হাদিস পড়ার
কি কোন সওয়াব আছে?
শায়খ, আল্লামা, সৌদি আরবের
মুফতি আব্দুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ বিন বাজ থেকে দ্য গ্রেট শায়খ বিন বাজ- রহিমুল্লাহ
- কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল:
'আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াতের সওয়াব স্পষ্ট। হাদিস পড়ারও কি কোন
সওয়াব আছে?'
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম তারা যারা কুরআন শেখে এবং তা শিক্ষা
দেয়। [আল-বুখারী (৫০২৭) থেকে বর্ণিত।
কুরআন পড়ার বিষয়ে অনেক
হাদিস রয়েছে, যার মধ্যে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীও রয়েছে: “কুরআন
পড়ো, কারণ এটি কিয়ামতের দিন তার সাথীদের জন্য সুপারিশ করবে।”
মুসলিম (৮০৪)
'আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া
তা'আলার নৈকট্য লাভের ক্ষেত্রে পবিত্র কুরআন পাঠের এক বিরাট সওয়াব রয়েছে, যেমন আল্লাহর
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদিস পাঠ করা এবং মুখস্থ করা।
এবং এর কারণ হল জ্ঞান অর্জন
এবং দ্বীনের বৃহত্তর বোধগম্যতার জন্য এটি আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা'আলার ইবাদত।
শরীয়তের প্রমাণ থেকে জানা
যায় যে, জ্ঞান অর্জন এবং দ্বীনের বোধগম্যতা অর্জন করা বান্দার জন্য দৃঢ় জ্ঞানের
( বাসিরাহ ) উপর তার প্রভুর ইবাদত করার জন্য বাধ্যতামূলক।
এই প্রমাণের একটি উদাহরণ
হল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী :
'আল্লাহ যার কল্যাণ চান,
তাকে দ্বীনের বোধগম্যতা দান করেন' এবং তিনি বললেন:
"তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম
তারা যারা কুরআন শেখে এবং অন্যদের শেখায়"
এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
"যে ব্যক্তি জ্ঞান
অর্জনের জন্য কোন পথে চলে, আল্লাহ তার জ্ঞান অর্জনের কারণে তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ
করে দেন। আর যে কোন দল আল্লাহর কোন ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং
তা অধ্যয়ন করে, তার উপর প্রশান্তি নেমে আসে, তাদের উপর রহমতের আবরণ বর্ষিত হয় এবং
ফেরেশতারা তাদের ঘিরে রাখেন এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তীদের সাথে তাদের কথা উল্লেখ করেন।"
মুসলিম ৩৮/২৬৯৯,৬৭৪৬; মিশকাত)-২০৪-[৭]
অন্য এক হাদিসে নবি করিম
(স.) বলেছেন, ‘যে ইলম অনুসন্ধানে বের হয়, সে ফিরে আসা পর্যন্ত আল্লাহর রাস্তায় থাকে।’ তিরমিজি ২৬৪৭।
হাদিসের শিক্ষাঃ
১.
‘ইলম (জ্ঞান) অর্জন করার সম্মান ও মর্যাদা অত্যধিক।
২.
‘ইলম (জ্ঞান) অর্জনের উদ্দেশ্যে যে পথ চলবে আল্লাহ তার জান্নাতের পথ সুগম ও সহজ করে
দেবেন।
৩.
এই ইলম হতে হবে আল্লাহ প্রাপ্তির ইলম।
৪.
‘ইলম প্রচার করতে হবে।
৫.
ইলম অর্জনকারীর জন্য আল্লাহর অন্যান্য সৃষ্টিও দোয়া করতে থাকেন।
তাই বলে বসে থাকলে হবে না।
আল্লাহর কাছে চাইতে হবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘বলুন, হে আমার রব! আমার জ্ঞান বৃদ্ধি
করে দিন’ (ত্ব-হা, ২০/১১৪)।
অর্থাৎ জ্ঞান অর্জন করতে,
জ্ঞান বৃদ্ধি করতে সর্বদায় আল্লাহর কাছে চাইতে হবে, যা উক্ত আয়াত থেকে বুঝা যায়।
আর কুরআন তেলাওয়াতের ফজিলত
সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে, যেমন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর
বাণী :
'তোমরা কুরআন তেলাওয়াত
করো, কারণ এটি কিয়ামতের দিন তেলাওয়াতকারীর জন্য সুপারিশ হিসেবে আসবে।' মুসলিম কর্তৃক
সংগৃহীত
'কে বাথান (মদিনার একটি
উপত্যকা) অথবা আল-আকিক (মক্কার একটি উপত্যকা) যেতে চাইবে এবং দুটি বড় মাদী উট নিয়ে
ফিরে আসবে, পাপ না করে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন না করে?'
'যদি তোমাদের কেউ মসজিদে
গিয়ে আল্লাহর কিতাব আযযা ও জাল থেকে দুটি আয়াত শিখে অথবা পাঠ করে, তাহলে তা তার জন্য
দুটি মাদী উটের চেয়ে উত্তম এবং তিনটি আয়াত চারটি মাদী উটের চেয়ে উত্তম এবং তার সাথে
একই পরিমাণ পুরুষ উটের ক্ষেত্রেও'।
'যে ব্যক্তি আল্লাহর কিতাবের
একটি অক্ষর পাঠ করবে, সে তার জন্য একটি সওয়াব পাবে এবং একটি সওয়াব তার দশগুণ সওয়াবের
সমান।'
"যে ব্যক্তি জ্ঞান
অর্জনের জন্য কোন পথে চলে, আল্লাহ তার জ্ঞান অর্জনের কারণে তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ
করে দেন। আর যে কোন দল আল্লাহর কোন ঘরে সমবেত হয়ে আল্লাহর কিতাব তিলাওয়াত করে এবং
তা অধ্যয়ন করে, তার উপর প্রশান্তি নেমে আসে, তাদের উপর রহমতের আবরণ বর্ষিত হয় এবং
ফেরেশতারা তাদের ঘিরে রাখেন এবং আল্লাহ তাঁর নিকটবর্তীদের কাছে তাদের কথা উল্লেখ করেন।"
http://www.sahab.net/home/index.php?Site=News&Show=986
থেকে নেওয়া হয়েছে। সূত্র:
https://followingthesunnah.wordpress.co ... g-hadeeth/
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
“কাজ সহজ করো, কঠিন করো
না। সুসংবাদ দাও এবং মানুষকে তাড়িয়ে দিও না।”
তিনি সূরা আল-আহজাবের আয়াতটি
তেলাওয়াত করতেন...
এবং তোমাদের ঘরে আল্লাহর
আয়াত এবং হিকমতের যা পাঠ করা হয় তা মনে রেখো। নিশ্চয়ই আল্লাহ সর্বদা সূক্ষ্মদর্শী
এবং [সকল বিষয়ে] অবগত। [৩৩:৩৫]
আসুন কুরআন এবং তাঁর রাসূল
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহকে গুরুত্ব দেই।
মসজিদে নববীর লাইব্রেরিতে
শায়খের জীবনী সম্পর্কিত একটি বইতে এই বিষয়টি পড়েছিলাম বলে আমার মনে আছে।
নবী (সাঃ) এর হাদিস পড়ার
কি কোন সওয়াব আছে?
ইবনে মাসউদের হাদিস অনুসারে: “যে ব্যক্তি কুরআনের একটি অক্ষর পাঠ করবে, তার জন্য একটি হাসানা থাকবে এবং প্রতিটি হাসানা দশগুণ সওয়াব বয়ে আনবে।” আত-তিরমিযী (২৯১০) বর্ণনা করেছেন। একই কথা প্রযোজ্য যদি মুমিন ব্যক্তি সুন্নাহ শিখে; কারণ হাদিস পড়া এবং অধ্যয়ন করা তার জন্য বিরাট সওয়াব বয়ে আনবে, কারণ এটি জ্ঞান অর্জনের শিরোনামের অধীনে আসে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের পথে চলে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেবেন।” আত-তিরমিযী (২৬৪৬) বর্ণনা করেছেন।
এটি ইঙ্গিত দেয় যে জ্ঞানের বিষয়গুলি অধ্যয়ন
করা, হাদিস মুখস্থ করা এবং সেগুলি নিয়ে আলোচনা করা জান্নাতে প্রবেশ এবং জাহান্নাম
থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়গুলির মধ্যে একটি। এবং নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
বলেছেন: “যখন আল্লাহ কোন ব্যক্তির জন্য মঙ্গল চান, তখন তিনি তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান
করেন।” একমত। ধর্মের বোধগম্যতা আসে কুরআন ও সুন্নাহ অধ্যয়নের মাধ্যমে। সুন্নাহের জ্ঞান
অর্জন করা হলো আল্লাহর একজন ব্যক্তির মঙ্গলের একটি লক্ষণ, ঠিক যেমন কুরআনের জ্ঞান অর্জন
করাও এর একটি লক্ষণ। এর প্রমাণ প্রচুর, আল্লাহর প্রশংসা। সমাপ্ত উদ্ধৃতি।
ইবনু আব্বাস (রাঃ) সূত্রে
বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ভালভাবে
জ্ঞানের কথা শুনে রাখো। কেননা লোকেরা তোমাদের কাছ থেকে তা শুনবে। অতঃপর তোমাদের কাছ
থেকে যারা শুনবে তাদের কাছ থেকেও পরবর্তীরা শুনবে।
সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-২০/
জ্ঞান -৩৬৫৯;
[সহীহ- আহমাদ, বায়হাক্বী,
হাকিম। ইবনু হাকিম বলেনঃ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্তে সহীহ। ইমাম যাহাবী তাঁর সাথে
একমত পোষণ করেছেন।
যায়িদ ইবনু সাবিত (রাঃ)
সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে
শুনেছিঃ যে ব্যক্তি আমার নিকট থেকে হাদিস শুনে তা মুখস্থ রাখলো এবং অন্যের নিকটও তা
পৌঁছে দিলো, আল্লাহ তাকে চিরউজ্জ্বল করে রাখবেন। জ্ঞানের অনেক বাহক তার চেয়ে অধিক সমঝদার
লোকের নিকট তার বহন নিয়ে যায়; যদিও জ্ঞানের বহু বাহক নিজেরা জ্ঞানী নয়।[1]
সহীহ।(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত)-
৩৬৬০)
[ তিরমিযী, নাসায়ী, ইবনু
মাজাহ। ইমাম তিরমিযী বলেনঃ যায়িদ ইবনু সাবিতের হাদীসটি হাসান।]
সাহল ইবনু সা’দ (রাঃ) সূত্রে
বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ আল্লাহর শপথ! যদি তোমার চেষ্টার
দ্বারা আল্লাহ একটি লোককে হেদায়েত দেন, তবে তা হবে তোমার জন্য এক পাল লাল উটের চেয়েও
উত্তম।
(সুনান আবূ দাউদ (তাহকিককৃত
৩৬৬১)
মহানবী (স.) বলেন, ‘আমার
উম্মতের যে ব্যক্তি দ্বীনি বিষয়ে ৪০টি হাদিস মুখস্থ করবে, কেয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে
ফকিহ আলেম হিসেবে ওঠাবেন।’ (সহিহ ইবনে হিব্বান: ১/১৬২)
বিদায় হজের ভাষণে রাসুলুল্লাহ
(স.) বলেছেন, ‘উপস্থিত ব্যক্তিরা যেন অনুপস্থিতদের নিকট (আমার এ বাণীসমূহ) পৌঁছে দেয়।
(সহিহ বুখারি: ৬৭)
‘রাসুল তোমাদেরকে যা দেয়,
তা তোমরা গ্রহণ করো এবং যা থেকে তোমাদেরকে নিষেধ করে তা থেকে বিরত থাকো এবং তোমরা আল্লাহর
তাকওয়া অবলম্বন কর; নিশ্চয় আল্লাহ শাস্তি দানে কঠোর। (সুরা হাশর: ৭)
সুতরাং বিশুদ্ধ হাদিস পড়া
ও মুখস্থ করা অন্যতম নেক আমল। আর কোনো নেক আমলই সওয়াবহীন নয়। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে
কোরআন ও হাদিসের আলোকে জীবন গড়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।
(তিরমিজি: ২৯১০, ২৬৫৭, মিরকাতুল মাফাতিহ: ১/৪৮৭, ফতোয়ায়ে ফকিহুল মিল্লাত: ২/১৫০)
তিনি বলেন, অন্য কোনো উদ্দেশ্যেও
তুমি আসোনি? সে বলল, না। তিনি বলেন, আমি অবশ্যই রাসূলুল্লাহ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে
বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি জ্ঞান অর্জনের কোনো পথ অবলম্বন করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের
দিকে পথ সুগম করে দেন। ফেরেশতাগণ জ্ঞানান্বেষীর প্রতি তাঁদের সন্তুষ্টি হিসেবে তাদের
পাখাসমূহ অবনমিত করেন। আর জ্ঞানান্বেষীর জন্য আসমান ও যমীনের অধিবাসী আল্লাহর নিকট
ক্ষমা প্রার্থনা করে, এমনকি পানির মাছও (তার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে)। নিশ্চয়ই আবেদের
(ইবাদতকারীর) উপর আলেমের শ্রেষ্ঠত্ব তারকারাজির উপর চাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের ন্যায়। আলেমগণ
নবীগণের ওয়ারিশ। আর নবীগণ উত্তরাধিকার হিসেবে দীনার ও দিরহাম রেখে যাননি। বরং তাঁরা
উত্তরাধিকার হিসেবে রেখে গেছেন ইলম (জ্ঞান)। কাজেই যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করল, সে একটি
বিশাল অংশ গ্রহণ করল’।
[ইবনু মাজাহ, হা/২২৩, হাদীছ
ছহীহ।
0 Comments