Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

নতুন বছরের ক্যালেন্ডার উল্টানোর আগে একটু চিন্তা ভাবুন করুন.....

 

নতুন বছরের ক্যালেন্ডার উল্টানোর আগে একটু ভাবুন

১) একটি বছর অতিবাহিত হওয়া মানে মূল্যবান জীবনের একটি অংশ খসে পড়া। কবরমুখী যাত্রার এই টার্নিং পয়েন্টে এসে আনন্দ-ফূর্তিতে মেতে থাকা কোনো বুদ্ধিমান মানুষের কাজ হতে পারে না। জীবনের প্রতিটি স্টপেজে দাঁড়িয়ে একজন বুদ্ধিমান লোক নিজের আয়-ব্যয়ের হিসাব করবে— এটাই স্বাভাবিক।

উমর (রা.) বলেন, ‘তোমরা হিসাব গ্রহণ করার পূর্বেই নিজের হিসাব নিজেই নিয়ে রাখ।’

(যুহদ, আহমদ বিন হাম্বল-৬৩৩)

_আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তোমরা তাদের মতো হয়ো না, যারা আল্লাহকে ভুলে গিয়েছে, তাই আল্লাহও তাদের আত্মভোলা করে দিয়েছেন।’

(সূরা হাশর, আয়াত ১৯)

সুনান তিরমিযীতে বর্ণিত হাদীসে এসেছে— ‘সেই (প্রকৃত) বুদ্ধিমান, যে নিজেই নিজের হিসাব গ্রহণ করে এবং পরকালের জন্য কাজ করে।’

(তিরমিযী, ২৪৫৯) আবূ ঈসা বলেন, এ হাদীসটি হাসান।

তাহকীক আলবানীঃ যইফ। উক্ত হাদিসের রাবী ১. হিশাম বিন আবদুল মালিক আল হিমসী সম্পর্কে আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিসের ব্যাপারে নির্ভরযোগ্য। আবু হাতিম বিন হিব্বান তার সিকাহ গ্রন্থে তার নাম উল্লেখ করেছেন। ইবনু হাজার আসকালানী বলেন, তিনি সত্যবাদী তবে হাদিস বর্ণনায় কখনো কখনো ভুল করেন। আবু দাউদ আস-সাজিসতানী বলেন, তিনি দুর্বল। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৬৫৮৩, ৩০/২২৩ নং পৃষ্ঠা) ২. ইবনু আবু মারায়ম সম্পর্কে আবু বাকর আল-বায়হাকী বলেন, তিনি দুর্বল। আবু হাতিম আর-রাযী বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় দুর্বল। আবু যুরআহ আর-রাযী ও আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তিনি দুর্বল। ইবরাহীম বিন ইয়াকুব আল-জাওযুজানী বলেন, তিনি নির্ভরযোগ্য নয়। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ৭২৪১, ৩৩/১০৮ নং পৃষ্ঠা)

_আল্লাহ তাআলা তাঁর অনুগত বান্দাদের আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, ‘নিশ্চয়ই যারা তাদের প্রতিপালকের ভয়ে সন্ত্রস্ত থাকে….তারা ভালো কাজে প্রতিযোগিতা করে এবং তাতে অগ্রগামী হয়।’

(সূরা মুমিনূন: ৫৭,৬১)

নতুন বছর এলেই কি আনন্দ-ফূর্তি করতে হবে? সব নতুনত্বে উৎসব আর উম্মাদনা উম্মাদেরই কাজ হতে পারে। একজন মৃত্যুদণ্ড ঘোষিত আসামীর জন্য নতুন বছরের আগমন কখনোই ফুর্তির কারণ হতে পারে না।

বরং প্রতিটি নতুন দিনই তার নিঃশ্বাসকে দীর্ঘায়িত করার কথা। আমরা সকলেই তো মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর মতোই জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যুর ঘোষণা মাথায় নিয়ে এসেছি। যে কোনো সময় সমন আসতে পারে! ইরশাদ হয়েছে— ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করতে হবে।’

(সূরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫)

২) নতুন বছরের প্রথম দিনকে উৎসবের মাধ্যমে উদযাপনের ইতিহাস বেশ পুরোনো। ইরানের অগ্নিপুজকরা এর সূচনা করে। নতুন বছরের প্রথম দিনকে তারা ‘নওরোজ’ বলে থাকে। নওরোজ অর্থ নতুন দিন। এদিনে তারা উপাসনা ও উৎসবে মেতে ওঠে। হাজারো বছর ধরে এ সংস্কৃতি তারা পালন করে আসছে। গত কয়েক শতাব্দী পূর্বে খ্রিস্টানরাও খ্রিস্টীয় নববর্ষ উদযাপন করে আসছে।

_আবু সাঈদ আল খুদরী (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা তোমাদের আগের লোকের নীতি-আদৰ্শ পুরোপুরিভাবে অনুকরণ করবে, এক বিঘত এক বিঘতের সঙ্গে ও হাত হাতের সঙ্গে, এমনকি তারা যদি গোসাপের গর্তে ঢুকে থাকে তবুও তোমরা তাদের অনুকরণ করবে। আমরা আবেদন করলাম, হে আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! তারা কি ইয়াহুদী ও নাসারা? তিনি বলেন, তবে আর কারা?

[(বুখারি: ৩২৬৯ মুসলিম:৬/২৬৬৯); ৬৬৭৪; ইফাঃ ৬৫৩৯; ইসেঃ ৬৫৫১]

_রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ইরশাদ করেছেন— ‘যে ব্যক্তি কোনো সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে তাদের অন্তর্ভুক্ত বিবেচিত হবে।’

-(আবু দাউদ:৪০৩১) হাসান সহীহ।; আহমাদ। আহামদ শাকির বলেনঃ এর সনদ সহীহ।ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ: ২/৫০; আবু দাউদ রহ. বর্ণনা করেছে উৎকৃষ্ট সনদে, হাদীস নং-৪০৩১; আর আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন, ‘সহীহ আল-জামে আস-সাগীর, হাদীস নং-৬০২৫।

ব্যাখ্যাঃ-

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ হাদীসে সংবাদ দিয়েছেন যে, যে ব্যক্তি কোন কাফির অথবা ফাসিক অথবা নেককার সম্প্রদায়ের অনুসরণ-অনুকরণ করবে- আর তা হলো তাদের আক্বীদা অথবা ইবাদত অথবা চাল-চলন ইত্যাদি বৈশিষ্ট্য ধারণ করবে, সে তাদের দলভুক্ত হবে।

কেননা বাহ্যিক অনুকরণ মূলত অভ্যন্তরীণ ও মনের অনুসরণ-অনুকরণে পৌঁছে দেয়। নি:সন্দেহে কোন সম্প্রদায়ের অনুসরণ তাদের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার কারণে হয়ে থাকে।কখনও কখনও তা তাদের প্রতি ভালোবাসা, তাদেরকে সম্মান করা এবং তাদের প্রতি ঝুঁকে যাওয়া পর্যন্ত হয়ে থাকে। আর এসব বাহ্যিক অনুসরণ ব্যক্তিকে অভ্যন্তরীণ ও ইবাদতের দিকে নিয়ে যায়। আল্লাহর কাছে এসব থেকে পানাহ চাই।

হাদীসের শিক্ষাঃ

১) কাফির ও ফাসিকের অনুসরণ-অনুকরণ করতে হুশিয়ার করা হয়েছে।

২) সৎ লোকদের সাদৃশ্য পোষণ ও তাদের অনুসরণ করতে উৎসাহিত করা হয়েছে।

৩) কখনো কখনো বাহ্যিক অনুসরণ অন্তরের ভালোবাসা সৃষ্টি করে।

৪) নিছক বাহ্যিক অনুসরণ-অনুকরণ ও এ ধরনের কাজের কারণে মানুষ শাস্তির উপযুক্ত ও গুনাহগার হয়ে থাকে।

৫) কাফিরদের দ্বীন ও তাদের নিজস্ব কৃষ্টি-কালচার ও প্রথার অনুসরণ করা নিষেধ। তবে উপরোক্ত বিষয় না হয়ে যদি ভিন্ন কিছু হয়, যেমন শিল্প ইত্যাদি তাদের থেকে শিক্ষা লাভ করা হয়, তবে তা নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত নয়।

সন্দেহ নেই, আল্লাহ তোমাদেরকে এ দুটির পরিবর্তে এর চেয়ে উত্তম দুটি দিন দান করেছেনঈদুল আযহার দিন এবং ঈদুল ফিতরের দিন।

[সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ১১৩৪]

৩) ইংরেজি নববর্ষ বরণ উপলক্ষে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশও কোটি কোটি টাকা অপব্যয় করে আতশবাজি করা হয়। ফুর্তির নামে পশুদেরও হার মানানো নির্লজ্জতায় ডুবে যায় সমাজের বড় একটা অংশ। কথায় আছে, লজ্জা উঠে গেলে কোনো কিছু করতেই বাঁধ ও বাধা থাকে না।

অর্থনৈতিক চরম দুরবস্থা ও দারিদ্র্যর কশাঘাতে আহত সাধারণ জনগণকে যারা রক্ষা করার নসীহত করেন, ভদ্রতার ভেকধারী সমাজের সেসব লোক এবং রক্তচোষা বণিকেরা মেতে ওঠেন থার্টি ফার্স্ট নাইটের নগ্নতা ও উম্মাদনায়। নারীর অধিকার আদায়ের নামে ইসলামকে একহাত নেওয়া নারীবাদী সুশীলরা থার্টিফার্স্ট নাইটে নারীকে পণ্য হিসেবে উপস্থাপন করেন। বাংলা সংস্কৃতির ধ্বজাধারীরাও এ উপলক্ষে পশ্চিমা এই সংস্কৃতিতে ডুবে যান।

এদেশে কনকনে শীতে একটুখানি উষ্ণতার পরশ পাওয়ার মতো কাপড়ের অভাবে প্রতি বছর চরম কষ্টে নিপতিত হন বহু বনী আদম। অথচ প্রতি বছর থার্টি ফার্স্ট নাইট মাতাতে আসেন ভারত, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ফিলিপাইন ও কেনিয়ার ডিজেরা। রেডিসন, শেরাটন, রিজেন্সিতে পারফর্ম করেন তারা। তাদের নাচ ও গানের সঙ্গে থাকে এদেশীয় আইটেম গার্ল ও ডিজেদের নোংরামি। থাকে ফ্যাশন শো, আইটেম ড্যান্স ও লাইভ মিউজিক কনসার্ট।

৪) আমরা মুখে ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা বললেও আদতে কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের ক্রীড়নকে পরিণত। কর্পোরেট ব্যবসায়ীদের ব্যবসাযয়িক স্বার্থ-রক্ষার জন্য তারা আমাদের জন্য ডিজাইন করেন বিভিন্ন দিবস ও সংস্কৃতির।

_প্রকৃত স্বাধীনতা অর্জনের জন্য মহান আল্লাহ ছাড়া অন্য সবার; এমনকি নিজ প্রবৃত্তির দাসত্বও ছাড়তে হবে আমাদেরকে। অন্যথায় আজীবন স্বাধীনতার খোলসেই পরাধীন হয়ে থাকবো আমরা। মহান আল্লাহ আমাদেরকে শুদ্ধ চিন্তা ও সঠিক কাজ করার তাওফীক দান করুন। আমীন।

Rasikulindia(Islam

Post a Comment

0 Comments