PDF LINK
নাবী (সা.)-এর চুল যেমন ছিল:
❏আবূ হুরাইরাহ
(রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যার মাথায়
চুল আছে সে যেন এর যত্ন নেয়।
1.
[সূত্র
সুনান: আবূ দাউদ ৪১৬৩ হাসান সহীহ। বায়হাক্বী।
সিলসিলাহ সহীহাহ হা/ ৫০০]
❏রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর যুগে আরব-পুরুষদের রীতি ছিল লম্বা চুল রাখা। রাসুল নিজেও লম্বা
চুল রাখতেন। তার চুল কখনো কানের মাঝামাঝি, কানের লতি কিংবা দুই কাঁধ পর্যন্ত লম্বা
থাকতো। তার চুল কাঁধ ছাড়িয়ে আরো লম্বা হত বলে জানা যায়।
2. [(তিরমিজি, আশ-শামাইল আল-মুহাম্মাদিয়া: ৪৭-৫০; আবু দাউদ; ৪/৮১;
আলবানি, মুখতাসারুশ শামাইল: ৩৪-৩৬)]
3. [সূত্র: মিশকাত ৫৭৮৩, সহীহঃ বুখারী ৩৫৫১, মুসলিম ৯১-(২৩৩৭), আবূ
ইয়া'লা ১৭১৪, সহীহ ইবনু হিব্বান ৬২৮৪, শুআবূল ঈমান ৬৪৭২]
❏ কখনো এতদূর পর্যন্ত লম্বা
হতো যে, তা বেণী বা গুচ্ছ করে রাখতেন। তার চাচাতো বোন উম্মে হানি (রা,) বলেন, ‘(মক্কা
বিজয়ের সময়) আল্লাহর রাসুল যখন মক্কায় আগমন করলেন, তখন তার চুলে চারটি গুচ্ছ বা বেণী
ছিল।
4. [(তিরমিজি, আস-সুনান ৪/২৪৬; আবু দাউদ, আস-সুনান : ৪/৮৩, ইবনু মাজাহ, আস-সুনান : ২/১১৯৯; ইবনু হাজার, ফাতহুল বারি : ৬/৫৭২, ১০/৩৬০; আলবানি, মুখাতাসারুশ শামাইল : ৩৫)]
❏ আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম
(রহ.) বলেন, ‘তার চুল যখন লম্বা হতো তখন তিনি তা চারটি গুচ্ছে বিভক্ত রাখতেন।’
5.
(যাদুল মা’আদ : ১/১৭০)
উল্লেখ্য
যে, আরবিতে চুল জড়িয়ে বা বিনুনি করাকে "গাদীরাহ" বলে। হাদীসে "আরবায়ু
গাদায়ের" চারটি গুচ্ছ ভাষাটি ব্যাবহার হয়েছে।
❏ইবনু হাজার আসকালানি (রহ.)
বলেন, ‘অধিকাংশ সময়ে তার চুল এরূপ কাঁধের কাছাকাছি থাকত। কখনো তা আরো লম্বা হতো এবং
ঝুলন্ত গুচ্ছে পরিণত হতো। তিনি সেগুলোকে বেণী বানিয়ে রাখতেন।’ তবে কাঁধ পর্যন্ত থাকা
তার স্বাভাবিকতা ছিল।
6.
(ইবনু হাজার, ফাতহুল বারি
: ১০/৩৬০)
❏মাথা ও চুল: আবদুল হামীদ ফাইযী❏
❏মুসলিমের মাথা কখনো থাকে লম্বা
চুলে ঢাকা; আবার কখনো থাকে নেড়া। বিশেষ করে উমরা বা হজ্জ করার পর মাথা নেড়া করতে হয়।
অতঃপর সেই চুল ধীরে ধীরে বড় হয়, মাঝারি হয় এবং লম্বা হয়। সেই হিসাবে আল্লাহর রসূল
(ﷺ) এর মাথার
চুলও প্রকৃতিগতভাবে সব ধরনের ছিল। কখনো ছিল কানের অর্ধেক বরাবর লম্বা।
1. [সূত্র:
মুখতাসারুশ শামাইলিল মুহাম্মাদিয়্যাহ ২১]
❏কখনো ছিল তার থেকে বেশী লম্বা;
কানের লতি বরাবর। আর আরবীতে একে ‘অফরাহ’ বলা হয়।
❏কখনো ছিল তার থেকেও বেশী লম্বা;
কানের নিচ বরাবর; কান ও কাঁধের মাঝ বরাবর। একে আরবীতে ‘লিম্মাহ’ বলা হয়।
2.
[সূত্র: নাসাঈ হা/ ৫০৫৪, মুখতাসারুশ
শামাইলিল মুহাম্মাদিয়্যাহ ২৮ সুনান আবূ দাউদ ৪১৫৯]
❏আবার কখনো ছিল তার থেকেও বেশী
লম্বা কাঁধ বরাবর। আরবীতে যাকে ‘জুম্মাহ’ বলা হয়। [ঐ ৩]
❏কখনো তিনি তাঁর ঐ লম্বা চুলে
চারটি বেণি গেঁথে নিতেন।[ঐ 23]
❏ইমাম আহমাদ (রহ.) বলেন, এমন
(লম্বা) চুল রাখা সুন্নাত। আমাদের সামর্থ্য হলে আমরাও রাখতাম। কিন্তু তা কষ্টসাধ্য
ব্যাপার।
3.
[সূত্র: 5 আল-আদাবুশ শারইয়্যাহ ৩/৩২৮]
❏উল্লেখ্য যে, সুন্নাতী সবচেয়ে
বড় চুল হল কাঁধ বরাবর। এর চেয়ে বড় চুল রাসুল (ﷺ) এর তরীকার
খিলাপ। তিনি মাথায় তেল ব্যবহার করতেন।
4.
[সূত্র: মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা
হা/২৩৪৪]
([প্রকাশ থাকে যে, অনেকে আল্লাহর নবী (সাঃ)
এর মাথার চুল রাখার ব্যাপারটাকে তাঁর প্রকৃতিগত অভ্যাস মনে করেছেন।]
❏তিনি মাথার চুলকে আঁচড়ে সুবিন্যস্ত
করে রাখতেন। তিনি বলতেন, ‘‘যার চুল আছে, সে যেন তার যত্ন করে।’’
5.
সূত্র- [আবূ দাঊদ হা/৪১৬৩,
বায়হাক্বী। সিলসিলাহ সহীহাহ হা/ ৫০০]
❏একদা তিনি
(ﷺ) এক ব্যক্তির
মাথায় এলোমেলা চুল দেখে বললেন, ‘‘এর কি এমন কিছুও নেই যে, তার দ্বারা মাথার এলোমেলো
চুলগুলোকে সোজা করে (আঁচড়ে) নেয়?!’’
6.
[আবূ দাঊদ হা/৪০৬২, নাসাঈ
হা/ ৫২৩৬, মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ১৪৪৩৬, মিশকাত হা/ ৪৩৫১]
❏তবে চুলের যত্নে বাড়াবাড়ি
করা যাবে না; যেমন মহিলারা করে থাকে। যেহেতু রাসুল (ﷺ) প্রত্যেক
দিন চুল আঁচড়াতেন না। বরং মাঝে মাঝে একদিন করে বাদ দিয়ে আঁচড়াতেন। তিনি প্রত্যহ চুল
আঁচড়াতে নিষেধও করেছেন।
7. সূত্র: [নাসাঈ হা/ ৫০৫৪, মুখতাসারুশ শামাইলিল মুহাম্মাদিয়্যাহ ২৮
সূত্র: আবূ দাউদ ৪১৫৯]
❏তিনি নিষেধ করেছেন (বেশী বেশী
তেল-শ্যাম্পু দিয়ে) চুলের বিলাসিতা করতে।
8.
সূত্র:[আবূ দাঊদ হা/৪১৬০,
নাসাঈ]
❏আয়িশাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত।
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর মাথার চুলের সিঁথি করতে
চাইলে মাথার মাঝ বরাবর দু’ভাগ করে সিঁথি করতাম এবং তাঁর দু’চোখের মাঝখান থেকে সোজা
কপালের দু’দিকে চুল ছেড়ে দিতাম।
❏তিনি চুল আঁচড়াবার সময় ডান
দিক থেকে শুরু করতেন।
❏তিনি তাঁর মাথার মাঝখানে সিঁথি
করতেন।
9. [মুখতাসারুশ শামাইলিল মুহাম্মাদিয়্যাহ-27]
10. সূত্র:[আবূ দাঊদ হা/৪১৮৯, ইবনে মাজাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৩৬৩৩]
❏অতএব চুল লম্বা হলে মাঝে সিঁথি
করা সুন্নাত এবং সিঁথি না করে ছেড়ে রাখা মকরূহ। যেহেতু তাতে আহলে কিতাবের সাদৃশ্য অবলম্বন
করা হয়। অবশ্য চুল ছোট হলে সিঁথি না করে স্বাভাবিক অবস্থায় ছেড়ে রাখায় দোষ নেই।
11.
[ শা’রুর রা’স ৫০পৃঃ]
❏প্রকাশ থাকে যে, বাম বা ডান
দিকে টেরি করা সুন্নাতী তরীকা নয়। বরং তা বিজাতির অনুকরণে করলে অবৈধ।
❏তদনুরূপ বিজাতি বা হিরোদের
অনুকরণ করে চুল কাটিং ও থাক থাক করা বৈধ নয়। যেহেতু রাসুল (ﷺ) বলেন,
‘‘যে ব্যক্তি যে জাতির আনুরূপ্য অবলম্বন করে, সে ব্যক্তি সেই জাতিরই দলভুক্ত।’’
12.
[সূত্র:আহমাদ ২/৫০, আবূ দাঊদ
হা/৪০৩১, সহীহুল জা’মে হা/৬০২৫]
সতর্কতার
বিষয় যে, আল্লাহর রাসুল (ﷺ)-এর চুল লম্বা হলেও মাস্তানদের চুল
কিন্তু ঐ শ্রেণীর নয়। মাস্তানদের চুল আসলে হিরোদের অনুকরণে রাখা হয়।
❏আধুনিক যুগে প্রসিদ্ধ অথবা
কাফের ব্যক্তিত্ব, হিরো অথবা পশুর অনুকরণে সেই নামে চুলের নানা ডিজাইন ও কাটিং প্রচলিত
হয়েছে যুবক-যুবতীদের মাঝে। যেমন স্পাইক, কেয়ারলী, সীজার, মাইকেল, লায়ন, ফ্র্যান্সী,
ইংরেজী, বাংলা, রাহুল, কাপূরী, বাবরী, সাধনা, ডিয়ানা, র্যাট, আলবার্ট, আর্মী, বব,
হিপ্পী, রাউ-, রানিং, স্টপ, সেস্নাপ প্রভৃতি। ঐ শ্রেণীর মানুষ বা পশুর অনুকরণে এ সকল
ডিজাইন ও কাটিং ব্যবহার কোন মুসলিম করতে পারে না।
❏প্রকাশ থাকে যে, আয়না দেখার
সময় পঠনীয় কোন দু‘আ নেই। যেহেতু সে ব্যাপারে বর্ণিত হাদীস সহীহ নয়।
13.
[ ইরওয়াউল গালীল ১/১১৫]
মাথার চুল মুণ্ডন করাঃ
❏হজ বা ওমরাহ ব্যতীত তিনি কখনো
মাথার চুল মুণ্ডন করেছেন— বলে জানা যায় না।
1.
(ইবনুল কাইয়িম, যাদুল মা’আদ
: ১/১৬৭, শামি, সিরাহ শামিয়াহ : ৭/৩৪৯-৩৫০)
❏সেজন্যই এ নিয়ে মতভেদ আছে—
মুণ্ডন করা যাবে কি যাবে না। কোনো কোনো ফকিহ হজ-ওমরাহ ছাড়া মাথা মুণ্ডনকে মাকরুহ বলেছেন।
দুই কারণে তাদের মতের পক্ষে এ প্রমাণ পেশ করেন। প্রথমত, রাসুল (সা.) নিজে কখনোই হজ-ওমরাহ
ছাড়া মাথা মুণ্ডন করেননি। দ্বিতীয়ত - বিভিন্ন হাদিস থেকে মাথা মুণ্ডন আপত্তিকর বলে
জানা যায়। সাহাবিগণ ছোট চুল রাখতেন; নেড়া করা পরিহার করতেন।
❏জাবির (রা.) বলেন, রাসুল
(সা.) বলেন, ‘হজ বা ওমরাহ ছাড়া মাথার চুল ফেলা যাবে না।’
2.
(হাদিসটির সনদ দুর্বল; তাবারানি,
আল মুজামুল আওসাত : ৯/১৮০)
*দূর্বল
হলেও বেশ কয়েক সনদে হাদিসটি উল্লেখ আছে। (তবে হাদীসের বর্ননা সূত্রের কেউ মিথ্যায় অভিযুক্ত
নন)। আবু নু'আইমের বর্ণনায় হাদিসটি হলো, হজ বা ওমরাহ ছাড়া মাথার চুল ফেলা যাবে না।
এছাড়া তা সৃষ্টি-বিকৃতি করা বলে গণ্য হবে।’
3.
(আবু নুআইম, হিলইয়াতুল আউলিয়া
: ৮/১৩৯)
♦ জাবির (রা.) থেকে বর্ণিত অন্য হাদিসে
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি (মাথার চুল) মুণ্ডন করে, (পোশাক-পরিচ্ছদ) ছিড়ে
ফেলে বা চিৎকার করে সে আমাদের দলভুক্ত নয়।
4.
(সহিহ সনদ) বুখারি, আস-সহিহ
: ৬/২৭৪৮)
♦ আবু মুসা আশআরি (রা.) থেকে একাধিক
গ্রহণযোগ্য সনদে এ অর্থে আরেকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। (তবে এ হাদিসটি মূলত বিপদ-মসিবতে
অধৈর্য্য হয়ে এরূপ করতে নিষেধ করা হয়েছে)
♦ দুবা'য়ি নামক এক নিকৃষ্ট অপরাধী
ব্যক্তিকে হযরত উমার (রা) শাস্তি প্রদান করেন এবং বলেন, ‘তোমাকে যদি মাথা মুণ্ডিত অবস্থায়
পেতাম, তবে আমি যাতে তোমার চক্ষুদ্বয় রয়েছে তা (তোমার মস্তক) তরবারির আঘাতে কেটে ফেলতাম।’
মানে শাস্তি অধিক হতো।
5.
(ইবনু কুদামা, আল-মুগনি :
১/৬৫)
এ
থেকেও বোঝা যায়, সাহাবিগণ মাথা মুণ্ডনের অভ্যাসকে আপত্তিকর বলে মনে করতেন। ইমাম আহমাদ
ইবনু হাম্বল (রহ.) বলেন, প্রথম যুগের সালাফরা মাথা মুণ্ডন করা মাকরুহ বলে মনে করতেন।
অবশ্য, তা হারাম বা গুনাহের কাজ ভাবা যাবেনা।
6.
(মোল্লা আলী কারি, মিরকাত
: ৮/২৪০)
❏মোল্লা আলী কারি (রহ.) বলেন,
‘চুল দীর্ঘ হওয়া কোনো নিন্দিত বিষয় নয়। কাঁধ ছাপিয়ে পরিমাপের চেয়ে বড় হলে চুল কেটে
ফেলতে হবে বলেও কোনো নির্দেশ নেই।’
7.
(মিরকাত : ৮/২৪০)
সুতরাং
পুরুষের চুল কাঁধের নীচে চলে গেছে মানেই তিনি গুনাহ করছেন এটি দ্বীনি জ্ঞানে অজ্ঞদের
ভাবনা। তবে এটি দারা অহংকার প্রকাশ যেনো না হয়।
❏তবে মনে রাখতে হবে- বড় চুল
রাখা পুরুষের জন্য বাধ্যতামূলক নয়। অনেক ফকিহ দাড়ি বড় হবার আগে চুল বড় করতে নিষেধ করেছেন
(মেয়েদের সঙ্গে সাদৃশ্য হতে পারে বলে)। ছোট করে চুল রাখাও জায়েজ। তবে মাথার সব অংশে
তা সমান হতে হবে। কোথাও বড়, আবার কোথাও ছোট— এভাবে কাটা ইসলামসম্মত নয়।
❏কাতাদাহ (রা) থেকে বর্ণিত
- তার কাধ ছাপিয়ে বিশাল চুল নিয়ে রাসসুল (সা.)-এর কাছে জিজ্ঞেস করলে রাসুল (সা.) তাঁকে
একদিন পর একদিন চুল আঁচড়াতে এবং পরিপাটি করে রাখতে নির্দেশ দেন।
8.
(নাসায়ি : ৮/১৮৪)
❏চুলে তেল দেওয়া, সুগন্ধি মিশিয়ে
তেল দেওয়া, পুরুষের জন্য আঁচড়িয়ে পরিপাটি রাখা, মাঝে সিঁথি করাও সুন্নাহ।
9.
(মুয়াত্তা মালিক : ২/৯৪৯)
❏সুতরাং যাদের
সম্ভব রাসুল (সা.)-এর চুলের এ দায়েমি সুন্নতের ওপর আমল করতে পারি। কেউ বড় চুল রাখলে,
কানের লতি ছাপিয়ে নীচে গেলেই— না বুঝে আপত্তিকর বাজে মন্তব্য না করি। আল্লাহ আমাদের
বুঝ দান করুন।
আরো বিস্তারিত জানতে ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.)
রচিত ‘ইসলামে পোশাক পর্দা ও দেহ-সজ্জা’ বইটি পড়ে নিতে পারেন।
সূত্র:
https://www.hadithbd.com/hadith/detail/?book=23§ion=524
৫/৩০: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চোখ ও দুকানের মধ্যবর্তী অংশের কিছু চুল সাদা হয়েছিল:
তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিক (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করলাম, রাসূলুল্লাহ (সঃ) কি খিযাব ব্যবহার করতেন? তিনি বললেন, তিনি ঐ পর্যন্ত পৌছেন নি। (তার দাড়ি ও চুল এতদূর সাদা হয়নি, যাতে খেযাবের প্রয়োজন হয়)। কেবলমাত্র তার চোখ ও দু’কানের মধ্যবর্তী অংশের কিছু চুল সাদা হয়েছিল। তবে আবু বকর (রাঃ) মেহেদী পাতা ও কাতাম [৩০] দ্বারা খিযাব লাগাতেন। [৩১]
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بَشَّارٍ ، قَالَ : أَخْبَرَنَا أَبُو دَاوُدَ ، قَالَ : أَخْبَرَنَا هَمَّامٌ ، عَنْ قَتَادَةَ ، قَالَ : قُلْتُ لأَنَسِ بْنِ مَالِكٍ : هَلْ خَضَبَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ؟ قَالَ : " لَمْ يَبْلُغْ ذَلِكَ ، إِنَّمَا كَانَ شَيْبًا فِي صُدْغَيْهِ " وَلَكِنْ أَبُو بَكْرٍ ، خَضَبَ بِالْحِنَّاءِ وَالْكَتَمِ .
[৩০] কাতাম এক ধরণের সবুজ রঙের উদ্ভিদ। এটা দ্বারা খিযাব তৈরি করা হয়।
[৩১] সহীহ মুসলিম, হা/৬২১৯; মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৮৫১; মুসনাদুল বাযযার, হা/৬৭৮৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩১৭৬; মুসনাদে আবু ই'আলা, হা/২৮৯৩।
৫/৩১: তাঁর মাথা ও দাড়িতে মাত্র ১৪টি সাদা চুল ছিল
তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর মাথা ও দাড়িতে মাত্র ১৪টি সাদা চুল গণনা করেছি। [৩২]
ব্যাখ্যা : রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর অতি স্বল্প পরিমাণ সাদা চুল ছিল। তবে এর পরিমাণ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। এ হাদীসে ১৪টির কথা বলা হয়েছে। আর কোন বর্ণনায় ১৭টি, কোন বর্ণনায় ১৮টি, আবার কোন বর্ণনায় ২০টির কথা উল্লেখ রয়েছে। আসলে এসব বর্ণনাতে কোন বৈপরিত্য নেই। কারণ প্রত্যেকটি বর্ণনা আলাদা সময়ের সাথে অথবা বিভিন্ন জনের গণনার পার্থক্যের কারণে এ বৈপরিত্য সৃষ্টি হয়েছে। তবে প্রত্যেক রিওয়ায়াতের উদ্দেশ্য হলো রাসূলুল্লাহ (সঃ) এ এর সাদা চুল স্বল্প ছিল, এটাই বুঝানো।
حَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ مَنْصُورٍ ، وَيَحْيَى بْنُ مُوسَى ، قَالا : حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ ، عَنْ مَعْمَرٍ ، عَنْ ثَابِتٍ ، عَنْ أَنَسٍ ، قَالَ : " مَا عَدَدْتُ فِي رَأْسِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَلِحْيَتِهِ , إِلا أَرْبَعَ عَشْرَةَ شَعْرَةً بَيْضَاءَ " .
[৩২] মুসনাদে আহমাদ, হা/১২৭১৩, শারহুস সুন্নাহ, হা/৩৬৫৩; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৬২৯৩ মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হা/২০১৮৫।
৫/৩২: তাঁর মাথা ও দাড়িতে মাত্র ১৪টি সাদা চুল ছিল
একদা তাকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) র এর সাদা চুল সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল। তখন তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) যখন তার মাথায় তৈল ব্যবহার করতেন তখন সাদা চুল দেখা যেত না। পক্ষাস্তরে তৈল ব্যবহার না করলে কয়েক গাছি চুল সাদা হয়েছে বলে মনে হতো। [৩৩]
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى ، قَالَ : أَخْبَرَنَا أَبُو دَاوُدَ ، قَالَ : حَدَّثَنَا شُعْبَةُ ، عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ ، قَالَ : سَمِعْتُ جَابِرَ بْنَ سَمُرَةَ ، وَقَدْ سُئِلَ عَنْ شَيْبِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم ، فَقَالَ : " كَانَ إِذَا دَهَنَ رَأْسَهُ لَمْ يُرَ مِنْهُ شَيْبٌ ، وَإِذَا لَمْ يَدْهِنْ رُئِيَ مِنْهُ " .
[৩৩] সহীহ মুসলিম, হা/৬২২৯. সুনানুল কাবীর লিন নাসাঈ, হা/৯৩৪৫।
৫/৩৩: তাঁর মাথা ও দাড়িতে মাত্র ১৪টি সাদা চুল ছিল
তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সাদা চুলের সংখ্যা ছিল ২০ এর কাছাকাছি। [৩৪]
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ الْوَلِيدِ الْكِنْدِيُّ الْكُوفِيُّ ، قَالَ : حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ آدَمَ ، عَنْ شَرِيكٍ ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ ، عَنْ نَافِعٍ ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ ، قَالَ : " إِنَّمَا كَانَ شَيْبُ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَحْوًا مِنْ عِشْرِينَ شَعْرَةً بَيْضَاءَ " .
[৩৪] ইবনে মাজাহ, হা/৩৬৩০; সহীহ ইবনে হিব্বান, হা/৬২৬৪।
৫/৩৪: কয়েকটি সূরার প্রভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর চুল সাদা হয়ে গিয়েছিল
তিনি বলেন, আবু বকর (রাঃ) আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! আপনার চুল তো সাদা হয়ে গিয়েছে। আপনি বার্ধক্যে পৌছে গেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, সূরা হূদ, ওয়াকিয়া, মুরসালাত, আম্মা ইয়াতাসা-আলূন, ইযাশ-শামসু কুভভিরাত আমাকে বৃদ্ধ বানিয়ে দিয়েছে।[১]
حَدَّثَنَا أَبُو كُرَيْبٍ مُحَمَّدُ بْنُ الْعَلاءِ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُعَاوِيَةُ بْنُ هِشَامٍ ، عَنْ شَيْبَانَ ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنْ عِكْرِمَةَ ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ : قَالَ أَبُو بَكْرٍ : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، قَدْ شِبْتَ ، قَالَ : " شَيَّبَتْنِي هُودٌ ، وَالْوَاقِعَةُ ، وَالْمُرْسَلاتُ ، وَعَمَّ يَتَسَاءَلُونَ ، وَإِذَا الشَّمْسُ كُوِّرَتْ " .
[৩৫]মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৩৩১৪; শারহুস সুন্নাহ, হা/৪১৭৫; জামেউস সগীর, হা/৬০৩৬; সিলসিলা সহীহাহ,হা/৯৫৫।
৫/৩৫: কয়েকটি সূরার প্রভাবে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর চুল সাদা হয়ে গিয়েছিল
তিনি বলেন, একদা সাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমরা আপনার বয়োবৃদ্ধ হওয়ার স্পষ্ট নিদর্শন লক্ষ্য করছি। তিনি বললেন, হুদ এবং তদানুরূপ সূরাগুলো আমাকে বার্ধক্যে উপণীত করেছে। [৩৬]
ব্যাখ্যা : -এর দ্বারা ঐসব সূরা উদ্দেশ্য, যাতে কিয়ামত, জাহান্নাম প্রভৃতি ভীতিপ্রদর্শন বিষয়ক আলোচনা করা হয়েছে।
حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ وَكِيعٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ بِشْرٍ ، عَنْ عَلِيِّ بْنِ صَالِحٍ ، عَنْ أَبِي إِسْحَاقَ ، عَنْ أَبِي جُحَيْفَةَ ، قَالَ : قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، نَرَاكَ قَدْ شِبْتَ ، قَالَ : " قَدْ شَيَّبَتْنِي هُودٌ وَأَخَوَاتُهَا " .
[৩৬] মুজামুল কাবীর লিত তাবরানী, হা/১৭৭৭৪ মুসনাদে আবু ই'আলা, হা/৮৮০: মিশকাত, হা/৫৩৫৩।
৫/৩৬: তাঁর চুল সাদা হলেও লাল মনে হতো
তিনি বলেন, একবার আমি আমার ছেলেকে নিয়ে নবী (সঃ) এর কাছে এলাম। তিনি বললেন, আমার ছেলেকে তাকে দেখালাম। তারপর যখন তাকে দেখলাম তখন বললাম, ইনি আল্লাহর নবী (সঃ)। সে সময় তার পরনে ২টি সবুজ রঙের কাপড় ছিল। তার চুল সাদা দেখা যাচ্ছিল কিন্তু মনে হচ্ছিল লাল। [৩৭]
حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا أَنْبَأَنَا شُعَيْبُ بْنُ صَفْوَانَ ، عَنْ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ عُمَيْرٍ ، عَنِ إِيَادِ بْنِ لَقِيطٍ الْعِجْلِيِّ ، عَنْ أَبِي رِمْثَةَ التَّيْمِيِّ ، تَيْمِ الرَّبَابِ ، قَالَ : أَتَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , وَمَعِي ابْنٌ لِي ، قَالَ : فَأَرَيْتُهُ ، فَقُلْتُ لَمَّا رَأَيْتُهُ : " هَذَا نَبِيُّ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعَلَيْهِ ثَوْبَانِ أَخْضَرَانِ ، وَلَهُ شَعْرٌ قَدْ عَلاهُ الشَّيْبُ ، وَشَيْبُهُ أَحْمَرُ " .
[৩৭] মুসনাদে আহমাদ, হা/৭১১১; মুজামুল কাবীর, হা/১৮১৭৬; মুস্তাদরাকে হাকেম, হা/৪২০৩; শারহুস সুন্নাহ, হা/৩০৯১ মিশকাত, হা/৪৩৫৯।
৫/৩৭: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সিঁথি কাটার স্থানে কয়েকটি চুল সাদা ছিল
জাবির ইবনে সামুরা (রাঃ)-কে জিজ্ঞেস করা হলো যে, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর মাথায় সাদা (পাকা) চুল ছিল কি? তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর সিথি কাটার স্থানে কেবল কয়েকটি সাদা চুল শোভা পাচ্ছিল। এ চুলগুলোতে তৈল ব্যবহার করা হলে সাদা ঢেকে যেত। [৩৮]
حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مَنِيعٍ ، قَالَ : حَدَّثَنَا سُرَيْجُ بْنُ النُّعْمَانِ ، قَالَ : حَدَّثَنَا حَمَّادُ بْنُ سَلَمَةَ ، عَنْ سِمَاكِ بْنِ حَرْبٍ ، قَالَ : قِيلَ لِجَابِرِ بْنِ سَمُرَةَ : أَكَانَ فِي رَأْسِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ شَيْبٌ ؟ قَالَ : " لَمْ يَكُنْ فِي رَأْسِ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ , شَيْبٌ إِلا شَعَرَاتٌ فِي مَفْرِقِ رَأْسِهِ ، إِذَا ادَّهَنَ وَارَاهُنَّ الدُّهْنُ " .
[৩৮] মুসনাদে আহমাদ, হা/২১০৩০ মুজামুল কাৰীর, হা/১৯৩০।
0 Comments