উম্মাতে মুহাম্মাদীয়ার (صلى الله عليه وسلم) কতিপয় বাত্বিল ফিরক্বাহ
পূর্ববর্তী উম্মাতগুলোর মধ্যে যেভাবে শির্ক ও তাশবীহ্র বাত্বিল ‘আক্বীদাহ প্রবেশ করেছিল, তদ্রুপ উম্মাতে মুহাম্মাদীয়াহ্র (1) বিভিন্ন বাত্বিল ফিরক্বাহ্র মধ্যেও এ দুটো ‘আক্বীদাহ মারাত্মকভাবে প্রবেশ করেছে। কত মুছলমান যে বিভিন্ন রকমের শির্কী ‘আক্বীদাহ ও ‘আমালে লিপ্ত এবং তাশবীহ্র ‘আক্বীদায় বিশ্বাসী, তা আল্লাহ 0 ব্যতীত কেউ জানেনা।
বিশেষ করে অজ্ঞ মুছলমানরাই এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লিপ্ত। প্রতারক পীর-ফকীর, ভন্ড সূফী-দরবেশ ও তাদের অনুসারীদের অবস্থা এক্ষেত্রে সবচেয়ে মারাত্মক।
শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলাওয়ী o “আলফাওযুল কাবীর” গ্রন্থে লিখেছেন- ‘‘আরাবের তৎকালীন মুশরিকদের ‘আক্বীদাহ ও ‘আমাল এবং তাদের অবস্থার সামগ্রিক চিত্র তুমি যদি দেখতে চাও তাহলে এ যুগের সে সব অজ্ঞ-মূর্খ লোকদের প্রতি তাকাও, যারা অলীদের মাজারে এবং স্মৃতিচিহ্ন বা স্মৃতিসৌধ সমূহে নানা ধরনের শির্কী আচরণ করে চলেছে”। (আল্লাহ 0 আমাদেরকে এরূপ গুমরাহী থেকে হিফাযাত করুন)
তারা তো ইছলামের স্থলে শির্ক ও তাশবীহ্র নতুন এক ধর্মই তৈরী করে ফেলেছে। পূর্ববর্তী আলোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানবীয় কোন গুণ আল্লাহ্র (0) জন্যে সাব্যস্ত করার নাম তাশবীহ। যথা- আল্লাহ্র (0) জন্যে পুত্র, কন্যা, স্ত্রী, দেহ, আকৃতি এবং আরো অন্যান্য মানবীয় কোন গুণ সাব্যস্ত করা। আর তাশবীহ্র এ ‘আক্বীদাহ পোষণকারীদের-কে “মুশাব্বিহা ফিরক্বাহ” বলা হয়। মুছলমানদের মাঝে বিভিন্ন মুশব্বিহা ফিরক্বাহ রয়েছে। নিম্নে এদের মধ্য থেকে শুধু মাত্র মুজছ্ছিমাহ, মুনাওয়্যিরাহ, হুলূলিয়া এবং ইত্তিহাদিয়া- এই চারটি ফিরক্বাহ সম্পর্কে বিশেষভাবে আলোচনা করা হবে, ইনশা-আল্লাহ।
(১) মুজাছ্ছিমাহ ফিরক্বাহ:- এই ফিরক্বাহ্টির ‘আক্বীদাহ হলো- আল্লাহ b দেহ ও আকৃতি বিশিষ্ট। তাঁর আকৃতি মানবাকৃতিরই অনুরূপ এবং তিনি স্থানের মুখাপেক্ষী।
আর সেই স্থানটি হলো ‘আর্শ; যার উপর তিনি উপবিষ্ট। মুজাছ্ছিমাহ সম্প্রদায় আল্লাহ্র (7) জন্যে দেহ এবং আকৃতি সাব্যস্ত করার সাথে সাথে দেহের যাবতীয় গুণাবলীও তাঁর জন্য সাব্যস্ত করে থাকে।
(২) হুলুলিয়া ফিরক্বাহ:- হুলূলিয়া শব্দটি মূলত হুলূল শব্দ হতে গৃহীত। হুলূল শব্দের অর্থ হলো- একটি বস্তু অপর একটি বস্তুর মধ্যে এমনভাবে প্রবেশ করা যে, এদের একটির প্রতি ইঙ্গিত দ্বারা অপরটিও বুঝায়। হুলূলিয়া ফিরক্বাহ্টির ‘আক্বীদাহ হলো- আল্লাহ 0 জগতের প্রতিটি বস্তু এবং প্রতিটি অণু-পরমাণুর মধ্যে প্রবেশ করে এগুলোর সাথে এমনভাবে একাত্ম হয়ে গিয়েছেন যে, জগতের প্রতিটি বস্তুকে ‘‘আল্লাহ’’ বলা যায়। তাই তারা বলে যে, কুকুর, শূকর এগুলো তাদের ইলাহ বৈ কিছুই নয়। (تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا)
দ্বাদশ শতাব্দীতে ইবনুল ‘আরাবী নামে একজন দাবি করেন যে, সৃষ্টিকর্তা মানুষের ভিতরে বিরাজমান।
(৩) ইত্তিহাদীয়া ফিরক্বাহ:- “ইত্তিহাদীয়া” শব্দটি ইত্তিহাদ শব্দ হতে গৃহীত। এর অর্থ হলো- একটি বস্তু অপর একটি বস্তুর সাথে মিলিত হয়ে সেটির সাথে এক হয়ে যাওয়া। মোটকথা, ইত্তিহাদীয়া কথাটির অর্থ হলো- একত্রিতকরণ কিংবা একত্রিত হওয়া। ইত্তিহাদীয়া ফিরক্বাহ্র ‘আক্বীদাহ হলো- আল্লাহ 7বিশেষ বিশেষ কিছু মানুষ বা বস্তুর মধ্যে অনুপ্রবেশ করে তাদের সাথে মিশে গেছেন বা একাত্ম ও একত্রিত হয়ে গেছেন। তাই সেসব মানুষ কিংবা বস্তুই হলো আল্লাহ, আর আল্লাহ হলেন সেসব মানুষ বা বস্তু।
যেমন- দশম শতাব্দীর শী‘আ সম্প্রদায় হতে দলত্যাগী নুসাইরাতগণ দাবি করেছিল যে, ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিবের মাধ্যমে আল্লাহ নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন।
একাদশ শতাব্দীতে দ্রুজ নামীয় অপর এক দলত্যাগী শী‘আ সম্প্রদায় দাবি করেছিল যে, খালীফাহ আল হাকিম ইবনু আমরুল্লাহ হলেন মানুষের মধ্যে স্রষ্টার শেষ দেহ ধারণ। (تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا)
বর্তমান সমাজেও এরূপ অনেক ভন্ড সূফী রয়েছে যারা দাবি করে যে, তারা হলো জগতে আল্লাহ্র মূর্তপ্রতীক। তাই তার কাছ থেকে কারো খালি হাতে ফিরে যেতে হবে না। (نعوذ بالله من ذلك)
ইত্তিহাদীয়াহ ফিরক্বাহ্র এই ‘আক্বীদাহ্কেই “সর্বেশ্বরবাদ” এবং “ওয়াহ্দাতুল অজূদ” ইত্যাদি বলা হয়। সর্বেশ্বরবাদী কাফিররা বিশ্বাস করে যে, জগতের সব কিছুর মধ্যেই আল্লাহ প্রবেশ করে আছেন। তাই তারা সবকিছুকে ইশ্বর মনে করে উহার পূজা করে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ; যেমন তারা বলে- ‘‘তুমি সর্প হয়ে দংশন কর, ওঝা হড়ে ঝাড়। তুমি হাকিম হয়ে হুকুম কর, পুলিশ হয়ে ধর’’।
এই গানটি তাদের বিশ্বাসেরই ফলশ্রুতি। সমাজে এ জাতীয় শির্কি-কুফরী গান ও কবিতা- যে কতো তার হিসাব দেয়া দুস্কর। এই ‘আক্বীদাহ খ্রীষ্টানদের মধ্যেও রয়েছে। তাদের একটি ফিরক্বাহর ‘আক্বীদাহ এই যে, আল্লাহ 0 ‘ঈছা k এর মধ্যে প্রবেশ করেছেন।
মুছলমান বলে দাবিদার শী‘য়া সম্প্রদায়ের ঈমামীয়া ফিরক্বাহ্র ‘আক্বীদাহ এই যে, তাদের ১২ জন ইমামের মধ্যে আল্লাহ 0 প্রবেশ করেছেন। (تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا)
একদল অজ্ঞ মুছলমানদেরও ‘আক্বীদাহ এই যে, আল্লাহ 0 রাছূল 1 এর মধ্যে প্রবেশ করেছেন।
মুছলমানদের আরেকটি বাত্বিল ফিরক্বাহ্র ‘আক্বীদাহ এই যে, স্বয়ং আল্লাহ 0 মুহাম্মাদ 1 এর রূপ ধরে পৃথিবীতে অবতরণ করেছেন। তারা বলে-
جو تهى عرش بر مستوى خدا هو كر – وه اترى زمين مين مصطفى هو كر
অর্থ- যিনি আল্লাহ হিসেবে ‛আরশের উপর অধিষ্ঠিত ছিলেন, তিনিই মোস্তাফা (মুহাম্মাদ 1) হয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেছেন।
তারা আরো বলে- আহাদ এবং আহ্মাদ এই দু’টো নামের মধ্যে শুধুমাত্র একটি অক্ষর তথা মীমের ব্যবধান। এই মীম অক্ষরটি ফেলে দিলে তারা আর দুই থাকে না, বরং এক হয়ে যায়। অর্থাৎ আহ্মাদ শব্দটির মীম ফেলে দিলে সেটি আহাদ হয়ে যায়। তাই তাদের বিশ্বাস যে, আহাদ তথা আল্লাহ 0স্বয়ং আহ্মাদ নাম ধরে এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন। তারা আরো বলে যে, রাছূলুল্লাহ 1 কেবল মানব হৃদয় জয় করার জন্যই মানুষের রূপ ধারণ করেছেন (মূলতঃ তিনি মানুষ নন)।
তারা আরো বলে- ‘‘আরশে যিনি আহাদ ছিলেন, ফরশে (যমীনে) তিনি আহ্মাদ হলেন’’। (تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا)
এছাড়া কাফির-মুশরিকদের অনুসারী এসব যালিমরা তাদের উল্লেখিত কুফরী মতবাদটির স্বপক্ষে “انا احمد بلا ميم” (আমি মীম বিহীন আহ্মাদ) এই মিথ্যা হাদিছটি রচনা করেছে। (না‘উযুবিল্লাহ)
যার পরিষ্কার অর্থ এই যে, আমি যদিও মানব সমাজে আহ্মাদ তথা একজন মানুষ, কিন্তু মূলত: আমি মানুষ নই বরং আমি আহাদ তথা আল্লাহ।
এখানে একটি কথা বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, হুলূলিয়া ফিরক্বাহ ও ইত্তিহাদীয়া ফিরক্বাহ্র ‘আক্বীদাহ প্রায় এক ও অভিন্ন।
(৪) মুনাওয়্যিরাহ ফিরক্বাহ:-
মুশাব্বিহা ফিরক্বাহ্র অন্তর্ভুক্ত “মুনাওয়্যিরাহ” দলটির ‘আক্বীদাহ্ এই যে, আল্লাহ্র (0) জাত হলো- উজ্জ্বল আলো। তাদের এই ‘আক্বীদাহ নিঃসন্দেহে কুফ্র। কেননা “আলো” আল্লাহ্র (0) একটি সৃষ্ট বস্তু। আর এই সৃষ্ট বস্তুর সাথেই তারা আল্লাহকে (0) তুলনা করেছে- যা কুফ্রী কাজ।
আত্ তাফছীরুল কাবীর গ্রন্থে ইমাম রাযী লিখেছেন- মুশাব্বিহা ফিরক্বাহ্র অন্তর্ভুক্ত ‘‘মোজাছ্ছিমাহ্’’ ফিরক্বাহ বলে থাকে যে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্র (0) আকৃতি জ্যোতিসমূহের মধ্যে একটি জ্যোতির মতো। নিশ্চয়ই আল্লাহ (0) খাঁটি জ্যোতি”। গুনিয়াতুত্ তালেবীন গ্রন্থের ২২৭ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে, মুশাব্বিহা ফিরক্বাহ্র অন্তর্ভুক্ত “হাশিমিয়্যাহ” দলটি বলে যে, “আল্লাহ 0 দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ও বেধ বিশিষ্ট প্রখর আলোময় একটি দেহ”।
মুশাব্বিহা ফিরক্বাহ্র অন্তর্ভুক্ত “শায়ত্বানিয়্যাহ” সম্প্রদায় বলে থাকে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ 0 দেহ বিহীন জ্যোতি। ইমাম রাযী আছাছুত্ তাক্বদীস গ্রন্থের ১৯ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, মুশাব্বিহা ফিরক্বাহ বলে থাকে যে, মুজাছ্ছিমা সম্প্রদায়ের অপর একটি দল বলে থাকে যে, “আল্লাহ সাদা রৌপ্যের ন্যায়”। تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا
পূর্ববর্তী উম্মাতগুলোর মধ্যে যেভাবে শির্ক ও তাশবীহ্র বাত্বিল ‘আক্বীদাহ প্রবেশ করেছিল, তদ্রুপ উম্মাতে মুহাম্মাদীয়াহ্র (1) বিভিন্ন বাত্বিল ফিরক্বাহ্র মধ্যেও এ দুটো ‘আক্বীদাহ মারাত্মকভাবে প্রবেশ করেছে। কত মুছলমান যে বিভিন্ন রকমের শির্কী ‘আক্বীদাহ ও ‘আমালে লিপ্ত এবং তাশবীহ্র ‘আক্বীদায় বিশ্বাসী, তা আল্লাহ 0 ব্যতীত কেউ জানেনা।
বিশেষ করে অজ্ঞ মুছলমানরাই এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি লিপ্ত। প্রতারক পীর-ফকীর, ভন্ড সূফী-দরবেশ ও তাদের অনুসারীদের অবস্থা এক্ষেত্রে সবচেয়ে মারাত্মক।
শাহ ওয়ালী উল্লাহ দেহলাওয়ী o “আলফাওযুল কাবীর” গ্রন্থে লিখেছেন- ‘‘আরাবের তৎকালীন মুশরিকদের ‘আক্বীদাহ ও ‘আমাল এবং তাদের অবস্থার সামগ্রিক চিত্র তুমি যদি দেখতে চাও তাহলে এ যুগের সে সব অজ্ঞ-মূর্খ লোকদের প্রতি তাকাও, যারা অলীদের মাজারে এবং স্মৃতিচিহ্ন বা স্মৃতিসৌধ সমূহে নানা ধরনের শির্কী আচরণ করে চলেছে”। (আল্লাহ 0 আমাদেরকে এরূপ গুমরাহী থেকে হিফাযাত করুন)
তারা তো ইছলামের স্থলে শির্ক ও তাশবীহ্র নতুন এক ধর্মই তৈরী করে ফেলেছে। পূর্ববর্তী আলোচনায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, মানবীয় কোন গুণ আল্লাহ্র (0) জন্যে সাব্যস্ত করার নাম তাশবীহ। যথা- আল্লাহ্র (0) জন্যে পুত্র, কন্যা, স্ত্রী, দেহ, আকৃতি এবং আরো অন্যান্য মানবীয় কোন গুণ সাব্যস্ত করা। আর তাশবীহ্র এ ‘আক্বীদাহ পোষণকারীদের-কে “মুশাব্বিহা ফিরক্বাহ” বলা হয়। মুছলমানদের মাঝে বিভিন্ন মুশব্বিহা ফিরক্বাহ রয়েছে। নিম্নে এদের মধ্য থেকে শুধু মাত্র মুজছ্ছিমাহ, মুনাওয়্যিরাহ, হুলূলিয়া এবং ইত্তিহাদিয়া- এই চারটি ফিরক্বাহ সম্পর্কে বিশেষভাবে আলোচনা করা হবে, ইনশা-আল্লাহ।
(১) মুজাছ্ছিমাহ ফিরক্বাহ:- এই ফিরক্বাহ্টির ‘আক্বীদাহ হলো- আল্লাহ b দেহ ও আকৃতি বিশিষ্ট। তাঁর আকৃতি মানবাকৃতিরই অনুরূপ এবং তিনি স্থানের মুখাপেক্ষী।
আর সেই স্থানটি হলো ‘আর্শ; যার উপর তিনি উপবিষ্ট। মুজাছ্ছিমাহ সম্প্রদায় আল্লাহ্র (7) জন্যে দেহ এবং আকৃতি সাব্যস্ত করার সাথে সাথে দেহের যাবতীয় গুণাবলীও তাঁর জন্য সাব্যস্ত করে থাকে।
(২) হুলুলিয়া ফিরক্বাহ:- হুলূলিয়া শব্দটি মূলত হুলূল শব্দ হতে গৃহীত। হুলূল শব্দের অর্থ হলো- একটি বস্তু অপর একটি বস্তুর মধ্যে এমনভাবে প্রবেশ করা যে, এদের একটির প্রতি ইঙ্গিত দ্বারা অপরটিও বুঝায়। হুলূলিয়া ফিরক্বাহ্টির ‘আক্বীদাহ হলো- আল্লাহ 0 জগতের প্রতিটি বস্তু এবং প্রতিটি অণু-পরমাণুর মধ্যে প্রবেশ করে এগুলোর সাথে এমনভাবে একাত্ম হয়ে গিয়েছেন যে, জগতের প্রতিটি বস্তুকে ‘‘আল্লাহ’’ বলা যায়। তাই তারা বলে যে, কুকুর, শূকর এগুলো তাদের ইলাহ বৈ কিছুই নয়। (تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا)
দ্বাদশ শতাব্দীতে ইবনুল ‘আরাবী নামে একজন দাবি করেন যে, সৃষ্টিকর্তা মানুষের ভিতরে বিরাজমান।
(৩) ইত্তিহাদীয়া ফিরক্বাহ:- “ইত্তিহাদীয়া” শব্দটি ইত্তিহাদ শব্দ হতে গৃহীত। এর অর্থ হলো- একটি বস্তু অপর একটি বস্তুর সাথে মিলিত হয়ে সেটির সাথে এক হয়ে যাওয়া। মোটকথা, ইত্তিহাদীয়া কথাটির অর্থ হলো- একত্রিতকরণ কিংবা একত্রিত হওয়া। ইত্তিহাদীয়া ফিরক্বাহ্র ‘আক্বীদাহ হলো- আল্লাহ 7বিশেষ বিশেষ কিছু মানুষ বা বস্তুর মধ্যে অনুপ্রবেশ করে তাদের সাথে মিশে গেছেন বা একাত্ম ও একত্রিত হয়ে গেছেন। তাই সেসব মানুষ কিংবা বস্তুই হলো আল্লাহ, আর আল্লাহ হলেন সেসব মানুষ বা বস্তু।
যেমন- দশম শতাব্দীর শী‘আ সম্প্রদায় হতে দলত্যাগী নুসাইরাতগণ দাবি করেছিল যে, ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিবের মাধ্যমে আল্লাহ নিজেকে প্রকাশ করেছিলেন।
একাদশ শতাব্দীতে দ্রুজ নামীয় অপর এক দলত্যাগী শী‘আ সম্প্রদায় দাবি করেছিল যে, খালীফাহ আল হাকিম ইবনু আমরুল্লাহ হলেন মানুষের মধ্যে স্রষ্টার শেষ দেহ ধারণ। (تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا)
বর্তমান সমাজেও এরূপ অনেক ভন্ড সূফী রয়েছে যারা দাবি করে যে, তারা হলো জগতে আল্লাহ্র মূর্তপ্রতীক। তাই তার কাছ থেকে কারো খালি হাতে ফিরে যেতে হবে না। (نعوذ بالله من ذلك)
ইত্তিহাদীয়াহ ফিরক্বাহ্র এই ‘আক্বীদাহ্কেই “সর্বেশ্বরবাদ” এবং “ওয়াহ্দাতুল অজূদ” ইত্যাদি বলা হয়। সর্বেশ্বরবাদী কাফিররা বিশ্বাস করে যে, জগতের সব কিছুর মধ্যেই আল্লাহ প্রবেশ করে আছেন। তাই তারা সবকিছুকে ইশ্বর মনে করে উহার পূজা করে থাকে। উদাহরণ স্বরূপ; যেমন তারা বলে- ‘‘তুমি সর্প হয়ে দংশন কর, ওঝা হড়ে ঝাড়। তুমি হাকিম হয়ে হুকুম কর, পুলিশ হয়ে ধর’’।
এই গানটি তাদের বিশ্বাসেরই ফলশ্রুতি। সমাজে এ জাতীয় শির্কি-কুফরী গান ও কবিতা- যে কতো তার হিসাব দেয়া দুস্কর। এই ‘আক্বীদাহ খ্রীষ্টানদের মধ্যেও রয়েছে। তাদের একটি ফিরক্বাহর ‘আক্বীদাহ এই যে, আল্লাহ 0 ‘ঈছা k এর মধ্যে প্রবেশ করেছেন।
মুছলমান বলে দাবিদার শী‘য়া সম্প্রদায়ের ঈমামীয়া ফিরক্বাহ্র ‘আক্বীদাহ এই যে, তাদের ১২ জন ইমামের মধ্যে আল্লাহ 0 প্রবেশ করেছেন। (تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا)
একদল অজ্ঞ মুছলমানদেরও ‘আক্বীদাহ এই যে, আল্লাহ 0 রাছূল 1 এর মধ্যে প্রবেশ করেছেন।
মুছলমানদের আরেকটি বাত্বিল ফিরক্বাহ্র ‘আক্বীদাহ এই যে, স্বয়ং আল্লাহ 0 মুহাম্মাদ 1 এর রূপ ধরে পৃথিবীতে অবতরণ করেছেন। তারা বলে-
جو تهى عرش بر مستوى خدا هو كر – وه اترى زمين مين مصطفى هو كر
অর্থ- যিনি আল্লাহ হিসেবে ‛আরশের উপর অধিষ্ঠিত ছিলেন, তিনিই মোস্তাফা (মুহাম্মাদ 1) হয়ে পৃথিবীতে অবতরণ করেছেন।
তারা আরো বলে- আহাদ এবং আহ্মাদ এই দু’টো নামের মধ্যে শুধুমাত্র একটি অক্ষর তথা মীমের ব্যবধান। এই মীম অক্ষরটি ফেলে দিলে তারা আর দুই থাকে না, বরং এক হয়ে যায়। অর্থাৎ আহ্মাদ শব্দটির মীম ফেলে দিলে সেটি আহাদ হয়ে যায়। তাই তাদের বিশ্বাস যে, আহাদ তথা আল্লাহ 0স্বয়ং আহ্মাদ নাম ধরে এ পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছেন। তারা আরো বলে যে, রাছূলুল্লাহ 1 কেবল মানব হৃদয় জয় করার জন্যই মানুষের রূপ ধারণ করেছেন (মূলতঃ তিনি মানুষ নন)।
তারা আরো বলে- ‘‘আরশে যিনি আহাদ ছিলেন, ফরশে (যমীনে) তিনি আহ্মাদ হলেন’’। (تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا)
এছাড়া কাফির-মুশরিকদের অনুসারী এসব যালিমরা তাদের উল্লেখিত কুফরী মতবাদটির স্বপক্ষে “انا احمد بلا ميم” (আমি মীম বিহীন আহ্মাদ) এই মিথ্যা হাদিছটি রচনা করেছে। (না‘উযুবিল্লাহ)
যার পরিষ্কার অর্থ এই যে, আমি যদিও মানব সমাজে আহ্মাদ তথা একজন মানুষ, কিন্তু মূলত: আমি মানুষ নই বরং আমি আহাদ তথা আল্লাহ।
এখানে একটি কথা বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, হুলূলিয়া ফিরক্বাহ ও ইত্তিহাদীয়া ফিরক্বাহ্র ‘আক্বীদাহ প্রায় এক ও অভিন্ন।
(৪) মুনাওয়্যিরাহ ফিরক্বাহ:-
মুশাব্বিহা ফিরক্বাহ্র অন্তর্ভুক্ত “মুনাওয়্যিরাহ” দলটির ‘আক্বীদাহ্ এই যে, আল্লাহ্র (0) জাত হলো- উজ্জ্বল আলো। তাদের এই ‘আক্বীদাহ নিঃসন্দেহে কুফ্র। কেননা “আলো” আল্লাহ্র (0) একটি সৃষ্ট বস্তু। আর এই সৃষ্ট বস্তুর সাথেই তারা আল্লাহকে (0) তুলনা করেছে- যা কুফ্রী কাজ।
আত্ তাফছীরুল কাবীর গ্রন্থে ইমাম রাযী লিখেছেন- মুশাব্বিহা ফিরক্বাহ্র অন্তর্ভুক্ত ‘‘মোজাছ্ছিমাহ্’’ ফিরক্বাহ বলে থাকে যে, “নিশ্চয়ই আল্লাহ্র (0) আকৃতি জ্যোতিসমূহের মধ্যে একটি জ্যোতির মতো। নিশ্চয়ই আল্লাহ (0) খাঁটি জ্যোতি”। গুনিয়াতুত্ তালেবীন গ্রন্থের ২২৭ নং পৃষ্ঠায় বলা হয়েছে যে, মুশাব্বিহা ফিরক্বাহ্র অন্তর্ভুক্ত “হাশিমিয়্যাহ” দলটি বলে যে, “আল্লাহ 0 দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ও বেধ বিশিষ্ট প্রখর আলোময় একটি দেহ”।
মুশাব্বিহা ফিরক্বাহ্র অন্তর্ভুক্ত “শায়ত্বানিয়্যাহ” সম্প্রদায় বলে থাকে যে, নিশ্চয়ই আল্লাহ 0 দেহ বিহীন জ্যোতি। ইমাম রাযী আছাছুত্ তাক্বদীস গ্রন্থের ১৯ নং পৃষ্ঠায় লিখেছেন যে, মুশাব্বিহা ফিরক্বাহ বলে থাকে যে, মুজাছ্ছিমা সম্প্রদায়ের অপর একটি দল বলে থাকে যে, “আল্লাহ সাদা রৌপ্যের ন্যায়”। تعالى الله عن ذلك علوا كبيرا