▌শির্ক খণ্ডনের চারটি নীতি [শেষ পর্ব]
·মূল:
শাইখুল ইসলাম ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব আন-নাজদি রাহিমাহুল্লাহ
ভাষ্যকার:
আল্লামা সুলাইমান আর-রুহাইলি হাফিযাহুল্লাহ
·[২য়
নীতি: মক্কার মুশরিকরা তাদের বাতিল উপাস্যদের ইবাদত করত কেবল এজন্য যে, তারা তাদের
মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন করবে এবং ওই সকল উপাস্যরা তাদের জন্য আল্লাহর কাছে
সুপারিশ করবে]
মূলপাঠ:
দ্বিতীয় মূলনীতি: কাফিররা বলত, আমরা কেবল নৈকট্য আর শাফায়াত কামনার জন্যই তাদেরকে
আহ্বান করি এবং তাদের অভিমুখী হই।
[অনুবাদকের
টীকা: শাইখ সালিহ আল-উসাইমি চারটি নীতির ভাষ্যে আলোচনা করেছেন, মুশরিকদেরকে শির্ক
করতে উদ্বুদ্ধ করেছিল যে দুটো জিনিস, তার বিবরণ দেওয়াই এই নীতির উদ্দেশ্য। এক.
বাতিল উপাস্যদের ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য কামনা করা। দুই. বাতিল
উপাস্যদের ইবাদত করলে তারা উপাসকদের জন্য আল্লাহর কাছে সুপারিশ করবে এ বিশ্বাস
পোষণ করা। টীকা সমাপ্ত।]
ব্যাখ্যা:
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব মুশরিকের কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন, তারা
তাওহিদুর রুবুবিয়্যাহর প্রতি স্বীকৃতি দিত। তারা স্বীকার করত, মহান আল্লাহ তাঁর
কর্মাবলিতে এক। তারা যারই ইবাদত করত না কেন, তারা কেবল এ দলিলের ভিত্তিতে ইবাদত
করত যে, এর মাধ্যমে তারা আল্লাহর নৈকট্য কামনা করছে, উক্ত উপাস্যদেরকে তারা মহান
আল্লাহর কাছে পৌঁছার মাধ্যম নির্ধারণ করছে। তারা বলত, আমরা এ মূর্তিগুলোর ইবাদত
করি কেবল এজন্য যে, এর দরুন আমরা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল করতে পারব এবং তারা হবে
মহান আল্লাহর কাছে পৌঁছার ক্ষেত্রে আমাদের মাধ্যম।
আমরা
তাদের ইবাদত করি, যাতে মহান আল্লাহর কাছে তারা আমাদের জন্য সুপারিশ করে। এই ছিল
মুশরিকদের অবস্থা, যাদের কাছে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রেরিত
হয়েছিলেন। এ সত্ত্বেও তারা কুরআন-সুন্নাহর দলিল এবং রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ম অনুযায়ী অমুসলিম মুশরিক হিসেবেই বিবেচিত; যাদের সাথে
যুদ্ধ করা হবে, যতক্ষণ না তারা মহান আল্লাহকে সবক্ষেত্রে এক হিসেবে মেনে নিচ্ছে।
মূলপাঠ:
নৈকট্য কামনার দলিল— মহান আল্লাহর এই বাণী, وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَىٰ إِنَّ اللَّهَ يَحْكُمُ بَيْنَهُمْ فِي مَا هُمْ فِيهِ يَخْتَلِفُونَ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي مَنْ هُوَ كَاذِبٌ كَفَّارٌ “যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে
অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, তারা বলে, আমরা তো এদের ইবাদত এ জন্যই করি যে, এরা
আমাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্য এনে দিবে। তারা যে বিষয়ে নিজেদের মধ্যে মতভেদ করছে,
আল্লাহ তার ফায়সালা করে দেবেন। নিশ্চয় যে মিথ্যাবাদী ও কাফির, তাকে আল্লাহ সৎপথে
পরিচালিত করেন না।” [সুরা যুমার: ৩]
ব্যাখ্যা:
এটাই এ কথার দলিল যে, তারা তাদের ইবাদত করেছিল, যারা নিজেরাই (আল্লাহর) ইবাদত করত।
আর তারা আল্লাহর সাথে শরিক স্থাপন করেছিল এ দলিলের ভিত্তিতে। মহান আল্লাহ আয়াতে
বলেছেন, “যারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্যকে অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে।” অর্থাৎ যারা আল্লাহকে
বাদ দিয়ে অন্যদের অভিভাবকরূপে গ্রহণ করে, তাদের ইবাদত করে, তাদের কাছে প্রার্থনা
করে, বিপদে তাদের কাছে উদ্ধার কামনা করে এবং তাদের নামে মানুষকে কসম করতে বলে।
আয়াতে
এসেছে, ‘আমরা তো এদের ইবাদত এ জন্যই করি...।’ প্রকৃতপ্রস্তাবে তারা আমাদের উম্মতের
অনেক শির্ককারীর চেয়ে বেশি জ্ঞান রাখত। কেননা তারা জানত, তাদের এ কাজ ইবাদত।
অর্থাৎ তাদের মাবুদদের কাছে প্রার্থনা করা, বিপদে তাদের কাছে উদ্ধার কামনা করা
প্রভৃতিকে তারা মাবুদদের ইবাদতই মনে করত। পক্ষান্তরে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মত হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেয় এমন মুশরিক বা শির্কি কাজ
সম্পাদনকারীরা মনেই করে না, তাদের কাজ আসলেই ইবাদত। বরং তারা আল্লাহর পরিবর্তে
অন্যের ইবাদত করে মনে করে, তারা আসলে আল্লাহরই ইবাদত করছে।
‘তারা
বলে, আমরা তো এদের ইবাদত এ জন্যই করি যে, এরা আমাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্য এনে
দিবে।’ অর্থাৎ আমাদের ও আল্লাহর মাঝে তারা মধ্যস্থতাকারী হবে। আমরা তাদের
মধ্যস্থতায় আল্লাহর কাছে আমাদের প্রয়োজন পেশ করব। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, তারা এমন
মানুষদের ইবাদত করত, যারা নিজেরাই আল্লাহর ইবাদত করে; যাতে করে তারা মহান আল্লাহর
নৈকট্যশীল বান্দা হতে পারে।
·
মূলপাঠ:
শাফায়াত তথা সুপারিশ কামনার দলিল-- মহান আল্লাহর এই বাণী, وَيَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ مَا لَا يَضُرُّهُمْ وَلَا يَنْفَعُهُمْ وَيَقُولُونَ هَٰؤُلَاءِ شُفَعَاؤُنَا عِنْدَ اللَّهِ ۚ قُلْ أَتُنَبِّئُونَ اللَّهَ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي السَّمَاوَاتِ وَلَا فِي الْأَرْضِ ۚ سُبْحَانَهُ وَتَعَالَىٰ عَمَّا يُشْرِكُونَ “তারা
আল্লাহ ছাড়া এমন বস্তুসমূহের ইবাদত করে যারা তাদের কোনো অপকার করতে পারে না এবং
তাদের কোনো উপকারও করতে পারে না। আর তারা বলে, এরা হচ্ছেন আল্লাহর নিকট আমাদের
জন্য শাফায়াতকারী (সুপারিশকারী)। তুমি বলে দাও, তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ের
সংবাদ দিচ্ছ যা তিনি অবগত নন, চাই তা আসমানে হোক, কিংবা জমিনে? তিনি তো পবিত্র এবং
তাদের শির্কি কার্যকলাপ হতে তিনি অনেক ঊর্ধ্বে রয়েছেন।” [সুরা ইউনুস: ১৮] শাফায়াত
দু ধরনের। একটি নেতিবাচক শাফায়াত, আরেকটি ইতিবাচক শাফায়াত।
ব্যাখ্যা:
এ থেকে প্রতিভাত হয়, তারা যে বা যারই ইবাদত করেছিল, সেক্ষেত্রে তারা শাফায়াতের
সংশয় বা দলিলের ভিত্তিতেই তা করেছিল। এ সংশয়ের দরুন ইবাদত করেছিল যে, তারা মহান
আল্লাহর কাছে তাদের জন্য সুপারিশ করবে। নিঃসন্দেহে এটা একটা পরিত্যাজ্য বাতিল
সংশয়।
লেখক
বলেছেন, ‘শাফায়াত দু ধরনের। একটি নেতিবাচক শাফায়াত, আরেকটি ইতিবাচক শাফায়াত।’ সকল
শাফায়াত আল্লাহর মালিকানাধীন। যাবতীয় শাফায়াতের মালিকানা স্রেফ আল্লাহর জন্য
নির্ধারিত। কেউ শাফায়াতের কিয়দংশেরও মালিক নয়। তবে আল্লাহ যাকে শাফায়াত করার
অনুমতি দেন এবং যার প্রতি সন্তুষ্ট থাকেন, তাকে শাফায়াত করার অধিকার দিয়ে থাকেন।
আর শাফায়াত দু ধরনের। একটি নেতিবাচক শাফায়াত, আরেকটি ইতিবাচক শাফায়াত। শাইখ নিজেই
বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন।
·মূলপাঠ: নেতিবাচক শাফায়াত: যে শাফায়াত আল্লাহ বাদ দিয়ে অন্য কারও নিকট থেকে চাওয়া হয়, আর এমন বিষয়েই তা চাওয়া হয়, যা করতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ সক্ষম থাকে না (কেয়ামতের দিন এ শাফায়াতের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না)। এ বিষয়ের দলিল মহান আল্লাহর এই বাণী, يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنْفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاكُمْ مِنْ قَبْلِ أَنْ يَأْتِيَ يَوْمٌ لَا بَيْعٌ فِيهِ وَلَا خُلَّةٌ وَلَا شَفَاعَةٌ ۗ وَالْكَافِرُونَ هُمُ الظَّالِمُونَ “ওহে যারা ইমান এনেছ, আমি তোমাদেরকে যে জীবনোপকরণ দান করেছি তা থেকে সেদিন সমাগত হওয়ার পূর্বেই ব্যয় করো যেদিন ক্রয়বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ থাকবে না; আর অবিশ্বাসী কাফিররাই অত্যাচারী।” [সুরা বাকারা: ২৫৪]
ব্যাখ্যা:
লেখক বলেছেন, ‘নেতিবাচক শাফায়াত তাকে বলে, যে শাফায়াত আল্লাহ বাদ দিয়ে অন্য কারও
নিকট থেকে চাওয়া হয়।’ কারণ শাফায়াতের মালিক কেবল আল্লাহ। সকল শাফায়াতের মালিক
আল্লাহ। সমুদয় শাফায়াতের মালিকানা কেবল আল্লাহর জন্যই নির্ধারিত। এজন্য শাফায়াত
মহান আল্লাহর কাছ থেকেই চাইতে হবে। শাফায়াতকারীরা কেবল মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি ও
অনুমতিক্রমেই শাফায়াত করবেন। অনুরূপভাবে নেতিবাচক শাফায়াত তাকে বলে, যে শাফায়াত
এমন বিষয়ে চাওয়া হয়, যা করতে আল্লাহ ছাড়া অন্য কেউ সক্ষম থাকে না।
পক্ষান্তরে
যে বিষয়ে মাখলুকের সক্ষমতা রয়েছে, সেক্ষেত্রে একজন মাখলুক আরেকজন সক্ষম মাখলুকের
কাছে কোনো মাখলুকের জন্য শাফায়াত (সুপারিশ) করতে পারে। জনসাধারণের নিকট যে বিষয়টি
‘মধ্যস্থতা বা ওকালতি (intercession)’ নামে পরিচিত। এ বিষয়টি সৃষ্টিকুলের নিজেদের
মধ্যকার শাফায়াত। এটা নেতিবাচক শাফায়াতের অন্তর্গত নয়। এখানে এই আয়াতে যে
শাফায়াতকে নাকচ করা হয়েছে, তা মূলত ওই শাফায়াত, যা গাইরুল্লাহ তথা আল্লাহ বাদ দিয়ে
অন্যের নিকট থেকে চাওয়া হয়।
·মূলপাঠ: ইতিবাচক শাফায়াত: যে শাফায়াত আল্লাহর কাছ থেকে চাওয়া হয়। এক্ষেত্রে শাফায়াতকারী শাফায়াতের দরুন সম্মানিত হয়। আর শাফায়াতপ্রাপ্ত ব্যক্তি এমন হয়, যার কথা ও কাজের প্রতি আল্লাহ সন্তুষ্ট থাকেন এবং তার জন্য (শাফায়াতকারীকে) শাফায়াত করার অনুমতি প্রদান করেন। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন, مَنْ ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِنْدَهُ إِلَّا بِإِذْنِه “কে আছে, যে তাঁর অনুমতি ছাড়া তাঁর নিকট শাফায়াত করবে?” [সুরা বাকারা: ২৫৫]
ব্যাখ্যা:
এই হলো ইতিবাচক শাফায়াত। এ শাফায়াতই মহান আল্লাহর কাছ থেকে চাওয়া হয়। মহান আল্লাহ
যাকে ইচ্ছে উক্ত শাফায়াত দিয়ে থাকেন। শাফায়াতের এ কার্যপ্রণালীর কারণ
শাফায়াতকারীকে সম্মানিত করা এবং শাফায়াতপ্রাপ্ত বান্দার প্রতি দয়া-অনুগ্রহ করা। আর
অবশ্যই তা সম্পন্ন হবে মহান আল্লাহ কর্তৃক শাফায়াতকারীকে শাফায়াত করার অনুমতি
প্রদান এবং শাফায়াতপ্রাপ্ত বান্দার প্রতি সন্তুষ্ট থাকার পরেই। শাফায়াতকারী যেই
হোক না কেন, দয়াময় আল্লাহর অনুমতি ছাড়া শাফায়াত করতে পারবে না। ইতিবাচক শাফায়াতের
বেশকিছু ধরন রয়েছে, যেগুলো শরিয়তের দলিল থেকে সুপ্রমাণিত। আমরা সেসব ধরন আমাদের
কৃত কিতাবুত তাওহিদের ভাষ্যে আলোকপাত করেছি।
[শাইখ
সুলাইমান আর-রুহাইলি কৃত কিতাবুত তাওহিদের ব্যাখ্যা থেকে শাফায়াতের শ্রেণিবিন্যাস
সংক্ষেপে তুলে ধরা হলো। কেয়ামতের দিন ইতিবাচক শাফায়াতের অনেকগুলো ধরন বিদ্যমান
থাকবে। প্রধানত এই শাফায়াত দু ভাগে বিভক্ত।
প্রথম
ভাগ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে খাস শাফায়াত, যেগুলো নবিজি
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ছাড়া অন্য কেউ অর্জন করতে পারবে না। এ ধরনের
শাফায়াতের আবার কয়েকটি প্রকার রয়েছে:
১ম
প্রকার: বড়ো শাফায়াত। এ শাফায়াত মাকামে মাহমুদ তথা প্রশংসনীয় মর্যাদার অন্তর্গত।
নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেয়ামতের প্রান্তরে উপস্থিত সকল অধিবাসীর জন্য
যে শাফায়াত করবেন, এ হলো সেই শাফায়াত। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এ
শাফায়াতের ফলে কেয়ামতের দিন ফায়সালা শুরু হবে। সেদিন আল্লাহ তাঁকে প্রশংসনীয়
মর্যাদায় উন্নীত করবেন, যে মর্যাদাপূর্ণ স্তরের প্রশংসা করবে সকলেই।
২য়
প্রকার: জান্নাত লাভকারীরা যেন জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে, সেজন্য নবিজি
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের করা শাফায়াত। এটাও মাকামে মাহমুদের অন্তর্গত।
৩য়
প্রকার: চাচা আবু তালিবের জন্য নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে শাফায়াত
করবেন, যেন তার শাস্তি লাঘব করা হয়। কারণ আবু তালিব শির্কের ওপর মৃত্যুবরণ করেছে,
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলেনি। যদিও নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে
সাহায্য-সহযোগিতা করেছে অনেক।
৪র্থ
প্রকার: মদিনাবাসীদের জন্য শাফায়াত। যারা মদিনায় তাওহিদপন্থি হিসেবে মারা যায়,
মদিনায় দুঃখ-কষ্টে পতিত হলে ধৈর্যধারণ করে, বিপদে পড়ে ধৈর্যের পরিবর্তে ক্রুদ্ধ হয়
না এবং এ অবস্থাতেই মদিনায় মারা যায়, তাদের জন্য শাফায়াত করবেন নবিজি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এ শাফায়াত কেবল মদিনাবাসীদের সাথেই খাস। নবি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদিনার ব্যাপারে বলেছেন, لاَ يَثْبُتُ أَحَدٌ عَلَى لأْوَائِهَا وَجَهْدِهَا إِلاَّ كُنْتُ لَهُ شَفِيعًا أَوْ شَهِيدًا يَوْمَ الْقِيَامَةِ “যে ব্যক্তি এখানে ক্ষুধা ও কষ্টের সময় ধৈর্যধারণ
করে, আমি তার জন্য কিয়ামাতের দিন শাফায়াতকারী অথবা সাক্ষী হব।” (সহিহ মুসলিম, হা:
১৩৬৩; হজ অধ্যায়; অধ্যায় নং: ১৬; পরিচ্ছেদ: ৮৫)
দ্বিতীয়
ভাগ: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-সহ আরও অনেকের জন্য নির্ধারিত শাফায়াত।
মহান আল্লাহ এ শাফায়াত করার অনুমতি দিয়ে যে বান্দাকে ইচ্ছে সম্মানিত করবেন। এ
ধরনের শাফায়াতের আবার কয়েকটি প্রকার রয়েছে:
১ম
প্রকার: জাহান্নামে প্রবেশ করেছে এমন মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য কৃত শাফায়াত। আমাদের
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করার জন্য
শাফায়াত করবেন। এদের জন্য আরও শাফায়াত করবেন নবিগণ, ফেরেশতাবৃন্দ ও মুমিন
ব্যক্তিবর্গ। এ শাফায়াতের ফলে মহান আল্লাহ অনেক মানুষকে জাহান্নাম থেকে বের করবেন।
এ শাফায়াত যদিও আমাদের নবিজি-সহ অন্য অনেকেই করবেন, তথাপি তিনিই হবেন এক্ষেত্রে
অগ্রণী।
২য়
প্রকার: জাহান্নামে প্রবেশের হকদার হয়েছে এমন তাওহিদপন্থি সম্প্রদায়ের জন্য
শাফায়াত করা হবে, যেন তারা জাহান্নামে প্রবেশই না করে। (আমি অনুবাদক বলছি, এই
প্রকারটি উলামাদের মধ্যে মতভেদপূর্ণ। একদল আলিম এ বিষয়কে সাব্যস্ত করেছেন। আরেকদল
আলিম এর পক্ষে সুস্পষ্ট দলিল না থাকার কারণে উক্ত শাফায়াত প্রমাণিত নয় বলে উল্লেখ
করেছেন। যেমন ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম রাহিমাহুল্লাহ তদীয় ‘তাহযিবুস সুনান’ গ্রন্থে
এমনটি বলেছেন।)
৩য়
প্রকার: জান্নাতে বান্দার মর্যাদা বুলন্দ করার জন্য কৃত শাফায়াত। টীকা সমাপ্ত]
·
[৩য় নীতি:
তৎকালীন আরবের কাফিররা বিভিন্ন মাবুদের ইবাদত করত, তাদের কেউ কেউ মূর্তি আবার কেউ
কেউ নবি, ফেরেশতা ও বুজুর্গ বান্দাদেরও ইবাদত করত; কিন্তু তাদের কারও মাঝে
পার্থক্য করা হয়নি, বরং সবাই কাফির বিবেচিত হয়েছে]
মূলপাঠ:
তৃতীয় মূলনীতি: নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমন মানুষদের মাঝে আবির্ভূত
হয়েছিলেন, যারা তাদের মাবুদের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ছিল (বিভিন্ন মাবুদের ইবাদত করত)।
তাদের কেউ চন্দ্রসূর্যের উপাসনা করত, কেউ ফেরেশতাদের ইবাদত করত, কেউ নবি ও বুজুর্গ
ব্যক্তিবর্গের উপাসনা করত, আবার কেউ গাছপালা ও পাথরের ইবাদত করত। অথচ আল্লাহর রসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছেন; তাদের মাঝে কোনো
পার্থক্য করেননি। এ বিষয়ের দলিল মহান আল্লাহর এই বাণী, وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّىٰ لَا تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلَّهِ “তোমরা
তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকবে, যতক্ষণ না ফিতনার (শির্কের) অবসান হয় এবং সমগ্র
দ্বীন (ইবাদত) আল্লাহর জন্য হয়ে যায়।” [সুরা আনফাল: ৩৯]
[অনুবাদকের
টীকা: শাইখ সালিহ আল-উসাইমি চারটি নীতির ভাষ্যে আলোচনা করেছেন, আল্লাহর পরিবর্তে অন্যের
ইবাদত করলেই যে ব্যক্তি কাফির হয়ে যায়, এক্ষেত্রে মাবুদ কোন পর্যায়ভুক্ত তা দেখা
হয় না— সে কথা বর্ণনা করাই এ মূলনীতির উদ্দিষ্ট বিষয়। সুতরাং যে ব্যক্তি নবি, ওলি
ও ফেরেশতার ইবাদত করে, সে মূলত তাদেরই মতো, যারা গাছ, পাথর ও নক্ষত্রের উপাসনা
করে। টীকা সমাপ্ত।]
ব্যাখ্যা:
এটি হচ্ছে তৃতীয় মূলনীতি। মহান একটি মূলনীতি। কারণ কিছু মানুষ মনে করে, কেবল
মূর্তিপূজা করাই শির্ক। ফলে সে নবি ও ফেরেশতাদের ইবাদত করে, বুজুর্গ আউলিয়া নামে
পরিচিত ব্যক্তিবর্গের ইবাদত করে। আর মনে করে, তাদের এ কাজ মুশরিকদের আদর্শের
খেলাপ, তাদের সেই কাজ প্রকৃত তাওহিদের অন্তর্গত। এজন্য শাইখ রাহিমাহুল্লাহ এই মহান
মূলনীতি বর্ণনা করেছেন। জানিয়ে দিয়েছেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেসব
মানুষকে তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছিলেন এবং যাদের কাছে প্রেরিত হয়েছিলেন, তারা মাবুদ
নির্ধারণের ক্ষেত্রে বিভিন্ন ছিল বটে, কিন্তু গাইরুল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া অন্যের
ইবাদতের ক্ষেত্রে ছিল অভিন্ন।
তাদের
সবাইকে একত্রিত করেছিল একটি বিষয়— তারা সবাই ছিল মুশরিক (অর্থাৎ তাদের সবার মধ্যে
এই ব্যাপারটি কমন ছিল)। যদিও তারা বিভিন্ন মাবুদের ইবাদত করত। তাদের কেউ কেউ
বহুসংখ্যক মাবুদের ইবাদত করত। এ সত্ত্বেও তারা সবাই মুশরিকই ছিল। নবি সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের সবার সাথে যুদ্ধ করতে আদিষ্ট হয়েছিলেন। যতক্ষণ না তারা এ
মর্মে সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই এবং মুহাম্মাদ
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রসুল। আল্লাহ তায়ালা উল্লেখ করেছেন, তারা
ফিতনার মধ্যে নিপাতিত হয়েছে। বাস্তবিকই যা সবচেয়ে বড়ো ফিতনা, আর সবচেয়ে বড়ো জুলুম।
তা হলো মহান আল্লাহর সাথে অংশী স্থাপন করা। যেমন মহান আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা তাদের
বিরুদ্ধে লড়াই করতে থাকবে, যতক্ষণ না ফিতনার (শির্কের) অবসান হয় এবং সমগ্র দ্বীন
(ইবাদত) আল্লাহর জন্য হয়ে যায়।” [সুরা আনফাল: ৩৯] সামনে শাইখ এ মর্মে দলিল বর্ণনা
করবেন যে, তৎকালীন মুশরিকরা বিভিন্ন জিনিসের ইবাদত করত।
মূলপাঠ:
তারা যে চন্দ্রসূর্যের উপাসনা করত, এ কথার দলিল মহান আল্লাহর এই বাণী, وَمِنْ آيَاتِهِ اللَّيْلُ وَالنَّهَارُ وَالشَّمْسُ وَالْقَمَرُ ۚ لَا تَسْجُدُوا لِلشَّمْسِ وَلَا لِلْقَمَرِ وَاسْجُدُوا لِلَّهِ الَّذِي خَلَقَهُنَّ إِنْ كُنْتُمْ إِيَّاهُ تَعْبُدُونَ “রাত,
দিন, সূর্য ও চন্দ্র তাঁর নিদর্শনগুলোর অন্তর্গত। সূর্যকে সেজদা কোরো না,
চন্দ্রকেও না। সেজদা করো আল্লাহকে, যিনি ওগুলোকে সৃষ্টি করেছেন। যদি সত্যিকারার্থে
তোমরা একমাত্র তাঁরই ইবাদত করতে চাও।” [সুরা ফুস্সিলাত: ৩৭]
ব্যাখ্যা:
তৎকালীন আরবদের কতিপয় মানুষ চাঁদ ও সূর্যকে সেজদা করত। সূর্য উদিত হলে তারা
সূর্যের উদ্দেশ্যে সেজদা দিত, আবার সূর্য অস্ত গেলেও তারা সূর্যের উদ্দেশ্যে সেজদা
দিত। এজন্য এ দুটো সময়ে নামাজ পড়তে আমাদেরকে অত্যন্ত কঠোরভাবে নিষেধ করা হয়েছে।
তদ্রুপ তারা চাঁদকেও সেজদা দিত। আর এটা ছিল ইবাদত।
·
মূলপাঠ:
তারা ফেরেশতাদের ইবাদত করত, এ কথার দলিল মহান আল্লাহর এই বাণী, وَيَوْمَ يَحْشُرُهُمْ جَمِيعًا ثُمَّ يَقُولُ لِلْمَلَائِكَةِ أَهَٰؤُلَاءِ إِيَّاكُمْ كَانُوا يَعْبُدُون * قَالُوا سُبْحَانَكَ أَنْتَ وَلِيُّنَا مِنْ دُونِهِمْ ۖ بَلْ كَانُوا يَعْبُدُونَ الْجِنَّ ۖ أَكْثَرُهُمْ بِهِمْ مُؤْمِنُونَ “সেদিন তিনি তাদের সবাইকে একত্র করবেন এবং
ফেরেশতাদের জিজ্ঞেস করবেন, এরা কি তোমাদেরই উপাসনা করত? ফেরেশতারা বলবে, আপনি
মহাপবিত্র! আমাদের সাহায্যকারী আপনিই, তারা নয়। তারা তো উপাসনা করত জিনদের এবং
তাদের অধিকাংশই ছিল তাদের প্রতি বিশ্বাসী।” [সুরা সাবা: ৪০-৪১] মহান আল্লাহ
বলেছেন, وَلَا يَأْمُرَكُمْ أَنْ تَتَّخِذُوا الْمَلَائِكَةَ وَالنَّبِيِّينَ أَرْبَابًا ۗ أَيَأْمُرُكُمْ بِالْكُفْرِ بَعْدَ إِذْ أَنْتُمْ مُسْلِمُونَ “তিনি তোমাদেরকে এ আদেশ দেন না যে, তোমরা ফেরেশতা ও
নবিগণকে রবরূপে গ্রহণ করবে; তোমরা আত্মসমর্পণকারী মুসলিম হবার পর তিনি কি
তোমাদেরকে পুনরায় কুফরিতে ফিরে যাবার আদেশ করবেন?” [সুরা আলে ইমরান: ৮০]
[অনুবাদকের
টীকা: শাইখ সুলাইমান আর-রুহাইলির শারহকৃত নুসখায়, শাইখ সালিহ আস-সিন্ধি শারহকৃত
নুসখায় এবং শাইখ আব্দুল মুহসিন আল-কাসিমের তাহকিককৃত নুসখায় এ স্থলে সুরা আলে
ইমরানের আয়াতটির পরিবর্তে সুরা সাবার আয়াতদ্বয় উল্লিখিত হয়েছে। পক্ষান্তরে শাইখ ইবনু
বায, শাইখ আমান আল-জামি, শাইখ যাইদ আল-মাদখালি, শাইখ সালিহ আল-লুহাইদান, শাইখ
সালিহ আল-ফাওযান, শাইখ আব্দুল আজিজ আর-রাজিহি, শাইখ আব্দুর রহমান আল-বাররাক, শাইখ
সালিহ আলুশ শাইখ, শাইখ সালিহ আল-উসাইমি, শাইখ আব্দুর রাযযাক আল-বদর প্রমুখের
শারহকৃত নুসখায় সুরা সাবার আয়াতদ্বয়ের পরিবর্তে সুরা আলে ইমরানের আয়াতটি উল্লিখিত
হয়েছে। এজন্য আমরা উভয় দলিলই মূলপাঠে উল্লেখ করে দিলাম। টীকা সমাপ্ত।]
ব্যাখ্যা:
উল্লিখিত দলিল থেকে প্রতীয়মান হয়, তৎকালীন মুশরিকদের কেউ কেউ ফেরেশতাবর্গের ইবাদত
করত।
·
মূলপাঠ:
তারা নবিদের উপাসনা করত, এ কথার দলিল মহান আল্লাহর এই বাণী, وَإِذْ قَالَ اللَّهُ يَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ أَأَنْتَ قُلْتَ لِلنَّاسِ اتَّخِذُونِي وَأُمِّيَ إِلَٰهَيْنِ مِنْ دُونِ اللَّهِ ۖ قَالَ سُبْحَانَكَ مَا يَكُونُ لِي أَنْ أَقُولَ مَا لَيْسَ لِي بِحَقٍّ ۚ إِنْ كُنْتُ قُلْتُهُ فَقَدْ عَلِمْتَهُ ۚ تَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِي وَلَا أَعْلَمُ مَا فِي نَفْسِكَ ۚ إِنَّكَ أَنْتَ عَلَّامُ الْغُيُوبِ “স্মরণ
করো, যখন আল্লাহ বলবেন, হে মারইয়াম তনয় ইসা, তুমি কি লোকদেরকে বলেছিলে, তোমরা
আল্লাহর সাথে আমার এবং আমার মায়ের ইবাদত করো? ইসা নিবেদন করবেন, আপনি মহাপবিত্র!
আমার পক্ষে কোনোক্রমেই শোভনীয় ছিল না যে, আমি এমন কথা বলি যা বলার কোনো অধিকার
আমার নেই। যদি আমি বলে থাকি তাহলে অবশ্যই আপনার জানা থাকবে। আপনি তো আমার অন্তরে
যা আছে তাও জানেন, পক্ষান্তরে আপনার অন্তরে যা রয়েছে তা আমা জানি না। বস্তুত সমস্ত
অদৃশ্য বিষয়ের পরিজ্ঞাতা আপনিই।” [সুরা মায়িদা: ১১৬]
ব্যাখ্যা:
এ আয়াত থেকে প্রতিভাত হয়, তৎকালীন সময়ে কেউ কেউ ইসা আলাইহিস সালামের ইবাদত করেছে।
·মূলপাঠ: তারা সৎবান্দাদের উপাসনা করত, এ কথার দলিল মহান আল্লাহর এই বাণী, قُلِ ادْعُوا الَّذِينَ زَعَمْتُمْ مِنْ دُونِهِ فَلَا يَمْلِكُونَ كَشْفَ الضُّرِّ عَنْكُمْ وَلَا تَحْوِيلًا * أُولَٰئِكَ الَّذِينَ يَدْعُونَ يَبْتَغُونَ إِلَىٰ رَبِّهِمُ الْوَسِيلَةَ أَيُّهُمْ أَقْرَبُ وَيَرْجُونَ رَحْمَتَهُ وَيَخَافُونَ عَذَابَهُ ۚ إِنَّ عَذَابَ رَبِّكَ كَانَ مَحْذُورًا “বলে দাও, তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদেরকে মাবুদ মনে করো, তাদেরকে আহ্বান করো; করলে দেখবে তোমাদের দুঃখ-দুর্দশা দূর করার অথবা পরিস্থিতি পরিবর্তনের শক্তি তাদের নেই। তারা যাদেরকে আহ্বান করে, তারাই তো নিজেদের রবের নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান করে যে, কে কত নিকটতর হতে পারে, আর তারা তাঁর দয়া প্রত্যাশা করে এবং তাঁর শাস্তিকে ভয় করে। নিশ্চয় তোমার রবের শাস্তি ভয়াবহ।” [সুরা ইসরা: ৫৬-৫৭]
ব্যাখ্যা:
সুতরাং আয়াতে আলোচ্য উপাস্যরা সৎকর্মপরায়ণ বান্দা ছিল। অর্থাৎ তৎকালীন সময়ে কতিপয়
মুশরিক যাদের ইবাদত করত, তারা বুজুর্গ মানুষ ছিলেন। তাঁরা নিজেরাই আল্লাহকে ভয় করে
চলতেন এবং তাঁর রহমত কামনা করতেন। এ সত্ত্বেও ওই মুশরিকরা তাদের ইবাদত করেছে।
·মূলপাঠ: তারা গাছপালা ও পাথরের ইবাদত করত, এ কথার দলিল মহান আল্লাহর এই বাণী, أَفَرَأَيْتُمُ اللَّاتَ وَالْعُزَّىٰ * وَمَنَاةَ الثَّالِثَةَ الْأُخْرَىٰ “তোমরা কি ভেবে দেখেছ লাত ও উযযা সম্বন্ধে? এবং তৃতীয় আরেকটি ‘মানাত’ সম্বন্ধে?” [সুরা নাজম: ১৯-২০] আবু ওয়াকিদ আল-লাইসি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিস রয়েছে। তিনি বলেছেন,
خَرَجْنَا مَعَ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم إِلىٰ حُنَيْنٍ، ونَحْنُ حُدَثاءُ عَهْدٍ بِكُفْرٍ، وَلِلْمُشْرِكِيْنَ سِدْرَة يَعكُفونَ عِندَها وينُوطُونَ بِها أَسلِحَتَهُم يُقالُ لَها ذَاتُ أَنْوَاطٍ، فَمَرَرْنَا بِسِدْرَة، فقُلنا : يا رسولَ الله ، اِجْعَلْ لَنا ذاتَ أنواطٍ كَما لَهُمْ ذاتُ أنواطٍ، فقال رسولُ الله صلى الله عليه وسلم : الله أكبر ، إِنَّهَا السُّنَن. قُلْتُمْ، وَالَّذِيْ نَفسِي بِيَدِه، كَما قالتْ بَنُو إسرائيلَ لِمُوسَى : اجْعَلْ لَنَا إِلَهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ.
“আমরা
রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে হুনাইনের (যুদ্ধের) উদ্দেশ্যে রওয়ানা
হলাম। আমরা তখন কুফরের নিকটবর্তী সময়ের মানুষ ছিলাম (সবেমাত্র ইসলাম গ্রহণ
করেছিলাম)। একস্থানে মুশরিকদের একটি কুলগাছ ছিল, যার চারপাশে তারা বসতো এবং তাদের
সমরাস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত (গাছের মাধ্যমে বরকত হাসিলের উদ্দেশ্যে)। গাছটিকে তারা জাতু
আনওয়াত (ঝুলন্তসামগ্রী সংবলিত গাছ) বলত। আমরা একদিন একটি কুলগাছের পাশ দিয়ে
যাচ্ছিলাম। তখন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আমরা বললাম, ‘হে আল্লাহর
রসুল, মুশরিকদের যেমন ‘জাতু আনওয়াত’ আছে, আমাদেরও অনুরূপ ‘জাতু আনওয়াত’ নির্ধারণ
করে দিন।’ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘আল্লাহু আকবার! তোমাদের এ
দাবিটি পূর্ববর্তী লোকদের রীতিনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়। যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর
কসম করে বলছি, তোমরা এমন কথাই বলেছ, যা বনি ইসরাইল সম্প্রদায় মুসা আলাইহিস সালামের
উদ্দেশে বলেছিল, ‘মুশরিকদের যেমন মাবুদ আছে আমাদের জন্যও তেমন মাবুদ বানিয়ে দাও।’
(সুরা আরাফ: ১৩৮)” [তিরমিজি, হা: ২১৮০; আহমাদ, খণ্ড: ৫; পৃষ্ঠা: ২১৮; ইবনু
হিব্বান, হা: ৬৬৬৭; সনদ: সহিহ]
ব্যাখ্যা:
এ হাদিসে বলা হয়েছে, মুশরিকরা একটা বড়ো কুলজাতীয় বৃক্ষের ইবাদত করত। তারা সেই গাছে
নিজেদের সমরাস্ত্র ঝুলিয়ে রাখত। গাছটির কল্যাণ কামনা করত, আবার তার অনিষ্টকে ভয়
করত। এ থেকে প্রতীয়মান হয়, তৎকালীন মুশরিকরা গাছপালার ইবাদত করত। শির্ক যে কেবল
মূর্তিপূজার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, সে ব্যাপারে এটি একটি সুস্পষ্ট দলিল। বুজুর্গ
বান্দাদের কাছে প্রার্থনা করা, নবি ও ফেরেশতাবর্গের কাছে প্রার্থনা করার মতো
কাজগুলো শির্কের অন্তর্গত। যেই শির্কের ওপর প্রতিষ্ঠিত ছিল তৎকালীন মুশরিকরা,
যাদের বিরুদ্ধে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ করেছেন এবং যাদেরকে
তাওহিদের দাওয়াত দিয়েছেন।
·[৪র্থ নীতি: বর্তমান যুগের মুশরিকরা প্রাচীন জাহেলি যুগের মুশরিকদের চেয়েও ভয়ংকর ও কদর্য শির্কে লিপ্ত হয়েছে]
মূলপাঠ:
চতুর্থ মূলনীতি: আমাদের যুগের মুশরিকরা পূর্ববর্তী মুশরিকদের চেয়ে অধিক কদর্য
শির্কে লিপ্ত হয়েছে। কারণ পূর্ববর্তীরা স্বাচ্ছন্দ্যের সময় শির্ক করত, আর
দুঃখ-দুর্দশায় একনিষ্ঠভাবে কেবল আল্লাহর ইবাদত করত। কিন্তু আমাদের যুগের মুশরিকরা
স্বাচ্ছন্দ্য ও দুঃখ-দৈন্য সর্বদায় শির্কে লিপ্ত থাকে। এর দলিল মহান আল্লাহর এই
বাণী, فَإِذَا رَكِبُوا فِي الْفُلْكِ دَعَوُا اللَّهَ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ فَلَمَّا نَجَّاهُمْ إِلَى الْبَرِّ إِذَا هُمْ يُشْرِكُونَ “তারা যখন নৌযানে আরোহণ করে তখন
বিশুদ্ধচিত্তে আল্লাহর জন্য সমগ্র দ্বীনকে (ইবাদতকে) একনিষ্ঠ করে আল্লাহকে ডাকে।
এরপর তিনি যখন স্থলে ভিড়িয়ে তাদেরকে উদ্ধার করেন, তখনই তারা শির্কে লিপ্ত হয়।” [সুরা
আনকাবুত: ৬৫]
[অনুবাদকের
টীকা: শাইখ সালিহ আল-উসাইমি চারটি নীতির ভাষ্যে উল্লেখ করেছেন, লেখকের যুগ ও
তৎপরবর্তী সময়ের মানুষরা যে শির্কি কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছিল, তা যে পূর্ববর্তীদের
শির্কের চেয়ে জঘন্য ও কদর্য— সেটার বিবরণ দেওয়াই চতুর্থ নীতির উদ্দিষ্ট বিষয়। এ
নীতিরও ফলপ্রসূ বিষয় রয়েছে। এ থেকে সুসাব্যস্ত হয়, এই জামানার মুশরিকরা পূর্ববর্তী
মুশরিকদের চেয়ে ‘কাফির’ আখ্যায়িত হওয়ার অধিক উপযোগী এবং পূর্ববর্তীদের চেয়ে এদের
বিরুদ্ধে যুদ্ধের ঘোষণা দেওয়া অধিক উপযোগী।]
ব্যাখ্যা:
সুতরাং বিগত আলোচনা থেকে আমরা জানতে পারলাম, আমাদের যুগের কতিপয় লোক আল্লাহর সাথে
শির্ক করে, যদিও তারা নিজেদের কৃত কাজকে শির্ক বলে অভিহিত করে না। তারা গাইরুল্লাহ
তথা আল্লাহ ছাড়া অন্যের ইবাদত করে, যদিও সেই কাজকে ইবাদত হিসেবে আখ্যা দেয় না।
তারা গাইরুল্লাহর কাছে বিপদে উদ্ধার কামনা করে, গাইরুল্লাহর কাছে প্রার্থনা করে,
গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে জবেহ করে, গাইরুল্লাহর উদ্দেশ্যে সেজদা দেয় এবং গাইরুল্লাহর
জন্য ইবাদত ধার্য করে। হালের মুশরিকরা যারা এই শির্কে লিপ্ত হয়, তারা পূর্ববর্তী
মুশরিকদের চেয়েও কদর্য ও জঘন্য শির্কে লিপ্ত।
বিষয়টি
প্রতিভাত হয় এ দৃষ্টিকোণ থেকে যে, পূর্ববর্তী মুশরিকরা কেবল স্বাচ্ছন্দ্যের সময়
শির্ক করত, আর দুঃখ-দুর্দশায় একনিষ্ঠভাবে এক আল্লাহর ইবাদত করত। তাদের কেউ বিপদে
পড়লে আল্লাহর পানে ফিরে যেত এবং আল্লাহকে ডাকত। আর স্বাচ্ছন্দ্যের সময় তারা
আল্লাহর সাথে শরিক স্থাপন করত। পক্ষান্তরে হাল জামানার মুশরিকরা স্বাচ্ছন্দ্যের
সময় শির্ক তো করেই, দুঃখ-দৈন্যের সময় আরও বেশি করে শির্ক করে। এদের কেউ বিপদে বা
দুর্যোগে পতিত হলে গাইরুল্লাহর কাছে ধরনা দেয়। যাদেরকে তারা পির বা ওলি-আউলিয়া
বলে, তাদেরকে ডাকতে শুরু করে।
উদাহরণস্বরূপ
গাড়ি উল্টে গেলে তাদেরকে দেখতে পাবেন, ‘হে আমার অমুক পিরবাবা, হে আউলিয়া, হে
সপ্তত্রাতা, হে অমুক, হে বাবা আব্দুল কাদের, হে হুসাইন, হে আলি’ প্রভৃতি বলে
ডাকাডাকি শুরু করেছে। বাস্তবিক অর্থে তারা দুঃখ-দুর্দশায় মহান আল্লাহর সাথে শরিক
স্থাপন করে।
কতিপয়
আলিম হাল জামানার মুশরিকদের শির্কের কদর্যতা বিষয়ে আরও উল্লেখ করেছেন, বর্তমান
মুশরিকরা এমন লোকদের কাছে ধরনা দেয়, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যাদের মাঝে কোনো
কল্যাণ বিদ্যমান নেই। পূর্ববর্তী মুশরিকরা ছিল এর বিপরীত। তারা তাদের কাছেই ধরনা
দিত, যারা ছিল কল্যাণকর মানুষ হিসেবে সুবিদিত। যদিও শির্কি কাজ তো শির্কই বটে। পূর্ববর্তী
মুশরিকরা তাওহিদপন্থি বুজুর্গ ব্যক্তিবর্গের ইবাদত করত, কিংবা ফেরেশতাবর্গ অথবা
নবিদের ইবাদত করত; যেই নবিগণ ছিলেন বুজুর্গ মানুষদের শীর্ষস্থানীয়।
·পক্ষান্তরে আমাদের যুগে এমন মানুষদের ইবাদত করা হয়, যারা কিনা নামাজে হাজির হয় না, বরং বিলকুল নামাজই পড়ে না। যাদের মাঝে কোনো কল্যাণকর বিষয়ের দেখা মেলে না। একবার এক ব্যক্তির সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। তিনি আমাকে জানান, তিনি ইসলাম গ্রহণ করার পর একটি মুসলিম দেশে গিয়েছিলেন এবং সেখানকার কতিপয় মুসলিম দাবিদার মানুষের সাথে বসবাস করেছিলেন। তিনি গিয়ে দেখেন, তারা মানুষের ইবাদত করছে। তিনি বলছেন, আমি তখন তাদেরকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘আচ্ছা, ওরা কি নবি-আম্বিয়া?’ তারা বলল, ‘না।’
তিনি
বলেন, ‘আমরা কুফরের মধ্যে খ্রিষ্টান অবস্থায় থাকার সময় ইসা আলাইহিস সালামের সাথে
যেসব করতাম, তাদেরকে দেখলাম তার চেয়েও ভয়াবহ কাজে লিপ্ত থাকতে।’ তিনি আরও বলেন,
‘আমার অন্তরে উদ্রেক হলো, খ্রিষ্টান ধর্মই তাহলে ইসলামের চেয়ে উত্তম!’
নাউজুবিল্লাহ, আল্লাহর কাছে পানা চাই এ থেকে। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে এমনসব কাজ
করতে দেখলাম, যেগুলো কাজ ইসা আলাইহিস সালামের সাথে করা থেকেও আমরা অত্যন্ত
সতর্কতার সাথে পরিহার করে চলি। তথাপি তারা এমন লোকদের ইবাদত করছিল, যারা কিনা
নবি-আম্বিয়া নয়! অথচ খ্রিষ্টানরা ইসা আলাইহিস সালামের ইবাদত করে।
লোকটি
বলছেন, তখন আল্লাহ আমাকে এক ব্যক্তির মাধ্যমে রক্ষা করেন। তিনি আমাকে বলেন, ‘এটা
ইসলাম নয়। তুমি ইসলাম পেতে চাইলে মক্কায় যাও।’ ঘটনার এই লোকটির সাথে আমার আলাপ
হয়েছিল বহুবছর পূর্বে। প্রায় ৩৭ বছর আগে হয়ে থাকবে।
লোকটি
বলেন, ‘এরপর আমি মক্কায় চলে যাই। সেখানে আমি ইসলামকে পাই। আমি সত্যিকারের ইসলাম
জানতে পারি সেখানে। যাবতীয় প্রশংসা ও অনুগ্রহ আল্লাহরই জন্য।’ এরপর তিনি ইসলামে
অটল থাকেন। মক্কায় তাঁর সাথে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল। তখন তিনি এ ঘটনা আমাকে অবহিত
করেন। এই বিষয়টি মানুষকে বর্তমান সময়ের শির্কের প্রতি ঘৃণা বাড়িয়ে তুলবে। ফলে সে
এই শির্ক পরিহার করবে। নিজে সতর্ক থাকবে এবং মানুষকে সতর্ক করবে। আর শির্ক থেকে
নিজ পরিবারকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হয়।
মানুষের
কাছে তাওহিদের বিবরণ দিতে এবং শির্ক থেকে জনমানুষকে সতর্ক করতে গিয়ে আমরা যে
চেষ্টাপ্রচেষ্টা ব্যয় করে চলেছি, এটা রহমতেরই অন্তর্গত। আমি তালিবুল ইলমদের আহ্বান
জানাচ্ছি, তারা যেন জনমানুষের কাছে তাওহিদ বিষয়ে অজ্ঞ থাকার ওজর বিষয়ক মাসাআলা
নিয়ে পর্যালোচনায় লিপ্ত না হয়। কারণ তা শির্কের ভয়াবহতাকে হালকা করে দেয়। তাওহিদের
প্রতি যত্নবান হওয়ার কর্তব্যকে ছোটো হিসেবে দেখায়। এ মাসআলায় আপনার অভিমত যা-ই হোক
না কেন, এ বিষয়ক আলোচনা ইলমের খাস মহলেই রাখুন। কিংবা কোনো ফিতনা বা বিশৃঙ্খলা
তৈরি হলে শুধু সেখানেই আলোচনা করুন।
এছাড়া
মানুষকে সর্বদা তাওহিদের দিকে ডাকতে হবে, শির্ক থেকে সতর্ক করতে হবে। মানুষদের
জানিয়ে দিতে হবে, এসব কর্মকাণ্ড বড়ো শির্ক, যা মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়।
যারা এসবে পতিত হয়েছেে মহান আল্লাহ তাদের এহেন কাজের পাপ ক্ষমা করবেন না। আশা করা
যায়, মহান আল্লাহ এতে কল্যাণ দেবেন। আমাদের সবচেয়ে বড়ো দায়িত্ব মানুষকে শির্ক থেকে
রক্ষা করতে এবং তাওহিদের দাওয়াত দিতে সচেষ্ট হওয়া। আল্লাহর কসম, যে দাওয়াতে
তাওহিদের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয় না, তা শরিয়তসম্মত দাওয়াত নয়, সফল দাওয়াতও নয়।
আপনি সুনিশ্চিত জেনে রাখুন, যে দাওয়াতে তাওহিদের প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হয় না, তা শরিয়তসম্মত
দাওয়াত নয়। উক্ত দাওয়াত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তরিকায়
পরিচালিত দাওয়াত নয় এবং তা কৃতকার্য দাওয়াতও নয়।
এই ছিল
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে অত্যন্ত ফলপ্রসূ চারটি মূলনীতি বিষয়ক আলোচনা, আমাদের
সাধ্যমত যা আলোকপাত করা হলো। এই চারটি নীতির ব্যাপারে আমি শুরুতেই বলেছিলাম, এগুলো
আলোচনা করা, জনমানুষের কাছে উপস্থাপন করা, বারবার এসবের আলোচনা করা, নরম ভাষায় ও
আকর্ষণীয় পদ্ধতিতে প্রত্যেক দেশের চলমান পরিস্থিতির সাথে মূলনীতিগুলো জুড়ে দেওয়া
এবং স্পষ্টভাবে এর বিষয়বস্তুকে প্রমাণ করা জরুরি। আশা করা যায়, মহান আল্লাহ এতে
কল্যাণ দেবেন।
আমি মহান
আল্লাহর কাছে চাইছি, তিনি যেন সবার মাঝে বরকত দেন, আমাদের উপস্থাপিত বিষয়কে কবুল
করে নেন এবং এর মাধ্যমে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতকে উপকৃত
করেন। আরও প্রার্থনা করছি, আল্লাহ যেন মাসজিদে নববির দায়িত্বশীলদের উত্তম
পারিতোষিক দেন, মানুষদের কাছে ফলপ্রসূ বিষয় পেশ করার প্রতি তাদের উদগ্রীবতা এবং
এরকম দিনে এ জাতীয় দারসের আয়োজন করার জন্য তাদের সচেষ্টতার জন্য। মহান আল্লাহর
কাছে কামনা করছি, তিনি যেন আমাকে এবং তাদেরকে ইখলাস দান করেন, আমার জন্য এবং তাদের
জন্য নেকি লিপিবদ্ধ করেন, হেদায়েত ও হকের প্রতি আমাদের সবার অন্তরকে যেন প্রসারিত
করেন এবং আমাদেরকে যেন সুপথে প্রত্যাবর্তনকারী ক্ষমাভিখারী কৃতজ্ঞ ধৈর্যশীল
বান্দায় পরিণত করেন।
আমার
ভাইবোনদের প্রত্যাশা ও অভিলাষকে তিনি যেন বাস্তবায়ন করেন, আমার ও তাদের থেকে
যাবতীয় অকল্যাণকে প্রতিহত করেন, এই মহামারির আপদ যেন উঠিয়ে নেন, পৃথিবীবাসীকে এই
ভাইরাস থেকে নিষ্কৃতি দান করেন এবং আমাদের পরিস্থিতিকে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেন।
আর আল্লাহই সর্বোচ্চ ও সর্বাধিক অবগত। মহান আল্লাহ আমাদের নবির জন্য ধার্য করুন
সালাত ও সালাম।
·সমাপ্ত, আলহামদুলিল্লাহ।
·অনুবাদকের গ্রন্থপঞ্জি:
১.
কুরআনুল কারিম
২. সহিহুল
বুখারি
৩. সহিহ
মুসলিম
৪.
সুনানুত তিরমিজি
৫. ইমাম
মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব আন-নাজদি রাহিমাহুল্লাহ, কিতাবুত তাওহিদ আল্লাযি
হুওয়া হাক্কুল্লাহি আলাল আবিদ।
৬. ইমাম
ইবনু উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ, শারহুল কাওয়াইদিল মুসলা।
৭. শাইখ
আব্দুল মুহসিন আল-কাসিম হাফিযাহুল্লাহ, মুতুনু তালিবিল ইলম (মুস্তাওয়া
আওয়্যাল/প্রথম ভাগ)।
৮. শাইখ
সুলাইমান আর-রুহাইলি হাফিযাহুল্লাহ, তাগুত বিষয়ে বিস্তারিত (আমাদের কৃত বাংলা
অনুবাদ)।
৯. শাইখ সালিহ
আল-উসাইমি হাফিযাহুল্লাহ, শারহুল কাওয়াইদিল আরবা।
১০. ইমাম
ইবনু বায রাহিমাহুল্লাহ, শারহুল কাওয়াইদিল আরবা।
১১. ইমাম
আমান আল-জামি রাহিমাহুল্লাহ, শারহুল কাওয়াইদিল আরবা।
১২.
আল্লামা যাইদ আল-মাদখালি রাহিমাহুল্লাহ, আবরাযুল ফাওয়াইদ মিনাল আরবায়িল কাওয়াইদ।
১৩. আল্লামা
সালিহ আল-লুহাইদান রাহিমাহুল্লাহ, শারহুল কাওয়াইদিল আরবা।
১৪.
আল্লামা সালিহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ, শারহুল কাওয়াইদিল আরবা।
১৫.
আল্লামা আব্দুল আযিয আর-রাজিহি হাফিযাহুল্লাহ, শারহুল কাওয়াইদিল আরবা।
১৬.
আল্লামা আব্দুর রহমান আল-বাররাক হাফিযাহুল্লাহ, শারহুল কাওয়াইদিল আরবা।
১৭.
আল্লামা সালিহ আলুশ শাইখ হাফিযাহুল্লাহ, শারহুল কাওয়াইদিল আরবা।
১৮. শাইখ
আব্দুর রাযযাক আল-বদর হাফিযাহুল্লাহ, শারহুল কাওয়াইদিল আরবা।
১৯. শাইখ
সালিহ আস-সিন্ধি হাফিযাহুল্লাহ, শারহুল কাওয়াইদিল আরবা।
·অনুবাদক: মুহাম্মাদ আব্দুল্লাহ মৃধা
0 Comments