শিয়া মতবাদঃ ইসলামের নামে ভয়ংকর বিশ্বাস ও মুনাফেকি
ইরানকে কি আক্রমণ করবে আমেরিকা?
আমাদের বন্ধু মহলের এক আড্ডায় তুমুল আলোচনা চলছে। এটা আজ থেকে প্রায় দশ বছর আগের কথা। খবরের কাগজের পাতায় আমেরিকা ও ইরানের পরস্পর উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় চলছে। সাধারণ একজন মুসলিম হিসাবে ইরানের জন্য ভীষণ ফিল করছি মনের ভেতরে। সারা বিশ্বের এটিই একমাত্র ইসলামিক প্রজাতন্ত্র। এর একজন প্রধান ধর্মীয় নেতা আছে যার মর্যাদা সেদেশে সবচেয়ে বেশী। দেশের ভিতর আংশিক হলেও কায়েম আছে শরীয়া আইন। আক্রমণে জর্জরিত মুসলিম বিশ্বের শাসকদের নতজানু আচরণের বিপরীতে তারা হলো নির্ভীক ব্যতিক্রমের মতো যারা সরাসরি ইয়াহুদী-নাসারাদের বিরুদ্ধে কথা বলে। মুসলিম হিসাবে আর কি চাই। আমাদের বন্ধুদের ভেতরে দু-তিনজন ছিলো যারা খুব ভালো মুসলিম এবং সবার চেয়ে ইসলামী জ্ঞানে অনেক এগিয়ে। তবে সেদিন আমি অবাক বিস্ময়ে লক্ষ্য করলাম যে তারাই ইরানের বিরুদ্ধে সবচেয়ে উচ্চকন্ঠ্য। মনে খুব আঘাত পেয়েছিলাম। সেই বন্ধুদের খুব তাচ্ছিল্য করে গালমন্দ করেছিলাম সেদিন। তর্কের শেষে এক বন্ধু বলেছিলো “আমেরিকার কথা শুনে মনে হচ্ছে তারা কালকেই ইরান আক্রমণ করবে। ইনশাআল্লাহ নিশ্চিতভাবে বলতে পারি অন্তত আমাদের জীবদ্দশায় এটা আমরা দেখে যেতে পারবো না”। আমাদের কয়েকজন মোটামুটি চ্যালেঞ্জের মতো করে বলেছিলো সেটা দু-এক মাসের ভিতরই হয়ে যাবে।সেদিনের পর দশ বছর পেরিয়ে গেছে। এর ভেতর পৃথিবীর মানচিত্রের বুকে ঘটে গেছে হাজারো মানুষকে নির্বিচারে আক্রমণ ও হত্যা করার ঘটনা। কোনরকম কথার যুদ্ধ ছাড়াই ক্রমাগত আক্রমণ করা হয়েছে বা হচ্ছে ফিলিস্তিন, আফগানিস্তান, ইরাক, সোমালিয়া, সুদান, ইয়েমেন সহ মুসলিম অধ্যুষিত অগণিত জনপদের উপর। তবে অক্ষত থেকে গেছে একটি দেশ যার নাম ইরান আর অন্যান্য মুসলিম দেশের একটি চিহ্নিত জনগোষ্ঠী, যাদের নাম হলো শিয়া। অবাক ব্যাপার হলো যে, সেই দশ বছর আগেকার কথার যুদ্ধ এখনও চলছে বিরামহীন, ঠিক আগেরই মতো।
ইসলামের জ্ঞানে যখন অজ্ঞ ছিলাম এবং আল্লাহর অশেষ করুণায় ইসলামকে যখন জানতে চেষ্টা করছি, দুটি সময়েই হৃদয়ের ভেতর সবচেয়ে দগদগে অংশটি ছিলো শিয়া-সুন্নী নামে ইসলামের এই মেজর ডিভাইডেশন। এক সময় যখন তা নিয়ে জানার চেষ্টা শুরু করলাম, তখন অবাক হয়ে দেখলাম এক ভয়াবহ ইতিহাস। শিয়া নামের এক বিষফোঁড়া যে ইসলামের গায়ে চেপে বসে ধীরে ধীরে ক্যান্সারে রূপ নিচ্ছে তা সেই প্রথম বুঝতে পারলাম। শিয়া নামের এই ফিতনার কালো থাবা আজ লোকচক্ষুর অন্তরালে আমাদের শিরা-উপশিরায় ঢুকে পড়েছে।
হুজাইফাহ ইবনুল ইয়ামান (রাঃ) এর বরাতে সহীহ মুসলিমের ফিতনাহ অধ্যায়ে একটি হাদীস এসেছে যেখানে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “ফিতনার দরজা এক সময় ভেঙে ফেলা হবে (খুলে দেয়া নয়, একেবারে ভেঙে ফেলা, যা আর কখনো থামানো যাবে না)”। তিনি এই দরজাটির কথাও বলে গিয়েছিলেন। এই দরজা ছিলেন উমার ইবনুল খাত্তাব (রাঃ)। অর্থাৎ উমার রাঃ এর জীবনকাল পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর ভেতরে কোন ফিতনা থাকবে না। উম্মাহ হবে একক ও ঐক্যবদ্ধ। উমার রাঃ মৃত্যুর পর উসমান ইবন আফফান (রাঃ) যখন খলিফা, সে সময় কুফায় এসে একজন লোক ঘাঁটি গাড়লো যার নাম আবদুল্লাহ বিন সাবাহ। দুহাতে দান করা থেকে শুরু করে মানুষের মন জয় করার জন্য যা যা করা দরকার তার কিছুই করতে এই লোকটি বাদ রাখেনি। অল্পদিনেই কুফার অগণিত মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় তার আসন নিশ্চিত হলো। তার নামটি মুসলিমের মতো শোনালেও প্রকৃতপক্ষে সে ছিলো একজন ইয়াহুদী গুপ্তচর (তখনকার সময়ে আরবীয় অঞ্চলের মুসলিম, খৃষ্টান, ইয়াহুদী কিংবা মুশরিক সকলের নামই এমন ছিলো)। এক সময় যখন ইবন সাবাহ তার আসন সম্পর্কে নিশ্চিত হলো, তখন সে ধীরে ধীরে মানুষকে উসমান রাঃ এর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে লাগলো। তার মূল এজেন্ডা ছিলো এই যে, উসমান রাঃ অন্যায়ভাবে আলী রাঃ এর প্রাপ্য খিলাফত নিজের অধিকারে নিয়ে নিয়েছেন। রাসুলের পরিবারের উত্তরাধিকারী হিসাবে মূলতঃ আলীরই খলিফা হওয়া উচিৎ। আহলে বাইত বা রাসুল পরিবারের মতো এমন একটি স্পর্শকাতর ইস্যু নিয়ে সে অল্পদিনের ভেতর মানুষকে উসমান রাঃ এর বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তুলতে সক্ষম হলো। আর এরই ভিতর দিয়ে যেন ভেঙে গেলো ফিতনার দরজা, চিরতরে। শিয়া মতবাদের পত্তন হলো পৃথিবীর বুকে।
মুসলিম খিলাফতের রাজধানী মদীনায় পৌঁছে গেলো এ খবর, পৌঁছালো স্বয়ং খলিফা উসমান রাঃ এর কানেও। মজলিশে শুরার সদস্য সাহাবাগণ এগিয়ে এলেন যার ভিতরে স্বয়ং আলী রাঃ ও ছিলেন। তারা উসমান রাঃ কে তৎক্ষণাৎ বাহিনী পাঠিয়ে ইবন সাবাহকে শায়েস্তা করার পরামর্শ দিলেন। কোমল হৃদয় উসমান প্রত্যাখ্যান করলেন তা। অল্পদিনের ভিতরই আবদুল্লাহ বিন সাবাহ বাহিনী সশস্ত্র অবস্থায় মদীনা প্রবেশ করলো। খলিফার কাছ থেকে এবারো কোন বাধা না পেয়ে এক সময় তারা হত্যাই করে বসলো রাসুলুল্লাহ সাঃ এর দুই কন্যার স্বামী এবং পৃথিবীতে বসে জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া সাহাবী উসমান রাঃ কে। মুসলিম উম্মাহ দেখতে শুরু করলো ফিতনার কদর্য রূপকে।
এরপর পেরিয়ে গেছে বছরের পর বছর, শতাব্দীর পর শতাব্দী। মুসলিম নাম ধারণ করে আবদুল্লাহ বিন সাবাহর অনুসারী একদল লোক ইসলামকে ধ্বংসকারীদের সাথেই চিরকাল হাত মিলিয়ে চলেছে শিয়া সেক্ট হিসাবে। এদের বিধ্বংসী বিশ্বাস হতবাক করেছে অগণিত মুসলিমকে। তবে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর ঘোষণা মতো অন্য অনেক ফিতনার মতো এই ফিতনাও কখনো নির্মূল করা যায়নি।
মনে পড়ে আমার ছোটবেলায় দেখেছি শ্রমিকরা যখন কোন ভারী বস্তু তুলতো বা ঠেলতো তখন “ইয়া আল্লাহ্……” না বলে বলতো “ইয়া আলী……”। এরকম কাজে একই কথা আমরাও অনেক বলেছি। আপাত দৃষ্টিতে এটা সামান্য কথা বলে মনে হলেও এরই ভেতর যে লুকিয়ে আছে শির্ক ও শিয়া মতবাদের মারাত্মক বিষ, সেটা আল্লাহর কৃপায় অনেক পরে বুঝেছি। আবদুল্লাহ বিন সাবাহর হাত ধরে প্রথম শুরু হয়েছিলো আলী রাঃ এর খিলাফত বঞ্চিত হবার প্রপাগান্ডা। মহাকালের আবর্তে পড়ে সুঁই হয়ে ঢুকে ফাল হয়ে বেরোবার মতো করে এই আলীকেই শিয়াদের একটি দল আল্লাহর স্থানে বসিয়ে দিয়েছে এবং তাঁকেই ইলাহ হিসাবে ঘোষণা করেছে। আলী রাঃ এর প্রতি অতিভক্তির সাথে সাথে রাসুলুল্লাহ সাঃ এর আরো কিছু হাদীস এবং ঘটনাকে বিকৃত করে এবং তাতে নতুন অংশ জাল করে ইসলামী বিশ্বাসের বিপরীত একটি ভ্রান্ত পথ ইসলামের নামেই ছড়িয়ে দিয়েছে শিয়া বলে নিজেদের পরিচয় দেয়া এই গোষ্ঠীটি। নিজেদের পছন্দমত করে বানানো অগণিত জাল হাদিস, বিকৃত বাণী এবং বিকৃত কুরআন হয়ে থেকেছে তাদের সম্বল। আর যেভাবে তারা আল্লাহর দ্বীনকে বিকৃত করেছে, একইভাবে শতাব্দীর পর শতাব্দী তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বাকী মুসলিম বিশ্বের সাথে। প্রকাশ্য বা গোপনভাবে সাহায্য করেছে কাফির-মুশরিক কিংবা ইয়াহুদী নাসারাদের।
শিয়া বিশ্বাস বা ইতিহাস নিয়ে অজস্র আলোচনা পৃথিবীর বুকে হয়েছে। সামান্য পরিসরে আসুন আমরা দেখে নেই শিয়াদের বিধ্বংসী বিশ্বাসগুলো।
‘গাদীর খুম’ এর হাদীস এবং এর বিকৃতি- শিয়া বিশ্বাসের অন্যতম ভিত্তিঃ
‘গাদির খুম’ এই নাম আপনি কখনো শুনেছেন কি? গাদীর খুম হলো সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম ও অন্যান্য কয়েকটি হাদীস গ্রন্থে উল্লেখিত একটি কুপ বা কুয়ার নাম। এখানে রাসুলুল্লাহ সাঃ আলী রাঃ এর ব্যাপারে কিছু কথা বলেছিলেন। এই হাদীস না শুনে থাকলেও তা দোষের কিছু নয়। তবে শিয়া স্টান্টবাজির অন্যতম হলো যে, তাদের সাথে ধর্ম নিয়ে আলোচনা করলে সাধারণ মুসলিমদের এই বিষয়ে অজ্ঞতার সুযোগে তারা কিছুটা বিকৃত করে এই হাদীস শুনিয়ে আপনাকে বোকা বানিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবে। এমনকি কোন শিয়াকে যদি তার স্বপক্ষে একটি দলীল দেবার কথা বলা হয় তাহলে সে এ হাদীসকে উল্লেখ করার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী। এজন্য সবার এ বিষয়ে সতর্ক থাকাটা উচিৎ। হাদীসটি আলোচনা করার আগে এই হাদীসের পূর্বকার প্রেক্ষাপট আলোচনাও জরুরী। এর প্রেক্ষাপট অনেক হাদীস গ্রন্থ এমনকি শিয়াদের লেখা কিছু গ্রন্থেও এসেছে।
রাসুলুল্লাহ সাঃ তিনশ যোদ্ধার এক বাহিনী আলী রাঃ এর নেতৃত্বে ইয়েমেনে পাঠিয়েছিলেন। সেখানে সে দলটি বিপুল পরিমাণ যুদ্ধলব্ধ সম্পদ লাভ করে। আলী রাঃ গণিমতের অংশ থেকে খুমুস (পাঁচভাগের এক অংশ) আলাদা করে রাখেন যার ভিতরে বিপুল পরিমাণ লিলেনের কাপড়ও ছিলো। সাহাবাদের ভেতর থেকে অনেকে সেই কাপড় থেকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য তাদের কিছুটা ধার দেয়ার জন্য আলী রাঃ কে অনুরোধ করেন। এর কারণ হলো দলটি সেখানে তিনমাস অবস্থান করছিলো এবং তাদের ব্যবহার্য কাপড়ও যথেষ্ট ছিলো না। কিন্তু আলী রাঃ তা দিতে অস্বীকার করেন এবং তা সরাসরি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর হাতে তুলে দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। এর কিছুদিন পরে আলী রাঃ রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাথে হজ্জে যোগদানের জন্য তাঁর ডেপুটিকে কমান্ড হস্তান্তর করে মক্কার উদ্দেশ্যে চলে যান। আলী রাঃ চলে যাবার পর সেই ডেপুটি কমান্ডার সবদিক বিবেচনা করে সৈন্যদলকে লিলেনের কাপড় ধার দেবার সিদ্ধান্ত নেন। অল্পদিন পরে পুরো দলটিও রাসুলুল্লাহ সাঃ এর সাথে যোগ দেয়ার জন্য রওয়ানা করে। দলটির আগমনের খবর পেয়ে আলী রাঃ মক্কা থেকে বেরিয়ে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাতে আসেন। কাছে এসে তিনি দেখতে পান তাদের গায়ে সেই লিলেনের পোষাক। আলী রাঃ অত্যন্ত ক্রোধান্বিত হন এবং তাদের নির্দেশ দেন তৎক্ষণাৎ সে পোষাক খুলে পুরাতন পোষাক পরার জন্য। আলীর নির্দেশ মান্য করলেও দলটির নেতা সহ সকলেই খুব ক্ষুব্ধ হয়।
খবরটি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কানে গিয়েও পৌঁছায়। শুনে তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “তোমরা আলীর উপর রাগ করোনা। সে আল্লাহর পথে এতোটাই নিবেদিত একজন লোক যে, এ ব্যাপারে তাকে দোষ দেয়া যায় না”। রাসুলুল্লাহ সাঃ এর এই বাণীও দলটির অনেক সদস্যের রাগ প্রশমন করতে পারলো না (হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী বুরাইদাহ রাঃ ও এর ভেতর একজন)। দোষারোপ চলতেই থাকলো। মক্কা থেকে মদীনা ফেরার পথে এ দলটি গাদির খুম নামের এক কুপের কাছে যাত্রাবিরতি করলো। সেখানে আলীর নামে আবার অভিযোগ তোলা হলো। এবার রাসুলুল্লাহ সাঃও ক্ষুব্ধ হলেন ও লোকদের ডেকে আলী সম্পর্কে বললেন। মোটামুটি এই হলো গাদির খুম হাদীসের প্রেক্ষাপট। এবার আসা যাক সহীহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত গাদির খুম হাদিসের বর্ণনাতে। হাদিসের বর্ণনাকারী হলেন বুরাইদাহ রাঃ যিনি ইয়েমেনে পাঠানো দলটির একজন সদস্য ছিলেন।
বুরাইদাহ রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসুলুল্লাহ সাঃ আলী কে খালিদের (বিন ওয়ালিদ) কাছে পাঠালেন খুমুসের (যুদ্ধলব্ধ সম্পদের এক পঞ্চমাংশ) অংশ আনার জন্য, এবং আলীকে আমি অপছন্দ করতাম। আলী খুমুসের অংশের একজন যুদ্ধবন্দীর (যা তাকে রাসুল দিয়েছিলেন) সাথে মিলনের পর গোসল সেরেছিলেন। তা দেখে আমি খালিদকে বললাম, “তুমি কি দেখছো না (যে আলী খুমুস থেকে অংশ নিয়ে ব্যবহার করছে)”? আমরা যখন রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কাছে পৌঁছালাম তখন আমরা তাঁকে এ ব্যাপারটা বললাম। তিনি আমাকে বললেন, “ওহে বুরাইদাহ, তুমি কি আলীকে ঘৃণা করো”? আমি বললাম “হ্যাঁ”। তিনি বললেন, “তুমি তাকে এজন্য ঘৃণা করছো, অথচ খুমুস থেকে এর চেয়ে বেশীই তার প্রাপ্য”।
এইটুকু হলো বুখারী ও মুসলিমের হাদীস। এর অতিরিক্ত কিছু অংশ নানা বর্ণনায় অন্য হাদীস গ্রন্থে এসেছে যার ভিতরে দুটি ভাষ্য সহীহ বলে অল্প কয়েকজন স্কলার বলেছেন, যদিও ইবন তাইমিয়াহ সহ সকল প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস এর বাইরের কোন বর্ণনাকে সহীহ বলেননি। এখানে আলোচনার স্বার্থে আমরা দুটি অতিরিক্ত বর্ণনাকে সহীহ ধরে নিচ্ছি যে দুটি হলো-
১। এরপর রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন, “মান কুনতু মাওলা ফী আলী মাওলা (যার মাওলা আমি, আলীও তার মাওলা)”
২। রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন, “আল্লাহুম্মা ওয়ালী মান ওয়ালাহ ওয়া আদি মান আদাহ (ও আল্লাহ্, আএ তার (আলী) বন্ধু, তুমি তার বন্ধু হও আর যে তার প্রতি শত্রুতা রাখে তুমি তার শত্রু হও)”।
এই দুটি অতিরিক্ত বর্ণনার বাইরেও এই হাদীসের আরো অনেক বাড়তি বর্ণনা রয়েছে যার সবই শিয়াদের তৈরী বা জাল করা। অধিকাংশ শিয়া স্কলার রেফারেন্স হিসাবে এই দুই বর্ণনার অতিরিক্ত অতিরঞ্জিত বর্ণনাগুলো বলেন না। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো যে, গাদির খুমের হাদীসটি বর্ণনার ক্ষেত্রে তারা বুখারী ও মুসলিমের রেফারেন্স উল্লেখ করলেও প্রায় সকল ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বর্ণনাগুলি একই সাথে চালিয়ে দেয় যদিও সেগুলো বুখারী-মুসলিমে নেই।
যাহোক, অতিরিক্ত দুটি বর্ণনার মূল আলোচ্য অংশ হলো ‘মাওলা’ শব্দটি। আরবী ভাষায় অনেক শব্দেরই একাধিক অর্থ থাকে যার কোন কোনটির থাকে অনেক অর্থ। মাওলা হলো এমনই একটি শব্দ যার রয়েছে বেশ কয়েকটি অর্থ। আর এই বহু অর্থেরই সুযোগ গ্রহণ করেছে শিয়ারা অন্যায়ভাবে। যেমন ‘মাওলা’ এর অর্থ হতে পারে কর্তা, মালিক, বন্ধু, ভালোবাসার মানুষ, আযাদকৃত দাস, দাস, কাজিন ইত্যাদি। মাওলা দিয়ে যেমন বন্ধু বুঝায় একই শব্দ দিয়ে এমনকি আল্লাহকেও বুঝায় বাক্যের গতি অনুসারে। এখানে মাওলা শব্দের অর্থ ‘ভালোবাসার মানুষ’ হিসাবে রাসুলুল্লাহ সাঃ ব্যবহার করেছেন, যা শিয়ারা না মেনে বরং ‘ইমাম’, ‘খলিফা’ কিংবা ‘ক্ষমতার উত্তরাধিকারী’ হিসাবে এর অর্থ করে। তবে লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো এই যে, পরের অংশটিতে মাওলা শব্দের অর্থ পরিস্কার হয়ে যায়। আসুন আবার দেখে নেয়া যাক। রাসুলুল্লাহ সাঃ বললেন, “আল্লাহুম্মা ওয়ালী মান ওয়ালাহ ওয়া আদি মান আদাহ (ও আল্লাহ্, যে তার (আলী) বন্ধু, তুমি তার বন্ধু হও আর যে তার প্রতি শত্রুতা রাখে তুমি তার শত্রু হও)”।
গাদির খুমের হাদীস নিয়ে শিয়া বাড়াবাড়ির ভয়াবহতা সত্য থেকে তাদের অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে। খিলাফতের উত্তরাধিকারের মতো সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার রাসুলুল্লাহ সাঃ এমন কুয়াশাচ্ছন্ন কথা দিয়ে মুড়িয়ে রাখবেন তা হতে পারে না এবং তা রাসুল সাঃ এর ব্যক্তিত্বের সাথে যায় না। গাদির খুমের ঘটনাটি যখন ঘটেছে তখন সেখানে ছিলো মদীনাবাসী সাহাবাগণ। এর সামান্য কিছুদিন আগে বিদায় হজ্জে তিনি মক্কা, মদীনা নির্বিশেষে সকল সাহাবাকে কাছে পেয়েছেন। সে হিসাবে এমন গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণার জন্য বিদায় হজ্জের ভাষণ ছিলো সেরা সময়, কিন্তু তিনি তখন এ ব্যাপারে কিছুই বলেননি। এই সময়ের আগে কিংবা পরে অসংখ্যবার মুহাজির ও আনসার শীর্ষস্থানীয় সাহাবগণ রাসুলের সাথে বিভিন্ন সময় বসেছেন এবং পরামর্শ করেছেন। আলী রাঃ’র খলিফা বা তাঁর সাক্সেসর হবার মতো এমন গুরুত্বপূর্ণ কথা রাসুল সাঃ কাউকে বলেননি।
গাদির খুমের ঘটনায় রাসুল সাঃ আলী সম্পর্কে যেভাবে বলেছেন, একইভাবে কিংবা এর চেয়ে জোরালোভাবে তিনি অন্য সাহাবাদের প্রসঙ্গেও অনেকবার বলেছেন। আবু বকরের কথা সরাসরি কুরআনে এসেছে। উমার প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “আল্লাহর শপথ উমার, তুমি যে পথে হাঁটো, শয়তান সে পথে আসেনা” (বুখারী)। উমার রাঃ প্রসঙ্গে তিনি আরো বলেছেন, “আমার পর যদি কোন নবী হতো তা হতো উমার”। তিনি আরো বলেছেন, “উমারের সাথে যদি কেউ রাগান্বিত হলো সে যেন আমার উপর রাগান্বিত হলো এবং উমারকে যে ভালোবাসলো, সে যেনো আমাকেই ভালোবাসলো”। উমার রাঃ এই হাদিসগুলো জানার পরও এগুলোকে তার প্রথম খলিফা হিসাবে মনোনয়নের জন্য ব্যবহার করেননি বা করতে দেননি।
আবু উবাইদাহ ইবনুল জাররাহ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “প্রত্যেক নবীর উম্মাহর মধ্যে একজন থাকে যে হয় ওই উম্মাহর সবচেয়ে বিশ্বস্ত। আমার উম্মাতের ভেতর সেই লোকটি হলো আবু উবাইদাহ”। মুয়াজ ইবন জাবাল রাঃকে তিনি বলেছেন, “ওহে মুয়াজ, তুমি হলে আমার ভালোবাসার একজন”। আবু জর আল গিফারী রাঃ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, “আকাশের নীচে এবং মাটির উপর আবু জরের চেয়ে সত্যবাদী আর কেউ নেই”।
এভাবে রয়েছে অসংখ্য উদাহরণ। সুতরাং চাইলে এমন প্রতিজন সাহাবাকে কেন্দ্র করে এক একটি শিয়ার মতো মতবাদ তৈরী করা যাবে।
বুখারী-মুসলিমে উল্লেখিত গাদির খুমের এই হাদীসকে শিয়ারা এতো গুরুত্ব দেয় যে, তারা হাদীসের ঘটনার দিন-ক্ষণ বের করে প্রতি চান্দ্র বছরের ওই দিনটিকে ঈদের দিন হিসাবে পালন করে যার নাম ‘ঈদে গাদির’। অসংখ্য শিয়া ইনোভেশন বা বিদ’আতের ভেতর ঈদে গাদিরও একটি।
গাদির খুম আলোচনার শেষে একটি কথা না বলে পারছিনা। বুখারী, মুসলিম হলো হাদীস গ্রন্থের ভিতর সবচেয়ে বিশুদ্ধ যা শিয়ারা পুরোপুরি বিশ্বাস করে না। তারা তাদের রচিত জাল ও বানোয়াট হাদীস ভরা কিছু বই ও এর হাদীস সহীহ বলে ঘোষণা দেয়। সেসব হাদীসে আলী রাঃ কে সরাসরি খলিফা হিসাবে উল্লেখ করে অনেক হাদীস আছে। তাহলে তারা কেনো সেসব হাদীসের দিন-ক্ষণ বের করে সেগুলোর একটাকে ঈদের দিন হিসাবে পালন করেনা? এতে করে তাদের তৈরী করা হাদিসের প্রতি বিশ্বাসের ভেতরটা পরিস্কার বোঝা যায়।
এ প্রসঙ্গে বিষদ ও চমৎকার বর্ণা পাবেন এই লিংকে-
http:/www.schiiten.com/backup/AhlelBayt.com/www.ahlelbayt.com/articles/rebuttals/ghadir-khumm.html
বারো ইমামের নামে বাড়াবাড়িঃ নিজেদের ভেতর বিভাজন আর অবিশ্বাসের শুরু
সহীহ মুসলিমে বর্ণিত কয়েকটি হাদিসে রাসুলুল্লাহ সাঃ বারো জন সত্যপন্থী খলিফাহর কথা বলেছেন যার সাথে কম কিংবা বেশী জাল বাক্য ঢুকিয়ে এবং এ নিয়ে চরমতম বাড়াবাড়ি করে শিয়াদের ভেতর তৈরী হয়েছে পরস্পর বিরোধী কিছু উপদল। ইমামের ক্ষমতা নিয়ে এমনই বাড়াবাড়ি তারা করেছে যে, অধিকাংশ শিয়া সেক্ট ইমামকে নিয়ে আল্লাহর সাথে শির্কের মতো অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। প্রথমেই দেখা যাক মুসলিমে বর্ণিত বারো খলিফাহর হাদিসগুলো।
জাবির বিন সামুরা রাঃ থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “পৃথিবীর বুকে জীবনের ধ্বংস ততক্ষণ হবে না, যতক্ষণ বারোজন খলিফাহ অতিক্রান্ত না হয়”। এরপর তিনি একটি বাক্য বললেন (যা আমি শুনিনি)। আমি তখন আমার বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম যে রাসুলুল্লাহ সাঃ কি বলেছেন। তিনি বললেন, “তিনি বলেছেন তারা সবাই হবে কুরাইশ থেকে”।
একইভাবে আরেকটি হাদিসে এসেছে, রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দ্বীন হিসাবে ইসলাম শেষ দিন পর্যন্ত টিকে থাকবে, এর ভেতর আসবে বারোজন (সত্যপন্থী) খলিফাহ, যারা সবাই হবে কুরাইশ থেকে”। (মুসলিম)
মুসলিমের এই বর্ণনার বাইরে এই হাদিসের অনেক শিয়া সংস্করণ আছে যার ভেতরে রয়েছে ব্যাপক জাল বা মিথ্যা বর্ণনা যেগুলো এমনকি শিয়াদের স্কলারদের কাছেও গ্রহণযোগ্য নয়। মুসলিমে বর্ণিত বারো খলিফাহ কিংবা শিয়াদের বিশ্বাস অনুযায়ী বারো ইমামের এই হাদিস নিয়ে শিয়া এবং সুন্নী দু’দলেই রয়েছে অনেক মত। তবে শিয়াদের মতপার্থক্য এ ব্যাপারে এতো বেশী যে এর দ্বারা তাদের নিজেদের বিশ্বাসই টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।
বর্ণিত হাদিসটির সকল বিশুদ্ধ বর্ণনায় এসেছে বারো জন সত্যপন্থী নেতা হবে কুরাইশ থেকে, কিন্তু শিয়াদের বিশ্বাস হলো এরা সবাই হবে আহলে বাইত বা আলী রাঃ এর বংশধরদের মধ্য থেকে (এরা আলী ও ফাতিমা রাঃ এর বাইরে অন্য কোন স্ত্রী বা কন্যার কাউকে আহলে বাইত হিসাবে ধরে না)। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে রাসুলুল্লাহ সাঃ কুরাইশ না বলে সরাসরি আহলে বাইত উল্লেখ করতেন কোন বক্রতা ছাড়াই। একইভাবে যদি তারা সবাই আহলে বাইত থেকে এসে থাকেন তাহলে প্রথমে আলী রাঃ, এরপর তাঁর সন্তান হাসান রাঃ, এরপর হুসাইন রাঃ, এরপর তাঁর সন্তান, এরপর তার সন্তান এভাবে যদি ধরা যায় তাহলে বারোজনের এই হিসাব হিজরী তৃতীয় শতকেই শেষ হয়ে যায়। তাহলে পরবর্তি আহলে বাইতদের কি হবে? আর এই যায়গা থেকেই উৎপত্তি হতে শুরু করেছে শিয়াদের নানা অবাস্তব বিশ্বাসের। কেউ কেউ আবার তাদের পছন্দের লোককে ইমাম মাহদি বলে আখ্যা দিয়ে তার সম্বন্ধে নানা বানোয়াট বিশ্বাসের অবতরণা করেছে। আসুন দেখে নেয়া যাক এ সংক্রান্ত কিছু শি’ঈ বিশ্বাস।
• হুসাইন বিন আলী রাঃ এর শাহাদাতের পর অধিকাংশ শিয়া ইমাম হিসাবে মেনে নেয় তাঁর পুত্র আলী বিন হুসাইন বা যাইনুল আবিদিনকে। তবে একটি শিয়া গোষ্ঠী তাঁকে না মেনে আলীর পুত্র এবং হাসান-হুসাইনের বৈমাত্রেয় ভাই মুহাম্মাদ বিন আলী বা মুহাম্মাদ বিন আল হানাফিয়্যাহকে ইমাম হিসাবে ঘোষণা করে এবং তাঁকে প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদি হিসাবে ঘোষণা করে। তারা বিশ্বাস করে আল হানাফিয়্যাহ পাহাড়ের আড়ালে অজানা গন্তব্যে চলে গেছেন এবন কিয়ামাতের আগে তিনি আবার আবির্ভূত হবেন মাহদি হিসাবে। এই সেক্টটির নাম ‘আল কিসানিয়্যাহ’।
• যাইনুল আবিদিনের মৃত্যুর পর অধিকাংশ শিয়া তাঁর পুত্র মুহাম্মাদ আল বাকিরকে ইমাম হিসাবে মেনে নেয়। তবে একটি গ্রুপ তাঁকে না মেনে যাইনুল আবিদিনের আরেক পুত্র যাইদ আল শহীদকে ইমাম হিসাবে নেয়। এদের ‘যাইদি’ বলা হয়।
• মুহাম্মাদ আল বাকিরের পর তাঁর পুত্র জাফর সাদিক এবং জাফর সাদিকের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মুসা আল কাজিমকে ইমাম হিসাবে অধিকাংশ মেনে নেয়। কিন্তু একটি গ্রুপ জাফর সাদিকের জীবীত অবস্থায় প্রয়াত পুত্র ইসমাইলকে ইমাম হিসাবে ঘোষণা করে। এদের বলা হয় ‘ইসমাইলি’।
• অনেকে মুসা আল কাজিমকে না মেনে ষষ্ঠ ইমামের অন্য দুই পুত্র আব্দুল্লাহ আল আলতাফ এবং মুহাম্মাদ এই দুজনকেই ইমাম হিসাবে মেনে নেয়। তবে অনেকে এদেরকে না মেনে এবং এরপর আর কোন ইমামকেই না মেনে ইমামতের শেষ হয়েছে বলে দাবী করে এবং ইমামত থেকে তাদের বিশ্বাস প্রত্যাহার করে।
• মুসা আল কাজিমকে হত্যা করা হয় এবং তাঁর মৃত্যুর পর অনেকে মুসার পুত্র আলী আর রিদাকে ইমাম হিসাবে মেনে নেয়। কিন্তু এবার অনেক শিয়া আলী আর রিদাকে ইমাম হিসাবে মেনে নিতে অস্বীকার করে এবং ইমামকে মেনে নেয়া থেকে তাদের বিশ্বাস প্রত্যাহার করে। এদের বলা হয় ‘আল ওয়াক্বিফিয়া’ বা সাত ইমামের অনুসারী।
• অষ্টম ইমাম হিসাবে আলী আর রিদার পর আকস্মিকভাবে আহলে বাইত থেকে আর কোন ইমামকে না মেনে বাকী চার ইমাম কিয়ামাতের আগের প্রতিশ্রুত মাহদি বলে তাদের পুরানো ধারা থেকে সরে আসে।
বারো ইমামের এই বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না যদি তারা রাসুলুল্লাহ সাঃ বর্ণিত হাদিসের মূল কথাটাকে মেনে নিত যেখানে তিনি সকল সত্যপন্থী খলিফাহকে আহলে বাইতের সদস্য না বলে কুরাইশ বলেছিলেন। এখন দেখে নেয়া যাক সুন্নী স্কলারগণ এই বারো নেতা সম্পর্কে কি বলেছেন। অধিকাংশ সুন্নী স্কলার বলেছেন এই বারোজনের পরিচয় রাসুলুল্লাহ সাঃ কুরাইশ হিসাবে বলে দিলেও তাদের সময়কাল সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি। সকলেই এই ব্যাপারে একমত যে ইসলামের প্রথম চার খলিফা আবু বকর, উমার, উসমান ও আলী রাঃ এই বারোজনের প্রথম চার জন যা ‘খুলাফায়ে রাশিদা’ হিসাবে আসা অন্য হাদিসের আলোকে পরিস্কার হয়। এর বাইরে বিখ্যাত নিষ্ঠাবান ও তাক্বওয়াবান উমাইয়্যা খলিফা উমার বিন আবদুল আজিজকে সকলেই পঞ্চম হিসাবে উল্লেখ করেছেন। কেউ কেউ আলীর পর হাসান রাঃ কে পঞ্চম উল্লেখ করে উমার বিন আবদুল আজিজকে ষষ্ঠ হিসাবে উল্লেখ করেছেন। সকলেই একমত যে এই চেইনের বারোতম খলিফা হলেন প্রতিশ্রুত ইমাম মাহদি। বাকী কারা? সকলেই বলেছেন এই জ্ঞান কেবল আল্লাহর কাছে। আবু বকর থেকে শুরু করে মাহদি পর্যন্ত বাকী সময়ে তাদেরই মতো নিজের জীবনের চেয়ে আল্লাহ্ ও ইসলামকে বেশী ভালোবাসা তাক্বওয়াবান সেই খলিফাহদের তালিকা হয়তো মানুষ চেষ্টা করে কিয়ামাতের আগেই করতে পারবে, তার আগে নয়।
তবে বারো ইমামের এই তালিকার হেরফের এবং আহলে বাইতের উপর বেশী বাড়াবাড়ির কারণে শিয়াদের ঈমান এবং আকিদা সম্পর্কে সংশয় পোষণ করা মোটেও যুক্তিযুক্ত হবেনা। মূল বিষয় হলো এই ইমামদের সম্পর্কে এদের ভয়াবহ আকিদাগত বিশ্বাস যা প্রকাশ্য শির্ক ও কুফর, যা কিনা তাদেরকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয়। ইরানের সাম্প্রতিক রেভ্যুলশনের নেতা খোমেনী তার ‘হুকুমাত আল ইসলামিয়াহ’ নামের বইতে ইমামদের ব্যাপারে শিয়া বিশ্বাস সম্পর্কে পরিস্কার তুলে ধরেছেন। বিষয়টি গুরিত্বপূর্ণ এই কারণে যে, বর্তমানের অধিকাংশ শিয়া খোমেনীর থিওরী ও খোমেনিজমে বিশ্বাস করে। এই বইতে তিনি উল্লেখ করেছেন ইমামরা এমন এক আসনে আসীন, যে তাঁরা সকল ফেরেশতা এমনকি রাসুলদের চেয়েও অগ্রগামী। তিনি লিখেছেন ইমমগণ এই পৃথিবীর প্রতিটি অনুর উপর ক্ষমতাবান ও তাঁদের প্রতিটি কাজ কোন রকম প্রশ্ন ও সন্দেহের উর্ধ্বে। তবে এ কথা ও বিশ্বাস শুধু খোমেনীর নয়, বারো বা সাত ইমামে বিশ্বাসী সকল শিয়া এই আকিদা পোষণ করে। শুধু তাই নয়, তাদের অনেকে আরো বিশ্বাস করে যে, ইমামগণ সকল জ্ঞানের মালিক-যা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য, যা জানা কিংবা অজানা। আল্লাহ্ ক্ষমা করুন।
দেখুন-
http:/www.schiiten.com/backup/AhlelBayt.com/www.ahlelbayt.com/articles/imamah/imams-superior-to-prophets.html
http:/www.islamqa.com/en/ref/101272/shia
কুরআনের বিকৃতিঃ
আল্লাহ্ কুরআনে বলেছেন “নিশ্চয়ই আমি নিজে এ কুরআন নাজিল করেছি এবং আমি নিজেই এর হিফাজত করবো” (সুরা আল হিজর ১৫/৯)। এ আয়াত বাহ্যিকভাবে বিশ্বাস করার পরও শিয়ারা কুরআনের বিকৃতির এক ভয়াবহ নজির তৈরী করেছে। তাদের একটি অংশের (আল্লাহ্ ভালো জানেন পুরো শিয়া জাতির কিনা) বিশ্বাস যে, বর্তমানের যে কুরআন পৃথিবীতে আছে, তা সম্পূর্ণ নয়। বরং আবু বকর ও উসমান রাঃ সহ সাহাবাগণ কুরআনের দুটি সুরা গোপন করেছেন। এই দুটি সুরা হলো ‘সুরা আল বিলায়াত বা বিলায়াহ (বাংলায় ‘ব’ দিয়ে শুরু হলেও আরবীতে ‘ওয়াও’ দিয়ে শুরু যার ইংরেজিতে উচ্চারণ সঠিক হবে Wilayyah)’ এবং ‘সুরা আন নূরাইন’। বিখ্যাত শিয়া আ’লিম মির্জা মুহাম্মাদ তাক্বী আল নূরী ১২৯৮ হিজরীতে ইরান থেকে প্রকাশিত তার ‘ফাজল আল কিতাব ফি ইসবাত তাহরিফ কিতাব রাব্বিল আরবাব’ বইতে একথা উল্লেখ করেছেন। অন্যান্য অনেক শিয়া আ’লিমও একই কথা লিখেছে তাদের বিভিন্ন বইতে। যেমন মুহসিন ফা’নি আল কাশ্মিরি রচিত ‘দাবস্তান মাজহাহিব’, মির্জা হাবিবুল্লাহ আল হাশিমি আল খো’ই রচিত ‘মানহাজ আল বারাহ আল শরহ নজহ আল বালাঘ’, মুহাম্মাদ বাকির আল মাজলিসি রচিত ‘তাদক্বিরাত আল আ’ইম্মাহ’ ইত্যাদি। মূলতঃ শিয়াদের ভিতরে এ বিশ্বাস প্রকট এবং আত তাকিয়াহ নামের একটি গোপন বিশ্বাসের কারণে তারা তা প্রকাশ করতে চায় না (যা সম্পর্কে সামনে আলোচনা আসবে ইনশাআল্লাহ)।
‘আল কাফি’ নামের একটি শিয়া বইয়ে ইমাম জাফর সাদিকের (হজরত হুসাইন রাঃ এর প্রপৌত্র ও তাঁর পুত্র ইমাম জাইনুল আবিদিনের পুত্র) ভাষ্য উল্লেখ করা হয়েছে যা আরো ভয়াবহ। সেখানে লেখা হয়েছে, একটি লোককে কুরআন প্রসঙ্গে তিনি বলছেন, “তোমাদের কাছে যে কুরআন আছে তা ফাতিমা’র কুরআন থেকে অনেক আলাদা”। লোকটি জিজ্ঞেস করলো, “ফাতিমার কুরআনটা কি”? তিনি বললেন, “তা হলো তোমাদের কুরআনের তিনগুন এবং তোমাদের কুরআনের একটি শব্দও ওর ভিতরে নেই”।
লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো এই যে নানাভাবে কুরআনের এই বিকৃতির কথা প্রকাশ করলেও একান্তে নিজেদের ভিতর ছাড়া কুরআনের ওই দুটো বানোয়াট সুরা সম্বলিত কুরআন তারা কখনোই সকলের সামনে প্রকাশ করে না।
দেখুন-
http:/www.islamqa.com/en/ref/101272/shia
http:/en.wikipedia.org/wiki/Surah_of_Wilaya_and_Nurayn
ইসলামের প্রথম তিন খলিফাহর উপর শিয়া বিশ্বাসঃ
সকল শিয়া মনে করে আলী রাঃ এর কাছ থেকে ইচ্ছাপূর্বক জোর করে খিলাফত কেড়ে নিয়েছেন আবু বকর, উমার ও উসমান রাঃ। এদের মধ্যে বড় একটা অংশ মনে করে তাঁরা ছিলেন কাফির। সামান্য একটি অংশ মনে করে তাঁরা কাফির নন, বরং তাঁরা আলীকে প্রথম খলিফা না বানিয়ে জুলুম করেছিলেন।
প্রসঙ্গতঃ একটি তথ্য উল্লেখ করছি। উমার রাঃ এর হত্যাকারী লোকটির নাম ছিলো আবু লুলু যে একজন পার্শিয়ান অগ্নি উপাসক ছিলো। এই লোকটিকে শিয়ারা উপাধি দিয়েছে ‘বাবা শুজা-উদ্দীন’ বা ‘আল্লাহর দ্বীনের সাহায্যকারী’।
ইসলামের মহান নেতাদের কাফির আখ্যা দেয়াঃ
শিয়ারা ইসলামের মহান কিছু নেতা, যারা নিজেদের জীবন আল্লাহর পথে উৎসর্গ করে গেছেন তাদের কাফির বলে ঘোষণা দেয়, যার ভেতর আছেন সালাহউদ্দীন আইয়্যুবী। লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হলো এই যে, সালাহউদ্দীন আইয়্যুবীর সময়কালে পৃথিবীতে শিয়া ও সুন্নীদের দুজন পৃথক খলিফা ছিলো। বাগদাদে ছিলো সুন্নী খলিফা এবং মিশরে ছিলো ফাতিমীয় শিয়া খলিফা। উম্মাহর বৃহত্তর স্বার্থে তিনি দীর্ঘদিন শিয়া ফাতিমিয় খলিফার সাথে একীভূত ছিলেন এবং শিয়া খলিফার আনুগত্য করতেন। এক সময় খলিফার শির্ক কুফরের কারণে এবং ইসলামের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অনৈতিকতার কারণে তিনি ফাতিমীয় খিলাফাহকে উৎখাত করেন। এজন্যই এই মহান লোকটির উপর শিয়াদের ক্ষোভ, যাঁরা হাতে আল্লাহ্ মুসলিমদের জেরুজালেম পুনর্বিজয় দিয়েছিলেন।
মুসলিম উম্মাহর সাথে শিয়া বিশ্বাসঘাতকতাঃ
এই ইতিহাস বড় দীর্ঘ ও করুণ। শিয়া মতবাদের উদ্যোক্তা ইয়াহুদী আবদুল্লাহ বিন সাবাহর হাতে উসমান রাঃ এর হত্যার মধ্য দিয়ে এর শুরু। যুগে যুগে শিয়ারা মুসলিম উম্মাহর ভেতর বিভেদ বাড়িয়েছে। তারা উমাইয়্যা খিলাফাহকে ধ্বংস করার জন্য আব্বাসীয়দের সাহায্য করেছে। আব্বাসীয়দের ধ্বংস করার জন্য কাফির তাতারী বাহিনীর সাহায্য করেছে এবং খলিফাকে হত্যা করিয়েছে। শতাব্দীর পর শতাব্দী তারা ইয়াহুদী আর খৃষ্টানদের সাথে গোপন আঁতাত করে থেকেছে যার ব্যাত্যয় এখনো হচ্ছে না। ইরানের উপর আজ বাহ্যিক অর্থনৈতিক অবোরোধ আরোপ করা হয়েছে অথচ তারপরও তাদের সামান্য ক্ষতি হয়নি। অথচ ইরাক বা আফগানের উপর এমন অবোরোধে সে দেশগুলোর কেমন দশা হয়েছিলো তা কারো অজানা নয়।
দ্বীনকে বিকৃতি এবং এর প্রচারঃ
বারো ইমাম নিয়ে ভয়াবহ শির্ক ও কুফর বিশ্বাসের কথা আমরা আগে আলোচনা করেছি। এছাড়াও শিয়াদের হাত দিয়ে ইসলামে প্রবেশ করেছে এমন আরো অজস্র শির্ক ও বিদ’আত। উপমহাদেশের মুসলিমদের কবর ও মাজার প্রীতি এবং বুজুর্গ-ওলীকে আল্লাহর স্থানে বসিয়ে দেয়ার মতো শির্ক শিয়া ইনফ্লুয়েন্সেরই ফল। এদের হাত ধরে এসেছে আশুরা, মিলাদ মাহফিল, আখেরী চাহা সোম্বার মতো অনেক বিদ’আত। এছাড়াও শিয়াদের ভেতর কোন দল সারাদিনে দুই ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, কোন সেক্ট করে তিন ওয়াক্ত, কেউ কেউ পাঁচ ওয়াক্ত সালাত একসাথে একবারে আদায় করে। সালাতের ভেতর তারা হাত বাঁধে না এবং সালাতের সময় মাটিতে সরাসরি সিজদাহ না দিয়ে তারা কারবালা বা নাজাফের এক টুকরো মাটি সিজদাহর স্থানে রেখে সেখানে মাথা ঠেকায়।
‘আত তাকিয়াহ’- মনের সত্য গোপনের ভয়াবহ বিশ্বাসঃ
সবশেষে শিয়াদের সবচেয়ে বিধ্বংসী বিশ্বাসটি নিয়ে আলোচনা করবো যার নাম ‘আত তাকিয়াহ’। আমাদের দেশে কিংবা পৃথিবীর যে কোন দেশে যে কোন শিয়া বিশ্বাসীর সাথে কথা বললে তারা প্রথমেই যেটা করে যে, তাদের বিশ্বাসগুলো তারা এমনভাবে উপস্থাপন করে যে তারা সুন্নী বিশ্বাসের খুব কাছাকাছি। তারা এমনকি সালাত আদায়ের সময় তাদের অনুসৃত আসল পদ্ধতি বাদ দিয়ে সুন্নীদের মতো করে সালাত আদায় করে, যাতে কেউ তাদের জানতে না পারে। একই কারণে তারা বারো ইমাম সম্পর্কে তাদের কুফর বিশ্বাস, কুরআন বিকৃতি নিয়ে তাদের বিশ্বাস এমন সব স্পর্শকাতর জিনিস গোপন রাখে। এই গোপন রাখাকে তারা তাদের ঈমান বা বিশ্বাসের অংশ বলে মনে করে যার নাম ‘আত তাক্বিয়াহ’। সুতরাং কোন শিয়া যখন অন্য মুসলিমদের কাছে তার বিশ্বাস সম্পর্কে বলবে, তখন সে সচেতনভাবেই মিথ্যা বলে নিজের মনের কথা গোপন করবে এবং এটা সে সৎকাজ হিসাবে জেনেই করবে।
http:/www.schiiten.com/backup/AhlelBayt.com/www.ahlelbayt.com/articles/taqiyyah/taqiyyah.html
আলোচনার শেষে সহীহ মুসলিমে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাঃ এর একটি হাদিসের উল্লেখ করে শেষ করতে চাই। এই হাদিসে দাজ্জাল প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছেন, “দাজ্জালের অনুসারী হবে ইসফাহানের ৭০,০০০ ইয়াহুদী যারা পারস্যের চাদরে জড়ানো থাকবে”।
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেছিলেন দাজ্জালের অনুসারী ইয়াহুদীরা পারস্য বা পার্শিয়ান চাদরে মোড়ানো থাকবে। এই পার্শিয়া এখন শিয়ায় পরিপূর্ণ। অনেক স্কলার বলেছেন দজ্জালের অনুসারী ইয়াহুদীদের সহযোগী এই পার্শিয়ান চাদর হলো শিয়ারা। ইয়াহুদী আবদুল্লাহ বিন সাবাহর হাতে এই মতবাদের উদ্ভব হওয়া থেকে শুরু করে ইতিহাসের সকল পর্যায়ে ইয়াহুদীদের তাদের সখ্যতা ও উম্মাহর সাথে তাদের মুনাফেকী ও আত তাকিয়ার মতো ভয়াবহ বিশ্বাস আমাদের অবাক করে। এতো খুবই সম্ভব, আল্লাহু আ’লিম।
আল্লাহর কাছে আমরা আশ্রয় চাই কোন সত্য পথের বাইরে যে কোন পথ থেকে, তার বাইরের খোলস যতই সুন্দর দেখাক না কেনো।
সুবহানাকা আল্লাহুমা ওয়া বিহা’মদিকা আশহাদু আল্লাহ্ ইল্লা আন্তা ওয়াতুবু ইলাইহ।
0 Comments