সাহাবায়ে কিরামের (رضي الله عنهم) পারস্পরিক মান-মর্যাদা সম্পর্কে আহলে ছুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ‘আক্বীদাহ কী?

সাহাবায়ে কিরামের (رضي الله عنهم) পারস্পরিক মান-মর্যাদা সম্পর্কে আহলে ছুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ‘আক্বীদাহ কী? 

সাহাবায়ে কিরামের (g) পারস্পরিক মান-মর্যাদা সম্পর্কে আহলে ছুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ‘আক্বীদাহ কী? এ বিষয়ে আহলুছ ছুন্নাহ ওয়াল জামা‘আতের ‘আক্বীদাহ হলো:- এই বিশ্বাস পোষণ করা যে, রাছূল এর পরে এই উম্মাতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ব্যক্তি হলেন আবূ বাক্‌র আস্‌সিদ্দীক্ব। অতঃপর ‘উমার ইবনুল খাত্ত্বাব। তারপর ‘উছমান ইবনু ‘আফ্‌ফান। উপরোক্ত তিনজনকে কোনরূপ মতানৈক্য ব্যতীত যেভাবে সাহাবায়ে কিরামগণ নির্দ্ধিধায় প্রধান্য দিয়েছেন, আমরাও তাদেরকে সেভাবে প্রাধান্য দেবো। উল্লেখিত তিনজন সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে পারস্পরিক মর্যাদার এ তারতম্য ও ধারাবাহিকতা নিরূপণের প্রমাণ স্বরূপ আমরা ‘আব্দুল্লাহ ইবনু ‘উমার 3 বর্ণিত হাদীছে দেখতে পাই, তিনি বলেছেন:-

كُنَّا نَعُدُّ وَرَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ حَيُّ ، وَأَصْحَابُهُ مُتَوَافِرُونَ: أَبُو بَكْرٍ ، وَعُمَرُ ، وَعُثْمَانُ ، ثُمَّ نَسَكْتُ.

অর্থ- রাছূলের (1) জীবদ্দশায় এবং পর্যাপ্ত সংখ্যক সাহাবায়ে কিরামের (g) উপস্থিতিতে আমরা (সাহাবায়ে কিরামের মান মর্যাদার তারতম্য) এভাবে গণ্য বা বিবেচনা করতাম- প্রথমে আবু বাক্‌র 3, অতঃপর ‘উমার 3, তারপর ‘উছমান 3, এরপর আমরা (এ ব্যাপারে আর কোন কথা বলতাম না) চুপ হয়ে যেতাম।

শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার দিক দিয়ে উপরোক্ত তিনজনের পরবর্তী স্থানে সমাসীন রয়েছেন ‘আলী ইবনু আবী ত্বালিব 3। এর প্রমাণ হলো হাদীছে ছাফীনাহ নামে সুপ্রসিদ্ধ হাদীছ। এতে রয়েছে, রাছূল 1বলেছেন:-

تَكُونُ الْخِلَافَةُ ثَلَاثِينَ سَنَةً ثُمَّ تَصِيرُ مُلْكًا.

অর্থ- খিলাফাতের সময়কাল হবে ৩০ বছর, অতঃপর রাজতন্ত্র প্রথা চালু হয়ে যাবে।

আর এ ৩০ বছরের মধ্যে ‘আলী 3 এর খিলাফাতকালও অন্তর্ভুক্ত। এতেই তার মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব প্রমাণিত হয়।

শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার দিক দিয়ে উপরোক্ত চারজনের পরবর্তী স্থানে সমাসীন রয়েছেন পরামর্শ পরিষদের (আহলে শুরার) অপর চার ব্যক্তিত্ব। যথাক্রমে:-

১। ত্বালহা 3

২। যুবাইর 3

৩। ‘আব্দুর রাহ্‌মান ইবনু ‘আউফ 3।

৪। ছা‘আদ 3।

এদের সকলেই খালীফাহ হওয়ার যোগ্য ছিলেন এবং প্রত্যেকেই ইমাম ও অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

মর্যাদার ক্ষেত্রে আসহাবে ‍শুরার পরবর্তী স্থান বা আসনে রয়েছেন- বাদ্‌রী তথা বদরের যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী মুহাজির সাহাবায়ে কিরাম g। অতঃপর বাদ্‌রী আনসার সাহাবায়ে কিরাম g। তাদের মধ্যে মান-মর্যাদার তারতম্য নিরূপিত হবে ঈমান গ্রহণ ও হিজরাতে অগ্রবর্তীতার (যার আগে যিনি ইছলাম গ্রহণ করেছেন এবং যার পূর্বে যিনি হিজরাত করেছন- এই) ধারাবাহিকতার ভিত্তিতে।

শাইখুল ইছলাম ইবনে তাইমিয়াহ o বলেছেন:- যদি কেউ এ সকল ইমামের কারো খিলাফাত সম্পর্কে কোনরূপ খারাপ মন্তব্য করে, তাহলে সে গৃহপালিত গাধার চেয়েও নিকৃষ্ট বলে গণ্য হবে।

এদের পরে সর্বোত্তম লোক হলেন- সেই সকল সাহাবায়ে কিরাম g যাদের মধ্যে আল্লাহ bতাঁর রাছূল মুহাম্মাদকে (1) প্রেরণ করেছিলেন। যাদের প্রত্যেকেই ন্যূনপক্ষে এক বৎসর অথবা এক মাস কিংবা একদিন অথবা এক ঘন্টা বা এক মুর্হুত বা এক পলক ঈমানের সাথে রাছূল 1 এর বারাকাতময় সাহচর্য লাভ করতে পেরেছেন। এদের প্রত্যেকেই পরবর্তী যুগের সকল তাবি‘য়ীন pথেকে উত্তম ও বেশি মর্যাদাবান।

এ কথার প্রমাণ হলো- ‘ইমরান ইবনু হুছাইন 3 থেকে বিশুদ্ধ ছনদে বর্ণিত হাদীছ। এতে রয়েছে, রাছূল 1 বলেছেন:-

خَيْرُ أُمَّتِي قَرْنِي، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ، ثُمَّ الَّذِينَ يَلُونَهُمْ.

অর্থাৎ- আমার উম্মাতের মধ্যে সর্বোত্তম হলো আমার যুগের উম্মাত, অতঃপর তাদের পরবর্তীগণ (তাবি‘য়ীগণ), অতঃপর তাদের পরবর্তীগণ (তাব‘য়ে তাবি‘য়ীগণ p)।

সাহাবায়ে কিরামের (g) মধ্যে যে যত বেশি রাছূল 1 এর সাহচর্য লাভ করেছেন, তাঁর মর্যাদা ততো বেশি।

যারা রাছূলকে (1) স্বচক্ষে দেখতে পাননি এবং তাঁর মুবারাক সাহচর্য লাভ করতে পারেননি, তারা যদিও সকল প্রকার নেক ‘আমাল সম্পাদন করে থাকেন, তবুও রাছূলের (1) মুবারাক সাহচর্য, সাক্ষাৎ ও দর্শন লাভে ধন্য হওয়ার কারণে সাহাবায়ে কিরাম (g) তাদের থেকে অধিক উত্তম ও মর্যাদাবান। এর প্রমাণ হলো- ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-

وَالسَّابِقُونَ الأَوَّلُونَ مِنَ الْمُهَاجِرِينَ وَالأَنصَارِ وَالَّذِينَ اتَّبَعُوهُم بِإِحْسَانٍ رَّضِيَ اللّهُ عَنْهُمْ وَرَضُواْ عَنْهُ.

অর্থাৎ- মুহাজির ও আনসারদের মধ্য থেকে যারা সর্বপ্রথম অগ্রজ এবং যারা যথার্থভাবে তাদের অনুসরণ করেছেন, আল্লাহ তাদের প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন এবং তাঁরা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়েছেন।

তাছাড়া এ বিষয়ে বিশুদ্ধ ধারাবাহিক ছনদে আবু ছা‘য়ীদ খুদরী 3 হতে বর্ণিত হাদীছে রয়েছে, রাছূল 1 বলেছেন:-

لَا تَسُبُّوا أَصْحَابِي، لَا تَسُبُّوا أَصْحَابِي، فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَوْ أَنَّ أَحَدَكُمْ أَنْفَقَ مِثْلَ أُحُدٍ ذَهَبًا، مَا أَدْرَكَ مُدَّ أَحَدِهِمْ، وَلَا نَصِيفَهُ.১০

অর্থ- তোমরা আমার সাহাবাদেরকে গালি-গালাজ করো না। তোমরা আমার সাহাবাদেরকে গালি-গালাজ করো না। যার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ করে বলছি, যদি তোমাদের মধ্যে কেউ উহুদ পর্বত সমপরিমাণ স্বর্ণও আল্লাহর (0) পথে ব্যয় করে, তথাপি তা তাদের (অগ্রজ মুহাজির ও আনসারদের) এক মুদ্‌ (এক সা‘ এর চার ভাগের এক ভাগ) এমনকি তার অর্ধেকের সমতুল্যও হবে না।১১

সাহাবায়ে কিরামের (g) পারস্পরিক মান-মর্যাদা বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে হলে ইমাম ইবনে হায্‌ম o সংকলিত এবং উছ্‌তায ছা‘য়ীদ আফগানীর ব্যাখ্যাকৃত “আল মুফা-যালা বাইনাস সাহাবা” পুস্তিকাটি দেখা যেতে পারে।
(সূত্র:- উসূলূছ্‌ ছুন্নাহ লিল ইমাম আহ্‌মাদ ইবনু হাম্বাল o)১. صحيح البخاري- ٣٦٥٥
২. সাহীহ্‌ বুখারী- ৩৬৫৫
৩. الفتح- ٧\١٧, ٥٤, ٥٨. الصحيحة- ٤٦٠
৪. আল ফাত্‌হ- ৭/১৭,৫৪,৫৮। আসসহীহাহ- ৪৬০
৫. মাজমূ‘উল ফাতাওয়া লি শাইখিল ইছলাম ইবনে তাইমিয়াহ্‌- ৩/১৫৩৫। এ বিষয়ে আরো বিস্তারিত জানতে চাইলে দেখুন! শারহুত্‌ ত্বাহাওয়ীয়াহ, পৃষ্ঠা নং- ৪৬৭-৪৮৯ ৬. رواه البخارى- ٣٦٥٠. و مسلم- ٢٥٣٥
৭. সাহীহ্‌ বুখারী- ৩৬৫০। সাহীহ্‌ মুছলিম- ২৫৩৫
৮. التوبة- ١٠٠
৯. ছূরা আত্‌তাওবা- ১০০ ১০. متفق عليه
১১. সাহীহ্‌ বুখারী ও সাহীহ্‌ মুছলিম