✔ ১৯২ প্রশ্নঃ এক দেশে চাঁদ
দেখা গেলে কি পৃথিবীর সকল দেশে রোযা বা ঈদ করা জরুরী নয়?
উত্তরঃ মহান আল্লাহ বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসে উপনীত হবে, সে যেন রোযা রাখে।” (বাক্বারাহঃ ১৮৫)
আর মহানবী (ﷺ) বলেছেন, “তোমরা চাঁদ দেখলে রোযা রাখো।”
✔২৫০ (বুখারী ১৯০০, মুসলিম ১০৮০ নং)
এই নির্দেশ থেকে অনেকে বুঝেছেন যে, সাড়া বিশ্বের ২/১ জন মুসলিম চাঁদ দেখলেই সকল মুসলিমদের জন্য রোযা বা ঈদ করা জরুরী।
কিন্তু সাহাবাগণ এরূপ বুঝেননি। তাঁরা উদয়স্থলের পার্থক্য মেনে নিয়ে শাম দেশের চাঁদের খবর নিয়ে মদিনায় ঈদ করেননি।
✔কুরাইব বলেন, একদা উম্মুল ফাযল বিন্ত্তল হারেষ আমাকে শাম দেশে মুআবিয়ার নিকট পাঠালেন। আমি শাম (সিরিয়া) পৌঁছে তাঁর প্রয়োজন পূর্ণ করলাম। অতঃপর আমার শামে থাকা কালেই রমযান শুরু হল। (বৃহস্পতিবার দিবাগত) জুমআর রাত্রে চাঁদ দেখলাম। অতঃপর মাসের শেষ দিকে মদিনায় এলাম।
✔আব্দুল্লাহ বিন আব্বাস (রঃ) আমাকে চাঁদের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন, “তোমরা কবে চাঁদ দেখেছ?” আমি বললাম, “আমরা জুমআর রাত্রে দেখেছি।” তিনি বললেন, “তুমি নিজে দেখেছ?” আমি বললাম, “জি হ্যাঁ। আর লোকেরাও দেখে রোযা রেখেছে এবং মুআবিয়াও রোযা রেখেছেন।”
✔ইবনে আব্বাস (রঃ) বললেন, “কিন্তু আমরা তো (শুক্রবার দিবাগত) শনিবার রাত্রে চাঁদ দেখেছি। অতএব আমরা ৩০ পূর্ণ না হওয়া পর্যন্ত অথবা নতুন চাঁদ না দেখা পর্যন্ত রোযা রাখতে থাকবে।” আমি বললাম, “মুআবিয়ার দর্শন ও তাঁর রোযার খবর কি আপনার জন্য যথেষ্ট নয়?” তিনি বললেন, “না। আল্লাহর রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে এ রকমই আদেশ দিয়েছেন।” ইমাম নববী বলেন, এ হাদীছ স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে যে, এক শহরের
চন্দ্র দর্শন অন্য শহরে প্রযোজ্য নয় অধিক দূরত্বের কারণে।] তিরমিযী হা/৫৫৯; আবুদাঊদ হা/২০৪৪। [3]. মির‘আত ৬/৪২৮ হা/১৯৮৯-এর ব্যাখ্যা।
✔২৫১ (মুসলিম ১০৭৮ নং)
আমরা মনে করি, আমরা সালাফী।অতএব সালাফীদের বুঝ নিয়েই আমাদের উচিত কুরআন-হাদীস বুঝা এবং উদয়স্থলের ভিন্নতা গণ্য করে নেওয়া।
তাছাড়া আমভাবে শরীয়তের সকল নির্দেশ একই রকম সময়ে মান্য কয়া অনেক ক্ষেত্রে সম্ভভ নয়। যেমনঃ-
মহান আল্লাহ বলেছেন, “তোমরা পানাহার কর; যতক্ষণ কালো সুতা (রাতের কালো রেখা) হতে ঊষার সাদা সুতা (সাদা রেখা)স্পষ্টরূপে তোমাদের নিকট প্রতিভাত না হয়।অতঃপর রাত্রি পর্যন্ত রোযা পূর্ণ কর।”
✔(বাক্বারাহঃ ১৮৭)
মহানবী (ﷺ) বলেন, “রাত যখন এদিকে (পূর্ব গগন) থেকে আগত হবে, দিন যখন এদিকে (পশ্চিম গগন) থেকে বিদায় নেবে এবং সূর্য যখন অস্ত যাবে, তখন সায়িম ইফতার করবে।”
✔২৫২ (বুখারী ১৯৪১, ১৯৫৪, মুসলিম ১১০০, ১১০১ আবূ দাঊদ ২৩৫১, ২৩৫২, তিরমিযী)
উক্ত নির্দেশ দুটি সাড়া বিশ্বের সকল মুসলিমদের জন্য একই সাথে মান্য করা সম্ভভ নয়। এ ক্ষেত্রে কেউ বলেন না যে, নির্দেশ ব্যাপক। অতঃএব সারা বিশ্বের ২/১ জন মুসলিম ফজর উদয় দেখলেই সকল মুসলিমদের জন্য পানাহার বন্ধ করা জরুরী। অথবা সাড়া বিশ্বের ২/১ জন মুসলিম সূর্যাস্ত দেখলেই সকল মুসলিমদের জন্য ইফতার করা জরুরী। বরং বিশ্বের প্রতীচ্যের লোক যখন ইফতার করে, প্রাচ্যের লোক ইফতার করে তাঁদের থেকে প্রায় ১২-১৫ ঘণ্টা পরে।
✔সুতরাং ঈদ সারা বিশ্বে একদিনে একই সময়ে হওয়া সম্ভভ নয়।(বাস্তবে এটা স্মম্ভব নয়)। আর নাই-বা হল একই দিনে ঈদ। কি এমন ঐক্য আছে এতে? কত শত বিষয়ে মতভেদ ও মতানৈক্য। হৃদয়ে-হৃদয়ে, বিশ্বাসে ও আচরণে কত ভিন্নতা। কেবল ঈদের দিনের অভিন্নতা নিয়ে কোন ফল ফলবে? তবুও বলবে, এ বিষয়ে উলামাদের ‘ইজমা’ হলে দোষ নেই।
প্রকাশ থাকে যে, যারা উক্ত হাদীসের উপর আমল করতে গিয়ে সঊদী আরবের সাথে রোযা ঈদ করে থাকেন, তাঁরাও কিন্তু অনেক সময় ভুল করেন। কারণ সউদী আরব অন্য দেশের চাঁদ দেখে ঈদ করে না। তাঁর পশ্চিমে আফ্রিকার কোন দেশের চাঁদ দেখে সঊদীরা রোযা ঈদ করেন না। তাহলে উপমহাদেশ থেকে চোখ বুজে সাঊদিয়ার অনুকরণ করলে উক্ত হাদীসের উপর তাঁদের আমল হয় না, যে হাদীস পেশ করে তাঁরা মনে করেন যে, সারা বিশ্বের মুসলিমগণকে একই সাথে রোযা ঈদ করতে হবে।
শরয়ী দৃষ্টিকোণ
থেকে
বিশ্বব্যাপী একই
দিনে বা একই তারিখে রোযা ও ঈদ করাকে ফরয/জরুরি সাব্যস্ত করার শরয়ী দৃষ্টিভঙ্গি
আলোচনা করার জন্য নিম্নোক্ত বিষয়গুলো সামনে রাখতে হবে :
১. যে বিষয় গোড়া
থেকেই সম্ভব নয় বা যে বিষয় পালনে অনেক জটিলতার সৃষ্টি হয়, শরীয়ত কখনো এমন
বিষয়ের আদেশ করে না। এজন্য যে কোনো সমঝদার ব্যক্তির কাছে প্রথম ধাপেই এই ফলাফল
স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, বিশ্বব্যাপী একই দিনে রোযা ও ঈদ করা শরীয়তের নির্দেশ
হতেই পারে না। অসম্ভব অথবা প্রায় অসম্ভব কোনো কাজের আদেশ শরীয়ত করতে পারে না।
২. শরীয়ত
নাযিলের সময় যে বিষয়ের কোনোও ধারণা-কল্পনাও ছিল না, এরকম বিষয়
শরীয়তের নির্দেশ হওয়ার কথা ভাবাই যায় না। সুতরাং এখানে তো একথা পরিষ্কার যে, এই কাজ শরীয়তের
নির্দেশ হতে পারে না।
৩. নব উদ্ভাবিত
কোনো কাজকে ফরয-ওয়াজিব তো দূরের কথা; সুন্নতের মর্তবাও যদি দেওয়া
হয় তাহলেও এটা বিদআত হয়ে যায়। আর বিদআত তো গোমরাহী আর ভ্রষ্টতা।
৪. যে কাজের
বিশেষ কোনো সওয়াব বা ফযীলত কুরআন হাদীসে বর্ণিত হয়নি আবার এই কাজ করতে গেলে অনেক
কষ্ট ও অসুবিধা দেখা দেয় এরকম কাজ তো নিঃসন্দেহে ‘তাকাল্লুফ’ তথা লৌকিকতা ও
নিরর্থক আয়োজন ছাড়া কিছু নয়। আর এ উম্মতকে এসব তাকাল্লুফ থেকে নিষেধ করা হয়েছে।
হাদীস শরীফে এসেছেÑ نهينا عن التكلف আমাদেরকে তাকাল্লুফ থেকে নিষেধ করা হয়েছে।
৫. বিশ্বব্যাপী
এই ঐক্যের শরয়ী কোনো মানদ- নেই। এটা যদি শরীয়তে নির্দেশিত হতই তাহলে শরীয়তে এর
কোনো মানদ-ও থাকত। এই প্রসঙ্গে যে তিনটি মানদ- বলা হয়, এর একটাও
আমলযোগ্য নয়!
৬. এই রকম কোণ হাদিস নেই যে রাসুল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশ দিয়েছেন পৃথিবীর সকল উম্মত তোমরা একইদিনে রোজা
ও ঈদ পালন করো।
0 Comments