দাম্পত্য জীবনের কিছু প্রশ্ন
মুফতী: শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
✔ ১. প্রশ্ন - শুনেছি যে, মঙ্গলবারে সহবাস না করা আবশ্যক,
কেননা সেদিন একটি জিনিস আগমন করে, যে
প্রত্যেক সহবাসকারীকে অভিসম্পাত করে। মনে করা হয়, এর ফলে
ভবিষ্যতে তারা ক্ষতির সম্মুখিন হবে।
উত্তর -
আল-হামদুলিল্লাহ
আল্লাহ আমাকে ও আপনাকে সত্য বুঝার তাওফিক দান
করুন। যা বললেন তা একান্তই কুসংস্কার এবং নব আবিষ্কৃত বিষয়। কুরআন ও হাদিসে এর কোন
দলিল নেই, বরং এসব হল পথভ্রষ্ট ও বিপথগামীদের প্রচারণা। যেমন তারা
বলেছে : চাদ যখন বৃশ্চিকরাশি, অথবা রশ্মির নিচে, অথবা চাদ যখন পুরোপুরি আলোকরহিত পর্যায়ে পৌঁছে, চাদের এজাতীয় ক্ষণে সহবাস করা তারা মাকরুহ বলেছে। দেখুন : রায়েদ সাবরি,
মুজামুল বিদায়ি: ৬৫৬
আল্লাহ তাআলা কিছু স্থান ও সময় ব্যতীত সব সময় ও
সকল স্থানে স্ত্রী সহবাস হালাল করেছেন, যেমন :
এক.
✔ রমযানের দিনে সহবাস করা:
আল্লাহ তাআলা বলেন :
أُحِلَّ لَكُمْ لَيْلَةَ الصِّيَامِ الرَّفَثُ إِلَى نِسَائِكُمْ هُنَّ
لِبَاسٌ لَكُمْ وَأَنْتُمْ لِبَاسٌ لَهُنَّ عَلِمَ اللَّهُ أَنَّكُمْ كُنْتُمْ
تَخْتَانُونَ أَنْفُسَكُمْ فَتَابَ عَلَيْكُمْ وَعَفَا عَنْكُمْ فَالْآَنَ
بَاشِرُوهُنَّ وَابْتَغُوا مَا كَتَبَ اللَّهُ لَكُمْ
সিয়ামের রাতে তোমাদের জন্য তোমাদের স্ত্রীদের নিকট
গমন হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের জন্য পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের জন্য পরিচ্ছদ।
আল্লাহ জেনেছেন যে, তোমরা নিজদের সাথে খিয়ানত
করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের তাওবা কবূল করেছেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন। অতএব,
এখন তোমরা তাদের সাথে মিলিত হও এবং আল্লাহ তোমাদের জন্য যা লিখে
দিয়েছেন, তা অনুসন্ধান কর। বাকারা : (১৮৭)
দুই.
✔ হায়েজ ও নিফাসের সময় সহবাস করা:
আল্লাহ তাআলা বলেন :
وَيَسْأَلُونَكَ عَنِ الْمَحِيضِ قُلْ
هُوَ أَذًى فَاعْتَزِلُوا النِّسَاءَ فِي الْمَحِيضِ وَلَا تَقْرَبُوهُنَّ حَتَّى
يَطْهُرْنَ فَإِذَا تَطَهَّرْنَ فَأْتُوهُنَّ مِنْ حَيْثُ أَمَرَكُمُ اللَّهُ
আর তারা তোমাকে ঋতুস্রাব সম্পর্কে প্রশ্ন করে। বল, তা কষ্ট। সুতরাং তোমরা ঋতুস্রাবকালে স্ত্রীদের থেকে দূরে থাক এবং তারা
পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত তাদের নিকটবর্তী হয়ো না। অতঃপর যখন তারা পবিত্র হবে তখন
তাদের নিকট আস, যেভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন। (বাকারা : ২২২)
তিন.
মসজিদে সহবাস করা:
আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنْتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ تِلْكَ
حُدُودُ اللَّهِ فَلَا تَقْرَبُوهَا
আর তোমরা মাসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সাথে
মিলিত হয়ো না। এটা আল্লাহর সীমারেখা, সুতরাং
তোমরা তার নিকটবর্তী হয়ো না। (বাকারা : ১৮৭)
মুহরিম থাকা
অবস্থায়ও স্ত্রী সহবাস হারাম।
আর উপরের অমূলক কথার পক্ষে কোনো দলিল খোঁজে পাওয়া
যাবে না। বরং এসব হচ্ছে বাতিল, গর্হিত ও অপছন্দনীয় জিনিস,
যা ব্যাপক প্রচারণার ফলে কারো কারো নিকট মূল বিশ্বাসে পরিণত
হয়েছে, তারা এ থেকে বিরত হচ্ছে না। এমন অনেক মানুষ রয়েছে,
যারা মঙ্গলবার স্ত্রী সহবাস করে সুস্থ্য সন্তানের পিতা হয়েছে,
এবং এ কারণে তাদের বা তাদের সন্তানদের কোন ক্ষতি হয়নি। আল্লাহ
আমাকে ও আপনাকে অপছন্দনীয় বিষয় থেকে রক্ষা করুন। আল্লাহ-ই ভাল জানেন।
✔ ২. প্রশ্ন: সহবাসের পূর্বে যদি দোয়া ভুলে যাই, তাহলে শয়তান আমাদের সতর দেখে ফেলে, অথবা এ
ধরণের কিছু ঘটে। এ শ্রুতি কী সঠিক ? আর আমি যদি স্ত্রীর
সাথে খেলাধুলা করি এবং তার সতর দেখি, এ জন্য কী সহবাসের দোয়া
বলা ওয়াযিব ?
উত্তর -
আল-হামদুলিল্লাহ
প্রথমত :
যে তার স্ত্রীর সাথে সহবাসের করার ইচ্ছা পোষণ করে, তার জন্য বলা সুন্নত :
" بِسْمِ اللَّهِ ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا
الشَّيْطَانَ ، وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا"
বুখারি : (৬৩৮৮) ও মুসলিম : (১৪৩৪)
ইবনে আব্বাস
রাদিআল্লাহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন :
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( لَوْ أَنَّ
أَحَدَهُمْ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَأْتِيَ أَهْلَهُ قَالَ بِاسْمِ اللَّهِ
اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا ،
فَإِنَّهُ إِنْ يُقَدَّرْ بَيْنَهُمَا وَلَدٌ فِي ذَلِكَ لَمْ يَضُرَّهُ شَيْطَانٌ
أَبَدًا ).
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন :
“যদি তোমাদের কেউ স্ত্রী সহবাসের সময় বলে
بِاسْمِ اللَّهِ اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبْ
الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا
এবং তাদের ভাগ্যে সন্তান নির্ধারণ করা হয়, তবে শয়তান কখনো তার ক্ষতি করবে না।
বুখারির বর্ণনায়
রয়েছে :
( لَمْ يَضُرَّهُ الشَّيْطَانُ وَلَمْ
يُسَلَّطْ عَلَيْهِ ) .
শয়তান তার ক্ষতি করবে না, এবং তার উপর শয়তানকে প্রভাব বিস্তার করতে দেয়া হবে না। বুখারি : (৩২৮৩)
এ সব বর্ণনা প্রমাণ করে যে, সহবাসের সময় এ দোয়াটি পড়া সুন্নত, স্বামী-স্ত্রীর
খেলাধুলার সময় নয়।
রাসূলের বাণী : ( لَمْ يَضُرَّهُ شَيْطَانٌ أَبَدًا ) এর বিভিন্ন অর্থ বর্ণনা করা হয়েছে।
কেউ বলেছেন : এ সন্তানটি নেককারদের অন্তর্ভুক্ত
হবে, যার উপর শয়তানের কর্তৃত্ব থাকবে না।
কেউ বলেছেন : শয়তান তাকে পরাস্ত করতে পারবে না, অথবা শয়তান তাকে কুফরির মাধ্যমে গোমরাহ করতে পারবে না, অথবা তার জন্মের সময় পিতার সঙ্গী হতে পারবে না যখন সে তার মায়ের সাথে
সহবাস করে।
কাজি ইয়াজ h বলেছেন :
( لَمْ يَضُرَّهُ شَيْطَانٌ أَبَدًا )
‘তাকে ক্ষতি করতে পারবে না’ এর
অর্থ কেউ বলেছেন : শয়তান তাকে পরাস্ত করতে পারবে না। কেউ বলেছেন : জন্মের সময়,
অন্যান্য সন্তানের বিপরীতে, শয়তান তাকে
খোঁচা দেবে না। তিনি বলেন : তবে সকল ক্ষতি, শয়তানি
ওয়াসওয়াসা ও পথভ্রষ্টতা থেকে সে সুরক্ষা পাবে এ অর্থ কেউ করেন নি।
ইমাম নববি ‘সহীহ
মুসলিমের ব্যাখ্যগ্রন্থে’বিষয়টি উল্লেখ করেছেন।
ইবনে দাকিকুল ঈদ h বলেছেন
:
রাসূলের বাণী : (শয়তান তাকে ক্ষতি করতে পারবে না)
ব্যাপক অর্থে নেয়া যায়, তখন এর অন্তর্ভুক্ত হবে দীনি
ক্ষতি। আবার শারীরিক ক্ষতির বিবেচনায় একে বিশেষ অর্থেও জ্ঞান করা যায়, তখন এর অর্থ হবে শয়তান তাকে স্পর্শ করবে না, এবং
তার শরীর ও বিবেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এমন কোন কর্ম করবে না।
এ অভিমত বিশুদ্ধতার নিকটতর, যদিও খাস করা নীতি বিরুদ্ধ।
কারণ, আমরা যদি ব্যাপকের অন্তর্ভুক্ত করি, তার অর্থ দাড়ায় : সন্তানটি মাসূম ও সকল গোনা থেকে পবিত্র হবে। আর এটা
নাও হতে পারে, বা হলেও খুব কম, আবার
রাসূল যে সংবাদ দিয়েছেন, তা সত্যে পরিণত হওয়াও জরুরি। আর
আমরা যদি আকল ও শরীরের ক্ষতি বিবেচনা করি, তবে তা অসম্ভব
নয়, এবং তার বিপরীত অর্থ প্রকাশ করার কোন দলিলও নেই।
দ্বিতীয়ত :
এ দোয়া যে পড়ে এবং পরবর্তীতে যাকে সন্তান দেয়া হয়, তার জন্য এ হাদিসে ওয়াদা রয়েছে : “শয়তান তার
ক্ষতি করবে না।” তবে যে এ দোয়া পড়তে ভুলে যায়, শয়তান তার সন্তানের অবশ্যই ক্ষতি করবে, এমন
কিছু এ হাদিসে নেই। বরং তা কতক মনীষী থেকে বর্ণনা করা হয়েছে।
তাই, আল্লাহ
সন্তানকে শয়তান থেকে হিফাজত করবেন, এ আশায় নিয়মিত এ
দোয়াটি পড়ে নেয়া জরুরি।
তৃতীয়ত :
মুসলিমের জন্য গুরুত্বপূর্ণ আদব হলো, পরিপূর্ণরূপে সতর ঢাকা এবং সতর হিফাজত করা, যাতে
কেউ না দেখে। আর মানুষ যেহেতু কতক সময় সতর খুলতে বাধ্য হয়, যেমন পেশাব-পায়খানা, অথবা স্ত্রী সহবাস,
অথবা অন্য কোন প্রয়োজনে, তখন তার জন্য
বৈধ করা হয়েছে যে, সে জীনদের থেকে আড়াল হবে, যারা তাকে দেখছে। অথবা সে তার নির্দিষ্ট স্থানে আল্লাহর যিকরের মাধ্যমে
প্রবেশ করবে। যেমন পূর্বের হাদিসে আল্লাহর যিকরের মাধ্যমে শয়তানের কষ্ট থেকে
নিরাপত্তা অর্জন করতে বলা হয়েছে।
আলী ইবনে আবি তালিব রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত
:
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( قَالَ سَتْرُ
مَا بَيْنَ أَعْيُنِ الْجِنِّ وَعَوْرَاتِ بَنِي آدَمَ إِذَا دَخَلَ أَحَدُهُمْ
الْخَلَاءَ أَنْ يَقُولَ بِسْمِ اللَّهِ ) رواه الترمذي (606) وصححه الألباني .
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন :
“বনি আদমের সতর ও জিনদের দৃষ্টির মাঝে পর্দা হল যখন তাদের
কেউ টয়লেটে যাবে, তখন বলবে : بِسْمِ اللَّهِ
ইমাম নববি রাহিমাহুল্লাহ ‘কিতাবুল আযকারে’ (পৃ.২২) বলেছেন :
باب ما يقول إذا خلع ثوبه لغسل أو نوم أو نحوهما
তাতে তিনি এ হাদিস উল্লেখ করেছেন। আল্লাহ ভাল
জানেন।
অনুবাদক: জাকের
উল্লাহ আবুল খায়ের
সূত্র: ইসলাম প্রচার ব্যুরো, রাবওয়াহ, রিয়াদ, সৌদিআরব
✔ ৩. প্রশ্ন - টেলিফোনে স্বামী-স্ত্রীর যৌনালাপে লিপ্ত হওয়া এবং একে অন্যকে
উত্তেজিত করা, যাতে তাদের একজনের অথবা উভয়ের
বীর্যপাত ঘটে ( হাত ব্যবহার না করেই; কেননা হাত ব্যবহার
করা হারাম) - এরূপ করা কি বৈধ হবে? বিশেষ করে আমার স্বামী
প্রায়শঃ সফরে থাকেন, ফলে প্রতি চার মাস পর-পর আমাদের
দেখা-সাক্ষাৎ হয়।
উত্তর -
আলহামদুলিল্লাহ
এ-ধরনের প্রশ্ন শায়খ সালেহ আল উসাইমীন h কে করা হয়েছিল। তিনি উত্তরে বলেছিলেন:
এতে কোনো ক্ষতি নেই, বরং এরূপ করা জায়েয।
প্রশ্ন: যদি হাত ব্যবহার করা হয়?
উত্তর : হাত ব্যবহারের বিষয়টি প্রশ্নাতীত নয়। হাত
ব্যবহার শুধু তখন জায়েয যখন ব্যক্তি যিনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়ার প্রবল আশঙ্কা
করবে।
প্রশ্ন: তাহলে হাত ব্যবহার না করে হলে কোনো অসুবিধা নেই?
উত্তর: হ্যাঁ। হাত ব্যবহার না করে হলে কোনো
অসুবিধা নেই। পুরুষ যদি কল্পনা করে, সে তার
স্ত্রীর সাথে আছে, তাতে কোনো সমস্যা নেই।
তবে স্বামী-স্ত্রী উভয়কেই সতর্ক হতে হবে যেন তাদের
আলাপচারিতা অন্য কেউ শুনতে না পারে। কেউ কান পেতে আছে কি-না সে ব্যাপারেও তাকে
সতর্ক হতে হবে।
মুফতী: শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আল উসাইমীন
সূত্র: www.islamqa.info
✔ ৪. প্রশ্ন: আমি সৌদি আরবে কাজ করি। আলহামদু লিল্লাহ, আমি যথাসাধ্য সুন্নতের পাবন্দ থাকার চেষ্টা করি। আমি রীতিমত মসজিদে
স্বলাত আদায় করি। এই প্রথমবার আমি আমার ফ্যামিলিকে দেশে রেখে আসি বাচ্ছাদের
পড়াশোনার প্রয়োজনে। আমি যখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলি,
অডিও এবং ভিজুয়াল উভয় পদ্ধতিতে, আমি তখন
মাঝে-মধ্যে স্ত্রীকে তার দেহের বিশেষ অংশ দেখাতে বলি। এর দ্বারা আমি যৌন উত্তেজনা
অনুভব করি, যা ঠেকিয়ে রাখা আমার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ে।
অতঃপর আমি হস্তমৈথুন করে নিজেকে শান্ত করি। স্ত্রীর আশ্রয় ব্যতীত অন্য কোনোভাবে যৌনক্ষুধা
মেটানো যাবে না বলে সূরা মুমিনুনে (আয়াত:২৩:৬) যে বাণী রয়েছে আমার এ কর্ম কি তার
আওতায় পড়বে? আমি জানি হস্তমৈথুন হারাম। তবে সে তো আমার
স্ত্রী যার প্রতি আমি তাকাচ্ছি। আমার কি করণীয় আসা করি জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।
আল্লাহ আপনাকে উত্তম জাযা দান করুন।
উত্তর -
আল হামদুলিল্লাহ।
চ্যাট প্রোগ্রামে স্ত্রীর সাথে কথা বলে অথবা তাকে
দেখে তৃপ্তি আস্বাদন বৈধ রয়েছে। তবে শর্ত হল অন্য কেউ যেন স্বামী-স্ত্রীর
আলাপচারিতা শুনতে না পায় অথবা স্ত্রীর শরীরের কোনো অংশ দেখতে না পায় সে ব্যাপারে
সতর্কতা অবলম্বন।
হস্তমৈথুনের ব্যাপারে সাধারণ ব্যাকরণ হল যে, তা হারাম। তবে যদি কেউ যিনায় লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা বোধ করে তবে তার কথা
ভিন্ন।
শায়খ ইবনে
উসাইমিন h একবার জিজ্ঞাসিত হয়েছিলেন যে, স্বামী-স্ত্রীর
জন্য টেলিফোনে সেক্স বিষয়ে আলাপ করা এবং একে অন্যকে এমনভাবে উত্তেজিত করা যে উভয়ের
হস্তমৈথুন ব্যতীতই তৃপ্ত হয়ে যায়, এরূপ করা কি বৈধ হবে?
প্রশ্নকারী বলেন, এরূপ করার পেছনে কারণ
হল; আমার স্বামী প্রায়শঃ সফরে থাকেন। ফলে আমরা কেবল প্রতি
চার মাস পরপর মিলিত হতে পারি।
উক্ত প্রশ্নের উত্তরে শায়খ বলেছিলেন: এরূপ করায়
কোনো সমস্যা নেই। এটা বরং অনুমোদিত।
উল্লিখিত অবস্থায় হস্তমৈথুন যুক্ত হলে তার হুকুম
কি ? শায়খকে প্রশ্নকারী এ বিষয়েও জিজ্ঞাসা করেছিলেন। তিনি
উত্তরে বলেছিলেন: হস্তমৈথুনের বিষয়টি অধিক আলোচনার দাবি রাখে। তবে সংক্ষেপে বলা
যায়, হস্তমৈথুন কেবল তখনই বৈধ যখন কোনো ব্যক্তির যিনায়
লিপ্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
প্রশ্নকারী আরো জিজ্ঞাসা করেছিলেন: যদি হস্তমৈথুন
যুক্ত না হয় তবে তো কোনো সমস্যা নেই। শায়খ বলেছিলেন: না, কোনো সমস্যা নেই। স্বামী যদি স্ত্রীর সাথে নিবিড়ভাবে মিলিত হওয়ার
ব্যাপারে কল্পনা করে তবে এতে দোষের কিছু নেই।
মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
৫. প্রশ্ন:
সহবাসের পর যদি মনি নির্গত না হয়, তবে কি গোসল করা ওয়াযিব?
না-কি মনি নির্গত ব্যতীত গোসল ওয়াযিব হয় না ?
উত্তর -
আল-হামদুলিল্লাহ
এ ব্যাপারে সকল আলেম একমত যে, সহবাসের ফলে গোসল ওয়াযিব হয়।
আল-মাওসুআতুল ফিকহিয়াহ : (৩১/১৯৮)
স্বামী তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করলে, মনি নির্গত না হলেও গোসল ওয়াযিব হয়। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে এ
সিদ্ধান্ত আবূ হুরায়রা রাদিআল্লাহু আনহুর হাদিসে স্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেন
:
قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ : ( لَوْ أَنَّ
أَحَدَهُمْ إِذَا أَرَادَ أَنْ يَأْتِيَ أَهْلَهُ قَالَ بِاسْمِ اللَّهِ
اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا ،
فَإِنَّهُ إِنْ يُقَدَّرْ بَيْنَهُمَا وَلَدٌ فِي ذَلِكَ لَمْ يَضُرَّهُ شَيْطَانٌ
أَبَدًا ).
“যদি পুরুষ তার চার শাখার (হাত-পার) উপর বসে যায়, অতঃপর তাতে সে মিহনত করে, তবেই তার উপর গোসল
ওয়াযিব হল।” বুখারি : (২৯১),
মুসলিমের বর্ণনা অতিরিক্ত রয়েছে,
( وَإِنْ لَمْ يُنْزِلْ )
“যদিও মনি নির্গত না হয়।” মুসলিম
: (৫২৫)
ইমাম নববি রহ.
মুসলিমের ব্যাখ্যা গ্রন্থে বলেন :
“হাদিসের অর্থ : মনি নির্গত হওয়া বা না হওয়ার উপর গোসল
ওয়াযিব মওকুফ নয়। বরং যখনই পুরুষের সুপারি নারীর যৌনাঙ্গে প্রবেশ করে, তখনই নারী-পুরুষ উভয়ের উপর গোসল ওয়াযিব হয়। বর্তমান যুগে এতে কোন
মতবিরোধ নেই, তবে এক সময় কতক সাহাবা ও তাদের অনুসারীদের
মধ্যে ইখতিলাফ ছিল, অতঃপর আমাদের উল্লেখিত সিদ্ধান্তের
উপর তাদের মাঝেও মতৈক্য সৃষ্টি হয়।”
শায়খ ইবেন
উসাইমিন রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেছেন :
“গোসল ওয়াযিব হওযার ব্যাপারে এ দলিল স্পষ্ট, যদিও মনি নির্গত না হয়। এ বিষয়টি অনেকের কাছে অস্পষ্ট, তুমি অনেক স্বামী-স্ত্রীকে দেখবে, তাদের থেকে
সহবাসৎকর্ম সম্পাদন হওয়ার পরও তারা গোসল করে না। বিশেষ করে, যদি তারা ছোট হয় এবং এর শিক্ষা না পেয়ে থাকে। তাদের এ ভ্রান্তি এ ধারণা
থেকে সৃষ্ট যে, মনি নির্গত ব্যতীত গোসল ওয়াযিব হয় না,
অথচ এটা ভুল।” আশ-শারহুল মুমতি :
(১/২২৩)
ফতোয়া লাজনায়ে
দায়েমাতে রয়েছে :
“মুসলিমের উপর যেসব কারণে গোসল ওয়াযিব হয় : ঘুমন্ত
অবস্থায় মনি বের হওয়া। স্বামীর সুপারি স্ত্রীর যৌনাঙ্গে প্রবেশ করা, যদিও তাতে মনি নির্গত না হয়। সহবাস ব্যতীত জাগ্রত অবস্থায় উত্তেজনাসহ
মনি নির্গত হওয়া। এবং নারীর হায়েস ও নিফাস, যখন তাদের
রক্ত বন্ধ হয়ে যাবে, তখন তাদের উপর গোসল হবে।” ফতোয়া লাজনায়ে দায়েমা : (৫/৩১৪)
সূত্র: ইসলাম কিউ এ
অনুবাদক: সানাউল্লাহ নজির আহমদ
উত্তর -
সকল প্রশংসা আল্লাহ তাআলার।
প্রথমত: স্বামী স্ত্রী কর্তৃক পরস্পরকে উপভোগ করা আল্লাহ বৈধ করেছেন। উপভোগের কোন
পদ্ধতি অবৈধ করা হয়নি। তবে পায়ু পথে সঙ্গম করাকে অবৈধ করা হয়েছে। এমনিভাবে মাসিক ও
প্রসুতিবস্থায় সঙ্গম করাও না জায়েজ। তবে সর্বাবস্থায় স্পর্শ, চুম্বন, দর্শন, মৈথুন
জায়েজ।
শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালেহ আল উসাইমীন রহ. কে
প্রশ্ন করা হয়েছিল : স্বামীর শরীরের যে কোন অংশ স্ত্রীর পক্ষে দেখা অনুরূপভাবে
স্বামী কর্তৃক স্ত্রীর শরীরের যেকোন অংশ দেখা ও তাতে পুলকিত হওয়া জায়েজ কিনা।
তিনি উত্তরে বলেন: হ্যাঁ স্বামী তার স্ত্রীর
শরীরের যে কোন অংশ দেখতে পারে, এমনিভাবে স্ত্রী তার স্বামীর
শরীরের যে কোন অংশ দেখতে পারে।
আল্লাহ তাআলা বলেন :
(আর যারা তাদের নিজদের লজ্জাস্থানের হিফাযতকারী। তবে
তাদের স্ত্রী ও তাদের ডান হাত যার মালিক হয়েছে তারা ছাড়া, নিশ্চয় এতে তারা নিন্দিত হবে না। অতঃপর যারা এদের ছাড়া অন্যকে কামনা
করে তারাই সীমালঙ্ঘনকারী। (সূরা আল মুমিন, আয়াত ৫-৭)
ফাতাওয়া ইসলামিয়া ২২৬/৩
অতএব স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে গান শোনানো বা স্বামী
কর্তৃক স্ত্রীকে গান শোনানো জায়েয। তবে কয়েকটি শর্ত পালন করতে হবে :
১- বাদ্য যন্ত্র, যেমন
হারমোনিয়াম, তবলা ইত্যাদি গানে ব্যবহার করা যাবে না।
২- গান হল কতগুলো কথার সমষ্টি। তাই যে কথা ভাল, তার গানও ভাল। যে কথা খারাপ, তা গানেও খারাপ।
তাই গানের মধ্যে কারো দোষত্রুটি বর্ণনা, কাউকে গালি দেয়া,
অন্য কোন নারীর শরীর ও চরিত্র নিয়ে কথা বলা ইত্যাদি পরিহার করতে
হবে। তবে প্রেম, ভালোবাসা, যৌন
উত্তেজনামুলক কথায় দোষ নেই।
৩- গানটি যেন স্বামী স্ত্রী ব্যতীত অন্য কেউ শুনতে না পায়। সন্তান, প্রতিবেশী বা অন্যরা যেন না শোনে। এমনিভাবে অপরিচিত লোকেরা যেন না
শোনে। সন্তান বয়সে ছোট হলেও তাকে গান শোনান যাবে না। যদিও সে না বুঝে তবুও এটা তার
লালন পালনের ইসলামি নীতির সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়।
স্বামী স্ত্রীর এমন অনেক বিষয় আছে যেগুলো
সন্তানদের থেকে গোপন রাখতে হয়। যেমন, আলিঙ্গন,
চুম্বন, সহবাস ইত্যাদি।
শায়খ
নাসিরুদ্দীন আলবানী রহ. কে এ প্রশ্নটি করা হলে তিনি উত্তরে বলেছেন : যদি গান দিয়ে
একে অপরের কন্ঠ শুনে বিনোদনের উদ্দেশ্য হয় তবে তা কয়েকটি শর্তে জায়েজ। শর্তগুলো হল, গানের কথাগুলো জায়েয হতে হবে। কথাগুলো যদি শরীয়তে নিষিদ্ধ হয় তবে তা
কোন অবস্থাতে কারো কাছে গাওয়া যাবে না। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন :
কবিতার ভাল কথাগুলো ভাল, আর খারাপ কথাগুলো খারাপ।
যদি কোন মানুষ গান বা কবিতায় খারাপ কথা বলে তবে
তাকে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে।
গান করার দ্বারা উদ্দেশ্য যদি হয়, একে অপরের কন্ঠ শুনে পুলকিত হবে, আনন্দ পাবে
তবে স্বামী-স্ত্রী একে অপরের সামনে গান করলে কোন দোষ নেই। তবে গানের উদ্দেশ্য যদি
পাপাচারী শিল্পীদের মত গানের অনুশীলন বা অনুকরণ হয় তবে তা জায়েয নয়।
ফতোয়া নং ১০, ক্যাসেট
নং ৪২, আল হুদা ওয়ান নূর সিরিজ।
সূত্র: প্রশ্নোত্তরে ইসলাম ওয়েব সাইট
উত্তর -
১- যে ঘরে স্বামী মারা গেছে, যদি সে সেখানে থাকে তবে সেখান
থেকে বের না হওয়া। আর যদি অন্য কোথাও থাকে, তবে সেখান
থেকেও ৪মাস দশ দিন বের না হওয়া। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿وَٱلَّذِينَ
يُتَوَفَّوۡنَ مِنكُمۡ وَيَذَرُونَ أَزۡوَٰج ا يَتَرَبَّصۡنَ بِأَنفُسِهِنَّ
أَرۡبَعَةَ أَشۡهُر وَعَشۡر اۖ فَإِذَا بَلَغۡنَ أَجَلَهُنَّ فَلَا جُنَاحَ
عَلَيۡكُمۡ فِيمَا فَعَلۡنَ فِيٓ أَنفُسِهِنَّ بِٱلۡمَعۡرُوفِۗ وَٱللَّهُ بِمَا
تَعۡمَلُونَ خَبِير ٢٣٤ ﴾ [البقرة: ٢٣٤]
“আর তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মারা যায়, তারা (স্ত্রীগণ) নিজেরা চার মাস দশ দিন অপেক্ষায় থাকবে। অতঃপর যখন তারা
তাদের ‘ইদ্দতকাল পূর্ণ করবে, তখন
যথাবিধি নিজেদের জন্য যা করবে তাতে তোমাদের কোন পাপ নেই। আর তোমরা যা কর আল্লাহ সে
সম্পর্কে সম্যক খবর রাখেন।” [সূরা আল-বাকারাহ: ২৩৪]
তবে যদি গর্ভবতী হয়, তবে সে সন্তান প্রসবের পরই বের হতে পারবে। কারণ, আল্লাহ বলেন,
﴿وَأُوْلَٰتُ
ٱلۡأَحۡمَالِ أَجَلُهُنَّ أَن يَضَعۡنَ حَمۡلَهُنَّۚ﴾ [الطلاق: ٤]
“আর যাদের গর্ভে সন্তান রয়েছে তাদের ইদ্দতকাল হচ্ছে
সন্তান প্রসব করা পর্যন্ত”। [সূরা আত-তালাক: ৪]
তবে একান্ত
প্রয়োজন বা আবশ্যকীয় কাজে বের হতে পারবে, যেমন,
রোগী হলে ডাক্তার দেখানো, খাবার ক্রয়
ইত্যাদি, যখন তার কাজ করে দেওয়ার কেউ থাকবে না।
অনুরূপভাবে ঘর নষ্ট হয়ে গেলেও বের হতে পারবে। তাছাড়া একাকী সে ঘরে ভয় পেলেও সেখান
থেকে বের হতে পারবে।
২- ইদ্দতের সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত সাজসজ্জার পোষাক পরিধান করতে পারবে না।
হলুদ বা সবুজ বা অন্যকোনো রঙীন পোষাক। বরং সাজসজ্জাহীন পোষাক পরিধান করবে। রাসূল (ﷺ) এ নির্দেশই
দিয়েছেন।
৩- ইদ্দতের সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত স্বর্ণ, রৌপ্য, আলমাস (ডায়মণ্ড), বা মনি-মুক্তার কোনো অলঙ্কার পরিধান করতে পারবে না।
৪- শরীরে বা কাপড়ে খোশবু ব্যাবহার করতে পারবে না। তবে যদি কোনো কারণে দুর্গন্ধ
অনুভুত হয়, তখন সেটি দূর করার জন্য সাময়িকভাবে লাগাতে পারবে।
৫- ইদ্দতের সময় শেষ না হওয়া পর্যন্ত সুরমা লাগাবে না, চেহারায় সৌন্দর্যবর্ধক কিছু লাগাবে না। তবে সাধারণ, পানি ও সাবান দিয়ে ধৌত করতে পারবে। মেহেদী ব্যবহার করতে পারবে না। তাকে
সরাসরি কেউ বিয়ের প্রস্তাব দিতে পারবে না। সেও বিয়ের কথা বলবে না।
শাইখ মুহাম্মাদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
অনুবাদ ও সম্পাদনা : ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
৮. প্রশ্ন- আমি একজন মুসলিম নারী। আমি তিন বছর পূর্বে ইসলাম গ্রহণ করি। আমি
এখনো শিখছি। আমার একটি প্রশ্ন আছে: আমি জেনেছি যে মুসলিম হওয়ার পর যদি অবৈধভাবে
যৌনগমন করা হয় তাহলে ইসলামি পদ্ধতিতে বিবাহ করা যাবে না। কথাটা সঠিক কিনা জানতে
চাই। যদি সঠিক হয় তাহলে যা অতীতে করেছি- এবং যার উপর আমি লজ্জিত- তা শুদ্ধ করার
উপায় কী?
উত্তর -
আলহামদুলিল্লাহ
যিনা-ব্যভিচারকারীর জন্য তাওবা করা অত্যাবশ্যক।
কেননা ব্যভিচার মহাপাপসমূহের একটি। ইসলামি শরিয়ত এসব বিষয় হারাম করেছে। আর যে এসব
করবে তার জন্য রয়েছে ভয়ংকর শাস্তির ওয়াদা। ইরশাদ হয়েছে:
{আর যারা আল্লাহর সাথে অন্য ইলাহকে ডাকে না এবং যারা
আল্লাহ যে নাফসকে হত্যা করা নিষেধ করেছেন যথার্থ কারণ ছাড়া তাকে হত্যা করে না। আর
যারা ব্যভিচার করে না। আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামতের দিন তার আযাব
বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে। { সূরা আল ফুরকান: ৬৮-৬৯}
ইসলামি শরিয়া
ব্যভিচারের ইহকালীন শাস্তিও নির্ধারণ করেছে। ইরশাদ হয়েছে:
{ব্যভিচারিণী ও ব্যভিচারী
তাদের প্রত্যককে একশটি করে বেত্রাঘাত কর। আর যদি তোমরা আল্লাহ ও শেষ দিবসের প্রতি
ঈমান এনে থাক তবে আল্লাহর দীনের ব্যাপারে তাদের প্রতি দয়া যেন তোমাদেরকে পেয়ে না
বসে। আর মুমিনদের একটি দল যেন তাদের শাস্তি প্রত্যক্ষ করে। [ সূরা আন-নূর: ২]
হাদিসে এসেছে: রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন:
(তোমরা আমার কাছ থেকে নাও, তোমরা
আমার কাছ থেকে নাও। আল্লাহ তাদের ব্যাপারে পথের দিশা দিয়েছেন। অবিবাহিত পুরুষ-নারী
ব্যভিচার করলে একশত বেত্রাঘাত ও একবছরের জন্য দেশান্তরিত করণ। আর বিবাহিত
নারী-পুরুষ ব্যভিচার করলে একশত বেত্রাঘাত ও পাথর নিক্ষেপ।) [মুসলিম: আলহুদুদ/৩১৯৯]
আল্লাহ তাআলা মুমিনদের উপর ব্যভিচারকারী নারী
পুরুষকে বিবাহ করা হারাম করে দিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে:
{ব্যভিচারী কেবল ব্যভিচারিণী অথবা মুশরিক নারীকে ছাড়া
বিয়ে করবে না এবং ব্যভিচারিণীকে কেবল ব্যভিচারী অথবা মুশরিক ছাড়া বিয়ে করবে না। আর
মুমিনদের উপর এটা হারাম করা হয়েছে।} সূরা
আন-নূর: ৩}
যদি ব্যভিচারকারী সত্যিকার অর্থে দৃঢ়চিত্তে তাওবা
করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা
করে দেন। ব্যভিচারকারীর পরকালীন শাস্তির ওয়াদার কথা উল্লেখের পর আল্লাহ তাআলা
বলেন:
(তবে যে তাওবা করে ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে
আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল,
পরম দয়ালু।
আর যে তাওবা করে এবং সৎকাজ করে তবে নিশ্চয় সে
পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে।
যদি সত্যিকার তাওবা অর্জিত হয় তবে এই পাপ থেকে সরে
আসার পর তাদের সাথে বিবাহ করা বৈধ রয়েছে।
শায়খ মুহাম্মাদ ইবনে ইব্রাহীম h কে ব্যভিচারিণী নারীর সাথে বিবাহ সম্পর্কে প্রশ্ন করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি
বলেছিলেন:
তাওবা না করা পর্যন্ত ব্যভিচারিণীর সাথে বিবাহ বৈধ
নয়। যদি কোনো পুরুষ তাকে বিয়ে করতে চায় তাহলে বিবাহের পূর্বে একটি ঋতুস্রাব
অতিক্রম হতে দেবে। পেটে বাচ্ছা আছে বলে প্রমাণিত হলে প্রসবের আগ পর্যন্ত বিবাহ বৈধ
হবে না।
মুফতী: শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
সূত্র: www.islamqa.info
(দেখুন: আল ফাতায়াল জামেয়া লিল মারআতিল মুসলিমা : ২/৫৮৪)
৯. প্রশ্ন:
আমার জানামতে হস্ত মৈথুন কবিরা গুনাহ। কিন্তু একজন বলল যে, যদি এমন হয় যে হস্ত মৈথুন না করলে এর চেয়ে বড় কোনও পাপ হবে, যেমন জিনা হবে তবে হস্ত মৈথুন জায়েজ। দয়া করে এর বিস্তারিত আমাকে
জানালে উপকৃত থাকব।
উত্তর -
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
হানাফী, শাফেঈ, মালেকী এবং হাম্বালী মাজহাবের অধিকাংশ
আলেমের মতে হস্তমৈথুন করা হারাম।
তাদের দলীল হচ্ছে আল্লাহ তাআলার বাণীঃ
وَالَّذِينَ هُمْ لِفُرُوجِهِمْ حَافِظُونَ (5) إِلَّا عَلَى أَزْوَاجِهِمْ
أَوْ مَا مَلَكَتْ أَيْمَانُهُمْ فَإِنَّهُمْ غَيْرُ مَلُومِينَ (6) فَمَنِ
ابْتَغَى وَرَاءَ ذَلِكَ فَأُولَئِكَ هُمُ الْعَادُونَ (
মুমিনগণ তাদের নিজেদের লজ্জাস্থানের হেফাজত করে।
নিজেদের স্ত্রীদের ও অধিকারভুক্ত বাঁদীদের ছাড়া, এদের কাছে (হেফাজত না করলে) তারা তিরস্কৃত হবে না। তবে যারা এর বাইরে
আরও কিছু চাইবে তারাই হবে সীমালংঘনকারী।
সমসাময়িক যেসব আলেম হস্তমৈথুনকে হারাম বলেছেন, তাদের মধ্যে বিন বায, বিন উছাইমীন, মুহাম্মাদ বিন আমীন শানকিতী অন্যতম।
তাছাড়া আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও হস্তমৈথুনকে
ক্ষতিকর বলে উল্লেখ করেছে। এতে রয়েছে শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি। পুরুষাঙ্গের ক্ষতি
হওয়ার বিষয়টিও অভিজ্ঞতা দ্বারা প্রমাণিত। যে আপনাকে হস্তমৈথুন জায়েজের কথা বলেছে, তার কথা
ঠিক নয়।
আল্লাহই ভাল জানেন ।
উত্তর দিয়েছেনঃ আবদুল্লাহ শাহেদ আল-মাদানী / 2014-0205
লিসান্সঃ মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, এম,এম, ফাস্ট
ক্লাশ
১০. প্রশ্ন : আমার একটি কঠিন প্রশ্ন, আমার
শ্যালিকা ইদানীং বিয়ে করবে, কিন্তু সম্ভাব্য বরের প্রকৃতি
সম্পর্কে সে শঙ্কিত। আমি স্পষ্ট করেই বলছি, সে আমাকে
জিজ্ঞাসা করেছে : মীলাদকে কঠিনভাবে সমর্থনকারী অথবা মীলাদুন্নবীর মাহফিল আয়োজনকারী
ব্যক্তির সাথে বিয়ে কি বৈধ ? আমি জানি যে, ইসলামে এ কাজটি বিদ‘আত। কিন্তু আমার সন্দেহ,
মীলাদুন্নবী উদযাপনকারী ব্যক্তির সাথে একজন মুসলিম নারীর বিয়ে
কিভাবে হতে পারে ! কারণ যেসব শহরে এ মীলাদ পালন করা হয়, তারা
এটাকে ইবাদাতের ন্যায়ই পালন করে। এখানে লোকদের আহ্বান করা হয়, কতক হাদিস পড়ে শোনানো হয়, গান-বাজনা হয় এবং
প্রার্থনা করা হয়। লোকেরা মূলত দেখে ও গান গায় ! আমার প্রশ্ন হচ্ছে এসব কর্মে
নিয়োজিত ব্যক্তির সাথে মুসলিম নারীর বিয়ে কি বৈধ ? এর
চেয়েও কঠিন প্রশ্ন- আমি যা প্রকাশ করতেও সঙ্কোচ বোধ করছি— এ বিদ‘আতি কি মুসলিম হিসেবে গণ্য হবে ?
উত্তর -
আল-হামদুলিল্লাহ
ঈদে মীলাদুন্নবী বা এ জাতীয় বিদআতি কাজ যারা করে, তাদের আ‘মাল ও কর্মকাণ্ডের ভিন্নতার ন্যায়
তাদের হুকুমও ভিন্ন, যদিও মীলাদুন্নবী বিদআত। এ ধরণের
মীলাদ আয়োজকদের পাপের ধরণ ও ইসলাম বিরোধী কর্মকাণ্ডের কারণে এরা বিভিন্ন ভাগে
বিভক্ত। কখনো এদের বিষয়গুলো শিরক পর্যন্ত পৌঁছে এবং তাদেরকে দ্বীন থেকে বের করে
দেয়, যদি এসব উৎসবে নির্দিষ্ট কোন কুফরি করা হয়, যেমন আল্লাহ ব্যতীত কারো নিকট প্রার্থনা করা, অথবা
আল্লাহর রুবুবিয়াতের সিফাত দ্বারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে বিশেষিত করা, অথবা এরূপ কোন শিরকে লিপ্ত হওয়া। আর যদি বিষয়গুলো এ পর্যায়ে না পৌঁছে,
তাহলে এরা ফাসেক, কাফের নয়। আবার এদের
ফাসেকির স্তর বিদআত ও ইসলামি বিরোধী কর্মকাণ্ড হিসেবে পৃথক ও আলাদা।
আর এসব অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তির অবস্থার
ভিন্নতা হিসেবে তার হুকুমও ভিন্ন হবে। যদি কুফরিতে লিপ্ত হয়, তাহলে কোন অবস্থাতেই তার সাথে বিয়ে বৈধ হবে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
وَلا تُنْكِحُوا الْمُشْرِكِينَ حَتَّى يُؤْمِنُوا وَلَعَبْدٌ مُؤْمِنٌ
خَيْرٌ مِنْ مُشْرِكٍ وَلَوْ أَعْجَبَكُمْ
"আর মুশরিক পুরুষদের সাথে বিয়ে দিয়ো না, যতক্ষণ না তারা ঈমান আনে। আর একজন মুমিন দাস একজন মুশরিক পুরুষের চেয়ে
উত্তম, যদিও সে তোমাদেরকে মুগ্ধ করে।" [সূরা বাকারা : ২২১] এমতাবস্থায় তার সাথে বিয়ের আক্দও সম্পন্ন হবে না। এ ব্যাপারে আলেমগণ একমত।
আর যদি বিদআতির
বিদআত কুফরি পর্যন্ত না পৌঁছে, তবুও আলেমগণ বিদআতিদের সাথে
বিবাহের সম্পর্ক কায়েম করা থেকে কঠোরভাবে সতর্ক করেছেন।
ইমাম মালেক -রাহিমাহুল্লাহ- বলেছেন :
"বিদআতিদের নিকট মেয়ে বিয়ে দেয়া যাবে না, আর না
তাদের মেয়ে বিয়ে করা যাবে, তাদের উপর সালামও দেয়া যাবে।"
"আল-মুদাওয়ানাহ" : (১/৮৪) অনুরূপ কথা ইমাম আহমদ ইবন হাম্বলও বলেছেন।
চার ইমামগণ -রাহিমাহুমুল্লাহ- বলেছেন, বিবাহের ক্ষেত্রে দ্বীনি বিষয়ে কুফু তথা সমতা থাকা জরুরী। কোন ফাসেক
পুরুষ একজন সঠিক দ্বীনদার নারীর কুফু ও সমান হতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন :
أَفَمَنْ كَانَ مُؤْمِناً كَمَنْ كَانَ فَاسِقاً لا يَسْتَوُونَ
"যে ব্যক্তি মুমিন সে কি ফাসিক ব্যক্তির মত ?
তারা সমান নয়।" [সূরা আস-সাজদাহ : ১৮]
এতে সন্দেহ নেই যে, দ্বীনের মধ্যে বিদআত কঠিন ফিসক। দ্বীনের ব্যাপারে কুফু ও বরাবরির অর্থ
: আক্দ পরিপূর্ণ হওয়ার পর যদি নারীর নিকট অথবা তার অভিভাবকের নিকট প্রকাশ পায় যে,
ছেলে ফাসিক, তাহলে তারা বিয়ে ভঙ্গের
দাবি জানাতে পারবে। হ্যাঁ, তারা যদি দাবি ত্যাগ করে
সন্তুষ্টি প্রকাশ করে, তাহলে বিয়ে শুদ্ধ।
তাই এ জাতিয় বিয়ে থেকে সতর্ক থাকাই শ্রেয়, বিশেষ করে কর্তৃত্ব যেহেতু পুরুষের হাতে অনেক সময় সে স্ত্রীকে কোণঠাসা
করে বিদ‘আতে লিপ্ত হতে বাধ্য করতে পারে, অথবা কতক বিষয়ে সুন্নতের খেলাফ করার জন্য চাপ প্রয়োগ করতে পারে। আর
সন্তানদের বিষয়টি আরও ভয়ানক, খুব সম্ভব সে তাদেরকে বিদ‘আতের দীক্ষার উপর অনুশীলন করাবে, ফলে আহলে
সুন্নতের বিরোধী হয়ে তারা বেড়ে উঠবে। আর এতেই বিপত্তি সঠিক অনুসারীদের জন্য,
যারা আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অনুসরণ করে।
মোদ্দাকথা : কোন মুসলিম পুরুষের মেয়েকে বিদ‘আতিদের
নিকট বিয়ে দেয়া মাকরুহে তাহরিমী। কারণ এর ফলে অনেক ফ্যাসাদের জন্ম হয় এবং অনেক
স্বার্থে ব্যাঘাত ঘটে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জন্য কোন জিনিস ত্যাগ করে, আল্লাহ তাকে তার চেয়ে উত্তম জিনিস দান করেন। আল্লাহ ভাল জানেন।
মুফতী: শাইখ মুহাম্মদ সালেহ আল-মুনাজ্জিদ
১১. প্রশ্ন:- আমি আমার নাকে প্লাস্টিক সার্জারি
সম্পন্ন করতে চাই।
এটা কি হারাম হবে? আমি নাক নিয়ে মানসিক যাতনায় কালাতিপাত
করি, আমার জীবনের উপরও এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। চিকিৎসক
বলেছেন আমার অপারেশন করা জরুরি।
✔ উত্তর:- আলহামদু লিল্লাহ
।
প্লাস্টিক সার্জারি দু’ভাগে ভাগ করা যায়:
১. প্রয়োজনীয় সার্জারি
অর্থাৎ এমন অপারেশন যা কোনো ত্রুটি সারাতে চলানো হয়, যেমন
অসুস্থতা থেকে উদ্ভূত ত্রুটি, উদাহরণ হিসেবে বলা যায়
ট্রাফিক এক্সিডেন্ট অথবা আগুনে পুড়ে গেলে কোনো ত্রুটির উন্মেষ, ইত্যাদি। অথবা কোনো জন্মগত ত্রুটি সারাতে চালিত অপারেশন, যেমন অতিরিক্ত অঙ্গুলি ফেলা দেওয়া, অথবা অকেজো
অঙ্গুলি ফেলে দেওয়ার জন্য অপারেশন ইত্যাদি
এ প্রকৃতির অপারেশন অনুমোদিত। হাদিস থেকে এ ধরনের
অপারেশনের পক্ষে সমর্থন পাওয়া যায়। উপরন্তু যে ব্যক্তি এ ধরনের অপারেশন করতে চায়
আল্লাহর সৃষ্টি পরিবর্তন করা তার উদ্দেশ্য নয়।
(ক) আরফাজাহ ইবনে আসআদ থেকে বর্ণিত, তিনি
বলেন যে জাহিলিয়াতের যুগে আল কুলাব যুদ্ধে তার নাক কেটে যায়। ফলে তিনি রূপা দিয়ে তৈরি একটি নাক
ব্যবহার করেন। তবে তা ময়লাবিদ্ধ হয়ে যায়। অতঃপর রাসূলুল্লাহ (ﷺ) তাকে স্বর্ণের
তৈরি একটি নাসিকা ব্যবহার করতে বলেন। [ তিরমিযি: ১৭৭০; আবু দাউদ,৪২৩২; নাসায়ি,৫১৬১. শায়খ আলবানি ইরওয়াউল গালীল গ্রন্থে (৮২৪) হাদিসটি হাসান বলেছেন।
(খ) বর্ণনায় এসেছে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাযিঃ) বলেন: আমি আল্লাহর রাসূল (ﷺ)কে লানত করতে শুনেছি অই নারীকে যে তার আইব্রু উৎপাটন
করে এবং যে তার দাঁতকে যন্ত্র দিয়ে ঘর্ষণ করে মসৃণ বানায় কেবল সৌন্দর্যের জন্য। আর এভাবে আল্লাহর সৃষ্টিকে
পরিবর্তন করে।[ বুখারি ও মুসলিম]
ইমাম নববি h বলেন: ‘যারা
তাদের দাঁত যন্ত্র দিয়ে মসৃণ করে’ এর অর্থ যারা এরূপ করে সৌন্দর্যের
উদ্দেশে এবং বয়স কম বলে প্রতিভাত হওয়ার জন্য। এর দ্বারা বুঝা যাচ্ছে যে সৌন্দর্যবর্ধনের উদ্দেশে যদি
প্লাস্টিক সার্জারি করা হয়
তাহলে তা হারাম বলে বিবেচিত হবে। তবে যদি চিকিৎসার প্রয়োজনে হয়, অথবা দাঁতের কোনো ত্রুটি সারার প্রয়োজনে হয় তবে তা বৈধ বলে গণ্য হবে ।
এতে দোষের কিছু নেই।
২- দ্বিতীয়
প্রকারের প্লাস্টিক সার্জারি হল যা কেবল সৌন্দর্যের জন্য করা হয়। অর্থাৎ যা কেবল দ্রষ্টার নজরে সৌন্দর্য বাড়িয়ে
দেওয়ার উদ্দেশে করা হয়, যেমন নাসিকা অপারেশন করে
ছোটকায় করা, অথবা স্তনে অপারেশন চালিয়ে ছোট বা বড় করা।
চেহারা চামড়া
টানটান করার উদ্দেশে অপারেশন করা ইত্যাদি।
এ ধরনের সার্জারি বিশেষ কোনো প্রয়োজনের জন্য হয়
না। এ ধরনের সার্জারির উদ্দেশ্য বরং আল্লাহর সৃষ্টিকে
পরিবর্তন করে দেওয়া। মানুষের খেয়াল খুশি মত আল্লাহর সৃষ্টি নিয়ে তামাশা করা। এ
ধরনের অপারেশন এ কারণেই হারাম। কারণ এতে আল্লাহর সৃষ্টিকে পরিবর্তন করে দেওয়া হয়।
ইরশাদ হয়েছে:
১১৭. আল্লাহ ছাড়া তারা শুধু
নারীমূর্তিকে ডাকে এবং কেবল অবাধ্য শয়তানকে ডাকে।
১১৮. আল্লাহ তাকে লানত করেছেন, এবং সে বলেছে আমি অবশ্যই তোমার
বান্দাদের এক নির্দিষ্ট অংশকে ( অনুসারী হিসেবে ) গ্রহণ করব।
১১৯. আর অবশ্যই আমি তাদেরকে পথভ্রষ্ট করব, মিথ্যা
আশ্বাস দেব এবং অবশ্যই তাদেরকে আদেশ দেব, ফলে তারা পশুর
কান ছিদ্র করবে এবং অবশ্যই তাদেরকে আদেশ করব, ফলে অবশ্যই
তরা আল্লাহর সৃষ্টি বিকৃত করবে। আর যারা আল্লাহর পরিবর্তে শয়তানকে অভিভাবকরূপে
গ্রহণ করে, তারা তো স্পষ্টই ক্ষতিগ্রস্ত হল। [সূরা নিসা
১১৭-১১৯]
শয়তানই মানুষকে আল্লাহর সৃষ্টিতে পরিবর্তন সাধনের
নির্দেশ দেয়।
দেখুন : শায়খ মুহাম্মদ আল মুখতার আশশিনকিতি, আহকাম আল জিরাহা আত্তিব্বিইয়াহ
শায়খ মুহাম্মদ সালেহ আল উসাইমিন রা. কে প্লাস্টিক
সার্জারি করা এবং এ বিষয়ক জ্ঞানে শিক্ষিত হওয়ার হুকুম কি এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা
হয়েছিল। উত্তরে তিনি বলেছিলেন:
প্লাস্টিক সার্জারি দু’ প্রকার:
✔ ১- এক্সিডেন্ট
ইত্যাদি জনিত ত্রুটি সারার উদ্দেশে কৃত সার্জারি। এ জাতীয় নার্সারিতে কোনো অপরাধ
নেই; কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) যুদ্ধে
নাসিকা-কর্তিত ব্যক্তিকে অনুমতি দিয়েছেন স্বর্ণের তৈরি নাসিকা পরিধান করার জন্য।
✔ ২- ত্রুটি সারার
জন্য নয় বরং কেবল সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য অপ্রয়োজনীয়ভাবে সার্জারি করা। এটা হারাম
এবং অনুমতিরুদ্ধ; কেননা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) আইভ্রূ উৎপাটনকারী নারীকে লানত করেছেন। তিনি তাদেরকেও লানত
করেছেন যারা চুলের প্রসারণকে কর্তন করে, যাদের
চুলের প্রসারণকে কর্তন করা হয়, যারা উলকি আঁকে এবং যাদের
জন্য উলকি আঁকা হয়। কেননা এ ধরনের কাজ কেবলই সৌন্দর্য বৃদ্ধির উদ্দেশেই করা হয়ে
থাকে। কোনো ত্রুটি দূর করার উদ্দেশে করা হয় না।
মেডিক্যাল কলেজের ছাত্রদের মধ্য যারা প্লাস্টিক
সার্জারি নিয়ে পড়াশোনা করে তাদের ব্যাপারে বলা যায় যে, এ বিদ্যা শেখায় কোনো অপরাধ নেই। তবে তাদেরকে অবশ্যই হারাম প্রকৃতির সার্জারি
থেকে বিরত থাকতে হবে। উপরন্তু যারা হারামজাতীয় প্লাস্টিক সার্জারি করতে আসবে
তাদেরকে সে এ বিষয়ে বোঝাবে, বলবে যে এটা হারাম। একজন
ডাক্তারের মুখে যখন কোনো ব্যক্তি এ ধরনের উপদেশ শুনবে এটা তার উপর অধিক প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা যায়।
আল পাতাইয়া আল ইসলামিয়া, ৪,৪১২.
উপসংহারে বলব, যদি নাকে
কোনো ত্রুটি থাকে তবে সে ত্রুটি সারার জন্য প্লাস্টিক সার্জারি করা চলে। আর যদি
কোনো ত্রুটি না থাকে বরং কেবল সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য করা হয় তবে তা হারাম হবে।
শরীয়তে এ ব্যাপারে অনুমোদন নেই।
সমাপ্ত
দাম্পত্য জীবনের কিছু প্রশ্ন
মুফতী: শায়খ মুহাম্মাদ সালেহ আল মুনাজ্জিদ
নং
|
দাম্পত্য জীবনের কিছু প্রশ্ন
|
১
|
শুনেছি যে, মঙ্গলবারে সহবাস না করা আবশ্যক, কেননা সেদিন একটি জিনিস আগমন করে,....
|
২
|
সহবাসের পূর্বে যদি দোয়া ভুলে যাই, তাহলে শয়তান আমাদের সতর দেখে ফেলে, অথবা এ ধরণের কিছু ঘটে।.....
|
৩
|
টেলিফোনে স্বামী-স্ত্রীর যৌনালাপে লিপ্ত হওয়া এবং একে অন্যকে উত্তেজিত করা,....
|
৪
|
আমি যখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে আমার স্ত্রীর সাথে কথা বলি, অডিও এবং ভিজুয়াল উভয় পদ্ধতিতে, আমি তখন মাঝে-মধ্যে স্ত্রীকে...
|
৫
|
সহবাসের পর যদি মনি নির্গত না হয়, তবে কি গোসল করা ওয়াযিব? না-কি মনি নির্গত ব্যতীত গোসল ওয়াযিব হয় না ?
|
৬
|
স্বামী-স্ত্রী একে অপরকে গান শোনালে কোনো সমস্যা আছে কি না?
|
৭
|
কোনো মহিলার স্বামী মারা গেলে মহিলাকে নিম্নোক্ত কাজ করতে হয়:
|
৮
|
আমি জেনেছি যে মুসলিম হওয়ার পর যদি অবৈধভাবে যৌনগমন করা হয় তাহলে ইসলামি পদ্ধতিতে বিবাহ করা যাবে না। ....
|
৯
|
কিন্তু একজন বলল যে, যদি এমন হয় যে হস্ত মৈথুন না করলে এর চেয়ে বড় কোনও পাপ হবে, যেমন জিনা হবে তবে হস্ত মৈথুন জায়েজ।...
|
১০
|
মীলাদকে কঠিনভাবে সমর্থনকারী অথবা মীলাদুন্নবীর মাহফিল আয়োজনকারী ব্যক্তির সাথে বিয়ে কি বৈধ ?
|
১১
|
আমি আমার নাকে প্লাস্টিক সার্জারি সম্পন্ন করতে চাই। এটা কি হারাম হবে? আমি নাক নিয়ে মানসিক যাতনায় কালাতিপাত করি, আমার জীবনের উপরও এর নেতিবাচক প্রভাব রয়েছে। চিকিৎসক বলেছেন আমার অপারেশন করা জরুরি।
|
0 Comments