মধ্যযুগে ক্রুসেডার এবং খারেজীরা মুসলিম কাফেলাতে ডাকাতি করে সেখান থেকে ছোট ছোট বাচ্চাদের অপহরণ করে নিয়ে যেত৷ পরবর্তীতে এদেরকেই মুসলমানদের বিরূদ্ধে ব্যবহার করত৷ এতে তাদের সন্তানরা নিরাপদ থাকত৷ যুদ্ধটা হত মুসলমানে মুসলমানে৷
যেসব মুসলমানরা অমুসলিম এবং খারেজীদের পক্ষ নিয়ে মুসলমানদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করত তারা জানতই না তারাও মুসলমান৷ নেশা এবং রাজকীয় জীবনে অভ্যস্ত করে ধীরে ধীরে এদের নিজস্ব চিন্তা শক্তি বিলুপ্ত করে অতীত মুছে দেওয়া হত৷
এধরনের অপহরণের ঘটনা বর্তমানে নেই, কিন্তু মুসলমানদের পরষ্পরের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ এবং মিথ্যা অপবাদ দেওয়া কিন্তু থেমে নেই মুসলমানদের মাঝে৷ পরষ্পরের প্রতি দোষারোপের দিক দিয়ে উপমহাদেশের মুসলমানরা সবার চেয়ে এগিয়ে থাকবে৷ এদের মাঝে বাঙ্গালীরা প্রথম স্থান দখল করবে৷ কেন এমনটা হচ্ছে?
আমরা আসলে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন, ভুল শিক্ষা ব্যবস্থা এবং মিডিয়া সন্ত্রাসের শিকার৷ ছোটবেলা থেকেই মুখস্ত বিদ্যা, মিডিয়ার ভুল তথ্য এবং মিথ্যা ইতিহাসের মাধ্যমে আমাদের বড় করা হয়৷ চাকুরীর মোহে বিলাসি জীবন-যাপনের লোভে আমরাও অভ্যস্ত হয়ে পড়ি এসব মুখস্ত বিদ্যাতে৷ নেশায় আসক্ত রোগীর মত আমাদের নিজস্ব চিন্তা শক্তি লোপ পেতে থাকে এবং ভুলে যাই অতীত ইতিহাসকে৷
বৃটিশরা আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এমন ভাবেই প্রণয়ন করেছে, যেন আমরা সংশয়বাদী হয়ে উঠি৷ নিজেদের পরিচয় ভুলে অন্য মুসলমান ভাইয়ের প্রতি বিরূপ ধারণা পোষণ করি এবং ভালো-মন্দ, সত্য-মিথ্যা যাচাই না করে একে অপরকে আক্রমণ করে বসি৷ সেই বৃটিশ আমল থেকে বাঙ্গালী মুসলমানদের সবচেয়ে বেশী বিদ্বেষের শিকার সৌদী আরব এবং সেখানকার আলেমগণ৷
সৌদীর প্রতি ইসলাম প্রিয় তৌহিদী বাঙ্গালী মুসলমানগণের বিদ্বেষের প্রধাণ কারন হলো "রাজতন্ত্র"৷ রাজতন্ত্রে সাধারণত একজন রাজা তার মৃত্যুর পূর্বে উত্তরাধিকারী নিয়োগ করে যান৷ আমরা যদি ইতিহাসের দিকে তাকাই খোলাফায়ে রাশেদীনের পর উমাইয়া, আব্বাসীয়, ফাতেমী, উসমানীয় খিলাফত, সেলজুক, আইয়্যূবীয়, মামলুক সালতানাতের প্রায় সবাই উত্তরাধিকার সূত্রে সিংহাসন আরোহণ করেছেন৷
যারা "রাজতন্ত্র হারাম" বলে ফতোয়া দেন তারা কি দয়া করে বলবেন, রাজতন্ত্রে উত্তরাধিকার নিয়োগ করা হারাম হলে খিলাফত এবং সালতানাতে উত্তরাধিকার নিয়োগ হালাল হয় কি করে? আর যদি খিলাফত, সালতানাত, রাজতন্ত্রে উত্তরাধিকার নিয়োগ হারাম হয়, তাহলে এত বছর ধরে মুসলিম শাসন ব্যবস্থা টিকে ছিলো কিসের ভিত্তিতে?
সৌদী আরবের প্রতি বাঙ্গালী মুসলমানদের বিদ্বেষের আরেকটা অন্যতম কারন হলো, সৌদী আরবের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ বিন সৌদ উসমানীয় খিলাফতকে ধ্বংস করে সৌদী আরব প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ কিন্তু ইতিহাস কি বলে?
নূর উদ্দীন জঙ্গী (রহঃ) ছিলেন সেলজুক সুলতান৷ সেলজুক সালতানাতের পতন হয়েছিলো তাঁরই শিষ্য এবং বন্ধু সুলতান আইয়্যুবী (রহঃ) এর হাতে৷ আইয়্যুবী সালতানাতের পতন হয়েছিলো আরেক বীর মামলুক সুলতান রোকন উদ্দীন বাইবার্স (রহঃ) এর হাতে৷
অযোগ্য শাসকের দূর্বল অবস্থানের কারনে সিংহাসনের যখন নড়বড়ে হয়ে যায়, তখন রাজ্যের ছোট ছোট রাজারা নিজেদের স্বাধীন ঘোষণা করে আর না হয় অন্য কেউ সে সিংহাসন দখল করে৷ উসমানীয় খেলাফতও ছিলো তখন অযোগ্য শাসকদের দখলে৷
মুহাম্মদ বিন সৌদ এবং খিলাফতের যুদ্ধকে অনেকে ধর্মীয় যুদ্ধ হিসেবে উপস্থাপন করে বিকৃত করে থাকেন৷ ইতিহাসে মুসলমানে মুসলমানে যুদ্ধ নতুন নয়৷ সালাহউদ্দীন আইয়্যূবী কে তাঁর চাচাত ভাইয়ের সাথে যুদ্ধ করতে হয়েছে৷ বাদশাহ হূমায়নের সাথে শের শাহের যুদ্ধ হয়েছে৷ সম্রাট আলমগীরকে তাঁর আপন ভাইদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়েছে৷
কে কিভাবে সিংহাসনে বসলো তার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো সিংহাসনে বসে তিনি কি করেছেন? মুহাম্মদ বিন সৌদ কি করেছেন, সেটা দেখার আগে আমরা দেখি খোদ খিলাফতের কেন্দ্রস্থল তুরষ্কে কি হয়েছে?
ক্ষয়িষ্ণু খিলাফাতের কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে মোস্তফা কামাল পাশা৷ সে এসে মসজিদ, মাদ্রাসা বন্ধ করে দেয়৷ কোরআন পাঠ, আযান, দাড়ি, টুপি, হিজাব নিষিদ্ধ করে৷ ইসলামকে বিলুপ্ত করার জন্য এমন কোন হীন কাজ নেই যা সে করে নি৷ অথচ ইতিহাস একেই আমাদের পরিচয় করিয়ে দিয়েছে কামাল আতাতুর্ক বা তুরষ্কের পিতা নামে৷
যখন খিলাফতের শাসকরা খোদ নিজের দেশেই খিলাফত ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে নি, তখন প্রায় ২৫০০ কিঃ মিঃ দূরের জাযিরাতুল আরবকে কিভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখত?
মুহাম্মদ বিন সৌদ সৌদী আরবের রাষ্ট্র ক্ষমতায় না এসে যদি বৃটিশরা আসত এবং ধর্মের নামে শিরক-বিদআত ইত্যাদি কুসংস্কার চালু করত; কিংবা কামাল পাশার মত সেক্যুলাররা ক্ষমতা দখল করত, তখন সেটা কি আমাদের জন্য খুব ভালো হত?
মাওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী বলেছিলেন, "পশ্চিমের শুয়োর সাদা হইতে পারে, পূর্বের শুয়োর কালো হইতে পারে কিন্তু সব শুয়োরই হারাম। শোষণ করা ছাড়া শাসকের কোন জাত নাই, ধর্ম নাই৷" শাসকের কাছে ধার্মিকতা আশা করা বৃথা৷ ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় বেশির ভাগ শাসকই ধর্ম-কর্মের তেমন একটা ধার ধারেন না, বিলাসী জীবন-যাপন করেছেন৷
প্রশ্ন হলো, শাসক কি ধর্ম-কর্ম পালনে জনগণকে কোন বাধা প্রদান করছে কি না? জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে কি না? রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলায় বিঘ্ন ঘটছে কি না? অপরাধীর বিচার হচ্ছে কি না?
সৌদী রাজ পরিবার আমাদের আদর্শ নয়, শাসক ও নয়, আমাদের পররাষ্ট্র নীতি ভারত এবং আমেরিকামুখী৷ শিক্ষা ব্যবস্থা সেক্যুলার এবং কমিউনিস্ট মুখী৷ সৌদী আরবের কারনে বাংলাদেশের কি এমন ক্ষতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে?
যেহেতু সব কিছুর সমালোচনা আমাদের মুদ্রাদোষ, আমরা সমালোচনা করবোই৷ কিন্তু সে সমালোচনা রাজ পরিবার থেকে নামতে নামতে গ্র্যান্ড মুফতি থেকে শুরু করে বাইতুল্লাহ, মসজিদে নববীর সব আলেম ওলামাকে দরবারী আলেম গালাগালি করতে করতে অনেকে চলে যান মক্কা-মদীনাকে দাজ্জালের কবল থেকে মুক্ত করতে জিহাদের ময়দানে৷
আগেই বলছি, শাসককে আপনি সারাদিন গালি দেন আপত্তি নেই৷ আপত্তিটা আসে তখন, যখন দেখি জ্ঞাত বা অজ্ঞাত সারে অনেকে সীমা অতিক্রম করে নিচের দিকে নামতে থাকে৷
(কলাম--->>সাইদুর রহমান।)
[বিঃদ্রঃ সৌদির দালালী নয় বরং মানুষের ভুল ধারণা ভেংগে দেয়াই আমাদের মূল উদ্দেশ্য ]
Total Pageviews
Social Plugin
salat prayer
যে সমস্থ বিষয়াদি পাবেন আলহামদুলিল্লাহ্
আসসালামু আলাইকুম সন্মনিত ভিজিটর বিশেষ ভাবে মনে রাখবেন 👇🎤এখানে পাবেন হাদিসের ব্যাক্ষা,বিষয় ভিত্তিক কুরানের আয়াত, ইসলামিক পিকচার গ্যালারী,
👉বিষয় ভিত্তিক আর্টিকেল, শায়খ ভিত্তিক বই, বিষয় ভিত্তিক বই, অডিও শায়খ ভিত্তিক ও বিষয় ভিত্তিক📲