মওদুদিবাদ ও জামাত ইসলাম
>>>ইসলাম পরিপন্থী? নাকি ইসলাম সহায়ক?ধারাবাহিক সিরিজের ১ম পর্ব আজ.
(কৈফিয়ত: আমি জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের ভাইদের কোনরুপ হেয় বা খাটো করার উদ্দেশে মাওলানা মওদুদীর উক্তিগুলো এখানে তুলে ধরিনি। আমি জানি, তারা এগুলো সম্পর্কে কমই জানেন অথবা তাদের জানতে দেওয়া হয়না। কেউ যদি জেনেও ফেলেন এবং বড়দের নিকট প্রকাশ করেন, তাদের এমন বোঝান হয় যে এগুলো সব শত্রুদের ষড়যন্ত্র। আবার এমনটিও বলা হয়- আমরা তো আর মাওলানা মওদুদীকে অনুসরন করিনা বা তার সব কথা মানিও না। কিন্তু একথা গ্রহনযোগ্য নয়, কারন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের পাঠ্যসূচিতে মাওলানা মওদুদী লিখিত প্রায় সব পুস্তকই রয়েছে। উত্তম খাবারের সাথে যেমন সুক্ষ পরিমাণ বিষাক্ত খাবার গ্রহন করলে বাহ্যিকভাবে তার প্রভাব তেমন অনুভূত হয়না এবং ধীরে ধীরে ঐ বিষাক্ত খাবার সহনীয় হয়ে যায় তেমনি মাওলানা মওদুদীর ত্রুটিযুক্ত কথা ও কাজগুলোকেও জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের ভাইয়েরা একসময় তাদের আক্বীদায় পরিনত করেন। ‘তাফহীমুল কোরআন’কে আলেম সমাজ নিষিদ্ধের দাবী করায় বর্তমান সংস্করনগুলো থেকে কিছু আপত্তিকর কথা বাদ দেওয়া হয়েছে যদিও এতটুকুই যথেষ্ট নয়। তাছাড়া মাওলানা মওদুদী জীবিত থাকাকালীন বা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অদ্যাবধি কোন ভুল স্বীকার করে তওবা করা হয়নি। তাই মুসলিম ভাইদের ঈমানের হেফাজতের জন্য এগুলো তুলে ধরা আমার জন্য অপরিহার্য ছিল।)
আমি আজকের এ নিবন্ধের শুরুটাই করতে চাই জামায়াতে ইসলামের জন্মইতিহাস থেকে। ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট ভারতের হায়দারাবাদে পাঠানকোটে আবুল আ’লা মওদুদী জামায়াতে ইসলামী নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটি জামায়াতে ইসলাম নামে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পাকিস্তান নিয়ে সে সময় বেশ আন্দোলন চলছিল। সে আন্দোলনকে আবুল আ’লা মওদুদী ঘোষণা করে ‘আহাম্মকের বেহেস্ত বা কাফেরদের রাষ্ট্র হিসেবে। মাওলানা আবুল আ’লা মওদুদী অনুসারি ছিলেন জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামক রাজনৈতিক দলটির। মওদুদী কতটা মুসলিম লীগ বিরোধী ছিলেন তা বোঝা যায় জামায়াতে ‘ইন্তেখাবী গ্রন্থে’। তিনি মুসলিম লীগ সম্পর্কে বলেছিলেন,‘ওরা পরিবেশকে পায়খানার চেয়েও খারাপ করে ফেলেছে। এ ছাড়া পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জিন্নাহরও ঘোর সমালোচক ছিলেন মওদুদী। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা যখন প্রায় নিশ্চিত ওই সময়ে মাওলানা আবু আ’লা মওদুদী বলেছিলেন,‘ভারতের স্বাধীনতার চেয়ে এই মুহুর্তে বেশী প্রয়োজন হলো এখানে হুকুমতের আইন প্রতিষ্ঠা করা।’ স্বাধীনতার কয়েক দিন আগে ১৯৪৭ সালের এপ্রিল মাসে পাটনায় জামায়াতের সম্মেলন করেন মওদুদী। স্বাধীনতার পর আগস্ট মাসেই মওদুদী পাকিস্তানে ফিরে এসে লাহোরে একটি বস্তিকে ‘দারুল ইসলাম’ ঘোষণা করে সেখানে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন। এখান থেকেই দল পরিচালনা করে তিনি উগ্রবাদী বইপুস্তুক প্রকাশ করতে থাকেন।
কুরআন শরীফের অনেক আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক প্রথমে ঈমান আনার কথা এবং পরে আমলের কথা বলেছেন। ইসলাম বিদ্বেষী কাফির-মুশরিকরা তাই মুসলমানদের ঈমানী চেতনায় বিভেদ তৈরীর জন্য সদা সক্রিয়। আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেনঃ
“তারা পূর্ব থেকেই বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ সন্ধানে ছিল এবং আপনার কার্যসমূহ উলট-পালট করে দিচ্ছিল।”
(সূরা তওবা ৪৮)
এক্ষেত্রে ইসলাম বিদ্বেষী কাফির-মুশরিকরা মূলতঃ মুসলমানদের থেকেই এজেন্ট তৈরী করে। যারা মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইসলামী আক্বীদার মধ্যে ফিৎনা তৈরী করে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান ও মানের খেলাফসহ অসংখ্য কুফরী আক্বীদার বিস্তার করেছে সে।
এরপর পাক ভারত উপামহাদেশের এ ধারার অগ্রগামী হয়েছে তথাকথিত জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী। স্বয়ং আল্লাহ পাক, তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবা কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং আউলিয়া কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, মোদ্দাকথা ইসলামের সব অনুষঙ্গেই মিথ্যা, কুফরী ও জঘন্য সমালোচলার জাল বিস্তার করেছে এই মওদুদী।
তার সেই অসংখ্য কুফরী আক্বীদার মাত্র ৫টি ক্ষুদ্র প্রমাণ নিম্নরূপঃ
১) আল্লাহ পাক সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “যে ক্ষেত্রে নর-নারীর অবাধ মেলামেশা, সেক্ষেত্রে যেনার কারণে (আল্লাহ পাকের আদেশকৃত) রজম শাস্তি প্রয়োগ করা নিঃসন্দেহে জুলুম।” (নাঊযুবিল্লাহ)
(তাফহীমাত, ২য় খন্ড, ২৮১ পৃষ্ঠা)
২) ফেরেশতা সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “ফেরেশতা প্রায় ঐ জিনিস যাকে গ্রীক, ভারত ইত্যাদি দেশের মুশরিকরা দেবী-দেবতা স্থির করেছে।” (নাঊযুবিল্লাহ) (তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দ্বীন, ১০ পৃষ্ঠা)
৩) আম্বিয়া আলাইহিমুছ ছালাত ওয়াস সালাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “নবীগণ মা’ছূম নন। প্রত্যক নবী গুনাহ করেছেন।” (নাঊযুবিল্লাহ)(তাফহীমাত, ২য় খন্ড, ৪৩ পৃষ্ঠা)
৪) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবিক দুর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না।”(নাঊযুবিল্লাহ)(তরজমানুস্ সুন্নাহ, ৩য় খন্ড, ৩০৫ পৃষ্ঠা)
৫) সাহাবা কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “সাহাবাদিগকে সত্যের মাপকাঠি জানবে না।” (নাঊযুবিল্লাহ)
(দস্তরে জামাতে ইসলামী, ৭ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য, সব মুফতী-মাওলানাদের ইজমা তথা ঐক্যমতে উপরোক্ত আক্বীদাধারী ব্যক্তি মুসলমান নয় বরং মুরতাদ। আরো উল্লেখ্য যে, মওদুদী’র মৃত্যুর পর শিয়া সম্প্রদায়ের একটি মুখপত্রে বলা হয়েছিল, “মরহুম (মওদুদী) তার ভিন্ন আঙ্গিকে শিয়া মতবাদ প্রচলনেও সহায়তা করেছেন।”
(সাপ্তাহিক শিয়া, লাহোর, ১৯৭৯ ইং, ৫৭ সংখ্যা ৪০/৪১; খোমেনী ও মওদুদী দু’ভাই, পৃষ্ঠা ১২)
বিষাক্ত বীজ থেকে যেমন সুমিষ্ঠ ফল আশা করা যায় না তেমনি ইসলামী আন্দোলন ইত্যাদি মিষ্টি মিষ্টি কথা বললেও মওদুদী নিজেই যে কত বিষাক্ত বীজ ছিলো তা তার উপরোক্ত কুফরী আক্বীদা থেকেই সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়। তার উপরোক্ত আক্বীদাগুলো মুসলমানদের সাথে তার বিশ্বাসঘাতকতার স্বরূপই উন্মোচন করে। আর আল্লাহ পাক বিশ্বাসঘাতকদের সম্পর্কে পবিত্র কালামে ইরশাদ ফরমান,
“আল্লাহ পাক পছন্দ করেন না তাকে, যে বিশ্বাসঘাতক পাপী হয়।” (সূরা আন্ নিসা ১০৮)
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী যে কারনে আলেম সমাজের নিকট প্রত্যাখ্যাত হলেন নবী-রাসুলগণের প্রতি ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি :
নবী-রাসুলগণ সকলেই মাসুম, তারা সকলেই নিষ্পাপ-এই হলো ইসলামী আকীদা। তবে জনাব আবুল আলা মওদুদী ইসলামের বদ্ধমূল এ আকীদার উপর কুঠারাঘাত করে এবং কুরআন ও সুন্নাহর চিরন্তন শিক্ষাকে পদদলিত করে আম্বিয়ায়ে কেরামের এ পূত পবিত্র জামাতের প্রতি কলংক লেপন করার উদ্দেশ্যে এমন ধৃষ্টতাপূর্ন কথা বলেছেন, যা কোন মুসলমানের পক্ষে বরদাশত করা সম্ভব নয়।
প্রসিদ্ধ নবী দাউদ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত দাউদ (আ.) এর কাজের মধ্যে নফস ও আভ্যন্তরীন কুপ্রবৃত্তির কিছুটা দখল ছিল। অনুরুপভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের সাথেও তার কিছুটা সম্পর্ক ছিল। আর তা ছিল এমন ধরনের কাজ, যা হক পন্থায় শাসনকারী কোন মানুষের পক্ষেই শোভা পায়না।” [তাফহিমুল কোরআন(উর্দু):৪র্থ খন্ড, সুরা সাদ, ৩২৭পৃ. ১ম সংস্করণ, অক্টোবর ১৯৬৬ইং]
“হযরত দাউদ (আ.)ত-কালীন যুগে ইসরাঈলী সোসাইটির দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে এক বিবাহিতা যুবতীর উপর আসক্ত হয়ে তাকে বিবাহ করার জন্য তার স্বামীর নিকট তালাক দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন” [তাফহিমাত ২য় খন্ড: ৪২পৃ. ২য় সংস্করণ ; নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ৭৩ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন ১৯৯১]
হযরত নূহ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত নূহ (আ.) চিন্তাধারার দিক থেকে দ্বীনের চাহিদা হতে দূরে সরে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে জাহিলিয়াতের জযবা স্থান পেয়েছিল।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড, ৩৪৪পৃ. ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]
হযরত মুছা (আ.) সম্পর্কে:
“নবী হওয়ার পূর্বে মুছা(আ.) দ্বারা একটি বড় গুনাহ হয়েছিল। তিনি এক ব্যাক্তিকে কতল করেছিলেন।” [রাসায়েল ও মাসায়েল, ১ম খন্ড, ৩১ পৃ.]
“মুছা(আ.) এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ অধৈর্য্যশীল বিজয়ীর মত যে তার শাসন ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত না করেই মার্চ করে সম্মুখে চলে যায় আর পিছনে ফেলে যাওয়া এলাকায় বিদ্রোহের দাবানল দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়ে।” [তরজমানুল কোরআন ২৯/৪-৫]
হযরত ইব্রাহীম (আ.) সম্পর্কে:
“এখানে আর একটি প্রশ্নের উদ্রেক হয় যে, হযরত ইব্রাহীম (আ.) যখন নক্ষত্র দেখে বলেছিলেন, এটা আমার প্রতিপালক এবং চন্দ্র-সূর্য দেখে এগুলোকেও নিজের প্রতিপালক হিসাবে অবহিত করেন, তখন সাময়িক ভাবে হলেও কি তিনি শিরকে নিপতিত হননি?” [তাফহিমুল কোরআন ১মখন্ড, ৫৫৮ পৃ.]
হযরত ইসা (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত ইসা (আ.) মারা গেছেন একথাও বলা যাবেনা, বরং বুঝতে হবে ব্যাপারটি অস্পষ্ট।” [তাফহিমুল কোরআন ১মখন্ড(সুরা নিসা), ৪২১ পৃ.]
হযরত ইউসুফ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত ইউসুফ (আ.)- ‘আমাকে মিসরের রাজকোষের পরিচালক নিয়োগ করুন’- এ কথাটি বলে শুধু অর্থমন্ত্রী হওয়ার জন্যই প্রার্থনা করেননি। কারো কারো ধারনা, বরং তিনি এ বলে ডিকটিটরীই চেয়েছিলেন মৌলিকভাবে। এরই ফলশ্রুতিতে বর্তমান ইতালীর মুসোলিনির যে মর্যাদা তিনিও এর কাছাকাছি মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন।” [তাফহীমাত : ২য় খন্ড, ১২২ পৃ. ৫ম সংস্করন এবং নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ১৫১ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন ১৯৯১ইং]
হযরত ইউনুস (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত ইউনুস (আ.) থেকে রিসালাতের দায়িত্ব আদায় করার ব্যাপারে কিছু দুর্বলতা হয়ে গিয়েছিল।সম্ভবত তিনি ধৈর্যহারা হয়ে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই আপন স্থান ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড, সূরা ইউনুস (টিকা দ্রষ্টব্য) ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]
হযরহ আদম (আ.) সম্পর্কে:
“হযরহ আদম (আ.) মানবিক দূর্বলতায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি শয়তানী প্রলোভন হতে সৃষ্ট তরি- জযবায় আত্মভোলা হয়ে নিজ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেন। ফলে আনুগত্যের উচ্চ শিখর হতে নাফারমানীর অতল গহ্বরে গিয়ে পড়েন।” [তাফহিমুল কোরআন(উর্দু): ৩য়খন্ড, ১২৩ পৃ.]
হযরত মুহাম্মাদ (স.) সম্পর্কে:
“আল্লাহ তা’য়ালার নিকট কাতর কন্ঠে এই আবেদন করুন, যে কাজের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছিল, তা সম্পন্ন করার ব্যাপারে আপনার দ্বারা যে ভুল ত্রুটি হয়েছে কিম্বা তাতে যে অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে তা যেন তিনি ক্ষমা করে দেন।” [তাফহিমুল কোরআন (বাংলা) ১৯শ খন্ড, ২৮০পৃ. মুদ্রনে ওরিয়েন্টাল প্রেস, ঢাকা ১৯৮০ ইং; কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা(বাংলা) ১১২পৃ. ৮ম প্রকাশ, আধুনিক প্রকাশনী:জুন ২০০২]
“মহানবী (স.) মানবিক দূর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। অর্থাৎ তিনি মানবিক দূর্বলতার বশীভূত হয়ে গুনাহ করেছিলেন।” [তরজমানুল কোরআন ৮৫ তম সংখ্যা, ২৩০পৃ.]
“মহানবী (স.) নিজে মনগড়া কথা বলেছেন এবং নিজের কথায় নিজেই সন্দেহ পোষন করেছেন।” [তরজমানুল কোরআন, রবিউল আউয়াল সংখ্যা, ১৩৬৫ হিজরী]
নবী-রাসুলগণ সকলেই মাসুম, তারা সকলেই নিষ্পাপ-এই হলো ইসলামী আকীদা। তবে জনাব আবুল আলা মওদুদী ইসলামের বদ্ধমূল এ আকীদার উপর কুঠারাঘাত করে এবং কুরআন ও সুন্নাহর চিরন্তন শিক্ষাকে পদদলিত করে আম্বিয়ায়ে কেরামের এ পূত পবিত্র জামাতের প্রতি কলংক লেপন করার উদ্দেশ্যে এমন ধৃষ্টতাপূর্ন কথা বলেছেন, যা কোন মুসলমানের পক্ষে বরদাশত করা সম্ভব নয়।
সকল নবী-রাসুল সম্পর্কে:
“ইসমত বা নিষ্পাপ হওয়াটা মুলত: নবীদের প্রকৃতিগত গুণ নয়।এখানে একটি সুক্ষ বিষয় এই যে, আল্লাহ তা’য়ালা ইচ্ছা করেই প্রত্যেক নবীর উপর থেকে কোন না কোন সময় তার হেফাজত উঠিয়ে নেন এবং তাদেরকে দু’একটি গুনাহে লিপ্ত হতে দেন। যাতে করে মানুষ যেন খোদা বলে ধারনা না করে এবং জেনে রাখে এরাও মানুষ।” [তাফহীমাত : ২য় খন্ড, ৪র্থ সংস্করন ৫৬/৫৭ পৃ. এবং নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ৭৪ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন অক্টোবর ১৯৯১ইং]
“বস্তুত: নবীগণ মানুষ হয়ে থাকেন এবং কোন মানুষই মু’মিনের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ মাপকাঠিতে সর্বদা অটল থাকতে সক্ষম হতে পারেনা। প্রায়শ:ই মানভীয় নাজুক মুহুর্তে নবীর ন্যায় শ্রেষ্ঠ মানুষও কিছুক্ষনের জন্য মানবিক দুর্বলতার সামনে পরাভূত হয়ে যান।” [তাফহিমুল কোরআন ২য় খন্ড, ৩৪৩-৩৪৪ পৃ. সংস্করন ১৯৯০ইং]
“কোন কোন নবী দ্বীনের চাহিদার উপর স্থির থাকতে পারেন নি। বরং তারা আপন মানবীয় দুর্বলতার কাছে হার মেনেছেন।” [তরজমানুল কোরআন, ৩৫ তম সংখ্যা : ৩২৭ পৃ.]
” অন্যদের কথা তো স্বতন্ত্র, প্রায়শ:ই পয়গম্বরগণও তাদের কু-প্রবৃত্তির মারাত্মক আক্রমনের সম্মুখিন হয়েছেন।” [তাফহীমাত : ২য় খন্ড, ৫ম সংস্করন ১৯৫ পৃ. এবং নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ২৮ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন ১৯৯১ইং]
আসুন নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে কিছু কথা জেনে নেই
১।মওদুদী সাহেব বলেছেন: “প্রত্যেক নবী গুনাহ করেছেন” (তাফহীমাত: ২য় খন্ড, পৃ:৪৩)
২। হযরত মুহাম্মদ (সা.) রিসালাতের দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করেছেন, তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। (তাফহীমুল কুরআন, সুরায়ে নসর এর তাফসীর)
৩।সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি নন এমনকি অনুকরণ-অনুসরণের যোগ্যও নন।(দস্তুরে জামাতে ইসলামী, পৃ, ০৭)
৪।হযরত আবু বকর (রা.) খিলাফতের দায়িত্ব পালনে সম্পুর্ণ অযোগ্য ছিলেন। (তাজদীদ ও ইয়াহইয়ায়ে দীন: ২২,)
৫।হযরত আলী (রা.) অন্যায় কাজ করেছেন (খেলাফত ও মুলুকিয়াত: ১৪৩)
*হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. বলেছেন মওদুদী জামাত পথভ্রষ্ট; তাদের আক্বীদা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পরিপন্থী।
এই বইগুলো দেখুন-
১. ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) -জাস্টিস তাকী উসমানী (রশীদ কল্যান ট্রাস্ট)
২. মাওলানা মওদূদীর সাথে আমার সাহচার্যের ইতিবৃত্ত – মাওলানা মনজুর নোমানী (রহঃ) (ঐ)
৩. মওদূদী সাহেব ও ইসলাম -মুফতি রশীদ আহমাদ লুধীয়ানভী (রঃ) (দারুল উলুম লাইব্রেরী-৩৭,নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার)
৪. মওদূদীর চিন্তাধারা ও মওদূদী মতবাদ -ইজহারে হক ফাউন্ডেশান; প্রাপ্তিস্থানঃ (দারুল উলুম লাইব্রেরী-৩৭,নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার)
৫. ফিতনায়ে মওদুদীয়াত – মাওলানা যাকারিয়া (রহ.)
৬. ভুল সংশোধন -মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)
৭. সতর্কবাণী -মাওলানা মোহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)
৮. হক্ব বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব- আল্লামা আহমাদ শফী, হাটহাজারী।
৯. ঈমান ও আক্বীদা -ইসলামিক রিসার্স সেন্টার, বসুন্ধরা।
১০. ফতোয়ায়ে দারুল উলূম (আংশিক)
১১. ইসলামি আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ -মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন(১১/১, বাংলাবাজার, ঢাকা)
১২. আহসানুল ফতোয়া
যাদের সত্য যাচাইয়ের প্রয়োজন তারা ইচ্ছে করলেই তা করতে পারেন।
ইনশাঅাাল্লাহ চলবে.....
>>>ইসলাম পরিপন্থী? নাকি ইসলাম সহায়ক?ধারাবাহিক সিরিজের ১ম পর্ব আজ.
(কৈফিয়ত: আমি জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের ভাইদের কোনরুপ হেয় বা খাটো করার উদ্দেশে মাওলানা মওদুদীর উক্তিগুলো এখানে তুলে ধরিনি। আমি জানি, তারা এগুলো সম্পর্কে কমই জানেন অথবা তাদের জানতে দেওয়া হয়না। কেউ যদি জেনেও ফেলেন এবং বড়দের নিকট প্রকাশ করেন, তাদের এমন বোঝান হয় যে এগুলো সব শত্রুদের ষড়যন্ত্র। আবার এমনটিও বলা হয়- আমরা তো আর মাওলানা মওদুদীকে অনুসরন করিনা বা তার সব কথা মানিও না। কিন্তু একথা গ্রহনযোগ্য নয়, কারন জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের পাঠ্যসূচিতে মাওলানা মওদুদী লিখিত প্রায় সব পুস্তকই রয়েছে। উত্তম খাবারের সাথে যেমন সুক্ষ পরিমাণ বিষাক্ত খাবার গ্রহন করলে বাহ্যিকভাবে তার প্রভাব তেমন অনুভূত হয়না এবং ধীরে ধীরে ঐ বিষাক্ত খাবার সহনীয় হয়ে যায় তেমনি মাওলানা মওদুদীর ত্রুটিযুক্ত কথা ও কাজগুলোকেও জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের ভাইয়েরা একসময় তাদের আক্বীদায় পরিনত করেন। ‘তাফহীমুল কোরআন’কে আলেম সমাজ নিষিদ্ধের দাবী করায় বর্তমান সংস্করনগুলো থেকে কিছু আপত্তিকর কথা বাদ দেওয়া হয়েছে যদিও এতটুকুই যথেষ্ট নয়। তাছাড়া মাওলানা মওদুদী জীবিত থাকাকালীন বা জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে অদ্যাবধি কোন ভুল স্বীকার করে তওবা করা হয়নি। তাই মুসলিম ভাইদের ঈমানের হেফাজতের জন্য এগুলো তুলে ধরা আমার জন্য অপরিহার্য ছিল।)
আমি আজকের এ নিবন্ধের শুরুটাই করতে চাই জামায়াতে ইসলামের জন্মইতিহাস থেকে। ১৯৪১ সালের ২৬ আগস্ট ভারতের হায়দারাবাদে পাঠানকোটে আবুল আ’লা মওদুদী জামায়াতে ইসলামী নামে একটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু কিছু দিনের মধ্যেই প্রতিষ্ঠিত এ সংগঠনটি জামায়াতে ইসলাম নামে রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পাকিস্তান নিয়ে সে সময় বেশ আন্দোলন চলছিল। সে আন্দোলনকে আবুল আ’লা মওদুদী ঘোষণা করে ‘আহাম্মকের বেহেস্ত বা কাফেরদের রাষ্ট্র হিসেবে। মাওলানা আবুল আ’লা মওদুদী অনুসারি ছিলেন জামায়াতে ইসলামী হিন্দ নামক রাজনৈতিক দলটির। মওদুদী কতটা মুসলিম লীগ বিরোধী ছিলেন তা বোঝা যায় জামায়াতে ‘ইন্তেখাবী গ্রন্থে’। তিনি মুসলিম লীগ সম্পর্কে বলেছিলেন,‘ওরা পরিবেশকে পায়খানার চেয়েও খারাপ করে ফেলেছে। এ ছাড়া পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা জিন্নাহরও ঘোর সমালোচক ছিলেন মওদুদী। ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ভারতের স্বাধীনতা যখন প্রায় নিশ্চিত ওই সময়ে মাওলানা আবু আ’লা মওদুদী বলেছিলেন,‘ভারতের স্বাধীনতার চেয়ে এই মুহুর্তে বেশী প্রয়োজন হলো এখানে হুকুমতের আইন প্রতিষ্ঠা করা।’ স্বাধীনতার কয়েক দিন আগে ১৯৪৭ সালের এপ্রিল মাসে পাটনায় জামায়াতের সম্মেলন করেন মওদুদী। স্বাধীনতার পর আগস্ট মাসেই মওদুদী পাকিস্তানে ফিরে এসে লাহোরে একটি বস্তিকে ‘দারুল ইসলাম’ ঘোষণা করে সেখানে নিজের অবস্থান পাকাপোক্ত করেন। এখান থেকেই দল পরিচালনা করে তিনি উগ্রবাদী বইপুস্তুক প্রকাশ করতে থাকেন।
কুরআন শরীফের অনেক আয়াত শরীফে আল্লাহ পাক প্রথমে ঈমান আনার কথা এবং পরে আমলের কথা বলেছেন। ইসলাম বিদ্বেষী কাফির-মুশরিকরা তাই মুসলমানদের ঈমানী চেতনায় বিভেদ তৈরীর জন্য সদা সক্রিয়। আল্লাহ পাক কালামুল্লাহ শরীফে ইরশাদ করেনঃ
“তারা পূর্ব থেকেই বিভেদ সৃষ্টির সুযোগ সন্ধানে ছিল এবং আপনার কার্যসমূহ উলট-পালট করে দিচ্ছিল।”
(সূরা তওবা ৪৮)
এক্ষেত্রে ইসলাম বিদ্বেষী কাফির-মুশরিকরা মূলতঃ মুসলমানদের থেকেই এজেন্ট তৈরী করে। যারা মুসলমানদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ইসলামী আক্বীদার মধ্যে ফিৎনা তৈরী করে। সাইয়্যিদুল মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, নূরে মুজাস্সাম, হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর শান ও মানের খেলাফসহ অসংখ্য কুফরী আক্বীদার বিস্তার করেছে সে।
এরপর পাক ভারত উপামহাদেশের এ ধারার অগ্রগামী হয়েছে তথাকথিত জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মওদুদী। স্বয়ং আল্লাহ পাক, তাঁর রসূল ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবা কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম এবং আউলিয়া কিরাম রহমতুল্লাহি আলাইহিম, মোদ্দাকথা ইসলামের সব অনুষঙ্গেই মিথ্যা, কুফরী ও জঘন্য সমালোচলার জাল বিস্তার করেছে এই মওদুদী।
তার সেই অসংখ্য কুফরী আক্বীদার মাত্র ৫টি ক্ষুদ্র প্রমাণ নিম্নরূপঃ
১) আল্লাহ পাক সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “যে ক্ষেত্রে নর-নারীর অবাধ মেলামেশা, সেক্ষেত্রে যেনার কারণে (আল্লাহ পাকের আদেশকৃত) রজম শাস্তি প্রয়োগ করা নিঃসন্দেহে জুলুম।” (নাঊযুবিল্লাহ)
(তাফহীমাত, ২য় খন্ড, ২৮১ পৃষ্ঠা)
২) ফেরেশতা সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “ফেরেশতা প্রায় ঐ জিনিস যাকে গ্রীক, ভারত ইত্যাদি দেশের মুশরিকরা দেবী-দেবতা স্থির করেছে।” (নাঊযুবিল্লাহ) (তাজদীদ ও ইহইয়ায়ে দ্বীন, ১০ পৃষ্ঠা)
৩) আম্বিয়া আলাইহিমুছ ছালাত ওয়াস সালাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “নবীগণ মা’ছূম নন। প্রত্যক নবী গুনাহ করেছেন।” (নাঊযুবিল্লাহ)(তাফহীমাত, ২য় খন্ড, ৪৩ পৃষ্ঠা)
৪) হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “মহানবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মানবিক দুর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না।”(নাঊযুবিল্লাহ)(তরজমানুস্ সুন্নাহ, ৩য় খন্ড, ৩০৫ পৃষ্ঠা)
৫) সাহাবা কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম সম্পর্কে কুফরী আক্বীদাঃ “সাহাবাদিগকে সত্যের মাপকাঠি জানবে না।” (নাঊযুবিল্লাহ)
(দস্তরে জামাতে ইসলামী, ৭ পৃষ্ঠা)
উল্লেখ্য, সব মুফতী-মাওলানাদের ইজমা তথা ঐক্যমতে উপরোক্ত আক্বীদাধারী ব্যক্তি মুসলমান নয় বরং মুরতাদ। আরো উল্লেখ্য যে, মওদুদী’র মৃত্যুর পর শিয়া সম্প্রদায়ের একটি মুখপত্রে বলা হয়েছিল, “মরহুম (মওদুদী) তার ভিন্ন আঙ্গিকে শিয়া মতবাদ প্রচলনেও সহায়তা করেছেন।”
(সাপ্তাহিক শিয়া, লাহোর, ১৯৭৯ ইং, ৫৭ সংখ্যা ৪০/৪১; খোমেনী ও মওদুদী দু’ভাই, পৃষ্ঠা ১২)
বিষাক্ত বীজ থেকে যেমন সুমিষ্ঠ ফল আশা করা যায় না তেমনি ইসলামী আন্দোলন ইত্যাদি মিষ্টি মিষ্টি কথা বললেও মওদুদী নিজেই যে কত বিষাক্ত বীজ ছিলো তা তার উপরোক্ত কুফরী আক্বীদা থেকেই সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়। তার উপরোক্ত আক্বীদাগুলো মুসলমানদের সাথে তার বিশ্বাসঘাতকতার স্বরূপই উন্মোচন করে। আর আল্লাহ পাক বিশ্বাসঘাতকদের সম্পর্কে পবিত্র কালামে ইরশাদ ফরমান,
“আল্লাহ পাক পছন্দ করেন না তাকে, যে বিশ্বাসঘাতক পাপী হয়।” (সূরা আন্ নিসা ১০৮)
জামায়াতে ইসলামীর প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদী যে কারনে আলেম সমাজের নিকট প্রত্যাখ্যাত হলেন নবী-রাসুলগণের প্রতি ধৃষ্টতাপূর্ণ উক্তি :
নবী-রাসুলগণ সকলেই মাসুম, তারা সকলেই নিষ্পাপ-এই হলো ইসলামী আকীদা। তবে জনাব আবুল আলা মওদুদী ইসলামের বদ্ধমূল এ আকীদার উপর কুঠারাঘাত করে এবং কুরআন ও সুন্নাহর চিরন্তন শিক্ষাকে পদদলিত করে আম্বিয়ায়ে কেরামের এ পূত পবিত্র জামাতের প্রতি কলংক লেপন করার উদ্দেশ্যে এমন ধৃষ্টতাপূর্ন কথা বলেছেন, যা কোন মুসলমানের পক্ষে বরদাশত করা সম্ভব নয়।
প্রসিদ্ধ নবী দাউদ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত দাউদ (আ.) এর কাজের মধ্যে নফস ও আভ্যন্তরীন কুপ্রবৃত্তির কিছুটা দখল ছিল। অনুরুপভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার অপব্যবহারের সাথেও তার কিছুটা সম্পর্ক ছিল। আর তা ছিল এমন ধরনের কাজ, যা হক পন্থায় শাসনকারী কোন মানুষের পক্ষেই শোভা পায়না।” [তাফহিমুল কোরআন(উর্দু):৪র্থ খন্ড, সুরা সাদ, ৩২৭পৃ. ১ম সংস্করণ, অক্টোবর ১৯৬৬ইং]
“হযরত দাউদ (আ.)ত-কালীন যুগে ইসরাঈলী সোসাইটির দ্বারা প্রভাবান্বিত হয়ে এক বিবাহিতা যুবতীর উপর আসক্ত হয়ে তাকে বিবাহ করার জন্য তার স্বামীর নিকট তালাক দেওয়ার জন্য আবেদন করেছিলেন” [তাফহিমাত ২য় খন্ড: ৪২পৃ. ২য় সংস্করণ ; নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ৭৩ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন ১৯৯১]
হযরত নূহ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত নূহ (আ.) চিন্তাধারার দিক থেকে দ্বীনের চাহিদা হতে দূরে সরে গিয়েছিলেন। তার মধ্যে জাহিলিয়াতের জযবা স্থান পেয়েছিল।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড, ৩৪৪পৃ. ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]
হযরত মুছা (আ.) সম্পর্কে:
“নবী হওয়ার পূর্বে মুছা(আ.) দ্বারা একটি বড় গুনাহ হয়েছিল। তিনি এক ব্যাক্তিকে কতল করেছিলেন।” [রাসায়েল ও মাসায়েল, ১ম খন্ড, ৩১ পৃ.]
“মুছা(আ.) এর দৃষ্টান্ত হচ্ছে ঐ অধৈর্য্যশীল বিজয়ীর মত যে তার শাসন ক্ষমতা সুপ্রতিষ্ঠিত না করেই মার্চ করে সম্মুখে চলে যায় আর পিছনে ফেলে যাওয়া এলাকায় বিদ্রোহের দাবানল দাউ দাউ করে ছড়িয়ে পড়ে।” [তরজমানুল কোরআন ২৯/৪-৫]
হযরত ইব্রাহীম (আ.) সম্পর্কে:
“এখানে আর একটি প্রশ্নের উদ্রেক হয় যে, হযরত ইব্রাহীম (আ.) যখন নক্ষত্র দেখে বলেছিলেন, এটা আমার প্রতিপালক এবং চন্দ্র-সূর্য দেখে এগুলোকেও নিজের প্রতিপালক হিসাবে অবহিত করেন, তখন সাময়িক ভাবে হলেও কি তিনি শিরকে নিপতিত হননি?” [তাফহিমুল কোরআন ১মখন্ড, ৫৫৮ পৃ.]
হযরত ইসা (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত ইসা (আ.) মারা গেছেন একথাও বলা যাবেনা, বরং বুঝতে হবে ব্যাপারটি অস্পষ্ট।” [তাফহিমুল কোরআন ১মখন্ড(সুরা নিসা), ৪২১ পৃ.]
হযরত ইউসুফ (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত ইউসুফ (আ.)- ‘আমাকে মিসরের রাজকোষের পরিচালক নিয়োগ করুন’- এ কথাটি বলে শুধু অর্থমন্ত্রী হওয়ার জন্যই প্রার্থনা করেননি। কারো কারো ধারনা, বরং তিনি এ বলে ডিকটিটরীই চেয়েছিলেন মৌলিকভাবে। এরই ফলশ্রুতিতে বর্তমান ইতালীর মুসোলিনির যে মর্যাদা তিনিও এর কাছাকাছি মর্যাদার অধিকারী হয়েছিলেন।” [তাফহীমাত : ২য় খন্ড, ১২২ পৃ. ৫ম সংস্করন এবং নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ১৫১ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন ১৯৯১ইং]
হযরত ইউনুস (আ.) সম্পর্কে:
“হযরত ইউনুস (আ.) থেকে রিসালাতের দায়িত্ব আদায় করার ব্যাপারে কিছু দুর্বলতা হয়ে গিয়েছিল।সম্ভবত তিনি ধৈর্যহারা হয়ে নির্ধারিত সময়ের পূর্বেই আপন স্থান ত্যাগ করে চলে গিয়েছিলেন।” [তাফহিমুল কোরআন: ২য়খন্ড, সূরা ইউনুস (টিকা দ্রষ্টব্য) ৩য় সংস্করণ, ১৯৬৪ ইং]
হযরহ আদম (আ.) সম্পর্কে:
“হযরহ আদম (আ.) মানবিক দূর্বলতায় আক্রান্ত ছিলেন। তিনি শয়তানী প্রলোভন হতে সৃষ্ট তরি- জযবায় আত্মভোলা হয়ে নিজ নিয়ন্ত্রন হারিয়ে ফেলেন। ফলে আনুগত্যের উচ্চ শিখর হতে নাফারমানীর অতল গহ্বরে গিয়ে পড়েন।” [তাফহিমুল কোরআন(উর্দু): ৩য়খন্ড, ১২৩ পৃ.]
হযরত মুহাম্মাদ (স.) সম্পর্কে:
“আল্লাহ তা’য়ালার নিকট কাতর কন্ঠে এই আবেদন করুন, যে কাজের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হয়েছিল, তা সম্পন্ন করার ব্যাপারে আপনার দ্বারা যে ভুল ত্রুটি হয়েছে কিম্বা তাতে যে অসম্পূর্ণতা রয়ে গেছে তা যেন তিনি ক্ষমা করে দেন।” [তাফহিমুল কোরআন (বাংলা) ১৯শ খন্ড, ২৮০পৃ. মুদ্রনে ওরিয়েন্টাল প্রেস, ঢাকা ১৯৮০ ইং; কোরআনের চারটি মৌলিক পরিভাষা(বাংলা) ১১২পৃ. ৮ম প্রকাশ, আধুনিক প্রকাশনী:জুন ২০০২]
“মহানবী (স.) মানবিক দূর্বলতা থেকে মুক্ত ছিলেন না। অর্থাৎ তিনি মানবিক দূর্বলতার বশীভূত হয়ে গুনাহ করেছিলেন।” [তরজমানুল কোরআন ৮৫ তম সংখ্যা, ২৩০পৃ.]
“মহানবী (স.) নিজে মনগড়া কথা বলেছেন এবং নিজের কথায় নিজেই সন্দেহ পোষন করেছেন।” [তরজমানুল কোরআন, রবিউল আউয়াল সংখ্যা, ১৩৬৫ হিজরী]
নবী-রাসুলগণ সকলেই মাসুম, তারা সকলেই নিষ্পাপ-এই হলো ইসলামী আকীদা। তবে জনাব আবুল আলা মওদুদী ইসলামের বদ্ধমূল এ আকীদার উপর কুঠারাঘাত করে এবং কুরআন ও সুন্নাহর চিরন্তন শিক্ষাকে পদদলিত করে আম্বিয়ায়ে কেরামের এ পূত পবিত্র জামাতের প্রতি কলংক লেপন করার উদ্দেশ্যে এমন ধৃষ্টতাপূর্ন কথা বলেছেন, যা কোন মুসলমানের পক্ষে বরদাশত করা সম্ভব নয়।
সকল নবী-রাসুল সম্পর্কে:
“ইসমত বা নিষ্পাপ হওয়াটা মুলত: নবীদের প্রকৃতিগত গুণ নয়।এখানে একটি সুক্ষ বিষয় এই যে, আল্লাহ তা’য়ালা ইচ্ছা করেই প্রত্যেক নবীর উপর থেকে কোন না কোন সময় তার হেফাজত উঠিয়ে নেন এবং তাদেরকে দু’একটি গুনাহে লিপ্ত হতে দেন। যাতে করে মানুষ যেন খোদা বলে ধারনা না করে এবং জেনে রাখে এরাও মানুষ।” [তাফহীমাত : ২য় খন্ড, ৪র্থ সংস্করন ৫৬/৫৭ পৃ. এবং নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ৭৪ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন অক্টোবর ১৯৯১ইং]
“বস্তুত: নবীগণ মানুষ হয়ে থাকেন এবং কোন মানুষই মু’মিনের জন্য নির্ধারিত সর্বোচ্চ মাপকাঠিতে সর্বদা অটল থাকতে সক্ষম হতে পারেনা। প্রায়শ:ই মানভীয় নাজুক মুহুর্তে নবীর ন্যায় শ্রেষ্ঠ মানুষও কিছুক্ষনের জন্য মানবিক দুর্বলতার সামনে পরাভূত হয়ে যান।” [তাফহিমুল কোরআন ২য় খন্ড, ৩৪৩-৩৪৪ পৃ. সংস্করন ১৯৯০ইং]
“কোন কোন নবী দ্বীনের চাহিদার উপর স্থির থাকতে পারেন নি। বরং তারা আপন মানবীয় দুর্বলতার কাছে হার মেনেছেন।” [তরজমানুল কোরআন, ৩৫ তম সংখ্যা : ৩২৭ পৃ.]
” অন্যদের কথা তো স্বতন্ত্র, প্রায়শ:ই পয়গম্বরগণও তাদের কু-প্রবৃত্তির মারাত্মক আক্রমনের সম্মুখিন হয়েছেন।” [তাফহীমাত : ২য় খন্ড, ৫ম সংস্করন ১৯৫ পৃ. এবং নির্বাচিত রচনাবলী(বাংলা) ২য় খন্ড, ২৮ পৃ, আধুনিক প্রকাশনী, ১ম সংস্করন ১৯৯১ইং]
আসুন নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে কিছু কথা জেনে নেই
১।মওদুদী সাহেব বলেছেন: “প্রত্যেক নবী গুনাহ করেছেন” (তাফহীমাত: ২য় খন্ড, পৃ:৪৩)
২। হযরত মুহাম্মদ (সা.) রিসালাতের দায়িত্ব পালনে ত্রুটি করেছেন, তাকে ক্ষমা প্রার্থনা করতে হবে। (তাফহীমুল কুরআন, সুরায়ে নসর এর তাফসীর)
৩।সাহাবায়ে কেরাম সত্যের মাপকাঠি নন এমনকি অনুকরণ-অনুসরণের যোগ্যও নন।(দস্তুরে জামাতে ইসলামী, পৃ, ০৭)
৪।হযরত আবু বকর (রা.) খিলাফতের দায়িত্ব পালনে সম্পুর্ণ অযোগ্য ছিলেন। (তাজদীদ ও ইয়াহইয়ায়ে দীন: ২২,)
৫।হযরত আলী (রা.) অন্যায় কাজ করেছেন (খেলাফত ও মুলুকিয়াত: ১৪৩)
*হযরত হোসাইন আহমদ মাদানী রহ. বলেছেন মওদুদী জামাত পথভ্রষ্ট; তাদের আক্বীদা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পরিপন্থী।
এই বইগুলো দেখুন-
১. ইতিহাসের কাঠগড়ায় হযরত মুয়াবিয়া (রাঃ) -জাস্টিস তাকী উসমানী (রশীদ কল্যান ট্রাস্ট)
২. মাওলানা মওদূদীর সাথে আমার সাহচার্যের ইতিবৃত্ত – মাওলানা মনজুর নোমানী (রহঃ) (ঐ)
৩. মওদূদী সাহেব ও ইসলাম -মুফতি রশীদ আহমাদ লুধীয়ানভী (রঃ) (দারুল উলুম লাইব্রেরী-৩৭,নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার)
৪. মওদূদীর চিন্তাধারা ও মওদূদী মতবাদ -ইজহারে হক ফাউন্ডেশান; প্রাপ্তিস্থানঃ (দারুল উলুম লাইব্রেরী-৩৭,নর্থব্রুক হল রোড, বাংলাবাজার)
৫. ফিতনায়ে মওদুদীয়াত – মাওলানা যাকারিয়া (রহ.)
৬. ভুল সংশোধন -মাওলানা শামসুল হক ফরিদপুরী (রহ.)
৭. সতর্কবাণী -মাওলানা মোহাম্মাদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর (রহ.)
৮. হক্ব বাতিলের চিরন্তন দ্বন্দ্ব- আল্লামা আহমাদ শফী, হাটহাজারী।
৯. ঈমান ও আক্বীদা -ইসলামিক রিসার্স সেন্টার, বসুন্ধরা।
১০. ফতোয়ায়ে দারুল উলূম (আংশিক)
১১. ইসলামি আকীদা ও ভ্রান্ত মতবাদ -মাওলানা মুহাম্মাদ হেমায়েত উদ্দীন(১১/১, বাংলাবাজার, ঢাকা)
১২. আহসানুল ফতোয়া
যাদের সত্য যাচাইয়ের প্রয়োজন তারা ইচ্ছে করলেই তা করতে পারেন।
ইনশাঅাাল্লাহ চলবে.....