সুরা আল ইমরান ০১ থেকে ১৫ পর্যন্ত
তাফসীরঃ ফাতহুল মাজীদ
ইসলামিক এডুকেশন এন্ড রিসার্চ ফাউন্ডেশন (এই. ই.
আর. এফ)
অনুবাদ ও গবেষণা বিভাগ কর্তৃক সংকলিত।ও সম্পাদিত
সার্বিক তত্ত্বাবধানেঃ-আবু আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ খান মাদানী
সম্পাদনা পরিষদঃ-
প্রফেসর এ.কে.এম শামসুল আলম
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইলিয়াস আলী
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ মুযযাম্মিল আলী
প্রফেসর ড. মুহাম্মদ লাকমান হুসেন
অধ্যাপক ড. আব্দুল্লাহ ফারুক সালাফী |
অধ্যাপক ড. সাইফুল্লাহ আল-মাদানী
শায়খ মুস্তফা বিন বাহারুদ্দীন সালাফী
শায়খ ড. হাফিয় রফিকুল আল-মাদানী
শায়খ মাসউদুল আলম উমরী
শায়খ মুফায়যাল হুসাইন আল-মাদানী
শায়খ মুহাম্মদ ঈসা মিয়া আল-মাদানী
শায়খ মুহাম্মদ ইরফান আলী আব্বাস আল-মাদানী
শায়খ হাবিবুর রহমান আল-মাদানী |
শায়খ হাফিয় আনিসুর রহমান আল-মাদানী |
শায়খ ইব্রাহীম বিন আবদুল হালীম আল-মাদানী
শায়খ আব্দুন নূর আবু সাঈদ আল-মাদানী |
শায়খ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ খান আল-মাদানী
শায়খ হাফিয় আনিসুর রহমান আল-মাদানী
শায়খ ইব্রাহীম বিন আবদুল হালীম আল-মাদানী
শায়খ আব্দুন নূর আবু সাঈদ আল-মাদানী
শায়খ মুহাম্মদ আসাদুল্লাহ খান আল-মাদানী
পরিবেশনায়ঃ আল খাইর
পাবলিকেশন্ম, নাজির বাজার, | ঢাকা।
সাম্প্রতিককালে সংকলিত অন্যতম কিছু তাফসীরের মধ্যে
তাফসীর ফাতহুল মাজীদ উল্লেখযোগ্য। এই তাফসীরটি শাইখ মুহাম্মাদ শহীদুল্লাহ খান
মাদানীর তত্ত্বাবধানে সংকলন করা হয়েছে।
খণ্ড সংখ্যাঃ ৩
পৃষ্ঠা সংখ্যাঃ ২৫৯৮ (৮২৪ + ৯৬০ + ৮১৪)
মুদ্রিত মূল্যঃ ২৫৫০ (৯০০ + ৮৫০ + ৮০০)
তাফসীর ফাতহুল মাজীদ-এর উল্লেখযোগ্য
বৈশিষ্ট্যসমূহঃ
০১. আরবী আয়াতের পাশাপাশি অতি সহজ - সরল বাংলা
অনুবাদ।
০২. জটিল ও কঠিন শব্দার্থ।
০৩. গ্রহণযোগ্য বর্ণনার আলোকে শানে নুযুল।
০৪. কুরআনুল কারীম ও স্বহীহ হাদীছ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থের আলোকে সংক্ষিপ্ত তাফসীর সংকলন।
০৫. স্বহীহ আক্বীদাহ ও শারয়ী বিধানমূলক আয়াতের শিক্ষা।
০৬. কুরআন ও সহীহ হাদীছের আলোকে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সমাধান।
০৭. ভিত্তিহীন প্রচলিত তাফসীর সম্পর্কে সতর্কীকরণ।
০৮. তাফসীরে ব্যবহৃত আয়াতসমূহ নম্বর ও সূরাসহ উল্লেখ করা হয়েছে।
০৯. যথাসাধ্য হাদীছের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
১০. সাধ্যানুযায়ী স্বহীহ বুখারী, স্বহীহ মুসলিম, সুনান আবূ দাউদ, সুনান তিরমিযি, সুনান নাসাঈ, সুনান ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক ও মুসনাদে আহমাদ ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থের হাদীসসমূহে মাকতাবাহ শামিলার নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।
১১. বাংলাভাষী পাঠকদের সহজ পাঠের জন্য আরবী বিশেষ ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
১২. সর্বোপরি উন্নতমানের কাগজে মুদ্রণ, মজবুত ও আকর্ষণীয় বাইন্ডিং করা হয়েছে।প্রথম খণ্ডে সূরাহ আল ফাতিহাহ থেকে সূরাহ আত তাওবাহ্, দ্বিতীয় খণ্ডে সূরাহ ইউনুস থেকে সূরাহ আল ফাথির এবং তৃতীয় খণ্ডে সূরাহ ইয়াসীন থেকে সূরাহ আন নাসের তাফসীর রয়েছে।
০২. জটিল ও কঠিন শব্দার্থ।
০৩. গ্রহণযোগ্য বর্ণনার আলোকে শানে নুযুল।
০৪. কুরআনুল কারীম ও স্বহীহ হাদীছ ও নির্ভরযোগ্য তাফসীরগ্রন্থের আলোকে সংক্ষিপ্ত তাফসীর সংকলন।
০৫. স্বহীহ আক্বীদাহ ও শারয়ী বিধানমূলক আয়াতের শিক্ষা।
০৬. কুরআন ও সহীহ হাদীছের আলোকে বিভিন্ন প্রাসঙ্গিক বিষয়ের সমাধান।
০৭. ভিত্তিহীন প্রচলিত তাফসীর সম্পর্কে সতর্কীকরণ।
০৮. তাফসীরে ব্যবহৃত আয়াতসমূহ নম্বর ও সূরাসহ উল্লেখ করা হয়েছে।
০৯. যথাসাধ্য হাদীছের বিশুদ্ধতা নিশ্চিত করা হয়েছে।
১০. সাধ্যানুযায়ী স্বহীহ বুখারী, স্বহীহ মুসলিম, সুনান আবূ দাউদ, সুনান তিরমিযি, সুনান নাসাঈ, সুনান ইবনে মাজাহ, মুয়াত্তা মালিক ও মুসনাদে আহমাদ ইত্যাদি হাদীস গ্রন্থের হাদীসসমূহে মাকতাবাহ শামিলার নম্বর ব্যবহার করা হয়েছে।
১১. বাংলাভাষী পাঠকদের সহজ পাঠের জন্য আরবী বিশেষ ফন্ট ব্যবহার করা হয়েছে।
১২. সর্বোপরি উন্নতমানের কাগজে মুদ্রণ, মজবুত ও আকর্ষণীয় বাইন্ডিং করা হয়েছে।প্রথম খণ্ডে সূরাহ আল ফাতিহাহ থেকে সূরাহ আত তাওবাহ্, দ্বিতীয় খণ্ডে সূরাহ ইউনুস থেকে সূরাহ আল ফাথির এবং তৃতীয় খণ্ডে সূরাহ ইয়াসীন থেকে সূরাহ আন নাসের তাফসীর রয়েছে।
সুরার নাম-আল
ইমরান_( ইমরানের পরিবার)
সুরার ধরনঃ- মাদানী। মোট আয়াত-২০০..
3:1
الٓمَّٓ ۙ﴿۱﴾
FATHUL MAJID
আলিফ-লাম-মীম।
FATHUL MAJID
সূরার নামকরণ ও ফযীলত:
ইমরান হলেন ঈসা (আঃ)-এর দাদা, মারইয়াম (আলাইহাস সালাম) এর পিতা। অত্র সূরার ৩৫-৫০ নং আয়াতে ইমরান এর পরিবার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, বিধায় উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কিয়ামাতের দিন কুরআন ও যারা কুরআন অনুযায়ী আমল করত তাদেরকে নিয়ে আসা হবে। সূরা বাকারাহ ও সূরা আলি-ইমরান (তেলাওয়াতকারীদের) অগ্রে অগ্রে চলবে মেঘের ছায়া বা পাখির মত। এরা জোরালোভাবে আল্লাহ তা‘আলার কাছে সুপারিশ করবে। (সহীহ মুসলিম হা: ১৯১২) সূরা আলি-ইমরানের ফযীলত সূরা বাকারায় বর্ণনা করা হয়েছে।
শানে নুযূল:
ইবনু আবী হাতেম রবী‘ থেকে বর্ণনা করেন, একদা খ্রিস্টান সম্প্রদায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে ঈসা (আঃ) সম্পর্কে ঝগড়া শুরু করল। তখন অত্র সূরার প্রথম থেকে ৮৩ নং আয়াত পর্যন্ত অবতীর্ণ হয়।
অন্য বর্ণনায় আছে যে, নাজরানের অধিবাসীরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে ঈসা বিন মারইয়াম সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে এ সূরার প্রথম থেকে ৮০ নং আয়াত পর্যন্ত অবতীর্ণ হয়। (লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবিন নুযূল)
১-২ নং আয়াতের তাফসীর:
(ال۬مّ۬) আলিফ-লাম-মীম, এগুলো “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষরসমূহ। এ সম্পর্কে সূরা বাকারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। এর আসল উদ্দেশ্য বা অর্থ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।
(الْحَیُّ الْقَیُّوْمُ)
“চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী” এ দু’টি বৈশিষ্ট্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য নির্দিষ্ট। যা কোন মাখলুকের জন্য প্রযোজ্য নয়। এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আয়াতুল কুরসীতে (সূরা বাকারার ১৫৫ নং আয়াতে) করা হয়েছে।
ইমরান হলেন ঈসা (আঃ)-এর দাদা, মারইয়াম (আলাইহাস সালাম) এর পিতা। অত্র সূরার ৩৫-৫০ নং আয়াতে ইমরান এর পরিবার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, বিধায় উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কিয়ামাতের দিন কুরআন ও যারা কুরআন অনুযায়ী আমল করত তাদেরকে নিয়ে আসা হবে। সূরা বাকারাহ ও সূরা আলি-ইমরান (তেলাওয়াতকারীদের) অগ্রে অগ্রে চলবে মেঘের ছায়া বা পাখির মত। এরা জোরালোভাবে আল্লাহ তা‘আলার কাছে সুপারিশ করবে। (সহীহ মুসলিম হা: ১৯১২) সূরা আলি-ইমরানের ফযীলত সূরা বাকারায় বর্ণনা করা হয়েছে।
শানে নুযূল:
ইবনু আবী হাতেম রবী‘ থেকে বর্ণনা করেন, একদা খ্রিস্টান সম্প্রদায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে ঈসা (আঃ) সম্পর্কে ঝগড়া শুরু করল। তখন অত্র সূরার প্রথম থেকে ৮৩ নং আয়াত পর্যন্ত অবতীর্ণ হয়।
অন্য বর্ণনায় আছে যে, নাজরানের অধিবাসীরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে ঈসা বিন মারইয়াম সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে এ সূরার প্রথম থেকে ৮০ নং আয়াত পর্যন্ত অবতীর্ণ হয়। (লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবিন নুযূল)
১-২ নং আয়াতের তাফসীর:
(ال۬مّ۬) আলিফ-লাম-মীম, এগুলো “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষরসমূহ। এ সম্পর্কে সূরা বাকারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। এর আসল উদ্দেশ্য বা অর্থ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।
(الْحَیُّ الْقَیُّوْمُ)
“চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী” এ দু’টি বৈশিষ্ট্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য নির্দিষ্ট। যা কোন মাখলুকের জন্য প্রযোজ্য নয়। এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আয়াতুল কুরসীতে (সূরা বাকারার ১৫৫ নং আয়াতে) করা হয়েছে।
3:2
اللّٰہُ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ ۙ الۡحَیُّ الۡقَیُّوۡمُ ؕ﴿۲﴾
FATHUL MAJID
আলিফ-লাম-মীম।
FATHUL MAJID
সূরার নামকরণ ও ফযীলত:
ইমরান হলেন ঈসা (আঃ)-এর দাদা, মারইয়াম (আলাইহাস সালাম) এর পিতা। অত্র সূরার ৩৫-৫০ নং আয়াতে ইমরান এর পরিবার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, বিধায় উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কিয়ামাতের দিন কুরআন ও যারা কুরআন অনুযায়ী আমল করত তাদেরকে নিয়ে আসা হবে। সূরা বাকারাহ ও সূরা আলি-ইমরান (তেলাওয়াতকারীদের) অগ্রে অগ্রে চলবে মেঘের ছায়া বা পাখির মত। এরা জোরালোভাবে আল্লাহ তা‘আলার কাছে সুপারিশ করবে। (সহীহ মুসলিম হা: ১৯১২) সূরা আলি-ইমরানের ফযীলত সূরা বাকারায় বর্ণনা করা হয়েছে।
শানে নুযূল:
ইবনু আবী হাতেম রবী‘ থেকে বর্ণনা করেন, একদা খ্রিস্টান সম্প্রদায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে ঈসা (আঃ) সম্পর্কে ঝগড়া শুরু করল। তখন অত্র সূরার প্রথম থেকে ৮৩ নং আয়াত পর্যন্ত অবতীর্ণ হয়।
অন্য বর্ণনায় আছে যে, নাজরানের অধিবাসীরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে ঈসা বিন মারইয়াম সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে এ সূরার প্রথম থেকে ৮০ নং আয়াত পর্যন্ত অবতীর্ণ হয়। (লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবিন নুযূল)
১-২ নং আয়াতের তাফসীর:
(ال۬مّ۬) আলিফ-লাম-মীম, এগুলো “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষরসমূহ। এ সম্পর্কে সূরা বাকারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। এর আসল উদ্দেশ্য বা অর্থ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।
(الْحَیُّ الْقَیُّوْمُ)
“চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী” এ দু’টি বৈশিষ্ট্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য নির্দিষ্ট। যা কোন মাখলুকের জন্য প্রযোজ্য নয়। এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আয়াতুল কুরসীতে (সূরা বাকারার ১৫৫ নং আয়াতে) করা হয়েছে।
ইমরান হলেন ঈসা (আঃ)-এর দাদা, মারইয়াম (আলাইহাস সালাম) এর পিতা। অত্র সূরার ৩৫-৫০ নং আয়াতে ইমরান এর পরিবার নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে, বিধায় উক্ত নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, কিয়ামাতের দিন কুরআন ও যারা কুরআন অনুযায়ী আমল করত তাদেরকে নিয়ে আসা হবে। সূরা বাকারাহ ও সূরা আলি-ইমরান (তেলাওয়াতকারীদের) অগ্রে অগ্রে চলবে মেঘের ছায়া বা পাখির মত। এরা জোরালোভাবে আল্লাহ তা‘আলার কাছে সুপারিশ করবে। (সহীহ মুসলিম হা: ১৯১২) সূরা আলি-ইমরানের ফযীলত সূরা বাকারায় বর্ণনা করা হয়েছে।
শানে নুযূল:
ইবনু আবী হাতেম রবী‘ থেকে বর্ণনা করেন, একদা খ্রিস্টান সম্প্রদায় নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে ঈসা (আঃ) সম্পর্কে ঝগড়া শুরু করল। তখন অত্র সূরার প্রথম থেকে ৮৩ নং আয়াত পর্যন্ত অবতীর্ণ হয়।
অন্য বর্ণনায় আছে যে, নাজরানের অধিবাসীরা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর নিকট এসে ঈসা বিন মারইয়াম সম্পর্কে তাঁকে জিজ্ঞাসা করলে এ সূরার প্রথম থেকে ৮০ নং আয়াত পর্যন্ত অবতীর্ণ হয়। (লুবাবুন নুকূল ফী আসবাবিন নুযূল)
১-২ নং আয়াতের তাফসীর:
(ال۬مّ۬) আলিফ-লাম-মীম, এগুলো “হুরূফুল মুক্বাত্বআত” বা বিচ্ছিন্ন অক্ষরসমূহ। এ সম্পর্কে সূরা বাকারার শুরুতে আলোচনা করা হয়েছে। এর আসল উদ্দেশ্য বা অর্থ একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই ভাল জানেন।
(الْحَیُّ الْقَیُّوْمُ)
“চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী” এ দু’টি বৈশিষ্ট্য একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য নির্দিষ্ট। যা কোন মাখলুকের জন্য প্রযোজ্য নয়। এর ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ আয়াতুল কুরসীতে (সূরা বাকারার ১৫৫ নং আয়াতে) করা হয়েছে।
3:3
نَزَّلَ عَلَیۡکَ الۡکِتٰبَ بِالۡحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَیۡنَ یَدَیۡہِ وَ اَنۡزَلَ التَّوۡرٰىۃَ وَ الۡاِنۡجِیۡلَ ۙ﴿۳﴾
FATHUL MAJID
আলিফ-লাম-মীম।
FATHUL MAJID
৩-৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল-কুরআনুল কারীম, যা তার পূর্ববর্তী যে সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে সেগুলোর সত্যায়নকারী। কিতাবগুলো হল- তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর ও অন্যান্য সহিফা। ঐ সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে মানব জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শন করার জন্য, মূর্খতা থেকে জ্ঞানের আলোর দিশা দেয়ার জন্য, সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করার জন্য এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের, কল্যাণ ও অকল্যাণের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য। সুতরাং যারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে তারাই সঠিক পথ পাবে, উভয় কালে লাভবান হবে, সকল প্রকার কল্যাণ ও সওয়াব অর্জন করবে। আর যারা এগুলোর প্রতি অবিশ্বাস করবে ঈমান আনবে না এবং যারা নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘন করবে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। অনুরূপভাবে যারা আল্লাহ তা‘আলার দলীল প্রমাণকে মিথ্যা মনে করবে এবং তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ তথা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য সকল ইবাদত সম্পাদন না করে অন্যের জন্যও ইবাদত করবে বা অন্যকে তাঁর সাথে ইবাদতে শরীক করবে তাদের জন্যও রয়েছে কঠিন শাস্তি।
(إِنَّ اللّٰهَ لَا يَخْفٰي عَلَيْهِ شَيْءٌ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে আকাশ ও পৃথিবীর কিছুই গোপন নেই” আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেকটি জিনিসের রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না। আকাশ ও যমিনে যা কিছু রয়েছে তার প্রত্যেকটি জিনিস তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। বিষয়টি ছোট হোক বা বড় হোক, কম হোক বা বেশি হোক, প্রকাশ্যে হোক বা অপ্রকাশ্যে হোক, এমনকি গহীন অন্ধকারে কালো পিপীলিকা কিভাবে চলাচল করে তাও তিনি জানেন। মায়ের গর্ভে কী রয়েছে তাও তাঁর জ্ঞানায়ত্বে। মাতৃগর্ভস্ত সন্তান ভাল হবে, না মন্দ হবে, ছেলে হবে না মেয়ে হবে, সৌভাগ্যবান হবে, না দুর্ভাগ্যবান হবে সবই তাঁর জানা।
সুতরাং সৃষ্টি জগতের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নয়। অতএব যিনি সবকিছুর ধারক-বাহক, রক্ষণাবেক্ষণকারী, তাঁকে ভয় করে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার ও অশ্লীল কাজ-কর্ম বর্জন করা উচিত এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা উচিত। তিনি ব্যতীত আর কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতগুলোতে সে কথাই তুলে ধরেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَوْمَ ھُمْ بٰرِزُوْنَﹰ لَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْھُمْ شَیْءٌﺚ لِمَنِ الْمُلْکُ الْیَوْمَﺚ لِلہِ الْوَاحِدِ الْقَھَّارِ)
“যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, সেদিন আল্লাহর নিকট তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। (আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন) আজ কর্তৃত্ব কার? একক পরাক্রমশালী আল্লাহরই।” (সূরা মু’মিন ৪০:১৬)
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَآ اِنَّکَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِیْ وَمَا نُعْلِنُﺚ وَمَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْ شَیْءٍ فِی الْاَرْضِ وَلَا فِی السَّمَا۬ئِ)
“হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি জান যা আমরা গোপন করি ও যা আমরা প্রকাশ করি; আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কিছুই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(اِلَّا مَا شَا۬ئَ اللہُﺚ اِنَّھ۫ یَعْلَمُ الْجَھْرَ وَمَا یَخْفٰی)
“আল্লাহ যা ইচ্ছা করবেন তদ্ব্যতীত, নিশ্চয়ই তিনি প্রকাশ্য ও গুপ্ত বিষয় পরিজ্ঞাত আছেন।” (সূরা আ‘লা ৮৭:৭)
সুতরাং আমাদের উচিত হবে তাঁকে ভয় করে সকল অন্যায় অবিচার বর্জন করা এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর অবতীর্ণ কুরআনুল কারীম সকল প্রকার সন্দেহের ঊর্ধ্বে।
২. কুরআন পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবকে সত্যায়ণকারী, বাতিলকারী নয়।
৩. আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছু দেখেন ও জানেন।
৪. আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃত মা‘বূদ, একমাত্র তিনিই সকল ইবাদত পাওয়ার হকদার।
৬. আল্লাহ তা‘আলা কিতাব ও রাসূল প্রেরণ করে বান্দার ওপর হুজ্জাত প্রতিষ্ঠা করেছেন, অতএব অভিযোগ করার কোন সুযোগ নেই।
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল-কুরআনুল কারীম, যা তার পূর্ববর্তী যে সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে সেগুলোর সত্যায়নকারী। কিতাবগুলো হল- তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর ও অন্যান্য সহিফা। ঐ সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে মানব জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শন করার জন্য, মূর্খতা থেকে জ্ঞানের আলোর দিশা দেয়ার জন্য, সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করার জন্য এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের, কল্যাণ ও অকল্যাণের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য। সুতরাং যারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে তারাই সঠিক পথ পাবে, উভয় কালে লাভবান হবে, সকল প্রকার কল্যাণ ও সওয়াব অর্জন করবে। আর যারা এগুলোর প্রতি অবিশ্বাস করবে ঈমান আনবে না এবং যারা নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘন করবে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। অনুরূপভাবে যারা আল্লাহ তা‘আলার দলীল প্রমাণকে মিথ্যা মনে করবে এবং তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ তথা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য সকল ইবাদত সম্পাদন না করে অন্যের জন্যও ইবাদত করবে বা অন্যকে তাঁর সাথে ইবাদতে শরীক করবে তাদের জন্যও রয়েছে কঠিন শাস্তি।
(إِنَّ اللّٰهَ لَا يَخْفٰي عَلَيْهِ شَيْءٌ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে আকাশ ও পৃথিবীর কিছুই গোপন নেই” আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেকটি জিনিসের রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না। আকাশ ও যমিনে যা কিছু রয়েছে তার প্রত্যেকটি জিনিস তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। বিষয়টি ছোট হোক বা বড় হোক, কম হোক বা বেশি হোক, প্রকাশ্যে হোক বা অপ্রকাশ্যে হোক, এমনকি গহীন অন্ধকারে কালো পিপীলিকা কিভাবে চলাচল করে তাও তিনি জানেন। মায়ের গর্ভে কী রয়েছে তাও তাঁর জ্ঞানায়ত্বে। মাতৃগর্ভস্ত সন্তান ভাল হবে, না মন্দ হবে, ছেলে হবে না মেয়ে হবে, সৌভাগ্যবান হবে, না দুর্ভাগ্যবান হবে সবই তাঁর জানা।
সুতরাং সৃষ্টি জগতের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নয়। অতএব যিনি সবকিছুর ধারক-বাহক, রক্ষণাবেক্ষণকারী, তাঁকে ভয় করে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার ও অশ্লীল কাজ-কর্ম বর্জন করা উচিত এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা উচিত। তিনি ব্যতীত আর কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতগুলোতে সে কথাই তুলে ধরেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَوْمَ ھُمْ بٰرِزُوْنَﹰ لَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْھُمْ شَیْءٌﺚ لِمَنِ الْمُلْکُ الْیَوْمَﺚ لِلہِ الْوَاحِدِ الْقَھَّارِ)
“যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, সেদিন আল্লাহর নিকট তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। (আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন) আজ কর্তৃত্ব কার? একক পরাক্রমশালী আল্লাহরই।” (সূরা মু’মিন ৪০:১৬)
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَآ اِنَّکَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِیْ وَمَا نُعْلِنُﺚ وَمَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْ شَیْءٍ فِی الْاَرْضِ وَلَا فِی السَّمَا۬ئِ)
“হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি জান যা আমরা গোপন করি ও যা আমরা প্রকাশ করি; আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কিছুই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(اِلَّا مَا شَا۬ئَ اللہُﺚ اِنَّھ۫ یَعْلَمُ الْجَھْرَ وَمَا یَخْفٰی)
“আল্লাহ যা ইচ্ছা করবেন তদ্ব্যতীত, নিশ্চয়ই তিনি প্রকাশ্য ও গুপ্ত বিষয় পরিজ্ঞাত আছেন।” (সূরা আ‘লা ৮৭:৭)
সুতরাং আমাদের উচিত হবে তাঁকে ভয় করে সকল অন্যায় অবিচার বর্জন করা এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর অবতীর্ণ কুরআনুল কারীম সকল প্রকার সন্দেহের ঊর্ধ্বে।
২. কুরআন পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবকে সত্যায়ণকারী, বাতিলকারী নয়।
৩. আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছু দেখেন ও জানেন।
৪. আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃত মা‘বূদ, একমাত্র তিনিই সকল ইবাদত পাওয়ার হকদার।
৬. আল্লাহ তা‘আলা কিতাব ও রাসূল প্রেরণ করে বান্দার ওপর হুজ্জাত প্রতিষ্ঠা করেছেন, অতএব অভিযোগ করার কোন সুযোগ নেই।
3:4
مِنۡ قَبۡلُ ہُدًی لِّلنَّاسِ وَ اَنۡزَلَ الۡفُرۡقَانَ ۬ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا بِاٰیٰتِ اللّٰہِ لَہُمۡ عَذَابٌ شَدِیۡدٌ ؕ وَ اللّٰہُ عَزِیۡزٌ ذُو انۡتِقَامٍ ﴿۴﴾
FATHUL MAJID
আলিফ-লাম-মীম।
FATHUL MAJID
৩-৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল-কুরআনুল কারীম, যা তার পূর্ববর্তী যে সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে সেগুলোর সত্যায়নকারী। কিতাবগুলো হল- তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর ও অন্যান্য সহিফা। ঐ সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে মানব জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শন করার জন্য, মূর্খতা থেকে জ্ঞানের আলোর দিশা দেয়ার জন্য, সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করার জন্য এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের, কল্যাণ ও অকল্যাণের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য। সুতরাং যারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে তারাই সঠিক পথ পাবে, উভয় কালে লাভবান হবে, সকল প্রকার কল্যাণ ও সওয়াব অর্জন করবে। আর যারা এগুলোর প্রতি অবিশ্বাস করবে ঈমান আনবে না এবং যারা নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘন করবে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। অনুরূপভাবে যারা আল্লাহ তা‘আলার দলীল প্রমাণকে মিথ্যা মনে করবে এবং তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ তথা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য সকল ইবাদত সম্পাদন না করে অন্যের জন্যও ইবাদত করবে বা অন্যকে তাঁর সাথে ইবাদতে শরীক করবে তাদের জন্যও রয়েছে কঠিন শাস্তি।
(إِنَّ اللّٰهَ لَا يَخْفٰي عَلَيْهِ شَيْءٌ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে আকাশ ও পৃথিবীর কিছুই গোপন নেই” আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেকটি জিনিসের রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না। আকাশ ও যমিনে যা কিছু রয়েছে তার প্রত্যেকটি জিনিস তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। বিষয়টি ছোট হোক বা বড় হোক, কম হোক বা বেশি হোক, প্রকাশ্যে হোক বা অপ্রকাশ্যে হোক, এমনকি গহীন অন্ধকারে কালো পিপীলিকা কিভাবে চলাচল করে তাও তিনি জানেন। মায়ের গর্ভে কী রয়েছে তাও তাঁর জ্ঞানায়ত্বে। মাতৃগর্ভস্ত সন্তান ভাল হবে, না মন্দ হবে, ছেলে হবে না মেয়ে হবে, সৌভাগ্যবান হবে, না দুর্ভাগ্যবান হবে সবই তাঁর জানা।
সুতরাং সৃষ্টি জগতের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নয়। অতএব যিনি সবকিছুর ধারক-বাহক, রক্ষণাবেক্ষণকারী, তাঁকে ভয় করে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার ও অশ্লীল কাজ-কর্ম বর্জন করা উচিত এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা উচিত। তিনি ব্যতীত আর কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতগুলোতে সে কথাই তুলে ধরেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَوْمَ ھُمْ بٰرِزُوْنَﹰ لَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْھُمْ شَیْءٌﺚ لِمَنِ الْمُلْکُ الْیَوْمَﺚ لِلہِ الْوَاحِدِ الْقَھَّارِ)
“যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, সেদিন আল্লাহর নিকট তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। (আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন) আজ কর্তৃত্ব কার? একক পরাক্রমশালী আল্লাহরই।” (সূরা মু’মিন ৪০:১৬)
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَآ اِنَّکَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِیْ وَمَا نُعْلِنُﺚ وَمَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْ شَیْءٍ فِی الْاَرْضِ وَلَا فِی السَّمَا۬ئِ)
“হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি জান যা আমরা গোপন করি ও যা আমরা প্রকাশ করি; আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কিছুই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(اِلَّا مَا شَا۬ئَ اللہُﺚ اِنَّھ۫ یَعْلَمُ الْجَھْرَ وَمَا یَخْفٰی)
“আল্লাহ যা ইচ্ছা করবেন তদ্ব্যতীত, নিশ্চয়ই তিনি প্রকাশ্য ও গুপ্ত বিষয় পরিজ্ঞাত আছেন।” (সূরা আ‘লা ৮৭:৭)
সুতরাং আমাদের উচিত হবে তাঁকে ভয় করে সকল অন্যায় অবিচার বর্জন করা এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর অবতীর্ণ কুরআনুল কারীম সকল প্রকার সন্দেহের ঊর্ধ্বে।
২. কুরআন পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবকে সত্যায়ণকারী, বাতিলকারী নয়।
৩. আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছু দেখেন ও জানেন।
৪. আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃত মা‘বূদ, একমাত্র তিনিই সকল ইবাদত পাওয়ার হকদার।
৬. আল্লাহ তা‘আলা কিতাব ও রাসূল প্রেরণ করে বান্দার ওপর হুজ্জাত প্রতিষ্ঠা করেছেন, অতএব অভিযোগ করার কোন সুযোগ নেই।
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল-কুরআনুল কারীম, যা তার পূর্ববর্তী যে সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে সেগুলোর সত্যায়নকারী। কিতাবগুলো হল- তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর ও অন্যান্য সহিফা। ঐ সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে মানব জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শন করার জন্য, মূর্খতা থেকে জ্ঞানের আলোর দিশা দেয়ার জন্য, সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করার জন্য এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের, কল্যাণ ও অকল্যাণের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য। সুতরাং যারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে তারাই সঠিক পথ পাবে, উভয় কালে লাভবান হবে, সকল প্রকার কল্যাণ ও সওয়াব অর্জন করবে। আর যারা এগুলোর প্রতি অবিশ্বাস করবে ঈমান আনবে না এবং যারা নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘন করবে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। অনুরূপভাবে যারা আল্লাহ তা‘আলার দলীল প্রমাণকে মিথ্যা মনে করবে এবং তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ তথা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য সকল ইবাদত সম্পাদন না করে অন্যের জন্যও ইবাদত করবে বা অন্যকে তাঁর সাথে ইবাদতে শরীক করবে তাদের জন্যও রয়েছে কঠিন শাস্তি।
(إِنَّ اللّٰهَ لَا يَخْفٰي عَلَيْهِ شَيْءٌ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে আকাশ ও পৃথিবীর কিছুই গোপন নেই” আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেকটি জিনিসের রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না। আকাশ ও যমিনে যা কিছু রয়েছে তার প্রত্যেকটি জিনিস তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। বিষয়টি ছোট হোক বা বড় হোক, কম হোক বা বেশি হোক, প্রকাশ্যে হোক বা অপ্রকাশ্যে হোক, এমনকি গহীন অন্ধকারে কালো পিপীলিকা কিভাবে চলাচল করে তাও তিনি জানেন। মায়ের গর্ভে কী রয়েছে তাও তাঁর জ্ঞানায়ত্বে। মাতৃগর্ভস্ত সন্তান ভাল হবে, না মন্দ হবে, ছেলে হবে না মেয়ে হবে, সৌভাগ্যবান হবে, না দুর্ভাগ্যবান হবে সবই তাঁর জানা।
সুতরাং সৃষ্টি জগতের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নয়। অতএব যিনি সবকিছুর ধারক-বাহক, রক্ষণাবেক্ষণকারী, তাঁকে ভয় করে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার ও অশ্লীল কাজ-কর্ম বর্জন করা উচিত এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা উচিত। তিনি ব্যতীত আর কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতগুলোতে সে কথাই তুলে ধরেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَوْمَ ھُمْ بٰرِزُوْنَﹰ لَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْھُمْ شَیْءٌﺚ لِمَنِ الْمُلْکُ الْیَوْمَﺚ لِلہِ الْوَاحِدِ الْقَھَّارِ)
“যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, সেদিন আল্লাহর নিকট তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। (আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন) আজ কর্তৃত্ব কার? একক পরাক্রমশালী আল্লাহরই।” (সূরা মু’মিন ৪০:১৬)
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَآ اِنَّکَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِیْ وَمَا نُعْلِنُﺚ وَمَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْ شَیْءٍ فِی الْاَرْضِ وَلَا فِی السَّمَا۬ئِ)
“হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি জান যা আমরা গোপন করি ও যা আমরা প্রকাশ করি; আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কিছুই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(اِلَّا مَا شَا۬ئَ اللہُﺚ اِنَّھ۫ یَعْلَمُ الْجَھْرَ وَمَا یَخْفٰی)
“আল্লাহ যা ইচ্ছা করবেন তদ্ব্যতীত, নিশ্চয়ই তিনি প্রকাশ্য ও গুপ্ত বিষয় পরিজ্ঞাত আছেন।” (সূরা আ‘লা ৮৭:৭)
সুতরাং আমাদের উচিত হবে তাঁকে ভয় করে সকল অন্যায় অবিচার বর্জন করা এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর অবতীর্ণ কুরআনুল কারীম সকল প্রকার সন্দেহের ঊর্ধ্বে।
২. কুরআন পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবকে সত্যায়ণকারী, বাতিলকারী নয়।
৩. আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছু দেখেন ও জানেন।
৪. আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃত মা‘বূদ, একমাত্র তিনিই সকল ইবাদত পাওয়ার হকদার।
৬. আল্লাহ তা‘আলা কিতাব ও রাসূল প্রেরণ করে বান্দার ওপর হুজ্জাত প্রতিষ্ঠা করেছেন, অতএব অভিযোগ করার কোন সুযোগ নেই।
3:5
اِنَّ اللّٰہَ لَا یَخۡفٰی عَلَیۡہِ شَیۡءٌ فِی الۡاَرۡضِ وَ لَا فِی السَّمَآءِ ؕ﴿۵﴾
FATHUL MAJID
আলিফ-লাম-মীম।
FATHUL MAJID
৩-৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল-কুরআনুল কারীম, যা তার পূর্ববর্তী যে সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে সেগুলোর সত্যায়নকারী। কিতাবগুলো হল- তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর ও অন্যান্য সহিফা। ঐ সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে মানব জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শন করার জন্য, মূর্খতা থেকে জ্ঞানের আলোর দিশা দেয়ার জন্য, সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করার জন্য এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের, কল্যাণ ও অকল্যাণের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য। সুতরাং যারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে তারাই সঠিক পথ পাবে, উভয় কালে লাভবান হবে, সকল প্রকার কল্যাণ ও সওয়াব অর্জন করবে। আর যারা এগুলোর প্রতি অবিশ্বাস করবে ঈমান আনবে না এবং যারা নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘন করবে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। অনুরূপভাবে যারা আল্লাহ তা‘আলার দলীল প্রমাণকে মিথ্যা মনে করবে এবং তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ তথা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য সকল ইবাদত সম্পাদন না করে অন্যের জন্যও ইবাদত করবে বা অন্যকে তাঁর সাথে ইবাদতে শরীক করবে তাদের জন্যও রয়েছে কঠিন শাস্তি।
(إِنَّ اللّٰهَ لَا يَخْفٰي عَلَيْهِ شَيْءٌ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে আকাশ ও পৃথিবীর কিছুই গোপন নেই” আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেকটি জিনিসের রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না। আকাশ ও যমিনে যা কিছু রয়েছে তার প্রত্যেকটি জিনিস তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। বিষয়টি ছোট হোক বা বড় হোক, কম হোক বা বেশি হোক, প্রকাশ্যে হোক বা অপ্রকাশ্যে হোক, এমনকি গহীন অন্ধকারে কালো পিপীলিকা কিভাবে চলাচল করে তাও তিনি জানেন। মায়ের গর্ভে কী রয়েছে তাও তাঁর জ্ঞানায়ত্বে। মাতৃগর্ভস্ত সন্তান ভাল হবে, না মন্দ হবে, ছেলে হবে না মেয়ে হবে, সৌভাগ্যবান হবে, না দুর্ভাগ্যবান হবে সবই তাঁর জানা।
সুতরাং সৃষ্টি জগতের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নয়। অতএব যিনি সবকিছুর ধারক-বাহক, রক্ষণাবেক্ষণকারী, তাঁকে ভয় করে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার ও অশ্লীল কাজ-কর্ম বর্জন করা উচিত এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা উচিত। তিনি ব্যতীত আর কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতগুলোতে সে কথাই তুলে ধরেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَوْمَ ھُمْ بٰرِزُوْنَﹰ لَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْھُمْ شَیْءٌﺚ لِمَنِ الْمُلْکُ الْیَوْمَﺚ لِلہِ الْوَاحِدِ الْقَھَّارِ)
“যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, সেদিন আল্লাহর নিকট তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। (আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন) আজ কর্তৃত্ব কার? একক পরাক্রমশালী আল্লাহরই।” (সূরা মু’মিন ৪০:১৬)
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَآ اِنَّکَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِیْ وَمَا نُعْلِنُﺚ وَمَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْ شَیْءٍ فِی الْاَرْضِ وَلَا فِی السَّمَا۬ئِ)
“হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি জান যা আমরা গোপন করি ও যা আমরা প্রকাশ করি; আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কিছুই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(اِلَّا مَا شَا۬ئَ اللہُﺚ اِنَّھ۫ یَعْلَمُ الْجَھْرَ وَمَا یَخْفٰی)
“আল্লাহ যা ইচ্ছা করবেন তদ্ব্যতীত, নিশ্চয়ই তিনি প্রকাশ্য ও গুপ্ত বিষয় পরিজ্ঞাত আছেন।” (সূরা আ‘লা ৮৭:৭)
সুতরাং আমাদের উচিত হবে তাঁকে ভয় করে সকল অন্যায় অবিচার বর্জন করা এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর অবতীর্ণ কুরআনুল কারীম সকল প্রকার সন্দেহের ঊর্ধ্বে।
২. কুরআন পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবকে সত্যায়ণকারী, বাতিলকারী নয়।
৩. আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছু দেখেন ও জানেন।
৪. আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃত মা‘বূদ, একমাত্র তিনিই সকল ইবাদত পাওয়ার হকদার।
৬. আল্লাহ তা‘আলা কিতাব ও রাসূল প্রেরণ করে বান্দার ওপর হুজ্জাত প্রতিষ্ঠা করেছেন, অতএব অভিযোগ করার কোন সুযোগ নেই।
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল-কুরআনুল কারীম, যা তার পূর্ববর্তী যে সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে সেগুলোর সত্যায়নকারী। কিতাবগুলো হল- তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর ও অন্যান্য সহিফা। ঐ সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে মানব জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শন করার জন্য, মূর্খতা থেকে জ্ঞানের আলোর দিশা দেয়ার জন্য, সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করার জন্য এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের, কল্যাণ ও অকল্যাণের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য। সুতরাং যারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে তারাই সঠিক পথ পাবে, উভয় কালে লাভবান হবে, সকল প্রকার কল্যাণ ও সওয়াব অর্জন করবে। আর যারা এগুলোর প্রতি অবিশ্বাস করবে ঈমান আনবে না এবং যারা নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘন করবে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। অনুরূপভাবে যারা আল্লাহ তা‘আলার দলীল প্রমাণকে মিথ্যা মনে করবে এবং তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ তথা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য সকল ইবাদত সম্পাদন না করে অন্যের জন্যও ইবাদত করবে বা অন্যকে তাঁর সাথে ইবাদতে শরীক করবে তাদের জন্যও রয়েছে কঠিন শাস্তি।
(إِنَّ اللّٰهَ لَا يَخْفٰي عَلَيْهِ شَيْءٌ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে আকাশ ও পৃথিবীর কিছুই গোপন নেই” আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেকটি জিনিসের রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না। আকাশ ও যমিনে যা কিছু রয়েছে তার প্রত্যেকটি জিনিস তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। বিষয়টি ছোট হোক বা বড় হোক, কম হোক বা বেশি হোক, প্রকাশ্যে হোক বা অপ্রকাশ্যে হোক, এমনকি গহীন অন্ধকারে কালো পিপীলিকা কিভাবে চলাচল করে তাও তিনি জানেন। মায়ের গর্ভে কী রয়েছে তাও তাঁর জ্ঞানায়ত্বে। মাতৃগর্ভস্ত সন্তান ভাল হবে, না মন্দ হবে, ছেলে হবে না মেয়ে হবে, সৌভাগ্যবান হবে, না দুর্ভাগ্যবান হবে সবই তাঁর জানা।
সুতরাং সৃষ্টি জগতের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নয়। অতএব যিনি সবকিছুর ধারক-বাহক, রক্ষণাবেক্ষণকারী, তাঁকে ভয় করে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার ও অশ্লীল কাজ-কর্ম বর্জন করা উচিত এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা উচিত। তিনি ব্যতীত আর কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতগুলোতে সে কথাই তুলে ধরেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَوْمَ ھُمْ بٰرِزُوْنَﹰ لَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْھُمْ شَیْءٌﺚ لِمَنِ الْمُلْکُ الْیَوْمَﺚ لِلہِ الْوَاحِدِ الْقَھَّارِ)
“যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, সেদিন আল্লাহর নিকট তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। (আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন) আজ কর্তৃত্ব কার? একক পরাক্রমশালী আল্লাহরই।” (সূরা মু’মিন ৪০:১৬)
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَآ اِنَّکَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِیْ وَمَا نُعْلِنُﺚ وَمَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْ شَیْءٍ فِی الْاَرْضِ وَلَا فِی السَّمَا۬ئِ)
“হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি জান যা আমরা গোপন করি ও যা আমরা প্রকাশ করি; আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কিছুই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(اِلَّا مَا شَا۬ئَ اللہُﺚ اِنَّھ۫ یَعْلَمُ الْجَھْرَ وَمَا یَخْفٰی)
“আল্লাহ যা ইচ্ছা করবেন তদ্ব্যতীত, নিশ্চয়ই তিনি প্রকাশ্য ও গুপ্ত বিষয় পরিজ্ঞাত আছেন।” (সূরা আ‘লা ৮৭:৭)
সুতরাং আমাদের উচিত হবে তাঁকে ভয় করে সকল অন্যায় অবিচার বর্জন করা এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর অবতীর্ণ কুরআনুল কারীম সকল প্রকার সন্দেহের ঊর্ধ্বে।
২. কুরআন পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবকে সত্যায়ণকারী, বাতিলকারী নয়।
৩. আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছু দেখেন ও জানেন।
৪. আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃত মা‘বূদ, একমাত্র তিনিই সকল ইবাদত পাওয়ার হকদার।
৬. আল্লাহ তা‘আলা কিতাব ও রাসূল প্রেরণ করে বান্দার ওপর হুজ্জাত প্রতিষ্ঠা করেছেন, অতএব অভিযোগ করার কোন সুযোগ নেই।
3:6
ہُوَ الَّذِیۡ یُصَوِّرُکُمۡ فِی الۡاَرۡحَامِ کَیۡفَ یَشَآءُ ؕ لَاۤ اِلٰہَ اِلَّا ہُوَ الۡعَزِیۡزُ الۡحَکِیۡمُ ﴿۶﴾
FATHUL MAJID
আলিফ-লাম-মীম।
FATHUL MAJID
৩-৬ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল-কুরআনুল কারীম, যা তার পূর্ববর্তী যে সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে সেগুলোর সত্যায়নকারী। কিতাবগুলো হল- তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর ও অন্যান্য সহিফা। ঐ সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে মানব জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শন করার জন্য, মূর্খতা থেকে জ্ঞানের আলোর দিশা দেয়ার জন্য, সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করার জন্য এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের, কল্যাণ ও অকল্যাণের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য। সুতরাং যারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে তারাই সঠিক পথ পাবে, উভয় কালে লাভবান হবে, সকল প্রকার কল্যাণ ও সওয়াব অর্জন করবে। আর যারা এগুলোর প্রতি অবিশ্বাস করবে ঈমান আনবে না এবং যারা নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘন করবে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। অনুরূপভাবে যারা আল্লাহ তা‘আলার দলীল প্রমাণকে মিথ্যা মনে করবে এবং তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ তথা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য সকল ইবাদত সম্পাদন না করে অন্যের জন্যও ইবাদত করবে বা অন্যকে তাঁর সাথে ইবাদতে শরীক করবে তাদের জন্যও রয়েছে কঠিন শাস্তি।
(إِنَّ اللّٰهَ لَا يَخْفٰي عَلَيْهِ شَيْءٌ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে আকাশ ও পৃথিবীর কিছুই গোপন নেই” আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেকটি জিনিসের রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না। আকাশ ও যমিনে যা কিছু রয়েছে তার প্রত্যেকটি জিনিস তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। বিষয়টি ছোট হোক বা বড় হোক, কম হোক বা বেশি হোক, প্রকাশ্যে হোক বা অপ্রকাশ্যে হোক, এমনকি গহীন অন্ধকারে কালো পিপীলিকা কিভাবে চলাচল করে তাও তিনি জানেন। মায়ের গর্ভে কী রয়েছে তাও তাঁর জ্ঞানায়ত্বে। মাতৃগর্ভস্ত সন্তান ভাল হবে, না মন্দ হবে, ছেলে হবে না মেয়ে হবে, সৌভাগ্যবান হবে, না দুর্ভাগ্যবান হবে সবই তাঁর জানা।
সুতরাং সৃষ্টি জগতের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নয়। অতএব যিনি সবকিছুর ধারক-বাহক, রক্ষণাবেক্ষণকারী, তাঁকে ভয় করে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার ও অশ্লীল কাজ-কর্ম বর্জন করা উচিত এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা উচিত। তিনি ব্যতীত আর কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতগুলোতে সে কথাই তুলে ধরেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَوْمَ ھُمْ بٰرِزُوْنَﹰ لَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْھُمْ شَیْءٌﺚ لِمَنِ الْمُلْکُ الْیَوْمَﺚ لِلہِ الْوَاحِدِ الْقَھَّارِ)
“যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, সেদিন আল্লাহর নিকট তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। (আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন) আজ কর্তৃত্ব কার? একক পরাক্রমশালী আল্লাহরই।” (সূরা মু’মিন ৪০:১৬)
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَآ اِنَّکَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِیْ وَمَا نُعْلِنُﺚ وَمَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْ شَیْءٍ فِی الْاَرْضِ وَلَا فِی السَّمَا۬ئِ)
“হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি জান যা আমরা গোপন করি ও যা আমরা প্রকাশ করি; আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কিছুই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(اِلَّا مَا شَا۬ئَ اللہُﺚ اِنَّھ۫ یَعْلَمُ الْجَھْرَ وَمَا یَخْفٰی)
“আল্লাহ যা ইচ্ছা করবেন তদ্ব্যতীত, নিশ্চয়ই তিনি প্রকাশ্য ও গুপ্ত বিষয় পরিজ্ঞাত আছেন।” (সূরা আ‘লা ৮৭:৭)
সুতরাং আমাদের উচিত হবে তাঁকে ভয় করে সকল অন্যায় অবিচার বর্জন করা এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর অবতীর্ণ কুরআনুল কারীম সকল প্রকার সন্দেহের ঊর্ধ্বে।
২. কুরআন পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবকে সত্যায়ণকারী, বাতিলকারী নয়।
৩. আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছু দেখেন ও জানেন।
৪. আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃত মা‘বূদ, একমাত্র তিনিই সকল ইবাদত পাওয়ার হকদার।
৬. আল্লাহ তা‘আলা কিতাব ও রাসূল প্রেরণ করে বান্দার ওপর হুজ্জাত প্রতিষ্ঠা করেছেন, অতএব অভিযোগ করার কোন সুযোগ নেই।
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যে কিতাব অবতীর্ণ করেছেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। এ কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে আল-কুরআনুল কারীম, যা তার পূর্ববর্তী যে সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে সেগুলোর সত্যায়নকারী। কিতাবগুলো হল- তাওরাত, ইঞ্জিল, যাবুর ও অন্যান্য সহিফা। ঐ সমস্ত কিতাব অবতীর্ণ করা হয়েছে মানব জাতিকে সঠিক পথ প্রদর্শন করার জন্য, মূর্খতা থেকে জ্ঞানের আলোর দিশা দেয়ার জন্য, সত্য-মিথ্যার মাঝে পার্থক্য নির্ণয় করার জন্য এবং সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের, কল্যাণ ও অকল্যাণের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টি করে দেয়ার জন্য। সুতরাং যারা তাতে বিশ্বাস স্থাপন করবে তারাই সঠিক পথ পাবে, উভয় কালে লাভবান হবে, সকল প্রকার কল্যাণ ও সওয়াব অর্জন করবে। আর যারা এগুলোর প্রতি অবিশ্বাস করবে ঈমান আনবে না এবং যারা নাফরমানী ও সীমালঙ্ঘন করবে তাদের জন্য রয়েছে কঠিন শাস্তি। অনুরূপভাবে যারা আল্লাহ তা‘আলার দলীল প্রমাণকে মিথ্যা মনে করবে এবং তাওহীদুল উলুহিয়্যাহ তথা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য সকল ইবাদত সম্পাদন না করে অন্যের জন্যও ইবাদত করবে বা অন্যকে তাঁর সাথে ইবাদতে শরীক করবে তাদের জন্যও রয়েছে কঠিন শাস্তি।
(إِنَّ اللّٰهَ لَا يَخْفٰي عَلَيْهِ شَيْءٌ)
“নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে আকাশ ও পৃথিবীর কিছুই গোপন নেই” আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেকটি জিনিসের রক্ষণাবেক্ষণকারী। তাঁর নিকট কোন কিছুই গোপন থাকে না। আকাশ ও যমিনে যা কিছু রয়েছে তার প্রত্যেকটি জিনিস তিনি তাঁর জ্ঞান দ্বারা বেষ্টন করে রেখেছেন। কোন কিছুই তাঁর জ্ঞানের বাইরে নয়। বিষয়টি ছোট হোক বা বড় হোক, কম হোক বা বেশি হোক, প্রকাশ্যে হোক বা অপ্রকাশ্যে হোক, এমনকি গহীন অন্ধকারে কালো পিপীলিকা কিভাবে চলাচল করে তাও তিনি জানেন। মায়ের গর্ভে কী রয়েছে তাও তাঁর জ্ঞানায়ত্বে। মাতৃগর্ভস্ত সন্তান ভাল হবে, না মন্দ হবে, ছেলে হবে না মেয়ে হবে, সৌভাগ্যবান হবে, না দুর্ভাগ্যবান হবে সবই তাঁর জানা।
সুতরাং সৃষ্টি জগতের কোন কিছুই তাঁর কাছে গোপন নয়। অতএব যিনি সবকিছুর ধারক-বাহক, রক্ষণাবেক্ষণকারী, তাঁকে ভয় করে সকল প্রকার অন্যায়-অবিচার ও অশ্লীল কাজ-কর্ম বর্জন করা উচিত এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা উচিত। তিনি ব্যতীত আর কেউই ইবাদতের যোগ্য নয়। আল্লাহ তা‘আলা এ আয়াতগুলোতে সে কথাই তুলে ধরেছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(یَوْمَ ھُمْ بٰرِزُوْنَﹰ لَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْھُمْ شَیْءٌﺚ لِمَنِ الْمُلْکُ الْیَوْمَﺚ لِلہِ الْوَاحِدِ الْقَھَّارِ)
“যেদিন তারা (কবর হতে) বের হয়ে পড়বে, সেদিন আল্লাহর নিকট তাদের কিছুই গোপন থাকবে না। (আল্লাহ জিজ্ঞাসা করবেন) আজ কর্তৃত্ব কার? একক পরাক্রমশালী আল্লাহরই।” (সূরা মু’মিন ৪০:১৬)
অনুরূপভাবে আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَآ اِنَّکَ تَعْلَمُ مَا نُخْفِیْ وَمَا نُعْلِنُﺚ وَمَا یَخْفٰی عَلَی اللہِ مِنْ شَیْءٍ فِی الْاَرْضِ وَلَا فِی السَّمَا۬ئِ)
“হে আমাদের প্রতিপালক! নিশ্চয়ই তুমি জান যা আমরা গোপন করি ও যা আমরা প্রকাশ করি; আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর কিছুই আল্লাহর নিকট গোপন থাকে না।” (সূরা ইবরাহীম ১৪:৩৮)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(اِلَّا مَا شَا۬ئَ اللہُﺚ اِنَّھ۫ یَعْلَمُ الْجَھْرَ وَمَا یَخْفٰی)
“আল্লাহ যা ইচ্ছা করবেন তদ্ব্যতীত, নিশ্চয়ই তিনি প্রকাশ্য ও গুপ্ত বিষয় পরিজ্ঞাত আছেন।” (সূরা আ‘লা ৮৭:৭)
সুতরাং আমাদের উচিত হবে তাঁকে ভয় করে সকল অন্যায় অবিচার বর্জন করা এবং একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. নাবী মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর অবতীর্ণ কুরআনুল কারীম সকল প্রকার সন্দেহের ঊর্ধ্বে।
২. কুরআন পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাবকে সত্যায়ণকারী, বাতিলকারী নয়।
৩. আল্লাহ তা‘আলা প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব কিছু দেখেন ও জানেন।
৪. আল্লাহ তা‘আলা প্রকৃত মা‘বূদ, একমাত্র তিনিই সকল ইবাদত পাওয়ার হকদার।
৬. আল্লাহ তা‘আলা কিতাব ও রাসূল প্রেরণ করে বান্দার ওপর হুজ্জাত প্রতিষ্ঠা করেছেন, অতএব অভিযোগ করার কোন সুযোগ নেই।
3:7
ہُوَ الَّذِیۡۤ اَنۡزَلَ عَلَیۡکَ الۡکِتٰبَ مِنۡہُ اٰیٰتٌ مُّحۡکَمٰتٌ ہُنَّ اُمُّ الۡکِتٰبِ وَ اُخَرُ مُتَشٰبِہٰتٌ ؕ فَاَمَّا الَّذِیۡنَ فِیۡ قُلُوۡبِہِمۡ زَیۡغٌ فَیَتَّبِعُوۡنَ مَا تَشَابَہَ مِنۡہُ ابۡتِغَآءَ الۡفِتۡنَۃِ وَ ابۡتِغَآءَ تَاۡوِیۡلِہٖ ۚ وَ مَا یَعۡلَمُ تَاۡوِیۡلَہٗۤ اِلَّا اللّٰہُ ۘؔ وَ الرّٰسِخُوۡنَ فِی الۡعِلۡمِ یَقُوۡلُوۡنَ اٰمَنَّا بِہٖ ۙ کُلٌّ مِّنۡ عِنۡدِ رَبِّنَا ۚ وَ مَا یَذَّکَّرُ اِلَّاۤ اُولُوا الۡاَلۡبَابِ ﴿۷﴾
FATHUL MAJID
আলিফ-লাম-মীম।
FATHUL MAJID
৭-৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যে কিতাব অর্থাৎ কুরআন অবতীর্ণ করেছেন তাতে দু’ ধরণের আয়াত রয়েছে, মুহকাম ও মুতাশাবিহ। মুহকাম ও মুতাশাবিহ এর দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআনের আয়াতগুলো তিনভাগে ভাগ করা যায়:
১. اَلْمُحْكُمُ الْعَامُ
অর্থাৎ কুরআনের শব্দ ও অর্থ সব কিছু বলিষ্ঠ, মজবুত ও উৎকৃষ্ট। ভাষা অলংকারে কুরআন সবার ঊর্ধ্বে, তার সকল সংবাদ সত্য ও উপকারী। এতে মিথ্যা, অনর্থক ও কোন প্রকার বৈপরিত্য নেই। তার সকল বিধান ন্যায়সঙ্গত ও হিকমতপূর্ণ, কোনরূপ জুলুম ও অবোধগম্যতা নেই। এ দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণ কুরআন মুহকাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(كِتٰبٌ أُحْكِمَتْ اٰيٰتُه۫ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَّدُنْ حَكِيْمٍ خَبِيْر)
“এটা এমন গ্রন্থ যার আয়াতগুলো সুদৃঢ়, অতঃপর বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞের পক্ষ থেকে।” (সূরা হুদ ১১:১)
২. اَلْمُتَشَابِهُ الْعَامُ অর্থাৎ সম্পূর্ণ কুরআন এক অংশ অন্য অংশের সাথে পূর্ণতা, দৃঢ়তা ও প্রশংসনীয় উদ্দেশ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَللہُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِیْثِ کِتٰبًا مُّتَشَابِھًا مَّثَانِیَ تَقْشَعِرُّ مِنْھُ جُلُوْدُ الَّذِیْنَ یَخْشَوْنَ رَبَّھُمْﺆ ثُمَّ تَلِیْنُ جُلُوْدُھُمْ وَقُلُوْبُھُمْ اِلٰی ذِکْرِ اللہِﺚ ذٰلِکَ ھُدَی اللہِ یَھْدِیْ بِھ۪ مَنْ یَّشَا۬ئُﺚ وَمَنْ یُّضْلِلِ اللہُ فَمَا لَھ۫ مِنْ ھَادٍ)
“আল্লাহ অতি উত্তম বাণী নাযিল করেছেন, তা এমন কিতাব যা সুসামঞ্জস্য, বার বার তেলাওয়াত করা হয়। এতে তাদের দেহ রোমাঞ্চিত হয় যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, অতঃপর তাদের দেহ ও তাদের অন্তর বিনম্র হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। এটাই আল্লাহর হিদায়াত, এর দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নেই।” (সূরা যুমার ৩৯:২৩)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(اَفَلَا یَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَﺚ وَلَوْ کَانَ مِنْ عِنْدِ غَیْرِ اللہِ لَوَجَدُوْا فِیْھِ اخْتِلَافًا کَثِیْرًا)
“তবে কি তারা কুরআন অনুধাবন করে না? এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নিকট হতে আসত তবে তারা তাতে অবশ্যই অনেক অসঙ্গতি পেত।” (সূরা নিসা ৪:৮২)
৩. المحكم الخاص ببعضه
এ প্রকার মুহকাম অর্থ হল আয়াতের অর্থ সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার, কোন অস্পষ্টতা নেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ)
“হে মানব মণ্ডলী! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বনকারী হও।” (সূরা বাকারাহ ২:২১) এরূপ উদাহরণ অনেক।المتشابه الخاص ببعضه
এ প্রকার মুতাশাবিহ অর্থ হল- আয়াতের অর্থ দ্ব্যর্থবোধক ও অস্পষ্ট। এ আয়াতগুলো থেকে কোন ব্যক্তি এমন কিছু ধারণা করতে পারে যা আল্লাহ তা‘আলা বা তাঁর কিতাব অথবা তাঁর রাসূলের সাথে উপযোগী নয়। যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা সেগুলোর মর্ম অনেক ক্ষেত্রে অনুধাবন করতে পারে।
আল্লাহ তা‘আলার সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার এ কথা থেকে ধারণা করতে পারে-
(بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوْطَتٰنِ)
“বরং আল্লাহর উভয় হাতই প্রসারিত।” (সূরা মায়িদাহ ৫:৬৪)
আল্লাহ তা‘আলার দু’হাত মানুষের হাতের মত। মূলতঃ এমন ধারণা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলার দু’টি হাত রয়েছে কিন্তু মানুষের হাতের মত নয়; বরং তাঁর জন্য যেমন শোভা পায় ও হওয়া উচিত তেমনই। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَيْسَ كَمِثْلِه۪ شَيْءٌ ﺆ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ)
“কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা শুরা ৪২:১১)
আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কোন ব্যক্তি ধারণা করতে পারে যে, কুরআনের এক আয়াত অন্য আয়াতের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক ও এক আয়াত অন্য আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مَآ اَصَابَکَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللہِﺑ وَمَآ اَصَابَکَ مِنْ سَیِّئَةٍ فَمِنْ نَّفْسِکَ)
“তোমার যা কল্যাণ হয় তা আল্লাহর নিকট হতে এবং তোমার যা অকল্যাণ হয় তা তোমার নিজের কারণে।” (সূরা নিসা ৪:৭৯) আল্লাহ অন্যত্র বলেন:
(وَاِنْ تُصِبْھُمْ حَسَنَةٌ یَّقُوْلُوْا ھٰذِھ۪ مِنْ عِنْدِ اللہِ)
“যদি তাদের কোন কল্যাণ হয় তবে তারা বলে ‘এটা আল্লাহর নিকট হতে।’ (সূরা নিসা ৪:৭৮)
এ আয়াতদ্বয় থেকে অনেকে ধারণা করতে পারে যে, কল্যাণ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে আসে আর অকল্যাণ মানুষের পক্ষ থেকে আসে। মূলতঃ তা নয়, বরং কল্যাণ ও অকল্যাণ উভয়ই আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত তাকদীর। কিন্তু কল্যাণ বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ। অকল্যাণ আল্লাহ তা‘আলাই দিয়ে থাকেন কিন্তু তা বান্দার কর্মের কারণে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ أَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْا عَنْ كَثِيْرٍ)
“তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদেরই হাতের কামাইয়ের ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন।” (সূরা শুরা ৪২:৩০)
রাসূলের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কেউ আল্লাহ তা‘আলার এ কথা থেকে ধারণা করতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি সন্দেহে ছিলেন।
(فَإِنْ كُنْتَ فِيْ شَكٍّ مِّمَّآ أَنْزَلْنَآ إِلَيْكَ فَسْأَلِ الَّذِيْنَ يَقْرَأُوْنَ الْكِتٰبَ مِنْ قَبْلِكَ)
“আমি তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে যদি তুমি সন্দেহ করে থাক তবে তোমার পূর্বের কিতাব যারা পাঠ করে তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর; (সূরা ইউনুস ১০:৯৪) মূলত নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি সন্দেহ করেননি, বরং তিনি কুরআন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ إِنْ كُنْتُمْ فِيْ شَكٍّ مِّنْ دِيْنِيْ فَلَآ أَعْبُدُ الَّذِيْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ)
“বল: ‘হে মানুষ! তোমরা যদি আমার দীনের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ কর তবে জেনে রাখ, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ‘ইবাদত কর আমি তাদের ‘ইবাদত করি না।” (সূরা ইউনুস ১০:১০৪) অর্থাৎ তোমরা যদি আমার দীনের ব্যাপারে সন্দেহ কর তাহলে জেনে রেখ! আমি আমার দীনের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া তোমরা যাদের ইবাদত কর আমি তাদের ইবাদত করি না; বরং তাদের সাথে কুফরী করি এবং একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করি। (শরহু মুকাদ্দামাহ ফী উসূলুত তাফসীর: ২৩৬-২৪৩ পৃ:)
محكمات মুহকামাত আয়াতগুলোই হল কুরআনের মূল বিষয়। কারণ এ আয়াতগুলো বুঝার জন্য কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয় না। আর
متشابهات
মুতাশাবিহাত আয়াতগুলো এ রকম নয়। অতএব যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, যারা চায় আল্লাহ তা‘আলার দীনকে পরিবর্তন করতে এবং মানুষকে গোমরাহ করতে, তারা এ সমস্ত আয়াত নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করে এবং বক্রতার দিকগুলো খুঁজে বের করে, যাতে তারা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারে এবং তাদের বাতিল কথার স্বপক্ষে এ দলীল পেশ করে তাদের ভ্রান্ত মতবাদ সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
অথচ এ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন, অন্য কেউ নয়। আর যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা এগুলোর ওপর বিশ্বাস রাখেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারাও ঐ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা জানে না; বরং তারা বিশ্বাস রাখার সাথে সাথে এ কথাও বলে যে, সকল কিছুই মহান আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে এ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা জানা সম্ভব নয়। আর যারা এ সমস্ত আয়াত নিয়ে বাড়াবাড়ি করে তাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে এবং তারা এর দ্বারা পথভ্রষ্ট হয় ও অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করতে চায়।
এ সম্পর্কে সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে, আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
(أُولُوا الْأَلْبَابِ.......... هُوَ الَّذِيْٓ أَنْزَلَ)
আয়াতটি পাঠ করলেন। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করেছেন যে, যারা মুতাশাবিহাত আয়াতের পেছনে ছুটে তাদের যখন তুমি দেখবে তখন মনে করবে যে, তাদের কথাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেছেন। সুতরাং তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকবে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৪৭, সহীহ মুসলিম হা: ২৬৬৫)
(رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا)
“হে আমাদের রব! হিদায়াত দানের পর আমাদের অন্তরকে বক্র করে দেবেন না।” এটি একটি দু‘আ যা মু’মিনরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা করে বলে যে, আল্লাহ তা‘আলা হিদায়াত দান করার পর যেন পুনরায় তাদেরকে গুমরাহ না করেন। তাদেরকে যেন হক থেকে বাতিলের দিকে আবার ফিরিয়ে না দেন। আর এর দ্বারা যেন আল্লাহ তা‘আলা তাদের অবস্থা ও আমল আখলাককে সুন্দর ও শুদ্ধ করে দেন। তাদেরকে যেন সরল-সোজা পথে, সুদৃঢ় ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং তাদের অন্তর থেকে যেন বক্রতা দূর করে দেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
يا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلٰي دِيْنِكَ
হে অন্তরের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দীনে প্রতিষ্ঠিত রাখুন। (তিরমিযী হা: ২১৪০, সহীহ)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَآ إِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি একদিন তাদেরকে মৃত্যুর পর আবার সমবেত করবেন। তাদেরকে পুনরায় জীবিত করবেন, তাদের কাজের প্রতিদান দেবেন। প্রত্যেকে যে কাজ করবে সে তা-ই পাবে। কাউকে বিন্দু পরিমাণ কম-বেশি দেয়া হবে না। এ ওয়াদা তিনি বাস্তবায়িত করবেন এবং সকলের মাঝে মীমাংসা করে দেবেন। ঐ দিনের আগমনের এবং আল্লাহ তা‘আলার অঙ্গীকার- এর ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। একদিন তা বাস্তবায়িত হবেই।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্য সূরায় বলেন:(اَللہُ لَآ اِلٰھَ اِلَّا ھُوَﺚ لَیَجْمَعَنَّکُمْ اِلٰی یَوْمِ الْقِیٰمَةِ لَا رَیْبَ فِیْھِ)
“আল্লাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন মা‘বূদ নেই, তিনি তোমাদেরকে কিয়ামাতের দিন একত্র করবেনই, এতে কোন সন্দেহ নেই।” (সূরা নিসা ৪:৮৭)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআনে মুহকাম ও মুতাশাবিহ দু’ধরণের আয়াতই রয়েছে। মুহকাম আয়াতের ওপর ঈমান আনা ও আমল করা উভয়টা ওয়াজিব। আর মুতাশাবিহ আয়াতের প্রতি ঈমান আনব এবং তার বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার দিকে সোপর্দ করব।
২. যারা মুতাশাবিহ আয়াত অন্বেষণের চেষ্টা চালায় তাদেরকে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব; কারণ তারা বিদআতী ও কুপ্রবৃত্তির অনুসারী।
৩. ফেতনা প্রকাশ পেলে অন্তরের বক্রতা থেকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় চাওয়া উচিত।
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যে কিতাব অর্থাৎ কুরআন অবতীর্ণ করেছেন তাতে দু’ ধরণের আয়াত রয়েছে, মুহকাম ও মুতাশাবিহ। মুহকাম ও মুতাশাবিহ এর দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআনের আয়াতগুলো তিনভাগে ভাগ করা যায়:
১. اَلْمُحْكُمُ الْعَامُ
অর্থাৎ কুরআনের শব্দ ও অর্থ সব কিছু বলিষ্ঠ, মজবুত ও উৎকৃষ্ট। ভাষা অলংকারে কুরআন সবার ঊর্ধ্বে, তার সকল সংবাদ সত্য ও উপকারী। এতে মিথ্যা, অনর্থক ও কোন প্রকার বৈপরিত্য নেই। তার সকল বিধান ন্যায়সঙ্গত ও হিকমতপূর্ণ, কোনরূপ জুলুম ও অবোধগম্যতা নেই। এ দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণ কুরআন মুহকাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(كِتٰبٌ أُحْكِمَتْ اٰيٰتُه۫ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَّدُنْ حَكِيْمٍ خَبِيْر)
“এটা এমন গ্রন্থ যার আয়াতগুলো সুদৃঢ়, অতঃপর বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞের পক্ষ থেকে।” (সূরা হুদ ১১:১)
২. اَلْمُتَشَابِهُ الْعَامُ অর্থাৎ সম্পূর্ণ কুরআন এক অংশ অন্য অংশের সাথে পূর্ণতা, দৃঢ়তা ও প্রশংসনীয় উদ্দেশ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَللہُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِیْثِ کِتٰبًا مُّتَشَابِھًا مَّثَانِیَ تَقْشَعِرُّ مِنْھُ جُلُوْدُ الَّذِیْنَ یَخْشَوْنَ رَبَّھُمْﺆ ثُمَّ تَلِیْنُ جُلُوْدُھُمْ وَقُلُوْبُھُمْ اِلٰی ذِکْرِ اللہِﺚ ذٰلِکَ ھُدَی اللہِ یَھْدِیْ بِھ۪ مَنْ یَّشَا۬ئُﺚ وَمَنْ یُّضْلِلِ اللہُ فَمَا لَھ۫ مِنْ ھَادٍ)
“আল্লাহ অতি উত্তম বাণী নাযিল করেছেন, তা এমন কিতাব যা সুসামঞ্জস্য, বার বার তেলাওয়াত করা হয়। এতে তাদের দেহ রোমাঞ্চিত হয় যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, অতঃপর তাদের দেহ ও তাদের অন্তর বিনম্র হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। এটাই আল্লাহর হিদায়াত, এর দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নেই।” (সূরা যুমার ৩৯:২৩)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(اَفَلَا یَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَﺚ وَلَوْ کَانَ مِنْ عِنْدِ غَیْرِ اللہِ لَوَجَدُوْا فِیْھِ اخْتِلَافًا کَثِیْرًا)
“তবে কি তারা কুরআন অনুধাবন করে না? এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নিকট হতে আসত তবে তারা তাতে অবশ্যই অনেক অসঙ্গতি পেত।” (সূরা নিসা ৪:৮২)
৩. المحكم الخاص ببعضه
এ প্রকার মুহকাম অর্থ হল আয়াতের অর্থ সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার, কোন অস্পষ্টতা নেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ)
“হে মানব মণ্ডলী! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বনকারী হও।” (সূরা বাকারাহ ২:২১) এরূপ উদাহরণ অনেক।المتشابه الخاص ببعضه
এ প্রকার মুতাশাবিহ অর্থ হল- আয়াতের অর্থ দ্ব্যর্থবোধক ও অস্পষ্ট। এ আয়াতগুলো থেকে কোন ব্যক্তি এমন কিছু ধারণা করতে পারে যা আল্লাহ তা‘আলা বা তাঁর কিতাব অথবা তাঁর রাসূলের সাথে উপযোগী নয়। যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা সেগুলোর মর্ম অনেক ক্ষেত্রে অনুধাবন করতে পারে।
আল্লাহ তা‘আলার সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার এ কথা থেকে ধারণা করতে পারে-
(بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوْطَتٰنِ)
“বরং আল্লাহর উভয় হাতই প্রসারিত।” (সূরা মায়িদাহ ৫:৬৪)
আল্লাহ তা‘আলার দু’হাত মানুষের হাতের মত। মূলতঃ এমন ধারণা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলার দু’টি হাত রয়েছে কিন্তু মানুষের হাতের মত নয়; বরং তাঁর জন্য যেমন শোভা পায় ও হওয়া উচিত তেমনই। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَيْسَ كَمِثْلِه۪ شَيْءٌ ﺆ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ)
“কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা শুরা ৪২:১১)
আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কোন ব্যক্তি ধারণা করতে পারে যে, কুরআনের এক আয়াত অন্য আয়াতের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক ও এক আয়াত অন্য আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مَآ اَصَابَکَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللہِﺑ وَمَآ اَصَابَکَ مِنْ سَیِّئَةٍ فَمِنْ نَّفْسِکَ)
“তোমার যা কল্যাণ হয় তা আল্লাহর নিকট হতে এবং তোমার যা অকল্যাণ হয় তা তোমার নিজের কারণে।” (সূরা নিসা ৪:৭৯) আল্লাহ অন্যত্র বলেন:
(وَاِنْ تُصِبْھُمْ حَسَنَةٌ یَّقُوْلُوْا ھٰذِھ۪ مِنْ عِنْدِ اللہِ)
“যদি তাদের কোন কল্যাণ হয় তবে তারা বলে ‘এটা আল্লাহর নিকট হতে।’ (সূরা নিসা ৪:৭৮)
এ আয়াতদ্বয় থেকে অনেকে ধারণা করতে পারে যে, কল্যাণ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে আসে আর অকল্যাণ মানুষের পক্ষ থেকে আসে। মূলতঃ তা নয়, বরং কল্যাণ ও অকল্যাণ উভয়ই আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত তাকদীর। কিন্তু কল্যাণ বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ। অকল্যাণ আল্লাহ তা‘আলাই দিয়ে থাকেন কিন্তু তা বান্দার কর্মের কারণে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ أَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْا عَنْ كَثِيْرٍ)
“তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদেরই হাতের কামাইয়ের ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন।” (সূরা শুরা ৪২:৩০)
রাসূলের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কেউ আল্লাহ তা‘আলার এ কথা থেকে ধারণা করতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি সন্দেহে ছিলেন।
(فَإِنْ كُنْتَ فِيْ شَكٍّ مِّمَّآ أَنْزَلْنَآ إِلَيْكَ فَسْأَلِ الَّذِيْنَ يَقْرَأُوْنَ الْكِتٰبَ مِنْ قَبْلِكَ)
“আমি তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে যদি তুমি সন্দেহ করে থাক তবে তোমার পূর্বের কিতাব যারা পাঠ করে তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর; (সূরা ইউনুস ১০:৯৪) মূলত নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি সন্দেহ করেননি, বরং তিনি কুরআন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ إِنْ كُنْتُمْ فِيْ شَكٍّ مِّنْ دِيْنِيْ فَلَآ أَعْبُدُ الَّذِيْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ)
“বল: ‘হে মানুষ! তোমরা যদি আমার দীনের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ কর তবে জেনে রাখ, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ‘ইবাদত কর আমি তাদের ‘ইবাদত করি না।” (সূরা ইউনুস ১০:১০৪) অর্থাৎ তোমরা যদি আমার দীনের ব্যাপারে সন্দেহ কর তাহলে জেনে রেখ! আমি আমার দীনের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া তোমরা যাদের ইবাদত কর আমি তাদের ইবাদত করি না; বরং তাদের সাথে কুফরী করি এবং একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করি। (শরহু মুকাদ্দামাহ ফী উসূলুত তাফসীর: ২৩৬-২৪৩ পৃ:)
محكمات মুহকামাত আয়াতগুলোই হল কুরআনের মূল বিষয়। কারণ এ আয়াতগুলো বুঝার জন্য কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয় না। আর
متشابهات
মুতাশাবিহাত আয়াতগুলো এ রকম নয়। অতএব যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, যারা চায় আল্লাহ তা‘আলার দীনকে পরিবর্তন করতে এবং মানুষকে গোমরাহ করতে, তারা এ সমস্ত আয়াত নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করে এবং বক্রতার দিকগুলো খুঁজে বের করে, যাতে তারা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারে এবং তাদের বাতিল কথার স্বপক্ষে এ দলীল পেশ করে তাদের ভ্রান্ত মতবাদ সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
অথচ এ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন, অন্য কেউ নয়। আর যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা এগুলোর ওপর বিশ্বাস রাখেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারাও ঐ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা জানে না; বরং তারা বিশ্বাস রাখার সাথে সাথে এ কথাও বলে যে, সকল কিছুই মহান আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে এ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা জানা সম্ভব নয়। আর যারা এ সমস্ত আয়াত নিয়ে বাড়াবাড়ি করে তাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে এবং তারা এর দ্বারা পথভ্রষ্ট হয় ও অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করতে চায়।
এ সম্পর্কে সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে, আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
(أُولُوا الْأَلْبَابِ.......... هُوَ الَّذِيْٓ أَنْزَلَ)
আয়াতটি পাঠ করলেন। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করেছেন যে, যারা মুতাশাবিহাত আয়াতের পেছনে ছুটে তাদের যখন তুমি দেখবে তখন মনে করবে যে, তাদের কথাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেছেন। সুতরাং তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকবে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৪৭, সহীহ মুসলিম হা: ২৬৬৫)
(رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا)
“হে আমাদের রব! হিদায়াত দানের পর আমাদের অন্তরকে বক্র করে দেবেন না।” এটি একটি দু‘আ যা মু’মিনরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা করে বলে যে, আল্লাহ তা‘আলা হিদায়াত দান করার পর যেন পুনরায় তাদেরকে গুমরাহ না করেন। তাদেরকে যেন হক থেকে বাতিলের দিকে আবার ফিরিয়ে না দেন। আর এর দ্বারা যেন আল্লাহ তা‘আলা তাদের অবস্থা ও আমল আখলাককে সুন্দর ও শুদ্ধ করে দেন। তাদেরকে যেন সরল-সোজা পথে, সুদৃঢ় ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং তাদের অন্তর থেকে যেন বক্রতা দূর করে দেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
يا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلٰي دِيْنِكَ
হে অন্তরের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দীনে প্রতিষ্ঠিত রাখুন। (তিরমিযী হা: ২১৪০, সহীহ)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَآ إِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি একদিন তাদেরকে মৃত্যুর পর আবার সমবেত করবেন। তাদেরকে পুনরায় জীবিত করবেন, তাদের কাজের প্রতিদান দেবেন। প্রত্যেকে যে কাজ করবে সে তা-ই পাবে। কাউকে বিন্দু পরিমাণ কম-বেশি দেয়া হবে না। এ ওয়াদা তিনি বাস্তবায়িত করবেন এবং সকলের মাঝে মীমাংসা করে দেবেন। ঐ দিনের আগমনের এবং আল্লাহ তা‘আলার অঙ্গীকার- এর ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। একদিন তা বাস্তবায়িত হবেই।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্য সূরায় বলেন:(اَللہُ لَآ اِلٰھَ اِلَّا ھُوَﺚ لَیَجْمَعَنَّکُمْ اِلٰی یَوْمِ الْقِیٰمَةِ لَا رَیْبَ فِیْھِ)
“আল্লাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন মা‘বূদ নেই, তিনি তোমাদেরকে কিয়ামাতের দিন একত্র করবেনই, এতে কোন সন্দেহ নেই।” (সূরা নিসা ৪:৮৭)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআনে মুহকাম ও মুতাশাবিহ দু’ধরণের আয়াতই রয়েছে। মুহকাম আয়াতের ওপর ঈমান আনা ও আমল করা উভয়টা ওয়াজিব। আর মুতাশাবিহ আয়াতের প্রতি ঈমান আনব এবং তার বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার দিকে সোপর্দ করব।
২. যারা মুতাশাবিহ আয়াত অন্বেষণের চেষ্টা চালায় তাদেরকে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব; কারণ তারা বিদআতী ও কুপ্রবৃত্তির অনুসারী।
৩. ফেতনা প্রকাশ পেলে অন্তরের বক্রতা থেকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় চাওয়া উচিত।
3:8
رَبَّنَا لَا تُزِغۡ قُلُوۡبَنَا بَعۡدَ اِذۡ ہَدَیۡتَنَا وَ ہَبۡ لَنَا مِنۡ لَّدُنۡکَ رَحۡمَۃً ۚ اِنَّکَ اَنۡتَ الۡوَہَّابُ ﴿۸﴾
FATHUL MAJID
আলিফ-লাম-মীম।
FATHUL MAJID
৭-৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যে কিতাব অর্থাৎ কুরআন অবতীর্ণ করেছেন তাতে দু’ ধরণের আয়াত রয়েছে, মুহকাম ও মুতাশাবিহ। মুহকাম ও মুতাশাবিহ এর দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআনের আয়াতগুলো তিনভাগে ভাগ করা যায়:
১. اَلْمُحْكُمُ الْعَامُ
অর্থাৎ কুরআনের শব্দ ও অর্থ সব কিছু বলিষ্ঠ, মজবুত ও উৎকৃষ্ট। ভাষা অলংকারে কুরআন সবার ঊর্ধ্বে, তার সকল সংবাদ সত্য ও উপকারী। এতে মিথ্যা, অনর্থক ও কোন প্রকার বৈপরিত্য নেই। তার সকল বিধান ন্যায়সঙ্গত ও হিকমতপূর্ণ, কোনরূপ জুলুম ও অবোধগম্যতা নেই। এ দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণ কুরআন মুহকাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(كِتٰبٌ أُحْكِمَتْ اٰيٰتُه۫ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَّدُنْ حَكِيْمٍ خَبِيْر)
“এটা এমন গ্রন্থ যার আয়াতগুলো সুদৃঢ়, অতঃপর বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞের পক্ষ থেকে।” (সূরা হুদ ১১:১)
২. اَلْمُتَشَابِهُ الْعَامُ অর্থাৎ সম্পূর্ণ কুরআন এক অংশ অন্য অংশের সাথে পূর্ণতা, দৃঢ়তা ও প্রশংসনীয় উদ্দেশ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَللہُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِیْثِ کِتٰبًا مُّتَشَابِھًا مَّثَانِیَ تَقْشَعِرُّ مِنْھُ جُلُوْدُ الَّذِیْنَ یَخْشَوْنَ رَبَّھُمْﺆ ثُمَّ تَلِیْنُ جُلُوْدُھُمْ وَقُلُوْبُھُمْ اِلٰی ذِکْرِ اللہِﺚ ذٰلِکَ ھُدَی اللہِ یَھْدِیْ بِھ۪ مَنْ یَّشَا۬ئُﺚ وَمَنْ یُّضْلِلِ اللہُ فَمَا لَھ۫ مِنْ ھَادٍ)
“আল্লাহ অতি উত্তম বাণী নাযিল করেছেন, তা এমন কিতাব যা সুসামঞ্জস্য, বার বার তেলাওয়াত করা হয়। এতে তাদের দেহ রোমাঞ্চিত হয় যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, অতঃপর তাদের দেহ ও তাদের অন্তর বিনম্র হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। এটাই আল্লাহর হিদায়াত, এর দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নেই।” (সূরা যুমার ৩৯:২৩)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(اَفَلَا یَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَﺚ وَلَوْ کَانَ مِنْ عِنْدِ غَیْرِ اللہِ لَوَجَدُوْا فِیْھِ اخْتِلَافًا کَثِیْرًا)
“তবে কি তারা কুরআন অনুধাবন করে না? এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নিকট হতে আসত তবে তারা তাতে অবশ্যই অনেক অসঙ্গতি পেত।” (সূরা নিসা ৪:৮২)
৩. المحكم الخاص ببعضه
এ প্রকার মুহকাম অর্থ হল আয়াতের অর্থ সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার, কোন অস্পষ্টতা নেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ)
“হে মানব মণ্ডলী! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বনকারী হও।” (সূরা বাকারাহ ২:২১) এরূপ উদাহরণ অনেক।
المتشابه الخاص ببعضه
এ প্রকার মুতাশাবিহ অর্থ হল- আয়াতের অর্থ দ্ব্যর্থবোধক ও অস্পষ্ট। এ আয়াতগুলো থেকে কোন ব্যক্তি এমন কিছু ধারণা করতে পারে যা আল্লাহ তা‘আলা বা তাঁর কিতাব অথবা তাঁর রাসূলের সাথে উপযোগী নয়। যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা সেগুলোর মর্ম অনেক ক্ষেত্রে অনুধাবন করতে পারে।
আল্লাহ তা‘আলার সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার এ কথা থেকে ধারণা করতে পারে-
(بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوْطَتٰنِ)
“বরং আল্লাহর উভয় হাতই প্রসারিত।” (সূরা মায়িদাহ ৫:৬৪)
আল্লাহ তা‘আলার দু’হাত মানুষের হাতের মত। মূলতঃ এমন ধারণা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলার দু’টি হাত রয়েছে কিন্তু মানুষের হাতের মত নয়; বরং তাঁর জন্য যেমন শোভা পায় ও হওয়া উচিত তেমনই। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَيْسَ كَمِثْلِه۪ شَيْءٌ ﺆ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ)
“কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা শুরা ৪২:১১)
আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কোন ব্যক্তি ধারণা করতে পারে যে, কুরআনের এক আয়াত অন্য আয়াতের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক ও এক আয়াত অন্য আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مَآ اَصَابَکَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللہِﺑ وَمَآ اَصَابَکَ مِنْ سَیِّئَةٍ فَمِنْ نَّفْسِکَ)
“তোমার যা কল্যাণ হয় তা আল্লাহর নিকট হতে এবং তোমার যা অকল্যাণ হয় তা তোমার নিজের কারণে।” (সূরা নিসা ৪:৭৯) আল্লাহ অন্যত্র বলেন:
(وَاِنْ تُصِبْھُمْ حَسَنَةٌ یَّقُوْلُوْا ھٰذِھ۪ مِنْ عِنْدِ اللہِ)
“যদি তাদের কোন কল্যাণ হয় তবে তারা বলে ‘এটা আল্লাহর নিকট হতে।’ (সূরা নিসা ৪:৭৮)
এ আয়াতদ্বয় থেকে অনেকে ধারণা করতে পারে যে, কল্যাণ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে আসে আর অকল্যাণ মানুষের পক্ষ থেকে আসে। মূলতঃ তা নয়, বরং কল্যাণ ও অকল্যাণ উভয়ই আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত তাকদীর। কিন্তু কল্যাণ বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ। অকল্যাণ আল্লাহ তা‘আলাই দিয়ে থাকেন কিন্তু তা বান্দার কর্মের কারণে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ أَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْا عَنْ كَثِيْرٍ)
“তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদেরই হাতের কামাইয়ের ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন।” (সূরা শুরা ৪২:৩০)
রাসূলের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কেউ আল্লাহ তা‘আলার এ কথা থেকে ধারণা করতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি সন্দেহে ছিলেন।
(فَإِنْ كُنْتَ فِيْ شَكٍّ مِّمَّآ أَنْزَلْنَآ إِلَيْكَ فَسْأَلِ الَّذِيْنَ يَقْرَأُوْنَ الْكِتٰبَ مِنْ قَبْلِكَ)
“আমি তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে যদি তুমি সন্দেহ করে থাক তবে তোমার পূর্বের কিতাব যারা পাঠ করে তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর; (সূরা ইউনুস ১০:৯৪) মূলত নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি সন্দেহ করেননি, বরং তিনি কুরআন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ إِنْ كُنْتُمْ فِيْ شَكٍّ مِّنْ دِيْنِيْ فَلَآ أَعْبُدُ الَّذِيْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ)
“বল: ‘হে মানুষ! তোমরা যদি আমার দীনের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ কর তবে জেনে রাখ, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ‘ইবাদত কর আমি তাদের ‘ইবাদত করি না।” (সূরা ইউনুস ১০:১০৪) অর্থাৎ তোমরা যদি আমার দীনের ব্যাপারে সন্দেহ কর তাহলে জেনে রেখ! আমি আমার দীনের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া তোমরা যাদের ইবাদত কর আমি তাদের ইবাদত করি না; বরং তাদের সাথে কুফরী করি এবং একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করি। (শরহু মুকাদ্দামাহ ফী উসূলুত তাফসীর: ২৩৬-২৪৩ পৃ:)
محكمات মুহকামাত আয়াতগুলোই হল কুরআনের মূল বিষয়। কারণ এ আয়াতগুলো বুঝার জন্য কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয় না। আর
متشابهات
মুতাশাবিহাত আয়াতগুলো এ রকম নয়। অতএব যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, যারা চায় আল্লাহ তা‘আলার দীনকে পরিবর্তন করতে এবং মানুষকে গোমরাহ করতে, তারা এ সমস্ত আয়াত নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করে এবং বক্রতার দিকগুলো খুঁজে বের করে, যাতে তারা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারে এবং তাদের বাতিল কথার স্বপক্ষে এ দলীল পেশ করে তাদের ভ্রান্ত মতবাদ সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
অথচ এ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন, অন্য কেউ নয়। আর যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা এগুলোর ওপর বিশ্বাস রাখেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারাও ঐ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা জানে না; বরং তারা বিশ্বাস রাখার সাথে সাথে এ কথাও বলে যে, সকল কিছুই মহান আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে এ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা জানা সম্ভব নয়। আর যারা এ সমস্ত আয়াত নিয়ে বাড়াবাড়ি করে তাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে এবং তারা এর দ্বারা পথভ্রষ্ট হয় ও অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করতে চায়।
এ সম্পর্কে সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে, আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
(أُولُوا الْأَلْبَابِ.......... هُوَ الَّذِيْٓ أَنْزَلَ)
আয়াতটি পাঠ করলেন। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করেছেন যে, যারা মুতাশাবিহাত আয়াতের পেছনে ছুটে তাদের যখন তুমি দেখবে তখন মনে করবে যে, তাদের কথাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেছেন। সুতরাং তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকবে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৪৭, সহীহ মুসলিম হা: ২৬৬৫)
(رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا)
“হে আমাদের রব! হিদায়াত দানের পর আমাদের অন্তরকে বক্র করে দেবেন না।” এটি একটি দু‘আ যা মু’মিনরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা করে বলে যে, আল্লাহ তা‘আলা হিদায়াত দান করার পর যেন পুনরায় তাদেরকে গুমরাহ না করেন। তাদেরকে যেন হক থেকে বাতিলের দিকে আবার ফিরিয়ে না দেন। আর এর দ্বারা যেন আল্লাহ তা‘আলা তাদের অবস্থা ও আমল আখলাককে সুন্দর ও শুদ্ধ করে দেন। তাদেরকে যেন সরল-সোজা পথে, সুদৃঢ় ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং তাদের অন্তর থেকে যেন বক্রতা দূর করে দেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
يا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلٰي دِيْنِكَ
হে অন্তরের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দীনে প্রতিষ্ঠিত রাখুন। (তিরমিযী হা: ২১৪০, সহীহ)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَآ إِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি একদিন তাদেরকে মৃত্যুর পর আবার সমবেত করবেন। তাদেরকে পুনরায় জীবিত করবেন, তাদের কাজের প্রতিদান দেবেন। প্রত্যেকে যে কাজ করবে সে তা-ই পাবে। কাউকে বিন্দু পরিমাণ কম-বেশি দেয়া হবে না। এ ওয়াদা তিনি বাস্তবায়িত করবেন এবং সকলের মাঝে মীমাংসা করে দেবেন। ঐ দিনের আগমনের এবং আল্লাহ তা‘আলার অঙ্গীকার- এর ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। একদিন তা বাস্তবায়িত হবেই।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্য সূরায় বলেন:(اَللہُ لَآ اِلٰھَ اِلَّا ھُوَﺚ لَیَجْمَعَنَّکُمْ اِلٰی یَوْمِ الْقِیٰمَةِ لَا رَیْبَ فِیْھِ)
“আল্লাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন মা‘বূদ নেই, তিনি তোমাদেরকে কিয়ামাতের দিন একত্র করবেনই, এতে কোন সন্দেহ নেই।” (সূরা নিসা ৪:৮৭)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআনে মুহকাম ও মুতাশাবিহ দু’ধরণের আয়াতই রয়েছে। মুহকাম আয়াতের ওপর ঈমান আনা ও আমল করা উভয়টা ওয়াজিব। আর মুতাশাবিহ আয়াতের প্রতি ঈমান আনব এবং তার বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার দিকে সোপর্দ করব।
২. যারা মুতাশাবিহ আয়াত অন্বেষণের চেষ্টা চালায় তাদেরকে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব; কারণ তারা বিদআতী ও কুপ্রবৃত্তির অনুসারী।
৩. ফেতনা প্রকাশ পেলে অন্তরের বক্রতা থেকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় চাওয়া উচিত।
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যে কিতাব অর্থাৎ কুরআন অবতীর্ণ করেছেন তাতে দু’ ধরণের আয়াত রয়েছে, মুহকাম ও মুতাশাবিহ। মুহকাম ও মুতাশাবিহ এর দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআনের আয়াতগুলো তিনভাগে ভাগ করা যায়:
১. اَلْمُحْكُمُ الْعَامُ
অর্থাৎ কুরআনের শব্দ ও অর্থ সব কিছু বলিষ্ঠ, মজবুত ও উৎকৃষ্ট। ভাষা অলংকারে কুরআন সবার ঊর্ধ্বে, তার সকল সংবাদ সত্য ও উপকারী। এতে মিথ্যা, অনর্থক ও কোন প্রকার বৈপরিত্য নেই। তার সকল বিধান ন্যায়সঙ্গত ও হিকমতপূর্ণ, কোনরূপ জুলুম ও অবোধগম্যতা নেই। এ দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণ কুরআন মুহকাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(كِتٰبٌ أُحْكِمَتْ اٰيٰتُه۫ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَّدُنْ حَكِيْمٍ خَبِيْر)
“এটা এমন গ্রন্থ যার আয়াতগুলো সুদৃঢ়, অতঃপর বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞের পক্ষ থেকে।” (সূরা হুদ ১১:১)
২. اَلْمُتَشَابِهُ الْعَامُ অর্থাৎ সম্পূর্ণ কুরআন এক অংশ অন্য অংশের সাথে পূর্ণতা, দৃঢ়তা ও প্রশংসনীয় উদ্দেশ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَللہُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِیْثِ کِتٰبًا مُّتَشَابِھًا مَّثَانِیَ تَقْشَعِرُّ مِنْھُ جُلُوْدُ الَّذِیْنَ یَخْشَوْنَ رَبَّھُمْﺆ ثُمَّ تَلِیْنُ جُلُوْدُھُمْ وَقُلُوْبُھُمْ اِلٰی ذِکْرِ اللہِﺚ ذٰلِکَ ھُدَی اللہِ یَھْدِیْ بِھ۪ مَنْ یَّشَا۬ئُﺚ وَمَنْ یُّضْلِلِ اللہُ فَمَا لَھ۫ مِنْ ھَادٍ)
“আল্লাহ অতি উত্তম বাণী নাযিল করেছেন, তা এমন কিতাব যা সুসামঞ্জস্য, বার বার তেলাওয়াত করা হয়। এতে তাদের দেহ রোমাঞ্চিত হয় যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, অতঃপর তাদের দেহ ও তাদের অন্তর বিনম্র হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। এটাই আল্লাহর হিদায়াত, এর দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নেই।” (সূরা যুমার ৩৯:২৩)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(اَفَلَا یَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَﺚ وَلَوْ کَانَ مِنْ عِنْدِ غَیْرِ اللہِ لَوَجَدُوْا فِیْھِ اخْتِلَافًا کَثِیْرًا)
“তবে কি তারা কুরআন অনুধাবন করে না? এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নিকট হতে আসত তবে তারা তাতে অবশ্যই অনেক অসঙ্গতি পেত।” (সূরা নিসা ৪:৮২)
৩. المحكم الخاص ببعضه
এ প্রকার মুহকাম অর্থ হল আয়াতের অর্থ সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার, কোন অস্পষ্টতা নেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ)
“হে মানব মণ্ডলী! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বনকারী হও।” (সূরা বাকারাহ ২:২১) এরূপ উদাহরণ অনেক।
المتشابه الخاص ببعضه
এ প্রকার মুতাশাবিহ অর্থ হল- আয়াতের অর্থ দ্ব্যর্থবোধক ও অস্পষ্ট। এ আয়াতগুলো থেকে কোন ব্যক্তি এমন কিছু ধারণা করতে পারে যা আল্লাহ তা‘আলা বা তাঁর কিতাব অথবা তাঁর রাসূলের সাথে উপযোগী নয়। যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা সেগুলোর মর্ম অনেক ক্ষেত্রে অনুধাবন করতে পারে।
আল্লাহ তা‘আলার সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার এ কথা থেকে ধারণা করতে পারে-
(بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوْطَتٰنِ)
“বরং আল্লাহর উভয় হাতই প্রসারিত।” (সূরা মায়িদাহ ৫:৬৪)
আল্লাহ তা‘আলার দু’হাত মানুষের হাতের মত। মূলতঃ এমন ধারণা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলার দু’টি হাত রয়েছে কিন্তু মানুষের হাতের মত নয়; বরং তাঁর জন্য যেমন শোভা পায় ও হওয়া উচিত তেমনই। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَيْسَ كَمِثْلِه۪ شَيْءٌ ﺆ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ)
“কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা শুরা ৪২:১১)
আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কোন ব্যক্তি ধারণা করতে পারে যে, কুরআনের এক আয়াত অন্য আয়াতের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক ও এক আয়াত অন্য আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مَآ اَصَابَکَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللہِﺑ وَمَآ اَصَابَکَ مِنْ سَیِّئَةٍ فَمِنْ نَّفْسِکَ)
“তোমার যা কল্যাণ হয় তা আল্লাহর নিকট হতে এবং তোমার যা অকল্যাণ হয় তা তোমার নিজের কারণে।” (সূরা নিসা ৪:৭৯) আল্লাহ অন্যত্র বলেন:
(وَاِنْ تُصِبْھُمْ حَسَنَةٌ یَّقُوْلُوْا ھٰذِھ۪ مِنْ عِنْدِ اللہِ)
“যদি তাদের কোন কল্যাণ হয় তবে তারা বলে ‘এটা আল্লাহর নিকট হতে।’ (সূরা নিসা ৪:৭৮)
এ আয়াতদ্বয় থেকে অনেকে ধারণা করতে পারে যে, কল্যাণ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে আসে আর অকল্যাণ মানুষের পক্ষ থেকে আসে। মূলতঃ তা নয়, বরং কল্যাণ ও অকল্যাণ উভয়ই আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত তাকদীর। কিন্তু কল্যাণ বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ। অকল্যাণ আল্লাহ তা‘আলাই দিয়ে থাকেন কিন্তু তা বান্দার কর্মের কারণে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ أَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْا عَنْ كَثِيْرٍ)
“তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদেরই হাতের কামাইয়ের ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন।” (সূরা শুরা ৪২:৩০)
রাসূলের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কেউ আল্লাহ তা‘আলার এ কথা থেকে ধারণা করতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি সন্দেহে ছিলেন।
(فَإِنْ كُنْتَ فِيْ شَكٍّ مِّمَّآ أَنْزَلْنَآ إِلَيْكَ فَسْأَلِ الَّذِيْنَ يَقْرَأُوْنَ الْكِتٰبَ مِنْ قَبْلِكَ)
“আমি তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে যদি তুমি সন্দেহ করে থাক তবে তোমার পূর্বের কিতাব যারা পাঠ করে তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর; (সূরা ইউনুস ১০:৯৪) মূলত নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি সন্দেহ করেননি, বরং তিনি কুরআন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ إِنْ كُنْتُمْ فِيْ شَكٍّ مِّنْ دِيْنِيْ فَلَآ أَعْبُدُ الَّذِيْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ)
“বল: ‘হে মানুষ! তোমরা যদি আমার দীনের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ কর তবে জেনে রাখ, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ‘ইবাদত কর আমি তাদের ‘ইবাদত করি না।” (সূরা ইউনুস ১০:১০৪) অর্থাৎ তোমরা যদি আমার দীনের ব্যাপারে সন্দেহ কর তাহলে জেনে রেখ! আমি আমার দীনের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া তোমরা যাদের ইবাদত কর আমি তাদের ইবাদত করি না; বরং তাদের সাথে কুফরী করি এবং একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করি। (শরহু মুকাদ্দামাহ ফী উসূলুত তাফসীর: ২৩৬-২৪৩ পৃ:)
محكمات মুহকামাত আয়াতগুলোই হল কুরআনের মূল বিষয়। কারণ এ আয়াতগুলো বুঝার জন্য কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয় না। আর
متشابهات
মুতাশাবিহাত আয়াতগুলো এ রকম নয়। অতএব যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, যারা চায় আল্লাহ তা‘আলার দীনকে পরিবর্তন করতে এবং মানুষকে গোমরাহ করতে, তারা এ সমস্ত আয়াত নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করে এবং বক্রতার দিকগুলো খুঁজে বের করে, যাতে তারা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারে এবং তাদের বাতিল কথার স্বপক্ষে এ দলীল পেশ করে তাদের ভ্রান্ত মতবাদ সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
অথচ এ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন, অন্য কেউ নয়। আর যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা এগুলোর ওপর বিশ্বাস রাখেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারাও ঐ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা জানে না; বরং তারা বিশ্বাস রাখার সাথে সাথে এ কথাও বলে যে, সকল কিছুই মহান আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে এ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা জানা সম্ভব নয়। আর যারা এ সমস্ত আয়াত নিয়ে বাড়াবাড়ি করে তাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে এবং তারা এর দ্বারা পথভ্রষ্ট হয় ও অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করতে চায়।
এ সম্পর্কে সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে, আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
(أُولُوا الْأَلْبَابِ.......... هُوَ الَّذِيْٓ أَنْزَلَ)
আয়াতটি পাঠ করলেন। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করেছেন যে, যারা মুতাশাবিহাত আয়াতের পেছনে ছুটে তাদের যখন তুমি দেখবে তখন মনে করবে যে, তাদের কথাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেছেন। সুতরাং তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকবে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৪৭, সহীহ মুসলিম হা: ২৬৬৫)
(رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا)
“হে আমাদের রব! হিদায়াত দানের পর আমাদের অন্তরকে বক্র করে দেবেন না।” এটি একটি দু‘আ যা মু’মিনরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা করে বলে যে, আল্লাহ তা‘আলা হিদায়াত দান করার পর যেন পুনরায় তাদেরকে গুমরাহ না করেন। তাদেরকে যেন হক থেকে বাতিলের দিকে আবার ফিরিয়ে না দেন। আর এর দ্বারা যেন আল্লাহ তা‘আলা তাদের অবস্থা ও আমল আখলাককে সুন্দর ও শুদ্ধ করে দেন। তাদেরকে যেন সরল-সোজা পথে, সুদৃঢ় ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং তাদের অন্তর থেকে যেন বক্রতা দূর করে দেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
يا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلٰي دِيْنِكَ
হে অন্তরের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দীনে প্রতিষ্ঠিত রাখুন। (তিরমিযী হা: ২১৪০, সহীহ)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَآ إِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি একদিন তাদেরকে মৃত্যুর পর আবার সমবেত করবেন। তাদেরকে পুনরায় জীবিত করবেন, তাদের কাজের প্রতিদান দেবেন। প্রত্যেকে যে কাজ করবে সে তা-ই পাবে। কাউকে বিন্দু পরিমাণ কম-বেশি দেয়া হবে না। এ ওয়াদা তিনি বাস্তবায়িত করবেন এবং সকলের মাঝে মীমাংসা করে দেবেন। ঐ দিনের আগমনের এবং আল্লাহ তা‘আলার অঙ্গীকার- এর ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। একদিন তা বাস্তবায়িত হবেই।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্য সূরায় বলেন:(اَللہُ لَآ اِلٰھَ اِلَّا ھُوَﺚ لَیَجْمَعَنَّکُمْ اِلٰی یَوْمِ الْقِیٰمَةِ لَا رَیْبَ فِیْھِ)
“আল্লাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন মা‘বূদ নেই, তিনি তোমাদেরকে কিয়ামাতের দিন একত্র করবেনই, এতে কোন সন্দেহ নেই।” (সূরা নিসা ৪:৮৭)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআনে মুহকাম ও মুতাশাবিহ দু’ধরণের আয়াতই রয়েছে। মুহকাম আয়াতের ওপর ঈমান আনা ও আমল করা উভয়টা ওয়াজিব। আর মুতাশাবিহ আয়াতের প্রতি ঈমান আনব এবং তার বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার দিকে সোপর্দ করব।
২. যারা মুতাশাবিহ আয়াত অন্বেষণের চেষ্টা চালায় তাদেরকে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব; কারণ তারা বিদআতী ও কুপ্রবৃত্তির অনুসারী।
৩. ফেতনা প্রকাশ পেলে অন্তরের বক্রতা থেকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় চাওয়া উচিত।
3:9
رَبَّنَاۤ اِنَّکَ جَامِعُ النَّاسِ لِیَوۡمٍ لَّا رَیۡبَ فِیۡہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ لَا یُخۡلِفُ الۡمِیۡعَادَ ٪﴿۹﴾
FATHUL MAJID
আলিফ-লাম-মীম।
FATHUL MAJID
৭-৯ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যে কিতাব অর্থাৎ কুরআন অবতীর্ণ করেছেন তাতে দু’ ধরণের আয়াত রয়েছে, মুহকাম ও মুতাশাবিহ। মুহকাম ও মুতাশাবিহ এর দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআনের আয়াতগুলো তিনভাগে ভাগ করা যায়:
১. اَلْمُحْكُمُ الْعَامُ
অর্থাৎ কুরআনের শব্দ ও অর্থ সব কিছু বলিষ্ঠ, মজবুত ও উৎকৃষ্ট। ভাষা অলংকারে কুরআন সবার ঊর্ধ্বে, তার সকল সংবাদ সত্য ও উপকারী। এতে মিথ্যা, অনর্থক ও কোন প্রকার বৈপরিত্য নেই। তার সকল বিধান ন্যায়সঙ্গত ও হিকমতপূর্ণ, কোনরূপ জুলুম ও অবোধগম্যতা নেই। এ দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণ কুরআন মুহকাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(كِتٰبٌ أُحْكِمَتْ اٰيٰتُه۫ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَّدُنْ حَكِيْمٍ خَبِيْر)
“এটা এমন গ্রন্থ যার আয়াতগুলো সুদৃঢ়, অতঃপর বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞের পক্ষ থেকে।” (সূরা হুদ ১১:১)
২. اَلْمُتَشَابِهُ الْعَامُ অর্থাৎ সম্পূর্ণ কুরআন এক অংশ অন্য অংশের সাথে পূর্ণতা, দৃঢ়তা ও প্রশংসনীয় উদ্দেশ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَللہُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِیْثِ کِتٰبًا مُّتَشَابِھًا مَّثَانِیَ تَقْشَعِرُّ مِنْھُ جُلُوْدُ الَّذِیْنَ یَخْشَوْنَ رَبَّھُمْﺆ ثُمَّ تَلِیْنُ جُلُوْدُھُمْ وَقُلُوْبُھُمْ اِلٰی ذِکْرِ اللہِﺚ ذٰلِکَ ھُدَی اللہِ یَھْدِیْ بِھ۪ مَنْ یَّشَا۬ئُﺚ وَمَنْ یُّضْلِلِ اللہُ فَمَا لَھ۫ مِنْ ھَادٍ)
“আল্লাহ অতি উত্তম বাণী নাযিল করেছেন, তা এমন কিতাব যা সুসামঞ্জস্য, বার বার তেলাওয়াত করা হয়। এতে তাদের দেহ রোমাঞ্চিত হয় যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, অতঃপর তাদের দেহ ও তাদের অন্তর বিনম্র হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। এটাই আল্লাহর হিদায়াত, এর দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নেই।” (সূরা যুমার ৩৯:২৩)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(اَفَلَا یَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَﺚ وَلَوْ کَانَ مِنْ عِنْدِ غَیْرِ اللہِ لَوَجَدُوْا فِیْھِ اخْتِلَافًا کَثِیْرًا)
“তবে কি তারা কুরআন অনুধাবন করে না? এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নিকট হতে আসত তবে তারা তাতে অবশ্যই অনেক অসঙ্গতি পেত।” (সূরা নিসা ৪:৮২)
৩. المحكم الخاص ببعضه
এ প্রকার মুহকাম অর্থ হল আয়াতের অর্থ সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার, কোন অস্পষ্টতা নেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ)
“হে মানব মণ্ডলী! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বনকারী হও।” (সূরা বাকারাহ ২:২১) এরূপ উদাহরণ অনেক।المتشابه الخاص ببعضه
এ প্রকার মুতাশাবিহ অর্থ হল- আয়াতের অর্থ দ্ব্যর্থবোধক ও অস্পষ্ট। এ আয়াতগুলো থেকে কোন ব্যক্তি এমন কিছু ধারণা করতে পারে যা আল্লাহ তা‘আলা বা তাঁর কিতাব অথবা তাঁর রাসূলের সাথে উপযোগী নয়। যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা সেগুলোর মর্ম অনেক ক্ষেত্রে অনুধাবন করতে পারে।
আল্লাহ তা‘আলার সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার এ কথা থেকে ধারণা করতে পারে-
(بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوْطَتٰنِ)
“বরং আল্লাহর উভয় হাতই প্রসারিত।” (সূরা মায়িদাহ ৫:৬৪)
আল্লাহ তা‘আলার দু’হাত মানুষের হাতের মত। মূলতঃ এমন ধারণা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলার দু’টি হাত রয়েছে কিন্তু মানুষের হাতের মত নয়; বরং তাঁর জন্য যেমন শোভা পায় ও হওয়া উচিত তেমনই। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَيْسَ كَمِثْلِه۪ شَيْءٌ ﺆ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ)
“কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা শুরা ৪২:১১)
আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কোন ব্যক্তি ধারণা করতে পারে যে, কুরআনের এক আয়াত অন্য আয়াতের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক ও এক আয়াত অন্য আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مَآ اَصَابَکَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللہِﺑ وَمَآ اَصَابَکَ مِنْ سَیِّئَةٍ فَمِنْ نَّفْسِکَ)
“তোমার যা কল্যাণ হয় তা আল্লাহর নিকট হতে এবং তোমার যা অকল্যাণ হয় তা তোমার নিজের কারণে।” (সূরা নিসা ৪:৭৯) আল্লাহ অন্যত্র বলেন:
(وَاِنْ تُصِبْھُمْ حَسَنَةٌ یَّقُوْلُوْا ھٰذِھ۪ مِنْ عِنْدِ اللہِ)
“যদি তাদের কোন কল্যাণ হয় তবে তারা বলে ‘এটা আল্লাহর নিকট হতে।’ (সূরা নিসা ৪:৭৮)
এ আয়াতদ্বয় থেকে অনেকে ধারণা করতে পারে যে, কল্যাণ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে আসে আর অকল্যাণ মানুষের পক্ষ থেকে আসে। মূলতঃ তা নয়, বরং কল্যাণ ও অকল্যাণ উভয়ই আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত তাকদীর। কিন্তু কল্যাণ বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ। অকল্যাণ আল্লাহ তা‘আলাই দিয়ে থাকেন কিন্তু তা বান্দার কর্মের কারণে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ أَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْا عَنْ كَثِيْرٍ)
“তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদেরই হাতের কামাইয়ের ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন।” (সূরা শুরা ৪২:৩০)
রাসূলের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কেউ আল্লাহ তা‘আলার এ কথা থেকে ধারণা করতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি সন্দেহে ছিলেন।
(فَإِنْ كُنْتَ فِيْ شَكٍّ مِّمَّآ أَنْزَلْنَآ إِلَيْكَ فَسْأَلِ الَّذِيْنَ يَقْرَأُوْنَ الْكِتٰبَ مِنْ قَبْلِكَ)
“আমি তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে যদি তুমি সন্দেহ করে থাক তবে তোমার পূর্বের কিতাব যারা পাঠ করে তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর; (সূরা ইউনুস ১০:৯৪) মূলত নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি সন্দেহ করেননি, বরং তিনি কুরআন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ إِنْ كُنْتُمْ فِيْ شَكٍّ مِّنْ دِيْنِيْ فَلَآ أَعْبُدُ الَّذِيْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ)
“বল: ‘হে মানুষ! তোমরা যদি আমার দীনের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ কর তবে জেনে রাখ, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ‘ইবাদত কর আমি তাদের ‘ইবাদত করি না।” (সূরা ইউনুস ১০:১০৪) অর্থাৎ তোমরা যদি আমার দীনের ব্যাপারে সন্দেহ কর তাহলে জেনে রেখ! আমি আমার দীনের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া তোমরা যাদের ইবাদত কর আমি তাদের ইবাদত করি না; বরং তাদের সাথে কুফরী করি এবং একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করি। (শরহু মুকাদ্দামাহ ফী উসূলুত তাফসীর: ২৩৬-২৪৩ পৃ:)
محكمات মুহকামাত আয়াতগুলোই হল কুরআনের মূল বিষয়। কারণ এ আয়াতগুলো বুঝার জন্য কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয় না। আর
متشابهات
মুতাশাবিহাত আয়াতগুলো এ রকম নয়। অতএব যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, যারা চায় আল্লাহ তা‘আলার দীনকে পরিবর্তন করতে এবং মানুষকে গোমরাহ করতে, তারা এ সমস্ত আয়াত নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করে এবং বক্রতার দিকগুলো খুঁজে বের করে, যাতে তারা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারে এবং তাদের বাতিল কথার স্বপক্ষে এ দলীল পেশ করে তাদের ভ্রান্ত মতবাদ সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
অথচ এ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন, অন্য কেউ নয়। আর যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা এগুলোর ওপর বিশ্বাস রাখেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারাও ঐ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা জানে না; বরং তারা বিশ্বাস রাখার সাথে সাথে এ কথাও বলে যে, সকল কিছুই মহান আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে এ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা জানা সম্ভব নয়। আর যারা এ সমস্ত আয়াত নিয়ে বাড়াবাড়ি করে তাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে এবং তারা এর দ্বারা পথভ্রষ্ট হয় ও অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করতে চায়।
এ সম্পর্কে সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে, আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
(أُولُوا الْأَلْبَابِ.......... هُوَ الَّذِيْٓ أَنْزَلَ)
আয়াতটি পাঠ করলেন। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করেছেন যে, যারা মুতাশাবিহাত আয়াতের পেছনে ছুটে তাদের যখন তুমি দেখবে তখন মনে করবে যে, তাদের কথাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেছেন। সুতরাং তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকবে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৪৭, সহীহ মুসলিম হা: ২৬৬৫)
(رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا)
“হে আমাদের রব! হিদায়াত দানের পর আমাদের অন্তরকে বক্র করে দেবেন না।” এটি একটি দু‘আ যা মু’মিনরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা করে বলে যে, আল্লাহ তা‘আলা হিদায়াত দান করার পর যেন পুনরায় তাদেরকে গুমরাহ না করেন। তাদেরকে যেন হক থেকে বাতিলের দিকে আবার ফিরিয়ে না দেন। আর এর দ্বারা যেন আল্লাহ তা‘আলা তাদের অবস্থা ও আমল আখলাককে সুন্দর ও শুদ্ধ করে দেন। তাদেরকে যেন সরল-সোজা পথে, সুদৃঢ় ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং তাদের অন্তর থেকে যেন বক্রতা দূর করে দেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
يا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلٰي دِيْنِكَ
হে অন্তরের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দীনে প্রতিষ্ঠিত রাখুন। (তিরমিযী হা: ২১৪০, সহীহ)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَآ إِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি একদিন তাদেরকে মৃত্যুর পর আবার সমবেত করবেন। তাদেরকে পুনরায় জীবিত করবেন, তাদের কাজের প্রতিদান দেবেন। প্রত্যেকে যে কাজ করবে সে তা-ই পাবে। কাউকে বিন্দু পরিমাণ কম-বেশি দেয়া হবে না। এ ওয়াদা তিনি বাস্তবায়িত করবেন এবং সকলের মাঝে মীমাংসা করে দেবেন। ঐ দিনের আগমনের এবং আল্লাহ তা‘আলার অঙ্গীকার- এর ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। একদিন তা বাস্তবায়িত হবেই।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্য সূরায় বলেন:(اَللہُ لَآ اِلٰھَ اِلَّا ھُوَﺚ لَیَجْمَعَنَّکُمْ اِلٰی یَوْمِ الْقِیٰمَةِ لَا رَیْبَ فِیْھِ)
“আল্লাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন মা‘বূদ নেই, তিনি তোমাদেরকে কিয়ামাতের দিন একত্র করবেনই, এতে কোন সন্দেহ নেই।” (সূরা নিসা ৪:৮৭)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআনে মুহকাম ও মুতাশাবিহ দু’ধরণের আয়াতই রয়েছে। মুহকাম আয়াতের ওপর ঈমান আনা ও আমল করা উভয়টা ওয়াজিব। আর মুতাশাবিহ আয়াতের প্রতি ঈমান আনব এবং তার বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার দিকে সোপর্দ করব।
২. যারা মুতাশাবিহ আয়াত অন্বেষণের চেষ্টা চালায় তাদেরকে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব; কারণ তারা বিদআতী ও কুপ্রবৃত্তির অনুসারী।
৩. ফেতনা প্রকাশ পেলে অন্তরের বক্রতা থেকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় চাওয়া উচিত।
আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যে কিতাব অর্থাৎ কুরআন অবতীর্ণ করেছেন তাতে দু’ ধরণের আয়াত রয়েছে, মুহকাম ও মুতাশাবিহ। মুহকাম ও মুতাশাবিহ এর দৃষ্টিকোণ থেকে কুরআনের আয়াতগুলো তিনভাগে ভাগ করা যায়:
১. اَلْمُحْكُمُ الْعَامُ
অর্থাৎ কুরআনের শব্দ ও অর্থ সব কিছু বলিষ্ঠ, মজবুত ও উৎকৃষ্ট। ভাষা অলংকারে কুরআন সবার ঊর্ধ্বে, তার সকল সংবাদ সত্য ও উপকারী। এতে মিথ্যা, অনর্থক ও কোন প্রকার বৈপরিত্য নেই। তার সকল বিধান ন্যায়সঙ্গত ও হিকমতপূর্ণ, কোনরূপ জুলুম ও অবোধগম্যতা নেই। এ দৃষ্টিকোণ থেকে সম্পূর্ণ কুরআন মুহকাম। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(كِتٰبٌ أُحْكِمَتْ اٰيٰتُه۫ ثُمَّ فُصِّلَتْ مِنْ لَّدُنْ حَكِيْمٍ خَبِيْر)
“এটা এমন গ্রন্থ যার আয়াতগুলো সুদৃঢ়, অতঃপর বিস্তারিতভাবে বর্ণিত হয়েছে প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞের পক্ষ থেকে।” (সূরা হুদ ১১:১)
২. اَلْمُتَشَابِهُ الْعَامُ অর্থাৎ সম্পূর্ণ কুরআন এক অংশ অন্য অংশের সাথে পূর্ণতা, দৃঢ়তা ও প্রশংসনীয় উদ্দেশ্যের দৃষ্টিকোণ থেকে সাদৃশ্যপূর্ণ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اَللہُ نَزَّلَ اَحْسَنَ الْحَدِیْثِ کِتٰبًا مُّتَشَابِھًا مَّثَانِیَ تَقْشَعِرُّ مِنْھُ جُلُوْدُ الَّذِیْنَ یَخْشَوْنَ رَبَّھُمْﺆ ثُمَّ تَلِیْنُ جُلُوْدُھُمْ وَقُلُوْبُھُمْ اِلٰی ذِکْرِ اللہِﺚ ذٰلِکَ ھُدَی اللہِ یَھْدِیْ بِھ۪ مَنْ یَّشَا۬ئُﺚ وَمَنْ یُّضْلِلِ اللہُ فَمَا لَھ۫ مِنْ ھَادٍ)
“আল্লাহ অতি উত্তম বাণী নাযিল করেছেন, তা এমন কিতাব যা সুসামঞ্জস্য, বার বার তেলাওয়াত করা হয়। এতে তাদের দেহ রোমাঞ্চিত হয় যারা তাদের প্রতিপালককে ভয় করে, অতঃপর তাদের দেহ ও তাদের অন্তর বিনম্র হয়ে আল্লাহর স্মরণে ঝুঁকে পড়ে। এটাই আল্লাহর হিদায়াত, এর দ্বারা তিনি যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দান করেন। আর আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করেন তার কোন পথপ্রদর্শক নেই।” (সূরা যুমার ৩৯:২৩)
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(اَفَلَا یَتَدَبَّرُوْنَ الْقُرْاٰنَﺚ وَلَوْ کَانَ مِنْ عِنْدِ غَیْرِ اللہِ لَوَجَدُوْا فِیْھِ اخْتِلَافًا کَثِیْرًا)
“তবে কি তারা কুরআন অনুধাবন করে না? এটা যদি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও নিকট হতে আসত তবে তারা তাতে অবশ্যই অনেক অসঙ্গতি পেত।” (সূরা নিসা ৪:৮২)
৩. المحكم الخاص ببعضه
এ প্রকার মুহকাম অর্থ হল আয়াতের অর্থ সুস্পষ্ট ও পরিষ্কার, কোন অস্পষ্টতা নেই। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِيْ خَلَقَكُمْ وَالَّذِيْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَ)
“হে মানব মণ্ডলী! তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত কর যিনি তোমাদেরকে ও তোমাদের পূর্ববর্তীদেরকে সৃষ্টি করেছেন যেন তোমরা তাক্বওয়া অবলম্বনকারী হও।” (সূরা বাকারাহ ২:২১) এরূপ উদাহরণ অনেক।المتشابه الخاص ببعضه
এ প্রকার মুতাশাবিহ অর্থ হল- আয়াতের অর্থ দ্ব্যর্থবোধক ও অস্পষ্ট। এ আয়াতগুলো থেকে কোন ব্যক্তি এমন কিছু ধারণা করতে পারে যা আল্লাহ তা‘আলা বা তাঁর কিতাব অথবা তাঁর রাসূলের সাথে উপযোগী নয়। যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা সেগুলোর মর্ম অনেক ক্ষেত্রে অনুধাবন করতে পারে।
আল্লাহ তা‘আলার সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কোন ব্যক্তি আল্লাহ তা‘আলার এ কথা থেকে ধারণা করতে পারে-
(بَلْ يَدَاهُ مَبْسُوْطَتٰنِ)
“বরং আল্লাহর উভয় হাতই প্রসারিত।” (সূরা মায়িদাহ ৫:৬৪)
আল্লাহ তা‘আলার দু’হাত মানুষের হাতের মত। মূলতঃ এমন ধারণা সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলার দু’টি হাত রয়েছে কিন্তু মানুষের হাতের মত নয়; বরং তাঁর জন্য যেমন শোভা পায় ও হওয়া উচিত তেমনই। কারণ আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(لَيْسَ كَمِثْلِه۪ شَيْءٌ ﺆ وَهُوَ السَّمِيْعُ الْبَصِيْرُ)
“কোন কিছুই তাঁর সদৃশ নয়, তিনি সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।” (সূরা শুরা ৪২:১১)
আল্লাহ তা‘আলার কিতাবের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কোন ব্যক্তি ধারণা করতে পারে যে, কুরআনের এক আয়াত অন্য আয়াতের সাথে সাঙ্ঘর্ষিক ও এক আয়াত অন্য আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(مَآ اَصَابَکَ مِنْ حَسَنَةٍ فَمِنَ اللہِﺑ وَمَآ اَصَابَکَ مِنْ سَیِّئَةٍ فَمِنْ نَّفْسِکَ)
“তোমার যা কল্যাণ হয় তা আল্লাহর নিকট হতে এবং তোমার যা অকল্যাণ হয় তা তোমার নিজের কারণে।” (সূরা নিসা ৪:৭৯) আল্লাহ অন্যত্র বলেন:
(وَاِنْ تُصِبْھُمْ حَسَنَةٌ یَّقُوْلُوْا ھٰذِھ۪ مِنْ عِنْدِ اللہِ)
“যদি তাদের কোন কল্যাণ হয় তবে তারা বলে ‘এটা আল্লাহর নিকট হতে।’ (সূরা নিসা ৪:৭৮)
এ আয়াতদ্বয় থেকে অনেকে ধারণা করতে পারে যে, কল্যাণ আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে আসে আর অকল্যাণ মানুষের পক্ষ থেকে আসে। মূলতঃ তা নয়, বরং কল্যাণ ও অকল্যাণ উভয়ই আল্লাহ তা‘আলার নির্ধারিত তাকদীর। কিন্তু কল্যাণ বান্দার প্রতি আল্লাহ তা‘আলার অনুগ্রহ। অকল্যাণ আল্লাহ তা‘আলাই দিয়ে থাকেন কিন্তু তা বান্দার কর্মের কারণে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَمَآ أَصَابَكُمْ مِّنْ مُّصِيْبَةٍ فَبِمَا كَسَبَتْ أَيْدِيْكُمْ وَيَعْفُوْا عَنْ كَثِيْرٍ)
“তোমাদের যে বিপদ-আপদ ঘটে তা তো তোমাদেরই হাতের কামাইয়ের ফল এবং তোমাদের অনেক অপরাধ তিনি ক্ষমা করে দেন।” (সূরা শুরা ৪২:৩০)
রাসূলের সাথে সম্পৃক্ত, যেমন কেউ আল্লাহ তা‘আলার এ কথা থেকে ধারণা করতে পারে যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ওপর যা অবতীর্ণ হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি সন্দেহে ছিলেন।
(فَإِنْ كُنْتَ فِيْ شَكٍّ مِّمَّآ أَنْزَلْنَآ إِلَيْكَ فَسْأَلِ الَّذِيْنَ يَقْرَأُوْنَ الْكِتٰبَ مِنْ قَبْلِكَ)
“আমি তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি তাতে যদি তুমি সন্দেহ করে থাক তবে তোমার পূর্বের কিতাব যারা পাঠ করে তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর; (সূরা ইউনুস ১০:৯৪) মূলত নাবী (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর প্রতি যা অবতীর্ণ করা হয়েছে সে ব্যাপারে তিনি সন্দেহ করেননি, বরং তিনি কুরআন সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি দৃঢ় বিশ্বাসী ছিলেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(قُلْ يٰٓأَيُّهَا النَّاسُ إِنْ كُنْتُمْ فِيْ شَكٍّ مِّنْ دِيْنِيْ فَلَآ أَعْبُدُ الَّذِيْنَ تَعْبُدُوْنَ مِنْ دُوْنِ اللّٰهِ)
“বল: ‘হে মানুষ! তোমরা যদি আমার দীনের ব্যাপারে সন্দেহ পোষণ কর তবে জেনে রাখ, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের ‘ইবাদত কর আমি তাদের ‘ইবাদত করি না।” (সূরা ইউনুস ১০:১০৪) অর্থাৎ তোমরা যদি আমার দীনের ব্যাপারে সন্দেহ কর তাহলে জেনে রেখ! আমি আমার দীনের ব্যাপারে দৃঢ় বিশ্বাসী। এ জন্য আল্লাহ তা‘আলা ছাড়া তোমরা যাদের ইবাদত কর আমি তাদের ইবাদত করি না; বরং তাদের সাথে কুফরী করি এবং একমাত্র আল্লাহ তা‘আলার ইবাদত করি। (শরহু মুকাদ্দামাহ ফী উসূলুত তাফসীর: ২৩৬-২৪৩ পৃ:)
محكمات মুহকামাত আয়াতগুলোই হল কুরআনের মূল বিষয়। কারণ এ আয়াতগুলো বুঝার জন্য কোন ব্যাখ্যা বিশ্লেষণের প্রয়োজন হয় না। আর
متشابهات
মুতাশাবিহাত আয়াতগুলো এ রকম নয়। অতএব যাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে, যারা চায় আল্লাহ তা‘আলার দীনকে পরিবর্তন করতে এবং মানুষকে গোমরাহ করতে, তারা এ সমস্ত আয়াত নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি করে এবং বক্রতার দিকগুলো খুঁজে বের করে, যাতে তারা তাদের অসৎ উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করতে পারে এবং তাদের বাতিল কথার স্বপক্ষে এ দলীল পেশ করে তাদের ভ্রান্ত মতবাদ সুপ্রতিষ্ঠিত করতে পারে।
অথচ এ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই জানেন, অন্য কেউ নয়। আর যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারা এগুলোর ওপর বিশ্বাস রাখেন। প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত যারা গভীর জ্ঞানের অধিকারী তারাও ঐ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা জানে না; বরং তারা বিশ্বাস রাখার সাথে সাথে এ কথাও বলে যে, সকল কিছুই মহান আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলা ব্যতীত অন্য কারো পক্ষে এ সমস্ত আয়াতের ব্যাখ্যা জানা সম্ভব নয়। আর যারা এ সমস্ত আয়াত নিয়ে বাড়াবাড়ি করে তাদের অন্তরে ব্যাধি রয়েছে এবং তারা এর দ্বারা পথভ্রষ্ট হয় ও অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করতে চায়।
এ সম্পর্কে সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে, আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
(أُولُوا الْأَلْبَابِ.......... هُوَ الَّذِيْٓ أَنْزَلَ)
আয়াতটি পাঠ করলেন। আয়িশাহ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করেছেন যে, যারা মুতাশাবিহাত আয়াতের পেছনে ছুটে তাদের যখন তুমি দেখবে তখন মনে করবে যে, তাদের কথাই আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বলেছেন। সুতরাং তাদের ব্যাপারে সাবধান থাকবে। (সহীহ বুখারী হা: ৪৬৪৭, সহীহ মুসলিম হা: ২৬৬৫)
(رَبَّنَا لَا تُزِغْ قُلُوبَنَا)
“হে আমাদের রব! হিদায়াত দানের পর আমাদের অন্তরকে বক্র করে দেবেন না।” এটি একটি দু‘আ যা মু’মিনরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা করে বলে যে, আল্লাহ তা‘আলা হিদায়াত দান করার পর যেন পুনরায় তাদেরকে গুমরাহ না করেন। তাদেরকে যেন হক থেকে বাতিলের দিকে আবার ফিরিয়ে না দেন। আর এর দ্বারা যেন আল্লাহ তা‘আলা তাদের অবস্থা ও আমল আখলাককে সুন্দর ও শুদ্ধ করে দেন। তাদেরকে যেন সরল-সোজা পথে, সুদৃঢ় ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং তাদের অন্তর থেকে যেন বক্রতা দূর করে দেন। যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
يا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِيْ عَلٰي دِيْنِكَ
হে অন্তরের পরিবর্তনকারী! আমার অন্তরকে আপনার দীনে প্রতিষ্ঠিত রাখুন। (তিরমিযী হা: ২১৪০, সহীহ)
অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(رَبَّنَآ إِنَّكَ جَامِعُ النَّاسِ)
এখানে আল্লাহ তা‘আলা সকল মানুষকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তিনি একদিন তাদেরকে মৃত্যুর পর আবার সমবেত করবেন। তাদেরকে পুনরায় জীবিত করবেন, তাদের কাজের প্রতিদান দেবেন। প্রত্যেকে যে কাজ করবে সে তা-ই পাবে। কাউকে বিন্দু পরিমাণ কম-বেশি দেয়া হবে না। এ ওয়াদা তিনি বাস্তবায়িত করবেন এবং সকলের মাঝে মীমাংসা করে দেবেন। ঐ দিনের আগমনের এবং আল্লাহ তা‘আলার অঙ্গীকার- এর ব্যাপারে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই। একদিন তা বাস্তবায়িত হবেই।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা অন্য সূরায় বলেন:(اَللہُ لَآ اِلٰھَ اِلَّا ھُوَﺚ لَیَجْمَعَنَّکُمْ اِلٰی یَوْمِ الْقِیٰمَةِ لَا رَیْبَ فِیْھِ)
“আল্লাহ, তিনি ব্যতীত অন্য কোন মা‘বূদ নেই, তিনি তোমাদেরকে কিয়ামাতের দিন একত্র করবেনই, এতে কোন সন্দেহ নেই।” (সূরা নিসা ৪:৮৭)
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কুরআনে মুহকাম ও মুতাশাবিহ দু’ধরণের আয়াতই রয়েছে। মুহকাম আয়াতের ওপর ঈমান আনা ও আমল করা উভয়টা ওয়াজিব। আর মুতাশাবিহ আয়াতের প্রতি ঈমান আনব এবং তার বিষয়টি আল্লাহ তা‘আলার দিকে সোপর্দ করব।
২. যারা মুতাশাবিহ আয়াত অন্বেষণের চেষ্টা চালায় তাদেরকে পরিত্যাগ করা ওয়াজিব; কারণ তারা বিদআতী ও কুপ্রবৃত্তির অনুসারী।
৩. ফেতনা প্রকাশ পেলে অন্তরের বক্রতা থেকে আল্লাহ তা‘আলার কাছে আশ্রয় চাওয়া উচিত।
3:10
اِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا لَنۡ تُغۡنِیَ عَنۡہُمۡ اَمۡوَالُہُمۡ وَ لَاۤ اَوۡلَادُہُمۡ مِّنَ اللّٰہِ شَیۡئًا ؕ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمۡ وَقُوۡدُ النَّارِ ﴿ۙ۱۰﴾
FATHUL MAJID
আলিফ-লাম-মীম।
FATHUL MAJID
১০ ও ১১ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, অস্বীকারকারীরা জাহান্নামের ইন্ধন হবে। সেদিন ঐ অত্যাচারীদের কোন ওযর-আপত্তি গ্রহণ করা হবে না। সেদিন তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহ তা‘আলার নিকট কোন উপকারে আসবে না। তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(اَیَحْسَبُوْنَ اَنَّمَا نُمِدُّھُمْ بِھ۪ مِنْ مَّالٍ وَّبَنِیْنَﮆﺫ نُسَارِعُ لَھُمْ فِی الْخَیْرٰتِﺚ بَلْ لَّا یَشْعُرُوْنَ)
“তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে যে সাহায্য করে থাকি, তা দ্বারা আমি তাদের জন্য সকল প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, তারা বুঝে না।” (সূরা মু’মিনুন ২৩:৫৫-৫৬)
আর যারা সন্তান-সন্ততি দ্বারা নাজাতের আশা করবে এবং আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করবে তারা চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا لَنْ تُغْنِیَ عَنْھُمْ اَمْوَالُھُمْ وَلَآ اَوْلَادُھُمْ مِّنَ اللہِ شَیْئًاﺚ وَاُولٰ۬ئِکَ اَصْحٰبُ النَّارِﺆ ھُمْ فِیْھَا خٰلِدُوْنَ)
“নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে আল্লাহর (শাস্তি থেকে রক্ষা করতে) তাদের সন্তান ও সম্পদ কখনও কোন কাজে আসবে না। আর তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।” (সূরা আলি-ইমরান ৩:১১৬)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:(وَقَالُوْا نَحْنُ اَکْثَرُ اَمْوَالًا وَّاَوْلَادًاﺫ وَّمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِیْنَ)
“তারা বলত: আমরা ধনে-জনে সমৃদ্ধশালী; সুতরাং আমাদেরকে কিছুতেই শাস্তি দেয়া হবে না।” (সূরা সাবা ৩৪:৩৫)
তাদের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না যেমনভাবে ফির‘আউন ও তার পূর্ববর্তী কাফিরদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি তাদের কোন কাজে আসেনি। আল্লাহ তা‘আলার পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন এবং তাঁর শাস্তি বড়ই বেদনাদায়ক। কেউ কোন ক্ষমতা বলে ঐ শাস্তি হতে রক্ষা পেতে পারে না এবং তা সরিয়ে দিতেও পারে না। সুতরাং যারা কুফরী করবে তাদের অবস্থাও পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের মতই হবে।
আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কঠিন শাস্তির মাধ্যমে পাকড়াও করবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(فَكَذَّبُوْهُ فَأَخَذَهُمْ عَذَابُ يَوْمِ الظُّلَّةِ ط إِنَّه۫ كَانَ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ)
“অতঃপর তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করল, পরে তাদেরকে মেঘাচ্ছন্ন দিবসের শাস্তি গ্রাস করল। এটা তো ছিল এক ভীষণ দিবসের শাস্তি!” (সূরা শুয়ারা ২৬:১৮৯)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(فَلَبِثَ فِيْهِمْ أَلْفَ سَنَةٍ إِلَّا خَمْسِيْنَ عَامًا ط فَأَخَذَهُمُ الطُّوْفَانُ وَهُمْ ظٰلِمُوْنَ)
“সে তাদের মধ্যে অবস্থান করেছিল পঞ্চাশ কম হাজার বছর। অতঃপর প্লাবন তাদেরকে গ্রাস করে; কারণ তারা ছিল সীমালঙ্ঘনকারী।” (সূরা আনকাবুত ২৯:১৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَفِيْ عَادٍ إِذْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الرِّيْحَ الْعَقِيْمَ)
“আর আদ সম্প্রদায়, যখন আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম অকল্যাণকর বাতাস।” (সূরা যারিয়াত ৫১:৪১)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১। যারা কুফরী করে তাদের জন্য ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন উপকারে আসবেনা।
২। যারা আল্লাহ তা‘আলার আয়াতকে অস্বীকার করে তিনি তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, অস্বীকারকারীরা জাহান্নামের ইন্ধন হবে। সেদিন ঐ অত্যাচারীদের কোন ওযর-আপত্তি গ্রহণ করা হবে না। সেদিন তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহ তা‘আলার নিকট কোন উপকারে আসবে না। তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(اَیَحْسَبُوْنَ اَنَّمَا نُمِدُّھُمْ بِھ۪ مِنْ مَّالٍ وَّبَنِیْنَﮆﺫ نُسَارِعُ لَھُمْ فِی الْخَیْرٰتِﺚ بَلْ لَّا یَشْعُرُوْنَ)
“তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে যে সাহায্য করে থাকি, তা দ্বারা আমি তাদের জন্য সকল প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, তারা বুঝে না।” (সূরা মু’মিনুন ২৩:৫৫-৫৬)
আর যারা সন্তান-সন্ততি দ্বারা নাজাতের আশা করবে এবং আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করবে তারা চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا لَنْ تُغْنِیَ عَنْھُمْ اَمْوَالُھُمْ وَلَآ اَوْلَادُھُمْ مِّنَ اللہِ شَیْئًاﺚ وَاُولٰ۬ئِکَ اَصْحٰبُ النَّارِﺆ ھُمْ فِیْھَا خٰلِدُوْنَ)
“নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে আল্লাহর (শাস্তি থেকে রক্ষা করতে) তাদের সন্তান ও সম্পদ কখনও কোন কাজে আসবে না। আর তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।” (সূরা আলি-ইমরান ৩:১১৬)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:(وَقَالُوْا نَحْنُ اَکْثَرُ اَمْوَالًا وَّاَوْلَادًاﺫ وَّمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِیْنَ)
“তারা বলত: আমরা ধনে-জনে সমৃদ্ধশালী; সুতরাং আমাদেরকে কিছুতেই শাস্তি দেয়া হবে না।” (সূরা সাবা ৩৪:৩৫)
তাদের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না যেমনভাবে ফির‘আউন ও তার পূর্ববর্তী কাফিরদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি তাদের কোন কাজে আসেনি। আল্লাহ তা‘আলার পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন এবং তাঁর শাস্তি বড়ই বেদনাদায়ক। কেউ কোন ক্ষমতা বলে ঐ শাস্তি হতে রক্ষা পেতে পারে না এবং তা সরিয়ে দিতেও পারে না। সুতরাং যারা কুফরী করবে তাদের অবস্থাও পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের মতই হবে।
আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কঠিন শাস্তির মাধ্যমে পাকড়াও করবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(فَكَذَّبُوْهُ فَأَخَذَهُمْ عَذَابُ يَوْمِ الظُّلَّةِ ط إِنَّه۫ كَانَ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ)
“অতঃপর তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করল, পরে তাদেরকে মেঘাচ্ছন্ন দিবসের শাস্তি গ্রাস করল। এটা তো ছিল এক ভীষণ দিবসের শাস্তি!” (সূরা শুয়ারা ২৬:১৮৯)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(فَلَبِثَ فِيْهِمْ أَلْفَ سَنَةٍ إِلَّا خَمْسِيْنَ عَامًا ط فَأَخَذَهُمُ الطُّوْفَانُ وَهُمْ ظٰلِمُوْنَ)
“সে তাদের মধ্যে অবস্থান করেছিল পঞ্চাশ কম হাজার বছর। অতঃপর প্লাবন তাদেরকে গ্রাস করে; কারণ তারা ছিল সীমালঙ্ঘনকারী।” (সূরা আনকাবুত ২৯:১৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَفِيْ عَادٍ إِذْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الرِّيْحَ الْعَقِيْمَ)
“আর আদ সম্প্রদায়, যখন আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম অকল্যাণকর বাতাস।” (সূরা যারিয়াত ৫১:৪১)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১। যারা কুফরী করে তাদের জন্য ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন উপকারে আসবেনা।
২। যারা আল্লাহ তা‘আলার আয়াতকে অস্বীকার করে তিনি তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করেন।
3:11
کَدَاۡبِ اٰلِ فِرۡعَوۡنَ ۙ وَ الَّذِیۡنَ مِنۡ قَبۡلِہِمۡ ؕ کَذَّبُوۡا بِاٰیٰتِنَا ۚ فَاَخَذَہُمُ اللّٰہُ بِذُنُوۡبِہِمۡ ؕ وَ اللّٰہُ شَدِیۡدُ الۡعِقَابِ ﴿۱۱﴾
FATHUL MAJID
আলিফ-লাম-মীম।
FATHUL MAJID
১০ ও ১১ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, অস্বীকারকারীরা জাহান্নামের ইন্ধন হবে। সেদিন ঐ অত্যাচারীদের কোন ওযর-আপত্তি গ্রহণ করা হবে না। সেদিন তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহ তা‘আলার নিকট কোন উপকারে আসবে না। তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(اَیَحْسَبُوْنَ اَنَّمَا نُمِدُّھُمْ بِھ۪ مِنْ مَّالٍ وَّبَنِیْنَﮆﺫ نُسَارِعُ لَھُمْ فِی الْخَیْرٰتِﺚ بَلْ لَّا یَشْعُرُوْنَ)
“তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে যে সাহায্য করে থাকি, তা দ্বারা আমি তাদের জন্য সকল প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, তারা বুঝে না।” (সূরা মু’মিনুন ২৩:৫৫-৫৬)
আর যারা সন্তান-সন্ততি দ্বারা নাজাতের আশা করবে এবং আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করবে তারা চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا لَنْ تُغْنِیَ عَنْھُمْ اَمْوَالُھُمْ وَلَآ اَوْلَادُھُمْ مِّنَ اللہِ شَیْئًاﺚ وَاُولٰ۬ئِکَ اَصْحٰبُ النَّارِﺆ ھُمْ فِیْھَا خٰلِدُوْنَ)
“নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে আল্লাহর (শাস্তি থেকে রক্ষা করতে) তাদের সন্তান ও সম্পদ কখনও কোন কাজে আসবে না। আর তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।” (সূরা আলি-ইমরান ৩:১১৬)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:(وَقَالُوْا نَحْنُ اَکْثَرُ اَمْوَالًا وَّاَوْلَادًاﺫ وَّمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِیْنَ)
“তারা বলত: আমরা ধনে-জনে সমৃদ্ধশালী; সুতরাং আমাদেরকে কিছুতেই শাস্তি দেয়া হবে না।” (সূরা সাবা ৩৪:৩৫)
তাদের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না যেমনভাবে ফির‘আউন ও তার পূর্ববর্তী কাফিরদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি তাদের কোন কাজে আসেনি। আল্লাহ তা‘আলার পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন এবং তাঁর শাস্তি বড়ই বেদনাদায়ক। কেউ কোন ক্ষমতা বলে ঐ শাস্তি হতে রক্ষা পেতে পারে না এবং তা সরিয়ে দিতেও পারে না। সুতরাং যারা কুফরী করবে তাদের অবস্থাও পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের মতই হবে।
আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কঠিন শাস্তির মাধ্যমে পাকড়াও করবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(فَكَذَّبُوْهُ فَأَخَذَهُمْ عَذَابُ يَوْمِ الظُّلَّةِ ط إِنَّه۫ كَانَ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ)
“অতঃপর তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করল, পরে তাদেরকে মেঘাচ্ছন্ন দিবসের শাস্তি গ্রাস করল। এটা তো ছিল এক ভীষণ দিবসের শাস্তি!” (সূরা শুয়ারা ২৬:১৮৯)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(فَلَبِثَ فِيْهِمْ أَلْفَ سَنَةٍ إِلَّا خَمْسِيْنَ عَامًا ط فَأَخَذَهُمُ الطُّوْفَانُ وَهُمْ ظٰلِمُوْنَ)
“সে তাদের মধ্যে অবস্থান করেছিল পঞ্চাশ কম হাজার বছর। অতঃপর প্লাবন তাদেরকে গ্রাস করে; কারণ তারা ছিল সীমালঙ্ঘনকারী।” (সূরা আনকাবুত ২৯:১৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَفِيْ عَادٍ إِذْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الرِّيْحَ الْعَقِيْمَ)
“আর আদ সম্প্রদায়, যখন আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম অকল্যাণকর বাতাস।” (সূরা যারিয়াত ৫১:৪১)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১। যারা কুফরী করে তাদের জন্য ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন উপকারে আসবেনা।
২। যারা আল্লাহ তা‘আলার আয়াতকে অস্বীকার করে তিনি তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করেন।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন, অস্বীকারকারীরা জাহান্নামের ইন্ধন হবে। সেদিন ঐ অত্যাচারীদের কোন ওযর-আপত্তি গ্রহণ করা হবে না। সেদিন তাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি আল্লাহ তা‘আলার নিকট কোন উপকারে আসবে না। তাদেরকে আল্লাহ তা‘আলার শাস্তি থেকে কেউ রক্ষা করতে পারবে না।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(اَیَحْسَبُوْنَ اَنَّمَا نُمِدُّھُمْ بِھ۪ مِنْ مَّالٍ وَّبَنِیْنَﮆﺫ نُسَارِعُ لَھُمْ فِی الْخَیْرٰتِﺚ بَلْ لَّا یَشْعُرُوْنَ)
“তারা কি মনে করে যে, আমি তাদেরকে ধনৈশ্বর্য ও সন্তান-সন্ততি দিয়ে যে সাহায্য করে থাকি, তা দ্বারা আমি তাদের জন্য সকল প্রকার মঙ্গল ত্বরান্বিত করছি? না, তারা বুঝে না।” (সূরা মু’মিনুন ২৩:৫৫-৫৬)
আর যারা সন্তান-সন্ততি দ্বারা নাজাতের আশা করবে এবং আল্লাহ তা‘আলা ও তাঁর রাসূলকে অস্বীকার করবে তারা চিরকাল জাহান্নামে অবস্থান করবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا لَنْ تُغْنِیَ عَنْھُمْ اَمْوَالُھُمْ وَلَآ اَوْلَادُھُمْ مِّنَ اللہِ شَیْئًاﺚ وَاُولٰ۬ئِکَ اَصْحٰبُ النَّارِﺆ ھُمْ فِیْھَا خٰلِدُوْنَ)
“নিশ্চয়ই যারা কুফরী করেছে আল্লাহর (শাস্তি থেকে রক্ষা করতে) তাদের সন্তান ও সম্পদ কখনও কোন কাজে আসবে না। আর তারা হবে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।” (সূরা আলি-ইমরান ৩:১১৬)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:(وَقَالُوْا نَحْنُ اَکْثَرُ اَمْوَالًا وَّاَوْلَادًاﺫ وَّمَا نَحْنُ بِمُعَذَّبِیْنَ)
“তারা বলত: আমরা ধনে-জনে সমৃদ্ধশালী; সুতরাং আমাদেরকে কিছুতেই শাস্তি দেয়া হবে না।” (সূরা সাবা ৩৪:৩৫)
তাদের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্ততি কোন কাজে আসবে না যেমনভাবে ফির‘আউন ও তার পূর্ববর্তী কাফিরদের ধন-সম্পদ ও সন্তানাদি তাদের কোন কাজে আসেনি। আল্লাহ তা‘আলার পাকড়াও অত্যন্ত কঠিন এবং তাঁর শাস্তি বড়ই বেদনাদায়ক। কেউ কোন ক্ষমতা বলে ঐ শাস্তি হতে রক্ষা পেতে পারে না এবং তা সরিয়ে দিতেও পারে না। সুতরাং যারা কুফরী করবে তাদের অবস্থাও পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের মতই হবে।
আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে কঠিন শাস্তির মাধ্যমে পাকড়াও করবেন। যেমন আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(فَكَذَّبُوْهُ فَأَخَذَهُمْ عَذَابُ يَوْمِ الظُّلَّةِ ط إِنَّه۫ كَانَ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيْمٍ)
“অতঃপর তারা তাকে প্রত্যাখ্যান করল, পরে তাদেরকে মেঘাচ্ছন্ন দিবসের শাস্তি গ্রাস করল। এটা তো ছিল এক ভীষণ দিবসের শাস্তি!” (সূরা শুয়ারা ২৬:১৮৯)
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(فَلَبِثَ فِيْهِمْ أَلْفَ سَنَةٍ إِلَّا خَمْسِيْنَ عَامًا ط فَأَخَذَهُمُ الطُّوْفَانُ وَهُمْ ظٰلِمُوْنَ)
“সে তাদের মধ্যে অবস্থান করেছিল পঞ্চাশ কম হাজার বছর। অতঃপর প্লাবন তাদেরকে গ্রাস করে; কারণ তারা ছিল সীমালঙ্ঘনকারী।” (সূরা আনকাবুত ২৯:১৪)
আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَفِيْ عَادٍ إِذْ أَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الرِّيْحَ الْعَقِيْمَ)
“আর আদ সম্প্রদায়, যখন আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রেরণ করেছিলাম অকল্যাণকর বাতাস।” (সূরা যারিয়াত ৫১:৪১)
আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:
১। যারা কুফরী করে তাদের জন্য ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি কোন উপকারে আসবেনা।
২। যারা আল্লাহ তা‘আলার আয়াতকে অস্বীকার করে তিনি তাদেরকে কঠোর শাস্তি প্রদান করেন।
3:12
قُلۡ لِّلَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا سَتُغۡلَبُوۡنَ وَ تُحۡشَرُوۡنَ اِلٰی جَہَنَّمَ ؕ وَ بِئۡسَ الۡمِہَادُ ﴿۱۲﴾
FATHUL MAJID
আলিফ-লাম-মীম।
FATHUL MAJID
১২-১৩ নং আয়াতের তাফসীর:
(قُلْ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا)
‘যারা কুফরী করেছে তাদেরকে বল’ আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে বলেন: হে নাবী! তুমি অবিশ্বাসীদেরকে বলে দাও যে, তারা পৃথিবীতেও পরাজিত ও পর্যুদস্ত হবে এবং মুসলিমদের অধীনস্থ থাকতে বাধ্য হবে এবং কিয়ামাতের দিনও তাদেরকে জাহান্নামের দিকে সমবেত করা হবে। আর এটা হচ্ছে জঘন্যতম স্থান। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا یُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَھُمْ لِیَصُدُّوْا عَنْ سَبِیْلِ اللہِﺚ فَسَیُنْفِقُوْنَھَا ثُمَّ تَکُوْنُ عَلَیْھِمْ حَسْرَةً ثُمَّ یُغْلَبُوْنَﹽ وَالَّذِیْنَ کَفَرُوْٓا اِلٰی جَھَنَّمَ یُحْشَرُوْنَﭳﺫ)
“আল্লাহর পথ হতে লোকেদের নিবৃত্ত করার জন্য কাফিরগণ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তারা ধন-সম্পদ ব্যয় করতে থাকবে; অতঃপর তা তাদের (আফসোসের) কারণ হবে, এর পর তারা পরাভূত হবে এবং যারা কুফরী করে তাদেরকে জাহান্নামে একত্র করা হবে।” (সূরা আনফাল ৮:৩৬)
আর তথায় তাদের জন্য থাকবে লাঞ্ছনা ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ شَرَابٌ مِّنْ حَمِيْمٍ وَّعَذَابٌ أَلِيْمٌ)
“এবং যারা কাফির তারা কুফরী করত বলে তাদের জন্য রয়েছে উত্তপ্ত পানীয় ও মর্মান্তিক শাস্তি।” (সূরা ইউনূস ১০:৪) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِاٰيٰتِنَا فَأُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ)
“আর যারা কুফরী করে ও আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তাদের জন্যই রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” (সূরা হজ্জ ২২:৫৭)
(قَدْ كَانَ لَكُمْ آيَةٌ)
‘তোমাদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে’ এখানে বদর যুদ্ধে অংশ নেয়া দু’টি দলের কথা বলা হয়েছে। একটি হল: মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবা-ই কিরামের দল। দ্বিতীয়টি হল মুশরিক কুরাইশদের দল। সাহাবাগণ সেদিন যুদ্ধ করেছিলেন আল্লাহ তা‘আলার দীন ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য। আর কাফির-মুশরিকরা যুদ্ধ করেছিল ইসলামকে চিরতরে বিদায় করে দিয়ে বাতিলকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সেদিন আল্লাহ তা‘আলা সত্য-মিথ্যার স্পষ্ট মীমাংসা করেদেন। যেন কুফর ও ঔদ্ধত্যের ওপর ঈমানের বিজয় লাভ ঘটে এবং মুসলিমরা সম্মানিত, আর কাফিররা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللّٰهُ بِبَدْرٍ وَّأَنْتُمْ أَذِلَّةٌ)
“আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছিলেন যখন তোমরা দুর্বল ছিলে।” (সূরা আলি-ইমরান ৩:১২৩)
সেদিন আল্লাহ তা‘আলা বাতিলের বিরুদ্ধে সত্যকে বিজয় দান করেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(لِّيَهْلِكَ مَنْ هَلَكَ عَنْم بَيِّنَةٍ)
“যাতে যে কেউ ধ্বংস হবে সে যেন সত্য স্পষ্ট হওয়ার পর ধ্বংস হয়।” (সূরা আনফাল ৮:৪২) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَمَآ أَنْزَلْنَا عَلٰي عَبْدِنَا يَوْمَ الْفُرْقَانِ)
“তাতে যা মীমাংসার দিন আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছিলাম।’ (সূরা আনফাল ৮:৪১)
(يَّرَوْنَهُمْ مِّثْلَيْهِمْ رَأْيَ الْعَيْنِ)
“তাদেরকে (মু’মিনদেরকে) বাহ্যিক দৃষ্টিতে দিগুণ দেখেছিল” অর্থাৎ কাফিররা মুসলিমদের বাহ্য দৃষ্টিতে তাদের দ্বিগুণ দেখেছিল। আবার বলা হয় প্রত্যেক দল অপর দলকে নিজেদের দ্বিগুণ দেখেছিল। কাফিরদের সংখ্যা এক হাজার, মুসলিমদের চোখে নিজেদের দ্বিগুণ তথা মাত্র ছয়শত দেখানো হয়েছিল। আবার মুসলিমদের সংখ্যা তিনশত কিছু বেশি হলেও কাফিরদের সংখ্যার দ্বিগুণ তথা দু’ হাজার দেখানো হয়েছিল। এর কারণ হলো মুসলিমরা সংখ্যাায় কম, তারা যদি তাদের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যা দেখে তাহলে তাদের মনোবল ভেঙ্গে যেত। আর কাফিরদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য তাদের দৃষ্টিতে তাদের দ্বিগুণ দেখানো হয়েছিল।
এ দু’ দলের মধ্যে রয়েছে বর্তমান ও ভবিষ্যতের মুসলিমদের জন্য শিক্ষা। কাফিররা সংখ্যায় যত বেশি হোক না কেন তা দেখে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই; কারণ আল্লাহ তা‘আলা যেমন বদর যুদ্ধে মুসলিমদের সংখ্যা ও অস্ত্র কম থাকা সত্ত্বেও বিজয় দান করেছেন, ঠিক তেমনি তারাও সত্য মু’মিন হয়ে জিহাদ করলে বিজয়ী লাভ করবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাফিররা দুনিয়াতে সংখ্যায় ও অস্ত্রে অধিক হলেও মুসলিমদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।
২. সঠিক ঈমান ও আমল থাকলে মু’মিনরাই বিজয় লাভ করবে।
৩. বদরের দু’ বাহিনীর যুদ্ধের মধ্যে আমাদের জন্য শিক্ষা হল- সত্যের বিজয় হবেই, মিথ্যা পরাজিত হবেই, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
(قُلْ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا)
‘যারা কুফরী করেছে তাদেরকে বল’ আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে বলেন: হে নাবী! তুমি অবিশ্বাসীদেরকে বলে দাও যে, তারা পৃথিবীতেও পরাজিত ও পর্যুদস্ত হবে এবং মুসলিমদের অধীনস্থ থাকতে বাধ্য হবে এবং কিয়ামাতের দিনও তাদেরকে জাহান্নামের দিকে সমবেত করা হবে। আর এটা হচ্ছে জঘন্যতম স্থান। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا یُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَھُمْ لِیَصُدُّوْا عَنْ سَبِیْلِ اللہِﺚ فَسَیُنْفِقُوْنَھَا ثُمَّ تَکُوْنُ عَلَیْھِمْ حَسْرَةً ثُمَّ یُغْلَبُوْنَﹽ وَالَّذِیْنَ کَفَرُوْٓا اِلٰی جَھَنَّمَ یُحْشَرُوْنَﭳﺫ)
“আল্লাহর পথ হতে লোকেদের নিবৃত্ত করার জন্য কাফিরগণ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তারা ধন-সম্পদ ব্যয় করতে থাকবে; অতঃপর তা তাদের (আফসোসের) কারণ হবে, এর পর তারা পরাভূত হবে এবং যারা কুফরী করে তাদেরকে জাহান্নামে একত্র করা হবে।” (সূরা আনফাল ৮:৩৬)
আর তথায় তাদের জন্য থাকবে লাঞ্ছনা ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ شَرَابٌ مِّنْ حَمِيْمٍ وَّعَذَابٌ أَلِيْمٌ)
“এবং যারা কাফির তারা কুফরী করত বলে তাদের জন্য রয়েছে উত্তপ্ত পানীয় ও মর্মান্তিক শাস্তি।” (সূরা ইউনূস ১০:৪) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِاٰيٰتِنَا فَأُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ)
“আর যারা কুফরী করে ও আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তাদের জন্যই রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” (সূরা হজ্জ ২২:৫৭)
(قَدْ كَانَ لَكُمْ آيَةٌ)
‘তোমাদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে’ এখানে বদর যুদ্ধে অংশ নেয়া দু’টি দলের কথা বলা হয়েছে। একটি হল: মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবা-ই কিরামের দল। দ্বিতীয়টি হল মুশরিক কুরাইশদের দল। সাহাবাগণ সেদিন যুদ্ধ করেছিলেন আল্লাহ তা‘আলার দীন ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য। আর কাফির-মুশরিকরা যুদ্ধ করেছিল ইসলামকে চিরতরে বিদায় করে দিয়ে বাতিলকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সেদিন আল্লাহ তা‘আলা সত্য-মিথ্যার স্পষ্ট মীমাংসা করেদেন। যেন কুফর ও ঔদ্ধত্যের ওপর ঈমানের বিজয় লাভ ঘটে এবং মুসলিমরা সম্মানিত, আর কাফিররা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللّٰهُ بِبَدْرٍ وَّأَنْتُمْ أَذِلَّةٌ)
“আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছিলেন যখন তোমরা দুর্বল ছিলে।” (সূরা আলি-ইমরান ৩:১২৩)
সেদিন আল্লাহ তা‘আলা বাতিলের বিরুদ্ধে সত্যকে বিজয় দান করেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(لِّيَهْلِكَ مَنْ هَلَكَ عَنْم بَيِّنَةٍ)
“যাতে যে কেউ ধ্বংস হবে সে যেন সত্য স্পষ্ট হওয়ার পর ধ্বংস হয়।” (সূরা আনফাল ৮:৪২) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَمَآ أَنْزَلْنَا عَلٰي عَبْدِنَا يَوْمَ الْفُرْقَانِ)
“তাতে যা মীমাংসার দিন আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছিলাম।’ (সূরা আনফাল ৮:৪১)
(يَّرَوْنَهُمْ مِّثْلَيْهِمْ رَأْيَ الْعَيْنِ)
“তাদেরকে (মু’মিনদেরকে) বাহ্যিক দৃষ্টিতে দিগুণ দেখেছিল” অর্থাৎ কাফিররা মুসলিমদের বাহ্য দৃষ্টিতে তাদের দ্বিগুণ দেখেছিল। আবার বলা হয় প্রত্যেক দল অপর দলকে নিজেদের দ্বিগুণ দেখেছিল। কাফিরদের সংখ্যা এক হাজার, মুসলিমদের চোখে নিজেদের দ্বিগুণ তথা মাত্র ছয়শত দেখানো হয়েছিল। আবার মুসলিমদের সংখ্যা তিনশত কিছু বেশি হলেও কাফিরদের সংখ্যার দ্বিগুণ তথা দু’ হাজার দেখানো হয়েছিল। এর কারণ হলো মুসলিমরা সংখ্যাায় কম, তারা যদি তাদের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যা দেখে তাহলে তাদের মনোবল ভেঙ্গে যেত। আর কাফিরদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য তাদের দৃষ্টিতে তাদের দ্বিগুণ দেখানো হয়েছিল।
এ দু’ দলের মধ্যে রয়েছে বর্তমান ও ভবিষ্যতের মুসলিমদের জন্য শিক্ষা। কাফিররা সংখ্যায় যত বেশি হোক না কেন তা দেখে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই; কারণ আল্লাহ তা‘আলা যেমন বদর যুদ্ধে মুসলিমদের সংখ্যা ও অস্ত্র কম থাকা সত্ত্বেও বিজয় দান করেছেন, ঠিক তেমনি তারাও সত্য মু’মিন হয়ে জিহাদ করলে বিজয়ী লাভ করবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাফিররা দুনিয়াতে সংখ্যায় ও অস্ত্রে অধিক হলেও মুসলিমদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।
২. সঠিক ঈমান ও আমল থাকলে মু’মিনরাই বিজয় লাভ করবে।
৩. বদরের দু’ বাহিনীর যুদ্ধের মধ্যে আমাদের জন্য শিক্ষা হল- সত্যের বিজয় হবেই, মিথ্যা পরাজিত হবেই, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
3:13
قَدۡ کَانَ لَکُمۡ اٰیَۃٌ فِیۡ فِئَتَیۡنِ الۡتَقَتَا ؕ فِئَۃٌ تُقَاتِلُ فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ وَ اُخۡرٰی کَافِرَۃٌ یَّرَوۡنَہُمۡ مِّثۡلَیۡہِمۡ رَاۡیَ الۡعَیۡنِ ؕ وَ اللّٰہُ یُؤَیِّدُ بِنَصۡرِہٖ مَنۡ یَّشَآءُ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَعِبۡرَۃً لِّاُولِی الۡاَبۡصَارِ ﴿۱۳﴾
FATHUL MAJID
আলিফ-লাম-মীম।
FATHUL MAJID
১২-১৩ নং আয়াতের তাফসীর:
(قُلْ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا)
‘যারা কুফরী করেছে তাদেরকে বল’ আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে বলেন: হে নাবী! তুমি অবিশ্বাসীদেরকে বলে দাও যে, তারা পৃথিবীতেও পরাজিত ও পর্যুদস্ত হবে এবং মুসলিমদের অধীনস্থ থাকতে বাধ্য হবে এবং কিয়ামাতের দিনও তাদেরকে জাহান্নামের দিকে সমবেত করা হবে। আর এটা হচ্ছে জঘন্যতম স্থান। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا یُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَھُمْ لِیَصُدُّوْا عَنْ سَبِیْلِ اللہِﺚ فَسَیُنْفِقُوْنَھَا ثُمَّ تَکُوْنُ عَلَیْھِمْ حَسْرَةً ثُمَّ یُغْلَبُوْنَﹽ وَالَّذِیْنَ کَفَرُوْٓا اِلٰی جَھَنَّمَ یُحْشَرُوْنَﭳﺫ)
“আল্লাহর পথ হতে লোকেদের নিবৃত্ত করার জন্য কাফিরগণ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তারা ধন-সম্পদ ব্যয় করতে থাকবে; অতঃপর তা তাদের (আফসোসের) কারণ হবে, এর পর তারা পরাভূত হবে এবং যারা কুফরী করে তাদেরকে জাহান্নামে একত্র করা হবে।” (সূরা আনফাল ৮:৩৬)
আর তথায় তাদের জন্য থাকবে লাঞ্ছনা ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ شَرَابٌ مِّنْ حَمِيْمٍ وَّعَذَابٌ أَلِيْمٌ)
“এবং যারা কাফির তারা কুফরী করত বলে তাদের জন্য রয়েছে উত্তপ্ত পানীয় ও মর্মান্তিক শাস্তি।” (সূরা ইউনূস ১০:৪) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:(وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِاٰيٰتِنَا فَأُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ)
“আর যারা কুফরী করে ও আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তাদের জন্যই রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” (সূরা হজ্জ ২২:৫৭)
(قَدْ كَانَ لَكُمْ آيَةٌ)
‘তোমাদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে’ এখানে বদর যুদ্ধে অংশ নেয়া দু’টি দলের কথা বলা হয়েছে। একটি হল: মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবা-ই কিরামের দল। দ্বিতীয়টি হল মুশরিক কুরাইশদের দল। সাহাবাগণ সেদিন যুদ্ধ করেছিলেন আল্লাহ তা‘আলার দীন ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য। আর কাফির-মুশরিকরা যুদ্ধ করেছিল ইসলামকে চিরতরে বিদায় করে দিয়ে বাতিলকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সেদিন আল্লাহ তা‘আলা সত্য-মিথ্যার স্পষ্ট মীমাংসা করেদেন। যেন কুফর ও ঔদ্ধত্যের ওপর ঈমানের বিজয় লাভ ঘটে এবং মুসলিমরা সম্মানিত, আর কাফিররা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللّٰهُ بِبَدْرٍ وَّأَنْتُمْ أَذِلَّةٌ)
“আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছিলেন যখন তোমরা দুর্বল ছিলে।” (সূরা আলি-ইমরান ৩:১২৩)
সেদিন আল্লাহ তা‘আলা বাতিলের বিরুদ্ধে সত্যকে বিজয় দান করেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(لِّيَهْلِكَ مَنْ هَلَكَ عَنْم بَيِّنَةٍ)
“যাতে যে কেউ ধ্বংস হবে সে যেন সত্য স্পষ্ট হওয়ার পর ধ্বংস হয়।” (সূরা আনফাল ৮:৪২) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَمَآ أَنْزَلْنَا عَلٰي عَبْدِنَا يَوْمَ الْفُرْقَانِ)
“তাতে যা মীমাংসার দিন আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছিলাম।’ (সূরা আনফাল ৮:৪১)
(يَّرَوْنَهُمْ مِّثْلَيْهِمْ رَأْيَ الْعَيْنِ)
“তাদেরকে (মু’মিনদেরকে) বাহ্যিক দৃষ্টিতে দিগুণ দেখেছিল” অর্থাৎ কাফিররা মুসলিমদের বাহ্য দৃষ্টিতে তাদের দ্বিগুণ দেখেছিল। আবার বলা হয় প্রত্যেক দল অপর দলকে নিজেদের দ্বিগুণ দেখেছিল। কাফিরদের সংখ্যা এক হাজার, মুসলিমদের চোখে নিজেদের দ্বিগুণ তথা মাত্র ছয়শত দেখানো হয়েছিল। আবার মুসলিমদের সংখ্যা তিনশত কিছু বেশি হলেও কাফিরদের সংখ্যার দ্বিগুণ তথা দু’ হাজার দেখানো হয়েছিল। এর কারণ হলো মুসলিমরা সংখ্যাায় কম, তারা যদি তাদের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যা দেখে তাহলে তাদের মনোবল ভেঙ্গে যেত। আর কাফিরদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য তাদের দৃষ্টিতে তাদের দ্বিগুণ দেখানো হয়েছিল।
এ দু’ দলের মধ্যে রয়েছে বর্তমান ও ভবিষ্যতের মুসলিমদের জন্য শিক্ষা। কাফিররা সংখ্যায় যত বেশি হোক না কেন তা দেখে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই; কারণ আল্লাহ তা‘আলা যেমন বদর যুদ্ধে মুসলিমদের সংখ্যা ও অস্ত্র কম থাকা সত্ত্বেও বিজয় দান করেছেন, ঠিক তেমনি তারাও সত্য মু’মিন হয়ে জিহাদ করলে বিজয়ী লাভ করবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাফিররা দুনিয়াতে সংখ্যায় ও অস্ত্রে অধিক হলেও মুসলিমদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।
২. সঠিক ঈমান ও আমল থাকলে মু’মিনরাই বিজয় লাভ করবে।
৩. বদরের দু’ বাহিনীর যুদ্ধের মধ্যে আমাদের জন্য শিক্ষা হল- সত্যের বিজয় হবেই, মিথ্যা পরাজিত হবেই, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
(قُلْ لِّلَّذِيْنَ كَفَرُوْا)
‘যারা কুফরী করেছে তাদেরকে বল’ আল্লাহ তা‘আলা মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-কে সম্বোধন করে বলেন: হে নাবী! তুমি অবিশ্বাসীদেরকে বলে দাও যে, তারা পৃথিবীতেও পরাজিত ও পর্যুদস্ত হবে এবং মুসলিমদের অধীনস্থ থাকতে বাধ্য হবে এবং কিয়ামাতের দিনও তাদেরকে জাহান্নামের দিকে সমবেত করা হবে। আর এটা হচ্ছে জঘন্যতম স্থান। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(اِنَّ الَّذِیْنَ کَفَرُوْا یُنْفِقُوْنَ اَمْوَالَھُمْ لِیَصُدُّوْا عَنْ سَبِیْلِ اللہِﺚ فَسَیُنْفِقُوْنَھَا ثُمَّ تَکُوْنُ عَلَیْھِمْ حَسْرَةً ثُمَّ یُغْلَبُوْنَﹽ وَالَّذِیْنَ کَفَرُوْٓا اِلٰی جَھَنَّمَ یُحْشَرُوْنَﭳﺫ)
“আল্লাহর পথ হতে লোকেদের নিবৃত্ত করার জন্য কাফিরগণ তাদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তারা ধন-সম্পদ ব্যয় করতে থাকবে; অতঃপর তা তাদের (আফসোসের) কারণ হবে, এর পর তারা পরাভূত হবে এবং যারা কুফরী করে তাদেরকে জাহান্নামে একত্র করা হবে।” (সূরা আনফাল ৮:৩৬)
আর তথায় তাদের জন্য থাকবে লাঞ্ছনা ও যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا لَهُمْ شَرَابٌ مِّنْ حَمِيْمٍ وَّعَذَابٌ أَلِيْمٌ)
“এবং যারা কাফির তারা কুফরী করত বলে তাদের জন্য রয়েছে উত্তপ্ত পানীয় ও মর্মান্তিক শাস্তি।” (সূরা ইউনূস ১০:৪) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:(وَالَّذِيْنَ كَفَرُوْا وَكَذَّبُوْا بِاٰيٰتِنَا فَأُولٰٓئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُّهِيْنٌ)
“আর যারা কুফরী করে ও আমার আয়াতসমূহকে অস্বীকার করে তাদের জন্যই রয়েছে লাঞ্ছনাদায়ক শাস্তি।” (সূরা হজ্জ ২২:৫৭)
(قَدْ كَانَ لَكُمْ آيَةٌ)
‘তোমাদের জন্য অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে’ এখানে বদর যুদ্ধে অংশ নেয়া দু’টি দলের কথা বলা হয়েছে। একটি হল: মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ও সাহাবা-ই কিরামের দল। দ্বিতীয়টি হল মুশরিক কুরাইশদের দল। সাহাবাগণ সেদিন যুদ্ধ করেছিলেন আল্লাহ তা‘আলার দীন ইসলামকে বিজয়ী করার জন্য। আর কাফির-মুশরিকরা যুদ্ধ করেছিল ইসলামকে চিরতরে বিদায় করে দিয়ে বাতিলকে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য। সেদিন আল্লাহ তা‘আলা সত্য-মিথ্যার স্পষ্ট মীমাংসা করেদেন। যেন কুফর ও ঔদ্ধত্যের ওপর ঈমানের বিজয় লাভ ঘটে এবং মুসলিমরা সম্মানিত, আর কাফিররা লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়।
যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَلَقَدْ نَصَرَكُمُ اللّٰهُ بِبَدْرٍ وَّأَنْتُمْ أَذِلَّةٌ)
“আর নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদেরকে বদরে সাহায্য করেছিলেন যখন তোমরা দুর্বল ছিলে।” (সূরা আলি-ইমরান ৩:১২৩)
সেদিন আল্লাহ তা‘আলা বাতিলের বিরুদ্ধে সত্যকে বিজয় দান করেন। আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(لِّيَهْلِكَ مَنْ هَلَكَ عَنْم بَيِّنَةٍ)
“যাতে যে কেউ ধ্বংস হবে সে যেন সত্য স্পষ্ট হওয়ার পর ধ্বংস হয়।” (সূরা আনফাল ৮:৪২) আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
(وَمَآ أَنْزَلْنَا عَلٰي عَبْدِنَا يَوْمَ الْفُرْقَانِ)
“তাতে যা মীমাংসার দিন আমি আমার বান্দার প্রতি অবতীর্ণ করেছিলাম।’ (সূরা আনফাল ৮:৪১)
(يَّرَوْنَهُمْ مِّثْلَيْهِمْ رَأْيَ الْعَيْنِ)
“তাদেরকে (মু’মিনদেরকে) বাহ্যিক দৃষ্টিতে দিগুণ দেখেছিল” অর্থাৎ কাফিররা মুসলিমদের বাহ্য দৃষ্টিতে তাদের দ্বিগুণ দেখেছিল। আবার বলা হয় প্রত্যেক দল অপর দলকে নিজেদের দ্বিগুণ দেখেছিল। কাফিরদের সংখ্যা এক হাজার, মুসলিমদের চোখে নিজেদের দ্বিগুণ তথা মাত্র ছয়শত দেখানো হয়েছিল। আবার মুসলিমদের সংখ্যা তিনশত কিছু বেশি হলেও কাফিরদের সংখ্যার দ্বিগুণ তথা দু’ হাজার দেখানো হয়েছিল। এর কারণ হলো মুসলিমরা সংখ্যাায় কম, তারা যদি তাদের তুলনায় অনেক বেশি সংখ্যা দেখে তাহলে তাদের মনোবল ভেঙ্গে যেত। আর কাফিরদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়ার জন্য তাদের দৃষ্টিতে তাদের দ্বিগুণ দেখানো হয়েছিল।
এ দু’ দলের মধ্যে রয়েছে বর্তমান ও ভবিষ্যতের মুসলিমদের জন্য শিক্ষা। কাফিররা সংখ্যায় যত বেশি হোক না কেন তা দেখে ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই; কারণ আল্লাহ তা‘আলা যেমন বদর যুদ্ধে মুসলিমদের সংখ্যা ও অস্ত্র কম থাকা সত্ত্বেও বিজয় দান করেছেন, ঠিক তেমনি তারাও সত্য মু’মিন হয়ে জিহাদ করলে বিজয়ী লাভ করবে।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. কাফিররা দুনিয়াতে সংখ্যায় ও অস্ত্রে অধিক হলেও মুসলিমদের ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই।
২. সঠিক ঈমান ও আমল থাকলে মু’মিনরাই বিজয় লাভ করবে।
৩. বদরের দু’ বাহিনীর যুদ্ধের মধ্যে আমাদের জন্য শিক্ষা হল- সত্যের বিজয় হবেই, মিথ্যা পরাজিত হবেই, তাতে কোন সন্দেহ নেই।
3:14
زُیِّنَ لِلنَّاسِ حُبُّ الشَّہَوٰتِ مِنَ النِّسَآءِ وَ الۡبَنِیۡنَ وَ الۡقَنَاطِیۡرِ الۡمُقَنۡطَرَۃِ مِنَ الذَّہَبِ وَ الۡفِضَّۃِ وَ الۡخَیۡلِ الۡمُسَوَّمَۃِ وَ الۡاَنۡعَامِ وَ الۡحَرۡثِ ؕ ذٰلِکَ مَتَاعُ الۡحَیٰوۃِ الدُّنۡیَا ۚ وَ اللّٰہُ عِنۡدَہٗ حُسۡنُ الۡمَاٰبِ ﴿۱۴﴾
FATHUL MAJID
আলিফ-লাম-মীম।
FATHUL MAJID
১৪ ও ১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, তিনি পার্থিব জীবনকে বিভিন্ন প্রকারের উপভোগ্য বস্তু দ্বারা সুশোভিত করে দিয়েছেন।حُبُّ الشَّهَوٰتِ
বা প্রবৃত্তির ভালবাসা, প্রবৃত্তির আনুগত্য করা। জান্নাত প্রবৃত্তির অনুসরণকে বর্জন ছাড়া লাভ করা সম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: জান্নাত কষ্টদায়ক বস্তু দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়েছে, আর জাহান্নাম চাকচিক্যময় বস্তু ও প্রবৃত্তির অনুসরণ দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৮২৩)
সুতরাং জান্নাত পেতে হলে কষ্ট ও কাঠিন্যতা অতিক্রম করতে হবে। আর জাহান্নামে যেতে হলে প্রবৃত্তির অনুসরণে কোন বাধা নেই যেমন খুশি তেমন চলতেও কোন বাধা নেই।
‘কাম্য জিনিস’ বলতে এমন সব জিনিসকে বুঝানো হয়েছে যা স্বভাবত মানুষ পছন্দ করে ও ভালবাসে। এ সব জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া বা তা ভালবাসা অপছন্দনীয় নয়; তবে তা হতে হবে শরীয়তের গণ্ডির ভেতরে; কারণ দুনিয়ার সাজ-সজ্জা ও চাকচিক্য আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে পরীক্ষা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَي الْأَرْضِ زِيْنَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا)
“পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার শোভা-সৌন্দর্য করেছি, মানুষের মধ্যে কর্মের দিক থেকে কে সর্বোত্তম তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য।” (সূরা কাহ্ফ ১৮:৭)
কাম্য জিনিসের মধ্যে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে নারী; কারণ মানুষ স্বভাবগতভাবে যেসব জিনিসের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় তার প্রধান হল নারী। একজন পুরুষ সাবালক হবার পর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বোধ করে একজন সঙ্গিণীর। তাছাড়া পুরুষের কাছে নারী সর্বাধিক প্রিয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মহিলা ও সুগন্ধি আমার কাছে অতি প্রিয় জিনিস। (নাসায়ী হা: ৩৯৪৯, আহমাদ হা: ৩৪৮২, হাসান) অন্যত্র তিনি বলেন: গোটা দুনিয়া হলো সম্পদ, আর তন্মধ্যে সর্বোত্তম সম্পদ হল সতী-সাধ্বী নারী। (সহীহ মুসলিম হা: ৩৭১৬, নাসায়ী হা: ৩২৩২)
সুতরাং যদি নারীর প্রতি ভালবাসা শরীয়তের সীমালঙ্ঘন না করে তা হলে তা উত্তম। পক্ষান্তরে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ফেতনার কারণ। তাই তাদের থেকে সাবধান হতে হবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:ما تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَي الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ
আমি পুরুষদের জন্য নারীর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর ও ফেতনার কারণ আর কিছু ছেড়ে যাইনি। (সহীহ বুখরী হা: ৫০৯৬, সহীহ মুসলিম হা: ২০৯৭-৯৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন:أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ
বানী ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম ফেতনা সৃষ্টি হয়েছিল মহিলাদের ব্যাপারে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৭৪২)
অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ তা‘আলা সন্তান, ধন-সম্পদ, চতুস্পদ জন্তু ইত্যাদির কথাও উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি এ সব সম্পদ দ্বারা দুনিয়াকে সুশোভিত করে দিয়েছেন।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ সবকিছু পরীক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاعْلَمُوْٓا اَنَّمَآ اَمْوَالُکُمْ وَاَوْلَادُکُمْ فِتْنَةٌﺫ وَّاَنَّ اللہَ عِنْدَھ۫ٓ اَجْرٌ عَظِیْمٌ)
“আর জেনে রাখ যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষাস্বরূপ এবং আল্লাহরই নিকট মহাপুরস্কার রয়েছে।” (সূরা আনফাল ৮:২৮)
সুতরাং দুনিয়ার এসব সম্পদের মোহে আকৃষ্ট হয়ে পরকালকে ভুলে গেলে চলবে না, বরং দুনিয়ার সম্পদকে পরকালের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মানুষের সন্তান ও সম্পদ উভয় জগতে তার কাজে আসবে যদি তা দীনের আলোকে গড়ে তুলা যায় । যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
إذا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةِ أَشْيَاءَ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهُ
যখন মানুষ মৃত্যু বরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমল ব্যতীতঃ সদাকায়ে জারিয়া অথবা এমন জ্ঞান যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় অথবা সৎ সন্তান, যে তার জন্য দু‘আ করবে। (সহীহ মুসলিম হা: ১৬৩১)
তেমনিভাবে মানুষ যখন তার সম্পদের হক আদায় করবে তখন তার সম্পদ তার উপকারে আসবে। আর যদি হক আদায় না করে তবে সম্পদ তার জন্য পরকালে ক্ষতির কারণ হবে।
(وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ)
“অঢেল ধন-সম্পদ” অঢেল সম্পদের পরিমাণ নিয়ে মতভেদ পাওয়া যায়। কেউ বলেন, এর পরিমাণ হচ্ছে বড় পাহাড়ের সমান।
অন্য একদল বলেন: দু’হাজার উকিয়া। হাসান বসরী (রহঃ) বলেন: বার শত স্বর্ণমুদ্রা। কারো মতে, এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা।
‘চিহ্নিত ঘোড়া’ এমন ঘোড়া যাকে চারণভূমিতে চরে খাওয়ার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে অথবা এমন ঘোড়া যাকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে কিংবা এমন ঘোড়া যাকে অন্য থেকে পার্থক্য করার জন্য কোন কিছু দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ঘোড়া তিন প্রকার:
১. যে ব্যক্তি ঘোড়া প্রতিপালন করবে মানুষকে দেখানোর জন্য, গর্ব করার জন্য ও ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য, এমন ঘোড়া তার জন্য পাপের কারণ হবে।
২. যে ব্যক্তি ঘোড়া প্রতিপালন করবে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যবহারের জন্য, কিন্তু তার দ্বারা নিজে উপকৃত হলেও আল্লাহ তা‘আলার হক ভুলে যায় না। এমন উদ্দেশ্যে ঘোড়া প্রতিপালনের কারণে সে ব্যক্তির জন্য তা জাহান্নামের অন্তরায় হবে।
৩. এমন ঘোড়া যা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করার জন্য প্রতিপালন করা হয় সে ঘোড়া প্রতিপালকের জন্য নেকীর কারণ হবে। (সহীহ মুসলিম হা: ৯৮৭)
এগুলো হল দুনিয়ার ভোগের সামগ্রী অথচ আল্লাহ তা‘আলার নিকট যে সমস্ত জিনিস রয়েছে তা এ সমস্ত বস্তু অপেক্ষা উত্তম। সেগুলো হল চিরস্থায়ী জান্নাত, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। আর এগুলো হল তাদের জন্য যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করবে, তাঁর প্রতি ঈমান আনবে, তাঁর আদেশ নিষেধ মানবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ أُولٰ۬ئِكَ أَصْحٰبُ الْجَنَّةِ)
“এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে তারাই জান্নাতবাসী।” (সূরা বাকারাহ ২:৮২)
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَبَشِّرِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ)
“আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তাদের জন্য এমন জান্নাত রয়েছে যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়।” (সূরা বাকারাহ ২:২৫)
তাদের জন্য তথায় আরো থাকবে পূত-পবিত্র নারীগণ। যারা দুনিয়াবী সমস্ত অপবিত্রতা থেকে পবিত্র। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(حُوْرٌ مَّقْصُوْرٰتٌ فِی الْخِیَامِﮗﺆ فَبِاَیِّ اٰلَا۬ئِ رَبِّکُمَا تُکَذِّبٰنِﮘﺆ لَمْ یَطْمِثْھُنَّ اِنْسٌ قَبْلَھُمْ وَلَا جَا۬نٌّ)
“তাঁবুতে থাকবে সুরক্ষিত হূর; সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নেয়ামত অস্বীকার করবে? পূর্বে কোন মানুষ অথবা জিন তাদের স্পর্শ করেনি।” (সূরা আর-রহমান ৫৫:৭২-৭৪)
তাদের প্রতি থাকবে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি; কেননা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির চেয়ে বড় নি‘য়ামত আর কিছুই হতে পারে না। সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবে তাদের জন্যই রয়েছে এসমস্ত প্রতিদান।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দুনিয়াকে বিভিন্ন জিনিস দ্বারা সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে।
২. দুনিয়ার মোহে পড়ে পরকালকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়।
৩. সন্তান ও সম্পদ সঠিক পন্থায় ব্যবহার করলে উপকারে আসবে অন্যথায় তা ক্ষতির কারণ হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, তিনি পার্থিব জীবনকে বিভিন্ন প্রকারের উপভোগ্য বস্তু দ্বারা সুশোভিত করে দিয়েছেন।حُبُّ الشَّهَوٰتِ
বা প্রবৃত্তির ভালবাসা, প্রবৃত্তির আনুগত্য করা। জান্নাত প্রবৃত্তির অনুসরণকে বর্জন ছাড়া লাভ করা সম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: জান্নাত কষ্টদায়ক বস্তু দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়েছে, আর জাহান্নাম চাকচিক্যময় বস্তু ও প্রবৃত্তির অনুসরণ দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৮২৩)
সুতরাং জান্নাত পেতে হলে কষ্ট ও কাঠিন্যতা অতিক্রম করতে হবে। আর জাহান্নামে যেতে হলে প্রবৃত্তির অনুসরণে কোন বাধা নেই যেমন খুশি তেমন চলতেও কোন বাধা নেই।
‘কাম্য জিনিস’ বলতে এমন সব জিনিসকে বুঝানো হয়েছে যা স্বভাবত মানুষ পছন্দ করে ও ভালবাসে। এ সব জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া বা তা ভালবাসা অপছন্দনীয় নয়; তবে তা হতে হবে শরীয়তের গণ্ডির ভেতরে; কারণ দুনিয়ার সাজ-সজ্জা ও চাকচিক্য আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে পরীক্ষা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَي الْأَرْضِ زِيْنَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا)
“পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার শোভা-সৌন্দর্য করেছি, মানুষের মধ্যে কর্মের দিক থেকে কে সর্বোত্তম তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য।” (সূরা কাহ্ফ ১৮:৭)
কাম্য জিনিসের মধ্যে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে নারী; কারণ মানুষ স্বভাবগতভাবে যেসব জিনিসের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় তার প্রধান হল নারী। একজন পুরুষ সাবালক হবার পর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বোধ করে একজন সঙ্গিণীর। তাছাড়া পুরুষের কাছে নারী সর্বাধিক প্রিয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মহিলা ও সুগন্ধি আমার কাছে অতি প্রিয় জিনিস। (নাসায়ী হা: ৩৯৪৯, আহমাদ হা: ৩৪৮২, হাসান) অন্যত্র তিনি বলেন: গোটা দুনিয়া হলো সম্পদ, আর তন্মধ্যে সর্বোত্তম সম্পদ হল সতী-সাধ্বী নারী। (সহীহ মুসলিম হা: ৩৭১৬, নাসায়ী হা: ৩২৩২)
সুতরাং যদি নারীর প্রতি ভালবাসা শরীয়তের সীমালঙ্ঘন না করে তা হলে তা উত্তম। পক্ষান্তরে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ফেতনার কারণ। তাই তাদের থেকে সাবধান হতে হবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:ما تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَي الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ
আমি পুরুষদের জন্য নারীর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর ও ফেতনার কারণ আর কিছু ছেড়ে যাইনি। (সহীহ বুখরী হা: ৫০৯৬, সহীহ মুসলিম হা: ২০৯৭-৯৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন:أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ
বানী ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম ফেতনা সৃষ্টি হয়েছিল মহিলাদের ব্যাপারে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৭৪২)
অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ তা‘আলা সন্তান, ধন-সম্পদ, চতুস্পদ জন্তু ইত্যাদির কথাও উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি এ সব সম্পদ দ্বারা দুনিয়াকে সুশোভিত করে দিয়েছেন।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ সবকিছু পরীক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَاعْلَمُوْٓا اَنَّمَآ اَمْوَالُکُمْ وَاَوْلَادُکُمْ فِتْنَةٌﺫ وَّاَنَّ اللہَ عِنْدَھ۫ٓ اَجْرٌ عَظِیْمٌ)
“আর জেনে রাখ যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষাস্বরূপ এবং আল্লাহরই নিকট মহাপুরস্কার রয়েছে।” (সূরা আনফাল ৮:২৮)
সুতরাং দুনিয়ার এসব সম্পদের মোহে আকৃষ্ট হয়ে পরকালকে ভুলে গেলে চলবে না, বরং দুনিয়ার সম্পদকে পরকালের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মানুষের সন্তান ও সম্পদ উভয় জগতে তার কাজে আসবে যদি তা দীনের আলোকে গড়ে তুলা যায় । যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
إذا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةِ أَشْيَاءَ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهُ
যখন মানুষ মৃত্যু বরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমল ব্যতীতঃ সদাকায়ে জারিয়া অথবা এমন জ্ঞান যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় অথবা সৎ সন্তান, যে তার জন্য দু‘আ করবে। (সহীহ মুসলিম হা: ১৬৩১)
তেমনিভাবে মানুষ যখন তার সম্পদের হক আদায় করবে তখন তার সম্পদ তার উপকারে আসবে। আর যদি হক আদায় না করে তবে সম্পদ তার জন্য পরকালে ক্ষতির কারণ হবে।
(وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ)
“অঢেল ধন-সম্পদ” অঢেল সম্পদের পরিমাণ নিয়ে মতভেদ পাওয়া যায়। কেউ বলেন, এর পরিমাণ হচ্ছে বড় পাহাড়ের সমান।
অন্য একদল বলেন: দু’হাজার উকিয়া। হাসান বসরী (রহঃ) বলেন: বার শত স্বর্ণমুদ্রা। কারো মতে, এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা।
‘চিহ্নিত ঘোড়া’ এমন ঘোড়া যাকে চারণভূমিতে চরে খাওয়ার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে অথবা এমন ঘোড়া যাকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে কিংবা এমন ঘোড়া যাকে অন্য থেকে পার্থক্য করার জন্য কোন কিছু দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ঘোড়া তিন প্রকার:
১. যে ব্যক্তি ঘোড়া প্রতিপালন করবে মানুষকে দেখানোর জন্য, গর্ব করার জন্য ও ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য, এমন ঘোড়া তার জন্য পাপের কারণ হবে।
২. যে ব্যক্তি ঘোড়া প্রতিপালন করবে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যবহারের জন্য, কিন্তু তার দ্বারা নিজে উপকৃত হলেও আল্লাহ তা‘আলার হক ভুলে যায় না। এমন উদ্দেশ্যে ঘোড়া প্রতিপালনের কারণে সে ব্যক্তির জন্য তা জাহান্নামের অন্তরায় হবে।
৩. এমন ঘোড়া যা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করার জন্য প্রতিপালন করা হয় সে ঘোড়া প্রতিপালকের জন্য নেকীর কারণ হবে। (সহীহ মুসলিম হা: ৯৮৭)
এগুলো হল দুনিয়ার ভোগের সামগ্রী অথচ আল্লাহ তা‘আলার নিকট যে সমস্ত জিনিস রয়েছে তা এ সমস্ত বস্তু অপেক্ষা উত্তম। সেগুলো হল চিরস্থায়ী জান্নাত, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। আর এগুলো হল তাদের জন্য যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করবে, তাঁর প্রতি ঈমান আনবে, তাঁর আদেশ নিষেধ মানবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ أُولٰ۬ئِكَ أَصْحٰبُ الْجَنَّةِ)
“এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে তারাই জান্নাতবাসী।” (সূরা বাকারাহ ২:৮২)
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَبَشِّرِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ)
“আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তাদের জন্য এমন জান্নাত রয়েছে যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়।” (সূরা বাকারাহ ২:২৫)
তাদের জন্য তথায় আরো থাকবে পূত-পবিত্র নারীগণ। যারা দুনিয়াবী সমস্ত অপবিত্রতা থেকে পবিত্র। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(حُوْرٌ مَّقْصُوْرٰتٌ فِی الْخِیَامِﮗﺆ فَبِاَیِّ اٰلَا۬ئِ رَبِّکُمَا تُکَذِّبٰنِﮘﺆ لَمْ یَطْمِثْھُنَّ اِنْسٌ قَبْلَھُمْ وَلَا جَا۬نٌّ)
“তাঁবুতে থাকবে সুরক্ষিত হূর; সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নেয়ামত অস্বীকার করবে? পূর্বে কোন মানুষ অথবা জিন তাদের স্পর্শ করেনি।” (সূরা আর-রহমান ৫৫:৭২-৭৪)
তাদের প্রতি থাকবে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি; কেননা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির চেয়ে বড় নি‘য়ামত আর কিছুই হতে পারে না। সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবে তাদের জন্যই রয়েছে এসমস্ত প্রতিদান।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দুনিয়াকে বিভিন্ন জিনিস দ্বারা সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে।
২. দুনিয়ার মোহে পড়ে পরকালকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়।
৩. সন্তান ও সম্পদ সঠিক পন্থায় ব্যবহার করলে উপকারে আসবে অন্যথায় তা ক্ষতির কারণ হবে।
3:15
قُلۡ اَؤُنَبِّئُکُمۡ بِخَیۡرٍ مِّنۡ ذٰلِکُمۡ ؕ لِلَّذِیۡنَ اتَّقَوۡا عِنۡدَ رَبِّہِمۡ جَنّٰتٌ تَجۡرِیۡ مِنۡ تَحۡتِہَا الۡاَنۡہٰرُ خٰلِدِیۡنَ فِیۡہَا وَ اَزۡوَاجٌ مُّطَہَّرَۃٌ وَّ رِضۡوَانٌ مِّنَ اللّٰہِ ؕ وَ اللّٰہُ بَصِیۡرٌۢ بِالۡعِبَادِ ﴿ۚ۱۵﴾
FATHUL MAJID
আলিফ-লাম-মীম।
FATHUL MAJID
১৪ ও ১৫ নং আয়াতের তাফসীর:
আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, তিনি পার্থিব জীবনকে বিভিন্ন প্রকারের উপভোগ্য বস্তু দ্বারা সুশোভিত করে দিয়েছেন।حُبُّ الشَّهَوٰتِ
বা প্রবৃত্তির ভালবাসা, প্রবৃত্তির আনুগত্য করা। জান্নাত প্রবৃত্তির অনুসরণকে বর্জন ছাড়া লাভ করা সম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: জান্নাত কষ্টদায়ক বস্তু দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়েছে, আর জাহান্নাম চাকচিক্যময় বস্তু ও প্রবৃত্তির অনুসরণ দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৮২৩)
সুতরাং জান্নাত পেতে হলে কষ্ট ও কাঠিন্যতা অতিক্রম করতে হবে। আর জাহান্নামে যেতে হলে প্রবৃত্তির অনুসরণে কোন বাধা নেই যেমন খুশি তেমন চলতেও কোন বাধা নেই।
‘কাম্য জিনিস’ বলতে এমন সব জিনিসকে বুঝানো হয়েছে যা স্বভাবত মানুষ পছন্দ করে ও ভালবাসে। এ সব জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া বা তা ভালবাসা অপছন্দনীয় নয়; তবে তা হতে হবে শরীয়তের গণ্ডির ভেতরে; কারণ দুনিয়ার সাজ-সজ্জা ও চাকচিক্য আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে পরীক্ষা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَي الْأَرْضِ زِيْنَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا)
“পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার শোভা-সৌন্দর্য করেছি, মানুষের মধ্যে কর্মের দিক থেকে কে সর্বোত্তম তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য।” (সূরা কাহ্ফ ১৮:৭)
কাম্য জিনিসের মধ্যে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে নারী; কারণ মানুষ স্বভাবগতভাবে যেসব জিনিসের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় তার প্রধান হল নারী। একজন পুরুষ সাবালক হবার পর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বোধ করে একজন সঙ্গিণীর। তাছাড়া পুরুষের কাছে নারী সর্বাধিক প্রিয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মহিলা ও সুগন্ধি আমার কাছে অতি প্রিয় জিনিস। (নাসায়ী হা: ৩৯৪৯, আহমাদ হা: ৩৪৮২, হাসান) অন্যত্র তিনি বলেন: গোটা দুনিয়া হলো সম্পদ, আর তন্মধ্যে সর্বোত্তম সম্পদ হল সতী-সাধ্বী নারী। (সহীহ মুসলিম হা: ৩৭১৬, নাসায়ী হা: ৩২৩২)
সুতরাং যদি নারীর প্রতি ভালবাসা শরীয়তের সীমালঙ্ঘন না করে তা হলে তা উত্তম। পক্ষান্তরে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ফেতনার কারণ। তাই তাদের থেকে সাবধান হতে হবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:ما تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَي الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ
আমি পুরুষদের জন্য নারীর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর ও ফেতনার কারণ আর কিছু ছেড়ে যাইনি। (সহীহ বুখরী হা: ৫০৯৬, সহীহ মুসলিম হা: ২০৯৭-৯৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন:أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ
বানী ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম ফেতনা সৃষ্টি হয়েছিল মহিলাদের ব্যাপারে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৭৪২)
অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ তা‘আলা সন্তান, ধন-সম্পদ, চতুস্পদ জন্তু ইত্যাদির কথাও উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি এ সব সম্পদ দ্বারা দুনিয়াকে সুশোভিত করে দিয়েছেন।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ সবকিছু পরীক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(وَاعْلَمُوْٓا اَنَّمَآ اَمْوَالُکُمْ وَاَوْلَادُکُمْ فِتْنَةٌﺫ وَّاَنَّ اللہَ عِنْدَھ۫ٓ اَجْرٌ عَظِیْمٌ)
“আর জেনে রাখ যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষাস্বরূপ এবং আল্লাহরই নিকট মহাপুরস্কার রয়েছে।” (সূরা আনফাল ৮:২৮)
সুতরাং দুনিয়ার এসব সম্পদের মোহে আকৃষ্ট হয়ে পরকালকে ভুলে গেলে চলবে না, বরং দুনিয়ার সম্পদকে পরকালের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মানুষের সন্তান ও সম্পদ উভয় জগতে তার কাজে আসবে যদি তা দীনের আলোকে গড়ে তুলা যায় । যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
إذا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةِ أَشْيَاءَ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهُ
যখন মানুষ মৃত্যু বরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমল ব্যতীতঃ সদাকায়ে জারিয়া অথবা এমন জ্ঞান যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় অথবা সৎ সন্তান, যে তার জন্য দু‘আ করবে। (সহীহ মুসলিম হা: ১৬৩১)
তেমনিভাবে মানুষ যখন তার সম্পদের হক আদায় করবে তখন তার সম্পদ তার উপকারে আসবে। আর যদি হক আদায় না করে তবে সম্পদ তার জন্য পরকালে ক্ষতির কারণ হবে।
(وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ)
“অঢেল ধন-সম্পদ” অঢেল সম্পদের পরিমাণ নিয়ে মতভেদ পাওয়া যায়। কেউ বলেন, এর পরিমাণ হচ্ছে বড় পাহাড়ের সমান।
অন্য একদল বলেন: দু’হাজার উকিয়া। হাসান বসরী (রহঃ) বলেন: বার শত স্বর্ণমুদ্রা। কারো মতে, এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা।
‘চিহ্নিত ঘোড়া’ এমন ঘোড়া যাকে চারণভূমিতে চরে খাওয়ার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে অথবা এমন ঘোড়া যাকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে কিংবা এমন ঘোড়া যাকে অন্য থেকে পার্থক্য করার জন্য কোন কিছু দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ঘোড়া তিন প্রকার:
১. যে ব্যক্তি ঘোড়া প্রতিপালন করবে মানুষকে দেখানোর জন্য, গর্ব করার জন্য ও ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য, এমন ঘোড়া তার জন্য পাপের কারণ হবে।
২. যে ব্যক্তি ঘোড়া প্রতিপালন করবে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যবহারের জন্য, কিন্তু তার দ্বারা নিজে উপকৃত হলেও আল্লাহ তা‘আলার হক ভুলে যায় না। এমন উদ্দেশ্যে ঘোড়া প্রতিপালনের কারণে সে ব্যক্তির জন্য তা জাহান্নামের অন্তরায় হবে।
৩. এমন ঘোড়া যা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করার জন্য প্রতিপালন করা হয় সে ঘোড়া প্রতিপালকের জন্য নেকীর কারণ হবে। (সহীহ মুসলিম হা: ৯৮৭)
এগুলো হল দুনিয়ার ভোগের সামগ্রী অথচ আল্লাহ তা‘আলার নিকট যে সমস্ত জিনিস রয়েছে তা এ সমস্ত বস্তু অপেক্ষা উত্তম। সেগুলো হল চিরস্থায়ী জান্নাত, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। আর এগুলো হল তাদের জন্য যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করবে, তাঁর প্রতি ঈমান আনবে, তাঁর আদেশ নিষেধ মানবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ أُولٰ۬ئِكَ أَصْحٰبُ الْجَنَّةِ)
“এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে তারাই জান্নাতবাসী।” (সূরা বাকারাহ ২:৮২)
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَبَشِّرِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ)
“আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তাদের জন্য এমন জান্নাত রয়েছে যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়।” (সূরা বাকারাহ ২:২৫)
তাদের জন্য তথায় আরো থাকবে পূত-পবিত্র নারীগণ। যারা দুনিয়াবী সমস্ত অপবিত্রতা থেকে পবিত্র। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(حُوْرٌ مَّقْصُوْرٰتٌ فِی الْخِیَامِﮗﺆ فَبِاَیِّ اٰلَا۬ئِ رَبِّکُمَا تُکَذِّبٰنِﮘﺆ لَمْ یَطْمِثْھُنَّ اِنْسٌ قَبْلَھُمْ وَلَا جَا۬نٌّ)
“তাঁবুতে থাকবে সুরক্ষিত হূর; সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নেয়ামত অস্বীকার করবে? পূর্বে কোন মানুষ অথবা জিন তাদের স্পর্শ করেনি।” (সূরা আর-রহমান ৫৫:৭২-৭৪)
তাদের প্রতি থাকবে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি; কেননা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির চেয়ে বড় নি‘য়ামত আর কিছুই হতে পারে না। সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবে তাদের জন্যই রয়েছে এসমস্ত প্রতিদান।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দুনিয়াকে বিভিন্ন জিনিস দ্বারা সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে।
২. দুনিয়ার মোহে পড়ে পরকালকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়।
৩. সন্তান ও সম্পদ সঠিক পন্থায় ব্যবহার করলে উপকারে আসবে অন্যথায় তা ক্ষতির কারণ হবে।
আল্লাহ তা‘আলা বলছেন, তিনি পার্থিব জীবনকে বিভিন্ন প্রকারের উপভোগ্য বস্তু দ্বারা সুশোভিত করে দিয়েছেন।حُبُّ الشَّهَوٰتِ
বা প্রবৃত্তির ভালবাসা, প্রবৃত্তির আনুগত্য করা। জান্নাত প্রবৃত্তির অনুসরণকে বর্জন ছাড়া লাভ করা সম্ভব নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: জান্নাত কষ্টদায়ক বস্তু দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়েছে, আর জাহান্নাম চাকচিক্যময় বস্তু ও প্রবৃত্তির অনুসরণ দ্বারা বেষ্টন করে রাখা হয়েছে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৮২৩)
সুতরাং জান্নাত পেতে হলে কষ্ট ও কাঠিন্যতা অতিক্রম করতে হবে। আর জাহান্নামে যেতে হলে প্রবৃত্তির অনুসরণে কোন বাধা নেই যেমন খুশি তেমন চলতেও কোন বাধা নেই।
‘কাম্য জিনিস’ বলতে এমন সব জিনিসকে বুঝানো হয়েছে যা স্বভাবত মানুষ পছন্দ করে ও ভালবাসে। এ সব জিনিসের প্রতি আকৃষ্ট হওয়া বা তা ভালবাসা অপছন্দনীয় নয়; তবে তা হতে হবে শরীয়তের গণ্ডির ভেতরে; কারণ দুনিয়ার সাজ-সজ্জা ও চাকচিক্য আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে পরীক্ষা।
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(إِنَّا جَعَلْنَا مَا عَلَي الْأَرْضِ زِيْنَةً لَّهَا لِنَبْلُوَهُمْ أَيُّهُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا)
“পৃথিবীর ওপর যা কিছু আছে আমি সেগুলোকে তার শোভা-সৌন্দর্য করেছি, মানুষের মধ্যে কর্মের দিক থেকে কে সর্বোত্তম তা পরীক্ষা করে দেখার জন্য।” (সূরা কাহ্ফ ১৮:৭)
কাম্য জিনিসের মধ্যে প্রথম উল্লেখ করা হয়েছে নারী; কারণ মানুষ স্বভাবগতভাবে যেসব জিনিসের প্রতি বেশি আকৃষ্ট হয় তার প্রধান হল নারী। একজন পুরুষ সাবালক হবার পর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন বোধ করে একজন সঙ্গিণীর। তাছাড়া পুরুষের কাছে নারী সর্বাধিক প্রিয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: মহিলা ও সুগন্ধি আমার কাছে অতি প্রিয় জিনিস। (নাসায়ী হা: ৩৯৪৯, আহমাদ হা: ৩৪৮২, হাসান) অন্যত্র তিনি বলেন: গোটা দুনিয়া হলো সম্পদ, আর তন্মধ্যে সর্বোত্তম সম্পদ হল সতী-সাধ্বী নারী। (সহীহ মুসলিম হা: ৩৭১৬, নাসায়ী হা: ৩২৩২)
সুতরাং যদি নারীর প্রতি ভালবাসা শরীয়তের সীমালঙ্ঘন না করে তা হলে তা উত্তম। পক্ষান্তরে নারীরাই সবচেয়ে বেশি ফেতনার কারণ। তাই তাদের থেকে সাবধান হতে হবে।
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:ما تَرَكْتُ بَعْدِي فِتْنَةً أَضَرَّ عَلَي الرِّجَالِ مِنَ النِّسَاءِ
আমি পুরুষদের জন্য নারীর চেয়ে বেশি ক্ষতিকর ও ফেতনার কারণ আর কিছু ছেড়ে যাইনি। (সহীহ বুখরী হা: ৫০৯৬, সহীহ মুসলিম হা: ২০৯৭-৯৮)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আরো বলেন:أَوَّلَ فِتْنَةِ بَنِيْ إِسْرَائِيْلَ كَانَتْ فِي النِّسَاءِ
বানী ইসরাঈলের মধ্যে সর্বপ্রথম ফেতনা সৃষ্টি হয়েছিল মহিলাদের ব্যাপারে। (সহীহ মুসলিম হা: ২৭৪২)
অনুরূপভাবে মহান আল্লাহ তা‘আলা সন্তান, ধন-সম্পদ, চতুস্পদ জন্তু ইত্যাদির কথাও উল্লেখ করে বলেন যে, তিনি এ সব সম্পদ দ্বারা দুনিয়াকে সুশোভিত করে দিয়েছেন।
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা বলেন, এ সবকিছু পরীক্ষাস্বরূপ। আল্লাহ তা‘আলা বলেন:(وَاعْلَمُوْٓا اَنَّمَآ اَمْوَالُکُمْ وَاَوْلَادُکُمْ فِتْنَةٌﺫ وَّاَنَّ اللہَ عِنْدَھ۫ٓ اَجْرٌ عَظِیْمٌ)
“আর জেনে রাখ যে, তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি পরীক্ষাস্বরূপ এবং আল্লাহরই নিকট মহাপুরস্কার রয়েছে।” (সূরা আনফাল ৮:২৮)
সুতরাং দুনিয়ার এসব সম্পদের মোহে আকৃষ্ট হয়ে পরকালকে ভুলে গেলে চলবে না, বরং দুনিয়ার সম্পদকে পরকালের পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করতে হবে। মানুষের সন্তান ও সম্পদ উভয় জগতে তার কাজে আসবে যদি তা দীনের আলোকে গড়ে তুলা যায় । যেমন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন:
إذا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةِ أَشْيَاءَ مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُوْ لَهُ
যখন মানুষ মৃত্যু বরণ করে তখন তার সমস্ত আমল বন্ধ হয়ে যায়। শুধু তিনটি আমল ব্যতীতঃ সদাকায়ে জারিয়া অথবা এমন জ্ঞান যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হয় অথবা সৎ সন্তান, যে তার জন্য দু‘আ করবে। (সহীহ মুসলিম হা: ১৬৩১)
তেমনিভাবে মানুষ যখন তার সম্পদের হক আদায় করবে তখন তার সম্পদ তার উপকারে আসবে। আর যদি হক আদায় না করে তবে সম্পদ তার জন্য পরকালে ক্ষতির কারণ হবে।
(وَالْقَنَاطِيرِ الْمُقَنْطَرَةِ)
“অঢেল ধন-সম্পদ” অঢেল সম্পদের পরিমাণ নিয়ে মতভেদ পাওয়া যায়। কেউ বলেন, এর পরিমাণ হচ্ছে বড় পাহাড়ের সমান।
অন্য একদল বলেন: দু’হাজার উকিয়া। হাসান বসরী (রহঃ) বলেন: বার শত স্বর্ণমুদ্রা। কারো মতে, এক হাজার স্বর্ণমুদ্রা।
‘চিহ্নিত ঘোড়া’ এমন ঘোড়া যাকে চারণভূমিতে চরে খাওয়ার জন্য ছেড়ে দেয়া হয়েছে অথবা এমন ঘোড়া যাকে জিহাদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে কিংবা এমন ঘোড়া যাকে অন্য থেকে পার্থক্য করার জন্য কোন কিছু দ্বারা চিহ্নিত করা হয়েছে। (ইবনু কাসীর, অত্র আয়াতের তাফসীর)
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ঘোড়া তিন প্রকার:
১. যে ব্যক্তি ঘোড়া প্রতিপালন করবে মানুষকে দেখানোর জন্য, গর্ব করার জন্য ও ইসলামের বিরুদ্ধে ব্যবহার করার জন্য, এমন ঘোড়া তার জন্য পাপের কারণ হবে।
২. যে ব্যক্তি ঘোড়া প্রতিপালন করবে আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় ব্যবহারের জন্য, কিন্তু তার দ্বারা নিজে উপকৃত হলেও আল্লাহ তা‘আলার হক ভুলে যায় না। এমন উদ্দেশ্যে ঘোড়া প্রতিপালনের কারণে সে ব্যক্তির জন্য তা জাহান্নামের অন্তরায় হবে।
৩. এমন ঘোড়া যা আল্লাহ তা‘আলার রাস্তায় জিহাদ করার জন্য প্রতিপালন করা হয় সে ঘোড়া প্রতিপালকের জন্য নেকীর কারণ হবে। (সহীহ মুসলিম হা: ৯৮৭)
এগুলো হল দুনিয়ার ভোগের সামগ্রী অথচ আল্লাহ তা‘আলার নিকট যে সমস্ত জিনিস রয়েছে তা এ সমস্ত বস্তু অপেক্ষা উত্তম। সেগুলো হল চিরস্থায়ী জান্নাত, যার নীচ দিয়ে ঝর্ণাধারা প্রবাহিত। আর এগুলো হল তাদের জন্য যারা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় করবে, তাঁর প্রতি ঈমান আনবে, তাঁর আদেশ নিষেধ মানবে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(وَالَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصّٰلِحٰتِ أُولٰ۬ئِكَ أَصْحٰبُ الْجَنَّةِ)
“এবং যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে ও সৎকর্ম করেছে তারাই জান্নাতবাসী।” (সূরা বাকারাহ ২:৮২)
আল্লাহ তা‘আলার বাণী:
(وَبَشِّرِ الَّذِيْنَ اٰمَنُوْا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ أَنَّ لَهُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِيْ مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهٰرُ)
“আর যারা ঈমান এনেছে এবং নেক আমল করেছে তাদেরকে সুসংবাদ প্রদান কর যে, তাদের জন্য এমন জান্নাত রয়েছে যার তলদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হয়।” (সূরা বাকারাহ ২:২৫)
তাদের জন্য তথায় আরো থাকবে পূত-পবিত্র নারীগণ। যারা দুনিয়াবী সমস্ত অপবিত্রতা থেকে পবিত্র। যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
(حُوْرٌ مَّقْصُوْرٰتٌ فِی الْخِیَامِﮗﺆ فَبِاَیِّ اٰلَا۬ئِ رَبِّکُمَا تُکَذِّبٰنِﮘﺆ لَمْ یَطْمِثْھُنَّ اِنْسٌ قَبْلَھُمْ وَلَا جَا۬نٌّ)
“তাঁবুতে থাকবে সুরক্ষিত হূর; সুতরাং তোমরা উভয়ে তোমাদের প্রতিপালকের কোন কোন নেয়ামত অস্বীকার করবে? পূর্বে কোন মানুষ অথবা জিন তাদের স্পর্শ করেনি।” (সূরা আর-রহমান ৫৫:৭২-৭৪)
তাদের প্রতি থাকবে আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টি; কেননা আল্লাহ তা‘আলার সন্তুষ্টির চেয়ে বড় নি‘য়ামত আর কিছুই হতে পারে না। সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলার নির্দেশ মোতাবেক কাজ করবে তাদের জন্যই রয়েছে এসমস্ত প্রতিদান।
আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়:
১. দুনিয়াকে বিভিন্ন জিনিস দ্বারা সুশোভিত করে দেয়া হয়েছে।
২. দুনিয়ার মোহে পড়ে পরকালকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়।
৩. সন্তান ও সম্পদ সঠিক পন্থায় ব্যবহার করলে উপকারে আসবে অন্যথায় তা ক্ষতির কারণ হবে।
0 Comments