▋আসিম আল হাকিমের বিভ্রান্তি। (পর্ব-১) .

আসিম আল হাকিমের বিভ্রান্তি। (পর্ব-১) .

আসিম আল হাকিম সাহেবের নিকট প্রশ্ন করা হয়, মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার ব্যাপারে কি আলেমদের মধ্যে ইজমা হয়েছে? জবাবে তিনি বলেন, “খুরুজ হলো মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে যাওয়া ও বিদ্রোহ করা। এ ব্যাপারে কি কোন ইজমা আছে? আমি বলি, ‘না' অধিকাংশ বিষয়ে আলেমদের মধ্যে ইজমা নেই। সবসময়ই এমন আলেম পাওয়া যাবে যারা অধিকাংশের মতের বিপরীতে যান।” : https://youtu.be/mW2cCPwJCto যাদের নাম ভাঙিয়ে আসিম চলেন তাদের একজন হলেন শাইখ সালিহ আল ফাওযান হাফেজাহুল্লাহ। উক্ত বিষয়ে শাইখকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, “না এটা (খুরুজ) কোন ইখতিলাফি বিষয় নয়। ইহা একটি মিথ্যাচার। বরং ইহা এমন একটি ব্যাপার, যার ব্যাপারে ইজমা হয়েছে। জালিম হলেও (জায়েজ ক্ষেত্রে) তার (মুসলিম শাসকের) আনুগত্য করা হবে।" : https://youtu.be/mW2cCPwJCto (৩০ সেকেন্ড থেকে শুনুন) এছাড়াও সালাফদের আক্বীদার মৌলিক গ্রন্থে সালাফগন এ ব্যাপারে কি আক্বিদা পোষণ করতেন তা উল্লেখ করবো যেখানে তারা ইজমার কথা উল্লেখ করছেন ও বিদ্রোহীদের বিদআতি বলেছেন। . 

 রাযি'আাইনের আক্বীদা। ইমাম আবু যুর'আ রাহিমাহুল্লাহ (মৃ: ২৬৪ হিজরী) ইমাম আবু হাতীম রাহিমাহুল্লাহ (মৃ: ২৭৭ হিজরী) আবু হাতীম রাহিমাহুল্লাহর ছেলে বর্ণনা করেন, আমি আমার বাবা এবং আবু যুর'আকে দ্বীনের মৌলিক বিষয়ের ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর মত সম্পর্কে জানতে চাইলাম। সকল শহরের আলিমদের তারা যার উপর পেয়েছিল এবং তারা(আলিমগণ) যা আক্বীদা হিসাবে লালন করতেন। এতে তারা উভয় (আবু যুর'আ ও আবু হাতীম) বললেন, “আমরা সকল শহরের; হিজাঝে, ইরাকে, মিশরে, শামে ইয়ামিনের আলিমদের পেয়েছি, তাদের মত ছিলো এই যে, আমরা মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ জায়েজ মনে করিনা এবং আমরা ফিতনার সময় যুদ্ধে লিপ্ত হইনা। যদের আল্লাহ আমাদের উপর দায়িত্বশীল করেছেন আমারা তাদের কাথ শুনি ও মান্য করি (জায়েজ ক্ষেত্রে)। আমারা তাদের আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে নেই না। https://drive.google.com/file/d/1uaxz-dCw0-tQCKnJlawFFS8zVnpfAYY9/view?usp=drivesdk https://drive.google.com/file/d/1ugvY3NQiRMKwxm1yC2KC1C2RuZkuFPZN/view?usp=drivesdk . 

 উল্লেখ্য যে এখানে ইমামদ্বয়কে ‘দ্বীনের মৌলিক বিষয়ের’ ব্যাপারে আহলুস সুন্নাহর মত সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে। এটা প্রমাণ করেছে ‘খুরুজ আলাল হাকেম’ কোন ফুরুঈ মাসআলা নয় বরং দ্বীনের মৌলিক বিষয়। দ্বিতীয়ত তারা সকল শরহরের আলেমদের ঐক্যমত বর্ণনা করেছেন। যারা বলে বিষয়টি নিয়ে ইখতিলাফ আছে তারা আক্বিদার একটি কিতাব থেকেও দলিল পেশ করতে পারবেনা। ওয়ালিল্লাহিল হামদ। .  আস-সুন্নাহ। ইমাম আবু বকর আল-খালাল (মৃ: ৩১১হিজরী) ইমাম আবু বকর রাহিমাহুল্লাহ তার আস-সুন্নাহ কিতাবে এটি অধ্যায় কায়েম করেছেন যার হেডলাইন হলো, “শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহীর ব্যাপারে সতর্কতা” https://drive.google.com/file/d/1ua_-6Oal0b1kzWfTgLQuGEbV5GrWiu0R/view?usp=drivesdk .  

তার এই অধ্যায় রচনা উক্ত মাসআলায় তার অভিমত স্পষ্ট করে। . 

 ইজমা আস-সালাফ। ইমাম খারমানী রাহিমাহুল্লাহ (মৃ: ২৮০ হিজরী) ইমাম খারমানী রাহিমাহুল্লাহ তার ইজমা আস-সালাফ কিতাব; যেখনে তিনি রাহিমাহুল্লাহ সালাফরা যেসকল বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন তার সংকলন করেছেন। তিনি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করোনা; শুনো এবং আনুগত্য করো। আনুগত্য থেকে হাত গুটিয়ে রেখোনা। রবং যে এমন করবে, সে একজন বিদআতি এবং জামআত থেকে বিচ্যুত। ---[ইজমা আস-সালাফ; পৃষ্ঠা-৪৬] https://drive.google.com/file/d/1u_2Z6pM88UE_URj4dXZp_FXVMyVhOKLd/view?usp=drivesdk . 

 ইমাম খারমানী রাহিমাহুল্লাহ বিদ্রোহী ও অনুগত্য বর্জনকারীকে তাবদী (বিদআতি বলে আখ্যায়িত) করেছেন। আবারও একই প্রশ্ন: বিদ্রোহের মাসআলা যদি ফুরূঈ কিংবা ইজতেহাদী হয় তাহলে ইমাম খারমানী কি ফুরূঈ মাসআলার উপর ভিত্তি করে তাবদী (বিদআতি বলে আখ্যায়িত) করেছেন?? এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, “খুরুজ আলাল হাকেম” হলো দ্বীননের মৌলিক বিষয় যার কারণে ব্যক্তি জামআত থেকে বিচ্যুত হয়ে যায়। . 

 শারহ উসুল এতেক্বাদ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাত। ইমাম আল-লালাকাঈ রাহিমাহুল্লাহ (মৃ: ৪১৮) তিনি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “মুমিনদের শাসকের কথা শুনো এবং (জায়েজ ক্ষেত্রে) আনুগত্য করো (হোক তারা) নেককার কিংবা বদকার। ---[খন্ড-১; পৃষ্ঠা-১৫৪,১৬৭,১৭৫,১৮৩] https://drive.google.com/file/d/1uZpRH6Dbg4YI-5LxoUF3X8lUD8564DHI/view?usp=drivesdk .  

এত্বেকাদ আহলুস সুন্নাহ। আবু বকর আল ইসমাঈলী রাহিমাহুল্লাহ (মৃ: ৩৭১ হিজরী) আহলে সুন্নাহর অবস্থান সম্পর্কে তিনি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, ৫৭) তারা (আহলে সুন্নাহ) এই দৃষ্টি পোষণ করে যে, তারা তাদের (শাসকদের) অনুগামী হয়ে জিহাদ করে যদিও তারা অত্যাচারী হয়। ৫৮) তারা (আহলে সুন্নাহ) এই দৃষ্টি পোষণ করে যে, তাদের (শাসকদের) জন্য দোয়া করা উচিত, সংশোধন ও ইনসাফের প্রতি দয়ালু হতে। ৫৯) এবং তারা (আহলে সুন্নাহ) এই দৃষ্টি পোষণ করে যে, তাদের প্রতি তরবারি উত্তোলন করা হবেনা। (অর্থাৎ বিদ্রোহ করা হবে না) https://drive.google.com/file/d/1uUbXXurQKDoqKTHR-xDNKPeZg17UhR5Z/view?usp=drivesdk . 

 আল-শারিয়া। ইমাম আল-আজু’রঈ রাহিমাহুল্লাহ (মৃ: ৩৭১ হিজরী) তিনি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “তার (শাসকের) আনুগত্য করো যতক্ষণ না আল্লাহর নাফরমানি করতে বলে। সে যদি তোমার অধিকার ছিনিয়ে নেয়, তোমাকে অন্যায়ভাবে আঘাত করে, তোমার মান ইজ্জত ক্ষুন্ন করে, তোমার ধন সম্পদ আত্মসাৎ করে, তাহলে এটা যেন তোমার তার (শাসকের) বিরুদ্ধে বিদ্রোহের কারণ না হয়। যার কারণে তুমি বিদ্রোহ কিংবা যুদ্ধ করো। কোন খারেজির সঙ্গী হয়ে শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করোনা যে কিনা শাসকের সাথে যুদ্ধ করে এবং অন্যদের বিদ্রোহ করতে উৎসাহী করোনা বরং সবর ইখতিয়ার করো।” https://drive.google.com/file/d/1uUNyNd-WX3qcRB1EhJL5dxsNo4SBl5PH/view?usp=drivesdk . 

 এখানে ইমাম আল-আজু’রঈ রাহিমাহুল্লাহও খুরুজ তথা শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে খারেজিদের সাথে তুলনা করেছেন। আবারও প্রমাণিত হয় যে এটি উসুলি বিষয়। .  

সালাফ ও আহলে হাদিসের আক্বীদা। ইমাম সাবু'নী রাহিমাহুল্লাহ (মৃ: ৩৭১ হিজরী) তিনি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “এবং তারা(আহলে সুন্নাহ) এব্যাপারে একমত যে; সংশোধন, বিজয়, নেককার (হওয়ার জন্য), ইনসাফ কায়েমর জন্য তাদের(শাসকের) জন্য দোয়া করা উচিত। এবং তারা(আহেল সুন্নাহ) তাদের(শাসকদের) বিরুদ্ধে তলোয়ার দ্বারা বিদ্রোহ জায়েজ মনে করে না। যদিও তারা তাদের ইনসাফ থেকে বেইনসাফির দিকে, যুলুম এবং অত্যাচারের দিকে ঝুকে পড়তে দেখে।” --[পৃষ্ঠা-৩৫৭] https://drive.google.com/file/d/1uT6CyzGqp02fp0BVVQELVqLem0pqsP9k/view?usp=drivesdk . 

 আক্বীদা আত-ত্বহাবীয়া। ইমাম ত্বহাবী রাহিমাহুল্লাহ (মৃ: ৩২১ হিজরী) তিনি রাহিমাহুল্লাহ তার কিতাবে উল্লেখ করেন, ৭২) আমীর ও শাসকদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করাকে আমরা জায়েয মনে করি না, যদিও তারা অত্যাচার করে। আমরা তাদের অভিশাপ দিব না এবং আনুগত্য হতে হাত গুটিয়ে নিব না। তাদের আনুগত্য আল্লাহর আনুগত্যের। সাপেক্ষে ফরয, যতক্ষণ না তারা আল্লাহর অবাধ্যচরণের আদেশ দেয়। আমরা তাদের মঙ্গল ও কল্যাণের জন্য দো'আ করব। https://drive.google.com/file/d/1vfzSUZOf1U3V3bk1i9L3ao_0YiQLIiRk/view?usp=drivesdk .  

উসুলুস সুন্নাহ। ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ (মৃ: ২৪১ হিজরী) তিনি রাহিমাহুল্লাহ বলেন, “শাসকের বিরুদ্ধে কোন মানুষের জন্য লড়াই কিংবা বিদ্রোহ করা হালাল নয়। যে এমন করবে (অর্থাৎ বিদ্রোহ করবে) সে একজন বিদআতি, সুন্নাহ ও পথ পরিপন্থী। --[উসুলস সুন্নাহ] .  

আহলে সুন্নাহর ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ, তিনিও বিদ্রোহীকে তাবদী করেছেন। আর তাবদী করা হয় মৌলিক বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ফুরূঈ কিংবা ইজতিহাদী মাসআলার উপর ভিত্তি করে নয়। .  শারহুস সুন্নাহ। ইমাম বারবাহারী রাহিমাহুল্লাহ (মৃ: ৩২৯ হিজরী) তিনি রাহিমাহুল্লাহ তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন, ৩৩)

যে মুসলিম শাসকের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করবে, সে খারেজী এর কারণ সে মুসলিম ঐক্যের লাঠিতে ফাটল সৃষ্টি করবে এবং হাদীসের বিরোধিতা ও বিপরীত কাজ করবে। আর এ সময় তার মৃত্যু হলে তা হবে জাহিলিয়্যাতের মৃত্যু। ৩৪) নিপীড়নকারী হলেও শাসকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ কিংবা বিদ্রোহ করা অনুমোদিত নয়। এজন্য যে, আবু গিফারীকে উপদেশ দেন: ধৈর্য ধারণ কর, এমনকি সে হাবাশী দাশ হলেও। https://drive.google.com/file/d/1uTQo9zhkqwkbvYDNgsf6NlvM5hcmIas9/view?usp=drivesdk .

উপরোক্ত বর্ণনাগুলো থেকে প্রমাণিত হয় যে, সালাফরা আক্বীদার ক্ষেত্রে বিদ্রোহ নাজায়েজ মর্মে ঐক্যবদ্ধ ছিলেন। আর হকপন্থিদের মধ্যে সংঘটিত বিদ্রোহকে তারা ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করেছেন যা সংগঠিত হয়েছিলো তাদের ইজতিহাদ থেকে।..

Post a Comment

0 Comments