বাঁম হাতটিকে পিঠের পিছনে রেখে হাতের চেটোতে ভর দিয়ে বসা

বাম হাতের তালুতে ভর দিয়ে বসা বাম হাতের তালুতে ভর দিয়ে বসা

 وَعَنْ الشَّريدِ بنِ سُوَيْدٍ رضي الله عنه، قَالَ: مَرَّ بِي رَسُولُ اللهِ صلى الله عليه وسلم صلى الله عليه وسلم وَأَنَا جَالِسٌ هَكَذَا، وَقَدْ وَضَعْتُ يَدِيَ اليُسْرَى خَلْفَ ظَهْرِي، وَاتَّكَأتُ عَلَى أَليَةِ يَدِي، فَقَالَ: « أَتَقْعُدُ قِعْدَةَ المَغْضُوبِ عَلَيْهِمْ ؟! » رواه أَبُو داود بإسنادٍ صحيح

শারীদ ইবনে সুয়াইদ রাদিয়াল্লাহুআনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ’রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একবার) আমার নিকট দিয়ে অতিক্রম করছিলেন। আর আমি এভাবে অর্থাৎ বাঁম হাতটিকে পিঠের পিছনে রেখে হাতের চেটোতে ভর দিয়ে বসেছিলাম। তা দেখে তিনি বললেন, ’’তুমি কি অভিশপ্ত (ইয়াহুদী)দের বসার মত বসছ?’’ [ রিয়াযুস স্বা-লিহীন (রিয়াদুস সালেহীন) তাওহীদ পাবলিকেশন নাম্বারঃ ৮২৮, আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ৮২৪[আবূ দাউদ: ৪৮৪৮, আহমাদ: ১৮৯৬০, বায়হাক্বী](সানাদ সহীহ )

চায় নামাযে হোক বা নামাযের বাহিরে হোক। এখানে অভিশপ্ত দ্বারা উদ্দেশ্য হল,ইহুদি।

বাম হাতের তালুতে ভর দিয়ে বসার ব্যাপারে পূর্ববর্তী আলেমদের অভিমত
🔵আশ-শরীদ ইবন আস-সুওয়াইদ থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যখন আমি এভাবে বসে ছিলামঃ আমি আমার বাম হাত আমার পিছনে রেখেছিলাম এবং আমার হাতের তালুর উপর ভর দিয়ে আমি হেলান দিয়েছিলাম। তিনি(সাঃ) বললেন, তুমি কি তাদের মত বসে আছ যাদের উপর আল্লাহ রাগান্বিত?
[আহমাদ(১৮৯৬০), আবূ দাঊদ(৪৮৪৮), এবং সহিহ ইবনে হিব্বানঃ ৫৬৭৪]

ইমাম হাকিম এটিকে সহীহ হিসাবে লিপিবদ্ধ করেছেন এবং ইমাম যাহাবী তার সাথে একমত ছিলেন। ইমাম নাওয়াবী এটিকে রিয়াযুস স্বা-লিহীনে সহীহ হিসাবে আখ্যা দিয়েছেন; ইবনে মুফলিহ আল-আদাব আশ-শরিয়্যাহতে সহীহ হিসেবে উল্ল্যেখ করেছেন; এবং ইমাম আল-আলবানী করেছেন, আবুদাউদে]

🔵ইমাম আত-তিবী(রহিমাহুল্লাহ) বলেছেন: যাদের উপর আল্লাহ রাগান্বিতএর দ্বারা ইহুদীদের বুঝানো হয়েছে। এই হাদিস থেকে আমরা দুটি জিনিস শিখতে পারি। প্রথমতঃ বসার এই পদ্ধতিটি এমন একটি জিনিস যা মহান আল্লাহ ঘৃণা করেন এবং দ্বিতীয়তঃ মুসলমান এমন এক জাতি যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, তাই মুসলিমদের উচিত যাদের প্রতি আল্লাহ রাগান্বিত এবং যাদেরকে তিনি অভিশপ্ত করেছেন তাদের সাদৃশ্য এড়িয়ে চলা।

🔵আল-ক্বারী (রহিমাহুল্লাহ) আত-তিবীর বক্তব্যকে এই বলে মন্তব্য করেছেন যে, এখানে "যাদের উপর আল্লাহ রাগান্বিত" বলতে কি বোঝানো হয়েছে তা আরও ব্যাখ্যা বিশ্লেষনের বিষয়; অতঃপর ক্বারী(রাহি.) বলেন যেটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি তা হল "যাদের উপর আল্লাহ রাগান্বিত" বলতে যা বোঝানো হয়েছে তা আরও আ'ম ও সাধারণ যেমন জনসাধারণের মধ্যে অহংকারী ব্যাক্তি কিংবা অহংকারী কাফের যারা আত্ম-প্রশংসা ও অহংকার প্রদর্শন করে চলাফেরা করে ইত্যাদি।

শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া(রহঃ) বলেনঃ

ইবনুউমর(রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, তিনি(সাঃ) এক ব্যক্তিকে তাঁর বাম হাতের উপর হেলান দিয়ে বসতে দেখলেন, যখন তিনি সালাতে বসেছিলেন। তিনি(সাঃ) তাকে বললেনঃ এভাবে বসো না, যারা ধ্বংসপ্রাপ্ত তারা এভাবেই বসে। অন্য একটি হাদীসে বলা হয়েছে: আল্লাহ যাদের প্রতি রাগান্বিত তারা এভাবে বসে। আরেকটি বর্ণনা অনুসারে, আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) নামাজের সময় বাম হাতের উপর হেলান দিয়ে বসতে নিষেধ করেছেন।

এর সবগুলোই আবূ দাঊদ বর্ণনা করেছেন।

এই হাদিস ইঙ্গিত করে যে - এইভাবে বসার অনুমতি নেই, কারণ ধ্বংসপ্রাপ্তরা(ইহুদী) এভাবে বসে থাকে। এটি বলার আরও একটি কারণ হলো এই উম্মাহ যেনো ইহুদী-নাসারাদের সাদৃশ্য অবলম্বন না করে। [ ইকতিদা আস-সীরাত আল-মুস্তাকীম (পৃ. ৬৫)]

🔵শাইখ ইবনে বায (রহঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: কতিপয় আলেম বলেছেন, বাম হাতের গোড়ালি/তালুর উপর ভর দিয়ে বিশ্রাম করা পুরুষের জন্য জায়েয নয়। শাইখুল ইসলাম বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) এক ব্যক্তির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যিনি নামাযরত অবস্থায় তাঁর বাম হাতের উপর হেলান দিয়েছিলেন এবং তিনি (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাকে বললেনঃএটি আল্লাহ যাদের উপর রাগান্বিত তাদের বসার পদ্ধতি।" এটা কি শুধুমাত্র এই কাজের জন্য প্রযোজ্যবাম হাতের দিকে ঝুঁকে পড়ানামাযের সময়, নাকি সব পরিস্থিতিতেই প্রযোজ্য?

শাইখ উত্তরে বললেনহ্যাঁ, এমন একটি হাদিস আছে যাতে নবী (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) এভাবে বসতে না করেছেন। যেটা দেখা যাচ্ছে তা হল যে এটি সর্বাবস্থায় প্রযোজ্য, যদি কেউ বাম হাতের দিকে ঝুঁকে থাকে এবং হাতের গোড়ালি/তালুতে ঝুঁকে থাকে। হাদিসের আপাত অর্থ হলো, এটা জায়েজ নয়। 

[ মাজমুফাতাওয়া ইবনে বায (২৫/১৬১) ]

যদি কোন ব্যক্তি পিছনে ঝুঁকে পড়তে চায়, তবে তার ডান হাতের গোড়ালিতে ঝুঁকে থাকা উচিত, তার বাম দিকে নয়, অথবা তার উভয় হাত একসাথে ঝুঁকে থাকা উচিত।
🔵 শাইখ ইবনে উসাইমিন(রহ.) বলেন:

বসার এই পদ্ধতিকে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়া সাল্লাম) বর্ণনা করেছেন তাদের বসার পদ্ধতি হিসাবে যাদের উপর আল্লাহ রাগান্বিত। উভয় হাত পিঠের পিছনে রাখা এবং উভয়ের উপর হেলান দিলে তাতে দোষের কিছু নেই, বা যদি সে তার ডান হাতের দিকে ঝুঁকে থাকে তাতে দোষের কিছু নেই। 

[ শারহু রিয়াযুস স্বা-লিহীন (পৃ. ৯৩০) ]

তিনি আরো বলেন:
হাদীসের অর্থ স্পষ্ট; এর অর্থ হল একজন ব্যক্তি তার পিছনে বাম হাতের তালুর উপর ভর দিয়ে বসবেনা ।
শাইখকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল: এইভাবে বসার উদ্দেশ্য যদি বিশ্রাম নেওয়া হয় এবং ইহুদীদের অনুকরণ না করা হয়, তাহলে কি তার গুনাহ হবে?

উত্তরে তিনি বললেনঃ যদি তা তার নিয়ত হয়, তাহলে সে যেন ডান হাতটি দিয়ে দেয়, তাহলে নিষেধ আর প্রযোজ্য হবে না।

[ ফাতাওয়া নূর আলা আয-যার্ব (১১১/১৯) ]
🔵কোনো কোনো আলেম বসার এই পদ্ধতিকে মাকরূহ বলেছেন।

ইবনে মুফলিহ (রহ.) বলেন: কারো জন্য বাম হাতের দিকে ঝুঁকে পিঠের পিছনে রাখা মাকরূহ। [আল-আদাব আশ-শরিয়্যাহ(৩/২৮৮) ] গিযা আল-আলবাব(৬/৭৬) গ্রন্থে আস-সাফারিনীও অনুরূপ কিছু বলেছেন।

🔵শায়খ আব্দুল-মুহসিন আল-আব্বাদ বলেছেনহতে পারে এখানে মাকরূহ বলতে যা বোঝানো হয়েছে তা হারাম, অথবা অপছন্দের অর্থ হতে পারে। কিন্তু এই হাদিসে যে বসার পদ্ধতিকে আল্লাহ রাগান্বিত তাদের বসার পদ্ধতি হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে তা হারাম হওয়ার ইঙ্গিত দেয়।

[ শারহু সুনান আবূ দাঊদ (২৮/৪৯) ]
◉◈•────•♥•────•◈◉

সার-সংক্ষেপ: ইহুদী ও অন্যান্য অহংকারী লোক যাদের উপর আল্লাহ রাগান্বিত তাদের অনুকরণ করা উদ্দেশ্য হোক বা না হোক নামাযে এভাবে বসার অনুমতি নেই এমন কি বিশ্রাম এরজন্যেও এমনটি করার অনুমতি নেই। এই বসার ধরণটিকে আল্লাহ রাগান্বিত এবং শাস্তিপ্রাপ্তদের বসার পদ্ধতি হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে তা থেকে বোঝা যায় যে এটি হারাম হওয়ার দৃষ্টিভঙ্গি –

মাকরূহ হওয়ার চেয়ে শক্তিশালী।
আল্লাহু আ'লাম
حكم-الجلوس-متكىا-على-الية-يده-اليسرى-خلف-ظهره
অনুবাদকঃ জয়নাল বিন তোফাজ্জল 

এডিটর rasikulislam

Post a Comment

0 Comments