Subscribe Us

হে পথিক ভবিষ্যৎ বলে কিছু নাই ,আসোল ভবিষ্যৎ হলো পরোকাল

খারিজি চিহ্নিতকরণ ও তাদের বৈশিষ্ট্য ৯ম ও শেষ পর্ব!

👉খারিজি চিহ্নিতকরণ ও তাদের বৈশিষ্ট্য ৯ম ও শেষ পর্ব!

আসসালা-মু 'আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লা-হি ওয়া বারাকা-তুহু
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআ'লা- জন্য এবং অসংখ্য সলাত সালাম বর্ষিত হোক সর্বশেষ নাবী রাসূল মুহাম্মাদ ﷺ-এর প্রতি
ওয়া'বাদ,
প্রিয় দ্বীনী ভাই বোনেরা,
আজকে আপনাদের সামনে তুলে ধরছি শায়খ ফায়সাল বিন কাজ্জার আল জাসিম হাফিয্বাহুল্লাহ কর্তৃক রচিত "খারিজি চিহ্নিতকরণ তাদের বৈশিষ্ট্য" সম্বলিত গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধের ৯ম শেষ পর্ব!
পর্বে থাকছে "আইএস সমমনা খারিজী দলগুলোর এর আক্বিদা (বিশ্বাস) এবং তাদের লক্ষ্যসমূহের সারসংক্ষেপ" নিয়ে সংক্ষিপ্ত আলোচনা!
আল কায়েদা এবং আইএস উভয়ে হচ্ছে চরমপন্থী দল যাদের আক্বিদা (বিশ্বাস) আদর্শ এবং লক্ষ্যসমূহ এক অভিন্ন সামান্য কিছু পার্থক্য ছাড়া!
যার মধ্যে রয়েছেঃ
সকল মুসলিম শাসকেরা হচ্ছে তাগুত,কাফের এই ধারণা সরাসরি আল-মওদুদী এবং কুতুবের শিক্ষা থেকে প্রাপ্ত
শরিয়াহ ছাড়া অন্য যেকোনো প্রকারের আইন ব্যবহার করা হচ্ছে কুফর, শাসক এক্ষেত্রে ইস্তিহলাল করে থাকুক বা না থাকুক (অর্থাৎ সে শরিয়াহর পরিবর্তে অন্য আইন ব্যবহার করা হালাল মনে করে থাকুক আর না থাকুক!

[
নোটঃ আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের আলিমগণ এই ব্যাপারে রায় দিয়েছেন যে শরিয়াহর জায়গায় অন্য আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে কুফর, কিন্তু সবক্ষেত্রে তেমনটা না- হতে পারে! আহলে সুন্নাহর অবস্থান হল, যে আল্লাহ' আইন দিয়ে বিচার করবে না সে কাফির, যদি তা হয় আল্লাহ' আইনকে অস্বীকার করার মাধ্যমে, অথবা আল্লাহ' আইন দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করতে নিজেকে বাধ্য মনে না করার কারণে, অথবা আল্লাহ' আইনকে যুগের জন্য অনুপযোগী মনে করার কারণে, বা আল্লাহ' আইনকে অপছন্দ করার কারণে, অথবা মানবরচিত কোন আইনকে আল্লাহ' আইনের চেয়ে উত্তম বা সমপর্যায়ের মনে করার কারণে, বা আল্লাহ' আইন ছাড়া অন্য কোন আইন দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করা হালাল মনে করার মাধ্যমে আর এসব কারণ ছাড়াই যদি কেউ আল্লাহ' আইন দিয়ে বিচারকার্য পরিচালনা করা থেকে বিরত থাকে, তাহলে আহলে সুন্নাহ তাকে কাফির ঘোষণা করে না, বরং আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাতের মতে তারা জালেম, অথবা ফাসিক্ব!
তবে আইএস,আল কায়েদা,বোকো হারামসহ সমমনা খারেজী দলগুলো এই পার্থক্যটা করে না]
যেই কাজের ব্যাপারে আলেমরা সর্বসম্মতভাবে যে তা কুফর, এবং যেই কাজের কুফর হওয়া সম্পর্কে আলেমরা মতভেদ করেছেন, এই দুইয়ের মধ্যে কোন তফাৎ নেই কুফরির সমস্ত কাজকে কুফর হিসাবেই ধরা হয়, অপরাধীর ভুল ইজতিহাদ অথবা অজ্ঞতার সম্ভাবনার কথা বিবেচনা না করেই
কাফিরদের সাথে মুআওয়ান্নাহ (একত্রে কাজ করা, যদিওবা তা কোন বৈধ শরিয়তসম্মত কারণে হয়), মুদাহানা (ইসলাম এবং মুসলিমদের কল্যাণের স্বার্থে চুক্তিবদ্ধ হওয়া) এবং তাআলুফ, এই তিনের মধ্যে কোন পার্থক্য নেইএর সবকিছুই কুফর
ইস্তিহলাল এবং দুর্বলতার কারণে গুনাহ করে ফেলার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই ( নং পয়েন্ট দ্রষ্টব্য)
জীবিত তাওয়াগিত (তাগুতের বহুবচন: আল্লাহ্ বিপরীতে যার আনুগত্য করা হয় এমন কিছু) হচ্ছে মৃত তাওয়াগিত থেকেও খারাপ, অর্থাৎ শাসকদের কুফর কবর পুজার থেকেও ঢের নিকৃষ্ট
তারা এমনকি এই সম্পর্কে একটা প্রবাদও চালু করেছে:
প্রাসাদসমূহের (কুসুর) শিরক হচ্ছে কবরসমূহের (কুবুর) শিরক থেকে খারাপ
শাসকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা হচ্ছে প্রত্যেক মুসলিমের জন্য ফারয আল-আইন (একটি আবশ্যকরণীয় কাজ)
যেই ইজতিহাদ বলে যে জিহাদের পরিস্থিতি এসে উপস্থিত হয়নি অথবা এমন ফাতওয়া যা জিহাদের শর্তগুলোকে সঙ্কুচিত করে দেয়, এমন ইজতিহাদ বাতিল এবং অগ্রহনযোগ্য
শাসকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করা, কুফফার অমুসলিদের বিরুদ্ধে জিহাদ করার চেয়েও বেশী গুরুত্বপূর্ণ, কারণ আমাদের প্রথমে মুসলিম ভূমিগুলোর প্রতিরক্ষা করতে হবে, একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে, এবং রিদ্দা (ধর্মত্যাগিতা) নির্মূল করতে হবে কেননা রিদ্দাহ হচ্ছে কুফর - অমুসলিমের চেয়েও খারাপ

আলেম, মন্ত্রী, সৈন্য, পুলিশ অফিসার সহ, সকল সরকারি কর্মচারী হচ্ছে তাদের সরকারের সাথে সম্পর্ক রাখার কারণে কাফির

[
নোটঃ আহলুস সুন্মাহর আলেমরা কাউকে ইসলামের গণ্ডির বাইরে ঘোষণা করার জন্য কতগুলো শর্তের কথা উল্লেখ করেছেন যেগুলো আদ-দাওয়াবিত আত-তাকফির নামে পরিচিত এগুলোর একটি নিয়ম বলছে যে কারও উপরে কোন বিধান কার্যকর করার আগে তার ভুল কোথায় হচ্ছে তা তার কাছে ব্যাখ্যা করে বলতে হবে
উপরের এই সবকিছু আত-তাওহিদ আল-হাকিমিয়্যাহ নামের বানোয়াট, মনগড়া প্রকারভেদের মধ্যে পরে!]

আজকের দিনের মুসলিম উম্মাহ হচ্ছে আবু বকরের সময়ের মতো, আবু বকর রাদিয়াল্লাহু আনহু যেমন মুরতাদ হয়ে যাওয়া কতগুলি গোত্রের সম্মুখীন হয়েছিলেন (তারাও তাই করছে) তারা মনে করে যে তাদের জনবিচ্ছিন্ন দল হচ্ছে আল-মদিনার মতো মুসলিমদের আবাসস্থল; এবং এর বাইরের প্রত্যেক শহর এবং দেশ আল-ইসলাম থেকে মুরতাদ হয়ে গিয়েছে এবং তাদের গন্তব্য হচ্ছে জাহান্নাম
এর ভিত্তিতে, গোটা দুনিয়া হচ্ছে দার আল-কুফর (এবং ক্ষেত্রবিশেষে দার আল-হারব) এর মধ্যে মক্কা এবং মদিনাও অন্তর্ভুক্ত
একজন গড়পড়তা মুসলিম চারটি ভাগের মধ্যে পড়ে: কাফির, মুরতাদ, মাস্তুর হাল এবং মাজহুল আল-হাল
হাল: অর্থাৎ, তাদের দেখলে মুসলিম মনে হয় কিন্তু তাদের বিশ্বাস/আনুগত্য অনিশ্চিত
মাজহুল আল-হাল: অর্থাৎ, এই ব্যক্তি তার বেশভূষায় মুসলিম নয় এবং তার কাজেকর্মেও তা প্রকাশ পায় না এরকম লোককে হত্যা করা এবং তার সম্পদ কেড়ে নেওয়া বৈধ
[
নোটঃ উল্লেখ্য যে, উপরের সমস্ত প্রকারভেদ এবং মনগড়া বিধিবিধান শুধুমাত্র এইজন্যেই দ্বীনের ভেতরে অনুপ্রবেশ করানো হয়েছে যাতে করে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা যায় এবং গণহত্যা চালানো যায়]
চুক্তি কিংবা অজুহাত বলতে কিছু নেই যে কেউ খলিফার হুকুম অথবা মুসলিমদের জামাতকে অমান্য করবে, তার সাথে লড়াই করে তাকে হত্যা করা যাবে
[
অতএব তারা বিশ্বাস করে যে নেতৃত্বের অধিকার একমাত্র তাদেরই আছে এবং কেউ যদি এব্যাপারে দ্বিমত পোষণ করে তাহলে তাদেরকে অবশ্যই ধর্মত্যাগের অভিযোগে হত্যা করতে হবে
-
মিথ্যা বলা, ছলচাতুরী করা, এবং প্রতারনা করা, এসব যুদ্ধের অংশ হিসেবে বৈধ এজন্য নিজের মতাদর্শ গোপন রেখে কাফেরদের দেশে গিয়ে সেখানে হামলা করা বৈধ!]

[
নোটঃ এটা স্পষ্টতই জিহাদের শর্তসমূহের লঙ্ঘন, যা দাবি করে যে একজন ইমাম থাকা আবশ্যক যুদ্ধ হতে হবে ময়দানে (জনশূন্য স্থানে) (ব্র্যাকেটের কথাটা ঠিক আছে তো?]

সমস্ত শাসকরা হয় কুফফার, মুরতাদ, নয়তো মুনাফিক তাদের জনগণের অবস্থাও ওই একই!
[
বিঃদ্র- তারা এমন ফাতওয়াও দিয়েছে যে শুধুমাত্র কোন দেশের ভিসা অথবা জাতীয়তা ধারণ করাই একজনকে কাফির বানিয়ে দেয় তাদের কেউ কেউ এমনও বলেছে যে শুধুমাত্র একটি পতাকা উত্তোলন করলেই একজন কাফির হয়ে যায়! ]
আলেমরা হচ্ছেন মুনাফিক এবং তাদের ফাতওয়াসমূহ বাতিল এবং অগ্রহণীয়!
কবিরা গুনাহ মানুষকে ইসলাম থেকে বের করে দেয় সুদ, যিনা, ঘুষ, এবং খলিফাকে আনুগত্য না দেয়া, এর সবকিছু হচ্ছে কুফর
মহিলা, শিশু এবং বৃদ্ধ, এরা সবাই হত্যার জন্য উপযুক্ত এবং তাদের অন্তরে কি আছে তা বিবেচনা করা হবে না
অমুসলিমদের হত্যা করা বৈধ, যদিওবা তারা যিম্মি হয় (ইসলামি রাষ্ট্রের অমুসলিম নাগরিক), মুসতামান (এমন কেউ যাকে মুসলিম রাষ্ট্র নিরাপত্তা দিয়েছে), অথবা মুআহাদ (এমন কেউ যার সাথে কোন মুসলিম দেশের সন্ধি রয়েছে) হয় এবং তাদেরকে অধিক সংখ্যায় হত্যা করা হচ্ছে অধিক সওয়াবের কাজ!

কেউ নাগরিকত্ব রাখলে এর মানে হচ্ছে যে সে কুফরের উপর সন্তুষ্ট তাই তার সম্পদ, তার সম্মান এবং তার রক্ত, এর সবকিছু বৈধ এবং এমন প্রত্যেকে মুরতাদ হিসাবে গণ্য হবে যেহেতু তারা কুফফারদের সাথে মেশা এবং বসবাস করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে

ভিসা সংগ্রহ করা কোন চুক্তি (আমানাহ) নয়; আর যদি তা চুক্তি হয়েও থাকে তাহলেও তা প্রতারনার মাধ্যমে সংগ্রহ করা বৈধ এর শর্ত রক্ষা করার কোন প্রয়োজন নেইযাতে করে খুন-খারাবি এবং গণহত্যা চালানো যায়!

এই হল তাদের (সমমনা খারিজী সংগঠনগুলোর) মৌলিক আক্বিদা (বিশ্বাস) মানহাজ (কর্মনীতি)

► [
শায়েখ ফয়সাল বিন কাযযার আল জাসিম (হাফিযাহুল্লাহ) এর রচিত, ‘উসুল আল-ফিকরিয়্যাহ লি তানসিইমি দায়েশ ওয়া আল-কায়েদাথেকে অনুবাদিত]
নিশ্চয় আল্লাহই পারেন পথভ্রষ্টদের পথ দেখাতে এই দীর্ঘ আলোচনায় কারো যদি কোনো উপকার হয়ে থাকে, নিশ্চয়ই তার সকল প্রশংসা আল্লাহর! আর যদি এই আলোচনায় কোনো ভ্রান্তি থাকে তা নিশ্চয়ই আমাদের সীমাবদ্ধতা!
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
মুলঃ শাইখ ফায়সাল আল জাসিম
অনুবাদঃ আবু আবরার
সম্পাদনাঃ আখতার বিন আমীর

Post a Comment

0 Comments