সংকলন: মাহিন আলম
সম্মানিত আলিম,
ওয়ায়েজ, খতীবদের অনেকের মাঝেই হাদীস বর্ণনায় উদাসীনতার সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে।
হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ (জনপ্রিয়) বক্তা ও লেখকগণ সচেতন নন।
নির্দ্বিধায় অনেকেই অগ্রহণযোগ্য হাদীস বর্ণনা করে থাকেন। আবার অনেকে হাদীসের
অনুবাদ করতে গিয়েও এদিক-সেদিক করে ফেলেন। তাদের এরূপ উদাসীনতা সত্যিই দুঃখজনক।
ইমাম মালিক (রাহি.) বলেন, সে লোক নিরাপদ হতে পারে না, যে যা শুনে তাই বলে বেড়ায়।
আর সে কখনোই ইমাম হতে পারবে না, যে যা শুনে তাই (যাচাই ছাড়া) বর্ণনা করে।
ইমাম ইসহাক ও ইমাম
আহমাদ (রাহি.) বলেন, কোনো আলিম যদি না জানে কোন হাদীস সহীহ আর কোনটি দুর্বল, কোন
হাদীস নাসিখ আর কোনটি মানসূখ, তবে তাকে আলিমই বলা যাবে না। [মা‘রিফাতু উলুমিল
হাদীস, পৃ.৬০; সহীহ আত-তারগীব-ওয়াত তারহীব, ১/৫৮৮]
শাইখ নাসিরুদ্দীন
আলবানী (রাহি.) বলেন, (উপরি-উক্ত বক্তব্যসমূহ উল্লেখের পর) এ সমস্ত দলীল দ্বারা
সুস্পষ্ট হচ্ছে সে সমস্ত গ্রন্থকার, খতীব, আলোচক, বক্তা, শিক্ষক প্রভৃতির ত্রুটির
কথা যারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সতর্কতা
অবলম্বন করে না। হাদীসের নামে যা সামনে পায় লিখে দেয় এবং তাই বয়ান করে।
আল্লাহকে একটুও ভয় করে না, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে
আদব রক্ষা করে না। যিনি তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে এ ধরনের উদাসীনতা থেকে সতর্ক
করে গেছেন। যাতে করে তারা মিথ্যুকদের মধ্যে শামিল না হয় এবং নিজের ঠিকানা
জাহান্নামে নির্ধারণ করে না নেয়। [সহীহ আত-তারগীব-ওয়াত তারহীব, ১/৫৮৯]
শাইখ ইবনু উসাইমীন
(রাহি.) বলেন, আমার নিকট দুর্বলতা প্রকাশ করা ব্যতীত দয়ীফ বা দুর্বল হাদীস বলা
বৈধ নয়, বিশেষ করে জনগণের সামনে। [শারহুল মানযুমাহ, হাদীছ শাস্ত্রের পরিভাষা
পরিচিতি, পৃ.১০৮] এর কারণ হল, দুর্বলতা প্রকাশ না করে হাদীস বর্ণনা করলে জনগণ সে
হাদীসকে সহীহ বলে ভেবে নিবে। যা ভুল ও বিপজ্জনক।
শাইখ নাসিরুদ্দীন
আলবানী (রাহি.) বলেন, বরং দয়ীফ হাদীস বর্ণনা করার সময়, জনসম্মুক্ষে তা প্রকাশ
করে দেয়া জরুরি যে, হাদীসটি দয়ীফ। কেননা বর্তমান যুগে অজ্ঞতা অনেক বেশি। মানুষ
হাদীস নিয়ে তেমন গবেষণা করে না। সে দিকে তেমন গুরুত্বারোপ করে না। তাই প্রত্যেক
লেখক ও বক্তার জন্যে আবশ্যক হচ্ছে তিনি যা বলছেন (বা লিখছেন) তা ‘দয়ীফ’ হলে
সুস্পষ্টভাবে বলে দেয়া যে, এটা দয়ীফ হাদীস। আমানত রক্ষার্থে এরূপ করা উচিত।
[সহীহ আত-তারগীব-ওয়াত তারহীব, ১/৫৯৫-৯৬]
শাইখ আহমাদ শাকির
(রাহি.) বলেন, আমি যেটা মনে করি, সর্বাবস্থায় দয়ীফ হাদীস উল্লেখ করার সময় সেটা
যে দয়ীফ তা বর্ণনা করে দেয়া ওয়াজিব। কেননা তা বর্ণনা না করলে পাঠক ভাবতে পারে
যে, হাদীসটি সহীহ। ফলে সহীহ ভেবেই আমল শুরু করে দিবে। বিশেষ করে বর্ণনাকারী যদি
হাদীসের পণ্ডিত হন বা এমন আলিম হন (সাধারণ) মানুষ যার কথার পানে তাকিয়ে থাকে, তবে
তাঁর জন্যে একথা বর্ণনা করে দেয়া আরো আবশ্যক। আর দয়ীফ হাদীস আমলযোগ্য নয়; তা
মাসআলা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে হোক বা ফাযায়িলের ক্ষেত্রে হোক, কোনো পার্থক্য নেই।
[আল-বায়িসুল হাসীস, পৃ.১০১; সহীহ আত-তারগীব-ওয়াত তারহীব, ১/৫৯৬]
“হাদীস বর্ণনা বা
প্রচার করার পূর্বে খুব ভালোভাবে তাহক্বীক্ব বা যাচাই করে নিতে হবে। হাদীস গ্রন্থ
সঙ্কলিত হওয়ার পূর্বে রাবীদের জীবনী দ্বারা এ বিষয়ে তাহক্বীক্ব করা হত। বর্তমানে
হাদীসের কিতাবগুলো সম্পর্কে তাহক্বীক্ব জরুরি। কারণ, কোনো কোনো কিতাবে সহীহ, দয়ীফ
বরং মাওদূ বা জাল এর প্রতি খেয়াল করা ব্যতীত হাদীস সঙ্কলন করা হয়েছে। সেসব কিতাব
থেকে সানাদের তাহক্বীক্ব ব্যতীত হাদীস বর্ণনা করা জায়েজ নয়। যেসব কিতাবে শুধু
সহীহ হাদীস বর্ণনা করবে বলে বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেগুলো উপর একজন সাধারণ মুসলিম
নির্ভর করতে পারে।” [জূদুল মুন্’ইম শরহে মুকাদ্দমায়ে মুসলিম, পৃ.৮৬]
ড.আবদুল্লাহ
জাহাঙ্গীর (রাহি.) বলেন,হাদীস বর্ণনা বা প্রচার করার ক্ষেত্রে কোনোরূপ শিথিলতা
নয়। আমি যদি জীবনে কোনো হাদীস না বলি তাহলে কোনো সমস্যায় আমাকে পড়তে হবে না।
কিন্তু একটি হাদীসও যদি বলি বা লিখি বা সহীহ বলে দাবি করি, অথচ হাদীসটি সহীহ না
হয় তাহলে আমাকে অত্যন্ত কঠিন বিপদে পড়তে হতে পারে। [এহইয়াউস সুনান, পৃ. ২২৮]
আল্লাহ তাআলা
আমাদেরকে বোঝার ও আমল করার তাওফীক দান করুন। আমীন।
পরিবেশনায়:
সত্যান্বেষী রিসার্চ টীম
প্রবন্ধটি পড়া হলে, শেয়ার করতে ভুলবেন না।
0 Comments