পরকাল বিষয়ক প্রবন্ধ_প্রশ্ন উত্তর পার্ট ০১

       আখিরাত-সম্পর্কিত---  
    পরকাল বিষয়ক প্রবন্ধ_❓ প্রশ্ন উত্তর পার্ট ০১❓
প্রশ্নঃ মৃত্যুর পর তথা পরকালে আমাদের ভাষা কি হবেআল্লাহ বা ফেরেশতাগণ আমাদের সাথে কোন ভাষায় কথা বলবেন?
 🎤 ANSWER তারা মানুষের সাথে এমন ভাষায় কথা বলবেনযা তারা বুঝতে পারবে (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা /৪৫০) শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ)-কে  বিষয়ে জিজ্ঞেস করা লে তিনি বলেনসেদিন মানুষ কোন ভাষায় কথা বলবে তা জানা যায় না। কেননা আল্লাহ  রাসূল (ছাঃ বিষয়ে আমাদের কোন খবর দেন নি। ছাহাবায়ে কেরামও  নিয়ে নিজেদের মধ্যে কোন বিতর্ক করেননি। বরং সবাই  ব্যাপারে চুপ থেকেছেন। কেননা  ব্যাপারে কথা বলা অনর্থক মাত্র (মাজমূ‘ ফাতাওয়া /৩০০)
প্রশ্নঃ ক্বিয়ামতের দিন মানুষে আত্মার সাথে দেহ জুড়ে দেওয়া হবেনা স্বপ্নের মত দেহ ছাড়া কেবল আত্মা পুনর্জীবিত হবে?
 🎤 ANSWER মৃত্যুর পরে রূহ কিছুক্ষণের জন্য দেহ তে বিচ্ছিন্ন লেও পুনরায় আপন দেহে তা স্থাপন করা হয় এবং বান্দাকে প্রশ্ন করা হয় (আহমাদ হা/১৮৫৫৭ইবনু মাজাহ হা/৪২৬২মিশকাত হা/১৬৩০ছহীহুল জামে‘ হা/১৬৭৬) অতএব কিয়ামতের দিনও মানুষের আত্মার সাথে দেহ জুড়ে দেওয়া হবে। শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃবলেনসকল ছহীহ মুতাওয়াতির হাদীছ প্রমাণ বহন করে যেরূহ দেহে ফিরিয়ে দেওয়া হবে (মাজমূ‘ ফাতাওয়া /৪৪৬) তবে তখন আমাদের এই দেহ থাকবে না অন্য দেহে রূহ স্থাপন করা হবে সে বিষয়ে আল্লাহই ভালো জানেন (উছায়মীনফাতাওয়া নূরুন আলাদ-দারব /)
প্রশ্নঃ  ইহূদী-খ্রিষ্টানদের বিরুদ্ধে জিহাদ করতে গিয়ে অনেক মুসলিম আত্মঘাতি হয়ে মারা যাচ্ছেন। আখেরাতে এদের পরিণাম কি হবে?
 🎤 ANSWER আত্মঘাতি হওয়া আত্মহত্যার শামিল। শরীআতে যার কোন অনুমোদন নেই। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর সাথে জিহাদে অংশগ্রহণ করে ইসলামের পক্ষে বীরত্বের সাথে যুদ্ধ শেষে যখমে অতিষ্ঠ হয়ে নিজের তরবারি দিয়ে আত্মহত্যা করলে রাসূল (ছাঃতাকে জাহান্নামী বলে আখ্যায়িত করেন (বুখারী হা/৪২০৩ ‘খায়বর যুদ্ধ’ অনুচ্ছেদ) তাছাড়া এগুলি জিহাদ ফী সাবীলিল্লাহ নয়। বরং ইহূদী-নাছারাদের চক্রান্তে জিহাদের সুড়সুড়ি দিয়ে তাদের পাতানো ফাঁদে আটকিয়ে মুসলমানদের ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র মাত্র। মূলতঃ ইহূদী-খ্রিষ্টান রাষ্ট্র শক্তিগুলির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার দায়িত্ব মুসলিম রাষ্ট্র শক্তিগুলির। তারা এটা না করলে পরকালে জওয়াবদিহি করতে বাধ্য হবে।  দায়িত্ব সাধারণ নাগরিকের নয় এবং তারা এজন্য আল্লাহর নিকট দায়ী হবে না। কারণ এটি তাদের সাধ্যের অতীত। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা সাধ্যমত আল্লাহকে ভয় কর’ (তাগাবুন ৬৪/১৬) (বিস্তারিত দ্রঃ ‘জিহাদ  ক্বিতাল’ বই) এসব আত্মঘাতিরা একদিকে আত্মহত্যাকারী হিসাবে পরকালে কঠিন শাস্তিপ্রাপ্ত হবে(বুখারী হা/৫৭৭৮মুসলিম হা/১০৯মিশকাত হা/৩৪৫৩), অন্যদিকে তাদের হাতে নিহত নিরপরাধ মানুষ হত্যার অপরাধে পরকালে কঠোর শাস্তি ভোগ করবে’ (বুখারী হা/৬৬৭৫মিশকাত হা/৫০) আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা নিজেদেরকে হত্যা করো না’ (নিসা /২৯) তিনি বলেন, ‘যে ব্যক্তি মানুষকে অন্যায়ভাবে হত্যা করলসে যেন সকল মানুষকে হত্যা করল’ (মায়েদাহ /৩২) যারা এসব কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছে তারা নিজেরা পথভ্রষ্ট হচ্ছেঅন্যকেও পথভ্রষ্ট করছে। এরূপ ব্যক্তিদের সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, ‘তারা নিজেদের পাপভার বহন করবে এবং নিজেদের বোঝার সাথে অন্যদের পাপের বোঝা। আর তারা যেসব মিথ্যা উদ্ভাবন করে সে বিষয়ে ক্বিয়ামত দিবসে অবশ্যই তাদের প্রশ্ন করা হবে’(আনকাবূত ২৯/১৩) শায়খ আলবানীউছায়মীনআব্দুল্লাহ বিন বাযআব্দুল আযীয আলে শায়খছালেহ বিন ফাওযানআব্দুল আযীয রাজেহী প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম আত্মঘাতি বোমা হামলার মাধ্যমে নিহত হওয়াকে আত্মহত্যা বলে গণ্য করেছেন (সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর ক্রমিক নং ২৭৩উছায়মীনশরহ রিয়াযুছ ছালেহীন /১৬৫-১৬৬ফাতাওয়া শারঈয়াহ লিল হাছীনপৃষ্ঠা ১৬৬-১৬৯)
প্রশ্নঃ জনৈক ব্যক্তি বলেনক্বিয়ামতের দিন হাশরের ময়দান হবে সিরিয়ায়। একথার কোন সত্যতা আছে কি?
 🎤  ANSWER কেবল সিরিয়ায় নয় বরং শামে হাশরের ময়দান হবে মর্মে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। আর তৎকালীন শাম বর্তমানে সিরিয়াজর্দানলেবাননফিলিস্তীন  ইসরাঈলের পুরো ভূখন্ড এবং ইরাকতুরস্কমিসর  সঊদী আরবের কিছু অংশকে শামিল করে (উইকিপিডিয়া) আবু যর গেফারী (রাঃতে বর্ণিতরাসূল (ছাঃবলেন, ‘শাম  একত্রিত হওয়ার  পুনরুত্থিত হওয়ার স্থান’ (ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭২৬) অন্য বর্ণনায় তিনি হাশরের স্থান হিসাবে শামের দিকে ইশারা করেছেন (আহমাদ হা/২০০৪৩ছহীহুল জামে‘ হা/২৩০২) মনে রাখতে হবে যেক্বিয়ামতের দিন বর্তমান পৃথিবী পরিবর্তিত হয়ে অন্য পৃথিবীতে পরিণত হবে (ইবরাহীম ৪৮এবং পাহাড়-পর্বত সব একাকার হয়ে সমতল হয়ে যাবে (ত্বোয়াহা ২০/১০৬) যেটা মানুষের কল্পনার বাইরে
প্রশ্নঃ শুক্রবার দিনে বা রাতে কেউ মৃত্যুবরণ করলে ক্বিয়ামত অবধি তার কবরের আযাব মাফ হয়ে যাবে মর্মে বক্তব্যটির সত্যতা আছে কি?
 🎤 ANSWER  ব্যাপারে বর্ণিত হাদীছটি , ‘কোন মুসলমান যদি জুমআর দিনে বা রাতে মারা যায়আল্লাহ তাকে কবরের ফিৎনা হতে রক্ষা করেন’ (আহমাদতিরমিযীমিশকাত হা/১৩৬৭ছহীহুল জামে‘ হা/৫৭৭৩) অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা  দিনের বরকতে মুমিন ব্যক্তিদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তাকে কবরের ফিৎনা তথা আযাব থেকে রক্ষা করবেন ইনশাআল্লাহ (মিরআতুল মাফাতীহ /৪৪০) উক্ত হাদীছটি শায়খ নাছিরুদ্দীন আলবানী বিভিন্ন সূত্রে বর্ণিত হওয়ার কারণে ‘হাসান’ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। তবে শায়খ শুআইব আরনাঊত্ব  হুসাইন সালীম আসাদ বলেনহাদীছটির শাহেদ থাকলেও সেগুলো এমন শক্তিশালী নয় যা হাদীছকে ছহীহ বা হাসানের পর্যায়ে উন্নীত করবে। অতএব হাদীছটি যঈফ (তাহকীক মুসনাদে আহমাদ হা/৬৫৮২তাহকীক মুসনাদে আবু ইয়ালা হা/৪১১৩) ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ বিষয়ে বর্ণিত হাদীছ সমূহকে যঈফ বলেছেন (ফাৎহুল বারী /২৫৩) এছাড়া কোন ছাহাবী শুক্রবারে মৃত্যুর জন্য আকাংখা প্রকাশ করেছেন বলেও কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। অথচ আবুবকর (রাঃরাসূল (ছাঃ)-এর মৃত্যুর দিন তথা সোমবারে মৃত্যুর জন্য আকাংখা করেছেন (বুখারী হা/১৩৮৭) মোদ্দাকথা এরূপ গায়েবের বিষয় ত্রুটিপূর্ণ দলীল দ্বারা সাব্যস্ত না করাই উত্তম হবে
প্রশ্নঃ  রামাযান মাসে কবরের আযাব স্থগিত থাকে কি?
 🎤 ANSWER  উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ (আলবানীআহকামুল জানায়েয ২৪৬ পৃঃইবনু রজবআহওয়ালুল কুবূর /১০৫) স্মর্তব্য যে, ‘রামাযান মাসে জান্নাতের দরজাসমূহ খোলা হয় এবং জাহান্নামের দরজাসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয়’ (বুখারীমুসলিমমিশকাত হা/১৯৫৬মর্মে বর্ণিত হাদীছটি দ্বারা কেউ কেউ কবরের আযাব মাফ হওয়ার ব্যাখ্যা করে থাকেনযার প্রমাণে কোন দলীল নেই। বরং হাদীছটির ব্যাখ্যা রামাযান মাসে বান্দার আনুগত্যের পথ অধিক সহজ করে দেওয়া হয় যা জান্নাত লাভের উপায় এবং পাপকর্ম থেকে বান্দার চিন্তা-চেতনাকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়যা তার জন্য জাহান্নামের দরজা বন্ধ হওয়ার উপায়’ (ইবনু হাজারফাৎহুল বারী /১১৪হা/১৮৯৯-এর ব্যাখ্যা দ্রঃউছায়মীনফাতাওয়া ইসলামিয়া /১৬২)
প্রশ্নঃ কারো উপর মিথ্যা অপবাদ লাগিয়ে প্রচার করা কিরূপ পাপের অন্তর্ভুক্ত?
 🎤 ANSWER মিথ্যা অপবাদ  কারো ব্যাপারে অন্যের নিকটে এমন কথা বলা যা তার মাঝে নেই (মুসলিমমিশকাত হা/৪৮২৮) কারো উপর মিথ্যা অপবাদ লাগিয়ে প্রচার করা কাবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। আর মিথ্যা অপবাদকারীর শাস্তি হচ্ছে ৮০ বেত্রাঘাত (নূর ২৪/-) ইবনু হাজার (রহঃবলেন ব্যাপারে ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত রয়েছে যেসতীসাধ্বী নারীর উপর অপবাদ দেওয়ার শাস্তি পুরুষের উপর মিথ্যা অপবাদ আরোপের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য হবে (ফৎহুল বারী ১২/১৮১) উল্লেখ্যশরীআত নির্ধারিত হদ্দ বাস্তবায়নের দায়িত্ব সরকারেরসাধারণভাবে অন্যদের নয়
প্রশ্নঃ ক্বিয়ামতের দিন সূর্য সোয়া হাত নীচে নেমে আসবে’ হাদীছের এই বাণীটির যৌক্তিকতা ও ওলামায়ে কেরামের ব্যাখ্যা জানতে চাই।
 🎤 ANSWER রাসূল (ছাঃবলেনক্বিয়ামতের দিন সূর্যকে সৃষ্টিকুলের অতি নিকটে করে দেওয়া হবে। এমনকি সূর্য প্রায় এক বা দুই মাইলের ব্যবধানে হয়ে যাবে (মুসলিম হা/২৮৬৪আহমাদ হা/২৩৮৬৪মিশকাত হা/৫৫৪০) অতএব প্রশ্নে বর্ণিত ‘সোয়া হাত নীচে নেমে আসবে’ কথাটি সঠিক নয়। হাদীছটির বর্ণনাকারী তাবেঈ সুলাইম বিন আমের (রহঃবলেনআমি জানি না যে ‘মীল’ শব্দ দ্বারা যমীনের দূরত্ব না চোখে সুরমা দেওয়ার জন্য ব্যবহৃত শলাকার দূরত্ব বুঝানো হয়েছে’ (মুসলিম  দ্রঃ) মূলতঃ এর দ্বারা সূর্যের নিকটবর্তী হওয়ার পরিমাণ বুঝানো হয়েছে (মিরক্বাত হা/৫৫৪০-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)
প্রথমতঃ হাদীছ অনুযায়ী সূর্য সেদিন যত নিকটবর্তী হবে এবং তার প্রভাবে মানুষের যে অবস্থার কথা বর্ণিত হয়েছেদুনিয়াবী হিসাবে তা অবিশ্বাস্য। কিন্তু এটা গায়েবের খবর হওয়ায় মুমিনের জন্য তা সত্য বলে মেনে নেওয়া আবশ্যক। আর এর যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা বিদআত (ইবনু তায়মিয়াহমাজমূ‘ ফাতাওয়া ৩৩/১৭৮)
দ্বিতীয়তঃ ক্বিয়ামতের দিন দুনিয়াবী বৈশিষ্ট্য থেকে পৃথক শারীরিক গঠন  বৈশিষ্ট্য নিয়ে মানুষ পুনরুত্থিত হবে। যেমন আল্লাহ বলেন, ‘যেদিন এই পৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে পরিবর্তন করা হবে এবং সকলেই আল্লাহর সামনে প্রকাশিত হবেযিনি এক  মহা পরাক্রান্ত (ইবরাহীম ১৪/৪৮) সেদিনের দৈর্ঘ্য হবে দুনিয়ার হিসাবে পঞ্চাশ হাযার বছর (মাআরেজ ৭০/) অতএব গায়েবের বিষয়ে যুক্তি তালাশ করা নিতান্ত নির্বুদ্ধিতার পরিচায়ক। বরং পূর্ণ বিশ্বাস নিয়ে পরকালীন প্রস্ত্ততি গ্রহণ করাই মুমিনের কর্তব্য (বিস্তারিত দ্রঃ মাজমূ‘ ফাতাওয়া ওছায়মীন /৩৬)
প্রশ্নঃ ক্বিয়ামতের দিন জিন জাতি কি মানুষের মতই বিচারের সম্মুখীন হবেতাদের নবী কে?
 🎤 ANSWER মানবজাতির ন্যায় জিন জাতিকে বিচারের সম্মুখীন করা হবে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি জিন  মানব জাতিকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি’ (যারিয়াত ৫১/৫৬) তিনি বলেন, ‘অবশ্যই আমি জিন  মানুষ দিয়ে জাহান্নামকে পূর্ণ করব’ (সাজদাহ ৩২/১৩) তিনি আরো বলেন, ‘হে জিন  মানব সম্প্রদায়তোমাদের কাছে কি তোমাদের মধ্য থেকে পয়গম্বরগণ আগমন করেননিযাঁরা তোমাদেরকে আমার বিধানসমূহ বর্ণনা করতেন এবং তোমাদেরকে আজকের  দিনে সাক্ষাতের ব্যাপারে ভীতি প্রদর্শন করতেন? (আনআম /১৩০) উল্লি¬খিত আয়াতসমূহ দ্বারা প্রমাণিত হয় যেজিন জাতি বিচারের সম্মুখীন হবেতারা জান্নাতী বা জাহান্নামী হবে। সূরা আহক্বাফের ৩১ আয়াতের আলোকে ইবনু কাছীর (রহঃএকথাকেই প্রধান্য দিয়েছেন (ইবনু কাছীর আহক্বাফ ৩১ আয়াতের তাফসীর দ্রঃ) আর মুহাম্মাদ (ছাঃমানব  জিন সহ সমস্ত সৃষ্টির নিকটে নবী হিসাবে প্রেরিত হয়েছেন (মুসলিম হা/৫২৩তিরমিযী হা/১৫৫৩মিশকাত হা/৫৭৪৮) এছাড়া অন্যান্য নবীগণের সময়ে জিনেরা তাঁদের অনুসারী উম্মত ছিল
প্রশ্নঃ মৃত্যুবরণ করার পর মানুষের কোন আমল কি জারী থাকে?
 🎤 ANSWER  রাসূলুল্লাহ (ছাঃবলেন, ‘মানুষ যখন মৃত্যুবরণ করেতখন তার সমস্ত আমল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় কেবল তিনটি আমল ব্যতীত। (ছাদাক্বায়ে জারিয়াহ। (যেমন মসজিদমাদরাসাইয়াতীমখানারাস্তা  বাঁধ নির্মাণঅনাবাদী জমিকে আবাদকরণসুপেয় পানির ব্যবস্থাকরণদাতব্য চিকিৎসালয়  হাসপাতাল স্থাপন বই ক্রয় করে বা ছাপিয়ে বিতরণবৃক্ষরোপণ ইত্যাদি) (ইলমযা দ্বারা মানুষ উপকৃত হয়। (যা মানুষকে নির্ভেজাল তাওহীদ  ছহীহ সুন্নাহর পথ দেখায় এবং যাবতীয় শিরক  বিদআত তে বিরত রাখে। উক্ত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে শিক্ষাদান করাইসলামী শিক্ষা বিস্তারে সহযোগিতা প্রদানশিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্মাণবিশুদ্ধ আক্বীদা  আমল সম্পন্ন বই-প্রবন্ধ লেখাছাপানো  বিতরণ করা এবং এজন্য অন্যান্য স্থায়ী প্রচার মাধ্যম স্থাপন  পরিচালনা করা ইত্যাদি) (সুসন্তানযে তার জন্য দো করে (মৃতের জন্য সর্বোত্তম হাদিয়া  সুসন্তানযে তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছাদাক্বা করেতার পক্ষ তে হজ্জ করে ইত্যাদি) (মুসলিম হা/১৬৩১মিশকাত হা/২০৩)
অন্য বর্ণনায় রাসূল (ছাঃবলেছেন, ‘মৃত্যুর পর কবরে থাকা অবস্থায় বান্দার সাতটি আমল জারী থাকে। (দ্বীনী ইলম শিক্ষা দান করা (নদী-নালা প্রবাহিত করা (কূপ খনন করা (খেজুর তথা ফলবান বৃক্ষ রোপণ করা (মসজিদ নির্মাণ করা (কুরআন বিতরণ করা (এমন সন্তান রেখে যাওয়াযে পিতার মৃত্যুর পর তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে’ (মুসনাদ বাযযার হা/৭২৮৯বায়হাক্বীশুআবুল ঈমানছহীহুল জামে‘ হা/৩৬০২) এটি পূর্বের হাদীছের ব্যাখ্যা স্বরূপ
প্রশ্নঃ রাসূলুল্লাহ (ছাঃকি মৃত্যুবরণ করেছেন না জীবিত রয়েছেন?
 🎤  ANSWER  রাসূল (ছাঃমৃত্যুবরণ করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে’ (আলে ইমরান /১৮৫) তিনি স্বীয় রাসূলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি মৃত্যুবরণ করবে। যেমন তারা (বিগত নবীরামৃত্যুবরণ করেছে’ (যুমার ৩৯/৩০) ৬৩ বছর বয়সে রাসূল (ছাঃমৃত্যুবরণ করার পর আবুবকর (রাঃবলেছিলেন, ‘যারা মুহাম্মাদ-এর ইবাদত করে তারা জেনে রাখুক যেমুহাম্মাদ মারা গেছেন। আর যারা আল্ল¬াহর ইবাদত করেতারা জেনে রাখুক যেআল্লাহ চিরঞ্জীবতিনি অমর’ (বুখারী হা/৩৬৬৮)
উল্লেখ্যকেউ কেউ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর নিকট উম্মতের দরূদ  সালাম পৌঁছানো হয়(নাসাঈমিশকাত হা/৯২৪দ্বারা তাঁর জীবিত থাকার প্রমাণ পেশ করেন। অথচ এখানে সালাম অর্থ দোআ। চাই তা কবরের পাশে দাঁড়িয়ে হৌক বা দূর থেকে হৌক। দ্বিতীয়তঃ বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে বারযাখী জীবনের অন্তর্ভুক্ত। যেখানে মানুষের হায়াত বা মঊত বলে কিছু নেই। তাই রূহ ফেরত দেওয়ার অর্থ তাঁকে অবহিত করানো এবং তিনি তা বুঝতে পারেন। আর সেটাই  তাঁর উত্তর দেওয়া (মিরআত হা/৯৩১-এর ব্যাখ্যা/২৬২-৭৪)
বারযাখী জীবন দুনিয়াবী জীবনের সাথে তুলনীয় নয়। অতএব  হাদীছগুলির মাধ্যমে ‘হায়াতুন্নবী’ প্রমাণের কোন অবকাশ নেই। বরং এটা পরিষ্কারভাবে শিরকী আক্বীদা। এছাড়া রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর কবরের নিকটে গিয়ে দরূদ পাঠ করলে তিনি শুনতে পান মর্মে বায়হাক্বী বর্ণিত হাদীছটি ‘জাল’ (সিলসিলা যঈফাহ হা/২০৩) আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তুমি শুনাতে পারো না কোন মৃত ব্যক্তিকে’ (নামল ২৭/৮০) আর ‘তুমি শুনাতে পারো না কোন কবরবাসীকে’ (ফাত্বির ৩৫/২২)
প্রশ্নঃ দুটি সন্তানের একজনকে পিতা-মাতা বিদেশে বহু অর্থ খরচ করে পড়াশোনা করাচ্ছেন। কিন্তু অন্য সন্তানের পড়াশুনার দিকে তেমন কোনই খেয়াল রাখেন না। এরূপ করায় পিতা-মাতা কি স্বাধীন না এর জন্য কিয়ামতের দিন জবাবদিহী করতে হবে?
 🎤 ANSWER  সন্তানের আগ্রহস্বাস্থ্যমেধা  যোগ্যতার মান ভেদে তাকে উৎসাহিত করা  তার জন্য সাধ্যমত ব্যয় নির্বাহ করা পিতা-মাতার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। এতে কমবেশী হওয়ায় কোন দোষ নেই। তবে কারো প্রতি ইচ্ছাকৃত অবহেলা চরম নিন্দনীয় বিষয়। আর ভরণ-পোষণ  সম্পত্তি বণ্টনে সকলের প্রতি সমান দৃষ্টিভঙ্গি রাখতে হবে। নইলে তাঁরা পরকালে আল্লাহর নিকট জবাবদিহির সম্মুখীন হবেন। রাসূল (ছাঃবলেছেন, ‘তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং তোমাদের সন্তানদের মধ্যে ইনছাফ বজায় রাখ’ (বুখারী হা/১৫৮৭মিশকাত হা/৩০১৯) তিনি বলেন, (ক্বিয়ামতের দিনস্বামী তার পরিবার সম্পর্কে এবং স্ত্রী তার স্বামীর সংসার  সন্তান সস্পর্কে জিজ্ঞাসিত হবে (বুখারীমুসলিমমিশকাত ‘ইমারত  বিচার’ অধ্যায় হা/৩৬৮৫)
প্রশ্নঃ ফেরেশতাগণ কি মৃত্যুবরণ করবেনএ ব্যাপারে কুরআন বা হাদীছে কিছু বর্ণিত হয়েছে কি?
 🎤 ANSWER  আল্লাহ বলেন, ..এবং শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে। ফলে নভোমন্ডল  ভূমন্ডলের সবাই অজ্ঞান হয়ে পড়বে যাদেরকে আল্লাহ ইচ্ছা করেন তারা ব্যতীত। অতঃপর দ্বিতীয়বার শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবেতখন সকলে দন্ডায়মান হয়ে তাকাতে থাকবে (যুমার ৬৮) অত্র আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনু কাছীর (রহঃবলেনআসমান  যমীনবাসী সকলে মৃত্যুবরণ করব। অতঃপর সবশেষে মালাকুল মাউত মারা যাবেন এবং শুধুমাত্র আল্লাহ বাকী থাকবেনযিনি চিরঞ্জীব (ইবনু কাছীরতাফসীর সূরা যুমার ৬৮ আয়াত) শায়খুল ইসলাম ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃবলেনসমস্ত সৃষ্টি মৃত্যুবরণ করবেএমনকি ফেরেশতারাও। অবশেষে মালাকুল মউতও (মাজমূ‘ ফাতাওয়া /২৫৯১৬/৩৪)
প্রশ্নঃ জনৈক আলেম বলেনএ শতাব্দীর শেষের দিকে ক্বিয়ামত সংঘটিত হবেযা বেশ কিছু বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত। এর সত্যতা জানতে চাই।
 🎤 ANSWER  আল্লামা জালালুদ্দীন সৈয়ূতী তার আল-হাবী নামক কিতাবে (/২৪৯-২৫৬কিছু জাল  যঈফ হাদীছ এবং ইস্রাঈলী কিছু ভিত্তিহীন বর্ণনা উপস্থাপন করে প্রমাণ করার চেষ্টা করেছেন যেপৃথিবীর বয়স সাত হাযার বছর। আর মুহাম্মাদ (ছাঃ)-এর আগমন ঘটেছে  হাযার বছরের শেষের দিকে। ফলে বাকী থাকে দেড় হাযার বছর। অতএব ১৫ শত হিজরীর সমাপ্তি ঘটার পূর্বে ক্বিয়ামত হয়ে যাবে। উক্ত বক্তব্যটি একেবারেই কাল্পনিক  ভিত্তিহীন। কারণ আল্লাহ তাআলা বলেনতারা তোমাকে জিজ্ঞেস করে ক্বিয়ামত কখন হবে?’ ‘ বিষয়ে বলার জন্য তুমি কে?’ ‘এর চূড়ান্ত জ্ঞান তো তোমার প্রভুর নিকটে’(নাযেআত ৪২-৪৪)
প্রশ্নঃ কোন হাদীছে এসেছে ক্বিয়ামতের দিন মানুষ উলঙ্গ অবস্থায় এবং কোন হাদীছে এসেছে যে কাপড়ে দাফন হবে সে কাপড়ে পুনরুত্থিত হবে। উভয় হাদীছের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান কি?
 🎤 ANSWER ক্বিয়ামতের দিন মানুষকে বস্ত্রহীন অবস্থাতেই পুনরুত্থিত করা হবে (বুখারীমুসলিমমিশকাত হা/৫৫৩৬) কোন হাদীছে বলা হয়নি যেকাফন পরা অবস্থায় উঠবে। কেবল একটি হাদীছে এসেছেপ্রত্যেক বান্দা যে অবস্থায় মারা যাবে তাকে সে অবস্থায় উঠানো হবে (মুসলিমমিশকাত হা/৫৩৪৫) এর সঠিক ব্যাখ্যা হচ্ছে এই যেদুনিয়াতে ভালো কর্ম করে মারা গেলে ভালো অবস্থায় আর মন্দ কর্ম করে মারা গিয়ে থাকলে মন্দ অবস্থায় উঠবে (মানাবীফায়যুল ক্বাদীর /৪৪০) যেমন বলা হয়েছেইহরাম অবস্থায় মারা গেলে তাকে তালবিয়াহ পাঠ করা অবস্থায় উঠানো হবে (বুখারীমুসলিমমিশকাত হা/১৬৩৭)
admin rasikul islam only shayar..

Post a Comment

0 Comments