যাকাতুল ফিতর ও ইতিকাফ সংক্রান্ত ২২টি বিষয়ের লিংক
প্রশ্ন:-ফিতরা কাকে বলে?
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে কি দ্বারা এবং কি পরিমাণ ফিতরা দেওয়া হত?
উত্তর :-ফিতরাকে শরীয়তে ‘যাকাতুল ফিতর এবং সাদাকাতুল ফিতর’ বলা হয়েছে। অর্থাৎ ফিতরের যাকাত বা ফিতরের সদকা। ফিতর বা ফাতূর বলা হয় সেই আহারকে যা দ্বারা রোযাদার রোযা ভঙ্গ করে। [আল মুজাম আল ওয়াসীত/৬৯৪]
আর যাকাতুল ফিতর বলা হয় ঐ জরুরী দানকে যা, রোযাদারেরা ঈদুল ফিতর উপলক্ষে অভাবীদের দিয়ে থাকে। [প্রাগুক্ত]
যেহেতু দীর্ঘ দিন রোযা অর্থাৎ পানাহার থেকে বিরত থাকার পর ইফতার বা আহার শুরু করা হয় সে কারণে এটাকে ফিতরের তথা আাহারের যাকাত বলা হয়। [ ফাতহুল বারী ৩/৪৬৩]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে কি দ্বারা এবং কি পরিমাণ ফিতরা দেওয়া হত?
বুখারী শরীফে ইবনে উমর (রাযিঃ) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন: ‘‘আল্লাহর রাসূল যাকাতুল ফিতর স্বরূপ এক সা খেজুর কিংবা এক সা যব ফরয করেছেন মুসলিম দাস ও স্বাধীন, পুরুষ ও নারী এবং ছোট ও বড়র প্রতি। আর তা লোকদের নামাযে বের হওয়ার পূর্বে আদায় করে দিতে আদেশ করেছেন’’। [বুখারী, অধ্যায়: যাকাত হাদীস নং ১৫০৩/ মুসলিম নং ২২৭৫]
উক্ত হাদীসে দুটি খাদ্য দ্রব্যের নাম পাওয়া গেল যা, দ্বারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে ফিতরা দেওয়া হত। একটি হচ্ছে খেজুর অপরটি যব। এবার নিম্নে আর একটি হাদীস পাঠ করুন।
আবু সাঈদ খুদরী (রাযিঃ) বলেন: আমরা-নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে যাকাতুল ফিতর বের করতাম এক সা খাদ্য দ্রব্য কিংবা এক সা যব কিংবা এক সা খেজুর কিংবা এক সা পনীর কিংবা এক সা কিশমিশ।” [ বুখারী- ১৫০৬ মুসলিম-২২৮১]
এই হাদীসে খেজুর ও যব ছাড়া আরও যে কয়েকটি বস্তুর নাম পাওয়া গেল তা হল: কিশমিশ, পনীর এবং খাদ্য দ্রব্য। উল্লেখ থাকে যে, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর বিগত হওয়ার পরে মুআবীয়া (রাযিঃ) এর খেলাফতে অনেকে গম দ্বারাও ফিতরাদিতেন। [ বুখারী হাদীস নং ১৫০৮ মুসলিম ২২৮১ ]
প্রমাণিত হল যে, নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগে যে সব দ্রব্যাদি দ্বারা ফিতরা দেওয়া হয়েছিল তা হল, খেজুর, যব, কিশমিশ, পনীর এবং খাদ্য দ্রব্য। এবং এটাও প্রমাণিত হল যে ফিতরার পরিমাণ ছিল এক সা। যদি নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) খাদ্য দ্রব্য শব্দটি না বলতেন তো আমাদের প্রতি খেজুর, যব, কিশমিশ এবং পনীর দ্বারাই ফিতরা দেওয়া নির্ধারিত হত। কিন্তু আমাদের প্রতি আল্লাহর রহমত দেখুন এবং ইসলামের বিশ্বজনীনতা লক্ষ্য করুন যে খাদ্য দ্রব্য শব্দটি উল্লেখ হয়েছে বলেই উপরোল্লিখিত দ্রব্যাদি যাদের খাবার নয় তারাও নিজ খাবার দ্বারা ফিতরাআদায় করতে পারবেন। আর এখান থেকেই প্রশ্ন আসে যে, ধান দ্বারা ফিতরা দিতে হবে না চাল দ্বারা? দুটিই কি খাদ্যের অন্তর্ভুক্ত
✅👉লেখক: আব্দুর রাকীব (মাদানী) দাঈ, দাওয়াহ সেন্টার খাফজী, সউদী আরব।
• সম্পাদনায়:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব
ফিতরা প্রদানরে সময়সীমা ও বণ্টন পদ্ধতি
====°====
আলহামদুালল্লাহ, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা বাদঃ
ঈদের নামাযের পূর্বে ফিতরা প্রদান করা যেমন ইসলামের একটি সুন্দর বিধান, তেমন তা সঠিক সময়ে ও সঠিক নিয়মে বণ্টন করাও গুরুত্বপূর্ণ বিধান। কিন্তু দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ফিতরা বণ্টনের নিয়ম ভিন্ন ভিন্ন লক্ষ্য করা যায়। তন্মধ্যে একটি বহুল প্রচলিত নিয়ম হচ্ছে: লোকেরা তাদের ফিতরা মসজিদের ইমাম কিংবা গ্রামের সর্দারের কাছে ঈদের নামাযের পূর্বে আর অনেকে নামাযের পরে জমা করে দেয়। ফিতরা দাতারা ধান, গম, চাল এবং অনেকে টাকা দ্বারা ফিতরা দিয়ে থাকেন। অতঃপর ইমাম কিংবা সর্দার সাহেব কিছু দিন পর সেই জমা কৃত ফিতরা বিক্রয় করে দেন। তার পর তিনি সেই মূল্য অর্থাৎ টাকা-পয়সা বিতরণ শুরু করেন। ফিতরা যারা নিতে আসেন তাদের মধ্যে ফকীর-মিসকিন, মাদরাসার ছাত্র এবং ইসলামী প্রতিষ্ঠান ও সংস্থাগুলিও থাকে। এরা অনেকে কাছাকাছি অঞ্চলের হয় আর অনেকে দূরেরও হয়। সাধারণত: এই পদ্ধতিতেই বেশির ভাগ স্থানে ফিতরা বণ্টন করা হয়ে থাক। কোথাও একটু ব্যতিক্রম থাকলে সেটা অবশ্য আলাদা কথা।
এই নিয়মকে কেন্দ্র করে সুন্নতের অনুসারী ভাইদের কয়েকটি বিষয় জানা একান্ত প্রয়োজন।
ক- কি কি জিনিস দ্বারা এবং কত পরিমাণ ফিতরা দেওয়া সুন্নত ?
খ- ফিতরা আদায়ের সময়সীমা কি ?
গ-নিজের ফিতরা নিজে বণ্টন করা উত্তম না ইমাম বা সর্দার দ্বারা বিতরণ করা উত্তম?
ঘ- ইমাম বা সর্দার সাহেব ঈদের পরে ফিতরার দ্রব্যাদি বিক্রয় করা পর্যন্ত যে কয়েক দিন দেরী করেন, তা করা কি ঠিক?
ঙ- ফিতরা পাওয়ার যোগ্য কারা কারা ? বা ফিতরার খাত কি ?
————————————————————–
ক- কি কি জিনিস দ্বারা এবং কত পরিমাণ ফিতরা দেওয়া সুন্নত ?
এর উত্তর সহীহ হাদীসে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে যার, ফল কথা হল: খেজুর, যব, কিশমিশ, পনীর কিংবা প্রধান খাদ্য দ্রব্য দ্বারা ফিতরা দেওয়া সুন্নত, মূল্য দ্বারা নয়। আর এক জন ব্যক্তিকে এক সা’ ফিতরা দিতে হবে, যার পরিমাণ সাধারণ মানুষের চার পূর্ণ অঞ্জলি সমান। [ফাতাওয়া মাসায়েল, মাওলানা কাফী, পৃঃ ১৭২-১৭৩] কেজির ওজনে তা আড়াই কিলোর কম নয়।
ইবনে উমার (রাযি:) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন:
‘‘ আল্লাহর রাসূল যাকাতুল ফিতর স্বরূপ এক ’সা কিংবা এক ’সা যব ফরয করেছেন মুসলিম দাস, স্বাধীন ব্যক্তি, পুরুষ ও নারী এবং ছোট ও বড়র প্রতি। আর তা লোকদের নামাযে বের হওয়ার পূর্বে আদায় করে দিতে আদেশ করেছেন”। [ বুখারী, অধ্যায়: যাকাত হাদীস নং ১৫০৩/ মুসলিম নং ২২৭৫]
উক্ত হাদীসে দুটি খাদ্য দ্রব্যের নাম পাওয়া গেল যা, দ্বারা নবীর যুগে ফিতরা দেওয়া হত। একটি হচ্ছে খেজুর অপরটি যব। এবার নিম্নে আর একটি হাদীস পাঠ করুন।
আবু সাঈদ খুদরী (রাযি:) বলেন :
‘‘আমরা-নবীজীর যুগে যাকাতুল ফিতর বের করতাম এক শ্বা খাদ্য দ্রব্য কিংবা এক শ্বা যব কিংবা এক শ্বা খেজুর কিংবা এক শ্বা পনীর কিংবা এক শ্বা কিশমিশ’’ [ বুখারী- ১৫০৬ মুসলিম-২২৮১]
এই হাদীসে খেজুর ও যব ছাড়া আরও যে কয়েকটি বস্তুর নাম পাওয়া গেল তা হল : কিশমিশ, পনীর এবং খাদ্য দ্রব্য। উল্লেখ থাকে যে, নবীজীর মৃত্যুর পর মুয়াবিয়া (রাযি:) এর খেলাফত কালে অনেকে গম দ্বারা ফিতরা দিতেন। [ বুখারী হাদীস নং ১৫০৮ মুসলিম ২২৮১ ]
খ-ফিতরা আদায় করার সময়সীমা :
ফিতরা আদায় করার উত্তম সময় হচ্ছে ঈদের দিনে ঈদের নামাযে বের হওয়ার পূর্বক্ষণে। অর্থাৎ ফিতরা দিয়ে নামায পড়তে যাওয়া। ইবনে উমার থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাকাতুল ফিতর আদায় করার আদেশ দেন লোকদের নামাযে বের হওয়ার পূর্বে ’’। [ বুখারী, নং ১৫০৯ ]
তবে ফিতরা দেয়ার সময় শুরু হয় রমযানের শেষ দিনে সূর্য ডুবার সাথে সাথে। [ সউদী ফাতাওয়া কমিটি ৯/৩৭৩]
কেউ ঈদের এক দুই দিন পূর্বেও তা দিতে পারে কারণ সাহাবিদের মধ্যে কেউ কেউ ঈদের এক দুই দিন পূর্বে তা আদায় করতেন। [ বুখারী, নং১৫১১]
কেউ ঈদের পরে ফিতরা দিলে সেটা সাধারণ দান হিসাবে গণ্য হবে এবং সে ফিতরার বিশেষ ফজিলত ও মর্যাদা হতে বঞ্চিত থাকবে। [ আবু দাউদ,অধ্যায়: যাকাত,অনুচ্ছেদ: ফিতরের যাকাত ]
গ- ফিতরা নিজে বিতরণ করা :
আসল হচ্ছে প্রত্যেক ব্যক্তি তার ফিতরা সে নিজে হকদারকে পৌঁছে দিবে। [ সউদী ফাতাওয়া কমিটি ৯/৩৮৯]
কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর আদেশ
‘‘ এবং তিনি তা লোকদের নামাযে বের হওয়ার পূর্বে আদায় করে দেয়ার আদেশ করেন’’। কথাটি প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য স্বতন্ত্র আদেশ। এরকম নয় যে, সবাই একত্রে জমা করে তা বিতরণ কর। এই কারণে সাহাবী ইবনে উমার তাঁর ফিতরা হকদারদের এক দুই দিন পূর্বে বিতরণ করে দিতেন। [ বুখারী নং ১৫১১]
* নিয়ম হবে প্রত্যেক ব্যক্তি তার গ্রাম বা শহররে আশে পাশে যাকে ফিতরা পাবার হকদার মনে করবে তাকে ফিতরা দিয়ে আসবে। বর্তমানে সউদী আরবে অধিকাংশ লোকেই এই পদ্ধতিতে ফিতরা আদায় করে থাকে।
* তবে নির্ভরযোগ্য কোন সংস্থা , সর্দার বা ইমামকেও নিজ ফিতরা বণ্টনের প্রতিনিধি করা জায়েজ। [ সউদী ফাতাওয়া কমিটি ৯/৩৮৯] এ ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে ও সঠিক সময়ে বণ্টনের দায়িত্ব তাদের উপর বর্তাবে।
ঘ-ফিতরা একত্রে জমা করে কিছু দিন পর বিক্রয় করে মূল্য বিতরণ করা:
আমাদের মনে রাখা দরকার যে, খাদ্য দ্রব্য দ্বারাই ফিতরা দেওয়া সুন্নত; মূল্য দ্বারা নয়। যেমনটি উপরে বর্ণিত হয়েছে। খাদ্য দ্রব্য বিক্রি করে মূল্য বিতরণ করলে পরোক্ষভাবে মূল্য দ্বারাই ফিতরা দেওয়া হল যা, সুন্নতের বরখেলাফ। আর ঈদের নামাযের পূর্বে ফিতরা আদায় করার যে হাদীসগুলি বর্ণিত হয়েছে তার অর্থ এটা নয় যে, নামাযের পূর্বে ফিতরা জমা কর এবং পরে তা বিতরণ কর। এ বিষয়ে বর্ণিত হাদীসটি যয়ীফ, তবুও আবার পরে বলতে যদি ঈদের কয়েক দিন পরে বিতরণ করা হয়। ঈদের আগে ফকীর- মিসকিনদের হাতে খাবার পৌঁছালে না তারা আনন্দিত হবে বা খুশি করার সুযোগ পাবে। নচেৎ তাদের যেই সমস্যা অন্য দিনে থাকে তা ঈদের দিনেও থাকবে।
এ বিষয়ে সউদী স্থায়ী উলামা পরিষদের ফতোয়া : জেদ্দার জামইয়াতুল বির (জন কল্যাণ সংস্থা) নামক সংস্থা সউদী ফাতাওয়া বোর্ডের নিকট প্রশ্ন করে যে, তারা অনেক এতীম, অভাবী ছাত্র, দুস্থ পরিবার ও বিকলাঙ্গদের আর্থিক সহযোগিতা সহ খাবার দ্রব্যাদি সরবরাহ করে থাকে। তারা কি লোকদের ফিতরা নিয়ে পরে ধীরে ধীরে বিতরণ করতে পারবে ? কিংবা টাকা-পয়সা নিয়ে তা দ্বারা পরে খাদ্য দ্রব্য কিনে তাদের মাঝে বিতরণ করতে পারবে ?
উত্তরে ফাতায়া বোর্ড বলেন : সংস্থার উপর জরুরী যে, তারা যেন ফিতরার হকদারদের মাঝে তা ঈদের নামাযের পূর্বেই বণ্টন করে দেয়। এর বেশী দেরী করা জায়েজ নয় ; কারণ নবী (সা:) ফকীরদের মাঝে তা ঈদের নামাযের পূর্বে পৌঁছে দিতে আদেশ করেছেন। সংস্থা ফিতরা দাতার পক্ষ হতে এক জন প্রতিনিধি স্বরূপ। সংস্থা সেই পরিমাণেই ফিতরা গ্রহণ করবে , যেই পরিমাণ সে ঈদের নামাযের পূর্বে বণ্টন করতে সক্ষম। আর ফিতরায় মূল্য দেওয়া জায়েজ নয়। কারণ শরীয়তী দলীলসমূহ খাদ্য বস্তু দ্বারা ফিতরা বের করাকে জরুরী করেছে। তাই শরীয়তী দলীলের পরিবর্তে কোন মানুষের কথার দিকে ভ্রুক্ষেপ করা যাবে না। আর ফিতরা দাতারা যদি সংস্থাকে অর্থ দেয় এই উদ্দেশ্যে যে সংস্থা সেই অর্থ দ্বারা খাদ্য দ্রব্য ক্রয় করে তা ফকীরদের মাঝে বিতরণ করবে, তাহলে সংস্থাকে ঈদের নামাযের পূর্বেই তা বাস্তবায়ন করতে হবে। সংস্থার জন্য বৈধ নয় যে, সে মূল্য বের করবে। [ ফতুয়া নম্বর ১৩২৩১, খণ্ড ৯/৩৭৭]
ঙ-ফিতরার হকদার কারা ?
ফিতরা পাবার যোগ্য কারা বা ফিতরার হকদার কোন্ কোন্ প্রকারের লোকেরা ? এ বিষয়ে ইসলামী বিদ্বানগণের মতভেদ রয়েছে।
একদল বিদ্বান মনে করেন যারা সাধারণ সম্পদের যাকাতের হকদার তারাই ফিতরের যাকাতের (ফিতরার) হকদার। আর তারা হল আট প্রকারের লোক:
১- ফকীর
২- মিসকিন
৩- সাদাকা আদায়ের জন্য নিযুক্ত কর্মচারী
৪- যাদের অন্তর ইসলামের পথে আকর্ষণ করা প্রয়োজন
৫-দাস-মুক্তির জন্যে
৬- ঋণগ্রস্তদের ঋণ পরিশোধের উদ্দেশ্যে
৭- আল্লাহর রাস্তায়
৮- মুসাফিরদের সাহায্যার্থে ( সূরা তওবা /৬০]
এই মত পোষণকারীদের দলীল হল : ফিতরের সাদাকাকে অর্থাৎ ফিতরাকে নবীজী যাকাত ও সাদাকা বলেছেন তাই যেটা মালের যাকাতের খাদ হবে, সেটাই ফিতরারও হবে। সাদাকার যেই খাদ আল্লাহ সূরা তওবায় উল্লেখ করেছেন সেই খাদ সাদাকাতুল ফিতরের জন্যও হবে।
অন্য এক দল বিদ্বান মনে করেন : সাদাকাতুল ফিতর বা ফিতরা কেবল ফকীর মিসকিনদের হক, অন্যদের নয়।
এই মত পোষণকারীদের দলীল হল : ইবনে আব্বাস (রাযি:) এর হাদীস, তিনি বলেন : আল্লাহর রাসূল ফিতরের যাকাত (ফিতরা) ফরয করেছেন রোজাদারের অশ্লীলতা ও বাজে কথা-বার্তা হতে পবিত্রতা এবং মিসকিনদের আহার স্বরূপ .. ’’ [আবু দাউদ, যাকাতুল ফিতর নং ১৬০৬/ হাদীস হাসান, ইরওয়াউল গালীল নং ৮৪৩]
এই মতকে সমর্থন জানিয়েছেন ইবনে তাইমিয়্যাহ, ইবনুল ক্বাইয়্যূম, শাওকানী, আযীমাবাদী, ইবনু উসাইমীন সহ আরও অনেকে। [ দেখুন: মাজমুউ ফাতাওয়া ২৫/৭৩,যাদুল মাআদ ২/২২, নায়লুল আউত্বার ৩-৪/৬৫৭, আওনুল মা’বূদ ৫-৬/৩, শারহুল মুমতি ৬/১৮৪]
এই মতটিই অধিক সহীহ কারণ :
(ক) এই মতের পক্ষে দলীল বিদ্যমান আর প্রথম মতটি একটি কিয়াস (অনুমান) মাত্র। আর দলীল-প্রমাণের বিদ্যমানতায় কিয়াস বৈধ নয়।
(খ) ফিতরাকে যাকাত বলা হলেও উভয়ের মধ্যে আছে অনেক পার্থক্য। ফিতরা এমন ব্যক্তির উপরও জরুরী যার বাড়িতে সামান্য কিছু খাবার আছে মাত্র। কিন্তু যাকাত কেবল তার উপর জরুরী যে বিশেষ এক ভাল অংকের অর্থের মালিক। যাকাত ধন-সম্পদের কারণে জরুরী হয় কিন্তু ফিতরা ইফতারের কারণে দিতে হয়। এসব কারণে ফিতরা ও যাকাতকে এক মনে করা অসমীচীন।
বাকি থাকলো ফিতরাকে এই কারণে সাদাকা বলা হয়েছে যে, সাদাকা একটি দানের ব্যাপক শব্দ। যাকাত, ফিতরা এবং সাধারণ দানকেও সাদাকা বলা হয়। সাদাকা বললেই যে যাকাতকে বুঝায় তা নয়। যেমন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন : ‘‘ কুল্লু মা’রুফিন সাদাকা’’ অর্থাৎ প্রত্যেক ভাল কাজ সদকা। তবে নি:সন্দেহে প্রত্যেক ভাল কাজ যাকাত নয়। তবুও নবীজী সাদাকা বলেছেন। তাই ফিতরাকে সাদাকা বলার কারণে তা যাকাতের অন্তর্ভুক্ত হবে না।
প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, যাকাতুল ফিতরের খাদসমূহের মধ্যে মাদরাসা ও মসজিদ নেই। কিন্তু মাদ্রাসার ছাত্র, শিক্ষক এবং মসজিদের ইমাম যদি ফকীর মিসকিনদের অন্তর্ভুক্ত হয়, তাহলে তারা ফিতরার হকদার হিসেবে গণ্য হবেন বরং অন্যান্য ফকীর মসিকীনদের থেকে তারা বেশী হকদার হবেন। কারণ এঁরা দ্বীনের শিক্ষা অর্জনে ও অন্যকে শিক্ষা দানে নিয়োজিত, যেই গুণটি অন্য ফকীর মিসকিনদের নেই। [ আর যা সঠিক তা আল্লাহই ভাল জানেন]
✅👉লেখক ও সংকলক : আব্দুর রাকীব (মাদানী)
লিসান্স : মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়
সম্পাদনায়: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
যাকাতুল ফিতর (ফিতরা) হিসেবে টাকা দেয়া সুন্নত না কি খাদ্যদ্রব্য?
➖➖➖➖➖➖
হাদীসে ফিতরা হিসেবে খাদ্যদ্রব্য প্রদানের কথাই বর্ণিত হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে দিনার-দিরহামের প্রচলন ছিল কিন্তু তারা কখনো খাদ্যদ্রব্য ছাড়া দিনার-দিরহাম বা অন্য কিছু দ্বারা ফিতরা প্রদান করেছেন বলে কোন তথ্য পাওয়া যায় না।
কি কি জিনিস দ্বারা এবং কত পরিমাণ ফিতরা দেওয়া সুন্নত?
এর উত্তর সহীহ হাদীসে স্পষ্ট বর্ণিত হয়েছে যার, ফল কথা হল: খেজুর, যব, কিশমিশ, পনীর কিংবা প্রধান খাদ্য দ্রব্য দ্বারা ফিতরা দেওয়া সুন্নত, মূল্য দ্বারা নয়। আর এক জন ব্যক্তিকে এক সা’ ফিতরা দিতে হবে, যার পরিমাণ সাধারণ মানুষের চার পূর্ণ অঞ্জলি সমান। [ফাতাওয়া মাসায়েল, মাওলানা কাফী, পৃঃ ১৭২-১৭৩] কেজির ওজনে তা আড়াই কিলোর কম নয়।
▪ইবনে উমার (রাযি:) হতে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন:
‘‘ আল্লাহর রাসূল যাকাতুল ফিতর স্বরূপ এক ’সা কিংবা এক ’সা যব ফরয করেছেন মুসলিম দাস, স্বাধীন ব্যক্তি, পুরুষ ও নারী এবং ছোট ও বড়র প্রতি। আর তা লোকদের নামাযে বের হওয়ার পূর্বে আদায় করে দিতে আদেশ করেছেন”। [ বুখারী, অধ্যায়: যাকাত হাদীস নং ১৫০৩/ মুসলিম নং ২২৭৫]
উক্ত হাদীসে দুটি খাদ্য দ্রব্যের নাম পাওয়া গেল যা, দ্বারা নবীর যুগে ফিতরা দেওয়া হত। একটি হচ্ছে খেজুর অপরটি যব। এবার নিম্নে আর একটি হাদীস পাঠ করুন।
▪আবু সাঈদ খুদরী (রাযি:) বলেন :
‘‘আমরা-নবীজীর যুগে যাকাতুল ফিতর বের করতাম এক শ্বা খাদ্য দ্রব্য কিংবা এক সা’ যব কিংবা এক সা’ খেজুর কিংবা এক সা’ পনীর কিংবা এক শ্বা কিশমিশ’’ [ বুখারী- ১৫০৬ মুসলিম-২২৮১]
এই হাদীসে খেজুর ও যব ছাড়া আরও যে কয়েকটি বস্তুর নাম পাওয়া গেল তা হল : কিশমিশ, পনীর এবং খাদ্য দ্রব্য। উল্লেখ থাকে যে, নবীজীর মৃত্যুর পর মুয়াবিয়া (রাযি:) এর খেলাফত কালে অনেকে গম দ্বারা ফিতরা দিতেন। [ বুখারী হাদীস নং ১৫০৮ মুসলিম ২২৮১ ]
তাই আমরা যদি সুন্নত অনুসরণ করতে চাই তাহলে আমাদের সমাজের প্রচলিত প্রধান খাদ্যদ্রব্য তথা চাল দ্বারা ফিতরা দেয়া কর্তব্য। ফিতরার মুল্য দ্বারা অথবা সেটাকা দিয়ে পোশাক, চিনি, তেল, মসলা, শেমাই, গোস্ত ইত্যাদি কিনে দেয়া সুন্নত পরিপন্থী।
তবে একান্ত জরুরি অবস্থায় টাকা দ্বারা ফিতরা দেয়া যেতে পারে বলে, অনেক আলেম মন্তব্য করেছেন। যেমন, রোগীর চিকিৎসার জন্য জন্য এই মুর্হতে টাকা প্রয়োজন। চাল দিলে সেটা বিক্রয় করে টাকা সংগ্রহ করতে গেলে রোগীর সমস্যা বেড়ে যেতে পারে...বা এ জাতীয় পরিস্থিতে ফিতরার মূল্য দিলেও আদায় হয়ে যাবে। কারণ এখানে বিশেষ পরিস্থিতে মুল্য দ্বারা ফিতরা প্রদান করা হয়েছে।
সুতরাং আমাদের কতর্ব্য খাদ্যদ্রব্য দেয়া। কেউ যদি তা নিতে না চায় তাহলে এমন ব্যক্তিকে দেয়া উচিৎ যে তা গ্রহণ করবে।
দুর্ভাগ্য হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের হানাফী সামাজ থেকে খাদ্যদ্রব্য দেয়ার সুন্নতটি প্রায় উঠে যাওয়ার কারণে তারা প্রতি বছর টাকা নির্ধারণ করে থাকেন আর গরীবরাও টাকা ছাড়া অন্য কিছু নিতে চায় না। তবে আল হামদুলিল্লাহ অধিকাংশ আহলে হাদীস সমাজে খাদ্যদ্রব্য দেয়ার সুন্নতটি এখনো প্রচলিত রয়েছে।
সৌদি আবরেও এখনো ফিতরা হিসেবে চাল দেয়ার সুন্নতটি চালু আছে। এখানে চেরিটেবল সোসাইটিগুলোতে চাল ও টাকা উভয়টি নেয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে টাকা দ্বারা চাল কিনে গরীবদের মাঝে বিতরণ করা হয়।
আল্লাহু আলাম
✒✒✒✒✒✒
✅👉উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সউদী আরব
একজনের ফিতরা একাধিক গরিবের মাঝে বণ্টন করা
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
প্রশ্ন: ফিতরার আড়াই কিলো/তিন কিলো চাউল কি একজনকেই দিতে হবে নাকি দুজনকে ভাগ করে দিতে পারব?
উত্তর:
রমাযান শেষে ঈদের সালাতের পূর্বে ফিতরা আদায় করা ফরয। এর হকদার হল, গরিব-অসহায় মানুষ। এতে কমপক্ষে ঈদের দিন তাদের খাবারের সুব্যবস্থা হয়।
হাদিসে এসেছে:
عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ قَالَ فَرَضَ رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم
زَكَاةَ الْفِطْرِ طُهْرَةً لِلصَّائِمِ مِنْ اللَّغْوِ وَالرَّفَثِ وَطُعْمَةً لِلْمَسَاكِينِ
فَمَنْ أَدَّاهَا قَبْلَ الصَّلَاةِ فَهِيَ زَكَاةٌ مَقْبُولَةٌ وَمَنْ أَدَّاهَا بَعْدَ
الصَّلَاةِ فَهِيَ صَدَقَةٌ مِنْ الصَّدَقَاتِ
ইবনে আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজাদারের অনর্থক কথাবার্তা ও অশালীন আচরণের কাফফারাস্বরূপ এবং গরিব-মিসকিনদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য সদাকাতুল ফিতর (ফিতরা) নির্ধারণ করেছেন। যে ব্যক্তি ঈদের সালাতের পূর্বে তা পরিশোধ করে (আল্লাহ্র নিকট)-তা গ্রহণীয় দান। আর যে ব্যক্তি ঈদের সলাতের পর তা পরিশোধ করে, তাও দানসমূহের অন্তর্ভুক্ত একটি দান।" (ইবনে মাজাহ, অধ্যায়: যাকাত
অনুচ্ছেদ সদাকাতুল ফিতর (ফিতরা)। আবু দাউদ ১৬০৯, বায়হাকী ৪/১৯৭, ইরওয়া ৮৪৩, সহীহ আবু দাউদ ১৪২৭।তহকীক আলবানীঃ হাসান।)
উক্ত হাদিসে আলোক অধিকাংশ আলেম বলেন, ফিতরা খাদ্যদ্রব্য (প্রত্যেক দেশের প্রধান খাদ্যদ্রব্য) হতে হবে। যেহেতু হাদিসে বলা হয়েছে, "এটি গরিব-মিসকিনদের খাদ্য।"
সুতরাং আমাদের দেশে যেহেতু প্রধান খাদ্যদ্রব্য হল চাউল সেহেতু সুন্নত হল, আড়াই/তিন কিলো পরিমাণ চাউল দ্বারা ফিতরা প্রদান করা। আর তা যেভাবে বণ্টন করাকে গরিবদের জন্য অধিক উপকারী হবে বলে মনে হয়ে সেভাবে বণ্টন করা জায়েয আছে।
সুতরাং একজনের ফিতরা যেমন এক বা একাধিক গরিব মানুষের মাঝে বণ্টন করা যায় তেমনি একাধিক ব্যক্তির ফিতরা প্রয়োজনে একজনকেও দেয়া যায়। ফিতরা দাতা সিদ্ধান্ত নিবে, কিভাবে তার ফিতরা বণ্টন করলে গরিব মানুষ বেশি উপকৃত হবে।
তবে সর্বাবস্থায় তা যেন গরিবদের হাতে পৌঁছে-এ দিকটি লক্ষ রাখা অপরিহার্য।
আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
FB/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
প্রশ্ন: প্রবাসীরা কি তাদের ফিতরা দেশে দিতে পারে? দিলে কিভাবে দিবে?
উত্তর:
প্রবাসীরা যদি প্রবাসে গরীব মানুষ পায় তাহলে সেখানে ফিতরা দিবে। এটাই উত্তম। একজন মানুষ যেখানে বসবাস ও আয়-ইনকাম করে সেখানকার গরিব-অসহায় মানুষরা ফিতরা পাওয়ার বেশি হকদার।
কিন্তু যদি মনে হয়, সে দেশের চেয়ে নিজ দেশে বা অন্য কোথাও সঙ্কট ও অভাব-অনটন বেশি তাহলে সেখানে ফিতরা প্রেরণ করা যেতে পারে।
তবে এ ক্ষেত্রে প্রবাসে যে পরিমাণ ফিতরা দিতে হত অন্যত্র দিলে সে পরিমাণটা ঠিক রাখা উত্তম। অর্থাৎ প্রবাসে প্রায় আড়াই বা তিন কিলো পরিমাণ চালের মূল্য সমপরিমাণ দেশে বা যেখানে ফিতরা দিতে চান সেখানে চাল দেয়া উত্তম। এতে হয়ত গরিবরা একটু বেশি উপকৃত হবে।
উল্লেখ্য যে, হাদিসে যেহেতু খাদ্যদ্রব্য দেয়ার কথা বলা হয়েছে তাই সুন্নত অনুসরণ করতে চাইলে খাদ্যদ্রব্য (নিজ এলাকার প্রধান খাদ্যদ্রব্য যেমন, চাল) দিতে হবে। একান্ত অপরিহার্য পরিস্থিতি না হলে মূল্য বা টাকা দ্বারা ফিতরা দেয়া সুন্নত পরিপন্থী।
আল্লাহু আলাম।
- আব্দুল্লাহিল হাদি বিন আব্দুল জলীল
জীবন ঘনিষ্ট কিছু সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর-২
➖➖➖➖➖➖➖➖
❒ ৯) প্রশ্ন: ইন্টারভিউ বা ভাইবা এর পূর্বে কোন কোন দোয়া পড়া উচিত?
❖ উত্তর: পরীক্ষা বা ইন্টারভিউ এর এর জন্য বিশেষ কোন দুআ কুরআন-সুন্নায় বর্ণিত হয় নি। তাই সাধারণভাবে মহান আল্লাহর নিকট নিজের প্রয়োজনে সাহায্য প্রার্থনা করতে হবে।
তবে নিম্নের দুআ দুটি পড়া যেতে পারে:
رَبِّ اشْرَحْ لِي صَدْرِي وَيَسِّرْ لِي أَمْرِي وَاحْلُلْ عُقْدَةً
مِّن لِّسَانِي يَفْقَهُوا قَوْلِي
উচ্চারণ: রাব্বিশ রাহলী সাদরী ওয়া ইয়াসসিরলী আমরী ওয়াহলুল উক্বদাতাম মিল্লিসানী ইয়াফকাহু ক্বাওলী।
“হে আমার পালনকর্তা, আমার বক্ষ প্রশস্ত করে দিন, আমার কাজ সহজ করে দিন এবং আমার জিহবা থেকে জড়তা দূর করে দিন যেন তারা আমার কথা বুঝতে পারে।” (সূরা ত্বাহা: ২৫-২৮)
আরও পড়া যেতে পারে:
((اللَّهُمَّ لَا سَهْلَ إلاَّ مَا جَعَلْتَهُ سَهْلاً، وأنْتَ تَجْعَلُ الحَزْنَ إذَا
شِئْتَ سَهْلاً))
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লা সাহলা ইল্লা মা জাআলতাহু সাহলান, ওয়া আনতা তাজআলুল হাযনা ইযা শি'ইতা সাহলান।
অর্থ: হে আল্লাহ, আপনি যা সহজ করেন সেটা ছাড়া কোন কিছুই সহজ নয়। যখন চান তখন আপনি কঠিন বিষয়কে সহজ করে দেন।(সহীহ ইবনে হিব্বান, সহীহ)
❒ ১০) প্রশ্ন: ওযু, নামায, যে কোন কাজ একবার করার পর মনে হতে থাকে যে, ঠিক মতো হয় নি। একবার ওযু করার পর সন্দেহ হয় যে, ঠিক মতো করলাম কি না। সে জন্য বারবার ওযু করি। তদ্রূপ নামাজও বারবার পড়ি। এক্ষেত্রে আমি কী করব?
❖ উত্তর: এটি একটি শয়তানী কুমন্ত্রণা ও মানসিক সমস্যা। এর মাধ্যমে শয়তান মানুষের মনে সন্দেহ ও বিরক্তি সৃষ্টি করে ইবাদত থেকে দূরে সরাতে চায়।
তাই এ ধরণের সন্দেহ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মহান আল্লাহর নিকট দুআ করতে হবে।
আর এভাবে বারবার সন্দেহ সৃষ্টি হলে তা পাত্তা দেয়া ঠিক নয়। কোন ত্রুটি বা সন্দেহ বিষয়ে যতক্ষণ নিশ্চিত না হবেন ততক্ষণ পুনরায় ওযু করবেন না বা পুনরায় নামায পড়বে না। এভাবে করলে ইনশাআল্লাহ আল্লাহ তাআলা এই কুমন্ত্রণা থেকে রক্ষা করবেন বলে আশা করা যায়।
দুআ করি, আল্লাহ যেন এই মানসিক সমস্যা থেকে আপনাকে হেফাজত করুন। আমীন।
❒ ১১) প্রশ্ন: ফজরের আযান হওয়ার কতক্ষণ পূর্বে সেহরি খাওয়া শেষ করতে হবে?
❖ উত্তর: সুবহে সাদিক উদিত হলে ফজরের সময় শুরু হয়। এর পূর্বে সেহরি খাওয়া শেষ করতে হবে। মুয়াজ্জিন কোনো করণে ফজরের আযান দিতে বিলম্ব করলে সময় দেখে সেহরি খাওয়া বন্ধ করতে হবে। ফজরের ওয়াক্ত শুরু হলে আর কোন কিছু খাওয়া বা পান করা যাবে না।
❒ ১২) প্রশ্ন: মা সবসময় আমাদেরকে অভিশাপ দেন। এমনকি এই রমজানের মাসটির কনও দিন তার মুখ থেকে অভিশাপ বাদ যায় নি। এখন আমরা কী করতে পারি? বুঝ হওয়ার পর থেকেই তাকে এমন করতে দেখে আসছি।
❖ উত্তর: আল্লাহ আপনাদেরকে হেফাজত করুন। আমীন। তারপর, তিনি যদি আপনাদের কোন অন্যায় আচরণে ক্ষিপ্ত হয়ে অভিশাপ দেন তাহলে তার পরিণতি খুব খারাপ। আপনাদের উচিৎ, তার নিকট ক্ষমা চাওয়া এবং তার সাথে সুন্দর আচরণ ও তার সেবার মাধ্যমে তাকে খুশি করা।
কিন্তু যদি আপনাদের পক্ষ থেকে তার প্রতি কোন অন্যায়-অসঙ্গত আচরণ সংঘটিত না হয়ে থাকে তারপরও তিনি অতিরিক্ত বদমেজাজি হওয়ার কারণে বা বদ অভ্যাস জনিত কারণে অনর্থক গালাগালি করেন ও অভিশাপ দেন তাহলে তাতে ইনশাআল্লাহ আপনাদের কোন ক্ষতি হবে না। বরং তিনি এই অন্যায় আচরণের কারণে গুনাহগার হবেন। আল্লাহ তাকে ক্ষমা ও হেদায়েত দান করুন। আমীন।
❒ ১৩) প্রশ্ন: শবে কদরে সূরা দুখান সাতবার ও সূরা ইয়াসীন তিনবার পড়তে হয়। এটা কি সহীহ্?
❖ উত্তর: এ ধরণের কোনও আমল হাদীসে বর্ণিত হয় নি। তাই তা করা ঠিক নয়। সুন্নাত মনে করে করলে তা বিদআত হবে। বরং এ রাতে বেশি বেশি আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন, তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী পড়ার কথা হাদীসে এসেছে। এছাড়াও তাসবীহ, তাহলীল, নফল সালাত ইত্যাদির পাশাপাশি কুরআনুল কারীম যেখান থেকে সুবিধা হয় সেখান থেকে যথাসাধ্য পাঠ করার চেষ্টা করা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ ও রবকতময় কাজ।
❒ ১৪) প্রশ্ন: বাসার কাজের লোকদের ফিতরা দেয়া কি জরুরি? এবং ফিতরা দেয়া জরুরি হলে তার ফিতরা কি তার পরিবারকে দেয়া যাবে?
❖ উত্তর: বাসার কাজের লোকের ফিতরা দেয়া জরুরি নয়। কেননা তারা স্বাধীন তনভূক্ত কর্মচারী। তবে গরীব মানুষ হিসেবে যদি তার পক্ষ থেকে ফিতরা দিয়ে দেন তাহলে আপনারা সওয়াব পাবেন ইনশাআল্লাহ।
আর তার ফিতরা তার পরিবারকে দেয়া যাবে না। বরং তার পরিবারের বাইরের যে কোন গরিব-অসহায় মানুষকে দিতে হবে।
❒ ১৫) প্রশ্ন: অনেক আহলে হাদিস দীনি বোন আমাকে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠান। উদ্দেশ্য দ্বীন প্রচারে সহযোগিতা করা। অনেকের ফ্রেন্ড লিস্টে আমি এরকম দীনি বোনদের এড হতে দেখেছি। প্রশ্ন হচ্ছে, এসব শর্তে কি ফ্রেন্ড লিস্টে নন মাহরাম মহিলাদের এড করা জায়েজ আছে?
❖ উত্তর: দীনী বোনদেরকে লিস্টে রাখা যাবে কিন্তু তাদের সাথে বিনা প্রয়োজনে কথা বলা যাবে না, অপ্রয়োজনীয় চ্যাটিং করা যাবে না বা দুষ্টামি মূলক রিএক্ট দেয়া যাবে না। সর্বোপরি তারা লিস্টে থাকার কারণে যদি নিজের দ্বীন ও চরিত্রের উপর খারাপ প্রভাব পড়ে বা ফিতনায় পড়ার আশংকা তৈরি হয় তাহলে তাদেরকে আন-ফ্রেন্ড করা অপরিহার্য। আল্লাহু আলাম।
➖➖➖➖➖
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় (আল হাদীস এন্ড ইসলামী স্টাডিজ)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব
প্রশ্ন: বেনামাযী-ফাসিককে যাকাত দেয়া যাবে?
উত্তর :
যাকাতের আটটি খাতের একটি হল, গরীব -অসহায় মানুষ। সুতরাং যে কোন গরীব মানুষকে যাকাত দেয়া জায়েয। দ্বীনদার গরীব মানুষকে যাকাত দেয়া যেমন জায়েয আছে তেমনি ফাসেক বা পাপাচারে লিপ্ত বা আধা নামাযী ব্যক্তিকেও যাকাত দেয়া জায়েয আছে যদি তাকে এর মাধ্যমে পাপাচার থেকে ফিরিয়ে আনার আশা করা যায়। অনুরূপভাবে ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার উদ্দেশ্যে কোন কাফিরকেও যাকাত দেয়া জায়েয আছে।
তবে নামাযী, দ্বীনদার, গরীব মানুষকে যাকাত দেয়ার ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেয়া উচিত।
আর এমন ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া উচিৎ নয়, যার ব্যাপারে আশংকা থাকে যে, সে অর্থ হাতে পেলে গুনাহর কাজে ব্যায় করবে। আল্লাহ তাওফিকদান কারী।
আল্লাহু আলাম।
এমন ব্যক্তিকে যাকাত দেয়া উচিৎ নয়, যার ব্যাপারে আশংকা থাকে যে, সে অর্থ হাতে পেলে গুনাহর কাজে ব্যায় করবে। সুতরাং যে ব্যক্তি সুদে টাকা খাটায় তাকে যাকাত দেয়া ঠিক নয়। কারণ সে আপনার দেয়া টাকাকে হারাম কাজে লাগাবে।
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
ইতিকাফের গুরুত্ব, উপকারিতা ও ফযিলত
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ (গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রমাযানে ১০ দিন ইতি-কাফ করতেন। কিন্তু যে বছর তিনি মৃত্যু বরণ করেন সে বছর একটানা ২০ দিন ইতিকাফ করেছেন। (সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ইতি-কাফ, আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত)
✅ ইতিকাফের কতিপয় উপকারিতা:
ঈমানদারের জন্য ইতিকাফে অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে সেগুলো কয়েকটি উল্লেখ করা হল:
❖ ১. এর মাধ্যমে কিছু দিনের জন্য দুনিয়া থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে কেবল আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত থেকে মহান আল্লাহ নৈকট্য হাসিলের বিশাল সুযোগ পাওয়া যায়।
❖ ২. এ সময় অধিক পরিমাণে নফল সালাত, জিকির-আজকার, দুআ, তাসবীহ, তাকবীরে উলা তথা ইমামের প্রথম তাকবীরে সাথে জামাআতে সালাত, মৃত্যুর পরবর্তী জীবন তথা কবর আখিরাত, হাশর-নশর, আল্লাহর দরবারে হিসাব-নিকাশ, পুলসিরাত, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়ে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন মুখস্থ, ইসলামী জ্ঞানার্জন ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করার বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হয়।
❖ ৩. এ ছাড়াও ইতিকাফের ফলে দৃষ্টি হেফাজত, অশ্লীল, অনর্থক ও মিথ্যা কথা থেকে মুখ হেফাজত, গীবত-পরনিন্দা, চুগলখোরি ইত্যাদি অসংখ্য গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হয়।
❖ ৪. রমাযান মাসে ইতিকাফ করার সবচেয়ে বড় ফায়দা হল, শেষ দশকের রাত জেগে ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহ তাওফিক দান করলে ‘লাইলাতুল কদর’ বা শবে কদর লাভ করা সম্ভব হয়-যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। নি:সন্দেহে এটি জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন।
❖ ৫. ইতিকাফ এর মাধ্যমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আদায় করা হয়- যা বর্তমানে মুসলিম সমাজে প্রায় পরিত্যক্ত।
✅ ইতিকাফের ফযিলতে বর্ণিত হাদিসগুলো সহীহ নয়:
ইতিকাফের ফযিলতে কয়েকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সেগুলো কোনটি জঈফ আর কোনটি জাল। হাদিসগুলোর আরবি টেক্সট (সেগুলোর সনদ সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের বক্তব্য সহকারে) নিম্নে প্রদান করা হল:
1- روى ابن ماجه (1781) عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ
صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي الْمُعْتَكِفِ : ( هُوَ يَعْكِفُ الذُّنُوبَ
، وَيُجْرَى لَهُ مِنْ الْحَسَنَاتِ كَعَامِلِ الْحَسَنَاتِ كُلِّهَا ) . ضعفه الألباني
في ضعيف ابن ماجه .
( يَعْكِفُ الذُّنُوب ) أي : يَمْنَع الذُّنُوب. قاله السندي .
2- روى الطبراني والحاكم والبيهقي وضعفه عن ابن عباس قال قال رسول الله
صلى الله عليه وسلم : ( من اعتكف يوما ابتغاء وجه الله جعل الله بينه وبين النار ثلاث
خنادق أبعد مما بين الخافقين ) . ضعفه الألباني في السلسلة الضعيفة (5345). والخافقان
المشرق والمغرب .
3- روى الديلمي عن عائشة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : ( من اعتكف
إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه ) ضعفه الألباني في ضعيف الجامع (5442) .
4- روى البيهقي وضعفه عن الحسين بن علي رضي الله عنهما قال: قال رسول
الله صلى الله عليه وسلم : ( من اعتكف عشرا في رمضان كان كحجتين وعمرتين ) . ذكره الألباني
في "السلسلة الضعيفة" ". (518) وقال : موضوع .
আরও পড়ুন: ইতিকাফ সংক্রান্ত একটি ভুল ধারণা
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
FB/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব
ইতিকাফ সংক্রান্ত একটি ভুল ধারণা
▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬
প্রশ্ন: যদি এলাকার কেউ ইতিকাফে না বসে তাহলে কি পুরো এলাকাবাসী গুনাগার হবে? আর কেউ যদি বসে তাহলে কি পুরো এলাকাবাসী তার সওয়াব লাভ করবে?
উত্তর:
আমাদের দেশে মনে করা হয় যে, সমাজের পক্ষ থেকে এক ব্যক্তিকে অবশ্যই ইতিকাফে বসতে হবে তা না হলে সবাই গুনাহগার হবে। কিন্তু এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, ইতিকাফ হল একটি সুন্নত ইবাদত। যে কোন মুসলিম তা পালন করতে পারে। যে ব্যক্তি তা পালন করবে সে অগণিত সওয়াবের অধিকারী হবে। সবার পক্ষ থেকে একজনকে ইতিকাফে বসতেই হবে এমন কোন কথা শরীয়তে নেই। কেননা তা ফরযে কেফায়াহ নয় বরং সুন্নত।
আল্লাহ তাআলা সকল ক্ষেত্রে তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নতকে যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন এবং সকল বিদআত ও সুন্নত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
রমাযানের শেষ দশক এবং হাজার মাসের চেয়েও সেরা একটি রাত
লেখক: আবদুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল মাদানি
▬▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬▬
আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।
সুপ্রিয় ভাই ও বোন,
দেখতে দেখতে মাহে রমাযান আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। আমরা এসে পৌঁছেছি শেষ দশকে। সৌভাগ্যবান লোকেরা এ মাসে আঁচল ভরে পাথেয় সংগ্রহ করছে আর হতভাগারা এখনো অন্ধকারের অলি-গলিতে উদভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কল্যাণের বারি বর্ষণ এখনো শেষ হয়ে যায় নি। বন্ধ হয়ে যায় নি তাওবার দরজা বরং আরও বেশি সুযোগ নিয়ে মাহে রমাযানের শেষ দশক আমাদের মাঝে সমাগত। আজকের এই পোস্টে দেখব আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য এতে কী উপহার সাজিয়ে রেখেছেন এবং আমরা কীভাবে তা সংগ্রহ করতে পারব।
প্রিয় পাঠক, আসুন, আমরা আল্লাহ দেয়া উপহারগুলো দুহাত ভরে কুড়িয়ে রমাযানকে আরও অর্থ বহ করে তুলি। আল্লাহ আমাদের তাওফিক দান করুন। আমীন।
🌀 ১) রমাযানের শেষ দশকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রী-পরিবার সহ সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন:
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:
إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ ، وَأَحْيَا لَيْلَهُ ، وَأَيْقَظَ
أَهْلَهُ
“রমাযানের শেষ দশক প্রবেশ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমর বেঁধে নিতেন, নিজে সারা রাত জাগতেন এবং পরিবারকেও জাগাতেন।”[1] কোমর বাঁধার অর্থ হল: পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে চেষ্টা-সাধনায় লিপ্ত হওয়া। কোন কোন আলেম এর ব্যাখ্যায় বলেন: স্ত্রী সহবাস থেকে দূরে থাকা।
🌀 ২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমাযানে শেষ দশকে যত বেশি পরিশ্রম করতেন অন্য কখনো করতেন না:
আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَجْتَهِدُ فِى الْعَشْرِ
الأَوَاخِرِ مَا لاَ يَجْتَهِدُ فِى غَيْرِهِ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমাযানের শেষ দশকে (ইবাদত-বন্দেগীতে) যে পরিমাণ পরিশ্রম করতেন অন্য কখনো করতেন না।” [2]
🌀 শবে কদর:
▪ ১) শবে কদরে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে: আল্লাহ তায়ালা বলেন:
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
“আমি একে (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি শবে কদরে।” (সূরা কদর: ১)
▪ ২) শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম:
আল্লাহ বলেন:
لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
“শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।” (সূরা কদর: ৩)
▪ ৩) আল্লাহ তায়ালা শবে কদরকে বরকতময় রাত বলে উল্লেখ করেছেন:
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ
“নিশ্চয় আমি ইহা (কুরআন)কে অবতীর্ণ করেছি একটি বরকতময় রাতে।” (সূরা দুখান: ৩) (আর এ রাত হল শবে কদর।)
▪ ৪) শবে কদরে রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করলে পূর্বের সকল ছোট গুনাহ মোচন হয়ে যায়:
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ
مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
“যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সোয়াবের আশায় শবে কদরে রাত জাগরণ করে নফল নামায ও ইবাদত বন্দেগী করবে তার পূর্বের সকল (ছোট) গুনাহ মোচন করে দেয়া হবে।” [3]
🔰 শবে কদর কখন হবে?
শবে কদর হবে রমাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে:
▪ ক) আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
« تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ
مِنْ رَمَضَانَ »
“তোমরা রমাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান কর।” [4]
▪ খ) আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
« أُرِيتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ ثُمَّ أَيْقَظَنِى بَعْضُ أَهْلِى فَنُسِّيتُهَا
فَالْتَمِسُوهَا فِى الْعَشْرِ الْغَوَابِرِ
স্বপ্নে আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হল। কিন্তু আমার এক স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়ায় আমি তা ভুলে গিয়েছি। অতএব, তোমরা তা রমাযানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর।” [5]
কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে, দু ব্যক্তির বিবাদের কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা ভুলে গেছেন।
🔰 শবে কদর কি শুধু রমাযানের সাতাইশ রাতের জন্য নির্দিষ্ট?
আমাদের দেশে সাধারণত: মানুষ শুধু রমাযানের সাতাইশ তারিখে রাত জেগে ইবাদত বন্দেগী করে এবং ধারণা করে এ রাতেই শবে কদর অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এ ধারণা, সুন্নতের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কারণ, আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
« تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ
مِنْ رَمَضَانَ
“তোমরা রমাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান কর।” [6]
আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
«أُرِيتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ ثُمَّ أَيْقَظَنِى بَعْضُ أَهْلِى فَنُسِّيتُهَا
فَالْتَمِسُوهَا فِى الْعَشْرِ الْغَوَابِرِ»
স্বপ্নে আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হল। কিন্তু আমার এক স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়ায় আমি তা ভুলে গিয়েছি। অতএব, তোমরা তা রমাযানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর।” [7]
🔰 শেষ সাত দিনের বেজোড় রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি:
যেমন, নিম্নোক্ত হাদিসটি:
ابْنِ عُمَرَ – رضى الله عنهما – أَنَّ رِجَالاً مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ
– صلى الله عليه وسلم – أُرُوا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْمَنَامِ فِى السَّبْعِ الأَوَاخِرِ
، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – « أَرَى رُؤْيَاكُمْ قَدْ تَوَاطَأَتْ
فِى السَّبْعِ الأَوَاخِرِ ، فَمَنْ كَانَ مُتَحَرِّيَهَا فَلْيَتَحَرَّهَا فِى السَّبْعِ
الأَوَاخِرِ »
ইবনে উমর (রা:) হতে বর্ণিত যে, কয়েকজন সাহাবী রামা যানের শেষ সাত রাত্রিতে স্বপ্ন মারফত শবে কদর হতে দেখেছেন। সাহাবীদের এ স্বপ্নের কথা জানতে পেরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমি দেখছি তোমাদের স্বপ্নগুলো মিলে যাচ্ছে শেষ সাত রাত্রিতে। অত:এব কেউ চাইলে শেষ সাত রাত্রিতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করতে পারে।” (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) এ মর্মে আরও হাদিস রয়েছে।
কোন কোন সালাফে-সালেহীন সাতাইশ রাত শবে কদর হওয়ার অধিক সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেছেন। সাহাবীগণের মধ্যে ইবনে আব্বাস (রা:), মুয়াবিয়া, উবাই ইবনে কা’ব (রা:) এর মতামত থেকে এটাই বুঝা যায়।
কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এভাবে নির্দিষ্ট করে লাইলাতুল কদর হওয়ার কোন হাদিস নাই। তাই উপরোক্ত সাহাবীদের কথার উপর ভিত্তি করে বড় জোর সাতাইশে রাতে শবে কদর হওয়াকে অধিক সম্ভাবনাময় বলা যেতে পারে। নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। সঠিক কথা হল, শবে কদর কখনো ২১, কখনো ২৩, কখনো ২৫, কখনো ২৭ আবার কখনো ২৯ রাতে হতে পারে।
সুতরাং শুধু সাতাইশ তারিখ নয় বরং কোন ব্যক্তি যদি রমাযানের শেষ দশকের উপরোক্ত পাঁচটি রাত জাগ্রত হয়ে ইবাদত-বন্দেগী করে তবে নিশ্চিতভাবে শবে কদর পাবে। কিন্তু শুধু সাতাইশ রাত জাগলে শবে কদর পাবে তার কোন নিশ্চয়তা নাই। বরং অন্যান্য রাত বাদ দিয়ে শুধু সাতাইশ রাত উদযাপন করা বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। বিশেষ করে আমাদের দেশে যেভাবে শুধু সাতাইশ তারিখ নির্দিষ্ট করে নেয়া হয়েছে সেটা বিদআত ছাড়া অন্য কিছু নয়। তাই বিদআত বর্জন করে সুন্নতি পন্থায় আমল করা আমাদের জন্য অপরিহার্য।
🔰 শবে কদরের বিশেষ দুয়া:
উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে তখন কোন দুয়াটি পাঠ করব? তিনি বললেন, তুমি বল:
اللَّهمَّ إنَّك عفُوٌّ كريمٌ تُحِبُّ العفْوَ، فاعْفُ عنِّي
উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউন কারীম তুহিব্বুল আফওয়া ফা’ফু আন্নী।
“হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করা পছন্দ করেন। অত:এব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।”
(তিরমিযী, অনুচ্ছেদ, কোন দুয়াটি শ্রেষ্ঠ। তিনি বলেন: হাদিসটি হাসান, সহীহ, শাইখ আলবানী রহ. এ হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। দ্র: সহীহুত তিরমিযী, হা/৩৫১৩)।
🌀 ইতিকাফ
▪ ক) রমাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত:
আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। আল্লাহ তায়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মৃত্যু দেয়া পর্যন্ত রমাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাতের পর তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন।”(সহীহ বুখারী)
আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রমাযানে দশ দিন ইতিকাফ করতেন। এক বছর সফরে যাওয়ায় ইতিকাফ করতে পারেন নি। তাই যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন সে বছর বিশ দিন ইতিকাফ করেন। [8]
▪ খ) ইতিকাফ সংক্রান্ত ভুল ধারণা:
আমাদের দেশে মনে করা হয় যে সমাজের পক্ষ থেকে এক ব্যক্তিকে অবশ্যই ইতিকাফে বসতে হবে তা না হলে সবাই গুনাহগার হবে। কিন্তু এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, ইতিকাফ হল একটি সুন্নত ইবাদত। যে কোন মুসলমান তা পালন করতে পারে। যে ব্যক্তি তা পালন করবে সে অগণিত সোওয়াবের অধিকারী হবে। সবার পক্ষ থেকে একজনকে ইতিকাফে বসতেই হবে এমন কোন কথা শরীয়তে নেই।
আল্লাহ তাআলা সকল ক্ষেত্রে তার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নতকে যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন এবং সকল বিদআত ও সুন্নত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
--------------------------
রেফারেন্স:
[1] সহীহ বুখারী, অধ্যায়: শবে কদরের ফযিলত। সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ইতিকাফ।
[2] সহীহ মুসলিম: রমাযানের শেষ দশকে (ইবাদত-বন্দেগীতে) বেশি বেশি পরিশ্রম করা।
[3] সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ: যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সোয়াবের আশায় রোযা রাখে।
[4] সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ: রমাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান করা।
[5] সহীহ বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল কদরের ফযিলত।
[6] সহীহ বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল কদরের ফযিলত। সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: রোযা।
[7] সহীহ বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল কদরের ফযিলত।
[8] মুসনাদ আহমাদ, সুনান আবু দাউদ, অধ্যায়: রোযা, তিরমিযী, অধ্যায়: রোযা অনুচ্ছেদ। আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।
রজব মাসে বিশেষ ইবাদত-বন্দেগি
▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬
প্রশ্ন: রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোনও নামায, রোযা, উমরা, ইতিকাফ ইত্যাদি ইবাদত সুন্নাহ দ্বারা কি সাব্যস্ত হয়েছে?
উত্তর:
রজব মাসে বিশেষভাবে নফল রোযা রাখা, নফল নামায পড়া, উমরা আদায় করা অথবা ইতিকাফ করা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং এ উপলক্ষে বিশেষ কিছু ইবাদত করা দ্বীনের মধ্যে সৃষ্ট বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
যারা এ সব করে তারা এমন কিছু হাদিস দ্বারা দলীল পেশ করে যেগুলো দুর্বল অথবা বানোয়াট।
◑◑ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন: “রজব ও শাবানকে মিলিয়ে একসাথে পুরো দু মাস বিশেষভাবে রোযা রাখা অথবা ইতিকাফ করার সমর্থনে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবিগণ, কিংবা মুসলিমদের ইমামগণের পক্ষ থেকে কোন প্রমাণ নেই। তবে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসে রোযা রাখতেন। তিনি রমাযান মাসের আগমনের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসে যে পরিমাণ রোযা রাখতেন রমাযান ছাড়া বছরের অন্য কোন মাসে এত রোযা রাখতেন না।” (বুখারি, কিতাবুস সাওম, মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম)
রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে রোযা রাখার ব্যাপারে কিছু হাদিস দুর্বল আর অধিকাংশই বানোয়াট। আহলে ইলমগণ এগুলোর প্রতি নির্ভর করেন না। এগুলো সে সকল দুর্বল হাদিসের অন্তর্ভুক্ত নয় যেগুলো ফজিলতের ক্ষেত্রে বর্ণনা করা হয়। বরং অধিকাংশই মিথ্যা ও বানোয়াট। রজব মাসের ফযিলতে সব চেয়ে বেশী যে হাদিসটি বর্ণনা করা হয় সেটা হল এই দুয়াটি:
اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَب، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
“হে আল্লাহ, তুমি আমাদেরকে রজব ও শাবানে বরকত দাও এবং রমাযান পর্যন্ত পৌঁছাও।” [মুসনাদ আহমদ, (১/২৫৯)।]
এ হাদিসটি দুর্বল।
এ হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারি রহ. বলেন মুনকারুল হাদিস। ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করার পর বলেন: “চিনি না এই ব্যক্তি কে?” আর তিনি তার যু্আফা কিতাবে তার সম্পর্কে বলেন: মুনকারুল হাদিস। কুনা গ্রন্থে বলেন: তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইবনে হিব্বান বলেন: তার বর্ণিত কোন হাদিসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।”
[ দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা। আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব (৩/৩০)]
◑◑ ইবনে তাইমিয়া রহ. আরও বলেন: “রজব মাসকে বিশেষ সম্মান দেখানো বিদআতের অন্তর্ভুক্ত যা বর্জন করা উচিৎ। রজব মাসকে বিশেষভাবে রোযার মওসুম হিসেবে গ্রহণ করাকে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল সহ অন্যান্য ইমামদের নিকটে অপছন্দনীয়।” (ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম, ২য় খণ্ড, ৬২৪ ও ৬২৫ পৃষ্ঠা)
◑◑ ইবনে রজব বলেন: রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে রোযা রাখার ব্যাপারে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কিংবা সাহাবীদের থেকে কোন কিছুই সহিহ ভাবে প্রমাণিত হয় নি। কিন্তু আবু কিলাবা থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায় যে, “যারা রজবে বেশী বেশী রোযা রাখবে তাদের জন্য জান্নাতে প্রাসাদ রয়েছে।” এই কথাটির ব্যাপারে ইমাম বায়হাকী বলেন: আবু কিলাবা একজন বড় মাপের তাবেঈ। তার মত ব্যক্তি হাদিসের তথ্য না পেলে এমন কথা বলতে পারেন না।
কিন্তু এ কথার প্রতি উত্তরে বলা যায় যে, ইসমাইল আল হারাবী, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ইবনে হাজার আসকালানী প্রমুখ আলেমগণ এ মর্মে একমত যে, রজব মাসকে কেন্দ্র করে রোযা রাখার ব্যাপারে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন সহিহ হাদিস প্রমাণিত হয় নি। এ মর্মে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে কিছু হল যঈফ আর অধিকাংশই বানোয়াট।
◑◑ আবু শামা রহ. বলেন: “কোন ইবাদতকে এমন কোন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করে দেয়া উচিৎ নয় শরীয়ত যেটা নির্দিষ্ট করে নি। বরং ইসলামি শরিয়ত যে সময় যে ইবাদত নির্ধারণ করেছে সেটা ছাড়া যে কোন ইবাদত যে কোন সময় করা যাবে। এক সময়কে অন্য সময়ের উপর প্রাধান্য দেয়া যাবে না।
ইসলামি শরিয়তে বিশেষ কিছু সময়কে নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিশেষ কিছু’ ইবাদতের জন্য। ঐ সময়গুলোতে ঐ ইবাদতগুলোই ফযিলত পূর্ণ; অন্য কোন ইবাদত নয়। যেমন, আরাফার দিনে রোযা রাখা, আশুরার দিনে রোযা রাখা, গভীর রাতে নফল নামায পড়া, রামাযান মাসে উমরা আদায় করা।
অনুরূপভাবে এমন বিশেষ কিছু সময়কে নির্ধারণ করা হয়েছে যেগুলোতে ‘যে কোন ধরণের’ নেকির কাজ করার ফযিলত রয়েছে। যেমন: জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন, লাইলাতুল কদর-যার মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এ রাতে যে কোন ইবাদতই করা হোক তা অন্য হাজার মাসের চেয়েও মর্যাদাপূর্ণ।
মোটকথা, বিশেষ কোন সময়কে বিশেষ কোন ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করার অধিকার কেবল ইসলামি শরিয়তই সংরক্ষণ করে; অন্য কোন ব্যক্তি নয়। আল্লাহ সব চেয়ে ভাল জানেন। (আল বায়িস, পৃষ্ঠা নং ৪৮)
[আল বিদা আল হাউলিয়া গ্রন্থ থেকে অনুদিত]
সুতরাং রজব মাসে বিশেষ ইবাদত করা বা রজব মাসকে আলাদাভাবে সম্মান দেখানো বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। তবে কেউ যদি সব অন্যান্য মাসে নফল নামায, নফল রোযা, দান সদকা ইত্যাদি ইবাদত করে থাকে তাহলে এ মাসেও তা অব্যাহত রাখতে পারে।
মোটকথা, এ মাসকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করে আলাদা কোন ধরণের বিশেষ ইবাদত-বন্দেগি করা ঠিক হবে না। কেননা তা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়।কিন্তু যেহেতু এটি চারটি হারাম মাসের অন্তর্ভূক্ত সেহেতু যথাসাধ্য সাধারণ
নফল ইবাদত-বন্দেগি ও নেকির কাজ করার পাশাপাশি সব ধরণের অন্যায়-অশ্লীলতা ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব
ইতিকাফ এর গুরুত্ব এবং এ সম্পর্কে একটি ভুল ধারণা
----------------------
অনুবাদ ও গ্রন্থনা: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।
আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। আল্লাহ তায়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মৃত্যু দেয়া পর্যন্ত রামাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাতের পর তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন।”(সহীহ বুখারী)
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রামাযানে দশ দিন ইতিকাফ করতেন। এক বছর সফরে যাওয়ায় ইতিকাফ করতে পারেন নি। তাই যে বছর তিনি ইন্তিকাল করেন সে বছর বিশ দিন ইতিকাফ করেন ।
(মুসনাদ আহমাদ, সুনান আবু দাউদ, অধ্যায়: রোযা, তিরমিযী, অধ্যায়: রোযা অনুচ্ছেদ। আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।)
ইতিকাফ সংক্রান্ত ভুল ধারণা:
আমাদের দেশে মনে করা হয় যে সমাজের পক্ষ থেকে এক ব্যক্তিকে অবশ্যই ইতিকাফে বসতে হবে তা না হলে সবাই গুনাহগার হবে। কিন্তু এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, ইতিকাফ হল একটি সুন্নত ইবদাত। যে কোন মুসলমান তা পালন করতে পারে। যে ব্যক্তি তা পালন করবে সে অগণিত সোওয়াবের অধিকারী হবে। সবার পক্ষ থেকে একজনকে ইতিকাফে বসতেই হবে এমন কোন কথা শরীয়তে নেই।
আল্লাহ তাআলা সকল ক্ষেত্রে তার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নতকে যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দান করুন এবং সকল বিদআত ও সুন্নত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
ইতিকাফ সংক্রান্ত একটি ভুল ধারণা
▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬
প্রশ্ন: যদি এলাকার কেউ ইতিকাফে না বসে তাহলে কি পুরো এলাকাবাসী গুনাগার হবে? আর কেউ যদি বসে তাহলে কি পুরো এলাকাবাসী তার সওয়াব লাভ করবে?
উত্তর:
আমাদের দেশে মনে করা হয় যে, সমাজের পক্ষ থেকে এক ব্যক্তিকে অবশ্যই ইতিকাফে বসতে হবে তা না হলে সবাই গুনাহগার হবে। কিন্তু এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, ইতিকাফ হল একটি সুন্নত ইবাদত। যে কোন মুসলিম তা পালন করতে পারে। যে ব্যক্তি তা পালন করবে সে অগণিত সওয়াবের অধিকারী হবে। সবার পক্ষ থেকে একজনকে ইতিকাফে বসতেই হবে এমন কোন কথা শরীয়তে নেই। কেননা তা ফরযে কেফায়াহ নয় বরং সুন্নত।
আল্লাহ তাআলা সকল ক্ষেত্রে তার নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নতকে যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন এবং সকল বিদআত ও সুন্নত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
▬▬▬◆◈◆ ▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব
মহিলাগণ কোথায় ইতিকাফ করবে?
➖➖➖➖➖➖
প্রশ্ন: (এক বোনের প্রশ্ন) আমার এক খালাম্মা প্রতি রমজানের শেষে ঘরের মধ্যে ইতিকাফে বসেন। তাকে নিষেধ করা হলেও বসবে। কারণ, মসজিদের হুজুররা বলে, ঘরে মহিলাদের ইতিকাফ হবে। কুরআন- হাদিসের দলিলের আলোকে এ ক্ষেত্রে সঠিক বিষয়টি জানতে চাই।
উত্তর:
ইতিকাফের জন্য শর্ত হল, মসজিদ। মসজিদ ছাড়া ইতিকাফ সহীহ নয়। এই শর্ত পুরুষ-মহিলা সবার জন্য প্রযোজ্য।
আল্লাহ তায়ালা বলেন:
أَن طَهِّرَا بَيْتِيَ لِلطَّائِفِينَ وَالْعَاكِفِينَ وَالرُّكَّعِ السُّجُودِ
“তোমরা আমার গৃহকে তওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সেজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ।" (সূরা বাকারা: ১২৫)
আল্লাহ আরও বলেন: وَلَا تُبَاشِرُوهُنَّ وَأَنتُمْ عَاكِفُونَ فِي الْمَسَاجِدِ
“আর যতক্ষণ তোমরা এতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিশো না। ” (সূরা বাকরা:১৮৭)
এ আয়াতগুলোতে মসজিদে ইতিকাফ করার কথা উল্লেখিত হয়েছে।
সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে, উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
أن النبي صلى الله عليه وسلم كان يعتكف العشر الأواخر من رمضان حتى توفاه الله، ثم
اعتكف أزواجه من بعده
“রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়া সাল্লাম মৃত্যুর আগ পর্যন্ত রামযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন আর তাঁর ইন্তিকালের পরে তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন।”
নারীদের জন্য তার ঘরকে মসজিদ বলা ঠিক নয়। কারণ, মসজিদে ঋতুবতি মহিলাদের দীর্ঘ সময় অবস্থান করা নিষেধ। ঘর যদি মসজিদ হত তাহলে সে ঘরে মহিলাদের অবস্থান করা বৈধ হত না। অনুরূপভাবে ঐ ঘর বিক্রয় করাও বৈধ হত না।
বি: দ্র:
মসজিদের মধ্যে মহিলাদের যদি নিরাপত্তার ব্যবস্থা থাকে এবং তার ইতিকাফের কারণে যদি সন্তান প্রতিপালন, ঘর-সংসারের নিরাপত্তা এবং তার উপর অর্পিত অপরিহার্য কবর্ত্য পালনে ব্যাঘাত না ঘরে তবে স্বামী বা অভিভাবকের অনুমতি স্বাপেক্ষে ইতিকাফ করা বৈধ হবে। অন্যথায়, তার জন্য ইতিকাফ না করে বরং নিজ দায়িত্ব যাথাযথভাবে পালন, সংসার দেখা-শোনা, স্বামীর সেবা ইত্যাদিতেই অগণিত কল্যাণ নিহীত রয়েছে। তিনি কাজের ফাঁকে যথাসাধ্য দুয়া, তাসবীহ, কুরআন তিলাওয়াত, নফল সালাত ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের চেষ্টা করবেন। আল্লাহই তাওফীক দাতা।
➖➖➖➖➖➖➖➖
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
মসজিদে হারামে মহিলাদের ইতিকাফ এবং ইহরাম
▬▬✪✪✪▬▬
প্রশ্ন: কাবা মসজিদে মহিলারা ইতিকাফ করতে পারবে কি? ইহরাম অবস্থায় মহিলাদের পোশাক কী হবে? ইহরাম অবস্থায় মহিলারা মাথায় ক্যাপ পরে এরপর নিকাব বাঁধতে পারবে কি ?
উত্তর:
✪ অধিক বিশুদ্ধ মতানুসারে মহিলাদের জন্য মসজিদে ইতিকাফ করা শর্ত। মসজিদ ছাড়া বাড়িতে এতেকাফ শুদ্ধ নয়। এ বিষয়ে বিস্তারিত পড়ুন:
হারামাইন তথা মক্কা ও মদিনার মসজিদে মহিলাদের জন্য আলাদা ইতিকাফের ব্যবস্থা রয়েছে।
মদিনার মসজিদে নব্বীর একপাশে এবং মক্কায় মসজিদে হারামের আন্ডারগ্রাউন্ডে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথক পৃথক এতেকাফ এর চমৎকার ব্যবস্থা রয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।
✪ ইহরামের জন্য মহিলাদের আলাদা কোনও পোশাক নাই। বরং তারা পূর্ণ হিজাব সহকারে তাদের স্বাভাবিক পোশাক পরিধান করবে। এমনকি ইহরাম ছাড়াও যেভাবে সে মুখমণ্ডল সহ সারা শরীর আবৃত করে একইভাবে ইহরাম অবস্থায়ও পূর্ণ পর্দা করবে। যেমন আয়েশা রা. বলেন:
كَانَ الرُّكْبَانُ يَمُرُّونَ بِنَا وَنَحْنُ مَعَ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه
وسلم- مُحْرِمَاتٌ فَإِذَا حَاذَوْا بِنَا سَدَلَتْ إِحْدَانَا جِلْبَابَهَا مِنْ رَأْسِهَا
إِلَى وَجْهِهَا فَإِذَا جَاوَزُونَا كَشَفْنَاهُ.
“আমরা ইহরাম অবস্থায় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে ছিলাম। তখন আরোহীরা আমাদের সঙ্গে পথ চলছিলেন। যখন তারা আমাদের আড়াআড়ি হন, আমাদের সঙ্গিনীরা তাদের বড় চাদর মাথা থেকে চেহারায় ঝুলিয়ে দেন। তারা আমাদের অতিক্রম করে চলে যাবার পরই আমরা তা উন্মুক্ত করি।” [আবু দাঊদ : ৫৩৮১; বাইহাকী : ৩৩৮৮, হাদিসটি অন্যান্য সমার্থবোধক হাদিসের মাধ্যমে হাসান, শাইখ আলবানী রহ. রচিত জিলবাবুল মারআহ ]
✪ তবে ইহরাম অবস্থায় নেকাব দ্বারা মুখ বাঁধবে না বরং মাথার উপরের ওড়না ফেলে মুখমণ্ডল ঢাকবে। অনুরূপভাবে হাত মোজা পরিধান করবে না। বরং বোরকার লম্বা আস্তিন দ্বারা হাতের কব্জি দ্বয় ঢেকে রাখবে।
لا تَنْتَقِبْ الْمَرْأَةُ الْمُحْرِمَةُ وَلاَ تَلْبَسْ الْقُفَّازَيْنِ
“ইহরাম বাঁধা মহিলা নিকাব ও হাত মোজা ব্যবহার করবে না।” (সহীহ বুখারী হাদিস নম্বরঃ [1838] অধ্যায়ঃ ২৮/ ইহরাম অবস্থায় শিকার এবং অনুরূপ কিছুর বদলা (كتاب جزاء الصيد) তাওহীদ পাবলিকেশন)
তবে পা মোজা পরিধান করা জায়েজ রয়েছে।
✪ মাথায় ক্যাপ পরে মুখের সামনে নিকাব ঝুলিয়ে রেখেও পর্দা করা বৈধ হবে ইনশাআল্লাহ। কেননা, এতে একদিকে মুখমণ্ডলের পর্দাও যেমন হল তেমনি নিকাব পরারও প্রয়োজন হল না।
▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স: মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
দাঈ, জুবাইল দাওয়া এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।
fb/AbdullaahilHadi
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, ksa
0 Comments