১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বেহায়া
দিবস/ভ্যালেন্টাইনস ডে :
বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নাকি বিশ্ব বেহায়া দিবস.
Pdf- https://www.facebook.com/groups/SLUHL/permalink/1864999550546044
ভালবাসার পরিচয়:
‘ভালবাসা’ এক পবিত্র জিনিস যা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন এর পক্ষ
হতে আমরা পেয়েছি। ভালবাসা’ শব্দটি ইতিবাচক। আল্লাহ তা‘আলা সকল ইতিবাচক
কর্ম-সম্পাদনকারীকে ভালবাসেন।
২:১৯৫ وَ
اَنۡفِقُوۡا فِیۡ سَبِیۡلِ اللّٰهِ وَ لَا تُلۡقُوۡا بِاَیۡدِیۡکُمۡ اِلَی
التَّهۡلُکَۃِ ۚۖۛ وَ اَحۡسِنُوۡا ۚۛ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُحۡسِنِیۡنَ ﴿۱۹۵﴾
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘এবং স্বহস্তে নিজেদেরকে ধ্বংসের মুখে
ঠেলে দিয়ো না। তোমরা সৎকর্ম কর, নিশ্চয় আল্লাহ্ মুহসিনদের ভালবাসেন।’’ [সূরা আল-বাকারা:১৯৫]।
ভুলের পর ক্ষমা প্রার্থনা করা এবং পবিত্রতা অবলম্বন করা এ
দুটিই ইতিবাচক কর্ম। তাই আল্লাহ তাওবাকারী ও পবিত্রতা অবলম্বনকারীদেরকেও ভালবাসেন।
২:২২২ وَ یَسۡـَٔلُوۡنَکَ عَنِ الۡمَحِیۡضِ ؕ قُلۡ
هُوَ اَذًی ۙ فَاعۡتَزِلُوا النِّسَآءَ فِی الۡمَحِیۡضِ ۙ وَ لَا تَقۡرَبُوۡهُنَّ
حَتّٰی یَطۡهُرۡنَ ۚ فَاِذَا تَطَهَّرۡنَ فَاۡتُوۡهُنَّ مِنۡ حَیۡثُ اَمَرَکُمُ
اللّٰهُ ؕ اِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ التَّوَّابِیۡنَ وَ یُحِبُّ الۡمُتَطَهِّرِیۡنَ ﴿۲۲۲﴾
আল্লাহ বলেন: ‘‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তাওবাকারী ও পবিত্রতা
অবলম্বনকারীদেরকে ভালবাসেন।’’[সূরা আল-বাকারা:২২২]।
🔶তাকওয়া সকল কল্যাণের মূল। তাই আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে খুবই
ভালবাসেন। তিনি বলেন: ৩:৭৬ بَلٰی مَنۡ اَوۡفٰی بِعَهۡدِهٖ وَ اتَّقٰی
فَاِنَّ اللّٰهَ یُحِبُّ الۡمُتَّقِیۡنَ ﴿۷۶﴾
‘‘আর নিশ্চয় আল্লাহ মুত্তাকীদেরকে ভালবাসেন।’’ [সূরা আল ইমরান:৭৬]
পবিত্র এ ভালবাসার সাথে অপবিত্র ও নেতিবাচক কোন কিছুর
সংমিশ্রণ হলে তা আর ভালবাসা থাকে না, পবিত্রও থাকে না; বরং তা হয়ে যায় ছলনা,শঠতা ও স্বার্থপরতা। ভালবাসা, হৃদয়ে লুকিয়ে থাকা এক অদৃশ্য সুতোর টান। কোন দিন কাউকে না
দেখেও যে ভালবাসা হয়; এবং ভালবাসার গভীর টানে রূহের গতির এক দিনের দূরত্ব
পেরিয়েও যে দুই মুমিনের সাক্ষাত হতে পারে তা ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমার
এক বর্ণনা থেকে আমরা পাই। তিনি বলেন: ‘‘কত নি‘আমতের না-শুকরি করা হয়,
কত আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করা হয়,
কিন্তু অন্তরসমূহের ঘনিষ্ঠতার মত (শক্তিশালী) কোন কিছু আমি
কখনো দেখি নি।’’ [ইমাম বুখারী, আল-আদাবুল মুফরাদ :হাদীস নং২৬২]
🔶 ভালবাসার মানদণ্ড:
🔶
কাউকে ভালবাসা এবং কারো সাথে শত্রুতা রাখার মানদণ্ড হলো
একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি। শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসতে
হবে এবং শত্রুতাও যদি কারো সাথে রাখতে হয়, তাও আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই। এটাই শ্রেষ্ঠ কর্মপন্থা।
রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেন: ‘‘নিশ্চয় আল্লাহর নিকট শ্রেষ্ঠ আমল
হলো আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা এবং শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির
জন্যই কারো সাথে শত্রুতা রাখা।’’ [আহমদ, মুসনাদুল আনসার,
হাদিস নং২০৩৪১]
🔶 ঈমানের পরিচয় দিতে হলে, কাউকে ভালবাসবার আগে আল্লাহর জন্য হৃদয়ের গভীরে সুদৃঢ়
ভালবাসা রাখতে হবে। কিছু মানুষ এর ব্যতিক্রম করে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘আর
মানুষের মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহ্ ছাড়া অন্যকে আল্লাহ্র সমকক্ষরূপে গ্রহণ করে এবং
আল্লাহকে ভালবাসার মত তাদেরকে ভালবাসে; কিন্তু যারা ঈমান এনেছে আল্লাহ্র প্রতি ভালবাসায় তারা
সুদৃঢ়।’’
২:১৬৫ وَ مِنَ النَّاسِ مَنۡ یَّتَّخِذُ مِنۡ دُوۡنِ
اللّٰهِ اَنۡدَادًا یُّحِبُّوۡنَهُمۡ کَحُبِّ اللّٰهِ ؕ وَ الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡۤا
اَشَدُّ حُبًّا لِّلّٰهِ ؕوَ لَوۡ یَرَی الَّذِیۡنَ ظَلَمُوۡۤا اِذۡ یَرَوۡنَ
الۡعَذَابَ ۙ اَنَّ الۡقُوَّۃَ لِلّٰهِ جَمِیۡعًا ۙ وَّ اَنَّ اللّٰهَ شَدِیۡدُ
الۡعَذَابِ ﴿۱۶۵﴾
[সূরা আল-বাকারা:১৬৫]
🔶 শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসতে হবে,
নতুবা কোন ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পাবে না। রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেন: ‘‘তিনটি গুণ যার মধ্যে
থাকে সে ঈমানের স্বাদ পায়।
১.আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে প্রিয়
হওয়া। ২. শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই কাউকে ভালবাসা। ৩. কুফুরীতে
ফিরে যাওয়াকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দ করা।’’ [বুখারী, কিতাবুল ঈমান, হাদিস নং:১৫]
আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে ভালবাসার ফযীলত:
আল্লাহ রাব্বুল ইয্যতের মহত্ত্বের নিমিত্তে যারা পরস্পর
ভালবাসার সম্পর্ক স্থাপন করে, কিয়ামতের দিন তাদেরকে তিনি তাঁর রহমতের ছায়ায় জায়গা
দেবেন। রাসূলুল্লাহ(ﷺ) বলেন: ‘‘কিয়ামতের দিন আল্লাহ
বলবেন,
আমার মহত্ত্বের নিমিত্তে পরস্পর ভালবাসার সম্পর্ক
স্থাপনকারীরা কোথায় ? আজ আমি তাদেরকে আমার বিশেষ ছায়ায় ছায়া দান করব। আজ এমন
দিন,
যে দিন আমার ছায়া ব্যতীত অন্য কোন ছায়া নেই।’’ [মুসলিম, কিতাবুল বিররি ওয়াস-সিলাহ, হাদিস নং৪৬৫৫]
রাসূলুল্লাহ(ﷺ) আরও বলেন: ‘‘নিশ্চয় আল্লাহর
বান্দাদের মধ্যে এমন কিছু মানুষ আছে যারা নবীও নয় শহীদও নয়;
কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে তাঁদের সম্মানজনক
অবস্থান দেখে নবী এবং শহীদগণও ঈর্ষান্বিত হবে। সাহাবিগণ বললেন,
হে আল্লাহর রাসূল ! আমাদেরকে বলুন,
তারা কারা ? তিনি বলেন, তারা ঐ সকল লোক, যারা শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই একে অপরকে
ভালবাসে। অথচ তাদের মধ্যে কোন রক্ত সম্পর্কও নেই, এবং কোন অর্থনৈতিক লেন-দেনও নেই। আল্লাহর শপথ! নিশ্চয়
তাঁদের চেহারা হবে নূরানি এবং তারা নূরের মধ্যে থাকবে। যে দিন মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত
থাকবে,সে দিন তাঁদের কোন ভয় থাকবে না। এবং যে দিন মানুষ
দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকবে, সে দিন তাঁদের কোন চিন্তা থাকবে না..।’’ [সুনানু আবী দাঊদ, কিতাবুল বুয়ূ‘, হাদিস নং ৩০৬০]
পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা বৃদ্ধি করার উপায়:
ইসলাম বলে, পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য স্থাপিত না হলে
পরিপূর্ণ ঈমানদার হওয়া যায় না, শান্তি ও নিরাপত্তা লাভ করা যায় না,
এমনকি জান্নাতও লাভ করা যাবে না।
তাই রাসূলুল্লাহ(ﷺ) মুমিনদের পরস্পরের মধ্যে ভালবাসা
ও সৌহার্দ্য বৃদ্ধির জন্য একটি চমৎকার পন্থা বাতলে দিয়েছেন। তিনি বলেন: ‘‘তোমরা
বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত ঈমানদার না হবে,
তোমরা ঈমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ পর্যন্ত না পরস্পরের
মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য স্থাপন করবে। আমি কি তোমাদেরকে এমন বিষয়ের কথা বলব না,
যা করলে তোমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠিত হবে ?
সাহাবীগণ বললেন, নিশ্চয় ইয়া রাসূলাল্লাহ ! (তিনি বললেন) তোমাদের মধ্যে বহুল
পরিমাণে সালামের প্রচলন কর।’’
[মুসলিম, কিতাবুল ঈমান,
হাদিস নং ৮১]
🔶 ১৪ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বেহায়া
দিবস/ভ্যালেন্টাইনস ডে: বিশ্ব ভালোবাসা দিবস নাকি বিশ্ব বেহায়া দিবস.
কোনো মুসলমানের জন্য কাফেরদের কোনো উৎসব পালন করা জায়েজ
নয়,
আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেফাজত করুন ও হেদায়েত করুন। আমীন
‘ভালবাসা দিবস’কে কেন্দ্র করে সারা পৃথিবী উন্মাতাল হয়ে উঠে।
বাজার ছেয়ে যায় বাহারী উপহারে। পার্ক ও হোটেল- রেস্তোরাঁগুলো সাজানো হয় নতুন সাজে।
পৃথিবীর প্রায় সব বড় শহরেই ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে’-কে ঘিরে সাজ সাজ রব পড়ে যায়।
পশ্চিমা দেশগুলোর পাশাপাশি প্রাচ্যের দেশগুলোতেও এখন ঐ অপসংস্কৃতির ঢেউ লেগেছে। হৈ
চৈ,
উন্মাদনা, ঝলমলে উপহার সামগ্রী আদান-প্রদান এবং প্রেমিক যুগলের
চোখেমুখে থাকে বিরাট উত্তেজনা। হিংসা-হানাহানির যুগে ভালবাসার এই দিনকে(?)
উদযাপন করতে প্রেমিক যুগল তাই উপেক্ষা করে সব চোখ রাঙানি।
বছরের এ দিনটিকে তারা বেছে নিয়েছে হৃদয়ের কথকতার কলি ফোটাতে।
🔶 এ দিবসের সর্বনিকৃষ্ট কাজ :
সবচেয়ে যে জঘন্য কাজ এ দিনে করা হয়,
তা হ’ল ১৪ ফেব্রুয়ারী মিলনাকাঙ্ক্ষী অসংখ্য যুগলের সবচেয়ে
বেশী সময় চুম্বনাবদ্ধ হয়ে থাকার প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হওয়া। আবার কোথাও কোথাও
চুম্বনাবদ্ধ হয়ে ৫ মিনিট অতিবাহিত করে ঐ দিনের অন্যান্য অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে
থাকে। নেশায় বুদ হওয়াও নতুন কোনো সংবাদ নয়।
তারা এত কাছাকাছি আসে যে, একে অপরের মধ্যে হারিয়ে যায়। শয়তান তাদের অন্য জগতে নিয়ে
যায়। নেশার মধ্যেও এ ঘটনা ঘটে আর নেশা ছাড়াও ঘটে থাকে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা
বান্দার কল্যাণের জন্য বলেন, وَلَا
تَقْرَبُوا
الزِّنَا
إِنَّهُ
كَانَ
فَاحِشَةً
وَسَاءَ
سَبِيلًا ‘আর ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয় এটা অশ্লীল কাজ এবং
মন্দ পথ’ (বনী ইসরাঈল,
১৭/৩২)। অথচ
আমরা একবারও খেয়াল করছি না, ভালোবাসার নামে আমরা এসব কী করছি?
কোথায় নিয়ে যাচ্ছি প্রিয়জনদের?
এ ভালোবাসার কী পরিণাম অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য?
২৪:১৯ اِنَّ
الَّذِیۡنَ یُحِبُّوۡنَ اَنۡ تَشِیۡعَ الۡفَاحِشَۃُ فِی الَّذِیۡنَ اٰمَنُوۡا
لَهُمۡ عَذَابٌ اَلِیۡمٌ ۙ فِی الدُّنۡیَا وَ الۡاٰخِرَۃِ ؕ وَ اللّٰهُ یَعۡلَمُ
وَ اَنۡتُمۡ لَا تَعۡلَمُوۡنَ ﴿۱۹﴾
নিশ্চয় যারা এটা পছন্দ করে যে,
মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ুক,
তাদের জন্য দুনিয়া ও আখেরাতে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক আযাব। আর
আল্লাহ জানেন এবং তোমরা জান না সূরাঃ আন-নূর - ২৪:১৯]
১৬:৯০ اِنَّ
اللّٰهَ یَاۡمُرُ بِالۡعَدۡلِ وَ الۡاِحۡسَانِ وَ اِیۡتَآیِٔ ذِی الۡقُرۡبٰی وَ
یَنۡهٰی عَنِ الۡفَحۡشَآءِ وَ الۡمُنۡکَرِ وَ الۡبَغۡیِ ۚ یَعِظُکُمۡ لَعَلَّکُمۡ
تَذَکَّرُوۡنَ ﴿۹۰﴾
নিশ্চয় আল্লাহ্ আদল (ন্যায়পরায়ণতা)(১),
ইহসান (সদাচরণ)(২), ও আত্মীয়-স্বজনকে দানের(৩) নির্দেশ দেন(৪) এবং তিনি
অশ্লীলতা,(৫) অসৎকাজ(৬) ও সীমালজ্ঞান(৭) থেকে নিষেধ করেন;
তিনি তোমাদেরকে উপদেশ দেন যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহণ কর। [
সূরাঃ আন-নাহাল- ১৬:৯০]
ওপরের তিনটি সৎকাজের মোকাবিলায় আল্লাহ তিনটি অসৎ কাজ করতে
নিষেধ করেন। অর্থাৎ আল্লাহ অশ্লীলতা, অসৎকর্ম ও সীমালঙ্ঘন করতে নিষেধ করেছেন। তন্মধ্যে প্রথমটি
হচ্ছে,
“ফাহশা”। যার অর্থ
অশ্লীলতা-নির্লজ্জতা। কথায় হোক বা কাজে। [ফাতহুল কাদীর] প্রকাশ্য মন্দকৰ্ম অথবা
কথাকে অশ্লীলতা বলা হয়, যাকে প্রত্যেকেই মন্দ মনে করে। সব রকমের অশালীন,
কদর্য ও নির্লজ্জ কাজ এর অন্তর্ভুক্ত। এমন প্রত্যেকটি খারাপ
কাজ যা স্বভাবতই কুৎসিত, নোংরা, ঘৃণ্য ও লজ্জাকর তাকেই বলা হয় অশ্লীল।
ভ্যালেন্টাইনস ডে হারাম কারণ এটি বেআইনি প্রেম প্রচার করে
এবং কারণ এটি কাফিরদের অনুকরণ করে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেনঃ যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের অনুকরণ করে সে তাদেরই একজন। (সুনানে আবি দাউদ 4031)
এ দিবস পালনকারীদের দেখে দেখে যারা দিবসটি উদযাপন করবে,
তাদের গোনাহও ঐ ব্যক্তির গোনাহ হিসাবে লেখা হবে।(সহিহ ইবনে খুযাইমা ২৪৭৭
🔶 বিশ্ব ভালবাসা দিবস কি:
এক নোংরা ও জঘন্য ইতিহাসের স্মৃতিচারণের নাম বিশ্ব ভালবাসা
দিবস। এ ইতিহাসটির বয়স সতের শত সাঁইত্রিশ বছর হলেও ‘বিশ্ব ভালবাসা দিবস’ নামে এর
চর্চা শুরু হয় সাম্প্রতিক কালেই। দুই শত সত্তর সালের চৌদ্দই ফেব্রুয়ারির কথা।
তখন রোমের সম্রাট ছিলেন ক্লডিয়াস। সে সময় ভ্যালেন্টাইন নামে একজন সাধু,
তরুণ প্রেমিকদেরকে গোপন পরিণয়-মন্ত্রে দীক্ষা দিত। এ
অপরাধে সম্রাট ক্লডিয়াস সাধু ভ্যালেন্টাইনের শিরশ্ছেদ করেন। তার এ ভ্যালেন্টাইন
নাম থেকেই এ দিনটির নাম করণ করা হয় ‘ভ্যালেন্টাইন ডে’ যা আজকের ‘বিশ্ব ভালবাসা
দিবস’।
🔶 খ্রিস্টধর্মে যেভাবে ভিন্ন ধর্মীয় উৎসবের
প্রবেশ ঘটে:
বিশ্বাসকে কঠিন করার পাশাপাশি তারা কর্মকে সহজ করার চেষ্টা
করেছেন,
যাতে বেশি মানুষ খ্রিস্টান হয়। এজন্য যুগেযুগে যে দেশে
গিয়েছেন। সেই দেশের বিষয়গুলোকে তারা ধর্মের ভেতরে ঢুকানোর চেষ্টা করেছেন। যেমন,
আপনারা জানেন, বড়দিন, ২৫ ডিসেম্বর, খ্রিস্টধর্মের সবচেয়ে বড় উৎসবকে ‘বড়দিন’ বলা হয়। কেন বলা হয়?
এটা যিশুখ্রিস্টের জন্মদিন হিসেবে বলা হয়।
🔶 প্রকৃত ভালোবাসা কোনটা?
তৃতীয় বিষয় হল, এই দিনে আমরা কোন ভালোবাসাকে প্রমোট করি?
ভালোবাসা তো অনেক রকমের আছে। মাকে ভালোবাসা,
বাবাকে ভালোবাসা, ছেলে-মেয়েকে ভালোবাসা, দেশকে ভালোবাসা, দরিদ্রদেরকে ভালোবাসা, আল্লাহকে ভালোবাসা। তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম-কে ভালোবাসা, ইত্যাদি অনেক রকমের ভালোবাসা আছে। সবই ভালোবাসা।
কিন্তু এই লুপারক্যালিয়া উৎসবে,
বসন্ত বরণ উৎসবে। সেন্ট ভ্যালেন্টাইন দিবসে শুধুমাত্র
নারী-পুরুষের জৈবিক ভালোবাসাকে প্রমোট করা হয়। আর এটা শুধু ইসলামের দৃষ্টিতে না,
সকল ধর্মের দৃষ্টিতে মহাপাপ। পাপ কাকে বলে?
ইসলামের দৃষ্টিতে পাপ ওই বিষয়,
ওই কর্ম, ওই বিশ্বাস। যা ব্যক্তির, সমাজের অথবা মহাবিশ্বের ক্ষতি করে। এর বাইরে সাধারণত কোনো
পাপ নেই। মদ পাপ, জুয়া পাপ, কারণ এগুলো ব্যক্তি, পরিবার এবং সমাজের জন্য ক্ষতিকর।
ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর রাহিমাহুল্লাহ
🔶রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)
ক্ষোভ প্রকাশ করে
বললেন,
‘সুবহানাল্লাহ! এ তো মূসা
(আলাইহিস সালাম)-এর জাতির মতো কথা। আমাদের জন্য একজন প্রভু তৈরি করে দিন,
তাদের প্রভুর ন্যায়। আমি নিশ্চিত, আমি আল্লাহর শপথ করে বলছি, তোমরা পূর্ববর্তীদের আচার-অনুষ্ঠানের অন্ধানুকরণ করবে’।
[জামে‘ আত-তিরমিযী, হা/২১৮০; মুসনাদে আহমাদ, হা/২১৮৯৭, মিশকাত, হা/৫৪০৮]
🔶অন্য হাদীছে ইবনু উমার(রাযিয়াল্লাহু আনহুম) হতে বর্ণিত
হয়েছে,
রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
مَنْ
تَشَبَّهَ
بِقَوْمٍ
فَهُوَ
مِنْهُمْ ‘যে ব্যক্তি যে জাতির অনুকরণ করবে,
সে ব্যক্তি সেই জাতিরই একজন বলে গণ্য হবে’।
[আবূ
দাঊদ, হা/৪০৩১]
🔶আমর ইবনু শুআইব তাঁর পিতা তাঁর পিতামহ থেকে বর্ণিত যে,
রাসূল (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
لَيْسَ
مِنَّا
مَنْ
تَشَبَّهَ
بِغَيْرِنَا
لاَ
تَشَبَّهُوا
بِالْيَهُودِ
وَلاَ
بِالنَّصَارَى
فَإِنَّ
تَسْلِيمَ
الْيَهُودِ
الإِشَارَةُ
بِالأَصَابِعِ
وَتَسْلِيمَ
النَّصَارَى
الإِشَارَةُ
بِالأَكُفِّ.
‘যে ব্যক্তি আমাদের ছাড়া বিজাতীয়দের অনুসরণ করে,
সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। তোমরা ইয়াহূদী ও নাছারাদের
অনুকরণ করবে না। কারণ ইয়াহূদীদের সালাম হলো আঙ্গুলির ইশারা করা আর নাছারাদের সালাম
হলো হাতের তালু দ্বারা ইশারা করা’। [জামে‘ আত-তিরমিযী, হা/২৬৯৫,
হাসান ছহীহ]
🔶কোন মুসলমানের জন্য কাফেরদের কোন উৎসব পালন
করা জায়েয নয়।:
কারণ ভ্যালেন্টাইন ডে বা ভালোবাসা দিবস সম্পূর্ণরূপেই
ইহুদী-নাছারা, মজুসী-মুশরিক তথা কাফিরদের প্রবর্তিত নিয়মনীতি বা
তর্জ-তরীক্বা। যা মুসলমানদের মুসলমানিত্ব নির্মূলের গভীর ষড়যন্ত্রও বটে। তাই
মুসলমানদের জন্য ফরয-ওয়াজিব হচ্ছে- ভ্যালেন্টাইন ডে'সহ সর্বপ্রকার কুফরী প্রথা থেকে বিরত থাকা ।
কোন মুসলমানের জন্য কাফেরদের কোন উৎসব পালন করা জায়েয নয়।
কেননা উৎসব (ঈদ) ধর্মীয় বিষয়। এ ক্ষেত্রে শরয়ি নির্দেশনার এক চুল বাইরে যাওয়ার
সুযোগ নেই।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেন: উৎসব (ঈদ) ধর্মীয় অনুশাসন, ইসলামী আদর্শ ও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। যে ব্যাপারে আল্লাহ
তাআলা বলেছেন: “তোমাদের প্রত্যেককে আমি আলাদা শরিয়ত ও মিনহাজ (আদর্শ) দিয়েছি”।
তিনি আরও বলেন: “প্রত্যেক উম্মতের জন্য রয়েছে আলাদা শরিয়ত দিয়েছি;
যা তারা পালন করে থাকে” যেমন- কিবলা,
নামায, রোজা। অতএব, তাদের উৎসব পালন ও তাদের অন্যসব আদর্শ গ্রহণ করার মধ্যে কোন
পার্থক্য নেই। কারণ তাদের সকল উৎসবকে গ্রহণ করা কুফরকে গ্রহণ করার নামান্তর। তাদের
কিছু কিছু জিনিস গ্রহণ করা কিছু কিছু কুফরকে গ্রহণ করার নামান্তর। বরং উৎসবগুলো
প্রত্যেক ধর্মের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য এবং ধর্মীয় আলামতগুলোর মধ্যে অন্যতম। অতএব,
এটি গ্রহণ করা মানে কুফরের সবিশেষ অনুশাসন ও সবচেয়ে
প্রকাশ্য আলামতের ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করা। কোন সন্দেহ নেই যে,
এ ক্ষেত্রে তাদের অনুকরণ করা মানে কুফরের অনুকরণ করা।
🔶 এর সর্বনিম্ন অবস্থা হচ্ছে- গুনাহ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ দিকে ইঙ্গিত দিয়ে
বলেন: “নিশ্চয় প্রত্যেক কওমের উৎসব রয়েছে। এটা হচ্ছে আমাদের ঈদ বা উৎসব”। এটি
যুনার (জিম্মিদের বিশেষ পোশাক) বা এ বিজাতিদের বিশেষ কোন আলামত গ্রহণ করার চেয়ে
অধিক নিকৃষ্ট। কেননা এ ধরনের আলামত কোন ধর্মীয় বিষয় নয়;
বরং এ পোশাকের উদ্দেশ্য হচ্ছে- মুমিন ও কাফেরের আলাদা পরিচয়
ফুটিয়ে তোলা। পক্ষান্তরে তাদের উৎসব ও উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো একান্ত ধর্মীয়;
যে ধর্মকে ও ধর্মাবলম্বীকে লানত করা হয়েছে। সুতরাং এ ধরনের
ক্ষেত্রে তাদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করা আল্লাহর আযাব ও গজব নাযিলের কারণ হতে পারে। [ইকতিদাউস সিরাতিল মুস্তাকিম ১/২০৭]
🔶 তিনি আরও বলেন: “কোন মুসলমানের জন্য তাদের উৎসবের সাথে
সংশ্লিষ্ট কোন কিছুর ক্ষেত্রে সাদৃশ্য গ্রহণ করা জায়েয নয়। যেমন,
খাবার দাবার, পোশাকাদি, গোসল, আগুন জ্বালানো অথবা এ উৎসবের কারণে কোন অভ্যাস বা ইবাদত
বর্জন করা ইত্যাদি। এবং কোন ভোজানুষ্ঠান করা, উপহার দেওয়া, অথবা এ উৎসব বাস্তবায়নে সহায়ক এমন কিছু বেচাবিক্রি করা
জায়েয নয়। অনুরূপভাবে তাদের উৎসবে শিশুদেরকে খেলতে যেতে দেওয়া এবং সাজসজ্জা প্রকাশ
করা জায়েয নয়।
মোদ্দাকথা, বিধর্মীদের উৎসবের নিদর্শন এমন কিছুতে অংশ নেয়া মুসলমানদের
জন্য জায়েয নয়। বরং তাদের উৎসবের দিন মুসলমানদের নিকট অন্য সাধারণ দিনের মতই।
মুসলমানেরা এ দিনটিকে কোনভাবে বিশেষত্ব দিবে না।
[মাজমুউল ফাতাওয়া (২৯/১৯৩)]
🔶ভালবাসা দিবস পালন করা হারাম হওয়ার ব্যাপারে
আলেমগণ ফতোয়া দিয়েছেন:
১। এ বিষয়ে শাইখ উছাইমীনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল
প্রশ্নটি নিম্নরূপ:
-সম্প্রতি ভালবাসা দিবস উদযাপন করার প্রবণতা বিস্তার লাভ
করেছে;
বিশেষতঃ ছাত্রীদের মাঝে। এটি একটি খ্রিস্টান উৎসব। এ দিনে
লাল বেশ ধারণ করা হয়। লাল পোশাক ও লাল জুতা পরিধান করা হয়। লাল ফুল বিনিময় করা হয়।
আমরা এ ধরণের উৎসব পালন করার শরয়ি বিধান জানতে চাই এবং এ ধরণের বিষয়গুলোর ক্ষেত্রে
আপনার পক্ষ থেকে মুসলমানদের জন্য দিক নির্দেশনা প্রত্যাশা করছি?
আল্লাহ আপনাকে হেফাযত করুন।
🔶তিনি উত্তরে বলেন: ভালবাসা দিবস পালন নিম্নোক্ত কারণে জায়েয
নয়
এক. এটি একটি বিদআতি উৎসব; শরিয়তে এর কোন ভিত্তি নেই।
দুই. এটি মানুষকে অবৈধ প্রেম ও ভালবাসার দিকে আহ্বান করে।
তিন. এ ধরনের উৎসব মানুষের মনকে সলফে সালেহিনদের আদর্শের
পরিপন্থী অনর্থক কাজে ব্যতিব্যস্ত রাখে।
সুতরাং এ দিনের কোন একটি নিদর্শন ফুটিয়ে তোলা জায়েয হবে না।
সে নিদর্শন খাবার-পানীয়, পোশাকাদি, উপহার-উপঢৌকন ইত্যাদি যে কোন কিছুর সাথে সংশ্লিষ্ট হোক না
কেন।
🔶মুসলমানের উচিত তার ধর্মকে নিয়ে গর্ববোধ করা। গড্ডালিকা
প্রবাহে গা ভাসিয়ে না দেয়া। আমি আল্লাহর কাছে দুআ করি তিনি যেন মুসলিম উম্মাহকে
প্রকাশ্য ও গোপন সকল ফিতনা থেকে হেফাযত করেন এবং তিনি যেন আমাদের অভিভাবকত্ব গ্রহণ
করেন,
আমাদের তাওফিক দান করেন। [শাইখ উছাইমীনের ফতোয়াসমগ্র (১৬/১৯৯)]
🔶 শাইখ জিবরীনকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:
আমাদের যুবক-যুবতীর মাঝে ভালবাসা দিবস (ভ্যালেন্টাইন ডে)
পালনের রেওয়াজ বিস্তার লাভ করেছে। ভ্যালেন্টাইন হচ্ছে- একজন পাদ্রির নাম।
খ্রিস্টানেরা এ পাদ্রিকে সম্মান করে থাকে এবং প্রতি বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি তারা এ
দিবসটি উদযাপন করে, উপহার-উপঢৌকন ও লাল গোলাপ বিনিময় করে থাকে,
লাল রঙের পোশাক পরিধান করে থাকে। এ দিবসটি পালন করার শরয়ি
বিধান কী?
অথবা এ দিনে উপহার বিনিময় ও আনন্দ প্রকাশ করার বিধান কী?
🔶 জবাবে তিনি বলেন:
এক. এ ধরণের বিদআতি উৎসব পালন করা নাজায়েয। এটি নবউদ্ভাবিত
বিদআত। শরিয়তে এর কোন ভিত্তি নেই। এটি আয়েশা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত হাদিসের বিধানের
আওতায় পড়বে যে হাদিসে এসেছে- নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যে
ব্যক্তি আমাদের দ্বীন বা শরিয়তের মধ্যে এমন কিছু চালু করবে যা এতে নেই সেটি
প্রত্যাখ্যাত।”
🔶 বিশ্ব ভালবাসা দিবস পালনের ক্ষতিকর কিছু দিক
১) ভালবাসা নামের এ শব্দটির সাথে এক চরিত্রহীন লম্পটের স্মৃতি
জড়িয়ে যারা ভালবাসার জয়গান গেয়ে চলেছেন, পৃথিবীবাসীকে তারা সোনার পেয়ালায় করে নীল বিষ পান করিয়ে
বেড়াচ্ছেন।
২) তরুণ-তরুণীদের সস্তা যৌন আবেগকে সুড়সুড়ি দিয়ে সমাজে
বিশৃঙ্খলা ও ফাসাদ সৃষ্টি করা হচ্ছে। অথচ আল্লাহ তা‘আলা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের
ভালবাসেন না। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘আর তারা তো পৃথিবীতে ফাসাদ সৃষ্টি করে
বেড়ায়। আর আল্লাহ ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ভালবাসেন না।’’ [সূরা আল মায়িদাহ: ৬৪]
৩) নৈতিক অবক্ষয় দাবানলের মত ছড়িয়ে যাচ্ছে।
৪) নির্লজ্জতা ও বেহায়াপনা জাতীয়ভাবে স্বীকৃতি লাভ করছে।
যারা ঈমানদারদের সমাজে এ ধরণের অশ্লীলতার বিস্তার ঘটায়,
দুনিয়া ও আখিরাতে তাদের জন্য আল্লাহ তা‘আলা যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তির ব্যবস্থা করে রেখেছেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন: ‘‘যারা মু’মিনদের মধ্যে
অশ্লীলতার প্রসার কামনা করে তাদের জন্য আছে দুনিয়া ও আখিরাতে যন্ত্রণাদায়ক
শাস্তি..।’’ [সূরা আন-নূর :১৯]
🔶বস্তুত যে সমাজেই চরিত্র-হীনতার কাজ ব্যাপক,
তথায় আল্লাহর নিকট থেকে কঠিন আযাব সমূহ ক্রমাগত অবতীর্ণ
হওয়া অবধারিত, আব্দুল্লাহ ইবন ‘উমর (রা.) থেকে বর্ণিত,
রাসূল (সা.) বলেছেন: ‘‘যে জনগোষ্ঠীর মধ্যে নির্লজ্জতা
প্রকাশমান, পরে তারা তারই ব্যাপক প্রচারেরও ব্যবস্থা করে,
যার অনিবার্য পরিণতি স্বরূপ মহামারি,
সংক্রামক রোগ এবং ক্ষুধা-দুর্ভিক্ষ এত প্রকট হয়ে দেখা দিবে,
যা তাদের পূর্ববর্তীদের মধ্যে কখনই দেখা যায় নি।’’ [ইবনু মাজাহ,
কিতাবুল ফিতান,
হাদিস নং-৪০০৯]
৫) তরুণ-তরুণীরা বিবাহ পূর্ব দৈহিক সম্পর্ক গড়তে কোন রকম কুণ্ঠাবোধ করছে না।
অথচ তরুণ ইউসুফ আলাইহিস সালামকে যখন মিশরের এক রানী অভিসারে ডেকেছিল,
তখন তিনি কারাবরণকেই এহেন অপকর্মের চেয়ে উত্তম জ্ঞান
করেছিলেন। রোমান্টিক অথচ যুব-চরিত্রকে পবিত্র রাখার জন্য কী অতুলনীয় দৃষ্টান্ত!
🔶আল্লাহ জাল্লা শানুহু সূরা ইউসুফের ২৩-৩৪ নম্বর আয়াত
পর্যন্ত এ ঘটনা বর্ণনা করেছেন এ ভাবে- ‘‘সে যে স্ত্রীলোকের ঘরে ছিল সে তার কাছ
থেকে অসৎকাজ কামনা করল ও দরজাগুলো বন্ধ করে দিল এবং বলল,
‘আস।’ সে বলল,
‘আমি আল্লাহ্র আশ্রয়
প্রার্থনা করছি, তিনি আমার প্রভু; তিনি আমার থাকার সুন্দর ব্যবস্থা করেছেন। নিশ্চয়ই
সীমালঙ্ঘনকারীরা সফলকাম হয় না। সে রমণী তো তার প্রতি আসক্ত হয়েছিল এবং সেও তার
প্রতি আসক্ত হয়ে পড়ত যদি না সে তার প্রতিপালকের নিদর্শন দেখতে পেত। আমি তাকে
মন্দ-কাজ ও অশ্লীলতা হতে বিরত রাখার জন্য এভাবে নিদর্শন দেখিয়েছিলাম। সে তো ছিল
আমার বিশুদ্ধচিত্ত বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত। ওরা উভয়ে দৌড়ে দরজার দিকে গেল এবং
স্ত্রীলোকটি পিছন হতে তার জামা ছিঁড়ে ফেলল, তারা স্ত্রীলোকটির স্বামীকে দরজার কাছে পেল। স্ত্রীলোকটি
বলল,
‘যে তোমার পরিবারের সাথে
কুকর্ম কামনা করে তার জন্য কারাগারে প্রেরণ বা অন্য কোন মর্মন্তুদ শাস্তি ছাড়া আর
কি দণ্ড হতে পারে?
ইউসুফ বলল,
‘সে-ই আমার কাছ থেকে
অসৎকাজ কামনা করছিল।’ স্ত্রীলোকটির পরিবারের একজন সাক্ষী সাক্ষ্য দিল,
‘যদি তার জামার সামনের
দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে স্ত্রীলোকটি সত্য কথা বলেছে এবং পুরুষটি মিথ্যাবাদী,
কিন্তু তার জামা যদি পিছন দিক থেকে ছিঁড়ে থাকে তবে
স্ত্রীলোকটি মিথ্যা বলেছে এবং পুরুষটি সত্যবাদী। গৃহস্বামী যখন দেখল যে,
তার জামা পিছন দিক থেকে ছেঁড়া হয়েছে তখন সে বলল,
‘নিশ্চয়ই এটা তোমাদের
নারীদের ছলনা, তোমাদের ছলনা তো ভীষণ। হে ইউসুফ! তুমি এটা এড়িয়ে যাও এবং
হে নারী! তুমি তোমার অপরাধের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর;
তুমিই তো অপরাধী। নগরের কিছু সংখ্যক নারী বলল,
‘আযীযের স্ত্রী তার যুবক
দাস হতে অসৎকাজ কামনা করছে, প্রেম তাকে উন্মত্ত করেছে, আমরা তো তাকে স্পষ্ট ভুলের মধ্যে দেখছি। স্ত্রীলোকটি যখন
ওদের কানা-ঘুষার কথা শুনল, তখন সে ওদেরকে ডেকে পাঠাল, ওদের জন্য আসন প্রস্তুত করল, ওদের সবাইকে একটি করে ছুরি দিল এবং ইউসুফকে বলল,
‘ওদের সামনে বের হও।’
তারপর ওরা যখন তাঁকে দেখল তখন ওরা তাঁর সৌন্দর্যে অভিভূত হল
এবং নিজেদের হাত কেটে ফেলল। ওরা বলল, ‘অদ্ভুত আল্লাহর মাহাত্ম্য! এ তো মানুষ নয়,
এ তো এক মহিমান্বিত ফেরেশতা। সে বলল,
‘এ-ই সে যার সম্বন্ধে
তোমরা আমার নিন্দা করেছ। আমি তো তার থেকে অসৎকাজ কামনা করেছি। কিন্তু সে নিজেকে
পবিত্র রেখেছে; আমি তাকে যা আদেশ করেছি সে যদি তা না করে,
তবে সে কারারুদ্ধ হবেই এবং হীনদের অন্তর্ভুক্ত হবে।
ইউসুফ বলল, ‘হে আমার প্রতিপালক! এ নারীরা আমাকে যার দিকে ডাকছে তার
চেয়ে কারাগার আমার কাছে বেশী প্রিয়। আপনি যদি ওদের ছলনা হতে আমাকে রক্ষা না করেন
তবে আমি ওদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হব। তারপর তার
প্রতিপালক তার ডাকে সাড়া দিলেন এবং তাকে ওদের ছলনা হতে রক্ষা করলেন। তিনি তো
সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।” [সূরা ইউসুফ: ২৩-৩৪]
৭) ভালবাসা দিবসের নামে নির্লজ্জতা বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে যিনা-ব্যভিচার,
ধর্ষণ ও খুন ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। আব্দুল্লাহ ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা
থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘‘যে
জনগোষ্ঠীর-মধ্যেই ব্যভিচার ব্যাপক হবে, তথায় মৃত্যুর আধিক্য ব্যাপক হয়ে দেখা দেবে।’’ [মুয়াত্তা
মালিক,
কিতাবুল জিহাদ, হাদিস নং-৮৭০] উপরোক্ত আয়াত ও হাদিসগুলোর ভাষ্য কতটা
বাস্তব বর্তমান বিশ্বের বাস্তব চিত্র এর প্রমাণ বহন করে। অবাধ যৌন মিলনের ফলে “AIDS”
নামক একটি রোগ বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এটা এমনি
মারাত্মক যে, এ রোগে আক্রান্ত হলে এর কোন আরোগ্য নেই।
🔶 কিছু পরিসংখ্যান দিলে বিষয়টি আরও পরিষ্কার
হবে :
বিশ্বের ১৪০ কোটিরও বেশী লোক থেকে ১৯৮৮ সালের আগস্ট পর্যন্ত
এক লক্ষ এগার হাজারেরও বেশী “AIDS” রোগীর তালিকা পাওয়া গিয়েছে।’’(আব্দুল খালেক, নারী,(ই,ফা,বা.ঢাকা,১৯৮৪ইং) পৃ. ৯৬)
🔶 ১৯৯২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে ২,৪২,০০০ এইডস রোগীর সন্ধান পাওয়া গিয়েছে। এর মধ্যে ১,৬০,০০০ মৃত্যু বরণ করেছিল। ১৯৯২ সালের গবেষণালব্ধ তথ্য মতে
১৯৯২ সাল পর্যন্ত ৫০ লক্ষ্য এইডস রোগী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে।(Baron&
Byrne, Ibid., P. 329)
৩০ শে ডিসেম্বর ১৯৯৬ এর Time International’ পত্রিকায় পরিবেশিত তথ্য মতে, ৬৫ লক্ষ জীবন ছিনিয়ে নিয়েছে এই ঘাতক ব্যাধি। আগামী ৫
বৎসরে আরও ৩ কোটি লোক মারা যাবে এই রোগে। (মাসিক পৃথিবী, (ঢাকা, ডিসেম্বর, ১৯৯৯), পৃ.
৫)
🔶বিশ্ব এইডস দিবস ২০০০-এর প্রাক্কালে জাতিসংঘ যে রিপোর্ট
প্রকাশ করেছে তাতে বলা হয়েছে : ‘‘ইনজেকশনের মাধ্যমে মাদক সেবনকারী এবং সমকামিতা,
ইতর রীতির যৌনতার মাধ্যমে পূর্ব ইউরোপ,
রাশিয়া, ইউরোপ, উত্তর আমেরিকা, ল্যাটিন-আমেরিকা ক্যারিবীয় অঞ্চল ও এশিয়ায় এইডস দেখা
দিয়েছে। আফ্রিকার কয়েকটি দেশে প্রতি তিনজনের একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষ এইডস
আক্রান্ত।
শিশুদের ৮০ ভাগ এই রোগের ভাইরাসে আক্রান্ত। আফ্রিকার
উপ-সাহারা এলাকায় এ বছর ১০ লাখেরও বেশী লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়েছে। রাশিয়া ও
পূর্ব ইউরোপে নতুন করে এইডস দেখা দিয়েছে। মাত্র একবছরে এইডস রোগীর সংখ্যা বেড়ে
দ্বিগুণ হয়েছে। উত্তর আফ্রিকা এবং মধ্য প্রাচ্যেও নতুন করে এইডস সংক্রমণ বৃদ্ধি
পেয়েছে।’’(রয়টার্স,
দৈনিক ইনকিলাব,
(ঢাকা,
২রা ডিসেম্বর ২০০০ ইং) পৃ .১-২)
জাতিসংঘের দেয়া
তথ্য মতে : ‘‘বিশ্বে ৩ কোটি ৬০ লাখ লোক এইডসে আক্রান্ত ২০০০ইং সনে ৫০ লাখ লোক নতুন
করে এইডসে আক্রান্ত হয়েছে।’’(প্রাগুক্ত)
‘‘বিশ্ব এইডস দিবসের আলোচনা সভায় (ঢাকা) বাংলাদেশের তৎকালীন সমাজকল্যাণ,
প্রতি মন্ত্রী ড. মোজাম্মেল হোসেনের দেয়া তথ্য মতে,
বাংলাদেশে এইডস ভাইরাস বহনকারী রোগীর সংখ্যা একুশ হাজারের
বেশী।’’[ দৈনিক ইনকিলাব, (স্টাফ রিপোর্টার, বিশ্ব এইডস দিবসে ঢাকায় আলোচনা সভা,
২রা ডিসেম্বর, ২০০০ ইং) পৃ.১]
🔶 হার্পিস রোগ: ব্যভিচারের
কারণে জননেন্দ্রিয়ে সৃষ্ট অত্যন্ত পীড়াদায়ক রোগ হলো Genital
Herpes. মার্কিন
জনসংখ্যার শতকরা দশ ভাগ (জনসংখ্যা ২৬ কোটি ধরলে তার ১০% হয় ২ কোটি ৬০ লক্ষ) এই
রোগে আক্রান্ত। এটাই সব নয়। প্রত্যেক বৎসর প্রায় ৫০০,০০০ মানুষের নাম এই মারাত্মক হার্পিস রোগীদের তালিকায় নতুন
করে যুক্ত হচ্ছে। (Baron & Byrne, Social
psychology : Understanding Human Interaction, P. 329.)
৮) বিশ্ব ভালবাসা দিবসের এসব ঈমান বিধ্বংসী কর্ম-কাণ্ডের
ফলে মুসলিম যুব-মানস ক্রমশ ঈমানি বল ও চেতনা হারিয়ে ফেলছে।
৯) মানুষের হৃদয় থেকে তাকওয়া তথা আল্লাহর ভয় উঠে যাচ্ছে।
প্রিয় মুমিন-মুসলিম ভাই-বোনেরা ! ভালবাসা কোন পর্বীয়
বিষয় নয়। এটি মানব জীবনের সুখ-শান্তির জন্য একটি জরুরি সার্বক্ষণিক মানবিক
উপাদান। সুতরাং আমাদের মধ্যে ভালবাসা ও সৌহার্দ বৃদ্ধির জন্য রাসূলুল্লাহ
সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিখানো সার্বক্ষণিক পন্থাটি অবলম্বন করি।
লেখক: আ.স.ম শোয়াইব আহমাদ (পিএইচ.ডি) | সম্পাদনা: ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া,
শায়খ উসাইমিন রহঃ, শায়খ সালেহ আল ফাওজান ।
Editor by rasikul islam, my- website: https://sarolpoth.blogspot.com
0 Comments