বাড়িতে ঈদের সালাত আদায়ের পদ্ধতি এবং এ সংক্রান্ত জরুরি মাসায়েল

বাড়িতে ঈদের সালাত আদায়ের পদ্ধতি এবং এ সংক্রান্ত জরুরি মাসায়েল

▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬

ইতোপূর্বে প্রতি বছর আমরা ঈদগাহে বা জুমার মসজিদে ইমামের পেছনে ঈদের সালাত আদায় করে এসেছি। কিন্তু বর্তমান বিশ্বময় করোনা পরিস্থিতিতে এবারের ঈদ অনুষ্ঠিত হবে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে। এবার হয়ত আমাদের অনেককেই ঈদের সালাতে ইমামতি করতে হবে। আর পেছনে যারা মুক্তাদি হবে তারা আমাদের পরিবারেরই লোকজন। এ এক নতুন অবিজ্ঞতা। এমন পরিস্থিতিতে ঈদের সালাত সংক্রান্ত বিষয়গুলো জানাটা সময়ের দাবি।

তাই নিম্নে সহিহ সুন্নাহর আলোক বাড়িতে ঈদের সালাত আদায়ের পদ্ধতি এবং ঈদ সংক্রান্ত জরুরি মাসআলা-মাসায়েলগুলো সংক্ষেপে তুলে ধরা হল:

বাড়িতে ঈদের সালাত আদায় করা কি বৈধ?

সৌদি গ্র্যান্ড মুফতি আল্লামা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আযীয আলুশ শায়খ বলেন:

যদি বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে এবং ঈদগাহে অথবা সালাতের জন্য নির্ধারিত মসজিদগুলোতে ঈদের সালাত আদায় করা সম্ভব না হয় তাহলে বাড়িতে ঈদের সালাত আদায় করা হবে। তবে ঈদের সালাতের পরে যে খুতবা দেওয়া হয় সেটা হবে না।

ইতোপূর্বে সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয় কমিটির যে ফতোয়া প্রকাশিত হয়েছে তা হল: “কারো যদি ঈদের সালাত ছুটে গিয়ে থাকে এবং সে তা কাযা করতে চায় তাহলে ঈদের সালাতের পরে যে খুতবা দেয়া হয় সেটা ছাড়া ঈদের সালাতের নিয়ম ঠিক রেখে তা কাযা করে নেয়া মুস্তাহাব (উত্তম)।”

সুতরাং মুসলিম সর্ব সাধারণকে নিয়ে জামাআতে ইমামের সাথে ঈদের সালাত আদায় করা সম্ভব না হওয়ার কারণে যদি তা (একাকী) কাযা করা মুস্তাহাব হয়ে থাকে তাহলে যদি কোথাও ঈদের সালাত আদৌ কায়েম করা না হয় তাহলে আরও যৌক্তিক ভাবে তা (একাকী/আলাদাভাবে) কায়েম করা বৈধ হবে। কারণ এতে ‘সাধ্যানুযায়ী’ ইসলামের এই নিদর্শনটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। আল্লাহ বলেন: “তোমরা সাধ্যমতো আল্লাহকে ভয় করো।” আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, “আমি যখন তোমাদেরকে কোন বিষয়ে আদেশ করি তখন তোমরা সাধ্য অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করবে।”

পরিবারের লোকজন নিয়ে ঈদের জামাআতে দাঁড়ানোর পদ্ধতি:

পুরুষদের মধ্য থেকে যার কুরআন তিলাওয়াত সবচেয়ে ভালো সে ইমাম হয়ে সালাত পড়াবে আর তার পেছনে অন্যান্য পুরুষ বা ছেলে-সন্তানরা দাঁড়াবে। সবচেয়ে পেছনে দাঁড়াবে মহিলারা।

যদি পুরুষ/ছেলে মাত্র দু জন হয় তাহলে তারা পাশাপাশি দাঁড়াবে এবং অন্যান্য মহিলারা (এমনকি একজন হলেও) তাদের পেছনে দাঁড়াবে।

স্বামী-স্ত্রী কেবল দু জন হলে স্বামী ইমাম হয়ে সামনে দাঁড়াবে আর স্ত্রী তার পেছনে দাঁড়াবে।

কোন মহিলার জন্য পুরুষের ইমামতি করা জায়েজ নেই। তবে মহিলারা মহিলাদের ইমামতি করতে পারবে।

অনুরূপভাবে পুরুষ এবং মহিলা পাশাপাশি দাঁড়িয়ে জামাআতের সাথে সালাত আদায় করা জায়েজ নেই।

ঈদ সংক্রান্ত জরুরি মাসায়েল:

ক. ঈদের নামাযে আযান ও একামত নেই: জাবের ইবনে সামুরা রা. বলেন, “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সাথে একবার নয় দুই বার নয় একাধিক বার ঈদের নামায পড়েছি তাতে আযান ও একামত ছিল না।” (সহীহ মুসলিম: হাদিস নং ১৪৭০)

খ. ঈদের নামাযের আগে বা পরে নফল নামায পড়া শরিয়ত সম্মত নয়।

গ. সর্বপ্রথম ঈদের নামায হবে তারপর খুতবাঃ আবু সাঈদ খুদরী রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের মাঠে গিয়ে সর্বপ্রথম নামায আদায় করতেন তারপর জনগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে ওয়াজ করতেন, কোন উপদেশ থাকলে উপদেশ দিতেন বা কোন নির্দেশ থাকলে নির্দেশ দিতেন। আর জনগণ নামাযের কাতারে বসে থাকতেন। কোথাও কোন বাহিনী প্রেরণের ইচ্ছা থাকলে তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতেন অথবা অন্য কোন নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করলে তা জারী করতেন। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৯০৩)

 

ঘ. রাকাত সংখ্যা: ঈদের নামায দু রাকাত। (বুখারী, হাদিস নং ১৩৪১)

ঙ. তাকবীর সংখ্যা: তাকবীরে তাহরিমা ছাড়া প্রথম রাকাতে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচ তাকবীর।

عن عَائِشَة أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُكَبِّرُ فِي الْفِطْرِ وَالْأَضْحَى فِي الْأُولَى سَبْعَ تَكْبِيرَاتٍ وَفِي الثَّانِيَةِ خَمْسًا…قَالَ سِوَى تَكْبِيرَتَيْ الرُّكُوعِ

“আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার প্রথম রাকাতে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচ তাকবীর দিতেন।” অন্য সনদে আছে, উল্লেখিত তাকবীরগুলো রুকুর তাকবীর ছাড়া। (আবুদাঊদ-হাদিস নং ৩৭০)

উল্লেখ্য যে, ৬ তাকবিরে ঈদের সালাত আদায় করা জায়েজ। কেননা, এ বিষয়ে কতিপয় সাহাবী থেকে আমল পাওয়া যায়। তবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ১২ তাকবিরের পক্ষে প্রচুর পরিমাণ হাদিস থাকার কারণে উত্তম হল ১২ তাকবিরে আদায় করা। সুতরাং এটা নিয়ে ঝগড়া-ঝাটি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার সুযোগ নাই।

তাছাড়া এ অতিরিক্ত তাকবিরগুলো সালাতের ওয়াজিব বা রোকন পর্যায়ের বিষয় নয়। সুতরাং এগুলোর সংখ্যায় কমবেশি হলে তাতে সালাতের কোন ক্ষতি হবে না বা এতে সাহু সেজাদার প্রয়োজন নাই।

 

চ. ঈদের সালাতে কিরাআতঃ প্রখ্যাত সাহাবী নুমান ইবনে বাশীর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ঈদ ও জুমার নামাযে প্রথম রাকআতে ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আ’লা’ (সূরা আ’লা) এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে ‘হাল আতাকা হাদীসুল গাসিয়াহ্’ (সূরা গাশিয়াহ) পাঠ করতেন। (নাসাঈ, হাদিস নং ১৫৫০ সনদ সহীহ-আলবানী) অন্য বর্ণনায় ১ম রাকআতে সূরা ক্বাফ এবং ২য় রাকআতে সূরা ইক্বতারাবতিস্ সা’আহ্’ (সূরা ক্বামার) পড়ার কথাও এসেছে। (নাসাঈঃ হাদিস নং ১৫৪৯, সনদ সহীহ-আলবানী)

উপরোক্ত সূরাগুলো জানা না থাকলে সূরা ফাতিহার পর যে কোন সূরা পড়লেও সালাত শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ।

এক নজরে ঈদের সালাত আদায়ের সংক্ষিপ্ত পদ্ধতি:

১) মনে মনে ঈদের সালাতের নিয়ত করে তাকবীরে তাহরিমা তথা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সালাত শুরু করা।

২) অত:পর পর সানা পাঠ করার পর অতিরিক্ত ৭টি তাকবীর দেয়া। প্রতিবার ‘আল্লাহু আকবার’ বলার সময় উভয় হাত কান বা কাঁধ বরাবর উত্তোলন করা।

৩) আউযুবিল্লাহ ও বিসমিল্লাহ পাঠ করার পর সূরা ফাতিহা পাঠ করা। তারপর যে কোন একটি সূরা পাঠ করা। তবে ১ম রাকাতে সূরা আলা/ক্বাফ এবং ২য় রাকাতে সূরা গাশিয়াহ/কামার পাঠ করা উত্তম।

৪) তারপর যথারীতি রুকু-সেজদা দিয়ে ১ম রাকআত শেষ করে আল্লাহু আকবার বলে ২য় রাকআতে দণ্ডায়মান হওয়া। তারপর অতিরিক্ত ৫টি তাকবীর দেয়া দেয়া।

৫) তারপর যথারীতি রুকু, সেজদা ও তাশাহুদ সহকারে সালাত শেষ করা।

৬) ঈদের সালাতের পর যে খুতবা হয় বাড়িতে সালাতের ক্ষেত্রে তা দেয়া যাবে না।

সবাইকে ঈদ মোবারক-ঈদের শুভেচ্ছা।

والله أعلم بالصواب

▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬

লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী

FB/AbdullaahilHadi

দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

Post a Comment

0 Comments