▌প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোকে ঘিরে অসৎ উদ্দেশ্য
.ফাদ্বীলাতুশ-শাইখ, আল-’আল্লামাহ, আল-ইমাম ড. রাবী’ বিন হাদী বিন ‘উমাইর আল-মাদখালী (হাফিযাহুল্লাহ) বলেন,
.“বর্তমান যুগে প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলোর প্রতি প্রত্নতত্ত্ববিদদের যেই মনোনিবেশ দেখা যাচ্ছে সেটা রসুলুল্লাহ ﷺ এর সাহাবীদের যুগে (رضي الله عنهم) এবং সালাফদের যুগে ছিলো না, বরং মুসলিমরা এখন এইরকম বিষয়ে অন্ধভাবে ইউরোপ এবং আমেরিকানদের অনুসরণ করছে, যাদের এইসব মুসলিম ভুমিতে থাকা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন তালাশের প্রকৃত উদ্দেশ্য হলো প্রাক-ইসলামি জাতীয়তাবাদ পুনঃজাগ্রত করা, যেমন ফারাওইযম, বেবিলনিয়ানিযম, ফিনিশায়ানিযম ইত্যাদি। এবং এরা এসব উদ্দেশ্যের অনেকাংশ বাস্তবায়ন করতে ব্যাপকভাবে সফল হয়েছে, আর এভাবে এসব মুসলিম দেশগুলোতে প্রাক-ইসলামী জাতীয়তা ভিত্তিক গর্ববোধ এবং এসব জাতীয়তাবাদের ব্যাপারে গর্ব করার স্বভাব জাগ্রত হয়েছে।
.নিশ্চয়ই আমি বিস্মিত হয়েছি আপনার (শাইখ যাকে রাদ্দ করছেন) কর্তৃক (নবী) সালিহ এবং উখদুদের শহরগুলোর উদাহারন দেয়া দেখে, যেসব স্থান কিনা আল্লাহর ক্রোধের সম্মুখীন হয়েছিলো! ইমাম বুখারী (رحمه الله) থেকে বর্ণিত,
.“আব্দুল্লাহ্ বিন মুহাম্মদ আল জুফী আমাদের কাছে বর্ণনা করেন যে ‘আব্দুর রাযযাক্ব তাদের কাছে আয-যুহরী থেকে বর্ণনা করেছেন, যিনি বর্ণনা করেছেন সালিম থেকে, যিনি বর্ণনা করেছেন ইবনু ‘উমার (رضي الله عنه) থেকে, যিনি বলেন, যখন নবী ﷺ (সামূদ গোত্রের) হিজর বস্তি অতিক্রম করেন, তখন তিনি বললেন, যারা নিজ আত্মার উপর অত্যাচার করেছিল তাদের আবাসস্থলে কান্নাকাটি ব্যতীত প্রবেশ কোরো না যাতে তোমাদের প্রতি শাস্তি নিপতিত না হয় যা তাদের প্রতি নিপতিত হয়েছিল। তারপর তিনি তাঁর মস্তক আবৃত করলেন এবং অতি দ্রুতবেগে চলে উক্ত উপত্যকা অতিক্রম করলেন।”
.“ইয়াহইয়া বিন বুকাইর আমাদের কাছে বর্ণনা করেন, যিনি বলেন আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন মালিক যিনি কিনা বর্ণনা করেন আব্দুল্লাহ বিন দিনার থেকে, যিনি ইবনু উমার (رضي الله عنه) থেকে শুনেছেন, যিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ ﷺ হিজ্র নামক স্থান দিয়ে অতিক্রমকালে তাঁর সঙ্গীদের বললেন, তোমরা ঐ শাস্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে কান্নাকাটি ছাড়া প্রবেশ কর না-যাতে তোমাদের উপরও সেরূপ বিপদ আপতিত না হয় যা তাদের উপর আপতিত হয়েছিল।” [সহীহ আল-বুখারী, অধ্যায়: মাগাযী, হাদীস নং ৪৪১৯ ও ৪৪২০]
.দুটি নাবাউয়ী হাদীস আল্লাহর ক্রোধে পতিত স্থানগুলোতে প্রবেশের ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত করছে এবং তিনি তাদেরকে ধ্বংস করেছিলেন তাদের কুফর, নবীগণ ও তারা যা এনেছিলেন তা অস্বীকার করার কারণে। রাসুলুল্লাহ ﷺ সেসব স্থানে যারা আল্লাহকে ও আল্লাহর আযাবকে ভয় করে তাদের ব্যতিত অন্য কাউকে প্রবেশের অনুমতি দেননি, যাতে তারা দরকারের সময় এসব স্থানে প্রবেশকালে ক্রন্দনরত অবস্থায় থাকে।
.আযাবপ্রাপ্ত হয়েছে এসব লোকদের বসবাসস্থলে প্রবেশ করে এমন ব্যক্তির ব্যাপারে এই ভয় আছে যে, তাদের উপর যেই আযাব পতিত হয়েছিল তার উপরও সেই আযাব পতিত হবে। যে এসকল বসবাসস্থলের অনুগামী হবে তার জন্য এই বিধান যে, সে রাসূলুল্লাহর ﷺ সুন্নাহসম্মত আমল হিসেবে মুখ ঢাকা অবস্থায় দ্রুত অতিক্রম করবে। অতএব, নাবাউয়ী পথনির্দেশনা, যা এমন কারো থেকে এসেছে যিনি নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ করে কথা বলেন না, সেটার ব্যাপারে মুসলিমরা কি বুঝ রাখে, যাদের মধ্যে তারাও রয়েছে যারা হল প্রত্নতত্ত্ববিদ এবং যারা তাদেরকে উৎসাহিত করে?
.এছাড়াও রসুলুল্লাহ ﷺ মুহাসসারের পাহাড়ী এলাকায় প্রবেশকারী ব্যক্তিকে প্রবেশ করার সময় দ্রুত সেই স্থান ত্যাগ করতে বলেছেন আল্লাহ্ ﷻ সেখানে হস্তিবাহিনীকে ধ্বংস করেছিলেন বলে।
.সুতরাং, যারা আদ সম্প্রদায়, সামুদ সম্প্রদায়, আসহাবুল উখুদ, ফিরাউনীয় সভ্যতা এবং ব্যাবিলনীয় সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো খনন করে, তারা কি রসুলুল্লাহ ﷺ এর নির্দেশনা অনুসরণ করে, নাকি তারা আল্লাহর শত্রুদের অন্ধ অনুকরণ করছে যারা তাদের জন্য অনুসন্ধানকার্যের অংশিদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করে ধ্বংস হয়ে যাওয়া জাতিগুলোর প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শনগুলোর মধ্য থেকে, তাদেরকে প্রাক-ইসলামী যুগের (জাতীয়তাবাদী) গৌরবের দিকে প্রলুব্ধ করতে। নিশ্চয়ই আমি এবং অন্যান্য লোকেরা বহু মুসলিমদের বা যারা নিজেদের ইসলামের সাথে সম্পৃক্ত তাদের অসংখ্য গর্ববোধসংবলিত লেখা পড়েছি, যেমন তাদের কারো কারো এই কথাটি, ‘হে মিশরীয়রা! গর্বিত হও তোমাদের গৌরবের নির্মাতাদের নিয়ে, (যারা গর্ব করার মতো কাজ করেছে) যখন অন্যান্য জাতি নিদ্রায় ছিলো!" সে ফিরাউনীয় সভ্যতার প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন যেমন পিরামিড এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে গর্ব করছে৷ [১]
আল্লাহ ﷻ বলেন,
.তোমাদের আগে অতীত হয়েছে অনেক ধরনের সভ্যতা। তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ যারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে তাদের পরিণতি কি হয়েছে। [সূরা আলি ইমরান, আয়াত নংঃ ১৩৭]
.ইমাম ইবনুল কায়্যিম (رحمه الله) বলেন, "নিশ্চয়ই, আপনাদের পূর্বে আপনাদের ন্যায় জাতি ছিলো, তাই তাদের খারাপ পরিণতির দিকে তাকান। আপনাদের জানা দরকার যে তাদের খারাপ পরিণতির কারণ ছিলো আল্লাহর ওহীর প্রতি কুফরী করা এবং আল্লাহর রাসূলগণের প্রতি কুফরী করা। তারাই আপনাদের পূর্বপুরুষ ও তোমরা তাদের বংশধর। মূল বিষয় যা আপনাদের পরস্পরকে যুক্ত করে তা হলো তোমাদের এবং ঐ কুফরের বিধান হলো ধ্বংসকরণ।" [২]
.ইমাম মুহাম্মদ বিন সালিহ আল ‘উসাইমীন (رحمه الله) বলেন, "যদি বলা হয়, আমাদের কাছে ধ্বংসপ্রাপ্ত জাতিগুলোর কাহিনী বর্ণনা করায় লাভ কী, এতদ্বসত্তেও যে এই উম্মাহ এর পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মতো পরিপূর্ণভাবে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবেনা?"
.জবাব: নিশ্চয়ই এর দুটো উপকার রয়েছে। প্রথম উপকারটি হলো, এটা আমাদের উপর আল্লাহর আল্লাহর মেহেরবানির স্পষ্টকরণ যে, সম্পূর্ণরূপে ধ্বংসকরণ ঘটা আমাদের থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে আর এটা যদি আল্লাহর দয়াশীলতার জন্য না হতো, আমরা এর উপযুক্তই হতাম। দ্বিতীয়ত, তারা যেমন শাস্তি পেয়েছে তেমনটা আখিরাতে তার সাথেও ঘটতে পারে যে তাদের করা কাজগুলো করেছে। এবং এটি আল্লাহর কথা থেকে বোঝা যেতে পারে:
.আর তোমার রব্ব যখন কোন পাপপূর্ণ জনপদকে ধরেন, তখন এমনিভাবেই ধরে থাকেন। নিশ্চয় তাঁর পাকড়াও খুবই মারাত্নক, বড়ই কঠোর। নিশ্চয় ইহার মধ্যে নিদর্শন রয়েছে এমন প্রতিটি মানুষের জন্য যে আখেরাতের আযাবকে ভয় করে। । [সূরা হুদ, ১০২-১০৩]
.তো এই আয়াতগুলো থেকে আমরা কি বুঝি? তারা যেরুপ শাস্তি পেয়েছিল সেরূপ আখিরাতে ঘটবে। ওয়াল্লাহু আ’লাম [৩]
.ফুটনোট:
[১] বারা’আতুস-সাহাবাহ আল-আখইয়ার মিন আত-তাবাররুক বিল আমাকীন ওয়াল-আলাছার। পৃষ্ঠা নংঃ ১১-১৪, কিয়দ পরিমার্জিত।
[২] আল ই'লাম আল-মুয়াক্কিঈন, ১/১৮১।
[৩] আল মুনতাক্বা মিন ফাওয়াঈদিল ফাওয়াইদ, ১২৩-১২৪।
.তথ্যসূত্র: (https://bit.ly/3gxTEGV)
.অনুবাদক: মুহাইমিনুর রহমান স্নিগ্ধ
0 Comments