▌ঈদ মুবারক, না কি ভিন্ন সম্ভাষণ?
·পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি।
যাবতীয় প্রশংসা বিশ্বজগতের মহান
প্রভু আল্লাহ তা‘আলার জন্য। যিনি বলেছেন, “আর সে বিষয়ের পেছনে ছুটো না (কোরো না, বোলো
না, সাক্ষ্য দিয়ো না), যে বিষয়ে তোমার কোনো জ্ঞান নেই। কান, চোখ, আর অন্তর—এগুলোর প্রত্যেকের
বিষয়ে অবশ্যই তোমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।” [সূরাহ ইসরা: ৩৬]
দয়া ও শান্তি অবতীর্ণ হোক
প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি। যিনি বলেছেন, “বিনা ‘ইলমে যাকে ফাতওয়া দেওয়া হয় (এবং সেই ভুল ফাতওয়া দ্বারা সে ভুলকর্ম করে), তবে তার পাপ ওই মুফতীর ওপর বর্তাবে।” [আবূ দাউদ,
হা/৩৬৫৯; সনদ: হাসান]
·প্রাক্কথন:
হাল আমলে আমাদের সোনার বাংলাদেশে
বেশ কিছু দা‘ঈর আভির্ভাব ঘটেছে, যাঁরা ‘আলিমদের সাথে কানেক্টেড না থেকে নিজেরাই ইজতিহাদ
করে ফাতওয়া দিচ্ছেন। শরিয়তের সাধারণ উসূল তথা মূলনীতি
(basic principle) সম্পর্কে না জানার কারণে তাঁরা বিভ্রান্তিকর ফাতওয়া প্রদান করছেন।
তাঁদেরই কতিপয়কে ইদানীং দেখা যাচ্ছে—তাঁরা বলছেন, ঈদ মুবারাক বলা বিদ‘আত অথবা না-জায়েজ
অথবা কমপক্ষে মাকরূহ। এই বিষয়টি নিয়ে সেই দা‘ঈগণ এবং তাদের অন্ধ অনুসারীরা খুতবায়,
সেমিনারে এবং বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়ায় উদ্ভট ও মূর্খতামূলক কথা বলছেন।
জনৈক দা‘ঈকে—যিনি কিনা পিএইচডি
ডিগ্রিধারী প্রাবন্ধিক—তাঁর এক লেকচারে বলতে শোনা গেছে, “ঈদ মুবারক শব্দটিই উদ্ভট,
এর কোনো অর্থই হয় না! অতএব এই সম্ভাষণ বর্জন করুন।” লা হাওলা ওয়ালা কুওয়্যাতা ইল্লা
বিল্লাহ। কী ধরনের অজ্ঞতামূলক কথাবার্তা! তাই মনে করলাম, এ বিষয়ে সালাফী ভাইদের অমূলক
ও ভুল ধারণা দূর করা দরকার। সে লক্ষ্যেই ‘আলিমদের বক্তব্য ও ফাতওয়া উল্লেখপূর্বক এই
নিবন্ধটির অবতারণা। নিম্নে আমরা এই বিষয়ে সংক্ষিপ্ত পরিসরে ‘আলিমদের বক্তব্য থেকে কিছু
জানব, ইনশাআল্লাহ।
শুরুতেই বক্ষ্যমাণ নিবন্ধে
যেসব বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে, তা বলে দিচ্ছি। প্রথমত, ঈদের মুবারকবাদ কাকে বলে এবং
শরিয়তে এর দলিল আছে কি না, তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আলোচনা বুঝার জন্য
ইসলামী শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। তৃতীয়ত, ঈদে
মুবারকবাদ জানানো যে ইবাদত নয়, তা প্রমাণ করা হয়েছে। চতুর্থত, ‘ঈদ মুবারক’ বলার ব্যাপারে
যুগশ্রেষ্ঠ বিদ্বানদের বক্তব্য পেশ করা হয়েছে। পঞ্চমত, ঈদের মুবারকবাদ জানানোর সময়
সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হয়েছে। ওয়া বিল্লাহিত তাওফীক্ব।
·
ঈদের মুবারকবাদ কী?
ঈদের দিন একে অপরকে শুভেচ্ছা
জ্ঞাপন করা এবং কোনো ভালো শব্দ বা দু‘আমূলক বাক্য দ্বারা পরস্পরকে সম্ভাষণ জানানোর
নামই হলো ঈদের মুবারকবাদ। ঈদের দিন একে অপরকে মুবারকবাদ দেওয়ায় ও শুভেচ্ছা জ্ঞাপনে
কোনো দোষ নেই। যেমন: তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম (আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের
নিকট থেকে এই ইবাদত কবুল করুন), ঈদ মুবারক (আমাদের ঈদ বরকতময় হোক) ইত্যাদি দু‘আমূলক
বাক্য বলে এক অপরের সাথে সাক্ষাৎ করা বৈধ। যেহেতু ঈদে ও অন্যান্য খুশীতে মুবারকবাদ
দেওয়া, বরকত, মঙ্গল ও কবুলের দু‘আ করা ইসলামে সুস্পষ্টভাবে স্বীকৃত। যেমন রাসূল ﷺ এর সাহাবীগণ ঈদগাহ হতে ফিরার সময় একে অপরকে বলতেন, তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না
ওয়া মিনকা (আল্লাহ আমাদের ও তোমার পক্ষ থেকে এই ইবাদত কবুল করুন)। তবে বিষয়টি সরাসরি
রাসূল ﷺ থেকে প্রমাণিত নয়।
·
দলিল:
১. তাবি‘ঈ জুবাইর ইবনু নুফাইর
(রাহিমাহুল্লাহ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
ﻛَﺎﻥَ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏُ ﺭَﺳُﻮﻝِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺇِﺫَﺍ ﺍِﻟْﺘَﻘَﻮْﺍ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻌِﻴﺪِ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻟِﺒَﻌْﺾٍ : ﺗَﻘَﺒَّﻞَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻨَّﺎ ﻭَﻣِﻨْﻚ.
“আল্লাহ’র রাসূল ﷺ এর সাহাবীগণ ঈদের দিন একে অন্যের সাথে সাক্ষাৎ হলে বলতেন, তাক্বাব্বালাল্লাহু
মিন্না ওয়া মিনকা (আল্লাহ আমাদের ও তোমার পক্ষ থেকে এই ইবাদত কবুল করুন)।” [ইবনু হাজার
(রাহিমাহুল্লাহ), ফাতহুল বারী; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ৫১৭; আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ), তামামুল
মিন্নাহ ফিত তা‘লীক্বি ‘আলা ফিক্বহিস সুন্নাহ; পৃষ্ঠা: ৩৫৪-৩৫৫; দারুর রায়াহ কর্তৃক
প্রকাশিত; সন: ১৪০৮ হিজরী (২য় প্রকাশ); সনদ: সাহীহ (তাহক্বীক্ব: আলবানী)/হাসান (তাহক্বীক্ব:
ইবনু হাজার)]
·
২. তাবি‘ঈ মুহাম্মাদ ইবনু
যিয়াদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
ﻛﻨﺖ ﻣﻊ ﺃﺑﻲ ﺃﻣﺎﻣﺔ ﺍﻟﺒﺎﻫﻠﻲ ﻭﻏﻴﺮﻩ ﻣﻦ ﺃﺻﺤﺎﺏ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻓﻜﺎﻧﻮﺍ ﺇﺫﺍ ﺭﺟﻌﻮﺍ ﻣﻦ ﺍﻟﻌﻴﺪ ﻳﻘﻮﻝ ﺑﻌﻀﻬﻢ ﻟﺒﻌﺾ : ﺗﻘﺒﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻨﺎ ﻭﻣﻨﻜﻢ.
“আমি আবূ উমামাহ আল-বাহিলী
(রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) এবং নাবী ﷺ এর অন্যান্য সাহাবীর সাথে ছিলাম। তাঁরা যখনই ঈদের নামাজ পড়ে ফিরে আসতেন, তখনই
একে অপরকে বলতেন, তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা (আল্লাহ আমাদের ও তোমার পক্ষ
থেকে এই ইবাদত ক্ববূল করুন)।” [ইবনুত তুরকুমানী, আল-জাওহারুন নাক্বী ফির রাদ্দি ‘আলাল
বাইহাক্বী; খণ্ড: ৩; পৃষ্ঠা: ৩২০; গৃহীত: আলবানী (রাহিমাহুল্লাহ), তামামুল মিন্নাহ;
পৃষ্ঠা: ৩৫৫-৩৫৬; সনদ: জায়্যিদ। এই হাদীসের সনদকে ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) জায়্যিদ
বলেছেন। (দ্র.: ইবনু কুদামাহ রাহিমাহুল্লাহ, আল-মুগনী; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২৫০-২৫১) আলবানী
(রাহিমাহুল্লাহ) এই বর্ণনাকে পূর্বের হাদীসের শাহিদ তথা সাক্ষ্য হিসেবে নিয়ে এসেছেন।]
৩. ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল
(রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন,
ﻭﻻ ﺑﺄﺱ ﺃﻥ ﻳﻘﻮﻝ ﺍﻟﺮﺟﻞ ﻟﻠﺮﺟﻞ ﻳﻮﻡ ﺍﻟﻌﻴﺪ : ﺗﻘﺒﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻨﺎ ﻭﻣﻨﻚ. ﻭﻗﺎﻝ ﺣﺮﺏ : ﺳﺌﻞ ﺃﺣﻤﺪ ﻋﻦ ﻗﻮﻝ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﻴﺪﻳﻦ ﺗﻘﺒﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻨﺎ ﻭﻣﻨﻜﻢ . ﻗﺎﻝ : ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻪ ، ﻳﺮﻭﻳﻪ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﺸﺎﻡ ﻋﻦ ﺃﺑﻲ ﺃﻣﺎﻣﺔ.
“ঈদের দিন একজন (মু’মিন)
ব্যক্তি কর্তৃক অপর (মু’মিন) ব্যক্তিকে তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম (আল্লাহ
আমাদের এবং তোমাদের পক্ষ থেকে এই ইবাদত কবুল করুন) বলাতে কোনো সমস্যা নেই। হার্ব বলেন,
ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) কে দুই ঈদে লোকদের তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম
বলা প্রসঙ্গে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, ‘এতে কোনো সমস্যা নেই। এ বিষয়টি সিরিয়াবাসীরা
সাহাবী আবূ উমামাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু) থেকে বর্ণনা করেছে’।” [ইবনু কুদামাহ (রাহিমাহুল্লাহ),
আল-মুগনী; খণ্ড: ২; পৃষ্ঠা: ২৫০-২৫১]
এখন অনেকে হয়ত মনে করছেন,
সালাফদের থেকে যেহেতু ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম’ বাক্যে সম্ভাষণ বর্ণিত
হয়েছে, সেহেতু এই সম্ভাষণ ব্যতিরেকে ঈদী মুবারকবাদের যাবতীয় সম্ভাষণ বাতিল ও বিদ‘আত।
সুতরাং এই সম্ভাষণ ব্যতিরেকে অন্য কোনো সম্ভাষণ দ্বারা মুবারকবাদ জানানো যাবে কি না,
তা আমাদের জানতে হবে। তার আগে আমরা জানব ইসলামী শরিয়তের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি
মূলনীতি।
একটি গুরুত্বপূর্ণ মূলনীতি:
ইসলামী শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ
মূলনীতি হলো—ইবাদত নয় এমন সমস্ত আচার ও প্রথা মূলত বৈধ ও সিদ্ধ, যতক্ষণ না পর্যন্ত
এ ব্যাপারে হারাম হওয়ার দলিল বর্ণিত হচ্ছে। এই বেসিক মূলনীতিটা জানা না থাকার কারণে
বহুজন বিভ্রান্ত হয়েছেন। এই মহান মূলনীতির ব্যাপারে বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠতম মুফাসসির,
ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস, সৌদি আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য আশ-শাইখুল
‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ) ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু
‘আনহা)’র একটি হাদীসের ব্যাখ্যায় গুরুত্বপূর্ণ ‘ইলমী আলোচনা করে বলেছেন,
ﻭﻟﻬﺬﺍ ﻛﺎﻥ ﻣﻦ ﺍﻟﻘﻮﺍﻋﺪ ﺍﻟﻤﻘﺮﺭﺓ ﻋﻨﺪ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻌﻠﻢ «ﺃﻥ ﺍﻷﺻﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺍﺕ ﺍﻟﺤﻈﺮ ﻭﺍﻟﻤﻨﻊ ﺣﺘﻰ ﻳﻘﻮﻡ ﺩﻟﻴﻞ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﺸﺮﻭﻋﻴﺔ» ﻗﺎﻝ ﺳﺒﺤﺎﻧﻪ : ﺃﻡ ﻟﻬﻢ ﺷﺮﻛﺎﺀ ﺷﺮﻋﻮﺍ ﻟﻬﻢ ﻣﻦ ﺍﻟﺪﻳﻦ ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﺈﺫﻥ ﺑﻪ ﺍﻟﻠﻪ ﻭﻫﺬﺍ ﺇﻧﻜﺎﺭ ﻋﻠﻴﻬﻢ.
ﻭﻋﻠﻰ ﺍﻟﻌﻜﺲ ﻣﻦ ﺫﻟﻚ ﻓﺎﻷﺻﻞ ﻓﻲ ﺍﻟﻤﻌﺎﻣﻼﺕ ﻭﺍﻷﻓﻌﺎﻝ ﻭﺍﻷﻋﻴﺎﻥ ﺍﻹﺑﺎﺣﺔ ﻭﺍﻟﺤﻞ ﺣﺘﻰ ﻳﻘﻮﻡ ﺩﻟﻴﻞ ﻋﻠﻰ ﺍﻟﻤﻨﻊ . ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﺭﺩ ﻓﻲ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺍﺕ ﻭﻫﻲ ﺍﻟﺘﻲ ﻳﻘﺼﺪ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ﺑﻬﺎ ﺍﻟﺘﻌﺒﺪ ﻭﺍﻟﺘﻘﺮﺏ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ، ﻓﻨﻘﻮﻝ ﻟﻤﻦ ﻳﺰﻋﻢ ﺷﻴﺌﺎً ﻋﺒﺎﺩﺓ : ﻫﺎﺕ ﺍﻟﺪﻟﻴﻞ ﻋﻠﻰ ﺃﻥ ﻫﺬﺍ ﻋﺒﺎﺩﺓ، ﻭﺇﻻ ﻓﻘﻮﻟﻚ ﻣﺮﺩﻭﺩ.
ﻭﻳﺤﺘﺎﺝ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﺇﻟﻰ ﺗﺤﺮﻳﺮ ﺑﺎﻟﻎ.
ﻓﺄﻭﻻً : ﻳﻨﺒﻐﻲ ﻣﻌﺮﻓﺔ ﻫﻞ ﻫﺬﺍ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺃﻡ ﻋﺎﺩﺓ.
ﻓﻤﺜﻼً ﻟﻮ ﺃﻥ ﺭﺟﻼً ﻗﺎﻝ ﻟﺼﺎﺣﺒﻪ ﺍﻟﺬﻱ ﻧﺠﺎ ﻣﻦ ﻫﻠﻜﺔ : ﻣﺎ ﺷﺎﺀ ﺍﻟﻠﻪ، ﻫﻨﻴﺌﺎً ﻟﻚ. ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ ﺭﺟﻞ : ﻫﺬﻩ ﺑﺪﻋﺔ. ﻓﻬﺬﺍ ﺍﻟﻘﻮﻝ ﻏﻴﺮ ﺻﺤﻴﺢ، ﻷﻥ ﻫﺬﺍ ﻣﻦ ﺃﻣﻮﺭ ﺍﻟﻌﺎﺩﺓ ﻭﻟﻴﺲ ﻣﻦ ﺃﻣﻮﺭ ﺍﻟﻌﺒﺎﺩﺓ. ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺸﺮﻉ ﻣﺎ ﻳﺸﻬﺪ ﻟﻬﺬﺍ ﺣﻴﺚ ﺟﻌﻞ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻳﻬﻨﺌﻮﻥ ﻛﻌﺐ ﺑﻦ ﻣﺎﻟﻚ ﺑﺘﻮﺑﺔ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻓﻲ ﺣﺪﻳﺜﻪ ﺍﻟﻄﻮﻳﻞ.
ﻭﻛﺜﻴﺮ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﻬﺎﻧﻲ ﺍﻟﺘﻲ ﺗﺤﺪﺙ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻻ ﻳﺰﻋﻢ ﺃﺣﺪ ﺃﻧﻬﺎ ﺑﺪﻋﺔ ﺇﻻ ﺑﺪﻟﻴﻞ، ﻷﻧﻬﺎ ﺃﻣﻮﺭ ﻋﺎﺩﺍﺕ ﻻ ﻋﺒﺎﺩﺍﺕ، ﻭﻛﻤﻦ ﻗﺎﺑﻞ ﺭﺟﻼً ﻧﺠﺢ ﻓﻲ ﺍﻣﺘﺤﺎﻥ ﻓﻘﺎﻝ ﻟﻪ : ﻣﺒﺎﺭﻙ . ﻓﻤﻦ ﻳﻘﻮﻝ : ﻫﺬﻩ ﺑﺪﻋﺔ ﻏﻴﺮ ﻣﺤﻖ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ. ﻭﺇﺫﺍ ﺗﺮﺩﺩ ﺍﻷﻣﺮ ﺑﻴﻦ ﻛﻮﻧﻪ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺃﻭ ﻋﺎﺩﺓ ﻓﺎﻷﺻﻞ ﺃﻧﻪ ﻋﺎﺩﺓ ﻭﻻ ﻳﻨﻬﻰ ﻋﻨﻪ ﺣﺘﻰ ﻳﻘﻮﻡ ﺩﻟﻴﻞ ﻋﻠﻰ ﺃﻧﻪ ﻋﺒﺎﺩﺓ.
ﻭﺗﻮﺟﺪ ﺃﺷﻴﺎﺀ ﺍﺑﺘﺪﻋﻬﺎ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﻲ ﺩﻳﻦ ﺍﻟﻠﻪ، ﻛﺈﺣﺪﺍﺙ ﺃﺫﻛﺎﺭ ﻣﻌﻴﻨﺔ ﺑﺼﻴﻎ ﻭﻋﺪﺩ ﻭﻭﻗﺖ ﻭﻫﻲ ﻟﻢ ﺗﺸﺮﻉ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﺍ ﺍﻟﻮﺟﻪ ﻻ ﻓﻲ ﺍﻟﺰﻣﻦ ﻭﻻ ﺍﻟﻌﺪﺩ، ﻭﻻ ﺍﻟﻬﻴﺌﺔ، ﻛﻤﻦ ﻳﺴﺒﺢ ﺃﻟﻒ ﻣﺮﺓ ﻭﻳﻠﺘﺰﻡ ﺑﺬﻟﻚ ﻭﻳﺠﻌﻠﻪ ﻓﻲ ﺍﻟﺼﺒﺎﺡ ﻣﺜﻼً، ﻓﻬﺬﺍ ﺍﻟﻌﻤﻞ ﺑﺪﻋﺔ، ﻣﺮﺩﻭﺩ ﻋﻠﻰ ﺻﺎﺣﺒﻪ ﻻ ﺛﻮﺍﺏ ﻟﻪ. ﻓﺈﻥ ﻗﺎﻝ : ﻛﻴﻒ ﺗﻨﻜﺮﻭﻥ ﺃﻥ ﺃﻗﻮﻝ : ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ ؟ ﻓﻨﻘﻮﻝ : ﻧﺤﻦ ﻻ ﻧﻨﻜﺮ ﻋﻠﻴﻚ ﺳﺒﺤﺎﻥ ﺍﻟﻠﻪ، ﺑﻞ ﻧﻨﻜﺮ ﻋﻠﻴﻚ ﺃﻥ ﺗﺄﺗﻲ ﺑﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﻫﺬﻩ ﺍﻟﺼﻔﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﻟﻢ ﺗﺮﺩ، ﺃﻣﺎ ﺃﻥ ﺗﺴﺒﺢ ﺁﻧﺎﺀ ﺍﻟﻠﻴﻞ ﻭﺃﻃﺮﺍﻑ ﺍﻟﻨﻬﺎﺭ ﺗﺴﺒﻴﺤﺎً ﻏﻴﺮ ﻣﻘﻴﺪ ﺑﺰﻣﻦ، ﻭﻻ ﻋﺪﺩ، ﻭﻻ ﻫﻴﺌﺔ ﻓﻼ ﻧﻨﻜﺮ ﻋﻠﻴﻚ.
“ ‘আলিমদের নিকটে নির্ধারিত
মূলনীতিসমূহের অন্তর্ভুক্ত হলো: যাবতীয় ‘ইবাদতের ক্ষেত্রে মূলনীতি হচ্ছে—মূলত তা নিষিদ্ধ
ও অবৈধ, যতক্ষণ না পর্যন্ত তা শরিয়তসম্মত হওয়ার দলিল পাওয়া যাচ্ছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
“কী! তাদের কি এমন শরিক আছে, যারা তাদের জন্য দ্বীনের বিধিবিধান দিয়েছে যার অনুমতি
আল্লাহ দেননি?” [সূরাহ শূরা: ২১] এই আয়াতে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ রয়েছে।
ঠিক এর বিপরীতে মানুষের যাবতীয়
আচার-আচরণ ও কাজকর্মের ক্ষেত্রে মূলনীতি হলো—তা মূলত বৈধ ও সিদ্ধ, যতক্ষণ না পর্যন্ত
তা নিষিদ্ধ হওয়ার দলিল প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। এই হাদীসটি ইবাদতের ক্ষেত্রে বর্ণিত হয়েছে।
[বি.দ্র.: এখানে ইমাম ‘উসাইমীন
(রাহিমাহুল্লাহ) আম্মিজান ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) কর্তৃক বর্ণিত হাদীসটির দিকে
ইঙ্গিত করেছেন। হাদীসটি হলো: আম্মিজান ‘আইশাহ (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহা) বলেন, রাসূলুল্লাহ
ﷺ বলেছেন, “যে ব্যক্তি আমাদের ধর্মীয় বিষয়ে এমন কিছু
উদ্ভাবন করে, যা তার অন্তর্ভুক্ত নয়, তা পরিত্যাজ্য।” (সাহীহ বুখারী, হা/২৬৯৭; সাহীহ
মুসলিম, হা/১৭১৮) অন্য বর্ণনায় এসেছে, “যে ব্যক্তি এমন কোনো কর্ম করল, যাতে আমাদের
(শার‘ঈ) নির্দেশনা নেই, তা প্রত্যাখ্যাত হবে।” (সাহীহ মুসলিম, হা/১৭১৮) – অনুবাদক।]
আর ইবাদত হলো সেই বিষয়, যা
সম্পাদন করার মাধ্যমে মানুষ আল্লাহ’র ইবাদত ও নৈকট্য লাভের আশা করে। সুতরাং যে ব্যক্তি
কোনো কিছুকে ইবাদত মনে করবে, আমরা তাকে বলব, ‘এটা ইবাদত হওয়ার ব্যাপারে দলিল পেশ করো,
নচেৎ তোমার কথা বাতিল গণ্য হবে।’ এই হাদীসটির ব্যাপারে চূড়ান্ত লিখনের প্রয়োজন আছে।
প্রথমত, অবশ্যই জানতে হবে
যে, এটা ইবাদত নাকি ‘আদত তথা প্রথা! উদাহরণস্বরূপ এক ব্যক্তি তার এক সঙ্গীকে বলল, যে
(সঙ্গী) ধ্বংস থেকে মুক্তি পেয়েছে: মাশাআল্লাহ, হানীআল্লাক্ (আল্লাহ যা চেয়েছেন, বিষয়টি
তোমার জন্য সুখকর হোক!)। তখন তাকে কোনো ব্যক্তি বলল, এটা বিদ‘আত। (আমরা বলি,) এই কথাটি
বিশুদ্ধ নয়। কেননা এটা (মানুষের) প্রথাগত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত, ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত
নয়। শরিয়তে এই বিষয়ের সাক্ষ্য দেয় নিম্নোক্ত হাদীসটি। দীর্ঘ হাদীসের মধ্যে এসেছে, আল্লাহ
তা‘আলা কা‘ব বিন মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু)’র তওবা কবুল করলে সাহাবীগণ তাঁকে মুবারকবাদ
জানিয়েছিলেন।
আর লোকদের মধ্যে অনেক সম্ভাষণ
(মুবারকবাদ) চালু আছে, দলিল ছাড়া যেসবকে কেউ বিদ‘আত মনে করেন না। কেননা এটি প্রথাগত
বিষয়, ইবাদতমূলক বিষয় নয়। যেমন কোনো লোক এমন একজন ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করল, যে পরীক্ষায়
পাস করেছে। সাক্ষাতে ওই ব্যক্তিকে বলল, মুবারাক (বিষয়টি বরকতময় হোক)। এখন যে ব্যক্তি
বলবে, এটি বিদ‘আত, সে কখনোই সত্যবাদী নয়। যখন কোনো বিষয় দোদুল্যমান হবে যে, এটা ইবাদত
না আদত (প্রথা), তখন মূলনীতি হলো--সেটা আদত বা প্রথা বলে গণ্য হবে। আর এ থেকে নিষেধও
করা হবে না, যতক্ষণ না পর্যন্ত দলিল প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে যে, এটা ইবাদত।
অনেক বিষয় আছে, যেসব বিষয়কে
লোকেরা আল্লাহ’র দ্বীনের মধ্যে নতুন উদ্ভাবন করেছে। যেমন আকৃতি, সংখ্যা ও সময়ের সাথে
নির্দিষ্ট করে নানাবিধ জিকির উদ্ভাবন করা। অথচ সেগুলো এইভাবে শরিয়তে বিধিবদ্ধ হয়নি।
না হয়েছে এই সময়ে ও সংখ্যায়, আর না এই আকৃতিতে। যেমন: কোনো ব্যক্তি একশ বার তাসবীহ
পড়ে এবং সে এটা প্রতিদিন সকালে করে থাকে। এই আমল হলো বিদ‘আত, এটা প্রত্যাখ্যাত বাতিল
আমল; এই আমলকারীর জন্য কোনো সওয়াব নেই।
যদি কেউ বলে, কীভাবে তোমরা
আমার ‘সুবহানাল্লাহ’ বলাকে প্রত্যাখ্যান করছ? তাহলে আমরা বলব, আমরা তোমাকে ‘সুবহানাল্লাহ’
বলার জন্য প্রত্যাখ্যান করিনি। বরং তুমি যে এই ‘সুবহানাল্লাহ’ বলাকে এমন বৈশিষ্ট্যের
সাথে নির্দিষ্ট করছ, যা শরিয়তে বর্ণিত হয়নি, আমরা সেই নির্দিষ্ট করার কারণে তোমাকে
প্রত্যাখ্যান করছি। পক্ষান্তরে তুমি যদি দিন ও রাতের যে কোনো সময় কোনো সংখ্যা, সময়
ও আকৃতির সাথে নির্দিষ্ট না করে সাধারণভাবে তাসবীহ পড়ো, তবে কখনোই আমরা তোমাকে প্রত্যাখ্যান
করব না।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড:
৫; পৃষ্ঠা: ২৫৯-৬১; দারুল ওয়াত্বান, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪০৭ হিজরী (১ম প্রকাশ)]
আমরা বুঝতে পারলাম, ইবাদত
নয় এমন যাবতীয় দেশাচার ও লোকজ প্রথাসমূহ মূলত হালাল বা বৈধ, যতক্ষণ না এ ব্যাপারে হারাম
হওয়ার দলিল পাওয়া যাচ্ছে। হারাম হওয়ার দলিল পাওয়া গেলেই ওই আচার বা প্রথা হারাম বলে
গণ্য হবে। নতুবা দলিল না পাওয়ার কারণে তা হালাল বলেই বিবেচিত হবে। এখন আমরা জানব যে,
ঈদী মুবারকবাদের জন্য বিভিন্ন সম্ভাষণ ও অভিবাদন জ্ঞাপন করা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত না
কি দেশীয় আচার ও প্রথাসমূহের অন্তর্ভুক্ত?!
ঈদে মুবারকবাদ জানানো কোনো ইবাদত নয়:
ঈদে একে অপরকে
মুবারকবাদ জানানো এবং পরস্পরকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করা কোন ইবাদতমূলক বিষয় নয়। এটি দেশীয়
বা আঞ্চলিক আচার ও প্রথার অন্তর্গত একটি বিষয়। মুসলিম সমাজে এটি সামাজিক শিষ্টাচার
ও লোকজ প্রথা হিসেবেই গণ্য হয়ে থাকে। এ ব্যাপারে ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)
বলেছেন,
ﺍﻟﺘﻬﻨﺌﺔ ﺑﺎﻟﻌﻴﺪ ﻗﺪ ﻭﻗﻌﺖ ﻣﻦ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﺭﺿﻲ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻨﻬﻢ، ﻭﻋﻠﻰ ﻓﺮﺽ ﺃﻧﻬﺎ ﻟﻢ ﺗﻘﻊ ﻓﺈﻧﻬﺎ ﺍﻻﻥ ﻣﻦ ﺍﻷﻣﻮﺭ ﺍﻟﻌﺎﺩﻳﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﺍﻋﺘﺎﺩﻫﺎ ﺍﻟﻨﺎﺱ، ﻳﻬﻨﻰﺀ ﺑﻌﻀﻬﻢ ﺑﻌﻀﺎً ﺑﺒﻠﻮﻍ ﺍﻟﻌﻴﺪ ﻭﺍﺳﺘﻜﻤﺎﻝ ﺍﻟﺼﻮﻡ ﻭﺍﻟﻘﻴﺎﻡ.
“কতিপয় সাহাবী ঈদের মুবারকবাদ
জানিয়েছেন। যদি এটাও বলা হয় যে, সাহাবীগণ এই কাজ করেননি, তবুও বর্তমানে এটা দেশাচারমূলক
তথা প্রথাগত বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে, যেটাকে লোকেরা প্রথাগত বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছে। তারা
ঈদে উপনীত হওয়ার জন্য এবং (রমজানের) রোজা ও রাতের নামাজ সম্পন্ন করতে পারার জন্য একে
অপরকে মুবারকবাদ জানায়।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া
রাসাইল; খণ্ড: ১৬; পৃষ্ঠা: ২০৮; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত; ১৪২৩ হি./২০০২
খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
ইয়ামানের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস
ইমাম মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) কে ঈদের মধ্যে মুবারকবাদ বা সম্ভাষণ
জানানো ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত না বিভিন্ন দেশাচারমূলক লোকজ প্রথার অন্তর্ভুক্ত, তা জিজ্ঞেস
করা হলে তিনি বলেন,
إن تكن من باب العبادات فهي تعتبر بدعة ، لكن الذي يظهر أنّها من باب العادات ، وعلى كلّ فخير الهدي هدي محمد – صلّى الله عليه وعلى آله وسلّم- فنحن ننصح بترك هذا ، لأنّه لم يرد عن النّبيّ – صلّى الله عليه وعلى آله وسلّم- وعن أكثر أصحابه ، وهم كانوا ويقدر بعضهم بعضا ويجل بعضهم بعضاً والله المستعان، بارك الله فيكم.
من شريط : (دفع المحن بأجوبة أسئلة نساء عدن).
“এটা যদি ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত
হত, তবে তা বিদ‘আত বলে গণ্য হত। কিন্তু এটা সুুস্পষ্ট যে, এই মুবারকবাদ জানানোর বিষয়টি
প্রথাগত বিষয়সমূহের অন্তর্ভুক্ত। আর সর্বোপরি শ্রেষ্ঠ আদর্শ হলো মুহাম্মাদ ﷺ এর আদর্শ। সুতরাং আমরা নসিহত করব এগুলো পরিত্যাগ করার। কেননা বিষয়টি নাবী ﷺ এবং তাঁর অধিকাংশ সাহাবী থেকে প্রমাণিত হয়নি যে, তাঁরা (ঈদে) একে অপরকে মর্যাদা
ও সম্মান জানিয়ে অভিবাদন করতেন। আর আল্লাহই সাহায্যকারী। আল্লাহ তোমাদের মধ্যে বরকত
দান করুন।”
[“দাফ‘উল মিহান বি আজবিবাতি
আস্ইলাতি নিসাই ‘আদন”- শীর্ষক অডিয়ো ক্লিপ থেকে; গৃহীত: http://muqbel.net/
আমাদের কাছে স্পষ্ট হয়ে গেল
যে, ঈদে একে অপরকে মুবারকবাদ বা সম্ভাষণ জানানো ইবাদত নয়, বরং তা দেশীয় আচার ও প্রথার
অন্তর্ভূক্ত। এখন আমরা জানব, ‘ঈদ মুবারক’ বলার ব্যাপারে ব্যাপারে উম্মাহ’র মুকুটতুল্য
বিশ্ববরেণ্য ‘আলিমগণের প্রজ্ঞাপূর্ণ মতামত (ফাতাওয়া)।
·
‘আলিমদের বক্তব্য:
ঈদের মধ্যে একে অপরকে মুবারকবাদ
জানানো ও পরস্পরের মধ্যে শুভেচ্ছা বিনিময় করায় কোনো দোষ নেই। যেমন: তাক্বাব্বালাল্লাহু
মিন্না ওয়া মিনকুম (আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের নিকট থেকে এই ইবাদত কবুল করুন), ঈদ মুবারক
(আমাদের ঈদ বরকতময় হোক) ইত্যাদি দু‘আমূলক বাক্য বলে এক অপরের সাথে সাক্ষাৎ করা এবং
পরস্পরকে অভিবাদন জানানো বৈধ। এমনটিই বলেছেন এই উম্মাহ’র সুযোগ্য ‘উলামায়ে কিরাম—ইমাম
ইবনু তাইমিয়াহ, ইমাম ‘আব্দুর রহমান বিন নাসির আস-সা‘দী, ইমাম ইবনু বায, ইমাম ইবনু
‘উসাইমীন, ইমাম মুক্ববিল বিন হাদী প্রমুখ (রাহিমাহুমুল্লাহু আজমা‘ঈন)। এ বিষয়ে তাঁদের
বক্তব্য নিম্নে উল্লিখিত হলো।
·
১ম বক্তব্য:
হিজরী ৮ম শতাব্দীর মুজাদ্দিদ
শাইখুল ইসলাম ইমাম তাক্বিউদ্দীন আবুল ‘আব্বাস আহমাদ বিন ‘আব্দুল হালীম বিন তাইমিয়্যাহ
আল-হার্রানী আল-হাম্বালী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ৭২৮ হি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: ﻫَﻞْ ﺍﻟﺘَّﻬْﻨِﺌَﺔُ ﻓِﻲ ﺍﻟْﻌِﻴﺪِ ﻭَﻣَﺎ ﻳَﺠْﺮِﻱ ﻋَﻠَﻰ ﺃَﻟْﺴِﻨَﺔِ ﺍﻟﻨَّﺎﺱِ : ”ﻋِﻴﺪُﻙ ﻣُﺒَﺎﺭَﻙٌ“ ﻭَﻣَﺎ ﺃَﺷْﺒَﻬَﻪُ , ﻫَﻞْ ﻟَﻪُ ﺃَﺻْﻞٌ ﻓِﻲ ﺍﻟﺸَّﺮِﻳﻌَﺔِ ﺃَﻡْ ﻻ؟ ﻭَﺇِﺫَﺍ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻪُ ﺃَﺻْﻞٌ ﻓِﻲ ﺍﻟﺸَّﺮِﻳﻌَﺔِ , ﻓَﻤَﺎ ﺍﻟَّﺬِﻱ ﻳُﻘَﺎﻝُ؟
الجواب : ﺃَﻣَّﺎ ﺍﻟﺘَّﻬْﻨِﺌَﺔُ ﻳَﻮْﻡَ ﺍﻟْﻌِﻴﺪِ ﻳَﻘُﻮﻝُ ﺑَﻌْﻀُﻬُﻢْ ﻟِﺒَﻌْﺾٍ ﺇﺫَﺍ ﻟَﻘِﻴَﻪُ ﺑَﻌْﺪَ ﺻَﻼﺓِ ﺍﻟْﻌِﻴﺪِ : ﺗَﻘَﺒَّﻞَ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻣِﻨَّﺎ ﻭَﻣِﻨْﻜُﻢْ، ﻭَﺃَﺣَﺎﻟَﻪُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻚ، ﻭَﻧَﺤْﻮُ ﺫَﻟِﻚَ، ﻓَﻬَﺬَﺍ ﻗَﺪْ ﺭُﻭِﻱَ ﻋَﻦْ ﻃَﺎﺋِﻔَﺔٍ ﻣِﻦْ ﺍﻟﺼَّﺤَﺎﺑَﺔِ ﺃَﻧَّﻬُﻢْ ﻛَﺎﻧُﻮﺍ ﻳَﻔْﻌَﻠُﻮﻧَﻪُ ﻭَﺭَﺧَّﺺَ ﻓِﻴﻪِ ﺍﻷَﺋِﻤَّﺔُ، ﻛَﺄَﺣْﻤَﺪَ ﻭَﻏَﻴْﺮِﻩِ. ﻟَﻜِﻦْ ﻗَﺎﻝَ ﺃَﺣْﻤَﺪُ : ﺃَﻧَﺎ ﻻ ﺃَﺑْﺘَﺪِﺉُ ﺃَﺣَﺪًﺍ، ﻓَﺈِﻥْ ﺍﺑْﺘَﺪَﺃَﻧِﻲ ﺃَﺣَﺪٌ ﺃَﺟَﺒْﺘﻪ، ﻭَﺫَﻟِﻚَ ﻷَﻥَّ ﺟَﻮَﺍﺏَ ﺍﻟﺘَّﺤِﻴَّﺔِ ﻭَﺍﺟِﺐٌ، ﻭَﺃَﻣَّﺎ ﺍﻻﺑْﺘِﺪَﺍﺀُ ﺑِﺎﻟﺘَّﻬْﻨِﺌَﺔِ ﻓَﻠَﻴْﺲَ ﺳُﻨَّﺔً ﻣَﺄْﻣُﻮﺭًﺍ ﺑِﻬَﺎ، ﻭَﻻ ﻫُﻮَ ﺃَﻳْﻀًﺎ ﻣَﺎ ﻧُﻬِﻲَ ﻋَﻨْﻪُ، ﻓَﻤَﻦْ ﻓَﻌَﻠَﻪُ ﻓَﻠَﻪُ ﻗُﺪْﻭَﺓٌ، ﻭَﻣَﻦْ ﺗَﺮَﻛَﻪُ ﻓَﻠَﻪُ ﻗُﺪْﻭَﺓٌ. ﻭَﺍَﻟﻠَّﻪُ ﺃَﻋْﻠَﻢُ.
প্রশ্ন: “ঈদের মধ্যে মুবারকবাদ
জানানো এবং লোকমুখে প্রচলিত (সম্ভাষণ) ‘ঈদুকুম মুবারাক (তোমাদের ঈদ বরকতময় হোক)’ ও
অনুরূপ সম্ভাষণসমূহের ভিত্তি কি শরিয়তে আছে, না কি নেই? আর শরিয়তে যদি এর কোনো ভিত্তি
থাকে তবে (মুবারকবাদ জানাতে) কী বলতে হবে?”
উত্তর: “ঈদের দিন মুবারকবাদ
জানানোর জন্য ঈদের নামাজের পর লোকেরা একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ হলে বলবে—‘তাক্বাব্বালাল্লাহু
মিন্না ওয়া মিনকুম (আল্লাহ আমাদের এবং তোমাদের পক্ষ থেকে এই ইবাদত ক্ববূল করুন)’,
‘আহালাহুল্লাহু ‘আলাইকা (আরও ঈদ দেখার জন্য আল্লাহ তোমাকে বাঁচিয়ে রাখুন)’ এবং অনুরূপ
ভালো সম্ভাষণ। এটা একদল সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তাঁরা এরূপ করতেন এবং ইমামগণ
এটা অনুমোদনও করেছে; যেমন: ইমাম আহমাদ ও অন্যান্য ইমামগণ। কিন্তু ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ)
বলেছেন, আমি প্রথমে কাউকে এই সম্ভাষণ জানাব না। তবে কেউ যদি আমাকে এই মুবারকবাদ বা
সম্ভাষণ জানায়, তাহলে আমি তার জবাব দিব। এটা এ কারণে যে, অভিবাদনের জবাব দেওয়া ওয়াজিব।
কিন্তু প্রথমেই কাউকে মুবারকবাদ জানানো সুন্নাহ নয়, যে সুন্নাহ’র ব্যাপারে আদেশ করা
হয়েছে। আর এটা নিষিদ্ধ বিষয়ও নয়। সুতরাং যে এটা করে, তারও দৃষ্টান্ত আছে; আর যে এটা
পরিত্যাগ করে, তারও দৃষ্টান্ত আছে।” [ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রাহিমাহুল্লাহ), মাজমূ‘উ
ফাতাওয়া; খণ্ড: ২৪; পৃষ্ঠা: ২৫৩; বাদশাহ ফাহাদ প্রিন্টিং প্রেস, মাদীনাহ ছাপা; সন:
১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি.]
·
২য় বক্তব্য:
সৌদি আরবের প্রথিতযশা মুফাসসির,
মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম ‘আব্দুর রহমান বিন নাসির আস-সা‘দী
(রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৩৭৬ হি./১৯৫৬ খ্রি.] বলেছেন,
ﻫﺬﻩ ﺍﻟﻤﺴﺎﺋﻞ ﻭﻣﺎ ﺃﺷﺒﻬﻬﺎ ﻣﺒﻨﻴﺔ ﻋﻠﻰ ﺃﺻﻞ ﻋﻈﻴﻢ ﻧﺎﻓﻊ، ﻭﻫﻮ ﺃﻥ ﺍﻷﺻﻞ ﻓﻲ ﺟﻤﻴﻊ ﺍﻟﻌﺎﺩﺍﺕ ﺍﻟﻘﻮﻟﻴﺔ ﻭﺍﻟﻔﻌﻠﻴﺔ ﺍﻹﺑﺎﺣﺔ ﻭﺍﻟﺠﻮﺍﺯ، ﻓﻼ ﻳﺤﺮﻡ ﻣﻨﻬﺎ ﻭﻻ ﻳﻜﺮﻩ ﺇﻻ ﻣﺎ ﻧﻬﻰ ﻋﻨﻪ ﺍﻟﺸﺎﺭﻉ، ﺃﻭ ﺗﻀﻤﻦ ﻣﻔﺴﺪﺓ ﺷﺮﻋﻴﺔ، ﻭﻫﺬﺍ ﺍﻷﺻﻞ ﺍﻟﻜﺒﻴﺮ ﻗﺪ ﺩﻝ ﻋﻠﻴﻪ ﺍﻟﻜﺘﺎﺏ ﻭﺍﻟﺴﻨﺔ ﻓﻲ ﻣﻮﺍﺿﻊ،
... ﻓﺈﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻟﻢ ﻳﻘﺼﺪﻭﺍ ﺍﻟﺘﻌﺒﺪ ﺑﻬﺎ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﻫﻲ ﻋﻮﺍﺋﺪ ﻭﺧﻄﺎﺑﺎﺕ ﻭﺟﻮﺍﺑﺎﺕ ﺟﺮﺕ ﺑﻴﻨﻬﻢ ﻓﻲ ﻣﻨﺎﺳﺒﺎﺕ ﻻ ﻣﺤﺬﻭﺭ ﻓﻴﻬﺎ، ﺑﻞ ﻓﻴﻬﺎ ﻣﺼﻠﺤﺔ ﺩﻋﺎﺀ ﺍﻟﻤﺆﻣﻨﻴﻦ ﺑﻌﻀﻬﻢ ﻟﺒﻌﺾ ﺑﺪﻋﺎﺀ ﻣﻨﺎﺳﺐ، ﻭﺗﺂﻟﻒ ﺍﻟﻘﻠﻮﺏ ﻛﻤﺎ ﻫﻮ ﻣﺸﺎﻫﺪ.
“বিভিন্ন উপযুক্ত শুভক্ষণে
মুবারকবাদ জানানো শরিয়তের একটি ফলপ্রসূ মহান মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত। কারণ
যাবতীয় দেশাচার ও প্রথাগত কথা এবং কাজের মৌলিক মান হচ্ছে বৈধতা। অতএব কোনো আচার বা
প্রথাকে হারাম বলা যাবে না; যতক্ষণ না ওই প্রথা বা আচারকে শরিয়ত নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে,
অথবা তাতে কোনো বিঘ্ন বা ক্ষতি প্রকাশিত হয়েছে। এই মহান মৌলনীতির স্বপক্ষে কিতাব ও
সুন্নাহ’র সমর্থনও রয়েছে।
লোকেরা এই মুবারকবাদকে কোনো
ইবাদত বলে মনে করে না। বরং এটাকে একটা প্রচলিত রীতি ও প্রথা মনে করে। বিভিন্ন শুভক্ষণে
তারা খুশির সাথে একে অপরকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে থাকে, আর তাতে কোনো বাধা বা বিঘ্নও
নেই। বরং তাতে উপকারই আছে। যেমন মুসলিমরা এক অপরকে এর মাধ্যমে উপযোগী দু‘আ দিয়ে থাকে
এবং তাতে আপোষে সৌহার্দ্য, ভালোবাসা ও সম্প্রীতি সঞ্চার হয়ে থাকে।” [ইমাম আস-সা‘দী
(রাহিমাহুল্লাহ), আল-মাজমূ‘আতুল কামিলাহ লি মুআল্লাফাতিশ শাইখ ‘আব্দির রহমান ইবনি নাসির
আস-সা‘দী রাহিমাহুল্লাহ (ফাতাওয়া অংশ; ফাতাওয়া সা‘দিয়াহ); পৃষ্ঠা: ৩৪৮; মারকাযু সালিহ
বিন সালিহ আস-সাক্বাফী, ‘উনাইযাহ (সৌদি আরব) কর্তৃক প্রকাশিত; সন: ১৪১১ হি./১৯৯০ খ্রি.]
·
৩য় বক্তব্য:
সৌদি আরবের সাবেক গ্র্যান্ড
মুফতী যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ ও মুহাদ্দিস শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ
বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
س: ﻣﺎ ﺻﻴﻐﺔ ﺗﻬﺎﻧﻲ ﻋﻴﺪ ﺍﻷﺿﺤﻰ ﺍﻟﻤﺒﺎﺭﻙ، ﻭﻗﺪ ﻋﺮﻓﻨﺎ ﺃﻧﻪ ﻓﻲ ﻋﻴﺪ ﺍﻟﻔﻄﺮ ﻳﻘﻮﻝ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻟﺒﻌﻀﻬﻢ : ﺗﻘﺒﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻨﺎ ﻭﻣﻨﻜﻢ ﺻﺎﻟﺢ ﺍﻷﻋﻤﺎﻝ، ﻓﻤﺎﺫﺍ ﻧﻘﻮﻝ ﻓﻲ ﻋﻴﺪ ﺍﻷﺿﺤﻰ؟
ج: ﻟﻴﺲ ﻟﻬﺬﺍ ﺻﻴﻐﺔ ﻣﻌﺮﻭﻓﺔ، ﻓﺈﺫﺍ ﺩﻋﺎ ﻟﻪ ﻗﺎﻝ : ﺗﻘﺒﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻨﺎ ﻭﻣﻨﻚ، ﺃﻭ ﻋﻴﺪﻛﻢ ﻣﺒﺎﺭﻙ، ﺃﻭ ﺍﻟﻌﻴﺪ ﻣﺒﺎﺭﻙ، ﺃﻭ ﺟﻌﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻴﺪﻛﻢ ﻣﺒﺎﺭﻙ، ﺳﻮﺍﺀ ﻛﺎﻥ ﻋﻴﺪ ﺍﻷﺿﺤﻰ، ﺃﻭ ﻋﻴﺪ ﺍﻟﻔﻄﺮ، ﻛﻠﻪ ﻭﺍﺣﺪ، ﻭﻫﻜﺬﺍ ﻓﻲ ﺍﻟﺤﺞ، ﺣﺠﻚ ﻣﻘﺒﻮﻝ، ﺗﻘﺒﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻨﻚ، ﻋﻤﺮﺓ ﻣﻘﺒﻮﻟﺔ ﺗﻘﺒﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻨﻚ، ﻛﻞ ﻫﺬﺍ ﻭﺃﺷﺒﺎﻫﻪ ﻛﺎﻓﻲ؛ ﻷﻧﻪ ﻟﻴﺲ ﻟﻪ ﺻﻴﻐﺔ ﻣﻌﺮﻭﻓﺔ، ﺃﻣﺎ ﺃﻋﻴﺎﺩ ﺍﻟﻤﺸﺮﻛﻴﻦ، ﻭﺍﻟﻨﺼﺎﺭﻯ ﻓﻼ ﻳﺠﻮﺯ ﺗﻬﻨﺌﺘﻬﻢ ﺑﻬﺎ، ﻭﻻ ﻣﺸﺎﺭﻛﺘﻬﻢ ﺑﻬﺎ، ﻓﺈﺫﺍ ﻛﻨﺖ ﻓﻲ ﻣﺤﻞ ﻓﻲ ﻋﻴﺪ ﻟﻠﻜﻔﺎﺭ، ﻧﺼﺎﺭﻯ، ﺃﻭ ﻏﻴﺮﻫﻢ، ﻓﻠﻴﺲ ﻟﻚ ﺃﻥ ﺗﻬﻨﺌﻬﻢ ﻓﻴﻪ، ﻭﻻ ﺃﻥ ﺗﺸﺎﺭﻛﻬﻢ ﻓﻴﻪ ﻭﻻ ﺃﻥ ﺗﺤﻀﺮﻫﻢ، ﻟﻤﺎ ﻓﻴﻪ ﻣﻦ ﺍﻟﺘﺸﺒﻪ ﺑﻬﻢ، ﻭﻟﻤﺎ ﻓﻴﻪ ﻣﻦ ﺇﻇﻬﺎﺭ ﺍﻟﺮﺿﺎ ﺑﻌﻴﺪﻫﻢ ﺍﻟﺒﺎﻃﻞ، ﻓﻠﻴﺲ ﻟﻠﻤﺴﻠﻤﻴﻦ ﺇﻻ ﻋﻴﺪﺍﻥ، ﻋﻴﺪ ﺍﻟﻨﺤﺮ ﻭﻋﻴﺪ ﺍﻟﻔﻄﺮ، ﻭﺗﺴﻤﻰ ﺃﻳﺎﻡ ﺍﻟﺤﺞ ﻋﻴﺪﺍً، ﻳﻮﻡ ﻋﺮﻓﺔ، ﻭﺃﻳﺎﻡ ﺍﻟﺘﺸﺮﻳﻖ ﺗﺴﻤﻰ ﻋﻴﺪﺍً ﻟﻠﻤﺴﻠﻤﻴﻦ، ﻷﻧﻬﺎ ﺗﺘﻜﺮﺭ ﺑﻴﻨﻬﻢ، ﻭﻳﻌﺒﺪﻭﻥ ﺍﻟﻠﻪ ﻓﻴﻬﺎ، ﺃﻣﺎ ﺃﻋﻴﺎﺩ ﺍﻟﻤﺸﺮﻛﻴﻦ ﻣﻦ ﺍﻟﻨﺼﺎﺭﻯ ﻭﻏﻴﺮﻫﻢ ﻓﻼ ﻳﺠﻮﺯ ﺣﻀﻮﺭﻫﺎ ﻭﻻ ﺍﻟﺘﻬﻨﺌﺔ ﺑﻬﺎ، ﻭﻻ ﺑﻴﻊ ﺍﻟﺒﻄﺎﻗﺎﺕ ﺑﻬﺎ، ﻛﻞ ﻫﺬﺍ ﻣﻨﻜﺮ ﻻ ﻳﺠﻮﺯ، ﻧﺴﺄﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﻟﻠﺠﻤﻴﻊ ﺍﻟﻬﺪﺍﻳﺔ ﻭﺍﻟﺘﻮﻓﻴﻖ.
প্রশ্ন: “বরকমতময় ঈদুল আজহায়
মুবারকবাদ জানানোর শব্দ কী? আমরা অবহিত হয়েছি যে, ঈদুল ফিতরে লোকেরা একে অপরকে বলে,
তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম স্বলিহাল আ‘মাল (আল্লাহ আমাদের এবং তোমাদের নিকট
থেকে ভালো আমলসমূহ কবুল করুন)। তো ঈদুল আজহায় আমরা কী বলব?”
উত্তর: “এই মুবারকবাদ জানানোর
জন্য নির্দিষ্ট সীগাহ (শব্দ বা বাক্য) নেই। সুতরাং যখন কেউ তার ভাইকে সম্ভাষণ জানাবে
তখন বলবে, ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকা (আল্লাহ আমাদের এবং তোমার পক্ষ থেকে
কবুল করুন)’, অথবা ‘ঈদুকুম মুবারাক (তোমাদের ঈদ বরকতময় হোক)’ অথবা ‘জা‘আলাল্লাহু ঈদাকুম
মুবারাকা (আল্লাহ তোমাদের ঈদ বরকতময় করুন)’। হোক তা ঈদুল ফিতর বা ঈদুল আজহা, সব ক্ষেত্রে
একই বিধান। একইভাবে হজের ক্ষেত্রে বলবে—‘হাজ্জুকা মাক্ববূল, তাক্বাব্বালাল্লাহু মিনকা
(তোমার হজ আল্লাহ কবুল করুন)’ এবং ‘উমরাতুম মাক্ববূলাহ, তাক্বাব্বালাল্লাহু মিনকা
(তোমার ওমরা আল্লাহ কবুল করুন)’। এই সবগুলো সম্ভাষণ এবং এ জাতীয় অন্যান্য (ভিন্ন শব্দের)
সম্ভাষণ যথেষ্ট। কেননা এর জন্য নির্দিষ্ট কোনো শব্দ নেই।
পক্ষান্তরে মুশরিক ও খ্রিষ্টানদের
ঈদ তথা উৎসবে তাদেরকে মুবারকবাদ জানানো এবং তাতে অংশগ্রহণ করা জায়েজ নয়। অতএব, তুমি
যদি কাফির, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য বিধর্মীদের ঈদ তথা উৎসব হচ্ছে এমন স্থানে অবস্থান
করো, তাহলে তাদেরকে ওই উৎসবে মুবারকবাদ জানানো, তাদেরকে সহযোগিতা করা এবং তাদের উৎসবে
উপস্থিত হওয়া—এর কোনোটাই তোমার জন্য বৈধ হবে না। কেননা এতে তাদের সাথে সাদৃশ্য স্থাপন
করা হয় এবং তাদের বাতিল উৎসবে তাদের প্রতি সন্তুষ্টি প্রকাশ করা হয়।
মুসলিমদের কেবলমাত্র দুটি
ঈদ রয়েছে। যথা: ‘ঈদুন নাহর তথা কুরবানীর ঈদ এবং ‘ঈদুল ফিতর তথা রোজা ছাড়ার ঈদ। হজের
দিনগুলোকেও ‘ঈদ বলা হয়। ‘আরাফাহর দিন ও তাশরীক্বের দিনগুলোকেও মুসলিমদের জন্য ঈদ বলা
হয়। কেননা এই দিনগুলোও বারবার ফিরে আসে এবং এই দিনগুলোতে তারা আল্লাহ’র ইবাদত করে।
পক্ষান্তরে মুশরিক, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য বিধর্মীদের ঈদ তথা উৎসবে উপস্থিত হওয়া, তাদেরকে
মুবারকবাদ জানানো এবং এ উপলক্ষে বিভিন্ন কার্ড ক্রয় করা না-জায়েজ। প্রত্যেকটিই নিকৃষ্ট
না-জায়েজ কাজ। আমরা সবার জন্য হেদায়াত এবং (এ জাতীয় নিকৃষ্ট কাজ থেকে বেঁচে থাকার)
তাওফীক্ব কামনা করছি।” [দ্র.: https://youtu.be/
·
৪র্থ বক্তব্য:
বিগত শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মুফাসসির,
মুহাদ্দিস, ফাক্বীহ ও উসূলবিদ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন
(রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: ﻣﺎ ﺣﻜﻢ ﺍﻟﺘﻬﻨﺌﺔ ﺑﺎﻟﻌﻴﺪ؟ ﻭﻫﻞ ﻟﻬﺎ ﺻﻴﻐﺔ ﻣﻴﻌﻨﺔ؟
الجواب: ﺍﻟﺘﻬﻨﺌﺔ ﺑﺎﻟﻌﻴﺪ ﺟﺎﺋﺰﺓ، ﻭﻟﻴﺲ ﻟﻬﺎ ﺗﻬﻨﺌﺔ ﻣﺨﺼﻮﺻﺔ، ﺑﻞ ﻣﺎ ﺍﻋﺘﺎﺩﻩ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻓﻬﻮ ﺟﺎﺋﺰ ﻣﺎ ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﺇﺛﻤﺎً.
প্রশ্ন: “ঈদে মুবারকবাদ জানানোর
বিধান কী? আর এর জন্য কি কোনো নির্দিষ্ট শব্দ আছে?”
উত্তর: “ঈদে মুবারকবাদ জানানো
জায়েজ। এর জন্য নির্দিষ্ট শব্দের মুবারকবাদ বা অভিবাদন নেই। বরং লোকেরা যা প্রথাগত
বিষয় হিসেবে গ্রহণ করেছে, তা জায়েজ। যতক্ষণ না পর্যন্ত প্রমাণিত হচ্ছে যে, তা একটি
পাপ কাজ (ততক্ষণ পর্যন্ত তা জায়েজ)।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রহিমাহুল্লাহ্), মাজমূ‘উ
ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল; খণ্ড: ১৬; পৃষ্ঠা: ২১০; দারুস সুরাইয়্যা, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত;
সন: ১৪২৩ হি./২০০২ খ্রি. (১ম প্রকাশ)]
·
৫ম বক্তব্য:
ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)
প্রদত্ত আরেকটি ফাতওয়া—
السؤال: ﻣﺎ ﺣﻜﻢ ﺍﻟﻤﺼﺎﻓﺤﺔ، ﻭﺍﻟﻤﻌﺎﻧﻘﺔ ﻭﺍﻟﺘﻬﻨﺌﺔ ﺑﻌﺪ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻌﻴﺪ؟
الجواب: ﻫﺬﻩ ﺍﻷﺷﻴﺎﺀ ﻻ ﺑﺄﺱ ﺑﻬﺎ؛ ﻷﻥ ﺍﻟﻨﺎﺱ ﻻ ﻳﺘﺨﺬﻭﻧﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﺘﻌﺒﺪ ﻭﺍﻟﺘﻘﺮﺏ ﺇﻟﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﺰ ﻭﺟﻞ، ﻭﺇﻧﻤﺎ ﻳﺘﺨﺬﻭﻧﻬﺎ ﻋﻠﻰ ﺳﺒﻴﻞ ﺍﻟﻌﺎﺩﺓ، ﻭﺍﻹﻛﺮﺍﻡ ﻭﺍﻻﺣﺘﺮﺍﻡ، ﻭﻣﺎﺩﺍﻣﺖ ﻋﺎﺩﺓ ﻟﻢ ﻳﺮﺩ ﺍﻟﺸﺮﻉ ﺑﺎﻟﻨﻬﻲ ﻋﻨﻬﺎ ﻓﺈﻥ ﺍﻷﺻﻞ ﻓﻴﻬﺎ ﺍﻹﺑﺎﺣﺔ ﻛﻤﺎ ﻗﻴﻞ : ﻭﺍﻷﺻﻞ ﻓﻲ ﺍﻷﺷﻴﺎﺀ ﺣﻞ، ﻭﻣﻨﻊ ﻋﺒﺎﺩﺓ ﺇﻻ ﺑﺈﺫﻥ ﺍﻟﺸﺎﺭﻉ.
প্রশ্ন: “ঈদের নামাজের পর
করমর্দন, কোলাকুলি এবং মুবারকবাদ জানানোর বিধান কী?”
উত্তর: “এগুলো করায় কোনো
সমস্যা নেই। কেননা লোকেরা এগুলো ইবাদত বা আল্লাহ’র নৈকট্য অর্জনের জন্য করে না। বরং
তারা এগুলো দেশাচারমূলক প্রথা হিসেবে করে এবং একে অপরকে সম্মান ও মর্যাদা প্রদানের
জন্য করে। যতক্ষণ পর্যন্ত কোনো আচার বা প্রথার ব্যাপারে শরিয়তের নিষেধাজ্ঞা সাব্যস্ত
হচ্ছে না, ততক্ষণ পর্যন্ত তার মৌলিক মান হলো বৈধতা। যেমন বলা হয়—‘সকল (প্রথাগত) বিষয়ের
মৌলিক মান হলো বৈধতা, আর শরিয়তপ্রণেতার অনুমতি ছাড়া সকল ইবাদতের মৌলিক মান হলো নিষিদ্ধতা’।”
[প্রাগুক্ত; খণ্ড: ১৬; পৃষ্ঠা: ২০৯]
·
৬ষ্ঠ বক্তব্য:
ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ)
অন্যত্র সুস্পষ্টভাবে বলেছেন,
ﻻ ﺑﺄﺱ ﺃﻥ ﻳﻘﻮﻝ ﻟﻐﻴﺮﻩ : ﺗﻘﺒّﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﻣﻨّﺎ ﻭﻣﻨﻚ، ﺃﻭ ﻋﻴﺪ ﻣﺒﺎﺭﻙ، ﺃﻭ ﺗﻘﺒّﻞ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻴﺎﻣﻚ ﻭﻗﻴﺎﻣﻚ، ﺃﻭ ﻣﺎ ﺃﺷﺒﻪ ﺫﻟﻚ؛ ﻷﻥ ﻫﺬﺍ ﻭﺭﺩ ﻣﻦ ﻓﻌﻞ ﺑﻌﺾ ﺍﻟﺼﺤﺎﺑﺔ ﻭﻟﻴﺲ ﻓﻴﻪ ﻣﺤﺬﻭﺭ.
“কোনো (মু’মিন) ব্যক্তি কর্তৃক
অন্যকে (মু’মিনকে) ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম (আল্লাহ্ আমাদের ও তোমাদের
জন্য এই ইবাদত কবুল করুন)’, অথবা ‘ঈদুম মুবারক (ঈদ বরকমতময় হোক)’, অথবা ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু
সিয়ামাকা ওয়া ক্বিয়ামাক্ (আল্লাহ তোমার রোজা ও তারাবিকে কবুল করুন) এবং অনুরূপ শব্দযোগে
(অভিবাদনস্বরূপ) কিছু বলাতে কোনো সমস্যা নেই। কেননা এটা কিছু সাহাবীর কর্ম দ্বারা প্রমাণিত।
এতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।” [ইমাম ইবনু ‘উসাইমীন (রাহিমাহুল্লাহ), আশ-শারহুল মুমতি‘
‘আলা যাদিল মুস্তাক্বনি‘; খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ১৭১; দারু ইবনিল জাওযী, রিয়াদ কর্তৃক প্রকাশিত;
সনতারিখ বিহীন]
·
৭ম বক্তব্য:
ইয়েমেনের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস
ও ফাক্বীহ ইমাম মুক্ববিল বিন হাদী আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২২ হি./২০০১
খ্রি.] প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: هل هناك صيغ واردة في التهنئة أو هي ما تعارفنا عليه من الصيغ مثل عيدكم مبارك أو كل عام وأنتم بخير أو تقبل الله منا ومنك؟
الإجابة: لا أعلم شيئاً من هذا وارداً عن النبي - صلى الله عليه وعلى آله وسلم -. ولا مانع من هذه الألفاظ ، فلا تصل إلى حد البدعة ولا التحريم.
প্রশ্ন: “(ঈদে) মুবারকবাদ
জানানোর জন্য কি কোনো নির্দিষ্ট শব্দ বর্ণিত হয়েছে? অথবা আমরা যে সকল শব্দরূপ দ্বারা
পরস্পরকে অভিভাদন জানাই—যেমন: ‘ঈদুকুম মুবারাক (তোমাদের 'ঈদ বরকতময় হোক)’, অথবা ‘কুল্লু
‘আমিন ওয়া আনতুম বিখাইর (সকল বছরে তোমরা ভাল থেকো)’ অথবা ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না
ওয়া মিনকা (আল্লাহ আমাদের ও তোমার পক্ষ থেকে এই ইবাদত কবুল করুন)’ প্রভৃতি—সেসব শব্দরূপ
কি (শরিয়তে) বর্ণিত হয়েছে?”
উত্তর: “আমার জানা নেই যে,
এগুলোর কোনো কিছু নাবী ﷺ থেকে বর্ণিত হয়েছে। আর এ ধরনের শব্দ ব্যবহারে কোনো বাধা নেই। এগুলো না পৌঁছবে
বিদ‘আতের সীমানায়, আর না হারামের সীমানায়।” [ইমাম মুক্ববিল আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ),
ফাদ্বাইহ ওয়া নাসাইহ, পৃষ্ঠা: ৮৭; দারুল হারামাইন, কায়রো কর্তৃক বর্ণিত; সন: ১৪১৯ হি./১৯৯৯
খ্রি. (১ম প্রকাশ); টেক্সট সংগৃহীত: http://muqbel.net/
·
৮ম বক্তব্য
সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা
ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটি (সৌদি ফাতাওয়া বোর্ড) প্রদত্ত ফাতওয়া—
السؤال: بشأن ما تعارف الناس على ذبحه من المواشي في عيد الفطر؛ إظهارًا للفرح، وتكريمًا لضيوفهم الذين يردون عليهم، وكذا تزاورهم في العيد؛ صلة لأرحامهم، وإدخالاً للسرور على جيرانهم وإخوانهم المسلمين، وتهنئتهم بعضهم البعض بهذه المناسبة بقولهم: (تقبل الله منا ومنكم) و (من العايدين والفائزين) و (عيدكم مبارك) ونحو ذلك من عبارات التهنئة؛ لأنه ظهر من يقول: إن هذا كله من البدع، بل إنه يمتنع عن زيارة أقاربه ومعارفه واستقبالهم في العيد؛ لأنه يرى أن كل ذلك من البدع، وقد طلب المذكور فتوى سماحتكم في ذلك مكتوبة حتى يعمل بها الجميع، فآمل التكرم بالاطلاع وإفتاء المذكور بما ترونه.
الجواب: لا بأس بذبح بعض الذبائح في عيد الفطر إكرامًا للضيوف الذين يزورون من يذبح تلك الذبائح، لكن بقدر ما يكفي للزائر مع عدم الإسراف والفخر في ذلك، وأما تهنئة المسلمين بعضهم ببعض بالعيد بمثل العبارات المذكورة في السؤال فإنه لا بأس بها؛ لما فيها من دعاء الأخ المسلم لأخيه بقبول العمل وطول العمر والسعادة ولا محذور في ذلك. وبالله التوفيق، وصلى الله على نبينا محمد وآله وصحبه وسلم.
প্রশ্ন: “কিছু মানুষ ঈদুল
ফিতরে আনন্দ প্রকাশ করার জন্য এবং তাদের নিকট বেড়াতে আসা মেহমানদেরকে সম্মান করার জন্য
গবাদিপশু জবেহ করে। একইভাবে তারা ঈদের মধ্যে আত্মীয়তার সম্পর্ক মজবুত রাখার জন্য এবং
তাদের প্রতিবেশি ও মুসলিম ভ্রাতৃমণ্ডলীর মধ্যে আনন্দ ভাগাভাগি করার জন্য পরস্পরের সাথে
সাক্ষাৎ করে। আর এ উপলক্ষে তারা একে অপরকে ‘তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম
(আল্লাহ আমাদের ও তোমাদের পক্ষ থেকে এই ইবাদত কবুল করুন)’, ‘মিনাল ‘আইদীনা ওয়াল ফাইযীন
(তুমি সফলকাম হও)’, ‘ঈদুকুম মুবারাক (তোমাদের ঈদ বরকতময় হোক)’ প্রভৃতি অভিবাদনমূলক
শব্দযোগে মুবারকবাদ জানায়। কেউ কেউ এগুলো বিদ‘আত বলছেন। এমনকি তারা পরিচিতদের সাথে
ও আত্মীয় স্বজনদের সাথে সাক্ষাৎ করা এবং তাদেরকে অভ্যর্থনা জানানো থেকে নিষেধ করছেন।
কারণ তারা এগুলোকে বিদ‘আত মনে করেন। উল্লিখিত ব্যক্তিবর্গ আপনাদের কাছ থেকে এ ব্যাপারে
একটি লিখিত ফাতওয়া চেয়েছেন, যাতে সবাই (স্থায়ী কমিটি প্রদত্ত ফাতওয়া) এর প্রতি আমল
করতে পারে। অতএব আমরা এ ব্যাপারে আপনাদের সুবিজ্ঞ মতানুযায়ী ফাতওয়া প্রত্যাশ্যা করছি।”
উত্তর: “ঈদুল ফিতরে বেড়াতে
আসা মেহমানদেরকে সম্মান করার জন্য কোনো গবাদিপশু জবাই করায় কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু
তা যেন হয় পরিমিত পরিমাণে, অপচয় ও গর্ব-অহংকার যেন তাতে না থাকে। অনুরূপভাবে প্রশ্নে
উল্লিখিত (অভিবাদনমূলক) শব্দযোগে মুসলিমদের পরস্পর পরস্পরকে মুবারকবাদ জানানোতে কোন
সমস্যা নেই। কেননা এতে একজন মুসলিম ভাই কর্তৃক অপর ভাইয়ের জন্য আমল কবুল হওয়ার, দীর্ঘজীবী
হওয়ার এবং সৌভাগ্য লাভের দু‘আ রয়েছে। এতে কোনো নিষিদ্ধতা নেই।
আর আল্লাহই তাওফীক্বদাতা।
হে আল্লাহ, আমাদের নাবী মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার পরিজন ও সাহাবীবর্গের ওপর আপনি দয়া
ও শান্তি বর্ষণ করুন।”
ফাতওয়া প্রদান করেছেন—
চেয়ারম্যান: শাইখ ‘আব্দুল
‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ)
ডেপুটি চেয়ারম্যান: শাইখ
‘আব্দুল ‘আযীয আলুশ শাইখ (হাফিযাহুল্লাহ)
মেম্বার: শাইখ ‘আব্দুল্লাহ
বিন গুদাইয়্যান (রাহিমাহুল্লাহ)
মেম্বার: শাইখ সালিহ আল-ফাওযান
(হাফিযাহুল্লাহ) [ফাতাওয়া লাজনাহ দায়িমাহ; গ্রুপ: ২; খণ্ড: ৭; পৃষ্ঠা: ১৫৬; ফাতওয়া
নং: ২০৬৭৩; গৃহীত: alifta.net]
আমরা বিশ্ববরেণ্য ‘আলিমদের
ফাতওয়া জানতে পারলাম, ঈদে মুবারকবাদ জানানো দেশীয় প্রথা ও সামাজিক শিষ্টাচারের অন্তর্ভুক্ত
হওয়ায়, সামাজিক আচার বা প্রথা হিসেবে প্রচলিত যে কোনো ভালো শব্দ বা বাক্য দ্বারা পরস্পরকে
সম্ভাষণ জানানো জায়েজ।
মুবারকবাদ জানানোর সময়:
সাহাবীগণ ঈদের দিন পরস্পরকে
মুবারকবাদ জানাতেন। তবে এর কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। এমনটিই বলেছেন ইমাম মুক্ববিল
বিন হাদী আল-ওয়াদি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ)। [দ্র.: muqbel.net/
সৌদি ফাতওয়া বোর্ড এবং সৌদি
আরবের সর্বোচ্চ ‘উলামা পরিষদের প্রবীণ সদস্য যুগশ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ
ইমাম সালিহ বিন ফাওযান আল-ফাওযান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.] প্রদত্ত
ফাতওয়া—
السؤال: أحسن الله إليكم صاحب الفضيلة انتشر بين الناس في هذه الأيام رسائل عبر الجوال تتضمن تحريم التهنئة بالعيد قبل العيد بيوم أو يومين و أنه من البدع فما رأي فضيلتكم ؟
الجواب: لا أعلم هذا الكلام هذه يروجوها و لا أعلم له أصلا، فالتهنئة مباحة في يوم العيد أو بعد يوم العيد مباحة أما قبل يوم العيد فلا أعلم أنها حصلت من السلف و أنهم يهنئون قبل يوم العيد كيف يُهَنَأ بشيء لم يحصل، التهنئة تكون يوم العيد أو بعد يوم العيد مع أنها لا دليل عليها . لكن الإمام أحمد - رحمه الله - يقول : أنا لا أَبْدَأ بها و لكني أرد على من بَدَأَنٍي و هَنَأَني.
প্রশ্ন: “শাইখ, বর্তমানে
মোবাইলের মাধ্যমে কিছু বার্তা ছড়িয়ে পড়েছে। যেগুলোতে বলা হয়েছে, ঈদের এক দিন বা দুই
দিন আগে মুবারকবাদ জানানো হারাম এবং এটা বিদ‘আতের অন্তর্ভুক্ত। এ ব্যাপার আপনার মতামত
কী?”
উত্তর: “আমি এ ধরনের কথা
জানিনা। এটা লোকেরা চালু করেছে। এই কথার ভিত্তি আমার জানা নেই। ঈদের দিন বা ঈদের দিনের
পরে পরস্পরকে মুবারকবাদ জানানো বৈধ। পক্ষান্তরে ঈদের আগেই মুবারকবাদ জানানো—আমি জানিনা
যে, সালাফরা এমনটা করেছেন। (জানিনা যে,) তাঁরা ঈদের দিনের আগেই মুবারকবাদ জানাতেন।
আর কীভাবেই বা একটি বিষয়ে সম্ভাষণ জানানো যায়, যে বিষয়টি এখনো সংঘটিতই হয়নি?! তবে
(ঈদ উপলক্ষে) ঈদের দিনে বা ঈদের দিনের পরে পরস্পরকে মুবারকবাদ জানানো যায়। তথাপি এই
বিষয়ে (সরাসরি শরিয়তে তথা আল্লাহ বা তাঁর রাসূল ﷺ থেকে) কোনো দলিল নেই। কিন্তু ইমাম আহমাদ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেছেন, আমি প্রথমেই
কাউকে মুবারকবাদ জানাব না। তবে কেউ আমাকে মুবারকবাদ জানালে, আমি তার উত্তর (জবাব) দিব।”
[দ্র.: www.sahab.net/forums/
কিন্তু কেউ যদি ঈদের দিন
শুরু হওয়ার পূর্বেই মুবারকবাদ জানায়, তবে তা হারাম বা নিষিদ্ধ বলে বিবেচিত হবে না।
কেননা, এই মুবারকবাদ জানানোর বিষয়টি বৈধ এবং এটা কোনো ইবাদত নয়। এটা দেশীয় আচার ও প্রথাগত
একটি বিষয়। তাই ‘আল্লামাহ ড. সুলাইমান আর-রুহাইলী (হাফিযাহুল্লাহ) ঈদের দিন শুরু হওয়ার
পূর্বে মুবারকবাদ জানানোকে বৈধ বলে উল্লেখ করেছেন। [দ্র.: https://youtu.be/
·উপসংহার:
পরিশেষে, স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি
মহান আল্লাহ তা‘আলার বাণী, “তোমাদের জিহ্বা থেকে মিথ্যা কথা বেরোয় বলেই তোমরা আল্লাহর
প্রতি মিথ্যারোপ করার জন্য এমন কথা বলো না যে, এটা হালাল, আর এটা হারাম। যারা আল্লাহ
সম্পর্কে মিথ্যা উদ্ভাবন করে, তারা কক্ষনো কল্যাণ লাভ করতে পারে না। (এসব মিথ্যাচারে
লাভ হয়) সামান্য ভোগের বস্তু, অতঃপর তাদের জন্য আছে ভয়াবহ শাস্তি।” [সূরাহ নাহল: ১১৬-১১৭]
আল্লাহ তা‘আলার কাছে প্রার্থনা করছি, তিনি যেন আমাদেরকে সালাফে সালিহীনের বুঝ অনুযায়ী
কুরআন ও সুন্নাহ অনুসরণ করার তাওফীক্ব দান করেন। আমীন, ইয়া রাব্বাল ‘আলামীন।
·অনুবাদক: মুহাম্মাদ ‘আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/
0 Comments