Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

ফেসবুকে অল্প ইল্ম ওয়ালাদের ফতওয়া ফিতনা থেকে সতর্ক হউন!

ফেসবুকে অল্প ইল্ম ওয়ালাদের ফতওয়া ফিতনা থেকে সতর্ক হউন!


আস'সালামু আ'লাইকুম ওয়া রাহ'মাতুল্লাহি ওয়া বারাকাত্বহ।
প্রিয় দ্বীনী ভাই ও বোনেরা,

কিছু কথা কয়েকদিন ধরেই বলার ইচ্ছা ছিল কিন্তু পর্য়াপ্ত সময়ের অভাবে বলতে পারিনি!
ফেসবুক আইডি ওপেন করেছি সম্ববত ৫ বছর আগে! এর ই মধ্যে এই ফেবুর কল্যানে অদেখা বহু দ্বীনী ভাইয়ের সাথেই আন্তরিক সম্পর্ক তৈরি হয়েছে- আলহামদুলিল্লাহ।
জীবনে কখনোই দেখা হয়নি, এমন অনেক ভাইয়ের আন্তরিকতা /ভালবাসা আমাকে খুবই মুগ্ধ করেছে! জানিনা এই ভালবাসার যোগ্য আমি ছিলাম কিনা!
আল্লাহতালা আমাদের সকল দ্বীনী ভাই-বোনদেরকে জান্নাতে মিলিত হওয়ার তাওফিক দিন ---আমিন।

পর-সমাচার,
সুযোগ /সময় থাকার পরেও ফেসবুকে গত দুই /তিন বছর আগেও তেমন কোন লিখালিখি করতাম না! আর ক্রিটিকাল ট্রপিক গুলো প্রথম থেকেই এড়িয়ে যেতাম বির্তকের ভয়ে! অবশ্য এর আগে ফেবুতে নিয়মিত না থাকলেও গত এক বছর নিয়মিত ই আছি, তাই মাঝেমাঝে আপত্তিকর কিছু দেখলে এই মিসকিন ভাংগা চুরা বিদ্যা নিয়ে একটু আধটু লিখার চেষ্টা করি মাত্র! কিন্তু এটাই আমার জন্য "কাল" হয়ে দাড়িয়েছে!!!

বর্তমান আমাদের কিছু ভাইদের অবস্থা হয়েছে এমন যে, দুনিয়াবি বিষয়ে কোন বুদ্ধির প্রয়োজন হলে লক্ষ টাকা খরচ করে বিশেষজ্ঞ ব্যক্তির শরণাপন্ন হবে কিন্তু দ্বীনের ব্যপারে প্রশ্নের উত্তর জানার প্রয়োজন হলে ওই একই ব্যক্তি তখন আলেম আর জাহেলের মধ্যে পার্থক্য করেনা! এজন্য ই দেখা যায়, আমার মত জাহিল ব্যক্তির(!) ইনবক্সও প্রশ্নাঘাতে জর্জরিত থাকে যা আমার জন্য খুব ই লজ্জার ও পীড়াদায়ক!
অধিকাংশ সময়ে "জানিনা" অথবা "আলেমদের জিজ্ঞেস করেন" বলে এড়িয়ে গেলেও অনেকেই তা ভালভাবে নেন না! কয়েকদিন আগে এক ভাইকে কয়েকজন শাইখের নাম্বার দিয়ে বলেছিলাম "উনাদের জিজ্ঞেস" করেন!কিন্তু তিনি এতে সন্তুষ্ট হতে পারলেন না! অলরেডি মুখের উপর বলেই ফেললেন "ভাই কি জেনেও না জানার ভান ধরলেন "!!! (আউজুবিল্লাহ)

আসলে সমস্যা টা কি জানেন?
বর্তমানে ফেইসবুকের ফিত্নায় পড়ে বহু মূর্খ লোকও দ্বীন মৌলিক জ্ঞান ছাড়াই অনেক লম্বা লম্বা প্রবন্ধ লেখা শুরু করছে ! যার ফলে লোকেরা আলেমদের কাছে না গিয়ে জাহেলদেরকে দ্বীনের ভিবিন্ন বিষয়ে প্রশ্ন করছে আবার তারাও দ্বেদারছে উত্তর বিলি করা শুরু করছে!(যেহেতু মোবাইল বা কম্পিউটারে হাতের কাছেই পাওয়া যায়)!
অথচ কুরআন ও সুন্নাহর বিজ্ঞ আলেমদের নিকট হতে ফতওয়া না নিয়ে অজ্ঞ-মূর্খ লোকদের নিকট হতে ফতওয়া নেওয়ার ভয়াবহ পরিণাম সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সঃ) বলছেন-"আল্লাহতালা বান্দার অন্তর হতে ইল্ম বের করে নিবেন না বরং তা উঠিয়ে নিবেন আলেমদের মৃত্যুর মাধ্যমে। অবশেষে যখন কোন আলেম বাকী রাখবেন না, তখন লোকেরা জাহিলদের গ্রহণ করবে "আলেম" হিসেবে।যখন তাদেরকে মাসআলা জিজ্ঞাসা করা হবে, তখন তারা ফতওয়া দিবে- না জেনে। ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অন্যদেরও পথভ্রষ্ট করবে। (সহীহ বুখারী)।

কার কাছ থেকে ফতওয়া জেনে নিবেন?
এ প্রসঙ্গে মহান আল্লাহ তাআ’লা বলেন,
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
উচ্চারণঃ ফাস-আলু আহলায-যিকরি ইন কুনতুম লা তাআ’লামুন।
অর্থঃ যদি তুমি না জানো, তাহলে ‘আহলে যিকির’ (যারা জ্ঞানী/আলেম) তাদের কাছ থেকে জিজ্ঞাসা করে জেনে নাও। সুরা আল-আম্বিয়াঃ ৭।
আয়াতের তাফসীরঃ এই আয়াতে কোন বিষয় জানা না থাকলে তা আলেমদের দিকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তাকীদ দেওয়া হয়েছে, যা সাধারণ মানুষের জন্য অপরিহার্য; যা কেউ অস্বীকার করতে পারে না। সুতরাং এই আয়াতের অর্থ হল, আলেমদের সাহায্য নিয়ে শরীয়তের উক্তি ও বক্তব্য সম্পর্কে জেনে নাও। (আহসানুল বায়ান)

ইদানীং কিছু ভাইকে দেখলাম যোগ্যতা না থাকার পরেও নিজে নিজে ফেবুতে ফতওয়া প্রসব করছে!
যদি বলি -ভাই আলেমদের কলম কেড়ে নিচ্ছেন কেন?তখন প্রতিত্তরে আলেমদের তওহীন করে মুখ ভেংছিয়ে বলে ফেলে"শুধু কি আলেমরাই ফতওয়া দিবে?তারাই কি দ্বীনের তাবেদারি করবে?হেনতেন.....!

ভাইরে আগে নিজে আলেম-উলামাদের কাছ থেকে দ্বীন শিখুন তারপর তা ইখলাসের সহিত মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার অবশ্যই অনুমতি আছে।মুলত যারা সত্যিকার অর্থেই দ্বীন সম্পর্কে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন করেছেন, তাঁদের উপর দাওয়াতের এই মহান কাজ করা ‘ফরয’। কিন্তু আপনি ফতোয়া দেওয়ার মতো যোগ্যতা অর্জন না করেই নিজে নিজে ফতোয়া দেওয়া শুরু করা হারাম, এমনকি কখনো সেটা কুফুরীর মতো জঘন্য কাজ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে!এ প্রসঙ্গে
নাবী সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “যে ব্যক্তি (বিশুদ্ধ) জ্ঞান ছাড়া ফতোয়া দেয় এর গুনাহ ফতোয়া দাতার ওপর হবে।” আবু দাউদঃ ৩৬৫৭, হাদীসটি হাসান সহীহ, শায়খ আলবানী।
আন্দাজে বা অল্প ইলম নিয়ে হালালকে হারাম বলে ফতোয়া দেওয়া অথবা হারাম জিনিসকে হালাল বলে ফতোয়া দেওয়া কুফুরী কাজ এবং এর দ্বারা আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করা হয়। আল্লাহ তাআলা কুরআনে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন, তোমরা জিহবা দিয়ে (মনগড়া ফতোয়াবাজি করে) বলোনা এইটা হালাল এইটা হারাম। এর শাস্তি অত্যন্ত ভয়াবহ, এমনকি এর দ্বারা কেউ দ্বীন থেকে খারেজ হয়ে কাফেরও হয়ে যেতে পারে (নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক)!

অনেকেই আবার প্রশ্ন করেন তাহলে শাইখ মতিউর রহমান মাদানী হাফি: ,ড.জাকারিয়া হাফি: , ড.সাইফুল্লাহ হাফি: তারা ফতোয়া দেওয়ার মত যোগ্য ব্যক্তি কিনা?
উত্তরে শুধু এতটুকুই বলব উনারা কেউই নিজস্ব ফতোয়া দেন না বরং জেনুইন আলেমদের ফতওয়া তুলে ধরেন মাত্র!উনারা হচ্ছেন আলেমদের ছাত্র, অনেক রাব্বানি ওলামার সানিধ্য পেয়েছেন & উনারা ফতোয়া দেওয়ার মতো উম্মাহর যোগ্য মুফতি বা প্রকৃত আলেমদেরকে অনুসরণ করেন।তাছাড়া উনাদের আমানতদারিতা নিয়েও আমি সন্দেহ মুক্ত সেজন্যই নাম মেনশন করলাম!
তাহলে প্রশ্ন থেকে যায় আলেম কারা? একজন আলেমের কি কি যোগ্যতা থাকা চাই?
এক কথায় উত্তর--
একজন আলেমের যোগ্যতা সম্পকে বিস্তারিত জানার জন্যে এই লেকচার টি শুনুন–
https://m.youtube.com/watch?v=byX8867pyvk&feature=youtube_gdata_player

পরিশেষে দোয়া করি ---আল্লাহতালা আমাদের সকলকে যাবতীয় ফিতনা থেকে হেফাজত করুন----আমিন
কলাম-আখতার বিন আমির
ছালালাহ-ওমান