْكُمْ)
“আল্লাহর নিকট পৌঁছায় না তাদের গোশত এবং রক্ত, বরং পৌঁছায় তোমাদের তাক্ওয়া।”(সূরা হাজ্জ ২২:৩৭)
পরবর্তী আয়াতে শয়তানের কুমন্ত্রণার কথা বলা হয়েছে। সৎ পথে ব্যয় করতে চাইলে শয়তান নিঃস্ব ও দরিদ্র হওয়ার ভয় দেখায়। পক্ষান্তরে অন্যায় অশ্লীল বেহায়াপনাপূর্ণ কাজে উৎসাহ দেয় এবং এমনভাবে চাকচিক্য করে তুলে ধরে যে, মানুষ তাতে ব্যয় করতে কুণ্ঠাবোধ করে না।
মহান আল্লাহ তা‘আলা তার ক্ষমা ও অনুগ্রহের প্রতিশ্র“তি দিচ্ছেন। যারা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে ফেরেশতা তাদের জন্য দু‘আ করে বলে, হে আল্লাহ! তোমার পথে যারা ব্যয় করে তুমি তাদের মাল আরো বৃদ্ধি করে দাও। আর যারা ব্যয় করে না তাদের মাল ধ্বংস করে দাও। (সহীহ বুখারী হা: ১৪৪২)
(وَمَنْ یُّؤْتَ الْحِکْمَةَ)
‘আর যাকে হিকমত দান করা হয়’হিকমাতের অর্থ কী তা অনেকে অনেক প্রকারে ব্যাখ্যা করেছেন। কেউ বলেছেন: কুরআন; কেউ বলেছেন, নাসেখ, মানসূখ, হালাল, হারাম ইত্যাদি সম্পর্কে জ্ঞান। কেউ বলেছেন, কুরআন ও তার বুঝ। কেউ বলেছেন, কথায় ও কাজে সঠিকতা। কেউ বলেছেন, শরীয়তের রহস্য জানা ও বুঝা এবং কুরআন ও সুন্নাহ হিফজ করা ইত্যাদি। তবে মূল কথা হলো হিকমাতের মধ্যে সবকিছু শামিল।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: দু’ব্যক্তির সাথে ঈর্ষা করা বৈধ: ১. যাকে আল্লাহ তা‘আলা সম্পদ দান করেছেন। আর সে তা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করে। ২. যাকে আল্লাহ তা‘আলা হিকমত শিক্ষা দিয়েছেন সে তা দ্বারা মানুষের মাঝে ফায়সালা করে এবং মানুষকে শিক্ষা দেয়। (সহীহ বুখারী হা: ৭৩)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নিয়্যত খালেস রেখে আল্লাহ তা‘আলার পথে কেবল হালাল ও উত্তম জিনিস দান করতে হবে। হারাম ও নষ্ট বস্তু দান করে নেকীর আশা করা যায় না।
২. নিজের জন্য যা পছন্দ করি না তা আল্লাহ তা‘আলার পথে ব্যয় করলে কবুল হবে না।
৩. শয়তান সর্বদা মানুষকে খারাপ কাজে উৎসাহ দেয় আর দরিদ্রতার ভয় দেখায়।
৪. মানুষ যতই সম্পদশালী হোক সবচেয়ে বড় সম্পদ হল দীনের জ্ঞান, সকল সম্পদের ওপর জ্ঞানের মর্যাদা অনেক বেশি।
৫. আল্লাহ তা‘আলার ডাকে সাড়া দান ও প্রদর্শিত পথে আমল করা প্রশংসনীয় কাজ।
2:270
وَ مَاۤ اَنۡفَقۡتُمۡ
مِّنۡ نَّفَقَۃٍ اَوۡ نَذَرۡتُمۡ مِّنۡ نَّذۡرٍ فَاِنَّ اللّٰہَ یَعۡلَمُہٗ ؕ وَ
مَا لِلظّٰلِمِیۡنَ مِنۡ اَنۡصَارٍ ﴿۲۷۰﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৭০ ও ২৭১ নং আয়াতের
তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে দান করার প্রতি আহ্বান করার পর সকলকে জানিয়ে দিচ্ছেন তোমরা যা দান কর বা মানত কর সব আল্লাহ তা‘আলা জানেন।
মানত হল: এ রূপ বলা, আমার অমুক কাজ হাসিল হলে বা অমুক বিপদ থেকে মুক্ত হলে এরূপ কিছু আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় দান করব। এটা পূরণ করা জরুরী। মানত একটি ইবাদত, তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে রাজি-খুশী করার জন্য হতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কাউকে খুশি করার জন্য বা অন্য কারো নামে মানত করলে তা হবে শির্কে আক্বার। আমাদের দেশে অনেক মানুষ মানত করে এভাবে যে, আমার অমুক কাজ হলে আমি অমুক মাজারে ও অমুক বাবাকে এত টাকা বা একটি খাসি বা গরু দান করব। আমি এ বিপদ থেকে মুক্তি পেলে আমার পীর সাহেবকে একটি বড় ষাঁড় দেব ইত্যাদি।
এ সবই শির্কে আকবার। অনুরূপভাবে কোন অবৈধ কাজে মানত করা যাবে না। যেমন এরূপ বলা যে, আমার এরূপ হলে চুরি করব, ডাকাতি করব, মাজারে সিজদাহ করব, দরগাহ শরীফে সিন্নি পোলাও দেব ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:لَا نَذْرَ فِي مَعْصِيَةِ اللّٰهِ
আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য কাজে কোন মানত নেই। (সহীহ মুসলিম হা: ১৬৪১)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা দান করার দু’টি পদ্ধতির কথা বলেছেন।
১. প্রকাশ্য দান: নিজে প্রকাশ্যে দান করে যদি কাউকে উৎসাহ দেয়ার উদ্দেশ্য থাকে তাহলে ভাল। আর যদি লোক দেখানোর জন্য হয় তাহলে হারাম। সেক্ষেত্রে গোপনে দান করাই শ্রেয়।
২. অপ্রকাশ্যে দান: যদি প্রকাশ্যে দান করলে মনে লোক দেখানোর ভাব চলে আসে তাহলে গোপনে দান করা শ্রেয়। অন্যথায় দু’ভাবেই দান করা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যারা কিয়ামতের দিন আরশের ছায়া তলে স্থান পাবে তাদের একশ্রেণী হল এমন লোক যাদের ডান হাত কী ব্যয় করে বাম হাত জানে না। অর্থাৎ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে না। (সহীহ বুখারী হা: ১৪২৩, ৬৬০, ২৮০৬)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:১. মানত একটি ইবাদত। তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই হতে হবে।
২. প্রকাশ্যে দান করা শ্রেয় যদি লোক দেখানোর জন্য না হয়।
৩. গোপনে দান করা শ্রেয় যদি লোক দেখানোর ভয় অন্তরে থাকে।
৪. দান-সদাকার মাধ্যমে খারাপ আমলের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে দান করার প্রতি আহ্বান করার পর সকলকে জানিয়ে দিচ্ছেন তোমরা যা দান কর বা মানত কর সব আল্লাহ তা‘আলা জানেন।
মানত হল: এ রূপ বলা, আমার অমুক কাজ হাসিল হলে বা অমুক বিপদ থেকে মুক্ত হলে এরূপ কিছু আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় দান করব। এটা পূরণ করা জরুরী। মানত একটি ইবাদত, তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে রাজি-খুশী করার জন্য হতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কাউকে খুশি করার জন্য বা অন্য কারো নামে মানত করলে তা হবে শির্কে আক্বার। আমাদের দেশে অনেক মানুষ মানত করে এভাবে যে, আমার অমুক কাজ হলে আমি অমুক মাজারে ও অমুক বাবাকে এত টাকা বা একটি খাসি বা গরু দান করব। আমি এ বিপদ থেকে মুক্তি পেলে আমার পীর সাহেবকে একটি বড় ষাঁড় দেব ইত্যাদি।
এ সবই শির্কে আকবার। অনুরূপভাবে কোন অবৈধ কাজে মানত করা যাবে না। যেমন এরূপ বলা যে, আমার এরূপ হলে চুরি করব, ডাকাতি করব, মাজারে সিজদাহ করব, দরগাহ শরীফে সিন্নি পোলাও দেব ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:لَا نَذْرَ فِي مَعْصِيَةِ اللّٰهِ
আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য কাজে কোন মানত নেই। (সহীহ মুসলিম হা: ১৬৪১)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা দান করার দু’টি পদ্ধতির কথা বলেছেন।
১. প্রকাশ্য দান: নিজে প্রকাশ্যে দান করে যদি কাউকে উৎসাহ দেয়ার উদ্দেশ্য থাকে তাহলে ভাল। আর যদি লোক দেখানোর জন্য হয় তাহলে হারাম। সেক্ষেত্রে গোপনে দান করাই শ্রেয়।
২. অপ্রকাশ্যে দান: যদি প্রকাশ্যে দান করলে মনে লোক দেখানোর ভাব চলে আসে তাহলে গোপনে দান করা শ্রেয়। অন্যথায় দু’ভাবেই দান করা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যারা কিয়ামতের দিন আরশের ছায়া তলে স্থান পাবে তাদের একশ্রেণী হল এমন লোক যাদের ডান হাত কী ব্যয় করে বাম হাত জানে না। অর্থাৎ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে না। (সহীহ বুখারী হা: ১৪২৩, ৬৬০, ২৮০৬)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:১. মানত একটি ইবাদত। তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই হতে হবে।
২. প্রকাশ্যে দান করা শ্রেয় যদি লোক দেখানোর জন্য না হয়।
৩. গোপনে দান করা শ্রেয় যদি লোক দেখানোর ভয় অন্তরে থাকে।
৪. দান-সদাকার মাধ্যমে খারাপ আমলের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
2:271
اِنۡ تُبۡدُوا
الصَّدَقٰتِ فَنِعِمَّا ہِیَ ۚ وَ اِنۡ تُخۡفُوۡہَا وَ تُؤۡتُوۡہَا الۡفُقَرَآءَ
فَہُوَ خَیۡرٌ لَّکُمۡ ؕ وَ یُکَفِّرُ عَنۡکُمۡ مِّنۡ سَیِّاٰتِکُمۡ ؕ وَ اللّٰہُ
بِمَا تَعۡمَلُوۡنَ خَبِیۡرٌ ﴿۲۷۱﴾
FATHUL MAJID
আলিফ, লা-ম, মী-ম।
FATHUL MAJID
২৭০ ও ২৭১ নং আয়াতের
তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে দান করার প্রতি আহ্বান করার পর সকলকে জানিয়ে দিচ্ছেন তোমরা যা দান কর বা মানত কর সব আল্লাহ তা‘আলা জানেন।
মানত হল: এ রূপ বলা, আমার অমুক কাজ হাসিল হলে বা অমুক বিপদ থেকে মুক্ত হলে এরূপ কিছু আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় দান করব। এটা পূরণ করা জরুরী। মানত একটি ইবাদত, তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে রাজি-খুশী করার জন্য হতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কাউকে খুশি করার জন্য বা অন্য কারো নামে মানত করলে তা হবে শির্কে আক্বার। আমাদের দেশে অনেক মানুষ মানত করে এভাবে যে, আমার অমুক কাজ হলে আমি অমুক মাজারে ও অমুক বাবাকে এত টাকা বা একটি খাসি বা গরু দান করব। আমি এ বিপদ থেকে মুক্তি পেলে আমার পীর সাহেবকে একটি বড় ষাঁড় দেব ইত্যাদি।
এ সবই শির্কে আকবার। অনুরূপভাবে কোন অবৈধ কাজে মানত করা যাবে না। যেমন এরূপ বলা যে, আমার এরূপ হলে চুরি করব, ডাকাতি করব, মাজারে সিজদাহ করব, দরগাহ শরীফে সিন্নি পোলাও দেব ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
لَا نَذْرَ فِي مَعْصِيَةِ اللّٰهِ
আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য কাজে কোন মানত নেই। (সহীহ মুসলিম হা: ১৬৪১)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা দান করার দু’টি পদ্ধতির কথা বলেছেন।
১. প্রকাশ্য দান: নিজে প্রকাশ্যে দান করে যদি কাউকে উৎসাহ দেয়ার উদ্দেশ্য থাকে তাহলে ভাল। আর যদি লোক দেখানোর জন্য হয় তাহলে হারাম। সেক্ষেত্রে গোপনে দান করাই শ্রেয়।
২. অপ্রকাশ্যে দান: যদি প্রকাশ্যে দান করলে মনে লোক দেখানোর ভাব চলে আসে তাহলে গোপনে দান করা শ্রেয়। অন্যথায় দু’ভাবেই দান করা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যারা কিয়ামতের দিন আরশের ছায়া তলে স্থান পাবে তাদের একশ্রেণী হল এমন লোক যাদের ডান হাত কী ব্যয় করে বাম হাত জানে না। অর্থাৎ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে না। (সহীহ বুখারী হা: ১৪২৩, ৬৬০, ২৮০৬)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মানত একটি ইবাদত। তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই হতে হবে।
২. প্রকাশ্যে দান করা শ্রেয় যদি লোক দেখানোর জন্য না হয়।
৩. গোপনে দান করা শ্রেয় যদি লোক দেখানোর ভয় অন্তরে থাকে।
৪. দান-সদাকার মাধ্যমে খারাপ আমলের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
আপনি চাইলে -Whatapps-Facebook-Twitter-ব্লগ- আপনার বন্ধুদের Email Address সহ অন্য Social Networking-ওয়েবসাইটে শেয়ার করতে পারেন-মানবতার মুক্তির লক্ষ্যে ইসলামের আলো ছড়িয়ে দিন। "কেউ হেদায়েতের দিকে আহবান করলে যতজন তার অনুসরণ করবে প্রত্যেকের সমান সওয়াবের অধিকারী সে হবে, তবে যারা অনুসরণ করেছে তাদের সওয়াবে কোন কমতি হবেনা" [সহীহ্ মুসলিম: ২৬৭৪]-:-admin by rasikul islam নিয়মিত আপডেট পেতে ভিজিটকরুন -এই ওয়েবসাইটে -https://sarolpoth.blogspot.com/(জানা অজানা ইসলামিক জ্ঞান পেতে runing update)< -https://rasikulindia.blogspot.com (ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে, পড়তে ও ডাউনলোড করতে পারবেন). Main Websaite- esoislamerpothe.in , comming soon my best world websaiteআল্লাহ তা‘আলা মু’মিনদেরকে দান করার প্রতি আহ্বান করার পর সকলকে জানিয়ে দিচ্ছেন তোমরা যা দান কর বা মানত কর সব আল্লাহ তা‘আলা জানেন।
মানত হল: এ রূপ বলা, আমার অমুক কাজ হাসিল হলে বা অমুক বিপদ থেকে মুক্ত হলে এরূপ কিছু আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় দান করব। এটা পূরণ করা জরুরী। মানত একটি ইবাদত, তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাকে রাজি-খুশী করার জন্য হতে হবে।
আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কাউকে খুশি করার জন্য বা অন্য কারো নামে মানত করলে তা হবে শির্কে আক্বার। আমাদের দেশে অনেক মানুষ মানত করে এভাবে যে, আমার অমুক কাজ হলে আমি অমুক মাজারে ও অমুক বাবাকে এত টাকা বা একটি খাসি বা গরু দান করব। আমি এ বিপদ থেকে মুক্তি পেলে আমার পীর সাহেবকে একটি বড় ষাঁড় দেব ইত্যাদি।
এ সবই শির্কে আকবার। অনুরূপভাবে কোন অবৈধ কাজে মানত করা যাবে না। যেমন এরূপ বলা যে, আমার এরূপ হলে চুরি করব, ডাকাতি করব, মাজারে সিজদাহ করব, দরগাহ শরীফে সিন্নি পোলাও দেব ইত্যাদি। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
لَا نَذْرَ فِي مَعْصِيَةِ اللّٰهِ
আল্লাহ তা‘আলার অবাধ্য কাজে কোন মানত নেই। (সহীহ মুসলিম হা: ১৬৪১)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা দান করার দু’টি পদ্ধতির কথা বলেছেন।
১. প্রকাশ্য দান: নিজে প্রকাশ্যে দান করে যদি কাউকে উৎসাহ দেয়ার উদ্দেশ্য থাকে তাহলে ভাল। আর যদি লোক দেখানোর জন্য হয় তাহলে হারাম। সেক্ষেত্রে গোপনে দান করাই শ্রেয়।
২. অপ্রকাশ্যে দান: যদি প্রকাশ্যে দান করলে মনে লোক দেখানোর ভাব চলে আসে তাহলে গোপনে দান করা শ্রেয়। অন্যথায় দু’ভাবেই দান করা যেতে পারে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: যারা কিয়ামতের দিন আরশের ছায়া তলে স্থান পাবে তাদের একশ্রেণী হল এমন লোক যাদের ডান হাত কী ব্যয় করে বাম হাত জানে না। অর্থাৎ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে না। (সহীহ বুখারী হা: ১৪২৩, ৬৬০, ২৮০৬)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. মানত একটি ইবাদত। তা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্যই হতে হবে।
২. প্রকাশ্যে দান করা শ্রেয় যদি লোক দেখানোর জন্য না হয়।
৩. গোপনে দান করা শ্রেয় যদি লোক দেখানোর ভয় অন্তরে থাকে।
৪. দান-সদাকার মাধ্যমে খারাপ আমলের গুনাহ মাফ হয়ে যায়।
0 Comments