ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট, সেভিং একাউন্ট, নগদ ক্যাশ ইত্যাদিতে যাকাতের নিসাব ও আদায়ের পদ্ধতি
প্রশ্ন: কারো যদি ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট থাকে দুই লাখ আর অন্য আরেকটা সেভিংস একাউন্ট থাকে তাহলে কিভাবে যাকাত দিতে হবে? এ ক্ষেত্রে টোটাল হিসাব ধরে তারপর কি যাকাত দিতে হবে না কিভাবে দিতে হবে দয়া করে জানাবেন।
- ব্যাংকে ডিপোজিট বা সেভিংস একাউন্টে মিনিমাম কত টাকা থাকলে যাকাত দেয়া শুরু হবে?
উত্তর:
কারও নিকট যদি ব্যাংকের ফিক্সড ডিপোজিট, সেভিং একাউন্ট, নিজের কাছে গচ্ছিত অর্থ, ব্যবাসায়িক পণ্য ইত্যাদি সব মিলিয়ে যাকাতের নিসাব পরিমান হয় এবং তা এক বছর জমা থাকে তাহলে তাতে যাকাত ফরজ হবে।
💎 যাকাতের নিসাব:
সর্ব নিম্ন ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ বা তার সমপরিমান অর্থমূল্য।
অথবা সর্ব নিম্ন ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য বা তার সমপরিমান অর্থমূল্য।
স্বর্ণ অথবা রৌপ্য যে কোন একটি হিসেব ধরে যাকাত দেয়া বৈধ। যদিও স্বর্ণ ও রৌপ্যের দামে বিরাট পার্থক্য রয়েছে। তবে যে হিসেবে দান করলে গরিবের উপকার বেশি হবে সেটা দেয়া অধিক উত্তম। অর্থাৎ যদি আপনি রৌপ্যের হিসেবে যাকাত বের করেন তাহলে তাতে তুলনামূলক কম টাকায় যাকাত ফরজ হবে এবং এতে গরীবদের উপকার বেশি হবে। সুতরাং রৌপ্যের হিসেব যাকাত আদায় করলে সওয়াব বেশি হবে। তবে স্বর্ণের হিসেবেও যাকাত আদায় করলেও আদায় হয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।
রৌপের দাম হিসেবে যাকাতের নিসাব:
-----------------------------
রৌপ্যের ক্ষেত্রে যাকাত ফরজ হওয়ার নিসাব হল, ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য।
অত:এব কারও নিকট যদি এ পরিমান রৌপ্য বা তার সমপরিমান মূদ্রা এক বছর জমা থাকে তাহলে তাতে যাকাত ফরজ হবে।
আপনার ইচ্ছা অনুযায়ী স্বর্ণ অথবা রৌপ্যের যে কোন একটি হিসেবে যাকাত আদায় করতে পারেন। তবে রৌপ্যের দাম যেহেতু কম সেহেতু রৌপ্যের বর্তমান বাজার দাম অনুযায়ী হিসেব করে যাকাত বের করলে গরিবের উপকার বেশি হবে। তাই তা অধিক উত্তম যেমনটি ইতোপূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
আল্লাহু আলাম।
- ●●●●●●●●●●
উত্তরপ্রদানে:
আব্দুল্লাহিলহাদী বিন আব্দুল জলিল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, KSA
দাঈ, জুবাইর দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, KSA
২) যে সকল সম্পদে যাকাত ফরজ এবং সেগুলোর নিসাব
৩) যে সকল জিনিসে যাকাত নেই
✅ যে সকল সম্পদে যাকাত ফরজ:
১. স্বর্ণ= সর্বনিম্ন ৮৫ গ্রাম
২. রৌপ্য= সর্বনিম্ন ৫৯৫ গ্রাম
৩. নগদ অর্থ। ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য অথবা ৮৫ গ্রাম স্বর্ণের যে দাম হয় সে পরিমান নগদ ক্যাশ থাকলে তাতে যাকাত দিতে হবে-চাই তা নিজের কাছে জমা থাকুক অথবা ব্যাংকে সংরক্ষিত থাকুক। islam
সুতরাং এ পরিমান টাকা কারো কাছে এক বছর জমা থাকলে তাতে যাকাত দেয়া ফরজ।
৪. ব্যবাসায়িক পণ্য
৫. জমিন থেকে উৎপাদিত রবিশষ্য (যেগুলো শুকিয়ে সংরক্ষণযোগ্য) যেমন, ধান, গম, শরিসা, ভু্ট্টা ইত্যাদি অথবা ফলফলাদি (যেগুলো শুকিয়ে সংরক্ষণযোগ্য), যেমন খেজুর, কিশমিশ ইত্যাদি।
৬. গবাদী পশু (নির্দিষ্ট পরিমান সাপেক্ষে)
⛔ যে সকল জিনিসে যাকাত নেই:
বসবাসের জন্য বসত ভিটা, ঘর-বাড়ি, ফসলের জায়গা-জমি, বাড়ির ব্যবহারিক আসবাবপত্র, ব্যবহারের জন্য গাড়ি, ভাড়ার জন্য বাস, ট্রাক, লঞ্চ ইত্যাদি পরিবহন, ভাড়ার জন্য তৈরিকৃত আবাসিক বিল্ডিং বা দোকান, নিজস্ব দোকান, দোকানের জায়গা ও ফার্নিচার (তবে দোকানের পণ্যের যাকাত দিতে হবে) ইত্যাদি। এগুলোতে যাকাত নেই।
🔰 পুকুরের মাছেও যাকাত নেই। তবে মাছ বিক্রয়ের অর্থ যদি নিসাব পরিমান হয় তাহলে তাতে যাকাত দিতে হবে।
🔰 কাঁচামাল-যেমন, শাক-সবজি, আম, কাঠাল, লিচু ইত্যাদি ফলমূলে যাকাত নেই। তবে এগুলো বিক্রয়ের অর্থ নিসাব পরিমান হলে তাতে যাকাত দিতে হবে।
🔰 অনুরূপভাবে দোকান, আবাসিক বিল্ডিং, বাস-ট্রাক ইত্যাদিতে যাকাত নাই। কিন্তু এগুলো থেকে প্রাপ্ত ভাড়া নিজের অন্যান্য অর্থের সাথে যুক্ত করে নিসাব পরিমান হলে যাকাত বের করতে হবে।
🔰 জায়গা-জমি, গবাদী পশু ও বিল্ডিং ইত্যাদি ক্রয়-বিক্রয় করলে সেগুলো ব্যবসায়িক পণ্য হিসেবে যাকাত দিতে হবে।
আল্লাহু আলাম
▪▪▪▪▪▪
*আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল*
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
স্ত্রী ও কন্যার স্বর্ণের গয়নায় যাকাতের নিয়ম
----------------
নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ (৭.৫০ ভরি) যার মালিকানায় থাকবে থাকবে তার উপর যাকাতের হুকুম বর্তাবে।
যদি আপনার কন্যা ও স্ত্রী প্রত্যেককে প্রদত্ত স্বর্ণের মালিক বানিয়ে দেয়া হয় তাহলে প্রত্যেকের আলাদা আলাদা হিসাব হবে। অর্থাৎ কন্যার যদি নিসাব পরিমাণ স্বর্ণ হয় তাহলে তাকে সেখান থেকে যাকাত দিতে হবে আর স্ত্রীর হলে তাকে দিতে হবে।
দুজনের স্বর্ণ একসাথে জমা করে নিসাব বানানো যাবে না।
আর আপনি যদি তাদেরকে সাময়িকভাবে স্বর্ণ দিয়ে থাকেন (অর্থাৎ আপনি তাদের কাছে কেবল জমা রেখেছেন, যখন প্রয়োজন মনে করবেন তা বিক্রয় করে নিজের কাজে লাগাবেন আর তাদেরকে সেটার বিনিময় দিবেন না) তাহলে সকল স্বর্ণ আপনার মালিকানা হিসেবে বিবেচিত হবে এবং সবগুলোর উপর যাকাত দিতে হবে।
বি: দ্র: ব্যবহারের জন্য স্বর্ণালঙ্কারে যাকাত আবশ্যক কি না- সে ব্যাপারে আলেমদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। একদল আলেমের মতে ব্যবহারের জন্য জমা কৃত স্বর্ণ বাড়ির অন্যান্য আসবাব-সামগ্রীর মতই। বাড়ির আসবাবপত্রে যেমন যাকাত নেই তদ্রূপ এগুলোতেও যাকাত নেই। পক্ষান্তরে অন্য একদল আলেম বলেন, স্বর্ণ ও রৌপ্যের বিষয়টি আলাদা। তাই নিসাব পরিমাণ হলে এগুলোতে যাকাত দিতে হবে-যদিও তা নিজের গয়না হিসেবে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ক্রয় করা হয়ে থাকে।
মোটকথা, মতবিরোধ থেকে বাঁচার স্বার্থে গয়না ও অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহারের স্বর্ণে যাকাত দেয়াটাই অধিক নিরাপদ।
আল্লাহু আলাম।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার , সৌদি আরব
প্রশ্ন: রৌপ্যের যাকাতের নিসাব কত?
উত্তর:
রৌপ্যের ক্ষেত্রে যাকাত ফরজ হওয়ার নিসাব হল, ৫৯৫ গ্রাম রৌপ্য।
কারও নিকট যদি এ পরিমান রৌপ্য বা তার সমপরিমান মূদ্রা এক বছর জমা থাকে তাহলে তাতে যাকাত ফরজ হবে।
রৌপ্যের আজকের বাজার দর ৪৪.৩৯ টাকা (গ্রাম প্রতি)। (11 Jun 2017 at 11:21 AM)
সুতরাং রৌপ্যের হিসাবে (৪৪.৩৯ ✕ ৫৯৫=) ২,৬৪১২ টাকা হল যাকাত ফরজ হওয়ার নিসাব। এ পরিমান টাকা কারও নিকট এক বছর গচ্ছিত থাকলে তাতে ২.৫% যাকাত বের করতে হবে।
আল্লাহু আলাম
------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
সোনা, রুপা, টাকা, ব্যাবসায়িক পণ্য ইত্যাদিতে ২.৫০% যাকাত দেয়ার দলিল
••••••••••••••••••••••
প্রশ্ন: যাকাত ২.৫% হারেই দিতে হবে তার কোন স্পষ্ট দলীল কী কুরআনে অথবা হাদিসে আছে কি?
উত্তর:
সোনা, রুপা, টাকা, ব্যাবসায়িক পণ্য ইত্যাদির যাকাত দিতে হবে ২.৫০%। এ মর্মে বহু হাদিস রয়েছে। সকল ফকীহও এ বিষয়ে একমত।
🔰 আবু বকর রা. আনাস রা.কে বাহরাইন প্রেরণ করার পর তার কাছে চিঠি প্রেরণ করেছিলেন। সেখানে তিনি যাকাতের ব্যাপারে লিখেছিলেন:
وَفِي الرِّقَّةِ رُبْعُ الْعُشْرِ অর্থাৎ রৌপ্যে ২.৫০% যাকাত বের করতে হবে। (সহীহ বুখারী, হা/১৪৫৪)
🔰 আরও হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
(إِذَا كَانَتْ لَكَ مِائَتَا دِرْهَمٍ وَحَالَ عَلَيْهَا الْحَوْلُ فَفِيهَا خَمْسَةُ دَرَاهِمَ ، وَلَيْسَ عَلَيْكَ شَيْءٌ يَعْنِي فِي الذَّهَبِ حَتَّى يَكُونَ لَكَ عِشْرُونَ دِينَارًا ، فَإِذَا كَانَ لَكَ عِشْرُونَ دِينَارًا وَحَالَ عَلَيْهَا الْحَوْلُ فَفِيهَا نِصْفُ دِينَارٍ ، فَمَا زَادَ فَبِحِسَابِ ذَلِكَ)
আলী রা. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, “তোমার কাছে যদি দু শত দিরহাম (রৌপ্যমুদ্রা) থাকে এবং তাতে এক বছর অতিক্রান্ত হয়ে যায় তাহলে তাতে ৫ দিরহাম যাকাত আদায় করতে হবে। আর ২০ দিশ দীনার (স্বর্ণমুদ্রা) পর্যন্ত কিছুই আবশ্যক নয়। তবে যদি ২০ দিরহাম হয় আর এর উপর এক বছর অতিক্রান্ত হয় তাহলে তাতে অর্ধ দিরহাম যাকাত প্রদান করতে হবে। এর চেয়ে বেশী হলে যে পরিমাণ বেশী হবে সে পরিমাণে হিসেব করে যাকাত বের করত হবে।”
(সুনান আবু দাউদ,হা/১৫৭২, সহীহ-আলবানী) এ মর্মে আরও হাদিস রয়েছে।
আল্লাহু আলাম।
••••••••••••••••••••
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
Abdullahil Hadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
ফসলের যাকাতের পদ্ধতি ও পরিমাণ
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
প্রশ্ন: ধানের ক্ষেত্রে কী পরিমাণ ওশর দিতে হয়? বৃষ্টির পানি আর সেচের পানি দ্বারা ধান উৎপন্ন হলে কি যাকাতের পরিমাণে কোন তফাৎ হয়?
উত্তর:
কৃষিজাত ফসল যেমন ধান, গম, যব ইত্যাদির যাকাত দিতে হয়।
❖ ফসলের নিসাব:
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
لَيْسَ فِي حَبٍّ وَلا تَمْرٍ صَدَقَةٌ حَتَّى يَبْلُغَ خَمْسَةَ أَوْسُقٍ
" পাঁচ ওয়াসাক এর কম শস্যদানা ও খেজুরে যাকাত নেই।" (বুখারী ১৪৮৪)
বর্তমান কেজির হিসেবে ৫ ওয়াসাক এর পরিমাণ প্রায় ১৮ মন ৩০ কেজি। এই পরিমাণ ধান, গম, যব, খেজুর ইত্যাদি ফসলে যাকাত দেয়া ফরজ। এর চেয়ে কম হলে তাতে যাকাত নেই।
❖ ফসলের যাকাতের পরিমাণ:
এ ক্ষেত্রে পানি দিতে অর্থ খরচ হওয়া না হওয়ার উপর ভিত্তি করে যাকাত কমবেশি হয়। যেমন,
ফসলে যদি পানি দেয়ার জন্য যদি অতিরিক্ত অর্থ খরচ না ও পরিশ্রম না হয় বরং শুধু বৃষ্টি, খাল-বিল, নদী-নালা, ঝর্ণা ইত্যাদির পানি দ্বারা চাষাবাদ করা হয়ে থাকে তাহলে উৎপন্ন ফসলের ১০ ভাগের ১ ভাগ বা ১০% যাকাত দিতে হবে।
আর যদি ফসলে পানি দেয়ার জন্য অতিরিক্ত খরচ ও পরিশ্রমের প্রয়োজন পড়ে তাহলে ২০ ভাগের ১ বা ৫% ভাগ যাকাতের খাতে দিয়ে দিতে হবে।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
فِيمَا سَقَتْ السَّمَاءُ وَالْعُيُونُ أَوْ كَانَ عَثَرِيًّا الْعُشْرُ ، وَمَا سُقِيَ بِالنَّضْحِ نِصْفُ الْعُشْرِ ) .
“বৃষ্টি ও ঝর্ণার পানি দ্বারা বা কেবল নিজের কাণ্ড দ্বারা পানি শোষণ করে (বিনা সেচে) যে ফসল উৎপন্ন হয় তাতে দশ ভাগের ১ ভাগ যাকাত ফরজ আর যে ফসল সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় তাতে ২০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত আবশ্যক হবে।” (সহীহুল বুখারী, ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত)
আল্লাহু আলাম
-------------------
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, ksa
প্রশ্ন: কাউকে যদি ঋণ দেয়া থাকে তাহলে কি তারও যাকাত দিতে হবে?
উত্তর:
যাকাত ফরজ হওয়ার অন্যতম শর্ত হলো, সম্পদের মালিক হওয়া।
সুতরাং কেউ যদি অন্যকে টাকা ঋণ দেয় তাহলে মূল মালিক নিজের সম্পদের সাথে উক্ত প্রদত্ত ঋণেরও যাকাত আদায় করবে- যদি সে যাকাতের নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় এবং উক্ত প্রদত্ত ঋণের যাকাত দেয়ার ক্ষমতা থাকে।
তবে যদি উক্ত টাকা ফেরত না পাওয়ার আশংকা করে অথবা উক্ত প্রদত্ত ঋণের যাকাত দেয়ার ক্ষমতা না থাকে তাহলে তার জন্য উক্ত অর্থের যাকাত আদায় করা আবশ্যক নয়।
অবশ্য যদি পরবর্তীতে তা ফেরত পাওয়া যায় তাহলে অতীতে যত বছরের যাকাত আদায় করা হয় নি সবগুলোর একসাথে যাকাত বের করতে হবে। আল্লাহু আলাম।
-----উত্তর প্রদানে:------
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
প্রশ্ন: ৯১ গ্রাম স্বর্ণ আর ফিক্সড ডিপোজিট ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকার উপর জাকাত কত পরিমাণ হবে?
▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উত্তর:
শতকরা ২.৫০ টাকা হিসেবে ২ লাখ ৩৫ হাজার টাকায় যাকাত আসবে (২,৩৫০০০*২.৫০%)=৫,৮৭৫ টাকা।
আর উক্ত পুরাতন স্বর্ণের বর্তমান বাজার দর দেখে তার মূল্যের উপর উপরোক্ত হিসেবে যাকাত বের করতে হবে।
▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
জুবাইল দাওয়াহ, সৌদি আরব
যাকাত বিষয়ক খুঁটিনাটি কিছু বিষয়-যেগুলো জানা খুবই জরুরি
▬▬▬▬❖🔹❖▬▬▬
প্রশ্নাবলী:
ক. কারো কাছে যদি ৪৫ লাখ টাকা থাকে তাহলে এর যাকাত কী পরিমাণ হবে?
খ. বর্তমানে বাজার মূল্য অনুযায়ী স্বর্ণ বিক্রয় করতে গেলে ২০% মূল্য কমে বিক্রি করতে হয়। তাহলে এই ২০% বাদ দিয়ে তারপর যে টাকা থাকবে সে টাকা থেকে কি যাকাত দিতে হবে?
গ. কাপড় দিয়ে যাকাত আদায় শুদ্ধ হবে কি? ইতোপূর্বে কাপড় দিয়ে যাকাত দেয়া হয়েছ। এতে কি যাকাত আদায় হয়েছে? এখন টাকা দিলে গ্রামের মানুষ উল্টাপাল্টা কথা বলবে। তাই যদি মানুষের কথার ভয়ে কাপড় দিয়ে যাকাত দেয়া হয় তাহলে কি যাকাত আদায় হবে?
ঘ. কোন কোন অত্মীয়কে যাকাতের টাকা দেওয়া জায়েয ও কেমন আর্থিক পরিস্থিতি হলে আত্মীয়কে যাকাত দেওয়া যাবে?
উত্তর:
▪ ক. কারো নিকট সর্ব নিম্ন ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ, তার মূল্য সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা ব্যবসায়িক পণ্য এক বছর জমা থাকলে তাতে ২.৫০% হারে যাকাত ফরয হয়। অর্থাৎ এক লাখ টাকায় ২,৫০০ টাকা।
সুতরাং ৪৫ লাখ টাকায় যাকাত আসবে (৪৫,০০০০০×২.৫%)= ১,১২৫০০ টাকা।
▪ খ. বাড়িতে গচ্ছিত স্বর্ণের যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে টাকা দ্বারা যাকাত আদায়ের পদ্ধতি হল, উক্ত পুরাতন স্বর্ণ বাজারে বিক্রয় করলে যে দাম পাওয়া যাবে তার হিসাব ধরতে হবে; নতুন স্বর্ণের দাম নয়।
সুতরাং পুরাতন স্বর্ণের দাম নতুন স্বর্ণের চেয়ে ২০% কম হলে তাই ধর্তব্য হবে এবং সে আলোকে স্বর্ণের মূল্য দ্বারা যাকাত বের করতে হবে।
অবশ্য সরাসরি নগদ টাকার যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে বর্তমানে নতুন স্বর্ণের বাজার মূল্য হিসেব করতে হবে।
▪ গ. একান্ত জরুরি না হলে টাকা ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে যাকাত দেয়া ঠিক নয়। কেননা টাকা দ্বারা গরিব মানুষ অধিক লাভবান হবে এবং সে ইচ্ছেমত তার প্রয়োজন পূরণ করতে পারবে।
কিন্তু যদি এ আশংকা থাকে যে, টাকা দিলে যাকাত গ্রহীতা অপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করে তা খরচ করে ফেলবে বা টাকা নষ্ট করবে তাহলে সে ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন অনুসারে যাকাতের টাকা দ্বারা কাপড়-চোপড়, টিউবওয়েল, ঘর-বাড়ি তৈরি সহ তার প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেয়া যেতে পারে।
তবে বর্তমান যুগে কিছু অর্থশালী মানুষ ট্রাকের উপর থেকে যেভাবে গরিবদের মাঝে 'যাকাতের কাপড়' ছিটায় আর তা সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা হুড়োহুড়ির মধ্যে পদপিষ্ট হয়ে মরা যায় এটি শুধু শরিয়া বিরোধী নয় বরং অত্যন্ত গর্হিত ও অমানবিক কাজ। এটি দরিদ্র মানুষের প্রতি ধনীদের এক নির্মম উপহাস ছাড়া কিছু নয়। তাই এভাবে যাকাত বণ্টন পদ্ধতি বন্ধ হওয়া জরুরি।
- ইতোপূর্বে না জানার কারণে কাপড় দ্বারা যাকাত দিয়ে থাকলে দুআ করি, আল্লাহ কবুল করুন। কিন্তু জানার পর থেকে আর এমনটি করা ঠিক হবে না।
▪ ঘ. এমন গরিব-অসহায় আত্মীয়-স্বজনকে যাকাত দেয়া জায়েয যাদের ভরণ -পোষণ দেয়া আপনার জন্য ফরয নয়। যেমন: পিতা, মাতা, স্ত্রী প্রমুখকে যাকাত দেয়া যাবে না। কেননা তাদের ভরণ-পোষণ দেয়া আপনার উপর ফরয।
কিন্তু ভাই, বোন, চাচা, চাচী, ফুফা, খালু, মামা ইত্যাদি ব্যক্তিদেরকে যাকাত দেয়া যাবে যদি তারা যাকাত পাওয়ার হকদার হয়। এমন কি স্ত্রী যদি ধনী হয় আর স্বামী যদি গরিব হয় তাহলে স্ত্রী তার স্বামীকে যাকাত দিতে পারে। কেননা, স্বামীর ভরণ-পোষণ দেয়া স্ত্রীর জন্য ফরয নয়।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬❖🔹❖▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
জীবন ঘনিষ্ঠ কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর- পর্ব: ১৯
➖➖➖➖
ঋণ নেয়ার পর পরিশোধ করতে অক্ষম হওয়ার কারণে যদি আমি যাকাত হিসেবে ঋণ মওকুফ করে দেই তাহলে কি যাকাত আদায় হবে?
প্রশ্ন: এক ভাই আমার কাছ থেকে কর্জে হাসানা নিয়েছিল পাঁচ বছর আগে দুই সপ্তাহের কথা বলে। তারপর থেকে সে টাকা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন তারিখ করেও দেয় না। সে বিভিন্ন সমস্যার কথা বলে আমাকে এড়িয়ে চলছে। তাকে মেসেজ দিল সে মেসেজ দেখেও কোন উত্তর দেয় না। পরবর্তীতে আমি এক ভাইয়ের মাধ্যমে জানতে পারছি, তার আর্থিক অবস্থা নাকি একটু খারাপ। কিন্তু আমি জানি না, এটা কতটুকু সত্য।
এখন প্রশ্ন হল, আমি প্রতি বছর যে যাকাত দেই তা যদি ওই ভাইকে এ ভাবে বলে দেই যে, আপনার কাছে আমার পাওনা টাকা টা যাকাত হিসেবে আপনাকে দিয়ে দিলাম। অথবা আমি যদি মুখে তাকে সরাসরি কিছু না বলে শুধু আমার অন্তরে নিয়ত রেখে শুধু উনাকে বললাম যে, আমি আপনাকে টাকাটা মাফ করে দিয়েছি। এ ভাবে কি যাকাত আদায় হবে?
উত্তর :
কাউকে ঋণ দেয়ার পর সে যদি ঋণ দিতে অপারগ হয়ে যায় বা আর্থিক সমস্যায় থাকে তাহলে ঋণদাতা যদি উক্ত পরিমাণ অর্থ তাকে যাকাত দেওয়ার নিয়ত করে নেয় অথবা তাকে বলে দেয় যে, এটা তোমাকে যাকাত হিসেবে দিয়ে দিলাম তাহলে তাতে যাকাত আদায় হবে কি না-এ ব্যাপারে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য কথা হল, এতে যাকাত আদায় হবে না। এটিই জুমহুর বা অধিকাংশ ওলামার অভিমত। এর একটি কারণ হল, যাকাতের হকদার ব্যক্তিকে যাকাত প্রদানের সময় যাকাতের নিয়ত থাকা শর্ত। কিন্তু এখানে ঋণগ্রহীতাকে অর্থ দেয়ার সময় যাকাত দেয়ার নিয়ত ছিল না বরং নিয়ত ছিল কর্জ দেয়া।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬
প্রশ্ন : যারা তাওহীদ স্বীকার করে নি তারা কি জান্নাত যেতে পারবে? কোন এক ব্যক্তির মুখে আমি শুনলাম তারা নাকি শাস্তি ভোগ করার পরে শেষ মূহুর্তে জান্নাতে প্রবেশ করবে।এটা কতখানি সঠিক?
উত্তর :
কোন ব্যক্তি যদি তাওহীদ এবং রিসালাত কে স্বীকৃতি না দেয় অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা কে একমাত্র মাবুদ হিসেবে এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে রাসূল হিসেবে বিশ্বাস না করে তাহলে সে ব্যক্তি কাফের হিসাবে পরিগণিত হবে যার-কারণে সে কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না। বরং সে হবে চিরস্থায়ী জাহান্নামী।
কারণ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
عَنْ أَبِى هُرَيْرَةَ عَنْ رَسُولِ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَنَّهُ قَالَ وَالَّذِى نَفْسُ مُحَمَّدٍ بِيَدِهِ لاَ يَسْمَعُ بِى أَحَدٌ مِنْ هَذِهِ الأُمَّةِ يَهُودِىٌّ وَلاَ نَصْرَانِىٌّ ثُمَّ يَمُوتُ وَلَمْ يُؤْمِنْ بِالَّذِى أُرْسِلْتُ بِهِ إِلاَّ كَانَ مِنْ أَصْحَابِ النَّارِ
“যাঁর হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ আছে, সেই সত্তার কসম! এই উম্মতের যে কেউ-ইয়াহুদী হোক বা খ্রিস্টান হোক-আঁমার কথা শুনবে,অতঃপর যা দিয়ে আমি প্রেরিত হয়েছি তার প্রতি ঈমান আনবে না, সেই জাহান্নামবাসীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।” (সহিহ মুসলিম: ৪০৩)
▬▬▬▬
প্রশ্ন: মহিলা ডাক্তারের জন্য কি পুরুষ রোগীর চিকিৎসা করা বৈধ হবে? এবং পুরুষ সহকর্মীদের সাথে কি ডাক্তারি পেশা করা যাবে?
উত্তর:
ইসলামী শরিয়ার সাধারণ বিধান হল, কোন নারীর জন্য পরপুরুষকে এবং কোন পুরুষের পর নারীকে স্পর্শ করা জায়েয নয়। তবে একান্ত প্রয়োজন হলে ভিন্ন কথা।
অর্থাৎ পুরুষ ডাক্তার পুরুষ রোগীদের আর মহিলা ডাক্তার মহিলা রোগীদের চিকিৎসা করবে- এটাই ইসলামী রীতি। কিন্তু পরিস্থিতি যদি এমন হয় যে, রোগীর চিকিৎসা জন্য কোন পুরুষ ডাক্তার নাই তাহলে এ অবস্থায় মহিলা ডাক্তার পূর্ণ পর্দা রক্ষা করে এবং যথাসম্ভব ফিতনা সৃষ্টির ব্যাপারে সর্তক থেকে পুরুষ রোগীর চিকিৎসা করতে পারে। কিন্তু পুরুষ ডাক্তার বিদ্যমান থাকা অবস্থায় মহিলাদের জন্য পরপুরুষ রোগীর গায়ে স্পর্শ করা বা পুরুষ ডাক্তারের সহকর্মী হিসেবে থাকা বৈধ নয়। কেননা, এতে ফিতনা সৃষ্টি বা হারামে পতিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
▬▬▬▬
প্রশ্ন: কোম্পানির বেতন ভূক্ত কর্মচারীর জন্য অফিসের কাজ করে দেয়ার পরিবর্তে কমিশনে কাজ করা কি বৈধ?
উত্তর:
কোন ব্যক্তি যখন কোন কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করে তখন তার জন্য আবশ্যক হল, উক্ত প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির সাথে কৃত চুক্তি ও শর্তাবলী যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করা। সে যদি এমন কোন কাজ করে যা তার চুক্তি ও শর্তে বিপরীত তাহলে সে জন্য গুনাহগার হবে।
সুতরাং কোম্পানির শর্ত মোতাবেক সে কাজ করার পরিবর্তে যদি নিজস্ব লাভের আশায় কমিশনে কাজ করে তাহলে তা তার জন্য বৈধ হবে না। অবশ্য যদি কোম্পানির তরফ থেকে তাকে এ সুযোগ দেয়া হয় তাহলে কোন আপত্তি নাই।
আল্লাহু আলাম।
কোন বিষয়ে অস্পষ্টতা থাকলে বা দলীল প্রয়োজন হলে শাইখের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ করা যাচ্ছে।
➖➖➖➖➖
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
https://www.facebook.com/AbdullaahilHadi
🔸 ঋণকৃত টাকার যাকাত দিবে তার মুল মালিক; ঋণ গ্রহীতা নয়:
একজন ব্যক্তি তার নিজস্ব সম্পদের যাকাত আদায় করবে; ঋণকৃত টাকায় নয়-কেননা ঋণকৃত টকার সে মালিক নয়।
(ঋণকৃত টাকার যাকাত আদায় করবে তার মূল মালিক (ঋণদাতা); ঋণ গৃহিতা নয়।)
🔸 এক বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বে যাকাত নেই। তবে অগ্রীম দেয়া জায়েয:
কারো কাছে যাকাতের নিসাব (যে পরিমাণ যাকাত সম্পদ থাকলে যাকাত ফরজ হয়) যদি এক বছর অতিবাহিত হয় তাহলে তাতে যাকাত আবশ্য হবে; এর আগে নয়।
সুতরাং উক্ত পরিমান টাকার উপর যদি এক বছর অতিবাহিত না হয় তাহলে তাতে যাকাত ফরজ হয় নি। কিন্তু ইচ্ছে করলে অগ্রীম যাকাত দেয়া জায়েয রয়েছে।
এত:এব উক্ত পরিমান ব্যবসার পূঁজিতে এক বছর অতিবাহিত না হলেও বরকতময় রামাযান মাসে অগ্রীম যাকাত দেয়া বৈধ। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।
🔸প্রশ্ন: শশুর-শাশুড়ি গরিব হলে তাদেরকে যাকাত দেয়া যাবে কি?
উত্তর:
যার ভোরণ-পোষণের দায়িত্ব বহন করা আপনার জন্য আবশ্যক নয় সে যদি গরিব-অসহায় হয় বা যাকাত দেয়ার ৮ শ্রেণীর অন্তর্ভূক্ত হয় (সূরা তওবা: ৬০নং আয়াত) তাহলে তাকে যাকাত দেয়া জায়েয।
সুতরাং নিজের শুশুর-শাশুড়ি যদি যাকাত পাওয়ার হকদার হয় তাহলে তাদেরকে যাকাত দেয়া যাবে। আল্লাহু আলাম।
----------------------
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব
যাকাতের হকদার কারা বা কাদেরকে যাকাত দিবেন?
▪▪▪▪▪▪▪▪
যাকাতের খাত ৮টি:
✳ ১. ফকির: যাদের নিকট তাদের প্রয়োজনের অর্ধেকও নেই। বছরের ছয় মাস যে নিজের ও পরিবারের খরচের বহনে অক্ষম সেই ফকির। তার ও তার পরিবারের এক বছরের প্রয়োজন মোতাবেক তাকে যাকাত দেয়া হবে।
✳ ২. মিসকিন: যাদের নিকট তাদের প্রয়োজনের অর্ধেক বা তার চেয়ে অধিক রয়েছে, কিন্তু পূর্ণ বছরের খোরাক নেই, এদেরকে যাকাত থেকে অবশিষ্ট বছরের খাদ্য দেয়া যাবে।
যদি কোন ব্যক্তির নিকট নগদ অর্থ নেই, কিন্তু তার অন্য উৎস, অথবা চাকুরী অথবা সামর্থ রয়েছে, যা তার প্রয়োজন পূরণে যথেষ্ট, তাকে যাকাতের অর্থ দেয়া যাবে না। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“ধনী ও কর্মঠ ব্যক্তিদের জন্য যাকাতে কোন অংশ নেই”। (আবু দাউদ-১৬৩৩, নাসায়ি-২৫৯৮)
✳ ৩. যাকাত উসুলে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ: যাদেরকে সরকার যাকাত উত্তোলন, যাকাত বিতরণ ও যাকাত সংরক্ষণের জন্য নিয়োগ দেয়, তাদেরকে তাদের কর্ম মোতাবেক যাকাত থেকে পারিশ্রমিক দেয়া যাবে, যদিও তারা ধনী হয়।
✳ ৪. ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য বিশেষ ব্যক্তিবর্গ: যারা কোন সম্প্রদায়ের সরদার, যাদের ঈমান দুর্বল, তাদের ঈমানের দৃঢ়তা বৃদ্ধির জন্য যাকাত থেকে তাদেরকে দেয়া যাবে, যেন তারা ইসলামের প্রতি আহ্বানকারী ও তার আদর্শ ব্যক্তিরূপে গড়ে উঠে।
✳ ৫. গর্দান মুক্ত করা: অর্থাৎ যাকাতের অর্থে গোলাম খরিদ করা ও আযাদ করা, চুক্তিবদ্ধদের মুক্ত হতে সাহায্য করা এবং মুসলিম বন্দীদের মুক্ত করার জন্য যাকাতের অর্থ ব্যয় করা।
✳ ৬. ঋণগ্রস্ত: যাদের নিকট তাদের ঋণ পরিশোধ করার অর্থ নেই, তাদের ঋণ পরিমাণ অর্থ কম/বেশী যাকাত থেকে দেয়া যাবে, যদিও তাদের খাদ্যের অভাব না থাকে। ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি যদি এমন হয়, যার নিজের ও পরিবারের খাদ্যের ব্যবস্থা আছে, কিন্তু ঋণ পরিশোধ করার সামর্থ তার নেই, তাকে ঋণ পরিমাণ যাকাত দেয়া যাবে।
✳ ৭. ফি সাবিলিল্লাহ বা আল্লাহর রাস্তা: অর্থাৎ আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের জন্য যাকাত দেয়া যাবে। অতএব মুজাহিদদেরকে তাদের প্রয়োজন মোতাবেক যাকাতের অর্থ দেয়া জায়েয। যাকাতের অর্থ দিয়ে জিহাদের অস্ত্র খরিদ করাও বৈধ। আল্লাহর রাস্তার একটি হচ্ছে, শর‘য়ী ইলম। সুতরাং শর‘য়ী জ্ঞান অন্বেষণকারীকে তার প্রয়োজন মোতাবেক কিতাব ইত্যাদি ক্রয় করার জন্য যাকাতের অর্থ দেয়া বৈধ, তবে সে সচ্ছল হলে ভিন্ন কথা।
✳ ৮. ইবন সাবিল: অর্থাৎ মুসাফির, যার পথ খরচ শেষ হয়ে গেছে, তাকে যাকাত থেকে বাড়িতে পৌঁছার অর্থ দেয়া যাবে।
এরা সবাই যাকাতের খাত ও হকদার। আল্লাহ স্বয়ং কুরআনে এদের উল্লেখ করেছেন। এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে নির্ধারিত ফরয, যা তিনি স্বীয় জ্ঞান ও প্রজ্ঞা থেকে তার বান্দাদের উপর ফরয করেছেন।
⛔ এ খাতসমূহ ব্যতীত অন্য কোন খাতে যাকাত ব্যয় করা যাবে না, যেমন, মসজিদ নির্মাণ অথবা রাস্তাঘাট তৈরী বা মেরামত; কেননা আল্লাহ যাকাতের খাত সুনির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। নির্দিষ্ট করার পর তা আর অনির্দিষ্ট খাতে দেয়া যায় না। (শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে সলেহ আল উসাইমিন (রঃ)- সিয়াম, তারাবীহ ও যাকাত বিষয়ে কয়েকটি অধ্যায়)
▪▪▪▪▪▪▪▪
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
https://www.facebook.com/AbdullaahilHadi
মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সৌদি আরব
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
যাকাত সম্পর্কীত কয়েকটি প্রশ্নোত্তর
💰💵💰💴💷💰💵💰💵
❒ প্রশ্ন: বেনামাযী-ফাসিককে যাকাত দেয়া জায়েয আছে কি?
➖➖➖➖➖
উত্তর:
যাকাতের আটটি খাতের একটি হল, গরীব -অসহায় মানুষ।( দেখুন সূরা তওবা: ৬০ নং আয়াত)
সুতরাং যে কোন গরীব মানুষকে যাকাত দেয়া জায়েয। দ্বীনদার গরীব মানুষকে যাকাত দেয়া যেমন জায়েয আছে তেমনি ফাসেক বা পাপাচারে লিপ্ত বা আধা নামাযী ব্যক্তিকেও যাকাত দেয়া জায়েয আছে যদি তাকে এর মাধ্যমে পাপাচার থেকে ফিরিয়ে আনার আশা করা যায়। অনুরূপভাবে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোন কাফিরকেও যাকাত দেয়া জায়েয আছে।
তবে নামাযী, দ্বীনদার, গরীব মানুষকে যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
আর এমন ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া উচিৎ নয়, যার ব্যাপারে আশংকা থাকে যে, সে অর্থ হাতে পেলে গুনাহর কাজে ব্যায় করবে। আল্লাহ তাওফিকদান কারী।
আল্লাহু আলাম।
✒✒✒✒
❒ কাফেরদেরকে যাকাত/ওশর দেয়া বৈধ
প্রশ্ন: আমরা ধানের যাকাত (ওশর) বের করি। সেখান থেকে সারা বছর ভিখারীদেরকে ভিক্ষা দেয়া হয়। তাদের মধ্যে মুসলিম-অমুসলিম (হিন্দু, সাওতাল ইত্যাদি) সকল শ্রেণীর মানুষ থাকে। এখন প্রশ্ন হল, এই যাকাতের ধান কি কাফেরদেরকে ভিক্ষা হিসেবে দেওয়া জায়েয আছে?
➖➖➖➖➖
উত্তর: অমুসলিমদের সামনে ইসলামের উদারতা, সৌন্দর্য এবং মহানুভবতা প্রকাশ করা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এটি তাদের অন্তরকে ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার অন্যতম উপায়। সুতরাং ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে অমুসলিমদেরকে যাকাত/ওশর দেয়া জায়েয রয়েছে। হতে পারে, এটি তার হেদায়ের ওসীলা হয়ে যাবে।
আল্লাহ তাআলা যাকাত বণ্টনের আটি খাত নির্ধারণ করে দিয়েছেন। সেগুলোর মধ্যে একটি হল, কাফেরদের অন্তরকে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করা। (সূরা তওবা: ৬০)
তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত হল, সে ব্যক্তি যেন মুহারিব তথা মুসলিমদের সাথে যুদ্ধ লিপ্ত না হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন:
لَّا يَنْهَاكُمُ اللَّـهُ عَنِ الَّذِينَ لَمْ يُقَاتِلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَلَمْ يُخْرِجُوكُم مِّن دِيَارِكُمْ أَن تَبَرُّوهُمْ وَتُقْسِطُوا إِلَيْهِمْ ۚ إِنَّ اللَّـهَ يُحِبُّ الْمُقْسِطِينَ
“দ্বীনের ব্যাপারে যারা তোমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেনি এবং তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেনি, তাদের প্রতি সদাচরণ ও ইনসাফ করতে আল্লাহ তোমাদেরকে নিষেধ করেন না। নিশ্চয় আল্লাহ ইনসাফকারীদেরকে ভালবাসেন।” (সূরা মুমতাহিনাহ: ৮)
মোটকথা,ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে কাফিরদেরকে ওশর/যাকাত প্রদান করা জায়েয ইনশাআল্লাহ।
আল্লাহু আলাম।
✒✒✒✒
ব্যবসায় ইনভেস্টকৃত অর্থ বা প্রদত্ব ঋণের টাকার যাকাত কে দিবে?
❒ প্রশ্ন : কেউ যদি ব্যবসার জন্য কাউকে এই চুক্তিতে টাকা দেয় যে, সে এ টাকা ব্যবসায় ইনভেস্ট করবে। আর যখন যেমন লাভ হয় সেটা নিবে। কিন্ত মুল টাকাটা জমা থাকবে। এখন এ মূল টাকার উপর কি যাকাত দিতে হবে?
➖➖➖➖➖
উত্তর :- কারো টাকা যদি অন্যের নিকট জমা থাকে (সেটা ঋণ হোক অথবা ব্যবসার জন্য হোক) তাহলে মূল মালিক উক্ত টাকার যাকাত আদায় করবে।
তবে যদি উক্ত টাকা ফেরত না পাওয়ার আশংকা করে তাহলে উক্ত টাকার যাকাত আদায় করা আবশ্যক নয়। অবশ্য যদি পরবর্তীতে তা ফেরত পায় তাহলে অতীতে যত বছরের যাকাত আদায় করা হয় নি সবগুলোর একসাথে যাকাত বের করতে হবে। আল্লাহু আলাম।
✒✒✒✒
❒ প্রশ্ন: যাকাতের অর্থ মাদরাসায় দিলে বেশি সওয়াব হবে না কি অসহায় বিধবা মহিলাকে দিলে বেশি সওয়াব হবে?
➖➖➖➖➖
উত্তর:
যাকাতের হকদার হিসেবে আল্লাহ তাআলা গরীব-অসহায় মানুষের কথা সর্বপ্রথম উল্লেখ করেছেন। সুতরাং তাদের কথাই আমাদের সবার আগে ভাবা উচিৎ। তবে পরিস্থিতির আলোকে আগে-পরে করা যায়। যদি দেখা যায়, কোন বিধবা মহিলা আর্থিত অটনে থাকার কারণে খুব কষ্টে জীবন-যাবন করছে এবং তাঁর খোঁজ-খবর নেয়ার মত কেউ নাই অথচ মাদরাসার গরীব শিক্ষার্থীদের চলার মত ব্যবস্থা আছে তাহলে বিধবা মহিলাকেই অগ্রাধিকার দেয়া কতর্ব্য। এ ক্ষেত্রে বেশি সওয়াব হবে।
আর যদি দেখা যায়, বিধবা মহিলার জীবন চলার মত পর্যাপ্ত অর্থকড়ি বিদ্যমান আছে কিন্তু কোন এতিমখানা বা মাদরাসার গরীব ছেলে/মেয়েরা আর্থিক সংকটে পড়ে তাদের জীবন ঝুঁকির মুখে পড়ে গেছে তাহলে সে ক্ষেত্রে মাদরাসার গরিব ছেলে/মেয়েদেরকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
মোটকথা যার প্রয়োজন বেশি তাকে আগে সাহায্য করা প্রয়োজন এবং এটাই উত্তম।
আল্লাহু আলাম।
✒✒✒✒
❒ গরীব-অসহায় মানুষের মেয়ে বিয়ে দেয়া, কর্মসংস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি খাতে কি যাকাতের টাকা দেয়া জায়েয আছে?
গরীব মানুষকে কি মাসিক কিস্তিতে যাকাতের টাকা দেয়া যাবে?
➖➖➖➖➖➖➖
প্রশ্ন: আমরা কি কন্যাদায়গ্রস্ত পিতাকে তার মেয়ের বিয়ের ব্যাবস্থা করার জন্য জাকাতের টাকা দিতে পারি? বাড়ির গরীব কর্মচারী যাদের খাওয়াব ব্যবস্থা আছে কিন্তু থাকার ঘর নাই তাদেরকে কি বাড়ি বানানর জন্য যাকাতের টাকা দিতে পারি? কারও চিকিৎসার খরচ বা কাউকে কর্মঠ করার জন্য রিক্সা বা ভ্যানগাড়ি কিনে দিতে পারি?
কোনো গরীব আত্মীয়কে কি জাকাতের টাকা থেকে প্রতি মাসে কিছু টাকা দেয়া যাবে? জাকাতটা সঠিকভাবে আদায় করা নিয়ে শাইখ দু:চিন্তার মধ্য থাকি। দয়া করে একটু সঠিক টা জানাবেন। জাযাকাল্লাহ খাইরান।
উত্তর:
যাকাত প্রদানের ৮টি খাতের মধ্যে অন্যতম হল, গরীব, অসহায়-নি:স্ব মানুষ। (সূরা তাওবা: ৬০ নং আয়াত)
অত:এব কোন অভাবী মানুষ যদি অর্থসংকটে তার কন্যার বিয়ে দিতে না পারে তাহলে তাকে এ কাজে সাহায্যের জন্য যাকাত দেয়া জায়েয আছে।
অনুরূপভাবে অসহায়-গরীব মানুষের বাসস্থান তৈরি, কর্মসংস্থান, চিকিৎসা ইত্যাদি প্রয়োজনে যাকাতের টাকা দেয়া জায়েয রয়েছে।
মাসিক কিস্তিতে যাকাতের টাকা দান করা:
প্রতি মাসে গরীব মানুষকে কিস্তুিতে যাকাত দেয়ার ব্যাপারে আলেমদের মত হল, মাসিক কিস্তিতে অগ্রীম যাকাত দেয়া জায়েয আছে। কিন্তু যাকাত ফরজ হওয়ার পর এমনটি করা জায়েয হবে না।
উদাহরণ: আগামী এপ্রিল ২০১৯ এ কারো যাকাত ফরজ হবে। এখন সে যদি কোন গরিব মানুষকে চলতি এপ্রিল ২০১৮ থেকে প্রতি মাসে অল্প অল্প করে উক্ত সম্পদের যাকাত প্রদান করতে থাকে যেন বছর পূর্ণ হওয়ার পূর্বেই যাকাত আদায় সম্পন্ন হয় তাহলে এতে এটা জায়েয হবে।
পক্ষান্তরে যাকাত ফরজ হওয়ার পর তা আদায়ে বিলম্ব করা জায়েয হবে না রবং তা অনতি বিলম্বে হকদারদের নিকট পৌঁছাতে হবে। কেননা, যাকাত আদায় করার পূর্বেই সে মৃত্যু মুখে পতিত হতে পারে অথবা অর্থ-সম্পদ ক্ষয়-ক্ষতির মুখে পড়তে পারে। আর তখন যাকাতের ফরয দায়িত্ব তার কাঁধে অবশিষ্ট থেকে গেল। তাই যথাসম্ভব তাড়াতাড়ি যাকাত বের করে হকদারদের নিকট পৌঁছিয়ে দিতে হবে; ইচ্ছাকৃত বিলম্ব করা যাবে না।
তবে যাকাত ফরজ হওয়ার পর যদি তা বের করে অন্য কাউকে বণ্টনের দায়িত্ব প্রদান করা হয় আর সে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি মাসিক কিস্তিতে কোন গরীবকে প্রদান করে তাহলে সে ক্ষেত্রে জায়েয হবে। কেননা এ ক্ষেত্রে সে ব্যক্তি মারা গেলে বা সম্পদ নষ্ট হয়ে গেলেও যাকাতের টাকা নষ্ট হবে না বা তা বণ্টনে সমস্যা হবে না বলে আশা করা যায়।
আল্লাহু আলাম।
---------------
উত্তর প্রদানে:
শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
https://www.facebook.com/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার.ksa
স্ত্রীর পক্ষ স্বামীকে যাকাত প্রদানের বিধান
▬▬❖❖❖▬▬▬▬
প্রশ্ন: স্বামীর যদি অনেক ঋণ থাকে এবং বউ যদি কাজ করেন আর তা কাছে যাকাত দেওয়ার মতো টাকা এবং সোনা-গহনা ইত্যাদি থাকে তাহলে সে কি তার স্বামীকে ঋণ পরিশোধের জন্য যাকাতের টাকা থেকে কিছু দিতে পারবে? এটা কতটুকু জায়েজ হবে?
উত্তর:
হ্যাঁ, স্ত্রী সম্পদশালী হলে তার ঋণগ্রস্ত স্বামীকে যাকাত দিতে পারবে।
কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে এমন গরিব-অসহায় ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া জায়েজ যাদের ভরণ-পোষণ দেয়া যাকাত দাতার জন্য ফরয নয়। যেমন: পিতা, মাতা, স্ত্রী প্রমুখকে যাকাত দেয়া যাবে না। কেননা তাদের ভরণ-পোষণ দেয়া ফরয।
কিন্তু ভাই, বোন, চাচা, চাচী, ফুফা, খালু, মামা ইত্যাদি ব্যক্তিদেরকে যাকাত দেয়া যাবে যদি তারা যাকাত পাওয়ার হকদার হয়।
এমন কি স্ত্রী যদি সম্পদশালী হয় আর স্বামী ঋণগ্রস্ত হয় আর আর্থিক অভাবে ঋণ পরিশোধে অক্ষম হয় তাহলে তাহলে স্ত্রী তার স্বামীকে যাকাতের অর্থ দিয়ে সাহায্য করতে পারে। শরিয়তে এতে কোনো বাধা নেই। কেননা, স্বামীর ভরণ-পোষণ দেয়া স্ত্রীর জন্য ফরয নয়।
➤ এ মর্মে হাদিস হল:
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ ـ رضى الله عنه ـ خَرَجَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم فِي أَضْحًى أَوْ فِطْرٍ إِلَى الْمُصَلَّى ثُمَّ انْصَرَفَ فَوَعَظَ النَّاسَ وَأَمَرَهُمْ بِالصَّدَقَةِ فَقَالَ " أَيُّهَا النَّاسُ تَصَدَّقُوا ". فَمَرَّ عَلَى النِّسَاءِ فَقَالَ " يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ تَصَدَّقْنَ، فَإِنِّي رَأَيْتُكُنَّ أَكْثَرَ أَهْلِ النَّارِ ". فَقُلْنَ وَبِمَ ذَلِكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ قَالَ " تُكْثِرْنَ اللَّعْنَ وَتَكْفُرْنَ الْعَشِيرَ، مَا رَأَيْتُ مِنْ نَاقِصَاتِ عَقْلٍ وَدِينٍ أَذْهَبَ لِلُبِّ الرَّجُلِ الْحَازِمِ مِنْ إِحْدَاكُنَّ يَا مَعْشَرَ النِّسَاءِ ". ثُمَّ انْصَرَفَ فَلَمَّا صَارَ إِلَى مَنْزِلِهِ جَاءَتْ زَيْنَبُ امْرَأَةُ ابْنِ مَسْعُودٍ تَسْتَأْذِنُ عَلَيْهِ فَقِيلَ يَا رَسُولَ اللَّهِ هَذِهِ زَيْنَبُ فَقَالَ " أَىُّ الزَّيَانِبِ ". فَقِيلَ امْرَأَةُ ابْنِ مَسْعُودٍ. قَالَ " نَعَمِ ائْذَنُوا لَهَا ". فَأُذِنَ لَهَا قَالَتْ يَا نَبِيَّ اللَّهِ إِنَّكَ أَمَرْتَ الْيَوْمَ بِالصَّدَقَةِ، وَكَانَ عِنْدِي حُلِيٌّ لِي، فَأَرَدْتُ أَنْ أَتَصَدَّقَ بِهِ، فَزَعَمَ ابْنُ مَسْعُودٍ أَنَّهُ وَوَلَدَهُ أَحَقُّ مَنْ تَصَدَّقْتُ بِهِ عَلَيْهِمْ. فَقَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم " صَدَقَ ابْنُ مَسْعُودٍ، زَوْجُكِ وَوَلَدُكِ أَحَقُّ مَنْ تَصَدَّقْتِ بِهِ عَلَيْهِمْ "
আবু সা‘ঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ঈদুল আযহা বা ঈদুল ফিতর দিনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঈদগাহে গেলেন এবং সালাত শেষ করলেন। পরে লোকদের উপদেশ দিলেন এবং তাদের সদকা দেওয়ার নির্দেশ দিলেন আর বললেন:
“লোক সকল! তোমরা সদকা দিবে। তারপর মহিলাগণের নিকট গিয়ে বললেন: মহিলাগণ তোমরা সদকা দাও। আমাকে জাহান্নামে তোমাদেরকে অধিক সংখ্যক দেখানো হয়েছে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এর কারণ কি? তিনি বললেন: তোমরা বেশী অভিশাপ দিয়ে থাক এবং স্বামীর অকৃতজ্ঞ হয়ে থাক। হে মহিলাগণ! জ্ঞান ও দ্বীনে অপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও দৃঢ়চেতা পুরুষের বুদ্ধি হরণ কারিণী তোমাদের মত কাউকে দেখিনি।”
যখন তিনি ফিরে এসে ঘরে পৌঁছলেন, তখন ইবনে মাস’উদ (রাঃ) এর স্ত্রী যায়নাব (রাঃ) তাঁর কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলেন।
বলা হল, হে আল্লাহর রাসূল, যায়নাব এসেছেন।
তিনি বললেন, কোন যায়নাব?
বলা হল, ইবনে মাস’উদের স্ত্রী।
তিনি বললেন: হ্যাঁ, তাকে আসতে দাও।
তাকে অনুমতি দেওয়া হল।
তিনি বললেন: হে আল্লাহর নবী, আজ আপনি সা’দকা করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমার অলংকার আছে। আমি তা সা’দকা করব ইচ্ছা করেছি। ইবনে মাস’উদ (রাঃ) (তার স্বামী) মনে করেন, আমার এ সদকায় তাঁর এবং তার সন্তানদেরই হক বেশী।
তখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ইবনে মাস’উদ (রাঃ) ঠিক বলেছে। “তোমার স্বামী ও সন্তানই তোমার এ সদকায় অধিক হকদার।”
সহীহ বুখারী, হাদিস নম্বর: [1377]
অধ্যায়ঃ ২১/ যাকাত (كتاب الزكاة)
ইসলামিক ফাউন্ডেশন
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬❖❖❖▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
সুস্থ ও সুঠাম দেহের অধিকারী ভিক্ষুককে দান করার বিধান
এবং ইসলামের দৃষ্টিতে ভিক্ষাবৃত্তির ভয়াবহতা
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
প্রশ্ন: আমরা জানি, ইসলামে অভাবীকে সাহায্য করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং যে চায় তাকে ধমক দিতে নিষেধ করা হয়েছে। কিন্তু মাঝে মাঝে এমন কিছু মানুষ ভিক্ষা চাইতে আসে যারা সম্পূর্ণ সুস্থ এবং সুঠাম দেহের অধিকারী। তাদের জিজ্ঞাসা করলে নানা অজুহাত দেখায়। এমন কি তাদের যদি কাজ দিয়ে দিতে চাই তাও তারা করবে না। উল্টা এমন কথা বললে খারাপ কথা বলে। বলে, ছোটলোক! গরিব মানুষের পেটে লাথি মারে ইত্যাদি। এমন অবস্থায় কী করা উচিৎ?
উত্তর:
কেউ যদি আপনার নিকট অভাব-অনটনের কথা বলে সাহায্য/ভিক্ষা চায় আর তাকে সত্যিই অভাবী মনে হয় তাহলে তাকে যথাসম্ভব দান করার চেষ্টা করবেন। চাই সাধারণ দান-সদকা হোক অথবা যাকাত হোক।
আর যদি জানতে পারেন যে, সে অভাবী নয় বা সে ভিক্ষাকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করেছে তাহলে তার নিকট অপারগতা প্রকাশ করবেন এবং তাকে ভিক্ষা দেয়া থেকে বিরত থাকবেন।
এ ক্ষেত্রে যদি সুন্দর পন্থায় ভালো কথার মাধ্যমে তাকে নসিহত করা সম্ভব হয় তাহলে নি:সন্দেহে তা করা উচিৎ। কেননা ইসলামের দৃষ্টিতে একান্ত নিরুপায় অবস্থা ছাড়া ভিক্ষা করা হারাম। হাদিসে আখিরাতে সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ভিক্ষাবৃত্তির করুণ পরিণতির কথা বর্ণিত হয়েছে।
ইমাম ইবনুল কাইয়েম রাহ. বলেন:
المسألة في الأصل حرام، وإنما أبيحت للحاجة والضرورة
“প্রকৃতপক্ষে ভিক্ষা করা হারাম। তবে কেবল প্রয়োজন ও একান্ত জরুরি ক্ষেত্রে তার বৈধতা দেয়া হয়েছে।”
সুতরাং এ ধরণের কথিত ভিক্ষুকের নিকট সুন্দর ভাষায় ভিক্ষাবৃত্তি সংক্রান্ত ইসলামের নির্দেশনা পৌঁছানো এবং এ বিষয়ে তাকে নসিহত করা কর্তব্য।
◉ একান্ত নিরুপায় অবস্থা ছাড়া ভিক্ষা করা হারাম:
নিম্নে এ প্রসঙ্গে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হল:
🔸 ১. হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:
عَنْ قَبِيصَةَ بْنِ مُخَارِقٍ, قَالَ: أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَسْتَعِينُهُ فِي حَمَالَةٍ , فَقَالَ: ” أَقِمْ عِنْدَنَا فَإِمَّا أَنْ نَتْحَمَّلَهَا وَإِمَّا أَنْ نُعِينَكَ وَاعْلَمْ أَنَّ الْمَسْأَلَةَ لَا تَصْلُحُ إِلَّا لِأَحَدِ ثَلَاثَةِ رِجَالٍ: رَجُلٍ تَحَمَّلَ عَنْ قَوْمٍ حَمَالَةً فَسَأَلَ حَتَّى يُؤَدِّيَهَا ثُمَّ يُمْسِكُ , وَرَجُلٍ أَصَابَتْهُ جَائِحَةٌ أَذْهَبَتْ مَالَهُ فَسَأَلَ حَتَّى يُصِيبَ سِدَادًا مِنْ عَيْشٍ أَوْ قِوَامًا مِنْ عَيْشٍ ثُمَّ يُمْسِكُ , وَرَجُلٍ أَصَابَتْهُ حَاجَةٌ حَتَّى يَشْهَدَ ثَلَاثَةٌ مِنْ ذَوِي الْحِجَى أَوْ مِنْ ذَوِي الصَّلَاحِ فِي قَوْمِهِ أَنْ قَدْ حَلَّتْ لَهُ الْمَسْأَلَةُ , وَمَا سِوَى ذَلِكَ مِنَ الْمَسَائِلِ سُحْتٌ يَأْكُلُهُ صَاحِبُهُ سُحْتًا يَا قَبِيصَةُ
আবু বিশর কাবিসা ইবনে মুখারেক রা. থেকে বর্ণিত, একবার এক অর্থদণ্ডের দায়িত্ব আমার ঘাড়ে থাকলে আমি সে ব্যাপারে সাহায্য নিতে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এলাম। তিনি বললেন, ‘‘সদকার মাল আসা পর্যন্ত তুমি অবস্থান কর। এলে তোমাকে তা দেওয়ার আদেশ করব।’’
অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘হে কাবিসা! তিন ব্যক্তি ছাড়া আর কারো জন্য চাওয়া বৈধ নয়:
▪ ১. যে ব্যক্তি অন্য লোকদের অর্থদণ্ড পরিশোধের দায়িত্ব নিবে (কারো দিয়াত তথা রক্তপণ কিংবা জরিমানা দেওয়ার জামিন হবে), তার জন্য চাওয়া হালাল। অতঃপর তা পরিশোধ হয়ে গেলে সে চাওয়া বন্ধ করবে।
▪ ২. দুর্যোগ কবলিত হয়ে যার অর্থ-সম্পদ ধ্বংস হয়ে যাবে, তার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত চাওয়া বৈধ, যতক্ষণ তার সচ্ছল অবস্থা ফিরে না আসে।
▪ ৩. যে ব্যক্তি অভাবী হয়ে পড়বে এবং তার গোত্রের তিনজন জ্ঞানী বা সৎ লোক এ কথার সাক্ষ্য দেবে যে, অমুক অভাবী, তখন তার জন্য চাওয়া বৈধ। আর এ ছাড়া হে কাবিসা, অন্য লোকের জন্য চেয়ে (মেগে) খাওয়া হারাম। সে মাল খেলে হারাম খাওয়া হবে।’’
(মুসলিম ১০৪৪, নাসায়ী ২৫৭৯, ২৫৯১, আবু দাউদ ১৬৪০, আহমদ ১৫৪৮৬, ২০০৭৮, দারেমী ১৬৭৮)
🔸 ২. নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:
مَنْ سَأَلَ النَّاسَ أَمْوَالَهُمْ تَكَثُّرًا فَإِنَّمَا يَسْأَلُ جَمْرًا فَلْيَسْتَقِلَّ أَوْ لِيَسْتَكْثِرْ
“যে ব্যক্তি সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মানুষের নিকট অর্থ চায় সে মূলত: (জাহান্নামের) জলন্ত আঙ্গার চায়। অতএব সে কম-বেশি যা ইচ্ছা যাক।” [মুসলিম, অধ্যায়ঃ যাকাত, অনুচ্ছেদঃ মানুষের কাছে ভিক্ষা চাওয়া নাজায়েয।]
🔸 ৩. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
لأَنْ يَأْخُذَ أَحَدُكُمْ حَبْلَهُ فَيَأْتِيَ بِحُزْمَةِ الْحَطَبِ عَلَى ظَهْرِهِ فَيَبِيعَهَا فَيَكُفَّ اللَّهُ بِهَا وَجْهَهُ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَسْأَلَ النَّاسَ أَعْطَوْهُ أَوْ مَنَعُوهُ
“তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রশি নিয়ে (বন-জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কেটে) পিঠে কাঠের বোঝা বয়ে এনে বিক্রি করার ফলে আল্লাহ তাকে (ভিক্ষাবৃত্তির অপমান থেকে) রক্ষা করেন তাহলে তা মানুষের নিকট তার হাতপাতার চেয়ে উত্তম। তারা দিতেও পারে নাও পারে।” [সহিহ বুখারী, যাকাত অধ্যায়: হাদিস ৫৫০]
🔸 ৪. আব্দুল্লাহ ইবনে ‘উমর রা. বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
مَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَسْأَلُ النَّاسَ حَتّى يَأْتِيَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَيْسَ فِي وَجْهِه مُزْعَةُ لَحْمٍ
“যে ব্যক্তি সর্বদা মানুষের কাছে ভিক্ষা করতে থাকে কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে উঠবে যে, তখন তার মুখমণ্ডলে গোশত থাকবে না।” [সহীহ বুখারী ১৪৭৪ ও মুসলিম ১০৪০]
🔸 ৫. আবু কাবশা আল আনমারী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম কে বলতে শুনেছেন, তিনি বলেনঃ
ثَلَاثَةٌ أُقْسِمُ عَلَيْهِنَّ وَأُحَدِّثُكُمْ حَدِيثًا فَاحْفَظُوهُ قَالَ مَا نَقَصَ مَالُ عَبْدٍ مِنْ صَدَقَةٍ وَلَا ظُلِمَ عَبْدٌ مَظْلَمَةً فَصَبَرَ عَلَيْهَا إِلَّا زَادَهُ اللَّهُ عِزًّا وَلَا فَتَحَ عَبْدٌ بَابَ مَسْأَلَةٍ إِلَّا فَتَحَ اللَّهُ عَلَيْهِ بَابَ فَقْرٍ أَوْ كَلِمَةً نَحْوَهَا
“তিনটি বিষয়ের উপর আমি শপথ করছি এবং তোমাদের কাছে একটি হাদীছ বর্ণনা করছি, তোমরা তা মুখস্ত করে রাখ। তিনি বলেনঃ উক্ত তিনটি বিষয় হল
▪ ১. দান করলে বান্দার সম্পদ কমে না।
▪ ২. কারো উপর জুলুম করা হলে সে যদি ধৈর্য ধারণ করে তবে আল্লাহ তার মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।
▪ ৩. যখন কোন বান্দা ভিক্ষার দ্বার খুলে দেয় (ভিক্ষাবৃত্তি শুরু করে) তখন আল্লাহ তার জন্য অভাবের দ্বার উন্মুক্ত করে দেন।” (অথবা তিনি এ জাতীয় একটা কথা বলেছেন)।
[সহিহ তারগিব ওয়াত তাহরিব অধ্যায়: ইখলাস (একনিষ্ঠতা), পরিচ্ছেদ: ইখলাস, সত্যবাদিতা ও সৎ নিয়তের প্রতি উদ্বুদ্ধ করণ, হা/১৬]
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে কেবল তিনি ব্যতীত তাঁর সকল সৃষ্টি জগত থেকে মুখাপেক্ষীহীন করুন এবং এমন অভাব-অনটন থেকে হেফাজত করুন যাতে মানুষের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতে হয়। নিশ্চয় তিনি অভাব মুক্ত ও অতীব প্রশংসিত।
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
fb id: AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
প্রশ্নোত্তরে সম্পদের যাকাত
-----------------------
লেখক: আব্দুল্লাহ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল
সম্পাদনায়: আবদুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
৬৪৯. প্রশ্নঃ কত হিজরীতে যাকাত ফরয হয়?
২য় 5 ৩য় 5 ১ম 5 হিজরীতে?
উত্তরঃ ২য় হিজরীতে।
৬৫০. প্রশ্নঃ যাকাত ইসলামের কয় নম্বর স্তম্ভ?
উত্তরঃ ৩য়।
৬৫১. প্রশ্নঃ কোন ধরণের পশুতে যাকাত দিতে হয়?
উত্তরঃ যা বছরের অধিকাংশ সময় মাঠে চরে খায়।
৬৫২. প্রশ্নঃ গরু সর্বনিম্ন কতটি হলে যাকাত ফরয হবে?
উত্তরঃ ৩০টি হলে পূর্ণ ১ বছরের ১টি গরু দিতে হবে।
৬৫৩. প্রশ্নঃ ছাগল সর্বনিম্ন কতটি হলে যাকাত ফরয হবে?
উত্তরঃ ৪০টি হলে ১টি ছাগল যাকাত দিতে হবে।
৬৫৪. প্রশ্নঃ উট সর্বনিম্ন কতটি হলে যাকাত ফরয হবে?
উত্তরঃ ৫টি থাকলে একটি ছাগল যাকাত হিসেবে দিবে।
৬৫৫. প্রশ্নঃ যাবতীয় সম্পদে যাকাত ফরয হওয়ার সময় কখন?
উত্তরঃ নেসাব পূর্ণ হওয়ার পর তাতে এক বছর অতিবাহিত হলে।
৬৫৬. প্রশ্নঃ যমীন থেকে উৎপাদিত কোন্ ধরণের ফসলে যাকাত দিতে হয়?
উত্তরঃ যে সমস্ত ফসল রবি শষ্য বলে গণ্য এবং যা দীর্ঘ মেয়াদের জন্য গুদামজাত করা যায় তাতে যাকাত ফরয।
৬৫৭. প্রশ্নঃ শাক-সব্জিতে যাকাতের পরিমাণ কি?
উত্তরঃ শাক-সব্জিতে কোন যাকাত নেই।
৬৫৮. প্রশ্নঃ যমীন থেকে উৎপাদিত ফসলে যাকাতের নেসাব কি?
উত্তরঃ ৩০০ সা তথা ৬২০ কে.জি।
৬৫৯. প্রশ্নঃ যমীন থেকে উৎপাদিত ফসল যদি বৃষ্টির পানিতে হয়, তবে তাতে যাকাতের পরিমাণ কত?
উত্তরঃ উশর তথা দশভাগের একভাগ।
৬৬০. প্রশ্নঃ যমীন থেকে উৎপাদিত ফসল যদি সেচের পানিতে হয়, তবে তাতে যাকাতের পরিমাণ কত?
উত্তরঃ নেছফুল উশর (তথা বিশভাগের এক ভাগ)।
৬৬১. প্রশ্নঃ যাকাতের জন্য স্বর্ণের নেসাব কি?
উত্তরঃ বিশ মিছকাল তথা ৮৫ গ্রাম।
৬৬২. প্রশ্নঃ যাকাতের জন্য রৌপ্যের নেসাব কি?
উত্তরঃ ১৪০ মিছকাল তথা ৫৯৫ গ্রাম।
৬৬৩. প্রশ্নঃ স্বর্ণ-রোপ্যে যাকাতের পরিমাণ কত।
উত্তরঃ ৪০ ভাগের একভাগ তথা ২.৫% (আড়াই শতাংশ)
৬৬৪. প্রশ্নঃ টাকাতে যাকাতে পরিমাণ কত?
উত্তরঃ স্বর্ণ বা রৌপ্যের নেসাব পরিমাণ টাকা থাকলে তাতে ২.৫০% হারে যাকাত দিতে হবে।
৬৬৫. প্রশ্নঃ মুসলমানদের উপর ফিৎরা আদায় করাঃ ফরয 5 সুন্নাত 5 কোনটাই নয় 5?
উত্তরঃ ফরয।
৬৬৬. প্রশ্নঃ ফিৎরা কখন আদায় করা উত্তম।
উত্তরঃ ঈদের চাঁদ উঠার পর।
৬৬৭. প্রশ্নঃ ফিৎরা আদায় করার শেষ সময় কখন?
উত্তরঃ ঈদের নামায শুরু হওয়ার পূর্বে।
৬৬৮. প্রশ্নঃ ফিৎরার পরিমাণ কত?
উত্তরঃ এক সা পরিমাণ খাদ্য।
৬৬৯. প্রশ্নঃ কয় শ্রেণীর মানুষকে যাকাত দেয়া যায়?
উত্তরঃ ৮ শ্রেণীর মানুষকে।
৬৭০. প্রশ্নঃ যাকাতের হকদার কারা?
উত্তরঃ ১) ফক্বীর
২) মিসকীন
৩) যাকাত আদায়কারী কর্মচারী
৪) ইসলামের প্রতি বিধর্মীদিগকে আকৃষ্ট করা
৫) দাসমুক্ত করা
৬) ঋণগ্রস্থ
৭) আল্লাহর পথে
৮) বিপদ গ্রস্থ মুসাফির।
৬৭১. প্রশ্নঃ কোন অবস্থায় দান করা উত্তম- সুস্থ থাকাবস্থায় নাকি অসুস্থ হলে?
উত্তরঃ সুস্থ অবস্থায় দান করা উত্তম।
৬৭২. প্রশ্নঃ বছরের কোন মাসে দান করলে বেশী ছওয়াব পাওয়া যায়?
উত্তরঃ রামাযান মাসে।
৬৭৩. প্রশ্নঃ কোন ধরণের দানে দ্বিগুণ ছওয়াব পাওয়া যায়?
উত্তরঃ নিকটাত্মীয় গরীবকে দান করলে।
0 Comments