Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

▌বর্ণবাদ ও ইসলাম : প্রেক্ষিত আমেরিকা

·মিশরের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফাক্বীহ, আশ-শাইখ, আল-‘আল্লামাহ, ড. মুহাম্মাদ বিন সা‘ঈদ রাসলান (হাফিযাহুল্লাহ) [জন্ম: ১৯৫৫ খ্রি.] বলেছেন—

❝তোমরা কি স্মরণ করবে না? সম্প্রতি আমেরিকায় শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গদের মাঝে ঘটে গেল রক্তক্ষয়ী অগ্নিবিধৌত সংঘাত। তাহলে ভেবে দেখ, তাদের সাথে কেমন আচরণ করা হয়েছিল? যাদের বসবাস নিজেদের ও পূর্বপুরুষদের ভূখণ্ডে হওয়া সত্ত্বেও তারা জন্তু-জানোয়ারের মতো নিপীড়ন ও বঞ্চনার শিকার হয়েছিল, পশ্চিম আফ্রিকার উপকূলে? তাদের কতজনকেই না জাহাজে ভেড়া-ছাগলের মতো বোঝাই করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে! এরপর তারা যখন সেখানে পৌঁছেছে তখন তাদেরকে দাসত্বের লাঞ্ছনাকর ট্যাগ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। অথচ আল্লাহ তাদেরকে স্বাধীন হিসেবে সৃজন করেছেন। [১]

আজঅবধি সেখানকার অনেক এলাকার লোক ওই দেশে আছে। যে দেশ এক নতুন যুগের, মার্কিনী একবিংশ শতাব্দীর সুসংবাদ দেয়। সুসংবাদ দেয় বিশ্ব সরকার (জাতিসংঘ), আর নব্য প্রতীক্ষিত খ্রিষ্টবাদের। এটি ফ্রি-ম্যাসন সংঘের ব্যাপার নয়। যদিও কতক ক্ষেত্রে তারা ফ্রি-ম্যাসনের সাথে মিশে গেছে। তারা কী করেছে?

ওদেরকে হত্যা করেছে। বরং তাদের ওপর জঘন্য হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে, আর আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করেছে। এমনকি যেসব রাষ্ট্র তাদের কাছে ‘আতঙ্কবাদী’ হিসেবে বিবেচিত, স্বয়ং তারা ওখানকার অধিদপ্তরকে আত্মনিয়ন্ত্রিত হওয়ার উপদেশ দিয়েছে। যেমনটি তারা করে থাকে। আত্মনিয়ন্ত্রণ করবে, কাদের জন্য?

তোমরা কী স্মরণ করবে না? কিছু এলাকায় এখনও সদরদরজায় সাইনবোর্ড ঝুলে—‘এখানে কুকুর ও কালোদের প্রবেশ নিষেধ।’ এইভাবে! এইভাবে!!

আমাদের ধর্মে বলা আছে, রাসুলুল্লাহ ﷺ সম্ভ্রান্ত আরব ও স্বচ্ছ-পরিচ্ছন্ন মুসলিম আবু যার (রাদিয়াল্লাহু আনহু)’র উদ্দেশে বলেছেন, ‘নিশ্চয় তুমি এমন এক লোক, যার মধ্যে জাহেলি যুগের আচার আছে। তুমি তাকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ?!’ কেননা তিনি ইথিওপিয়া থেকে আগত বিলাল (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কে বলেছিলেন, ‘ওহে কৃষ্ণাঙ্গীর ছেলে!’ এ শুনে নবিজি ﷺ বলেন, ‘তুমি ওকে তার মা সম্পর্কে লজ্জা দিয়েছ?! নিশ্চয় তুমি এমন এক লোক, যার মধ্যে জাহেলি যুগের আচার আছে।’ [সাহীহ বুখারী, হা/৩০; সাহীহ মুসলিম, হা/১৬৬১]

আর এদের দেখ। যেন সে জমিনের ওপর নিজের গাল ঠেকিয়ে বলছে, আল্লাহর কিরা, আমি গাল তুলব না, যতক্ষণ না তুমি তোমার জুতো দিয়ে তা মথিত করছ! আমার গণ্ড তোমার দ্বারা দলিত-মথিত হওয়ার জন্য নিবেদিত, যতক্ষণ না তুমি সে কাজ করে তুষ্ট হচ্ছ!

তোমরা আল্লাহর ধর্ম গ্রহণ করো। নিজেদের মধ্যে তা বাস্তবায়ন করো। সে ধর্মের জীবনযাত্রা নির্বাহ করো। কেননা তোমরা ওই ধর্ম সম্পর্কে কখনোই জানতে পারবে না, যতক্ষণ না সে ধর্মের জীবনযাত্রা নির্বাহ করবে। হয়তো তোমরা সে সম্বন্ধে কথা বল, লেখালেখি করো, শ্লোগান দাও। কিন্তু কখনোই তোমরা এর মিষ্টতা আস্বাদন করতে পারবে না, যতক্ষণ না এর জীবনযাত্রা পালন করবে।

কেননা ইসলামের মিষ্টতা কেবল সে-ই পায়, যে ইসলামি জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়েছে। সে পায় না, যে ইসলাম নিয়ে কথা বলেছে বা স্রেফ লিখেছে। বরং এ স্বাদ তাঁরই জন্য, যে ইসলামিক লাইফ লিড করেছে। ইসলামি জীবনযাত্রা নির্বাহ করো, তাহলে ইসলামের স্বাদ ও মিষ্টতা পাবে।❞
·
পাদটীকা:
▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂▂

[১]. আমেরিকা আবিষ্কৃত হওয়ার পর সেখানে সাদা চামড়ার ইউরোপীয়রা শ্রমিক হিসেবে প্রচুর কালো দাস নিয়ে আসার ব্যবস্থা করে। পশ্চিম আফ্রিকার স্লেভকোস্ট থেকে তারা লাখ লাখ কালো দাস গরু-ছাগলের মতো জাহাজ বোঝাই করে নিয়ে আসত। অবর্ণনীয় নিপীড়নের শিকার হয়ে তাদের অনেকে জাহাজেই মারা যেত। বাকিরা কঠিন পরিশ্রম করত এবং তারাও একসময় নির্যাতিত হয়ে মারা পড়ত। এ থেকেই তৎকালীন সফেদ চর্মের প্রভুদের নেক্কারজনক বর্ণবাদী রূপ প্রকটিত হয়।

·
উৎস:

বক্তব্যের ভিডিয়ো ক্লিপটি ‘কানাতুত তাওহিদ আদ-দাআউয়িয়্যাহ’ নামক ইউটিউব চ্যানেল থেকে নেওয়া হয়েছে।

·
অনুবাদক: মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ মৃধা
www.facebook.com/SunniSalafiAthari

Post a Comment

0 Comments