বাংগালীর সৌদি বিদ্বেষ পর্বঃ--৮
- ➖➖➖➖➖ ➖➖➖➖➖➖
- মক্কা-মদীনার
অধিকাংশ আবাসিক হোটেল মহররম থেকে রমজান পর্যন্ত ইরানীদের কাছে ভাড়া থাকত৷
সৌদী সরকারের সাথে বিভিন্ন ইস্যুতে মনোমালিন্যের জের ধরে তারা সৌদীকে শিক্ষা
দেওয়ার জন্য প্রায় চার-পাঁচ বছর ধরে ইরান ওমরাহ্ এবং হজ্ব বন্ধ করে দিয়েছে৷
এতে ফল হয়েছে উল্টো৷
-
- হোটেল কোম্পানীগুলো ইরানীদের সাবান, শ্যাম্পু, তোয়ালে, হিটার, চায়ের কাপ, গ্লাস, প্লেট সহ বিভিন্ন বাড়তি সুযোগ সুবিধা প্রদান
করে যে রুম প্রায় সারা বছরের জন্য প্রতিদিন মাত্র সত্তর রিয়াল ভাড়া পেত, সে একই রুম কোন প্রকার সুযোগ সুবিধা প্রদান
ব্যতীত অন্যান্য দেশের লোকদের কাছে দুইশ-পাঁচশ রিয়াল ভাড়া পাচ্ছে৷
-
- আমাদের দেশের এক শ্রেণীর মুজাহিদ ইরানীদের মত
মনে করে হজ্ব, ওমরাহ বন্ধ হলে সৌদী আরব
বিশাল একটা শিক্ষা পাবে৷ এসব মুজাহিদ ভাইদের ধারণা মসজিদ কমিটির সাথে অভিমান
করে ঘরে নামায পড়লে জামাতে সওয়াব হাসিল হবে৷ আল্লাহ পাক যে পবিত্র ক্বোরআনে
ধারণা থেকে দূরে থাকতে বলেছেন সেটা আমাদের এই মুজাহিদ ভাইগণ জানেন না, অথবা জানলেও আমল করতে মন চায় না৷
-
- জাতি হিসেবে আমরা যে কি পরিমাণ ধারণা প্রিয় তা
বিভিন্ন সময়ে দেশের বিভিন্ন ইস্যুর দিকে খেয়াল করলেই বোঝা যায়৷ বিশেষ করে
বিউটির ঘটনাটা বন্ধুদের স্মরণ না করিয়ে দিলেই নয়৷ পুরো জাতি ধারণা করেছিলো
তাকে ধর্ষণ করে হত্যা করা হয়েছে৷ কিন্তু তদন্তে দেখা গেল ধর্ষণটা ছিলো প্রেম, আর হত্যাটা তার বাবার সহযোগিতাতে হয়েছে৷
-
- আমাদের ধারণা যে মিথ্যা এবং ভুল প্রমাণিত হয়েছে, এতে কি আমাদের বিন্দুমাত্র শিক্ষা বা অনুশোচনা
অনুভব করি? মোটেই না৷
-
- আমাদের যেসব মুজাহিদ বন্ধুগণ কয়েক দিন পর পর
হজ্ব বা ওমরাহ বন্ধের আহবান জানান তারা কি ধর্মীয় অনুভূতি থেকে হজ্ব, ওমরাহ বন্ধ করার আহবান করছেন? না অবচেতন মনে ইরানী এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য
মাঠে নেমেছেন, সে বিষয়ে অধম সন্দিহান!
-
- ইরানী বা শিয়া মতাদর্শ মুসলিম বিশ্বের জন্য কতটা
মারাত্মক ক্ষতিকর, কিভাবে তাদের মতাদর্শ
বাস্তবায়নের জন্য তারা ষড়যন্ত্রের জাল বুনে চলছে, আমাদেরকে তারা কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করেছে তা এই
সিরিজের পূর্বের লেখাগুলোতে সামান্য আলোচনা করেছিলাম, তাই সেদিকে যাচ্ছি না৷
-
- আমাদের মুজাহিদ ভাইদের সৌদী বিদ্বেষের অন্যতম
প্রধান কারন ফিলিস্তিন-ইসরাঈল সংঘর্ষ নিয়ে৷ সাদা-কালো টেলিভিশনের যুগে এক সময়
আমরাও জুমা'র নামাযের পর এসব মুজাহিদ
ভাইদের পেছনে স্লোগান দিয়েছি৷ এখন এসব মুজাহিদ ভাইরা ফেসবুকে স্লোগান দেয়, অনুজরা তাদের পেছনে সুর তোলে৷ সময় বদলাচ্ছে, পৃথিবী বদলাচ্ছে কিন্তু ফিলিস্তিনিদের মায়েদের
ভাগ্য বদল হয় নি!
-
- যেসব মুজাহিদ ভাইয়েরা ফিলিস্তিনি মায়েদের ভাগ্য
বদল করতে গিয়ে সৌদীকে একহাত দেখে নেন, তেমন কিছু মুজাহিদ ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিলাম-
আচ্ছা আপনার কি জীবনে কোনদিন কোন একজন ফিলিস্তিনের নাগরিকের সাথে কথা বলার
সুযোগ হয়েছে? তারা সৌদী সম্পর্কে কি
মনোভাব পোষণ করে সরাসরি জানতে পেরেছেন? সবার কাছ থেকে উত্তরটা না বোধকই এসেছে৷
-
- তাহলে আপনি কার কথা শোনে ফিলিস্তিনি দরদী সেজে
সৌদীকে এভাবে দিগম্বর করে ফেলছেন? সেক্ষেত্রে তারা গতানুগতিক ধারায় বিভিন্ন
মিডিয়াকে সাক্ষী হাজির করেন৷ টাইম লাইনে ঘুরলে, এসব মুজাহিদ ভাইদের রাজনৈতিক পরিচয় ভালোই পাওয়া
যায়৷ তো এদেরকে যখন এদের দলের বিরূদ্ধে আসা সংবাদগুলো দেখানো হয়, তখন এরা সবাই একেকজন সেলিম ওসমান৷
-
- তাদের আদর্শ বিরোধী সংবাদ পরিবেশন করার কারনে
তারা যে মিডিয়াকে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করে, সৌদী আরবের ক্ষেত্রে একই মিডিয়াকে তারা সত্য মনে
করে! সত্যটা অনেকটা মনঃস্তাত্ত্বিক ব্যাপার৷ আপনি যা দেখছেন, যা শোনেছেন, যা শিখেছেন সেটাকে যদি আঁকড়ে ধরে থাকেন সেটাই
সত্য৷ যেমন- একজন মূর্তি বা মাজার পূজারীর কাছে তারটাই সত্য৷
-
- ইন্ডিয়া থেকে একজন লোক ১৫ দিনের প্যাকেজে ওমরাহ্
করতে আসলে তার খরচ হয় মাত্র পঞ্চান্ন থেকে পঁয়ষট্টি হাজার রুপি (১ রিয়াল=১৮
রুপি)৷ পাকিস্তান থেকে একই প্যাকেজে খরচ হয় পঁচাত্তর থেকে আশি হাজার রুপি (১
রিয়াল= ৩০ রুপি)৷ বাংলাদেশ থেকে এক সপ্তাহের প্যাকেজে খরচ হয় সর্বনিম্ম আশি
হাজার৷
-
- কারেন্সীর হিসাবে তিনদেশের খরচটা প্রায়
সমপর্যায়ের হলেও ফারাকটা অন্যখানে৷ পঁয়ষট্টি হাজার রুপির মাঝে ইন্ডিয়ান একজন
হাজীকে তিন বেলা খাবার দেওয়া হয়৷ সকালের খাবারের আইটেমে যা থাকে- দুধ, কর্ণ, মধু, জেলি, পরোটা, পাউরুটি, পায়া, সব্জী, ডিম, চা৷ দুপুরে- ভাত, সব্জী, গরু বা মুরগীর মাংশ, ডাল, ক্ষীর, ফল, চা; রাতেও প্রায় একই মেনু৷ এর মাঝে এজেন্সীর পক্ষ থেকে দুই বা
তিন বার তাদের কাপড়গুলো লন্ড্রী থেকে ওয়াশ করে আনা হয়৷
-
- পাকিস্তানীদের খাবারে অত আইটেম না থাকলেও ভাত, মাংশ, ডাল, চা থাকে৷ ইন্ডিয়া হিন্দু রাষ্ট্র, পাকিস্তান রাজাকার আর আমরা পাক্কা মুমিন
মুসলমান৷ এই মুমিন মুসলমানদের যদি জিজ্ঞেস করি আমাদের ওমরাহ্ খরচ এত বেশি কেন? তখন তাদের উত্তর সৌদী সরকাররে অনেক টাকা দিতে
হয়৷ আর সেটা শোনে আমাদের মুজাহিদ ভাইয়েরা তিন হাত লাফ মেরে সৌদীর বিরূদ্ধে
জিহাদ ঘোষণা করেন৷
-
- টাকা কি শুধু আমাদের দিতে হয়? ইন্ডিয়া, পাকিস্তানীদের দিতে হয় না? এত অল্প খরচে তারা কিভাবে এত ভালো সার্ভিস
দিচ্ছে? সৌদী হজ্ব মিনিস্ট্রির
ভাষ্য মতে, প্রথমবার কেউ হজ্ব এবং
ওমরাহ্ করলে ভিসা বাবত কোন অর্থ প্রদান করতে হয় না৷ দ্বিতীয়বার করতে চাইলে
দুই হাজার রিয়াল ফি দিতে হবে৷ তাহলে আমাদের খরচ এত বেশি কেন?
-
- এর কোন সদুত্তর আপনি পাবেন না৷ কারন আমাদের
পাছায় বাঁশ দেওয়া ছাড়া রাষ্ট্রীয়ভাবে আর কোন সেবামূলক প্রতিষ্ঠান গড়ে
উঠেনি৷ জনগণ হিসেবে আমরা বাঁশ খাওয়ার উপযুক্তই বটে, যারা আমাদের উপকার করে আমরা তাদের পাছায় বাঁশ
দেই তাহলে আমরা বাঁশ খাবো না কেন!
-
- আপনি যদি গুগলে গিয়ে "Saudi
aid for Palestine", বা "Saudi aid for Muslims countries" সার্চ দেন তাহলে অনেক তথ্য পাবেন৷ যে তথ্যগুলো
সেখানে দেওয়া আছে সেগুলো অনেক কম৷ কারন তারা দান করে আমাদের মত সেল্ফী খিঁচে
না৷ হাদীস বলে দানে যত গোপনীয়তা থাকে ততই সওয়াব৷
-
- আমরাতো হাদীসই বুঝি না, চিলে কান নেওয়া মুজাহিদ৷ আমাদের কাছে ডোনাল্ড
ট্রাম্পকে কেটে টুকরো টুকরো করে তার গোশত কুত্তাদের খাওয়ানো অনেক সহজ৷ কিন্তু
সৌদী থেকে আসা মসজিদ-মাদ্রাসার অনুদান, খেজুর বা দুম্বার গোশত যে কুত্তার পেটে তার
পাছায় লাথি মারা অনেক কঠিন৷ এরা সহজ কাজটা করেই বাহবা কুড়াতে চায়৷ এইসব
হুজুগে মুজাহিদ দিয়ে ধর্ম এবং দেশের কতটুকু কল্যাণ হবে সেটা আল্লাহ পাক ভালো
জানেন৷
-
- (কলাম--->>সাইদুর রহমান।)