সালাফী মানহাজের (মতাদর্শের) চিহ্ন ও পথ-নির্দেশিকা

🔳 সালাফী মানহাজের (মতাদর্শের) চিহ্ন ও পথ-নির্দেশিকা

🔳সালাফিয়াত হল সরল পথ। যে তার পথিক হয়, সে পরিত্রাণ পায়। আর যে তা বর্জন করে, সে ভ্রষ্ট ও পথচ্যুত হয়। নাউযু বিল্লাহি মিন যালিক। এই জন্য এই বৰ্কতময় মানহাজ ও বৰ্কতময় দাওয়াতের সুস্পষ্ট বহু বৈশিষ্ট্য ও নিদর্শন। রয়েছে। যা সংক্ষেপে নবী(সা.) ও তার পরে তাঁর সাহাবাবর্গের দাওয়াত ও মানহাজের চিহ্ন ও পথ-নির্দেশিকা; এর অন্যথা নয়।

বলা বাহুল্য সেই মানহাজ অথবা সালাফী দাওয়াতের কতিপয় চিহ্ন ও পথ-নির্দেশিকা নিম্নরূপ

১।মহান আল্লাহর জন্যই ইবাদত বাস্তবায়ন করা।

২।এককভাবে রাসুলুল্লাহ(সা.)-এর জন্যই অনুসরণ বাস্তবায়ন করা।

৩।শরয়ী দলীলসমূহ(কুরআন-হাদীস) বোঝার ক্ষেত্রে সলফে সালেহর বুঝকে অবলম্বন করা এবং এথেকে বের হয়ে না যাওয়া।

৪।বিদআত ও বিদআতী সম্পর্কে সতর্ক হওয়া ও সতর্ক করা।

৫।অতিরঞ্জন ও অবহেলার মাঝে মধ্যপন্থা অবলম্বন করা।

৬।হক ও ন্যায়ের উপর অবিচল থাকা।

৭।সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করায় আগ্রহী হওয়া।

৮।বিচ্ছিন্নতা ও মতবিরোধকে ছুঁড়ে ফেলা।

৯।উপকারী ইলম অর্জন করা, তা মানুষের মাঝে প্রচার করা এবং তার দিকে দাওয়াত দেওয়া। আর সেই সাথে এ কাজে আসা কষ্টের উপর ধৈর্যধারণ করা।

১০।ইলম অনুযায়ী আমল করা।

🔘সুপ্রিয় পাঠক! উক্ত সকল আলামতের বহু দলীল আছে। যিনি দুই অহীর বাণী ও নবী(সা.) এর জীবনচরিত নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করেন, তিনি প্রাপ্ত হবেন।

উক্ত আলামতগুলির সপক্ষে ব্যাপক দলীলসমূহের মধ্যে একটি বিশাল গুরুত্বপূর্ণ হাদীস হল ইরবায বিন সারিয়াহ(রাঃ)-এর হাদীস। যা ইতিপূর্বে আমাদের আলোচনায় একাধিকবার উল্লিখিত হয়েছে। তা আবারও পুনরুক্ত হচ্ছে, যেহেতু তা বড় ফলদায়ী। ইরবায ইবনে সারিয়াহ(রাঃ) বলেন, একদা রাসুলুল্লাহ , আমাদেরকে এমন মর্মস্পর্শী বক্তৃতা শুনালেন যে, তাতে অন্তর ভীত হল এবং চোখ দিয়ে অশ্রু বয়ে গেল। সুতরাং আমরা বললাম, হে আল্লাহর রসূল! এ যেন বিদায়ী ভাষণ মনে হচ্ছে। তাই আপনি আমাদেরকে অন্তিম উপদেশ দিন। তিনি বললেন,

🔘আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতি এবং (রাষ্ট্রনেতার) কথা শোনার ও তার আনুগত্য করার উপদেশ দিচ্ছি, যদিও তোমাদের উপর কোন নিগ্রো (আফ্রিকার কৃষ্ণকায় অধিবাসী) রাষ্ট্রনেতা হয়। (স্মরণ রাখ) তোমাদের মধ্যে যে আমার পর জীবিত থাকবে, সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে। সুতরাং তোমরা আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবুত করে। ধরে থাকবে। আর তোমরা দ্বীনে নব উদ্ভাবিত কর্মসমুহ (বিদআত) থেকে বেঁচে থাকবে। কারণ, প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।” (আবু দাউদ ৪৬০ ১, তিরমিযী ২৬৭৬, ইবনে মাজাহ ৪২নং)

আর নাসাঈর এক বর্ণনায় আছে, আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতা জাহান্নামে। (নিয়ে যায়)।”

প্রিয় পাঠক! বারাকাল্লাহু ফীক। আমার সাথে প্রণিধান করুন, এই ব্যাপক হাদীসটিতে উক্ত সালাফী মানহাজের আলামত ও পথনির্দেশিকা স্পষ্টকারী কত উপকারিতা রয়েছে।

🔘এতে রয়েছেঃ মহান আল্লাহর তাকওয়া (ভয়-ভীতি) অবলম্বন। করার অসিয়ত। আর তার পালনে রয়েছে মহান আল্লাহর জন্য ইবাদত (পূর্ণ দাসত্ব) বাস্তবায়ন। এতে রয়েছেঃ রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নাহ অবলম্বন করার অসিয়ত ও আদেশ। যার পালনে রয়েছে এককভাবে রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর জন্যই অনুসরণ বাস্তবায়ন।

🔘এতে রয়েছেঃ খুলাফায়ে রাশিদীনের সুন্নাহ অবলম্বন করার অসিয়ত ও আদেশ। যার পালনে রয়েছে সলফে সালেহর বুঝকে অবলম্বন করার পদ্ধতি বাস্তবায়ন।

🔘এতে রয়েছেঃ বিদআত থেকে সতর্কীকরণ। যার পালনে রয়েছে। বিদআত ও বিদআতী সম্পর্কে সতর্ক হওয়া ও সতর্ক করার নির্দেশ বাস্তবায়ন।

🔘এতে আরো রয়েছেঃ যে ব্যক্তি সলফের বুঝে সুন্নাহ অবলম্বন করবে, সে মধ্যপন্থা বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হবে। যার প্রকৃতত্ব হল অতিরঞ্জন ও অবজ্ঞার মাঝামাঝি। দুই বিপরীতধর্মী আচরণের মধ্যস্থলে।

🔘এতে আরো রয়েছে ও নিন্দনীয় বিচ্ছিন্নতা ও মতবিরোধ থেকে সতর্কীকরণ। বলা হয়েছে, “সে অনেক মতভেদ বা অনৈক্য দেখবে।” আর যে সুন্নাহ অবলম্বন করবে, সে অনেক মতবিরোধ থেকে নিরাপত্তা লাভ করবে।

এই নববী নিদের্শনার স্পষ্ট উক্তি ও তার অন্তর্নিহিত উদঘাটিত ব্যাখ্যায় যা সন্নিবিষ্ট রয়েছে, তা হল এই যে, হকের মাধ্যমে হকের উপরে হকের জন্য সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করতে হবে। যেহেতু তিনি বলেছেন, “তোমরা আমার সুন্নত ও সুপথপ্রাপ্ত খুলাফায়ে রাশেদীনের রীতিকে আঁকড়ে ধরবে এবং তা দাঁত দিয়ে মজবুত করে ধরে থাকবে।”

আর স্পষ্ট বিদিত কথা যে, উপকারী শরয়ী ইলম ছাড়া উক্ত অর্থসমূহকে আমলী রূপ দেওয়া ও উক্ত আলামতসমূহ প্রকাশ পাওয়া সম্ভব নয়। ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ(রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, 'কল্যাণ, সুখ, সংশুদ্ধি ও পূর্ণতা দুটির মাঝে সীমাবদ্ধঃ উপকারী ইলম ও নেক আমল। [মাজমুউ ফাতাওয়া শাইখিল ইসলাম ১৯/ ১৬৯]

উক্ত আলামতসমূহের সবগুলির অথবা কিছুর আরো দলীল নিম্নরূপঃ

১।মহান আল্লাহ তার মজবুত রশি ধারণ করার আদেশ দিতে এবং তা বর্জন করায় সতর্ক করতে গিয়ে বলেছেন,

 “তোমরা সকলে আল্লাহর রশি (ধর্ম বা কুরআন)কে শক্ত করে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না।” (আলে ইমরান : ১০৩)

তোমরা বিশুদ্ধ-চিত্তে তার অভিমুখী হও; তাকে ভয় কর। যথাযথভাবে নামায পড় এবং অংশীবাদীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা ধর্ম সম্বন্ধে নানা মত সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে; প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে আনন্দিত।” (রূমঃ ৩১-৩২)

 “নিশ্চয়ই এটি আমার সরল পথ। সুতরাং এরই অনুসরণ কর এবং ভিন্ন পথ অনুসরণ করো না, করলে তা তোমাদেরকে তাঁর পথ হতে বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে। এভাবে আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন যেন তোমরা সাবধান হও।” (আনআমঃ ১৫৩)।

তিনি আরো বলেছেন,

অবশ্যই যারা দ্বীন সম্বন্ধে নানা মতের সৃষ্টি করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে, তাদের কোন কাজের দায়িত্ব তোমার নেই, তাদের বিষয় আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত। তিনিই তাদের কৃতকর্ম সম্বন্ধে। তাদেরকে অবহিত করবেন।” (আনআমঃ ১৫৯)

🔘এ মর্মে আরো অনেক আয়াত রয়েছে। শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, 'তোমরা জানো যে, বিশাল (গুরুত্বপূর্ণ) মৌলনীতি, যা দ্বীনের ব্যাপকতার অন্তর্ভুক্ত, তা হল পরস্পরের হৃদয়ের মধ্যে প্রীতি স্থাপন, একতা ও পারস্পরিক সদ্ভাব প্রতিষ্ঠা।

🔘অতঃপর তিনি কতিপয় আয়াত উল্লেখ করেছেন। তারপর বলেছেন, ‘অনুরূপ আরো (কুরআনের) স্পষ্ট উক্তি, যা জামাআত ও ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করতে আদেশ এবং বিচ্ছিন্নতা ও মতবিরোধ করতে নিষেধ করে। আর এই মৌলনীতি-ওয়ালা হল আহলুল জামাআহ (জামাআত-ওয়ালা)। যেমন এই নীতি থেকে যারা বের হয়ে যায়, তারা হল আহলুল ফুরক্বাহ (বিচ্ছিন্নতাবাদী)। [মাজমুউ ফাতাওয়া শাইখিল ইসলাম ২৮/৫১]

🔘তিনি অন্য এক জায়গায় বলেছেন, 'এই জন্য ফিকাহ নাজিয়াহর গুণ বর্ণনায় বলা হয়েছে, তারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল-জামাআহ। আর তারা হল বৃহত্তম জনগোষ্ঠী। পক্ষান্তরে অবশিষ্ট ফিকাসমূহ বিরলপন্থী, বিচ্ছিন্নতাবাদী, বিদআতী ও খেয়ালখুশীর পূজারী। ওদের নির্দিষ্ট ফির্কা ফিকাহ নাজিয়াহর নিকটবর্তী স্থানে পৌঁছতে সক্ষম নয়, তার সমান হওয়া তো দুরের কথা। বরং ওদের নির্দিষ্ট ফির্কা নেহাতই সংখ্যালঘ। হতে পারে। আর ঐ সকল ফির্কার প্রতীক বা নিশান হল, কিতাব, সুন্নাহ ও ইজমা থেকে দূরে সরে যাওয়া। [মাজমুউ ফাতাওয়া শাইখিল ইসলাম ৩/৩৪৬, ৪৩৫]

🔘২। সহীহ মুসলিমে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল(সা.) বলেছেন,

নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য ৩টি কাজ পছন্দ করেন এবং ৩টি কাজ অপছন্দ করেন। তিনি তোমাদের জন্য এই পছন্দ করেন যে, তোমরা তাঁর ইবাদত কর এবং তার সাথে অন্য কিছুকে শরীক করো না, সকলে একতাবদ্ধ হয়ে আল্লাহর রশি (কুরআন বা দ্বীন)কে দৃঢ়ভাবে ধারণ কর এবং আল্লাহ তোমাদের উপর যাকে নেতৃত্ব প্রদান করেছেন তার আনুগত্য কর। আর তিনি তোমাদের জন্য ভিত্তিহীন বাজে কথা বলা (বা জনরবে থাকা), অধিক (অনাবশ্যক) প্রশ্ন করা (অথবা প্রয়োজনের অধিক যা করা) এবং ধন-মাল বিনষ্ট (অপচয়) করাকে অপছন্দ করেন।” (মুসলিম ৪৫৭৮নং)

🔘ইমাম আহমাদের বর্ণনায় কিছু অতিরিক্ত শব্দ এসেছে,

আর আল্লাহ যাকে তোমাদের রাষ্ট্রনেতা বানিয়েছেন, তার শুভাকাঙ্ক্ষী হও।” (আহমাদ ৮৭৯৯নং)

🔘ইমাম ইবনে আব্দুল বারী (রাহিমাহুল্লাহ) তামহীদ গ্রন্থে (২ ১/২৭২) এ উক্ত হাদীসের নিমে বলেছেন, 'এতে রয়েছে সম্মিলিত ও ঐক্যবদ্ধ থাকা অবস্থায় আল্লাহর রশিকে মজবুত সহকারে ধারণ করার প্রতি উৎসাহদান। এ স্থলে আল্লাহর রশির অর্থে দুটি উক্তি আছে,

প্রথম হলঃ আল্লাহর কিতাব। এবং দ্বিতীয় হল ও জামাআত। আর ইমাম (রাষ্ট্রনেতা) ছাড়া জামাআত হয় না। আমার কাছে এর। (উভয়) অর্থ অন্তঃপ্রবিষ্ট ও কাছাকাছি। যেহেতু আল্লাহর কিতাব ঐক্যের আদেশ দেয় এবং বিচ্ছিন্নতা থেকে নিষেধ করে। অতঃপর তিনি পুর্বোক্ত কিছু আয়াত উল্লেখ করেছেন।

🔘ইমাম ইবনে তাইমিয়্যাহ(রাহিমাহুল্লাহ) মিনহাজুস সুন্নাহ। (৫/ ১৩৪)এ ‘আল্লাহর রশি’র ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, তাঁর রশির ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, তার কিতাব, তার দ্বীন, ইসলাম, ইখলাস, তাঁর আদেশ, তার অঙ্গীকার, তার আনুগত্য ও জামাআত। এ সকল ব্যাখ্যা সাহাবা ও তাবেঈন কর্তৃক বর্ণিত। এর প্রত্যেকটি ব্যাখ্যাই শুদ্ধ। যেহেতু কুরআন দ্বীনে ইসলাম অবলম্বন করার আদেশ দেয়। আর তা হল তার অঙ্গীকার, আদেশ ও আনুগত্য। সম্মিলিতভাবে মজবুত সহকারে তা ধারণ করা সম্ভব হবে কেবল জামাআতের মাধ্যমেই। পরন্তু দ্বীনে ইসলামের প্রকৃতত্ব হল আল্লাহর জন্য ইখলাস (একনিষ্ঠ, বিশুদ্ধচিত্ত ও অকপট হওয়া)।

ইমাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহহাব (রাহিমাহুল্লাহ) উক্ত হাদীসের নিয়ে বলেছেন, মানুষের দ্বীন ও দুনিয়ায় ত্রুটি ঘটার একমাত্র কারণ হল উক্ত তিন আদেশ অথবা তার কিছু লঙ্ঘন করা।”

[আদ্-দুরারুস সানিয়্যাহ ২/ ১৩২]

🔘৩। সূরা ফাতিহায় মহান আল্লাহর বাণী,

 “আমাদেরকে সরল পথ দেখাও, তাদের পথ --যাদেরকে তুমি নিয়ামত দান করেছ। তাদের পথ --যারা ক্রোধভাজন (ইয়াহুদী) নয় এবং যারা পথভ্রষ্টও (খ্রিষ্টান) নয়।”

🔘ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) ইগাষাতুল লাহফান গ্রন্থে (১১৩১)বলেছেন, সেই সরল পথ, যার অনুসরণ করতে মহান আল্লাহ আমাদেরকে অসিয়ত করেছেন, তা হল সেই পথ, যে পথে ছিলেন নবী কি ও তার সাহাবাবগ। আর তা হল ঋজু পথ। সে পথের বাইরের সকল পথ বক্রপথসমুহের অন্তর্ভুক্ত। অবশ্য বক্রতা অসামান্য হতে পারে, যা সরল পথ থেকে অনেক দুরে হয়। আর তা সামান্যও হতে পারে। আর উভয়ের মাঝে আছে বহু স্তর, যার সংখ্যা কেবল আল্লাহই জানেন। এ হল বাস্তব জগতের পথের মতো। পথিক কখনো পথচ্যুত হয়ে বহু দূরে চলে যায়। আবার কখনো কম দূরে চলে যায়।

🔘সুতরাং সরল পথে প্রতিষ্ঠিত থাকা অথবা না থেকে বক্রপথ অবলম্বন করার বিষয়টি জানার নিক্তি হল রাসূলুল্লাহ ও তাঁর সাহাবাবর্গের পথ। আর সে পথ থেকে বিচ্যুত অবহেলাকারী যালেম অথবা অপব্যাখ্যাকারী মুজতাহিদ অথবা অজ্ঞ অন্ধানকরণকারী। এদের প্রত্যেকের কর্ম থেকে আল্লাহ নিষেধ করেছেন। তাহলে অবশিষ্ট থাকে। কেবল মধ্যপন্থা (সরল পথের অনুসরণ) এবং সুন্নাহকে আঁকড়ে ধারণ। আর এটাই হল দ্বীনের কেন্দ্রবিন্দু।

সুতরাং যে ব্যক্তি সঠিক সালাফিয়াত সজ্ঞানে ন্যায়নিষ্ঠভাবে অবলম্বন করবে, সে সর্বনাশী ও ভ্ৰষ্টকারী ফির্কাসমূহের মাঝে (মধ্যপন্থায়) অবস্থান করবে। যেহেতু হক থাকে দুই ভ্রষ্টতার মাঝে।

🔘ইমাম আওযায়ী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে কত এমন কোন আদেশ নেই, যাতে শয়তান দুটি আচরণ দ্বারা। বিরোধিতা করে না। দুটির মধ্যে যে কোন একটি কার্যকরী হলে সে অন্যটার পরোয়া করে না। সে দুটি হলঃ অতিরঞ্জন করা এবং অবজ্ঞা করা। [আল-মাক্বাসিদুল হাসানাহ ২০৫পৃঃ)]

🔘ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম(রাহিমাহুল্লাহ) বলেন, “মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে কত এমন কোন আদেশ নেই, যাতে শয়তানের দুটি প্ররোচনা। থাকে না। হয় অবজ্ঞা ও অবহেলা, না হয় অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি। সুতরাং দুটি পাপের মধ্যে যে কোন একটি দিয়ে বান্দার উপর বিজয়লাভ করলে, তাতে সে কোন পরোয়া করে না। বলা বাহুল্য, সে বান্দার হৃদয়ে আগত হয়ে তা শুকে পরীক্ষা করে, অতঃপর যদি দেখে তাতে শৈথিল্য, আলস্য বা হেলাফেলা রয়েছে, তাহলে সে সেই সুযোগ গ্রহণ করে তার মনে নিরুৎসাহ, ও কর্মবিমুখতা সৃষ্টি করে। কুঁড়েমি, গয়ংগচ্ছ, দীর্ঘসূত্রতা প্রক্ষেপ করে। আর কর্ম না করার নানা ওজর-অজুহাত ও অপব্যাখ্যার দরজা খুলে দেয় এবং তার মনে আশার বাসা তৈরি করে। পরিশেষে বান্দা হয়তোবা নির্দেশিত কর্ম বিলকুল ত্যাগ করে বসে।

🔘পক্ষান্তরে যদি সে বান্দার হৃদয়ে সতর্কতা, ফুর্তি, আগ্রহ, উৎসাহ, স্পৃহা, প্রচেষ্টা ইত্যাদি লক্ষ্য করে, তাহলে সে এই সুযোগ গ্রহণ করে তাকে অতিরিক্ত চেষ্টা করতে অনুপ্রাণিত করে। সে তাকে বলে, এতটুক করা যথেষ্ট নয়। তোমার হিম্মত আরো বেশি। তোমাকে সবার চাইতে বেশি আমল করা উচিত। ওরা ঘুমালে তুমি ঘুমায়ো না, ওরা রোযা ছাড়লে তুমি ছেড়ো না, ওরা শৈথিল্য করলে তুমি করো না, ওরা (উযুতে) তিনবার মুখ-হাত ধুলে তুমি সাতবার ধােও, ওরা নামাযের জন্য উযু করলে তুমি তার জন্য গোসল কর।” ইত্যাদি। এইভাবে সে নানাবিধ অতিরঞ্জন ও বাড়াবাড়ি সৃষ্টি করে তার আমলে। ফলে সে সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়, কর্মের সীমা লংঘন করে। যেমন প্রথমজনকে এর বিপরীতভাবে আমলে অবজ্ঞা, অবহেলা। ও আমল বর্জনে বাধ্য করে। তার উদ্দেশ্য, দুজনেই যেন ‘স্বিরাত্বে। মুস্তাক্বীম’ থেকে সুদুরে চলে যায়। এ যেন তার কাছে না আসে, নিকটবর্তী না হয় এবং ও যেন তা লংঘন করে এবং অতিক্রম করে যায়।

🔘অধিকাংশ মানুষ এই ফিতনায় পতিত। এ থেকে মুক্তি দিতে পারে একমাত্র সুগভীর ইম, সুদৃঢ় ঈমান, শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাশক্তি এবং আমলে মধ্যপন্থা। আর আল্লাহই সাহায্যস্থল।” [আল-ওয়াবিলুস স্বাইয়িব ২৯-৩০পৃঃ]

🔘শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ(রাহিমাহুল্লাহ) তার পুস্তিকা ‘আল-আক্বীদাতুল ওয়াসিত্বিয়্যাহ’তে [মাজমূউ ফাতাওয়া ৩/৩৭৫] আহলে সুন্নাহর মধ্যপন্থার বিবরণে বলেন, 'অনুরূপ সুন্নাহর সকল দরজায় তাঁরা মধ্যপন্থী। যেহেতু তারা আল্লাহর কিতাব, তার রসূল ৪-এর সুন্নাত এবং (ঈমান আনয়নে) অগ্রবর্তী মুহাজির ও আনসারগণ এবং যেসব লোক সরল অন্তরে তাদের অনুগামী হয়েছেন, তাঁরা যে বিষয়ে একমত পোষণ করেছেন, তা সুদৃঢ়ভাবে ধারণকারী।

তোমরা সকলে আল্লাহর রশি (দ্বীন বা কুরআন)কে শক্ত করে ধর এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ো না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ কর; তোমরা পরস্পর শত্রু ছিলে, অতঃপর তিনি তোমাদের হৃদয়ে প্রীতির সঞ্চার করলেন। ফলে তোমরা তাঁর অনুগ্রহে পরস্পর ভাই-ভাই হয়ে গেলে।” (আলে ইমরান : ১০৩) সালাফী ও সালাফিয়াত পরিচিতি  আবদুল হামীদ ফাইযী.


(ইসলামিক বিশুদ্ধ শুধু বই পেতে📚 এখানে পাবেন🎶প্রচুর অডিও সিরিজ🎶100 এর বেশী শায়খ ভিত্তিক অডিও 90 এর উপর 🎶বিষয় ভিত্তিক অডিও🌎অডিও কুরআন এবং অনলাইনে অডিও শুনুন🎶এছাড়াও বিষয় ভিত্তিক ভিডিও,♂সহীহ-সুন্নাহ-ভিত্তিক ইউটিউব চ্যানেল,ইসলামিক পত্রিকা 📚 and অনেক জানা-অজানা-আর্টিকল 📚 বিষয় ভিত্তিক সিরিজ আকারে http://islamicebookandpic.in/ ইসলামিক গালারি 👇বিশেষ দ্রস্টব্যঃ-👇 ওয়েবসাইট sarolpoth.blogspot.com/ ইসলামিক সমস্থ প্রগ্রাম একসাথে পেতে http://salafimp3web.blogspot.com/👉 অডিও সমাহার👈 👉 https://salafi-pdfbooks.blogspot.com/ সমস্ত ইসলামিক বই👆

Post a Comment

0 Comments