▌পথভ্রষ্ট
বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান কেয়ামতের সময়কাল বলে দিচ্ছে এবং এরকম ভ্রান্তির
জবাব দিচ্ছেন মদিনার ফাকিহ আল্লামা সুলাইমান আর-রুহাইলি হাফিযাহুল্লাহ
·বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম। মুসলিম বাঙালি তরুণদের মাঝে জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা পথভ্রষ্ট মিথ্যুক বক্তা আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান সাহেব তার এক বক্তব্যে বলছেন, “এই পুরো সময়টাতে আমাদের হাতে কতটুকু সময় আছে, আল্লাহ ভালো জানেন। তবে আমাদের মনে হয়, আমাদের মত, আমাদের মনে হয়, সবমিলিয়ে হয়তোবা পঞ্চাশ-ষাট বছরের বেশি বাকি আছে বলে আমার মনে হয় না। আল্লাহ ভালো জানেন, বারবার বলছি। আমার মত— ফিফটি থেকে সিক্সটি ইয়ার্স (এর মধ্যে) সবগুলো ঘটনা ঘটে যেতে পারে। আল্লাহু আলামু বিস সাওয়াব।” [দেখুন: পোস্ট-সংলগ্ন ভিডিয়োর ৩৩ সেকেন্ড থেকে ৫০ সেকেন্ড পর্যন্ত]
আদনান সাহেবের ভাবখানা দেখে মনে হচ্ছে, নামাজের মধ্যে হাত বুকের ওপর
বাঁধবেন, না পেটের ওপর, না নাভীর নিচে — সেরকম মতভেদপূর্ণ বিষয়ে একজন আলিম মত পেশ
করছেন! অথচ কেয়ামত কখন হবে — তা ইলমুল গায়েব তথা অদৃশ্যের জ্ঞানের অন্তর্গত বিষয়।
এটা এমন মৌলিক বিষয়, যে বিষয়ে ইচ্ছামতো মত পেশ করার কোনো সুযোগ নেই। স্বয়ং নবিজি
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও জানতেন না কেয়ামত কখন হবে। তাঁকে জিজ্ঞেস করার
পরেও তিনি বলতে পারেননি, বরং জানিয়ে দিয়েছেন, এক আল্লাহই জানেন, কখন হবে কেয়ামত।
অথচ আবু ত্বহা আদনানের মতো বক্তাদের ভ্রষ্টতা ও দৌরাত্ম্য এতদূর পর্যন্ত পৌঁছেছে
যে, উনারা নিজেরাই কেয়ামতের প্রাক্কালে যা হবে, তা ধারণা করে বলে দিচ্ছেন, এত এত
সময়ের মধ্যে এসবকিছু ঘটে যাবে! আল্লাহুল মুস্তাআন।
·এসব বক্তা থেকে নিজেরা দূরে থাকা, পরিবারের মানুষদের দূরে রাখা এবং মুসলিম ভাইদেরকে সতর্ক করা এখন সময়ের দাবি। এসব মিথ্যুক বক্তাদের থেকে সতর্ক করে মদিনা ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, মসজিদে নববির মুদার্রিস এবং মসজিদে কুবার সম্মাননীয় ইমাম ও খতিব, আশ-শাইখ, আল-আল্লামা, আল-ফাকিহ, ড. সুলাইমান বিন সালিমুল্লাহ আর-রুহাইলি হাফিযাহুল্লাহ বলেছেন— “সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ ও মানবতার নেতা, বরং সৃষ্টির সর্বসেরা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও জানতেন না কেয়ামত কখন হবে। তাহলে আল্লাহ ছাড়া আর কেউ কীভাবে কেয়ামতের সময় জানতে পারে? এজন্য হে আল্লাহর বান্দা, ওই সকল মিথ্যুক দাজ্জালদের কথার প্রতি ভ্রুক্ষেপ কোরো না, যারা প্রত্যেক বছর আবির্ভূত হয়, (নিজেদের ব্যাপারে) যারা ধারণা করে, তারা জ্যোতির্বিজ্ঞানী বা অনুরূপ কিছু। আর ধারণা করে, দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যাবে অমুক সময়ে, কিংবা এই বছরে। এই কথা বিশ্বাস করা কোনো মুমিনের জন্য জায়েজ নয়। কেননা এটা সুনিশ্চিত যে, কেয়ামতের নির্ধারিত সময় মহান আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।” [দেখুন: পোস্ট-সংলগ্ন ভিডিয়োর ১ মিনিট ৭ সেকেন্ড থেকে শেষ পর্যন্ত]
··সুপথপ্রাপ্তির অভিলাষী
এক গুনাহগার বান্দা—
·রচনাকাল—
রাত ৭টা ৪৩ মিনিট।
সোমবার।
১২ই জিলহজ, ১৪৪৩ হিজরি।
২৬শে আষাঢ়, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ।
১১ই জুলাই, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ।
❏ আবু ত্বহা আদনানের ভক্তকুলের কতিপয়
অমূলক অভিযোগের জবাব:
অভিযোগ-১: আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনানের ফ্যান-ফলোয়ার বেশি হওয়ায় হিংসায়
তাঁকে খণ্ডন করা হচ্ছে!
জবাব:
অদ্ভুত কথা, ভাই। আবু ত্বহা আদনান ভ্রষ্ট ও বিদাতি আকিদা ছড়িয়েছেন, তাই তাকে ইলমি
খণ্ডন ও সমালোচনা করা হয়েছে। যেমন সাহাবি ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমা
ভাগ্য-অস্বীকারকারী পথভ্রষ্ট লোকদের তীব্র সমালোচনা করেছিলেন। [দেখুন: সহিহ
মুসলিম, হা: ৮; ইমান অধ্যায় (১); পরিচ্ছেদ: ১] তাহলে সাইয়্যিদুনা ইবনু উমার
রাদিয়াল্লাহু আনহুমা কি হিংসায় ওই লোকদের সমালোচনা করেছিলেন?! পরবর্তী যুগে আগত
হাজারো উলামা শরিয়তবিরোধী ও বিদাতিদের সমালোচনা করেছেন। তাঁরা সবাই কি হিংসা ও
আক্রোশে বিদাতিদের খণ্ডন করেছেন?!
স্বয়ং
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাতিলপন্থিদের সমালোচক ব্যক্তিবর্গের
প্রশংসা করেছেন। [বাইহাকি, সুনানুল কুবরা, হা: ২১৪৩৯; ইবনু বাত্তাহ, ইবানাতুল
কুবরা, হা: ৩৪; মিশকাত, হা: ২৪৮; সনদ: সহিহ (তাহকিক : আলবানি)] তাহলে আবু ত্বহা
সাহেবের ভক্তকুল কি বলবে, নবিজিও হিংসার বশবর্তী হয়ে সমালোচকদের প্রশংসা করেছেন?!
·অভিযোগ-২: আবু ত্বহা আদনান তো কিতাবুত তাওহিদের উদ্ধৃতি দিয়ে তাওহিদের ওয়াজ করছে! তবুও তাঁর বিরোধিতা কেন?
জবাব:
বড়োই অদ্ভুত কথা। কিতাবুত তাওহিদের উদ্ধৃতি দিয়ে ওয়াজ করলেই কেউ হকপন্থি হয়ে যাবে,
এ কথা কোথায় লেখা আছে? কুরআন-সুন্নাহয় এমন কথা আছে, কিংবা সালাফগণ কি এমন কথা
বলেছেন? হকপন্থি হতে হলে একজন ব্যক্তিকে নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও
তাঁর সাহাবিদের আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত হতে হয়। এই আদর্শের কোনো একটি মূলনীতির
বিরোধিতা করলেই ব্যক্তিকে বিদাতি বলা হয়। [শারহু উসুলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাতি
ওয়াল জামাআহ; বর্ণনা নং: ৩১৭ ও ৩১৮; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৪৮ ও ১৫৬; দারুল বাসিরা
(আলেকজান্দ্রিয়া) কর্তৃক প্রকাশিত; সন-তারিখবিহীন]
তাই কোনো
কিতাব থেকে রেফারেন্স দেওয়াই হকের মানদণ্ড নয়। কারণ আলি রাদিয়াল্লাহু আনহুকে
হত্যাকারী এবং সাহাবিদের সাথে লড়াইকারী দেশদ্রোহী খারেজিরা সরাসরি কুরআন থেকে
রেফারেন্স দিয়ে নিজেদের বাতিল মতাদর্শকে সঠিক বলত। তবুও সাহাবিগণ তাদেরকে বিদাতি
গণ্য করেছেন, তাদের সাথে লড়াই করেছেন এবং তাদেরকে পরাজিত করে আনন্দিত হয়েছেন।
[ইমাম ইবনু তাইমিয়া কৃত মাজমুউ ফাতাওয়া, খণ্ড: ২০; পৃষ্ঠা: ৩৯৫]
·অভিযোগ-৩: আবু ত্বহা আদনানের পক্ষেই তো বেশিরভাগ মানুষ, তাহলে কীভাবে সে বাতিল হতে পারে?!
জবাব: এ
কথার জবাব স্বয়ং আল্লাহ দিয়েছেন কুরআনে। মহান আল্লাহ বলেছেন, وَإِنْ تُطِعْ أَكْثَرَ مَنْ فِي الْأَرْضِ يُضِلُّوكَ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ ۚ إِنْ يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ “তুমি যদি দুনিয়াবাসী অধিকাংশ লোকের অনুসরণ করো,
তাহলে তারা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে ফেলবে। তারা তো কেবল অনুমানের
অনুসরণ করে, আর তারা স্রেফ অনুমানভিত্তিক কথাই বলে থাকে।” [সুরা আনআম: ১১৬]
·অভিযোগ-৪: দুএকটা ভুলের কারণে পথভ্রষ্ট বলা হবে কেন আবু ত্বহাকে?
জবাব:
দুএকটা ভুলও করা লাগবে না, স্রেফ একটি মৌলিক ভ্রান্তিই যথেষ্ট— একজন ব্যক্তিকে
পথভ্রষ্ট বিদাতি বলার জন্য। এর দলিল— সাহাবি ইবনু উমার রাদিয়াল্লাহু আনহুমার কর্ম।
তিনি স্রেফ একটি মৌলিক ভুলের কারণে ভাগ্য-অস্বীকারকারীদের তীব্র নিন্দা এবং
তাদেরকে ভ্রষ্ট আখ্যা দিয়েছিলেন। [দেখুন: সহিহ মুসলিম, হা: ৮; ইমান অধ্যায় (১);
পরিচ্ছেদ: ১]
আহলুস
সুন্নাহ ওয়াল জামাতের ইমাম শাইখুল ইসলাম আহমাদ বিন হাম্বাল রাহিমাহুল্লাহ (মৃত:
২৪১ হি.) বলেছেন, ﻭﻣﻦ ﺍﻟﺴﻨﺔ ﺍﻟﻼﺯﻣﺔ ﺍﻟﺘﻲ ﻣﻦ ﺗﺮﻙ ﻣﻨﻬﺎ ﺧﺼﻠﺔ –ﻟﻢ ﻳﻘﺒﻠﻬﺎ ﻭﻳﺆﻣﻦ ﺑﻬﺎ– ﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻣﻦ ﺃﻫﻠﻬﺎ “আবশ্যকীয় সুন্নাহর (মানহাজের) মধ্য থেকে যে ব্যক্তি
কোনো একটি বৈশিষ্ট্য পরিত্যাগ করবে, তা গ্রহণ করবে না এবং তার প্রতি ইমানও আনবে
না, তবে সে সুন্নাহপন্থিদের তথা আহলুস সুন্নাহর অন্তর্ভুক্ত নয়।” [ইমাম লালাকায়ি
রাহিমাহুল্লাহ কৃত শারহু উসুলি ইতিকাদি আহলিস সুন্নাতি ওয়াল জামাআহ; বর্ণনা নং:
৩১৭; খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৪৮; দারুল বাসিরা (আলেকজান্দ্রিয়া) কর্তৃক প্রকাশিত;
সন-তারিখ-বিহীন]
বর্তমান
যুগে আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের ইমাম, যুগশ্রেষ্ঠ ফাকিহ, আশ-শাইখুল আল্লামাহ ড.
সালিহ বিন ফাওযান আল ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ (জন্ম: ১৩৫৪ হি./১৯৩৫ খ্রি.) বলেছেন, كل من خالف أهل السنة والجماعة ممن ينتسبون إلى الإسلام في الدعوة، أو في العقيدة، أو في شيئ من أصول الإيمان؛ فإنه يدخل في الإثنين وسبعين فرقة “ইসলামের সাথে নিজেকে সম্পৃক্তকারী যে ব্যক্তিই
দাওয়াহ কিংবা আকিদার ক্ষেত্রে অথবা ইমানের কোনো মূলনীতির ক্ষেত্রে আহলুস সুন্নাহ
ওয়াল জামাতের বিরোধিতা করে, সে ব্যক্তিই (পথভ্রষ্ট) বাহাত্তর ফের্কার অন্তর্ভুক্ত
হবে।” [ইমাম সালিহ আল-ফাওযান কৃত আল-আজউয়িবাতুল মুফিদা আন আসইলাতিল মানাহিজিল
জাদিদা; পৃষ্ঠা: ৩৫; দারুল মিনহাজ (কায়রো) কর্তৃক প্রকাশিত; প্রকাশকাল: ১৪২৪ হিজরি
(৩য় প্রকাশ)]
কাফির
হওয়ার উপযুক্ত কারণ ছাড়াই আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান মুসলিমদেরকে কাফির ফতোয়া দিয়ে
খারেজি হয়েছে এবং এছাড়াও নানাবিধ মৌলিক বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। সুতরাং তাকে পথভ্রষ্ট
বলা মোটেও দোষণীয় নয়, বরং প্রশংসনীয় ভালো কাজ।
·অভিযোগ-৫: শেষ জামানা এবং কেয়ামতের আলামত বিষয়ক আলোচনা সালাফিরা করে না, যা আবু ত্বহা আদনান করছে। আবু ত্বহা এ বিষয়ক সত্য প্রকাশ করে দেওয়ায় সালাফিরা তার পেছনে লেগেছে!
জবাব: এটা
ডাহা মিথ্যা কথা। এদের কথা শুনলে মনে হয়, আবু ত্বহা আদনান একাই সত্যের কাণ্ডারী!
যেই সত্যের কাণ্ডারী কিনা দেওবন্দিদের বিরুদ্ধে টুঁ শব্দটিও করে না, যাদের
অফিসিয়াল আকিদা— মহান আল্লাহ ওপরে নেই! যা সুস্পষ্ট কুফরি আকিদা। উল্টো বক্তব্যের
মধ্যে আদনান সাহেব বলে বেড়ায়, ‘আকিদা-মানহাজের নামে উম্মতকে বিভক্ত করবেন না!’
মানে দেওবন্দিদের বিরুদ্ধে বলা যাবে না! অথচ কতবড়ো সত্যটা গোপন করে দিয়েছে এই
পথভ্রষ্ট মৌলবি আবু ত্বহা আদনান। মুসলিমদের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলবেন না নসিহত করে
আবু ত্বহা আদনান নিজেই খোঁচা মেরে বলে, ‘স্কলাররা সবাই হালুয়া-রুটি খাওয়ায়
ব্যস্ত!’ সালাফিরা বিদাতিদের বিরুদ্ধে বললে হারাম, আর আবু ত্বহা আদনান উলামাদের
মানহানি করলে সেটা খুব আরাম, তাইনা?!
যাহোক,
আদনান-ভক্ত ভাইদের বলব, মূর্খামি বাদ দিয়ে সালাফিদের দাওয়াত সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে
তারপর অভিযোগ করতে আসবেন। আদনানকে যখন জাতি চিনত না, এমনকি কেয়ামতের
আলামত-বিশেষজ্ঞ মুফতি কাজি ইবরাহিমও (ফাক্কাল্লাহু আসরাহু ওয়া হাদাহ) যখন কেয়ামতের
আলামত নিয়ে মাঠে-ময়দানে আলোচনা করেননি, তারও বহুপূর্বে আমরা সালাফি বিদ্বানদের বই
পড়ে শেষ জামানা বিষয়ক জ্ঞান অর্জন করেছি। আহলেহাদিস মুহাদ্দিস ইমাম আলবানির
দাজ্জাল বিষয়ক বই বহু আগে পড়েছি। বইটি বাংলায় অনূদিত হয়েছে।
প্রখ্যাত
আহলেহাদিস বিদ্বান উস্তায আব্দুল হামিদ ফাইযি মাদানি সম্পাদিত ও উস্তায
মুস্তাফিজুর রহমান মাদানি লিখিত ‘কিয়ামতের ছোট-বড় নিদর্শনসমূহ’ বইটি আমরা আজ থেকে
পাঁচ-সাত বছর আগে পড়েছি। যারা এ বিষয়ে পড়াশোনা করতে চান, তাঁদেরকে আমি এ বইটি পড়তে
বলি। সুলেখক আহলেহাদিস বিদ্বান উস্তায আব্দুল্লাহ শাহেদ মাদানি লিখিত ‘কিয়ামতের
আলামত’ বইটি বহুআগে সৌদি আরব ও বাংলাদেশে প্রকাশিত হয়েছে এবং বইটি অনেক আগে থেকেই
আমাদের সংগ্রহে আছে।
আমার কাছে
খবর আছে, আহলেহাদিস কওমি মাদরাসার কিছু বোকা ছেলেপেলে আবু ত্বহা আদনানের ভক্ত।
এদের বুদ্ধিশুদ্ধি এত লোপ পেয়েছে যে, মাদরাসার সিলেবাসভুক্ত কিতাবে কেয়ামতের আলামত
বিষয়ক আলোচনা এদের চোখে পড়ে না। অবশ্য চোখে পড়বেই বা কীভাবে, এরা তো কিতাবের পেছনে
সময় দেওয়ার মতো ফুরসত পায় না! আবু ত্বহা আদনানের মতো পথভ্রষ্ট বক্তাদের বক্তব্য
শোনা এবং সালাফি দায়িদের গালিগালাজে সময় ব্যয় করার পরে মৌলিক পড়াশোনার সময় কোথায়?!
আহলেহাদিস
মাদরাসার এসব বিপথগামী ছেলেপেলের উদ্দেশে বলছি, মিশকাতুল মাসাবিহের সপ্তবিংশ
অধ্যায় ‘কিতাবুল ফিতান’ খুলে কেয়ামতের আলামত পড়ে নাও, যেই কিতাব আহলেহাদিস
মাদরাসাগুলোতে ক্লাস টেনে পড়ানো হয়। সুনানু ইবনু মাজাহর ত্রিংশ অধ্যায় ‘কিতাবুল
ফিতান’ পড়ো, সুনানুত তিরমিজির একত্রিংশ অধ্যায় ‘কিতাবুল ফিতান’ পড়ো, সেখানে
কেয়ামতের আলোচনা আছে। যে দুটো কিতাব আহলেহাদিস মাদরাসাগুলোতে সানাবিয়া উলা (ইন্টার
ফার্স্ট ইয়ার) ক্লাসে পড়ানো হয়। সুনানু আবি দাউদের ত্রিংশ, একত্রিংশ ও দ্বাত্রিংশ
অধ্যায় ‘কিতাবুল ফিতান’, ‘কিতাবুল মাহদি’ এবং ‘কিতাবুল মালাহিম’ পড়ো, সেখানে
কেয়ামতের আলামাত বিষয়ক আলোচনা আছে। উক্ত কিতাব আহলেহাদিস মাদরাসাগুলোতে সানাবিয়া
সানিয়া (ইন্টার সেকেন্ড ইয়ার) ক্লাসে পড়ানো হয়।
সহিহুল
বুখারির দ্বিনবতিতম অধ্যায় ‘কিতাবুল ফিতান’ এবং সহিহ মুসলিমের চতুঃপঞ্চাশত্তম
অধ্যায় ‘কিতাবুল ফিতানি ওয়া আশরাতিস সাআহ’ পড়ো, সেখানে কেয়ামতের আলামাত বিষয়ক
আলোচনা আছে। উক্ত কিতাবদ্বয় আহলেহাদিস মাদরাসাগুলোতে কুল্লিয়া উলা ও কুল্লিয়া
সানিয়া (ডিগ্রি ফার্স্ট ও ডিগ্রি সেকেন্ড ইয়ার) ক্লাসে পড়ানো হয়। আকিদার কিতাব
খোলো। ইমাম ইবনু আবিল ইয হানাফি বিরচিত শারহুল আকিদাতিত তাহাবিয়্যায় ‘কেয়ামতের
আলামত’ চ্যাপ্টার পড়ে দেখ, সেখানে এ বিষয়ে মৌলিক আলোচনা করা হয়েছে। এই কিতাবও
আহলেহাদিস মাদরাসাগুলোতে ডিগ্রি ফার্স্ট ও ডিগ্রি সেকেন্ড ইয়ার ক্লাসে পড়ানো হয়।
প্রতিবছর
আহলেহাদিস উস্তাযগণ এই কিতাবগুলো পড়ান এবং স্বাভাবিকভাবেই কেয়ামতের আলামত নিয়ে
আলোচনা করেন। আমার পরিচিত এমন বহু আহলেহাদিস খতিবকে আমি চিনি, যাঁরা খুতবায়
কেয়ামতের আলামত নিয়ে আলোচনা করেছেন। উস্তায মতিউর রহমান মাদানি হাফিযাহুল্লাহ
বহুআগে ‘কেয়ামতের আলামতের’ ওপর সিরিজ লেকচার দিয়েছেন। আমাদের বাঙালি সালাফি
বিদ্বানদের আরও অনেকে কেয়ামতের আলামতের ওপর লেকচার দিয়েছেন। আমাদের ড. আবুবকর
মুহাম্মাদ জাকারিয়া স্যার (হাফিযাহুল্লাহ) আকিদার বিদ্বান। আমার জানামতে তিনি ইমাম
সাফফারিনি বিরচিত ‘দুর্রাতুল মুদিআহ’ নামক আকিদা বিষয়ক কিতাবের ধারাবাহিক দারস
দিয়েছেন। এই কিতাবে কেয়ামতের আলামত বিষয়ে স্বতন্ত্র চ্যাপ্টার আছে। তাই বলি,
‘দুইদিনের বৈরাগী ভাতেরে কয় অন্ন’ প্রবাদটি তোমরা নিজেদের ওপর প্রতিফলিত কোরো না।
·অভিযোগ-৬: আবু ত্বহা আদনান তো মুসলিমদের কল্যাণ চায়, তাহলে তার বিরোধিতা কেন?
জবাব:
আপনার কথার জবাব দেওয়ার আগে আমি কয়েকটা প্রশ্ন করি আপনাকে। “পথভ্রষ্ট খারেজি
ফের্কার লোকেরা তো মুসলিমদের কল্যাণ চায়, তাহলে তাদের বিরোধিতা কেন? পথভ্রষ্ট
মুর্জিয়া ফের্কার লোকেরা তো মুসলিমদের কল্যাণ চায়, তাহলে তাদের বিরোধিতা কেন?
এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে অমুসলিম ব্যক্তিও মুসলিমদের কল্যাণ চায়, তাহলে সেই কল্যাণকামী
অমুসলিমদের বিরোধিতা কেন?” উল্লেখ্য যে, আপনার আদর্শিক গুরু আবু ত্বহা আদনান
খারেজি ও মুর্জিয়া ফের্কার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন। [দ্রষ্টব্য: https://youtu.be/V2ULvGA6XrM] আমার প্রশ্নের জবাবে আপনি যা
বলবেন, সেটাই হবে আপনার প্রশ্নের জবাব।
মনে
রাখবেন, আমরা মিথ্যুক ও বিদাতি দায়িদের বিরোধিতা করি আল্লাহর রসুল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ ফলো করে। [এ বিষয়ক হাদিস শুরুতে উল্লেখ করেছি; দেখুন:
সহিহুল বুখারি, হা: ৭০৮৪; সহিহ মুসলিম, হা: ৭] এক্ষেত্রে আমরা সওয়াবের আশা করি।
নবিজির নির্দেশের বিরুদ্ধে শতযুক্তি দিয়েও লাভ নাই, সবগুলোর মান আমাদের কাছে জিরো।
·অভিযোগ-৭: কেউ বলতে পারবে না, আমি হকপন্থি। তাই আবু ত্বহা আদনানকে পথভ্রষ্ট বলা যাবে না!
জবাব:
আপনিও কান খুলে শুনে রাখুন। “কেউ বলতে পারবে না, আমি হকপন্থি। তাই কাফিরদের সর্দার
আবু লাহাব, আবু জাহল, উতবা, শায়বাকে পথভ্রষ্ট বলা যাবে না! কেউ বলতে পারবে না, আমি
হকপন্থি। তাই মুনাফেক-সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনু উবাইকে পথভ্রষ্ট বলা যাবে না! কেউ
বলতে পারবে না, আমি হকপন্থি। তাই খারেজি ও মুর্জিয়া ফের্কাকে পথভ্রষ্ট বলা যাবে
না! কেউ বলতে পারবে না, আমি হকপন্থি। তাই কাদিয়ানি ফের্কাকে পথভ্রষ্ট বলা যাবে
না!” অথচ আপনার গুরু আবু ত্বহা আদনান এদের সবাইকে পথভ্রষ্ট মনে করে। আমার এসব
অভিযোগের যেই জবাব আপনি দেবেন, সেটাই হবে আপনার অভিযোগের প্রতি আমার জবাব।
·অভিযোগ-৮: আল্লাহর ভয় দেখিয়ে দিনের পথে আনার জন্য কিছু জইফ-জাল হাদিস কিংবা হাদিসের সামসময়িক ব্যাখ্যা দিলে সমস্যা কোথায়?
জবাব:
আল্লাহর ভয় দেখানোর জন্য বক্তব্যে জইফ-জাল হাদিস বলা যাবে না। জাল তথা মিথ্যা
হাদিসের ব্যাপারে স্বয়ং প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সতর্ক করেছেন।
তিনি বলেছেন, مَنْ كَذَبَ عَلَىَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ “যে ইচ্ছা করে আমার নামে মিথ্যা বলে, সে যেন
জাহান্নামে তার আসন (বাসস্থান) বানিয়ে নেয়।” [সহিহুল বুখারি, হা: ১১০; সহিহ
মুসলিম, হা: ৪]
আর জইফ
তথা দুর্বল হাদিস দিয়েও শরিয়তের বিবরণ দেওয়া হারাম। কারণ দুর্বল হাদিস নবিজি
বলেছেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায় না। এজন্য দুর্বল হাদিস থেকে কেবল ভ্রমাত্মক
ধারণাই জানা যায়। প্রবল নয় এমন অপ্রাধান্যযোগ্য ধারণা দিয়ে শরিয়তের কোনো বিধান বা
ফজিলত সাব্যস্ত হয় না। মহান আল্লাহ এমন ধারণার ব্যাপারে বলেছেন, وَمَا يَتَّبِعُ أَكْثَرُهُمْ إِلَّا ظَنًّا ۚ إِنَّ الظَّنَّ لَا يُغْنِي مِنَ الْحَقِّ شَيْئًا “তাদের অধিকাংশ লোক শুধু ধারণার
অনুসরণ করছে; নিশ্চয় ধারণা সত্যের বিপরীতে মোটেও কার্যকর নয়।” [সুরা ইউনুস: ৩৬]
নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, إِيَّاكُمْ وَالظَّنَّ فَإِنَّ الظَّنَّ أَكْذَبُ الْحَدِيثِ “তোমরা ধারণা থেকে বেঁচে থাক।
কারণ ধারণা হচ্ছে সবচেয়ে বড়ো মিথ্যা।” [সহিহুল বুখারি, হা: ৫১৪৩; সহিহ মুসলিম, হা:
২৫৬৩]
সর্বজনশ্রদ্ধেয়
মুহাদ্দিস ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ তাঁর বিশ্বনন্দিত ‘সহিহ মুসলিম’ গ্রন্থের
ভূমিকায় এমন অমূল্য কথা বলেছেন, যা আবু ত্বহা আদনান ও তার সমমনা বক্তাদের ক্ষেত্রে
প্রযোজ্য হবে। ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “মুহাদ্দিসগণ হাদিস-বর্ণনাকারী
এবং ঘটনা-বর্ণনাকারীদের দোষত্রুটি প্রকাশ করে দেওয়া অপরিহার্য মনে করেছেন।
বর্ণনাকারীদের দোষত্রুটি সম্পর্কে যখনই তাঁদের জিজ্ঞেস করা হয়েছে, তখনই তাঁরা তা
দিনের গুরুত্বপূর্ণ কাজ মনে করে বৈধ বলে ফতোয়া দিয়েছেন। কেননা দিনের কোনো কথা
বর্ণনা করলে তার মাধ্যমে হয় কোনো কাজ হালাল অথবা হারাম প্রমাণিত হবে, অথবা তাতে
কোনো কাজ করার নির্দেশ অথবা নিষেধ থাকবে, অথবা এর মাধ্যমে কোনো কাজ করতে উৎসাহিত
করা হবে, কিংবা কোনো কাজ না করার জন্য সাবধান করা হবে।
যাহোক,
কোনো বর্ণনাকারীর মধ্যে যদি সততা ও বিশ্বস্ততার উপাদান না থাকে, আর অন্য
বর্ণনাকারী, তার কাছ থেকে হাদিস বর্ণনার সময় জানা সত্ত্বেও যদি তার সম্পর্কে
লোকদের সামনে এ ত্রুটি তুলে না ধরে, তবে সে গুনাহগার হবে এবং সাধারণ মুসলিমদের
সাথে প্রতারক বলে গণ্য হবে। কেননা যারা এ সব হাদিস শুনবে, তারা এগুলোর ওপর অথবা এর
কোনো একটির ওপর আমল করবে। অথচ এর সবগুলো অথবা অধিকাংশই ভিত্তিহীন ও মিথ্যা।
নির্ভরযোগ্য ও আস্থাশীল বর্ণনাকারীদের বর্ণিত নির্ভুল ও সহিহ হাদিসের এক বিরাট
সম্ভার আমাদের সামনে রয়েছে। কাজেই এমন এক ব্যক্তি থেকে হাদিস গ্রহণ করার জন্য
ব্যস্ত হওয়ার আদৌ কোনো প্রয়োজন নেই, যার বর্ণনা নির্ভরযোগ্য নয় এবং সে নিজেও
বিশ্বস্ত বর্ণনাকারী নয়।
আমি মনে
করি, যে সব লোক এ ধরনের জইফ হাদিস এবং অখ্যাত সনদ বর্ণনা করে এবং এসবের
ত্রুটিবিচ্যুতি ও দুর্বলতা সম্পর্কে অবহিত হওয়া সত্ত্বেও এর প্রতি গুরুত্ব দিয়ে
থাকে, তাদের উদ্দেশ্য হলো নিজেদেরকে সাধারণ মানুষের কাছে বড়ো বিদ্বান হিসেবে
পরিচিত করা এবং এজন্য যে, লোকেরা বলবে, সুবহানাল্লাহ! অমুক ব্যক্তি কত হাদিস
সংগ্রহ করেছে, কত হাদীস সংকলন করেছে! ইলমে হাদিসের ক্ষেত্রে যে এই নীতি অবলম্বন
করে এবং এ পথে পা বাড়ায়, হাদিসশাস্ত্রে তার কোনো স্থান নেই। বস্তুত এমন ব্যক্তি
আলিম তথা জ্ঞানী হিসেবে আখ্যায়িত না হয়ে জাহিল তথা মূর্খ নামে অভিহিত হওয়ার
অধিক উপযুক্ত।” [দেখুন: সহিহ মুসলিমের ভূমিকা, পরিচ্ছেদ: ৫]
শাইখুল
ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়া রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন, “যেসব হাদিসের মান সহিহ নয়, কিংবা
হাসানও নয়, শরিয়তের ক্ষেত্রে এমনসব জইফ হাদিসের ওপর নির্ভর করা না-জায়েজ।” [ইবনু
তাইমিয়া কৃত কায়িদাতুন জালিলাহ ফিত তাওয়াসসুলি ওয়াল ওয়াসিলা, পৃষ্ঠা: ৮৪]
এ বিষয়ে
অনেক আলোচনা আছে। আমি কলেবর সংক্ষেপ করার জন্য বক্ষ্যমাণ ভূমিকায় বিস্তারিত আলোচনা
করা থেকে ক্ষান্ত হলাম। তবে সামনে এ বিষয়ে কিঞ্চিৎ বিস্তৃত আলোচনা সামনে আসবে,
ইনশাআল্লাহ।
আর ভয়
দেখানোর জন্য কুরআন-হাদিসের সামসময়িক ব্যাখ্যা নামক অপব্যাখ্যা করাও না-জায়েজ।
কুরআন-হাদিসের কিছু টেক্সটের ভিন্ন ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু তা কুরআন-হাদিসেরই
দলিলের ভিত্তিতে। কুরআন-সুন্নাহর দলিল ব্যতিরেকে কুরআন-সুন্নাহর কোনো অংশকে তার
প্রকাশ্য অর্থ থেকে ফিরিয়ে দিয়ে ভিন্ন অর্থ করা না-জায়েজ। এ ব্যাপারে সাহাবিগণের
ইজমা হয়ে গেছে, কেননা তাঁরা কুরআন-সুন্নাহর কোনো অংশের এরূপ অপব্যাখ্যা করেননি।
ইমাম কাদি আবু ইয়ালা রাহিমাহুল্লাহ তাঁর ‘ইবতালুত তাবিল (অপব্যাখ্যার অপনোদন)’
গ্রন্থে বলেছেন, “এসব হাদিস প্রত্যাখ্যান করা এবং এসবের ভিন্ন ব্যাখ্যা করা
না-জায়েজ। বরং হাদিসগুলোকে সেসবের প্রকাশ্য অর্থ অনুযায়ী ব্যাখ্যা করা আবশ্যক।”
[দেখুন: শাইখুল ইসলাম কৃত আল-ফাতওয়া আল-হামাবিয়্যাহ, তাহকিক: ড. হামাদ
আত-তুওয়াইজিরি; পৃষ্ঠা: ৪৮৮-৪৯০; দারুস সামিয়ি (রিয়াদ) কর্তৃক প্রকাশিত;
প্রকাশকাল: ১৪২৫ হি./২০০৪ খ্রি. (২য় প্রকাশ)]
·
অভিযোগ-৯:
আবু ত্বহা তো বলেই দিচ্ছেন, আল্লাহ ভালো জানেন। সুতরাং তিনি ভুল বললেও তাঁর বিরোধিতা
করা যাবে না।
জবাব:
আপনার কথাটা এমন হয়ে গেল— বিসমিল্লাহ বলে সাত খুন করলেও মাফ! তাহলে শুনুন। ‘আল্লাহ
ভালো জানেন’ বলে কেউ যদি বক্তব্য দেয়, আল্লাহ সর্বত্র বিদ্যমান, তাহলে তার
বিরোধিতা করা যাবে না। ‘আল্লাহ ভালো জানেন’ বলে কেউ যদি ঘোষণা দেয়, ‘গোলাম আহমাদ
কাদিয়ানি’ একজন সত্য নবি, তবুও তার বিরোধিতা করা যাবে না। এসব কথার জবাব হিসেবে
আপনি যা বলবেন, সেটাই হবে আপনার উদ্ভট কথার জবাব। আল্লাহুল মুস্তাআন।
·
❏ দায়িদের প্রতি গোঁড়ামি রাখার ভয়াবহতা:
অত্যন্ত
দুঃখজনক হলেও সত্য, শরিয়তবিরোধী ব্যক্তি ও মতবাদের প্রতি গোঁড়ামি রাখার ভয়াবহ
ব্যাধি পূর্ববর্তী উম্মতের মধ্যে যেমন ছিল, আরবের মুশরিকদের মধ্যে যেমন ছিল, ঠিক
তেমনি যুগে যুগে উক্ত রোগ এই উম্মতের হঠকারী মুসলিমদের মধ্যেও ছিল। আজ অবধি এর
ভয়াল থাবা উম্মতের মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে। এর কারণে অসংখ্য লোক ভ্রষ্টতায় পর্যবসিত
হয়েছে, অসংখ্য হকপন্থি লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়েছে।
পছন্দের
দায়ি বা বক্তার ভুল প্রমাণিত হয়ে যাওয়ার পরেও তা মানতে না চাওয়া, সেই ভুলকে
ডিফেন্ড করা চরম গোঁড়ামি। অথচ হক আমার সাথেই থাক, কিংবা আমার বিরোধীর সাথে, আমি
হকের সামনে থেমে যেতে এবং তা মেনে নিতে বাধ্য। ইমাম শাফি‘ঈ (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:
২০৪ হি.] বলেছেন, “আমি যখন কোনো (ইলমি) বিতর্কে প্রবেশ করি, তখন হক আমার সাথে থাক
চাই আমার প্রতিপক্ষের সাথে থাক, আমি তা গ্রহণ করতে কোনো পরোয়া করি না।” [শাইখ রাবি
বিরচিত ‘আত-তাআসসুবুয যামিম ওয়া আসারুহু’ পুস্তিকা থেকে সংগৃহীত; গৃহীত: মাজমুউশ
শাইখ রাবি, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৪৩৩]
মিশরের
প্রখ্যাত ফাকিহ, আল্লামাহ হাসান বিন আব্দুল ওয়াহহাব আল-বান্না হাফিযাহুল্লাহ
(জন্ম: ১৯২৫ খ্রি.) বলেছেন, “নিশ্চয় কোনো শাইখের প্রতি গোঁড়ামি পোষণ করা এবং তাকে
কেন্দ্র করে দলবাজি করা সুফিবাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। যেই সুফিবাদ হলো রাফিদি শিয়া
মতবাদের পোষ্য মতাদর্শ। এই গোঁড়ামি (অভিনবভাবে) শাইখকে তদীয় ভক্ত বা মুরিদের আচরণ,
মনন ও বিশ্বাসের নিয়ন্ত্রক বানিয়ে দেয়। কিন্তু আহলুস সুন্নাহর একটি স্বতন্ত্র
আদর্শ আছে। ‘(আমাদের আদর্শ হচ্ছে) আল্লাহর দিন; আল্লাহর দিনের চাইতে উত্তম দিন আর
কার হতে পারে? আমরা তো কেবল তাঁরই ইবাদত করি।’ (সুরা বাকারা: ১৩৮) আহলুস সুন্নাহর
ব্যক্তিবর্গ যেসব শাইখের কাছে ইলম অর্জন করেছে, তাদেরকে সম্মান করে, তাদের সাথে
তালিবুল ইলমের আদব বজায় রাখে। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, তারা অন্যায়ভাবে তাদের
প্রতি গোঁড়ামি করবে।” [আত-তাআসসুব লিশ শুয়ুখ, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ৩৭]
যারা
নির্দিষ্ট ব্যক্তি বা সংগঠনের প্রতি গোঁড়ামি রাখে, তাদের মধ্যে সুফি ও শিয়াদের
বৈশিষ্ট্য আছে। শাইখদের প্রতি সুফিদের অন্ধভক্তি ও গোঁড়ামির স্বরূপ তুলে ধরে ইমাম
সালিহ আল-ফাওযান হাফিযাহুল্লাহ বলেছেন, “সুফিরা আবেদ বা ইবাদতগুজার লোককে ‘শাইখ’
আখ্যা দেয়। এর মানে তাদের তরিকার শাইখ, যেই তরিকার লোকেরা সেই শাইখের কাছ থেকে
নিজেদের দিন গ্রহণ করেছে। যে ব্যক্তি উক্ত শাইখের নিকট থেকে স্বীয় দিন গ্রহণ করে,
তারা তাকে ‘মুরিদ’ বলে। সে তার শাইখের কাছে গোসলদাতার সামনে মৃতদেহের মতো হয়ে
থাকে। কোনো বিষয়ে তার কোনো আপত্তি করার কিছু নেই।... (ওদের কথা অনুযায়ী) শাইখের
কাছে তোমাকে বায়াত নিতে হবে, এবং নিজেকে তার কাছে সঁপে দিতে হবে। তুমি কোনো আপত্তি
ও বিরোধিতা করতে পারবে না, অন্যথায় তুমি আর তার মুরিদ থাকবে না।” [তাফসিরু
কালিমাতিত তাওহীদ, পৃষ্ঠা: ১৭; গৃহীত: ইবত্বালুল গুলুউয়িশ শানি ফিশ শাইখ রাবি,
পৃষ্ঠা: ১৫]
ওই সত্তার
কসম, যিনি বীজ থেকে অঙ্কুরোদগম করেন, কোনো হায়াসম্পন্ন আহলেহাদীস নিজের দ্বীনের
ব্যাপারে কোনো ব্যক্তি, গোষ্ঠী, সংগঠন ও ভূখণ্ডের প্রতি অন্ধভক্তি ও গোঁড়ামি রাখতে
পারে না। যার ফলে সে অন্যায়ভাবে হককে পাশ কাটিয়ে বাতিলকে আঁকড়ে থাকে। সুফি ও শিয়া
খবিসদের মতো গোঁড়ামিকে আঁকড়ে ধরার পরিণতি ভালো হয় না। যুগে যুগে আল্লাহ গোঁড়া
মুতাআসসিবদের দুনিয়াতেই শাস্তি দিয়েছেন। আর পরকালেও তাদের জন্য রয়েছে মর্মন্তুদ
আজাব।
অধিকন্তু
হক স্পষ্ট হওয়ার পরেও যদি কেউ বিদাতকে ডিফেন্ড করে, সে ব্যক্তি আর আহলুস সুন্নাহয়
থাকে না। সুন্নাহর মূলনীতির বিরোধিতা করার কারণে সে আহলুস সুন্নাহ থেকে বের হয়ে
যায়। দীর্ঘ ভূমিকার শেষপ্রান্তে এসে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নসিহতটি
আমিও ব্যক্ত করি, “সাবধান, জনগণের ভয় যেন কোনো ব্যক্তিকে সজ্ঞানে হক বলা থেকে বিরত
না রাখে।” [ইবনু মাজাহ, হা: ৪০০৭; সনদ: সহিহ (তাহকিক: আলবানি)]
সাইয়্যিদুনা
আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন, “তোমাদের কেউ যেন নিজের দিনের
ব্যাপারে কোনো ব্যক্তির অন্ধ অনুকরণ না করে। ফলে ওই ব্যক্তি ইমান আনলে সেও ইমান
আনে, ওই ব্যক্তি কুফরি করলে সেও কুফরি করে। তোমাদেরকে যদি অনুসরণ করতেই হয়, তাহলে
মৃত ব্যক্তির অনুসরণ করো। কেননা জীবিত ব্যক্তি কখনোই ফেতনা থেকে মুক্ত নয়।”
[মুজামুল কাবির, খণ্ড: ৯; পৃষ্ঠা: ১৫২; হিলইয়াতুল আউলিয়া, খণ্ড: ১; পৃষ্ঠা: ১৩৪;
শারহু উসুলি ইতিক্বাদ, পৃষ্ঠা: ১৩০; সনদ: সহিহ (তাহকিক: খালিদ উসমান)]
আর যা না
বললেই নয়, আমি মানুষ হিসেবে ভুলের ঊর্ধ্বে নই। আমি লেখার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক
থাকার চেষ্টা করেছি। তথাপি যদি কোনো ভুল থাকে, তবে তা আমার ও শয়তানের পক্ষ থেকে।
আর এতে যা সত্য ও সঠিক রয়েছে, তা মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে। পরন্তু কোনো
শুভাকাঙ্ক্ষী পাঠকের যদি ভুল দৃষ্টিগোচর হয়, তাহলে আমাদেরকে জানালে কৃতজ্ঞ থাকব
এবং ভুল শুধরিয়ে নিব, ইনশাআল্লাহ। ‘আমি তো যথাসাধ্য শোধরাতে চাই। কিন্তু আল্লাহর
তৌফিকেই কাজ হয়ে থাকে। তাই আমি তাঁরই ওপর ভরসা করি এবং তাঁরই দিকে ফিরে যাই।’
[সুরা হুদ: ৮৮]
পরিশেষে আল্লাহর
কাছে প্রার্থনা করছি, ইয়া আল্লাহ, আপনি আমাদের এই লেখায় বরকত দিন। আমার সাথে সাথে
মুসলিম ভাইদেরকে গোঁড়ামি ও অন্ধভক্তির ব্যাধি থেকে হেফাজত করুন। ইয়া আরহামার
রাহিমিন, আপনি আমাদের রদকে অন্ধবিদ্বেষ ও প্রদর্শনেচ্ছার কলুষতা থেকে মুক্ত রাখুন।
ইয়া মালিকাল আমলাক, আমার এই ক্ষুদ্র প্রচেষ্টাকে মিজানের সওয়াবের পাল্লার জন্য
কবুল করে নিন। যেসব সুহৃদ আমাকে উৎসাহ দিয়ে সাহায্য করেছেন এবং আমার জন্য দোয়া
করেছেন, তাঁদেরকেও উত্তম পারিতোষিক দিন। আমিন, ইয়া রাব্বাল আলামিন।
·সুপথপ্রাপ্তির অভিলাষী
এক
গুনাহগার বান্দা—
·রচনাকাল—
রাত ৮টা
৪৭ মিনিট।
বৃহস্পতিবার।
১৫ই
জিলহজ, ১৪৪৩ হিজরি।
২৯শে
আষাঢ়, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ।
১৪ই
জুলাই, ২০২২ খ্রিষ্টাব্দ।
·[সংযুক্তি: এটা ছিল ‘আবু ত্বহা মুহাম্মাদ আদনান : বিপথগামিতার নয়া-আহ্বায়ক’ বইয়ের লম্বা ভূমিকার শেষার্ধ। কলেবর বড়ো হওয়ায় দ্বিতীয় পোস্টে পাবলিশ করা হলো। ভূমিকা-পরবর্তী অধ্যায়ের লেখাগুলো থেকে আমরা একেকটি টপিকের ওপর স্বতন্ত্র পোস্ট দিব, ইনশাআল্লাহ। পরবর্তীতে সম্পূর্ণ লেখা বই আকারে পাবলিশ করা হবে, ইনশাআল্লাহ।]
0 Comments