❒ সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্য: পর্ব-০৪

সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্য: পর্ব-০৪
সহীহ আকিদা RIGP

❒ সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্য: পর্ব-০৪

– এ পর্বের বৈশিষ্ট্যঃ নাসীহাহ
সালফে সালিহীনের মানহাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নাসীহাহ। নাসীহাহ শব্দটি আমাদের সমাজে শুধু অন্যের জন্য শুভ কামনা করা অর্থে ব্যবহারিত হলেও হাদীসে এটি ব্যাপক অর্থে ব্যবহারিত হয়েছে। নাসীহাহ-এর শাব্দিক অর্থ হলো কোনো কিছুকে খারাপ কিছু থেকে মুক্ত করা, সাহায্য করা, সত্য বলে মেনে নেয়া। পরিভাষায় ইবনুল আছীর তার “আন-নিহায়াহ” গ্রন্থে লিখেছেন, “নাসীহাহ হচ্ছে কারো জন্য কল্যাণ করার ইচ্ছা করা”।

সালাফগণের মানহাজের অন্যতম বৈশিষ্ট্য হচ্ছে নাসীহাহ। এ ক্ষেত্রে দলীল হলো রাসূলুল্লাহ (স.)-এর সেই বিখ্যাত হাদীস যেখানে তিনি বলেছিলেন -

الدِّينُ النَّصِيحَةُ ) قُلْنَا لِمَنْ ؟ قال : ( لِلَّهِ وَلِكِتَابِهِ وَلِرَسُولِهِ وَلِأَئِمَّةِ الْمُسْلِمِينَ وَعَامَّتِهِمْ
দ্বীন হচ্ছে নাসীহাহ (অর্থাৎ নাসীহাহই হচ্ছে দ্বীন।) সাহাবীগণ এ কথা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করলেন, হে আল্লাহর রাসূল! কার জন্য নাসীহাহ? তিনি বললেন, নাসীহাহ হচ্ছে আল্লাহর জন্য; তাঁর কিতাবের জন্য (অর্থাৎ কুরআন-এর জন্য); তাঁর রাসূলের জন্য; মুসলিমদের ইমামদের জন্য ও সকল মুসলিমদের জন্য। (সহীহ মুসলিমঃ ৫৫)

মানুষ যেহেতু শুধু মানুষের জন্য নাসীহাহ করার কথা ও পদ্ধতি কমবেশি জানে কিন্তু আল্লাহ, তাঁর কিতাব ও রাসূল (সা.)-এর জন্য কিভাবে নাসীহাহ করবে তা জানে না। তাই হাদীসটির একটু ব্যাখ্যা দরকার।

১। হাদীসে আল্লাহর জন্য নাসীহাহ বলতে বুঝানো হয়েছে যে --
● আল্লাহকে এক বলে স্বীকার করা ও বিশ্বাস করা;
● তাঁর সাথে কাউকে বা কিছুকে শরীক না করা,
● সকল অপূর্ণতা থেকে তাকে মুক্ত রাখা,
● তাঁর সকল আদেশ মেনে চলা ও তাঁর সকল নিষেধ বর্জন করা,
● আল্লাহর জন্য ভালোবাসা ও তাঁর জন্য শত্রুতা পোষণ করা,
● আল্লাহর আনুগত্যকারীদের সাথে বন্ধুত্ব আর তাঁর বিরুদ্ধাচারণকারীদের প্রতি শত্রুতা,
● কাফিরদের সাথে জিহাদ করা,
● আল্লাহর দেয়া নেয়ামত স্বীকার করা ও এর শুকরিয়া আদায় করা,
● সকল কাজে একনিষ্ঠতা অবলম্বন ইত্যাদি।

২। আল্লাহর কিতাব অর্থাৎ কুরআনের জন্য নাসীহাহ হচ্ছে --
● আল-কুরআনের ওপরে ঈমান আনা,
● অপব্যাখ্যার হাত থেকে কুরআনকে রক্ষা করা,
● এর হক আদায় করে তেলাওয়াত করা,
● এর আয়াতগুলো নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করা,
● এর উপদেশবাণীকে উপদেশ হিসেবে গ্রহণ করা,
● এর হারামের সীমারেখায় থেমে যাওয়া,
● এর আদেশগুলো পালন করা ও এর নিষেধগুলো থেকে দূরে থাকা।


৩। আল্লাহর রাসূল (সা.) -এর জন্য নাসীহাহ করা অর্থ হচ্ছে --
● মানুষের মধ্যে শুধু তাকেই অনুসরণ করা,
● তাকে ছাড়া আর কাউকে অনুসরণ না করা,
● তাকে সত্য নবী হিসেবে স্বীকার করা ও ঈমান রাখা,
● তিনি যেসব অতীতের, বর্তমানের ও ভবিষ্যতের সংবাদ আমাদের জানিয়েছেন তা বিশ্বাস করা,
● তাঁর আদেশ মেনে চলা, তাঁর নিষেধ থেকে দূরে থাকা,
● তাঁর রেখে যাওয়া শরীয়তের পক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তোলা,
● এই বিশ্বাস রাখা যে, তিনি যা নিয়ে এসেছেন তা আল্লাহর পক্ষ থেকেই এনেছেন ও বলেছেন এবং এর প্রতি আমল করা আবশ্যক,
● তাঁর জীবিত থাকা অবস্থায় তাঁর পাশে থেকে তাকে সাহায্য করা আর তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর সুন্নাহকে আঁকড়ে ধরে তাকে সাহায্য করা ইত্যাদি।
.
৪। মুসলিমদের ইমামদের (নেতা) জন্য নাসীহাহ-এর অর্থ হচ্ছে -

● সত্যের পক্ষে তাদেরকে সাহায্য করা ও আনুগত্য করা,
● কোমলতা ও বিনয়ের সাথে তাদেরকে সতর্ক করা ও উপদেশ দেয়া,
● তারা যেসব বিষয়ে গাফিল সেসব বিষয়ে তাদেরকে অবহিতকরণ,
● তাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহী হয়ে অস্ত্রধারণ না করা,
● তাদের আনুগত্যের পক্ষে সাধারণ মানুষদেরকে উদ্বুদ্ধ করা,
● তাদের পেছনে সলাত আদায় করা,
● তাদের পক্ষে জিহাদে অংশগ্রহণ করা (যখন তারা জিহাদের জন্য আহ্বান করবে),
● তাদের কাছে যাকাত অর্পণ করা,
● মিথ্যা প্রশংসা করে তাদেরকে প্রতারিত না করা,
● তাদের জন্য সংশোধনের দো’আ করা,
● তাদের জন্য ভালো কাজের তাওফীক কামনা করা।

.
৫। সাধারণ মুসলিমদের জন্য নাসীহাহ মানে হচ্ছে --
● তাদেরকে দ্বীনের জ্ঞান দান করা বা দ্বীন বুঝানো,
● আল্লাহর দিকে ডাকা,
● তাদেরকে সৎ কাজের আদেশ দেয়া ও অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করা,
● তাদের মধ্যে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে দন্ডবিধি বাস্তবায়ন করা,
● নিজের জন্য যা ভালোবাসবে তা অন্য মুসলিম ভাইয়ের জন্যও ভালোবাসবে,
● নিজের জন্য যা অপছন্দ করবে তা অন্যের জন্যও অপছন্দ করবে,
● তাদের ব্যাপারে সর্বদা দয়াদ্র থাকবে,
● ছোটদের প্রতি স্নেহ ও দয়া দেখাবে আর বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে,
● তাদের দুশ্চিন্তায় চিন্তিত হবে, তাদের খুশিতে আনন্দিত হবে,
● তাদের সংশোধন চাইবে,
● তাদের ওপরে নেয়ামতের ধারাবাহিকতা চাইবে,
● শত্রুর বিরুদ্ধে তাদের বিজয় চাইবে,
● তাদের থেকে সকল অকল্যাণ ও অনিষ্ট দূর করবে।

এই হাদীসে যে নাসীহার কথা বলা হয়েছে তা-ই সালাফী মানহাজের বৈশিষ্ট্য। সালাফগণ সর্বদা এই হাদীসের ওপরে আমল করতেন। নাসীহাহ করতেন। বর্তমানেও যারা সালাফদের অনুসরণ করতে চায় তাদের উচিত উপরিউক্ত হাদীসের আলোকে নাসীহাহ অনুশীলন করা। নাসীহাহই দ্বীন।

নাসীহাহকে বাদ দিয়ে দ্বীন চর্চা অসম্ভব। তাই এই হাদীসে নাসীহাহকেই দ্বীন বলা হয়েছে। 

Post a Comment

0 Comments