সরল সঠিক পথ একটাই(The only right way is the right way)

সরল-সঠিক পথ একটাই...........The Sunnah of the Quran is the right path    স্রষ্টা ছাড়া কোন কিছু সৃষ্টি হতে পারে না। সুতরাং এই মহাবিশ্বের একজন সর্বজ্ঞানী পরম প্রজ্ঞাশীল সুমহান স্রষ্টা অবশ্যই রয়েছেন। তিনি অত্যন্ত সুষ্ঠু-সুন্দর, নিখুঁত ও সুশৃঙ্খলভাবে সমগ্র জগত পরিচালনা ও প্রতিপালন করছেন। যেহেতু একাজগুলো একক কর্তৃত্ব ও নিয়ন্ত্রণ ব্যতীত সম্পাদন করা কোন ক্রমেই সম্ভব নয়, তাই বিবেকই বলে দেয় যে তিনি একক ও লা-শারীক। সুতরাং যিনি সমগ্র বিশ্বের একক সৃষ্টিকর্তা, অধিপতি, পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণকারী, তাঁর নিকট পরিপূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ ব্যতীত প্রকৃত অর্থে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি অর্জন করা এবং মানবতার মুক্তি ও অগ্রগতি নিশ্চিত করা আদৌ সম্ভবপর নয়। তাই কিভাবে এই মহান সৃষ্টিকর্তার পরিচয় পাওয়া যায়, তাঁর নিকট যাওয়া যায়- এসব বিষয় সঠিকভাবে জেনে নেয়া একান্ত অবশ্যক।

জেনে রাখুন! (আল্লাহ 7 আপনাকে রাহ্‌ম করুন) আপনার জন্য ইছলামের মহান নি‘মাত লাভের নিশ্চয়তা প্রদানকারী পথ হচ্ছে মাত্র একটি, একাধিক নয়। কেননা আল্লাহ একটিমাত্র দলের জন্যই সফলতা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 8 ইরশাদ করেছেন:-
أُولَئِكَ حِزْبُ اللَّهِ أَلَا إِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْمُفْلِحُونَ.১

অর্থাৎ- তারাই হচ্ছে আল্লাহ্‌র দল, আর নিশ্চয় আল্লাহ্‌র দলই সফলকাম।২আল্লাহ এই একটি মাত্র দলের জন্যই বিজয় নির্ধারণ করে দিয়েছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন:-

وَمَنْ يَتَوَلَّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَالَّذِينَ آمَنُوا فَإِنَّ حِزْبَ اللَّهِ هُمُ الْغَالِبُونَ.৩
অর্থাৎ- আর যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাছূল এবং মু’মিনদেরকে বন্ধুরূপে গ্রহণ করে, তাহলে অবশ্যই আল্লাহর দল বিজয়ী।৪

আপনি যতই খুঁজেন না কেন, ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্‌তে এমন কিছুই পাবেন না, যা মুছলিম উম্মাহ্‌কে বিভিন্ন ফিরক্বাহ ও দলে বিভক্ত হওয়া বা বিভক্ত করার অনুমতি দান করে। মোটকথা, মুছলিম উম্মাহ্‌কে বিভিন্ন ফিরক্বাহ বা দলে বিভক্ত করণের অনুমতি প্রদানমূলক কোন বক্তব্য বা প্রমাণ ক্বোরআন ও ছুন্নাহ্‌র কোথাও নেই।
ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ‘ইরশাদ করেছেন:-

وَلَا تَكُونُوا مِنَ الْمُشْرِكِينَ. مِنَ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا كُلُّ حِزْبٍ بِمَا لَدَيْهِمْ فَرِحُونَ.৫

অর্থাৎ- তোমরা মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না; যারা তাদের দ্বীনকে বিভক্ত ও বিচ্ছিন্ন করে অনেক দলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। প্রত্যেক দলই নিজ নিজ মতবাদ নিয়ে উল্লসিত।৬

মহাপরাক্রমশালী আল্লাহ 7, যিনি বিভক্তি অবলম্বনকে মুছলিম উম্মাহ্‌র জন্য নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন এবং স্বীয় নাবীকে (1) এ থেকে (বিভক্তি ও বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন থেকে) বিমুক্ত এবং সম্পূর্ণরূপে নিরাপদ ও সংরক্ষিত করে রেখেছিলেন, তিনি কি করে মুছলিম জাতিকে বিভক্তি অবলম্বনের অনুমতি দিতে পারেন? এটা কল্পনাতীত ব্যাপার।
মুছলিম উম্মাহ্‌কে বিভক্তি ও বিচ্ছিন্নতা অবলম্বন থেকে অত্যন্ত কঠোরভাবে সতর্ক ও সাবধান করে দিয়ে আল্লাহ 8 ইরশাদ করেছেন:-

إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُمْ بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ.৭

অর্থাৎ- নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং অনেক দল হয়ে গেছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই। তাদের ব্যাপার আল্লাহ্‌র নিকট সমর্পিত। অতঃপর তিনি তাদেরকে জানিয়ে দিবেন সে সম্পর্কে যা কিছু তারা করছে।৮
মু‘আওয়িয়াহ ইবনু আবী ছুফইয়ান h থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন- সত্যিই আল্লাহর রাছূল 1একদা আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে বললেন:-

أَلَا إِنَّ مَنْ قَبْلَكُمْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ افْتَرَقُوا عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً، وَإِنَّ هَذِهِ الْمِلَّةَ سَتَفْتَرِقُ عَلَى ثَلَاثٍ وَسَبْعِينَ: ثِنْتَانِ وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ، وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ، وَهِيَ الْجَمَاعَةُ.৯

অর্থ- জেনে রেখো! নিশ্চয় তোমাদের পূর্ববর্তী আহলে কিতাবগণ বাহাত্তর দলে বিভক্ত হয়েছে। আর অচিরেই এই ধর্মের (ইছলামের) অনুসারীরা তেয়াত্তরটি দলে বিভক্ত হবে। তম্মধ্যে বাহাত্তর দলই জাহান্নামে নিক্ষিপ্ত হবে এবং একটিমাত্র দল জান্নাতে প্রবেশ করবে। আর সেই (মুক্তিপ্রাপ্ত) দলটি হচ্ছে একটি বিশেষ জামা‘আত”।১০
আল আমীর আশ্‌শাম‘আনী o বলেছেন:- উল্লেখিত হাদীছে যে সংখ্যার উল্লেখ করা হয়েছে, তাতে ধ্বংসশীলদের পূর্ণ সংখ্যার বিবরণ দেয়া হয়নি। বরং এর দ্বারা একটি মাত্র সত্য-সঠিক পথের তুলনায় ভ্রষ্ট ও ভ্রান্ত পথের সংখ্যাধিক্যতা এবং এর শাখা-প্রশাখার ব্যাপক বিস্তৃতির কথাই বুঝানো হয়েছে।

ক্বোরআনে কারীমে আল্লাহ 0 ইরশাদ করেছেন:-

وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ.১১

অর্থাৎ- এই হলো আমার সঠিক-সরল পথ, তোমরা এটাকে অনুসরণ করো, এবং তোমরা অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, নতুবা সে পথগুলো তোমাদেরকে তাঁর (আল্লাহর) পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে।১২

ক্বোরআনে কারীমের এই আয়াতকে সামনে রেখে মুফাছ্‌ছিরগণ উল্লেখিত হাদীছের এ ব্যাখ্যাই প্রদান করেছেন।

মূলতঃ এ হাদীছে রাছূল 1 একথাই বলেছেন যে, নিষিদ্ধ ও ভ্রান্ত পথ এবং সে সব বাত্বিল পথের অনুসারী অসংখ্য। পক্ষান্তরে সত্য-সঠিক পথ হলো মাত্র একটি। এই একটিমাত্র পথের অনুসারী; হিদায়াত প্রাপ্ত দলও মাত্র একটি, একাধিক নয়।
উপরোক্ত হাদীছে রাছূলুল্লাহ 1 বাত্বিলপন্থি, পথভ্রষ্ট দল সমূহের সংখ্যাধিক্যের একটি সামষ্টিক বর্ণনা দিয়েছেন মাত্র। এখানে সুর্নিধারিতভাবে তাদের দলের সংখ্যা বর্ণনা করা তাঁর উদ্দেশ্য নয়।১৩

‘আব্দুল্লাহ ইবনু মাছ‘উদ 3 থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন-

خَطَّ لَنَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَوْمًا خَطًّا ثُمَّ قَالَ: «هَذَا سَبِيلُ اللَّهِ» ثُمَّ خَطَّ خُطُوطًا عَنْ يَمِينِهِ، وَعَنْ شِمَالِهِ، ثُمَّ قَالَ: «هَذِهِ سُبُلٌ عَلَى كُلِّ سَبِيلٍ مِنْهَا شَيْطَانٌ يَدْعُو إِلَيْهِ» ثُمَّ تَلَا: وَ أَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ.১৪

অর্থ- একদিন রাছূল 1 আমাদের সামনে একটি রেখা টানলেন, অতঃপর তিনি বললেন:- এটা হলো আল্লাহ্‌র পথ। তারপর তিনি ঐ রেখাটির ডানে এবং বামে আরো কয়েকটি রেখা টেনে বললেন, এগুলো হলো এমন কতক পথ যেগুলোর প্রত্যেকটির দিকে শায়ত্বান (মানুষকে) আহবান করছে। অতঃপর রাছূল 1 (ছূরা আল আন‘আমের এ আয়াতটি) তিলাওয়াত করলেন-
وَأَنَّ هَذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَنْ سَبِيلِهِ.

(অর্থাৎ- এই হচ্ছে আমার সরল-সঠিক পথ, সুতরাং তোমরা একে অনুসরণ করো এবং তোমরা অন্যান্য পথ অনুসরণ করো না, নতুবা তা তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিবে।)১৫

সুতরাং এ হাদীছটি এ কথাই প্রমাণ করে যে, সত্য-সঠিক; আল্লাহ্‌র পথ হলো মাত্র একটি।

‘আল্লামা ইবনুল ক্বায়্যিম আল জাওযিয়্যাহ o বলেছেন:- “যে পথটি মানুষকে আল্লাহ্‌র (8) দিকে নিয়ে যায় সেটি হচ্ছে একটি মাত্র পথ, আর মানবজাতিকে এ পথ প্রদর্শনের জন্যই আল্লাহ 7নাবী-রাছূলগণকে m পাঠিয়েছেন এবং আছমানী কিতাব সমূহ নাযিল করেছেন। এই পথ ব্যতীত অন্য কোন পথই মানুষকে আল্লাহর দিকে নিয়ে যেতে পারবে না। এই পথটি ছাড়া অন্য কোন পথ বা দরজা দিয়ে যদি কেউ আল্লাহ্‌কে পেতে চায়; আল্লাহর দিকে যেতে চায়, তাহলে তা কখনো সম্ভবপর হবে না। কেননা আল্লাহ্‌র দিকে যাওয়ার, আল্লাহ্‌কে পাওয়ার পথ মাত্র একটি। এই একটি মাত্র পথ ব্যতীত অন্য সব পথকে ইছলাম বাত্বিল ও প্রত্যাখ্যাত ঘোষণা করেছে।১৬

যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র (7) নির্দেশিত সরল-সঠিক এই একটি মাত্র পথের উপর অটল ও অবিচল থাকবে না, সে সর্বদা সন্দেহ-সংশয় এবং দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে নিপতিত থাকবে। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর নির্দেশিত এই পথ ব্যতীত অন্য পথ অবলম্বন করবে, সে একা হয়ে যাওয়ার ভয়ে বিভিন্ন পথভ্রষ্ট দলের অনুসরণ করবে। সে গন্তব্যে পৌঁছার জন্য দ্রুত অগ্রসর হতে থাকবে, কিন্তু অবশেষে সে তার এই গন্তব্যহীন পথের দূরত্ব দেখে ভীত-শঙ্কিত হয়ে (মধ্যপথে) থেমে যাবে।
‘আল্লামা ইবনুল ক্বায়্যিম o বলেছেন:- যে ব্যক্তি তার যাত্রাপথকে দীর্ঘায়িত করবে, তার চলার গতি মন্থর হয়ে পড়বে।১৭
@@ সরল-সঠিক পথপ্রাপ্তির জন্য আল্লাহ্‌র সাহায্য আমাদের একান্ত কাম্য।
১. سورة المجادلة- ٢٢ (সূরা আল-মাজাদিল্লাহ)
২. ছূরা আল মুজাদালাহ- ২২
৩. سورة المائدة- ٥٦ (আল-মৈদা - 56) mayeda৪. ছূরা আল মা-য়িদাহ- ৫৬
৫. سورة الروم- ٣١-٣٢ (আল-রুম - 31-২3)৬. ছূরা আর্‌রুম- ৩১-৩২
৭. سورة الأنعام- ١٥٩ ৮. ছূরা আল-আন‘আম- ১৫৯
৯. رواه أحمد و أبو داؤد (আহমাদ ও আবু দাউদের বর্ণিত)১০. মুছনাদে ইমাম আহ্‌মাদ ও ছুনানু আবী দাউদ
১১. سورة الأنعام- ١٥٣ (11। সূরা আল-আনাম - 153)১২. ছূরা আল আন‘আম- ১৫৩
১৩. দেখুন! ইফতিরাক্বোল উম্মাহ ইলা নীফ ওয়া ছাব‘য়ীনা ফিরক্বাহ, পৃষ্ঠা নং- ৬৭-৬৮
১৪. سنن الدارمي, مستدرك حاكم (সিনান আল-দারামি, একজন শাসক)১৫. ছুনানে দারিমী, মুছতাদরাকে হাকিম
১৬. আত্‌তাফছীরুল ক্বায়্যিম, পৃষ্ঠা নং- ১৪-১৫
১৭. আল ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা নং- ৯০