Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

মুসলিম সমাজে যে সকল ফিতনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, সেগুলোর মধ্যে ‘মুরজিয়া’ হচ্ছে অন্যতম।


মুসলিম সমাজে যে সকল ফিতনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, সেগুলোর মধ্যে ‘মুরজিয়া’ হচ্ছে অন্যতম।

❒ সূচনা

মুসলিম সমাজে যে সকল ফিতনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠে, সেগুলোর মধ্যে ‘মুরজিয়া’ হচ্ছে অন্যতম। খারেজি ফিরকার মতো এই ফিরকাও একটি ভ্রান্ত এবং ভ্রষ্ট ফিরকা। মুরজিয়াদের কয়েকটি দল রয়েছে:

এক:

ঈমান হচ্ছে শুধু অন্তরে স্বীকার করে নেয়ার নাম (তাসদিক), অর্থাৎ কেউ যদি আল্লাহ্‌র অস্তিত্ব, তাঁর তাওহীদ, তাঁর নবী (আ:) - দের বার্তা এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট সবকিছু শুধুমাত্র অন্তরে বিশ্বাস করে, তবে তাই তার ঈমানদার হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

এই আকিদা ধারণকারীদের অন্তর্ভূক্ত তারাও যারা অন্তরের কাজসমূহকে ঈমানের সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করে – যা মুরজিয়াদের অধিকাংশই করে থাকে এবং তারাও যারা অন্তরের কাজকে ঈমানের সংজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত করে না – যা জাহম ইবনে সাফওয়ান এবং তার অনুসারীদের মত।

জাহমি প্রকৃতির মুরজিয়াদের যে অবস্থান (যারা অন্তরের কাজসমূহকে ঈমানের সংজ্ঞার অন্তর্ভূক্ত করে না) তাকে 'মারিফাহ' নামেও অবিহিত করা হয় যার অর্থ ‘শুধুমাত্র পরিচয়’। অর্থাৎ তাদের মত হল , মানুষের জন্য শুধু আল্লাহ্‌, তাঁর রাসুল, প্রভৃতি সম্পর্কে জানাই মুমিন হিসাবে বিবেচিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট।

দুই:

ঈমান শুধুমাত্র মুখে ঘোষণা দেয়ার নাম, এটা কারামিয়্যাহদের মত।

.

তিন:

ঈমান হচ্ছে শুধুমাত্র অন্তরে বিশ্বাস করা এবং মুখে ঘোষণা দেয়ার নাম।
মোট কথা, তাদের মতে কেউ যদি অন্তরে ইসলামের প্রতি বিশ্বাস রাখে এবং মুখে তার স্বীকৃতি দেয়, তবে সে খাঁটি মুসলিম; আমলের কোনো প্রয়োজন নেই।
এর পক্ষে কিছু প্রমাণ:

✍ ইমাম সুফয়ান বিন উয়াইনাহ (রহ.) বলেন,

ﻳﻘﻮﻟﻮﻥ : ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﻗﻮﻝ، ﻭﻧﺤﻦ ﻧﻘﻮﻝ : ﺍﻹﻳﻤﺎﻥ ﻗﻮﻝ ﻭﻋﻤﻞ . ﻭﺍﻟﻤﺮﺟﺌﺔ ﺃﻭﺟﺒﻮﺍ ﺍﻟﺠﻨﺔ ﻟﻤﻦ ﺷﻬﺪ ﺃﻥ ﻻ ﺇﻟﻪ ﺇﻻ ﺍﻟﻠﻪ ﻣُﺼِﺮًّﺍ ﺑﻘﻠﺒﻪ ﻋﻠﻰ ﺗﺮﻙ ﺍﻟﻔﺮﺍﺋﺾ، ﻭﺳﻤﻮﺍ ﺗﺮﻙ ﺍﻟﻔﺮﺍﺋﺾ ﺫﻧﺒﺎ ﺑﻤﻨﺰﻟﺔ ﺭﻛﻮﺏ ﺍﻟﻤﺤﺎﺭﻡ ﻭﻟﻴﺲ ﺑﺴﻮﺍﺀ، ﻷﻥ ﺭﻛﻮﺏ ﺍﻟﻤﺤﺎﺭﻡ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﺍﺳﺘﺤﻼﻝ ﻣﻌﺼﻴﺔ، ﻭﺗﺮﻙ ﺍﻟﻔﺮﺍﺋﺾ ﻣﺘﻌﻤِّﺪًﺍ ﻣﻦ ﻏﻴﺮ ﺟﻬﻞ ﻭﻻ ﻋﺬﺭ ﻫﻮ ﻛﻔﺮ

মুরজিয়ারা বলে- ঈমান শুধুমাত্র স্বীকৃতির নাম। আর আমরা বলি, ঈমান হচ্ছে বিশ্বাস, স্বীকৃতি ও আমলের নাম। মুরজিয়াদের মতে, তাদের জন্য জান্নাত আবশ্যক যারা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ"-এর স্বীকৃতি দেয়। যদিও সে ব্যক্তি অন্তর থেকে (অর্থাৎ হালাল মনে করে) স্থায়ীভাবে ফরয (আমল) ত্যাগ করে। তারা (হালাল মনে করে আমল) ফরয ত্যাগ করাকে হারাম কাজে জড়িত হওয়ার মত পাপ মনে করে। অথচ হারাম কাজে জড়িত হওয়া এবং হালাল মনে করে ফরয আমল ত্যাগ করা এক নয়। কারণ, হালাল মনে না করে হারাম কাজে জড়িত হওয়া পাপ আর হালাল মনে করে ফরয ত্যাগ করা কুফরি, যদি তার মধ্যে অজ্ঞতা ও ওযর না থাকে । ( আব্দুল্লাহ বিন আহমাদ, আস-সুন্নাহ, ১/৩৪৭; নং, ৭৪৫)

.

✍ শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়াহ (রহ.) বলেনঃ

وَالْمُرْجِئَةُ ثَلَاثَةُ أَصْنَافٍ ": الَّذِينَ يَقُولُونَ: الْإِيمَانُ مُجَرَّدُ مَا فِي الْقَلْبِ ثُمَّ مِنْ هَؤُلَاءِ مَنْ يُدْخِلُ فِيهِ أَعْمَالَ الْقُلُوبِ وَهُمْ أَكْثَرُ فِرَقِ الْمُرْجِئَةِ كَمَا قَدْ ذَكَرَ أَبُو الْحَسَنِ الْأَشْعَرِيُّ أَقْوَالَهُمْ فِي كِتَابِهِ وَذَكَرَ فِرَقًا كَثِيرَةً يَطُولُ ذِكْرُهُمْ لَكِنْ ذَكَرْنَا جُمَلَ أَقْوَالِهِمْ وَمِنْهُمْ مَنْ لَا يُدْخِلُهَا فِي الْإِيمَانِ كَجَهْمِ وَمَنْ اتَّبَعَهُ كالصالحي وَهَذَا الَّذِي نَصَرَهُ هُوَ وَأَكْثَرُ أَصْحَابِهِ.
وَالْقَوْلُ الثَّانِي: مَنْ يَقُولُ: هُوَ مُجَرَّدُ قَوْلِ اللِّسَانِ وَهَذَا لَا يُعْرَفُ لِأَحَدِ قَبْلَ الكَرَّامِيَة " وَالثَّالِثُ: تَصْدِيقُ الْقَلْبِ وَقَوْلُ اللِّسَانِ وَهَذَا هُوَ الْمَشْهُورُ عَنْ أَهْلِ الْفِقْهِ وَالْعِبَادَةِ مِنْهُمْ

“মুরজিয়ারা তিন প্রকার: প্রথম প্রকার হল, যারা বলে ঈমান হচ্ছে শুধুমাত্র অন্তরে যা রয়েছে তা। এরা অন্তরের আমলকে ঈমানের অন্তর্ভূক্ত করে। এদের কথা আবু আল-হাসান আল-আশ’আরী তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। তিনি আরও অনেক ফিরকার কথা উল্লেখ করেছেন যাদের তালিকা অনেক দীর্ঘ হয়ে যাবে। তবে আমরা তাদের মতবাদের মূল কথা উল্লেখ করেছি। তাদের কারো কারো মত অনুযায়ী, আমল ঈমানের অন্তর্ভুক্ত নয়। এটা জাহম ও তার অনুসারীদের মত, যেমন আস-সালিহি। সে এবং তার অধিকাংশ অনুসারী এর সমর্থক ছিল।

দ্বিতীয় প্রকার হল, ঈমান হচ্ছে কেবলমাত্র মুখে উচ্চারণ করার নাম। কারামিয়্যাহ ফিরকার আত্মপ্রকাশের আগে এই মত সম্পর্কে কারও জানা ছিল না।

তৃতীয় প্রকার হল, ঈমান হল তাসদিক অর্থাৎ অন্তরের সাক্ষী দেয়া এবং মুখে উচ্চারণ করার নাম। এটা মুরজিয়া ফকিহ এবং ইবাদতকারীদের প্রসিদ্ধ মত”। (মাজমুউল ফাতাওয়া, ৭/ ১৯৫)

.

✍ ইমাম ওয়াকি ইবনে আল-জাররা আর-রু’উসি বলেছেন: “আহলুস সুন্নাহ হচ্ছে তারা যারা বলে যে ঈমান হল, কথা এবং আমলের নাম। মুরজিয়ারা বলে যে, ঈমান হচ্ছে (শুধু) স্বীকৃতির নাম ! আর জাহিমিয়্যারা বলে ঈমান হচ্ছে ,শুধুমাত্র জানার নাম (মারিফাহ)!” (আল-লালিকা’ই, আস-সুন্নাহ, ১৮৩৭; আল-আজুররি, আশ-শারি’আহ, নং ৩৪২)


সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনা থেকে আমরা যা পেলাম তার সারসংক্ষেপ নিম্নরূপ:

মুরজিয়া হলঃ
• যারা বলে, শুধুমাত্র অন্তরে বিশ্বাস করার নাম ঈমান

এই দলের মধ্যে আছে-
- যারা শুধুমাত্র অন্তরের আমলসমূহকে ঈমানের অন্তর্ভুক্ত করে। যেমন: ভালবাসা, ভয়, আশা ইত্যাদি। এটা অধিকাংশ মুরজিয়াদের মত।
- যারা অন্তরের আমলসমূহকে ঈমানের অন্তর্ভুক্ত করে না। এরা হচ্ছে ‘জাহমি’ প্রকৃতির মুরজিয়া। যেহেতু এই মত ছিল জাহম এবং তার অনুসারীদের।

- যারা বলে, শুধুমাত্র মুখ ঘোষণা করার নাম ঈমান (কারামিয়্যাহদের দাবি; যারা আজ অবধি বিদ্যমান!)
- যারা বলে, অন্তর বিশ্বাস করে এবং মুখ সাক্ষ্য দেয়ার নাম ঈমান (এর সূচনা হয় কুফাহ'র ফকিহ এবং আবেদদের থেকে)

আর ঈমান বিষয়ে তাদের এসব ধারণা থেকে যেসমস্ত গলদ আকিদা তৈরি হয়েছে তার কয়েকটি হল:
ঈমান হচ্ছে স্থায়ী অর্থাৎ এটি বাড়ে না বা কমে না।
যত জাতিকে আল্লাহ্‌র আনুগত্যের নির্দেশ দেয়া হয়েছে, (মালাইকা, নবীগণ, এবং মুসলিম সর্বসাধারণ) তাদের সকলের ঈমান সমান, তাদের ঈমানের মধ্যে কোন তারতম্য নেই।
গুনাহ ঈমানের কোন ক্ষতি করতে পারে না, এবং একে হ্রাস করতে পারে না।
প্রতিটি মানুষ নিশ্চিত যে, সে একজন নিখুঁত মুমিন, তার ঈমান পরিপূর্ণ এবং ত্রুটিহীন।
অধিকাংশ কাফের এবং প্রত্যাখ্যানকারীকে মুমিন হিসাবে বিবেচনা করা যায়, যেমন ইবলিস, ফির’আউন এবং অন্যান্য। কারণ, তারাও অন্তরে আল্লাহকে বিশ্বাস করত।
মুনাফিকেরাও নিখুঁত মুমিন, কেননা তারা ইসলাম মুখের উচ্চারণ করে।

.
উপরোক্ত বিষয়ের আলোকে প্রথমত, আমরা মুরজিয়াদের ভ্রষ্টতা এবং দ্বিতীয়ত, সালাফীরা ইরজার আপদমস্তক থেকে মুক্ত তা খুব সহজেই বুঝতে পারি। কারণ, মুরজিয়াদের সেসব আক্বীদাহ সালাফীদের মাঝে নেই।

.
নিম্নের দুইটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল ঈমানের হ্রাস-বৃদ্ধি এবং ইসলাম আর ঈমানের মধ্যে পার্থক্যকরণ, যা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। যা আমাদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিত অন্যান্য বিষয়ের উপরে আলোকপাত করবে, যেমন: গুনাহের কারণে তাকফির করার অসারতা, এবং কবিরা গুনাহগারদেরকে কাফির ঘোষণা করা।
.

■ মূল আলোচনা: --

✍ ইমামুস সুন্নাহ আবুল-কাসিম আল-আসবাহানি ঈমান সংশ্লিষ্ট বিষয়ে আহলুস সুন্নাহ এর আকিদার ব্যাখ্যায় বলেছেন:

শারয়ী অর্থে “ঈমান হচ্ছে, এমন একটি নাম যা সমস্ত ইবাদতমূলক কাজকে বুঝায়, হোক আভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক”।

আশ’আরীরা বলে থাকে যে, ঈমান হচ্ছে স্বীকৃতি দেওয়ার নাম (তাসদিক)। তবে স্বীকৃতি দিলে আমল শুরু করতে হয়, কিন্তু তা ঈমানের অংশ নয়।
আহলে সুন্নাহ ও আশ'আরীদের মধ্যে পার্থক্যে থাকার সুবিধা হল এই যে, যে ব্যক্তি আমলের দিক থেকে শূন্য এবং হারাম কাজে জড়িত, তাকে পরিপূর্ণ ‘মুমিন’ বলা হবে না বরং তার ব্যাপারে বলা হবে যে, সে ঈমানের দিক থেকে অসম্পূর্ণ, যেহেতু সে ঈমানের কিছু অংশকে অবহেলা করেছে। আর তাদের (অর্থাৎ আশ’আরীদের) দৃষ্টিতে তাকে পরিপূর্ণ মুমিন বলা হবে, কেননা (তাদের মতে) ঈমান অর্থ স্বীকার করে নেয়ার নাম। আর সে লোক সেই শর্ত পূরণ করেছে ( আল্লাহকে স্বীকার করে নিয়েছে)।

আমাদের এই কথা বলার পেছনে দলিল হচ্ছে আল্লাহর বাণীঃ

إِنَّمَا الْمُؤْمِنُونَ الَّذِينَ إِذَا ذُكِرَ اللَّهُ وَجِلَتْ قُلُوبُهُمْ وَإِذَا تُلِيَتْ عَلَيْهِمْ ءَايٰتُهُۥ زَادَتْهُمْ إِيمٰنًا وَعَلٰى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ

মুমিন তো তারাই যাদের হৃদয় আল্লাহকে স্মরণ করা হলে কম্পিত হয় এবং তাঁর আয়াতসমূহ তাদের নিকট পাঠ করা হলে তা তাদের ঈমান বর্ধিত করে। আর তারা তাদের রব –এর উপরই নির্ভর করে। ( আনফাল, আয়াত: ২)

أُولٰٓئِكَ هُمُ الْمُؤْمِنُونَ حَقًّا ۚ لَّهُمْ دَرَجٰتٌ عِندَ رَبِّهِمْ وَمَغْفِرَةٌ وَرِزْقٌ كَرِيمٌ

তারাই প্রকৃত মুমিন। তাদের রব এর কাছে তাদেরই জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদাসমূহ,ক্ষমা এবং সম্মানজনক জীবিকা। (আনফাল, আয়াত: ৪)

অত্র আয়াতে আল্লাহ তাদের আসল এবং প্রকৃত ঈমান আছে বলে বর্ণনা দিয়েছেন যাদের মধ্যে উল্লিখিত আমল রয়েছে।
আল্লাহ আরও বলেন:
وَمَا كَانَ اللَّهُ لِيُضِيعَ إِيمٰنَكُم

আল্লাহ্‌ এমন নন যে, তিনি তোমাদের ঈমানকে নষ্ট হতে দিবেন (বাকারাহ, আয়াত:১৪৩)

অর্থাৎ তোমাদের সালাতকে নষ্ট হতে দিবেন। এ আয়াতে আল্লাহ ঈমান শব্দটি সালাতের উপর প্রয়োগ করেছেন, অথচ এটি একটি আমল। তার মানে আমল ঈমানের অন্তর্ভূক্ত।

এই বিষয়ে আরও প্রমাণ হচ্ছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «الْإِيمَانُ بِضْعٌ وَسَبْعُونَ - أَوْ بِضْعٌ وَسِتُّونَ - شُعْبَةً، فَأَفْضَلُهَا قَوْلُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَأَدْنَاهَا إِمَاطَةُ الْأَذَى عَنِ الطَّرِيقِ، وَالْحَيَاءُ شُعْبَةٌ مِنَ الْإِيمَانِ

আবু হুরায়রা (রাদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে যা বর্ণিত হয়েছে – তিনি বলেছেন, “আল্লাহ্‌র রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন): “ঈমান এর সত্তরটিরও অধিক শাখা আছে” এবং অপর এক বর্ণনায়, “ষাটটিরও অধিক শাখা আছে: তার মধ্যে সর্বোৎকৃষ্ট হল এই ঘোষণা দেয়া যে আল্লাহ্‌ ব্যতীত উপাসনার যোগ্য কেউ নেই এবং এর সর্বনিম্নটি হল রাস্তা থেকে ক্ষতিকারক কিছু সরিয়ে দেয়া। এবং লজ্জা ঈমানের একটি শাখা”। (সহীহ মুসলিম, ৩৫)

এই হাদীসে আমলকে ঈমান বলে অবহিত করা হয়েছে। যা প্রমাণ করে, ঈমান শুধু বিশ্বাস ও স্বীকৃতির নাম নয়; বরং আমলেরও নাম।

.

● বিষয়: [ঈমানের বৃদ্ধি পাওয়া এবং কমে যাওয়া]

ঈমান বৃদ্ধি পাওয়া এবং কমে যাওয়া সম্ভব। আনুগত্যমূলক কাজ করার মাধ্যমে এটি বৃদ্ধি পায়, এবং এটি হ্রাস পায় যখন এ সমস্ত কাজ ত্যাগ করা হয় অথবা অবাধ্যতার কাজ করা হয়। এটা তাদের বিরুদ্ধে প্রমাণ যারা বলে, ঈমান হচ্ছে শুধুমাত্র অন্তরে জানা ও স্বীকৃতি দেওয়ার নাম; এই দুইটি ব্যাপার হচ্ছে পরিচয়দায়ক বিষয় আর হ্রাস বা বৃদ্ধি পরিচয় দানকারী বিষয়ের ক্ষেত্রে ঘটতে পারে না।

ইবনে আব্বাস, আবু হুরাইরা এবং আবু আদ-দারদা (রাদিয়াল্লাহু আনহুম) থেকে বর্ণিত আছে , “ঈমান বাড়ে এবং কমে।”

যেহেতু আমল ঈমানের অন্তর্গত সুতরাং যখন কেউ আনুগত্যমূলক আমলের কোনো কিছুকে অবহেলা করে এবং নিষিদ্ধ কাজসমূহে লিপ্ত হয় তখন সে ঈমানের কিছু আমলকে অবহেলা করে ফেলে। সুতরাং, বলা বৈধ যে, ঈমান বৃদ্ধি পায় এবং কমে যায়।

.

● বিষয়: [শরীয়াতের বিধান যাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য তাদের সকলের ঈমান কি এক সমান?]

যাদেরকে (আনুগত্য করার) দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, যেমন, ফেরেশতাগণ , নবীগণ – যারা শহীদ এবং সিদ্দিক – তারা সকলে ঈমানের ক্ষেত্রে সমান নয়। বরং তারা তাদের আনুগত্যপূর্ণ কাজের পরিমাণ অনুযায়ী একে অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। এটা তাদের বিরুদ্ধে দলিল যারা বলে থাকে যে, ঈমান হচ্ছে শুধুমাত্র অন্তরে স্বীকার করে নেয়ার নাম, এবং শ্রেষ্ঠত্ব শুধুমাত্র প্রতিষ্ঠিত হয় জ্ঞান এবং এর বিবিধ দিক সম্পর্কে জানা থাকার দ্বারা।

আমরা ইতোমধ্যেই উল্লেখ করেছি যে, আনুগত্যমূলক কাজ ঈমানের অংশ। এ থেকে প্রমাণ হয় যে, লোকেরা আনুগত্যমূলক কাজের দ্বারা একে অন্যের চেয়ে শ্রেষ্ঠ হতে পারে। সুতরাং আমলের মাধ্যেমে তাদের কেউ কেউ বেড়ে গিয়ে অন্যদের চেয়ে উপরের অবস্থান করে। সুতরাং এর মাধ্যমে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা সম্ভবপর হওয়া আবশ্যক।

● বিষয়: [ইসলাম এবং ঈমানের মধ্যে পার্থক্য]

ঈমান এবং ইসলাম হচ্ছে দুইটি এমন শব্দ যা দুইটি পৃথক অর্থ বহন করে। ইসলাম হচ্ছে এমন একটি নাম যা দ্বারা বোঝানো হয় দুইটি শাহাদাহকে - ঈমানের সাক্ষ্য এবং অন্তরে স্বীকার করে নেয়াকে। আর ঈমান হচ্ছে এমন একটি শব্দ যা দ্বারা সমস্ত আনুগত্যমূলক কাজকে বোঝানো হয়। এটা হচ্ছে তার বিরুদ্ধে দলিল যে বলে যে ইসলাম এবং ঈমান একই জিনিস।

ইসলাম ও ঈমানের মধ্যে পার্থক্য থাকার দলিল হচ্ছে সর্বশক্তিমান আল্লাহর এই বাণী:
إِنَّ الْمُسْلِمِينَ وَالْمُسْلِمٰتِ وَالْمُؤْمِنِينَ وَالْمُؤْمِنٰتِ

“নিশ্চয়ই মুসলিম পুরুষ এবং মহিলা, মুমিন পুরুষ এবং মহিলা… (আহযাব ৩৫)

অত্র আয়াতে আল্লাহ ইসলামের পরে ঈমানকে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং এ থেকে জানা যায় যে, ঈমানের এমন অর্থ আছে যা ইসলামের অর্থ থেকেও বর্ধিত।

এর দলিল হচ্ছে, উমার ইবনে আল-খাত্তাব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) কর্তৃক বর্ণিত জিবরীল (আলাইহি সালাম) এর বাণী: “আমাকে ইসলামের ব্যাপারে বলুন” … এবং তারপর তিনি বলেন “আমাকে ঈমানের ব্যাপারে বলুন।( সহীহ মুসলিম, ৭)

সুতরাং এখান থেকে দলিল পাওয়া যায় যে, এই দুইটির মধ্যে পার্থক্য বিদ্যমান।

আমির বিন সা’দ বিন আবি ওয়াক্কাস (রা:) থেকে বর্ণিত হয়েছে, তিনি সা’দ থেকে, সা'দ রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে বর্ণনা করেন। রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদল লোককে কিছু দিলেন কিন্তু তাদের একজনকে দিলেন না। ফলে সা’দ তাঁকে বললেন, “আপনি তাদেরকে দিলেন কিন্তু তাকে দিলে না? আল্লাহ্‌র কসম আমি তাকে মুমিন মনে করি!” আল্লাহ্‌র রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, “একজন মুসলিম?!”

সুতরাং তিনি ইসলাম এবং ঈমানের ভেতরে পার্থক্য করেছিলেন।


আমরা ইতিমধ্যেই উল্লেখ করেছি যে, ঈমান হচ্ছে এমন একটি নাম যা দ্বারা সমস্ত আনুগত্যমূলক কাজকে বোঝায় এবং ইসলাম হচ্ছে এমন একটি নাম যা দ্বারা দুইটি সাক্ষ্যকে বুঝানো হয়, তার পাশাপাশি অন্তরের স্বীকৃতিকে বুঝায়। সুতরাং যখন ব্যাপারটা এরকম তখন এই দুটির ভিতরে পার্থক্য করা বাধ্যতামূলক।

.
● বিষয়: [নিজেকে নিখুঁত ঈমানদার দাবি না করা, ইসতিসনা]

এটা অপছন্দনীয় যে, কোন মুমিন বলবে, ‘আমি নিশ্চিতভাবে একজন মুমিন!’ অথবা “আমি আল্লাহ্‌র দৃষ্টিতে একজন প্রকৃত মুমিন’। বরং তার বলা উচিৎ, ‘আমি আশা করি যে, আমি একজন মুমিন’ বা ‘আমি একজন মুমিন ইন শা আল্লাহ্‌’ বা ‘আমি বিশ্বাস করি আল্লাহ্‌তে, তার ফেরেশতাদেরকে, তার কিতাবসমূহকে, এবং তার রাসুলদেরকে’। এগুলোর কোনটিই সে তার ঈমানের ব্যাপারে সন্দিহান হয়ে বলে না, বরং এটা এই দিক থেকে বলে যে, সে এ ব্যাপারে নিশ্চিত নয় যে, আল্লাহর পক্ষ তাকে যা কিছু করতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে তার সবকিছু করেছে এবং যা কিছু তার জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে তার সবকিছু ছেড়ে দিয়েছে।

এটা তার বিরুদ্ধে প্রমাণ যে বলে যে, যখন কোন ব্যক্তি তার নিজের ব্যাপারে জানে যে সে একজন মুমিন, তখন তার জন্য এটা বলা বৈধ যে, ‘আমি নিশ্চিতভাবে একজন মুমিন!’

নিখুঁত ঈমানের চূড়ান্ত দাবি করা যে অসম্ভব এবং ইন শা আল্লাহ বলা যে অত্যাবশ্যকীয়, তার প্রমাণ হল সালাফদের ঐকমত বা ইজমা।

ইবনে মাস’উদ (রাদিয়াল্লাহু আনহু)- কে বলা হয়েছিল: “এই লোক দাবি করে যে সে একজন মুমিন?” তিনি জবাব দেন, “তাকে জিজ্ঞেস কর সে কি জান্নাতি নাকি জাহান্নামি?” সুতরাং তারা তাকে জিজ্ঞাসা করল এবং সে উত্তর দিল, “আল্লাহ্‌ই সবচাইতে ভালো জানেন”। তখন আবদুল্লাহ ইবনে মাস’উদ তাকে বললেন, “শুধু যদি তুমি এই দুনিয়ার ব্যাপারকেও সোপর্দ করতে যেমনভাবে তুমি আখিরাতের ব্যাপারকে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করেছ। ( মুসনাদুস শামিয়ীন, ১৪৪৩)

যেহেতু এটা ইতোমধ্যেই প্রমাণ করা হয়ে গেছে যে, ঈমানের বৈশিষ্ট হচ্ছে সমস্ত আনুগত্যমূলক কাজ করা এবং সমস্ত নিষিদ্ধ ব্যাপার পরিহার করা, তাই এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি একেবারে সুনিশ্চিত হতে পারে না যে, সে তার উপর বাধ্যতামূলক সকল কাজ সম্পাদন করেছে এবং তার জন্য নিষিদ্ধ সকল কাজ সে এড়াতে পেরেছে। সুতরাং, তাঁর পক্ষে এটা জানা সম্ভবপর নয় যে, সে একজন জান্নাতি মুমিন। ( আল-হুজ্জাহ ফী বায়ানিল মাহাজ্জাহ, ১/৪১১-৪১৯)

About সহীহ-আকিদা(RIGP)
বল,এটিই আমার পথ।স্পষ্ট জ্ঞানের ভিত্তিতে আল্লাহর দিকে আহবান করি নিয়মিত আপডেট পাবেন- Important Knowledge= নির্ভেজাল জ্ঞান পেতে ভিজিট করুন এই সাইটে- https://sarolpoth.blogspot.com আলাদা আলাদা সাজানো আছে... আপনি চাইলে ওয়েবসাইটটি এবং লেখাগুলি,বা অন্যান্য জিনিস গুলি শেয়ার করে বন্ধুদের জানিয়ে দিতে পারেন এতে আপনার ও আমার ইনশাআল্লাহ সাদকায়ে জারিয়া হবে.ইসলামিক বই পেতে-.http://rasikulindia.blogspot.com/