চাইলেই তিনি সিরিয়া, মিশর, জর্ডান, ইরানকে নিয়েই ইজরাইল
শেষ করে দিতে পারেন। পারেন কি?
ছোট্ট একটু বাধা। ২০২২ এর শুরুর দিকে পেজের প্রথন দিকের
কোন এক লেখায় ব্যখ্যা করেছিলাম গ্রিনব্যাকের ইফেক্ট কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে।
এখনো বিশ্বের অধিকাংশ দেশের রিজার্ভ কারেন্সি ডলার।
কিন্তু এই রিজার্ভ কারেন্সির হিসাবে ডলার রিজার্ভ হিসাবে রাখা হয়, তার পুরোটা কোন দেশের
কেন্দ্রীয় ব্যংকের কাছে থাকেনা। অধিকাংশ দেশের রিজার্ভের বিশাল অংশ ইউএস ট্রেজারিতে
বিনিয়োগ করা থাকে।
আন্তর্জাতিক ট্রেডের মাধ্যমে পাওয়া ডলার গুলিও বিভিন্ন
আন্তর্জাতিক ব্যংকের ফরেক্স একাউন্টে থাকে।
ডলারের প্রভাব এমন জিনিস, ধরুন তুরস্কের হার্ড কারেন্সি
রিজার্ভ বর্তমানে $৩০ বিলিয়নের আসেপাশে। এখন যদি আমেরিকা ইজ্রায়েলকে হামলা করার জন্য
নাখোশ হয়ে ডলারে নিষেধাজ্ঞা দেয়, এই দেশগুলি পঙ্গু হয়ে যাবে।
বিশ্ব বাণিজ্যে ডলারের অবস্থানকে এমন পর্যায়ে নিয়ে
যাওয়া হয়েছে যে, যদি সামরিক হামলা নাও করে শুধুমাত্র ডলারের স্যাংশন এটম বোমার থেকেও
বেশি মারাত্মক আঘাত হানতে পারে একটা দেশের উপর।
রাশিয়ার রিজার্ভ যখন আটকে দিল, রাশিয়ার মত শক্তিশালী
দেশকেও ভয়ংকর শক খেতে হয়েছিল। যেহেতু রাশিয়া অনেক বড় দেশ তারা এটার প্রভাব মানিয়ে নিতে
পেরেছে।
তারাও বিশ্ব মোড়ল দেশগুলির একটা। চুনোপুটির সেই চান্সেস
নাই। কিন্তু রাশিয়ার অর্থনৈতিক সমস্যা স্পষ্ট হয় ভারতের সাথে দরকষাকষি দেখলে।
শুরুতে চিপায় পড়ে রাশিয়া রুপিতে ট্রেড করে ভারতের সাথে।
এতে রাশিয়ার রুপির মজুদ অনেক বেড়ে যায় কিন্তু এই মুদ্রা দিয়ে কার্যত রাশিয়া কোন কাজে
ব্যবহার করতে পারেনা। সম্প্রতি রাশিয়া ভারতের কাছে ডিমান্ড করেছে পেমেন্ট ইউয়ানে দিতে
যেটা ভারত রাজি নয় বলে জানিয়েছে।
রাশান কোম্পানির সাথে সম্পর্ক থাকায় তুরস্কের কয়েকটা
কোম্পানী ও এক ব্যক্তির উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা এসেছে।
এই কথাগুলি বলার কারন হল, যুদ্ধ ছাড়াও যেসব আরবদেশ
ইজরাইল আক্রমণ করতে চাইবে তাদের রিজার্ভ এমাউন্টের যেই অংশ ফেডারেল রিজার্ভের কাছে
রয়েছে সেগুলা ফ্রিজ করলেই দেশগুলিতে হাহাকার লেগে যাবে।
বিষয়গুলি এতটা সহজ না যে বর্তমানে শুধুমাত্র সৈন্য
সংখ্যা আর অস্ত্র ভান্ডার দিয়েই যুদ্ধ করা যায়। যুদ্ধের ডাইমেনশন চেঞ্জ হয়েছে অনেক।
সৌদি আরবের পেট্রো ডলার প্রতিষ্ঠা আমেরিকাকে অন্যসব
দেশের থেকে সুপ্রিম সুপার পাওয়ার দিয়েছে ৭০ এর দশক থেকে। নিক্সন শকের পর ফিয়াট কারেন্সির
আন্তর্জাতিক মুদ্রার বেনিফিটের নামে ডলার নিজেই এখন যেকোন দেশকে শাসাতে সক্ষম।
খুব সম্ভবত এই পরিস্থিতি উপলব্ধি করেই ব্রিকসের লোকাল
কারেন্সি প্রোমটের উপর জোর দেয়া হচ্ছে। আগেই বলেছি, শুধু আবেগ দিয়ে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়া
যাবে কিন্তু সঠিক স্ট্রাটেজি ছাড়া এগোলে মাওয়ার ইলিশ মাছের লেজ ভর্তার মত ডলে দিবে।
আর এর প্রেক্ষিতেই যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র ক্ষমতার
অপব্যবহার বন্ধে চীন ও রাশিয়া নেতৃত্বে বৈশ্বিক ব্যলান্স জরুরি। ব্রিকসের সফলতা, ডলারের
অবস্থান দুর্বল হওয়া আর চীন রাশিয়ার এগিয়ে আসা ছাড়া মধ্যপ্রাচ্য সমাধানের স্বপ্ন আপাতত
ভুলে যান।
হামস প্রতিনিধি রাশিয়া সফর করেছে। চীনা যুদ্ধ জাহাজ
মধ্যপ্রাচ্যে কার্টেসি কলে আছে। কিন্তু ডলারের পতন রাতারাতি হবার বিষয় নয়।
যুদ্ধে না জড়িয়ে আরব দেশগুলি চাইলে লোকাল কারেন্সির
উপর ভিত্তি করে ব্রিকস ভিত্তিক মুক্ত মুদ্রার স্বাধীনতায় নিজেদের অবদান আরো শক্ত করতে
পারে। এবং আমার মনে হয় সেটাই করা উচিত। ইকুয়াল ফুটিং এ না দাড়িয়ে ন্যায় বিচারের অধিকার
চাওয়া অনেকটাই অর্থহীন।
#wasimahin
লেখা: অক্টোবর ২৭, ২০২৩
0 Comments