প্রথমেই সবার জ্ঞাতার্থে
জানিয়ে দিচ্ছি যে, পুরো লিখাটা না পড়ে এবং আমাদের আপত্তির
জায়গাটা
উপলব্ধি না করে বিরুপ
মন্তব্য করা সম্পূর্ন নিষেধ!)
নিশ্চয়ই সবাই জানেন গতকাল
তুর্কিতে নির্বাচন হয়েছে এবং সেখানে প্রেসিডেন্ট হিসেবে "এরদোগান"
আবারো নির্বাচিত হয়েছেন!খবর টা যতটা আনন্দের তার চাইতেও বেশি হতাশার!আগেই বলেছি
তুর্কি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে আমার মাত্রাতীত আগ্রহ নেই!কারণ, এটা
ইসলাম অথবা মুসলিমদের বিজয় হিসেবে দেখার কোন সুযোগ নেই!তারপরেও বলবো -তুর্কি
জনগনের হাতে বিকল্প না থাকায় খড়কুটো আঁকড়ে ধরে মাঝি বিহীন নৈাকায় ছওয়ার হয়ে জীবন
বাচানোর এই বৃথাচেস্টা ই বা কম কিসের! যদিও এটাই চিরন্তন সত্য যে, প্রশিক্ষিত মাঝি ছাড়া এবং গন্তব্যহীন যাত্রায় সাময়িক সময়ের জন্য
তৃপ্তির ঢেকুর
ফেললেও তা কিন্তু শেষমেশ
মৃত্যুমুখেই পতিত করে।
কারন একে তো গন্তব্যস্থল
অজানা, তার
উপরে আশ্রয়স্থল তথা বেঁচে থাকার ভিত্তিটাও মজবুত না হওয়াতে অতিমাত্রায়
আন্তবিশ্বাসের ফলে শুধুমাত্র ধ্বংসের পথই ত্বরান্বিত হয়!
বর্তমানে একদল লোক
বিপর্যস্ত উম্মাহর আহাজারিকে সামনে রেখে ঠিক একই রকমের ভিত্তির উপর দাড়িয়ে থেকে
উম্মাহর খলিফা,
সুলতান হিসেবে এমন ব্যক্তিকে বেছে নিচ্ছেন যে ব্যক্তির গন্তব্য
পথই উম্মাহর চাহিদার বিপরীত! যা মুসলিম উম্মাহর সাথে উপহাস, ধোকাবাজি,বেইমানির নামান্তর!
-
নির্যাতিত মুসলিম উম্মাহর ত্রাণকর্তা হিসেবে কখনো
মাহথির,কখনো
আহমেদিনেজাদ,কখনো মুরসি অথবা এরদোগানকে সপ্নদ্রস্টা
বানিয়ে প্রবন্ধ, বই, বক্তব্য
গুলো যেহারে প্রচার,প্রসার করা হচ্ছে তাতে শুধু আমি কেন,
যেকোন সচেতন, চিন্তাশীল মুসলিমের আপত্তি
থাকাটা অস্বাভাবিক নয়!
আপনি বলতে পারেন -তিনি
তুর্কিদের বিগত শাসকদের মধ্যে তুলনামূলক মন্দের-ভাল শাসক, অথবা
এক্কেবারে ল্যাংটা থাকার চাইতে ছেড়া-কাপড় পড়ে থাকাটা কিছুটা হলেও উত্তম, তখন বিষয় টা সহনীয় পর্যায়ে থাকে! কিন্তু যখন তাকে উম্মাহর একমাত্র দরদী
নেতা,খলিফা,সুলতান,ইসলামিক লিডার, ইসলাম কায়েমের কাণ্ডারি হিসেবে
কেউ চিত্রায়িত করে ঠিক তখনই আমাদের প্রবল আপত্তি বাধে!
এখানে একটা বিষয় স্পট বলা দরকার আর তা হল-"ইসলাম
কায়েম" বলতে তথাকথিত ইসলামিস্টরা আসলে কী বুঝান? মানে
তারা শরীয়া আইন কায়েম করার কথা বুঝান নাকি অন্যকিছু?
তো! শরীয়া আইন মোতাবেক মদ উৎপাদন ও বিক্রি কি জায়েজ? বা বেশ্যালয় স্থাপন কি জায়েজ?
সবাই বলবেন মোটেই না, কিন্তু খেয়াল করে
দেখেন তুরস্কের কথিত "ইসলামী নেতা" এরদোগান সরকারের আমলে এসব কিন্তু
নিষিদ্ধ নয় বরং অতীতের চাইতেও কয়েকগুণ বেড়েছে যা অবিশ্বাস্য হলেও সত্য!
তুর্কি আইনকে পরিবর্তন করে যেনা বা ব্যাভিচারকে
বৈধতা করে দেয়া হয়েছে রাষ্ট্রীয়ভাবে! যেনাকে শাস্তির তালিকা থেকে বাদ দেয়া
সম্পর্কে এরদোগানের স্পষ্ট বক্তব্যটি শুনতে পারেন---
http://www.milligazete.com.tr/.../cumhurbaskani-erdogan...
প্রায় এক যুগের অধিক সময় ধরে ক্ষমতায় থাকার পরেও এরদোগান
সরকারের আমলে রাস্তায়, রাস্তায় মদের দোকানগুলো এখনো শুধু সচলই
থাকেনি বরং বহু গুণে বেড়েছে!এইতো এই রমাদানেও বিশেষ অফার দিয়ে প্রকাশ্যে মদ বিক্রি
হয়েছিল যত্রতত্র! এমনকি হালাল খাবারের উপর ভ্যাট বাড়িয়ে দিয়ে শুকুরের মাংশ ও মদের
উপর রাষ্ট্রীয়ভাবে ভ্যাট কমিয়ে দেওয়া হয়েছিল!
এ'কে
পার্টি ক্ষমতায় আসার আগে মদের বড় কারখানা ছিল মাত্র ২টি আর এখন হয়েছে ১৮টি! আগে
ব্র্যান্ড ছিল মাত্র একটি বা দুইটি আর এখন হয়েছে সাতটি। এ সম্পর্কে তুর্কি
প্রধানমন্ত্রীর স্বিকারোক্তিমুলক বক্তব্যটি শুনতে পারেন! https://www.youtube.com/watch?v=Txvk3bRbkmw
#পর_সমাচার___
একবার একটা অনুষ্ঠানে পর্তুগালের এক
সাংবাদিক প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে প্রশ্ন করেছিল- আপনি কি "আরবের ইসলাম"
কে সমর্থন করেন? মানে
তাদের চিন্তা চেতনাকে নিজ দেশে প্রয়াগে বিশ্বাসী কিনা?
উত্তরে মি.প্রেসিডেন্ট সেদিন বলেছিলেন "
ওয়াহাবি ইসলাম" তো আমাদের ইসলাম নয়!আমরা ওয়াহাবি চিন্তা চেতনা কে ফলো
করিনা"!
উত্তরটা শুনে সেদিন ই খটকা
লেগেছিল যে,
তাহলে মি.প্রেসিডেন্ট আবার কোন ইসলাম লালন করেন?
লিংক---https://youtu.be/jnMHJN0BfBI
তার পরপর ই মি.প্রেসিডেন্টের সেই গুপ্ত ইসলামকে
তালাশ করতে লাগলাম! যা পেলাম তা এক কথায় ভয়াবহ!
আপনারা যারা আর্ন্তজাতিক নিউজ পেপারগুলো সামান্য
ঘাটাঘাটি করেন তারা নিশ্চয় ই জানেন,তুর্কিকে ইউউ তে আর্ন্তভুক্তির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছেন
প্রেসিডেন্ট এরদোগান!তবে ইউউ হর্তাকর্তাগন এরদোগান সরকারকে বেশ কিছু শর্ত জুড়ে
দিয়েছিল, ঠিক তাদের চাহিদা মাফিক ইউরোপীয় ইউনিয়নে
অন্তর্ভূক্তির জন্য কয়েকটি আইন প্রণয়ন করেছিল এরদোগান সরকার। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটি
ছিল-
ক. কারও সম্মতিক্রমে যদি অসামাজিক কাজ করা হয় তবে তা
শাস্তিযোগ্য নয়।
খ. যে কাউকে ধর্ষণ করা হলে, উক্ত
ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ না করা হলে ওই ব্যক্তি শাস্তির সম্মুখীন হবে না বা
রাষ্ট্র কর্তৃক মামলা করা হবেনা!
গ. কারও স্ত্রী অসামাজিক
কাজ করলে, স্বামী
তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে কোনো মামলা করতে পারবে না!এটা
ব্যক্তি স্বাধীনতা! আপনার
আপত্তিজনক মনে হলে ডিভোর্সই সমাধান।
বি:দ্র-- (এসব আইনের কারণে
তুরস্কে গত ১০-১৫ বছরে শিশু ধর্ষণ প্রচুর বেড়ে গিয়েছিল এবং জেনার রাজত্ব কয়েম
হয়েছিল!
অবশ্য গত ২২ ফেব্রুয়ারি
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানকে শিশু নির্যাতন প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন-
"আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে আন্তঃভুক্তির জন্য যে সকল (জেনা সংক্রান্ত) আইন প্রণয়ণ
করেছিলাম তা সম্পূর্ণ ভুল ছিল। আমরা ভুল করেছি।")
কিন্তু পরিতাপের বিষয়
হল-তিনি এই ভুল থেকে শিক্ষা না নিয়ে গত ৮ ই মার্চ একটি নারী সমাবেশে সেই
প্রেসিডেন্টই বলেছেন “ইসলামে হুকুমগুলো আপডেটের বিধান রয়েছে। ১৪শ বছর আগের ইসলামের
হুকুমগুলোতে আজকের বিশ্বে প্রয়োগযোগ্য নয়!বরং স্থান, কাল,
পাত্রভেদে তা পরিবর্তন হয়”!
আমরা যখন তার এমন আপত্তিকর বক্তব্যের সমালোচনা
করেছিলাম তখন কেউ কেউ তাদের প্রেসিডেন্টকে ডিফেন্ড করে বললেন -তিনি আসলে ইসলামের
মূল বিধানগুলোর বিষয়ে কথা বলেননি!
এখন প্রশ্ন হচ্ছে তিনি যদি ইসলামের মুল বিধিবিধান
নিয়ে কথা নাইবা বলবেন তাহলে গৌণ বিষয় গুলো নিয়ে তো বলার প্রয়োজন ই নাই কারন ওই
বিষয় গুলো তো সবার জানা! যাহোক, আমরা যদি তুরস্কের দিকে তাকাই তাহলে বাস্তবে দেখতে পাবো সেখানে
হাল-নাগাদের নামে অসংখ্য হারামকে রাষ্ট্রীয় আইনের মাধ্যমে হালাল করা হয়েছে!
সমকামীতাকে এখনো বহাল রাখা
হয়েছে!এমনকি বিশ্বের সবচেয়ে বড় নাইট ক্লাবটি আজও বন্ধ করা হয়নি!অথচ তিনি এক যুগের
অধিক সময় ধরে ক্ষমতায় রয়েছেন!এরদোগানের উক্ত বক্তব্যের লিংক—
https://www.youtube.com/watch?v=WuTDSLvwAFk&feature=youtu.be
জাতীয় পত্রিকার লিংক-
https://www.dailysabah.com/turkey/2018/03/09/erdogan-slams-bigoted-clerics-degrading-women
১৪শ বছর আগের ইসলাম নিয়ে তার
আপত্তিকর মন্তব্যের লিংক –
http://www.mikrofonnews.com/en/islamic-rules-of-14-centuries-ago-cannot-be-performed-today-erdogan/
আরেকটি চরম আপত্তিকর বক্তব্য
উল্লেখ্য না করলেই নয়!তা হল-প্রেসিডেন্ট এরদোগান সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে
সৌদি চ্যানেল আল-আরাবিয়্যার সাথে একটি সাক্ষাৎকার দেন যা আরবির পাশাপাশি ইংরেজি
সাব-টাইটেল সহ প্রকাশিত হয়! ভিডিও সাক্ষাৎকারে উপস্থাপকের প্রশ্নের জবাবে
ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাপারে তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান বলেন---
“ব্যক্তি কখনো
ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে না। রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ধর্মনিরপেক্ষতা মানে সকল ধর্মের প্রতি সহনশীল হওয়া। ধর্মীয় ব্যাপারে রাষ্ট্র
নিরপেক্ষ থাকবে এবং রাষ্ট্র সকল ধর্ম ও বিশ্বাস থেকে সমান দূরত্বে থাকবে। এটি কী
ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক ? ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাপারে এটিই
আমাদের বুঝ। ”
লিংক--(ইংলিশ সাব-টাইটেল)http://bit.ly/2DpNlhL
আরবি সাব-টাইটেল--http://bit.ly/2FPOh3X
সাক্ষাৎকারের পুরো ভিডিও
(আরবী)…. http://bit.ly/2DpNlhL
তার বক্তব্যের সারাংশ হল-
ধর্মগুলোর চর্চা হবে শুধুমাত্র ব্যক্তিকেন্দ্রিক কিন্তু রাষ্ট্রের কোন একক ধর্ম
থাকতে পারবেনা! তাইতো জোর দিয়ে বলেছেন,রাষ্ট্র নিরপেক্ষ
থাকবে এবং সকল ধর্ম ও বিশ্বাস থেকে সমান দূরত্ব বজায় রাখবে!
এটাই হল সেকুলারিজমের নব্য
থিউরি যা রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা প্লাটফর্মে নিয়ে গিয়ে ধর্মহীন রাষ্ট্র গঠনে
সহায়ক ভুমিকা পালন করে!
তাছাড়া তিনি স্পটভাবে
বলেছেন খেলাফতি রাষ্ট্র নয় বরং তিনি সেকুলার রাষ্ট্র গঠনে বিশ্বাসী!
লিংক---https://youtu.be/onQC8xzX4i8
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা স্পষ্টভাবে একটা কথা জানিয়ে
দিতে চাই-কিছু চমকপ্রদ ও চিত্তাকর্ষক বক্তব্য শুনে
একটি ধর্মনিরপেক্ষ
রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ প্রেসিডেন্টকে যারা মুসলিম উম্মাহর আগামী দিনের খলিফা, কাণ্ডারি,সুলতান বলে কোমর বেধে প্রচারণা চালাচ্ছেন, শরিয়ত
এবং আক্বলের দৃস্টিকোণ থেকে তাদের দাবিটা অসার,অসত্য,
অদ্ভুত ও অবাস্তব মনে করি!
আপনি যদি বলেন তিনি প্রচলিত
ভিবিন্ন দেশের গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রনেতাদের ন্যায় একজন নেতা,
তাহলে এতে আমাদের কোন আপত্তি নেই কিন্তু যখনই দাবি
করবেন- তিনি একজন ইসলামপন্থী নেতা ও তার দল মুসলিমপন্থি তখন ই আমাদের প্রবল আপত্তি
রয়েছে!
আল্লাহর ওয়াস্তে-
"ইসলামী দল" ইসলামপন্থি" "মুসলিমপন্থি" এসব নেমপ্লেট ইউজ
করে মহামুল্যবান শব্দগুলোকে কুলষিত করবেন না!
কলাম---আখতার বিন আমীর।, ছালালাহ---ওমান।