Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

টুপি, পাগড়ি, জোব্বা কি সুন্নতি পোশাক?

প্রশ্ন : লম্বা জামা, টুপি, পাগড়ি কি সুন্নতি পোশাক?

উত্তর : সুন্নতি পোশাক বলতে পোশাকের কোনো নির্দিষ্ট কাটিং সুন্নাহর মধ্যে নেই। সুন্নাহ বলতে আমি বোঝাচ্ছি, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসের মধ্যে আসেনি। অর্থাৎ রাসূল (সা.)-এর সহিহ হাদিসের মধ্যে পোশাকের সুনির্দিষ্ট কোনো কাটিং রাসূল (সা.) জানিয়ে যাননি।

সুতরাং লম্বা জামা, টুপি, পাগড়ি এই পেশাকগুলো এভাবে রাসূল (সা.)-এর কোনো সহিহ হাদিসের মধ্যে আসেনি। কিন্তু রাসূলুল্লাহ (সা.) পাগড়ি ব্যবহার করেছেন মর্মে সহিহ হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) জোব্বা ব্যবহার করেছেন মর্মে সহিহ হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সা.) পাগড়ির নিচে টুপিও পরেছেন মর্মে সহিহ হাদিস সাব্যস্ত হয়েছে।

এগুলো রাসূল (সা.) ব্যবহার করেছেন, এটি প্রমাণিত হয়েছে, এটা রাসূল (সা.)-এর কাজ। তাই এই কাজগুলো কীভাবে ইসলামী শরিয়তের মধ্যে গুরুত্ব দেওয়া হবে, অর্থাৎ প্রকৃত অবস্থানটি কী হবে, এ নিয়ে আলেমদের মধ্যে মতবিরোধ বা মতপার্থক্য রয়েছে। অধিকাংশ আহলুত তাহকিক, মাহকি ওলামায়ে কেরাম বলেছেন, নবী (সা.) যেসব কাজ স্বভাবজাত বা মানুষের প্রকৃতিগত কাজ, সেগুলো সবই মূলত আদতের (অভ্যাস, প্রথা বা প্রচলন) মধ্যে অন্তর্ভুক্ত। তাই রাসূল (সা.) এই কাজগুলো অভ্যাসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে, এগুলো ইবাদতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে না।

ফলে দেখা গেছে যে এগুলো যদি ইবাদতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হতো, তাহলে সাহাবায়ে কেরামকে রাসূলুল্লাহ (সা.) এভাবেই পোশাক পরতে বা এভাবে কাজ করতে বলতেন। কিন্তু রাসূল (সা.) এভাবে বলেননি। তাই বোঝা যাচ্ছে যে এগুলো মূলত প্রথাগত প্রচলন বা আদতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। ফলে অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের বক্তব্য এটাই, যে এগুলো মূলত প্রথা বা প্রচলনের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত, এগুলো ইবাদতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত নয়।

তবে কেউ যদি মাথায় পাগড়ি পরেন অথবা মাথায় টুপি পরেন অথবা বড় জোব্বা পরেন, এই কারণে যে রাসূল (সা.)-এর অনুসরণ করার জন্য, যে রাসূলুল্লাহ (সা.) পরেছেন, প্রমাণিত হয়েছে, সে কারণে, রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসার কারণে, তাহলে অবশ্যই তিনি সওয়াব পাবেন, যেহেতু আল্লাহু সুবহানাহুতায়ালা কোরআনে কারিমের মধ্যে স্পষ্ট করে বলেছেন, ‘আল্লাহর রাসূলের মধ্যে রয়েছে তোমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।’

সুতরাং যেহেতু একটা নমুনা, আদর্শ, মডেল আমার সামনে আছে, এই মডেলের অনুসরণের কারণে, আল্লাহর রাসূল (সা.)-এর অনুসরণের কারণে তিনি সওয়াব পাবেন। শুধু ওই পোশাকের কারণে নয় বা পোশাকটাকে সুন্নাত আখ্যায়িত করার জন্য নয়। তাই সুন্নতি পোশাক বলতে যদি কেউ মনে করে থাকেন যে সুনির্দিষ্ট কোনো কাটিংকে, এই কাজটি শুদ্ধ নয়।

তবে রাসূলুল্লাহ (সা.) কোনো পোশাক পরেছেন, এটি প্রমাণিত হলে, যদি কেউ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর ভালোবাসার কারণে, অনুসরণের কারণে পোশাকটি পরেন, তাহলে তিনি সওয়াব পাবেন, এতেও কোনো সন্দেহ নেই।

অনেক মুছল্লীকে দেখা যায় গোঁড়ামী করে টুপি পরে না। এমনকি উন্মুক্ত মাথায় ছালাত আদায় করে। এটা নিঃন্দেহে সৌন্দর্যের খেলাপ। রাসূল (ছাঃ) টুপি পরেছেন মর্মে কোন ছহীহ হাদীছ পাওয়া যায় না। কারণ তিনি পাগড়ী পরতেন। ওযূ করার সময় রাসূল (ছাঃ) পাগড়ীর উপর মাসাহ করেছেন এবং তাতে ছালাত আদায় করেছেন বলে প্রমাণিত হয়।[ছহীহ মুসলিম হা/৬৫৬, ১ম খন্ড, পৃঃ ১৩৪; মিশকাত হা/৫১৮; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৪৮৩, ২/১৩০ পৃঃ-]

তিনি খালি মাথায় ছালাত আদায় করেছেন মর্মে কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না। হাসান বাছরী (রহঃ) বলেন, ছাহাবীগণ প্রচন্ড গরমে পাগড়ী ও টুপির উপর সিজদা করতেন।[বুখারী হা/৩৮৫, ১/৫৬ পৃঃ, ‘ছালাত’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-২৩-এর আলোচনা, (ইফাবা হা/৩৭৮-এর পূর্বের অনুচ্ছেদ, ১/২১৯ পৃঃ); এবং হা/১১৯৮, ১/১৫৯ পৃঃ, (ইফাবা হা/১১২৪-এর পূর্বের অনুচ্ছেদ, ২/৩৩০ পৃৃৃঃ), ‘ছালাতের মধ্যে বিভিন্ন কাজ’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১-এর আলোচনা দ্রঃ।]

এতে বুঝা যায় যে তারা ছালাতে টুপি বা পাগড়ী পরে ছালাত আদায় করতেন। খালি মাথায় ছালাত আদায়কে অপছন্দ করতেন। যেমন-

عَنِ ابْنِ عُمَرَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُمَا رَأَى مَوْلاَهُ نَافِعاً يُصَلِّىْ حَاسِرَ الرَّأْسِ فَقَالَ لَهُ أَرَأَيْتَ لَوْ أَنَّكَ ذَهَبْتَ لِمُقَابَلَةِ أَحَدِ هَؤُلاَءِ الْأُمَرَاءِ أَكُنْتَ تُقَابِلُهُ وَأَنْتَ حَاسِرُ الرَّأْسِ؟ قَالَ لاَ قَالَ فَاللهُ أَحَقُّ أَنْ يَّتَزَيَّنَ لَهُ.

ইবনু ওমর (রাঃ) হতে বর্ণিত, একাদা তিনি তার গোলাম নাফে‘ (রাঃ)-কে খালি মাথায় ছালাত আদায় করতে দেখলেন। অতঃপর তাকে বললেন, তুমি যদি কোন নেতৃস্থানীয় ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করতে যাও তাহলে কি তুমি খালি মাথায় তার সাথে সাক্ষাৎ করতে পারবে? তিনি বললেন, না। তখন ইবনু ওমর (রাঃ) বললেন, আল্লাহ অধিক হক্বদার- তাঁর জন্য সৌন্দর্য বর্ধন করা’।[ইবনু তায়মিয়াহ, হিজাবুল মারআহ ওয়া লিবাসুহা ফিছ ছালাহ, পৃঃ ৩; দুরূসুন লিশ শায়খিল আলবানী, পৃঃ ২৫; তামামুল মিন্নাহ, পৃঃ ১৬৪।] খালি মাথায় ছালাত আদায় করা একদিকে অপছন্দনীয় কাজ, অন্যদিকে খালি মাথায় থাকা খৃস্টানদের নিদর্শন।[আলবানী, ছিফাতু ছালাতিন নাবী, পৃঃ ১/১৬৬ পৃঃ]

তাছাড়া ছালাত হোক বা ছালাতের বাইরে হোক মাথা ঢেকে রাখা মুসলিমদের জন্য সৌন্দর্যের প্রতীক।[সিলসিলা যঈফাহ হা/২৫৩৮-এর শেষ আলোচনা দ্রঃ] টুপি, পাগড়ী, রুমাল যা দিয়েই হোক। আর ছালাতের মধ্যে মাথা ঢাকা সৌন্দর্যের অন্যতম। আল্লাহ বলেন, خُذُوْا زِيْنَتَكُمْ عِنْدَ كُلِّ مَسْجِدٍ ‘তোমরা ছালাতের সময় সুন্দর পোষাক পরিধান কর’ (আ‘রাফ ৩১)।[সিলসিলা ছহীহাহ হা/১৩৬৯।]

রাসূল (ছাঃ) কখনো মাথায় বড় রুমালও ব্যবহার করেছেন।[বুখারী হা/৫৮০৭, ২/৮৬৪ পৃঃ, ‘পোষাক’ অধ্যায়, অনুচ্ছেদ-১৬, (ইফাবা হা/৫৩৯১, ৯/৩২২ পৃঃ)।]

অবশ্য ছাহাবায়ে কেরাম অনেক সময় জুতা, মোজা, টুপি, জামা ছাড়াও চলেছেন।[মুসলিম হা/২১৭৭, ১/৩০১ পৃঃ, ‘জানাযা’ অধ্যায়, ‘রোগীর সেবা’ অনুচ্ছেদ-৭, (ইফাবা হা/২০০৭)]

..................................................................................................................................................................

প্রশ্ন (১৯/৩৭৯) : ছালাতের সময় টুপি বা পাগড়ী পরা কি যরূরী? না পরলে সুন্নাতের খেলাফ হবে কি? জানিয়ে বাধিত করবেন।

উত্তর : যরূরী নয়। কিন্তু এটি রাসূল (ছাঃ)-এর অভ্যাসগত সুন্নাত (যাদুল মা‘আদ ১/১৩০)। আর তা না করাটা উক্ত সুন্নাতের বরখেলাফ। মস্তকাবরণ ব্যবহার করা উত্তম পোষাকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ বলেন, তোমরা ছালাতের সময় সুন্দর পোষাক পরিধান কর’ (আ‘রাফ ৭/৩১)। উল্লেখ্য যে, পাগড়ী পরা কিংবা টুপিসহ পাগড়ী পরার ফযীলত সম্পর্কে যে সব হাদীছ বর্ণিত হয়েছে সেগুলি সবই ‘যঈফ’ ও জাল (দ্রঃ ছালাতুর রাসূল (ছাঃ) ৪র্থ সংস্করণ পৃঃ ৪৭-৪৯)

Post a Comment

0 Comments