Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

“তোমরা দ্রতবেগে হাঁটবে” মুমিন্দের এই ভাবে চলা উচিৎ... রাসূল (সা.)-এর হাঁটাচলার ধরনঃ

 


রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

“তোমরা দ্রতবেগে হাঁটবে”।

সাহাবায়ে কিরাম বলেন, তারপর আমরা দ্রুত হেটে দেখলাম এটি আমাদের জন্য অতি হালকা।

[- সহীহ ইবন খুযাইমাহ, নং- ২৫৩৭; - সহীহুল জামে নং- ৪৬৫ ]

সুতরাং মুমিন যখন হাঁটবে, চলবে, ফিরবে তখন সে একটু দ্রুত হাঁটবে।


باب استحباب النسل في المشي عند الإعياء من المشي ليخف الناسل و يذهب بعض الأعياء عنه

(4/139)

2537 – حدثنا إسحق بن منصور ثنا روح بن عبادة أخبرنا ابن جريح أخبرنا جعفر بن محمد عن أبيه عن جابر قال Y شكا ناس إلى رسول الله صلى الله عليه و سلم المشي فدعا بهم و قال : عليكم بالنسلان فنسلنا فوجدناه أخف علينا K قال الأعظمي : إسناده صحيح

(4/140)

যে কোনো মানুষের দৈহিক গঠনের সঙ্গে দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রকাশভঙ্গি না জানলে দৈহিক সৌন্দর্য আসলে অস্পষ্ট থেকে যায়। চলাফেরা ও কাজেকর্মের মধ্য দিয়েই ব্যক্তিকে চেনা যায় সবচেয়ে বেশি।

কেউ কীভাবে হাঁটেন, খাবার খান, কথা বলেন, কাঁদেন কিংবা হাসেন ইত্যকার বিষয়াদি জানলেই মূলত কল্পনায় ব্যক্তির পূর্ণছবি দাঁড় করানো সম্ভব হয়।

রাসুল(সা.)-এর হাঁটাচলা ছিল একজন প্রাণবন্ত ও উদ্যমী পুরুষের মতো। তার হাঁটার গতি ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে একটু দ্রুত।

আনাস (রা.) বলেন, তিনি চলার সময় সম্মুখ পানে একটু ঝুঁকে হাঁটতেন।

কোথাও গেলে পথে ছড়িয়ে পড়া সুগন্ধির সূত্র ধরে বোঝা যেতো যে, তিনি এই পথ ধরে গেছেন।

[সহীহ মুসলিম, হাদিস: আন্তর্জাতিক নাম্বারঃ ২৩৩০; হাদীস একাডেমীঃ ৫৯৪৮, ইফাঃ ৫৮৪৬; ইসেঃ৫৮৮১]

 লাকিত ইবনে সাবুরা (রা.) একবার নবীজি (সা.)কে খুঁজতে আয়েশার কাছে এলেন। সেখানে তাকে পেলেন না। ইতোমধ্যে নবীজি(সা.) সেখানে এলেন মন্থর গতিতে, পৌরুষভরে একটু ঝুঁকে হেঁটে হেঁটে।

[আবু দাউদ, হাদিস: ১৪৩; ৪৮৬৩, হাকিম, আহমাদ (৪/২১১), দারিমী (অধ্যায়ঃ পবিত্রতা, হাঃ ৭০৫)

আলী (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) হাঁটার সময় একটু ঝুঁকে হাঁটতেন, যেন কোনো উঁচু ভূমি থেকে অবতরণ করছেন। যেন তিনি ঢালবিশিষ্ট জায়গা দিয়ে হেঁটে চলছেন। আমি তার পূর্বে কিংবা তার পরে আর কাউকে তার মতো দেখিনি।

সহীহঃ মুখতাসার শামায়িল (৪০)। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৬৩৭)

আবুত তুফাইল (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে আমি দেখেছি। আমি বললাম, কেমন দেখেছেন? তিনি বললেন, সাদা রং মিশ্রিত ও সুদর্শন। আর তিনি যখন হাঁটতেন তখন মনে হতো, তিনি যেন নীচু স্থানে নামছেন।

[সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃতঃ ৪৮৬৪)

এ ছাড়াও অন্যান্য বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, হাঁটার সময় তিনি শক্তি ও উদ্যম রাখতেন এবং দ্রুত হাঁটতেন। ‘মনে হয় যেন উঁচু ভূমি থেকে নীচে নামছেন’–এর অর্থ এটাই। হাঁটার এই ভঙ্গিটি তাঁর পৌরুষেরও প্রকাশ।

রাসুল(সা.)-এর চলার এ পদ্ধতিমধ্যম ধরনের। একেবারে শরীরের সব শক্তি ছেড়ে প্রাণহীন হয়ে অথবা উদভ্রান্তের মতো অস্থির হাঁটাকোনোটাই নয়।

তেমনই অহঙ্কারী ও দাম্ভিক চলনও নয়। আল্লাহ–তায়ালাও কুরআনে তার পছন্দের বান্দাদের হাঁটার বৈশিষ্ট্য এভাবে বর্ণনা করেছেন, ‘দয়াময়ের বান্দা তারা, যারা জমিনের বুকে চলাফেরা করে নম্রভাবে।’

(সুরা ফুরকান, আয়াত ৬৩)

অনেকে রাসুল (সা.)-এর সিরাত না জানার কারণে জমিনে অপরাধী ও দুর্বলদের মতো হাঁটাকে পছন্দ করে থাকেন, যা মোটেও উচিত নয়। পূর্ববর্তী মুসলিম মনীষীরা দুর্বল মানুষের মতো হাঁটা পছন্দ করতেন না।

 উমর (রা.) একজন যুবককে ধীরগতিতে হাঁটতে দেখে জিজ্ঞেস করলেনকী ব্যাপার! তুমি কি অসুস্থ? সে জবাব দিল, না হে আমিরুল মুমিনিন! উমর (রা.) তাকে চাবুক দিয়ে তাড়া করলেন এবং দৃঢ়পদে হাঁটার নির্দেশ দিলেন।

ইবনুল কাইয়ুম (রহ.) ‘জাদুল মাআদ নামক কিতাবে হাঁটার ১০টি পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন। এরপর বলেছেন, সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ হাঁটা হলো নম্রভাাবে ঈষৎ ঝুঁকে ঝুঁকে হাঁটা। অর্থাৎ হাঁটাচলায় নববী পন্থা অবলম্বন করা।

 উম্মুল মুমিনীন ’আয়িশাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, একবার আমরা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সব স্ত্রী তাঁর নিকট জমায়েত হয়েছিলাম। আমাদের একজনও অনুপস্থিত ছিলাম না। এমন সময় ফাতেমাহ (রাঃ) পায়ে হেঁটে আসছিলেন। আল্লাহর কসম! তাঁর হাঁটা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হাঁটার মতই ছিল। তিনি যখন তাঁকে দেখলেন, তখন তিনি আমার মেয়ের আগমন শুভ হোক বলে তাঁকে সম্বর্ধনা জানালেন।

(বুখারি, হাদিস : ৬২৮৬)

উপরোক্ত হাদিসগুলো থেকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় লক্ষণীয়    

১. হাঁটার সময় তিনি শক্তি ও উদ্যম রেখে সজোরে হাঁটতেন। মনে হয় যেন উঁচু ভূমি থেকে নিচে নামছেন।

২. হাঁটার সময় গতিশীল ও ঊর্ধ্বগামী হাঁটতেন। হাঁটার এ ধরন তাঁর পৌরষেরও প্রকাশ।

৩. হাঁটার সময় তিনি মাটি থেকে পরিপূর্ণভাবে পা ওঠাতেন তারপর পা ফেলতেন। পা মাটিতে ছেঁচড়ে চলতেন না।

এছাড়াওঃ আযাবের স্থান দিয়ে চলার সময় দ্রুত চলা, ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রহঃ)

বাতনে মুহাস্সার নামক স্থানে (আবরাহার বাহিনী যেখানে ধ্বংস হয়েছিল) এসে তিনি উটকে দ্রুত চালালেন।

যে সমস্ত স্থানে আল্লাহর শত্রুদের উপর আযাব নাযিল হয়েছিল সে সমস্ত স্থান অতিক্রম করার সময় এটিই ছিল তাঁর সুন্নাত। সুতরাং তিনি সেখান দিয়ে যাওয়ার সময় আযাবের ভয়ে দ্রুত চললেন।

কারণ সেখানেই হসত্মী বাহিনীকে আল্লাহ্ তা‘আলা ধ্বংস করেছিলেন। কুরআনের সূরা ফীলে এই ঘটনা বর্ণিত হয়েছে।

                                               by rasikul islam


Post a Comment

0 Comments