চুক্তি_করে_ওয়াজ_করা_ওয়াজের_জন্য_রাস্তায়_দাঁড়িয়ে_টাকা_তোলা_কতটুকু_জায়েজ_আবুবকর_মুহাম্মদ_যাকারিয়া

চুক্তি_করে_ওয়াজ_করা_ওয়াজের_জন্য_রাস্তায়_দাঁড়িয়ে_টাকা_তোলা_কতটুকু_জায়েজ_আবুবকর_মুহাম্মদ_যাকারিয়া
__________________________________________________________________________

ওয়াজ করার জন্য চুক্তি করে টাকা নেওয়া অথবা টাকা রোজগারের উদ্দেশ্যে ওয়াজ করা নাজায়েজ।

কোরআনে কারিমে আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তারা সেই লোক যাদেরকে আল্লাহতায়ালা পথ প্রদর্শন করেছেন।

এব, আপনি তাদের পথ অনুসরণ করুন। আপনি বলে দিন, আমি তোমাদের কাছে এর জন্য কোনো পারিশ্রমিক চাই না। এটা তো সারা বিশ্বের জন্য উপদেশবাণী। ’

সূরা আনআম: ৯০

বস্তুত মানুষকে ওয়াজ-নসিহত করা মানুষকে হেদায়েত বাণী শোনানোর অন্তর্ভুক্ত। এটা মানুষকে হেদায়েতের আকর কোরআনে কারিম তেলাওয়াত শোনানোর ন্যায়; যা মানুষের হেদায়েতের ওসিলা হবে। আর হাদিস শরিফে মানুষের থেকে বিনিময় লাভের উদ্দেশ্যে তাদেরকে কোরআন শোনানোর ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

 এ সম্পর্কে হাদিসে শরিফে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুর রহমান ইবনে শিবল (রা.) হতে বর্ণিত, হজরত রাসূলুল্লাহ(সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমরা কোরআন পড়ো এবং তার ওপর আমল করো। আর তাতে সীমালংঘন করো না, তার ব্যাপারে শৈথিল্য করো না, তার বিনিময় খেয়ো না এবং তাকে নিয়ে রিয়া করো না। ’

[-মুসনাদে আহমাদ: ১৫৫৬৮, সুনানে বায়হাকি: ২৬২৪, মুজামে তাবরানি আওসাত: ২৫৭৪]

তেমনি অপর হাদিসে এ বিষয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলা হয়েছে, হজরত ইমরান ইবনে হুসাইন (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি জনৈক পাঠকারীর নিকট দিয়ে অতিক্রম করলেন- যে কোরআন পড়ছিলো। অতঃপর সে (মানুষের নিকট) চাইলো। তখন তিনি ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পড়লেন। অতঃপর তাকে বললেন, আমি হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি কোরআন পড়ে, তার উচিত আল্লাহর কাছে তার বিনিময় চাওয়া। বস্তুত এমন কিছু দল আসবে যারা কোরআন পড়বে; যার বিনিময় মানুষের নিকট চাবে (তাদের একাজ অবাঞ্ছিত)। ’

জামে তিরমিজি: ২৯১৭, মুসনাদে আহমাদ: ১৯৯৫৮

অপর হাদিসে এরূপ লোকদেরকে কিছু না দিতে নির্দেশনা দিয়ে বলা হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘অচিরেই মানুষের ওপর এমন কাল আসবে; যে সময় কোরআন শোনানোর বিনিময় চাওয়া হবে। সুতরাং যখন তোমাদের কাছে তারা চাইবে, তখন তোমরা তাদেরকে দেবে না। ’

–আত তাওজিহ লি-শরহিল জামিইস সহিহ: ১৭৪ পৃ.

ইবনু ’আব্বাস থেকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সূত্রে এ ব্যাপারে উল্লেখ আছে।

৫৭৩৬. আবূ সা’ঈদ খুদরী (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাহাবীদের কতক সাহাবী আরবের এক গোত্রের নিকট আসলেন। গোত্রের লোকেরা তাদের কোন আতিথেয়তা করল না। তাঁরা সেখানে থাকতেই হঠাৎ সেই গোত্রের নেতাকে সর্প দংশন করল। তখন তারা এসে বললঃ আপনাদের কাছে কি কোন ঔষধ আছে কিংবা আপনাদের মধ্যে ঝাড়-ফুঁককারী লোক আছেন কি? তাঁরা উত্তর দিলেনঃ হাঁ। তবে তোমরা আমাদের কোন আতিথেয়তা করনি। কাজেই আমাদের জন্য কোন পারিশ্রমিক নির্দিষ্ট না করা পর্যন্ত আমরা তা করব না। ফলে তারা তাদের জন্য এক পাল বক্রী পারিশ্রমিক দিতে রাযী হল।

তখন একজন সাহাবী উম্মুল কুরআন (সূরা আল-ফাতিহা) পড়তে লাগলেন এবং মুখে থুথু জমা করে সে ব্যক্তির গায়ে ছিটিয়ে দিলেন। ফলে সে রোগমুক্ত হল। এরপর তাঁরা বকরীগুলো নিয়ে এসে বলল, আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করার পূর্বে এটি স্পর্শ করব না। এরপর তাঁরা এ বিষয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জিজ্ঞেস করলেন। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শুনে হেসে দিলেন এবং বললেনঃ তোমরা কীভাবে জানলে যে, এটি রোগ সারায়? ঠিক আছে বকরীগুলো নিয়ে যাও এবং তাতে আমার জন্যও এক ভাগ রেখে দিও। 

[২২৭৬] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১৬, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২১২)

৫৭৩৫. ইবরাহীম ইবনু মূসা (রহঃ) ... ’আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে রোগে ওফাত পান সেই রোগের সময়ে তিনি নিজ দেহে ’মু’আব্বিযাত’ পড়ে ফুঁক দিতেন। অতঃপর যখন রোগের তীব্রতা বেড়ে গেল, তখন আমি সেগুলো পড়ে ফুঁক দিতাম। আর আমি তাঁর নিজের হাত তাঁর দেহের উপর বুলিয়ে দিতাম। কেননা, তাঁর হাতে বারাকাত ছিল। রাবী বলেনঃ আমি যুহরীকে জিজ্ঞেস করলাম, তিনি কীভাবে ফুঁক দিতেন? তিনি বললেনঃ তিনি তাঁর দু’ হাতের উপর ফুঁক দিতেন, অতঃপর সেই দু’ হাত দিয়ে আপন মুখমন্ডল বুলিয়ে নিতেন। 

[৪৪৩৯] (আধুনিক প্রকাশনী- ৫৩১৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫২১১)

Post a Comment

0 Comments