▬প্রশ্ন:যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর নখ,
চুল,শরীরের চামড়া ইত্যাদি না কেটে ঈদের সালাতের পর কাটার
এই সুন্নাতটি পালন সম্পর্কে কেউ বলেন এটি কেবল কুরবানী দাতার জন্য প্রযোজ্য আবার
কেউ কেউ বলেন এটি সবার জন্য প্রযোজ্য। কোনটি সঠিক?
▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬
▬ভূমিকা:আরবি মাসগুলোর তারিখ বা দিন শুরু হয় রাত থেকে। অর্থাৎ সূর্যাস্ত থেকে।সে
হিসাবে আজ ১৯ শে জুন ২০২৩ সোমবার বাংলাদেশের আকাশে যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর
(হাত পায়ের নখ,মাথার
চুল,নাভির নিচের বা
বগলের পশম,চর্মাদি
ইত্যাদি) না কেটে একবারে কুরবানী করার পর কাটার এই হুকুমটি মূলতঃ কুরবানীদাতাদের
জন্য প্রযোজ্য পরিবারের সবার জন্য নয়।কেননা বিশুদ্ধ হাদিস দ্বারা এ কথা প্রমাণিত,যে ব্যক্তি নারী হোক আর পুরুষ বিবাহিত হোক অবিবাহিত
হোক কুরবানী দেওয়ার ইচ্ছা বা সংকল্প করেছে তার জন্য ওয়াজিব;
যুলহাজ্জ মাস প্রবেশের সাথে সাথে
কুরাবানীর পশু যবেহ না করা পর্যন্ত সে যেন তার দেহের কোন লোম বা চুল,
নখ ও চর্মাদি না কাটে। তবে কুরবানী
দাতার জন্য নতুন জামা-কাপড় পরিধান করা, মেহেদি দেয়া, সুগন্ধি ব্যবহার করা, স্ত্রী উপভোগ করা কিংবা সহবাস করা নিষিদ্ধ নয় এগুলো সবই
জায়েজ। দলিল:উম্মে সালামা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন, নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন,
‘তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী দেয়ার
ইচ্ছা রাখে, তারা
যেন যিলহজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার পর হতে কুরবানী সম্পন্ন করা পর্যন্ত স্ব স্ব চুল ও নখ
কর্তন করা হতে বিরত থাকে’ (সহীহ
মুসলিম, হা/১৯৭৭; নাসায়ী ৪৩৬৪, ইবনু মাজাহ্ ৩১৪৯,
মুসনাদে আহমাদ ২৬৪৭৪
মিশকাত, হা/১৪৫৯)।
▬অপর বর্ননায় নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম)-এর স্ত্রী উম্মে সালামাহ (রাদিয়াল্লাহু আনহা) বলেন,
রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম) বলেছেন,যার
কুরবানীর পশু রয়েছে, সে
যেন যিলহজ্জ মাসের নতুন চাঁদ উঠার পর থেকে কুরবানী করার পূর্ব পর্যন্ত তাঁর চুল ও
নখ না কাটে’।(সহীহ মুসলিম, হা/১৯৭৭;
আবূ দাঊদ,
হা/২৭৯১;
ইবনু হিব্বান,
হা/৫৯১৭।)
.উক্ত হাদীস সম্পর্কে ইমাম ইবনে হাযম (রাহিমাহুল্লাহ)
বলেন:যে ব্যক্তি কোরবানি করতে ইচ্ছুক যিলহজ্জ মাসের চাঁদ
দেখা গেলে সে তার দেহের চুল বা নখ ইত্যাদি হাত দিবে না;
অর্থাৎ কামাবে না কিংবা ছাটবে না
কিংবা অন্য কোন ভাবে দূর করবে না। আর যে ব্যক্তির কোরবানি করার সংকল্প নেই তার উপর
এগুলো অবধারিত নয়।(ইবনে হাযম আল-মুহাল্লা (৩/৬)
▬ইবনে কুদামা (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন:এটা যখন সাব্যস্ত
হল তখন সে ব্যক্তি চুল কাটা, নখ কাটা বর্জন করবে। যদি করে ফেলে তাহলে আল্লাহ্র কাছে
ইস্তিগফার (ক্ষমাপ্রার্থনা) করবে। তাকে ফিদিয়া দিতে হবে না মর্মে ইজমা সংঘটিত
হয়েছে; চাই
সে সেটা ইচ্ছাকৃতভাবে করুক কিংবা ভুলক্রমে করুক।(ইবনে কুদামাহ আল-মুগনি,৯/৩৪৬)
▬বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ
শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত:
১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.] বলেছেন,কোরবানী করতে ইচ্ছুক কেউ যদি যিলহজ্জ মাসের প্রবেশ করে;
সেটা চাঁদ দেখার মাধ্যমে হোক কিংবা
যিলক্বদ মাসের ৩০ দিন পূর্ণ হওয়ার মাধ্যমে হোক, সে ব্যক্তির জন্য তার কোরবানীর পশু জবাই করার আগ পর্যন্ত
চুল, নখ
কিংবা চামড়ার কিছু অংশ কাটা হারাম। আর যদি সে ব্যক্তি (প্রথম) দশক শুরু হওয়ার পর
কোরবানী করার নিয়ত করে তাহলে যখন থেকে নিয়ত করেছে তখন থেকে এগুলো কাটা থেকে বিরত
থাকবে। নিয়ত করার আগে এগুলো কেটে থাকলে সে জন্য কোন গুনাহ হবে না।
এ নিষেধাজ্ঞার গূঢ় রহস্য হল: কোরবানীকারী ব্যক্তি হাজী
সাহেবের সাথে হজ্জের একটি কর্মে অংশীদার হচ্ছেন।
সেটি হচ্ছে- পশু জবাই করার মাধ্যমে আল্লাহ্র নৈকট্য হাছিল
করা। তাই ইহরামের কিছু বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রেও তিনি হাজীসাহেবের সাথে অংশ গ্রহণ
করছেন। সেটা হচ্ছে- চুল ও ইত্যাদি কাটা থেকে বিরত থাকা। আলেমগণের বিশুদ্ধ
মতানুযায়ী,এ বিধানটি
কোরবানীকারীর জন্য খাস। পক্ষান্তরে, যার পক্ষ থেকে কোরবানী করা হচ্ছে তার সাথে এ বিধানটি
সম্পৃক্ত নয়। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: "তোমাদের কেউ
যদি কোরবানী করতে ইচ্ছুক হয়" তিনি বলেননি যে, "তার পক্ষ থেকে কোরবানী করা হয়"।
তাছাড়া নবী
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর পরিবারের সদস্যগণের পক্ষ থেকে কোরবানী
করেছেন। কিন্তু, এমন
কোন বর্ণনা আসেনি যে, তিনি
তাদেরকে এগুলো কর্তন করা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন।এ দলিলের ভিত্তিতে
কোরবানীকারীর পরিবারের জন্য যিলহজ্জ মাসের প্রথম দশকের দিনগুলোতে চুল,
নখ ও চামড়া কর্তন করা জায়েয। আর
কোরবানীকারী ব্যক্তি যদি তার চুল, নখ কিংবা চামড়ার কোন কিছু কেটে ফেলেন তাহলে তার কর্তব্য হল‑
আল্লাহ্র কাছে তওবা করা এবং পুনরায়
এমন কর্ম না করা; তবে
তার উপর কোন কাফ্ফারা বর্তাবে না।
তবে এগুলো কর্তন করার কারণে তাকে কোরবানী করা থেকে বারণ করা
হবে বিষয়টি এমন নয়‑
যেমনটি কিছু কিছু আম মানুষ ধারণা করে
থাকেন।
আর যদি ভুলবশতঃ কিংবা অজ্ঞতাবশতঃ এগুলো কেটে থাকেন কিংবা অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোন চুল পড়ে যায়
তাহলে এর জন্য সে ব্যক্তি গুনাহগার হবেন না। আর যদি এগুলো কাটাটা তার একান্ত
প্রয়োজন হয়ে পড়ে, তাহলে
তিনি এগুলো কাটতে পারেন; এর
জন্য তাকে কোন কাফ্ফারা দিতে হবে না। যেমন- কারো নখ ভেঙ্গে যদি তার কষ্টের কারণ
হয় তখন তিনি সে নখটি কেটে ফেলবেন। কিংবা কারো চুল যদি চোখের উপর নেমে আসে তাহলে
তিনি সে চুলগুলো কেটে ফেলবেন। কিংবা কোন ক্ষতস্থানের চিকিৎসার জন্য যদি চুল কাটা
প্রয়োজন হয় ইত্যাদি ক্ষেত্রে।(ফাতাওয়া আল-ইসলামিয়্যা,
২য় খণ্ড,
পৃ. ৩১৬-৩১৭।)
▬সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী
কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন,‘যে ব্যক্তি কুরবানী করতে ইচ্ছুক তার জন্য বিধান
হচ্ছে- তিনি যিলহজ্জ মাসের চাঁদ দেখার পর থেকে নিজের চুল,
নখ ও চামড়ার কোন অংশ কাটবেন না,
যতক্ষণ তিনি কুরবানী সম্পন্ন না করেন।
এক্ষেত্রে সে নিজ হাতে যব্হ করুক কিংবা অন্য কাউকে যব্হ করার দায়িত্ব দিক উভয়টা
সমান। আর যাদের পক্ষ থেকে কুরবানী করা হচ্ছে তাদের জন্য এসব বিধান নেই। যেহেতু
এমর্মে কোন দলীল নেই’।(ফাতাওয়া আল-লাজনা আদ-দায়েমাহ, ১১তম খণ্ড, পৃ. ৪২৬-৪২৭)
.▬সর্বোচ্চ
‘উলামা পরিষদের সম্মানিত সদস্য, বিগত শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ,
মুহাদ্দিস,
মুফাসসির ও উসূলবিদ,
আশ-শাইখুল ‘আল্লামাহ,
ইমাম মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল-‘উসাইমীন
(রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২১ হি./২০০১ খ্রি.] বলেছেন, নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকার বিধানটি শুধু কুরবানী
দাতার জন্য খাস। তিনি যাদের পক্ষ থেকে কুরবানী আদায় করবেন তাদের জন্য এ বিধান
প্রযোজ্য নয়। অর্থাৎ কোন ব্যক্তি যদি নিজের ও তার পরিবারের পক্ষ থেকে কুরবানী করেন,
তাহলে নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকার
হুকুমটি শুধু কুরবানীদাতার উপর বর্তাবে। পরিবারের বাকী সদস্যদের নখ-চুল কাটাতে কোন
সমস্যা নেই।
পক্ষান্তরে যে সকল
আলেম বলেন, পরিবারের
বাকী সদস্যদেরও নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকা যরূরী, তাদের এই মতটি দুর্বল। কেননা এখানে হাদীসের ভাষ্য
স্পষ্ট, হাদীসের
মধ্যে বলা হয়েছে ‘তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী দেয়ার ইচ্ছা রাখে’। রাসূল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) একথা বলেননি যে, ‘অথবা যার পক্ষ থেকে কুরবানী দেয়া হয়’। এছাড়া
রাসূলুল্লাহ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নিজ ও তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে
কুরবানী করেছেন, কিন্তু
তাদেরকে নখ-চুল কাটা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেননি (উসাইমীন,
মাজমূঊ ফাতাওয়া ওয়া রাসাইল খন্ড: ২৫
পৃষ্ঠা:১৮৮; ইসলাম,
সাওয়াল ওয়া জাওয়াব,
৫ম খণ্ড,
৪৫৪০ পৃ.)।
▬(১).উক্ত দুটি হাদীস প্রমাণ করে যে, কুরবানীর দেয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা ওয়াজিব নয় কেননা কুরবানীকে ন্যাস্ত করা হয়েছে ব্যক্তির ইচ্ছার উপর। বলা হয়েছে وَأَرَادَ بَعْضُكُمْ أَنْ يُضَحِّيَ) ‘তোমাদের মধ্যে যারা কুরবানী করতে চায়’আর যদি ওয়াজিব হত তাহলে ইচ্ছার উপর ন্যাস্ত করত না।
▬(২).জুমহুর ওলামাদের শক্তিশালী মতানুসারে উপরোক্ত
হাদীসের এ নির্দেশ ওয়াজিবের অর্থে এবং নিষেধ হারামের অর্থে ব্যবহার হয়েছে। কারণ,
তা ব্যাপক আদেশ এবং অনির্দিষ্ট নিষেধ,
যার কোন প্রত্যাহতকারীও নেই। কোন
ব্যক্তি ভুল বশত: নখ, চুল
ইত্যাদি কেটে ফললে তার জন্য কাফফারা নেই সে তওবা করবে। কিন্তু যদি কেউ জেনে-শুনে
ইচ্ছা করেই চুল-নখ কাটে, তবে
তার জন্য জরুরী যে, সে
যেন আল্লাহর নিকট ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) করে।
আর তার জন্যও কোন কাফফারা নেই। সে সবাভাবিক ভাবে কুরবানীই
করবে। আবার প্রয়োজনে (যেমন নখ ফেটে বা ভেঙ্গে ঝুলতে থাকলে বা মাথায় জখমের উপর চুল
থাকলে এবং ক্ষতির আশঙ্কা হলে) কেটে ফেলতে কোন দোষ নেই। কারণ,
সে মুহরিম (যে হাজ্জ বা ওমরার জন্য
ইহরাম বেঁধেছে তার) অপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ নয়, যার জন্য অসুবিধার ক্ষেত্রে মাথা মুন্ডিত করাও বৈধ করা
হয়েছে।
▬(৩).এই নির্দেশের পশ্চাতে কি হিকমত রয়েছে এ বিষয়ে
উলামায়ে কেরাম অনেক কথা বলেছেন। অনেকে বলেছেন: যুক্তি এই যে,
কোরবানীদাতা কিছু আমলে মুহরিমের মতই।
যেমন, কুরবানীর
মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যলাভ করা ইত্যাদি। তাই কোরবানীদাতাও মুহরিমের পালনীয় কিঞ্চিৎ
কর্তব্য পালন করতে আদিষ্ট হয়েছে ইবনুল কায়্যিম রহ. বলেছেন: ‘কুরবানি দাতা চুল ও নখ
বড় করে তা যেন পশু কোরবানি করার সাথে সাথে নিজের কিছু অংশ আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের
সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য কুরবানি [ত্যাগ] করায় অভ্যস্ত হতে পারেন এজন্য এ নির্দেশ
দেয়া হয়েছে।’
যদি কেউ যিলহজ মাসের প্রথম দিকে কুরবানি করার ইচ্ছা না করে
বরং কয়েকদিন অতিবাহিত হওয়ার পর কোরবানির নিয়ত করল সে কি করবে?
সে নিয়ত করার পর থেকে কুরবানীর পশু
যবেহ পর্যন্ত চুল ও নখ কাটা থেকে বিরত থাকবে।
▬(৪).এমন কোন ব্যক্তি যার চাঁদ দেখার পর কুরবানী করার
ইচ্ছা ছিল না, সে
চুল বা নখ কেটে থাকলে এবং তারপর কুরবানী করার ইচ্ছা হলে তারপর থেকেই আর তা কাটবে
না।
▬(৫).কুরবানী করার জন্য যদি কেউ কাউকে ভার দেয় অথবা
অসীয়ত করে, তবে
সেও নখ-চুল কাটবে না। অবশ্য ভারপ্রাপ্ত ব্যক্তি বা অসীয়ত এই নিষেধের শামিল হবে না।
অর্থাৎ তাদের জন্য নখ-চুল কাটা দূষণীয় নয়।
▬(৬).অনুরূপভাবে পরিবারের অভিভাবক কুরবানী করলে এই
নিষেধাজ্ঞা কেবল তার পক্ষে হবে; বাকী অন্যান্য স্ত্রী-পুত্র বা আত্মীয়দেরকে শামিল হবে না।
তাদের জন্য নির্দিষ্ট কুরবানী না থাকলে তারা নিজেদের চুল-নখ কাটতে পারে। যেহেতু
আল্লাহর রসূল (সা.) নিজ বংশধরের তরফ থেকে কুরবানী করতেন অথচ তিনি তাদেরকে নখচুল
কাটতে নিষেধ করেছেন বলে কোন বর্ণনা পাওয়া যায় না।
▬(৬).যে ব্যক্তি কুরবানী করার ইচ্ছা করে পুনরায় হাজ্জ
করার নিয়ত করে (অর্থাৎ হাজ্জও করে এবং পৃথকভাবে কুরবানীও করে) তবে ইহরাম বাঁধার
পূর্বে (যিলহজ্জের চাঁদ উঠে গেলে) চুল-নখাদি কাটা উচিত নয়। যেহেতু তা প্রয়োজনে
সুন্নাত। অবশ্য তামাত্তু হাজ্জকারী (হাজ্জের ওয়াজিব কুরবানী ছাড়া পৃথক কুরবানী
দেওয়ার নিয়ত থাকলেও) উমরাহ শেষ করে চুল ছোট করবে। কারণ তা উমরাহর এক ওয়াজিব কর্ম।
অনুরূপভাবে কুরবানীর দিনে পাথর মারার পর কুরবানী করার আগে মাথা নেড়া করতে পারে।
▬উল্লেখ্য যে,একটি হাদীসের আলোকে অনেকে বলেন কুরবানী দিতে অক্ষম
ব্যক্তিগণ কুরবানীর খালেছ নিয়তে যিলহজ্জ মাসের চাঁদ ওঠার পর নখ ও চুল না কাটলে সে
আল্লাহর নিকটে তা পূর্ণাঙ্গ কুরবানী হিসাবে গৃহীত হবে। তারা দলীল হিসাবে পেশ করা
হয় আবূ দাঊদ ২৭৮৯, নাসায়ী
৪৩৬৫, শারহু
মা‘আনির আসার ৬১৬১, ইবনু
হিব্বান ৫৯১৪, দারাকুত্বনী
৪৭৪৯, সুনানুল
কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯০২৮। মিশকাত হা/১৪৭৯কিন্তু হাদীসটির সনদ জয়ীফ কারন উক্ত
হাদীছের সনদে ঈসা ইবনু হিলাল আছ-ছাদাফী নামের একজন রাবী রয়েছে তাকে ইবনু হিব্বান
ব্যতীত কেউ নির্ভরযোগ্য বলেননি।
তবে ইমাম যাহাবী তার এ তাওসীক্ব করণকে প্রত্যাখ্যান করেছেন।
তাছাড়া ঈসা ইবনু হিলাল আছ-ছাদাফী থাকার কারণে শায়খ নাসির উদ্দিন আলবানী
(রাহিমাহুল্লাহ) হাদীছটিকে যঈফ বলেছেন। তার নিকটে উক্ত রাবী মাজহূল পর্যায়ের। তিনি
আরো বলেন, এর
মতনও ইযতিরাব। যদিও ইমাম হাকেম ও ইবনু হিব্বান তাকে সহীহ বলেছেন। কিন্তু তারা উভয়ে
হাদীস যাচাইয়ের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিছগণের নিকটে শৈথিল্য প্রদর্শনকারী হিসাবে খুবই
প্রসিদ্ধ (তাহক্বীক্ব মিশকাত, হা/১৪৭৯-এর টীকা দ্রঃ ;যঈফ আবু দাঊদ, হা/২৭৮৯-আলোচনা দ্রঃ; যঈফ নাসাঈ, হা/৪৩৬৫)।
.তাই তাদের মন্তব্য অনেক সময় গ্রহণযোগ্য নয়। আর শায়খ শু‘আইব
আরনাঊত্ব (রাহিমাহুল্লাহ)-সহ অন্য যারা হাসান বা সহীহ বলেছেন,
তারা ইবনু হিব্বানের মন্তব্যের আলোকেই
বলেছেন (তাহক্বীক্ব আহমাদ হা/৬৫৭৫)। অন্যদিকে মুহাদ্দিছ আব্দুল মুহসিন আল-আব্বাদ
আবুদাঊদের ভাষ্যের মধ্যে আলবানীর মন্তব্যটা উল্লেখ করেছেন। অনুরূপ দারাকুৎনীর
তাহক্বীক্বেও মুহাদ্দিছ সাইয়েদ ইবরাহীম হাদীসটিকে যঈফ বলেছেন (দারাকুৎনী হা/৪৭৪৯)।
এছাড়া তিরমিযীর ভাষ্যকার ইবনুল আরাবী আল-মালেকী
(৪৬৯-৫৪৩হিঃ) বলেন, لَيْسَ
فِي فَضْلِ الْأُضْحِيَّةِ حَدِيثٌ صَحِيحٌ কুরবানীর ফযীলত সংক্রান্ত কোন সহীহ হাদীছ নেই। উক্ত বক্তব্যকে
তুহফাতুল আহওয়াযী প্রণেতা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী সমর্থন করেছেন (তুহফাতুল
আহওয়াযী ৫/৬৩ পৃঃ) এক্ষেত্রে বলা যায় শায়খ আলবানী (রহঃ) তাহক্কীক অধিক গ্রহণযোগ্য
(কিছুটা নোট আল ইখলাস থেকে)
. পরিশেষে,উপরোক্ত আলোচনা থেকে একথা পরিষ্কার যে,প্রথম দুটি হাদীস দ্বারা প্রমানিত,
যিলহজ্জের চাঁদ উঠার পর থেকে
শুধুমাত্র কোরবানীদাতা চুল, নখ,পশম, চামড়া ইত্যাদি কাটতে পারবেন না। বাকিরা পারবেন।সে হিসাবে আজ
বিকাল হওয়ার আগেই যাদের নখ,চুল
কাটার প্রয়োজন তারা কেটে নিবেন, সূর্যাস্তের পর থেকে নখ চুল কাটা থেকে বিরত থাকবেন।পাশাপাশি
তৃতীয় হাদীসটি সহীহ জয়ীফ হওয়া নিয়ে দুটি মতামত লক্ষ করা যায় তবে বিশুদ্ধ মত হল
হাদীসটি সহীহ নয়।
তবে যেহেতু হাদীসটি নিয়ে মতানৈক্য রয়েছে সেক্ষেত্রে কিছু
সংখ্যক আলেম বলেছেন যারা অনেক গরীব অর্থাৎ ইচ্ছে থাকা সত্বেও অর্থের অভাবে কুরবানী
দিতে অপারগ তারাও যদি খালেছ নিয়তে এ হুকুমটি পালন করেন তবে তারাও আল্লাহর নিকটে তা
পূর্ণাঙ্গ কুরবানী হিসাবে সওয়াব পেতে পারেন বলে আশা করা যায় কেননা রাসূলুল্লাহ
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ) বলেছেন, إِنَّ لَكَ مَا احْتَسَبْتَ، ‘তুমি (কোন কাজে) নেকীর প্রত্যাশা করলে তা অবশ্যই
তোমার জন্য নির্ধারিত হবে’।[সহীহ মুসলিম হা/৬৬৩; ইবনু মাজাহ হা/৭৮৩]
মহান আল্লাহ আমাদেরকে যিলহজ্জের প্রথম ১০ দিনের আমলগুলো
যথাযথভাবে পালন করার তৌফিক দান করুক।(মহান আল্লাহই অধিক জ্ঞানী)।
_____________________________
উপস্থাপনায়,জুয়েল মাহমুদ সালাফি, editor by rasikul islam
0 Comments