ভূমিকাঃ
পানিতে ডুবন্ত একজন মানুষ যেভাবে বাঁচার শেষ চেষ্টা হিসেবে খড়কুটো আঁকড়ে ধরে, মরুভূমিতে দিক হারানো ক্ষুৎপিপাসায় কাতর ব্যক্তি যেভাবে মরীচিকাকে নিজের জীবন রক্ষার শেষ অবলম্বন মনে করে, ফলস্বরুপ সে দ্রুত মৃত্যুমুখে পতিত হয়। কারণ খড়কুটো কিংবা মরীচিকার ভরসায় নিজেকে সপে দিয়ে সে তার নিজের ধ্বংস ত্বরান্বিত করেছে।
ঠিক তেমনিভাবে বর্তমানে পরাজিত ও বিপর্যস্ত মুসলিম উম্মাহর বিরাট একটি অংশ নিজেদের সামনে আশার আলো দেখতে না পেয়ে এমন ব্যক্তিদেরকে উম্মাহর আশা-আকাংখা বাস্তবায়নের কাণ্ডারি হিসেবে কল্পনা করে নিচ্ছে,যারা কোনোভাবেই উম্মাহর কাণ্ডারি হওয়ার যোগ্য নয়। বরং তাদের কেউ কেউ সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে কুফফারদের লড়াইয়ের সহযোগী। ফলশ্রুতিতে উম্মাহ আরো দ্রুত ধ্বংসের অতলে তলিয়ে যাচ্ছে। উপরে উঠার কল্পনা করতে গিয়ে আরো নিচে নেমে যাচ্ছে।
আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি, মালয়েশিয়ার মাহাথির মুহাম্মদকে মুসলিম উম্মাহর নেতা বানিয়ে ব্যাপক প্রচার প্রচারণা চালানো হয়েছে। অথচ মাহাথির মুহাম্মদ কথিত মডারেইট বা উদার-সহনশীল ইসলামের একজন প্রবক্তা। ইসলামী আইনের বিভিন্ন বিষয়কে পশ্চিমাদের অনুকূলে ব্যবহারের জন্য সে বহু মনগড়া বক্তব্য পেশ করেছে। প্রকৃত শরী’আহ বাস্তবায়ন করাকে সে উগ্রতা মনে করত।
আমরা যারা ইসলাম নিয়ে রাজনীতি কম বুঝি (জিহাদ বিমুখ লোকদের ভাষায়। অবশ্য ইসলামের নাম ব্যবহার করে ইসলাম বিমুখ এই রাজনীতি বুঝার প্রয়োজনও নেই !) তারা যখন মাহাথির মুহাম্মদকে উম্মাহর কাণ্ডারি হিসেবে অযোগ্য মনে করতাম,তখন সেসব রাজনীতিজ্ঞ ব্যক্তিদের কাছ থেকে নির্মম উপহাস পেয়েছি। পশ্চাদপদ,বাস্তবতা বুঝি না,আধুনিক বিশ্ব রাজনীতির মারপ্যাঁচ জানি না, হিকমাহ বুঝি না ইত্যাদি সবকতো আমরা নিয়মিতই পেয়েছি।
অতঃপর মাহাথির ফ্যান্টাসি শেষ হলে নতুন কাণ্ডারি হিসেবে আবির্ভূত হয় ইরানের প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আহমাদিনেজাদ। সারা বিশ্বের মুসলিমদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া, আল-আকসা উদ্ধার করা, ইসরায়েলকে পৃথিবির মানচিত্র থেকে মুছে দেওয়া সহ মুসলিমদের বিভিন্ন বিষয়ে সে বহু চমকপ্রদ ও চিত্তাকর্ষক বক্তব্য আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামে পেশ করেছে। এই আহমাদিনেজাদকে খুলাফায়ে রাশেদীনের সাথে তুলনা দিতেও দেখা গেছে ! আমরা যখন বলতাম, প্রথমতঃ সে একজন শিয়া। শিয়াদের বেশিরভাগ গ্রুপই স্পষ্ট কুফুরিতে লিপ্ত এবং দলগতভাবে কাফির দল। আহমাদিনেজাদের অবস্থাও এর থেকে ভিন্ন নয়। দ্বিতীয়তঃ ইরান একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র এবং আহমাদিনেজাদ গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট। ফলে তার দ্বারা মুসলিমদের নেতৃত্ব দেওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই।
তখন আমাদেরকে বলা হতো, এই আপনাদের জন্যই মুসলিমরা পিছিয়ে আছে ! আপনারা মুসলিম উম্মাহর কোনো ব্যক্তিকে উঠতেই দেন না। যে আসে তারই সমালোচনা করতে থাকেন ! মুসলিমদের পক্ষে আহমাদিনেজাদের মতো এতো স্পষ্টবাদী কোনো নেতা পৃথিবীতে আছে !!! আপনারা আসলে বিশ্ব-রাজনীতির প্রেক্ষাপট বুঝেন না !!
অতঃপর আহমাদিনেজাদ ফ্যান্টাসি শেষ হলে আসলো মুরসি ঝড়। এই ঝড়ে পারলে গণতান্ত্রিক ইসলামী দলগুলো গ্লোবাল জিহাদকে যাদুঘরে পাঠিয়ে পৃথিবী জুড়ে তাদের কল্পিত গণতান্ত্রিক ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করে ফেলে। মুরসি ছিলো অনেকের স্বপ্নের নায়ক। হাফিযে কুরআন মুরসী ! রাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হয়ে সলাতের ইমামতি করেন মুরসি ! এটি কী পৃথিবীর অন্য কোনো প্রেসিডেন্টের দ্বারা সম্ভব হয়েছে !! তারা এটিকে খুলাফায়ে রাশেদীনের সাথে মিলানোর ধৃষ্টতা দেখাতো।
আমরা যখন বলতামঃ মুরসি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত একটি ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের অধীনে নির্বাচিত একজন প্রেসিডেন্ট। তদুপরি মিসরে তখনো চরম ইসলাম বিদ্বেষী, কুফুরী শক্তির প্রকাশ্য এজেন্ট সেনাবাহিনী বহাল তবিয়তে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে অবস্থান করছে। ফলে মুরসির দ্বারা আসলে কখনোই ইসলামী শরীয়ত বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। (অবশ্য মুরসি অন্যদের থেকে কিছুটা ভিন্নতর। মুরসি মিসরে একটি ইসলামী সংবিধান তৈরির চেষ্টা করেছিল। এছাড়া ফিলিস্তিনের মুসলিমদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিল এবং ইসরায়েলের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য অবস্থান নিয়েছিল। আর এসব কারণেই ১ বছরের মাথায় আমেরিকা ও ইসরায়েলের ঘনিষ্ঠ সহযোগী মুরতাদ সেনাবাহিনী মুরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে।)
এমতাবস্থায় আমাদেরকে সেই পুরোনো বয়ান শোনানো হতো। রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ না বুঝা ! হিকমাহ না থাকা !! খালি জিহাদ জিহাদ করা ইত্যাদি ইত্যাদি !!!
সেই মাহাথির মুহাম্মদ, সেই আহমাদিনেজাদ, সেই মুরসিদের কল্পিত নেতৃত্ব আজ কোথায় ! স্বপ্নীল উত্থানের ফেনীল বুদবুদ হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে। কারণ এসব হেয়ালি ভাবনার পেছনে না ছিলো ইসলামী শরীয়ত আর না ছিলো ইসলামের সঠিক ইতিহাসের নিরিখে কোনো প্রজ্ঞাপূর্ণ চিন্তা। ফলে কথিত সেইসব খলীফা ও সুলতানদের নাম এখন যাদুঘরে স্থান করে নিয়েছে। অপরদিকে মুসলিম উম্মাহর দুর্দশা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।
মাহাথির মুহাম্মদ, আহমাদিনেজাদ ও মুরসির ফ্যান্টাসি শেষ হতে না হতেই আরেক নতুন ফ্যান্টাসি এসে হাজির হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষ তুরষ্কের আত্মস্বীকৃত ধর্মনিরপেক্ষ গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্ট রিসেপ/রজব তায়েব এরদোগান। এখানেও সেই পুরোনো বয়ান, সেই পুরোনো ফ্যান্টাসি। এ যামানার অবিসংবাদিত নেতা ! যামানার সুলতান ! ভবিষ্যৎ খলিফা ! আরো কত কী !!
এ যাত্রায়ও আমরা স্পষ্টভাবেই বলছি, একটি ন্যাটোর সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে সরাসরি ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের ধর্মনিরপেক্ষ ও গণতান্ত্রিক প্রেসিডেন্টকে আমরা শরীয়ত কিংবা আকল কোনো দিক থেকেই মুসলিম উম্মাহর কাণ্ডারি ভাবতে পারছি না। কাগজে বানানো বিমানে মহাকাশ পাড়ি দেয়া কিংবা বেলুনের নৌকায় সমুদ্র পাড়ি দেয়া যেমন অসম্ভব ও কাল্পনিক, ঠিক তেমনি একজন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিকে মুসলিম জাতির আগামী দিনের খলীফা/সুলতান ভাবা অদ্ভুত ও অবাস্তব।
কিন্তু ‘ফ্যান্টাসি কিংডম’ এ বাস করা ব্যক্তিরা আমাদেরকে সেই পুরোন বয়ান শোনাচ্ছেন। হাফিযে কুরআন ! মুসলিমদের পক্ষে সোচ্চার কন্ঠ !! আরাকানসহ বিশ্বের নিপীড়িত মুসলিমদের পক্ষে উচ্চ কন্ঠের দৃপ্ত আওয়াজের অধিকারী এরকম আর কেউ আছে কী !!!
পুরোনো রাজনৈতিক মারপ্যাঁচ, হিকমাহ ইত্যাদি স্লোগান ঠিক আগের মতোই হুবহু আছে।
আমাদের মানদণ্ড যেহেতু আল্লাহ প্রদত্ত এমন নীতিমালা, যা সব ধরণের সংশয়ের ঊর্ধ্বে। তাই আমরা বারবার ধোঁকায় পতিত হই না, আলহামদুলিল্লাহ্। গণতান্ত্রিক কিংবা ধর্মনিরপেক্ষ নেতাদের দিকে তাকিয়ে আশার ফানুস তৈরি করি না বরং দ্বীন ও শরীয়তের জন্য নিজেদের জান-মাল দিয়ে এক চূড়ান্ত লড়াইয়ে নিয়োজিত দুনিয়ার মুজাহিদদেরকে উম্মাহর নেতা মনে করি। ফলাফল পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ বর্গকিলোমিটার ভূমিতে আল্লাহর শরী’আহ কায়েম, আলহামদুলিল্লাহ্।
উদাহরণস্বরুপঃ শুধুমাত্র সোমালিয়ায় আল-কায়েদার শাখা আল-শাবাবের অধীনে আড়াই লাখ বর্গকিলোমিটারের বেশি এলাকায় পূর্ণ শরী’আহ কায়েম আছে, আলহামদুলিল্লাহ্। এছাড়া তালিবানদের নিয়ন্ত্রণে থাকা আফগানিস্তানের প্রায় ৭০% এলাকা, ইয়েমেনের মধ্যাঞ্চলে বেশ কিছু এলাকা এবং মালির বিস্তীর্ণ ভূমিতে মুজাহিদদের নিয়ন্ত্রণে আল্লাহর শরী’আহ বাস্তবায়িত হচ্ছে, আলহামদুলিল্লাহ্।
আর মুমিনদের জন্য একই গর্ত থেকে দু’বার দংশিত হওয়া শোভা পায় না। এটি মুমিনদের বৈশিষ্ট্য নয়। আল্লাহর রাসূল সাঃ বলেছেন, “মুমিন ব্যক্তি একই গর্ত থেকে দু’বার দংশিত হয় না।” (সহীহ বুখারী)
কিন্তু মাহাথির মোহাম্মদ, আহমাদিনেজাদ, মুরসি ও এরদোগানরা গণতন্ত্রের ঘোড়ায় চড়ে এক সেকেন্ডের জন্যও পৃথিবীর এক হাত জায়গায় আল্লাহর শরী’আহ কায়েম করতে পারেনি বা করেনি। বরং এরদোগানতো ধর্মকে রাষ্ট্র থেকে আলাদা তথা সেক্যুলারিজম/ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসী। সুবহানাল্লাহ্ !!
অথচ এই শ্রেণির লোকেরা প্রতিনিয়তই এক ফ্যান্টাসি থেকে অপর ফ্যান্টাসি, এক ধোঁকা থেকে অপর ধোঁকায় পতিত হচ্ছে এবং উম্মাহর এক বিরাট শ্রেণিকে বিভ্রান্ত করে রাখছে। ফলে এসব বিভ্রান্তির বেড়াজাল ছিন্ন করতে আল্লাহ প্রদত্ত শরী’আর বিধানের আলোকে তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের কর্মকান্ড এবং তার হুকুম জানা জরুরি। শুধুমাত্র আল্লাহর শরী’আহ সমুন্নত রাখতে এবং উম্মাহকে বিপথগামীতার মরীচিকা থেকে মুক্ত করার চেষ্টার অংশ হিসেবে এ বিষয়ে লেখা। কোনো দল,মত,গোষ্ঠীর প্রতি বিদ্বেষবশতঃ বিরোধীতা করা থেকে আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে হিফাযত করুন।
*** এরদোগান ও ধর্মনিরপেক্ষতাঃ
ইসলামের মৌলিক আকীদা সম্পর্কে যারা অবগত আছেন, তারা জানেন যে, কুরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত কোনো বিষয়কে সজ্ঞানে অস্বীকার করলে কিংবা ইসলামের বহির্ভূত অথবা বর্তমানে আমলযোগ্য নয় মনে করলে সে ব্যক্তি ইসলামের গণ্ডি থেকে বের হয়ে যায়। আহলুস সুন্নাহর সকল যুগের সকল আইম্মায়ে কিরাম ও উলামাগণ এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। এ ব্যাপারে কারো কোনো দ্বিমত নেই।
দ্বীনের একাংশকে বা বিরাট অংশকে অস্বীকার করার বর্তমান দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ঈমান বিধ্বংসী কুফুরী মতবাদের নাম হচ্ছে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ। ধর্মনিরপেক্ষতাবাদের সুস্পষ্ট এবং অকাট্য বক্তব্য হচ্ছে, ইসলাম শুধুমাত্র ব্যক্তি জীবনে থাকবে। রাষ্ট্র ও সমাজ জীবনে থাকবে না। অর্থাৎ ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে কুরআন-সুন্নাহতে রাষ্ট্র,সমাজ,অর্থনীতি, আন্তর্জাতিক নীতি সংক্রান্ত সকল বিধানকে সুস্পষ্টভাবে এবং প্রকাশ্যে অস্বীকার করা হয়।
এই আকীদা রাখা শুধু এক কারণে বা একটি কুফর নয় বরং ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে ইসলামের শত-সহস্র বিধানকে সরাসরি অস্বীকার করা করা হয়, যার প্রত্যেকটি একেকটি কুফরে আকবার তথা ইসলাম থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট।
কিন্তু অতীব আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাস করেন । তিনি বিশ্বাস করেন ধর্ম রাষ্ট্র থেকে আলাদা থাকবে। যারা এরদোগানকে মুসলিমদের কাণ্ডারি কিংবা ভবিষ্যৎ মুসলিম জাতির খলিফা ইত্যাদি বিভিন্ন অভিধায় ভূষিত করে অলীক কল্পনার ফানুস উড়াচ্ছেন,তাদের উচিৎ এরদোগানের মুখ থেকে তার ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী আকীদা জেনে নেওয়া।
ভিডিও সাক্ষাৎকারে ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাপারে তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান.......
“ব্যক্তি কখনো ধর্মনিরপেক্ষ হতে পারে না। রাষ্ট্র ধর্মনিরপেক্ষ হবে। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ধর্মনিরপেক্ষতা মানে সকল ধর্মের প্রতি সহনশীল হওয়া। ধর্মীয় ব্যাপারে রাষ্ট্র নিরপেক্ষ থাকবে এবং রাষ্ট্র সকল ধর্ম ও বিশ্বাস থেকে সমান দূরত্বে থাকবে। এটি কী ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক ?.................... ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাপারে এটিই আমাদের বুঝ। ”
এরদোগানের ধর্মনিরপেক্ষতা ও পশ্চিমা কাফিরদের ধর্মনিরপেক্ষতার মধ্যে কোনো তফাৎ আছে কিনা এবার চিন্তা করে দেখুন ?
সৌদি আরবে রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়ে সৌদি চ্যানেল আল-আরাবিয়্যার চ্যানেলের সাথে দেওয়া সাক্ষাৎকার দেখুন......
http://bit.ly/2DpNlhL (ইংরেজি সাব-টাইটেল)
আল-আরাবিয়্যার চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিও সাক্ষাৎকারের উপরোক্ত অংশ...... (আরবী)
http://bit.ly/2FPOh3X
সাক্ষাৎকারের পুরো ভিডিও দেখুন……. (আরবী)…. http://bit.ly/2DpNlhL
এছাড়া এরদোগানের সেক্যুলারিজমের সংজ্ঞাটি অন্য একটি বক্তব্যে দেখুন....... (বাংলা সাবটাইটেল) ....... http://bit.ly/2HxxEYh
*** এরদোগান কর্তৃক খ্রিস্টানদের চার্চ উদ্বোধনঃ
তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট তার ধর্মনিরপেক্ষতার প্রমাণ হিসেবে গত (২০১৮) জানুয়ারি মাসে রাজধানী ইস্তাম্বুলে খ্রিস্টানদের একটি চার্চ উদ্বোধন করেছে !!!
শুধু এরদোগান সরকারের নিজস্ব মিডিয়ার প্রমাণগুলো দেখুন ।
এরদোগানের নিজস্ব তথা সরকারি মিডিয়া ‘আনাদলু এজেন্সি’ এর পোস্ট করা ভিডিওতে চার্চ উদ্বোধন নিজ চোখে দেখে নিন....... http://bit.ly/2pdhX0Q
‘আনাদলু এজেন্সি’ এর নিউজ..... (ইংরেজি)...... http://bit.ly/2FStvAM
একই মিডিয়া কর্তৃক চার্চ উদ্বোধনের সচিত্র ছবি রিপোর্ট...... http://bit.ly/2pbPitL
তুরষ্কের সরকারি ও জাতীয় মিডিয়া TRT বা তুর্কিশ রেডিও এন্ড টেলিভিশন এর ওয়েবসাইটে প্রচারিত নিউজ থেকে চার্চ উদ্বোধনের সরকারি ও অফিসিয়াল নিউজ দেখুন..... (ইংরেজি)
http://bit.ly/2DrpRbR
নিউজটি আরবী ভাষায় ছবিসহ দেখতে তুরষ্কের সরকারি ও জাতীয় মিডিয়া TRT এর সাইটের আরবী ভার্সন দেখুন....... http://bit.ly/2FA2brI
(ইস্তাম্বুলে খ্রিস্টানদের চার্চ উদ্বোধন করছেন এরদোগান)
*** ন্যাটো, ইহুদী-খ্রিস্টান ও অন্যান্য কাফিরদের সাথে এরদোগানের সম্পর্কঃ
তুরষ্ক ন্যাটোর সদস্য একটি রাষ্ট্র। ন্যাটোর সদস্য হিসেবে ন্যাটোর সকল সামরিক কর্মকাণ্ডের প্রতি তুরষ্কের সমর্থন ও সহযোগিতার স্বীকারোক্তি তুরষ্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত বক্তব্য থেকে পড়ে নেয়া যেতে পারে।
লিংক..... http://www.mfa.gov.tr/nato.en.mfa
★★★ মুসলিমদের হত্যার জন্য আমেরিকাকে তুরষ্কের বিমানঘাঁটি প্রদানঃ
তুরষ্কের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিমানঘাঁটি 'ইনসারলিংক' আমেরিকাকে প্রদান করেছে তুরষ্ক। আর আমেরিকা এই বিমানঘাঁটি ব্যবহার করে ইরাক-সিরিয়ায় নির্বিচারে মুসলিমদের হত্যা করে যাচ্ছে।
এই 'ইনসারলিংক' বিমানঘাটি চরম ইসলাম বিদ্বেষী বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল ট্রাম্পের জন্যও নিশ্চিত করে দিয়েছে এরদোগান !! মার্কিন সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইট থেকেই দেখুন.....
http://tinyurl.com/hrvoccc
★★★ আফগানিস্তানে আগ্রাসন ও তালিবান মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে তুরষ্কঃ
আফগানিস্তানে তালিবানদের প্রতিষ্ঠিত ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে আমেরিকার নেতৃত্বে কুফফার জোট ন্যাটোর আগ্রাসনে (২০০১ থেকে বর্তমান) তুরষ্ক ৩য় সর্বোচ্চ সংখ্যক সৈন্য প্রেরণ করেছিলো।
উইকিপিডিয়া থেকে দেখুন..... http://bit.ly/2cIJPSe
আফগানিস্তানে ক্রুসেডার কুফফার জোট ন্যাটোর আগ্রাসনে ৬৫৯ জন সৈন্য বহাল রেখে সৈন্য সংখ্যার দিক থেকে এখনো তুরষ্ক ৫ম অবস্থানে আছে (পূর্বে ৬ষ্ঠ অবস্থানে ছিল।)। এর নগদ প্রমাণ পেতে নিচের লিংকে ক্লিক করে ন্যাটোর ওয়েবসাইট থেকে পিডিএফ ফাইলটি ডাউনলোড করে নিজের চোখে দেখে নিন।
ন্যাটোর ওয়েবসাইট থেকে দেখুন..... http://bit.ly/2E8kjnG
★★★ সোমালিয়ায় মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আমেরিকা ও কুফফার জোটের সহায়তায় তুরষ্ক ও এরদোগানঃ
এরদোগানের এই তুরষ্ক সোমালিয়ায় আল-কায়েদার শাখা আল-শাবাব মুজাহিদদের বিরুদ্ধে সরাসরি সৈন্য পাঠিয়ে এবং সামরিক ঘাঁটি করে ক্রুসেডার আমেরিকা, জাতিসংঘ,আফ্রিকান ইউনিয়ন এবং মুরতাদ বাহিনীকে সামরিক-অর্থনৈতিক সব ধরণের সহায়তা করছে। সেখানে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে মুরতাদ বাহিনীকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিচ্ছে তুরষ্ক।
তুরষ্ক সোমালিয়ায় কী করছে এবং কী চায়, তা তুরষ্কের উপরোক্ত সরকারি মিডিয়া থেকেই জানা যাক...
গত ১ অক্টোবর,২০১৬ তারিখে “Anadolu Agency”র এক নিউজের হেডলাইন ও সাব-হেডলাইনে বলা হয়,
“Turkey to open military training base in Somalia-
Turkish officers will train over 10,000 Somali National Army soldiers to fight al-Shabaab terror group”
অর্থাৎ তুরষ্ক সোমালিয়ায় সামরিক প্রশিক্ষণ ঘাঁটি খুলতে যাচ্ছে- তুরষ্কের সামরিক অফিসাররা আল-শাবাব সন্ত্রাসী গ্রুপের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে ১০,০০০ (দশ হাজার) সোমালি ন্যাশনাল আর্মিকে প্রশিক্ষণ দিবে।”
এরদোগান সরকারের নিজস্ব মিডিয়া “Anadolu Agency”র লিংক... http://bit.ly/2IrgTPx
অর্থাৎ তুরষ্ক খুব স্পষ্টভাবে জানিয়েছে, তারা সোমালিয়ায় আল-শাবাব মুজাহিদদের প্রতিষ্ঠিত শরী’আহ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আমেরিকা,জাতিসংঘ এবং কুফফার আফ্রিকান ইউনিয়নের সরাসরি মদদপুষ্ট দালাল-মুরতাদ সরকারকে সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য এই বিরাট সামরিক ঘাঁটিটি স্থাপন করেছে। সামরিক প্রশিক্ষণসহ তুরষ্ক সার্বিকভাবে এই মুরতাদ সরকারকে মুজাহিদদের বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ সহায়তা করে যাচ্ছে।
এমনকি আল-শাবাব মুজাহিদদের সম্মানিত আমীর কিছুদিন পূর্বে এক বার্তায় তুরষ্ককে সোমালিয়ার মুসলিমদের শত্রু বলে আখ্যা দিয়েছেন।
গুগল সার্চে বিভিন্ন মিডিয়া থেকে জেনে নিন...... http://bit.ly/2tNyzl7
*** এরদোগানের সরকার ও সেনাবাহিনী সোমালিয়ার দালাল-মুরতাদ সেনাবাহিনীকে ৪৫০ টি অত্যাধুনিক MPT-76 অস্ত্র প্রদান করেছে। এরদোগানের নিজস্ব ও সমর্থিত ৩ টি মিডিয়া থেকে এই নিউজের অকাট্য প্রমাণ নিয়ে নিন........ এই অস্ত্র প্রদান অনুষ্ঠানে সোমালিয়ার দালাল প্রেসিডেন্ট, তুরষ্কের রাষ্ট্রদূত এবং তুরষ্কের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিল। (নিচের ছবিতে দেখুন)
(আল-শাবাব মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য সোমালিয়ার দালাল-মুরতাদ সরকারকে অত্যাধুনিক অস্ত্র দিচ্ছে তুরষ্ক)
প্রমাণ-১। ‘আনাদলু এজেন্সি’ এরদোগানের সরকারি তথা নিজস্ব মিডিয়া থেকে প্রমাণ.....A total number of 450 rifles were delivered to Somalia, which is dealing with an insurgency.
লিংক..... http://bit.ly/2pb0ZAY
প্রমাণ-২। তুরষ্কের এরদোগানপন্থী মিডিয়া..... http://bit.ly/2pbBsaD
প্রমাণ-৩। এরদোগানপন্থী আরেকটি মিডিয়া.... A total of 450 rifles were delivered to Somalia, which is dealing with an insurgency.
লিংক..... http://bit.ly/2FKqcsk
★★★ আমেরিকার সাথে মিলে ইরাক-সিরিয়ায় মুসলিমদের হত্যায় এরদোগানের তুরষ্কঃ
২০১৪ সাল থেকে তুরষ্ক আমেরিকার সাথে মিলে আইএসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের নামে ইরাক-সিরিয়ায় বহু নিরীহ মুসলিমকে হত্যা করে যাচ্ছে। দেখুন...... উইকিপিডিয়া থেকে..... http://bit.ly/2palihF
*** সিরিয়ায় আমেরিকার সৈন্য+বিমানের সহায়তায় তুরষ্কের আইএস বিরোধী যুদ্ধের নামে অসংখ্য নিরীহ মুসলিমদের হত্যা করে যাচ্ছে। (২০১৬-২০১৭ সাল)
আমেরিকার সাথে মিলে হামলা করার প্রমাণ.......
১। ওয়াশিংটন পোস্ট........ http://tinyurl.com/htdzyj6
২। ভাইস নিউজ...... http://tinyurl.com/jvennst
এছাড়া রাশিয়ার সাথে মিলে সিরিয়ার আল-বাবে তুরষ্কের নির্বিচার বিমান হামলায় বহু নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছে। তুরষ্কপন্থী সিরিয়ান মিডিয়া Orient news থেকেই তেমন একটি প্রমাণ দেখুন...... http://bit.ly/2GrkRHm
★★★ ইসরায়েল-তুরষ্ক সম্পর্কঃ
ইসরায়েলের সাথে তুরষ্কের রয়েছে গভীর সম্পর্ক। তুরষ্কে ইসরায়েলের ১ টি দূতাবাস ও দু’টি কনস্যুলেট রয়েছে এবং ইসরায়েলেও তুরষ্কের ১ টি দূতাবাস ও ১ টি কনস্যুলেট রয়েছে। অথচ ইসরায়েলের সাথে অধিকাংশ মুসলিম দেশের কূটনৈতিক,বাণিজ্যিক কোনো ধরণের যোগাযোগ নেই। যেমনঃ ইসরায়েলের সাথে বাংলাদেশের কূটনৈতিক,বাণিজ্যিক কোনো ধরণের সম্পর্ক নেই।
প্রমাণ.... http://bit.ly/2FM6uAl
কিন্তু এরদোগানের তুরষ্কের সাথে ইসরায়েলের কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সবধরণের সম্পর্ক রয়েছে। ইসরায়েলের সাথে তুরষ্কের বাণিজ্য দিন দিন বেড়ে চলছে। এমনকি অধিকাংশ সময় ইসরায়েলের সাথে আমদানি-রপ্তানীর ক্ষেত্রে শীর্ষ ১০ টি দেশের মধ্যে তুরষ্ক একটি দেশ।
ইসরায়েলের সাথে বাণিজ্যের পরিমাণ নিয়ে তুরষ্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্যগুলো দেখে নিন.....
http://bit.ly/2j5HREC
*** তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগান ইসরায়েলের ব্যাপারে বলেন,
“Israel is in need of a country like Turkey in the region. We have to admit that we also need Israel,”
অর্থঃ “অত্র অঞ্চলে তুরষ্কের মতো দেশের ইসরায়েলের প্রয়োজন রয়েছে। আমাদেরকেও স্বীকার করতে হবে যে, আমাদেরও ইসরায়েলকে প্রয়োজন।”
তুরষ্কের একটি পত্রিকা থেকে প্রমাণ..... http://bit.ly/2HHt0H2
ইসরায়েলের পত্রিকা হারেটজ থেকে প্রমাণ.... http://bit.ly/2GEgPvk
*** ইসরায়েলের আগুন নিভাতে এরদোগান কর্তৃক বিমান প্রেরণঃ
আরাকান ও দুনিয়ার দিকে দিকে মুসলিমদের কলিজা ফাটা আর্তনাদের সাড়ায় কোনো বিমান সেতো ‘বহুত দূর কী বাত’, কিন্তু ২০১৬ সালে ইহুদীবাদী ইসরায়েলের বিভিন্ন এলাকায় আগুন লাগলে তা নিভানোর জন্য বিমান পাঠিয়ে দিলো তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়েব এরদোগান ! আহ ! ইসরায়েলের সাথে কী অকৃত্তিম বন্ধুত্ব ! এই অসামান্য বন্ধুত্বের জন্য ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু এরদোগানকে ধন্যবাদও জানিয়েছে।
ইসরায়েলে বিমান পাঠানোর ব্যাপারে এরদোগানের সরকারি মিডিয়া ‘আনাদলু এজেন্সি’র অফিসিয়াল টুইটার থেকে..... http://bit.ly/2pb6ejU
‘আনাদলু এজেন্সি’র ওয়েবসাইট থেকে দেখুন.... https://v.aa.com.tr/692324
(এরদোগানের সরকারি মিডিয়া ‘আনাদলু এজেন্সি’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ছবি)
শুধু তাই নয় বরং সিরিয়ায় জিহাদ করতে যাওয়ার সময় তুরষ্ক ইসরায়েলের নাগরিক একজন মুসলিম নারীকে গ্রেপ্তার করে ইসরায়েলের কাছে হস্তান্তর করেছে।
*** ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সহায়তার বিধানঃ
যেহেতু তুরষ্ক এবং প্রেসিডেন্ট এরদোগান আফগানিস্তান,সোমালিয়া এবং ইরাক-সিরিয়ায় আমেরিকা ও ন্যাটোর পক্ষে সরাসরি সহযোগিতা করছে এবং ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নিচ্ছে, তাই শরী’আহর আলোকে এর বিধান জানা অতীব জরুরি।
১। সূরা মায়িদার ৫১ নং আয়াতের তাফসীরে ইমাম কুরতুবী রাহঃ বলেন,
قوله تعالى : ومن يتولهم منكم أي : يعضدهم على المسلمين . فإنه منهم [ ص: 158 ] بين تعالى أن حكمه كحكمهم ; وهو يمنع إثبات الميراث للمسلم من المرتد ، وكان الذي تولاهم ابن أبي ثم هذا الحكم باق إلى يوم القيامة في قطع الموالاة
আল্লাহ তা’আলার বাণীঃ ‘যে ব্যক্তি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে’ অর্থাৎ মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদেরকে (কাফিরদেরকে) সাহায্য-সহযোগিতা করবে, নিশ্চয়ই সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। আল্লাহ তা’আলা সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করে দিয়েছেন যে, তার হুকুম উক্ত কাফিরদের হুকুমের মতই হবে। আর তা একজন মুসলিমের জন্য মুরতাদ থেকে মিরাস প্রতিষ্ঠিত হওয়া থেকে বিরত রাখবে। আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই কাফিরদের সাথে মুওয়ালাত বা সুসম্পর্ক করেছিলো। অতঃপর কাফিরদের সাথে মুওয়ালাত বা সুসম্পর্ক ছিন্ন করার ক্ষেত্রে এই বিধান কিয়ামত পর্যন্ত বহাল থাকবে। (তাফসীরে কুরতুবী)
২। শাইখ মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহহাব রাহঃ ঈমান ভঙ্গকারী ১০ টি বিষয়ের আলোচনায় বলেনঃ
الثامن : مظاهرة المشركين ومعاونتهم على المسلمين ، والدليل قوله تعالى : ( وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ مِنْكُمْ فَإِنَّهُ مِنْهُمْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ )
ঈমান ভঙ্গকারী ৮ম বিষয়ঃ মুসলিমদের বিরুদ্ধে মুশরিকদেরকে সাহায্য-সহযোগিতা করা। দলীল হচ্ছে, আল্লাহ তা’আলা বাণীঃ (যে ব্যক্তি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা যালিমদেরকে হিদায়াত দান করেন না।) (নাওয়াক্বিদ্বুল ইসলাম ,শাইখ মুহাম্মাদ ইবনে আব্দুল ওহহাব রাহ.)
৩। ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সহায়তার ব্যাপারে শাইখুল ইসলাম হুসাইন আহমাদ মাদানী রহঃ এর ফাতাওয়াঃ
“মুসলমান হত্যার তৃতীয় রূপ হচ্ছে এই – কোন মুসলমান কাফেরদের পক্ষ নিয়ে তাদের সাহায্য ও বিজয়ের জন্য মুসলমানদের বিরূদ্ধে লড়াই করে, অথবা যুদ্ধে তাদের সহায়তা করে কিংবা যখন মুসলমান ও কাফেরদের যুদ্ধ চলতে থাকে তখন কাফেরদের সমর্থন জানায়, এমতাবস্থায় উপরোক্ত অপরাধটি কুফুরী ও সীমালঙ্ঘনের চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনিত হয় এবং ঈমান ধ্বংস ও ইসলাম শূন্যতার এমন জঘন্য ও নিকৃষ্ট অবস্থায় পৌঁছায়, যার চেয়ে মারাত্বক কুফর ও কুফরি কর্মকান্ড কল্পনা করা যায় না।
দুনিয়ায় যে কোন মুসলমানের পক্ষে সম্পাদন করা সম্ভব অথবা কোন মুসলমানের কল্পনায় আসতে পারে এমন যাবতীয় পাপ, সকল সীমালঙ্ঘন, সকল অপবিত্রতা এবং সর্বপ্রকার অবাধ্যতা এই অপরাধের সামনে তুচ্ছ। যে মুসলমান এতে লিপ্ত হবে, সে নিশ্চিত কাফের এবং নিকৃষ্টতম কাফের। সে শুধু মুসলমান হত্যায় জড়িত হয়েছে এইটুকুই নয় বরং ইসলামের বিরুদ্ধে হক্ক এর শত্রুদের আনুগত্য ও সহায়তা করেছে এবং এটি সকলের ঐক্যমতে সর্বসম্মতিক্রমে কুফরে ছরীহ বা সুস্পষ্ট কুফর। শরীয়ত যেখানে অমুসলমানদের সাথে কোন প্রকার মহব্বতের সম্পর্কের বৈধতা দেয় না, সেক্ষেত্রে যুদ্ধে সুস্পষ্ট সহযোগিতার পরেও কি করে ঈমান ও ইসলাম বাকি থাকতে পারে?”
অধ্যায়ঃ কতলে মুসলিম, মাআ’রেফে মাদানী, মাওলানা হুসাইন আহমদ মাদানী রহঃ; সংকলন ও বিন্যাস – মুফতী আব্দুস শাকূর তিরমিজী
৪। শাইখ আব্দুল আযীয বিন বা’য রাহিঃ উনার ফাতাওয়ায় বলেন,
“ ইসলামের আলিমগণ এ বিষয়ে ঐকমত্যে (ইজমা’) পৌছেছেন, যে ব্যক্তি মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদেরকে যেকোনো প্রকারে সাহায্য-সহযোগিতা করবে, সে ব্যক্তি তাদের মতো-ই কাফির। যেমন আল্লাহ সুবঃ তা’আলা বলেছেন, (হে ঈমানদারগণ ! তোমরা ইয়াহুদী ও খ্রিস্টানদেরকে বন্ধুরুপে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। যে ব্যক্তি তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ তা’আলা যালিমদেরকে হিদায়াত দান করেন না।)” মায়িদাহ-৫১ মাজমু’ ফাতাওয়া, ১/২৭৪)
৫। বিংশ শতাব্দীর জগৎশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস ও ফকীহ আল্লামা আহমাদ শাকের রাহঃ উনার “কালিমাতুল হাক্ব” কিতাবে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফিরদের সহযোগিতাকারীর ব্যাপারে সুস্পষ্ট ভাষায় যে ফাতাওয়া দেন, তার একাংশ হচ্ছে................
“ব্রিটিশদের সহযোগিতার ব্যাপারে কথা হলো- ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অথবা বড় যে কোনো ধরণের সহযোগিতা হলো চূড়ান্ত ইরতিদাদ (দ্বীনত্যাগ) ও নিশ্চিত কুফুরি। এতে কোনো অজুহাত বা ভুল ব্যাখ্যা কোনোটাই গ্রহণযোগ্য নয়। মূঢ় জাতীয়তাবাদ, ভঙ্গুর রাজনীতি এবং ভণ্ডামিপূর্ণ তোষামোদ কিছুই এ দ্বীনি বিধান থেকে কাউকে রক্ষা করবে না। বিশেষ ব্যক্তি, সরকার বা নেতাদের মাঝে যদি তা সংঘটিত হয় তবে ইরতিদাদ (দ্বীনত্যাগ) ও কুফুরির ক্ষেত্রে এদের সবাই একই।
....... সুতরাং ওরা (ফ্রান্স) ও ব্রিটিশরা হুকুমের ব্যাপারে একই, প্রত্যেকস্থানে তাদের রক্ত ও সম্পদ হালাল। বিশ্বের যেকোনো স্থানের মুসলিমদের জন্য ওদেরকে কোনো প্রকারের সহযোগিতা করা নাজায়েয। যদি কেউ সহযোগিতা করে তবে তার হুকুম তাদের মতোই যারা ব্রিটিশদের সহযোগিতা করে- তা হলো ইরতিদাদ (দ্বীনত্যাগ) যা সম্পূর্ণরুপে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। আর এটা যে কোনো প্রকার বা প্রকৃতির সহযোগিতা হোক না কেনো।
....... সুতরাং বিশ্বের যেকোনো স্থানে অবস্থিত প্রত্যেক মুসলিমের অবশ্যই জেনে রাখা উচিৎ যে, কেউ যদি মুসলিমদের শত্রু, তাদের দাসে পরিণতকারী ব্রিটিশ, ফ্রান্স ও আরো যারা আছে এবং তাদের দোসরদের সহযোগিতা করে-একইভাবে যেকোনো রকমের সহযোগিতা অথবা তাদের সাথে এমন শান্তি স্থাপন শান্তি করা এবং তাদের সাথে যুদ্ধ ঘোষণা না করা, বিবৃতি বা কর্মের মাধ্যমে বিশ্বাসী ভাইদের বিরুদ্ধাচরণ করা- যদি উল্লেখকৃত যেকোনো একটি কাজ কেউ করে আর পরে সলাত আদায় করে, তবে তার সলাতের কোনো মূল্য নেই।” (কালিমাতুল হাক্ব, পৃষ্ঠা নং ১২৬-১৩৭)
এ ব্যাপারে বিস্তারিত ফাতাওয়া আল্লামা আহমাদ শাকের রাহঃ এর “কালিমাতুল হাক্ব” কিতাবের ১২৬-১৩৭ পৃষ্ঠার “যুদ্ধরত কুফফার জাতির সঙ্গে মুসলিমদের আচরণ-বিধান” শিরোনামে অনুবাদ অংশে ভালোভাবে পড়ুন....
লিংক.... www.pdf-archive.com/2015/01/18/declaration/declaration.pdf
মুসলিম হত্যায় সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেন ও ফ্রান্সের চেয়ে আমেরিকা এক বিন্দুও পিছিয়ে নেই বরং আরো এগিয়ে আছে। সুতরাং ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে সহযোগিতাকারী যদি সন্দেহাতীতভাবে মুরতাদ হয়, তাহলে ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুগের ফির’আউন আমেরিকা,ন্যাটো ও অন্যান্য কুফফারদেরকে সহযোগিতা করাও সুস্পষ্ট রিদ্দাহ এবং যে এমনটি করবে সে সুস্পষ্ট মুরতাদ। এ ব্যাপারে সকল ইমাম ও আলিমদের ইজমা’ রয়েছে, যা উপরে বর্ণিত কিছু প্রমাণাদি থেকে অত্যন্ত পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয়েছে।
ফলে যারা শরী’আহর এই সুস্পষ্ট বিধান এবং উম্মতের সকল হক্বপন্থী ইমাম ও আলিমদের ইজমার ব্যাপারে অবগত, তাদের কাছে তুরষ্ক এবং এরদোগানের হুকুম সুস্পষ্ট। আর যাদের কাছে ঈমানভঙ্গের কোনো কারণ নেই, শরী’আহর এই সুস্পষ্ট বিধানের তোয়াক্কা নেই এবং উম্মতের ইমাম ও আলিমদের ইজমার মূল্য নেই, তারা এরদোগানকে তাদের নেতা মনে করতে পারে; কিন্তু ইসলামের নেতা নয়। তারা এরদোগানকে তাদের মনগড়া দ্বীন প্রতিষ্ঠার স্বপ্নে বিভোর থাকতে পারে; তাতে ইসলামের কোনো ফায়দা হবে না।
*** তুরষ্ক ও এরদোগানের ব্যাপারে গ্লোবাল জিহাদের উলামাগণের ফাতাওয়াঃ
১। তাওহীদ ও গ্লোবাল জিহাদের সর্বোচ্চ পর্যায়ের আলিম শাইখ আবু মুহাম্মাদ আসিম আল-মাকদিসী হাফিঃ এরদোগান সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু প্রশ্নের জবাব দিয়ে একটি ছোট্ট পুস্তিকা রচনা করেছেন। পুস্তিকাটির নাম الأجوبة الزكية على الأسئلة التركية আল-মুওয়াহহিদীন মিডিয়া সেটি ইংরেজিতে অনুবাদ করেছে এই শিরোনামে- Precise Answers To The Turkish Questions বাংলা অর্থ দাঁড়ায়- তুরষ্ক সংক্রান্ত প্রশ্নের পরিষ্কার জবাব।
.উপরোক্ত কিতাবে শাইখ আবু মুহাম্মাদ আসিম আল-মাকদিসী হাফিঃ তাকফীর নিয়ে বাড়াবাড়ি ও সীমালঙ্ঘন এবং সঠিক তাকফীরের বিষয়ে বিভিন্ন খুঁটিনাটি বিষয় অত্যন্ত সুন্দরভাবে তুলে ধরেন। সেখানে তিনি ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসের কারণে এরদোগানের ব্যাপারে রিদ্দাহ তথা মুরতাদ হওয়ার ফাতাওয়া হুকুম দেন।
.শাইখ আবু মুহাম্মাদ আসিম আল-মাকদিসী হাফিঃ বলেন,
“আর (তুরষ্ক) প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপ্রধান একজন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি, যদিও সে আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে দ্বিমত পোষণ করে। নিশ্চয়ই সে (এরদোগান) শুধুমাত্র ব্যাখ্যার ক্ষেত্রে আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে দ্বিমত পোষণ করে। আর সে ধর্মনিরপেক্ষতা থেকে নিজেকে মুক্ত করে না বরং সে ধর্মনিরপেক্ষতার একটি প্রশংসনীয় ব্যাখ্যা করে এবং সেটিকে সে ভালো মনে করে। তার এই ব্যাখ্যা বাতিল এবং এটি তাকে ঈমানভঙ্গকারী ধর্মনিরপেক্ষতার গণ্ডি থেকে বের করে না, যেহেতু সে ধর্মনিরপেক্ষতার ব্যাখ্যা করছে রাষ্ট্র থেকে ধর্মকে আলাদা করার মাধ্যমে এবং দ্বীনকে যার ইচ্ছা তার উপর ছেড়ে দিয়েছে। তার বিষয়টি এবং তার মতো যারা আছে, তাদের মতে যার ইচ্ছা সে যিন্দিক হতে পারে, এটি আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষতার সাথে দ্বিমত পোষণ করে। কেননা আতাতুর্কের ধর্মনিরপেক্ষতা হচ্ছে মূলতঃ ইসলাম, শরীয়ত এবং ইসলামের সাথে সম্পর্কিত এমন প্রতিটি বিষয়ের বিরুদ্ধে যুদ্ধ । এই ব্যক্তি (এরদোগান) যে ব্যাখ্যা পেশ করছে এবং সেটিকে ভালো হিসেবে প্রচার করছে, এর সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই। অতএব দ্বীন ইসলাম কখনোই ইলহাদ এবং শিরক করার অনুমতি দেয় না ,এর স্বীকৃতি দেয় না এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা ও দ্বীনকে আলাদা করে না; বরং এইসব কিছুই ইসলামের সাথে সাংঘর্ষিক (ইসলাম ভঙ্গকারী) এবং সুস্পষ্ট কুফরের অন্তর্ভুক্ত (কুফরের প্রবেশদ্বার)।” (মূল আরবী ফাতাওয়া, পৃষ্ঠা-১০)
উপরোক্ত কিতাবটির ডাউনলোড লিংক..... আরবী..... http://www.mediafire.com/file/vxmptc0rehi4245
ইংরেজি……http://bit.ly/2GDVWAs
২। তাওহীদ ও গ্লোবাল জিহাদের অপর শীর্ষস্থানীয় আলিম শাইখ আবু কাতাদা আল-ফিলিস্তিনি হাফিঃ উনার বিভিন্ন বক্তব্য ও ফাতাওয়ায় তুরষ্ক এবং এরদোগানের বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। এরদোগান ধর্ম ও রাষ্ট্র পৃথকীকরণ তথা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসী হওয়ার কারণে শাইখ আবু কাতাদা এরদোগানকে সুস্পষ্ট ভাষায় মুরতাদ বলে আখ্যা দিয়েছেন।
এধরণের একটি বক্তব্য এই লিংকে আছে..... http://bit.ly/2Iwqqoq
এছাড়া তুরষ্কের নেতৃত্বে সিরিয়ায় উত্তরাঞ্চলে দার’উল-ফুরাত’ বা ‘ইউফ্রেটিস শিল্ড’ নামে যে অভিযান চালানো হয়,সে ব্যাপারে শাইখ আবু কাতাদা হাফিঃ যে ফাতাওয়া দেন,তাতেও তুরষ্ক ও এরদোগানের ব্যাপারে রিদ্দার ফাতাওয়া দেন।
ফাতাওয়াটির লিংক.... https://justpaste.it/1g706
তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট এরদোগানের রিদ্দাহকে যারা ওযরের আওতায় ফেলতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে.................
কেউ কেউ তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইপ এরদোগানের বিষয়ে মাজবুরীর হালত প্রমাণ করতে চায় অর্থাৎ এরদোগান প্রেসিডেন্ট হওয়ার আগে থেকেই তুরষ্ক ন্যাটোর সদস্য ছিলো, আমেরিকাকে বাধ্য হয়ে বিমান ঘাঁটি করতে দিয়েছে ইত্যাদি ইত্যাদি বলে থাকেন।
রাষ্ট্রপ্রধানের জন্য কোনো ওযর শরীয়তে গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ রাষ্ট্রপ্রধান ক্ষমতাশালী ব্যক্তি। মাজবুর ব্যক্তি কীভাবে রাষ্ট্রপ্রধান হয়। আর এরদোগানকে নিশ্চয়ই কেউ গলায় ছুরি ধরে বলেনি যে, হয় প্রেসিডেন্ট হবে নতুবা হত্যা করে ফেলবো !! আর মানবরচিত কুফুরী আইনে দেশ পরিচালনার জন্য গলায় ছুরি ধরলেও তা মেনে নেওয়া যাবে না, এটিই আমাদের দ্বীন শিক্ষা দেয়। এটি ইসলামের আকীদা।
রাসূল সাঃ স্পষ্টভাবেই বলেছেন, “তুমি আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করোনা, যদি তোমাকে কেটে টুকরো টুকরো করা হয় কিংবা আগুনে জালিয়ে দেওয়া হয়।” (মিশকাত, কিতাবুস-সলাতের ‘বাবু ফাদ্বায়িলিস সলাত’ এর একটি হাদীসের অংশ)
তাদের ওযরের অজুহাত যদি সামান্য সময়ের জন্য মেনেও নেই যে, ন্যাটোর সদস্য হওয়া, আফগানিস্তানে আমেরিকার নেতৃত্বে তালিবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা, ইরাক-সিরিয়ায় বিমান হামলার জন্য আমেরিকাকে ঘাঁটি করতে দেওয়া যদি বাধ্য হয়ে করেছে বলে দাবি করা হয় কিংবা এরদোগান ক্ষমতায় আসার পূর্ব থেকে এসব চলে আসছে এজন্য ওযর পেশ করা হয়, কিন্তু সোমালিয়ায় আল-কায়েদার শাখা আল-শাবাব মুজাহিদদের প্রতিষ্ঠিত ইসলামী রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এরদোগানের সরকার কর্তৃক সোমালিয়ায় (তুরষ্কের বাইরে) সর্ববৃহৎ সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের বিষয়ে তারা কী ওযর পেশ করবে ?
জাতিসঙ্ঘের তত্ত্বাবধানে আমেরিকাসহ পশ্চিমা ক্রুসেডার এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের সম্মিলিত কুফফার বাহিনী ও তাদের সেবাদাস সোমালিয়ার মুরতাদ বাহিনীকে এরদোগান সরকার কর্তৃক প্রকাশ্যে অস্ত্র,অর্থ,সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে সোমালিয়ার ৮০% এর বেশি এলাকায় আল্লাহর শরী’আহ প্রতিষ্ঠাকারী আল-শাবাব মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ব্যাপারে কী ওযর পেশ করবে ???
এটিতো এরদোগানই শুরু করেছে। তাও ক্ষমতায় আসার ৮ বছর পর।
এখানেতো কেউ কথিত বাধ্য করেনি ! সোমালিয়ায় ঘাঁটি করার পরিকল্পনা করা হয়েছে এরদোগান ক্ষমতায় আসার ৮ বছর পর। প্রসঙ্গতঃ এরদোগান তুরষ্কের ক্ষমতায় এসেছে ২০০৩ সালে। আর এরদোগান ২০১১ সালে সোমালিয়ার মুরতাদ সরকারের হাতকে শক্তিশালী করার জন্য সোমালিয়ায় প্রথম সফর করে। এরপরই সেখানে সামরিক ঘাঁটি করার চিন্তাভাবনা চলতে থাকে।
অতঃপর ৩০ সেপ্টেম্বর,2017 তে সোমালিয়ায় তুরষ্কের সেই সামরিক ঘাঁটিটি উদ্বোধন করা হয়।
তুরষ্কের সরকারি মিডিয়া তথা এরদোগানের নিজস্ব মিডিয়া “Anadolu Agency” থেকেই নিউজটি দেখুন......... http://bit.ly/2FS0vJu
আমরা জানি, ঈমানভঙ্গের একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে, ইসলাম ও মুসলিমদের বিরুদ্ধে কুফফারদেরকে সহযোগিতা করা,যা সরাসরি তুরষ্ক বিভিন্নভাবে করে যাচ্ছে।
এরদোগান ও তুরষ্ক সরকারের এই সুস্পষ্ট রিদ্দাহ তথা ঈমানভঙ্গের কারণের ক্ষেত্রে তারা কী ওযর পেশ করতে চান,এটি জানতে পারলে ভালো হতো।
আর এরদোগান যেখানে ধর্ম ও রাষ্ট্র আলাদা করা তথা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদে বিশ্বাসী, তাই এটি যে এরদোগানের সুস্পষ্ট রিদ্দাহ বা দ্বীনত্যাগ এ ব্যাপারে ইসলামের সাধারণ জ্ঞান রাখেন এমন ব্যক্তিদেরও সন্দেহ থাকার কথা নয়।
কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে, সাধারণ মানুষতো দূরের কথা অধিকাংশ আলিমগণও তাকফীরের মাসআলার ব্যাপারে ভালোভাবে অবগত নয়। ফলে ব্যাপকভাবে উম্মাহকে বিভ্রান্ত করা সহজ হচ্ছে।
এই দ্বীন কোনো মনগড়া উসুল কিংবা আবেগ-আপত্তি নির্ভর নয় বরং সুদৃঢ় মূলনীতির উপর সুপ্রতিষ্ঠিত। তবে তাদের কাছে যদি ঈমানভঙ্গের কোনো উসুল নাই থাকে,তাহলে ভিন্ন কথা।
শরী’আহর সুপ্রতিষ্ঠিত উসুলের বিপরীতে মনগড়া কোনো আবেগ-আবদারের কোনো মূল্যই ইসলামে নেই।
*** এরদোগান সংক্রান্ত কতিপয় আপত্তির জবাবঃ
এরদোগান নিয়ে আমার এই লেখা পড়ে প্রশ্ন করতে পারেন (অবশ্য কেউ কেউ ইতোমধ্যে বলেছেনও), আপনারা এরদোগানের পেছনে পড়েছেন কেনো ? দুনিয়ার অন্যান্য মুসলিম শাসকদের পেছনে কেনো লাগেন না ? সেতো অন্যান্য শাসকদের চেয়ে তুলনামূলক ভালো ?? এরদোগানতো মুসলিমদের সহায়তা করছে !! ইত্যাদি ইত্যাদি ।
তাদের এসব আপত্তির জবাবে বলবোঃ
প্রথমতঃ এরদোগানের পেছনে লাগার অভিযোগটি অনেকটা ‘উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে’ টাইপের হয়ে গেলো। এসব অভিযোগ ও আপত্তিকারীগণ বছরের পর বছর ধরে ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, মানবরচিত আইন দিয়ে দেশ পরিচালনাকারী এবং আফগানিস্তান ও সোমালিয়ায় মুজাহিদদের বিরুদ্ধে যুদ্ধকারী এরদোগানকে ‘মুসলিম জাতির নেতা’ ‘আগামী দিনের সুলতান’ ‘ভবিষ্যৎ খলিফা’ ইত্যাদি প্রচারণা চালিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে আসছে। অথচ আমরা যখনই এই চরম অজ্ঞতা ও ভ্রষ্টতাপূর্ণ প্রচারণার শরীয়তসম্মত জবাব দিতে শুরু করলাম এবং বাস্তবতা পেশ করলাম, তখন আমাদের বিরুদ্ধে বলা হচ্ছে, আমরা নাকি এরদোগানের পেছনে লেগেছি !
দ্বিতীয়তঃ এরদোগান আমাদের কাছে অন্যান্য মুসলিম দেশের শাসকদের মতোই। বরং তাদের থেকে কম খারাপ বলা চলে,যেমনটি গ্লোবাল জিহাদের সম্মানিত ও শীর্ষস্থানীয় আলিম শাইখ মাক্বদিসী হাফিঃ উনার উপরোক্ত ফাতাওয়ায় বলেছেন। দুনিয়ার সবগুলো মুসলিম দেশ শাসনকারী ত্বগুত শাসকদের ব্যাপারে যেভাবে আমাদের বক্তব্য শরী’আহর আলোকে হয়ে থাকে, এরদোগানের ব্যাপারেও আমাদের বক্তব্য শরী’আহর আলোকেই বলা হয়।
তৃতীয়তঃ এরদোগানের ব্যাপারে বিশেষভাবে বলার কারণ হচ্ছে, এরদোগানকে সামনে এনে তারা পুরো মুসলিম উম্মাহকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করছে। তাই এই বিভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতার ব্যাপারে স্পষ্ট করা প্রত্যেক আলিম ও মুমিনের দায়িত্ব। সেই দায়িত্ব থেকেই দুনিয়ার হক্বপন্থী আলিমগণ এরদোগানের ব্যাপারে কথা বলেছেন। আর সেই সূত্রে আমরা বলছি। তারা যদি এরদোগানকে সামনে এনে উম্মাহকে বিভ্রান্ত না করতো,তাহলে আমাদেরও এভাবে আলাদাভাবে বলার প্রয়োজন হতো না। যেমনঃ জর্ডানের ত্বগুত বাদশাহ নিয়ে আমরা বিশেষভাবে বলছি না। কেউ যদি তাকে বাইতুল মুকাদ্দাস উদ্ধারের নেতা বানিয়ে প্রচারণা চালায় এবং উম্মাহকে বিভ্রান্ত করে,তাহলে তার কুফুরী ও ত্বগুতী আলাদাভাবে বলা অনিবার্য হয়ে পড়বে।
চতুর্থতঃ অনেকেই বলতে চাইবে, এরদোগানতো সিরিয়ার মুসলিমদের উপকার করছেন, আরাকানসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলছেন ইত্যাদি। আমরা জবাবে বলবো, বাংলাদেশের ধর্মনিরপেক্ষ সরকার এবং তার ত্বগুত প্রধানমন্ত্রীও আরাকানের মুসলিমদের আশ্রয় দিয়েছে। তাহলে কী বাংলাদেশের ত্বগুত প্রধানমন্ত্রীও ইসলামের খাদেমে রুপান্তরিত হবে ???
পঞ্চমতঃ অনেকেই বলতে চাইবে, এরদোগানের কিছু ভালো দিকতো আছে, যা অন্যদের নেই। আমরা এর জবাবে বলবো, একজন ব্যক্তির মধ্যে ঈমানভঙ্গের কয়টি সুস্পষ্ট কারণ পাওয়া গেলে ঈমান চলে যায় ??? ১০০ টি, ১০ টি নাকি ১ টি ??? নিঃসন্দেহে ঈমানভঙ্গের একটি কারণই একজন ব্যক্তির মুরতাদ হওয়ার জন্য যথেষ্ট। রাসূল সাঃ এর ইন্তেকালের পর যাকাত প্রদান করতে অস্বীকারকারীরা (মনগড়া ব্যাখ্যা প্রদানের মাধ্যমে) মাত্র ১ টি কুফুরী করেছিল, আর ইসলামের বাকী আহকাম মেনে চলছিল; কিন্তু তারপরও তারা যে মুরতাদ ছিলো, এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কিরামের ইজমা রয়েছে। তাহলে একাধিক সুস্পষ্ট রিদ্দাহ থাকার পরেও কীভাবে একজন ব্যক্তির কিছু ভালো কাজের মাধ্যমে তার দ্বীন টিকে থাকে ???
পরিশেষে বলবো, কেউ ইসলামের সীমার মধ্যে থাকলে তাকে জোর করে মনগড়া উসুল বানিয়ে দ্বীন থেকে বের করার মতো ভয়ানক খতরনাক বিষয় থেকে আল্লাহ তা’আলার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আমরা মানুষকে দ্বীন থেকে বের করার জন্য আদিষ্ট হইনি বরং মানুষকে দ্বীনের মধ্যে আনার জন্যই আদিষ্ট হয়েছি। কিন্তু ত্বগুত শাসকদের কুফুরী ও রিদ্দাহ স্পষ্ট করা এবং তাদের থেকে বারাআহ করা তাওহীদের ‘রুকন’ তথা মূল ভিত্তির সাথে সংশ্লিষ্ট । এর অনুপস্থিতি একজন ব্যক্তির ঈমানকে ধ্বংস করে দিতে পারে।
আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে তাওহীদের উপর অটল থাকার তাউফীক্ব দান করুন।