আলেম
কাকে বলে ?
আলেম শব্দের অর্থ জ্ঞানী। শরিয়তের পরিভাষায় আলেম বলা হয়, যিনি
দ্বীন ও শরিয়তের গভীর জ্ঞান রাখেন ও সেই জ্ঞান অনুযায়ী আমল করেন। পাশাপাশি
সুন্নতের অনুসরণে নিজের জীবনকে পরিচালিত করেন এবং আল্লাহর ভয়ে সদা সন্ত্রস্ত
থাকেন।
দ্বীনি ইলম শিক্ষার
জন্য জরুরি একটি শর্ত হচ্ছে, সনদ থাকা। অর্থাৎ কোনো আলেমের কাছ থেকে
ইলম শিক্ষা করা।
বইপুস্তক দ্বীন শিক্ষার মাধ্যম হলেও মূলত দ্বীনি ইলম
পাওয়া যায় উস্তাদের কাছ থেকেই। এভাবে ইলম শিক্ষা করা সরাসরি রাসুল(সা.) এর কাছ
থেকে শিক্ষা করার মতোই। কারণ এই সনদ রাসুল(সা.) পর্যন্ত পৌঁছে।
সুতরাং যে কোনো
জ্ঞানীকে আলেম বলা যাবে না। আবার কেউ যদি নিজে নিজে ব্যাপক ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন
করেন, তবুও তাকে আলেম বলা যাবে না।
দ্বীনি
ইলম অর্জনের জন্য সনদ শর্ত
বিখ্যাত তাবেয়ি
মুহাম্মাদ বিন সিরিন (রহ.) বলেন, ‘নিশ্চয় এই ইলম হলো দ্বীন। সুতরাং তোমরা
ভালো করে যাচাই করে নাও কার কাছ থেকে তোমরা তোমাদের দ্বীন গ্রহণ করছো!’ (মুসলিম: ২৬)
প্রসিদ্ধ তাবেয়ি
আবদুল্লাহ ইবনুল মুবারক(রহ.) বলেন, ‘সনদ হলো দ্বীনের অংশ। সনদ
না থাকলে যার যা ইচ্ছা বলত!’ (মুসলিম: ৩২)
এ কারণেই প্রতিটি
হাদিসের মান অতিরিক্ত সতর্কতার সঙ্গে যাচাই করা হয়। প্রত্যেক রাবি (বর্ণনাকারী)
সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হয়। হাদিসশাস্ত্র তৈরি হয়েছে শুধু এই
উদ্দেশ্যেই।
তাই সনদ
ছাড়া কোনো হাদিস কিংবা দ্বীনি কোনো বিষয়ই গ্রহণযোগ্য নয়। দ্বীনের প্রতিটি বিষয়
গ্রহণ করতে হবে পূর্ণাঙ্গ সতর্কতার সঙ্গে। ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে।
অনেক সময়
দেখা যায়,
সাধারণ মানুষ বাংলা-ইংরেজিতে কিছু ধর্মীয় বই পড়েই নিজেকে ‘বিশাল’ আলেম ভাবতে থাকেন। এমন লোকদের কিছু বোঝালেও
বুঝতে চান না। সঠিকভাবে ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন না করার কারণে, এদের
অনেকের মধ্যে মারাত্মক বিভ্রান্তি থাকে। আল্লাহ রক্ষা করুন।
আ’লেম কাকে বলে?
আলহামদু লিল্লাহ, ওয়াস
স্বালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা বাদঃ
আসলে ‘আ’লেম’ [দ্বীনের জ্ঞানী] ‘ফকীহ’
[দ্বীনের পন্ডিত] এবং ‘মুজ্তাহিদ’ [দ্বীনের গবেষক] এমন কয়েকটি উপাধি রয়েছে যে সবের অর্থ প্রায় এক। আর তা
হচ্ছে, যে শারয়ী বিধান জানার উদ্দেশ্যে চেষ্টা ও গবেষণা
চালায় এবং শরীয়ার দলীল-প্রমাণ থেকে শারয়ী বিধান উদ্ঘাটন করতে সক্ষম হয়। [দেখুন,শারহুল
কাওকাবিল্ মুনীর, ৪/৪৫৮- আল্ ইহকাম, আমেদী,
৪/১৬২-১৬৪]
অনেকে মনে করেন যে, সেই
গবেষণা এত গভীর হতে হবে যে, গবেষক সেই বিষয়ে আর অধিক গবেষণায়
অপারগতা বোধ করবে। [ইহকাম, আমেদী, ৪/১৬২]
গবেষণার এই আসনে
পৌঁছানোর জন্য গবেষকের মধ্যে যে সব শর্ত থাকা জরূরী, তার ব্যখ্যা একাধিক
উসূলে ফিকহের গ্রন্থাদিতে বর্ণিত হয়েছে। আমি নিম্নে সেই শর্ত সমূহ তুলে ধরব,
ইনশাআল্লাহ।
১- সে
যেন কিতাব ও সুন্নাহর দলীল সমূহ সম্পর্কে জ্ঞাত হয়। অনেকের মতে বিধি-বিধান
সম্পর্কীয় কুরআনের আয়াতগুলি যেন তার জানা থাকে, যার
সংখ্যা প্রায় পাঁচ শত। অনুরূপ সুন্নতে বর্ণিত আহকামের হাদীস সমূহ যেন তার জানা
থাকে। আর এর সঠিক সংখ্যা কত? তা নিয়ে উলামাগণের মতভেদ রয়েছে।
তবে প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থ সমূহে বর্ণিত হাদীসগুলি সম্পর্কে সে যেন ভাল জ্ঞান
রাখে। যেমন, বুখারী, মুসলিম, সুনান আবু দাঊদ, সুনান
তিরমিযী, সুনান নাসাঈ, সুনান ইবনু
মাজাহ সহ অন্যান্য হাদীস গ্রন্থ।
এই
ক্ষেত্রে তাকে আয়াতগুলির শুধু হাফেজ হলে হবে না বরং সেই আয়াত সমূহের তফসীর জানতে
হবে,
তেমন শুধু হাদীস সমূহ জানলে হবে না; বরং সেই
সকল হাদীসের, সনদ (সূত্র) ও মাতন এবং সহীহ-যয়ীফ সম্পর্কে
জ্ঞান থাকতে হবে।
২- সে
যেন আরবী ভাষায় পারদর্শী হয়। আরবী শব্দের উৎস, গঠন,
অর্থ, অর্থাৎ নাহু, সার্ফ
ও আরবী অলংকার শাস্ত্রের জ্ঞানী হয়। কারণ শরীয়ার বিধান সমূহ আরবী ভাষায় লিপিবদ্ধ।
৩- সে
যেন
‘ইজমা’র মাস্আলা-মাসায়েল
সম্বন্ধে জ্ঞাত হয়। অর্থাৎ (উম্মতের গবেষক উলামায়ে কেরামের ঐক্যমত সম্পর্কে অবগত
হয়)।
৪- সে
যেন উসূলে ফিকহ (ফিকহের মূলনীতি) সম্পর্কে অবগত হয়। কারণ এই বিষয় জানাই হচ্ছে
গবেষণার নীতি-নিয়ম জানা।
৫- সে
যেন নাসেখ (রহিতকারী দলীল) এবং মানসূখ (রহিত দলীল)সম্পর্কে অবগত থাকে।
[দেখুন,ইরশাদুল
ফহূল, শাওকানী, পৃঃ ২০৬-২০৮/আল উসূল
মিন ইলমিল উসূল, ইবনে উসাইমীন, পৃঃ
৮৫-৮৬/ শারহুল কাওকাবিল মুনীর, ইবনুন নাজ্জার, ৪/৪৫৯-৪৬৬]
এছাড়াও
অনেকে আরো শর্তের বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু উপরোল্লেখিত শর্ত সমূহই মূল শর্ত।
উল্লেখ্য যে, আলেম,
ফকীহ, মুজ্তাহিদ ও মুহাদ্দিস শারয়ী পরিভাষা,
যার বিশেষ অর্থ রয়েছে এবং এর জন্যে বিশেষ শর্তও রয়েছে। তাই এসবের
প্রয়োগের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করা জরূরী। কারণ কেউ দাঈ হতে পারে, কেউ ভাল বক্তা হতে পারে, কেউ মাদ্রাসার শিক্ষক হতে
পারে কিংবা মাদ্রসার ডিগ্রীধারী হতে পারে কিন্তু আলেম বা মুজ্তাহিদের স্তরে উন্নিত
নাও হতে পারে।
উপরোক্ত
সংক্ষিপ্ত আলোচনার মান-দন্ডে এটা স্পষ্ট যে, বর্তমান যুগে দেশে বর্ণিত
শর্তানুযায়ী আলেমের সংখ্যা খুবই নগন্য। আর মাদ্রাসায় ফারেগ হলেই তাকে আলেম বলা বা
সে নিজেকে আলেম বলে প্রচার করা একটি ভুল প্রথা।
পরিশেষে দুআ
করি, আল্লাহ যেন আমাদের জ্ঞান বাড়িয়ে দেন ও সেই অনুযায়ী আমল করার তাওফীক দেন।
আমীন।
আব্দুর রাকীব
(মাদানী)
Editor rasikulindia
0 Comments