প্রশ্ন:বর্তমানে অনেক যায়গায় কুরবানীর পশুর সাথে আক্বীক্বা করার
প্রচলন দেখা যায়।শরী‘আতে এর কোন অনুমতি আছে কি?
▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬
উত্তর : ইসলামী শরীয়তের যেমন ইবাদত ছাড়া অন্যান্য সকল ক্ষেত্রে
সব কিছুই হালাল, যতক্ষণ কুরআন ও হাদীস থেকে হারাম হওয়ার দলীল পাওয়া না যাবে।
তেমনি ইবাদতের ক্ষেত্রে মৌলিক নীতিমালার মূল হল যে সকল ইবাদতের
কোন দলিল নেই সেটা বাতিল এবং পরিত্যাজ্য যেমন সহীহ মুসলিম-এর বর্ণনায় রয়েছে যে, (مَنْ عَمِلَ عَمَلًا لَيْسَ عَلَيْهِ أَمْرُنَا فَهُوَ رَدُّ) অর্থাৎ- যে ব্যক্তি এমন কাজ
করলো যা দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় এবং যাতে আল্লাহ ও তাঁর রসূলের অনুমোদন নেই, তা দ্বীন
বহির্ভূত এবং পরিত্যাজ্য(সহীহ বুখারী,২৬৯৭ মুসলিম,১৭১৮)
.
ইসলামী শরীয়তে কুরবানীর সাথে আক্বীক্বা দেয়ার কোন দলীল নেই।
তাই এটা জায়েয নয়।
সুতরাং কেউ দিলে তা শরী‘আত সম্মত হবে না। তাছাড়া শিশু জন্মের
সাত দিনে আক্বীক্বা করা সুন্নাত বিনা কারণে আক্বীকা দেওয়াতে বিলম্ব করা সুন্নাতের
বিরোধীতা করার অন্তর্ভুক্ত।
দারিদ্র বা অন্য কোন কারণে যদি কোন ব্যাক্তি ৭ দিনে আক্বীকা
করতে অক্ষম হয়, তবে যখনই অভাব দূর হবে,তখনই আক্বীকা করা জায়েজ রয়েছে।(তিরমিযী,
হা/১৫২২; মিশকাত, হা/৪১৫৩, সনদ সহীহ ইবনুল ক্বাইয়িম, তুহফাতুল মাওদূদ ৬৩ পৃঃ; আলবানী,
সিলসিলাতুল হুদা ওয়ান নূর, অডিও ক্লিপ নং- ১৯৯; ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা, ফৎওয়া নং ১৭৭৬;
মাজমূ‘ ফাতাওয়া উছায়মীন ২৫/২১৫)।
.
তাছাড়া কুরবানী ও
আক্বীক্বা দু’টি পৃথক ইবাদত।
কুরবানী আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার অন্যতম মাধ্যম (আল-কাওসার, ১০৮/২;
আল-হজ্জ, ২২/৩৭)।
কুরবানীর মাংস মানুষ নিজে খাবে এবং ফকীর-মিসকীনকে দিতে বাধ্য
(আল-হজ্জ, ২২/৩৬)। পক্ষান্তরে আক্বীকা পিতার উপরে সন্তান প্রতিপালনের দায়িত্বসমূহের
মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, যা জন্মের সপ্তম দিনে করতে হয় (আবূ দাঊদ, হা/২৮৩৭;
নাসাঈ, হা/৪২২০; মিশকাত, হা/৪১৫৩)।
আক্বীকার গোশত নিজে খাবে আত্মীয়স্বজন ও ফকীর-মিসকীনকে দিবে।
কিন্তু ফকীর-মিসকীনকে দিতেই হবে এমনটি বাধ্যতামূলক নয় যেমনটি কুরবানীরে ক্ষেত্রে দেয়া
বাধ্যতামূলক।
.
সুতরাং কারো সন্তান ও কুরবানী একই দিনে পড়লে সাধ্যমতে দু’টিই
আদায় করবে। অন্যথায় শুধুমাত্র আক্বীকা করবে। কেননা আক্বীকা জীবনে একবার হয় এবং তা
সপ্তম দিনেই করতে হয় [আবুদাঊদ, নাসাঈ, তিরমিযী, ইবনু মাজাহ, মিশকাত হা/৪১৫৩; ইরওয়া
হা/১১৬৫]
কিন্তু একই সাথে কুরবানীর পশুতে আক্বীক্বার নিয়ত করা শরী‘আত
সম্মত নয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বা ছাহাবায়ে কেরামের যুগে
এ ধরনের আমলের অস্তিত্ব ছিল না।( ইমাম শাওকানী, নায়লুল আওত্বার, ৬ষ্ঠ খণ্ড, পৃ. ২৬৮,
‘আক্বীক্বা’ অধ্যায়; মির‘আতুল মাফাতীহ শারহু মিশকাতিল মাছাবীহ, ২য় খণ্ড, পৃ. ৩৫১ও ৫ম
খণ্ড, পৃ. ৭৫)
.
উল্লেখ্য যে,কুরবানী ও আক্বীক্বা দু’টিরই উদ্দেশ্য আল্লাহর নৈকট্য
হাছিল করা’ এই (ইসতিহসানের) এই যুক্তি দেখিয়ে কোন কোন হানাফী বিদ্বান কুরবানীর গরু
বা উটে এক বা একাধিক সন্তানের আক্বীক্বা সিদ্ধ বলে মত প্রকাশ করেছেন (যা এদেশে অনেকের
মধ্যে চালু আছে)অথচ হানাফী মাযহাবের স্তম্ভ বলে খ্যাত ইমাম আবু ইউসুফ (রহঃ) এই মতের
বিরোধিতা করেন।
ইমাম শাওকানী (রহঃ) এর ঘোর প্রতিবাদ করে বলেন, এটি শরী‘আত, এখানে
সুনির্দিষ্ট দলীল ব্যতীত কিছুই প্রমাণ করা সম্ভব নয়(বিস্তারিত দেখুন বুরহানুদ্দীন মারগীনানী,
হেদায়া (দিল্লী : ১৩৫৮ হিঃ) ‘কুরবানী’ অধ্যায় ৪/৪৩৩; আশরাফ আলী থানভী, বেহেশতী জেওর
(ঢাকা : এমদাদিয়া লাইব্রেরী, ১০ম মুদ্রণ ১৯৯০) ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায় ১/৩০০ পৃঃ নায়লুল
আওত্বার, ‘আক্বীক্বা’ অধ্যায় ৬/২৬৮ পৃঃ)।
.
মহান আল্লাহ সবাইকে পরিপূর্ণ সুন্নাহ অনুসরন করার তৌফিক দান
করুন (আল্লাহই অধিক জ্ঞানী)।
◾যিলহজ্জ মাসের প্রথম ১০ দিনের আমল ও কুরবানী সম্পর্কে ধারাবাহিক ১৫ পর্বের আজ
নবম পর্ব পূর্বের ৮ টি পর্ব কমেন্টে দেখুন।
_________________________
উপস্থাপনায়,
জুয়েল মাহমুদ সালাফি
0 Comments