Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

ভিক্ষাবৃত্তির বিধান কী? সাংসারিক প্রয়োজন পূরণের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি ভিক্ষা করে তার ব্যা

 

প্রশ্ন:ভিক্ষাবৃত্তির বিধান কী? সাংসারিক প্রয়োজন পূরণের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি ভিক্ষা করে তার ব্যাপারে শরীআতের বিধান কী?।

▬▬▬▬▬▬▬▬💠💠💠▬▬▬▬▬▬▬▬

ভূমিকা:পরম করুণাময় অসীম দয়ালু মহান আল্লাহ’র নামে শুরু করছি। যাবতীয় প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক মহান আল্লাহ’র জন্য।  শতসহস্র দয়া ও শান্তি বর্ষিত হোক প্রাণাধিক প্রিয় নাবী মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’র প্রতি।

অতঃপর: নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর কাছে চাওয়াটা ও সবকিছু তাঁর থেকে প্রত্যাশা করাটা পছন্দ করেন। যে ব্যক্তি তাঁর কাছে চায় না তিনি তার ওপর রাগ করেন। তিনি তাঁর বান্দাদেরকে তাঁর কাছে চাওয়া বা প্রার্থনা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন: “আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের ডাকে সাড়া দিব”।

৪০:৬০ وَ قَالَ رَبُّكُمُ ادۡعُوۡنِیۡۤ اَسۡتَجِبۡ لَكُمۡ ؕ اِنَّ الَّذِیۡنَ یَسۡتَكۡبِرُوۡنَ عَنۡ عِبَادَتِیۡ سَیَدۡخُلُوۡنَ جَهَنَّمَ دٰخِرِیۡنَ ﴿۶۰﴾

[সূরা গাফির, আয়াত: ৬০]

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভিক্ষাবৃত্তির প্রতি সর্বদা সাহাবাদেরকে নিরুৎসাহিত করেছেন। তিনি তাঁদেরকে এও বলেছেন: যে ব্যক্তি নিজ অভাবের কথা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলাকেই বলবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার সে অভাব দূর করে দিবেন।

আর যে ব্যক্তি নিজ অভাবের কথা একমাত্র মানুষকেই বলবে তার সে অভাব কখনোই দূর হবে না। ইসলাম কর্মের প্রতি জোর দেয় এবং ভিক্ষাবৃত্তির পরিবর্তে কাজ করে জীবিকা অর্জনের পরামর্শ দেয়।

কারণ ভিক্ষাবৃত্তি মানুষের সম্মান ও স্বাভাবিক জীবিকার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

রাসূল (ﷺ) বলেছেন:"তোমাদের কেউ যদি দড়ি নিয়ে গিয়ে কাঠ কেটে আনে যার দ্বারা আল্লাহ তার চেহারাকে (অপমান থেকে) বাঁচান, এবং তা বিক্রি করে খায়, তা ভিক্ষার চেয়ে উত্তম।" চাহে তারা তাকে দিক বা না দিক।

* এই হাদীস হতে শিক্ষণীয় বিষয়:

প্রকৃত ইসলাম হলো বৈধ এবং পবিত্র রুজি রোজগারের মাধ্যমে মানুষের জীবনকে সুখী করার একটি সত্য সঠিক ধর্ম। তাই এই ধর্মটি মানুষকে অপরের অর্থ, সম্পদ বা অন্য কোনো জিনিস যাচন করতে নিষেধ করেছে। কেননা তাতে মানুষের মান সম্মান এবং শক্তি নষ্ট হয়ে যায় আর তার জীবনে লোভ ও আলস্য বৃদ্ধি পায় ও বেড়ে উঠে।

(সহীহ বুখারি, হাদিস: ২০৭৩-৭৫, ২৩৭৪, ১৯৪৫, ১৪৭১, মুসলিম ১২/৩৫, হাঃ ১০৪২, ২৪৪৯, আহমাদ ৯৮৭৫)

স্বহস্তে উপার্জিত খাবার খাওয়া, ভিক্ষাবৃত্তি থেকে বেঁচে থাকা এবং অপরকে দান করার প্রতি উৎসাহ দেওয়া প্রসঙ্গে

 

রাফে’বিন খাদীজ (রাঃ) বলেন, জিজ্ঞাসা করা হল, ’হে আল্লাহর রসূল! কোন উপার্জন সবচেয়ে বেশি পবিত্র?’ উত্তরে তিনি বললেন, সবচেয়ে পবিত্র উপার্জন হল, যা মানুষের নিজ হাতের কাজ এবং সদুপায়ে ব্যবসার মাধ্যমে করা হয়।

[ (আহমাদ ১৭২৬৫, ত্বাবারানী ৪২৮৫, হাকেম ২১৬০, সহীহুল জামে হা/ ১০৩৩) ২৩৯৮ঃহাদিস সম্ভার]

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, শ্রেষ্ঠ উপার্জন হল (শ্রমজীবীর) হাতের উপার্জন; যদি সে (তার কাজে) হিতাকাঙ্ক্ষী হয়।

(আহমাদ ৮৪১২, বাইহাক্বীর শুআবুল ঈমান ১২৩৬, সহীহুল জামে ৩২৮৩)

আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, তোমরা যে খাদ্য ভক্ষণ কর, তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম খাদ্য হল তোমাদের নিজের হাতে কামাই করা খাদ্য। আর তোমাদের সন্তানগণ তোমাদের উপার্জিত ধনের পর্যায়ভুক্ত।

(আবূ দাউদ ৩৫২৮, তিরমিযী ১৩৫৮, নাসাঈ ৪৪৬৪, ইবনে মাজাহ ২১৩৭ সহীহুল জামে২২০৮)

সুতরাং মৌলিকভাবে জরুরি প্রয়োজন যেমন:

 (১).দারিদ্র্যের চরম অবস্থা: যদি কারো জীবিকার কোনো উপায় না থাকে এবং নিজের বা পরিবারের প্রয়োজন মেটানোর অন্য কোনো উপায় না থাকে।

(২).অপরিসীম ঋণ: কেউ যদি ঋণে ডুবে যায় এবং তা পরিশোধের সামর্থ্য না থাকে।

(৩). দুর্যোগ বা বিপদ: যুদ্ধ, দুর্ভিক্ষ বা প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো চরম পরিস্থিতিত ইত্যাদি অবস্থা ব্যতীত ভিক্ষা চাওয়া হারাম। এমনকি যে ব্যক্তি বিনা প্রয়োজনে ভিক্ষাবৃত্তি করে সে কিয়ামতের দিন আল্লাহ্ তা‘আলার সামনে চেহারা ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় উঠবে। আর এই মর্মে কুরআন সুন্নাহয় পর্যাপ্ত পরিমাণ দলিল রয়েছে যেমন:

 

 (১).রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে নিজের সম্পদ বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে মানুষের কাছে চেয়ে বেড়ায়, নিশ্চয় সে জাহান্নামের আগুন ভিক্ষা করে। সুতরাং সে তা কম করুক বা বেশি করুক"।

(সহীহ মুসলিম, হা/১০৪১; ইবনু মজাহ,হা/১৮৩৮)

(২)রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সর্বদা মানুষের কাছে হাত পাতে ক্বিয়ামাতের দিন সে এমনভাবে উঠবে যে তখন তার মুখমণ্ডলে গোশত থাকবে না!

(সহীহ বুখারী, হা/১৪৭৪;সহীহ মুসলিম, হা/১০৪০)।

(৩).আব্দুল্লাহ্ বিন্ মাস্ঊদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:‘‘যে ব্যক্তি কারোর কাছে কোন কিছু ভিক্ষা চাইলো; অথচ তার নিকট তার প্রয়োজন সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে তা হলে তার এ ভিক্ষাবৃত্তি কিয়ামতের দিন তার চেহারায় ক্ষতবিক্ষত অবস্থার রূপ নিবে।

 জনৈক সাহাবী বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! প্রয়োজন সমপরিমাণ সম্পদ বলতে আপনি কতটুকু সম্পদকে বুঝাচ্ছেন? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: পঞ্চাশ দিরহাম রুপা অথবা উহার সমপরিমাণ স্বর্ণ’’।

(আবূ দাউদ হা/১৬২৬) নাসায়ী (অধ্যায় : যাকাত, হাঃ ২৫৯১), ইবনু মাজাহ (অধ্যায় : যাকাত, হাঃ ১৮৪০), আহমাদ (হাঃ ৪২০৭)। সনদের হাকিম ইবনু জুবাইরের প্রতি শিয়া হওয়ার আরোপ আছে।

(৪).রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন:‘‘যে ব্যক্তি কারোর কাছে কোন কিছু ভিক্ষা চাইলো; অথচ তার নিকট তার প্রয়োজন সমপরিমাণ সম্পদ রয়েছে তা হলে সে যেন জাহান্নামের অঙ্গার প্রচুর পরিমাণে সঞ্চয় করলো।

 সাহাবাগণ বললেন: হে আল্লাহ্’র রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! প্রয়োজন সমপরিমাণ সম্পদ বলতে আপনি কতটুকু সম্পদকে বুঝাচ্ছেন? অথবা কারোর নিকট কতটুকু ধন-সম্পদ থাকলে আর তার জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করা অনুচিৎ? রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: সকাল-সন্ধ্যার খানা অথবা পুরো দিনের পেটভরে খাবার’’।

(আবূ দাউদ হা/ ১৬২৯) আহমাদ, ইবনু খুযাইমাহ (হাঃ ২৩৯১), ইবনু হিব্বান।

অপর এক বর্ননায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:«ما يَزال الرجل يسأل الناس حتى يأتي يوم القيامة وليس في وجهه مُزعَة لحم (يعني قطعة لحم)»

“যে ব্যক্তি মানুষের নিকট চাইতে থাকে, অবশেষে কিয়ামতের দিন উঠবে যে, তার চেহারায় মাংসের টুকরো থাকবে না”।

(সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম হা/)

কিয়ামতের দিন চেহারায় মাংসের টুকরো থাকবে না এই প্রসঙ্গে ইমাম কুরতুবী (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন: এতে দু’টি মত রয়েছে:

(এক). যার পেশা ও অভ্যাস মানুষের নিকট অবৈধ যাচ্ঞা করা, সে যখন কিয়ামতের দিন উঠবে তার চেহারার মাংস কেটে নেওয়া হবে, ফলে তার চেহারা মাংসহীন কুৎসিত থাকবে।

(দুই).কিয়ামতের দিন সে যখন উঠবে আল্লাহর নিকট তার মর্যাদা ও সম্মান থাকবে না।

(কামহুল হিরস, লিল কুরতুবি:পৃষ্ঠা:১৯)

 সৌদি আরবের ‘ইলমী গবেষণা ও ফাতাওয়া প্রদানের স্থায়ী কমিটির (আল-লাজনাতুদ দাইমাহ লিল বুহূসিল ‘ইলমিয়্যাহ ওয়াল ইফতা) ‘আলিমগণ বলেছেন:

يجوز سؤال الناس شيئاً من المال للمحتاج الذي لا يجد ما يكفيه ، ولا يقدر على التكسب ، فيسأل الناس مقدار ما يسد حاجته فقط ، وأما غير المحتاج ، أو المحتاج الذي يقدر على التكسب : فلا يجوز له المسألة ، وما يأخذه من الناس في هذه الحالة حرام عليه ؛ لحديث قبيصة بن مخارق الهلالي رضي الله عنه قال : تحملتُ حمالة ، فأتيت رسول الله صلى الله عليه وسلم أسأله فيها ، فقال : ( أقم حتى تأتينا الصدقة فنأمر لك بها ) ثم قال : ( يا قبيصة ، إن المسألة لا تحل إلا لأحد ثلاثة : رجل تحمل حمالة فحلت له المسألة حتى يصيبها ثم يمسك ، ورجل أصابته جائحة اجتاحت ماله فحلت له المسألة حتى يصيب قواما من عيش - أو قال : سدادا من عيش - ورجل أصابته فاقة حتى يقول ثلاثة من ذوي الحجا من قومه : لقد أصابت فلانا فاقة ، فحلت له المسألة حتى يصيب قواما من عيش - أو قال : سداداً من عيش - فما سواهن من المسألة يا قبيصة فسحت يأكلها صاحبها سحتاً ) رواه أحمد ، ومسلم ، والنسائي ، وأبو داود ؛ وحديث : ( من سأل الناس تكثراً فإنما يسأل جمراً ) ؛ وحديث : ( إن الصدقة لا تحل لغني ولا لذي مرة سوي ) رواه الخمسة إلا ابن ماجه والنسائي .

والواجب : مناصحته ، وعلى العلماء بيان هذا للناس في خطب الجمعة وغيرها ، وفي وسائل الإعلام ، ونهر السائل المنهي عنه في قوله تعالى : ( وَأَمَّا السَّائِلَ فَلا تَنْهَرْ ) الضحى/ 10 المراد به : زجره ورفع الصوت عليه ، وهو يشمل السائل للمال ، والسائل عن الأحكام الشرعية ، لكن هذا لا يمنع إرشاد السائل المخطئ في سؤاله ، ومناصحته بالحكمة والموعظة الحسنة .

"প্রকৃত অভাবগ্রস্ত ব্যক্তি, যার কাছে তার প্রয়োজনীয় চাহিদা পূরণের জন্য পর্যাপ্ত কিছু নেই এবং যিনি উপার্জন করার সামর্থ্য রাখেন না, তিনি মানুষের কাছে তার প্রয়োজন মেটানোর পরিমাণটুকু চাওয়া বৈধ।

অন্যদিকে যে ব্যক্তি প্রকৃতপক্ষে অভাবগ্রস্ত নয়, বা যিনি উপার্জন করার সামর্থ্য রাখেন, তার জন্য মানুষের কাছে কিছু চাওয়া বৈধ নয়। এই অবস্থায় তিনি যা কিছু মানুষের কাছ থেকে গ্রহণ করবেন, তা তার জন্য হারাম হবে।

এ বিষয়ে ক্ববীসাহ্ ইবনু মুখারিক্ব (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি বলেন:আমি ঋণগ্রস্ত হয়ে আমি রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর কাছে এলাম। তার কাছে ঋণ আদায়ের জন্য কিছু চাইলাম। তিনি বললেন,অপেক্ষা করো। আমার কাছ যাকাতের মাল আসা পর্যন্ত আসলে তোমাকে কিছু দেবার জন্য বলে দেব। তারপর তিনি বললেন,ক্বাবীসাহ্! শুধু তিন ধরণের ব্যক্তির জন্য কিছু চাওয়া জায়িয। প্রথমতঃ যে ব্যক্তি অপরের ঋণের যামিনদার। তবে বেশী চাইতে পারবে না। বরং যতটুকুক ঋণ পরিশোধের জন্য প্রয়োজন শুধু ততটুকু চাইবে। এরপর আর চাইবে না। দ্বিতীয়তঃ ওই ব্যক্তি যে বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে (দুর্ভিক্ষ প্লাবন ইত্যাদিতে)।

তার সব ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। তারও (শুধু খাবার ও পোশাকের জন্য) ততটুকু যাতে প্রয়োজন মিটে যায়। তার জীবনের জন্য অবলম্বন হয়ে যায়। তৃতীয়তঃ ওই ব্যক্তি (যে ধনী,কিন্তু তার এমন কোন কঠিন প্রয়োজন হয়ে পড়েছে যা মহল্লাবাসী জানে। যেমন ঘরের সব মালপত্র চুরি হয়ে গেছে অথবা অন্য কোন দুর্ঘটনার কারণে মুখাপেক্ষী হয়ে পড়েছে)। (মহল্লার) তিনজন বুদ্ধিমান সচেতন লোক এ ব্যাপারে সাক্ষ্য দিবে যে, সত্যিই এ ব্যক্তি মুখাপেক্ষী। তার জন্যও সেই পরিমাণ (সাহায্য) চাওয়া জায়িয, যাতে তার প্রয়োজন মিটে। অথবা তিনি বলেছেন এর দ্বারা তার মুখাপেক্ষিতা ও প্রয়োজন দূর হয়, তার জীবনে একটি অবলম্বন আসে। হে ক্ববীসাহ্! এ তিন প্রকারের ‘চাওয়া’ ছাড়া হালাল নয়। আর হারাম পন্থায় প্রাপ্ত মাল খাওয়া তার জন্য হারাম।

(সহীহ মুসলিম ১০৪৪)

অপর হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি মাল বৃদ্ধি করার জন্য মানুষের নিকট ভিক্ষা করে, সে আসলে আগুনের অঙ্গার ভিক্ষা করে থাকে।

(সহীহ মুসলিম ১০৪১,ইবনু মাজাহ ১৮৩৮,মুসনাদে আহমাদ হা/৭১২৩)

আরেক বর্ননায় রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন; সচ্ছল ও সুস্থ-সবল ব্যক্তির জন্য যাকাত গ্রহণ করা হালাল নয়"।

(নাসায়ী ২৫৯৭, আহমাদ ৮৮১৮)

অতএব যা আবশ্যক তা হল তাকে উপদেশ দেওয়া,এবং আলেমদের জন্য এটি অবশ্যক যে তারা শুক্রবারে জুমার খুতবা এবং অন্যান্য উপকরণের মাধ্যমে এই বিষয়টি মানুষের কাছে পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা,এবং যারা অহেতুক সাহায্য চায় তাদেরকে সাবধান করা যেমন আল্লাহ বলেন: "আর ভিক্ষুককে তুমি ধমক দিওনা"।

( সূরা আদ দুহা:১০)

এর অর্থ হল: তাকে সতর্ক করা এবং উঁচু শব্দে তাকে জবাব দেওয়া, এটি শুধুমাত্র ভিক্ষাকারী ব্যাক্তির ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং শারঈ বিষয়ে প্রশ্নকারী ব্যাক্তির জন্যও প্রযোজ্য,যাইহোক,এটি ভুল প্রশ্ন করা ব্যক্তিকে সঠিক পথে নির্দেশনা দিতে এবং তাকে প্রজ্ঞার সাথে উত্তম উপদেশ দিয়ে সতর্ক করার বিষয়টি অস্বীকার করে না"।

(ফাতাওয়া লাজনাহ দাইমাহ, খণ্ড:২৪; পৃষ্ঠা:৩৭৭)

বিগত শতাব্দীর সৌদি আরবের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ফাক্বীহ শাইখুল ইসলাম ইমাম ‘আব্দুল ‘আযীয বিন ‘আব্দুল্লাহ বিন বায আন-নাজদী (রাহিমাহুল্লাহ) [মৃত: ১৪২০ হি./১৯৯৯ খ্রি.]–

কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল:ভিক্ষাবৃত্তি সম্পর্কে ইসলামের বিধান কী?

জবাবে তিনি ক্ববীসাহ্ ইবনু মুখারিক্ব (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ পূর্বোক্ত হাদীসটি উল্লেখ করেন, অতঃপর বলেন:

فهذا الحديث قد أوضح فيه النبي صلى الله عليه وسلم أنواع المسألة المباحة ، وأن ما سواها محرم ، فمن كان عنده ما يسد حاجته من راتب وظيفة ، أو تجارة ، أو غلة وقف ، أو عقار ، أو كسب يدوي من نجارة ، أو حدادة ، أو زراعة ، أو نحو ذلك : حرمت عليه المسألة . أما من اضطر إليها : فلا حرج عليه أن يسأل بقدر الحاجة ، وهكذا من تحمل حمالة لإصلاح ذات البين ، أو النفقة على أهله وأولاده ، فلا حرج عليه أن يسأل لسد الغرامة .

"এই হাদিসে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) স্পষ্ট করেছেন বৈধ ভিক্ষাবৃত্তির বিভিন্ন প্রকার এবং এটাও বলেছেন যে এগুলো ছাড়া অন্য ভিক্ষাবৃত্তি হারাম।সুতরাং যার কাছে তার প্রয়োজন মেটানোর মতো আয়ের উৎস রয়েছে, যেমন: চাকরির বেতন, ব্যবসা, ওয়াকফের আয়, সম্পত্তি থেকে উপার্জন, কাঠমিস্ত্রির কাজ, লোহার কাজ, কৃষিকাজ অথবা অন্য কোনো বৈধ উপার্জন—তার জন্য ভিক্ষা বা প্রার্থনা করা হারাম।

তবে,যার জন্য ভিক্ষা করা একান্তই প্রয়োজন হয়ে পড়ে,তাহলে তার জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী ভিক্ষা করা জায়েজ। একইভাবে কেউ যদি সমাজে শান্তি স্থাপনের জন্য বা তার পরিবারের ভরণপোষণের জন্য ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ে,তবে তার সেই ঋণ পরিশোধের জন্য সাহায্য প্রার্থনা করে, তাহলে তাতে কোনো দোষ নেই"।

(মাজমূ‘উ ফাতাওয়া ওয়া মাক্বালাতুম মুতানাওয়্যা‘আহ,খণ্ড:১৪, পৃষ্ঠা: ৩২০)

পরিশেষে,প্রিয় পাঠক! ইসলামে ভিক্ষাবৃত্তি নিরুৎসাহিত করা হয়েছে, কারণ এটি মানুষের সম্মান ও স্বাভাবিক জীবিকার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে হা, যদি সত্যিই কারো চরম প্রয়োজন দেখা দেয়, ইসলাম তখন পরিস্থিতি অনুযায়ী তা অনুমোদন দেয়।

তবে এটি যেন অভ্যাসে পরিণত না হয়, সে বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে।মোটকথা ভিক্ষা চাওয়া তখনই জায়েজ যখন এটি জরুরি হয়। তিনি আরও বলেন, কোনো ব্যক্তি যদি কাজ করার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ভিক্ষা চায়, তবে এটি হারাম। তিনি নিজ প্রচেষ্টায় জীবিকা অর্জনের জন্য জোর দিয়েছেন। আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাকে এবং আপনাদেরকে সমস্ত কল্যাণের তৌফিক দান করেন।(আল্লাহই সবচেয়ে জ্ঞানী)।

 ▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬

উপস্থাপনায়: জুয়েল মাহমুদ সালাফি।

সম্পাদনায়: উস্তায ইব্রাহিম বিন হাসান হাফি.

অধ্যয়নরত, কিং খালেদ ইউনিভার্সিটি আবহা, সৌদি আরব।

@highlight



Post a Comment

0 Comments