বাংগালীর সৌদি বিদ্বেষ পর্বঃ-৯

  • বাংগালীর সৌদি বিদ্বেষ পর্বঃ-৯
  • ➖➖➖➖➖ ➖➖➖➖➖
  • মিশরের সাড়ে তিন হাজার বছর পূর্বের ইতিহাস নিয়ে উইলভার স্মিথের লেখা উপন্যাসে ইথিওপিয়ার নাগরিকদের (হাবশী) সম্পর্কে বলা হয়েছে, এরা যে কোন সমস্যার সমাধান চাকু দিয়ে করতে চায়৷ যেসব ভাইয়েরা হাবশীদের দেখেছেন তারা এর কিছুটা সত্যতা দেখতে পাবেন৷ তিউনেশিয়া, মিশরের মত দেশগুলোতে মেয়েদের ভার্জিনিটির সত্যতার প্রমাণ স্বরূপ বাসর রাতের পর আত্মীয়-স্বজনকে রক্তমাখা বিছানার চাদর প্রদর্শন করতে হয়৷

  • এ দেশগুলো মুসলিম দেশ হলেও এসব রেওয়াজের সাথে ইসলামের কোন সম্পর্ক নেই, তারপরেও সহস্র বছর ধরে তারা এসব পালন করে আসছে৷ কারন মানুষের মানসিক বিকাশ গঠনে পরিবারের পাশাপাশি, পরিবেশ এবং তার চারপাশের মানুষগুলোও ভূমিকা রাখে৷ যার কারনে যে যেই পরিবেশে এবং যে অঞ্চলে বেড়ে উঠে সে ঐ পরিবেশ এবং ঐ অঞ্চলের মানসিকতা পরিহার করতে পারে না৷

  • টুইন টাওয়ারে হামলার পর আমার কাজ ছিলো আসরের নামায শেষে মুরুব্বীদের পত্রিকার খবর পড়ে শোনানো৷ এরপর থেকে প্রায় সময়েই আমাকে এই কাজ করতে হত৷ যদিও তারা নিরক্ষর ছিলেন, তবে বয়স এবং অভিজ্ঞতার দিক দিয়ে তারা ছিলেন যথেষ্ঠ প্রজ্ঞাবান৷ খবর শোনে তারা বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতেন৷ দেশের এবং বিদেশের বিভিন্ন খবরে তাদের প্রতিক্রিয়াগুলো ভিন্ন ভিন্ন থাকলেও সৌদী আরবের ক্ষেত্রে তাদের প্রতিক্রিয়া ছিলো অভিন্ন৷ আমি আমার পরিচিত যতজন মুরুব্বীকে দেখেছি, সৌদী আরব সম্পর্কে ঊনাদের সবার ধারণা নেতিবাচক৷

  • এমন পরিবেশে স্বাভাবিক ভাবেই আমার অবস্থাটাও তাদের মতই ছিলো৷ সৌদী আসার ব্যাপারে আমার কখনোই কোন আগ্রহ ছিলো না, অনেকটা বাধ্য হয়েই আমাকে এখানে আসতে হয়েছে এবং আগামী পাঁচ মাসের মধ্যে আমি ভিসা ক্যানসেল করে সৌদী থেকে চলে যাবো৷ যারা বলেন বা মনে করেন যে সৌদী আরবের পক্ষে লেখলে পেট্টো ডলার পাওয়া যায়, তাদের কাছে যদি এমন কোন ব্যক্তি বা সংস্থার ঠিকানা থাকে যারা সৌদীর পক্ষে লিখলে টাকা পয়সা দিয়ে থাকে নিঃসন্দেহে আমাকে তাদের ঠিকানা দিতে পারেন৷

  • এখানে আসার চার মাসের মাথায় আমাকে পুলিশ গ্রেফতার করে৷ জেলখানায় তিন মাসের সাজা প্রাপ্ত এক বাংলাদেশী ভাইয়ের সাথে আমার পরিচয় হয়৷ তার সাজার কারন হিসেবে তিনি যেটা বললেন, ঊনার কাছে এক সৌদী মেয়ে ফোন করে টাকা চেয়েছে৷ ঊনি না দেওয়াতে মেয়ের বাবা পুলিশ দিয়ে তাকে ধরিয়ে দিয়েছে, এবং আদালত তাকে তিন মাসের সাজা দিয়েছে৷ ঊনার কথা শোনার পর কিছুটা ব্যথিত এবং সেই সাথে সৌদীর প্রতি ঘৃণার পারদ আরো বেড়ে গেলো৷ এই বাংলাদেশী ভাই দেশে গিয়েও এই গল্পটাই বলবে৷ কিন্তু গল্পের পেছনে আরেকটা গল্প থাকে৷

  • গত এক দশকে আমার কাছেও বেশ কিছু কল এসেছে৷ এর মাঝে সৌদী নাগরিক ছাড়াও আজনবীদের কল ছিলো৷ আমাদের দেশে যেমন রাতে ফোন করে ল্যাংটা বাবা, কিংবা মোবাইলে এক্সের বিনিময়ে টাকা খোঁজা কিছু বদমাঈশ পাওয়া যায়, এখানেও তেমন কিছু বদমাঈশ আছে৷ তবে এধরনের অপকর্মের সাথে বেশির ভাগ পাকিস্তানী পুরুষ এবং ইন্দোনেশিয়ান ও ফিলিপাইনের মেয়েরা জড়িত৷ সৌদীদের কাছ থেকে যে কলগুলো এসেছে সবগুলোই রং নাম্বার৷

  • এর মাঝে একবার শোনলে আরেকবার শোনতে ইচ্ছে করে এমন হৃদয় তোলপাড় করার মত নারী কন্ঠও ছিলো, কিন্তু দ্বিতীয়বার তাকে ফোন করার সাহস হয়নি৷ এর কারন হলো, এখানে আইডি এবং ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে সীম কার্ড তুলতে হয়৷ এই সীম দিয়ে আপনি যদি কাউকে ডিস্টার্ব করেন তাহলে আপনাকে আইনের আওতায় আনা কোন ব্যাপার না৷ আর মেয়ে সংক্রান্ত অভিযোগকে তারা সব সময় অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করে৷ আমাদের এই ভাই বিষয়টা জানলেও, হয়ত হৃদয় তোলপাড় করা কন্ঠ শোনে মন মানেনি কিংবা তিনি একটু এক্সুয়াল আলাপ করতে চেয়েছিলেন৷ ঊনার অপরাধ আল্লাহই ভালো জানেন, তবে তখন তাকে নিরপরাধ মনে হলেও এখন মনে হয় না৷

  • আমার পরিচিত এক ভদ্রলোকের কথা জানি, যিনি একটা কোম্পানীর এ্যাকাউন্টেট পদে কর্মরত ছিলেন বেতন ছিলো বাংলাদেশী প্রায় দেড় লক্ষ টাকা৷ যাওয়ার সময় কোম্পানীর মোটা অংকের টাকা মেরে দিয়েছেন৷ আর এখন দেশে গিয়ে বলছেন, সৌদীতে মানুষ থাকে? এক কলিগের বায়রার কথা জানি, যার রুমমেটকে হাসপাতালের ঔষধ চুরি করে বিক্রি করার অপরাধে গ্রেফতার করা হয়েছিলো৷ প্রথমে একজনকে গ্রেফতার করলেও পরবর্তীতে ২৩ জনের পুরো এক গ্যাংকে গ্রেফতার করা হয়৷ যাদের সবাই বাংলাদেশী৷

  • বাংলাদেশ থেকে নতুন আসা ছেলেটার জানা ছিলো না, এখানকার প্রায় এলাকা সিসি ক্যামেরার আওতাভূক্ত৷ একটা মোবাইল চুরি করার জন্য সে একটা গাড়ির গ্লাস ভেঙ্গে ফেলেছিলো৷ আমাদের বাংলাদেশী ভাইদের অপরাধের এমন অনেক ঊদাহরণ দেওয়া যাবে৷ বিভিন্ন অপরাধের কারনে এদের যখন দেশে পাঠানো হয় তখন এরা এমন একটা গল্প বলে, যা শোনে মনে হবে সৌদীরা ভীষণ খারাপ আমরা অনেক সাধু৷ আমাকেও আপনার সাধু মনে করার কারন নেই৷

  • জান্নাতুল বাকীর গেট থেকে সন্দেহ জনক আসামী হিসেবে গোয়েন্দা পুলিশ আমাকে গ্রেফতার করে৷ পরবর্তীতে জেনেছিলাম এক মিশরীয় আমার বিরূদ্ধে পকেটমারার অভিযোগ করেছে৷ সিসি টিভির ফুটেজ এবং আমাকে তল্লাশী করে এ ধরনের আলামত পাওয়া যায়নি, তবে আমার অন্য অপরাধ ছিলো৷ আমার পকেটে পাঁচটা সীম কার্ড ছিলো৷ এখানকার আইনানুসারে আজনবীদের সীম কার্ড বিক্রি করা নিষিদ্ধ৷ আমার মোবাইলে ভিওআইপি প্রোগ্রাম ছিলো যেটাকে আমাদের দেশের অনেকে ডলার বা ইন্টারনেট বলে থাকেন৷ এটাও এখানে নিষিদ্ধ৷

  • বাংলাদেশ থেকে আসার তিন মাসের ভিতরে আপনাকে আকামা করতে হবে, না হয় আপনি অবৈধ হিসেবে বিবেচিত হবেন৷ চার মাসেও আমি আকামা পাইনি, সেদিক দিয়েও আমি ছিলাম অবৈধ৷ তারা ইচ্ছে করলে আমাকে এর যে কোন একটা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে সাজা বা দেশে পাঠিয়ে দিতে পারত৷ কিন্তু এমন কিছুই ঘটেনি৷ যদি আমাকে তখন পাঠিয়ে দিত, তখন আত্মরক্ষার জন্য আমাকেও একটা গল্প তৈরি করতে হত৷ যেখানে আমি থাকতাম সাধু আর সৌদীরা ভিলেন৷

  • মালেশিয়া থেকে ফেরত আসা কোন বাংলাদেশীকে যদি প্রশ্ন করেন, মালেশিয়ার লোকেরা কেমন? জবাব আসবে মালয়দের মত খারাপ জাতি পৃথিবীতে আর নেই৷ আমিরাতের ভাইকে যদি প্রশ্ন করেন, তিনিও বলবে তাদের মত খারাপ নেই৷ সাউথ আফ্রিকা প্রবাসী ভাইকে বললে আপনি একই উত্তর পাবেন৷ আপনি সেটাই জানছেন যেটা প্রবাসী ভাইটি বলছে কিংবা মিডিয়ায় এসেছে৷

  • আপনি কখনোই জানবেন না, এক সময় মালেশিয়ার এতিমখানাগুলো পিতৃপরিচয়হীন সন্তানে ভরে গিয়েছিলো৷ যাদের বেশিরভাগের জন্মদাতা ছিলো আপনার আমার মত কোন না কোন বাঙ্গালী৷ আপনি কখনোই জানবেন না, দুবাই স্টেডিয়ামে বসে কনসার্ট/খেলা দেখে সেলফী তোলা ছেলেটা বেতন কত পায়, তার বাড়িতে টাকা পাঠিয়েছে, নাকি মালিক টাকা দেয় নাই বলে নিরক্ষর মা-বাবাকে উপোষ রেখেছে৷ আপনি কখনোই জানবেন না সাউথ আফ্রিকা থেকে আসা প্রতিটা লাশের পেছনে কোন না কোন বাঙ্গালীর দানবীয় থাবা লুকিয়ে আছে৷

  • বিভিন্ন দেশ থেকে ফেরত আসা বাঙ্গালী ভাইদের মাঝে আপনি একজনও অপরাধী পাবেন না, সবাই সাধু৷ এই সাধুদের মুখে শোনা বুলি থেকে আমরা প্রতিটা দেশের ধর্ম, সমাজ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা সব সংস্কার করে ফেলি শুধু নিজেদের সংস্কার করি না৷ সৌদীরা কিন্তু এমন না৷ যেখানে রাষ্ট্রীয় সংস্কারের প্রয়োজন সেখানে তারা রাষ্ট্রীয় সংস্কার করছে৷ যেখানে ধর্মীয় সংস্কারের প্রয়োজন সেখানে ধর্মীয় সংস্কার করছে৷

  • একজন সৌদীর অপরাধে আমরা যেভাবে সমস্ত সৌদীকে আসামীর কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দেই, তেমন একজন বাংলাদেশীর অপরাধে তারাও সমস্ত বাংলাদেশীর দিকে আঙ্গুল তোলে৷ এদিক দিয়ে সৌদী সাধারণ নাগরিক আর আমাদের মাঝে কোন পার্থক্য নেই৷ তবে তাদের প্রশাসন, মিডিয়া, শিক্ষা ব্যবস্থা সহ রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সমূহের মাঝে বিশাল পার্থক্য আছে৷

  • এইতো মাত্র কয়েক বছর আগে সৌদী রাষ্ট্রদূত খালাফ বিন মোহাম্মদ সালেম আলী ঢাকায় খুন হন৷ বাংলাদেশ থেকে বলা হলো, ছিনতাইকারীরা তাকে খুন করেছে, তাদের মিডিয়া এবং জনগণ মেনে নিয়েছে৷ জামাল খাসোগী নামক একজন সৌদী সাংবাদিক তুরষ্কে খুন হয়েছে, ব্যাপারটার সাথে আমাদের কোন সম্পর্কই নাই৷ তারপরেও ব্যাপারটা আমাদের মিডিয়াও মানতে পারছে না, আমরাও না৷

  • দু'টো বিষয়কে যদি আমরা পাশাপাশি তুলনা করি, একজন রাষ্ট্রদূত পুরো একটা রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্ব করে, অন্যদিকে একজন সাংবাদিক মাত্র একটি সংস্থার প্রতিনিধিত্ব করে৷ সে হিসেবে তারা চাইলে আমাদের বিষয়ে আরো বেশি প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারত, কিন্তু তারা তা করেনি৷ তাহলে আমরা কেন এসব নিয়ে এত মাথা ঘামাচ্ছি? ধর্মীয় কারনে? যারা জামাল খাসোগীকে হত্যা নিয়ে সমালোচনা করে বিশাল ধর্মীয় দায়িত্ব পালন করছেন, তারা কি বলতে পারবেন ইসলামের সেবায় জামাল খাসোগীর অবদান কি? খুন হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত ঠিক কতজন জামাল খাসোগীকে চিনতেন?

  • বিষয়টাকে যদি আমরা রাজনৈতিক, মানবিক দৃষ্টিকোনে থেকে যাচাই করতাম তাহলে, কোন আপত্তি ছিলো না৷ আপত্তিটা হলো যখন আমরা এসবকে ধর্মীয় জ্ঞান মনে করি আলোচনা, সমালোচনা করি৷ আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো সৌদী আরবের কোনটা ব্যক্তিগত, কোনটা রাজনৈতিক, কোনটা সাংস্কৃতিক, কোনটা মানবিক, কোনটা ধর্মীয় বিষয়গুলোকে আলাদা আলাদা ভাবে চিহ্নিত না করে, আমরা সব কিছুকে ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে দেখি৷ কিন্তু তারা আমাদের কোন বিষয়ে নাক গলায় না৷ এটাই তাদের এবং আমাদের পার্থক্য৷

  • সৌদী আরবের সাথে আমাদের ধর্মীয় আবেগ জড়িত আর এই দূর্বলতার সুযোগ নিয়ে অন্যরা ফায়দা লুটে৷ রমজান মাসে নাইট ডিউটি শেষে ফজর নামাযের পর আমাকে গ্রেফতার করা হয়৷ ফজর নামাযের পর থেকে দশটা পর্যন্ত আমাকে পিছমোড়া হাতকড়া পরিয়ে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছিলো৷ জান্নাতুল বাকীর গেটের সিঁড়ির নিচের রুমে বিভিন্ন সংস্থার ১০-১২ জন দফায় দফায় এসে আমাকে জেরা করছিলো৷ সেখান থেকে মসজিদে নববীর পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়৷ সেখানেও ৪-৫ জন পুলিশ জেরা করে৷ সেখান থেকে থানায় পাঠানো হয়৷

  • থানার দারোগা মামলার কাগজপত্র দেখে বললো, সমস্যা নেই কফিল আসলে তোমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে৷ কফিল যেতে দেরী করায় আমাকে দুই রাত তিন দিন হাজতে থাকতে হয়েছে৷ থানায় ইফতারের জন্য একটা দধি, তিনটা খেজুর, মোটা ভাত আর সিদ্ধ মুরগী খেতে দেওয়া হয়েছিলো৷ খেজুর ছাড়া আর কোনটাই মুখে তুলতে পারেনি৷ খেজুর, টয়লেটের কলের পানি, আর নামেমাত্র খাবার খেয়ে রোজা রাখতে হয়েছে৷ এসির ঠান্ডার কারনে আমার কোল্ড এ্যালার্জি বেড়ে গিয়েছিলো৷ গায়ে দেওয়ার জন্য যে কম্বলটা আমি পেয়েছিলাম, আমাদের দেশে গরুকেও এর চেয়ে ভালো কাঁথা দেওয়া হয়৷

  • আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে আমার মা-বাবা, মুরুব্বীরা কেউ কখনো আমার গায়ে হাত তোলেনি৷ কিন্তু সেদিন এক পুলিশ আমাকে একটা চড়ও মেরেছিলো৷ পুরো ঘটনাটা বিস্তারিত না বলে আমি যদি শুধু আমার উপর যে মেন্টাল টর্চার করা হয়েছিলো সেগুলো বর্ণণা করি, তাহলে হয়ত কোন কোন পত্রিকায়, "রোজাদার বাংলাদেশীর উপর সৌদী পুলিশের বর্বর নির্যাতন" শিরোনামে সংবাদও দেখতে পেতেন৷ অনেকে হয়ত সেই সংবাদ লাইক, কমেন্টে, শেয়ারও করতেন৷

  • পত্রিকাগুলোতে এমন সংবাদ ছাপানোর পেছনে তাদের ব্যবসায়িক মনোবৃত্তি কাজ করে, কারন তারা জানে সৌদী বিরোধী সংবাদের কাটতি ভালো৷ ফেসবুক সেলিব্রেটি লেখকরাও এখন সে পথ ধরেছে৷ আমার বলার পেছনে আমার ব্যক্তিগত আক্রোশ কিছুটা প্রশমিত হত৷ কিন্তু আপনার কি লাভ হত? আপনার কি অনেক সওয়াব হত? আপনিতো ঘটনার পেছনের সত্যটাই জানেন না, সত্য-মিথ্যা না জেনে সওয়াব কামাতেন কি করে?

  • আপনি হয়ত যুক্তি দিবেন মানুষ হিসেবে মানবিক মূল্যবোধকে সমর্থন জানানোর জন্য আপনি আমার পক্ষ নিচ্ছেন৷ আপনি যদি আমাকে পছন্দ করেন তো আমার জন্য আপনার মানবতা জাগবে, আর আপনি যদি আমাকে অপছন্দ করেন তাহলে মনে মনে বলবেন, "ব্যাটারে জেলে না রাখি, ফাঁসি দিলে আরো ভালো হত৷" মানবতাও আজকাল দলীয় হয়ে গেছে৷

  • আমার সাথে যেটা হয়েছে সেটা আমার জন্য মানা কষ্টকর৷ কিন্তু যদি আমি সৌদী আরব বা বাংলাদেশ নামক দেশটির দিকে তাকাই সে হিসেবে আমি একটা মশাও না৷ যে কোন দেশের সরকারের তার দেশ এবং জনগণের নিরাপত্তার জন্য যে কোন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করার অধিকার আছে৷ এটি কতটুকু জায়েজ, কতটুকু নাজায়েজ সেটা আমাদের ইসলামী স্কলারগণ ব্যাখ্যা দিবেন৷

  • বিশ্বে প্রতিদিন কত কত অমানবিক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে, যুদ্ধের কারনে কত কোটি কোটি মানুষ মারা যাচ্ছে, সেসব নিয়ে মানবতা জাগছে না, জামাল খাসোগীর মত একজন সাংবাদিক মৃত্যুর পূর্বে যার নামও আমরা অনেকে শুনিনি, মানবতা আজ তার বেলায় জেগে উঠেছে! এর পেছনের অসৎ উদ্দেশ্য বোঝার জন্য আপনাকে অনেক জ্ঞানী হতে হবে না, সামান্য একটু সচেতন হলেই চলবে৷

  • গত সপ্তাহে ফিলিস্তিনীদের হজ্ব ওমরাহ্ পালনে সৌদী আরব নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে শিরোনামে বাংলাদেশের পত্রিকাগুলো সংবাদ প্রকাশ করেছে৷ অনেক ভাই সেই সংবাদ প্রচার করে সওয়াব হাসিল শুরু করেছেন৷ এর মাঝে এক ভাই সৌদী সরকার ইহুদী, খৃষ্টান, মোনাফেক ইত্যাদি উপাধী দিয়ে লেখা প্রসব করেছেন৷ আমি ঊনার প্রোফাইলে গিয়ে দেখলাম তিনি মাদ্রাসা থেকে পড়ালেখা করেছেন৷

  • আরবীর দিক দিয়ে আমি পুরাই নিরক্ষর৷ আমাদের মত নিরক্ষর লোকেরা যখন কোন ভুল করে তখন অল্প কিছু লোক বিভ্রান্ত হয়৷ কিন্তু একজন আলেম ভুল করলে পুরো সমাজ বিভ্রান্ত না হলেও তাকে যারা ইমাম মনে করেন তারা সবাই বিভ্রান্ত হয়৷ ঊনাকে সচেতন করার লক্ষ্যে এই সংবাদ যে মিথ্যা তা বোঝানোর জন্য একটা লেখা মেনশন করলাম৷ এরপর তিনি নিজের লেখাটাতো ডিলেট করলেন না, উল্টো ফিলিস্তিন ছেড়ে ইয়ামেন চলে গেলেন৷

  • ভদ্রলোকের সাথে আমি আর কথা বাড়াইনি, কারন প্রথমত, এসব নিয়ে আমি সিরিজের পূর্বের লেখাগুলোতে সামান্য বলেছি৷ এর বেশি কারো জানার ইচ্ছে থাকলে তিনি নিজ গরজেই খুঁজে নিতে পারেন৷ দ্বিতীয়ত, আমার মনে হলো আমি ইয়ামেন নিয়ে বললে তিনি সিরিয়া চলে যাবেন, সিরিয়া গেলে তিনি কোরিয়া যাবেন৷ আমরা যাকে ভালোবাসি তার শুধু গুণ তালাশ করি, যাকে ঘৃণা করি তার শুধু দোষ খুঁজি৷ এটা এক ধরনের মানসিক সমস্যা৷ এই ভদ্রলোক হয়ত এধরনের মানসিক সমস্যায় ভূগছেন, বা তিনি দীর্ঘদিন ধরে সৌদী আরব সম্পর্কে নেতিবাচক কথা শোনতে শোনতে সেসব থেকে আর বের হতে পারেন নি৷

  • এ ধরনের মানসিক অস্থিরতা, কিংবা দীর্ঘদিন সৌদী আরব সম্পর্কে নেতিবাচক সংবাদ শোনতে শোনতে অনেকের কাছে সৌদী বিদ্বেষ ইবাদতের পর্যায়ে চলে গেছে৷ আমরা যতই বলি মূর্তিপূজা, মাজার পূজা, দল পূজা, দেশ পূজায় কোন কোন লাভ নেই, কিন্তু যারা এসবকে ইবাদত মনে করে তারা এসব থেকে বিরত থাকবে না৷

  • যারা সত্যিকার অর্থে দ্বীনের সেবা করতে চান, ইসলামের জন্য কিছু করতে ইচ্ছুক, তাদের জন্য দেশে করার মত অনেক বিষয় আছে৷ সৌদী আরবের বিষয় সৌদীর আলেম সমাজ এবং জনগণের উপর ছেড়ে দেওয়াটাই উত্তম হবে৷ আমরা এসব নিয়ে আলোচনা করতে গেলে বিভ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে৷ কারন ঘটনার পেছনের ঘটনা আমাদের অজানা থাকে৷

  • (কলাম--->>সাইদুর রহমান।)