বাংগালীর সউদি বিদ্বেষ পর্বঃ--২


  • বাংগালীর সৌদি বিদ্বেষ পর্বঃ--২  
  • ----- ----- ----- ----- ----- ----- --------------
  • চেঙ্গিস খান ছিলো সাধারণ গোত্র প্রধানের পুত্র৷ এক সময় তিনি বিশাল মোঙ্গল সম্রাজ্য গঠন করেন৷ রোকনউদ্দিন বাইবার্স ছিলো একজন মামলুক মানে দাস৷ তাঁর হাত ধরেই মিশরে মামলুক সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয়৷ আব্রাহাম লিংকন ছিলেন উইগ পার্টির সদস্য৷ এক সময় তিনি রিপাবলিকান পার্টি গঠন করেন এবং এই পার্টির জনপ্রিয়তায় উইগ পার্টি বিলুপ্ত হয়ে যায়৷

  • ইতিহাসটাই এমন যে কোন সম্রাজ্য বা দলের শুরু হয় সাধারণ কারো হাত ধরে৷ এসব সাধারণ লোকেরা তাদের আশেপাশের রাজ্যগুলো দখল করে বিশাল সম্রাজ্য গঠন করে, না হয় কোন প্রতিষ্ঠিত সম্রাটকে পরাজিত করে সে সম্রাজ্য দখল করে, অথবা তাদের প্রভাবে অন্যরা বিলুপ্ত হয়ে যায়৷ কালের পরিক্রমায় সেসব শাসককে শুভাকাংখীরা নায়ক এবং বিরোধীরা খলনায়ক হিসেবে দেখতে পছন্দ করে৷ বাদশাহ মুহাম্মদ বিন সৌদ ও মুক্ত নয় এ থেকে৷

  • মুহাম্মদ বিন সৌদের পর বাঙ্গালীরা যার উপর সবচেয়ে বেশী বিদ্বেষ পোষণ করেন তিনি হলেন, মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাব৷ ভারতবর্ষে "ওহাবী" বলে একটি মতবাদ প্রচলিত আছে৷ পাকিস্তান, ভারত, বাংলাদেশ এই তিনদেশের নাগরিক ছাড়া আপনি অন্য কোন দেশের নাগরিকদের কাছে ওহাবী মতাদর্শের নাম শুনবেন না৷

  • মুসলিম ঐতিহাসিক গোলাম আহমেদ মোর্তজা তাঁর "ইতিহাসের ইতিহাস" গ্রন্থে উল্লেখ করেন, সুচতুর বৃটিশরা মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাবের নামে কুৎসা রটিয়ে ভারতবর্ষের মুসলমানদের ঐক্যে ফাটল ধরানোর জন্যই "ওহাবী" মতবাদ আমদানি করে৷

  • মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাবের আমাদের দেশের ইসলাম প্রিয় তৌহিদী জনগণ যে অভিযোগটি করেন তাহলো, তিনি মুহাম্মদ বিন সৌদের সাথে হাত মিলিয়ে মুসলিম খেলাফত ব্যবস্থা ধ্বংস করেন৷ মুসলিম খিলাফতের ভিতরের শিরক-বিদআত সেসব নিয়ে আমরা পরে আলোচনা করবো তার আগে দেখি ইতিহাস কি বলে?

  • মুহাম্মদ বিন সৌদ এবং মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাব ১৭৪৪ সালে দিরিয়া আমিরাত নামে প্রথম সৌদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন৷ মুহাম্মদ বিন সৌদ ১৭৬৫ সালে এবং মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাব ১৭৯২ সালে মারা যান৷ ১৮১৮ সালে ওসমানীয় শাসক মুহাম্মদ আলী পাশা ও তার পুত্র ইবরাহীম পাশার সাথে সৌদী বাদশাহ আবদুল্লাহ বিন সৌদের যুদ্ধ হয়৷

  • যুদ্ধে আবদুল্লাহ বিন সৌদ পরাজিত হন৷ বিদ্রোহের অপরাধে তাকে মৃত্যুদন্ড প্রদান করা হয় এবং প্রথম সৌদী রাষ্ট্রের সেখানেই পতন হয়৷ এখানে দেখা যায় খেলাফতকে তারা ধ্বংস করেন নি, উল্টো খেলাফতই তাদের প্রতিষ্ঠিত রাষ্ট্রকে ধ্বংস করেছে৷ অর্থাৎ আমাদের খেলাফত প্রেমিক ভাইয়েরা বোঝে অথবা না বোঝেই তাদের বিরূদ্ধে খেলাফত ধ্বংসের অভিযোগ করে থাকেন৷

  • অনেক তথাকথিত ঐতিহাসিক মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাবকে বৃটিশদের দালাল তকমা দিয়ে থাকেন৷ আপনি যদি উপমহাদেশের বৃটিশ বিরোধী আন্দেলনের নেতা সৈয়দ আহমেদ, শাহ আহমেদ, হাজী শরীয়তউল্যাহ, তীতুমীরের আন্দেলন পর্যালোচনা করেন তাহলে দেখবেন তাদের চিহ্নিত করা হয়েছে "ওহাবী আন্দোলনের নেতা" হিসেবে৷ এমনটা কি কল্পনা করা যায়? গুরু বৃটিশদের লোক, আর শিষ্যরা আন্দোলন করছে বৃটিশদের বিরূদ্ধে!

  • আমাদের এক শ্রেণীর তথাকথিত মুজাহিদ ভাইয়েরা ঊনাকে দরবারী আলেম উল্লেখ করে প্রায় সময় যে প্রশ্নটা করে থাকেন তাহলো, হাসান বসরী (রহঃ), আবু হানিফা (রহঃ), ইবনে তাইমিয়্যা (রহঃ) এর মত আলেমগণ যেখানে শাসকদের বিরোধীতা করে রোষানলে পড়েছেন, সেখানে তিনি কি করে মুহাম্মদ বিন সৌদের মত শাসকের সাথে হাত মিলিয়েছেন?

  • আমাদের বেশির ভাগ লোকের সমস্যা আমরা হয় অর্ধ গ্লাস পানি, না হয় অর্ধ গ্লাস খালি দেখি৷ পুরো গ্লাসের অবস্থাটা দেখি না৷ আমাদের ব্রেণটাও আমাদের দৃষ্টি ভঙ্গির মতই অর্ধেক৷

  • খাজা নিযামউদ্দীন তুসি ইতিহাসে যিনি নিজামূল মূলক নামে পরিচিত৷ নূরউদ্দীন জঙ্গী (রহঃ), সালাহউদ্দীন আইয়্যুবী(রহঃ), ইমাম গাজ্জালী (রহঃ) এর মত জ্ঞাণী গুণী যার প্রতিষ্ঠিত নিজামিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন তিনি ছিলেন সেলজুক সালতানাতের উজীরে আযম৷ বাদশাহ আকবরের নবরত্নের মাঝে মোল্লা দো পেঁয়াজো নামে একজন আলেম ছিলেন, যিনি বাদশাহ আকবরকে অনৈসলামিক কাজ থেকে বিরত থাকার পরামর্শ দিতেন৷ সম্রাট জাহাঙ্গীর ছিলেন মুজাদ্দেদ আলফে সানী (রহঃ) এক মুরীদ৷

  • শাসকের খারাপ কাজের বিরোধীতা করা যেমন আলেমগণের দায়িত্ব, তেমন শাসকের কাছে থেকে তাকে সদুপদেশ দেওয়াটাও আলেমগণের দায়িত্বের মাঝে পড়ে৷ আলেমরা যদি শাসকের দরবার থেকে সরে যান, তাহলে দরবারের আসনগুলো জালেমদের দখলে চলে যায়৷ যেমনটা স্বাধীনতার পর থেকে আমাদের দেশে হয়ে আসছে৷

  • খিলাফতের অধীনে তখন মানুষেরা ব্যাপক ভাবে কবর এবং পীর পূজা শুরু করেছিলো৷ যখন তিনি দেখলেন মানুষদের মাঝে শিরক-বিদআত ব্যাপক বিস্তার লাভ করেছে এবং কেউ এগুলোকে নিষেধ করছিল না, কেউ মানুষকে আল্লাহ্‌র পথে ডাকছিলও না, তখন তিনি শিরক-বিদআত থেকে মানুষকে মুক্ত করে আল্লাহর পথে আসার আহবান জানালেন৷

  • অনেকেই ঊনার আহবানে সাড়া দিলেন আবার অনেকেই ঊনার বিরোধীতা শুরু করলেন৷ বিরোধীরা তাকে হত্যার ষড়যন্ত্র শুরু করলে তিনি দিরিয়া হিজরত করেন৷ তখন দিরিয়ার রাজা ছিলেন মুহাম্মদ বিন সৌদ৷ তিনি মুহাম্মদ বিন আবদুল ওয়াহাবকে তাঁর রাজ্যে চিরস্থায়ীভাবে থাকার অনুরোধ করেন৷ পরবর্তীতে দু'জনের সম্পর্ক বন্ধুত্ব থেকে বেয়াইয়ে উত্তীর্ণ হয়৷

  • এখানেও আমাদের দেশের অনেক অতি মুজাহিদ ভাইয়েরা বলতে পারেন, তিনি দিরিয়াতে হিজরতে না গিয়ে খিলাফতের অধীনে থেকে দ্বীনের দাওয়াত দিতে পারতেন৷ তিনি যদি এতই দ্বীনদার হতেন, তাহলে ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর মত জেলে জীবন কাটিয়ে দিতে পারতেন৷

  • প্রিয় জিহাদী দোস্ত ও বুযুর্গ, হাসান বসরী (রহঃ), ইমাম আবু হানিফা (রহঃ), ইমাম তাইমিয়্যা (রহঃ) দ্বীনের খিদমত করতে গিয়ে ঘর-সংসার করেন নাই বা করতে পারেন নাই৷ কিন্তু যেসব আলেমগণ ঘর-সংসার করেছেন তাদের পরিবার-পরিজনের দিকেও নজর দিতে হবে৷

  • আলেমরা জেলে গিয়ে মশার কামড়ে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হোক, তাদের সন্তানেরা ঠান্ডায় নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হোক, তাদের স্ত্রীগণ অসহায় হয়ে মানুষের দুয়ারে দুয়ারে ভিক্ষা করুক আর আমরা মশারীর ভিতর কম্বলের তলে বসে বসে জিহাদী স্ট্যাটাস দিব৷ এধরনের মুজাহিদের সংখ্যা আমাদের দেশে লাখে লাখে৷

  • যে জাতি আলেমদের তাবিজ, কবজ, পানি পড়া, ফিতরা, যাকাত ইত্যাদির উপর পর নির্ভরশীল হয়ে জীবিকা নির্বাহ করতে দেখতে অভ্যস্ত, সে জাতি সৌদী আরবে আলেমদের ব্যবসা-বাণিজ্য, সরকারী অফিস-আদালতে সম্মানের সহিত কাজ করতে দেখে লজ্জা অনুভব না করে বিদ্বেষ পোষণ করতেই পারে৷
  • (কলাম--->>সাইদুর রহমান।)
  • [বিঃদ্রঃ সৌদির দালালী নয় বরং মানুষের ভুল ধারণা ভেংগে দেয়াই আমাদের মূল উদ্দেশ্য ]