আখিরাত-সম্পর্কিত---
পরকাল বিষয়ক প্রবন্ধ_❓ প্রশ্ন উত্তর পার্ট ০2❓
❓প্রশ্নঃ কিয়ামত সংঘটিত হবে মাগরিবের ছালাতের সময়, সেজন্য মাগরিবের ছালাত এগিয়ে দেওয়া হয়েছে’ -এ বক্তব্যের কোন ভিত্তি আছে কি?
🎤 ANSWER উক্ত বক্তব্য ভিত্তিহীন। তবে জুম‘আর দিনে ক্বিয়ামত হবে মর্মে ছহীহ হাদীছ রয়েছে (আবুদাঊদ হা/১০৪৬, নাসাঈ হা/১৪৩০)।
❓প্রশ্নঃ শরী‘আত নির্ধারিত দন্ড যেমন ১০০ বেত্রাঘাত, হস্তকর্তন ইত্যাদি শাস্তি দুনিয়াতে হয়ে গেলে পরকালে আল্লাহ তা‘আলা কি পুনরায় শাস্তি দিবেন?
🎤 ANSWER ইসলামী আদালত কর্তৃক উক্ত দন্ড কার্যকর হ’লে পরকালীন শাস্তির জন্য তা কাফফারা হয়ে যাবে (বুখারী হা/১৮; মুসলিম হা/১৭০৯; মিশকাত হা/১৮)।
❓প্রশ্নঃ কিয়ামত দিবসে কে কে শাফা‘আত করার সুযোগ লাভ করবেন?
🎤 ANSWER ক্বিয়ামতের দিন যারা শাফা‘আত করার সুযোগ লাভ করবেন, তারা হলেন (১) নবী-রাসূলগণ (২) ফেরেশতাগণ (৩) মুমিনগণ (মুসলিম হা/১৮৩; মিশকাত হা/৫৫৭৯)। (৪) ছিয়াম (৫) কুরআন (বায়হাক্বী, মিশকাত হা/১৯৬৩, সনদ ছহীহ)।এছাড়া(৬)শহীদগণ নিজ পরিবারের ৭০ জনের জন্য শাফা‘আত করতে পারবেন(আবুদাঊদ হা/২৫২২)। তবে হাজী এবং আলেমগণ শাফা‘আত করার সুযোগ পাবেন মর্মে বর্ণিত হাদীছগুলি মওযূ‘ (যঈফাহ হা/৫০৯১, ১৯৭৮, ২১১১)। উল্লেখ্য যে, ক্বিয়ামতের দিন জাহান্নামে প্রবেশ করার পর মুসলিম কবীরা গোনাহগারদের জান্নাতে নেওয়ার জন্য শাফা‘আত হবে’। ‘যারা শিরক না করে মৃত্যুবরণ করেছেন’ (তিরমিযী হা/২৪৩৫,২৪৪১, আবুদাঊদ, ইবনু মাজাহ; মিশকাত হা/৫৫৯৮-৫৬০০)।
❓প্রশ্নঃ মৃতব্যক্তি দুনিয়ার লোকদের কাজকর্ম দেখতে ও শুনতে পায় কি?
🎤 ANSWER মৃতব্যক্তি জীবিতদের কর্মকান্ড দেখতে বা তাদের কথাবার্তা শুনতে পায় না। আল্লাহ স্বীয় রাসূল (ছাঃ)-কে উদ্দেশ্য করে বলেন, ‘নিশ্চয়ই আপনি মৃতদেরকে শুনাতে পারেন না’ (নামল ৮০, রূম ৫২)। অন্যত্র তিনি বলেন, ‘আপনি কবরবাসীদেরকে শুনাতে সক্ষম নন’ (ফাত্বির ২২)। তবে অনেকে রাসূল (ছাঃ)-এর একটি হাদীছ দ্বারা শুনার উপর দলীল পেশ করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন, মানুষ যখন দাফন সেরে চলে আসে, কবরে মৃত ব্যক্তি তাদের সেন্ডেল বা জুতার আওয়ায শুনতে পায় (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/১২৬ ‘ঈমান’ অধ্যায় ‘কবর আযাব’ অনুচ্ছেদ)। এর উত্তরে শায়খ আলবানী (রহঃ) বলেন, যখন ফেরেশতাগণের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার জন্য মৃত ব্যক্তিকে জীবিত হয়, সেসময় সে জুতার আওয়াজ শুনতে পায়, অন্য সময়ে নয় (সিলসিলা যঈফাহ হা/১১৪৭-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)।
❓প্রশ্নঃ যারা সন্তান নষ্ট করে দেয় ক্বিয়ামতের দিন তাদের কী অবস্থা হবে?
🎤 ANSWER সন্তান হত্যা করা মহাপাপ (ইসরা ১৭/৩১)। বাসূল (ছাঃ) একে বড় গুনাহ্ সমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছেন (মুসলিম হা/৮৬)। সুতরাং তওবা না করে মারা গেলে কঠিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে (তাকভীর ৮১/৮-৯)।
❓প্রশ্নঃ শিরক এবং বিদ‘আতকারীকে আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন কেমন শাস্তি দিবেন? শিরক ও বিদ‘আত হতে বাঁচার উপায় কি?
🎤 ANSWER শিরক ও বিদ‘আত দুইটিই জঘন্য অপরাধ। যদি উক্ত পাপ হতে তওবা না করে কেউ মারা যায়, তাহলে আল্লাহ তাকে জাহান্নামের আগুনে পুড়িয়ে শাস্তি দিবেন। যেমন শিরক সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করবে আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দিবেন। আর তার স্থান হবে জাহান্নামে। আর সীমালংঘনকারীদের জন্য আখেরাতে কোন সাহায্যকারী থাকবে না (মায়েদাহ ৭২)। অতঃপর যারা বিদ‘আতী তারা রাসূল (ছাঃ)-এর সুন্নাতকে পরিত্যাগ করে মানুষের তৈরি বিধানের আনুগত্য করে। যারা আল্লাহ্র রাসূলের বিধান মানবে না, তারা মুমিন হতে পারবে না (নিসা ৬৫)। বিদ‘আতীরা হাউয কাওছারের পানি পান করার সুযোগ পাবে না এবং রাসূল (ছাঃ)-এর শাফা‘আতও পাবে না (মুসলিম হা/৪২৪৩)। অবশেষে তারা জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে (নাসাঈ হা/১৫৭৮)।
অতএব যাবতীয় কর্ম এবং ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করলে শিরক থেকে বাঁচা সম্ভব। অনুরূপ দলীলবিহীন ও জাল-যঈফ হাদীছভিত্তিক আমল ত্যাগ করে শুধু ছহীহ দলীল ভিত্তিক আমল করলে বিদ‘আত থেকে বাঁচা সম্ভব।
অতএব যাবতীয় কর্ম এবং ইবাদত শুধুমাত্র আল্লাহ্র সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে করলে শিরক থেকে বাঁচা সম্ভব। অনুরূপ দলীলবিহীন ও জাল-যঈফ হাদীছভিত্তিক আমল ত্যাগ করে শুধু ছহীহ দলীল ভিত্তিক আমল করলে বিদ‘আত থেকে বাঁচা সম্ভব।
❓প্রশ্নঃ পবিত্র কুরআনের হাফেযদেরকে ক্বিয়ামতের দিন যখন কুরআন পড়তে বলা হবে, তখন পড়তে পড়তে ভুলে গেলে কোন করণীয় থাকবে কি? না ফেরেশতাগণ বলে দিবেন?
🎤 ANSWER যাকে কুরআন পড়তে বলা হবে তিনি পড়তে সক্ষম হবেন। ভুলে যাবেন না ।
❓প্রশ্নঃ যে ব্যক্তির জীবনের প্রথম ও শেষ বাক্য ‘লা ইলা-হা ইল্লাল্লাহ’ হবে তাকে কোন পাপ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হবে না। যদিও সে পৃথিবীতে এক হাযার বছর বসবাস করে। উক্ত হাদীছের সত্যতা সম্পর্কে জানতে চাই।
🎤 ANSWER উক্ত বর্ণনাটি মিথ্যা বা জাল (সিলসিলা যঈফাহ হা/৬১৪৬)। বর্ণনাটি ‘তাবলীগী নিছাবে’র ‘ফাযায়েলে যিকর’ অংশে উল্লেখ করা হয়েছে। অবশ্য সেখানেও এটিকে মিথ্যা বলা হয়েছে। কিন্তু মূল উর্দূতে থাকলেও বাংলায় উক্ত অংশের অনুবাদ করা হয়নি (বঙ্গানুবাদ ফাযায়েলে আমল, পৃঃ ৪৭৭)।
❓প্রশ্নঃ হাদীছে বর্ণিত আছে, মৃত্যুর পরে রূহ ইল্লিয়ীন এবং সিজ্জীনে যায়। সেখানে মানুষ দলবদ্ধভাবে থাকে না এককভাবে থাকে?
🎤 ANSWER তাদের মধ্যে পরস্পরে সাক্ষাৎ হবে (হাফেয ইবনুল ক্বাইয়িম, আর-রূহ, পৃঃ ১৭)। সৎ বান্দাদের রূহ ইল্লিয়ীনে এবং পাপীদের রূহ সিজ্জীনে অবস্থান করে। তাদের আমল অনুযায়ী আরাম ও শাস্তি ভোগ করে (ফাত্বির ৭-৯, ১৮-২১; আবুদাঊদ হা/৪৭৫৫; মিশকাত হা/১৩১)। শহীদদের রূহ সম্পর্কে রাসূল (ছাঃ) বলেন, তাদের রূহ সবুজ পাখির পেটে থেকে জান্নাতের বিভিন্ন নদী ও বাগান থেকে আহার করে (মুসলিম হা/৪৯৯৩)।
❓প্রশ্নঃ ক্বিয়ামতের পূর্বে উল্লেখযোগ্য কী কী নিদর্শন দেখা দিবে?
🎤 ANSWER ক্বিয়ামতের পূর্বে প্রকাশিত নিদর্শন সমূহের মধ্যে কিছু ছোট আছে কিছু বড় আছে। ছোট নিদর্শনের সংখ্যা অনেক। কিছু ঘটে গেছে এবং ঘটছে। যেমন- শেষ নবী (ছাঃ)-এর আগমন, বায়তুল মুক্বাদ্দাস বিজয়, ভন্ড নবীদের আবির্ভাব, আমানতের খেয়ানত, ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব, সূদ, বাদ্যযন্ত্র ও মদ্যপানের বিস্তার, বড় বড় অট্টালিকা নির্মাণে প্রতিযোগিতা, হত্যাকান্ড বেশি হওয়া, শিরকের বিস্তার, প্রতিবেশীর হক নষ্ট করা, অশ্লীলতার ব্যাপকতা, নীচু লোকদের নেতৃত্ব পাওয়া, কাপড় পরিহিতা উলঙ্গ মহিলাদের আবির্ভাব, মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়া, ইলম উঠে যাওয়া, মূর্খতা ও ব্যভিচার বৃদ্ধি পাওয়া, পুরুষের স্বল্পতা ও নারীদের আধিক্য ইত্যাদি (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৪৩৭; বিস্তারিত দ্রঃ মিশকাত ‘ক্বিয়ামতের আলামত সমূহ’ অনুচ্ছেদ)।
আর কিছু বড় নিদর্শন আসবে যা এখনো ঘটেনি। যেমন- ইমাম মাহদীর আগমন, দাজ্জালের ফেৎনা, ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ, ইয়াজূজ-মাজূজের ফেৎনা, ধোঁয়া আসা, পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠা, একটি আলৌকিক পশুর আবির্ভাব ঘটা, আগুন মানুষকে হাশরের মাঠে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৬৪)।
আর কিছু বড় নিদর্শন আসবে যা এখনো ঘটেনি। যেমন- ইমাম মাহদীর আগমন, দাজ্জালের ফেৎনা, ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ, ইয়াজূজ-মাজূজের ফেৎনা, ধোঁয়া আসা, পশ্চিম দিক থেকে সূর্য উঠা, একটি আলৌকিক পশুর আবির্ভাব ঘটা, আগুন মানুষকে হাশরের মাঠে হাঁকিয়ে নিয়ে যাওয়া (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৪৬৪)।
❓প্রশ্নঃ ছহীহ হাদীছে আছে, যদি কোন সন্তান শিশু অবস্থায় মারা যায়, তাহলে ঐ সন্তান ক্বিয়ামতের দিন পিতা-মাতাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে(মুসলিম, মিশকাত হা/১৭৫২)। প্রশ্ন হল, ঐ পিতা-মাতা যদি ছালাত আদায় না করে এবং শিরক-বিদ‘আতের সাথে জড়িত থাকে তাহলে সেই পিতা-মাতার কী হবে?
🎤 ANSWER আল্লাহ তা‘আলা অনেক বান্দাকে ক্বিয়ামতের দিন সুফারিশের মাধ্যমে জান্নাতে যাওয়ার অনুমতি দিবেন (বুখারী হা/৬৫৬৫)। কিন্তু সে সুফারিশ তাদের জন্য হবে, যারা শিরক থেকে মুক্ত। সুতরাং মুশরিক, বিদ‘আতী, ছালাত আদায় করে না এমন পিতা-মাতার জন্য শিশু সন্তানের সুফারিশ গ্রহণযোগ্য হবে না (আম্বিয়া ২৮; বুখারী, কিতাবুত তাওহীদ ৭৪-৭৬ পৃঃ)।
❓প্রশ্নঃ মৃত ব্যক্তি কবরে কতদিন শাস্তি ভোগ করবে? জনৈক খতীব বলেন, ক্বিয়ামত পর্যন্ত শাস্তি হতে থাকবে। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক?
🎤 ANSWER উক্ত বক্তব্য সঠিক। দুনিয়ায়ী আমলের ভাল-মন্দের ফলাফল কবর থেকেই শুরু হয়। রাসূল (ছাঃ) বলেছেন, প্রতিদিন সকালে ও সন্ধ্যায় কবরবাসীকে তার জান্নাত অথবা জাহানণামের ঠিকানা দেখানো হয়। ক্বিয়ামত পর্যন্ত এই রূপ হতে থাকবে(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, বুখারী হা/১৩১৩; মিশকাত হা/১২৭)। ইবনু তায়মিয়াহ (রহঃ) বলেন, বারযাখী জীবনে (কবরে) ভাল মন্দের বদলা দেওয়া ক্বিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে (মাজমূ‘ ফাতাওয়া ২/৫৬; মাজমূ‘ ফাতাওয়া ইবনে বায ফাতাওয়া নং ৪২৬২।
❓প্রশ্নঃ ইসলামী সম্মেলনে জনৈক বক্তা বলেন, কবরে নবী-রাসূল, ছাহাবায়ে কেরাম, পীর-আওলিয়াদের লাশ অক্ষত থাকে। তাঁদের লাশ মাটিতে খায় না। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক?
🎤 ANSWER মুমিনদের মৃত্যুর পর তাদের রূহ আসমানে চলে যায় এবং শরীর মাটিতে খেয়ে নেয়। রাসূল (ছাঃ) বলেন, আদমের সকল সন্তানকে মাটিতে খেয়ে নিবে শুধু তার মেরুদন্ডের সর্বনিম্ন হাড্ডি (عَجْبُ الذَّنَبِ) ব্যতীত। কারণ তা থেকেই তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে এবং তা থেকেই তাদের দেহ পুনর্গঠন করা হবে’ (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫২১)।
কিন্তু নবী-রাসূলের লাশ অক্ষত থাকবে। মাটিতে খাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ ‘আল্লাহ তা‘আলা নবী-রাসূলদের লাশ খাওয়া মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন’ (ছহীহ আবুদাউদ হা/৯৬২; ইবনে মাজাহ হা/১০৮৫; মিশকাত হা/১৩৬১, ৬৬ ‘জুম‘আ’ অধ্যায়)। তাঁরা ব্যতীত অন্য কারো লাশ মাটিতে খাবে না বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। হতে পারে কারো লাশ দ্রুত খাবে, কার দেরিতে। অনেকের লাশ বহুদিন পরেও স্বাভাবিক অবস্থায় পাওয়া যায়। এটা সম্পূর্ণ আল্লাহ্র ইচ্ছাধীন। উল্লেখ্য যে, ফেরাঊনের লাশকে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের উপদেশ গ্রহণের জন্য ক্বিয়ামত পর্যন্তত অক্ষুণ্ণ রাখবেন (ইউনুস ৯২)।
কিন্তু নবী-রাসূলের লাশ অক্ষত থাকবে। মাটিতে খাবে না। রাসূল (ছাঃ) বলেন, إِنَّ اللهَ حَرَّمَ عَلَى الْأَرْضِ أَنْ تَأْكُلَ أَجْسَادَ الْأَنْبِيَاءِ ‘আল্লাহ তা‘আলা নবী-রাসূলদের লাশ খাওয়া মাটির জন্য হারাম করে দিয়েছেন’ (ছহীহ আবুদাউদ হা/৯৬২; ইবনে মাজাহ হা/১০৮৫; মিশকাত হা/১৩৬১, ৬৬ ‘জুম‘আ’ অধ্যায়)। তাঁরা ব্যতীত অন্য কারো লাশ মাটিতে খাবে না বলে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। হতে পারে কারো লাশ দ্রুত খাবে, কার দেরিতে। অনেকের লাশ বহুদিন পরেও স্বাভাবিক অবস্থায় পাওয়া যায়। এটা সম্পূর্ণ আল্লাহ্র ইচ্ছাধীন। উল্লেখ্য যে, ফেরাঊনের লাশকে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের উপদেশ গ্রহণের জন্য ক্বিয়ামত পর্যন্তত অক্ষুণ্ণ রাখবেন (ইউনুস ৯২)।
❓প্রশ্নঃ কোন্ দুই ব্যক্তি রাসুল (ছাঃ)-এর সুফারিশ ছাড়াই জান্নাতে যাবে? তারা দুনিয়াতে কী ধরনের আমল করতেন?
🎤 ANSWER উক্ত মর্মে কোন দলীল পাওয়া যায় না। বরং দুই শ্রেণীর মানুষ তাঁর শাফা‘আত লাভ করতে সক্ষম হবে না মর্মে হাদীছ বর্ণিত হয়েছে। অত্যাচারী শাসক এবং খিয়ানতকারী ব্যক্তি (ত্বাবারাণী, ছহীহুল জামে‘ হা/৩৭৯৮)।
❓প্রশ্নঃ প্রায় মসজিদের ইমাম বলে থাকেন, ক্বিয়ামতের দিন মসজিদ ধ্বংস হবে না। মসজিদ প্রত্যেক মুছল্লীকে নিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক?
🎤 ANSWER উক্ত বক্তব্যটি সঠিক নয়। কারণ আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন, ভূ-পৃষ্ঠে যা কিছু আছে সবই ধ্বংসশীল এবং অবশিষ্ট থাকবে শুধু আপনার প্রতিপালকের মুখমন্ডল যিনি মহিমাময়, মহানুভব (রাহমান ২৭)। আল্লাহ তা‘আলা অন্যত্র বলেন, আল্লাহ্র মুখমন্ডল ব্যতীত সবকিছু ধ্বংসশীল (ক্বাছাছ ৮৮)। সুতরাং নিঃসন্দেহে মসজিদসহ বিশ্বজগতের সবকিছুই সেদিন ধ্বংস হয়ে যাবে। তবে ক্বিয়ামতের দিন যমীন তাঁর উপরে কৃত ভাল-মন্দ সব বিষয়ে সাক্ষ্য দিবে (যিলযাল ৪)। সে হিসাবে মসজিদের মাটি তার মুছল্লীদের ব্যাপারে সাক্ষী হবে।
❓প্রশ্নঃ শুক্রবারে জান্নাতের দরজা খুলে দেওয়া হয় এবং সেদিন কেউ মারা গেলে বিনা হিসাবে জান্নাতে চলে যায়। উক্ত বক্তব্য কি সঠিক?
🎤 ANSWER উক্ত মর্মে কোন ছহীহ দলীল পাওয়া যায় না। তবে কোন মুসলিম ব্যক্তি শুক্রবারে মারা গেলে সে কবরের ফিৎনা হ’তে বেঁচে যাবে মর্মে ছহীহ দলীল রয়েছে(আহমাদ, তিরমিযী হা/১০৯৫, সনদ হাসান; মিশকাত হা/১৩৬৭, ‘জুম‘আ’ অনুচ্ছেদ)। এখানে ‘ফিৎনা’ বলতে সওয়াল-জওয়াব ও কবরের আযাব বুঝানো হয়েছে। এটি ব্যতিক্রম বা খাছ বিষয়। এর মধ্যে যুক্তির কোন সুযোগ নেই। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, স্থান ও কালের একটি বিশেষ প্রভাব রয়েছে। (দ্রঃ মির‘আত ৪/৪৪০-৪১)।
❓প্রশ্নঃ কবরে সওয়াল-জওয়াবের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে সেখানে কিভাবে দেখানো হবে?
ANSWER
সেখানে রাসূল (ছাঃ)-কে দেখানো হবে বলে কোন প্রমাণ নেই। বরং রাসূল (ছাঃ) সম্পর্কে তার ধারণা ও আক্বীদা কি, প্রশ্নের মাধ্যমে সেটাই যাচাই করা হবে(মির‘আতুল মাফাতীহ হা/১৩১-এর ব্যাখ্যা দ্রঃ)।
❓প্রশ্নঃ ক্বিয়ামতের দিন সকল মানুষ কি বস্ত্রহীন অবস্থায় উঠবে? সেদিন কারো পরণে কাপড় থাকবে কি?
🎤 ANSWER ক্বিয়ামতের দিন সকল মানুষ বস্ত্রহীন নগ্নদেহে উঠবে (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৫৩৬)। এদিন ইবরাহীম (আঃ)-কে সর্বপ্রথম কাপড় পরানো হবে(মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৫৩৫)।
❓প্রশ্নঃ কবরের আযাব কবরে হয় না আসমানে হয়? একজন খত্বীবের বক্তব্যে জানতে পারি যে, কবরের আযাব আসমানে হয়। তিনি সূরা বাক্বারাহর ২৮ আয়াত দ্বারা দলীল দিয়েছেন।
🎤 ANSWER কবরের আযাব সত্য (আন‘আম ৯৩, মুমিন ৪৬)। যা অসংখ্য ছহীহ হাদীছ দ্বারা প্রমাণিত (বুখারী, মিশকাত হা/১২৬, আহমাদ, মিশকাত হা/১৬৩০, সনদ ছহীহ)। রাসূল (ছাঃ) সবসময় কবরের আযাব থেকে পানাহ চাইতে বলেছেন(মুসলিম, মিশকাত হা/৯৪০)। এক্ষণে কবরের আযাব শারীরিকভাবে কিংবা আত্মিকভাবে হবে এ প্রশ্নে ওলামায়ে সালাফের মাঝে মতপার্থক্য লক্ষ্য করা যায়। তবে সঠিক কথা হ’ল- কবরের আযাব আত্মা ও শরীর উভয়ের উপরই হবে। শরীর থেকে রূহ বেরিয়ে যাওয়ার পর তা আযাব কিংবা নে‘মত ভোগ করতে থাকবে। আর নির্দিষ্ট সময়ে তা শরীরের সাথে যুক্ত হওয়ার মাধ্যমে শরীরও শাস্তির সম্মুখীন হবে; যার প্রমাণ হাদীছে পাওয়া যায় এবং যার নিদর্শন বাহ্যতঃই অনেক মৃত ব্যক্তির কবরে লক্ষ্য করা যায়। ইমাম ইবনে তায়মিয়াহ ও জমহূর ওলামায়ে সালাফ অনুরূপ মন্তব্য করেছেন (ইবনু তায়মিয়াহ, আল-ইখতিয়ারাতুল ফিক্বহিয়াহ, পৃঃ ১/৪৪৯)। আর প্রশ্নে উল্লেখিত সূরা বাক্বারাহর ২৮ নং আয়াতে মানুষের জীবন-মৃত্যুর পরিক্রমা উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে কবরের আযাব আসমানে হবে কি না এমন কোন সুস্পষ্ট ইঙ্গিত পাওয়া যায় না। সর্বোপরি এ বিষয়ে অধিক আলোচনা অপ্রয়োজনীয়। কারণ এটি গায়েবী বিষয়। অতএব এ বিষয়ে কেবল হাদীছে যে বর্ণনা এসেছে তার উপর বিশ্বাস রাখাই যথেষ্ট।
❓প্রশ্নঃ পরকালে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর পিতা-মাতার অবস্থান কি হবে?
🎤 ANSWER মুশরিক অবস্থায় মারা যাওয়ার কারণে তারা জাহান্নামী হবে। রাসূল (ছাঃ)-কে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করার অনুমতি দেওয়া হয়নি (তওবাহ ১১৩; মুসলিম, মিশকাত হা/১৭৬৩)। রাসূল (ছাঃ) তাঁর পিতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হ’লে উত্তরে বলেন, আমার পিতা জাহান্নামী (মুসলিম হা/৫২১; ইবনু মাজাহ হা/১৫৭৩; সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১৮)।
❓প্রশ্নঃ ক্বিয়ামতের দিন সূর্য ও চন্দ্র কি অবস্থায় থাকবে? তারা কি জাহান্নামে থাকবে?
🎤 ANSWER সূর্য ও চন্দ্র উভয়কে ক্বিয়ামতের দিন আলোহীন করা হবে (বুখারী, মিশকাত হা/৫৫২৬)। সূর্য মাত্র এক মাইল দূরে থাকবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৫৪০)। তারপর জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে (সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১২৪, ১/১২৩ পৃঃ)।
উল্লেখ্য, সূর্য ও চন্দ্রকে শাস্তি দেওয়ার জন্য জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে না; বরং এগুলিকে যারা পূজা করেছে তাদেরকে অপদস্থ করার জন্য এটা করা হবে। মা‘বূদের অবস্থা যদি এরূপ হয় তাহ’লে তাদের যারা পূজা করেছে তাদের অবস্থা কেমন হ’তে পারে?
উল্লেখ্য, সূর্য ও চন্দ্রকে শাস্তি দেওয়ার জন্য জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে না; বরং এগুলিকে যারা পূজা করেছে তাদেরকে অপদস্থ করার জন্য এটা করা হবে। মা‘বূদের অবস্থা যদি এরূপ হয় তাহ’লে তাদের যারা পূজা করেছে তাদের অবস্থা কেমন হ’তে পারে?
❓প্রশ্নঃ শুক্রবারে মৃত্যুবরণ করলে কবর আযাব মাফ হয় কি? দলীল ভিত্তিক জানিয়ে বাধিত করবেন।
🎤 ANSWER রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘কোন মুসলমান যদি জুম‘আর দিনে অথবা জুম‘আর রাতে মারা যায়, আল্লাহ তাকে কবরের ফিৎনা হতে রক্ষা করেন’ (আহমাদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/১৩৬৭)। ইমাম সুয়ূত্বী বলেন, কেননা জুম‘আর দিন জাহান্নাম উত্তপ্ত করা হয় না। এর দরজা বন্ধ থাকে। জাহান্নামের দারোগার এদিন অন্য দিনের ন্যায় কাজ থাকে না। এ দিন আল্লাহ যদি কোন বান্দার মৃত্যু ঘটান, তাহ’লে ঐ বান্দা ঐ সুযোগ লাভে ধন্য হয় (মির‘আত ৪/৪৪১ পৃঃ)। তবে এর অর্থ এটা নয় যে, মুশরিক ও মুনাফিকরা স্থায়ীভাবে কবর আযাব হ’তে মুক্তি পাবে।
❓প্রশ্নঃ জনৈক বক্তা বলেছেন, ক্বিয়ামতের দিন মানুষের সর্বপ্রথম হিসাব ছালাত সম্পর্কে হবে, আবার কেউ বলেন, খুন সম্পর্কে হবে। কোন্টি সঠিক জানিয়ে বাধিত করবেন।
🎤 ANSWER উপরোক্ত দু’টি বর্ণনাই সঠিক। এর অর্থ হ’ল : সর্বপ্রথম ছালাতের হিসাব নেওয়া হবে আল্লাহর হক হিসাবে। আর বান্দার হক হিসাবে সর্বপ্রথম খুনের হিসাব নেওয়া হবে (বুলূগুল মারাম হা/১১৫৮-এর ব্যাখ্যা)।
❓প্রশ্নঃ যাদের নেকী ও গুনাহ সমান হবে তারা জান্নাতে যাবে না জাহান্নামে যাবে?
🎤 ANSWER তারা জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝখানে একটি উঁচু জায়গায় অবস্থান করবে। তারাই হবে আ‘রাফবাসী (তাফসীরে ইবনে কাছীর ১/২২৫ পৃঃ, সূরা আ‘রাফ ৪৬ ও ৪৭ নং আয়াতের আলোচনা দ্রঃ)।
❓প্রশ্নঃ মানুষ ও জিন যে বয়সে মারা যায় ক্বিয়ামতের দিন কি সেই বয়সেই উঠানো হবে?
🎤 ANSWER ঐ সময় জান্নাতীদের বয়স ৩০ অথবা ৩৩ হবে (তিরমিযী হা/২৫৪৫; মিশকাত হা/৫৬৩৯ ‘ক্বিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায় ‘জান্নাত ও জান্নাতবাসীদের বিবরণ’ অনুচ্ছেদ-৫)। অনুরূপ বয়স হবে জাহান্নামীদের। তবে উক্ত মর্মে বর্ণিত হাদীছটি যঈফ(তিরমিযী হা/২৫৬২; মিশকাত হা/৫৬৪৮)। জিনদের বয়স কত হবে সে সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। তবে একই রূপ হবে বলে অনুমতি হয়। আল্লাহ সর্বাধিক অবগত। রাসূল (ছাঃ) বলেন, ক্বিয়ামতের দিন যখন ইসরাফীল (আঃ) দ্বিতীয় ফুঁৎকার দিবেন তখন মানুষকে নগ্নপদে, নগ্নদেহে ও খাতনা বিহীন অবস্থায় উঠানো হবে (সূরা আম্বিয়া ১০৪; মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫৫৩৫ ও ৫৫৩৬)।
❓প্রশ্নঃ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, মানুষ মারা গেলে সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু অন্য হাদীছে রয়েছে, মৃত্যুর পর তার পক্ষ থেকে হজ্জ ও ছাদাক্বা করলে তাও পৌঁছে। এই দুই হাদীছের সমাধান জানিয়ে বাধিত করবেন।
🎤 ANSWER উক্ত হাদীছে তার নিজস্ব আমল বন্ধ হওয়ার কথা বলা হয়েছে (মুসলিম, মিশকাত হা/২০৩)। কিন্তু তার নামে কেউ হজ্জ বা ছাদাক্বা করলে তা তার কাছে পৌঁছবে। কারণ এটা তার করা আমল নয় (মুসলিম, মিশকাত হা/১৯৫০)।
❓প্রশ্নঃ মৃত পিতা-মাতার মাগফেরাতের জন্য কী কী আমল করা যেতে পারে?
🎤 ANSWER মৃত পিতা-মাতার জন্য দো‘আ করতে হবে (ইসরা ২৪) এবং তাদের নামে ছাদাক্বা করতে হবে (বুখারী হা/২৭৭০, ‘অছিয়ত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৭)।
❓প্রশ্নঃ আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে এবং গাড়ী দুর্ঘটনায় মারা গেলে তাদের হিসাব হবে কি? অনেকে বলে তাদের হিসাব হবে না। তারা শহীদ।
🎤 ANSWER হিসাব হবে। হিসাব হবে না মর্মে কোন দলীল পাওয়া যায় না। তবে আগুনে পুড়ে, পানিতে ডুবে, দেয়াল চাপা পড়ে মারা গেলে শহীদের মর্যাদা পাবে মর্মে ছহীহ হাদীছ বর্ণিত হয়েছে (ছহীহ আবূদাঊদ হা/৩১১১; ছহীহ নাসাঈ হা/১৮৪৬)। বিনা হিসাবে জান্নাতে যাবেন ৭০ হাযার মুমিন, যারা ঝাড়-ফুঁক নেননি, যারা অশুভ লক্ষণকে গ্রাহ্য করেননি এবং যারা সর্বাবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করেছেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫২৯৫, ‘রিক্বাক্ব’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-৪)।
❓প্রশ্নঃ ক্বিয়ামতের মাঠে সর্বপ্রথম কাকে কবর থেকে উঠানো হবে?
🎤 ANSWER শেষনবী মুহাম্মাদ (ছাঃ)- কে সর্বপ্রথম কবর থেকে উঠানো হবে (মুসলিম, মিশকাত হা/৫৭৪১ ‘ফাযায়েল ও শামায়েল’ অধ্যায়)।
❓প্রশ্নঃ এমন কোন আমল আছে কি যা করলে আমি কবরের চাপ থেকে মুক্তি পাব?
🎤 ANSWER এজন্য সর্বাগ্রে শিরক মুক্ত হ’তে হবে এবং শরী‘আত অনুমোদিত নেক আমল করতে হবে (কাহফ ১১০)। কবরের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য নির্দিষ্ট কোন আমল নেই। নবী করীম (ছাঃ) কবরের শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দো‘আ পড়তেন। আয়েশা (রাঃ) বলেন, নবী করীম (ছাঃ) ছালাত হ’তে সালাম ফেরানোর পূর্বে চারটি বস্ত্ত হ’তে পরিত্রাণ চাইতেন। তার একটি হচ্ছে কবরের শাস্তি (মুত্তাফাক্ব
❓প্রশ্নঃ আল্লাহ তা‘আলা রামাযান মাসে কোন ধরনের জাহান্নামীকে মুক্তি দেন? এটা কি তাকদীর অনুসারে হয়ে থাকে? এ মাসে সকল মুমিনের কবর আযাব ক্ষমা করে দেওয়া হয় কি? কবর আযাব ক্ষমা করা হলে তাকি কেবল রামাযানের ৩০ দিনের জন্য, না ক্বিয়ামত পর্যন্ত?
🎤 ANSWER ছিয়াম পালন ও তওবা করার কারণে জাহান্নাম মুখী ব্যক্তিকে আল্লাহ মুক্তি দান করেন। এটা অবশ্যই তাকদীর অনুযায়ী হয়ে থাকে। প্রকৃত মুমিন সৎকর্মশীল ব্যক্তিকে কবরে কোন মাসেই আযাব দেয়া হবে না। এ মাসে কবরের আযাব মাফ করে দেওয়া হয় এ কথা সঠিক নয়। এ মাসে মারা গেলে কবরে আযাব হবে না এ কথাটিও সঠিক নয়।
❓প্রশ্নঃ ক্বিয়ামতের দিন হাশরের মাঠে প্রত্যেক মানুষ তার নিজ পাপের সমপরিমাণ ঘামের মধ্যে নিমজ্জিত থাকবে। এ হাদীছটি কি ছহীহ?
🎤 ANSWER হাদীছটি ছহীহ (মুসলিম হা/২৮৬৪; মিশকাত হা/৫৫৪০ ‘কিয়ামতের অবস্থা’ অধ্যায় ‘হাশর’ অনুচ্ছেদ)।
❓প্রশ্নঃ শিশু সন্তান মারা গেলে তারা কি ক্বিয়ামতের দিন পিতা-মাতার জন্য সুফারিশ করবে?
🎤 ANSWER শিশু অবস্থায় কোন ছেলে-মেয়ে মারা গেলে তারা ক্বিয়ামতের দিন তাদের মুসলিম পিতা-মাতাকে জান্নাতে নিয়ে যাবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি যে, মুসলিম শিশু সন্তানেরা জান্নাতের ‘শিশু খাদেম’ হবে। তাদের কেউ পিতা-মাতা কাউকে পেলে তার কাপড় ধরে টেনে জান্নাতে না নেওয়া পর্যন্ত ছাড়বে না’ (মুসলিম, মিশকাত হা/১৭৫২)। অবশ্য যদি আল্লাহ তাদেরকে সুফারিশের অনুমতি দেন, তাহ’লেই কেবল সেটা সম্ভব হবে’ (বাক্বারাহ ২/২৫৫)।
❓প্রশ্নঃ স্বামী ও স্ত্রী দু’জনেই যদি নেক আমল করে তাহ’লে মৃত্যুর পর তাদের দু’জনের সাক্ষাৎ হবে কি?
🎤 ANSWER স্বামী-স্ত্রী উভয়ে জান্নাতী হ’লে আল্লাহ তাদেরকে একত্রে জান্নাতে প্রবেশের নির্দেশ দিবেন’ (যুখরুফ ৪৩/৭০)। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) আয়েশা (রাঃ)-কে বলেন, তুমি কি সন্তুষ্ট নও যে, তুমি দুনিয়া ও আখেরাতে আমার স্ত্রী হয়ে থাকবে? তিনি বললেন, জি হ্যাঁ। তখন নবী করীম (ছাঃ) বললেন, তুমি ইহকালে ও পরকালে আমার স্ত্রী’ (হাকেম, সিলসিলা ছাহীহাহ হা/২২৫৫)। মু‘আবিয়া (রাঃ) আবুদ্দারদার বিধবা স্ত্রীকে বিবাহের প্রস্তাব দিলে তিনি তা নাকচ করে বলেন, আমি আবুদ্দারদাকে বলতে শুনেছি, রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, মহিলা তার শেষ স্বামীর সাথে জান্নাতে থাকবে (বাগাভী, ত্বাবারাণী, সিলসিলা ছাহীহাহ হা/১২৮১)। শুধু নেককার স্বামী-স্ত্রী নন, নেককার সন্তানেরাও পিতা-মাতার সঙ্গে জান্নাতে থাকবে (তূর ৫২/২১)। [আল্লাহ আমাদেরকে সপরিবারে জান্নাতুল ফেরদৌসে স্থান দান করুন- আমীন!]
❓প্রশ্নঃ মৃত্যু যন্ত্রণা ও কবরের আযাব থেকে বাঁচার উপায় জানিয়ে বাধিত করবেন।
🎤 ANSWER মুসলিম ব্যক্তি শরী‘আতের যথাযথ অনুসারী হয়ে সার্বিক জীবন পরিচালনা করলে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাবে ইনশাআল্লাহ। সেই সাথে নিয়মিতভাবে ‘সূরা মুলক’ প্রতিদিন তেলাওয়াত করলেও কবরের আযাব থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার আশা করা যায় (হাকেম, সিলসিলা ছহীহাহ হা/১১৪০)। অন্যত্র রাসূল (ছাঃ) বলেন, দান কবরের শাস্তিকে মিটিয়ে দেয় এবং ক্বিয়ামতের দিন মুমিন তার দানের ছায়াতলে আশ্রয় পাবে’(ত্বাবারাণী, সিলসিলা ছহীহাহ হা/৩৪৮৪)। এছাড়া মৃত্যু যন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর নিকটে প্রার্থনা করতে হবে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) প্রত্যেক ছালাতে জাহান্নাম ও কবরের আযাব থেকে পরিত্রাণ চাইতেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৯৩৯)।
❓প্রশ্নঃ জনৈক আলেম বলেন, খাদীজা (রাঃ)-এর দাফনের সময় রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-এর অশ্রু ফোঁটায় তাঁর কবর সিক্ত হলে আল্লাহ মুনকার-নাকীর কে ক্বিয়ামত পর্যন্ত সওয়াল-জওয়াব করতে নিষেধ করে দেন। এ বিবরণ কি সত্য?
🎤 ANSWER উক্ত বক্তব্য ভিত্তিহীন ও বানোয়াট।
❓প্রশ্নঃ অত্যাচারের শিকার এমন ব্যক্তি প্রতিশোধ না নিয়ে ক্ষমা করে দিলে সে কেমন প্রতিদান লাভ করবে?
🎤 ANSWER (১) আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামতের দিন তার মর্যাদা বাড়িয়ে দিবেন (মুসলিম হা/২৫৮৮; মিশকাত হা/১৮৮৯; ছহীহ তারগীব হা/৮১৪)। (২) রাগ প্রয়োগ না করে ধৈর্যধারণ করলে ক্বিয়ামতের দিন তাকে পসন্দমত হূর গ্রহণের স্বাধীনতা প্রদান করা হবে(আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৫০৮৮, সনদ হাসান) এবং (৩) মাযলূম যালেমের প্রতিবাদ না করে ধৈর্যধারণ করলে আল্লাহ তাকে ফেরেশতা দ্বারা সাহায্য করেন (আহমাদ, মিশকাত হা/৫১০২, ছহীহাহ হা/২২৩১)। এছাড়া রাসূল (ছাঃ) আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ক্রোধ দমন করাকে সর্বাধিক বীরত্ব হিসাবে উল্লেখ করেছেন (মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৫১০৫)।
❓প্রশ্নঃ যে ব্যক্তি মক্কার পথে মৃত্যুবরণ করবে কিয়ামতের দিন তার হিসাব গ্রহণ করা হবে না মর্মে বর্ণিত হাদীছটি কি ছহীহ?
🎤 ANSWER হাদীছটি মওযূ‘ বা জাল। এটি বায়হাক্বী শু‘আবুল ঈমান, মুসনাদে হারেছ ও ইবনু ‘আদী সহ কয়েকটি গ্রন্থে সংকলিত হয়েছ। হাদীছটি হযরত জাবের ও আয়েশা (রাঃ) হ’তে মরফূ‘ সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। প্রথম সূত্রে ইসহাক বিন বিশ্র আল-কাহেলী নামে একজন রাবী আছেন, যিনি ‘মিথ্যাবাদী’ হিসাবে অভিযুক্ত এবং দ্বিতীয় সূত্রে ‘আয়েয বিন নুসাইর নামে একজন রাবী আছেন, যিনি ‘অধিক ভুলকারী’ হিসাবে দুর্বল (দ্রঃ সিলসিলা যঈফাহ হা/২৮০৪)।
❓প্রশ্নঃ জনৈক ব্যক্তি বলেন, একদল আলেম ক্বিয়ামতের দিন তাদের নাড়িভুঁড়ির চারপাশে ঘুরতে থাকবে, যারা জনগণকে যা উপদেশ দিত নিজেরা তা মেনে চলত না। উক্ত বক্তব্যের সত্যতা আছে কি?
🎤 ANSWER উক্ত বক্তব্য সঠিক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেন, ‘ক্বিয়ামতের দিন এক ব্যক্তিকে এনে তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। আগুনে তার নাড়িভুঁড়ি বেরিয়ে যাবে। তখন সে ঐ নাড়িভুঁড়ির চতুষ্পার্শ্বে ঘুরতে থাকবে। যেমনভাবে গাধা ঘানির চতুষ্পার্শ্বে ঘুরে থাকে। এহেন অবস্থাদৃষ্টে জাহান্নামবাসীরা তার চারপাশে একত্রিত হবে ও তাকে লক্ষ্য করে বলবে, হে অমুক! তোমার এ কী দশা? তুমি না সর্বদা আমাদেরকে ভাল কাজের উপদেশ দিতে ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতে? তখন লোকটি বলবে, আমি তোমাদেরকে ভাল কাজের উপদেশ দিতাম, কিন্তু নিজে তা করতাম না। আমি তোমাদেরকে মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতাম, কিন্তু আমি নিজে সে কাজ করতাম’ (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত হা/৫১৩৯ ‘সৎ কাজের নির্দেশ’ অনুচ্ছেদ)।
❓প্রশ্নঃ জনৈক আলেম বলেন, যে ব্যক্তি সারা জীবন আমল করেছে, কিন্তু অন্য মানুষকে কখনো দ্বীনের দাওয়াত দেয়নি। ক্বিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন। উক্ত বক্তব্যের কোন সত্যতা আছে কি?
🎤 ANSWER ইসলামের মূল দর্শন হ’ল তাওহীদের প্রচার ও প্রতিষ্ঠা দান। মানব সমাজে আল্লাহ্র দ্বীনের বার্তা ছড়িয়ে দেয়ার জন্য কুরআন ও হাদীছে মুসলিম উম্মাহকে জোরালো নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে। এমনকি যদি একটি আয়াতও কেউ জানে, তা প্রচার করার জন্য রাসূল (ছাঃ) নির্দেশ দিয়েছেন (বুখারী, মিশকাত হা/১৯৮)। সুতরাং দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ থেকে কারো পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। বরং কেউ যদি শারঈ ওযর ব্যতীত দৈনন্দিন ব্যস্ততার অজুহাতে বা অলসতাবশতঃ তাবলীগ বা দ্বীনের প্রচার না করে, তাহ’লে সে নিঃসন্দেহে গোনাহগার হবে (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫১৪০, সনদ হাসান)। তবে এর জন্য আল্লাহ তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন এমনটি নয়। কেননা একদিন ছাহাবায়ে কেরাম রাসূল (ছাঃ)-কে সর্বোত্তম মুমিন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন, যে মুমিন আল্লাহ রাস্তায় জান ও মাল দ্বারা জিহাদ করে। ছাহাবীগণ বললেন, অতঃপর কে? তিনি বললেন, যে মুমিন আল্লাহ্র ভয়ে পাহাড়ের কোন গুহায় আশ্রয় নিয়ে আল্লাহ্র ইবাদত করে এবং স্বীয় অনিষ্ট থেকে লোকদেরকে নিরাপদ রাখে (বুখারী হা/২৭৮৬, মুসলিম হা/১৮৮৮)।
0 Comments