Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

হে ঈমানদারগণ, তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার-পরিজনকে আগুন হতে বাঁচাও যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর; ..

 


হে বিশ্বাস স্থাপনকারীগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার পরিজনকে রক্ষা কর অগুন হতে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে নির্মম হৃদয় কঠোর স্বভাবের মালাইকা (ফেরেশতা), যারা অমান্য করেনা আল্লাহ যা তাদেরকে আদেশ করেন তা এবং তারা যা করতে আদিষ্ট হয় তা’ই করে।

[৬৬ সূরাঃ আত-তাহরীমঃ- ৬৬:০৬]

এ আয়াতে আল্লাহ তা’আলা মুমিনদের প্রতি অতিশয় গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব অর্পণ করছেন।

তাহল: একজন মু’মিন যেমন আল্লাহ তা’আলাকে ভয় করে জান্নাতের আশায় জাহান্নামের ভয়ে নিজে সৎআমল করবে এবং অসৎআমল বর্জন করে নিজেকে সংশোধন করে নেবে ঠিক তেমনিভাবে তার পরিবারকেও ইসলামী শিক্ষা প্রদান এবং শরীয়তের বিধি-বিধান পালন ও বিধি-নিষেধ থেকে বিরত রাখার মাধ্যমে জাহান্নামের হাত থেকে রক্ষা করবে।

এভাবে প্রত্যেক মু’মিন যদি পরিবারসহ নিজে জাহান্নাম থেকে বাঁচতে আপ্রাণ চেষ্টা করে তাহলে আখিরাতে যেমন সফলকাম হবে দুনিয়াতেও একটি আদর্শ সমাজে পরিণত হবে।

যেখানে থাকবে না কোন ফেতনা-ফাসাদ, অশ্লীলতা বেপর্দা ইত্যাদি। কারণ যারাই ফেতনা-ফাসাদ করছে, অশ্লীল ও বেপর্দায় চলা ফেরা করছে তারা কারো না কারো পরিবারভুক্ত।

‘আবদুল্লাহ্ ইবনু ‘উমার (রাযি.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম -কে বলতে শুনেছি,

তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল, প্রত্যেককে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে। পরিবারের অভিভাবক তার পরিবারের দায়িত্বশীল, তাকে তার দায়িত্ব সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।

ইবনু ‘উমার (রাযি.) বলেন, আমার মনে হয়, রাসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেনঃ পুত্র তার পিতার ধন-সম্পদের রক্ষক এবং এগুলো সম্পর্কে তাকে জিজ্ঞেস করা হবে। তোমরা সবাই দায়িত্বশীল এবং সবাইকে তাদের অর্পিত দায়িত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন করা হবে।

[সহীহ বুখারী হা. ৮৯৩,ইফাঃ ৮৪৯,২৪০৯, ২৫৫৪, ২৫৫৮, ২৭৫১, ৫১৮৮, ৫৬০০, ৭১৩৮)  সহীহ মুসলিম হা. ১৮২৯)]

অর্থাৎ জাহান্নামের জ্বালানী হবে মানুষ ও পাথর। কেউ বলেছেন: পাথর দ্বারা উদ্দেশ্য হল সে সকল পাথর যার ইবাদত করা হত, যাতে পাথরের ইবাদতকারীরা বুঝতে পারে পাথর ইবাদত পাওয়ার যোগ্য ছিল না এবং তারা আজ তাদের কোন উপকার করতে পারছে না বরং নিজেরাই জাহান্নামে যাচ্ছে।

যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন :

তোমরা এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যাদের ‘ইবাদত কর সেগুলো তো জাহান্নামের ইন্ধন; তোমরা সকলে তাতে প্রবেশ করবে।

(সূরা আম্বিয়া ২১: ৯৮)

অর্থাৎ জাহান্নামের প্রহরী ফেরেশতাগণ নির্মম হৃদয়বিশিষ্ট ও কঠোর স্বভাবের। তারা সর্বদা আল্লাহ তাআলার আনুগত্য করে, তাদের যা আদেশ করা হয় তারা তার বিরোধিতা করে না।

‘আজ তোমরা কোন প্রকার অজুহাত পেশ কর নাঅর্থাৎ কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা জাহান্নামীদেরকে তিরস্কার করে এ কথা বলবেন। সেদিন ওজর পেশ করার কোন অবকাশ থাকবে না। কারণ তারা দুনিয়াতে যা কিছু আমল করেছে কেবল তারই প্রতিদান প্রদান করা হবে।

একান্ত বিশুদ্ধ তাওবা’ উমার (রাঃ) বলেছেন : তা হল গুনাহ করার পর তাতে পুনরায় লিপ্ত না হওয়া। (ইবনু জারীর)

আল্লামা ইবনু কাসীর (রহঃ) বলেন :

দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ তাওবা।

 এরূপ তাওবার পাঁচটি শর্ত;

১. একমাত্র আল্লাহ তাআলার জন্যই তাওবা করবে, অন্য কোন লোক দেখানোর জন্য নয়।

২. কৃত অপরাধের জন্য অনুতপ্ত হওয়া।

৩. কৃত অপরাধ থেকে ফিরে আসা। যদি মানুষের হক থাকে তাহলে তা ফেরত দেওয়া।

৪. এ দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা যে, ভবিষ্যতে কখনো এরূপ কাজে জড়িত হবে না।

৫. সময়ের আগে তাওবা করতে হবে। অর্থাৎ মৃত্যুর পূর্বেই এবং পশ্চিমাকাশে সূর্য উদয় হওয়ার পূর্বেই তাওবা করতে হবে।

যেমন, আল্লাহ তাআলা বলেন ;

‘‘আর তাদের জন্য কোন তাওবা কবূল করা হয় না যারা পাপ কাজ করতেই থাকে এমনকি তাদের নিকট যখন মৃত্যু উপস্থিত হয়, তখন সে বলে আমি এখন তাওবা করছি।

(সূরা নিসাঃ ৩ : ১৮, শরহু আকিদাহ ওয়াসিতিয়াহ)

হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ্ ঐ ব্যক্তিকে রহমত করুন, যে নিজে রাতে সালাত আদায় করতে দাঁড়িয়েছে, এবং তার স্ত্রীকে জাগিয়েছে, সে যদি দাঁড়াতে অস্বীকার করে তার মুখে পানি ছিটিয়েছে। আল্লাহ ঐ মহিলাকেও রহমত করুন যে, নিজে রাতে সালাত আদায় করতে দাঁড়িয়েছে এবং তার স্বামীকে জাগিয়েছে, যদি সে দাঁড়াতে অস্বীকার করে তার মুখে পানি ছিটিয়েছে।

[আবু দাউদ: ১৩০৮, ১৪৫০, ইবনে মাজহ: ১৩৩৬ , নাসায়ীঃ ১৬০৯, আহমাদঃ ৭৩২২,৭৩৬২,৭৪০৪,৯৩৪৪ ইবনে মাজহ: ১৩৩৬; মিশকাতঃ ১২৩০ ]

হাদীসে আরও এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সালাতের জন্য সাত বছর বয়সে পৌছলেই নির্দেশ দাও, আর তাদেরকে দশ বছর হলে তাদেরকে (শিক্ষামূলক) প্রহার কর।‘ আর তাদের শোয়ার জায়গা পৃথক করে দাও।

 ফক্বীহগণ বলেন, এইভাবে তাদেরকে রোযা রাখারও আদেশ দিতে হবে এবং অন্যান্য শরীয়তী বিধি-বিধানের অনুসরণ করার শিক্ষা তাদেরকে দিতে হবে। যাতে সাবালক হওয়ার সাথে সাথে তাদের মধ্যে সত্য দ্বীন মানার অনুভূতি সৃষ্টি হয়ে যায়।

(ইবনে কাসীর)

[আবু দাউদ: ৪৯৪-৯৫, মুসনাদে আহমাদ: ২/১৮০; তিরমিযী হা. ৪০৭, সহীহ)।]

 অনুরূপভাবে পরিবার পরিজনকে সালাতের সময়, সাওমের সময় হলে স্মরণ করিয়ে দেয়াও এর অন্তর্ভুক্ত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখনই বিতর পড়তেন তখনি আয়েশা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহাকে ডাকতেন এবং বলতেন, “হে আয়েশা! দাঁড়াও এবং বিতর আদায় কর।

 [সহীহ মুসলিম, ৭৪৪, মুসনাদে আহমাদ: ৬/১৫২]                                      

 আয়াত হতে শিক্ষণীয় বিষয়:-

১. মুমিনরা যেমন নিজে জাহান্নাম থেকে বাঁচবে তেমন পরিবারকেও বাঁচাবে।

২. আখিরাতে আল্লাহ তাআলা কেবল কৃতকর্মের প্রতিদান দেবেন।

৩. তাওবার শর্তসমূহ জানলাম।

৪. মুমিনের চারপাশে কিয়ামতের দিন নূর থাকবে।

৫. খালেস তাওবার ফলাফল জানতে পারলাম।

ai theke.............

আত-তাহরীম ৬৬:০৬ আয়াতের বিশদ ব্যাখ্যা

আপনি আত-তাহরীম সূরার ৬ষ্ঠ আয়াত সম্পর্কে জানতে আগ্রহী। এই আয়াতে মূলত মুমিনদেরকে নিজেদের এবং তাদের পরিবারবর্গকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার জন্য আদেশ করা হয়েছে। আসুন এই আয়াতটি বিস্তারিতভাবে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করি:

আয়াতের অর্থ:

হে মুমিনগণ! তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবারবর্গকে রক্ষা কর সেই আগুন থেকে, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। ৭ তাতে নিয়োজিত আছে কঠোর স্বভাব, কঠিন হৃদয় ফেরেশতাগণ, যারা আল্লাহর কোন হুকুমে তাঁর অবাধ্যতা করে না এবং সেটাই করে, যার নির্দেশ তাদেরকে দেওয়া হয়।  

আয়াতের ব্যাখ্যা:

  • নিজেদের ও পরিবারকে রক্ষা: এই আয়াতে মুমিনদেরকে নিজেদের পাশাপাশি তাদের পরিবারবর্গকেও জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার জন্য আদেশ করা হয়েছে। এখানে পরিবারবর্গ বলতে স্ত্রী, সন্তান, আত্মীয়স্বজন এবং সম্পদের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের বোঝায়।
  • জাহান্নামের আগুন: এই আগুন কেবল শারীরিক আগুন নয়, বরং এটি আল্লাহর অবাধ্যতা ও গুনাহের ফলে প্রাপ্ত শাস্তি।
  • ইন্ধন: এই আগুনের ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর। এখানে মানুষ বলতে কাফির ও গুনাহগার ব্যক্তিদের বোঝায়।
  • ফেরেশতাগণ: জাহান্নামে কঠোর স্বভাবের ফেরেশতাগণ নিয়োজিত থাকবে, যারা আল্লাহর আদেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করবে।
  • আদেশ পালন: এই ফেরেশতাগণ আল্লাহর যে কোন আদেশ অমান্য করবে না এবং যা করতে আদেশ করা হবে, তাই করবে।

আয়াতের শিক্ষা:

  • সতর্কতা: এই আয়াত আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে সাবধান থাকার জন্য সতর্ক করে।
  • কর্মের ফল: আমাদের আমলের ভিত্তিতে আমরা জান্নাত বা জাহান্নামে যাব।
  • পরিবারের দায়িত্ব: আমরা আমাদের পরিবারবর্গকে ইসলামের শিক্ষা দিয়ে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করার জন্য দায়ী।
  • আল্লাহর আদেশ পালন: আমাদের আল্লাহর আদেশ পালন করে জীবন যাপন করা উচিত।

সারসংক্ষেপ:

আত-তাহরীম সূরার ৬ষ্ঠ আয়াত আমাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে নিজেদের ও পরিবারবর্গকে রক্ষা করার জন্য সতর্ক করে। এটি আমাদেরকে ইসলামী জীবনযাপন করার এবং আল্লাহর আদেশ পালনের গুরুত্ব বুঝতে সাহায্য করে।

Post a Comment

0 Comments