Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

জানাযার বিধিবিধান সংক্রান্ত কিছু প্রশ্ন

v জানাযার বিধিবিধান  জানাযার বিধিবিধান সংক্রান্ত প্রশ্ন
Ø  শাইখ মুহাম্মাদ ইবন সালেহ আল-উসাইমীন রহ.
Ø  ১২: জানাযার ছালাতে বেশী মুছল্লী উপস্থিতির বিষয়ে কি কোন বর্ণনা এসেছেবেশী মুছল্লী শরীক হওয়ার হিকমত কি?
Ø  হ্যাঁরাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এরশাদ করেনকোন মুসলিম মারা গেলে যদি তার জানাযায় এমন চল্লিশ জন ব্যক্তি উপস্থিত হয়যারা আল্লাহ্‌র সাথে কাউকে শরীক করে নাতাহলে তার ব্যপারে তাদের সুপারিশ আল্লাহ ক্ববূল করেন।[1]
Ø  [1]. ইমাম মুসলিম ইবনু আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে হাদীছটি বর্ণনা করেন, ‘জানাযা’ অধ্যায়হা/৯৪৮।

Ø  ১০: মুর্দা অনেকগুলি হলে জানাযার সময় তাদের পুরুষ কিংবা মহিলা হওয়া সম্পর্কে মুছল্লীদেরকে অবহিত করার হুকুম কি?
Ø  এতে কোন সমস্যা নেই। কেননা মৃত পুরুষ হলে মুছল্লীরা দোআয় পুং লিঙ্গের শব্দ ব্যবহার করবেআর মহিলা হলে স্ত্রী লিঙ্গের শব্দ ব্যবহার করবে। তবে মুছল্লীরা নির্দিষ্ট দোআ না পড়লেও কোন সমস্যা নেই। উল্লেখ্য যে,যারা মৃতের লিঙ্গ সম্পর্কে অবহিত হবে নাতারা সাধারণভাবে মুর্দার জানাযা পড়ার নিয়্যত করবে এবং ঐ জানাযাই তাদের জন্য যথেষ্ট হবে। আল্লাহই ভাল জানেন।

Ø  ৮: একই জানাযায় কয়েকজন মুর্দার উপস্থিতিতে আমরা কি তাদের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী ব্যক্তিকে ইমামের নিকটবর্তী করব নাকি তারা সবাই সমান?
Ø  প্রথমে পুরুষদেরকেতারপর মহিলাদেরকে রাখতে হবে। অনুরূপভাবে বালককে মহিলার আগে রাখতে হবে। যদি একই জানাযায় একজন পুরুষএকজন অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক বালকএকজন প্রাপ্ত বয়ষ্কা মহিলা এবং একজন অপ্রাপ্ত বয়ষ্কা বালিকা থাকেতাহলে তাদেরকে সাজাতে হবে এভাবেঃ ইমামের কাছাকাছি পুরুষটিকেতারপর অপ্রাপ্ত বয়ষ্ক বালকটিকেতারপর মহিলাটিকে এবং তারপর অপ্রাপ্ত বয়ষ্কা বালিকাটিকে রাখতে হবে।

Ø  কিন্তু যদি তারা সবাই একই লিঙের হয়যেমনঃ যদি সবাই পুরুষ হয়তাহলে সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী ব্যক্তিকে ইমামের নিকটবর্তী স্থানে রাখতে হবে। কেননা উহুদ যুদ্ধের শহীদগণের কয়েকজনকে যখন একই ক্ববরে দাফন করা হচ্ছিলতখন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি কুরআন জানা ছাহাবীকে আগে ক্ববরে রাখার নির্দেশ করেছিলেন।[1] এই হাদীছ প্রমাণ করে যেআলেম ব্যক্তিকে ইমামের কাছাকাছি রাখতে হবে।
Ø  [1]. সুনানে আবু দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়হা/৩১৩৬তিরমিযী, ‘জানাযা’ অধ্যায়হা/১০১৬আলবানী (রহেমাহুল্লাহ) হাদীছটিকে ছহীহ’ বলেছেন।

Ø  ১৬: কারো জানাযার এক বা একাধিক তাকবীর ছুটে গেলে সে কি তার ক্বাযা আদায় করবেসে ইমামের সাথে ছালাত শুরু করবেইবা কিভাবে?
Ø  ইমামকে ছালাতের যে অবস্থাতে পাবেঠিক সেই অবস্থা থেকেই ইমামের সাথে ছালাত শুরু করবে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘তোমরা (ইমামের সাথে) ছালাতের যতটুকু পাওততটুকু আদায় কর। আর যতটুকু তোমাদের ছুটে যায়ততটুকু পূরণ কর।[1] যদি মুর্দা সেখানে থাকেতাহলে ইমাম সালাম ফিরালে সে ছালাতের বাক্বী অংশ পূরণ করে নিবে। কিন্তু যদি মুর্দাকে সেখান থেকে সরিয়ে নেওয়ার আশংকা থাকে,তাহলে আমাদের ফক্বীহগণের মতানুসারেসে তাকবীর পূরণও করতে পারে অথবা ইমামের সাথে সালামও ফিরাতে পারে। আল্লাহই ভাল জানেন।

Ø  ৩০: মসজিদে মৃতের জানাযা সংঘটিত হওয়ার পর আরও কয়েকজন তার জানাযা পড়তে আসছে হেতু অন্তত দশ মিনিটের জন্য হলেও কি মৃতের দাফনকর্ম বিলম্বিত করা জায়েয?

Ø  দ্রুত মৃতের দাফন কাজ সম্পন্ন করা সুন্নাত এবং উত্তম। কারো জন্য অপেক্ষা করতে হবে না। যারা দেরীতে আসবেতারা মৃত ব্যক্তির দাফনের পরে হলেও তার জানাযা পড়ে নিতে পারবে। কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহুআলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃতের দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর তার ক্ববরকে কেন্দ্র করে জানাযার ছালাত আদায় করেছেন মর্মে প্রমাণিত হয়েছে।[1]
Ø  [1]. বুখারী, ‘আযান’ অধ্যায়হা/৮৫৭মুসলিম, ‘জানাযা’ অধ্যায়হা/৯৫৪।

Ø  ৩৬: মৃতের ক্ববরে মাটি দেওয়ার সময় শরীআতসম্মত কোন্‌ দোআটি পড়তে হয়﴿مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيْهَا نُعِيْدُكُمْ﴾ [سورة طه: 55পড়ার কোন হাদীছ আছে কি?
Ø  কতিপয় বিদ্বান বলেনক্ববরে তিন মুঠো মাটি দেওয়া সুন্নাত। তবে
Ø  ﴿مِنْهَا خَلَقْنَاكُمْ وَفِيهَا نُعِيدُكُمْ وَمِنْهَا نُخْرِجُكُمْ تَارَةً أُخْرَىٰ ﴾ [سورة طه: 55]

Ø  পড়ার ব্যাপারে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোনো হাদীছ বর্ণিত হয় নি।
Ø  আর দাফনের পরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নির্দেশিত আমল করা সুন্নাত। তিনি দাফন সম্পন্ন করে ক্ববরের কাছে দাঁড়িয়ে বলতেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ক্ষমা চাও। সে যেন ফেরেশতাদ্বয়ের প্রশ্নের জবাবে অবিচল থাকতে পারেসেটি তোমরা প্রার্থনা কর। কেননা তাকে এখনই জিজ্ঞেস করা হবে।[1]অতএবআমরা নিম্নোক্ত দোআটি পড়ব,

Ø  «اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ, اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ, اَللَّهُمَّ اغْفِرْ لَهُ, اَللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ, اَللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ, اَللَّهُمَّ ثَبِّتْهُ»
Ø  হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি তাকে ক্ষমা করুন। হে আল্লাহ! আপনি তাকে অবিচল রাখুন। হে আল্লাহ! আপনি তাকে অবিচল রাখুন। হে আল্লাহ! আপনি তাকে অবিচল রাখুন
Ø  [1]. আবূ দাঊদ, ‘জানাযা’ অধ্যায়হা/৩২২১।

Ø  ## ৪৩: মৃতকে দাফন করার সময় তিন মুষ্টি মাটি মৃতের মাথার দিক থেকে ক্ববরে দেওয়ার কি কোন শরঈ ভিত্তি আছে?
Ø  নাএর কোন শরঈ ভিত্তি নেই। ক্ববরে মাটি দেওয়ার সময় যেখান থেকেই মাটি দেওয়া শুরু করুকসমস্যা নেই। ছবিটা আহকামুল জানায়ে(নাসিরুদ্দিন আলবানি এর বই) যেটা দিয়েছি এটা হচ্ছে বিদআত।  
janaza




## ৪৬: দুজন ব্যক্তিকে ক্ববরে শাস্তি দেওয়া হচ্ছিল। ফলে শাস্তি মাফের জন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদের ক্ববরে খেজুরের ডাল পুঁতে দিলেন’[1] এই হাদীছের আলোকে ক্ববরের উপরে গাছের কাঁচা ডাল ইত্যাদি পোঁতা কি সুন্নাত নাকি এটি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর জন্য নির্দিষ্ট ছিলআর তার জন্য নির্দিষ্ট হওয়ার দলীলইবা কি?

ক্ববরের উপরে গাছের কাঁচা ডাল বা ঐ জাতীয় কিছু পোঁতা সুন্নাত নয়বরং ইহা একদিকে যেমন বিদআত,অন্যদিকে তেমনি মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণের শামিল। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সব ক্ববরে এরূপ রাখতেন না। শুধুমাত্র ঐ ক্ববর দুটিতে তিনি রেখেছিলেন। কারণ তিনি জানতে পেরেছিলেন যেতাদেরকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। অতএবক্ববরের উপরে খেজুর ডাল পোঁতা মৃতের প্রতি অন্যায় এবং তার সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ বৈ কিছুই নয়। আর কেউ তার মুসলিম ভাই সম্পর্কে খারাপ ধারণা পোষণ করতে পারে না। কেননা কেউ কারো ক্ববরের উপর খেজুরের ডাল পোঁতার অর্থই হচ্ছেসে বিশ্বাস করে যেঐ ক্ববরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কারণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ঐ ব্যক্তিদ্বয়কে শাস্তি দেওয়ার বিষয়টি জানতে পেরেছিলেন বলেই তো তাদের ক্ববরের উপরে খেজুরের ডাল পুঁতেছিলেন।

সংক্ষিপ্তভাবে বলা যায়ক্ববরের উপরে খেজুরের ডাল বা এ জাতীয় কিছু পোঁতা বিদআত এবং মৃতব্যক্তি সম্পর্কে কুধারণা পোষণ। কেননা যে ডাল পুঁতেসে মনে করে ক্ববরবাসীকে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। আর সেজন্যই তো সে তার শাস্তি লাঘব করতে চায়। এখানে আরেকটি বিষয় হচ্ছেআল্লাহ ঐ ব্যক্তিদ্বয়ের ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সুপারিশ ক্ববূল করেছিলেনকিন্তু তিনি মৃত ব্যক্তির ক্ষেত্রে আমাদের সুপারিশ ক্ববূল করবেন কিনা তা তো আমরা জানি না।
[1]. বুখারী, ‘অযূ’ অধ্যায়হা/২১৬।