▌শির্ক
খণ্ডনের চারটি নীতি [১ম পর্ব]
মূল: শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব
আন-নাজদি রাহিমাহুল্লাহ
ভাষ্যকার: আল্লামা সুলাইমান আর-রুহাইলি হাফিযাহুল্লাহ
অনুবাদকের কথা:
আচ্ছা, আমরা একটি বিষয় কল্পনা করে দেখি। ধরুন, আমাকে
কিংবা আপনাকে ঊর্ধ্ব গগনের উচ্চতায় নিয়ে যাওয়া হলো। কত উঁচু চিন্তা করেন। একেবারে আকাশে।
এরপর হঠাৎ কেউ একজন ধাক্কা দিয়ে আমাদের ফেলে দিল পৃথিবীতে। বলুন দেখি, ওই সুবিশাল উচ্চতা
থেকে পড়লে আমাদের কী অবস্থাটা হবে? আমাদের এ অবস্থা হোক, তা আমরা ভাবতেও চাই না, তাইনা?
কিন্তু একটা ব্যাপার চিন্তা করেন। কেউ যদি বলে, ‘ইয়া আলি, উদ্ধার করুন’, কিংবা ‘বাবা
আব্দুল কাদের, সন্তান দিন’, অথবা ‘ইয়া হুসাইন, সাহায্য করুন’, বা ‘ইয়া রসুলাল্লাহ,
কেয়ামতের বিভীষিকায় আমায় রক্ষা করুন’, তার অবস্থাটা কিন্তু আমাদের কল্পিত অবস্থার মতোই
হয়ে যায়।
কারণ এই প্রার্থনাগুলো সরাসরি ইবাদত, উপাসনা। যাবতীয়
ইবাদত কেবল আল্লাহর জন্য নির্ধারণ করতে হবে। কারণ তিনিই এর হকদার। ইবাদতের এক চিলতে
অংশও আল্লাহর পরিবর্তে অন্যের জন্য ধার্য করলেই তা আল্লাহর সাথে শরিক স্থাপন করা হয়।
আল্লাহর সুনির্ধারিত হকের মধ্যে শরিকানা স্থির করা হয়। একেই বলে শির্ক। আর শির্কের
পরিণতি হয় আমাদের কল্পিত অবস্থার মতো করুণ বা তারচেয়েও ভয়াবহ। মহান আল্লাহ বলেছেন,
“যে আল্লাহর শরিক স্থাপন করে, সে যেন আকাশ থেকে পড়ল, এরপর পাখী তাকে ছোঁ মেরে নিয়ে
গেল, কিংবা বায়ু তাকে উড়িয়ে নিয়ে দূরবর্তী এক স্থানে নিক্ষেপ করল।” [সুরা হাজ: ৩১]
শির্ক করলে মহিমান্বিত আল্লাহর অধিকারকে খর্ব করা হয়,
প্রতাপান্বিত আল্লাহর মর্যাদা খাটো করা হয়। আমাদের মতো মাখলুকরাই নিজেদের একান্ত বিষয়ে
শরিকানা বরদাশত করতে পারি না। কেউ অন্যায়ভাবে এমনটি করে বসলে তাকে জালেম সাব্যস্ত করি।
তাহলে মহান রাজাধিরাজ আল্লাহর শানে এমন কাজ কতবড়ো অন্যায় হতে পারে? এজন্য আল্লাহ শির্ককে
অতিশয় বড়ো জুলুম বলে আখ্যায়িত করেছেন (সুরা লুকমান: ১৩)। কারণ কোনো জিনিসকে অপাত্রে
রাখাকেই বলা হয় জুলুম। সমুদয় ইবাদত ধার্য করতে হবে কেবল আল্লাহর জন্য। অন্যের জন্য
ইবাদত ধার্য করার মানে ইবাদতকে অপাত্রে রাখা। এটাই জুলুম, বরং সবচেয়ে বড়ো জুলুম। আল্লাহর
কাছে পানা চাই এ থেকে।
এজন্য শির্কের ভয়াবহতাও অনেক। এর অনিষ্ট সর্বগ্রাসী।
কারণ বান্দার ইবাদতে শির্ক ঢুকলে লাখো আমল করেও লাভ হবে না। শির্কের প্রবেশমাত্র সব
পরিণত হবে পণ্ড, নিস্ফল ও ব্যর্থ কাজে (সুরা যুমার: ৬৫; সুরা ফুরকান: ২৩)। বড়ো শির্কে
লিপ্ত হয়ে তওবা না করে মারা গেলে সেই হতভাগা বান্দার স্থান হবে জাহান্নামে, জান্নাত
তার জন্য হয়ে যাবে চিরতরে হারাম (সুরা মায়িদা: ৭২)। এর বিপরীতে কোনো বান্দা যদি শির্কের
পাপে নিজের ইমানকে কলুষিত না করে, তাদের জন্যই রয়েছে দুনিয়া ও আখেরাতে নিরাপত্তা ও
হেদায়েত (সুরা আনআম: ৮৭)।
শির্কের এমন সর্বগ্রাসী অনিষ্টের জন্য এবং যেকোনো মুহূর্তে
একজন বান্দা যে শির্কে লিপ্ত হতে পারে সে আশঙ্কায় তাওহিদপন্থিদের ইমাম নবি ইবরাহিম
আলাইহিস সালাম পর্যন্ত শির্ক থেকে বেঁচে থাকার দোয়া করেছেন (সুরা ইবরাহিম: ৩৫)। তাই
নিজের দ্বীন-ধর্ম রক্ষার খাতিরে শির্ক বিষয়ে জ্ঞানার্জন চালিয়ে যাওয়া এবং মানুষরা যেন
নিজেদের দ্বীনকে হেফাজত করতে পারে সেজন্য এ বিষয়ক জ্ঞান প্রচার করা আমাদের প্রত্যেকেরই
দায়িত্ব। যুগে যুগে এই দায়িত্বের কাজ যাঁরা আঞ্জাম দিয়ে এসেছেন, তাঁদের অন্যতম এবং
সেরাদের সেরা ছিলেন দ্বাদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ (সংস্কারক), শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ
বিন আব্দুল ওয়াহহাব আন-নাজদি রাহিমাহুল্লাহ।
তিনি শির্কের বিরুদ্ধে তাওহিদি দাওয়াত পরিচালনার জন্য
অনেকগুলো মৌলিক বই রচনা করেছিলেন। সেসবের অন্যতম হচ্ছে ‘শির্ক অপনোদনের নীতিমালা’ খ্যাত
পুস্তিকা ‘কাওয়াইদুল আরবা’ তথা ‘চারটি নীতি।’ এ পুস্তিকায় শির্ক থেকে বেঁচে থাকার চারটি
মূলনীতি আলোকপাত করা হয়েছে, যে চারটি নীতির মাধ্যমে আল্লাহর তৌফিকে বান্দা নিজের দ্বীনকে
শির্ক থেকে সুরক্ষিত করতে পারবে। অসংখ্য উলামা পুস্তিকাটির ব্যাখ্যা করেছেন এবং বারবার
জনসাধারণের কাছে আলোচনা করেছেন পুস্তিকার বিষয়বস্তু ও তার ভাষ্য।
সেসব ব্যাখ্যার মধ্য থেকে আমরা মদিনার ফাকিহ আল্লামা
সুলাইমান বিন সালিমুল্লাহ আর-রুহাইলি হাফিযাহুল্লাহর ব্যাখ্যাটি অনুবাদের জন্য চয়ন
করেছি। আমরা এই অমূল্য লেখাটির নাম দিয়েছি ‘শির্ক খণ্ডনের চারটি নীতি’। কিছু জায়গায়
উলামাদের বিভিন্ন ব্যাখ্যা ও বইপুস্তক থেকে গুরুত্বপূর্ণ টীকা সংযোজন করেছি। আর বোঝার
সুবিধার্থে আমরা বইয়ে পরিচ্ছেদ যুক্ত করে দিয়েছি। বলা বাহুল্য, শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ
বিন আব্দুল ওয়াহহাবের কথা আমরা ‘মূলপাঠ’ উপশিরোনামে উল্লেখ করেছি, আর শাইখ সুলাইমানের
ভাষ্য উল্লেখ করেছি ‘ব্যাখ্যা’ উপশিরোনামে।
আমাদের অনুবাদ ও উপস্থাপনায় কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ভুল গোচরীভূত
হলে তা জানানোর জন্য আমাদের দ্বার খোলা রইল। দোয়া করি, মহান আল্লাহ আমাদের এ কাজে ইখলাস
দিন এবং আমাদের এই সামান্য শ্রমকে কবুল করে নিন। ইয়া আল্লাহ, এ পুস্তিকার মূল লেখক,
ব্যাখ্যাকার, অনুলেখক, অনুবাদক, প্রকাশক, প্রচারক ও পাঠক-সহ বই সংশ্লিষ্ট সবাইকে উত্তম
পারিতোষিক দান করুন এবং পুস্তিকায় উল্লিখিত শাশ্বত তাওহিদি দাওয়াত বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছে
দিন। আমিন।
·
[ভাষ্যকারের নিবেদন]
যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহর জন্য
নিবেদিত। পরিপূর্ণ সালাত ও সালাম বর্ষিত হোক বিশ্বজগতের জন্য রহমতস্বরূপ প্রেরিত বান্দার
ওপর। আরও বর্ষিত হোক তাঁর অনুসারীবর্গ ও সকল সাহাবির ওপর। অতঃপর:
এই অধিবেশন আয়োজিত হয়েছে একটি সংক্ষিপ্ত কলেবরের অতিশয়
ফলপ্রসূ পুস্তিকা ব্যাখ্যা করার জন্য। পুস্তিকাটি রচনা করেছেন শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ
বিন আব্দুল ওয়াহহাব রাহিমাহুল্লাহ। পুস্তিকার নাম— ‘চারটি নীতি (اَلقَوَاعِدُ الْأَرْبَعُ)।’ এ পুস্তিকায় চারটি নীতি আলোকপাত করা হয়েছে, যেসবের মাধ্যমে তাওহিদকে সুরক্ষিত
করা সম্ভব হবে। নীতিগুলো যেন তাওহিদকে আবেষ্টনকারী প্রাচীর। এই চার নীতি তাওহিদকে হেফাজত
করে এবং এসবের মাধ্যমেই নির্মূলিত হয় তাওহিদ বিষয়ক যাবতীয় সংশয়।
কারণ তাওহিদ বাস্তবায়ন করতে মুসলিমকে বাধা দেয় এমন যত
সংশয় আছে, সবগুলোর মৌলিক বিষয়বস্তুকে খণ্ডন করে এই চারটি নীতি। তদ্রুপ তাওহিদের ক্ষেত্রে
বিপথগামী হওয়ার যত মাধ্যম আছে, সবগুলোকে বাধা-প্রদানকারী বাঁধও রয়েছে এই চারটি নীতির
মধ্যে। এর উপকারী দিকগুলো কতইনা বিপুল ও মহিমান্বিত! এগুলো এমন চারটি নীতি, যেগুলোকে
শাইখুল ইসলাম কুরআন-সুন্নাহর দলিল এবং জনমানুষের বাস্তব অবস্থা থেকে চয়ন করেছেন। তাওহিদের
মতো মহান বিষয়ের ক্ষেত্রে সৃষ্ট সংশয়গুলো সম্বন্ধে তিনি জানতেন, বিধায় তিনি এই চারটি
নীতি ব্যক্ত করেছেন এবং সাজিয়েছেন অনুপমভাবে। এজন্য আলোচ্য নীতিগুলো থেকে কল্যাণও এসেছে
ব্যাপক।
যাহোক, আমরা মহান আল্লাহর কাছে সাহায্যপ্রার্থনা করে
চারটি নীতির ব্যাখ্যা আরম্ভ করছি। আমি ‘ছয়টি মূলনীতি’ পুস্তিকার ভাষ্যেও বিষয়টি বলেছি।
আবার বলছি। জনসাধারণের কাছে এ চারটি নীতি পাঠ করা, পরিস্থিতি ও উপযোগিতা অনুযায়ী এর
ব্যাখ্যা করা এবং বিভিন্ন সময়ে এ পুস্তিকার আলোচনা পুনরাবৃত্তি করা তালিবুল ইলমদের
কর্তব্য। আমি তাদেরকে এ কাজে উৎসাহিত করি। কারণ এ কাজ ফলপ্রসূ বিষয়াদির অন্তর্গত। বরং
এই কাজ মানুষের জন্য সবচেয়ে বড়ো ফলপ্রসূ বিষয়াবলির একটি।
·
[ভূমিকা ও দোয়া]
মূলপাঠ: শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব রাহিমাহুল্লাহ
বলেন, বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম; দয়াময় করুণানিধি আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি।
ব্যাখ্যা: শাইখ রাহিমাহুল্লাহ তাঁর অন্যান্য পুস্তিকার
মতো এই পুস্তিকাও আরম্ভ করেছেন ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ বলে। এর কারণ নিম্নরূপ:
প্রথমত, তিনি কুরআনুল কারিমের অনুসরণ করতে চেয়েছেন। যেই
কুরআনের সকল সুরা ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ দিয়ে শুরু হয়েছে, কেবল সুরা তাওবা এর
ব্যতিক্রম।
দ্বিতীয়ত, কুরআনের মুসহাফের অনুসরণ করতে চেয়েছে। যেই
মুসহাফ শুরু হয়েছে সুরা ফাতিহা দিয়ে। আর সুরা ফাতিহার শুরুতে রয়েছে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির
রহিম।’ চাই আমরা এ কথা বলি যে, ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ সুরা ফাতিহার একটি আয়াত,
আর চাই অগ্রগণ্য মতানুসারে এ কথা বলি যে, ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ একটি স্বতন্ত্র
আয়াত, সুরা ফাতিহার অংশ নয়।
তৃতীয়ত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চিঠিপত্রের
অনুসরণ করতে চেয়েছেন। যেসব চিঠির প্রত্যেকটি শুরু হয়েছে ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’
দিয়ে। বিষয়টি উলামাগণ গবেষণা করে জেনেছেন। যেমন ইবনু হাজার প্রমুখ।
চতুর্থত, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এই বাণীর
সাথে সামঞ্জস্যতা বজায় রাখতে চেয়েছেন। যেখানে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন, كُلُّ أمْرٍ ذِيْ بَالٍ لَا يُبْدَأُ فِيْهِ بِـبسم لِلَّه الرَّحمٰنِ الرَّحِيْمِ فَهُوَ أبْتَرُ “প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’
বলে আরম্ভ না করলে অসম্পূর্ণ (বরকতশূন্য) থেকে যায়।” হাদিসটি বর্ণনা করেছেন খতিব বাগদাদি
ও সুবকি। কতিপয় আলিম হাদিসটিকে শক্তিশালী বলে অভিহিত করেছেন। যেমন ইবনু দাকিক আল-ইদ,
ইবনুল মুলাক্কিন, সুয়ুতি, আযিমাবাদি প্রমুখ। আমাদের শাইখ ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন,
"অগ্রগণ্য কথা হলো—হাদিসটির মান হাসান লি গাইরিহি।" কিন্তু ইমাম আলবানি রাহিমাহুল্লাহ
এ হাদিসের চরম দুর্বলতার কথা আলোচনা করেছেন। এক্ষেত্রে (আমার কাছে) স্পষ্ট অভিমত হলো,
হাদিসটি দুর্বল। কিন্তু ‘বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম’ দিয়ে আরম্ভ করার পূর্বোদ্ধৃত দলিলগুলোর
পাশাপাশি এ হাদিস থেকে প্রমাণগত সামঞ্জস্যতা বা মিশুক-ভাব গ্রহণ করা যায়।
বস্তুত একজন মুমিন বান্দা তার লেখা শুরু করে ‘বিসমিল্লাহির
রহমানির রহিম’ দিয়ে। তার শুরুটা হয় আল্লাহর নাম নিয়ে। যিনি ব্যতীত আর কেউ ইবাদতের হকদার
নয়। যিনি এমন সুপ্রশস্ত দয়ার অধিকারী, যা সমগ্র সৃষ্টিজগতকে পরিব্যাপ্ত করে আছে। আবার
তিনি এমন দয়ার অধিকারী, যা পৌঁছে যায় হেদায়েতপ্রাপ্ত মুমিন বান্দাদের সন্নিকটে।
·
মূলপাঠ: আমি মহান আরশের অধিপতি মহানুভব আল্লাহর কাছে
চাইছি, তিনি যেন দুনিয়া ও আখেরাতে আপনার পৃষ্ঠপোষকতা করেন এবং সর্বত্র আপনাকে বরকতময়
রাখেন। আর তিনি যেন আপনাকে করেন তাদের অন্তর্ভুক্ত, যাদেরকে দেওয়া হলে তারা শুকরিয়া
জ্ঞাপন করে, যারা বিপদগ্রস্ত হলে ধৈর্যধারণ করে এবং পাপকাজ করলে ক্ষমাপ্রার্থনা করে।
কারণ এই তিনটি বিষয়ই সৌভাগ্যের মূল।
ব্যাখ্যা: শাইখ এই পুস্তিকা শুরু করেছেন অত্যন্ত মহব্বতপূর্ণ
কোমল ভাষায়, যা অন্তরকে (প্রক্ষিপ্ত বক্তব্যের) প্রতি আকর্ষিত করে এবং হকের ব্যাপারে
মিষ্ট-স্বাদ উৎপাদন করে। যিনি এই পুস্তিকা পাঠ করবেন এবং পুস্তিকাটির বিষয়বস্তু জানবেন,
তার জন্য তিনি দোয়া করে নিয়ে আলোচনা আরম্ভ করেছেন। এটা দাওয়াতের একটি মাধ্যম, হককে
জনমানুষের কাছে নিয়ে আসার একটি উপায়। দাওয়াতের জন্য টার্গেটেড মানুষদের প্রতি দাওয়াত-দানকারী
দাঈর অনুকম্পা দেখানো এবং যেখানে কোমলতা দরকার সেখানে কোমল আচরণ করা দাওয়াতের অভীষ্ট
লক্ষ্য বাস্তবায়নের একটি অন্যতম মাধ্যম।
মহান আল্লাহ আমাদের নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
উদ্দেশে বলেছেন, فَبِمَا رَحْمَةٍ مِنَ اللَّهِ لِنْتَ لَهُمْ ۖ وَلَوْ كُنْتَ فَظًّا غَلِيظَ الْقَلْبِ لَانْفَضُّوا مِنْ حَوْلِكَ “অতএব আল্লাহর অনুগ্রহ এই যে, আপনি তাদের প্রতি কোমলহৃদয়;
পক্ষান্তরে আপনি যদি শুষ্কভাষী ও কঠোরহৃদয় হতেন, তাহলে অবশ্যই তারা আপনার সংসর্গ থেকে
সরে যেত।” [সুরা আলে ইমরান: ১৫৯] এই দোয়া মানবহৃদয়কে দাওয়াতের প্রতি আকর্ষিত করবে।
এটি একটি মহান দোয়া।
শাইখ বলেছেন, ‘আমি মহান আরশের অধিপতি মহানুভব আল্লাহর
কাছে চাইছি।’ শাইখ যথোপযুক্ত মাধ্যম গ্রহণ করে (আল্লাহর মহানুভবতা ও বিশালত্বের অসিলা
দিয়ে) দোয়া করেছেন।
এরপর প্রার্থনা করেছেন, ‘তিনি যেন দুনিয়া ও আখেরাতে আপনার
পৃষ্ঠপোষকতা করেন।’ অর্থাৎ তিনি যেন আপনার অলি তথা পৃষ্ঠপোষক হয়ে যান। আর আল্লাহ যার
পৃষ্ঠপোষকতা তথা সহয়তা করেন, সে কীভাবে ধ্বংস হবে? মহান আল্লাহ যার পৃষ্ঠপোষকতা করেন,
তাকে তিনি দুনিয়াতে হেফাজত করেন। ফলে তিনি সেই বান্দার কান হয়ে যান, যে কান দিয়ে সে
শোনে, তার চোখ হয়ে যান, যে চোখ দিয়ে সে দেখে, তার হাত হয়ে যান, যে হাত দিয়ে সে ধরে,
তার পা হয়ে যান, যে পা দিয়ে সে হাঁটে (সহিহ বুখারি, হা: ৬৫০২)।
[অনুবাদকের টীকা: কান-চোখ-হাত-পা হয়ে যাওয়ার মানে আল্লাহ
এসব প্রত্যঙ্গে সঠিকতা দান করেন, ফলে এগুলো দিয়ে বান্দা সর্বদাই আল্লাহর নির্দেশনা
মেনে চলে। এটাই হাদিসের প্রকাশ্য অর্থ, যা কেবল সত্যানুসন্ধানী অনুধাবনকারীরাই উপলব্ধি
করতে পারে। বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: ইমাম ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ বিরচিত শারহুল কাওয়াইদিল
মুসলা, পৃষ্ঠা: ৩০৫-৩১০; দারুত তাইসির কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২৬ হি./২০০৫ খ্রি.
(১ম প্রকাশ)। টীকা সমাপ্ত]
আল্লাহ উক্ত বান্দার সাথে থাকেন। সে আল্লাহর কাছে চাইলে
তিনি তাকে প্রদান করেন। আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইলে তিনি তাকে আশ্রয় দেন। আর আল্লাহ যার
অলি (পৃষ্ঠপোষক) হয়ে যান, তার কোনো শঙ্কা ও চিন্তা থাকে না। দুনিয়া ও আখেরাতে সমুদয়
কল্যাণের মাধ্যম মহান আল্লাহর পৃষ্ঠপোষকতা।
শাইখ বলেছেন, ‘তিনি যেন সর্বত্র আপনাকে বরকতময় রাখেন।’
বরকত আসে আল্লাহর তরফ থেকে, তিনি যাকে ইচ্ছে তা প্রদান করেন। ফলে বান্দার জীবন, জ্ঞান
ও অনুগ্রহপ্রাপ্তিতে তিনি বরকত দেন।
এরপর শাইখ বলেছেন, ‘আর তিনি যেন আপনাকে করেন তাদের অন্তর্ভুক্ত,
যাদেরকে দেওয়া হলে তারা শুকরিয়া জ্ঞাপন করে, যারা বিপদগ্রস্ত হলে ধৈর্যধারণ করে এবং
পাপকাজ করলে ক্ষমাপ্রার্থনা করে। কারণ এই তিনটি বিষয়ই সৌভাগ্যের মূল।’ অর্থাৎ আল্লাহ
যেন আপনাকে তিনটি বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত করেন, যে তিনটি গুণ সৌভাগ্যের মূল। আল্লাহ
যেন আপনাকে তাদের একজন করেন, যাদেরকে দেওয়া হলে তারা শুকরিয়া আদায় করে, যারা বিপদগ্রস্ত
হলে ধৈর্য ধরে এবং পাপকাজ করলে প্রার্থনা করে ক্ষমা।
মানুষ কেবল নেয়ামতপ্রাপ্তি, মুসিবতে নিপাতন ও পাপকাজ
সংঘটনের মাঝে আবর্তন করে। নেয়ামতের শুকরিয়া আদায়ের তৌফিকপ্রাপ্ত হলে বান্দা স্বীয় কর্তব্য
পালন করে। এতে করে তার নেয়ামতগুলো স্থায়িত্ব লাভ করে, বরং বৃদ্ধি পেয়ে যায়। মহান আল্লাহ
বলেছেন, وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكُمْ لَئِنْ شَكَرْتُمْ لَأَزِيدَنَّكُمْ “স্মরণ করো, যখন তোমাদের রব ঘোষণা দিলেন, ‘যদি তোমরা
শুকরিয়া আদায় করো, তবে আমি অবশ্যই তোমাদের বাড়িয়ে দেব’।” [সুরা ইবরাহিম: ৭]
বিপদে পড়লে বান্দা যখন ধৈর্যধারণের তৌফিক লাভ করে, তখন
বিপদ তার কাছে সহজ হয়ে যায়। সে পুরস্কার পেয়ে ধন্য হয় এবং একসময় বিপদটিও যায় কেটে।
বস্তুত এই দ্বীন শুকরিয়া ও ধৈর্যধারণের দ্বীন। আর মানুষ যখন সর্বত্র আল্লাহকে ভয় করে
চলে, পদস্খলিত হয়ে গুনাহ করে ফেললেও সে যখন দ্রুত ক্ষমাপ্রার্থনার দিকে ধাবিত হয়, সে
যখন আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়, আর ক্ষমাপ্রার্থনার দরুন আল্লাহও তার পাপ মোচন করে
দেন, তখন সেই বান্দা হয়ে যায় পরিপূর্ণ কল্যাণ ও নিরাপত্তার অধিকারী। এটাই তো প্রকৃত
সৌভাগ্য। যে বান্দার অন্তরে শুকরিয়া, ধৈর্য ও ক্ষমাপ্রার্থনার অস্তিত্ব নেই, সে কখনো
স্বস্তি লাভ করতে পারে না। এসবের মাধ্যমে প্রাপ্ত স্বস্তি বান্দার অঙ্গপ্রত্যঙ্গের
ওপর প্রতিফলিত হয়। শাইখ রাহিমাহুল্লাহ সত্যই বলেছেন, ‘এই তিনটি বিষয়ই সৌভাগ্যের মূল।’
·
[তাওহিদের গুরুত্ব ও শির্কের ভয়াবহতা]
মূলপাঠ: জেনে রাখুন, আর আল্লাহ আপনাকে তাঁর আনুগত্য করার
তৌফিক দিন, নিশ্চয় ইবরাহিমের আদর্শ হানিফিয়্যাহ হলো—আপনি এক আল্লাহর ইবাদত করবেন, সমগ্র
দ্বীনকে তাঁর জন্য একনিষ্ঠ করে। মহান আল্লাহ সকল মানুষকে এরই নির্দেশ দিয়েছেন এবং এজন্যই
তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।
ব্যাখ্যা: শাইখ বলেছেন, ‘জেনে রাখুন, আর আল্লাহ আপনাকে
তাঁর আনুগত্য করার তৌফিক দিন।’ আলিমগণের নিকট মূলনীতি হলো— ‘জেনে রাখুন’ কথাটি কেবল
বড়ো ধরনের বিষয়াবলির সামনেই বসবে, যেসব বিষয়ে জানা ওয়াজিব এবং যেসবের উপকারিতা ব্যাপক।
তিনি কোমলতাবশত নির্দেশের পর পুনরায় দোয়া করেছেন। আপনি লক্ষ করুন, তিনি কীভাবে দোয়াটি
চয়ন করেছেন! তিনি বলেছেন, ‘জেনে রাখুন।’ অর্থাৎ আমি আপনার কাছে কল্যাণকর বিষয় এবং কতিপয়
মহান মূলনীতি আলোকপাত করব। এরপর প্রার্থনা করেছেন, ‘আল্লাহ আপনাকে তাঁর আনুগত্য করার
তৌফিক দিন।’ এসব মূলনীতি জেনে নেওয়া এবং এসবের অন্তর্নিহিত বিষয়াদি আমলে বাস্তবায়ন
করা আল্লাহর আনুগত্যেরই অন্তর্গত।
এরপর তিনি এই মহান প্রারম্ভিকা দিয়ে সূচনা করেছেন, ‘নিশ্চয়
ইবরাহিমের আদর্শ হানিফিয়্যাহ।’ কারণ মহান আল্লাহ বলেছেন, وَقَالُوا كُونُوا هُودًا أَوْ نَصَارَىٰ تَهْتَدُوا ۗ قُلْ بَلْ مِلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۖ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ “আর তারা বলে, ‘তোমরা ইহুদি কিংবা খ্রিষ্টান হয়ে যাও, তাহলে হেদায়েতপ্রাপ্ত
হবে’। বল, ‘বরং আমরা একনিষ্ঠ ইবরাহিমের ধর্ম অনুসরণ করি, যিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত
ছিলেন না’।” [সুরা বাকারা: ১৩৫] মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, مَا كَانَ إِبْرَاهِيمُ يَهُودِيًّا وَلَا نَصْرَانِيًّا وَلَٰكِنْ كَانَ حَنِيفًا مُسْلِمًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ “ইবরাহিম ইহুদিও ছিল না, খ্রিষ্টানও ছিল না; বরং সে ছিল একনিষ্ঠ মুসলিম। সে
মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না।” [সুরা আলে ইমরান: ৬৭]
উলামাগণ হানিফ অভিধাকে এভাবে সংজ্ঞায়িত করেছেন, “সরল
পথের অনুসারী একনিষ্ঠ বান্দা।” হানিফ কে? যিনি সরল পথের ওপর অবিচল থাকেন, বিচ্যুতি
এড়িয়ে গিয়ে থাকেন একনিষ্ঠ অনুসারী হয়ে। আপনি যদি হানিফ হতে চান, তাহলে এসব বৈশিষ্ট্য
ধারণ করুন। নিজের আত্মা ও শয়তানদের সাথে জিহাদ করে সরল পথের ওপর অটল থাকুন, সরল পথকে
আঁকড়ে ধরুন, যাবতীয় বিচ্যুতি এড়িয়ে চলুন, আর আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা এবং রসুলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসারীতে পরিণত হোন।
ভাষাগত দিক থেকে হানিফ শব্দের মূল— اَلْمَيْلُ وَالْاسْتِقَامَةُ “অর্থাৎ ঝুঁকে যাওয়া এবং অটল থাকা।” কতিপয় আলিম বলেন, এর শব্দমূল
হলো— ঝুঁকে যাওয়া। এ থেকেই বলা হয় আহনাফ। যার এক পা বেঁকে আরেক পায়ের দিকে ঝুঁকে যায়,
তাকে আহনাফ বলে। আবার কতিপয় আলিম বলেন, হানিফ শব্দের মূল ইস্তিকামাহ তথা সরল পথে অটল
থাকা। এ হলো হানিফের পরিচয়। কিন্তু হানিফিয়্যাহ কী? হানিফিয়্যাহ হচ্ছে ইবরাহিম আলাইহিস
সালামের ধর্ম। এ ধর্মের আদর্শ হলো—তাওহিদ প্রতিষ্ঠা করা এবং শির্ক থেকে বেঁচে থাকা।
শাইখ রাহিমাহুল্লাহ এ ব্যাখ্যাই করেছেন।
[অনুবাদকের টীকা: তাওহিদ প্রতিষ্ঠা করা আর শির্ক থেকে
বেঁচে থাকার দাওয়াত প্রত্যেক নবি-রসুলের ধর্ম ছিল। দেখুন: সুরা নাহল: ৩৬, সুরা আম্বিয়া:
২৫, সুরা আনআম: ৮৮, সুরা যুমার: ৬৫। তাই বাস্তবিক অর্থে হানিফিয়্যাহ সকল রসুলের ধর্ম।
কিন্তু কুরআনুল কারিমে এ আদর্শকে কেবল ইবরাহিম আলাইহিস সালামের দিকে সম্পৃক্ত করার
তিনটি কারণ জানা যায়। উক্ত তিনটি কারণ সৌদি আরবের সর্বোচ্চ উলামা পরিষদের প্রাক্তন
সদস্য আল্লামা সালিহ আল-উসাইমি হাফিযাহুল্লাহ উল্লেখ করেছেন ‘শির্ক খণ্ডনের চারটি নীতি’
পুস্তিকার একাধিক ভাষ্যে। কারণ তিনটি নিম্নরূপ:
এক. আমাদের নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যাদের
মাঝে প্রেরিত হয়েছিলেন, তারা ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে চিনত। তাঁর দিকে সম্পৃক্ত করে
নিজেদের পরিচয় দিত, তাঁকে দাদা হিসেবে গণ্য করত এবং নিজেদেরকে দাদার ধর্মের অনুসারী
মনে করত। তাই দাদার অনুসরণ করে আল্লাহর একনিষ্ঠ শির্কমুক্ত বান্দা হওয়াই ছিল তাদের
কর্তব্য। এজন্য অন্য নবিদের প্রতি হানিফিয়্যাহ ধর্মকে জুড়ে না দিয়ে ইবরাহিম নবির সাথে
জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
দুই. মহান আল্লাহ ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে তাঁর পরবর্তী
নবিদের ইমাম বানিয়েছেন। তাঁর পূর্ববর্তী নবিদের ক্ষেত্রে এমনটি ঘটেনি। আল্লাহ তাঁদের
কাউকে পরবর্তী নবিদের নেতা বানাননি। এ বিষয়টি ইমাম ইবনু জারির আত-তাবারি তদীয় তাফসির
গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।
তিন. ইবরাহিম আলাইহিস সালাম তাওহিদ বাস্তবায়নের চূড়ান্ত
পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছিলেন। আমাদের নবি মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যতীত
আর কেউ তাঁর স্তরে পৌঁছতে পারেনি। এজন্য তাঁরা দুজনেই মহান আল্লাহর খলিল (সবচেয়ে ভালোবাসার
কেউ, বা অন্তরঙ্গ বন্ধু)। টীকা সমাপ্ত।]
এরপর শাইখ মুহাম্মাদ বলেছেন, ‘আপনি এক আল্লাহর ইবাদত
করবেন, সমগ্র দ্বীনকে তাঁর জন্য একনিষ্ঠ করে। কারণ মহান আল্লাহ সকল মানুষকে এরই নির্দেশ
দিয়েছেন এবং এজন্যই তাদেরকে সৃষ্টি করেছেন।’ মহান আল্লাহ বলেছেন, وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِیَعۡبُدُونِ "আমি মানুষ ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি কেবল এজন্য যে, তারা একমাত্র আমারই
ইবাদত করবে।" [সুরা জারিয়াত: ৫৬] এটাই হানিফিয়্যাহ ধর্ম। অর্থাৎ আপনি আল্লাহর
ইবাদত করবেন, তাঁর জন্য সমগ্র ধর্মকে (ইবাদতকে) একনিষ্ঠ করে। ফলে আপনি একমাত্র মহান
আল্লাহরই নৈকট্য কামনা করবেন। ইবাদত করবেন এক আল্লাহর, যাঁর কোনো শরিক নেই। আপনি তাঁর
ইবাদত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করবেন।
আপনি ইবাদতের মাধ্যমে দুনিয়া কামনা করবেন না, মাখলুকের
প্রশংসাও কামনা করবেন না। আপনি কেবল কামনা করবেন মহান আল্লাহর নিকটে থাকা আপনার পারিতোষিক।
আপনি হবেন তাওহিদপন্থি ইবাদতগুজার বান্দা। কারণ এই ইবাদতের জন্যই যে আপনার সৃষ্টি হয়েছে।
মহান আল্লাহ বলেছেন, وَمَا خَلَقۡتُ ٱلۡجِنَّ وَٱلۡإِنسَ إِلَّا لِیَعۡبُدُونِ “আমি মানুষ ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি কেবল এজন্য যে,
তারা একমাত্র আমারই ইবাদত করবে।” [সুরা জারিয়াত: ৫৬]
উক্ত ইবাদত করারই নির্দেশ আপনাকে দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ
বলেছেন, وَمَاۤ أُمِرُوۤا۟ إِلَّا لِیَعۡبُدُوا۟ ٱللَّهَ مُخۡلِصِینَ لَهُ ٱلدِّینَ حُنَفَاۤءَ “তাদেরকে কেবল এ নির্দেশই দেওয়া হয়েছিল যে, তারা আন্তরিকভাবে
আল্লাহর জন্য সমগ্র দ্বীনকে একনিষ্ঠ করে আল্লাহর ইবাদত করবে।” [সুরা বাইয়্যিনাহ: ৫]
তাওহিদভিত্তিক ইবাদতের দাওয়াত নিয়েই প্রেরিত হয়েছিলেন সকল রসুল। যেমন আল্লাহ বলেছেন,
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ “আমি প্রত্যেক জাতির মাঝেই রসুল পাঠিয়েছি, এ নির্দেশ দিয়ে যে, ‘তোমরা আল্লাহর
ইবাদত করো এবং তাগুতকে (*) পরিহার করো’।” [সুরা নাহল: ৩৬]
[(*) অনুবাদকের টীকা: যে উপাস্য, বা অনুসৃত নেতা, বা
মান্যবর কারও মাধ্যমে বান্দা নিজের সীমানা লঙ্ঘন করে, তাকেই তাগুত বলা হয়। আর সীমালঙ্ঘনের
ব্যাপারটি সেই মানব্যর বা অনুসৃত সৃষ্টির জানা থাকে এবং সে এতে সম্মত থাকে; যদি আসলেই
জানা ও সম্মত হওয়ার সামর্থ্য তার থাকে তবেই। উল্লিখিত পরিচিতি অনুযায়ী ইবলিস শয়তান,
মানুষের ইবাদত পেয়ে সন্তুষ্ট থাকা পির, জনমানুষ অনুসরণ করে এমন বিদাতি মৌলবি, জনসাধারণ
পাপের কাজে মান্য করে এমন ফাসেক ও কাফের নেতা, পূজিত গাছপালা, পাথর, মূর্তি প্রভৃতির
সবই তাগুত।
তাগুতকে বর্জন করতে হলে যাবতীয় শির্ক বর্জন করে এক আল্লাহর
তাওহিদ বাস্তবায়ন করতে হবে, তাগুতের কর্মকে বাতিল বলে বিশ্বাস করতে হবে, তাগুতকে ঘৃণা
করতে হবে এবং তাগুতের অনুসারীদের প্রতি পোষণ করতে হবে বিদ্বেষ। আর তাগুতের অনুসারীরা
যদি কাফির হয়, তাহলে তাদেরকে কাফির বলতে হবে। পক্ষান্তরে যারা কাফির নয়, তাদেরকেও ঘৃণা
করতে হবে, তাদের বিরোধিতা করতে হবে; যদিও ইমানি ভ্রাতৃত্বের দরুন তাদের প্রতি অবশিষ্ট
থাকবে আমাদের ভালোবাসাও। বিস্তারিত দ্রষ্টব্য: আমাদের অনুবাদ ও টীকাসংবলিত আল্লামা
সুলাইমান আর-রুহাইলি হাফিযাহুল্লাহ বিরচিত ‘তাগুত বিষয়ে বিস্তারিত’ শীর্ষক প্রবন্ধ।
টীকা সমাপ্ত।]
·
মূলপাঠ: আপনি যখন জানলেন, আল্লাহ আপনাকে তাঁর ইবাদত সম্পাদনের
জন্য সৃষ্টি করেছেন, তখন এও জেনে রাখুন, তাওহিদ ছাড়া কোনো ইবাদতকে ইবাদত বলা হয় না;
যেমন পবিত্রতাবিহীন নামাজকে নামাজ হিসেবে বিবেচনা করা হয় না।
ব্যাখ্যা: আপনি যখন জানলেন, বিশ্বাস স্থাপন করলেন এবং
দৃঢ়ভাবে জেনে নিলেন, আল্লাহ আপনাকে স্রেফ তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন। আর আল্লাহর
কসম, মানবসৃষ্টির রহস্য কেবল মহান আল্লাহর ইবাদত করা এবং মানবজাতি কর্তৃক তাওহিদের
মাধ্যমে পৃথিবীকে আবাদ করা। মানবসৃষ্টির কারণ রাজনীতি-রাষ্ট্রনীতি নয়। যেমন দলবাজ লোকেরা
ইসলামকে ‘রাজনৈতিক ইসলাম’ হিসেবে ব্যাখ্যা করে থাকে। মানুষ সৃষ্টির কারণ এই নয় যে,
আপনি বিল্ডিং নির্মাণ করবেন, আর সম্পদ জমা করবেন। যদিও বৈধ কাজ যতক্ষণ মূল লক্ষ্য—‘এক
আল্লাহর ইবাদত’ থেকে উদাসীন করে না দিচ্ছে, ততক্ষণ পর্যন্ত এতে কোনো সমস্যা নেই।
[অনুবাদকের টীকা: এখানে তাওহিদের পরিচয় আলোচনা করা দরকার।
তাওহিদের দু ধরনের অর্থ হয়ে থাকে। একটি ব্যাপক অর্থ, আরেকটি নির্দিষ্ট বা সীমাবদ্ধ
অর্থ। ব্যাপক অর্থ অনুযায়ী, আল্লাহকে তাঁর হকের ক্ষেত্রে এক হিসেবে গণ্য করাকে তাওহিদ
বলে। আর আল্লাহর হক তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত: (১) রুবুবিয়্যাহ তথা প্রভুত্বের অধিকার,
(২) উলুহিয়্যাহ বা ইবাদতের অধিকার, (৩) আসমা ওয়াস সিফাত তথা মহান আল্লাহর নাম ও গুণাবলির
অধিকার।
মহিমান্বিত রব আল্লাহর এই তিনটি অধিকারের ভিত্তিতে তাওহিদকে
তিনটি শ্রেণিতে বিভক্ত করা হয়েছে। উক্ত তিন শ্রেণির পরিচিতি শাইখ সুলাইমান আর-রুহাইলি
বক্ষ্যমাণ গ্রন্থে প্রথম নীতির ব্যাখ্যায় আলোচনা করেছেন। পক্ষান্তরে নির্দিষ্ট বা সীমাবদ্ধ
অর্থ অনুযায়ী, ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহকে এক হিসেবে গণ্য করাকে তাওহিদ বলে। শরিয়তের
দলিলে তাওহিদ পরিভাষাটি যেখানে ব্যবহৃত হয়, সেখানে তাওহিদ বলতে এই খাস বা সীমাবদ্ধ
অর্থটিই উদ্দিষ্ট হয়ে থাকে। বলা বাহুল্য, সীমাবদ্ধ অর্থে তাওহিদের উল্লিখিত পরিচিতি
মূলত তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ তথা তাওহিদুল ইবাদাহর পরিচিতি। টীকা সমাপ্ত]
অবশ্যই আপনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে কেবল আল্লাহর ইবাদত করার
জন্য। আপনি যখন এ বিষয়টি জানতে পারবেন, তখন আপনাকে অবশ্যই জেনে নিতে হবে, আল্লাহর ইবাদত
কাকে বলে, আর কীভাবে আপনি আল্লাহর ইবাদত সম্পাদন করবেন; যাতে করে আপনাকে সৃষ্টি করার
উদ্দেশ্য আপনি বাস্তবায়ন করতে পারেন, আর আপনার শেষ পরিণতি হয় চিরসুখী জান্নাত।
লেখক এখানেও বলেছেন, ‘জেনে রাখুন।’ এটা গুরুত্ববহ বিষয়ের
অগ্রে প্রদত্ত নির্দেশ। এই জ্ঞান জেনে রাখা প্রত্যেক মুসলিম নর ও নারীর ওপর ফরজে আইন।
কারও জন্য এ বিষয়কে পরিত্যাগ করা বৈধ নয়। অবশ্যই এ বিষয়টি জানতে হবে।
‘তাওহিদ ছাড়া কোনো ইবাদতকে ইবাদত বলা হয় না।’ আপনি ইবাদতের
ক্ষেত্রে আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ এবং তাঁর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের একান্ত
অনুগত না হলে আপনি কখনোই ইবাদতকারী হতে পারবেন না। প্রকৃত ইবাদত হওয়ার জন্য ইবাদতের
শর্তই হচ্ছে—আল্লাহর প্রতি একনিষ্ঠ ও আন্তরিক থাকা। অর্থাৎ আপনি মানুষের প্রশংসা এবং
মানুষের মালসামগ্রী থেকে দৃষ্টি সরিয়ে রেখে এক আল্লাহর ইবাদত করবেন। যেমন নবি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ، وَإِنَّمَا لِكُلِّ امْرِئٍ مَا نَوَى، فَمَنْ كَانَتْ هِجْرَتُهُ إِلَى دُنْيَا يُصِيبُهَا أَوْ إِلَى امْرَأَةٍ يَنْكِحُهَا فَهِجْرَتُهُ إِلَى مَا هَاجَرَ إِلَيْهِ “নিশ্চয়
যাবতীয় আমলের প্রাপ্য নিয়তের ওপর নির্ভরশীল। আর মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিফল পাবে।
তাই যার হিজরত হবে দুনিয়া লাভের জন্য, সে তাই অর্জন করবে কিংবা যার হিজরত হবে কোনো
মহিলাকে বিবাহ করার উদ্দেশ্যে, সে তাকেই বিবাহ করবে। তার হিজরাত সে উদ্দেশ্যেই হবে,
যে জন্য সে হিজরত করেছে।” [সহিহ বুখারি, হা: ১; সহিহ মুসলিম, হা: ১৯০৭]
আর অবশ্যই আপনি রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
অনুগত হবেন। যেমন নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, مَن أَحْدَثَ في أمْرِنا هذا ما ليس فيه، فهو رَدٌّ “যে আমাদের দ্বীনের মধ্যে এমন কিছু নবউদ্ভাবন করল, যা এর অন্তর্ভুক্ত নয়,
তা প্রত্যাখ্যাত।” [সহিহ বুখারি, হা/২৬৯৭; সহিহ মুসলিম, হা/১৭১৮] নবি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন, فَمَنْ رَغِبَ عَنْ سُنَّتِي فَلَيْسَ مِنِّي “যে আমার সুন্নাত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, সে আমার দলভুক্ত
নয়।” [সহিহ বুখারি, হা: ৫০৬৩; সহিহ মুসলিম, হা: ১৪০১]
এটা ইবাদত কবুলের শর্ত, যেমন নামাজ কবুলের শর্ত পবিত্র
থাকা। শাইখ এ বিষয়টি উল্লেখ করেছেন। কারণ এটা সকল মুসলিমের কাছেই বিদিত। অর্থাৎ এ বিষয়টি
সবারই জানা আছে, যে ব্যক্তি নামাজ পড়তে চায়, তাকে অবশ্যই ওজু করে নিতে হবে। অবশ্যই
তাকে পবিত্র হতে হবে। সে যদি ওজু না করে, তাহলে সবাই বলবে, তার নামাজ প্রত্যাখ্যাত
বাতিল। ইবাদতের ক্ষেত্রে তাওহিদের ব্যাপারটিও ঠিক একইরকম। ইবাদত শুদ্ধ হওয়ার জন্য অবশ্যই
শির্কমুক্ত একনিষ্ঠতা লাগবে। অন্যথায় ইবাদত হয়ে যাবে প্রত্যাখ্যাত।
আল্লাহ ভালোবাসেন ও পছন্দ করেন, এমন যাবতীয় প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য
কথা ও কাজই ইবাদত। ইবাদতে অবশ্যই মহান আল্লাহর প্রতি পরিপূর্ণ বশ্যতা ও বিনয়সূচক আনুগত্য
থাকতে হবে। ইবাদতের মধ্যে যদি শির্ক (*) প্রবেশ করে, তাহলে প্রবিষ্ট শির্ক ইবাদতকে
বাতিল তথা অকেজো করে দেবে। মহান আল্লাহ বলেন, وَلَقَدْ أُوحِيَ إِلَيْكَ وَإِلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكَ لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ “নিশ্চয় তোমার প্রতি এবং তোমার পূর্ববর্তীদের প্রতি ওহি করা হয়েছে, তুমি আল্লাহর
সাথে শরিক স্থাপন করলে তোমার সমুদয় আমল নিস্ফল হয়ে এবং অবশ্যই তুমি হবে ক্ষতিগ্রস্তদের
অন্তর্ভুক্ত।” [সুরা যুমার: ৬৫] মহান আল্লাহ মুশরিকদের ব্যাপারে বলেছেন, وَقَدِمْنَا إِلَىٰ مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَنْثُورًا “আমি তাদের আমলগুলোর দিকে অগ্রসর হব, এরপর সেগুলোকে পরিণত করব বিক্ষিপ্ত কিরণরেণুতে।”
[সুরা ফুরকান: ২৩]
[(*) অনুবাদকের টীকা: এখানে শির্কের পরিচয় জেনে নেওয়া
দরকার। শির্ক শব্দের অর্থ, অংশী স্থির করা বা অংশীদার স্থাপন করা। শরিয়তে শির্কের দুটি
অর্থ রয়েছে। একটি ব্যাপক অর্থ, আরেকটি নির্দিষ্ট বা সীমাবদ্ধ অর্থ। ব্যাপক অর্থ অনুযায়ী,
আল্লাহর অধিকারের কোনো অংশ অন্যের জন্য ধার্য করাকে শির্ক বলে। আল্লাহর অধিকারের প্রকারত্রয়
আমরা ইতঃপূর্বে আলোচনা করেছি। আর নির্দিষ্ট বা সীমাবদ্ধ অর্থ অনুযায়ী, ইবাদতের কোনো
অংশ আল্লাহ বাদ দিয়ে অন্য কারও জন্য ধার্য করাকে শির্ক বলে। শরিয়তের দলিলে শির্ক পরিভাষাটি
যেখানে ব্যবহৃত হয়, সেখানে শির্ক বলতে এই খাস বা সীমাবদ্ধ অর্থটিই উদ্দিষ্ট হয়ে থাকে।
শির্ক প্রধানত দু ধরনের। একটি বড়ো শির্ক, আরেকটি ছোটো
শির্ক। আল্লাহর অধিকারের যে অংশ অন্যের জন্য ধার্য করলে ইমানের মূল অংশ বিলীন হয়ে যায়,
তাকে বড়ো শির্ক বলে। যেমন: আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করা, আল্লাহ ব্যতীত অন্য
কেউ বিশ্ব পরিচালনা করে এমন বিশ্বাস রাখা, যেসব কাজ আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ করতে পারে
না এমনকাজ অন্য কেউ করতে পারে বলে বিশ্বাস রাখা প্রভৃতি। পক্ষান্তরে আল্লাহর অধিকারের
যে অংশ অন্যের জন্য ধার্য করলে ইমানের মূল অংশের চেয়ে অতিরিক্ত পূর্ণতার অংশ বিলীন
হয়ে যায়, তাকে ছোটো শির্ক বলে। যেমন: লোক দেখানোর জন্য কিছু ইবাদত করা, আল্লাহ ব্যতীত
অন্যের নামে শপথ করে ফেলা প্রভৃতি। টীকা সমাপ্ত]
·
মূলপাঠ: ইবাদতের মধ্যে যখন শির্ক প্রবেশ করে, তখন ইবাদত
বিনষ্ট হয়ে যায়। যেমন অপবিত্রতা যখন পবিত্রতার মাঝে প্রবেশ করলে তা নষ্ট হয়ে যায়। মহান
আল্লাহ বলেছেন, مَا كَانَ لِلْمُشْرِكِينَ أَنْ يَعْمُرُوا مَسَاجِدَ اللَّهِ شَاهِدِينَ عَلَىٰ أَنْفُسِهِمْ بِالْكُفْرِ ۚ أُولَٰئِكَ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ وَفِي النَّارِ هُمْ خَالِدُونَ “মুশরিকদের অধিকার নেই যে, তারা আল্লাহর মসজিদগুলো
আবাদ করবে, নিজেদের ওপর কুফরির সাক্ষ্য দেওয়া অবস্থায়। এদেরই আমলসমূহ বরবাদ হয়েছে এবং
এরা জাহান্নামে স্থায়ী হবে।” [সুরা তাওবা: ১৭] আপনি যেহেতু জানলেন, ইবাদতের সাথে শির্ক
মিশ্রিত হলে উক্ত শির্ক ইবাদতকে নষ্ট করে দেয় এবং আমলকে করে ফেলে পণ্ড, আর শির্ক সম্পাদনকারী
মুশরিক বান্দা চিরস্থায়ী জাহান্নামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়, সেহেতু আপনি এও জেনে গেছেন
যে, আপনার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পালনীয় কর্তব্য হচ্ছে শির্ক সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন
করা। আশা করা যায়, আল্লাহ আপনাকে এই ফাঁদ থেকে রক্ষা করবেন। সেই ফাঁদটি হচ্ছে আল্লাহর
সাথে শরিক স্থাপন করা। যেই কর্মের ব্যাপারে মহান আল্লাহ বলেছেন, إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ “নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর সাথে শরিক স্থাপন করাকে ক্ষমা করবেন না। এছাড়া অন্য সব
(গুনাহ) যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন।” [সুরা নিসা: ৪৮] (*) আর এই জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারটি
সম্পন্ন হবে চারটি মৌলিক নীতি জানার মাধ্যমে, যে নীতিগুলো মহান আল্লাহ তাঁর কিতাবে
উল্লেখ করেছেন।
[(*) অনুবাদকের টীকা: ‘যেই কর্মের ব্যাপারে মহান আল্লাহ
বলেছেন’ থেকে নিয়ে উল্লিখিত আয়াতাংশের শেষ পর্যন্ত অংশটুকু শাইখ সুলাইমান আর-রুহাইলি
কৃত শারহের নুসখায় নেই। আবার শাইখ আব্দুল মুহসিন আল-কাসিম হাফিযাহুল্লাহর তাহকিককৃত
নুসখাতেও এ অংশ নেই। কিন্তু উল্লিখিত অংশটুকু শাইখ ইবনু বায, শাইখ আমান আল-জামি, শাইখ
যাইদ আল-মাদখালি, শাইখ সালিহ আল-লুহাইদান, শাইখ সালিহ আল-ফাওযান, শাইখ আব্দুল আজিজ
আর-রাজিহি, শাইখ আব্দুর রহমান আল-বাররাক, শাইখ সালিহ আলুশ শাইখ, শাইখ সালিহ আল-উসাইমি,
শাইখ সালিহ আস-সিন্ধি প্রমুখের শারহকৃত নুসখায় পেয়েছি বিধায় আমরা মূলপাঠে তা যুক্ত
করে দিলাম। টীকা সমাপ্ত।]
ব্যাখ্যা: আপনি যখন জানলেন, কেবল আল্লাহর ইবাদতের জন্য
আপনি সৃজিত হয়েছেন, আর ইবাদত গৃহীত হওয়ার শর্তই হচ্ছে তাওহিদ, ইবাদতের মধ্যে শির্ক
প্রবেশ করলে উক্ত শির্ক ইবাদতকে নষ্ট করে ফেলে, যেমন কেউ অপবিত্র হলে তার নামাজ বাতিল
হয়ে যায়। আপনি এও জানলেন যে, শির্ক এখনও বিদ্যমান রয়েছে, মানুষ শির্কে পতিত হচ্ছে,
তখন এ বিষয়গুলো আপনাকে শির্ক থেকে হুঁশিয়ার থাকতে উৎসাহিত করবে। তখন তাওহিদকে জানা
এবং যে বিষয়ের মাধ্যমে তাওহিদ সুরক্ষিত হয় তা জেনে নেওয়া আপনার জন্য আবশ্যক করে দেবে।
যেসব বিষয়ের তাওহিদ সুরক্ষিত হয়, তার মধ্যে অন্যতম বিষয়
এই চারটি নীতি। নীতিগুলো তাওহিদের ওপরে থাকা প্রাচীরের মতো, যার মাধ্যমে তাওহিদকে সুরক্ষিত
রাখা হয়। এসব মূলনীতি সংশয়কে ছিন্ন করে এবং তাওহিদের ক্ষেত্রে বিচ্যুতির মাধ্যমগুলোকে
চূর্ণ করে দেয়। যে ব্যক্তি এই চারটি নীতি জেনেছে, এসব নীতিকে সুনিশ্চিতভাবে জেনে নিয়েছে,
তার অবস্থা এমন হবে যে, মহান আল্লাহর অনুগ্রহে আলোচ্য নীতিগুলো সম্পর্কে অর্জিত জ্ঞান
তাকে শির্ক থেকে মুক্ত রাখার এবং তার তাওহিদকে রক্ষা করার একটি মাধ্যমে পরিণত হবে।
আরবি ‘কাওয়াইদ’ শব্দটি ‘কায়িদা’ শব্দের বহুবচন। অভিধানে
কায়িদা শব্দের মূল— اَلثَّابِتَةُ "অর্থাৎ দৃঢ়, স্থায়ী, প্রতিষ্ঠিত।" পক্ষান্তরে
‘আসল’ শব্দটি কায়িদা শব্দের চেয়ে উঁচু স্তরের। কাওয়াইদ বলতে বোঝায় কিছু সর্বব্যাপী
বিষয়। যেসব বিষয়ের মাধ্যমে তাওহিদকে সুরক্ষিত করা যায় এবং তাওহিদ বিষয়ক সংশয়গুলো প্রতিহত
করা সম্ভব হয়। এখানে শাইখের বক্তব্যে চারটি নীতি বলতে উদ্দেশ্য— এমনকিছু সর্বব্যাপী
বিষয়, যেসবের মাধ্যমে তাওহিদকে সুরক্ষায় রাখা যায় এবং তাওহিদ বিষয়ক সংশয়গুলো প্রতিহত
করা যায়।
[অনুবাদকের টীকা: আলোচ্য চারটি নীতি তৎকালীন মক্কার মুশরিকদের
অবস্থা পরিস্ফুটিত করে তোলে, যাদের কাছে আমাদের নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
প্রেরিত হয়েছিলেন। পাশাপাশি নবিজি তাদেরকে কীসের দাওয়াত দিয়েছিলেন, আর শির্ক বলতে আসলে
কী বোঝায় সেটাও স্পষ্ট হয় এ নীতিগুলোর মাধ্যমে। এসবের মাধ্যমেই মুশরিকদের ধর্ম থেকে
আলাদা হয়ে যায় মুসলিমদের ধর্ম। সুতরাং চারটি নীতির উদ্দেশ্যই হচ্ছে—মুশরিকদের ধর্ম
ও মুসলিমদের ধর্মের মাঝে পার্থক্য করে দেওয়া। নীতিগুলো থেকে দুটো বিষয় জানা যায়: এক.
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আনীত ধর্মকে ভালোভাবে জানা যায়, দুই. নবিজি যেসব
মুশরিকের কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন তাদের অবস্থা জানা যায়। টীকা সমাপ্ত।]
·
[১ম নীতি: মক্কার কাফির-মুশরিকরা স্বীকৃতি দিত, আল্লাহই
হলেন সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা, সকল কিছুর নিয়ন্ত্রণকর্তা, জীবনদাতা ও মরণদাতা; এ সত্ত্বেও
তারা মুসলিম হিসেবে বিবেচিত হয়নি]
মূলপাঠ: প্রথম মূলনীতি: আপনি জেনে রাখবেন, যেসব কাফিরের
সাথে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ করেছেন, তারা স্বীকৃতি দিত,
আল্লাহই হলেন সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা, জীবনদাতা, মরণদাতা এবং সকল কিছুর নিয়ন্ত্রণকর্তা;
এ সত্ত্বেও তাদের এ স্বীকৃতি তাদেরকে ইসলামে প্রবিষ্ট করেনি। এ কথার দলিল মহান আল্লাহর
এই বাণী, قُلْ مَنْ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ أَمَّنْ يَمْلِكُ السَّمْعَ وَالْأَبْصَارَ وَمَنْ يُخْرِجُ الْحَيَّ مِنَ الْمَيِّتِ وَيُخْرِجُ الْمَيِّتَ مِنَ الْحَيِّ وَمَنْ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ ۚ فَسَيَقُولُونَ اللَّهُ ۚ فَقُلْ أَفَلَا تَتَّقُونَ “তুমি বল, কে তোমাদেরকে আসমান ও জমিন হতে রিজিক দিয়ে
থাকেন? কিংবা কে শ্রবণ ও দৃষ্টিসমূহের ওপর পূর্ণ অধিকার রাখেন? আর কে জীবন্তকে প্রাণহীন
হতে বের করেন, আর প্রাণহীনকে বের করেন জীবন্ত থেকে? আর তিনি কে সমস্ত বিষয় পরিচালনা
করেন? তখন তারা (প্রত্যুত্তরে) বলবে, আল্লাহ! সুতরাং তুমি বল, তাহলে কেন তোমরা (শির্ক
থেকে) নিবৃত্ত থাকছ না?” [সুরা ইউনুস: ৩১]
[অনুবাদকের টীকা: শাইখ সালিহ আল-উসাইমি হাফিযাহুল্লাহ
তাঁর ভাষ্যে উল্লেখ করেছেন, দুটো বিষয়ের বিবরণ দেওয়া এই মূলনীতির উদ্দেশ্য। এক. তৎকালীন
মক্কার কাফির-মুশরিকরা তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহকে স্বীকার করত। দুই. স্রেফ তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহর
স্বীকৃতি তাদেরকে ইসলামে প্রবিষ্ট করেনি এবং তাদের জানমালের নিরাপত্তাও প্রদান করেনি।
কারণ নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে কাফির আখ্যা দিয়েছেন এবং তাদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধও করেছেন। দুটো বিষয়ই সুরা ইউনুসের আয়াত থেকে প্রমাণিত হয়। টীকা সমাপ্ত]
ব্যাখ্যা: এটা প্রথম নীতি। এটি একটি মহান মূলনীতি। কারণ
শরিয়তের দলিলপ্রমাণ অনুযায়ী তাওহিদ তিন প্রকার। যথা:
এক. তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহ তথা প্রভুত্বের ক্ষেত্রে একত্ব:
মহান আল্লাহর কর্মাবলিতে তাঁকে এক হিসেবে গণ্য করাকে তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহ বলে। সকল
বিবেকসম্পন্ন মানুষ এ তাওহিদের স্বীকৃতি দেয়। ব্যতিক্রম কেবল বিরল কিছু মানুষ, যাদের
মানবীয় প্রকৃতি বিলকুল নষ্ট হয়ে গেছে এবং যাদের অন্তরগুলো হয়েছে তমসাচ্ছন্ন। প্রাচীন
যুগ বলুন, আর আধুনিক যুগ বলুন, বিরল কিছু মানুষ ছাড়া আপনি বলতে গেলে তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহ
অস্বীকার করে এমন কাউকে খুঁজেই পাবেন না। নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন একটি
সম্প্রদায়ের কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন, যারা তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহকে স্বীকৃতি দিত। যারা
স্বীকার করত, মহান আল্লাহই হলেন সৃষ্টিকর্তা, রিজিকদাতা ও সকল কিছুর নিয়ন্ত্রক।
দুই. তাওহিদুল আসমা ওয়াস সিফাত তথা নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে
একত্ব: এ তাওহিদের দাবি অনুযায়ী আপনি মহান আল্লাহর সেসব নাম ও গুণ সাব্যস্ত করবেন,
যেসব নাম ও গুণ তিনি স্বীয় কিতাবে কিংবা তদীয় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের
জবানে নিজের জন্য সাব্যস্ত করেছেন। আপনি আল্লাহর এসব নাম ও গুণকে প্রকাশ্য অর্থেই এমনভাবে
সাব্যস্ত করবেন, যেমনভাবে সাব্যস্ত করা মহান আল্লাহর মর্যাদার সাথে মানানসই। এক্ষেত্রে
আপনি এসব নাম ও গুণের অর্থ বিকৃত করা (কিংবা এসবের অর্থ জানা যায় না মর্মের বিভ্রান্তিকর
মত পোষণ করা) থেকে এবং এসবের ধরন ও সাদৃশ্য বর্ণনা করা থেকে বিরত থাকবেন।
তিন. তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ তথা উপাস্য গণ্য করার ক্ষেত্রে
একত্ব বা ইবাদতের ক্ষেত্রে একত্ব: ইবাদতের ক্ষেত্রে মহান আল্লাহকে এক হিসেবে গণ্য করাকে
তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ বলে। সুতরাং যাবতীয় ইবাদত কেবল মহান আল্লাহর জন্য ধার্য হবে। এটা
তাওহিদের সবচেয়ে মহান প্রকার। কারণ রসুলগণ মূলত এই তাওহিদের দাওয়াত নিয়েই প্রেরিত হয়েছিলেন।
এটা বান্দার ওপর মহান আল্লাহর অধিকার। এই তাওহিদ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অসংখ্য সম্মান
ও মর্যাদা নির্ধারিত হয়েছে।
বিষয়টি যখন এমনই, তখন আপনি জেনে রাখবেন, তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ
বাদ দিয়ে স্রেফ তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহ বাস্তবায়ন বান্দাকে কুফরের পরিধি থেকে বের করে
ইসলামে আনতে পারে না। কেবল তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহ বাস্তবায়নকারী তাওহিদপন্থি হিসেবে
বিবেচিত হয় না। বরং সে কাফিরদের অন্তর্গতই থেকে যায়। এর মাধ্যমেই আপনি সেসব লোকের ভ্রান্তি
বিষয়ে অবগত হতে পারবেন, যারা তাওহিদের ব্যাখ্যা করে এভাবে— মহান আল্লাহর কর্মাবলিতে
তাঁকে এক হিসেবে গণ্য করাই তাওহিদ! তারা যখন তাওহিদের কালিমা (লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ
তথা আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য মাবুদ নেই) নিয়ে আলোচনা করতে আসে, তখন স্রেফ মহান আল্লাহর
কর্মাবলি নিয়ে আলোচনা করে।
অথচ স্রেফ তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহর স্বীকৃতি মানুষকে কুফুরের
পরিমণ্ডল থেকে বের করে ইসলামে প্রবিষ্ট করতে পারে না। কারণ কুরাইশরা মহান আল্লাহর কর্মাবলির
প্রতি স্বীকৃতি দিত। তাঁরা আল্লাহর কর্মাবলিতে তাঁকে এক হিসেবে গণ্য করত। এ সত্ত্বেও
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলার দাওয়াত দিতেন।
আর তারাও যখন এই কালিমা তথা বাক্য শুনেছে, তখন নবিজির বিরোধিতা করেছে। এই কালিমা তারা
বলেনি। আর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন।
কারণ তারা এ কালিমার দাবি বাস্তবায়ন করেনি।
আমাদের এ কথার প্রমাণ বহন করে এমন অনেক আয়াত রয়েছে। শাইখ
রাহিমাহুল্লাহ সেসব আয়াত থেকে একটি আয়াত দিয়ে দলিল গ্রহণ করেছেন। আয়াতটি হচ্ছে মহান
আল্লাহর এই বাণী, “তুমি বল, কে তোমাদেরকে আসমান ও জমিন হতে রিজিক দিয়ে থাকেন? কিংবা
কে শ্রবণ ও দৃষ্টিসমূহের ওপর পূর্ণ অধিকার রাখেন? আর কে জীবন্তকে প্রাণহীন হতে বের
করেন, আর প্রাণহীনকে বের করেন জীবন্ত থেকে? আর তিনি কে সমস্ত বিষয় পরিচালনা করেন? তখন
তারা (প্রত্যুত্তরে) বলবে, আল্লাহ!” অর্থাৎ তারা তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহর স্বীকৃতি দিচ্ছে।
এরপর আল্লাহ বলেছেন, “সুতরাং তুমি বল, তাহলে কেন তোমরা (শির্ক থেকে) নিবৃত্ত থাকছ না?”
[সুরা ইউনুস: ৩১]
এটা একেবারে সুস্পষ্ট দলিল যে, তারা মহান আল্লাহর কর্মাবলিতে
তাঁকে এক হিসেবে গণ্য করত। এ সত্ত্বেও আল্লাহ তাদের এ স্বীকৃতি কবুল করেননি, যার ফলে
তারা মুসলিম হতে পারে। বরং তাদেরকে শির্ক থেকে নিবৃত্ত থাকতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং
এসব কর্মের স্বীকৃতি দেওয়া সত্ত্বেও নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ করেছেন। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, অবশ্যই তাওহিদুল উলুহিয়্যাহ বাস্তবায়ন করতে হবে
(কেবল এক আল্লাহর ইবাদত করতে হবে)।
·আগামী পর্বে সমাপ্য, ইনশাআল্লাহ।
·অনুবাদক: মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ মৃধা
0 Comments