Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

আরাফার রোজা কোনদিন রাখতে হবে ? #আরাফার_দিবসের_সিয়ামঃ একটি #ফিকহী_পর্যালোচনা

আরাফার রোজা কোনদিন রাখতে হবে ? আরাফার রোজা রাখার নিয়ম | আরাফার রোজা ফজিলত | arafar roja rakhar niom

#আরাফার_দিবসের_সিয়ামঃ একটি #ফিকহী_পর্যালোচনা

السلام عليكم ورحمة الله وبركاته

الحمد لله رب العالمين والصلاة والسلام على النبي الأمين وعلى آله وصحبه اجمعين.

সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোনেরা, আমরা ‘আরাফার দিবস সম্পর্কে আপনাদের সামনে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আজকের এই সংক্ষিপ্ত নির্দেশিকায় তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহু তা‘আলা।

.প্রথমত ‘আরাফার দিবসে সিয়াম মূলত উকুফে ‘আরাফা বা হাজী সাহেবগন যেদিন ‘আরাফাতের ময়দানে উপস্থিত হবেন সেই দিনই পালন করতে হবে এবং ‘আরাফার দিবসের সিয়াম “উম্মুল কুরার” ক্যালেন্ডার অনুযায়ী যেদিন সৌদি আরবের সরকারের পক্ষ থেকে ‘আরাফার দিবস ঘোষণা করা হবে সরকারিভাবে ঠিক সেদিনই আমরা ‘আরাফার সিয়াম পালন করবো। এই বিষয়টিকে সামনে রেখে আমরা বলতে পারি, যেহেতু সৌদি আরবে যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখা গেছে এবং ‘আরাফার দিবস ইতোমধ্যে ঘোষণা করা হয়েছে যে, ৯ যিলহজ্জ মোতাবেক আগামী ১৯ জুলাই ২০২১ সোমবার ‘আরাফার দিবস। সুতরাং আমরা যারা ‘আরাফার দিবসের সিয়াম পালন করতে চাই তারা আগামী সোমবারে সিয়াম পালন করবো ইনশাআল্লাহ্‌। আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন আমাদের সবাইকে বিশেষ করে যাদের সুস্থতা রয়েছে, যাদের কোন ধরনের শারীরিক অসুস্থতা নেই অথবা যেসমস্ত কারণে সিয়াম পালনে প্রতিবন্ধকতা বা বাধা থাকে সেগুলো থেকে যারা মুক্ত রয়েছেন তাদের সবাইকে ‘আরাফার সিয়াম পালন করার তৌফিক দান করুন।

.আমি এই মাস’আলাটি নিয়ে অর্থাৎ ‘আরাফার দিবসের সিয়ামের বিষয়ে ‘আলেমদের বিভিন্নমুখী ইজতিহাদ এবং ভিন্ন ভিন্ন যেই মতামত রয়েছে সে মতামতের বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথা আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই।

.আমরা জানি, ‘আলেমদের মধ্যে একদল ‘উলামায়ে কিরাম একথা বলেছেন যে, স্থানীয় চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে ‘আরাফার দিবসের সিয়াম পালন করা যেতে পারে এবং তাদের বক্তব্য হচ্ছে, যে দেশে যেদিন যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ হবে সে দেশের লোকেরা সেদিন ‘আরাফার সিয়াম পালন করবেন। মূলত, এটি একদল ‘উলামায়ে কিরামের ইজতিহাদ যে, ইজতিহাদে ‘আরাফার সিয়ামকে ৯ যিলহজ্জের সিয়াম হিসেবে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে, যা হাদীসের ভিত্তিতে যথার্থ নয়। আমরা ‘আলেমদের এবং তাদের ইজতিহাদকে সম্মান করে থাকি। কিন্তু এই ইজতিহাদটি মূলত যথার্থ নয় এবং সঠিক নয়।

.যে কারণে আমরা ‘আরাফার দিবসের সিয়ামকে শুধুমাত্র আরাফার উকুফের তথা আরাফায় অবস্থান করার সাথে সম্পর্কিত করেছিলাম এবং সৌদি আরবের স্থানীয় চাঁদ দেখার উপর ভিত্তি করে হবে বলেছি সেগুলো নিম্নে সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরবো ইনশাআল্লাহ্।

.আরেকদল ‘উলামায়ে কেরাম যাদের অনেকে বিষয়টি নিয়ে ভেবেছেন যে কিভাবে এই মাস’আলাটিতে সমাধান করা যায় এবং তারা সমাধানের একটি দিক এভাবে বের করেছেন যে, যদি কোন ভূখণ্ডে যিলহজ্জের ৮ তারিখ হয়ে থাকে আর সৌদি আরবে ৯ তারিখ হয়ে থাকে তাহলে তারা তাদের ভূখণ্ডে ৮ তারিখ (সাউদি আরবে ৯ তারিখ) ও ৯ তারিখ অর্থাৎ ৮ এবং ৯ তারিখ দুই দিন সিয়াম পালন করবেন। অর্থাৎ, তাদের ৮ তারিখ সৌদির ভূখণ্ডে চাঁদ দেখা অনুযায়ী ‘আরাফার দিবসের সিয়াম পালন করবেন এবং ৯ তারিখ “ইহতিয়াত” বা সতর্কতামূলক সিয়াম পালন করবেন। এ বক্তব্যটিও যথার্থ বা সঠিক নয়, এটিও একটি ইজতিহাদ। যেহেতু পরবর্তী যে দিনটি সেটি মুহতামাল বা সম্ভাবনাময় বিষয়।

والمحتمل كالذي يشك فيه

আর মুহতামাল বা সম্ভাবনাময় বিষয় বা দিবস, সে দিবসের মত যাতে সন্দেহ-সংশয় রয়ে গেছে। এখানে হুরমত বা হারাম এবং ইস্তিহবাব বা মুস্তাহাবের ইহতিমাল এসে গেছে।

অর্থাৎ, ‘আরাফার দিবসের সিয়াম পালন করা নন হাজীদের জন্য ইস্তিহবাব বা মুস্তাহাব। আর যেহেতু সৌদি আরবে ‘আরাফার দিবসের পরের দিন ঈদুল আযহা। সুতরাং ঈদের দিন সিয়াম হচ্ছে হুরমত বা হারাম। ইসলামী শরীয়তে যখনই কোন একটা হুরমত বা হারাম এবং ইস্তিহবাব বা মুস্তাহাবের মধ্যে ইহতিমাল বা সম্ভাবনা এসে যায় তখন হুরমতটা বা হারামটা প্রাধান্য পেয়ে থাকে। কারণ, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

ومن وقع في الشبهات وقع في الحرام

“যে ব্যক্তি সন্দেহজনক বিষয়সমূহের মধ্যে পতিত হলো সে মূলত হারামের মধ্যেই পতিত হলো।” (সহিহ মুসলিম, ৩৯৪৯)

.

তাই এখানে উচিৎ বা ইহতিয়াত হচ্ছে স্থানীয় চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে ৯ তারিখের সিয়াম পালন না করা।

সুতরাং এখানে যিনি এই ইহতিয়াত উল্লেখ করেছেন তার ইহতিয়াতটি ফিকহি দৃষ্টিকোণ থেকে শুদ্ধ নয় এটি খেয়াল রাখতে হবে।

.আসুন এবার ফিকহি যে সমস্ত মৌলিক কারণে আমরা ‘আরাফার দিবসের ব্যাপারে বলেছি যে সৌদি আরবের ঘোষণা অনুযায়ী ‘আরাফার দিবসের সিয়াম পালন হবে এবং সেটা যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখ যখন সৌদি আরবে ঘোষণা হবে তখনই হবে এর মৌলিক যেই যুক্তিগুলো বা কারণগুলো রয়েছে বা মৌলিক যেই ফিকহি পর্যবেক্ষণ এবং পর্যালোচনা রয়েছে এবং ‘আলেমদের বিভিন্ন বক্তব্যের ব্যাপারে ভিন্নমতকে আমরা যেভাবে তুলে ধরতে চাই সেগুলো আমি আপনাদের সামনে নিম্নে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছিঃ-

.1️ যেহেতু ‘আরাফার দিবস ‘আরাফার ময়দানের সাথে সম্পৃক্ত বা স্থানের সাথে সম্পৃক্ত সুতরাং এটি ইখতিলাফুল মাতালে (اختلاف المطالع) বা চাঁদের বিভিন্ন উদয় স্থলের সাথে সম্পৃক্ত হবে না এবং চাঁদের বিভিন্ন উদয় স্থলের পরিবর্তনের সাথে এই মাস’আলাটি আবর্তিত বা পরিবর্তিত হবে না।

2️ যেহেতু ইয়াওমে ‘আরাফা বা ‘আরাফার দিবস হাজীদের ‘আরাফার ময়দানে উকুফের সাথে সম্পৃক্ত এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উকুফের সাথে এই দিনের ফযিলত এবং মর্যাদার বিষয়টি তুলে ধরেছেন তাই হাজী সাহেবগণ যেদিন ‘আরাফার ময়দানে উকুফ করবেন বা উপস্থিত হবেন বা অবস্থান করবেন সেদিনটি মূলত ‘আরাফার দিবস হিসেবে বিবেচিত হবে। ফলে সমস্ত ‘উলামায়ে কিরামের ঐক্যমতে সাব্যস্ত হয়েছে যে, যেদিন হাজী সাহেবগণ ‘আরাফার ময়দানে উকুফ করার পর ফিরে আসবেন, কেউ যদি এ দিনের পরে লোকাল মুন সাইটিং এর উপর নির্ভর করে অথবা তার নিজস্ব ইজতিহাদের উপর নির্ভর করে পরবর্তী সময়ে বা একদিন পর গিয়ে ‘আরাফার ময়দানে উকুফ বা অবস্থা করে থাকেন তাহলে তার উকুফও হবে না এবং হজ্জও হবে না। এই মাস’আলার মধ্যে মূলত ‘আলেমদের কোম ধরণের দ্বিমত নেই। তাই এখান থেকে বুঝা যায় ‘আরাফার দিবসটি উকুফের সাথে সম্পৃক্ত বিষয়। সুতরাং উকুফ যেদিন হবে সেদিনই মূলত আরাফার দিবস হবে।

.3️ ‘আরাফার দিবসের ব্যাপারে বা এই মাস’আলাটি ব্যাপারে মূলত ইখতিলাফের কোন সুযোগ এই জন্য নেই যেহেতু, এ বিষয়ে সৌদি আরবের সর্বোচ্চ কোর্ট বা বিচারবিভাগ, সরকারি ব্যবস্থাপনায় রায় দিয়েছেন বা আরাফার দিবস ঘোষণা করেছেন।

সুতরাং এই মাস’আলার মধ্যে ‘আলেমদের ইখতিলাফ থাকলেও ই’তিবারু ইখতিলাফুল মাতালে (اعتبار اختلاف المطالع) বা চাঁদের বিভিন্ন উদয় স্থলের ব্যাপারে মতবিরোধ বা ইখতিলাফ থাকলেও এবং এর গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি নিয়ে ইখতিলাফ ও ইজতিহাদের বৈধতা থাকলেও এই মাস’আলার মধ্যে ইজতিহাদের বৈধতা নেই, যেহেতু এখানা কাযা এসে গেছে। যখন কোন মাস’আলার মধ্যে ইজতিহাদের বৈধতা থাকে সেখানে উলামায়ে কিরাম ইজতিহাদ করতে পারবেন কিন্তু যখন সরকার অথবা হাকেম অথবা রাষ্ট্র বা রাষ্ট্রব্যবস্থা অথবা রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে নির্দিষ্ট কাযা করে দিবেন তখন সেখানে ‘আলেমদের জন্য ইখতিলাফ করা জায়েয নেই যেটি সমস্থ ‘উলামায়ে কিরামের ঐক্যমতে সাব্যস্ত হয়েছে। তাই আমাদের খেয়াল রাখতে হবে এই মাস’আলার মধ্যে আর ইখতিলাফের সুযোগ নেই বা অবকাশ নেই।

.4️ ইয়াওমে ‘আরাফা হচ্ছে মূলত “ইয়াওমু মিন আইয়ামিল হাজ্জ” (يوم من ايام الحج) অর্থাৎ, হজ্জের দিবসগুলোর মধ্যে একটি আর হজ্জের দিবসগুলো মূলত সম্পৃক্ত হচ্ছে মাশায়ের মুকাদ্দাসা (المشاعر المقدسة) বা পবিত্র যেই স্থানগুলো রয়েছে হজ্জ সম্পন্ন করার জন্য বা যে স্থানগুলোকে আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তাআলা পবিত্র স্থান হিসেবে ঘোষণা করেছেন সেগুলোর সাথে।

সুতরাং ইয়াওমে ‘আরাফাটা হজ্জের দিবস এবং হজ্জের স্থানের সাথে সম্পৃক্ত হওয়ার কারণে এই দিনটিকে হজ্জের স্থানের সাথেই সম্পৃক্ত করতে হবে। এখানে ভিন্ন ভিন্ন দেশের লোকাল মুন সাইটিং এর উপর নির্ভর করলে শরীয়তের এই কিয়াসটুকু মূলত অবৈধ হবে, যথার্থ হবে না বা সঠিক কিয়াস হিসেবে বিবেচিত হবে না।

.5️ যদি কোন ব্যক্তি ইয়াওমে ‘আরাফা যেদিন ঘোষণা করা হয়েছে সে দিন শেষ হয়ে যাওয়ার পরে ‘আরাফার ময়দানে উকুফ করে থাকেন অথচ হাজী সাহেবগণ ঐদিন ‘আরাফার ময়দান থেকে মিনাতে চলে গেছেন অথবা মক্কাতে চলে গেছেন তাহলে তার এই উকুফের বৈধতা সাব্যস্ত হবে না মর্মে সমস্ত ‘উলামায়ে কিরামের ইজমা সাব্যস্ত হয়েছে। অনুরূপভাবে তার সিয়ামও ‘আরাফার দিবসে হবে না। অর্থাৎ, তিনি এর পরবর্তী দিনে যদি সিয়াম পালন করে থাকেন তাহলে তার এই সিয়ামটুকু আরাফার সিয়াম হিসেবে বিবেচিত হবে না।

.6️ কোন ব্যক্তি যদি তার ধারণা অনুযায়ী অথবা তার দেশের চাঁদ দেখা অনুযায়ী ‘আরাফার ময়দানে উকুফ করে থাকেন তাহলে সমস্ত ‘উলামায়ে কিরামের ঐক্যমতে তার হজ্জই শুদ্ধ হবে না। যেহেতু, হজ্জের ব্যাপারে এখানে সে বিধানই কার্যকর হবে যে, বিধান “উম্মুল কুরার” ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রয়েছে এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে ঘোষণা করা হয়েছে,। যেহেতু, এটি মক্কা নগরীর সাথে সম্পৃক্ত।

সুতরাং এ মাস’আলায় বা এ বিষয়েও ‘আলেমদের দ্বিমত নেই যে, তিনি যদি তার ধারণা অনুযায়ী ‘আরাফার ময়দানে একদিন আগে অবস্থান করেন অথবা যেদিন ‘আরাফার দিবস ঘোষণা করা হয়েছে তার এক দিন পর বা দুইদিন পর তার দেশের চাঁদ দেখা অনুযায়ী অবস্থান করেন তাহলে তার হজ্জ গ্রহণযোগ্য হবে না বা হজ্জ বিশুদ্ধ হবে না।

.7️ আমরা যদি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হাদিসের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে আমাদের কাছে স্পষ্ট হবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আরাফার দিবসের সিয়ামের ব্যাপারে যে ফযিলতের বিষয়টি উল্লেখ করেছেন সেখানে মূলত তিনি যিলহজ্জের ৯ তারিখের সিয়াম পালন করার বিষয়টি উল্লেখ করেননি, বরং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম “ইয়াওমে ‘আরাফা” বা ‘আরাফার সাথে এই দিনটিকে মাখসূস বা বিশেষিত বা নির্দিষ্ট করেছেন। এখান থেকে মূলত বুঝা যায় যদি কেউ যিলহজ্জের ৯ তারিখের ক্যালেন্ডারটি লোকাল মুন সাইটিং বা লোকাল বিধান এর উপর অনুসরণ করে থাকেন এটি তার জন্য নাজায়েয নয়, তিনি অনুসরণ করতে পারবেন। কিন্তু যেহেতু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এই দিনের ফযীলতকে ‘আরাফার সাথে নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন এবং এই দিবসকে ইয়াওমে ‘আরাফা বলেছেন তাই এটি হাদিসে ৯ যিলহজ্জ হিসেবে দেখানো হয়নি বরং ফযীলত দেখানো হয়েছে ইয়াওমে ‘আরাফা হিসেবে। তাই এর ফযিলত যদি কেউ পেতে চান তাহলে তিনি ‘আরাফার দিবসেরই সিয়াম পালন করবেন আর ‘আরাফার দিবসের সিয়াম ‘আরাফার দিনই হবে যেটি মূলত “উম্মুল কুরার” ক্যালেন্ডার অনুযায়ী এবং সৌদি আরবের সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঘোষিত হয়েছে আর সেটিই ‘আরাফার দিবস হিসেবে বিবেচিত হবে।

.8️اعتبار اختلاف المطالع من المسائل الاجتهادية আমরা জানি যে, চাঁদের বিভিন্ন উদয় স্থলের বিভিন্নতার মাস’আলাটি এবং এর গ্রহণযোগ্যতার বিষয়টি ‘আলেমদের মাঝে ইজতিহাদি মাস’আলা কোন সন্দেহ নেই। এখানে ‘আলেমদের মাঝে ইজতিহাদের অবকাশ রয়েছে। একেবারে প্রাচীন যুগ থেকে এমনকি সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুমের যুগ থেকে আরম্ভ করে এই মাস’আলার মধ্যে ‘উলামায়ে কিরাম ইখতিলাফ করেছেন। কিন্তু ইয়াওমে ‘আরাফার মাস’আলাটি ليس من المسائل الاجتهادية এটি ইজতিহাদি মাস’আলা নয় বরং ফিকহি দৃষ্টিকোণ থেকে বা ফিকহের বিধান অনুযায়ী এটি হচ্ছে, من المسائل القطعية অর্থাৎ, কাত‘ঈ বা অকাট্য মাস‘আলা যেহেতু এখানে কাযা এবং সরকারের সিদ্ধান্ত বা ওয়ালিউল আমরের সিদ্ধান্ত রয়েছে।

.আমরা জানি, মূলত এই মাস’আলাটি ফিকহি মাস’আলা, ইজতিহাদি মাস’আলা নয় যে, আমরা এক্ষেত্রে ইজতিহাদকে প্রাধান্য দিব। তবে ততক্ষণ পর্যন্ত এখানে ইজতিহাদের অবকাশ থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত এখানে কাযা এর আগমন ঘটবে না বা কাযা এর উপর আসবে না। যখনই এখানে কাযা বা সরকারের পক্ষ থেকে অথবা কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে রায় প্রদান করে দেয়া হবে, দিনটি নির্ধারণ করে দেয়া হবে তখন মূলত এটি আর ইজতিহাদি মাস’আলার মধ্যে থাকবে না, তখন এখানে ইজতিহাদ করার বৈধতা হারিয়ে যাবে। এটি তখন من المسائل القطعية বা অকাট্য মাস’আলার মধ্যে এটি অন্তর্ভুক্ত হবে।

.9️احكام الحج تدور حول الكعبة المشرفة আমরা জানি, হজ্জের মাস’আলাগুলো যেহেতু কাবা কেন্দ্রিক তাই কাবার সাথেই এটি আবর্তিত হবে। হজ্জটা মূলত আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন আল কাবাতুল মুশাররাফাকে (الكعبة المشرفة ) কেন্দ্র করে এর তা‘যীমকে কেন্দ্র করে হজ্জের বিধানগুলো দিয়েছেন।

আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা কুরআনুল কারীমের মধ্যে ইরশাদ করেছেন,

إِنَّ أَوَّلَ بَيْتٍ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكًا

"সর্বপ্রথম ঘর যেটি আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন এই পৃথিবীর মধ্যে স্থাপন করেছেন মানুষদের জন্য বা মানব গোষ্ঠীর জন্য, আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের ইবাদত করার জন্য মক্কা নগরীতে এবং সেটাকে বরকতময় করেছেন।" (সুরা আলেম ইমরানঃ ৯৬)

এখান থেকে বুঝা যায় মূলত হজ্জের বিধানগুলো দেয়া হয়েছে এই মক্কা নগরীর কাবা ঘরকে সম্পর্কিত করে, কাবা ঘরের সাথেই এটি আবর্তিত হবে। তাই এই বিধান কাবা ঘরের সাথে আবর্তিত হওয়ার কারণে কাবা যেহেতু শুধুমাত্র মক্কা নগরীতেই রয়েছে সুতরাং এই বিধান কাবা কেন্দ্রিক হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। তাই এখানে লোকাল মুন সাইটিং এর বিষয় বা চাঁদের উদয় স্থলের বিভিন্নতার ব্যাপারে যে বক্তব্য বা যেই ইজতিহাদ উলামায়ে কিরামের রয়েছে সেটি নিয়ে এসে বিতর্ক তৈরী করার বিষয়টি ফিকহি দিক থেকে গ্রহণযোগ্য বা সঠিক বা বৈধ নয়। এটি আমাদের খেয়াল রাখতে হবে।

.🔟حكم يوم عرفة من الاحكام السلطانية ‘আরাফার দিবসের হুকুম বা বিধান হচ্ছে মূলত আহকামু সুলতানিয়া বা রাষ্ট্রীয় বিধানের সাথে অন্তর্ভুক্ত যেটি রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বা রাষ্ট্রের সুনির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হবে। আমীরুল হজ্জের পক্ষ থেকে এটি ঘোষণা দেয়া হয় এবং আমীরুল হজ্জের কর্তৃত্বের মাধ্যমেই মূলত এটা পালন করা হয়ে থাকে। আমরা যে, ঈদুল আযহা পালন করে থাকি, ঈদুল ফিতর পালন করে থাকি এগুলোও আহকামু সুলতানিয়ার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত অর্থাৎ রাষ্ট্রীয় যে, বিধানগুলো রয়েছে তার সাথে অন্তর্ভুক্ত, কালেক্টিভ যে বিধান রয়েছে সেগুলোর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। ফলে, لا من الاحكام الشخصية ولا من الفردية এটি ব্যক্তিগত বিধান অথবা ব্যক্তিগত মাস’আলা মাসায়েলের সাথে সম্পৃক্ত বিষয় নয়।

সুতরাং ব্যক্তিগতভাবে কেউ এ বিষয়ে ফাতাওয়া দিয়ে তিনি যদি মনে করে থাকেন যে, তার এই বিধানটি শুদ্ধ হয়েছে এবং এ বিষয়ে তার ফাতাওয়া গ্রহণযোগ্য হবে তাহলে এ কাজটি এখানে যথার্থ হবে না, এ কাজটি ফিকহি দৃষ্টিভঙ্গি থেকেও মূলত সঠিক বা নির্ভুল নয় বরং এর মধ্যে কিছু বিভ্রান্তি বা ভুল হয়েছে।

আমরা উপরিউক্ত ১০টি পয়েন্টের কারণে মূলত ঐসমস্ত ‘উলামায়ে কিরামের বক্তব্যকে গ্রহণ করিনি বা ঐসমস্ত ইজতিহাদকে যথার্থ বা সঠিক মনে করিনি যে সমস্ত ‘উলামায়ে কিরাম বলেছেন যে, “ ‘আরাফার দিবসের সিয়াম মূলত যিলহজ্জ মাসের ৯তারিখে পালন করা হবে এবং ‘আরাফার দিবসের সিয়াম লোকাল মুন সাইটিং বা স্থানীয় চাঁদ দেখার উপর নির্ভর করে সে দেশের যিলহজ্জ মাসের ৯ তারিখে তারা সিয়াম পালন করবেন।”

.এ বক্তব্যটি এখানে যথার্থ নয় আর যথার্থ না হওয়ার উপযুক্ত ১০টি ফিকহি কারণ আমরা উল্লেখ করেছি। আশা করি আপনারা এই কারণগুলো বুঝার জন্য চেষ্টা করবেন এবং ফিকহি এই পর্যালোচনাগুলো নিজেরা উপলব্ধি করার জন্য চেষ্টা করবেন। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আপনাদেরকে তৌফিক দান করুন।

.সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোনেরা, এখানে আমি আরও দুইটি মাস‘আলার ব্যাপারে আপনাদের দৃষ্টিপাত করতে চাই যেগুলো নিম্নে দেয়া হলোঃ-

1️ ‘আরাফার দিবসের সিয়াম শনিবার হলে কি করবেন? কারণ, আমরা জানি, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শুধু শনিবারে অথবা শুধু শুকরবারে সিয়াম পালন করতে বা সিয়ামের জন্য নির্দিষ্ট করতে অপছন্দ করেছেন যেটি হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। তাই হয়তো কেউ কেউ এই মাস‘আলা দিতে পারেন বা একথা বলতে পারেন যে, ‘আরাফার দিবসের সিয়াম আমরা শুধু শনিবারে পালন করতে পারবো কিনা?

জী, অবশ্যই আপনারা ‘আরাফার দিবসের সিয়াম শুধুমাত্র যিনি একদিন সিয়াম পালন করতে চান তার জন্য জায়েয রয়েছে, তিনি ‘আরাফার দিবসের সিয়াম শনিবার পালন করবেন। এতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুধু শনিবার সিয়াম পালন করার যেই বিষয়টি অপছন্দ করেছেন সেটি এখানে আসবে না যেহেতু, এই দিনের সিয়ামটি ‘আরাফার সাথে সম্পৃক্ত এবং ‘আরাফার জন্যই এই সিয়ামের ইস্তিহবাব এবং ফযিলত সাব্যস্ত হয়েছে, তাই এই দিনে সিয়াম পালনে কোন ধরনের বাধা নেই। তবে যেহেতু আমরা আরো জানি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্জের প্রথম ১০ দিনের নেক আমলের মর্যাদা এবং গুরুত্বের সুস্পষ্ট হাদিস উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন যে,

“যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের নেক আমলসমূহ আল্লাহর কাছে অন্য যেকোন দিনের, অন্য যেকোন নেক আমলের চেয়ে শ্রেষ্ঠ ও মর্যাদাপূর্ণ।”

সুতরাং এক্ষেত্রে যদি আমরা শুক্র এবং শনিবারের সিয়াম পালন করে থাকি তাহলে যিলহজ্জ মাসের মর্যাদাপূর্ণ আমলের মধ্যে আমরা আমাদের আরেকটি সিয়ামকে সম্পৃক্ত করতে পারবো বা যোগ করতে পারবো ইনশাআল্লাহ্‌। তাই আমরা যদি ‘আরাফার দিবসের সিয়াম শনিবারে পালন করি এবং তার আগের দিন শুক্রবারেও সিয়াম পালন করি সেভাবেও আমরা করতে পারবো, জায়েয রয়েছে।

.

আর যারা একেবারে যিলহজ্জের ১ তারিখ থেকে আরম্ভ করে ৯ তারিখ পর্যন্ত টানা সিয়াম পালন করতে চান তাদের জন্যও জায়েয রয়েছে, সিয়াম পালন করতে পারবেন।

হুনাইদা ইবনু খালিদ রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহু তার স্ত্রী থেকে বর্ণনা করেন, তার স্ত্রী আল্লাহর নবী রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর স্ত্রী হাফসা রাদিয়াল্লাহু তা‘আলা ‘আনহা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যিলহজ্জের ৯ দিন সিয়াম পালন করেছেন মর্মে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর ‘আমল বর্ণনা করেছেন। এই হাদিসটিকে মূলত একদল ‘উলামায়ে কিরাম সনদের দিক থেকে সহিহ বলেছেন। সুতরাং, কেউ যদি মনে করেন যে, তিনি যিলহজ্জ মাসের ৯ দিনই সিয়াম পালন করবেন তাহলে তার জন্য জায়েয রয়েছে তিনি যিলহজ্জ মাসের ৯ দিনই সিয়াম পালন করবেন।

2️ যদি কোন ভূখণ্ডে লোকাল মুন সাইটিং এর উপর নির্ভর করে ‘আরাফার দিবসের দিন যদি কোন কারণে ঈদের দিন হয়ে যায় তখন তারা কি করবেন? অথচ আমরা জানি বা ভৌগলিক কারণেও আমাদের কাছে এটি স্পষ্ট যে, কোন ভূখণ্ডেই মূলত ‘আরাফার দিবসে ঈদের দিন হওয়ার কথা না, চাঁদ দেখার ভিত্তিতে। যেহেতু, ভৌগলিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে যে, সৌদি আরবে যে দিন চাঁদ দেখা হয়ে থাকে এর পশ্চিম ভূখণ্ডে বা পশ্চিম দিগন্তে ঐদিনই চাঁদ দেখা যাওয়ার কথা। তারপরও যদি কোন ভূখণ্ডে এটি প্রমাণিত হয় এবং সাক্ষ্যের মাধ্যমে এটি সাব্যস্ত হয়ে থাকে যে, তারা আগে চাঁদ দেখেছেন এবং ‘আরাফার দিবসে তাদের ঈদের দিন হয়ে যায় তাহলে তাদের জন্য ঐ দিনের সিয়াম পালন করা জায়েয হবে না এজন্য যেহেতু হুরমত এবং ইস্তিহবাব একত্রিত হয়েছে।

.আমরা শুরুতেই একটি পর্যালোচনার মধ্যে আপনাদের স্পষ্ট করেছি যে, যদি কোন মাস‘আলার মধ্যে হুরমত এবং ইস্তিহবাব অর্থাৎ, হারাম এবং মুস্তাহাব হওয়ার বিষয়টি একসাথে হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে হারামের বিষয়টি প্রাধান্য পাবে। এমতাবস্থায় তারা সিয়াম পালন করতে না পারার জন্য আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা তাদেরকে অবশ্যই ‘আরাফার সিয়ামের যেই মর্যাদা রয়েছে সে মর্যাদা অন্যভাবে বান্দাদেরকে দিয়ে দিবেন। তারা অন্য নেক আমলগুলো যেগুলো রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করতে বলেছেন সেগুলো অধিক পরিমাণে করবেন। তন্মধ্যে ‘আরাফার দিবসে তারা আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের কাছে অধিক পরিমাণে দু‘আ এবং অধিক যিকির করবেন।

.রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘আরাফার দিবসের জন্য যেই দু‘আটি শিক্ষা দিয়েছেন আমরা সবাই সেই দু‘আটি শিখে নিই। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিসের মধ্যে ইরশাদ করেছেন,

لا إلهَ إلاَّ اللَّه وحْدهُ لاَ شَرِيكَ لهُ، لَهُ المُلْكُ، ولَهُ الحمْدُ، وَهُو عَلَى كُلِّ شَيءٍ قَدِيرٌ

সম্মানিত দ্বীনি ভাই ও বোনেরা আপনারা লক্ষ্য করেছেন! এটি দু‘আ এবং সানা ‘আলাল্লাহ, আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের প্রশংসা, আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীনের তাওহিদের ঘোষণা, কিন্তু আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটিকেই ‘আরাফার দিবসের দু‘আ হিসেবে এবং উত্তম দু‘আ হিসেবে নির্বাচন করেছেন বরং তিনি আরও বলেছেন,

“আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগণ ‘আরাফার ময়দানে সবচেয়ে উত্তম যে দু‘আটি করেছি এটিই হচ্ছে সেই দু‘আ।”

তাই এই দু‘আটি মূলত ‘আরাফার ময়দানে যারা উপস্থিত হয়েছেন তাদের জন্যও উত্তম দু‘আ এবং যারা ‘আরাফার ময়দানে উপস্থিত হননি তাদের জন্যও উত্তম দু‘আ।

.আল্লাহ্‌ রাব্বুল ‘আলামীন আমাদের সবাইকে এই দু‘আটি শিখে নিয়ে বেশি বেশি ‘আরাফার দিবসে দু‘আ করার তৌফিক দান করুন। আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদের সবাইকে ‘আরাফার দিবসের যেই নেক ‘আমল রয়েছে সেগুলো পালন করা এবং ‘আরাফার দিবসে যেই মর্যাদাপূর্ণ সিয়াম রয়েছে সেই সিয়াম পালন করার তৌফিক দান করুন।

والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته

ড. মুহাম্মাদ সাইফুল্লাহ

০৬-০৮-২০১৯


Post a Comment

0 Comments